সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম পানি দিয়ে। ভুবন বলেছিল গোসল করবে না। আমি নিশ্চিন্ত মনে গিজারের গরম পানি গায়ে ঢেলে গোসল করে বের হয়েছি। ওদিকে উনি গিয়ে কোনো রকম অপেক্ষা ছাড়া ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল সেরে আসলেন। ভাবা যায়! মাইনাসের তাপমাত্রায় একটা মানুষ কনকনে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করেছেন! যাই হোক, গোসল সেরে খুব ফুরফুরে লাগছিল দুজনেরই। আমার তো ক্ষুধায় জান যায় যায় অবস্থা। সাতটার দিকে রুম থেকে বের হয়ে খাবার ঘরের দিকে যাব, এমন সময় হঠাৎ হোটেলের পেছন দিকে চোখ চলে গেল।
রীতিমতো চিৎকার করে ডাকলাম, ‘ভুবন, জলদি এদিকে আসো।’ ভুবনও যথারীতি চলে এল এবং আমার মতো হা করে তাকিয়ে রইল। সত্যি, একেবারে মুখটা খুলে গোল করে হা করে ছিলাম আমরা! হোটেলের পেছন থেকে সুবিশাল পাহাড় দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় ধবধবে সাদা বরফ। এ দৃশ্য তো সামনাসামনি কখনো দেখা হয়নি। ছবির চেয়ে কত সুন্দর এই সৃষ্টি। বলে বা লিখে বোঝানো যাবে না। না, একটা স্থিরচিত্র দেখেও বুঝবেন না। চলচ্চিত্রে দেখেও না। এর আসল রূপ শুধু এবং শুধুমাত্র সামনাসামনি দেখতে হয়। কিছুক্ষণ হা করে দাঁড়িয়ে থেকে সংবিৎ ফিরে এলে ভুবন ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিল। এরপর চলে গেলাম খেতে। আমরা দুজন ছাড়া কেউ তখনো রুম থেকে বের হননি। গিয়ে দেখি ম্যানেজার সাহেব দুপুরের খাবারের আয়োজন করছেন।
সকালের নাশতা তৈরি। জ্যাম আর বাটার স্যান্ডউইচ। সঙ্গে এলাচি চা। জ্যাম জিনিসটা আমার ভালো লাগে না। অতিমাত্রায় মিষ্টি মনে হয়। বাটার স্যান্ডউইচ খেলাম তাই। চা তো খেলামই। এরপর সবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সবাই যখন একে একে আসতে শুরু করল নাশতার জন্য, আমি ওদিকে ম্যানেজারের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলাম। তিনি হিন্দি, বাংলা দুটোই পারেন। কথায় কথায় তখনই জানলাম তিনিই এখানকার সবকিছু একা দেখাশোনা করেন। রান্নাঘর আর খাবার ঘর থেকে হোটেলের সামনের রাস্তা দেখা যায়। দেখা যায় অদূরের বিশাল পাহাড়গুলো। আর চূড়ায় চূড়ায় মনে হয় কেউ সাদা দুধ ঢেলে দিয়েছে।
পাহাড়ের রাস্তা ধরে মাঝে মাঝে গরু-ছাগল হেঁটে যেতে দেখলাম। এদিকের পশু বা প্রাণীগুলোর লোম অনেক বড় বড় হয়। গ্যাংটক থেকে লাচুং আসা পর্যন্ত অনেক কুকুর দেখেছি, খুব সুন্দর। এদের লোমও বড় বড়। ভুবন বলছিল, শীতপ্রধান এলাকায় পশুদের লোম এমন বড় বড় হয়। এতে করে শীতের প্রকোপটা ওরা সয়ে নিতে পারে। ম্যানেজার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘গরুগুলো কি পাহাড়ি বা বুনো?’ উত্তরে তিনি না বললেন। এদিকে মোটামুটি সবাই গরু পালে। ছাগলও পালে। ‘তাহলে এরা এমন একা বাঁধন ছাড়া ঘুরছে কেন?’ ম্যানেজার সাহেব বললেন, এরা জানে বেলাশেষে কোন ঘরে ফিরতে হবে। আমি বললাম, ‘আজব তো! কেউ চুরি করে নিয়ে গেলে?’ নাহ, চুরি করে না কেউ। সারা দিন ঘর খোলা রাখলেও কেউ চুরি করতে ঢুকবে না। আহা, এমন যদি সবখানে হতো! মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। ম্যানেজার সাহেবের কাছ থেকে আরও জানলাম এখানে সবাই চাষবাস করেই চলে। পাহাড়ি এলাকায় যেমন সবজি হয়, সেগুলো চাষ করে নিজেদের মধ্যেই বিকিকিনি হয়। বাইরে থেকে আনা-নেওয়াটা খুব কম হয়। তাই সবকিছু এখানে পাওয়াও যায় না। ম্যানেজারের কথায় প্রমাণ পেলাম। রান্নাঘরে তাকে সারি করে সাজিয়ে রাখা সব টিনজাত খাবার। একটা টিন খুলে মটর বের করে সবজির কড়াইতে ঢেলে দিলেন। তেলে-আগুনে ছ্যাঁৎ করে উঠল। আমি বাইরে তাকিয়ে একপলকে প্রকৃতি দেখছিলাম। আর শুনছিলাম রান্নার ছ্যাঁৎ ছ্যাঁৎ শব্দ। মাথাটা কেমন যেন ভার ভার হয়ে আসছিল।
সবার নাশতা খাওয়া শেষ হলে পান্ডেজির সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম ইয়ামথাং ভ্যালির উদ্দেশে। সেই আমরা ৯জন। জিপ নিয়ে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে আরও ওপরের দিকে উঠছিলাম। সীমানা অঞ্চল। তাই এদিকে সেনাবাহিনীর ঘাঁটি আছে। একটু পরপর সেনাবাহিনীর কয়েকটা চেকপোস্ট। জিপ আটকে দেখে নেয় সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না। পান্ডেজি আগেই বলে দিলেন, ‘ডরনা নেহি। নেইতো সক করেগা।’ ভয় পেলেই সন্দেহ করবে বলে আমরা সব দাঁত বের করে ভেটকি দিয়ে রইলাম প্রতিবার। বাকিটা পান্ডেজি সামলে নিলেন। যেতে যেতে খেয়াল করলাম রাস্তার দুই ধারে বরফ জমে আছে। সন্দেহ রইল না যে রাতে তুষারপাত হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে হয়েছিল বলে তেমন টের পাইনি। পান্ডেজি আরেকটা ব্যাপারে সাবধান করে দিলেন, ‘ফটো নেহি লেনা।’ হুম, সাইনবোর্ডে লেখা ছিল, পড়েছি। যাত্রাপথে ক্যামেরা বের করা যাবে না। ছবি তোলা তো দূরের কথা। সেনারা দেখলে রেখেই দেবে। ওদিকটায় ছবি তোলা নিষেধ। আর যখন থেকে সিকিমে প্রবেশ করেছি আমরা, কোথাও কোনো ময়লা দেখিনি রাস্তায়। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা তো নিষেধই। আবার উত্তরে প্রবেশ করলে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করা নিষেধ। প্লাস্টিকের পানির বোতলও পাবেন না। তবে চিপস পাওয়া যাবে প্লাস্টিকের চেনা প্যাকেটে। সেটা আবার যথাস্থানে ফেলতে হবে। মন চাইলেই হাওয়ায় ভাসানো যাবে না। নইলে জরিমানা গুনে ফকির হতে হবে। খুব ভালো লাগল দেখতে, সেখানকার মানুষ এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে মেনে চলে। বাইরের দর্শনার্থীরা এসে যদি নিয়ম ভঙ্গ করে তবে সাধারণ মানুষেরাই অনেক রেগে যায়।
খুব বেশি হলে আধা ঘণ্টা। এর মধ্যে ইয়ামথাং ভ্যালির ফটকের সামনে চলে আসলাম। কিছুদূর আগে দেখেছিলাম রোডোডেন্ড্রন স্যাংকচুয়ারির ফটক। সেটা তখন বন্ধ ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে রোডোডেন্ড্রন ফুল ফোটে না। তাই আর তার সৌন্দর্য দেখা গেল না। যাই হোক, জিপ থেকে নেমে চারদিকে মাথা ঘুরিয়ে নিলাম। অদ্ভুত সুন্দর! ভুবন বলল, ‘অমায়িক সৌন্দর্য!’ ফটক দিয়ে প্রবেশের আগে দেখলাম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কেউ বিক্রি করছেন বিয়ার, কেউ ম্যাগি নুডুলস, সঙ্গে পানি, কেউ ভাড়া দিচ্ছেন রবার বুট ও দস্তানা। এই বুটগুলো পরে যেতে একরকম জোরাজুরিই করছিলেন ব্যবসায়ীরা।
আমাদের পরা বুটগুলো নাকি বরফে নষ্ট হয়ে যাবে। অগত্যা নিজেদের বুট খুলে ভাড়া নিলাম তাঁদেরগুলো। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলার জন্য দস্তানাও নিতে হলো। ওইগুলো হাতে-পায়ে পরতেই মনে হলো বরফ পরে আছি। এত ঠান্ডা! যে নারী ভাড়া দিলেন, তিনি বোঝালেন যে একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু নাহ, সারাক্ষণ এই ঠান্ডা নিয়েই চলতে হয়েছিল। ফটক দিয়ে হেঁটে প্রবেশ করলাম সবাই। যে যার মতো করে বরফ নিয়ে খেলা শুরু করেছিল।
এদিকে মাথার ভারটাকে পাত্তা দিচ্ছিলাম না আমি। মনে জোর নিয়ে আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। ছবি তুললাম। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলাটাও খেললাম ভুবনের সঙ্গে। একটা সময় আর পারছিলাম না। হাত-পা ঠান্ডায় জমে গিয়েছিল। নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল মাথা ঘুরে পড়ে যাব। না পেরে ভুবনকে বললাম আমার খারাপ লাগছে। সঙ্গের ভাইয়েরা শুনে একেক জন একেক ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া শুরু করলেন। কারণ ওই পাঁচজন কোনো না কোনো ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। কেউ একজন দৌড়ে গিয়ে দশ রুপি দিয়ে এক গ্লাস পানি এনে দিলেন। আমার চোখ ঘোলা হয়ে আসছিল। কান স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কেউ পানি দিলেন, তো কেউ ওষুধ দিলেন। খেয়ে একটা গাছের নিচে বসলাম।
অপেক্ষা করছিলাম। আমার জন্য কারও যেন মজা করা মাটি না হয়ে যায়। কেউ একজন এসে খবর দিলেন একটা জায়গায় আগুন পোহানো যাচ্ছে। গেলাম সেখানে। একটা ভাঙা গাছ বেঞ্চির মতো শোয়ানো। তার পাশে আগুন জ্বলছে। গাছের এক পাশে বসে আগুন পোহাতে লাগলাম। সবাইকে আনন্দ করতে দেখছিলাম। যদিও আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছিল। আমাদের দলটা যে যার মতো ভাগ হয়ে আনন্দ করছিল। ভুবন বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের সঙ্গে ছিল। ফিরে এসে বলতে লাগল, ‘আমারও খারাপ লাগছে। চলো আমরা ধীরে ধীরে গাড়ির দিকে আগাই। ওনারা আসুক।’ মাসুম ভাইকে বলে আমরা সামনের দিকে এগোতে থাকলাম। ভ্যালির ফটক থেকে বের হয়ে রাবার বুট আর দস্তানা ফেরত দিয়ে আমাদের বুটগুলো নিয়ে নিলাম। একটা বেঞ্চিতে বসে জুতা খোলা ও পরা যায়। পান্ডেজিকে না পেয়ে সেই বেঞ্চিতে বসে ছিলাম। এদিকে আমার শ্বাসকষ্ট বেড়েই চলছিল। একজন ভদ্রমহিলা এসে আমাকে সরতে বললেন। তিনি বসে জুতা বদলাবেন। সঙ্গে তাঁর পরিবারের আরও সদস্য অপেক্ষা করছেন দাঁড়িয়ে। তাঁরাও বদলাবেন। আমি একপাশ হয়ে গিয়ে অনুরোধ করলাম আমাকে একটু বসে থাকতে দিতে। তিনি বুঝতে পারলেন আমার শরীর বেজায় খারাপ করেছে। হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ক্যায়া হুয়া বেটা?’ বললাম শ্বাস নিতে পারছি না। তাঁর মেয়ে অথবা ছেলের বউ হবেন, তিনি এগিয়ে এসে আমাকে একটা ছোট পুঁটলি দিলেন। সুতি রুমালে কর্পূর ছিল সেটাতে। বললেন এটা নাকে ধরে শুঁকতে। কিছুক্ষণ ইনহেলারের মতো ব্যবহার করার পর দেখলাম ভালোই লাগছে। জিনিসটা তাঁদের ফেরত দিতে চাইলাম। তাঁরা কিছুতেই নিতে চাইলেন না। বললেন, ‘হামারে পাস অউর ভি হ্যায়। ইয়ে তুম রাখলো।’ পরামর্শ দিলেন এত উঁচু জায়গায় আসলে এই কর্পূরের ছোট পুঁটলি সঙ্গে রাখতে। কম-বেশি সবারই নাকি উঁচুতে উঠলে শ্বাসকষ্ট হয়। তাঁরা জানেন বলেই সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। আমাকে তাঁরা জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি কোথা থেকে এসেছি। খুব গর্ব লাগছিল বলতে, ‘বাংলাদেশ থেকে।’ তাঁরা এসেছিলেন গুজরাট থেকে। আমাকে গুজরাটে যাওয়ার দাওয়াত দিয়ে দিলেন। আমিও তাঁদের বাংলাদেশে আসার নিমন্ত্রণ দিলাম। তাঁরা বিদায় নিতে গেলে দুই ভদ্রমহিলাকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানালাম। তাঁরাও আমার ব্যবহারে মুগ্ধ। খুব হাসিখুশি মুখে বিদায় নিলেন। একটু পরপর কর্পূরের পুঁটলিটা নাকে ধরে নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে মাসুম ভাই এসে পান্ডেজিকে খুঁজে আমাদের গাড়িতে গিয়ে বসতে বললেন। জানালেন, ‘আকাশ ভাইদের খুঁজে পাচ্ছি না। ওনারা এলেই আমরা ফিরতে পারি।’ আকাশ ভাই আর সঙ্গে কে কে যেন কোন একটা বরফের পাহাড়ে চড়তে গিয়েছিলেন। শরীর ভালো থাকলে হয়তো আমরাও যেতাম। খুব আফসোস লাগছিল। ইয়ামথাং কি তাহলে অভিশাপ দিয়েছিল আমাদেরকে?
গাড়িতে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম আমি আর ভুবন। মাসুম ভাই দুটো ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে গেছেন। প্যারাসিটামল। আমাদের জ্বর এসেছে। অবস্থা গুরুতর। এটা না বললে কেউ ফিরবে না। তাই মাসুম ভাই খিটমিট করতে করতে আবার খুঁজতে চলে গেলেন বাকিদেরকে। এদিকে ওই দলটা জিরো পয়েন্ট থেকে ঘুরে ইয়ামথাং ভ্যালিতে চলে এসেছে। তারাও আনন্দ-ফুর্তিতে ব্যস্ত। অবশ্য আমাদের দলের সদস্যদের আরও আগেই তাদের ঘোরাঘুরি শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারা এসেই বলছিল, ‘কেন যে জিরো পয়েন্টে গেলাম। এখানেই তো ভালো ছিল!’ আমরা মাসুম ভাইয়ের দেওয়া ওষুধ খেয়ে চুপচাপ বসে ছিলাম। ভুবনের কপাল ধরে দেখি বেশ ভালো জ্বর। আমারও তাই। আমার চেয়ে ওর শ্বাসকষ্ট কম হচ্ছিল। কর্পূরের পুঁটলিটা একবার আমার নাকে, আরেকবার ওর নাকে ধরছিলাম। নিজের ঘর আর বিছানাটাকে তখন কী পরিমাণ যে মনে করছিলাম তা বলে বোঝাতে পারব না। সেই সঙ্গে আম্মুকে। সবারই নিশ্চয়ই অসুখ হলে মায়ের কথা বেশি মনে পড়ে? ভুবন হয়তো আমার শাশুড়িকে মনে করছিল। কী জানি? বলেনি। ইংরেজিতে ভুবনকে বললাম, ‘আই মিস হোম।' বলেই কান্না শুরু করলাম। শুধু বাড়ি ফিরতে ইচ্ছা করছিল বলে। ভুবন বলল, ‘ঠিক আছে। আর কখনো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব না।’ এটা কেমন কথা? বললাম, ‘কেন যাব না? অবশ্যই যাব। আরও বেশি বেশি প্রস্তুতি নিয়ে যাব। আর বেশি বেশি সাবধান থাকব।’
প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করার পর সবাই ফিরে এলেন। ফিরেই বাগ্বিতণ্ডায় লেগে গেলেন আকাশ ভাই আর মাসুম ভাই। মাসুম ভাইয়ের কথা হচ্ছে, ‘দেখলেন যে ওনারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাহলে দেরি করলেন কেন? ওনাদের তো হোটেলে ফিরে একটু বিশ্রাম দরকার। আপনারা না ফিরলে তো যেতেও পারছেন না।’ এদিকে আকাশ ভাইয়ের কথা, ‘আরে ভাই আমি তো জানিই না ওনারা এত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জানলে কি আর দেরি করতাম?’ মাসুম ভাই বলেন, ‘কেন জানবেন না? না জানার কী আছে?’ আকাশ ভাই যতই বোঝাচ্ছিলেন যে তিনি জানতেন না, মাসুম ভাই ততই রেগে যাচ্ছিলেন। আর আমরা দুজন বাকিদের মতো হা করে তাকিয়ে দেখছিলাম। শেষমেশ ভুবন এগিয়ে বলল, ‘ভাই, আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা চাইনি আমাদের জন্য আপনাদের আনন্দটা মাটি হয়ে যাক। এখন চলেন ফিরে যাই। একটু বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাব।’ তারপরেও দু-এক বাক্য তাঁরা একে অপরকে ছুড়ে দিয়ে গাড়িতে উঠলেন। সেই ঝগড়া অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেনি।
ফিরতি পথে সেনারা আটকায়নি। এবার আরও অল্প সময়ে হোটেলে ফিরে এলাম। বারোটার মতো বাজে তখন। হাতে অনেক সময় আছে। দুপুরের খাবার খেয়েই গ্যাংটকের দিকে রওনা দেব। রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম দুজনেই। ঘুম দরকার ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে দরজায় খটখট করল কে যেন। ভুবন দরজা খুলে দিল। মাসুম ভাই এসে দেখলেন আমাদের জ্বর কেমন। পরে দুজনকে দুইটা প্যারাসিটামল আর গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। এঁরা মনে হয় পুরো ওষুধ কোম্পানিটাই সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন! আমরাও বাধ্য ছেলেমেয়ের মতো খেয়ে শুয়ে পড়লাম আবার। জ্বরের যে অবস্থা ছিল, ওষুধ না খেয়ে উপায় ছিল না। তখন এটাই মনে হয়েছিল। ঘণ্টা দুই ঘুম দিয়ে খেতে চলে গেলাম। ইতিমধ্যে সব দলের সবাই জেনে গেছেন আমরা জ্বরে পড়েছি।
একেকজন খুব দুশ্চিন্তা দেখাচ্ছিলেন। আহা-উহু করছিলেন। নানা পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তবে এ কথা বলতেই হয় যে আমাদের দলের বাকি সাত সদস্য, অমরদা আর মিলন ভাই যথেষ্ট যত্নশীল ছিলেন দুজনের প্রতি। অমরদা জানালেন সমতল থেকে আমরা প্রায় ১৪ হাজার ফুট ওপরে উঠেছিলাম। সেখানে প্রতিকূল আবহাওয়ায় শ্বাসকষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর তিনি সতর্ক করেছিলেন সেদিককার বৃষ্টির পানি যেন মাথায় না লাগে। নির্ঘাত জ্বর আসবে। কখন যে দুই-এক ফোঁটা মাথায় পড়েছিল টের পাইনি। তার ওপর ভোর সকালে করেছিলাম গোসল। তাও মাইনাসের তাপমাত্রায়। ভুবন ঢেলেছিল ঠান্ডা পানি। জ্বর আমাদের হবে না তো কার হবে?
খেতে বসেছি এমন সময় বড় দলের নেতা কিসিমের লোকটা এসে বললেন, ‘কী? কে নাকি অসুস্থ? জ্বর হইসে কার?’ বললাম আমাদের। তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে লোকটা বললেন, ‘এএহহহ! আবার ঘুরতে আইছে!’ টিটকারি করে বলুক কিংবা মজা করেই বলুক, লোকটার কথা আমার পছন্দ হলো না। উত্তর দিইনি। বুদ্ধিমত্তা যাঁদের মাইনাসের কোঠায় থাকে, তাঁদের কথার জবাব দিতে হয় না! এমনিতেই তাঁদের লোক দেখানো স্বভাব দেখে বিরক্ত লাগছিল। তার ওপর প্রথম দিন থেকে দেখছি মদ খেয়ে টাল হয়ে ছিলেন। হিম দেশে রাস্তায় রাস্তায় ঝুড়িতে করে মদ, বিয়ার বেচবেই। তা বলে দেদার কিনে গলা অবধি গিলতে হবে? হুম, তা ঠিক যে নিজের টাকা নিজে খরচ করছেন, তাতে কার কী! সমস্যা হচ্ছে, টাকা খরচ করে মাতাল হয়ে যে কারও সঙ্গে যা তা আচরণ করা। এই যেমন আগের রাতে অমরদাকে পারলে পিটিয়ে মেরে ফেলতেন। কেন সবখানে নিয়ে যেতে পারছিলেন না এই কারণে!
খাওয়াদাওয়া সেরে ব্যাগ গুছিয়ে উঠানে বসে অপেক্ষা করছিলাম। দুই দল একসঙ্গে রওনা দেবে। বড় দলের সবাই তখনও প্রস্তুত না। কিছুটা কমে এসেছিল জ্বর। একটু ভালো লাগছিল বলে পান্ডেজির সঙ্গে গল্প করা শুরু করে দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম সালমান খানের ‘দাবাং’ সিনেমাটা দেখা হয়েছে কি না। তিনি দেখেছেন। পরে তাঁকে জানালাম কেন আমি তাঁকে পান্ডেজি বলে ডাকি। তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘কাহা ম্যায় অউর কাহা সালমান খান!’ আমিও হেসে বললাম, ‘হামারে লিয়ে তো আপহি সালমান খান হ্যায়, পান্ডেজি।’ আমার বিশ্বাস, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ গল্প আছে। আর সেই গল্পের নায়ক তাঁরা নিজেই। পান্ডেজিকে শুধু এই জিনিসটা উপলব্ধি করাতে চাচ্ছিলাম।
তিনটার দিকে সবাই গাড়িতে চড়ে বসলাম। ভটভট করতে করতে জিপ চালু হয়ে গেল। ফিরছিলাম গ্যাংটক।
চলবে...

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম পানি দিয়ে। ভুবন বলেছিল গোসল করবে না। আমি নিশ্চিন্ত মনে গিজারের গরম পানি গায়ে ঢেলে গোসল করে বের হয়েছি। ওদিকে উনি গিয়ে কোনো রকম অপেক্ষা ছাড়া ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল সেরে আসলেন। ভাবা যায়! মাইনাসের তাপমাত্রায় একটা মানুষ কনকনে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করেছেন! যাই হোক, গোসল সেরে খুব ফুরফুরে লাগছিল দুজনেরই। আমার তো ক্ষুধায় জান যায় যায় অবস্থা। সাতটার দিকে রুম থেকে বের হয়ে খাবার ঘরের দিকে যাব, এমন সময় হঠাৎ হোটেলের পেছন দিকে চোখ চলে গেল।
রীতিমতো চিৎকার করে ডাকলাম, ‘ভুবন, জলদি এদিকে আসো।’ ভুবনও যথারীতি চলে এল এবং আমার মতো হা করে তাকিয়ে রইল। সত্যি, একেবারে মুখটা খুলে গোল করে হা করে ছিলাম আমরা! হোটেলের পেছন থেকে সুবিশাল পাহাড় দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় ধবধবে সাদা বরফ। এ দৃশ্য তো সামনাসামনি কখনো দেখা হয়নি। ছবির চেয়ে কত সুন্দর এই সৃষ্টি। বলে বা লিখে বোঝানো যাবে না। না, একটা স্থিরচিত্র দেখেও বুঝবেন না। চলচ্চিত্রে দেখেও না। এর আসল রূপ শুধু এবং শুধুমাত্র সামনাসামনি দেখতে হয়। কিছুক্ষণ হা করে দাঁড়িয়ে থেকে সংবিৎ ফিরে এলে ভুবন ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিল। এরপর চলে গেলাম খেতে। আমরা দুজন ছাড়া কেউ তখনো রুম থেকে বের হননি। গিয়ে দেখি ম্যানেজার সাহেব দুপুরের খাবারের আয়োজন করছেন।
সকালের নাশতা তৈরি। জ্যাম আর বাটার স্যান্ডউইচ। সঙ্গে এলাচি চা। জ্যাম জিনিসটা আমার ভালো লাগে না। অতিমাত্রায় মিষ্টি মনে হয়। বাটার স্যান্ডউইচ খেলাম তাই। চা তো খেলামই। এরপর সবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সবাই যখন একে একে আসতে শুরু করল নাশতার জন্য, আমি ওদিকে ম্যানেজারের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলাম। তিনি হিন্দি, বাংলা দুটোই পারেন। কথায় কথায় তখনই জানলাম তিনিই এখানকার সবকিছু একা দেখাশোনা করেন। রান্নাঘর আর খাবার ঘর থেকে হোটেলের সামনের রাস্তা দেখা যায়। দেখা যায় অদূরের বিশাল পাহাড়গুলো। আর চূড়ায় চূড়ায় মনে হয় কেউ সাদা দুধ ঢেলে দিয়েছে।
পাহাড়ের রাস্তা ধরে মাঝে মাঝে গরু-ছাগল হেঁটে যেতে দেখলাম। এদিকের পশু বা প্রাণীগুলোর লোম অনেক বড় বড় হয়। গ্যাংটক থেকে লাচুং আসা পর্যন্ত অনেক কুকুর দেখেছি, খুব সুন্দর। এদের লোমও বড় বড়। ভুবন বলছিল, শীতপ্রধান এলাকায় পশুদের লোম এমন বড় বড় হয়। এতে করে শীতের প্রকোপটা ওরা সয়ে নিতে পারে। ম্যানেজার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘গরুগুলো কি পাহাড়ি বা বুনো?’ উত্তরে তিনি না বললেন। এদিকে মোটামুটি সবাই গরু পালে। ছাগলও পালে। ‘তাহলে এরা এমন একা বাঁধন ছাড়া ঘুরছে কেন?’ ম্যানেজার সাহেব বললেন, এরা জানে বেলাশেষে কোন ঘরে ফিরতে হবে। আমি বললাম, ‘আজব তো! কেউ চুরি করে নিয়ে গেলে?’ নাহ, চুরি করে না কেউ। সারা দিন ঘর খোলা রাখলেও কেউ চুরি করতে ঢুকবে না। আহা, এমন যদি সবখানে হতো! মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। ম্যানেজার সাহেবের কাছ থেকে আরও জানলাম এখানে সবাই চাষবাস করেই চলে। পাহাড়ি এলাকায় যেমন সবজি হয়, সেগুলো চাষ করে নিজেদের মধ্যেই বিকিকিনি হয়। বাইরে থেকে আনা-নেওয়াটা খুব কম হয়। তাই সবকিছু এখানে পাওয়াও যায় না। ম্যানেজারের কথায় প্রমাণ পেলাম। রান্নাঘরে তাকে সারি করে সাজিয়ে রাখা সব টিনজাত খাবার। একটা টিন খুলে মটর বের করে সবজির কড়াইতে ঢেলে দিলেন। তেলে-আগুনে ছ্যাঁৎ করে উঠল। আমি বাইরে তাকিয়ে একপলকে প্রকৃতি দেখছিলাম। আর শুনছিলাম রান্নার ছ্যাঁৎ ছ্যাঁৎ শব্দ। মাথাটা কেমন যেন ভার ভার হয়ে আসছিল।
সবার নাশতা খাওয়া শেষ হলে পান্ডেজির সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম ইয়ামথাং ভ্যালির উদ্দেশে। সেই আমরা ৯জন। জিপ নিয়ে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে আরও ওপরের দিকে উঠছিলাম। সীমানা অঞ্চল। তাই এদিকে সেনাবাহিনীর ঘাঁটি আছে। একটু পরপর সেনাবাহিনীর কয়েকটা চেকপোস্ট। জিপ আটকে দেখে নেয় সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না। পান্ডেজি আগেই বলে দিলেন, ‘ডরনা নেহি। নেইতো সক করেগা।’ ভয় পেলেই সন্দেহ করবে বলে আমরা সব দাঁত বের করে ভেটকি দিয়ে রইলাম প্রতিবার। বাকিটা পান্ডেজি সামলে নিলেন। যেতে যেতে খেয়াল করলাম রাস্তার দুই ধারে বরফ জমে আছে। সন্দেহ রইল না যে রাতে তুষারপাত হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে হয়েছিল বলে তেমন টের পাইনি। পান্ডেজি আরেকটা ব্যাপারে সাবধান করে দিলেন, ‘ফটো নেহি লেনা।’ হুম, সাইনবোর্ডে লেখা ছিল, পড়েছি। যাত্রাপথে ক্যামেরা বের করা যাবে না। ছবি তোলা তো দূরের কথা। সেনারা দেখলে রেখেই দেবে। ওদিকটায় ছবি তোলা নিষেধ। আর যখন থেকে সিকিমে প্রবেশ করেছি আমরা, কোথাও কোনো ময়লা দেখিনি রাস্তায়। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা তো নিষেধই। আবার উত্তরে প্রবেশ করলে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করা নিষেধ। প্লাস্টিকের পানির বোতলও পাবেন না। তবে চিপস পাওয়া যাবে প্লাস্টিকের চেনা প্যাকেটে। সেটা আবার যথাস্থানে ফেলতে হবে। মন চাইলেই হাওয়ায় ভাসানো যাবে না। নইলে জরিমানা গুনে ফকির হতে হবে। খুব ভালো লাগল দেখতে, সেখানকার মানুষ এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে মেনে চলে। বাইরের দর্শনার্থীরা এসে যদি নিয়ম ভঙ্গ করে তবে সাধারণ মানুষেরাই অনেক রেগে যায়।
খুব বেশি হলে আধা ঘণ্টা। এর মধ্যে ইয়ামথাং ভ্যালির ফটকের সামনে চলে আসলাম। কিছুদূর আগে দেখেছিলাম রোডোডেন্ড্রন স্যাংকচুয়ারির ফটক। সেটা তখন বন্ধ ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে রোডোডেন্ড্রন ফুল ফোটে না। তাই আর তার সৌন্দর্য দেখা গেল না। যাই হোক, জিপ থেকে নেমে চারদিকে মাথা ঘুরিয়ে নিলাম। অদ্ভুত সুন্দর! ভুবন বলল, ‘অমায়িক সৌন্দর্য!’ ফটক দিয়ে প্রবেশের আগে দেখলাম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কেউ বিক্রি করছেন বিয়ার, কেউ ম্যাগি নুডুলস, সঙ্গে পানি, কেউ ভাড়া দিচ্ছেন রবার বুট ও দস্তানা। এই বুটগুলো পরে যেতে একরকম জোরাজুরিই করছিলেন ব্যবসায়ীরা।
আমাদের পরা বুটগুলো নাকি বরফে নষ্ট হয়ে যাবে। অগত্যা নিজেদের বুট খুলে ভাড়া নিলাম তাঁদেরগুলো। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলার জন্য দস্তানাও নিতে হলো। ওইগুলো হাতে-পায়ে পরতেই মনে হলো বরফ পরে আছি। এত ঠান্ডা! যে নারী ভাড়া দিলেন, তিনি বোঝালেন যে একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু নাহ, সারাক্ষণ এই ঠান্ডা নিয়েই চলতে হয়েছিল। ফটক দিয়ে হেঁটে প্রবেশ করলাম সবাই। যে যার মতো করে বরফ নিয়ে খেলা শুরু করেছিল।
এদিকে মাথার ভারটাকে পাত্তা দিচ্ছিলাম না আমি। মনে জোর নিয়ে আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। ছবি তুললাম। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলাটাও খেললাম ভুবনের সঙ্গে। একটা সময় আর পারছিলাম না। হাত-পা ঠান্ডায় জমে গিয়েছিল। নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল মাথা ঘুরে পড়ে যাব। না পেরে ভুবনকে বললাম আমার খারাপ লাগছে। সঙ্গের ভাইয়েরা শুনে একেক জন একেক ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া শুরু করলেন। কারণ ওই পাঁচজন কোনো না কোনো ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। কেউ একজন দৌড়ে গিয়ে দশ রুপি দিয়ে এক গ্লাস পানি এনে দিলেন। আমার চোখ ঘোলা হয়ে আসছিল। কান স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কেউ পানি দিলেন, তো কেউ ওষুধ দিলেন। খেয়ে একটা গাছের নিচে বসলাম।
অপেক্ষা করছিলাম। আমার জন্য কারও যেন মজা করা মাটি না হয়ে যায়। কেউ একজন এসে খবর দিলেন একটা জায়গায় আগুন পোহানো যাচ্ছে। গেলাম সেখানে। একটা ভাঙা গাছ বেঞ্চির মতো শোয়ানো। তার পাশে আগুন জ্বলছে। গাছের এক পাশে বসে আগুন পোহাতে লাগলাম। সবাইকে আনন্দ করতে দেখছিলাম। যদিও আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছিল। আমাদের দলটা যে যার মতো ভাগ হয়ে আনন্দ করছিল। ভুবন বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের সঙ্গে ছিল। ফিরে এসে বলতে লাগল, ‘আমারও খারাপ লাগছে। চলো আমরা ধীরে ধীরে গাড়ির দিকে আগাই। ওনারা আসুক।’ মাসুম ভাইকে বলে আমরা সামনের দিকে এগোতে থাকলাম। ভ্যালির ফটক থেকে বের হয়ে রাবার বুট আর দস্তানা ফেরত দিয়ে আমাদের বুটগুলো নিয়ে নিলাম। একটা বেঞ্চিতে বসে জুতা খোলা ও পরা যায়। পান্ডেজিকে না পেয়ে সেই বেঞ্চিতে বসে ছিলাম। এদিকে আমার শ্বাসকষ্ট বেড়েই চলছিল। একজন ভদ্রমহিলা এসে আমাকে সরতে বললেন। তিনি বসে জুতা বদলাবেন। সঙ্গে তাঁর পরিবারের আরও সদস্য অপেক্ষা করছেন দাঁড়িয়ে। তাঁরাও বদলাবেন। আমি একপাশ হয়ে গিয়ে অনুরোধ করলাম আমাকে একটু বসে থাকতে দিতে। তিনি বুঝতে পারলেন আমার শরীর বেজায় খারাপ করেছে। হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ক্যায়া হুয়া বেটা?’ বললাম শ্বাস নিতে পারছি না। তাঁর মেয়ে অথবা ছেলের বউ হবেন, তিনি এগিয়ে এসে আমাকে একটা ছোট পুঁটলি দিলেন। সুতি রুমালে কর্পূর ছিল সেটাতে। বললেন এটা নাকে ধরে শুঁকতে। কিছুক্ষণ ইনহেলারের মতো ব্যবহার করার পর দেখলাম ভালোই লাগছে। জিনিসটা তাঁদের ফেরত দিতে চাইলাম। তাঁরা কিছুতেই নিতে চাইলেন না। বললেন, ‘হামারে পাস অউর ভি হ্যায়। ইয়ে তুম রাখলো।’ পরামর্শ দিলেন এত উঁচু জায়গায় আসলে এই কর্পূরের ছোট পুঁটলি সঙ্গে রাখতে। কম-বেশি সবারই নাকি উঁচুতে উঠলে শ্বাসকষ্ট হয়। তাঁরা জানেন বলেই সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। আমাকে তাঁরা জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি কোথা থেকে এসেছি। খুব গর্ব লাগছিল বলতে, ‘বাংলাদেশ থেকে।’ তাঁরা এসেছিলেন গুজরাট থেকে। আমাকে গুজরাটে যাওয়ার দাওয়াত দিয়ে দিলেন। আমিও তাঁদের বাংলাদেশে আসার নিমন্ত্রণ দিলাম। তাঁরা বিদায় নিতে গেলে দুই ভদ্রমহিলাকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানালাম। তাঁরাও আমার ব্যবহারে মুগ্ধ। খুব হাসিখুশি মুখে বিদায় নিলেন। একটু পরপর কর্পূরের পুঁটলিটা নাকে ধরে নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে মাসুম ভাই এসে পান্ডেজিকে খুঁজে আমাদের গাড়িতে গিয়ে বসতে বললেন। জানালেন, ‘আকাশ ভাইদের খুঁজে পাচ্ছি না। ওনারা এলেই আমরা ফিরতে পারি।’ আকাশ ভাই আর সঙ্গে কে কে যেন কোন একটা বরফের পাহাড়ে চড়তে গিয়েছিলেন। শরীর ভালো থাকলে হয়তো আমরাও যেতাম। খুব আফসোস লাগছিল। ইয়ামথাং কি তাহলে অভিশাপ দিয়েছিল আমাদেরকে?
গাড়িতে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম আমি আর ভুবন। মাসুম ভাই দুটো ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে গেছেন। প্যারাসিটামল। আমাদের জ্বর এসেছে। অবস্থা গুরুতর। এটা না বললে কেউ ফিরবে না। তাই মাসুম ভাই খিটমিট করতে করতে আবার খুঁজতে চলে গেলেন বাকিদেরকে। এদিকে ওই দলটা জিরো পয়েন্ট থেকে ঘুরে ইয়ামথাং ভ্যালিতে চলে এসেছে। তারাও আনন্দ-ফুর্তিতে ব্যস্ত। অবশ্য আমাদের দলের সদস্যদের আরও আগেই তাদের ঘোরাঘুরি শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারা এসেই বলছিল, ‘কেন যে জিরো পয়েন্টে গেলাম। এখানেই তো ভালো ছিল!’ আমরা মাসুম ভাইয়ের দেওয়া ওষুধ খেয়ে চুপচাপ বসে ছিলাম। ভুবনের কপাল ধরে দেখি বেশ ভালো জ্বর। আমারও তাই। আমার চেয়ে ওর শ্বাসকষ্ট কম হচ্ছিল। কর্পূরের পুঁটলিটা একবার আমার নাকে, আরেকবার ওর নাকে ধরছিলাম। নিজের ঘর আর বিছানাটাকে তখন কী পরিমাণ যে মনে করছিলাম তা বলে বোঝাতে পারব না। সেই সঙ্গে আম্মুকে। সবারই নিশ্চয়ই অসুখ হলে মায়ের কথা বেশি মনে পড়ে? ভুবন হয়তো আমার শাশুড়িকে মনে করছিল। কী জানি? বলেনি। ইংরেজিতে ভুবনকে বললাম, ‘আই মিস হোম।' বলেই কান্না শুরু করলাম। শুধু বাড়ি ফিরতে ইচ্ছা করছিল বলে। ভুবন বলল, ‘ঠিক আছে। আর কখনো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব না।’ এটা কেমন কথা? বললাম, ‘কেন যাব না? অবশ্যই যাব। আরও বেশি বেশি প্রস্তুতি নিয়ে যাব। আর বেশি বেশি সাবধান থাকব।’
প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করার পর সবাই ফিরে এলেন। ফিরেই বাগ্বিতণ্ডায় লেগে গেলেন আকাশ ভাই আর মাসুম ভাই। মাসুম ভাইয়ের কথা হচ্ছে, ‘দেখলেন যে ওনারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাহলে দেরি করলেন কেন? ওনাদের তো হোটেলে ফিরে একটু বিশ্রাম দরকার। আপনারা না ফিরলে তো যেতেও পারছেন না।’ এদিকে আকাশ ভাইয়ের কথা, ‘আরে ভাই আমি তো জানিই না ওনারা এত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জানলে কি আর দেরি করতাম?’ মাসুম ভাই বলেন, ‘কেন জানবেন না? না জানার কী আছে?’ আকাশ ভাই যতই বোঝাচ্ছিলেন যে তিনি জানতেন না, মাসুম ভাই ততই রেগে যাচ্ছিলেন। আর আমরা দুজন বাকিদের মতো হা করে তাকিয়ে দেখছিলাম। শেষমেশ ভুবন এগিয়ে বলল, ‘ভাই, আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা চাইনি আমাদের জন্য আপনাদের আনন্দটা মাটি হয়ে যাক। এখন চলেন ফিরে যাই। একটু বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাব।’ তারপরেও দু-এক বাক্য তাঁরা একে অপরকে ছুড়ে দিয়ে গাড়িতে উঠলেন। সেই ঝগড়া অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেনি।
ফিরতি পথে সেনারা আটকায়নি। এবার আরও অল্প সময়ে হোটেলে ফিরে এলাম। বারোটার মতো বাজে তখন। হাতে অনেক সময় আছে। দুপুরের খাবার খেয়েই গ্যাংটকের দিকে রওনা দেব। রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম দুজনেই। ঘুম দরকার ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে দরজায় খটখট করল কে যেন। ভুবন দরজা খুলে দিল। মাসুম ভাই এসে দেখলেন আমাদের জ্বর কেমন। পরে দুজনকে দুইটা প্যারাসিটামল আর গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। এঁরা মনে হয় পুরো ওষুধ কোম্পানিটাই সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন! আমরাও বাধ্য ছেলেমেয়ের মতো খেয়ে শুয়ে পড়লাম আবার। জ্বরের যে অবস্থা ছিল, ওষুধ না খেয়ে উপায় ছিল না। তখন এটাই মনে হয়েছিল। ঘণ্টা দুই ঘুম দিয়ে খেতে চলে গেলাম। ইতিমধ্যে সব দলের সবাই জেনে গেছেন আমরা জ্বরে পড়েছি।
একেকজন খুব দুশ্চিন্তা দেখাচ্ছিলেন। আহা-উহু করছিলেন। নানা পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তবে এ কথা বলতেই হয় যে আমাদের দলের বাকি সাত সদস্য, অমরদা আর মিলন ভাই যথেষ্ট যত্নশীল ছিলেন দুজনের প্রতি। অমরদা জানালেন সমতল থেকে আমরা প্রায় ১৪ হাজার ফুট ওপরে উঠেছিলাম। সেখানে প্রতিকূল আবহাওয়ায় শ্বাসকষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর তিনি সতর্ক করেছিলেন সেদিককার বৃষ্টির পানি যেন মাথায় না লাগে। নির্ঘাত জ্বর আসবে। কখন যে দুই-এক ফোঁটা মাথায় পড়েছিল টের পাইনি। তার ওপর ভোর সকালে করেছিলাম গোসল। তাও মাইনাসের তাপমাত্রায়। ভুবন ঢেলেছিল ঠান্ডা পানি। জ্বর আমাদের হবে না তো কার হবে?
খেতে বসেছি এমন সময় বড় দলের নেতা কিসিমের লোকটা এসে বললেন, ‘কী? কে নাকি অসুস্থ? জ্বর হইসে কার?’ বললাম আমাদের। তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে লোকটা বললেন, ‘এএহহহ! আবার ঘুরতে আইছে!’ টিটকারি করে বলুক কিংবা মজা করেই বলুক, লোকটার কথা আমার পছন্দ হলো না। উত্তর দিইনি। বুদ্ধিমত্তা যাঁদের মাইনাসের কোঠায় থাকে, তাঁদের কথার জবাব দিতে হয় না! এমনিতেই তাঁদের লোক দেখানো স্বভাব দেখে বিরক্ত লাগছিল। তার ওপর প্রথম দিন থেকে দেখছি মদ খেয়ে টাল হয়ে ছিলেন। হিম দেশে রাস্তায় রাস্তায় ঝুড়িতে করে মদ, বিয়ার বেচবেই। তা বলে দেদার কিনে গলা অবধি গিলতে হবে? হুম, তা ঠিক যে নিজের টাকা নিজে খরচ করছেন, তাতে কার কী! সমস্যা হচ্ছে, টাকা খরচ করে মাতাল হয়ে যে কারও সঙ্গে যা তা আচরণ করা। এই যেমন আগের রাতে অমরদাকে পারলে পিটিয়ে মেরে ফেলতেন। কেন সবখানে নিয়ে যেতে পারছিলেন না এই কারণে!
খাওয়াদাওয়া সেরে ব্যাগ গুছিয়ে উঠানে বসে অপেক্ষা করছিলাম। দুই দল একসঙ্গে রওনা দেবে। বড় দলের সবাই তখনও প্রস্তুত না। কিছুটা কমে এসেছিল জ্বর। একটু ভালো লাগছিল বলে পান্ডেজির সঙ্গে গল্প করা শুরু করে দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম সালমান খানের ‘দাবাং’ সিনেমাটা দেখা হয়েছে কি না। তিনি দেখেছেন। পরে তাঁকে জানালাম কেন আমি তাঁকে পান্ডেজি বলে ডাকি। তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘কাহা ম্যায় অউর কাহা সালমান খান!’ আমিও হেসে বললাম, ‘হামারে লিয়ে তো আপহি সালমান খান হ্যায়, পান্ডেজি।’ আমার বিশ্বাস, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ গল্প আছে। আর সেই গল্পের নায়ক তাঁরা নিজেই। পান্ডেজিকে শুধু এই জিনিসটা উপলব্ধি করাতে চাচ্ছিলাম।
তিনটার দিকে সবাই গাড়িতে চড়ে বসলাম। ভটভট করতে করতে জিপ চালু হয়ে গেল। ফিরছিলাম গ্যাংটক।
চলবে...
সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম পানি দিয়ে। ভুবন বলেছিল গোসল করবে না। আমি নিশ্চিন্ত মনে গিজারের গরম পানি গায়ে ঢেলে গোসল করে বের হয়েছি। ওদিকে উনি গিয়ে কোনো রকম অপেক্ষা ছাড়া ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল সেরে আসলেন। ভাবা যায়! মাইনাসের তাপমাত্রায় একটা মানুষ কনকনে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করেছেন! যাই হোক, গোসল সেরে খুব ফুরফুরে লাগছিল দুজনেরই। আমার তো ক্ষুধায় জান যায় যায় অবস্থা। সাতটার দিকে রুম থেকে বের হয়ে খাবার ঘরের দিকে যাব, এমন সময় হঠাৎ হোটেলের পেছন দিকে চোখ চলে গেল।
রীতিমতো চিৎকার করে ডাকলাম, ‘ভুবন, জলদি এদিকে আসো।’ ভুবনও যথারীতি চলে এল এবং আমার মতো হা করে তাকিয়ে রইল। সত্যি, একেবারে মুখটা খুলে গোল করে হা করে ছিলাম আমরা! হোটেলের পেছন থেকে সুবিশাল পাহাড় দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় ধবধবে সাদা বরফ। এ দৃশ্য তো সামনাসামনি কখনো দেখা হয়নি। ছবির চেয়ে কত সুন্দর এই সৃষ্টি। বলে বা লিখে বোঝানো যাবে না। না, একটা স্থিরচিত্র দেখেও বুঝবেন না। চলচ্চিত্রে দেখেও না। এর আসল রূপ শুধু এবং শুধুমাত্র সামনাসামনি দেখতে হয়। কিছুক্ষণ হা করে দাঁড়িয়ে থেকে সংবিৎ ফিরে এলে ভুবন ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিল। এরপর চলে গেলাম খেতে। আমরা দুজন ছাড়া কেউ তখনো রুম থেকে বের হননি। গিয়ে দেখি ম্যানেজার সাহেব দুপুরের খাবারের আয়োজন করছেন।
সকালের নাশতা তৈরি। জ্যাম আর বাটার স্যান্ডউইচ। সঙ্গে এলাচি চা। জ্যাম জিনিসটা আমার ভালো লাগে না। অতিমাত্রায় মিষ্টি মনে হয়। বাটার স্যান্ডউইচ খেলাম তাই। চা তো খেলামই। এরপর সবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সবাই যখন একে একে আসতে শুরু করল নাশতার জন্য, আমি ওদিকে ম্যানেজারের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলাম। তিনি হিন্দি, বাংলা দুটোই পারেন। কথায় কথায় তখনই জানলাম তিনিই এখানকার সবকিছু একা দেখাশোনা করেন। রান্নাঘর আর খাবার ঘর থেকে হোটেলের সামনের রাস্তা দেখা যায়। দেখা যায় অদূরের বিশাল পাহাড়গুলো। আর চূড়ায় চূড়ায় মনে হয় কেউ সাদা দুধ ঢেলে দিয়েছে।
পাহাড়ের রাস্তা ধরে মাঝে মাঝে গরু-ছাগল হেঁটে যেতে দেখলাম। এদিকের পশু বা প্রাণীগুলোর লোম অনেক বড় বড় হয়। গ্যাংটক থেকে লাচুং আসা পর্যন্ত অনেক কুকুর দেখেছি, খুব সুন্দর। এদের লোমও বড় বড়। ভুবন বলছিল, শীতপ্রধান এলাকায় পশুদের লোম এমন বড় বড় হয়। এতে করে শীতের প্রকোপটা ওরা সয়ে নিতে পারে। ম্যানেজার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘গরুগুলো কি পাহাড়ি বা বুনো?’ উত্তরে তিনি না বললেন। এদিকে মোটামুটি সবাই গরু পালে। ছাগলও পালে। ‘তাহলে এরা এমন একা বাঁধন ছাড়া ঘুরছে কেন?’ ম্যানেজার সাহেব বললেন, এরা জানে বেলাশেষে কোন ঘরে ফিরতে হবে। আমি বললাম, ‘আজব তো! কেউ চুরি করে নিয়ে গেলে?’ নাহ, চুরি করে না কেউ। সারা দিন ঘর খোলা রাখলেও কেউ চুরি করতে ঢুকবে না। আহা, এমন যদি সবখানে হতো! মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। ম্যানেজার সাহেবের কাছ থেকে আরও জানলাম এখানে সবাই চাষবাস করেই চলে। পাহাড়ি এলাকায় যেমন সবজি হয়, সেগুলো চাষ করে নিজেদের মধ্যেই বিকিকিনি হয়। বাইরে থেকে আনা-নেওয়াটা খুব কম হয়। তাই সবকিছু এখানে পাওয়াও যায় না। ম্যানেজারের কথায় প্রমাণ পেলাম। রান্নাঘরে তাকে সারি করে সাজিয়ে রাখা সব টিনজাত খাবার। একটা টিন খুলে মটর বের করে সবজির কড়াইতে ঢেলে দিলেন। তেলে-আগুনে ছ্যাঁৎ করে উঠল। আমি বাইরে তাকিয়ে একপলকে প্রকৃতি দেখছিলাম। আর শুনছিলাম রান্নার ছ্যাঁৎ ছ্যাঁৎ শব্দ। মাথাটা কেমন যেন ভার ভার হয়ে আসছিল।
সবার নাশতা খাওয়া শেষ হলে পান্ডেজির সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম ইয়ামথাং ভ্যালির উদ্দেশে। সেই আমরা ৯জন। জিপ নিয়ে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে আরও ওপরের দিকে উঠছিলাম। সীমানা অঞ্চল। তাই এদিকে সেনাবাহিনীর ঘাঁটি আছে। একটু পরপর সেনাবাহিনীর কয়েকটা চেকপোস্ট। জিপ আটকে দেখে নেয় সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না। পান্ডেজি আগেই বলে দিলেন, ‘ডরনা নেহি। নেইতো সক করেগা।’ ভয় পেলেই সন্দেহ করবে বলে আমরা সব দাঁত বের করে ভেটকি দিয়ে রইলাম প্রতিবার। বাকিটা পান্ডেজি সামলে নিলেন। যেতে যেতে খেয়াল করলাম রাস্তার দুই ধারে বরফ জমে আছে। সন্দেহ রইল না যে রাতে তুষারপাত হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে হয়েছিল বলে তেমন টের পাইনি। পান্ডেজি আরেকটা ব্যাপারে সাবধান করে দিলেন, ‘ফটো নেহি লেনা।’ হুম, সাইনবোর্ডে লেখা ছিল, পড়েছি। যাত্রাপথে ক্যামেরা বের করা যাবে না। ছবি তোলা তো দূরের কথা। সেনারা দেখলে রেখেই দেবে। ওদিকটায় ছবি তোলা নিষেধ। আর যখন থেকে সিকিমে প্রবেশ করেছি আমরা, কোথাও কোনো ময়লা দেখিনি রাস্তায়। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা তো নিষেধই। আবার উত্তরে প্রবেশ করলে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করা নিষেধ। প্লাস্টিকের পানির বোতলও পাবেন না। তবে চিপস পাওয়া যাবে প্লাস্টিকের চেনা প্যাকেটে। সেটা আবার যথাস্থানে ফেলতে হবে। মন চাইলেই হাওয়ায় ভাসানো যাবে না। নইলে জরিমানা গুনে ফকির হতে হবে। খুব ভালো লাগল দেখতে, সেখানকার মানুষ এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে মেনে চলে। বাইরের দর্শনার্থীরা এসে যদি নিয়ম ভঙ্গ করে তবে সাধারণ মানুষেরাই অনেক রেগে যায়।
খুব বেশি হলে আধা ঘণ্টা। এর মধ্যে ইয়ামথাং ভ্যালির ফটকের সামনে চলে আসলাম। কিছুদূর আগে দেখেছিলাম রোডোডেন্ড্রন স্যাংকচুয়ারির ফটক। সেটা তখন বন্ধ ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে রোডোডেন্ড্রন ফুল ফোটে না। তাই আর তার সৌন্দর্য দেখা গেল না। যাই হোক, জিপ থেকে নেমে চারদিকে মাথা ঘুরিয়ে নিলাম। অদ্ভুত সুন্দর! ভুবন বলল, ‘অমায়িক সৌন্দর্য!’ ফটক দিয়ে প্রবেশের আগে দেখলাম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কেউ বিক্রি করছেন বিয়ার, কেউ ম্যাগি নুডুলস, সঙ্গে পানি, কেউ ভাড়া দিচ্ছেন রবার বুট ও দস্তানা। এই বুটগুলো পরে যেতে একরকম জোরাজুরিই করছিলেন ব্যবসায়ীরা।
আমাদের পরা বুটগুলো নাকি বরফে নষ্ট হয়ে যাবে। অগত্যা নিজেদের বুট খুলে ভাড়া নিলাম তাঁদেরগুলো। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলার জন্য দস্তানাও নিতে হলো। ওইগুলো হাতে-পায়ে পরতেই মনে হলো বরফ পরে আছি। এত ঠান্ডা! যে নারী ভাড়া দিলেন, তিনি বোঝালেন যে একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু নাহ, সারাক্ষণ এই ঠান্ডা নিয়েই চলতে হয়েছিল। ফটক দিয়ে হেঁটে প্রবেশ করলাম সবাই। যে যার মতো করে বরফ নিয়ে খেলা শুরু করেছিল।
এদিকে মাথার ভারটাকে পাত্তা দিচ্ছিলাম না আমি। মনে জোর নিয়ে আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। ছবি তুললাম। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলাটাও খেললাম ভুবনের সঙ্গে। একটা সময় আর পারছিলাম না। হাত-পা ঠান্ডায় জমে গিয়েছিল। নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল মাথা ঘুরে পড়ে যাব। না পেরে ভুবনকে বললাম আমার খারাপ লাগছে। সঙ্গের ভাইয়েরা শুনে একেক জন একেক ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া শুরু করলেন। কারণ ওই পাঁচজন কোনো না কোনো ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। কেউ একজন দৌড়ে গিয়ে দশ রুপি দিয়ে এক গ্লাস পানি এনে দিলেন। আমার চোখ ঘোলা হয়ে আসছিল। কান স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কেউ পানি দিলেন, তো কেউ ওষুধ দিলেন। খেয়ে একটা গাছের নিচে বসলাম।
অপেক্ষা করছিলাম। আমার জন্য কারও যেন মজা করা মাটি না হয়ে যায়। কেউ একজন এসে খবর দিলেন একটা জায়গায় আগুন পোহানো যাচ্ছে। গেলাম সেখানে। একটা ভাঙা গাছ বেঞ্চির মতো শোয়ানো। তার পাশে আগুন জ্বলছে। গাছের এক পাশে বসে আগুন পোহাতে লাগলাম। সবাইকে আনন্দ করতে দেখছিলাম। যদিও আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছিল। আমাদের দলটা যে যার মতো ভাগ হয়ে আনন্দ করছিল। ভুবন বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের সঙ্গে ছিল। ফিরে এসে বলতে লাগল, ‘আমারও খারাপ লাগছে। চলো আমরা ধীরে ধীরে গাড়ির দিকে আগাই। ওনারা আসুক।’ মাসুম ভাইকে বলে আমরা সামনের দিকে এগোতে থাকলাম। ভ্যালির ফটক থেকে বের হয়ে রাবার বুট আর দস্তানা ফেরত দিয়ে আমাদের বুটগুলো নিয়ে নিলাম। একটা বেঞ্চিতে বসে জুতা খোলা ও পরা যায়। পান্ডেজিকে না পেয়ে সেই বেঞ্চিতে বসে ছিলাম। এদিকে আমার শ্বাসকষ্ট বেড়েই চলছিল। একজন ভদ্রমহিলা এসে আমাকে সরতে বললেন। তিনি বসে জুতা বদলাবেন। সঙ্গে তাঁর পরিবারের আরও সদস্য অপেক্ষা করছেন দাঁড়িয়ে। তাঁরাও বদলাবেন। আমি একপাশ হয়ে গিয়ে অনুরোধ করলাম আমাকে একটু বসে থাকতে দিতে। তিনি বুঝতে পারলেন আমার শরীর বেজায় খারাপ করেছে। হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ক্যায়া হুয়া বেটা?’ বললাম শ্বাস নিতে পারছি না। তাঁর মেয়ে অথবা ছেলের বউ হবেন, তিনি এগিয়ে এসে আমাকে একটা ছোট পুঁটলি দিলেন। সুতি রুমালে কর্পূর ছিল সেটাতে। বললেন এটা নাকে ধরে শুঁকতে। কিছুক্ষণ ইনহেলারের মতো ব্যবহার করার পর দেখলাম ভালোই লাগছে। জিনিসটা তাঁদের ফেরত দিতে চাইলাম। তাঁরা কিছুতেই নিতে চাইলেন না। বললেন, ‘হামারে পাস অউর ভি হ্যায়। ইয়ে তুম রাখলো।’ পরামর্শ দিলেন এত উঁচু জায়গায় আসলে এই কর্পূরের ছোট পুঁটলি সঙ্গে রাখতে। কম-বেশি সবারই নাকি উঁচুতে উঠলে শ্বাসকষ্ট হয়। তাঁরা জানেন বলেই সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। আমাকে তাঁরা জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি কোথা থেকে এসেছি। খুব গর্ব লাগছিল বলতে, ‘বাংলাদেশ থেকে।’ তাঁরা এসেছিলেন গুজরাট থেকে। আমাকে গুজরাটে যাওয়ার দাওয়াত দিয়ে দিলেন। আমিও তাঁদের বাংলাদেশে আসার নিমন্ত্রণ দিলাম। তাঁরা বিদায় নিতে গেলে দুই ভদ্রমহিলাকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানালাম। তাঁরাও আমার ব্যবহারে মুগ্ধ। খুব হাসিখুশি মুখে বিদায় নিলেন। একটু পরপর কর্পূরের পুঁটলিটা নাকে ধরে নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে মাসুম ভাই এসে পান্ডেজিকে খুঁজে আমাদের গাড়িতে গিয়ে বসতে বললেন। জানালেন, ‘আকাশ ভাইদের খুঁজে পাচ্ছি না। ওনারা এলেই আমরা ফিরতে পারি।’ আকাশ ভাই আর সঙ্গে কে কে যেন কোন একটা বরফের পাহাড়ে চড়তে গিয়েছিলেন। শরীর ভালো থাকলে হয়তো আমরাও যেতাম। খুব আফসোস লাগছিল। ইয়ামথাং কি তাহলে অভিশাপ দিয়েছিল আমাদেরকে?
গাড়িতে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম আমি আর ভুবন। মাসুম ভাই দুটো ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে গেছেন। প্যারাসিটামল। আমাদের জ্বর এসেছে। অবস্থা গুরুতর। এটা না বললে কেউ ফিরবে না। তাই মাসুম ভাই খিটমিট করতে করতে আবার খুঁজতে চলে গেলেন বাকিদেরকে। এদিকে ওই দলটা জিরো পয়েন্ট থেকে ঘুরে ইয়ামথাং ভ্যালিতে চলে এসেছে। তারাও আনন্দ-ফুর্তিতে ব্যস্ত। অবশ্য আমাদের দলের সদস্যদের আরও আগেই তাদের ঘোরাঘুরি শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারা এসেই বলছিল, ‘কেন যে জিরো পয়েন্টে গেলাম। এখানেই তো ভালো ছিল!’ আমরা মাসুম ভাইয়ের দেওয়া ওষুধ খেয়ে চুপচাপ বসে ছিলাম। ভুবনের কপাল ধরে দেখি বেশ ভালো জ্বর। আমারও তাই। আমার চেয়ে ওর শ্বাসকষ্ট কম হচ্ছিল। কর্পূরের পুঁটলিটা একবার আমার নাকে, আরেকবার ওর নাকে ধরছিলাম। নিজের ঘর আর বিছানাটাকে তখন কী পরিমাণ যে মনে করছিলাম তা বলে বোঝাতে পারব না। সেই সঙ্গে আম্মুকে। সবারই নিশ্চয়ই অসুখ হলে মায়ের কথা বেশি মনে পড়ে? ভুবন হয়তো আমার শাশুড়িকে মনে করছিল। কী জানি? বলেনি। ইংরেজিতে ভুবনকে বললাম, ‘আই মিস হোম।' বলেই কান্না শুরু করলাম। শুধু বাড়ি ফিরতে ইচ্ছা করছিল বলে। ভুবন বলল, ‘ঠিক আছে। আর কখনো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব না।’ এটা কেমন কথা? বললাম, ‘কেন যাব না? অবশ্যই যাব। আরও বেশি বেশি প্রস্তুতি নিয়ে যাব। আর বেশি বেশি সাবধান থাকব।’
প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করার পর সবাই ফিরে এলেন। ফিরেই বাগ্বিতণ্ডায় লেগে গেলেন আকাশ ভাই আর মাসুম ভাই। মাসুম ভাইয়ের কথা হচ্ছে, ‘দেখলেন যে ওনারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাহলে দেরি করলেন কেন? ওনাদের তো হোটেলে ফিরে একটু বিশ্রাম দরকার। আপনারা না ফিরলে তো যেতেও পারছেন না।’ এদিকে আকাশ ভাইয়ের কথা, ‘আরে ভাই আমি তো জানিই না ওনারা এত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জানলে কি আর দেরি করতাম?’ মাসুম ভাই বলেন, ‘কেন জানবেন না? না জানার কী আছে?’ আকাশ ভাই যতই বোঝাচ্ছিলেন যে তিনি জানতেন না, মাসুম ভাই ততই রেগে যাচ্ছিলেন। আর আমরা দুজন বাকিদের মতো হা করে তাকিয়ে দেখছিলাম। শেষমেশ ভুবন এগিয়ে বলল, ‘ভাই, আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা চাইনি আমাদের জন্য আপনাদের আনন্দটা মাটি হয়ে যাক। এখন চলেন ফিরে যাই। একটু বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাব।’ তারপরেও দু-এক বাক্য তাঁরা একে অপরকে ছুড়ে দিয়ে গাড়িতে উঠলেন। সেই ঝগড়া অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেনি।
ফিরতি পথে সেনারা আটকায়নি। এবার আরও অল্প সময়ে হোটেলে ফিরে এলাম। বারোটার মতো বাজে তখন। হাতে অনেক সময় আছে। দুপুরের খাবার খেয়েই গ্যাংটকের দিকে রওনা দেব। রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম দুজনেই। ঘুম দরকার ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে দরজায় খটখট করল কে যেন। ভুবন দরজা খুলে দিল। মাসুম ভাই এসে দেখলেন আমাদের জ্বর কেমন। পরে দুজনকে দুইটা প্যারাসিটামল আর গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। এঁরা মনে হয় পুরো ওষুধ কোম্পানিটাই সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন! আমরাও বাধ্য ছেলেমেয়ের মতো খেয়ে শুয়ে পড়লাম আবার। জ্বরের যে অবস্থা ছিল, ওষুধ না খেয়ে উপায় ছিল না। তখন এটাই মনে হয়েছিল। ঘণ্টা দুই ঘুম দিয়ে খেতে চলে গেলাম। ইতিমধ্যে সব দলের সবাই জেনে গেছেন আমরা জ্বরে পড়েছি।
একেকজন খুব দুশ্চিন্তা দেখাচ্ছিলেন। আহা-উহু করছিলেন। নানা পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তবে এ কথা বলতেই হয় যে আমাদের দলের বাকি সাত সদস্য, অমরদা আর মিলন ভাই যথেষ্ট যত্নশীল ছিলেন দুজনের প্রতি। অমরদা জানালেন সমতল থেকে আমরা প্রায় ১৪ হাজার ফুট ওপরে উঠেছিলাম। সেখানে প্রতিকূল আবহাওয়ায় শ্বাসকষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর তিনি সতর্ক করেছিলেন সেদিককার বৃষ্টির পানি যেন মাথায় না লাগে। নির্ঘাত জ্বর আসবে। কখন যে দুই-এক ফোঁটা মাথায় পড়েছিল টের পাইনি। তার ওপর ভোর সকালে করেছিলাম গোসল। তাও মাইনাসের তাপমাত্রায়। ভুবন ঢেলেছিল ঠান্ডা পানি। জ্বর আমাদের হবে না তো কার হবে?
খেতে বসেছি এমন সময় বড় দলের নেতা কিসিমের লোকটা এসে বললেন, ‘কী? কে নাকি অসুস্থ? জ্বর হইসে কার?’ বললাম আমাদের। তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে লোকটা বললেন, ‘এএহহহ! আবার ঘুরতে আইছে!’ টিটকারি করে বলুক কিংবা মজা করেই বলুক, লোকটার কথা আমার পছন্দ হলো না। উত্তর দিইনি। বুদ্ধিমত্তা যাঁদের মাইনাসের কোঠায় থাকে, তাঁদের কথার জবাব দিতে হয় না! এমনিতেই তাঁদের লোক দেখানো স্বভাব দেখে বিরক্ত লাগছিল। তার ওপর প্রথম দিন থেকে দেখছি মদ খেয়ে টাল হয়ে ছিলেন। হিম দেশে রাস্তায় রাস্তায় ঝুড়িতে করে মদ, বিয়ার বেচবেই। তা বলে দেদার কিনে গলা অবধি গিলতে হবে? হুম, তা ঠিক যে নিজের টাকা নিজে খরচ করছেন, তাতে কার কী! সমস্যা হচ্ছে, টাকা খরচ করে মাতাল হয়ে যে কারও সঙ্গে যা তা আচরণ করা। এই যেমন আগের রাতে অমরদাকে পারলে পিটিয়ে মেরে ফেলতেন। কেন সবখানে নিয়ে যেতে পারছিলেন না এই কারণে!
খাওয়াদাওয়া সেরে ব্যাগ গুছিয়ে উঠানে বসে অপেক্ষা করছিলাম। দুই দল একসঙ্গে রওনা দেবে। বড় দলের সবাই তখনও প্রস্তুত না। কিছুটা কমে এসেছিল জ্বর। একটু ভালো লাগছিল বলে পান্ডেজির সঙ্গে গল্প করা শুরু করে দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম সালমান খানের ‘দাবাং’ সিনেমাটা দেখা হয়েছে কি না। তিনি দেখেছেন। পরে তাঁকে জানালাম কেন আমি তাঁকে পান্ডেজি বলে ডাকি। তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘কাহা ম্যায় অউর কাহা সালমান খান!’ আমিও হেসে বললাম, ‘হামারে লিয়ে তো আপহি সালমান খান হ্যায়, পান্ডেজি।’ আমার বিশ্বাস, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ গল্প আছে। আর সেই গল্পের নায়ক তাঁরা নিজেই। পান্ডেজিকে শুধু এই জিনিসটা উপলব্ধি করাতে চাচ্ছিলাম।
তিনটার দিকে সবাই গাড়িতে চড়ে বসলাম। ভটভট করতে করতে জিপ চালু হয়ে গেল। ফিরছিলাম গ্যাংটক।
চলবে...

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম পানি দিয়ে। ভুবন বলেছিল গোসল করবে না। আমি নিশ্চিন্ত মনে গিজারের গরম পানি গায়ে ঢেলে গোসল করে বের হয়েছি। ওদিকে উনি গিয়ে কোনো রকম অপেক্ষা ছাড়া ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল সেরে আসলেন। ভাবা যায়! মাইনাসের তাপমাত্রায় একটা মানুষ কনকনে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করেছেন! যাই হোক, গোসল সেরে খুব ফুরফুরে লাগছিল দুজনেরই। আমার তো ক্ষুধায় জান যায় যায় অবস্থা। সাতটার দিকে রুম থেকে বের হয়ে খাবার ঘরের দিকে যাব, এমন সময় হঠাৎ হোটেলের পেছন দিকে চোখ চলে গেল।
রীতিমতো চিৎকার করে ডাকলাম, ‘ভুবন, জলদি এদিকে আসো।’ ভুবনও যথারীতি চলে এল এবং আমার মতো হা করে তাকিয়ে রইল। সত্যি, একেবারে মুখটা খুলে গোল করে হা করে ছিলাম আমরা! হোটেলের পেছন থেকে সুবিশাল পাহাড় দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় ধবধবে সাদা বরফ। এ দৃশ্য তো সামনাসামনি কখনো দেখা হয়নি। ছবির চেয়ে কত সুন্দর এই সৃষ্টি। বলে বা লিখে বোঝানো যাবে না। না, একটা স্থিরচিত্র দেখেও বুঝবেন না। চলচ্চিত্রে দেখেও না। এর আসল রূপ শুধু এবং শুধুমাত্র সামনাসামনি দেখতে হয়। কিছুক্ষণ হা করে দাঁড়িয়ে থেকে সংবিৎ ফিরে এলে ভুবন ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিল। এরপর চলে গেলাম খেতে। আমরা দুজন ছাড়া কেউ তখনো রুম থেকে বের হননি। গিয়ে দেখি ম্যানেজার সাহেব দুপুরের খাবারের আয়োজন করছেন।
সকালের নাশতা তৈরি। জ্যাম আর বাটার স্যান্ডউইচ। সঙ্গে এলাচি চা। জ্যাম জিনিসটা আমার ভালো লাগে না। অতিমাত্রায় মিষ্টি মনে হয়। বাটার স্যান্ডউইচ খেলাম তাই। চা তো খেলামই। এরপর সবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সবাই যখন একে একে আসতে শুরু করল নাশতার জন্য, আমি ওদিকে ম্যানেজারের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলাম। তিনি হিন্দি, বাংলা দুটোই পারেন। কথায় কথায় তখনই জানলাম তিনিই এখানকার সবকিছু একা দেখাশোনা করেন। রান্নাঘর আর খাবার ঘর থেকে হোটেলের সামনের রাস্তা দেখা যায়। দেখা যায় অদূরের বিশাল পাহাড়গুলো। আর চূড়ায় চূড়ায় মনে হয় কেউ সাদা দুধ ঢেলে দিয়েছে।
পাহাড়ের রাস্তা ধরে মাঝে মাঝে গরু-ছাগল হেঁটে যেতে দেখলাম। এদিকের পশু বা প্রাণীগুলোর লোম অনেক বড় বড় হয়। গ্যাংটক থেকে লাচুং আসা পর্যন্ত অনেক কুকুর দেখেছি, খুব সুন্দর। এদের লোমও বড় বড়। ভুবন বলছিল, শীতপ্রধান এলাকায় পশুদের লোম এমন বড় বড় হয়। এতে করে শীতের প্রকোপটা ওরা সয়ে নিতে পারে। ম্যানেজার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘গরুগুলো কি পাহাড়ি বা বুনো?’ উত্তরে তিনি না বললেন। এদিকে মোটামুটি সবাই গরু পালে। ছাগলও পালে। ‘তাহলে এরা এমন একা বাঁধন ছাড়া ঘুরছে কেন?’ ম্যানেজার সাহেব বললেন, এরা জানে বেলাশেষে কোন ঘরে ফিরতে হবে। আমি বললাম, ‘আজব তো! কেউ চুরি করে নিয়ে গেলে?’ নাহ, চুরি করে না কেউ। সারা দিন ঘর খোলা রাখলেও কেউ চুরি করতে ঢুকবে না। আহা, এমন যদি সবখানে হতো! মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। ম্যানেজার সাহেবের কাছ থেকে আরও জানলাম এখানে সবাই চাষবাস করেই চলে। পাহাড়ি এলাকায় যেমন সবজি হয়, সেগুলো চাষ করে নিজেদের মধ্যেই বিকিকিনি হয়। বাইরে থেকে আনা-নেওয়াটা খুব কম হয়। তাই সবকিছু এখানে পাওয়াও যায় না। ম্যানেজারের কথায় প্রমাণ পেলাম। রান্নাঘরে তাকে সারি করে সাজিয়ে রাখা সব টিনজাত খাবার। একটা টিন খুলে মটর বের করে সবজির কড়াইতে ঢেলে দিলেন। তেলে-আগুনে ছ্যাঁৎ করে উঠল। আমি বাইরে তাকিয়ে একপলকে প্রকৃতি দেখছিলাম। আর শুনছিলাম রান্নার ছ্যাঁৎ ছ্যাঁৎ শব্দ। মাথাটা কেমন যেন ভার ভার হয়ে আসছিল।
সবার নাশতা খাওয়া শেষ হলে পান্ডেজির সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম ইয়ামথাং ভ্যালির উদ্দেশে। সেই আমরা ৯জন। জিপ নিয়ে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে আরও ওপরের দিকে উঠছিলাম। সীমানা অঞ্চল। তাই এদিকে সেনাবাহিনীর ঘাঁটি আছে। একটু পরপর সেনাবাহিনীর কয়েকটা চেকপোস্ট। জিপ আটকে দেখে নেয় সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না। পান্ডেজি আগেই বলে দিলেন, ‘ডরনা নেহি। নেইতো সক করেগা।’ ভয় পেলেই সন্দেহ করবে বলে আমরা সব দাঁত বের করে ভেটকি দিয়ে রইলাম প্রতিবার। বাকিটা পান্ডেজি সামলে নিলেন। যেতে যেতে খেয়াল করলাম রাস্তার দুই ধারে বরফ জমে আছে। সন্দেহ রইল না যে রাতে তুষারপাত হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে হয়েছিল বলে তেমন টের পাইনি। পান্ডেজি আরেকটা ব্যাপারে সাবধান করে দিলেন, ‘ফটো নেহি লেনা।’ হুম, সাইনবোর্ডে লেখা ছিল, পড়েছি। যাত্রাপথে ক্যামেরা বের করা যাবে না। ছবি তোলা তো দূরের কথা। সেনারা দেখলে রেখেই দেবে। ওদিকটায় ছবি তোলা নিষেধ। আর যখন থেকে সিকিমে প্রবেশ করেছি আমরা, কোথাও কোনো ময়লা দেখিনি রাস্তায়। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা তো নিষেধই। আবার উত্তরে প্রবেশ করলে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করা নিষেধ। প্লাস্টিকের পানির বোতলও পাবেন না। তবে চিপস পাওয়া যাবে প্লাস্টিকের চেনা প্যাকেটে। সেটা আবার যথাস্থানে ফেলতে হবে। মন চাইলেই হাওয়ায় ভাসানো যাবে না। নইলে জরিমানা গুনে ফকির হতে হবে। খুব ভালো লাগল দেখতে, সেখানকার মানুষ এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে মেনে চলে। বাইরের দর্শনার্থীরা এসে যদি নিয়ম ভঙ্গ করে তবে সাধারণ মানুষেরাই অনেক রেগে যায়।
খুব বেশি হলে আধা ঘণ্টা। এর মধ্যে ইয়ামথাং ভ্যালির ফটকের সামনে চলে আসলাম। কিছুদূর আগে দেখেছিলাম রোডোডেন্ড্রন স্যাংকচুয়ারির ফটক। সেটা তখন বন্ধ ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে রোডোডেন্ড্রন ফুল ফোটে না। তাই আর তার সৌন্দর্য দেখা গেল না। যাই হোক, জিপ থেকে নেমে চারদিকে মাথা ঘুরিয়ে নিলাম। অদ্ভুত সুন্দর! ভুবন বলল, ‘অমায়িক সৌন্দর্য!’ ফটক দিয়ে প্রবেশের আগে দেখলাম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কেউ বিক্রি করছেন বিয়ার, কেউ ম্যাগি নুডুলস, সঙ্গে পানি, কেউ ভাড়া দিচ্ছেন রবার বুট ও দস্তানা। এই বুটগুলো পরে যেতে একরকম জোরাজুরিই করছিলেন ব্যবসায়ীরা।
আমাদের পরা বুটগুলো নাকি বরফে নষ্ট হয়ে যাবে। অগত্যা নিজেদের বুট খুলে ভাড়া নিলাম তাঁদেরগুলো। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলার জন্য দস্তানাও নিতে হলো। ওইগুলো হাতে-পায়ে পরতেই মনে হলো বরফ পরে আছি। এত ঠান্ডা! যে নারী ভাড়া দিলেন, তিনি বোঝালেন যে একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু নাহ, সারাক্ষণ এই ঠান্ডা নিয়েই চলতে হয়েছিল। ফটক দিয়ে হেঁটে প্রবেশ করলাম সবাই। যে যার মতো করে বরফ নিয়ে খেলা শুরু করেছিল।
এদিকে মাথার ভারটাকে পাত্তা দিচ্ছিলাম না আমি। মনে জোর নিয়ে আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। ছবি তুললাম। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলাটাও খেললাম ভুবনের সঙ্গে। একটা সময় আর পারছিলাম না। হাত-পা ঠান্ডায় জমে গিয়েছিল। নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল মাথা ঘুরে পড়ে যাব। না পেরে ভুবনকে বললাম আমার খারাপ লাগছে। সঙ্গের ভাইয়েরা শুনে একেক জন একেক ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া শুরু করলেন। কারণ ওই পাঁচজন কোনো না কোনো ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। কেউ একজন দৌড়ে গিয়ে দশ রুপি দিয়ে এক গ্লাস পানি এনে দিলেন। আমার চোখ ঘোলা হয়ে আসছিল। কান স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কেউ পানি দিলেন, তো কেউ ওষুধ দিলেন। খেয়ে একটা গাছের নিচে বসলাম।
অপেক্ষা করছিলাম। আমার জন্য কারও যেন মজা করা মাটি না হয়ে যায়। কেউ একজন এসে খবর দিলেন একটা জায়গায় আগুন পোহানো যাচ্ছে। গেলাম সেখানে। একটা ভাঙা গাছ বেঞ্চির মতো শোয়ানো। তার পাশে আগুন জ্বলছে। গাছের এক পাশে বসে আগুন পোহাতে লাগলাম। সবাইকে আনন্দ করতে দেখছিলাম। যদিও আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছিল। আমাদের দলটা যে যার মতো ভাগ হয়ে আনন্দ করছিল। ভুবন বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের সঙ্গে ছিল। ফিরে এসে বলতে লাগল, ‘আমারও খারাপ লাগছে। চলো আমরা ধীরে ধীরে গাড়ির দিকে আগাই। ওনারা আসুক।’ মাসুম ভাইকে বলে আমরা সামনের দিকে এগোতে থাকলাম। ভ্যালির ফটক থেকে বের হয়ে রাবার বুট আর দস্তানা ফেরত দিয়ে আমাদের বুটগুলো নিয়ে নিলাম। একটা বেঞ্চিতে বসে জুতা খোলা ও পরা যায়। পান্ডেজিকে না পেয়ে সেই বেঞ্চিতে বসে ছিলাম। এদিকে আমার শ্বাসকষ্ট বেড়েই চলছিল। একজন ভদ্রমহিলা এসে আমাকে সরতে বললেন। তিনি বসে জুতা বদলাবেন। সঙ্গে তাঁর পরিবারের আরও সদস্য অপেক্ষা করছেন দাঁড়িয়ে। তাঁরাও বদলাবেন। আমি একপাশ হয়ে গিয়ে অনুরোধ করলাম আমাকে একটু বসে থাকতে দিতে। তিনি বুঝতে পারলেন আমার শরীর বেজায় খারাপ করেছে। হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ক্যায়া হুয়া বেটা?’ বললাম শ্বাস নিতে পারছি না। তাঁর মেয়ে অথবা ছেলের বউ হবেন, তিনি এগিয়ে এসে আমাকে একটা ছোট পুঁটলি দিলেন। সুতি রুমালে কর্পূর ছিল সেটাতে। বললেন এটা নাকে ধরে শুঁকতে। কিছুক্ষণ ইনহেলারের মতো ব্যবহার করার পর দেখলাম ভালোই লাগছে। জিনিসটা তাঁদের ফেরত দিতে চাইলাম। তাঁরা কিছুতেই নিতে চাইলেন না। বললেন, ‘হামারে পাস অউর ভি হ্যায়। ইয়ে তুম রাখলো।’ পরামর্শ দিলেন এত উঁচু জায়গায় আসলে এই কর্পূরের ছোট পুঁটলি সঙ্গে রাখতে। কম-বেশি সবারই নাকি উঁচুতে উঠলে শ্বাসকষ্ট হয়। তাঁরা জানেন বলেই সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। আমাকে তাঁরা জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি কোথা থেকে এসেছি। খুব গর্ব লাগছিল বলতে, ‘বাংলাদেশ থেকে।’ তাঁরা এসেছিলেন গুজরাট থেকে। আমাকে গুজরাটে যাওয়ার দাওয়াত দিয়ে দিলেন। আমিও তাঁদের বাংলাদেশে আসার নিমন্ত্রণ দিলাম। তাঁরা বিদায় নিতে গেলে দুই ভদ্রমহিলাকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানালাম। তাঁরাও আমার ব্যবহারে মুগ্ধ। খুব হাসিখুশি মুখে বিদায় নিলেন। একটু পরপর কর্পূরের পুঁটলিটা নাকে ধরে নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে মাসুম ভাই এসে পান্ডেজিকে খুঁজে আমাদের গাড়িতে গিয়ে বসতে বললেন। জানালেন, ‘আকাশ ভাইদের খুঁজে পাচ্ছি না। ওনারা এলেই আমরা ফিরতে পারি।’ আকাশ ভাই আর সঙ্গে কে কে যেন কোন একটা বরফের পাহাড়ে চড়তে গিয়েছিলেন। শরীর ভালো থাকলে হয়তো আমরাও যেতাম। খুব আফসোস লাগছিল। ইয়ামথাং কি তাহলে অভিশাপ দিয়েছিল আমাদেরকে?
গাড়িতে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম আমি আর ভুবন। মাসুম ভাই দুটো ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে গেছেন। প্যারাসিটামল। আমাদের জ্বর এসেছে। অবস্থা গুরুতর। এটা না বললে কেউ ফিরবে না। তাই মাসুম ভাই খিটমিট করতে করতে আবার খুঁজতে চলে গেলেন বাকিদেরকে। এদিকে ওই দলটা জিরো পয়েন্ট থেকে ঘুরে ইয়ামথাং ভ্যালিতে চলে এসেছে। তারাও আনন্দ-ফুর্তিতে ব্যস্ত। অবশ্য আমাদের দলের সদস্যদের আরও আগেই তাদের ঘোরাঘুরি শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারা এসেই বলছিল, ‘কেন যে জিরো পয়েন্টে গেলাম। এখানেই তো ভালো ছিল!’ আমরা মাসুম ভাইয়ের দেওয়া ওষুধ খেয়ে চুপচাপ বসে ছিলাম। ভুবনের কপাল ধরে দেখি বেশ ভালো জ্বর। আমারও তাই। আমার চেয়ে ওর শ্বাসকষ্ট কম হচ্ছিল। কর্পূরের পুঁটলিটা একবার আমার নাকে, আরেকবার ওর নাকে ধরছিলাম। নিজের ঘর আর বিছানাটাকে তখন কী পরিমাণ যে মনে করছিলাম তা বলে বোঝাতে পারব না। সেই সঙ্গে আম্মুকে। সবারই নিশ্চয়ই অসুখ হলে মায়ের কথা বেশি মনে পড়ে? ভুবন হয়তো আমার শাশুড়িকে মনে করছিল। কী জানি? বলেনি। ইংরেজিতে ভুবনকে বললাম, ‘আই মিস হোম।' বলেই কান্না শুরু করলাম। শুধু বাড়ি ফিরতে ইচ্ছা করছিল বলে। ভুবন বলল, ‘ঠিক আছে। আর কখনো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব না।’ এটা কেমন কথা? বললাম, ‘কেন যাব না? অবশ্যই যাব। আরও বেশি বেশি প্রস্তুতি নিয়ে যাব। আর বেশি বেশি সাবধান থাকব।’
প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করার পর সবাই ফিরে এলেন। ফিরেই বাগ্বিতণ্ডায় লেগে গেলেন আকাশ ভাই আর মাসুম ভাই। মাসুম ভাইয়ের কথা হচ্ছে, ‘দেখলেন যে ওনারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাহলে দেরি করলেন কেন? ওনাদের তো হোটেলে ফিরে একটু বিশ্রাম দরকার। আপনারা না ফিরলে তো যেতেও পারছেন না।’ এদিকে আকাশ ভাইয়ের কথা, ‘আরে ভাই আমি তো জানিই না ওনারা এত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জানলে কি আর দেরি করতাম?’ মাসুম ভাই বলেন, ‘কেন জানবেন না? না জানার কী আছে?’ আকাশ ভাই যতই বোঝাচ্ছিলেন যে তিনি জানতেন না, মাসুম ভাই ততই রেগে যাচ্ছিলেন। আর আমরা দুজন বাকিদের মতো হা করে তাকিয়ে দেখছিলাম। শেষমেশ ভুবন এগিয়ে বলল, ‘ভাই, আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা চাইনি আমাদের জন্য আপনাদের আনন্দটা মাটি হয়ে যাক। এখন চলেন ফিরে যাই। একটু বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাব।’ তারপরেও দু-এক বাক্য তাঁরা একে অপরকে ছুড়ে দিয়ে গাড়িতে উঠলেন। সেই ঝগড়া অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেনি।
ফিরতি পথে সেনারা আটকায়নি। এবার আরও অল্প সময়ে হোটেলে ফিরে এলাম। বারোটার মতো বাজে তখন। হাতে অনেক সময় আছে। দুপুরের খাবার খেয়েই গ্যাংটকের দিকে রওনা দেব। রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম দুজনেই। ঘুম দরকার ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে দরজায় খটখট করল কে যেন। ভুবন দরজা খুলে দিল। মাসুম ভাই এসে দেখলেন আমাদের জ্বর কেমন। পরে দুজনকে দুইটা প্যারাসিটামল আর গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। এঁরা মনে হয় পুরো ওষুধ কোম্পানিটাই সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন! আমরাও বাধ্য ছেলেমেয়ের মতো খেয়ে শুয়ে পড়লাম আবার। জ্বরের যে অবস্থা ছিল, ওষুধ না খেয়ে উপায় ছিল না। তখন এটাই মনে হয়েছিল। ঘণ্টা দুই ঘুম দিয়ে খেতে চলে গেলাম। ইতিমধ্যে সব দলের সবাই জেনে গেছেন আমরা জ্বরে পড়েছি।
একেকজন খুব দুশ্চিন্তা দেখাচ্ছিলেন। আহা-উহু করছিলেন। নানা পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তবে এ কথা বলতেই হয় যে আমাদের দলের বাকি সাত সদস্য, অমরদা আর মিলন ভাই যথেষ্ট যত্নশীল ছিলেন দুজনের প্রতি। অমরদা জানালেন সমতল থেকে আমরা প্রায় ১৪ হাজার ফুট ওপরে উঠেছিলাম। সেখানে প্রতিকূল আবহাওয়ায় শ্বাসকষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর তিনি সতর্ক করেছিলেন সেদিককার বৃষ্টির পানি যেন মাথায় না লাগে। নির্ঘাত জ্বর আসবে। কখন যে দুই-এক ফোঁটা মাথায় পড়েছিল টের পাইনি। তার ওপর ভোর সকালে করেছিলাম গোসল। তাও মাইনাসের তাপমাত্রায়। ভুবন ঢেলেছিল ঠান্ডা পানি। জ্বর আমাদের হবে না তো কার হবে?
খেতে বসেছি এমন সময় বড় দলের নেতা কিসিমের লোকটা এসে বললেন, ‘কী? কে নাকি অসুস্থ? জ্বর হইসে কার?’ বললাম আমাদের। তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে লোকটা বললেন, ‘এএহহহ! আবার ঘুরতে আইছে!’ টিটকারি করে বলুক কিংবা মজা করেই বলুক, লোকটার কথা আমার পছন্দ হলো না। উত্তর দিইনি। বুদ্ধিমত্তা যাঁদের মাইনাসের কোঠায় থাকে, তাঁদের কথার জবাব দিতে হয় না! এমনিতেই তাঁদের লোক দেখানো স্বভাব দেখে বিরক্ত লাগছিল। তার ওপর প্রথম দিন থেকে দেখছি মদ খেয়ে টাল হয়ে ছিলেন। হিম দেশে রাস্তায় রাস্তায় ঝুড়িতে করে মদ, বিয়ার বেচবেই। তা বলে দেদার কিনে গলা অবধি গিলতে হবে? হুম, তা ঠিক যে নিজের টাকা নিজে খরচ করছেন, তাতে কার কী! সমস্যা হচ্ছে, টাকা খরচ করে মাতাল হয়ে যে কারও সঙ্গে যা তা আচরণ করা। এই যেমন আগের রাতে অমরদাকে পারলে পিটিয়ে মেরে ফেলতেন। কেন সবখানে নিয়ে যেতে পারছিলেন না এই কারণে!
খাওয়াদাওয়া সেরে ব্যাগ গুছিয়ে উঠানে বসে অপেক্ষা করছিলাম। দুই দল একসঙ্গে রওনা দেবে। বড় দলের সবাই তখনও প্রস্তুত না। কিছুটা কমে এসেছিল জ্বর। একটু ভালো লাগছিল বলে পান্ডেজির সঙ্গে গল্প করা শুরু করে দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম সালমান খানের ‘দাবাং’ সিনেমাটা দেখা হয়েছে কি না। তিনি দেখেছেন। পরে তাঁকে জানালাম কেন আমি তাঁকে পান্ডেজি বলে ডাকি। তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘কাহা ম্যায় অউর কাহা সালমান খান!’ আমিও হেসে বললাম, ‘হামারে লিয়ে তো আপহি সালমান খান হ্যায়, পান্ডেজি।’ আমার বিশ্বাস, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ গল্প আছে। আর সেই গল্পের নায়ক তাঁরা নিজেই। পান্ডেজিকে শুধু এই জিনিসটা উপলব্ধি করাতে চাচ্ছিলাম।
তিনটার দিকে সবাই গাড়িতে চড়ে বসলাম। ভটভট করতে করতে জিপ চালু হয়ে গেল। ফিরছিলাম গ্যাংটক।
চলবে...

বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির
৪২ মিনিট আগে
ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
২ ঘণ্টা আগে
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
৬ ঘণ্টা আগে
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হবে, আপনি একজন সুপারহিরো, যার হাতে এখনো কোনো মিশন নেই। এই এনার্জি দিয়ে হয়তো অফিসের বসের দেওয়া এক মাসের কাজ মাত্র দুই ঘণ্টায় শেষ করে ফেলবেন, কিন্তু তারপরে কী করবেন? বাকি ছয় ঘণ্টা সহকর্মীদের বিরক্ত করে কাটাবেন।
৭ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির সঙ্গে ড্রেনে ফেলেন, সেগুলো সহজে পাইপ বন্ধ করে দিতে পারে আপনার অজান্তে।
বাড়তি রান্নার তেল
বড় ভুল হলো ব্যবহার শেষে গরম অবস্থায় অতিরিক্ত তেল সিংকে ঢেলে দেওয়া। গরম অবস্থায় তরল থাকলেও পাইপের ভেতরে ঠান্ডা পরিবেশে তেল দ্রুত শক্ত হয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে এই স্তর মোটা হয় এবং এর সঙ্গে অন্য খাবারের কণা আটকে পাইপ পুরোপুরি জ্যাম হয়ে যায়। ব্যবহার শেষে তেল একটি বোতলে জমিয়ে রাখতে পারেন। পরবর্তী সময়ে তা বোতলসহ ময়লার ঝুরিতে ফেলে দেওয়া নিরাপদ।
কফির গুঁড়া
অনেকেই ভাবেন কফির গুঁড়া এত সূক্ষ্ম যে সিংকে ফেললে কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু পানি লাগলে এটি দলা পাকিয়ে ঘন পুরু স্তর তৈরি করে, যা পাইপের বাঁক বা জোড়ায় গিয়ে আটকে যায়। ধীরে ধীরে এই স্তর শক্ত হয়ে ব্লক সৃষ্টি করে। কফির গুঁড়া ডাস্টবিনে ফেলাই ভালো অথবা সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
রাসায়নিক ড্রেন ক্লিনার
শোনা যায়, ব্লক খুলতে এগুলো খুব কার্যকর। কিন্তু একই সঙ্গে এগুলো পাইপের শত্রুও বটে। বেশির ভাগ ক্লিনারে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক থাকে, যা ব্লক খুললেও প্লাস্টিক বা ধাতব পাইপের আবরণের ক্ষতি করে। দীর্ঘ মেয়াদে লিক বা পাইপ ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। পরিবেশের জন্যও এগুলো ক্ষতিকর। প্রয়োজন হলে পাইপের ব্লক খুলতে বেকিং সোডা ও ভিনেগারের মতো প্রাকৃতিক মিশ্রণ নিরাপদ।
বিড়ালের লিটার
প্যাকেটে ‘ফ্লাশেবল’ লেখা থাকলেও এগুলো কখনোই টয়লেটে ফেলা উচিত নয়। বিড়ালের লিটার সাধারণত ক্লে, সিলিকা বা জেল জাতীয় উপাদানে তৈরি, যা পানি পেলেই ফুলে ওঠে এবং শক্ত দলা তৈরি করে। পাইপে ঢোকার পর এগুলো দ্রুত ব্লক সৃষ্টি করে। পাশাপাশি এতে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী পানির উৎসও দূষিত করতে পারে।
বাড়তি ওষুধ
পুরোনো বা বাড়তি ওষুধ টয়লেটে ফেললে সেগুলো ব্লক সৃষ্টি করে না বটে; কিন্তু সেটা না করলেও এগুলো পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। পানি শোধনাগারগুলো এ ধরনের রাসায়নিক ফিল্টার করতে পারে না। ফলে ওষুধের উপাদান নদী, হ্রদ এবং ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশে গিয়ে ক্ষতি করে। অপ্রয়োজনীয় ওষুধ নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দেওয়া ভালো।
আঁশযুক্ত খাবার
ভাত, নুডলস, পাস্তা বা পাউরুটির মতো খাবার পানিতে ফুলে আঠালো মণ্ড তৈরি করে এবং পাইপে আটকে যায়। ভুট্টার খোসার মতো আঁশযুক্ত খাবার সহজে পচে না এবং পাইপের বাঁকে জট বেঁধে ব্লক সৃষ্টি করে।
ডিমের খোসা
ডিমের ভাঙা খোসা ভঙ্গুর হলেও পাইপে গিয়ে এগুলো বেশ সমস্যা সৃষ্টি করে। খোসার ভাঙা অংশ অনেকটা বালুর মতো এবং তেল বা খাবারের কণার সঙ্গে মিশে শক্ত সিমেন্টের মতো স্তর তৈরি করে।
রং
বাড়ির রঙে থাকা রাসায়নিক পাইপের ক্ষতি করতে পারে। পাশাপাশি ড্রেনে গেলে এসব রাসায়নিক পানি দূষিত করে। তাই ব্যবহার শেষে রং কখনোই সিংক বা টয়লেটে ঢালবেন না। লেবেলে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সেগুলো ফেলা উচিত।
ফলের স্টিকার
ফলের গায়ে থাকা ছোট স্টিকারগুলো খুব শক্তভাবে লেগে থাকে। ড্রেনে গেলে এগুলো পানি শোধনাগারের ফিল্টারে আটকে থাকে ও পাইপে বাধা তৈরি করে। স্টিকারগুলো আলাদা করে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া নিরাপদ।
ফল বা খাবারের শক্ত বিচি
পাইপ কোনোভাবেই ফলের শক্ত বিচি বা হাড়ের মতো শক্ত জিনিস সামলানোর মতো করে তৈরি নয়। এগুলো গারবেজ ডিস্পোজারকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং পাইপের ভেতর মারাত্মক জ্যাম তৈরি করে।
বাড়ির পাইপলাইন সচল রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার ও সঠিক ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। সামান্য সচেতনতা হাজার টাকার ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পারে।
সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির সঙ্গে ড্রেনে ফেলেন, সেগুলো সহজে পাইপ বন্ধ করে দিতে পারে আপনার অজান্তে।
বাড়তি রান্নার তেল
বড় ভুল হলো ব্যবহার শেষে গরম অবস্থায় অতিরিক্ত তেল সিংকে ঢেলে দেওয়া। গরম অবস্থায় তরল থাকলেও পাইপের ভেতরে ঠান্ডা পরিবেশে তেল দ্রুত শক্ত হয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে এই স্তর মোটা হয় এবং এর সঙ্গে অন্য খাবারের কণা আটকে পাইপ পুরোপুরি জ্যাম হয়ে যায়। ব্যবহার শেষে তেল একটি বোতলে জমিয়ে রাখতে পারেন। পরবর্তী সময়ে তা বোতলসহ ময়লার ঝুরিতে ফেলে দেওয়া নিরাপদ।
কফির গুঁড়া
অনেকেই ভাবেন কফির গুঁড়া এত সূক্ষ্ম যে সিংকে ফেললে কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু পানি লাগলে এটি দলা পাকিয়ে ঘন পুরু স্তর তৈরি করে, যা পাইপের বাঁক বা জোড়ায় গিয়ে আটকে যায়। ধীরে ধীরে এই স্তর শক্ত হয়ে ব্লক সৃষ্টি করে। কফির গুঁড়া ডাস্টবিনে ফেলাই ভালো অথবা সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
রাসায়নিক ড্রেন ক্লিনার
শোনা যায়, ব্লক খুলতে এগুলো খুব কার্যকর। কিন্তু একই সঙ্গে এগুলো পাইপের শত্রুও বটে। বেশির ভাগ ক্লিনারে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক থাকে, যা ব্লক খুললেও প্লাস্টিক বা ধাতব পাইপের আবরণের ক্ষতি করে। দীর্ঘ মেয়াদে লিক বা পাইপ ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। পরিবেশের জন্যও এগুলো ক্ষতিকর। প্রয়োজন হলে পাইপের ব্লক খুলতে বেকিং সোডা ও ভিনেগারের মতো প্রাকৃতিক মিশ্রণ নিরাপদ।
বিড়ালের লিটার
প্যাকেটে ‘ফ্লাশেবল’ লেখা থাকলেও এগুলো কখনোই টয়লেটে ফেলা উচিত নয়। বিড়ালের লিটার সাধারণত ক্লে, সিলিকা বা জেল জাতীয় উপাদানে তৈরি, যা পানি পেলেই ফুলে ওঠে এবং শক্ত দলা তৈরি করে। পাইপে ঢোকার পর এগুলো দ্রুত ব্লক সৃষ্টি করে। পাশাপাশি এতে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী পানির উৎসও দূষিত করতে পারে।
বাড়তি ওষুধ
পুরোনো বা বাড়তি ওষুধ টয়লেটে ফেললে সেগুলো ব্লক সৃষ্টি করে না বটে; কিন্তু সেটা না করলেও এগুলো পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। পানি শোধনাগারগুলো এ ধরনের রাসায়নিক ফিল্টার করতে পারে না। ফলে ওষুধের উপাদান নদী, হ্রদ এবং ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশে গিয়ে ক্ষতি করে। অপ্রয়োজনীয় ওষুধ নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দেওয়া ভালো।
আঁশযুক্ত খাবার
ভাত, নুডলস, পাস্তা বা পাউরুটির মতো খাবার পানিতে ফুলে আঠালো মণ্ড তৈরি করে এবং পাইপে আটকে যায়। ভুট্টার খোসার মতো আঁশযুক্ত খাবার সহজে পচে না এবং পাইপের বাঁকে জট বেঁধে ব্লক সৃষ্টি করে।
ডিমের খোসা
ডিমের ভাঙা খোসা ভঙ্গুর হলেও পাইপে গিয়ে এগুলো বেশ সমস্যা সৃষ্টি করে। খোসার ভাঙা অংশ অনেকটা বালুর মতো এবং তেল বা খাবারের কণার সঙ্গে মিশে শক্ত সিমেন্টের মতো স্তর তৈরি করে।
রং
বাড়ির রঙে থাকা রাসায়নিক পাইপের ক্ষতি করতে পারে। পাশাপাশি ড্রেনে গেলে এসব রাসায়নিক পানি দূষিত করে। তাই ব্যবহার শেষে রং কখনোই সিংক বা টয়লেটে ঢালবেন না। লেবেলে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সেগুলো ফেলা উচিত।
ফলের স্টিকার
ফলের গায়ে থাকা ছোট স্টিকারগুলো খুব শক্তভাবে লেগে থাকে। ড্রেনে গেলে এগুলো পানি শোধনাগারের ফিল্টারে আটকে থাকে ও পাইপে বাধা তৈরি করে। স্টিকারগুলো আলাদা করে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া নিরাপদ।
ফল বা খাবারের শক্ত বিচি
পাইপ কোনোভাবেই ফলের শক্ত বিচি বা হাড়ের মতো শক্ত জিনিস সামলানোর মতো করে তৈরি নয়। এগুলো গারবেজ ডিস্পোজারকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং পাইপের ভেতর মারাত্মক জ্যাম তৈরি করে।
বাড়ির পাইপলাইন সচল রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার ও সঠিক ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। সামান্য সচেতনতা হাজার টাকার ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পারে।
সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম
০২ নভেম্বর ২০২২
ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
২ ঘণ্টা আগে
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
৬ ঘণ্টা আগে
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হবে, আপনি একজন সুপারহিরো, যার হাতে এখনো কোনো মিশন নেই। এই এনার্জি দিয়ে হয়তো অফিসের বসের দেওয়া এক মাসের কাজ মাত্র দুই ঘণ্টায় শেষ করে ফেলবেন, কিন্তু তারপরে কী করবেন? বাকি ছয় ঘণ্টা সহকর্মীদের বিরক্ত করে কাটাবেন।
৭ ঘণ্টা আগেফারিয়া রহমান খান

ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন হওয়া জরুরি, যাতে পুরো লুকটা বিগড়ে না যায়।
লাল রঙের পোশাকের সঙ্গে যেভাবে মেকআপ করা যেতে পারে–
লাল পোশাকে ত্বকের খুঁত খুব সহজেই চোখে পড়ে, তাই নিখুঁত বেস তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ত্বকের রং ফরসা হলে ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজারই যথেষ্ট। তা না হলে ভালো ব্র্যান্ডের কালার কারেক্টর ও মানসম্মত ফাউন্ডেশন ব্যবহার করে ত্বকের দাগ ও অন্যান্য খুঁত ঢেকে ফেলুন। শোভন সাহা, কসমেটোলজিস্ট, স্বত্বাধিকারী, শোভন মেকওভার
ন্যুড গ্লো লুক
লাল পোশাক যেহেতু নিজেই উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়, তাই এর সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ লুকের জন্য খুব হালকা মেকআপই ভালো মানায়। ভারী ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বকের সতেজ ও প্রাকৃতিক আভা বজায় থাকে। গালে হালকা ব্রোঞ্জিং পাউডার ও চোখে ন্যাচারাল আইশ্যাডো ও মাসকারা ব্যবহার করুন। লুকটি সম্পূর্ণ করতে ঠোঁটে দিন শিয়ার লিপজেল বা ন্যুড শেডের লিপস্টিক।
ক্ল্যাসিক রেড-অন-রেড
লাল পোশাকের সঙ্গে একই শেডের লাল লিপস্টিক একটি ক্ল্যাসিক কম্বিনেশন। দিনের সাজে হালকা মেকআপ, ব্রাউন পেনসিল লাইনার ও রোজি রেড ব্লাসন ব্যবহার করুন। রাতের সাজে ফাউন্ডেশন বেস, উইংড আইলাইনার ও ফলস ল্যাশ ব্যবহার করে লুকে আনুন আভিজাত্য।
ওল্ড-স্কুল-গ্ল্যামার লুক
এই লুকের জন্য কন্সিলার ও ফাউন্ডেশন দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের মেকআপে ন্যাচারাল টোনের আইশ্যাডো দিন, উইং-টিপড লাইনার তৈরি করে মাসকারা ব্যবহার করুন। ঠোঁটে দিন বোল্ড লাল লিপস্টিক বা শিয়ার রেড লিপ গ্লস।
স্মোকি আই
রাতের মেকআপে চোখকে প্রাধান্য দিতে মুখ ও ঠোঁটের সাজে ব্যবহার করুন ন্যুড শেড। বিবি ক্রিম বা টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের সাজে কন্সিলার, পেনসিল ও জেল লাইনারের পরে পাউডার শ্যাডো দিয়ে মেটালিক-স্মোকি একটা লুক তৈরি করুন।

ফান অ্যান্ড ফ্লার্টি লুক
ক্যাজুয়াল ও ফান লুক পেতে বেস হিসেবে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। চোখে ন্যুড শ্যাডো ও পেনসিল লাইনার দিন। চোখের মেকআপ ন্যূনতম রেখে ভল্যুমিনাস আইল্যাশ ব্যবহার করুন। গালে হালকা ব্লাসন দিন, তবে হাইলাইট করবেন না। ঠোঁটের জন্য টিন্টেড লিপ গ্লস বা শিয়ার পিংক লিপস্টিকই যথেষ্ট।
ঠোঁট ও নখ
খুব গ্ল্যামারাস লুক না চাইলে বা লুকে ভারসাম্য রাখতে ঠোঁটে সব সময় ন্যুড শেডের লিপস্টিক বা টিন্টেড লিপ গ্লস ব্যবহার করাই ভালো। সাজের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে নখের সাজে লাল রঙের নেইল পলিশ এড়িয়ে ন্যুড শেড বা ফ্রেঞ্চ মেনিকিউর বেছে নিতে পারেন, যা একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক দেবে।
চুল
লাল পোশাকের সঙ্গে চুলের সাজ একেবারেই সাধারণ রাখুন। খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ খোঁপা বা টাইট কার্ল না করে হালকা কার্ল করা চুল বা খোলা চুল বেছে নিতে পারেন, যা আপনার মুখকে সুন্দরভাবে ফ্রেম করবে। খেয়াল রাখবেন, চুলের সাজ যেন আপনার সাজের মূল আকর্ষণ না হয় বা আপনার মুখমণ্ডল থেকে মনোযোগ সরিয়ে না দেয়। সাধারণ চুলের স্টাইলই আপনার পুরো সাজকে মার্জিত করে মেকআপকে হাইলাইট করবে।
চোখ বা ঠোঁট; যেকোনো একটিকে ফোকাল পয়েন্টে রাখুন
আকর্ষণীয় দেখাতে খুব ভারী মেকআপ বা গাঢ় রং ব্যবহার করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। সাধারণ নিয়ম হিসেবে মুখের সব ফোকাল পয়েন্ট না বেছে, শুধু একটি অংশ হাইলাইট করার কৌশল বেছে নিন। এই একটি ফোকাল পয়েন্ট হতে পারে আপনার চোখ অথবা ঠোঁট; কিন্তু কখনই দুটি একসঙ্গে নয়। এভাবে মেকআপ করলে সহজেই একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক পাবেন।

ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন হওয়া জরুরি, যাতে পুরো লুকটা বিগড়ে না যায়।
লাল রঙের পোশাকের সঙ্গে যেভাবে মেকআপ করা যেতে পারে–
লাল পোশাকে ত্বকের খুঁত খুব সহজেই চোখে পড়ে, তাই নিখুঁত বেস তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ত্বকের রং ফরসা হলে ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজারই যথেষ্ট। তা না হলে ভালো ব্র্যান্ডের কালার কারেক্টর ও মানসম্মত ফাউন্ডেশন ব্যবহার করে ত্বকের দাগ ও অন্যান্য খুঁত ঢেকে ফেলুন। শোভন সাহা, কসমেটোলজিস্ট, স্বত্বাধিকারী, শোভন মেকওভার
ন্যুড গ্লো লুক
লাল পোশাক যেহেতু নিজেই উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়, তাই এর সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ লুকের জন্য খুব হালকা মেকআপই ভালো মানায়। ভারী ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বকের সতেজ ও প্রাকৃতিক আভা বজায় থাকে। গালে হালকা ব্রোঞ্জিং পাউডার ও চোখে ন্যাচারাল আইশ্যাডো ও মাসকারা ব্যবহার করুন। লুকটি সম্পূর্ণ করতে ঠোঁটে দিন শিয়ার লিপজেল বা ন্যুড শেডের লিপস্টিক।
ক্ল্যাসিক রেড-অন-রেড
লাল পোশাকের সঙ্গে একই শেডের লাল লিপস্টিক একটি ক্ল্যাসিক কম্বিনেশন। দিনের সাজে হালকা মেকআপ, ব্রাউন পেনসিল লাইনার ও রোজি রেড ব্লাসন ব্যবহার করুন। রাতের সাজে ফাউন্ডেশন বেস, উইংড আইলাইনার ও ফলস ল্যাশ ব্যবহার করে লুকে আনুন আভিজাত্য।
ওল্ড-স্কুল-গ্ল্যামার লুক
এই লুকের জন্য কন্সিলার ও ফাউন্ডেশন দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের মেকআপে ন্যাচারাল টোনের আইশ্যাডো দিন, উইং-টিপড লাইনার তৈরি করে মাসকারা ব্যবহার করুন। ঠোঁটে দিন বোল্ড লাল লিপস্টিক বা শিয়ার রেড লিপ গ্লস।
স্মোকি আই
রাতের মেকআপে চোখকে প্রাধান্য দিতে মুখ ও ঠোঁটের সাজে ব্যবহার করুন ন্যুড শেড। বিবি ক্রিম বা টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের সাজে কন্সিলার, পেনসিল ও জেল লাইনারের পরে পাউডার শ্যাডো দিয়ে মেটালিক-স্মোকি একটা লুক তৈরি করুন।

ফান অ্যান্ড ফ্লার্টি লুক
ক্যাজুয়াল ও ফান লুক পেতে বেস হিসেবে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। চোখে ন্যুড শ্যাডো ও পেনসিল লাইনার দিন। চোখের মেকআপ ন্যূনতম রেখে ভল্যুমিনাস আইল্যাশ ব্যবহার করুন। গালে হালকা ব্লাসন দিন, তবে হাইলাইট করবেন না। ঠোঁটের জন্য টিন্টেড লিপ গ্লস বা শিয়ার পিংক লিপস্টিকই যথেষ্ট।
ঠোঁট ও নখ
খুব গ্ল্যামারাস লুক না চাইলে বা লুকে ভারসাম্য রাখতে ঠোঁটে সব সময় ন্যুড শেডের লিপস্টিক বা টিন্টেড লিপ গ্লস ব্যবহার করাই ভালো। সাজের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে নখের সাজে লাল রঙের নেইল পলিশ এড়িয়ে ন্যুড শেড বা ফ্রেঞ্চ মেনিকিউর বেছে নিতে পারেন, যা একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক দেবে।
চুল
লাল পোশাকের সঙ্গে চুলের সাজ একেবারেই সাধারণ রাখুন। খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ খোঁপা বা টাইট কার্ল না করে হালকা কার্ল করা চুল বা খোলা চুল বেছে নিতে পারেন, যা আপনার মুখকে সুন্দরভাবে ফ্রেম করবে। খেয়াল রাখবেন, চুলের সাজ যেন আপনার সাজের মূল আকর্ষণ না হয় বা আপনার মুখমণ্ডল থেকে মনোযোগ সরিয়ে না দেয়। সাধারণ চুলের স্টাইলই আপনার পুরো সাজকে মার্জিত করে মেকআপকে হাইলাইট করবে।
চোখ বা ঠোঁট; যেকোনো একটিকে ফোকাল পয়েন্টে রাখুন
আকর্ষণীয় দেখাতে খুব ভারী মেকআপ বা গাঢ় রং ব্যবহার করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। সাধারণ নিয়ম হিসেবে মুখের সব ফোকাল পয়েন্ট না বেছে, শুধু একটি অংশ হাইলাইট করার কৌশল বেছে নিন। এই একটি ফোকাল পয়েন্ট হতে পারে আপনার চোখ অথবা ঠোঁট; কিন্তু কখনই দুটি একসঙ্গে নয়। এভাবে মেকআপ করলে সহজেই একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক পাবেন।

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম
০২ নভেম্বর ২০২২
বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির
৪২ মিনিট আগে
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
৬ ঘণ্টা আগে
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হবে, আপনি একজন সুপারহিরো, যার হাতে এখনো কোনো মিশন নেই। এই এনার্জি দিয়ে হয়তো অফিসের বসের দেওয়া এক মাসের কাজ মাত্র দুই ঘণ্টায় শেষ করে ফেলবেন, কিন্তু তারপরে কী করবেন? বাকি ছয় ঘণ্টা সহকর্মীদের বিরক্ত করে কাটাবেন।
৭ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। অথচ চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক চাপ ও অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এ সমস্যার বড় কারণ।
ভারতের ইয়েলো ফার্টিলিটির প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ঈশা নান্দাল জানিয়েছেন, পুরুষের খাবার, ঘুম, কাজের ধরন, শরীরচর্চা ও বিশ্রামের অভ্যাস সরাসরি প্রভাব ফেলে হরমোনের ভারসাম্য ও শুক্রাণু উৎপাদনে। তাঁর মতে, অনেক সময় ছোট ভুলগুলোই শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে দেয়। সুখবর হচ্ছে, এ ভুলগুলোর বেশির ভাগই পরিবর্তনযোগ্য।
প্রজনন বিশেষজ্ঞদের মতে, ৭টি অভ্যাস পুরুষের উর্বরতা কমিয়ে দিতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ
মানসিক চাপ বা স্ট্রেস শরীরে কর্টিসল হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়। এই হরমোনটি টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয় এবং শুক্রাণু উৎপাদন ব্যাহত করে। যেহেতু একটি শুক্রাণু তৈরি হতে ৭০-৯০ দিন সময় লাগে, তাই কয়েক মাসের কাজের চাপ বা মানসিক অস্থিরতাও এটি তৈরির প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ থেকে রক্ষা পেতে বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত ধ্যান, গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং শান্ত পরিবেশে সময় কাটানোর পরামর্শ দেন।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার শরীরের কোষের সুরক্ষা দেয় এবং পুরুষের প্রজননক্ষমতা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে বাদাম, আঙুর, শস্যদানা, সবুজ শাকসবজি, বিভিন্ন ধরনের বীজ ও ফল শুক্রাণুর গুণগত মান, ঘনত্ব ও গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এসব খাবারে থাকা ভিটামিন সি, ই, জিংক, সেলেনিয়াম এবং পলিফেনল শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যাল কমিয়ে শুক্রাণুকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। অন্যদিকে অতিরিক্ত কফি খাওয়া, নিয়মিত জাংকফুড, মিষ্টি নাশতা বা অত্যধিক চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া শরীরে প্রদাহ বাড়ায় এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এসব খাবার শুক্রাণুর গতিশীলতা কমিয়ে দেয়, শক্তি কেড়ে নেয় এবং কখনো কখনো শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে।
অতিরিক্ত তাপ ও অতিরিক্ত ব্যায়াম
শুক্রাণু তাপ সংবেদনশীল। কোলে ল্যাপটপ রাখা, খুব আঁটসাঁট পোশাক, গাড়ির গরম সিট, স্টিম বাথ টেস্টিকলের তাপমাত্রা বাড়িয়ে শুক্রাণু উৎপাদনে বাধা দেয়। আবার হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম উপকারী হলেও অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীরের স্বাভাবিক টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয়, ফলে শুক্রাণু উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ধূমপান, অ্যালকোহল ও নেশাজাতীয় দ্রব্য
ডা. নান্দাল জানান, তামাক, অ্যালকোহল ও মাদকদ্রব্য শুক্রাণুর আকার, সংখ্যা ও গতিশীলতা নষ্ট করে। এমনকি মাঝেমধ্যে ব্যবহারেরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব অভ্যাস কমানো বা সম্পূর্ণ বাদ দিলে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যেই শুক্রাণু তৈরির অবস্থা উন্নত হয়।
স্বাস্থ্য সমস্যা উপেক্ষা করা
ভ্যারিকোসিল, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ ও থাইরয়েড সমস্যা থাকলে অনেক সময় লক্ষণ দেখা দেওয়া ছাড়াই পুরুষের শুক্রাণু কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। অনেক পুরুষ প্রকৃতিগত কারণেই এসব শারীরিক সমস্যাকে ছোট মনে করে বা দেরিতে চিকিৎসা নেয়। কিন্তু এসব সমস্যার শুরুতে পরীক্ষা, দ্রুত নির্ণয় ও চিকিৎসা সন্তান গ্রহণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
পরিবেশগত দূষণ ও রাসায়নিকের প্রভাব
কীটনাশক, ভারী ধাতু, প্লাস্টিকের রাসায়নিক, বায়ুদূষণ ও শিল্পকারখানার রাসায়নিক শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে। যদিও পুরোপুরি এড়ানো যায় না, তবে বিপিএ মুক্ত বোতল, জৈব খাবার বা কম রাসায়নিকযুক্ত বিকল্প ব্যবহার করলে এ ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
আগে থেকেই বীর্য পরীক্ষা না করানো
আগে বীর্য পরীক্ষা সাধারণত শেষ ধাপ হিসেবে ধরা হতো। এখন চিকিৎসকেরা পরিবার গঠনের পরিকল্পনা থাকলে পুরুষদের আগেই পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। সহজ ও ব্যথামুক্ত এই পরীক্ষায় পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় এবং সমস্যা থাকলে দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ কমানো, ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ, পরিবেশগত বিষাক্ততা কমানো এবং সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা এসবই পুরুষদের উর্বরতা ভালো রাখতে বড় ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সন্তান নেওয়ার আগে পুরুষের স্বাস্থ্যকে সমান গুরুত্ব দিলে দীর্ঘমেয়াদি প্রজনন স্বাস্থ্য আরও শক্তিশালী হয়।
সূত্র: হেলথশট

দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। অথচ চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক চাপ ও অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এ সমস্যার বড় কারণ।
ভারতের ইয়েলো ফার্টিলিটির প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ঈশা নান্দাল জানিয়েছেন, পুরুষের খাবার, ঘুম, কাজের ধরন, শরীরচর্চা ও বিশ্রামের অভ্যাস সরাসরি প্রভাব ফেলে হরমোনের ভারসাম্য ও শুক্রাণু উৎপাদনে। তাঁর মতে, অনেক সময় ছোট ভুলগুলোই শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে দেয়। সুখবর হচ্ছে, এ ভুলগুলোর বেশির ভাগই পরিবর্তনযোগ্য।
প্রজনন বিশেষজ্ঞদের মতে, ৭টি অভ্যাস পুরুষের উর্বরতা কমিয়ে দিতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ
মানসিক চাপ বা স্ট্রেস শরীরে কর্টিসল হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়। এই হরমোনটি টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয় এবং শুক্রাণু উৎপাদন ব্যাহত করে। যেহেতু একটি শুক্রাণু তৈরি হতে ৭০-৯০ দিন সময় লাগে, তাই কয়েক মাসের কাজের চাপ বা মানসিক অস্থিরতাও এটি তৈরির প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ থেকে রক্ষা পেতে বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত ধ্যান, গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং শান্ত পরিবেশে সময় কাটানোর পরামর্শ দেন।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার শরীরের কোষের সুরক্ষা দেয় এবং পুরুষের প্রজননক্ষমতা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে বাদাম, আঙুর, শস্যদানা, সবুজ শাকসবজি, বিভিন্ন ধরনের বীজ ও ফল শুক্রাণুর গুণগত মান, ঘনত্ব ও গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এসব খাবারে থাকা ভিটামিন সি, ই, জিংক, সেলেনিয়াম এবং পলিফেনল শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যাল কমিয়ে শুক্রাণুকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। অন্যদিকে অতিরিক্ত কফি খাওয়া, নিয়মিত জাংকফুড, মিষ্টি নাশতা বা অত্যধিক চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া শরীরে প্রদাহ বাড়ায় এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এসব খাবার শুক্রাণুর গতিশীলতা কমিয়ে দেয়, শক্তি কেড়ে নেয় এবং কখনো কখনো শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে।
অতিরিক্ত তাপ ও অতিরিক্ত ব্যায়াম
শুক্রাণু তাপ সংবেদনশীল। কোলে ল্যাপটপ রাখা, খুব আঁটসাঁট পোশাক, গাড়ির গরম সিট, স্টিম বাথ টেস্টিকলের তাপমাত্রা বাড়িয়ে শুক্রাণু উৎপাদনে বাধা দেয়। আবার হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম উপকারী হলেও অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীরের স্বাভাবিক টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয়, ফলে শুক্রাণু উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ধূমপান, অ্যালকোহল ও নেশাজাতীয় দ্রব্য
ডা. নান্দাল জানান, তামাক, অ্যালকোহল ও মাদকদ্রব্য শুক্রাণুর আকার, সংখ্যা ও গতিশীলতা নষ্ট করে। এমনকি মাঝেমধ্যে ব্যবহারেরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব অভ্যাস কমানো বা সম্পূর্ণ বাদ দিলে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যেই শুক্রাণু তৈরির অবস্থা উন্নত হয়।
স্বাস্থ্য সমস্যা উপেক্ষা করা
ভ্যারিকোসিল, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ ও থাইরয়েড সমস্যা থাকলে অনেক সময় লক্ষণ দেখা দেওয়া ছাড়াই পুরুষের শুক্রাণু কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। অনেক পুরুষ প্রকৃতিগত কারণেই এসব শারীরিক সমস্যাকে ছোট মনে করে বা দেরিতে চিকিৎসা নেয়। কিন্তু এসব সমস্যার শুরুতে পরীক্ষা, দ্রুত নির্ণয় ও চিকিৎসা সন্তান গ্রহণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
পরিবেশগত দূষণ ও রাসায়নিকের প্রভাব
কীটনাশক, ভারী ধাতু, প্লাস্টিকের রাসায়নিক, বায়ুদূষণ ও শিল্পকারখানার রাসায়নিক শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে। যদিও পুরোপুরি এড়ানো যায় না, তবে বিপিএ মুক্ত বোতল, জৈব খাবার বা কম রাসায়নিকযুক্ত বিকল্প ব্যবহার করলে এ ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
আগে থেকেই বীর্য পরীক্ষা না করানো
আগে বীর্য পরীক্ষা সাধারণত শেষ ধাপ হিসেবে ধরা হতো। এখন চিকিৎসকেরা পরিবার গঠনের পরিকল্পনা থাকলে পুরুষদের আগেই পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। সহজ ও ব্যথামুক্ত এই পরীক্ষায় পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় এবং সমস্যা থাকলে দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ কমানো, ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ, পরিবেশগত বিষাক্ততা কমানো এবং সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা এসবই পুরুষদের উর্বরতা ভালো রাখতে বড় ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সন্তান নেওয়ার আগে পুরুষের স্বাস্থ্যকে সমান গুরুত্ব দিলে দীর্ঘমেয়াদি প্রজনন স্বাস্থ্য আরও শক্তিশালী হয়।
সূত্র: হেলথশট

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম
০২ নভেম্বর ২০২২
বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির
৪২ মিনিট আগে
ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
২ ঘণ্টা আগে
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হবে, আপনি একজন সুপারহিরো, যার হাতে এখনো কোনো মিশন নেই। এই এনার্জি দিয়ে হয়তো অফিসের বসের দেওয়া এক মাসের কাজ মাত্র দুই ঘণ্টায় শেষ করে ফেলবেন, কিন্তু তারপরে কী করবেন? বাকি ছয় ঘণ্টা সহকর্মীদের বিরক্ত করে কাটাবেন।
৭ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মেষ
আজ আপনার শরীরে এত বেশি এনার্জি থাকবে যে ভুলবশত বাড়ির সব ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র চার্জ করার চেষ্টা করতে পারেন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হবে, আপনি একজন সুপারহিরো, যার হাতে এখনো কোনো মিশন নেই। এই এনার্জি দিয়ে হয়তো অফিসের বসের দেওয়া এক মাসের কাজ মাত্র দুই ঘণ্টায় শেষ করে ফেলবেন, কিন্তু তারপরে কী করবেন? বাকি ছয় ঘণ্টা সহকর্মীদের বিরক্ত করে কাটাবেন। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত উৎসাহে আজ এমন কিছু করার চেষ্টা করবেন না, যাতে প্রতিবেশী আপনাকে দেখে দরজা বন্ধ করে দেয়। প্রেমের ক্ষেত্রে প্রিয়জনকে ইমপ্রেস করতে গিয়ে এমন কিছু বলে ফেলবেন, যা গুগলেও খুঁজে পাওয়া যায় না। অতিরিক্ত শক্তি কাজে লাগিয়ে আজ অন্তত একটা পুরোনো বাক্স গুছিয়ে ফেলুন। বাকিটা ওপরওয়ালার হাতে!
বৃষ
আপনার জীবনের ‘স্বযত্নলালিত স্বপ্ন’ আজ সত্যি হতে পারে! আর সেই স্বপ্নটি হলো, সারা দিন সোফায় শুয়ে থাকা এবং প্রিয় খাবার ডেলিভারি নেওয়া। আজ এমন এক গভীর আলস্যের জালে জড়িয়ে পড়বেন যে, রিমোট কন্ট্রোলটা হাত থেকে পড়ে গেলে সেটা তোলার জন্য কাউকে ফোন করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। কর্মক্ষেত্রে কাজের গতি হবে কচ্ছপের থেকেও ধীর। সহকর্মীরা ভাববে, আপনি হয়তো ধ্যানের নতুন কোনো উচ্চস্তরে পৌঁছে গেছেন। অর্থের দিক থেকে আজ এমন কিছু ডিসকাউন্ট খুঁজতে গিয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন, যা আসলে অস্তিত্বহীন। আজ যদি কেউ আপনাকে তাড়াহুড়ো করতে বলে, মনে মনে বলুন: ‘আমি বৃষ, তাড়াহুড়ো আমার ডিকশনারিতে নেই। ওটা অন্য কোনো রাশির জন্য।’
মিথুন
আপনার ভেতরের দুটি মানুষ আজ সকাল থেকে প্রচণ্ড তর্কে লিপ্ত থাকবে। একজন বলবে, ‘আজ আমি পৃথিবীকে জয় করব!’ অন্যজন বলবে, ‘আরে বাবা, আগে ঠিক করো কোন রঙের মোজাটা পরবে!’ আপনি কোনো একটি বিষয়ে স্থির হতে পারবেন না। কফি না চা? লাল শার্ট না নীল? এই দ্বিধায় পুরো দিন কেটে যাবে। এমন কারও অভাব অনুভব করবেন, যে আপনার সব দ্বিমুখী সিদ্ধান্তকে একমুখী করে দিতে পারে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনি আজ চূড়ান্ত জনপ্রিয়। এত বেশি মেসেজ আসবে যে ফোন চার্জে দিয়েই আপনি হয়তো চার্জার খুঁজে পাবেন না। আজ একটি মাত্র কাজ করুন: স্থির থাকুন। যদি না পারেন, তাহলে একটি কয়েন টস করুন এবং টস হওয়ার আগেই সেই সিদ্ধান্তকে মেনে নিন।
কর্কট
আজ আপনার মন অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ। যেকোনো তুচ্ছ ঘটনাতেই চোখে পানি চলে আসতে পারে। হয়তো দেখবেন, ফ্রিজে শেষ রুটিটা দেখে অতীতের সব দুঃখ মনে পড়ে যাচ্ছে। মনে হবে, পৃথিবীর সবচেয়ে আরামদায়ক স্থান হলো ঘর। তাই আজ ঘর থেকে বের হতে চাইবেন না। যদি বের হতে হয়, তাহলে একটা বালিশ আর কম্বল সঙ্গে নিয়ে নিন—কে জানে কখন কোথায় একটু আবেগ নিয়ে বসা দরকার হয়! পরিবারকে নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করবেন। বিশেষত, বাড়ির পোষা প্রাণীটি ঠিকমতো খাচ্ছে কিনা, সেটা নিয়ে আজ গবেষণা করতে পারেন। আজ অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করতে পারেন। তবে পুরোনো বিল বা ফাইনাল পরীক্ষার খাতা দেখলে চোখ মুছতে টিস্যু পেপার হাতের কাছে রাখুন।
সিংহ
আজ যা কিছু করবেন, তাতেই আপনার লাইমলাইট চাই। ধরুন, অফিসে এক গ্লাস পানি খেলেন, আপনার মনে হবে সেটা একটা প্রেস কনফারেন্সের যোগ্য ইভেন্ট। যদি কেউ আপনার দিকে না তাকায়, তাহলে নিজেই জোরে জোরে নিজের প্রশংসা শুরু করে দেবেন। আপনার মনে হবে, আপনার প্রতিটি পদক্ষেপই বুঝি ইতিহাস তৈরি করছে। প্রেমের ক্ষেত্রে, পার্টনার আপনার প্রশংসা না করলে আপনি হয়তো সাময়িক ধর্মঘট শুরু করে দিতে পারেন। সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গেলে বিল দেওয়ার সময় এমন নাটকীয় ভঙ্গিতে মানিব্যাগ বের করবেন, যাতে মনে হয় আপনি পুরো গ্যালাক্সির দেনা মেটাচ্ছেন। সবার মনোযোগ পেতে আজ আপনি যা-ই করুন না কেন, শেষমেশ দেখবেন বাড়ির কুকুরটাই সবচেয়ে বেশি করতালি পাচ্ছে। সেটা মেনে নিন।
কন্যা
আজ আপনার মস্তিষ্ক একটি হাইপার-অ্যাকটিভ স্প্রেডশিটের মতো চলবে। আপনার প্রধান চিন্তা হবে, বালিশের কভারটি আর টেবিলের কোণটা একই সমান্তরালে আছে কি না। কাজের জায়গায় সহকর্মীর কফির মগে কতটুকু চিনি বেশি আছে, সেটা বের করে ফেলবেন। আর সেই খুঁত নিয়েই আপনি আজ একটি বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করে ফেলবেন। যদি দেখেন কোনো কিছু নিখুঁত নয়, তাহলে মেজাজ সপ্তমে উঠবে। দুশ্চিন্তা করবেন না, আজকের দিনের সবচেয়ে বড় ভুলটি হয়তো আপনিই করবেন, সঠিকটা করতে গিয়ে ভুলটা করে ফেলবেন! আজ দয়া করে নিজের চুল গুনতে শুরু করবেন না। আজ অন্তত একবার একটা ভুল করুন। স্বাধীনতা উপভোগ করুন!
তুলা
ন্যায়, ভারসাম্য এবং সৌন্দর্যের পূজারি আপনি আজ একটি কঠিন পরীক্ষায় পড়বেন। আপনাকে হয়তো ঠিক করতে হবে, দুপুরে ভাত খাবেন নাকি রুটি! এই নিয়েই অন্তত এক ঘণ্টা ভাববেন এবং শেষমেশ দুটোই খেয়ে ফেলবেন। কর্মক্ষেত্রে দুটি সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী মতের সঙ্গে সহমত হবেন, আর এতে সহকর্মীরা আপনাকে ‘ডাবল এজেন্ট’ ভাবতে পারে। প্রেমের ক্ষেত্রে পার্টনারের সামান্যতম অভিযোগ শুনেই এত বেশি ভারসাম্য আনতে চাইবেন যে সম্পর্কটা দড়ির ওপর হাঁটা সার্কাসের মতো মনে হবে। কোনো জটিল সিদ্ধান্ত এলে আজ শুধু একটা জিনিস ভাবুন: যেটাতে আপনার সবচেয়ে কম কষ্ট হবে। ব্যস! ব্যালেন্স নিজের থেকেই চলে আসবে।
বৃশ্চিক
আজ মন গভীর ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত থাকবে। হয়তো ভাববেন, পাশের ডেস্কের সহকর্মী কেন আজ আপনার দিকে একটু বেশি হেসেছেন? এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো গভীর রহস্য আছে! সারা দিন ধরে সেই রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করবেন, যা আসলে সামান্য দাঁত ব্রাশ করার পরের হাসি। তীব্র মনোযোগ আজ আপনাকে অনেক জটিল সমস্যার সমাধান দেবে, কিন্তু সেটা কাউকে বুঝতে দেবেন না। মনে রাখবেন, আপনার নীরবতা আজ একটি পারমাণবিক বোমার চেয়েও শক্তিশালী। লোকে ভাববে আপনি ধ্যান করছেন, কিন্তু আসলে ভাবছেন, কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীর চায়ে লবণ মিশিয়ে দেবেন। কাউকে কিছু বলবেন না। নীরবতা আজ স্বর্ণময়। সেটা জমিয়ে রাখুন।
ধনু
আজ মন চঞ্চল, আজ বাড়ি ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা করতে পারেন। হয়তো অফিস থেকে সোজা হিমালয় বা চাঁদে চলে যাওয়ার টিকিট খুঁজতে থাকবেন। আপনার ফিলোসফিক্যাল রগ আজ এত বেশি চড়ে থাকবে যে, ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে মহাজাগতিক সত্য আবিষ্কার করতে পারেন। আপনার অতি-সৎ কথাগুলো আজ কারও না কারও মন খারাপ করবে। হয়তো বলবেন, ‘তোমাকে এই শাড়িতে এত মোটা লাগছে না, যতটা গত সপ্তাহে লাগছিল।’ এই রাশিফল পড়ার সময়ও আপনি ভাবছেন, এটার কোথাও কোনো বানান ভুল আছে কি না। আজ মুখটা সাবধানে ব্যবহার করুন। বিশেষত যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ মিটিং থাকে, তাহলে কথা বলার আগে তিনবার কফি খান।
মকর
আজ আপনি বিশ্বের সবচেয়ে সফল এবং গম্ভীর মানুষ। মনে করবেন, পৃথিবীর সব দায়িত্ব আপনার কাঁধেই। আপনার প্রধান শখ হবে অন্যদের হাসতে দেখে বিরক্ত হওয়া। ভাববেন, ‘এরা এত হাসছে কেন? কাজের ডেডলাইন তো এখনো বাকি!’ আপনার মনে হবে, আপনি যদি এক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেন, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে, পার্টনারকে ইমপ্রেস করতে কোনো রোমান্টিক ডিনার বা উপহার না দিয়ে, বরং একটি সুন্দর এক্সেল শিট তৈরি করে দেবেন, যেখানে আপনাদের সম্পর্কের আগামী ১০ বছরের লক্ষ্য লেখা থাকবে। আজকের দিনটি একটু আরাম করুন। না করলে মস্তিষ্ক আপনাকে মনে করিয়ে দেবে যে আপনার দাঁত ব্রাশ করা বাকি এবং এই ভুলটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
কুম্ভ
আজ এমন একটি অদ্ভুত আইডিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন, যা পৃথিবীর বাকি ১১টা রাশি কখনোই বুঝবে না। হয়তো ঠিক করবেন, প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে কীভাবে বিশ্বশান্তি আনা যায়, অথবা কেন সব শার্টে তিনটি করে কলার থাকা উচিত। আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টগুলো আজ খুবই বৈপ্লবিক হবে, কিন্তু বন্ধুরা হয়তো ভাববে আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কেউ আপনার কথা বুঝতে না পারলে আরও খুশি হবেন—কারণ জানেন আপনি কতটা এগিয়ে! প্রেম নিয়ে ভাবনা হবে, কেন এই ‘সামাজিক বন্ধন’-এর প্রয়োজন, যেখানে দুজন মানুষ শুধু নিজেদের মধ্যে একটি ইমোজি বিনিময় করেও দিব্যি থাকতে পারে। পরামর্শ: আপনার আইডিয়াগুলো খুব ভালো। কিন্তু আজ দয়া করে আপনার আইডিয়াগুলো দিয়ে পোষা প্রাণীটির ওপর কোনো পরীক্ষা করবেন না।
মীন
আজ বাস্তবের ধারেকাছেও থাকবেন না। দিনের বেশির ভাগ সময় এমন এক কল্পনার জগতে ভেসে বেড়াবেন, যেখানে আপনার সব বিল পরিশোধ হয়ে গেছে এবং পোষা মাছটা কথা বলতে পারে। কাজের জায়গায় ভুলবশত সহকর্মীকে ‘আমার স্বপ্নে দেখা রাজকুমার/রাজকুমারী’ বলে ডাকতে পারেন। মনে হবে, জীবন একটি হিন্দি সিনেমা, আর আপনি তার হিরো/হিরোইন। যদি কিছু ভুলে যান, যেমন চাবি বা মানিব্যাগ, তার জন্য গ্রহদের দোষ দেবেন। সন্ধ্যায়, হয়তো এত বেশি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠবেন যে টিভির সিরিয়ালের ভিলেনের দুঃখেও চোখে পানি চলে আসবে। আজ চোখ খুলে হাঁটুন। আর যদি চারপাশের মানুষ আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করে, তাহলে চোখ বন্ধ করে শুধু ‘হুম’ বলে দিন। নিরাপদ থাকবেন।

মেষ
আজ আপনার শরীরে এত বেশি এনার্জি থাকবে যে ভুলবশত বাড়ির সব ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র চার্জ করার চেষ্টা করতে পারেন। সকালে ঘুম থেকে উঠেই মনে হবে, আপনি একজন সুপারহিরো, যার হাতে এখনো কোনো মিশন নেই। এই এনার্জি দিয়ে হয়তো অফিসের বসের দেওয়া এক মাসের কাজ মাত্র দুই ঘণ্টায় শেষ করে ফেলবেন, কিন্তু তারপরে কী করবেন? বাকি ছয় ঘণ্টা সহকর্মীদের বিরক্ত করে কাটাবেন। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত উৎসাহে আজ এমন কিছু করার চেষ্টা করবেন না, যাতে প্রতিবেশী আপনাকে দেখে দরজা বন্ধ করে দেয়। প্রেমের ক্ষেত্রে প্রিয়জনকে ইমপ্রেস করতে গিয়ে এমন কিছু বলে ফেলবেন, যা গুগলেও খুঁজে পাওয়া যায় না। অতিরিক্ত শক্তি কাজে লাগিয়ে আজ অন্তত একটা পুরোনো বাক্স গুছিয়ে ফেলুন। বাকিটা ওপরওয়ালার হাতে!
বৃষ
আপনার জীবনের ‘স্বযত্নলালিত স্বপ্ন’ আজ সত্যি হতে পারে! আর সেই স্বপ্নটি হলো, সারা দিন সোফায় শুয়ে থাকা এবং প্রিয় খাবার ডেলিভারি নেওয়া। আজ এমন এক গভীর আলস্যের জালে জড়িয়ে পড়বেন যে, রিমোট কন্ট্রোলটা হাত থেকে পড়ে গেলে সেটা তোলার জন্য কাউকে ফোন করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। কর্মক্ষেত্রে কাজের গতি হবে কচ্ছপের থেকেও ধীর। সহকর্মীরা ভাববে, আপনি হয়তো ধ্যানের নতুন কোনো উচ্চস্তরে পৌঁছে গেছেন। অর্থের দিক থেকে আজ এমন কিছু ডিসকাউন্ট খুঁজতে গিয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন, যা আসলে অস্তিত্বহীন। আজ যদি কেউ আপনাকে তাড়াহুড়ো করতে বলে, মনে মনে বলুন: ‘আমি বৃষ, তাড়াহুড়ো আমার ডিকশনারিতে নেই। ওটা অন্য কোনো রাশির জন্য।’
মিথুন
আপনার ভেতরের দুটি মানুষ আজ সকাল থেকে প্রচণ্ড তর্কে লিপ্ত থাকবে। একজন বলবে, ‘আজ আমি পৃথিবীকে জয় করব!’ অন্যজন বলবে, ‘আরে বাবা, আগে ঠিক করো কোন রঙের মোজাটা পরবে!’ আপনি কোনো একটি বিষয়ে স্থির হতে পারবেন না। কফি না চা? লাল শার্ট না নীল? এই দ্বিধায় পুরো দিন কেটে যাবে। এমন কারও অভাব অনুভব করবেন, যে আপনার সব দ্বিমুখী সিদ্ধান্তকে একমুখী করে দিতে পারে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনি আজ চূড়ান্ত জনপ্রিয়। এত বেশি মেসেজ আসবে যে ফোন চার্জে দিয়েই আপনি হয়তো চার্জার খুঁজে পাবেন না। আজ একটি মাত্র কাজ করুন: স্থির থাকুন। যদি না পারেন, তাহলে একটি কয়েন টস করুন এবং টস হওয়ার আগেই সেই সিদ্ধান্তকে মেনে নিন।
কর্কট
আজ আপনার মন অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ। যেকোনো তুচ্ছ ঘটনাতেই চোখে পানি চলে আসতে পারে। হয়তো দেখবেন, ফ্রিজে শেষ রুটিটা দেখে অতীতের সব দুঃখ মনে পড়ে যাচ্ছে। মনে হবে, পৃথিবীর সবচেয়ে আরামদায়ক স্থান হলো ঘর। তাই আজ ঘর থেকে বের হতে চাইবেন না। যদি বের হতে হয়, তাহলে একটা বালিশ আর কম্বল সঙ্গে নিয়ে নিন—কে জানে কখন কোথায় একটু আবেগ নিয়ে বসা দরকার হয়! পরিবারকে নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করবেন। বিশেষত, বাড়ির পোষা প্রাণীটি ঠিকমতো খাচ্ছে কিনা, সেটা নিয়ে আজ গবেষণা করতে পারেন। আজ অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করতে পারেন। তবে পুরোনো বিল বা ফাইনাল পরীক্ষার খাতা দেখলে চোখ মুছতে টিস্যু পেপার হাতের কাছে রাখুন।
সিংহ
আজ যা কিছু করবেন, তাতেই আপনার লাইমলাইট চাই। ধরুন, অফিসে এক গ্লাস পানি খেলেন, আপনার মনে হবে সেটা একটা প্রেস কনফারেন্সের যোগ্য ইভেন্ট। যদি কেউ আপনার দিকে না তাকায়, তাহলে নিজেই জোরে জোরে নিজের প্রশংসা শুরু করে দেবেন। আপনার মনে হবে, আপনার প্রতিটি পদক্ষেপই বুঝি ইতিহাস তৈরি করছে। প্রেমের ক্ষেত্রে, পার্টনার আপনার প্রশংসা না করলে আপনি হয়তো সাময়িক ধর্মঘট শুরু করে দিতে পারেন। সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গেলে বিল দেওয়ার সময় এমন নাটকীয় ভঙ্গিতে মানিব্যাগ বের করবেন, যাতে মনে হয় আপনি পুরো গ্যালাক্সির দেনা মেটাচ্ছেন। সবার মনোযোগ পেতে আজ আপনি যা-ই করুন না কেন, শেষমেশ দেখবেন বাড়ির কুকুরটাই সবচেয়ে বেশি করতালি পাচ্ছে। সেটা মেনে নিন।
কন্যা
আজ আপনার মস্তিষ্ক একটি হাইপার-অ্যাকটিভ স্প্রেডশিটের মতো চলবে। আপনার প্রধান চিন্তা হবে, বালিশের কভারটি আর টেবিলের কোণটা একই সমান্তরালে আছে কি না। কাজের জায়গায় সহকর্মীর কফির মগে কতটুকু চিনি বেশি আছে, সেটা বের করে ফেলবেন। আর সেই খুঁত নিয়েই আপনি আজ একটি বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করে ফেলবেন। যদি দেখেন কোনো কিছু নিখুঁত নয়, তাহলে মেজাজ সপ্তমে উঠবে। দুশ্চিন্তা করবেন না, আজকের দিনের সবচেয়ে বড় ভুলটি হয়তো আপনিই করবেন, সঠিকটা করতে গিয়ে ভুলটা করে ফেলবেন! আজ দয়া করে নিজের চুল গুনতে শুরু করবেন না। আজ অন্তত একবার একটা ভুল করুন। স্বাধীনতা উপভোগ করুন!
তুলা
ন্যায়, ভারসাম্য এবং সৌন্দর্যের পূজারি আপনি আজ একটি কঠিন পরীক্ষায় পড়বেন। আপনাকে হয়তো ঠিক করতে হবে, দুপুরে ভাত খাবেন নাকি রুটি! এই নিয়েই অন্তত এক ঘণ্টা ভাববেন এবং শেষমেশ দুটোই খেয়ে ফেলবেন। কর্মক্ষেত্রে দুটি সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী মতের সঙ্গে সহমত হবেন, আর এতে সহকর্মীরা আপনাকে ‘ডাবল এজেন্ট’ ভাবতে পারে। প্রেমের ক্ষেত্রে পার্টনারের সামান্যতম অভিযোগ শুনেই এত বেশি ভারসাম্য আনতে চাইবেন যে সম্পর্কটা দড়ির ওপর হাঁটা সার্কাসের মতো মনে হবে। কোনো জটিল সিদ্ধান্ত এলে আজ শুধু একটা জিনিস ভাবুন: যেটাতে আপনার সবচেয়ে কম কষ্ট হবে। ব্যস! ব্যালেন্স নিজের থেকেই চলে আসবে।
বৃশ্চিক
আজ মন গভীর ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত থাকবে। হয়তো ভাববেন, পাশের ডেস্কের সহকর্মী কেন আজ আপনার দিকে একটু বেশি হেসেছেন? এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো গভীর রহস্য আছে! সারা দিন ধরে সেই রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করবেন, যা আসলে সামান্য দাঁত ব্রাশ করার পরের হাসি। তীব্র মনোযোগ আজ আপনাকে অনেক জটিল সমস্যার সমাধান দেবে, কিন্তু সেটা কাউকে বুঝতে দেবেন না। মনে রাখবেন, আপনার নীরবতা আজ একটি পারমাণবিক বোমার চেয়েও শক্তিশালী। লোকে ভাববে আপনি ধ্যান করছেন, কিন্তু আসলে ভাবছেন, কীভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীর চায়ে লবণ মিশিয়ে দেবেন। কাউকে কিছু বলবেন না। নীরবতা আজ স্বর্ণময়। সেটা জমিয়ে রাখুন।
ধনু
আজ মন চঞ্চল, আজ বাড়ি ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা করতে পারেন। হয়তো অফিস থেকে সোজা হিমালয় বা চাঁদে চলে যাওয়ার টিকিট খুঁজতে থাকবেন। আপনার ফিলোসফিক্যাল রগ আজ এত বেশি চড়ে থাকবে যে, ট্রাফিক জ্যাম নিয়ে মহাজাগতিক সত্য আবিষ্কার করতে পারেন। আপনার অতি-সৎ কথাগুলো আজ কারও না কারও মন খারাপ করবে। হয়তো বলবেন, ‘তোমাকে এই শাড়িতে এত মোটা লাগছে না, যতটা গত সপ্তাহে লাগছিল।’ এই রাশিফল পড়ার সময়ও আপনি ভাবছেন, এটার কোথাও কোনো বানান ভুল আছে কি না। আজ মুখটা সাবধানে ব্যবহার করুন। বিশেষত যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ মিটিং থাকে, তাহলে কথা বলার আগে তিনবার কফি খান।
মকর
আজ আপনি বিশ্বের সবচেয়ে সফল এবং গম্ভীর মানুষ। মনে করবেন, পৃথিবীর সব দায়িত্ব আপনার কাঁধেই। আপনার প্রধান শখ হবে অন্যদের হাসতে দেখে বিরক্ত হওয়া। ভাববেন, ‘এরা এত হাসছে কেন? কাজের ডেডলাইন তো এখনো বাকি!’ আপনার মনে হবে, আপনি যদি এক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেন, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়বে। প্রেমের ক্ষেত্রে, পার্টনারকে ইমপ্রেস করতে কোনো রোমান্টিক ডিনার বা উপহার না দিয়ে, বরং একটি সুন্দর এক্সেল শিট তৈরি করে দেবেন, যেখানে আপনাদের সম্পর্কের আগামী ১০ বছরের লক্ষ্য লেখা থাকবে। আজকের দিনটি একটু আরাম করুন। না করলে মস্তিষ্ক আপনাকে মনে করিয়ে দেবে যে আপনার দাঁত ব্রাশ করা বাকি এবং এই ভুলটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
কুম্ভ
আজ এমন একটি অদ্ভুত আইডিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন, যা পৃথিবীর বাকি ১১টা রাশি কখনোই বুঝবে না। হয়তো ঠিক করবেন, প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে কীভাবে বিশ্বশান্তি আনা যায়, অথবা কেন সব শার্টে তিনটি করে কলার থাকা উচিত। আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টগুলো আজ খুবই বৈপ্লবিক হবে, কিন্তু বন্ধুরা হয়তো ভাববে আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। কেউ আপনার কথা বুঝতে না পারলে আরও খুশি হবেন—কারণ জানেন আপনি কতটা এগিয়ে! প্রেম নিয়ে ভাবনা হবে, কেন এই ‘সামাজিক বন্ধন’-এর প্রয়োজন, যেখানে দুজন মানুষ শুধু নিজেদের মধ্যে একটি ইমোজি বিনিময় করেও দিব্যি থাকতে পারে। পরামর্শ: আপনার আইডিয়াগুলো খুব ভালো। কিন্তু আজ দয়া করে আপনার আইডিয়াগুলো দিয়ে পোষা প্রাণীটির ওপর কোনো পরীক্ষা করবেন না।
মীন
আজ বাস্তবের ধারেকাছেও থাকবেন না। দিনের বেশির ভাগ সময় এমন এক কল্পনার জগতে ভেসে বেড়াবেন, যেখানে আপনার সব বিল পরিশোধ হয়ে গেছে এবং পোষা মাছটা কথা বলতে পারে। কাজের জায়গায় ভুলবশত সহকর্মীকে ‘আমার স্বপ্নে দেখা রাজকুমার/রাজকুমারী’ বলে ডাকতে পারেন। মনে হবে, জীবন একটি হিন্দি সিনেমা, আর আপনি তার হিরো/হিরোইন। যদি কিছু ভুলে যান, যেমন চাবি বা মানিব্যাগ, তার জন্য গ্রহদের দোষ দেবেন। সন্ধ্যায়, হয়তো এত বেশি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠবেন যে টিভির সিরিয়ালের ভিলেনের দুঃখেও চোখে পানি চলে আসবে। আজ চোখ খুলে হাঁটুন। আর যদি চারপাশের মানুষ আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করে, তাহলে চোখ বন্ধ করে শুধু ‘হুম’ বলে দিন। নিরাপদ থাকবেন।

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম
০২ নভেম্বর ২০২২
বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির
৪২ মিনিট আগে
ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
২ ঘণ্টা আগে
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
৬ ঘণ্টা আগে