Ajker Patrika

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন

ঢাকায় চলছে তদন্ত, লন্ডনে বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশি ধনীদের সম্পদ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ জুলাই ২০২৫, ১৭: ১৩
বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থে লন্ডনে বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন শেখ হাসিনা ঘনিষ্ঠ অনেকে। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থে লন্ডনে বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন শেখ হাসিনা ঘনিষ্ঠ অনেকে। ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের ছাত্র আন্দোলনে যখন শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে শত শত আন্দোলনকারীর রক্ত ঝরে। নিহত হন অনেকে। সেই কর্তৃত্ববাদী নেতার পতনের পর দেশে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এক বছর পেরিয়ে গেলেও সরকার এখনো তিক্ত বিভাজনের রাজনীতি ও অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

সেই রক্তক্ষয়ী আন্দোলন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে যদি লন্ডনে নাইটসব্রিজ টাউনহাউস এলাকায় বা সারে এলাকার কোনো একটি অংশে নেওয়া হয়, তাহলে এক ভিন্ন পরিস্থিতি দেখা যাবে। এ যেন এক ভিন্ন জগৎ! বাংলাদেশে যে রক্তক্ষয়ী দৃশ্যপট রচিত হয়েছে তার সঙ্গে অবধারিতভাবে সম্পর্কিত ব্রিটেনের কিছু বিলাসবহুল রিয়েল এস্টেট।

হাসিনা সরকারের প্রভাবশালী ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা তাঁদের পদের অপব্যবহার করে রাষ্ট্রায়ত্ত চুক্তি ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে কোটি কোটি টাকা লুট করে যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি কিনেছেন—এমন অভিযোগ খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)

গত মে মাসে ব্রিটেনের এফবিআই হিসেবে পরিচিত ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) রহমান (আওয়ামী লীগ এমপি ও শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান) পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন ৯ কোটি পাউন্ডের সম্পত্তি জব্দ করেছে। গত বছর দ্য গার্ডিয়ান এক অনুসন্ধানে যুক্তরাজ্যে তাঁদের এই বিশাল সম্পত্তির পোর্টফোলিও উন্মোচন করে। এর তিন সপ্তাহ পর, এনসিএ সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের ১৭ কোটি পাউন্ডের বেশি মূল্যের সম্পদ জব্দ করে। মন্ত্রিত্বের সময় তিনি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে শুরু করে বিলাসবহুল টাউনহাউসসহ ৩০০ টিরও বেশি সম্পত্তির মালিক হন।

দ্য গার্ডিয়ান ও দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের এক যৌথ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঢাকায় যারা তদন্তের মুখোমুখি, তাঁদের কয়েকজন বাংলাদেশে ক্ষমতা পরিবর্তনের পর থেকে যুক্তরাজ্যে তাঁদের সম্পত্তি বিক্রি, হস্তান্তর বা পুনরায় বন্ধক দিয়েছেন। এসব লেনদেনে লন্ডনে সন্দেহভাজনদের ব্যবসার স্বাধীনতা এবং যুক্তরাজ্যে আইন সংস্থা ও পরামর্শদাতাদের যথাযথ কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, তাদের চোখের সামনেই এসব লেনদেন হয়েছে, তারা এসব লেনদেন সম্পন্ন করতে সহায়তা করেছে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা, ঢাকা তদন্ত সম্পন্ন না করা পর্যন্ত এসব ব্যক্তির যুক্তরাজ্যের সম্পত্তি জব্দ করে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে ব্রিটেন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ ইস্যুতে গত জুনের শুরুতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ব্রিটেন সফর করে।

লন্ডন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ শুধু এই শহরে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করেন বলে নয়, বরং যুক্তরাজ্য পাচার করা অর্থে অর্জিত সম্পদ খুঁজে বের করে দেবে বলে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এই প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি চান, সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও সালমান এফ রহমানদের বিরুদ্ধে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এমন পদক্ষেপ আরও নেওয়া হোক।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমরা সম্পদ হস্তান্তরের প্রচেষ্টা সম্পর্কে অবগত এবং আমরা চাই যুক্তরাজ্য সরকার আরও বেশি করে ফ্রিজিং অর্ডার জারি করুক।’

তাঁর এই আহ্বানের পুনরাবৃত্তি করেছেন বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানও মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন। গত মাসে তিনি জানান, তিনি ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সিকে (এনসিএ) বেশ কয়েকজনের সম্পদ অবরুদ্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রিয়েল এস্টেট বাজারে এসব ব্যক্তির তৎপরতা হঠাৎ বেড়ে গেছে।

যুক্তরাজ্যের ল্যান্ড রেজিস্ট্রির (ভূমির দলিল নথিবদ্ধকারী সংস্থা) তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার নজরদারিতে থাকা ব্যক্তিদের অন্তত ২০টি ‘অ্যাপ্লিকেশন ফর ডিলিং’ গত এক বছরে জমা পড়েছে। এ ধরনের নথি সাধারণত সম্পত্তি বিক্রি, হস্তান্তর অথবা বন্ধকি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এর মধ্যে তিনটি আবেদন প্রায় ২ কোটি ৪৫ লাখ পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তির সঙ্গে সম্পর্কিত, যার চূড়ান্ত মালিকানা বাংলাদেশের আরেকটি বড় শিল্প পরিবারের সদস্যদের।

সম্প্রতি লন্ডনের নাইটসব্রিজ এলাকায় অবস্থিত একটি চারতলা টাউনহাউস ভবন সম্পর্কিত দুটি লেনদেন হয়েছে, এসব লেনদেনের উদ্দেশ্য অস্পষ্ট। গত বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এটি বাংলাদেশি সেই শিল্পগোষ্ঠীর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মালিকানাধীন ছিল। তবে এই বাড়ির মালিকানা সরাসরি তাঁর ছিল না, সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক একটি কোম্পানির মাধ্যমে এটি কিনেছিলেন তিনি।

অনুসন্ধানে গার্ডিয়ান জানতে পেরেছে, দেশের সেই বড় শিল্প পরিবারের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে দুদক অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে তদন্ত করছে। গত এপ্রিলে সম্পত্তিটি আপাতদৃষ্টিতে বিনা মূল্যে ব্রুকভিউ হেইটস লিমিটেড নামক যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ব্রুকভিউয়ের মালিক অরবিস লন্ডনের একজন পরিচালক। এই অরবিস লিচেনস্টাইন ও সিঙ্গাপুরে অবস্থিত একটি রিয়েল এস্টেট পরামর্শক সংস্থা এবং অতীতে তারা উল্লিখিত শিল্প পরিবারের সম্পত্তি লেনদেনে সহযোগিতা করেছে।

লন্ডনের ওই বাড়িটি পরে ৭৩ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে এক নবগঠিত কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই কোম্পানির একমাত্র পরিচালক একজন হিসাবরক্ষক এবং অনলাইনে এই কোম্পানির কোনো পরিচিতি নেই।

ল্যান্ড রেজিস্ট্রির নথি অনুসারে, যুক্তরাজ্যের আইনি সংস্থাগুলো বাংলাদেশের সেই শীর্ষস্থানীয় শিল্প পরিবারের আরেক সদস্যের মালিকানাধীন সম্পত্তির বিষয়ে আরও দুটি ‘অ্যাপ্লিকেশন ফর ডিলিং’ জমা দিয়েছে, যার মধ্যে সারে ও ভার্জিনিয়া ওয়াটারে অবস্থিত ৮ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি প্রাসাদসম সম্পত্তিও রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে সেই পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে এর আগে পরিবারটি বলেছিল, তারা কোনো অন্যায় কাজের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে।

সেই পরিবারের সদস্যদের একজনের যুক্তরাজ্যে সম্পদ কেনা সম্পদ অবরুদ্ধ করার জন্য দুদক ব্রিটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সিকে অনুরোধ করেছে।

সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্তের অংশ হিসেবে আরও দুজন ব্যক্তি দুদকের নজরদারিতে এসেছে। গত এক বছরে তাঁরা উভয়েই একাধিক সম্পত্তি লেনদেন করেছেন। তাঁদের একজন সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ভাই আনিসুজ্জামান, অন্যজন একজন সফল ব্রিটিশ-বাংলাদেশি প্রোপার্টি ব্যবসায়ী। দ্য গার্ডিয়ান তাঁর নাম প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ল্যান্ড রেজিস্ট্রির তথ্য অনুযায়ী, আনিসুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন চারটি সম্পত্তির সাম্প্রতিক বাজার কার্যক্রম দেখা যায়। এর মধ্যে গত জুলাই মাসে মধ্য লন্ডনের রিজেন্ট’স পার্কের এক প্রান্তে অবস্থিত ১০ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি ‘জর্জিয়ান টাউনহাউসের’ বিক্রয় সম্পন্ন হয়েছে। এরপর থেকে আরও তিনটি আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই আবেদনগুলো পুনঃঅর্থায়ন সম্পর্কিত।

আনিসুজ্জামান চৌধুরীর আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তাঁর কোনো সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার বৈধ কারণ আছে বলে তিনি মনে করেন না। রিজেন্ট’স পার্কের সম্পত্তি বিক্রয়ের চুক্তি ২০২৩ সালে হয়েছিল, যা জুলাই অভ্যুত্থানের আগের ঘটনা।

বাংলাদেশের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় ব্যাংক ইউসিবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এর আগে সাইফুজ্জামান চৌধুরী লন্ডনভিত্তিক ওই প্রোপার্টি ব্যবসায়ীকে (দ্য গার্ডিয়ান যার নাম প্রকাশ করেনি) অবৈধভাবে ঋণ পেতে সহায়তা করেছিলেন কিনা তা তদন্ত করার জন্য দুদককে অনুরোধ করেছিলেন। এ বছর, বাংলাদেশের একটি আদালত ওই ব্যবসায়ীর ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

আরও তিনটি ‘অ্যাপ্লিকেশন ফর ডিলিং’ সালমান এফ রহমানের ছেলে ও ভাতিজার মালিকানাধীন সম্পত্তির সঙ্গে সম্পর্কিত। সালমান এফ রহমান বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার। তাঁর দুই ছেলে আহমেদ শায়ান রহমান এবং আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। মেফেয়ারের গ্রসভেনর স্কয়ারে অবস্থিত ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি অ্যাপার্টমেন্টসহ এই সম্পত্তিগুলো গত মাসে এনসিএ জব্দ করেছে।

সালমান এফ রহমান পরিবারের আইনজীবীরা দাবি করছেন, বাংলাদেশের ‘রাজনৈতিক পট পরিবর্তন’ অনেক ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগের জন্ম দিয়েছে এবং তাঁরা ‘যুক্তরাজ্যে যেকোনো তদন্তে সহযোগিতা করবেন।’

এদিকে, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের দুর্নীতি ও কর সংক্রান্ত একটি সর্বদলীয় কমিটির চেয়ার জো পাওয়েল এ ধরনের তদন্ত দ্রুত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ইতিহাস আমাদের বলে যে, তদন্ত চলাকালে সম্পদ দ্রুত উধাও হয়ে যেতে পারে, যদি না দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সেগুলো জব্দ করা হয়।’ এনসিএ-এর গৃহীত পদক্ষেপকে পাওয়েল স্বাগত জানিয়েছেন। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ‘জাল আরও প্রসারিত’ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

আইনি পরামর্শক সংস্থা জ্যাসওয়াল জনস্টন সালমান এফ রহমান পরিবারের মালিকানাধীন সম্পত্তির ওপর ‘অ্যাপ্লিকেশন ফর ডিলিং’ জমা দিয়েছে। সংস্থার এক মুখপাত্র বলেন, তারা কোনো বিক্রয় কার্যক্রমে জড়িত ছিল না। তারা পরিশ্রম করে উপার্জনের পক্ষে। মেরালি বিডলি নামক একটি আইনি পরামর্শক সংস্থা রহমান পরিবারে ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি সম্পত্তি এবং বাংলাদেশের সেই শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠীর এক সদস্যের মালিকানাধীন আরেকটি ৮ মিলিয়ন পাউন্ডের বাড়ির ওপর ‘অ্যাপ্লিকেশন ফর ডিলিং’ জমা দিয়েছিল। তারাও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘পেশাদার পরিষেবা সংস্থাগুলোর উচিত তদন্তাধীন ক্লায়েন্টদের জন্য নিয়ন্ত্রিত কার্যক্রম পরিচালনার সময় চরম সতর্কতা অবলম্বন করা। তাদের সম্পদের উৎসের পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করা উচিত এবং অবিলম্বে কোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ পুলিশকে জানানো উচিত। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে, এই তহবিল আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায় হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে, যা সম্ভবত আর পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

  • যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা
  • বিপিসির নথি বলছে, আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি আছে
 আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮: ৩১
বোরো ধানের মৌসুম: সেচ মৌসুমে জ্বালানিতে টান

বোরো ধানের মৌসুমে দেশে জ্বালানি মজুতে টান পড়েছে। বর্তমান ডিজেলের মজুত একেবারেই তলানিতে রয়েছে। সরকারি তেল বিপণনকারী তিনটি কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলে মজুত প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে তিন মাসের জ্বালানি মজুত থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে আর ১৩ থেকে ২০ দিনের জ্বালানি তেলের মজুত রয়েছে। যদিও বিপিসির দাবি, দেশে জ্বালানি-সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা নেই।

বিপিসির মজুত প্রতিবেদনে জানা যায়, ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ডিজেল ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৪৯৭ টন মজুত রয়েছে। এর মধ্যে দেশের ২৪টি ডিপোর ট্যাংকে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮২৯ টন মজুত রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন লাইটার জাহাজসহ ট্রানজিটে রয়েছে ৪৯ হাজার ৬৬৮ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১৬ হাজার ৬০১ টন ডিজেল সারা দেশে বিক্রি করা হয়েছে। সে হিসাবে দেখা যায়, বর্তমানে বিপিসির কাছে ২০ দিনের ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে বিপিসি বিভিন্ন ডিপোতে পেট্রল মজুত আছে ২২ হাজার ১১৪ টন। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৬১৮ টন পেট্রল বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে পেট্রল ১৩ দিনের মজুত আছে।

বিপিসির ২৩ ডিসেম্বরের স্টক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে মোট ২৮ হাজার ২৭০ টন অকটেন মজুত রয়েছে। ২২ ডিসেম্বর বিপিসির বিক্রয় প্রতিবেদনে দেখা যায়, এদিন ১ হাজার ৮৮৫ টন অকটেন বিক্রি করা হয়েছে। এই হিসাবে বিপিসির কাছে ১৫ দিনের অকটেন মজুত আছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিপিসির পরিচালক এ কে এম আজাদুর রহমান জানান, সারা দেশে ২৫ দিনের অকটেন ও পেট্রল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ডিজেল ৩৫ দিনের মজুত রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। দেশে ডিজেলের মজুত কম কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন শুষ্ক মৌসুমে সব জায়গায় বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে। তাই ডিজেলের চাহিদা কম।

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান মেঘনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৫ হাজার ৬৯৫ টন অকটেন মজুত রয়েছে। আর পেট্রল মজুত রয়েছে ৪ হাজার ২৯৫ টন। সারা দেশের ১৭টি ডিপোতে ৯২ হাজার ৮৯৫ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। একইভাবে সরকারি তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারা দেশে ১৭টি ডিপোতে ৮০ হাজার ২১৩ টন ডিজেল মজুত রয়েছে। এ ছাড়া ২ হাজার ৯১৪ টন পেট্রল এবং ৪ হাজার ১৮৭ টন অকটেন মজুত রয়েছে। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ ডিসেম্বরের মজুত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফতুল্লা, রাজশাহী, হরিয়ান, চিলমারী ডিপোতে কোনো জ্বালানি তেল নাই। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের নাটোর ডিপোতে ৩০ টন, রংপুর ডিপোতে ৫৭ টন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিপোতে ২ টন ডিজেল রয়েছে।

নাম না প্রকাশে সরকারি তেল বিপণনকারী এক কর্মকর্তা জানান, বিপিসির আমদানি করা জ্বালানি তেলের মজুত আশঙ্কাজনকভাবে কম রয়েছে। ডিজেলের মজুত একবারেই কম। তাঁর মতে ১৩ থেকে ১৫ দিনের জ্বালানি মজুত রয়েছে বর্তমানে।

পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক আসিফ মালিক বলেন, দেশে পর্যাপ্ত জ্বালানি মজুত রয়েছে। সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। নিয়মিতভাবে জ্বালানি তেলের জাহাজ আসা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান।

তবে গাজীপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবদুল মোমিন বলেন, দেশে ধান উৎপাদনের জন্য সবচেয়ে বড় মৌসুম হচ্ছে বর্তমান বোরো মৌসুম। এ সময় প্রায় ৫২ লাখ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। এই মৌসুমে জ্বালানি-সংকট হলে সেটা দেশের খাদ্য উৎপাদনে ছেদ পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজবাড়ীতে গণপিটুনিতে অমৃত মন্ডল নিহতের ঘটনা সাম্প্রদায়িক হামলা নয়: প্রেস উইং

রাজবাড়ীর পাংশা থানাধীন এলাকায় গত বুধবার রাতে সংঘটিত একটি দুঃখজনক হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে।

পুলিশের তথ্য ও প্রাথমিক তদন্ত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে, ঘটনাটি মোটেই সাম্প্রদায়িক হামলা নয়। এটি চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত সহিংস পরিস্থিতির থেকে সৃষ্ট ঘটনা। নিহত ব্যক্তি শীর্ষ সন্ত্রাসী অমৃত মন্ডল ওরফে সম্রাট চাঁদা দাবির উদ্দেশ্যে এলাকায় উপস্থিত হন এবং বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের একপর্যায়ে প্রাণ হারান। তিনি ইতিপূর্বে ২০২৩ সালে রুজুকৃত হত্যা, চাঁদাবাজির মামলাসহ একাধিক গুরুতর মামলার আসামি ছিলেন। এসব মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।

পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সম্রাটের সহযোগী সেলিমকে একটি বিদেশি পিস্তল, ১টি পাইপগানসহ আটক করে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার কঠোর নিন্দা জানায়। সরকার সুস্পষ্টভাবে জানাতে চায়, যেকোনো ধরনের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড, গণপিটুনি বা সহিংসতা সরকার কোনোভাবেই সমর্থন করে না। এ ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

একই সঙ্গে সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে, একটি মহল নিহত ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয়কে সামনে এনে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক হামলা হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসদুদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ধরনের অপপ্রচার সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে।

সরকারসংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং বিভ্রান্তিকর, উসকানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে।

আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, এ দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার যেকোনো অপচেষ্টা সরকার কঠোরহস্তে দমন করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের আগমনে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে: প্রেস সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আগমনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ হবে বলে মনে করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। আজ বৃহস্পতিবার বড়দিন উপলক্ষে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পবিত্র জপমালা রাণী গির্জায় খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যান শফিকুল আলম। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা তাঁকে (তারেক রহমান) স্বাগত জানাই। উনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দলের নেতা এবং আমি বলব তাঁর বাংলাদেশে আসা খুবই একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশে তো সত্যিকার অর্থে কিছু রাজনৈতিক শূন্যতা আছে। উনি আসলে সেটা পূরণ হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সামনে আমাদের একটা বড় ইলেকশন, আমরা একটা ডেমোক্রেটিক ট্রানজিশনে (গণতান্ত্রিক উত্তরণে) আছি। আমরা আশা করছি, আমাদের এই ট্রানজিশনটা আরও স্মুথ হবে।’

তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘তাঁর নিরাপত্তা তো তাঁর পার্টি দেখছেন, তবে তাঁরা আমাদের কাছে যেই ধরনের সহযোগিতা চাচ্ছেন, আমরা সব সহযোগিতাই করছি।’

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটটি যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে সকাল ৯টা ৫৬ মিনিটে সিলেটে আসে। সিলেটে যাত্রাবিরতি শেষে ফ্লাইটটি বেলা ১১টা ৩৯ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে তাঁর বাসটি সংবর্ধনাস্থলে আসে। কিছুক্ষণ আগে তিনি মঞ্চে অবস্থান নিয়ে তিনি বক্তব্য শুরু করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিনে বঙ্গভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন রাষ্ট্রপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎস বড়দিনে খ্রিষ্টান ধর্মের বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে তিনি এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বলে বঙ্গভবনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বড়দিনের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ছবি: আজকের পত্রিকা

সেখানে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি দেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়সহ বিশ্ববাসীর প্রতি বড় দিনের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান। জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে এ দেশের মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি চিরকাল অটুট ও অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত