Ajker Patrika

দারিদ্র্য মানুষের সহজাত নয়, বিদ্যমান ব্যবস্থার ত্রুটি: ড. ইউনূস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৫, ১৭: ৪২
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদানের পর বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: ফেসবুক
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদানের পর বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: ফেসবুক

ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ও সামাজিক ব্যবস্থা দেশে দেশে দারিদ্র্য জিইয়ে রাখে। শিক্ষা সম্পর্কিত প্রচলিত ধারণা মানুষকে স্বাধীন হওয়ার পথে বাধা তৈরি করে। এমন একটি ব্যবস্থার অংশ হওয়া এবং এর পরিবর্তন করতে না পারায় নিজে অপরাধবোধে ভোগেন বলে জানিয়েছেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মানুষের দক্ষতা বা উচ্চাকাঙ্ক্ষার অভাবে দরিদ্র থাকে না; বরং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তাদের সমান সুযোগ না দেওয়ায় তারা দরিদ্র থাকে।

গতকাল শনিবার বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় এ কথা বলেন অধ্যাপক ইউনূস। বিশ্ববিদ্যালয়টি তাঁকে এদিন সম্মানসূচক ডক্টরেট দিয়েছে।

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় ড. ইউনূস এমন শিক্ষা ব্যবস্থার অংশ হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন, যা ভুল ধারণাগুলো টিকিয়ে রাখে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দারিদ্র্য মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য নয়, বরং আমরা যে ব্যবস্থা তৈরি করেছি, তার ত্রুটি। তাঁর মতে, ত্রুটিপূর্ণ চিন্তাভাবনাই অনেক সামাজিক সমস্যার মূল কারণ।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমি অপরাধবোধ করি, কারণ আমরা এখনো প্রচলিত মানসিকতা পরিবর্তন করতে পারিনি, যা ভোগান্তিই তৈরি করে চলেছে। তরুণদের শিক্ষিত করার জন্য আমরা যে ব্যবস্থা ব্যবহার করি, তার ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করা আমার কর্তব্য, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একই ভুল না করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান ব্যবস্থা ধনীদের জন্য তৈরি, দরিদ্রদের জন্য নয়। এই উপলব্ধি আমাকে একটি বিকল্প তৈরি করতে চালিত করে।’

লাখ লাখ তরুণের স্বপ্নপূরণের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের এই স্বীকৃতি আমাকে অগণিত যুবকের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সাহায্য করার আমার প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর থেকে তারা (তরুণেরা) বাংলাদেশের রূপান্তরের চালিকাশক্তি। তাদের লক্ষ্য একটি নতুন বাংলাদেশ তৈরি করা—যা দারিদ্র্য ও ক্ষুধা থেকে মুক্ত। এই দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নের জন্য আমরা সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বেশ কিছু সংস্কার শুরু করেছি।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘অর্থনৈতিক নীতিগুলোকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে পুনর্গঠন করে আমরা সবার জন্য সমান সুযোগ প্রদান করতে চাই। এই সংস্কারগুলো আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার, যার সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি কৌশল রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রযুক্তি এবং শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশকে পুনরুজ্জীবিত করছি, উদ্যোক্তার মাধ্যমে অর্থনৈতিক রূপান্তরকে উৎসাহিত করছি।’

অধ্যাপক ইউনূস প্রচলিত চাকরি খোঁজার মানসিকতার সমালোচনা করে বলেন, ‘আমাদের যুবকেরা তাদের শিক্ষা শেষ করে এবং এরপর চাকরি খোঁজে। আমি সব সময় বলেছি, এটি একটি ত্রুটিপূর্ণ পদ্ধতি। মানুষ চাকরি খোঁজার জন্য জন্মগ্রহণ করে না। চাকরির ধারণাটি একটি ভুল ধারণা।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ সহজাতভাবে সৃজনশীল এবং তারা সৃজনশীল কাজে নিযুক্ত হতে পছন্দ করে। চাকরি তাদের তত্ত্বাবধায়কদের নির্দেশ অনুসরণ করতে বাধ্য করে সৃজনশীলতাকে দমন করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চাকরি হলো আধুনিক দাসত্বের একটি রূপ, কিন্তু মানুষ দাস হওয়ার জন্য নয়—তারা মুক্ত হওয়ার জন্য। আমাদের এই ধারণাটি ছড়িয়ে দিতে হবে যে, মানুষ কর্মচারী হওয়ার জন্য নয়, উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য জন্মগ্রহণ করে।’

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিক্ষার্থীদের চাকরিপ্রার্থী না করে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রস্তুত করার আহ্বান জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের চাকরিপ্রার্থী হিসেবে নয়, সফল উদ্যোক্তা হিসেবে স্নাতক হওয়া উচিত। এই বিশ্বাস একটি সাধারণ অভিজ্ঞতা থেকে উদ্ভূত। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি পড়াতাম, তার কাছে আমি গ্রামীণ নারীদের ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের মাধ্যমে একটি ছোট উদ্যোগ শুরু করি।’

তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল তাদের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য তহবিল ব্যবহার করতে সাহায্য করা। সেই সময়ে, আমি নিশ্চিত ছিলাম না, এই উদ্যোগটি কাজ করবে কি না। তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয় এবং তারা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যায়। অবশেষে, এই পদ্ধতি লাখ লাখ নারীর জীবন পরিবর্তন করেছে।’

তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন, ‘এই উদাহরণ আমাকে আশ্বস্ত করেছে যে, সমস্ত মানুষ উদ্যোক্তা। পাঠ্যপুস্তকে আমাদের শেখানো হয় যে, শুধু কয়েকজন উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য জন্মগ্রহণ করে, বাকিদের তাদের অধীনে কাজ করতে হয়। আমি এই ধারণার সঙ্গে দৃঢ়ভাবে দ্বিমত পোষণ করি।’

বাংলাদেশের দৃষ্টান্ত টেনে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের অত্যন্ত দরিদ্র, অশিক্ষিত নারীরা যদি ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হতে পারে, তবে যে কেউ পারবে। আমরা তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণ বা নির্দেশ প্রদান করি না—তারা নিজেরাই এটি বের করে।’

অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘এটি একটি মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপন করে: শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য কী? তাই আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষা একজন ব্যক্তির সৃজনশীল সম্ভাবনা উন্মোচন করবে এবং তাদের বিশ্ব পরিবর্তন করার ক্ষমতা দেবে।’

গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় (পিকেইউ) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মানসূচক ডক্টরেট দেয়।

সম্মানসূচক ডক্টরেট গ্রহণের পর প্রধান উপদেষ্টা দর্শকদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি, কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের একটি দল তাঁকে স্বাগত জানান।

প্রধান উপদেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বের সঙ্গে একটি সংক্ষিপ্ত বৈঠকও করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নির্বাচনকে সামনে রেখে সাইবার নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: প্রেস ইউং
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: প্রেস ইউং

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে সব ধরনের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সিকে নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিলের সভায় তিনি এ নির্দেশনা দেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের তথ্যপ্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং সব ধরনের সাইবার অপরাধকে কঠোরভাবে মোকাবিলা করতে হবে।’

ড. ইউনূস বলেন, সরকার সব ধরনের নাগরিক সেবাকে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে অনেক সেবা দেশে ও বিদেশে অনলাইনে দেওয়া হচ্ছে। এসব সেবাকে সুরক্ষিত ও নির্বিঘ্ন রাখতে হলে সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করা জরুরি। নাগরিক সেবার খাতগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।

ড. ইউনূস আরও বলেন, সাইবার সুরক্ষা এজেন্সিসহ যেসব প্রতিষ্ঠান সাইবার নিরাপত্তাব্যবস্থা নেবে, তাদের নিয়মিত সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার হালনাগাদ করতে হবে। পাশাপাশি এসব ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত জনবলকে আরও দক্ষ করে তুলতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট জনবলকে একটি রেটিং পদ্ধতির আওতায় আনতে হবে, যাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাইবার সুরক্ষাসহ প্রকৃত মূল্যায়ন সহজ হয়। ফিন্যান্সিয়াল সেক্টরে কোনো অপরাধ করে যেন কেউ পার পেয়ে না যায়—সে বিষয়েও জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সিকে বিচার বিভাগের পাশাপাশি কার্যকর ভূমিকা রাখার নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা।

বৈঠকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ইতিমধ্যে ৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে ক্রিটিক্যাল ইনফরমেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আরও কিছু প্রতিষ্ঠান এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।

এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গুজব, মিসইনফরমেশন, ডিসইনফরমেশনসহ অন্যান্য সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি এবং বিটিআরসির মধ্যকার সমন্বয়সাধনের বিষয়ে জোর গুরুত্ব আরোপ করেন।

সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরের সাইবার নিরাপত্তা আরও দৃঢ় করতে ইতিমধ্যে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং আরও কিছু কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ছাড়া তিনি সেক্টরাল সার্ট (সিইআরটি) গঠনের উদ্যোগের প্রশংসা করেন।

জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিলের সদস্যসচিব ও জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সির মহাপরিচালক ড. মো. তৈয়বুর রহমান পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে এজেন্সির কার্যক্রম, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনাসহ সাইবার পরিমণ্ডলে সংঘটিত অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ ও পরবর্তী প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রণীত ‘সাইবার ইনসিডেন্ট রিপোর্টিং অ্যান্ড রেস্পনস সিস্টেম’-এর বিস্তারিত উপস্থাপন করেন।

সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

২১ মে সাইবার সুরক্ষা অধ‍্যাদেশ, ২০২৫ প্রণয়নের পর এই সংশোধিত অধ‍্যাদেশের অধীনে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত ২৬ আগস্ট জাতীয় সাইবার সুরক্ষা কাউন্সিল গঠিত হয়। ২৫ সদস্যের এই কাউন্সিলের নেতৃত্বে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম আলো–ডেইলি স্টার কার্যালয় পরিদর্শন করলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা

বাসস, ঢাকা 
নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। ফাইল ছবি
নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। ফাইল ছবি

হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয় আজ রোববার পরিদর্শন করেছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় তিনি বলেছেন, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সরকার বদ্ধপরিকর।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডেইলি স্টারের উপদেষ্টা সম্পাদক কামাল আহমেদ, প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফসহ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কর্মকর্তারা।

প্রতিষ্ঠান দুটির ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পরিদর্শন শেষে নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, পক্ষে-বিপক্ষে মতভেদ থাকাটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে সহিংসতা ও হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়ায় সরকার এর ওপর কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করে না। গণমাধ্যম সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকা উচিত। দেশ গঠনে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সরকার ও গণমাধ্যমকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।

উপদেষ্টা বলেন, পত্রিকা প্রকাশের সক্ষমতা বড় সাহসিকতা ও পেশাদারত্বের পরিচয়। মিডিয়া সত্য তুলে ধরবে—এটাই জনগণের প্রত্যাশা। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

এ সময় ড. এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৃঢ়তার প্রশংসা করেন। ক্ষতিগ্রস্ত গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বলেন, গণমাধ্যম ঘুরে দাঁড়াবে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বজায় থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মনোনয়নপত্রে সন্তানের আয়ের তথ্য দেওয়া ঐচ্ছিক—বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পর ইসির চিঠি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর মনোনয়নপত্রে থাকা ‘সন্তানের আয়’ দেখানোর বাধ্যবাধকতা বিষয়ে স্পষ্টতা চেয়ে আজ প্রধান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। এর পরপরই রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে কমিশন জানিয়েছে, এই তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়, ঐচ্ছিক।

আজ রোববার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, আরপিওতে না থাকা সত্ত্বেও মনোনয়নপত্রে সন্তানেরও আয়ের হিসাব দেওয়ার বিষয়টি রাখা হয়েছে। যেটা নিয়ে সব জায়গায় একটা প্রশ্ন উঠেছে। কারণ অনেকের সন্তানেরা নিজেরাই উপার্জনক্ষম এবং তাঁরা নির্ভরশীল নন। অনেকেই দেশের বাইরে থাকেন। অনেকেই নিজেরা আলাদাভাবেই ট্যাক্স দেন। এই বিষয়টা নিয়ে একটা জটিলতা হয়ে গেছে। যার জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছি এবং কথা বললাম। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং তাঁর সঙ্গে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা বোঝাতে চেয়েছেন নির্ভরশীল সন্তানদের বুঝিয়েছেন। তাঁরা এর ব্যাখ্যা দেবেন যে, এই ‘সন্তান’ শব্দটার অর্থ হলো ‘নির্ভরশীল সন্তান’।

সিইসির সঙ্গে বিএনপির এই বৈঠকের পর বিষয়টি স্পষ্ট করে বিকেলে সব রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছে কমিশন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, হলফনামার ক্রম ১০-এ আয়কর সংক্রান্ত তথ্যে সর্বশেষ আয়কর রিটার্ন জমার বিবরণ অংশে প্রদত্ত ছকের ক্রমিক ২,৩ ও ৪ এ উল্লিখিত যথাক্রমে স্বামী/স্ত্রী, সন্তান ও নির্ভরশীলদের আয়কর সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া ঐচ্ছিক মর্মে বিবেচিত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই হাদি হত্যার বিচার সম্পন্ন হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৩৩
আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: সংগৃহীত
আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সম্মুখসারির যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই সম্পন্ন করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ রোববার (২৮ ডিসেম্বর) আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, হাদি হত্যার তদন্ত শেষপর্যায়ে রয়েছে এবং আগামী ১০ দিনের মধ্যে (৭ জানুয়ারি) এ মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা সম্ভব হবে। দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে মামলাটি ইতিমধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে তদন্তের স্বার্থে সব তথ্য প্রকাশ না করলেও উপদেষ্টা বেশ কিছু অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ঘটনার মূল হোতা ফয়সাল করিম মাসুদের বাবা হুমায়ুন কবির, মা হাসি বেগম, স্ত্রী শাহেদা পারভীন সামিয়া, শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ শিপু ও প্রেমিকা মারিয়া আক্তার লিমা রয়েছেন। এ ছাড়া মো. কবির, নুরুজ্জামান নোমানী ওরফে উজ্জ্বল, সিবিয়ন দিও, সঞ্জয় চিসিম, মো. আমিনুল ইসলাম রাজু ও মো. আব্দুল হান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জন ও চারজন সাক্ষী ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি বিদেশি পিস্তল, ৫২ রাউন্ড গুলি, ম্যাগাজিন, ছোরা, ভুয়া নম্বরপ্লেটসহ একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য আলামত পুলিশের হাতে রয়েছে।

তদন্তে ৫৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিপরীতে মোট ২১৮ কোটি টাকার স্বাক্ষরিত চেক জব্দ করা হয়েছে, যা এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে গভীর কোনো ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত দেয় বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভেতরে ফ্যাসিস্টের দোসর ও দুষ্কৃতকারীরা ওত পেতে রয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতাদের অনুরোধ করব—দলের ভেতরে খোলস পাল্টানো সুযোগসন্ধানী ও দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করুন। তারা যেন আপনাদের দলে আশ্রয় না পায়, সে বিষয়ে সচেতন হোন। প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিন।’

কোর কমিটির সভায় দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করা হয়। উপদেষ্টা জানান, ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া অভিযানে (অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২) এ পর্যন্ত ২২ হাজার ৩৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ১০২টি আগ্নেয়াস্ত্র, বিপুল গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক তৈরির সরঞ্জাম।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাসকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার বিষয়েও কথা বলেন। তিনি জানিয়েছেন, এ ঘটনায় র‍্যাব ও পুলিশ এখন পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। লক্ষ্মীপুর নির্বাচন অফিসে অগ্নিসংযোগের মূল আসামি রুবেল এবং খুলনায় শ্রমশক্তি নেতা মোতালেব শিকদারকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, হাদি হত্যার বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে একটি মহল অনবরত তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সরকার ন্যায়বিচার নিশ্চিতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত