সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম পানি দিয়ে। ভুবন বলেছিল গোসল করবে না। আমি নিশ্চিন্ত মনে গিজারের গরম পানি গায়ে ঢেলে গোসল করে বের হয়েছি। ওদিকে উনি গিয়ে কোনো রকম অপেক্ষা ছাড়া ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল সেরে আসলেন। ভাবা যায়! মাইনাসের তাপমাত্রায় একটা মানুষ কনকনে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করেছেন! যাই হোক, গোসল সেরে খুব ফুরফুরে লাগছিল দুজনেরই। আমার তো ক্ষুধায় জান যায় যায় অবস্থা। সাতটার দিকে রুম থেকে বের হয়ে খাবার ঘরের দিকে যাব, এমন সময় হঠাৎ হোটেলের পেছন দিকে চোখ চলে গেল।
রীতিমতো চিৎকার করে ডাকলাম, ‘ভুবন, জলদি এদিকে আসো।’ ভুবনও যথারীতি চলে এল এবং আমার মতো হা করে তাকিয়ে রইল। সত্যি, একেবারে মুখটা খুলে গোল করে হা করে ছিলাম আমরা! হোটেলের পেছন থেকে সুবিশাল পাহাড় দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় ধবধবে সাদা বরফ। এ দৃশ্য তো সামনাসামনি কখনো দেখা হয়নি। ছবির চেয়ে কত সুন্দর এই সৃষ্টি। বলে বা লিখে বোঝানো যাবে না। না, একটা স্থিরচিত্র দেখেও বুঝবেন না। চলচ্চিত্রে দেখেও না। এর আসল রূপ শুধু এবং শুধুমাত্র সামনাসামনি দেখতে হয়। কিছুক্ষণ হা করে দাঁড়িয়ে থেকে সংবিৎ ফিরে এলে ভুবন ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিল। এরপর চলে গেলাম খেতে। আমরা দুজন ছাড়া কেউ তখনো রুম থেকে বের হননি। গিয়ে দেখি ম্যানেজার সাহেব দুপুরের খাবারের আয়োজন করছেন।
সকালের নাশতা তৈরি। জ্যাম আর বাটার স্যান্ডউইচ। সঙ্গে এলাচি চা। জ্যাম জিনিসটা আমার ভালো লাগে না। অতিমাত্রায় মিষ্টি মনে হয়। বাটার স্যান্ডউইচ খেলাম তাই। চা তো খেলামই। এরপর সবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সবাই যখন একে একে আসতে শুরু করল নাশতার জন্য, আমি ওদিকে ম্যানেজারের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলাম। তিনি হিন্দি, বাংলা দুটোই পারেন। কথায় কথায় তখনই জানলাম তিনিই এখানকার সবকিছু একা দেখাশোনা করেন। রান্নাঘর আর খাবার ঘর থেকে হোটেলের সামনের রাস্তা দেখা যায়। দেখা যায় অদূরের বিশাল পাহাড়গুলো। আর চূড়ায় চূড়ায় মনে হয় কেউ সাদা দুধ ঢেলে দিয়েছে।
পাহাড়ের রাস্তা ধরে মাঝে মাঝে গরু-ছাগল হেঁটে যেতে দেখলাম। এদিকের পশু বা প্রাণীগুলোর লোম অনেক বড় বড় হয়। গ্যাংটক থেকে লাচুং আসা পর্যন্ত অনেক কুকুর দেখেছি, খুব সুন্দর। এদের লোমও বড় বড়। ভুবন বলছিল, শীতপ্রধান এলাকায় পশুদের লোম এমন বড় বড় হয়। এতে করে শীতের প্রকোপটা ওরা সয়ে নিতে পারে। ম্যানেজার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘গরুগুলো কি পাহাড়ি বা বুনো?’ উত্তরে তিনি না বললেন। এদিকে মোটামুটি সবাই গরু পালে। ছাগলও পালে। ‘তাহলে এরা এমন একা বাঁধন ছাড়া ঘুরছে কেন?’ ম্যানেজার সাহেব বললেন, এরা জানে বেলাশেষে কোন ঘরে ফিরতে হবে। আমি বললাম, ‘আজব তো! কেউ চুরি করে নিয়ে গেলে?’ নাহ, চুরি করে না কেউ। সারা দিন ঘর খোলা রাখলেও কেউ চুরি করতে ঢুকবে না। আহা, এমন যদি সবখানে হতো! মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। ম্যানেজার সাহেবের কাছ থেকে আরও জানলাম এখানে সবাই চাষবাস করেই চলে। পাহাড়ি এলাকায় যেমন সবজি হয়, সেগুলো চাষ করে নিজেদের মধ্যেই বিকিকিনি হয়। বাইরে থেকে আনা-নেওয়াটা খুব কম হয়। তাই সবকিছু এখানে পাওয়াও যায় না। ম্যানেজারের কথায় প্রমাণ পেলাম। রান্নাঘরে তাকে সারি করে সাজিয়ে রাখা সব টিনজাত খাবার। একটা টিন খুলে মটর বের করে সবজির কড়াইতে ঢেলে দিলেন। তেলে-আগুনে ছ্যাঁৎ করে উঠল। আমি বাইরে তাকিয়ে একপলকে প্রকৃতি দেখছিলাম। আর শুনছিলাম রান্নার ছ্যাঁৎ ছ্যাঁৎ শব্দ। মাথাটা কেমন যেন ভার ভার হয়ে আসছিল।
সবার নাশতা খাওয়া শেষ হলে পান্ডেজির সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম ইয়ামথাং ভ্যালির উদ্দেশে। সেই আমরা ৯জন। জিপ নিয়ে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে আরও ওপরের দিকে উঠছিলাম। সীমানা অঞ্চল। তাই এদিকে সেনাবাহিনীর ঘাঁটি আছে। একটু পরপর সেনাবাহিনীর কয়েকটা চেকপোস্ট। জিপ আটকে দেখে নেয় সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না। পান্ডেজি আগেই বলে দিলেন, ‘ডরনা নেহি। নেইতো সক করেগা।’ ভয় পেলেই সন্দেহ করবে বলে আমরা সব দাঁত বের করে ভেটকি দিয়ে রইলাম প্রতিবার। বাকিটা পান্ডেজি সামলে নিলেন। যেতে যেতে খেয়াল করলাম রাস্তার দুই ধারে বরফ জমে আছে। সন্দেহ রইল না যে রাতে তুষারপাত হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে হয়েছিল বলে তেমন টের পাইনি। পান্ডেজি আরেকটা ব্যাপারে সাবধান করে দিলেন, ‘ফটো নেহি লেনা।’ হুম, সাইনবোর্ডে লেখা ছিল, পড়েছি। যাত্রাপথে ক্যামেরা বের করা যাবে না। ছবি তোলা তো দূরের কথা। সেনারা দেখলে রেখেই দেবে। ওদিকটায় ছবি তোলা নিষেধ। আর যখন থেকে সিকিমে প্রবেশ করেছি আমরা, কোথাও কোনো ময়লা দেখিনি রাস্তায়। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা তো নিষেধই। আবার উত্তরে প্রবেশ করলে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করা নিষেধ। প্লাস্টিকের পানির বোতলও পাবেন না। তবে চিপস পাওয়া যাবে প্লাস্টিকের চেনা প্যাকেটে। সেটা আবার যথাস্থানে ফেলতে হবে। মন চাইলেই হাওয়ায় ভাসানো যাবে না। নইলে জরিমানা গুনে ফকির হতে হবে। খুব ভালো লাগল দেখতে, সেখানকার মানুষ এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে মেনে চলে। বাইরের দর্শনার্থীরা এসে যদি নিয়ম ভঙ্গ করে তবে সাধারণ মানুষেরাই অনেক রেগে যায়।
খুব বেশি হলে আধা ঘণ্টা। এর মধ্যে ইয়ামথাং ভ্যালির ফটকের সামনে চলে আসলাম। কিছুদূর আগে দেখেছিলাম রোডোডেন্ড্রন স্যাংকচুয়ারির ফটক। সেটা তখন বন্ধ ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে রোডোডেন্ড্রন ফুল ফোটে না। তাই আর তার সৌন্দর্য দেখা গেল না। যাই হোক, জিপ থেকে নেমে চারদিকে মাথা ঘুরিয়ে নিলাম। অদ্ভুত সুন্দর! ভুবন বলল, ‘অমায়িক সৌন্দর্য!’ ফটক দিয়ে প্রবেশের আগে দেখলাম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কেউ বিক্রি করছেন বিয়ার, কেউ ম্যাগি নুডুলস, সঙ্গে পানি, কেউ ভাড়া দিচ্ছেন রবার বুট ও দস্তানা। এই বুটগুলো পরে যেতে একরকম জোরাজুরিই করছিলেন ব্যবসায়ীরা।
আমাদের পরা বুটগুলো নাকি বরফে নষ্ট হয়ে যাবে। অগত্যা নিজেদের বুট খুলে ভাড়া নিলাম তাঁদেরগুলো। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলার জন্য দস্তানাও নিতে হলো। ওইগুলো হাতে-পায়ে পরতেই মনে হলো বরফ পরে আছি। এত ঠান্ডা! যে নারী ভাড়া দিলেন, তিনি বোঝালেন যে একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু নাহ, সারাক্ষণ এই ঠান্ডা নিয়েই চলতে হয়েছিল। ফটক দিয়ে হেঁটে প্রবেশ করলাম সবাই। যে যার মতো করে বরফ নিয়ে খেলা শুরু করেছিল।
এদিকে মাথার ভারটাকে পাত্তা দিচ্ছিলাম না আমি। মনে জোর নিয়ে আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। ছবি তুললাম। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলাটাও খেললাম ভুবনের সঙ্গে। একটা সময় আর পারছিলাম না। হাত-পা ঠান্ডায় জমে গিয়েছিল। নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল মাথা ঘুরে পড়ে যাব। না পেরে ভুবনকে বললাম আমার খারাপ লাগছে। সঙ্গের ভাইয়েরা শুনে একেক জন একেক ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া শুরু করলেন। কারণ ওই পাঁচজন কোনো না কোনো ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। কেউ একজন দৌড়ে গিয়ে দশ রুপি দিয়ে এক গ্লাস পানি এনে দিলেন। আমার চোখ ঘোলা হয়ে আসছিল। কান স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কেউ পানি দিলেন, তো কেউ ওষুধ দিলেন। খেয়ে একটা গাছের নিচে বসলাম।
অপেক্ষা করছিলাম। আমার জন্য কারও যেন মজা করা মাটি না হয়ে যায়। কেউ একজন এসে খবর দিলেন একটা জায়গায় আগুন পোহানো যাচ্ছে। গেলাম সেখানে। একটা ভাঙা গাছ বেঞ্চির মতো শোয়ানো। তার পাশে আগুন জ্বলছে। গাছের এক পাশে বসে আগুন পোহাতে লাগলাম। সবাইকে আনন্দ করতে দেখছিলাম। যদিও আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছিল। আমাদের দলটা যে যার মতো ভাগ হয়ে আনন্দ করছিল। ভুবন বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের সঙ্গে ছিল। ফিরে এসে বলতে লাগল, ‘আমারও খারাপ লাগছে। চলো আমরা ধীরে ধীরে গাড়ির দিকে আগাই। ওনারা আসুক।’ মাসুম ভাইকে বলে আমরা সামনের দিকে এগোতে থাকলাম। ভ্যালির ফটক থেকে বের হয়ে রাবার বুট আর দস্তানা ফেরত দিয়ে আমাদের বুটগুলো নিয়ে নিলাম। একটা বেঞ্চিতে বসে জুতা খোলা ও পরা যায়। পান্ডেজিকে না পেয়ে সেই বেঞ্চিতে বসে ছিলাম। এদিকে আমার শ্বাসকষ্ট বেড়েই চলছিল। একজন ভদ্রমহিলা এসে আমাকে সরতে বললেন। তিনি বসে জুতা বদলাবেন। সঙ্গে তাঁর পরিবারের আরও সদস্য অপেক্ষা করছেন দাঁড়িয়ে। তাঁরাও বদলাবেন। আমি একপাশ হয়ে গিয়ে অনুরোধ করলাম আমাকে একটু বসে থাকতে দিতে। তিনি বুঝতে পারলেন আমার শরীর বেজায় খারাপ করেছে। হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ক্যায়া হুয়া বেটা?’ বললাম শ্বাস নিতে পারছি না। তাঁর মেয়ে অথবা ছেলের বউ হবেন, তিনি এগিয়ে এসে আমাকে একটা ছোট পুঁটলি দিলেন। সুতি রুমালে কর্পূর ছিল সেটাতে। বললেন এটা নাকে ধরে শুঁকতে। কিছুক্ষণ ইনহেলারের মতো ব্যবহার করার পর দেখলাম ভালোই লাগছে। জিনিসটা তাঁদের ফেরত দিতে চাইলাম। তাঁরা কিছুতেই নিতে চাইলেন না। বললেন, ‘হামারে পাস অউর ভি হ্যায়। ইয়ে তুম রাখলো।’ পরামর্শ দিলেন এত উঁচু জায়গায় আসলে এই কর্পূরের ছোট পুঁটলি সঙ্গে রাখতে। কম-বেশি সবারই নাকি উঁচুতে উঠলে শ্বাসকষ্ট হয়। তাঁরা জানেন বলেই সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। আমাকে তাঁরা জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি কোথা থেকে এসেছি। খুব গর্ব লাগছিল বলতে, ‘বাংলাদেশ থেকে।’ তাঁরা এসেছিলেন গুজরাট থেকে। আমাকে গুজরাটে যাওয়ার দাওয়াত দিয়ে দিলেন। আমিও তাঁদের বাংলাদেশে আসার নিমন্ত্রণ দিলাম। তাঁরা বিদায় নিতে গেলে দুই ভদ্রমহিলাকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানালাম। তাঁরাও আমার ব্যবহারে মুগ্ধ। খুব হাসিখুশি মুখে বিদায় নিলেন। একটু পরপর কর্পূরের পুঁটলিটা নাকে ধরে নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে মাসুম ভাই এসে পান্ডেজিকে খুঁজে আমাদের গাড়িতে গিয়ে বসতে বললেন। জানালেন, ‘আকাশ ভাইদের খুঁজে পাচ্ছি না। ওনারা এলেই আমরা ফিরতে পারি।’ আকাশ ভাই আর সঙ্গে কে কে যেন কোন একটা বরফের পাহাড়ে চড়তে গিয়েছিলেন। শরীর ভালো থাকলে হয়তো আমরাও যেতাম। খুব আফসোস লাগছিল। ইয়ামথাং কি তাহলে অভিশাপ দিয়েছিল আমাদেরকে?
গাড়িতে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম আমি আর ভুবন। মাসুম ভাই দুটো ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে গেছেন। প্যারাসিটামল। আমাদের জ্বর এসেছে। অবস্থা গুরুতর। এটা না বললে কেউ ফিরবে না। তাই মাসুম ভাই খিটমিট করতে করতে আবার খুঁজতে চলে গেলেন বাকিদেরকে। এদিকে ওই দলটা জিরো পয়েন্ট থেকে ঘুরে ইয়ামথাং ভ্যালিতে চলে এসেছে। তারাও আনন্দ-ফুর্তিতে ব্যস্ত। অবশ্য আমাদের দলের সদস্যদের আরও আগেই তাদের ঘোরাঘুরি শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারা এসেই বলছিল, ‘কেন যে জিরো পয়েন্টে গেলাম। এখানেই তো ভালো ছিল!’ আমরা মাসুম ভাইয়ের দেওয়া ওষুধ খেয়ে চুপচাপ বসে ছিলাম। ভুবনের কপাল ধরে দেখি বেশ ভালো জ্বর। আমারও তাই। আমার চেয়ে ওর শ্বাসকষ্ট কম হচ্ছিল। কর্পূরের পুঁটলিটা একবার আমার নাকে, আরেকবার ওর নাকে ধরছিলাম। নিজের ঘর আর বিছানাটাকে তখন কী পরিমাণ যে মনে করছিলাম তা বলে বোঝাতে পারব না। সেই সঙ্গে আম্মুকে। সবারই নিশ্চয়ই অসুখ হলে মায়ের কথা বেশি মনে পড়ে? ভুবন হয়তো আমার শাশুড়িকে মনে করছিল। কী জানি? বলেনি। ইংরেজিতে ভুবনকে বললাম, ‘আই মিস হোম।' বলেই কান্না শুরু করলাম। শুধু বাড়ি ফিরতে ইচ্ছা করছিল বলে। ভুবন বলল, ‘ঠিক আছে। আর কখনো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব না।’ এটা কেমন কথা? বললাম, ‘কেন যাব না? অবশ্যই যাব। আরও বেশি বেশি প্রস্তুতি নিয়ে যাব। আর বেশি বেশি সাবধান থাকব।’
প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করার পর সবাই ফিরে এলেন। ফিরেই বাগ্বিতণ্ডায় লেগে গেলেন আকাশ ভাই আর মাসুম ভাই। মাসুম ভাইয়ের কথা হচ্ছে, ‘দেখলেন যে ওনারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাহলে দেরি করলেন কেন? ওনাদের তো হোটেলে ফিরে একটু বিশ্রাম দরকার। আপনারা না ফিরলে তো যেতেও পারছেন না।’ এদিকে আকাশ ভাইয়ের কথা, ‘আরে ভাই আমি তো জানিই না ওনারা এত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জানলে কি আর দেরি করতাম?’ মাসুম ভাই বলেন, ‘কেন জানবেন না? না জানার কী আছে?’ আকাশ ভাই যতই বোঝাচ্ছিলেন যে তিনি জানতেন না, মাসুম ভাই ততই রেগে যাচ্ছিলেন। আর আমরা দুজন বাকিদের মতো হা করে তাকিয়ে দেখছিলাম। শেষমেশ ভুবন এগিয়ে বলল, ‘ভাই, আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা চাইনি আমাদের জন্য আপনাদের আনন্দটা মাটি হয়ে যাক। এখন চলেন ফিরে যাই। একটু বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাব।’ তারপরেও দু-এক বাক্য তাঁরা একে অপরকে ছুড়ে দিয়ে গাড়িতে উঠলেন। সেই ঝগড়া অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেনি।
ফিরতি পথে সেনারা আটকায়নি। এবার আরও অল্প সময়ে হোটেলে ফিরে এলাম। বারোটার মতো বাজে তখন। হাতে অনেক সময় আছে। দুপুরের খাবার খেয়েই গ্যাংটকের দিকে রওনা দেব। রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম দুজনেই। ঘুম দরকার ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে দরজায় খটখট করল কে যেন। ভুবন দরজা খুলে দিল। মাসুম ভাই এসে দেখলেন আমাদের জ্বর কেমন। পরে দুজনকে দুইটা প্যারাসিটামল আর গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। এঁরা মনে হয় পুরো ওষুধ কোম্পানিটাই সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন! আমরাও বাধ্য ছেলেমেয়ের মতো খেয়ে শুয়ে পড়লাম আবার। জ্বরের যে অবস্থা ছিল, ওষুধ না খেয়ে উপায় ছিল না। তখন এটাই মনে হয়েছিল। ঘণ্টা দুই ঘুম দিয়ে খেতে চলে গেলাম। ইতিমধ্যে সব দলের সবাই জেনে গেছেন আমরা জ্বরে পড়েছি।
একেকজন খুব দুশ্চিন্তা দেখাচ্ছিলেন। আহা-উহু করছিলেন। নানা পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তবে এ কথা বলতেই হয় যে আমাদের দলের বাকি সাত সদস্য, অমরদা আর মিলন ভাই যথেষ্ট যত্নশীল ছিলেন দুজনের প্রতি। অমরদা জানালেন সমতল থেকে আমরা প্রায় ১৪ হাজার ফুট ওপরে উঠেছিলাম। সেখানে প্রতিকূল আবহাওয়ায় শ্বাসকষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর তিনি সতর্ক করেছিলেন সেদিককার বৃষ্টির পানি যেন মাথায় না লাগে। নির্ঘাত জ্বর আসবে। কখন যে দুই-এক ফোঁটা মাথায় পড়েছিল টের পাইনি। তার ওপর ভোর সকালে করেছিলাম গোসল। তাও মাইনাসের তাপমাত্রায়। ভুবন ঢেলেছিল ঠান্ডা পানি। জ্বর আমাদের হবে না তো কার হবে?
খেতে বসেছি এমন সময় বড় দলের নেতা কিসিমের লোকটা এসে বললেন, ‘কী? কে নাকি অসুস্থ? জ্বর হইসে কার?’ বললাম আমাদের। তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে লোকটা বললেন, ‘এএহহহ! আবার ঘুরতে আইছে!’ টিটকারি করে বলুক কিংবা মজা করেই বলুক, লোকটার কথা আমার পছন্দ হলো না। উত্তর দিইনি। বুদ্ধিমত্তা যাঁদের মাইনাসের কোঠায় থাকে, তাঁদের কথার জবাব দিতে হয় না! এমনিতেই তাঁদের লোক দেখানো স্বভাব দেখে বিরক্ত লাগছিল। তার ওপর প্রথম দিন থেকে দেখছি মদ খেয়ে টাল হয়ে ছিলেন। হিম দেশে রাস্তায় রাস্তায় ঝুড়িতে করে মদ, বিয়ার বেচবেই। তা বলে দেদার কিনে গলা অবধি গিলতে হবে? হুম, তা ঠিক যে নিজের টাকা নিজে খরচ করছেন, তাতে কার কী! সমস্যা হচ্ছে, টাকা খরচ করে মাতাল হয়ে যে কারও সঙ্গে যা তা আচরণ করা। এই যেমন আগের রাতে অমরদাকে পারলে পিটিয়ে মেরে ফেলতেন। কেন সবখানে নিয়ে যেতে পারছিলেন না এই কারণে!
খাওয়াদাওয়া সেরে ব্যাগ গুছিয়ে উঠানে বসে অপেক্ষা করছিলাম। দুই দল একসঙ্গে রওনা দেবে। বড় দলের সবাই তখনও প্রস্তুত না। কিছুটা কমে এসেছিল জ্বর। একটু ভালো লাগছিল বলে পান্ডেজির সঙ্গে গল্প করা শুরু করে দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম সালমান খানের ‘দাবাং’ সিনেমাটা দেখা হয়েছে কি না। তিনি দেখেছেন। পরে তাঁকে জানালাম কেন আমি তাঁকে পান্ডেজি বলে ডাকি। তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘কাহা ম্যায় অউর কাহা সালমান খান!’ আমিও হেসে বললাম, ‘হামারে লিয়ে তো আপহি সালমান খান হ্যায়, পান্ডেজি।’ আমার বিশ্বাস, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ গল্প আছে। আর সেই গল্পের নায়ক তাঁরা নিজেই। পান্ডেজিকে শুধু এই জিনিসটা উপলব্ধি করাতে চাচ্ছিলাম।
তিনটার দিকে সবাই গাড়িতে চড়ে বসলাম। ভটভট করতে করতে জিপ চালু হয়ে গেল। ফিরছিলাম গ্যাংটক।
চলবে...

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম পানি দিয়ে। ভুবন বলেছিল গোসল করবে না। আমি নিশ্চিন্ত মনে গিজারের গরম পানি গায়ে ঢেলে গোসল করে বের হয়েছি। ওদিকে উনি গিয়ে কোনো রকম অপেক্ষা ছাড়া ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল সেরে আসলেন। ভাবা যায়! মাইনাসের তাপমাত্রায় একটা মানুষ কনকনে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করেছেন! যাই হোক, গোসল সেরে খুব ফুরফুরে লাগছিল দুজনেরই। আমার তো ক্ষুধায় জান যায় যায় অবস্থা। সাতটার দিকে রুম থেকে বের হয়ে খাবার ঘরের দিকে যাব, এমন সময় হঠাৎ হোটেলের পেছন দিকে চোখ চলে গেল।
রীতিমতো চিৎকার করে ডাকলাম, ‘ভুবন, জলদি এদিকে আসো।’ ভুবনও যথারীতি চলে এল এবং আমার মতো হা করে তাকিয়ে রইল। সত্যি, একেবারে মুখটা খুলে গোল করে হা করে ছিলাম আমরা! হোটেলের পেছন থেকে সুবিশাল পাহাড় দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় ধবধবে সাদা বরফ। এ দৃশ্য তো সামনাসামনি কখনো দেখা হয়নি। ছবির চেয়ে কত সুন্দর এই সৃষ্টি। বলে বা লিখে বোঝানো যাবে না। না, একটা স্থিরচিত্র দেখেও বুঝবেন না। চলচ্চিত্রে দেখেও না। এর আসল রূপ শুধু এবং শুধুমাত্র সামনাসামনি দেখতে হয়। কিছুক্ষণ হা করে দাঁড়িয়ে থেকে সংবিৎ ফিরে এলে ভুবন ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিল। এরপর চলে গেলাম খেতে। আমরা দুজন ছাড়া কেউ তখনো রুম থেকে বের হননি। গিয়ে দেখি ম্যানেজার সাহেব দুপুরের খাবারের আয়োজন করছেন।
সকালের নাশতা তৈরি। জ্যাম আর বাটার স্যান্ডউইচ। সঙ্গে এলাচি চা। জ্যাম জিনিসটা আমার ভালো লাগে না। অতিমাত্রায় মিষ্টি মনে হয়। বাটার স্যান্ডউইচ খেলাম তাই। চা তো খেলামই। এরপর সবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সবাই যখন একে একে আসতে শুরু করল নাশতার জন্য, আমি ওদিকে ম্যানেজারের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলাম। তিনি হিন্দি, বাংলা দুটোই পারেন। কথায় কথায় তখনই জানলাম তিনিই এখানকার সবকিছু একা দেখাশোনা করেন। রান্নাঘর আর খাবার ঘর থেকে হোটেলের সামনের রাস্তা দেখা যায়। দেখা যায় অদূরের বিশাল পাহাড়গুলো। আর চূড়ায় চূড়ায় মনে হয় কেউ সাদা দুধ ঢেলে দিয়েছে।
পাহাড়ের রাস্তা ধরে মাঝে মাঝে গরু-ছাগল হেঁটে যেতে দেখলাম। এদিকের পশু বা প্রাণীগুলোর লোম অনেক বড় বড় হয়। গ্যাংটক থেকে লাচুং আসা পর্যন্ত অনেক কুকুর দেখেছি, খুব সুন্দর। এদের লোমও বড় বড়। ভুবন বলছিল, শীতপ্রধান এলাকায় পশুদের লোম এমন বড় বড় হয়। এতে করে শীতের প্রকোপটা ওরা সয়ে নিতে পারে। ম্যানেজার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘গরুগুলো কি পাহাড়ি বা বুনো?’ উত্তরে তিনি না বললেন। এদিকে মোটামুটি সবাই গরু পালে। ছাগলও পালে। ‘তাহলে এরা এমন একা বাঁধন ছাড়া ঘুরছে কেন?’ ম্যানেজার সাহেব বললেন, এরা জানে বেলাশেষে কোন ঘরে ফিরতে হবে। আমি বললাম, ‘আজব তো! কেউ চুরি করে নিয়ে গেলে?’ নাহ, চুরি করে না কেউ। সারা দিন ঘর খোলা রাখলেও কেউ চুরি করতে ঢুকবে না। আহা, এমন যদি সবখানে হতো! মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। ম্যানেজার সাহেবের কাছ থেকে আরও জানলাম এখানে সবাই চাষবাস করেই চলে। পাহাড়ি এলাকায় যেমন সবজি হয়, সেগুলো চাষ করে নিজেদের মধ্যেই বিকিকিনি হয়। বাইরে থেকে আনা-নেওয়াটা খুব কম হয়। তাই সবকিছু এখানে পাওয়াও যায় না। ম্যানেজারের কথায় প্রমাণ পেলাম। রান্নাঘরে তাকে সারি করে সাজিয়ে রাখা সব টিনজাত খাবার। একটা টিন খুলে মটর বের করে সবজির কড়াইতে ঢেলে দিলেন। তেলে-আগুনে ছ্যাঁৎ করে উঠল। আমি বাইরে তাকিয়ে একপলকে প্রকৃতি দেখছিলাম। আর শুনছিলাম রান্নার ছ্যাঁৎ ছ্যাঁৎ শব্দ। মাথাটা কেমন যেন ভার ভার হয়ে আসছিল।
সবার নাশতা খাওয়া শেষ হলে পান্ডেজির সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম ইয়ামথাং ভ্যালির উদ্দেশে। সেই আমরা ৯জন। জিপ নিয়ে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে আরও ওপরের দিকে উঠছিলাম। সীমানা অঞ্চল। তাই এদিকে সেনাবাহিনীর ঘাঁটি আছে। একটু পরপর সেনাবাহিনীর কয়েকটা চেকপোস্ট। জিপ আটকে দেখে নেয় সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না। পান্ডেজি আগেই বলে দিলেন, ‘ডরনা নেহি। নেইতো সক করেগা।’ ভয় পেলেই সন্দেহ করবে বলে আমরা সব দাঁত বের করে ভেটকি দিয়ে রইলাম প্রতিবার। বাকিটা পান্ডেজি সামলে নিলেন। যেতে যেতে খেয়াল করলাম রাস্তার দুই ধারে বরফ জমে আছে। সন্দেহ রইল না যে রাতে তুষারপাত হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে হয়েছিল বলে তেমন টের পাইনি। পান্ডেজি আরেকটা ব্যাপারে সাবধান করে দিলেন, ‘ফটো নেহি লেনা।’ হুম, সাইনবোর্ডে লেখা ছিল, পড়েছি। যাত্রাপথে ক্যামেরা বের করা যাবে না। ছবি তোলা তো দূরের কথা। সেনারা দেখলে রেখেই দেবে। ওদিকটায় ছবি তোলা নিষেধ। আর যখন থেকে সিকিমে প্রবেশ করেছি আমরা, কোথাও কোনো ময়লা দেখিনি রাস্তায়। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা তো নিষেধই। আবার উত্তরে প্রবেশ করলে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করা নিষেধ। প্লাস্টিকের পানির বোতলও পাবেন না। তবে চিপস পাওয়া যাবে প্লাস্টিকের চেনা প্যাকেটে। সেটা আবার যথাস্থানে ফেলতে হবে। মন চাইলেই হাওয়ায় ভাসানো যাবে না। নইলে জরিমানা গুনে ফকির হতে হবে। খুব ভালো লাগল দেখতে, সেখানকার মানুষ এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে মেনে চলে। বাইরের দর্শনার্থীরা এসে যদি নিয়ম ভঙ্গ করে তবে সাধারণ মানুষেরাই অনেক রেগে যায়।
খুব বেশি হলে আধা ঘণ্টা। এর মধ্যে ইয়ামথাং ভ্যালির ফটকের সামনে চলে আসলাম। কিছুদূর আগে দেখেছিলাম রোডোডেন্ড্রন স্যাংকচুয়ারির ফটক। সেটা তখন বন্ধ ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে রোডোডেন্ড্রন ফুল ফোটে না। তাই আর তার সৌন্দর্য দেখা গেল না। যাই হোক, জিপ থেকে নেমে চারদিকে মাথা ঘুরিয়ে নিলাম। অদ্ভুত সুন্দর! ভুবন বলল, ‘অমায়িক সৌন্দর্য!’ ফটক দিয়ে প্রবেশের আগে দেখলাম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কেউ বিক্রি করছেন বিয়ার, কেউ ম্যাগি নুডুলস, সঙ্গে পানি, কেউ ভাড়া দিচ্ছেন রবার বুট ও দস্তানা। এই বুটগুলো পরে যেতে একরকম জোরাজুরিই করছিলেন ব্যবসায়ীরা।
আমাদের পরা বুটগুলো নাকি বরফে নষ্ট হয়ে যাবে। অগত্যা নিজেদের বুট খুলে ভাড়া নিলাম তাঁদেরগুলো। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলার জন্য দস্তানাও নিতে হলো। ওইগুলো হাতে-পায়ে পরতেই মনে হলো বরফ পরে আছি। এত ঠান্ডা! যে নারী ভাড়া দিলেন, তিনি বোঝালেন যে একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু নাহ, সারাক্ষণ এই ঠান্ডা নিয়েই চলতে হয়েছিল। ফটক দিয়ে হেঁটে প্রবেশ করলাম সবাই। যে যার মতো করে বরফ নিয়ে খেলা শুরু করেছিল।
এদিকে মাথার ভারটাকে পাত্তা দিচ্ছিলাম না আমি। মনে জোর নিয়ে আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। ছবি তুললাম। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলাটাও খেললাম ভুবনের সঙ্গে। একটা সময় আর পারছিলাম না। হাত-পা ঠান্ডায় জমে গিয়েছিল। নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল মাথা ঘুরে পড়ে যাব। না পেরে ভুবনকে বললাম আমার খারাপ লাগছে। সঙ্গের ভাইয়েরা শুনে একেক জন একেক ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া শুরু করলেন। কারণ ওই পাঁচজন কোনো না কোনো ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। কেউ একজন দৌড়ে গিয়ে দশ রুপি দিয়ে এক গ্লাস পানি এনে দিলেন। আমার চোখ ঘোলা হয়ে আসছিল। কান স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কেউ পানি দিলেন, তো কেউ ওষুধ দিলেন। খেয়ে একটা গাছের নিচে বসলাম।
অপেক্ষা করছিলাম। আমার জন্য কারও যেন মজা করা মাটি না হয়ে যায়। কেউ একজন এসে খবর দিলেন একটা জায়গায় আগুন পোহানো যাচ্ছে। গেলাম সেখানে। একটা ভাঙা গাছ বেঞ্চির মতো শোয়ানো। তার পাশে আগুন জ্বলছে। গাছের এক পাশে বসে আগুন পোহাতে লাগলাম। সবাইকে আনন্দ করতে দেখছিলাম। যদিও আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছিল। আমাদের দলটা যে যার মতো ভাগ হয়ে আনন্দ করছিল। ভুবন বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের সঙ্গে ছিল। ফিরে এসে বলতে লাগল, ‘আমারও খারাপ লাগছে। চলো আমরা ধীরে ধীরে গাড়ির দিকে আগাই। ওনারা আসুক।’ মাসুম ভাইকে বলে আমরা সামনের দিকে এগোতে থাকলাম। ভ্যালির ফটক থেকে বের হয়ে রাবার বুট আর দস্তানা ফেরত দিয়ে আমাদের বুটগুলো নিয়ে নিলাম। একটা বেঞ্চিতে বসে জুতা খোলা ও পরা যায়। পান্ডেজিকে না পেয়ে সেই বেঞ্চিতে বসে ছিলাম। এদিকে আমার শ্বাসকষ্ট বেড়েই চলছিল। একজন ভদ্রমহিলা এসে আমাকে সরতে বললেন। তিনি বসে জুতা বদলাবেন। সঙ্গে তাঁর পরিবারের আরও সদস্য অপেক্ষা করছেন দাঁড়িয়ে। তাঁরাও বদলাবেন। আমি একপাশ হয়ে গিয়ে অনুরোধ করলাম আমাকে একটু বসে থাকতে দিতে। তিনি বুঝতে পারলেন আমার শরীর বেজায় খারাপ করেছে। হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ক্যায়া হুয়া বেটা?’ বললাম শ্বাস নিতে পারছি না। তাঁর মেয়ে অথবা ছেলের বউ হবেন, তিনি এগিয়ে এসে আমাকে একটা ছোট পুঁটলি দিলেন। সুতি রুমালে কর্পূর ছিল সেটাতে। বললেন এটা নাকে ধরে শুঁকতে। কিছুক্ষণ ইনহেলারের মতো ব্যবহার করার পর দেখলাম ভালোই লাগছে। জিনিসটা তাঁদের ফেরত দিতে চাইলাম। তাঁরা কিছুতেই নিতে চাইলেন না। বললেন, ‘হামারে পাস অউর ভি হ্যায়। ইয়ে তুম রাখলো।’ পরামর্শ দিলেন এত উঁচু জায়গায় আসলে এই কর্পূরের ছোট পুঁটলি সঙ্গে রাখতে। কম-বেশি সবারই নাকি উঁচুতে উঠলে শ্বাসকষ্ট হয়। তাঁরা জানেন বলেই সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। আমাকে তাঁরা জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি কোথা থেকে এসেছি। খুব গর্ব লাগছিল বলতে, ‘বাংলাদেশ থেকে।’ তাঁরা এসেছিলেন গুজরাট থেকে। আমাকে গুজরাটে যাওয়ার দাওয়াত দিয়ে দিলেন। আমিও তাঁদের বাংলাদেশে আসার নিমন্ত্রণ দিলাম। তাঁরা বিদায় নিতে গেলে দুই ভদ্রমহিলাকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানালাম। তাঁরাও আমার ব্যবহারে মুগ্ধ। খুব হাসিখুশি মুখে বিদায় নিলেন। একটু পরপর কর্পূরের পুঁটলিটা নাকে ধরে নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে মাসুম ভাই এসে পান্ডেজিকে খুঁজে আমাদের গাড়িতে গিয়ে বসতে বললেন। জানালেন, ‘আকাশ ভাইদের খুঁজে পাচ্ছি না। ওনারা এলেই আমরা ফিরতে পারি।’ আকাশ ভাই আর সঙ্গে কে কে যেন কোন একটা বরফের পাহাড়ে চড়তে গিয়েছিলেন। শরীর ভালো থাকলে হয়তো আমরাও যেতাম। খুব আফসোস লাগছিল। ইয়ামথাং কি তাহলে অভিশাপ দিয়েছিল আমাদেরকে?
গাড়িতে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম আমি আর ভুবন। মাসুম ভাই দুটো ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে গেছেন। প্যারাসিটামল। আমাদের জ্বর এসেছে। অবস্থা গুরুতর। এটা না বললে কেউ ফিরবে না। তাই মাসুম ভাই খিটমিট করতে করতে আবার খুঁজতে চলে গেলেন বাকিদেরকে। এদিকে ওই দলটা জিরো পয়েন্ট থেকে ঘুরে ইয়ামথাং ভ্যালিতে চলে এসেছে। তারাও আনন্দ-ফুর্তিতে ব্যস্ত। অবশ্য আমাদের দলের সদস্যদের আরও আগেই তাদের ঘোরাঘুরি শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারা এসেই বলছিল, ‘কেন যে জিরো পয়েন্টে গেলাম। এখানেই তো ভালো ছিল!’ আমরা মাসুম ভাইয়ের দেওয়া ওষুধ খেয়ে চুপচাপ বসে ছিলাম। ভুবনের কপাল ধরে দেখি বেশ ভালো জ্বর। আমারও তাই। আমার চেয়ে ওর শ্বাসকষ্ট কম হচ্ছিল। কর্পূরের পুঁটলিটা একবার আমার নাকে, আরেকবার ওর নাকে ধরছিলাম। নিজের ঘর আর বিছানাটাকে তখন কী পরিমাণ যে মনে করছিলাম তা বলে বোঝাতে পারব না। সেই সঙ্গে আম্মুকে। সবারই নিশ্চয়ই অসুখ হলে মায়ের কথা বেশি মনে পড়ে? ভুবন হয়তো আমার শাশুড়িকে মনে করছিল। কী জানি? বলেনি। ইংরেজিতে ভুবনকে বললাম, ‘আই মিস হোম।' বলেই কান্না শুরু করলাম। শুধু বাড়ি ফিরতে ইচ্ছা করছিল বলে। ভুবন বলল, ‘ঠিক আছে। আর কখনো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব না।’ এটা কেমন কথা? বললাম, ‘কেন যাব না? অবশ্যই যাব। আরও বেশি বেশি প্রস্তুতি নিয়ে যাব। আর বেশি বেশি সাবধান থাকব।’
প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করার পর সবাই ফিরে এলেন। ফিরেই বাগ্বিতণ্ডায় লেগে গেলেন আকাশ ভাই আর মাসুম ভাই। মাসুম ভাইয়ের কথা হচ্ছে, ‘দেখলেন যে ওনারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাহলে দেরি করলেন কেন? ওনাদের তো হোটেলে ফিরে একটু বিশ্রাম দরকার। আপনারা না ফিরলে তো যেতেও পারছেন না।’ এদিকে আকাশ ভাইয়ের কথা, ‘আরে ভাই আমি তো জানিই না ওনারা এত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জানলে কি আর দেরি করতাম?’ মাসুম ভাই বলেন, ‘কেন জানবেন না? না জানার কী আছে?’ আকাশ ভাই যতই বোঝাচ্ছিলেন যে তিনি জানতেন না, মাসুম ভাই ততই রেগে যাচ্ছিলেন। আর আমরা দুজন বাকিদের মতো হা করে তাকিয়ে দেখছিলাম। শেষমেশ ভুবন এগিয়ে বলল, ‘ভাই, আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা চাইনি আমাদের জন্য আপনাদের আনন্দটা মাটি হয়ে যাক। এখন চলেন ফিরে যাই। একটু বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাব।’ তারপরেও দু-এক বাক্য তাঁরা একে অপরকে ছুড়ে দিয়ে গাড়িতে উঠলেন। সেই ঝগড়া অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেনি।
ফিরতি পথে সেনারা আটকায়নি। এবার আরও অল্প সময়ে হোটেলে ফিরে এলাম। বারোটার মতো বাজে তখন। হাতে অনেক সময় আছে। দুপুরের খাবার খেয়েই গ্যাংটকের দিকে রওনা দেব। রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম দুজনেই। ঘুম দরকার ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে দরজায় খটখট করল কে যেন। ভুবন দরজা খুলে দিল। মাসুম ভাই এসে দেখলেন আমাদের জ্বর কেমন। পরে দুজনকে দুইটা প্যারাসিটামল আর গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। এঁরা মনে হয় পুরো ওষুধ কোম্পানিটাই সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন! আমরাও বাধ্য ছেলেমেয়ের মতো খেয়ে শুয়ে পড়লাম আবার। জ্বরের যে অবস্থা ছিল, ওষুধ না খেয়ে উপায় ছিল না। তখন এটাই মনে হয়েছিল। ঘণ্টা দুই ঘুম দিয়ে খেতে চলে গেলাম। ইতিমধ্যে সব দলের সবাই জেনে গেছেন আমরা জ্বরে পড়েছি।
একেকজন খুব দুশ্চিন্তা দেখাচ্ছিলেন। আহা-উহু করছিলেন। নানা পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তবে এ কথা বলতেই হয় যে আমাদের দলের বাকি সাত সদস্য, অমরদা আর মিলন ভাই যথেষ্ট যত্নশীল ছিলেন দুজনের প্রতি। অমরদা জানালেন সমতল থেকে আমরা প্রায় ১৪ হাজার ফুট ওপরে উঠেছিলাম। সেখানে প্রতিকূল আবহাওয়ায় শ্বাসকষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর তিনি সতর্ক করেছিলেন সেদিককার বৃষ্টির পানি যেন মাথায় না লাগে। নির্ঘাত জ্বর আসবে। কখন যে দুই-এক ফোঁটা মাথায় পড়েছিল টের পাইনি। তার ওপর ভোর সকালে করেছিলাম গোসল। তাও মাইনাসের তাপমাত্রায়। ভুবন ঢেলেছিল ঠান্ডা পানি। জ্বর আমাদের হবে না তো কার হবে?
খেতে বসেছি এমন সময় বড় দলের নেতা কিসিমের লোকটা এসে বললেন, ‘কী? কে নাকি অসুস্থ? জ্বর হইসে কার?’ বললাম আমাদের। তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে লোকটা বললেন, ‘এএহহহ! আবার ঘুরতে আইছে!’ টিটকারি করে বলুক কিংবা মজা করেই বলুক, লোকটার কথা আমার পছন্দ হলো না। উত্তর দিইনি। বুদ্ধিমত্তা যাঁদের মাইনাসের কোঠায় থাকে, তাঁদের কথার জবাব দিতে হয় না! এমনিতেই তাঁদের লোক দেখানো স্বভাব দেখে বিরক্ত লাগছিল। তার ওপর প্রথম দিন থেকে দেখছি মদ খেয়ে টাল হয়ে ছিলেন। হিম দেশে রাস্তায় রাস্তায় ঝুড়িতে করে মদ, বিয়ার বেচবেই। তা বলে দেদার কিনে গলা অবধি গিলতে হবে? হুম, তা ঠিক যে নিজের টাকা নিজে খরচ করছেন, তাতে কার কী! সমস্যা হচ্ছে, টাকা খরচ করে মাতাল হয়ে যে কারও সঙ্গে যা তা আচরণ করা। এই যেমন আগের রাতে অমরদাকে পারলে পিটিয়ে মেরে ফেলতেন। কেন সবখানে নিয়ে যেতে পারছিলেন না এই কারণে!
খাওয়াদাওয়া সেরে ব্যাগ গুছিয়ে উঠানে বসে অপেক্ষা করছিলাম। দুই দল একসঙ্গে রওনা দেবে। বড় দলের সবাই তখনও প্রস্তুত না। কিছুটা কমে এসেছিল জ্বর। একটু ভালো লাগছিল বলে পান্ডেজির সঙ্গে গল্প করা শুরু করে দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম সালমান খানের ‘দাবাং’ সিনেমাটা দেখা হয়েছে কি না। তিনি দেখেছেন। পরে তাঁকে জানালাম কেন আমি তাঁকে পান্ডেজি বলে ডাকি। তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘কাহা ম্যায় অউর কাহা সালমান খান!’ আমিও হেসে বললাম, ‘হামারে লিয়ে তো আপহি সালমান খান হ্যায়, পান্ডেজি।’ আমার বিশ্বাস, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ গল্প আছে। আর সেই গল্পের নায়ক তাঁরা নিজেই। পান্ডেজিকে শুধু এই জিনিসটা উপলব্ধি করাতে চাচ্ছিলাম।
তিনটার দিকে সবাই গাড়িতে চড়ে বসলাম। ভটভট করতে করতে জিপ চালু হয়ে গেল। ফিরছিলাম গ্যাংটক।
চলবে...
সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম পানি দিয়ে। ভুবন বলেছিল গোসল করবে না। আমি নিশ্চিন্ত মনে গিজারের গরম পানি গায়ে ঢেলে গোসল করে বের হয়েছি। ওদিকে উনি গিয়ে কোনো রকম অপেক্ষা ছাড়া ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল সেরে আসলেন। ভাবা যায়! মাইনাসের তাপমাত্রায় একটা মানুষ কনকনে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করেছেন! যাই হোক, গোসল সেরে খুব ফুরফুরে লাগছিল দুজনেরই। আমার তো ক্ষুধায় জান যায় যায় অবস্থা। সাতটার দিকে রুম থেকে বের হয়ে খাবার ঘরের দিকে যাব, এমন সময় হঠাৎ হোটেলের পেছন দিকে চোখ চলে গেল।
রীতিমতো চিৎকার করে ডাকলাম, ‘ভুবন, জলদি এদিকে আসো।’ ভুবনও যথারীতি চলে এল এবং আমার মতো হা করে তাকিয়ে রইল। সত্যি, একেবারে মুখটা খুলে গোল করে হা করে ছিলাম আমরা! হোটেলের পেছন থেকে সুবিশাল পাহাড় দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় ধবধবে সাদা বরফ। এ দৃশ্য তো সামনাসামনি কখনো দেখা হয়নি। ছবির চেয়ে কত সুন্দর এই সৃষ্টি। বলে বা লিখে বোঝানো যাবে না। না, একটা স্থিরচিত্র দেখেও বুঝবেন না। চলচ্চিত্রে দেখেও না। এর আসল রূপ শুধু এবং শুধুমাত্র সামনাসামনি দেখতে হয়। কিছুক্ষণ হা করে দাঁড়িয়ে থেকে সংবিৎ ফিরে এলে ভুবন ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিল। এরপর চলে গেলাম খেতে। আমরা দুজন ছাড়া কেউ তখনো রুম থেকে বের হননি। গিয়ে দেখি ম্যানেজার সাহেব দুপুরের খাবারের আয়োজন করছেন।
সকালের নাশতা তৈরি। জ্যাম আর বাটার স্যান্ডউইচ। সঙ্গে এলাচি চা। জ্যাম জিনিসটা আমার ভালো লাগে না। অতিমাত্রায় মিষ্টি মনে হয়। বাটার স্যান্ডউইচ খেলাম তাই। চা তো খেলামই। এরপর সবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সবাই যখন একে একে আসতে শুরু করল নাশতার জন্য, আমি ওদিকে ম্যানেজারের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলাম। তিনি হিন্দি, বাংলা দুটোই পারেন। কথায় কথায় তখনই জানলাম তিনিই এখানকার সবকিছু একা দেখাশোনা করেন। রান্নাঘর আর খাবার ঘর থেকে হোটেলের সামনের রাস্তা দেখা যায়। দেখা যায় অদূরের বিশাল পাহাড়গুলো। আর চূড়ায় চূড়ায় মনে হয় কেউ সাদা দুধ ঢেলে দিয়েছে।
পাহাড়ের রাস্তা ধরে মাঝে মাঝে গরু-ছাগল হেঁটে যেতে দেখলাম। এদিকের পশু বা প্রাণীগুলোর লোম অনেক বড় বড় হয়। গ্যাংটক থেকে লাচুং আসা পর্যন্ত অনেক কুকুর দেখেছি, খুব সুন্দর। এদের লোমও বড় বড়। ভুবন বলছিল, শীতপ্রধান এলাকায় পশুদের লোম এমন বড় বড় হয়। এতে করে শীতের প্রকোপটা ওরা সয়ে নিতে পারে। ম্যানেজার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘গরুগুলো কি পাহাড়ি বা বুনো?’ উত্তরে তিনি না বললেন। এদিকে মোটামুটি সবাই গরু পালে। ছাগলও পালে। ‘তাহলে এরা এমন একা বাঁধন ছাড়া ঘুরছে কেন?’ ম্যানেজার সাহেব বললেন, এরা জানে বেলাশেষে কোন ঘরে ফিরতে হবে। আমি বললাম, ‘আজব তো! কেউ চুরি করে নিয়ে গেলে?’ নাহ, চুরি করে না কেউ। সারা দিন ঘর খোলা রাখলেও কেউ চুরি করতে ঢুকবে না। আহা, এমন যদি সবখানে হতো! মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। ম্যানেজার সাহেবের কাছ থেকে আরও জানলাম এখানে সবাই চাষবাস করেই চলে। পাহাড়ি এলাকায় যেমন সবজি হয়, সেগুলো চাষ করে নিজেদের মধ্যেই বিকিকিনি হয়। বাইরে থেকে আনা-নেওয়াটা খুব কম হয়। তাই সবকিছু এখানে পাওয়াও যায় না। ম্যানেজারের কথায় প্রমাণ পেলাম। রান্নাঘরে তাকে সারি করে সাজিয়ে রাখা সব টিনজাত খাবার। একটা টিন খুলে মটর বের করে সবজির কড়াইতে ঢেলে দিলেন। তেলে-আগুনে ছ্যাঁৎ করে উঠল। আমি বাইরে তাকিয়ে একপলকে প্রকৃতি দেখছিলাম। আর শুনছিলাম রান্নার ছ্যাঁৎ ছ্যাঁৎ শব্দ। মাথাটা কেমন যেন ভার ভার হয়ে আসছিল।
সবার নাশতা খাওয়া শেষ হলে পান্ডেজির সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম ইয়ামথাং ভ্যালির উদ্দেশে। সেই আমরা ৯জন। জিপ নিয়ে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে আরও ওপরের দিকে উঠছিলাম। সীমানা অঞ্চল। তাই এদিকে সেনাবাহিনীর ঘাঁটি আছে। একটু পরপর সেনাবাহিনীর কয়েকটা চেকপোস্ট। জিপ আটকে দেখে নেয় সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না। পান্ডেজি আগেই বলে দিলেন, ‘ডরনা নেহি। নেইতো সক করেগা।’ ভয় পেলেই সন্দেহ করবে বলে আমরা সব দাঁত বের করে ভেটকি দিয়ে রইলাম প্রতিবার। বাকিটা পান্ডেজি সামলে নিলেন। যেতে যেতে খেয়াল করলাম রাস্তার দুই ধারে বরফ জমে আছে। সন্দেহ রইল না যে রাতে তুষারপাত হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে হয়েছিল বলে তেমন টের পাইনি। পান্ডেজি আরেকটা ব্যাপারে সাবধান করে দিলেন, ‘ফটো নেহি লেনা।’ হুম, সাইনবোর্ডে লেখা ছিল, পড়েছি। যাত্রাপথে ক্যামেরা বের করা যাবে না। ছবি তোলা তো দূরের কথা। সেনারা দেখলে রেখেই দেবে। ওদিকটায় ছবি তোলা নিষেধ। আর যখন থেকে সিকিমে প্রবেশ করেছি আমরা, কোথাও কোনো ময়লা দেখিনি রাস্তায়। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা তো নিষেধই। আবার উত্তরে প্রবেশ করলে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করা নিষেধ। প্লাস্টিকের পানির বোতলও পাবেন না। তবে চিপস পাওয়া যাবে প্লাস্টিকের চেনা প্যাকেটে। সেটা আবার যথাস্থানে ফেলতে হবে। মন চাইলেই হাওয়ায় ভাসানো যাবে না। নইলে জরিমানা গুনে ফকির হতে হবে। খুব ভালো লাগল দেখতে, সেখানকার মানুষ এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে মেনে চলে। বাইরের দর্শনার্থীরা এসে যদি নিয়ম ভঙ্গ করে তবে সাধারণ মানুষেরাই অনেক রেগে যায়।
খুব বেশি হলে আধা ঘণ্টা। এর মধ্যে ইয়ামথাং ভ্যালির ফটকের সামনে চলে আসলাম। কিছুদূর আগে দেখেছিলাম রোডোডেন্ড্রন স্যাংকচুয়ারির ফটক। সেটা তখন বন্ধ ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে রোডোডেন্ড্রন ফুল ফোটে না। তাই আর তার সৌন্দর্য দেখা গেল না। যাই হোক, জিপ থেকে নেমে চারদিকে মাথা ঘুরিয়ে নিলাম। অদ্ভুত সুন্দর! ভুবন বলল, ‘অমায়িক সৌন্দর্য!’ ফটক দিয়ে প্রবেশের আগে দেখলাম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কেউ বিক্রি করছেন বিয়ার, কেউ ম্যাগি নুডুলস, সঙ্গে পানি, কেউ ভাড়া দিচ্ছেন রবার বুট ও দস্তানা। এই বুটগুলো পরে যেতে একরকম জোরাজুরিই করছিলেন ব্যবসায়ীরা।
আমাদের পরা বুটগুলো নাকি বরফে নষ্ট হয়ে যাবে। অগত্যা নিজেদের বুট খুলে ভাড়া নিলাম তাঁদেরগুলো। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলার জন্য দস্তানাও নিতে হলো। ওইগুলো হাতে-পায়ে পরতেই মনে হলো বরফ পরে আছি। এত ঠান্ডা! যে নারী ভাড়া দিলেন, তিনি বোঝালেন যে একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু নাহ, সারাক্ষণ এই ঠান্ডা নিয়েই চলতে হয়েছিল। ফটক দিয়ে হেঁটে প্রবেশ করলাম সবাই। যে যার মতো করে বরফ নিয়ে খেলা শুরু করেছিল।
এদিকে মাথার ভারটাকে পাত্তা দিচ্ছিলাম না আমি। মনে জোর নিয়ে আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। ছবি তুললাম। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলাটাও খেললাম ভুবনের সঙ্গে। একটা সময় আর পারছিলাম না। হাত-পা ঠান্ডায় জমে গিয়েছিল। নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল মাথা ঘুরে পড়ে যাব। না পেরে ভুবনকে বললাম আমার খারাপ লাগছে। সঙ্গের ভাইয়েরা শুনে একেক জন একেক ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া শুরু করলেন। কারণ ওই পাঁচজন কোনো না কোনো ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। কেউ একজন দৌড়ে গিয়ে দশ রুপি দিয়ে এক গ্লাস পানি এনে দিলেন। আমার চোখ ঘোলা হয়ে আসছিল। কান স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কেউ পানি দিলেন, তো কেউ ওষুধ দিলেন। খেয়ে একটা গাছের নিচে বসলাম।
অপেক্ষা করছিলাম। আমার জন্য কারও যেন মজা করা মাটি না হয়ে যায়। কেউ একজন এসে খবর দিলেন একটা জায়গায় আগুন পোহানো যাচ্ছে। গেলাম সেখানে। একটা ভাঙা গাছ বেঞ্চির মতো শোয়ানো। তার পাশে আগুন জ্বলছে। গাছের এক পাশে বসে আগুন পোহাতে লাগলাম। সবাইকে আনন্দ করতে দেখছিলাম। যদিও আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছিল। আমাদের দলটা যে যার মতো ভাগ হয়ে আনন্দ করছিল। ভুবন বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের সঙ্গে ছিল। ফিরে এসে বলতে লাগল, ‘আমারও খারাপ লাগছে। চলো আমরা ধীরে ধীরে গাড়ির দিকে আগাই। ওনারা আসুক।’ মাসুম ভাইকে বলে আমরা সামনের দিকে এগোতে থাকলাম। ভ্যালির ফটক থেকে বের হয়ে রাবার বুট আর দস্তানা ফেরত দিয়ে আমাদের বুটগুলো নিয়ে নিলাম। একটা বেঞ্চিতে বসে জুতা খোলা ও পরা যায়। পান্ডেজিকে না পেয়ে সেই বেঞ্চিতে বসে ছিলাম। এদিকে আমার শ্বাসকষ্ট বেড়েই চলছিল। একজন ভদ্রমহিলা এসে আমাকে সরতে বললেন। তিনি বসে জুতা বদলাবেন। সঙ্গে তাঁর পরিবারের আরও সদস্য অপেক্ষা করছেন দাঁড়িয়ে। তাঁরাও বদলাবেন। আমি একপাশ হয়ে গিয়ে অনুরোধ করলাম আমাকে একটু বসে থাকতে দিতে। তিনি বুঝতে পারলেন আমার শরীর বেজায় খারাপ করেছে। হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ক্যায়া হুয়া বেটা?’ বললাম শ্বাস নিতে পারছি না। তাঁর মেয়ে অথবা ছেলের বউ হবেন, তিনি এগিয়ে এসে আমাকে একটা ছোট পুঁটলি দিলেন। সুতি রুমালে কর্পূর ছিল সেটাতে। বললেন এটা নাকে ধরে শুঁকতে। কিছুক্ষণ ইনহেলারের মতো ব্যবহার করার পর দেখলাম ভালোই লাগছে। জিনিসটা তাঁদের ফেরত দিতে চাইলাম। তাঁরা কিছুতেই নিতে চাইলেন না। বললেন, ‘হামারে পাস অউর ভি হ্যায়। ইয়ে তুম রাখলো।’ পরামর্শ দিলেন এত উঁচু জায়গায় আসলে এই কর্পূরের ছোট পুঁটলি সঙ্গে রাখতে। কম-বেশি সবারই নাকি উঁচুতে উঠলে শ্বাসকষ্ট হয়। তাঁরা জানেন বলেই সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। আমাকে তাঁরা জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি কোথা থেকে এসেছি। খুব গর্ব লাগছিল বলতে, ‘বাংলাদেশ থেকে।’ তাঁরা এসেছিলেন গুজরাট থেকে। আমাকে গুজরাটে যাওয়ার দাওয়াত দিয়ে দিলেন। আমিও তাঁদের বাংলাদেশে আসার নিমন্ত্রণ দিলাম। তাঁরা বিদায় নিতে গেলে দুই ভদ্রমহিলাকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানালাম। তাঁরাও আমার ব্যবহারে মুগ্ধ। খুব হাসিখুশি মুখে বিদায় নিলেন। একটু পরপর কর্পূরের পুঁটলিটা নাকে ধরে নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে মাসুম ভাই এসে পান্ডেজিকে খুঁজে আমাদের গাড়িতে গিয়ে বসতে বললেন। জানালেন, ‘আকাশ ভাইদের খুঁজে পাচ্ছি না। ওনারা এলেই আমরা ফিরতে পারি।’ আকাশ ভাই আর সঙ্গে কে কে যেন কোন একটা বরফের পাহাড়ে চড়তে গিয়েছিলেন। শরীর ভালো থাকলে হয়তো আমরাও যেতাম। খুব আফসোস লাগছিল। ইয়ামথাং কি তাহলে অভিশাপ দিয়েছিল আমাদেরকে?
গাড়িতে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম আমি আর ভুবন। মাসুম ভাই দুটো ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে গেছেন। প্যারাসিটামল। আমাদের জ্বর এসেছে। অবস্থা গুরুতর। এটা না বললে কেউ ফিরবে না। তাই মাসুম ভাই খিটমিট করতে করতে আবার খুঁজতে চলে গেলেন বাকিদেরকে। এদিকে ওই দলটা জিরো পয়েন্ট থেকে ঘুরে ইয়ামথাং ভ্যালিতে চলে এসেছে। তারাও আনন্দ-ফুর্তিতে ব্যস্ত। অবশ্য আমাদের দলের সদস্যদের আরও আগেই তাদের ঘোরাঘুরি শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারা এসেই বলছিল, ‘কেন যে জিরো পয়েন্টে গেলাম। এখানেই তো ভালো ছিল!’ আমরা মাসুম ভাইয়ের দেওয়া ওষুধ খেয়ে চুপচাপ বসে ছিলাম। ভুবনের কপাল ধরে দেখি বেশ ভালো জ্বর। আমারও তাই। আমার চেয়ে ওর শ্বাসকষ্ট কম হচ্ছিল। কর্পূরের পুঁটলিটা একবার আমার নাকে, আরেকবার ওর নাকে ধরছিলাম। নিজের ঘর আর বিছানাটাকে তখন কী পরিমাণ যে মনে করছিলাম তা বলে বোঝাতে পারব না। সেই সঙ্গে আম্মুকে। সবারই নিশ্চয়ই অসুখ হলে মায়ের কথা বেশি মনে পড়ে? ভুবন হয়তো আমার শাশুড়িকে মনে করছিল। কী জানি? বলেনি। ইংরেজিতে ভুবনকে বললাম, ‘আই মিস হোম।' বলেই কান্না শুরু করলাম। শুধু বাড়ি ফিরতে ইচ্ছা করছিল বলে। ভুবন বলল, ‘ঠিক আছে। আর কখনো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব না।’ এটা কেমন কথা? বললাম, ‘কেন যাব না? অবশ্যই যাব। আরও বেশি বেশি প্রস্তুতি নিয়ে যাব। আর বেশি বেশি সাবধান থাকব।’
প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করার পর সবাই ফিরে এলেন। ফিরেই বাগ্বিতণ্ডায় লেগে গেলেন আকাশ ভাই আর মাসুম ভাই। মাসুম ভাইয়ের কথা হচ্ছে, ‘দেখলেন যে ওনারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাহলে দেরি করলেন কেন? ওনাদের তো হোটেলে ফিরে একটু বিশ্রাম দরকার। আপনারা না ফিরলে তো যেতেও পারছেন না।’ এদিকে আকাশ ভাইয়ের কথা, ‘আরে ভাই আমি তো জানিই না ওনারা এত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জানলে কি আর দেরি করতাম?’ মাসুম ভাই বলেন, ‘কেন জানবেন না? না জানার কী আছে?’ আকাশ ভাই যতই বোঝাচ্ছিলেন যে তিনি জানতেন না, মাসুম ভাই ততই রেগে যাচ্ছিলেন। আর আমরা দুজন বাকিদের মতো হা করে তাকিয়ে দেখছিলাম। শেষমেশ ভুবন এগিয়ে বলল, ‘ভাই, আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা চাইনি আমাদের জন্য আপনাদের আনন্দটা মাটি হয়ে যাক। এখন চলেন ফিরে যাই। একটু বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাব।’ তারপরেও দু-এক বাক্য তাঁরা একে অপরকে ছুড়ে দিয়ে গাড়িতে উঠলেন। সেই ঝগড়া অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেনি।
ফিরতি পথে সেনারা আটকায়নি। এবার আরও অল্প সময়ে হোটেলে ফিরে এলাম। বারোটার মতো বাজে তখন। হাতে অনেক সময় আছে। দুপুরের খাবার খেয়েই গ্যাংটকের দিকে রওনা দেব। রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম দুজনেই। ঘুম দরকার ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে দরজায় খটখট করল কে যেন। ভুবন দরজা খুলে দিল। মাসুম ভাই এসে দেখলেন আমাদের জ্বর কেমন। পরে দুজনকে দুইটা প্যারাসিটামল আর গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। এঁরা মনে হয় পুরো ওষুধ কোম্পানিটাই সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন! আমরাও বাধ্য ছেলেমেয়ের মতো খেয়ে শুয়ে পড়লাম আবার। জ্বরের যে অবস্থা ছিল, ওষুধ না খেয়ে উপায় ছিল না। তখন এটাই মনে হয়েছিল। ঘণ্টা দুই ঘুম দিয়ে খেতে চলে গেলাম। ইতিমধ্যে সব দলের সবাই জেনে গেছেন আমরা জ্বরে পড়েছি।
একেকজন খুব দুশ্চিন্তা দেখাচ্ছিলেন। আহা-উহু করছিলেন। নানা পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তবে এ কথা বলতেই হয় যে আমাদের দলের বাকি সাত সদস্য, অমরদা আর মিলন ভাই যথেষ্ট যত্নশীল ছিলেন দুজনের প্রতি। অমরদা জানালেন সমতল থেকে আমরা প্রায় ১৪ হাজার ফুট ওপরে উঠেছিলাম। সেখানে প্রতিকূল আবহাওয়ায় শ্বাসকষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর তিনি সতর্ক করেছিলেন সেদিককার বৃষ্টির পানি যেন মাথায় না লাগে। নির্ঘাত জ্বর আসবে। কখন যে দুই-এক ফোঁটা মাথায় পড়েছিল টের পাইনি। তার ওপর ভোর সকালে করেছিলাম গোসল। তাও মাইনাসের তাপমাত্রায়। ভুবন ঢেলেছিল ঠান্ডা পানি। জ্বর আমাদের হবে না তো কার হবে?
খেতে বসেছি এমন সময় বড় দলের নেতা কিসিমের লোকটা এসে বললেন, ‘কী? কে নাকি অসুস্থ? জ্বর হইসে কার?’ বললাম আমাদের। তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে লোকটা বললেন, ‘এএহহহ! আবার ঘুরতে আইছে!’ টিটকারি করে বলুক কিংবা মজা করেই বলুক, লোকটার কথা আমার পছন্দ হলো না। উত্তর দিইনি। বুদ্ধিমত্তা যাঁদের মাইনাসের কোঠায় থাকে, তাঁদের কথার জবাব দিতে হয় না! এমনিতেই তাঁদের লোক দেখানো স্বভাব দেখে বিরক্ত লাগছিল। তার ওপর প্রথম দিন থেকে দেখছি মদ খেয়ে টাল হয়ে ছিলেন। হিম দেশে রাস্তায় রাস্তায় ঝুড়িতে করে মদ, বিয়ার বেচবেই। তা বলে দেদার কিনে গলা অবধি গিলতে হবে? হুম, তা ঠিক যে নিজের টাকা নিজে খরচ করছেন, তাতে কার কী! সমস্যা হচ্ছে, টাকা খরচ করে মাতাল হয়ে যে কারও সঙ্গে যা তা আচরণ করা। এই যেমন আগের রাতে অমরদাকে পারলে পিটিয়ে মেরে ফেলতেন। কেন সবখানে নিয়ে যেতে পারছিলেন না এই কারণে!
খাওয়াদাওয়া সেরে ব্যাগ গুছিয়ে উঠানে বসে অপেক্ষা করছিলাম। দুই দল একসঙ্গে রওনা দেবে। বড় দলের সবাই তখনও প্রস্তুত না। কিছুটা কমে এসেছিল জ্বর। একটু ভালো লাগছিল বলে পান্ডেজির সঙ্গে গল্প করা শুরু করে দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম সালমান খানের ‘দাবাং’ সিনেমাটা দেখা হয়েছে কি না। তিনি দেখেছেন। পরে তাঁকে জানালাম কেন আমি তাঁকে পান্ডেজি বলে ডাকি। তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘কাহা ম্যায় অউর কাহা সালমান খান!’ আমিও হেসে বললাম, ‘হামারে লিয়ে তো আপহি সালমান খান হ্যায়, পান্ডেজি।’ আমার বিশ্বাস, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ গল্প আছে। আর সেই গল্পের নায়ক তাঁরা নিজেই। পান্ডেজিকে শুধু এই জিনিসটা উপলব্ধি করাতে চাচ্ছিলাম।
তিনটার দিকে সবাই গাড়িতে চড়ে বসলাম। ভটভট করতে করতে জিপ চালু হয়ে গেল। ফিরছিলাম গ্যাংটক।
চলবে...

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম পানি দিয়ে। ভুবন বলেছিল গোসল করবে না। আমি নিশ্চিন্ত মনে গিজারের গরম পানি গায়ে ঢেলে গোসল করে বের হয়েছি। ওদিকে উনি গিয়ে কোনো রকম অপেক্ষা ছাড়া ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল সেরে আসলেন। ভাবা যায়! মাইনাসের তাপমাত্রায় একটা মানুষ কনকনে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করেছেন! যাই হোক, গোসল সেরে খুব ফুরফুরে লাগছিল দুজনেরই। আমার তো ক্ষুধায় জান যায় যায় অবস্থা। সাতটার দিকে রুম থেকে বের হয়ে খাবার ঘরের দিকে যাব, এমন সময় হঠাৎ হোটেলের পেছন দিকে চোখ চলে গেল।
রীতিমতো চিৎকার করে ডাকলাম, ‘ভুবন, জলদি এদিকে আসো।’ ভুবনও যথারীতি চলে এল এবং আমার মতো হা করে তাকিয়ে রইল। সত্যি, একেবারে মুখটা খুলে গোল করে হা করে ছিলাম আমরা! হোটেলের পেছন থেকে সুবিশাল পাহাড় দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায় ধবধবে সাদা বরফ। এ দৃশ্য তো সামনাসামনি কখনো দেখা হয়নি। ছবির চেয়ে কত সুন্দর এই সৃষ্টি। বলে বা লিখে বোঝানো যাবে না। না, একটা স্থিরচিত্র দেখেও বুঝবেন না। চলচ্চিত্রে দেখেও না। এর আসল রূপ শুধু এবং শুধুমাত্র সামনাসামনি দেখতে হয়। কিছুক্ষণ হা করে দাঁড়িয়ে থেকে সংবিৎ ফিরে এলে ভুবন ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নিল। এরপর চলে গেলাম খেতে। আমরা দুজন ছাড়া কেউ তখনো রুম থেকে বের হননি। গিয়ে দেখি ম্যানেজার সাহেব দুপুরের খাবারের আয়োজন করছেন।
সকালের নাশতা তৈরি। জ্যাম আর বাটার স্যান্ডউইচ। সঙ্গে এলাচি চা। জ্যাম জিনিসটা আমার ভালো লাগে না। অতিমাত্রায় মিষ্টি মনে হয়। বাটার স্যান্ডউইচ খেলাম তাই। চা তো খেলামই। এরপর সবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। সবাই যখন একে একে আসতে শুরু করল নাশতার জন্য, আমি ওদিকে ম্যানেজারের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলাম। তিনি হিন্দি, বাংলা দুটোই পারেন। কথায় কথায় তখনই জানলাম তিনিই এখানকার সবকিছু একা দেখাশোনা করেন। রান্নাঘর আর খাবার ঘর থেকে হোটেলের সামনের রাস্তা দেখা যায়। দেখা যায় অদূরের বিশাল পাহাড়গুলো। আর চূড়ায় চূড়ায় মনে হয় কেউ সাদা দুধ ঢেলে দিয়েছে।
পাহাড়ের রাস্তা ধরে মাঝে মাঝে গরু-ছাগল হেঁটে যেতে দেখলাম। এদিকের পশু বা প্রাণীগুলোর লোম অনেক বড় বড় হয়। গ্যাংটক থেকে লাচুং আসা পর্যন্ত অনেক কুকুর দেখেছি, খুব সুন্দর। এদের লোমও বড় বড়। ভুবন বলছিল, শীতপ্রধান এলাকায় পশুদের লোম এমন বড় বড় হয়। এতে করে শীতের প্রকোপটা ওরা সয়ে নিতে পারে। ম্যানেজার সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘গরুগুলো কি পাহাড়ি বা বুনো?’ উত্তরে তিনি না বললেন। এদিকে মোটামুটি সবাই গরু পালে। ছাগলও পালে। ‘তাহলে এরা এমন একা বাঁধন ছাড়া ঘুরছে কেন?’ ম্যানেজার সাহেব বললেন, এরা জানে বেলাশেষে কোন ঘরে ফিরতে হবে। আমি বললাম, ‘আজব তো! কেউ চুরি করে নিয়ে গেলে?’ নাহ, চুরি করে না কেউ। সারা দিন ঘর খোলা রাখলেও কেউ চুরি করতে ঢুকবে না। আহা, এমন যদি সবখানে হতো! মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। ম্যানেজার সাহেবের কাছ থেকে আরও জানলাম এখানে সবাই চাষবাস করেই চলে। পাহাড়ি এলাকায় যেমন সবজি হয়, সেগুলো চাষ করে নিজেদের মধ্যেই বিকিকিনি হয়। বাইরে থেকে আনা-নেওয়াটা খুব কম হয়। তাই সবকিছু এখানে পাওয়াও যায় না। ম্যানেজারের কথায় প্রমাণ পেলাম। রান্নাঘরে তাকে সারি করে সাজিয়ে রাখা সব টিনজাত খাবার। একটা টিন খুলে মটর বের করে সবজির কড়াইতে ঢেলে দিলেন। তেলে-আগুনে ছ্যাঁৎ করে উঠল। আমি বাইরে তাকিয়ে একপলকে প্রকৃতি দেখছিলাম। আর শুনছিলাম রান্নার ছ্যাঁৎ ছ্যাঁৎ শব্দ। মাথাটা কেমন যেন ভার ভার হয়ে আসছিল।
সবার নাশতা খাওয়া শেষ হলে পান্ডেজির সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম ইয়ামথাং ভ্যালির উদ্দেশে। সেই আমরা ৯জন। জিপ নিয়ে আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ বেয়ে আরও ওপরের দিকে উঠছিলাম। সীমানা অঞ্চল। তাই এদিকে সেনাবাহিনীর ঘাঁটি আছে। একটু পরপর সেনাবাহিনীর কয়েকটা চেকপোস্ট। জিপ আটকে দেখে নেয় সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না। পান্ডেজি আগেই বলে দিলেন, ‘ডরনা নেহি। নেইতো সক করেগা।’ ভয় পেলেই সন্দেহ করবে বলে আমরা সব দাঁত বের করে ভেটকি দিয়ে রইলাম প্রতিবার। বাকিটা পান্ডেজি সামলে নিলেন। যেতে যেতে খেয়াল করলাম রাস্তার দুই ধারে বরফ জমে আছে। সন্দেহ রইল না যে রাতে তুষারপাত হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে হয়েছিল বলে তেমন টের পাইনি। পান্ডেজি আরেকটা ব্যাপারে সাবধান করে দিলেন, ‘ফটো নেহি লেনা।’ হুম, সাইনবোর্ডে লেখা ছিল, পড়েছি। যাত্রাপথে ক্যামেরা বের করা যাবে না। ছবি তোলা তো দূরের কথা। সেনারা দেখলে রেখেই দেবে। ওদিকটায় ছবি তোলা নিষেধ। আর যখন থেকে সিকিমে প্রবেশ করেছি আমরা, কোথাও কোনো ময়লা দেখিনি রাস্তায়। যেখানে-সেখানে ময়লা ফেলা তো নিষেধই। আবার উত্তরে প্রবেশ করলে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করা নিষেধ। প্লাস্টিকের পানির বোতলও পাবেন না। তবে চিপস পাওয়া যাবে প্লাস্টিকের চেনা প্যাকেটে। সেটা আবার যথাস্থানে ফেলতে হবে। মন চাইলেই হাওয়ায় ভাসানো যাবে না। নইলে জরিমানা গুনে ফকির হতে হবে। খুব ভালো লাগল দেখতে, সেখানকার মানুষ এই নিয়মগুলো সঠিকভাবে মেনে চলে। বাইরের দর্শনার্থীরা এসে যদি নিয়ম ভঙ্গ করে তবে সাধারণ মানুষেরাই অনেক রেগে যায়।
খুব বেশি হলে আধা ঘণ্টা। এর মধ্যে ইয়ামথাং ভ্যালির ফটকের সামনে চলে আসলাম। কিছুদূর আগে দেখেছিলাম রোডোডেন্ড্রন স্যাংকচুয়ারির ফটক। সেটা তখন বন্ধ ছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে রোডোডেন্ড্রন ফুল ফোটে না। তাই আর তার সৌন্দর্য দেখা গেল না। যাই হোক, জিপ থেকে নেমে চারদিকে মাথা ঘুরিয়ে নিলাম। অদ্ভুত সুন্দর! ভুবন বলল, ‘অমায়িক সৌন্দর্য!’ ফটক দিয়ে প্রবেশের আগে দেখলাম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কেউ বিক্রি করছেন বিয়ার, কেউ ম্যাগি নুডুলস, সঙ্গে পানি, কেউ ভাড়া দিচ্ছেন রবার বুট ও দস্তানা। এই বুটগুলো পরে যেতে একরকম জোরাজুরিই করছিলেন ব্যবসায়ীরা।
আমাদের পরা বুটগুলো নাকি বরফে নষ্ট হয়ে যাবে। অগত্যা নিজেদের বুট খুলে ভাড়া নিলাম তাঁদেরগুলো। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলার জন্য দস্তানাও নিতে হলো। ওইগুলো হাতে-পায়ে পরতেই মনে হলো বরফ পরে আছি। এত ঠান্ডা! যে নারী ভাড়া দিলেন, তিনি বোঝালেন যে একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু নাহ, সারাক্ষণ এই ঠান্ডা নিয়েই চলতে হয়েছিল। ফটক দিয়ে হেঁটে প্রবেশ করলাম সবাই। যে যার মতো করে বরফ নিয়ে খেলা শুরু করেছিল।
এদিকে মাথার ভারটাকে পাত্তা দিচ্ছিলাম না আমি। মনে জোর নিয়ে আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। ছবি তুললাম। বরফ হাতে নিয়ে ছুড়ে মারার খেলাটাও খেললাম ভুবনের সঙ্গে। একটা সময় আর পারছিলাম না। হাত-পা ঠান্ডায় জমে গিয়েছিল। নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল মাথা ঘুরে পড়ে যাব। না পেরে ভুবনকে বললাম আমার খারাপ লাগছে। সঙ্গের ভাইয়েরা শুনে একেক জন একেক ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া শুরু করলেন। কারণ ওই পাঁচজন কোনো না কোনো ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। কেউ একজন দৌড়ে গিয়ে দশ রুপি দিয়ে এক গ্লাস পানি এনে দিলেন। আমার চোখ ঘোলা হয়ে আসছিল। কান স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিল। কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কেউ পানি দিলেন, তো কেউ ওষুধ দিলেন। খেয়ে একটা গাছের নিচে বসলাম।
অপেক্ষা করছিলাম। আমার জন্য কারও যেন মজা করা মাটি না হয়ে যায়। কেউ একজন এসে খবর দিলেন একটা জায়গায় আগুন পোহানো যাচ্ছে। গেলাম সেখানে। একটা ভাঙা গাছ বেঞ্চির মতো শোয়ানো। তার পাশে আগুন জ্বলছে। গাছের এক পাশে বসে আগুন পোহাতে লাগলাম। সবাইকে আনন্দ করতে দেখছিলাম। যদিও আমার চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছিল। আমাদের দলটা যে যার মতো ভাগ হয়ে আনন্দ করছিল। ভুবন বেশ কিছুক্ষণ তাঁদের সঙ্গে ছিল। ফিরে এসে বলতে লাগল, ‘আমারও খারাপ লাগছে। চলো আমরা ধীরে ধীরে গাড়ির দিকে আগাই। ওনারা আসুক।’ মাসুম ভাইকে বলে আমরা সামনের দিকে এগোতে থাকলাম। ভ্যালির ফটক থেকে বের হয়ে রাবার বুট আর দস্তানা ফেরত দিয়ে আমাদের বুটগুলো নিয়ে নিলাম। একটা বেঞ্চিতে বসে জুতা খোলা ও পরা যায়। পান্ডেজিকে না পেয়ে সেই বেঞ্চিতে বসে ছিলাম। এদিকে আমার শ্বাসকষ্ট বেড়েই চলছিল। একজন ভদ্রমহিলা এসে আমাকে সরতে বললেন। তিনি বসে জুতা বদলাবেন। সঙ্গে তাঁর পরিবারের আরও সদস্য অপেক্ষা করছেন দাঁড়িয়ে। তাঁরাও বদলাবেন। আমি একপাশ হয়ে গিয়ে অনুরোধ করলাম আমাকে একটু বসে থাকতে দিতে। তিনি বুঝতে পারলেন আমার শরীর বেজায় খারাপ করেছে। হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ক্যায়া হুয়া বেটা?’ বললাম শ্বাস নিতে পারছি না। তাঁর মেয়ে অথবা ছেলের বউ হবেন, তিনি এগিয়ে এসে আমাকে একটা ছোট পুঁটলি দিলেন। সুতি রুমালে কর্পূর ছিল সেটাতে। বললেন এটা নাকে ধরে শুঁকতে। কিছুক্ষণ ইনহেলারের মতো ব্যবহার করার পর দেখলাম ভালোই লাগছে। জিনিসটা তাঁদের ফেরত দিতে চাইলাম। তাঁরা কিছুতেই নিতে চাইলেন না। বললেন, ‘হামারে পাস অউর ভি হ্যায়। ইয়ে তুম রাখলো।’ পরামর্শ দিলেন এত উঁচু জায়গায় আসলে এই কর্পূরের ছোট পুঁটলি সঙ্গে রাখতে। কম-বেশি সবারই নাকি উঁচুতে উঠলে শ্বাসকষ্ট হয়। তাঁরা জানেন বলেই সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। আমাকে তাঁরা জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি কোথা থেকে এসেছি। খুব গর্ব লাগছিল বলতে, ‘বাংলাদেশ থেকে।’ তাঁরা এসেছিলেন গুজরাট থেকে। আমাকে গুজরাটে যাওয়ার দাওয়াত দিয়ে দিলেন। আমিও তাঁদের বাংলাদেশে আসার নিমন্ত্রণ দিলাম। তাঁরা বিদায় নিতে গেলে দুই ভদ্রমহিলাকে জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানালাম। তাঁরাও আমার ব্যবহারে মুগ্ধ। খুব হাসিখুশি মুখে বিদায় নিলেন। একটু পরপর কর্পূরের পুঁটলিটা নাকে ধরে নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে মাসুম ভাই এসে পান্ডেজিকে খুঁজে আমাদের গাড়িতে গিয়ে বসতে বললেন। জানালেন, ‘আকাশ ভাইদের খুঁজে পাচ্ছি না। ওনারা এলেই আমরা ফিরতে পারি।’ আকাশ ভাই আর সঙ্গে কে কে যেন কোন একটা বরফের পাহাড়ে চড়তে গিয়েছিলেন। শরীর ভালো থাকলে হয়তো আমরাও যেতাম। খুব আফসোস লাগছিল। ইয়ামথাং কি তাহলে অভিশাপ দিয়েছিল আমাদেরকে?
গাড়িতে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম আমি আর ভুবন। মাসুম ভাই দুটো ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে গেছেন। প্যারাসিটামল। আমাদের জ্বর এসেছে। অবস্থা গুরুতর। এটা না বললে কেউ ফিরবে না। তাই মাসুম ভাই খিটমিট করতে করতে আবার খুঁজতে চলে গেলেন বাকিদেরকে। এদিকে ওই দলটা জিরো পয়েন্ট থেকে ঘুরে ইয়ামথাং ভ্যালিতে চলে এসেছে। তারাও আনন্দ-ফুর্তিতে ব্যস্ত। অবশ্য আমাদের দলের সদস্যদের আরও আগেই তাদের ঘোরাঘুরি শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারা এসেই বলছিল, ‘কেন যে জিরো পয়েন্টে গেলাম। এখানেই তো ভালো ছিল!’ আমরা মাসুম ভাইয়ের দেওয়া ওষুধ খেয়ে চুপচাপ বসে ছিলাম। ভুবনের কপাল ধরে দেখি বেশ ভালো জ্বর। আমারও তাই। আমার চেয়ে ওর শ্বাসকষ্ট কম হচ্ছিল। কর্পূরের পুঁটলিটা একবার আমার নাকে, আরেকবার ওর নাকে ধরছিলাম। নিজের ঘর আর বিছানাটাকে তখন কী পরিমাণ যে মনে করছিলাম তা বলে বোঝাতে পারব না। সেই সঙ্গে আম্মুকে। সবারই নিশ্চয়ই অসুখ হলে মায়ের কথা বেশি মনে পড়ে? ভুবন হয়তো আমার শাশুড়িকে মনে করছিল। কী জানি? বলেনি। ইংরেজিতে ভুবনকে বললাম, ‘আই মিস হোম।' বলেই কান্না শুরু করলাম। শুধু বাড়ি ফিরতে ইচ্ছা করছিল বলে। ভুবন বলল, ‘ঠিক আছে। আর কখনো তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব না।’ এটা কেমন কথা? বললাম, ‘কেন যাব না? অবশ্যই যাব। আরও বেশি বেশি প্রস্তুতি নিয়ে যাব। আর বেশি বেশি সাবধান থাকব।’
প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করার পর সবাই ফিরে এলেন। ফিরেই বাগ্বিতণ্ডায় লেগে গেলেন আকাশ ভাই আর মাসুম ভাই। মাসুম ভাইয়ের কথা হচ্ছে, ‘দেখলেন যে ওনারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাহলে দেরি করলেন কেন? ওনাদের তো হোটেলে ফিরে একটু বিশ্রাম দরকার। আপনারা না ফিরলে তো যেতেও পারছেন না।’ এদিকে আকাশ ভাইয়ের কথা, ‘আরে ভাই আমি তো জানিই না ওনারা এত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জানলে কি আর দেরি করতাম?’ মাসুম ভাই বলেন, ‘কেন জানবেন না? না জানার কী আছে?’ আকাশ ভাই যতই বোঝাচ্ছিলেন যে তিনি জানতেন না, মাসুম ভাই ততই রেগে যাচ্ছিলেন। আর আমরা দুজন বাকিদের মতো হা করে তাকিয়ে দেখছিলাম। শেষমেশ ভুবন এগিয়ে বলল, ‘ভাই, আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। আমরা চাইনি আমাদের জন্য আপনাদের আনন্দটা মাটি হয়ে যাক। এখন চলেন ফিরে যাই। একটু বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাব।’ তারপরেও দু-এক বাক্য তাঁরা একে অপরকে ছুড়ে দিয়ে গাড়িতে উঠলেন। সেই ঝগড়া অবশ্য বেশিক্ষণ টেকেনি।
ফিরতি পথে সেনারা আটকায়নি। এবার আরও অল্প সময়ে হোটেলে ফিরে এলাম। বারোটার মতো বাজে তখন। হাতে অনেক সময় আছে। দুপুরের খাবার খেয়েই গ্যাংটকের দিকে রওনা দেব। রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লাম দুজনেই। ঘুম দরকার ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যে দরজায় খটখট করল কে যেন। ভুবন দরজা খুলে দিল। মাসুম ভাই এসে দেখলেন আমাদের জ্বর কেমন। পরে দুজনকে দুইটা প্যারাসিটামল আর গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। এঁরা মনে হয় পুরো ওষুধ কোম্পানিটাই সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন! আমরাও বাধ্য ছেলেমেয়ের মতো খেয়ে শুয়ে পড়লাম আবার। জ্বরের যে অবস্থা ছিল, ওষুধ না খেয়ে উপায় ছিল না। তখন এটাই মনে হয়েছিল। ঘণ্টা দুই ঘুম দিয়ে খেতে চলে গেলাম। ইতিমধ্যে সব দলের সবাই জেনে গেছেন আমরা জ্বরে পড়েছি।
একেকজন খুব দুশ্চিন্তা দেখাচ্ছিলেন। আহা-উহু করছিলেন। নানা পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তবে এ কথা বলতেই হয় যে আমাদের দলের বাকি সাত সদস্য, অমরদা আর মিলন ভাই যথেষ্ট যত্নশীল ছিলেন দুজনের প্রতি। অমরদা জানালেন সমতল থেকে আমরা প্রায় ১৪ হাজার ফুট ওপরে উঠেছিলাম। সেখানে প্রতিকূল আবহাওয়ায় শ্বাসকষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। আর তিনি সতর্ক করেছিলেন সেদিককার বৃষ্টির পানি যেন মাথায় না লাগে। নির্ঘাত জ্বর আসবে। কখন যে দুই-এক ফোঁটা মাথায় পড়েছিল টের পাইনি। তার ওপর ভোর সকালে করেছিলাম গোসল। তাও মাইনাসের তাপমাত্রায়। ভুবন ঢেলেছিল ঠান্ডা পানি। জ্বর আমাদের হবে না তো কার হবে?
খেতে বসেছি এমন সময় বড় দলের নেতা কিসিমের লোকটা এসে বললেন, ‘কী? কে নাকি অসুস্থ? জ্বর হইসে কার?’ বললাম আমাদের। তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে লোকটা বললেন, ‘এএহহহ! আবার ঘুরতে আইছে!’ টিটকারি করে বলুক কিংবা মজা করেই বলুক, লোকটার কথা আমার পছন্দ হলো না। উত্তর দিইনি। বুদ্ধিমত্তা যাঁদের মাইনাসের কোঠায় থাকে, তাঁদের কথার জবাব দিতে হয় না! এমনিতেই তাঁদের লোক দেখানো স্বভাব দেখে বিরক্ত লাগছিল। তার ওপর প্রথম দিন থেকে দেখছি মদ খেয়ে টাল হয়ে ছিলেন। হিম দেশে রাস্তায় রাস্তায় ঝুড়িতে করে মদ, বিয়ার বেচবেই। তা বলে দেদার কিনে গলা অবধি গিলতে হবে? হুম, তা ঠিক যে নিজের টাকা নিজে খরচ করছেন, তাতে কার কী! সমস্যা হচ্ছে, টাকা খরচ করে মাতাল হয়ে যে কারও সঙ্গে যা তা আচরণ করা। এই যেমন আগের রাতে অমরদাকে পারলে পিটিয়ে মেরে ফেলতেন। কেন সবখানে নিয়ে যেতে পারছিলেন না এই কারণে!
খাওয়াদাওয়া সেরে ব্যাগ গুছিয়ে উঠানে বসে অপেক্ষা করছিলাম। দুই দল একসঙ্গে রওনা দেবে। বড় দলের সবাই তখনও প্রস্তুত না। কিছুটা কমে এসেছিল জ্বর। একটু ভালো লাগছিল বলে পান্ডেজির সঙ্গে গল্প করা শুরু করে দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম সালমান খানের ‘দাবাং’ সিনেমাটা দেখা হয়েছে কি না। তিনি দেখেছেন। পরে তাঁকে জানালাম কেন আমি তাঁকে পান্ডেজি বলে ডাকি। তিনি মুচকি হেসে বললেন, ‘কাহা ম্যায় অউর কাহা সালমান খান!’ আমিও হেসে বললাম, ‘হামারে লিয়ে তো আপহি সালমান খান হ্যায়, পান্ডেজি।’ আমার বিশ্বাস, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ গল্প আছে। আর সেই গল্পের নায়ক তাঁরা নিজেই। পান্ডেজিকে শুধু এই জিনিসটা উপলব্ধি করাতে চাচ্ছিলাম।
তিনটার দিকে সবাই গাড়িতে চড়ে বসলাম। ভটভট করতে করতে জিপ চালু হয়ে গেল। ফিরছিলাম গ্যাংটক।
চলবে...

শীতের দিনে ত্বকের সাধারণ সমস্যার একটি হলো ফাটা গোড়ালি। সাধারণত যাঁদের বয়স ত্রিশ বা তার বেশি, তাঁরা ত্বকের অতিরিক্ত মরা কোষ ও ফাটা গোড়ালির সমস্যায় বেশি ভোগেন। ফলে দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগেই হয়তো পারলার থেকে পেডিকিউর করে এসেছেন, কিন্তু সপ্তাহ পার হতে না হতেই আবার পায়ের গোড়ালির ত্বক পুরু হয়ে শক্ত হয়ে...
২ ঘণ্টা আগে
রোজ শ্যাম্পু করার পর বোতলজাত যে কন্ডিশনার আমরা ব্যবহার করি; সেগুলোর ব্যবহার করলেই যে চুল কোমল, সুন্দর ও মসৃণ থাকবে, এ কথা ভাবাটা বোকামি। চুলের সার্বিক সুস্থতার জন্য এই ঋতুতে কিছু ঘরোয়া ডিপ কন্ডিশনিং প্যাক তৈরি করেও চুলে ব্যবহার করতে হবে। এতে পুরো শীতে চুল থাকবে নরম, মসৃণ ও জেল্লাদার। দেখে নিন...
৪ ঘণ্টা আগে
সঞ্চয় করার দক্ষতা নিয়ে আজ লোকে আপনার প্রশংসা করবে। তবে সাবধান! কিপটেমি আর সঞ্চয়ের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। বন্ধুদের ট্রিট দেওয়ার সময় হুট করে ‘মানিব্যাগ ভুলে রেখে এসেছি’ বা ‘আমার নেট কাজ করছে না’ বলার পুরোনো কৌশলটি আজ বন্ধুদের কাছে ধরা পড়ে যেতে পারে।
৫ ঘণ্টা আগে
আমাদের দেশে ধীরে ধীরে স্যুপ খাওয়াটা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মূলত চায়নিজ রেস্তোরাঁগুলোর কারণে। সুস্বাদু ও বিচিত্র নুডলস স্যুপ পাওয়া যায় এখন ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের রেস্তোরাঁগুলোতে। ভাবার কোনো কারণ নেই, স্যুপ শুধু রেস্তোরাঁয় গিয়েই খেতে হবে। বাড়িতেও তৈরি করতে পারেন মজাদার বিভিন্ন স্যুপ।
৫ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

শীতের দিনে ত্বকের সাধারণ সমস্যার একটি হলো ফাটা গোড়ালি। সাধারণত যাঁদের বয়স ত্রিশ বা তার বেশি, তাঁরা ত্বকের অতিরিক্ত মরা কোষ ও ফাটা গোড়ালির সমস্যায় বেশি ভোগেন। ফলে দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগেই হয়তো পারলার থেকে পেডিকিউর করে এসেছেন, কিন্তু সপ্তাহ পার হতে না হতেই আবার পায়ের গোড়ালির ত্বক পুরু হয়ে শক্ত হয়ে গেছে, খানিকটা ফেটেও যেতে পারে। তাই সাবধান হতে হবে আগে থেকে। এই শীতে ফাটা গোড়ালির সমস্যা এড়াতে হলে নিয়মিত যত্নের বাইরে কোনো দাওয়াই নেই। ফাটা গোড়ালি সারানোর জন্য বিশেষ লোশন বা ক্রিমের খোঁজ না করে ভরসা রাখতে পারেন কিছু ঘরোয়া টোটকায়। এসব উপাদান নিয়মিত ব্যবহারে সুফল মিলবে।
ময়শ্চারাইজেশন আসল চিকিৎসা

ত্বক ও গোড়ালি ফাটার মূল কারণ শুষ্কতা। শীতের হাওয়া লেগে আমাদের ত্বক আর্দ্রতা হারায় দ্রুত। তাই ত্বকের হাইড্রেশনে জোর দিলে ফাটা গোড়ালি থেকে মুক্তি মিলবে সহজে। এর জন্য গোড়ালি শুষ্ক হয়ে এলেই ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। সম্ভব হলে কয়েক লেয়ারে ময়শ্চারাইজার মেখে তারপর সুতির মোজা পরুন। এই যেমন প্রথমে গ্লিসারিন, তারপর অলিভ অয়েল এবং সবশেষে পেট্রোলিয়াম জেলি মেখে ১০ মিনিট অপেক্ষার পর সুতি মোজা পরুন। তাতে পায়ের ত্বক কোমল থাকবে আর গোড়ালি ফাটাও রোধ করা যাবে। এই কাজে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ হিল বামে ভরসা রাখতে পারেন।
ফুট স্ক্রাব জরুরি
ফাটা গোড়ালির ত্বক অপেক্ষাকৃত বেশি শুষ্ক ও পুরু হয়। ফলে হাঁটার সময় বেশি চাপ পড়লে গোড়ালি আরও ফাটে। তাই নিয়মিত ফুট স্ক্রাব করতে হবে। তাহলে গোড়ালি ফাটার সমস্যা ধীরে ধীরে কমবে। ফুট স্ক্রাব করতে এক কাপ লবণ, এক কাপ চিনি, দুই টেবিল চামচ মধু, সামান্য নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে পায়ে স্ক্রাব করুন। ম্যাসাজ শেষে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে সাধারণ তাপমাত্রার পানিতে পা ধুয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া আধা কাপ লবণ, এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল এবং ৪ থেকে ৫ ফোঁটা পিপারমিন্ট অয়েল একটি কাচের পাত্রে একসঙ্গে মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে রেখে দিন। এই স্ক্রাব সপ্তাহে দুদিন পায়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করে ১০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর কুসুম গরম পানিতে পা ধুয়ে ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
২০ মিনিটের পুটবাথ
প্রতিদিন বাইরে থেকে ফিরে সরাসরি গোসলে না ঢুকে একটি বাটিতে হালকা গরম পানি নিয়ে তাতে হালকা কোনো বডি ওয়াশ ও অল্প পরিমাণ লবণ মিশিয়ে নিন। এই পানিতে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েলও যোগ করতে পারেন। এবার এতে ২০ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখুন। এতে গোড়ালির ত্বক কিছুটা নরম হয়ে আসবে। তারপর ঝামা, লুফা বা ফুট স্ক্রাবার দিয়ে গোড়ালি ঘষে নিন। তারপর গোসল সেরে পায়ে ভারী ময়শ্চারাইজার লাগান। সবশেষে পায়ে মোজা পরতে ভুলবেন না যেন!

ক্ষতি সারাবে টি ট্রি অয়েল
অ্য়ান্টিমাইক্রোবিয়াল টি ট্রি অয়েল গোড়ালি ফাটা সারাতে খুব কার্যকর। তবে সরাসরি টি ট্রি অয়েল ত্বকে ব্যবহার করবেন না। এর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মিশিয়ে তারপর ত্বকে ব্যবহার করুন। এ ক্ষেত্রে পরিমাণটা বোঝা জরুরি। একটি কাপের ৪ ভাগের ১ ভাগ অলিভ অয়েল নিন। তাতে ৬ থেকে ৭ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার হালকা গরম পানিতে পা ভিজিয়ে রাখার পর এই মিশ্রণ দিয়ে ভালো করে ফুট ম্যাসাজ করে ফেলুন। এই ঘরোয়া টোটকাতে ফাটা গোড়ালি ধীরে ধীরে ভালো হয়ে উঠবে।
প্রাকৃতিক সমাধান হতে পারে মধু
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণসমৃদ্ধ মধু যেকোনো ত্বকের ক্ষত ও ফেটে যাওয়া অংশ সারিয়ে তুলতে সাহায্য় করে; পাশাপাশি ত্বক আর্দ্র ও মসৃণ রাখতেও সহায়ক। তাই ফাটা গোড়ালি সারাতে বাড়তি কিছু করতে না চাইলে মধুর ওপর ভরসা রাখতে পারেন। সিনেমা দেখতে বসার আগে পায়ের গোড়ালিতে মধু মেখে তারপর টিভির সামনে পা এলিয়ে বসুন। ২ থেকে ৩ ঘণ্টায় খুব ভালো কাজ করবে এই মধু। নিয়মিত করলে ফাটা গোড়ালি সেরে উঠবে খুব দ্রুত।
সূত্র: বি বিউটিফুল, নেটমেডস ও অন্যান্য

শীতের দিনে ত্বকের সাধারণ সমস্যার একটি হলো ফাটা গোড়ালি। সাধারণত যাঁদের বয়স ত্রিশ বা তার বেশি, তাঁরা ত্বকের অতিরিক্ত মরা কোষ ও ফাটা গোড়ালির সমস্যায় বেশি ভোগেন। ফলে দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগেই হয়তো পারলার থেকে পেডিকিউর করে এসেছেন, কিন্তু সপ্তাহ পার হতে না হতেই আবার পায়ের গোড়ালির ত্বক পুরু হয়ে শক্ত হয়ে গেছে, খানিকটা ফেটেও যেতে পারে। তাই সাবধান হতে হবে আগে থেকে। এই শীতে ফাটা গোড়ালির সমস্যা এড়াতে হলে নিয়মিত যত্নের বাইরে কোনো দাওয়াই নেই। ফাটা গোড়ালি সারানোর জন্য বিশেষ লোশন বা ক্রিমের খোঁজ না করে ভরসা রাখতে পারেন কিছু ঘরোয়া টোটকায়। এসব উপাদান নিয়মিত ব্যবহারে সুফল মিলবে।
ময়শ্চারাইজেশন আসল চিকিৎসা

ত্বক ও গোড়ালি ফাটার মূল কারণ শুষ্কতা। শীতের হাওয়া লেগে আমাদের ত্বক আর্দ্রতা হারায় দ্রুত। তাই ত্বকের হাইড্রেশনে জোর দিলে ফাটা গোড়ালি থেকে মুক্তি মিলবে সহজে। এর জন্য গোড়ালি শুষ্ক হয়ে এলেই ময়শ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। সম্ভব হলে কয়েক লেয়ারে ময়শ্চারাইজার মেখে তারপর সুতির মোজা পরুন। এই যেমন প্রথমে গ্লিসারিন, তারপর অলিভ অয়েল এবং সবশেষে পেট্রোলিয়াম জেলি মেখে ১০ মিনিট অপেক্ষার পর সুতি মোজা পরুন। তাতে পায়ের ত্বক কোমল থাকবে আর গোড়ালি ফাটাও রোধ করা যাবে। এই কাজে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ হিল বামে ভরসা রাখতে পারেন।
ফুট স্ক্রাব জরুরি
ফাটা গোড়ালির ত্বক অপেক্ষাকৃত বেশি শুষ্ক ও পুরু হয়। ফলে হাঁটার সময় বেশি চাপ পড়লে গোড়ালি আরও ফাটে। তাই নিয়মিত ফুট স্ক্রাব করতে হবে। তাহলে গোড়ালি ফাটার সমস্যা ধীরে ধীরে কমবে। ফুট স্ক্রাব করতে এক কাপ লবণ, এক কাপ চিনি, দুই টেবিল চামচ মধু, সামান্য নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে পায়ে স্ক্রাব করুন। ম্যাসাজ শেষে ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে সাধারণ তাপমাত্রার পানিতে পা ধুয়ে নিতে হবে। এ ছাড়া আধা কাপ লবণ, এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল এবং ৪ থেকে ৫ ফোঁটা পিপারমিন্ট অয়েল একটি কাচের পাত্রে একসঙ্গে মিশিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে রেখে দিন। এই স্ক্রাব সপ্তাহে দুদিন পায়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করে ১০ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর কুসুম গরম পানিতে পা ধুয়ে ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
২০ মিনিটের পুটবাথ
প্রতিদিন বাইরে থেকে ফিরে সরাসরি গোসলে না ঢুকে একটি বাটিতে হালকা গরম পানি নিয়ে তাতে হালকা কোনো বডি ওয়াশ ও অল্প পরিমাণ লবণ মিশিয়ে নিন। এই পানিতে কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েলও যোগ করতে পারেন। এবার এতে ২০ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখুন। এতে গোড়ালির ত্বক কিছুটা নরম হয়ে আসবে। তারপর ঝামা, লুফা বা ফুট স্ক্রাবার দিয়ে গোড়ালি ঘষে নিন। তারপর গোসল সেরে পায়ে ভারী ময়শ্চারাইজার লাগান। সবশেষে পায়ে মোজা পরতে ভুলবেন না যেন!

ক্ষতি সারাবে টি ট্রি অয়েল
অ্য়ান্টিমাইক্রোবিয়াল টি ট্রি অয়েল গোড়ালি ফাটা সারাতে খুব কার্যকর। তবে সরাসরি টি ট্রি অয়েল ত্বকে ব্যবহার করবেন না। এর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মিশিয়ে তারপর ত্বকে ব্যবহার করুন। এ ক্ষেত্রে পরিমাণটা বোঝা জরুরি। একটি কাপের ৪ ভাগের ১ ভাগ অলিভ অয়েল নিন। তাতে ৬ থেকে ৭ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার হালকা গরম পানিতে পা ভিজিয়ে রাখার পর এই মিশ্রণ দিয়ে ভালো করে ফুট ম্যাসাজ করে ফেলুন। এই ঘরোয়া টোটকাতে ফাটা গোড়ালি ধীরে ধীরে ভালো হয়ে উঠবে।
প্রাকৃতিক সমাধান হতে পারে মধু
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণসমৃদ্ধ মধু যেকোনো ত্বকের ক্ষত ও ফেটে যাওয়া অংশ সারিয়ে তুলতে সাহায্য় করে; পাশাপাশি ত্বক আর্দ্র ও মসৃণ রাখতেও সহায়ক। তাই ফাটা গোড়ালি সারাতে বাড়তি কিছু করতে না চাইলে মধুর ওপর ভরসা রাখতে পারেন। সিনেমা দেখতে বসার আগে পায়ের গোড়ালিতে মধু মেখে তারপর টিভির সামনে পা এলিয়ে বসুন। ২ থেকে ৩ ঘণ্টায় খুব ভালো কাজ করবে এই মধু। নিয়মিত করলে ফাটা গোড়ালি সেরে উঠবে খুব দ্রুত।
সূত্র: বি বিউটিফুল, নেটমেডস ও অন্যান্য

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম
০২ নভেম্বর ২০২২
রোজ শ্যাম্পু করার পর বোতলজাত যে কন্ডিশনার আমরা ব্যবহার করি; সেগুলোর ব্যবহার করলেই যে চুল কোমল, সুন্দর ও মসৃণ থাকবে, এ কথা ভাবাটা বোকামি। চুলের সার্বিক সুস্থতার জন্য এই ঋতুতে কিছু ঘরোয়া ডিপ কন্ডিশনিং প্যাক তৈরি করেও চুলে ব্যবহার করতে হবে। এতে পুরো শীতে চুল থাকবে নরম, মসৃণ ও জেল্লাদার। দেখে নিন...
৪ ঘণ্টা আগে
সঞ্চয় করার দক্ষতা নিয়ে আজ লোকে আপনার প্রশংসা করবে। তবে সাবধান! কিপটেমি আর সঞ্চয়ের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। বন্ধুদের ট্রিট দেওয়ার সময় হুট করে ‘মানিব্যাগ ভুলে রেখে এসেছি’ বা ‘আমার নেট কাজ করছে না’ বলার পুরোনো কৌশলটি আজ বন্ধুদের কাছে ধরা পড়ে যেতে পারে।
৫ ঘণ্টা আগে
আমাদের দেশে ধীরে ধীরে স্যুপ খাওয়াটা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মূলত চায়নিজ রেস্তোরাঁগুলোর কারণে। সুস্বাদু ও বিচিত্র নুডলস স্যুপ পাওয়া যায় এখন ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের রেস্তোরাঁগুলোতে। ভাবার কোনো কারণ নেই, স্যুপ শুধু রেস্তোরাঁয় গিয়েই খেতে হবে। বাড়িতেও তৈরি করতে পারেন মজাদার বিভিন্ন স্যুপ।
৫ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

শীতকাল আমাদের জন্য উদ্যাপনের ঋতু হলেও চুলের জন্য আতঙ্কের। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুলে নির্জীব ভাব আসার পাশাপাশি আগা ফাটার সমস্যাও বাড়তে থাকে। তাই এই ঋতুতে চুলের ডিপ কন্ডিশনিং রীতিনীতি মেনে চলা অপরিহার্য। তবে রোজ শ্যাম্পু করার পর বোতলজাত যে কন্ডিশনার আমরা ব্যবহার করি; সেগুলোর ব্যবহার করলেই যে চুল কোমল, সুন্দর ও মসৃণ থাকবে, এ কথা ভাবাটা বোকামি। চুলের সার্বিক সুস্থতার জন্য এই ঋতুতে কিছু ঘরোয়া ডিপ কন্ডিশনিং প্যাক তৈরি করেও চুলে ব্যবহার করতে হবে। এতে পুরো শীতে চুল থাকবে নরম, মসৃণ ও জেল্লাদার। দেখে নিন, কী কী ঘরোয়ার উপকরণ দিয়ে চুলের জন্য ডিপ কন্ডিশনিং প্যাক তৈরি করবেন।
পাকা কলার প্যাক
কলা খুব ভালো ময়শ্চারাইজিং উপাদান। এটি শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যাওয়া চুল নিরাময়ে সহায়ক। কলা ভিটামিন বি৬, পটাশিয়াম, প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টিতে পরিপূর্ণ। ফলে এটি মাথার ত্বক ও চুলে গভীরভাবে পুষ্টি জোগায়। কেবল একটি পাকা কলা বেটে তার সঙ্গে মধু, ডিম ও সামান্য দুধ মিশিয়ে নিন। এরপর এই পেস্ট মাথার ত্বক এবং পুরো চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে ৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। তারপর ভালো কোনো শ্যাম্পু দিয়ে চুল সুন্দর করে ধুয়ে ফেলতে পারেন। এই প্যাক ব্যবহারে চুল খুব দ্রুত ঝলমলে হয়।
দইয়ের জাদুকরি প্যাক

প্রচুর প্রোটিন ও ল্যাকটিক অ্যাসিডে ভরা দই আমাদের চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি মাথার ত্বক পরিষ্কার করে, চুল মসৃণ করে মাথার ত্বকে চুলকানি দূর করতেও সহায়ক। টক দই, কলা, মধু ও জলপাই তেল দিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এই প্যাক মাথার ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। সবশেষে ভালো মানের শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চুলের স্বাস্থ্য ফেরাতে এটিকে বলা যেতে পারে জাদুকরি প্যাক। তবে যাঁদের ঠান্ডা লাগে, তাঁরা ৩০ মিনিটের পরিবর্তে ১০ মিনিট রেখে চুল ধুয়ে নিতে পারেন।
চুলের তরতাজা ভাব ফেরাবে অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা মাথার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য পুনরুদ্ধার এবং চুল বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে। একটি পাত্রে ৪ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল লেবুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ আপনার চুলে লাগিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এরপর শ্যাম্পু করে চুলে রেগুলার কন্ডিশনার মাখুন। নিজেই টের পাবেন চুলের তরতাজা ভাব। সপ্তাহে দুবার এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন।

তৈলাক্ত চুলের সেরা কন্ডিশনার আপেল সিডার ভিনেগার
আপেল সিডার ভিনেগার অ্যাসিটিক অ্যাসিডের একটি ভালো উৎস। এটি তৈলাক্ত মাথার ত্বক, খুশকি এবং কুঁকড়ে যাওয়া চুলের জন্য চমৎকার সমাধান। এটি মাথার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য পুনরুদ্ধার এবং ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এর জন্য চুল ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন। এরপর ২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এক মগ পানির সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ মাথার ত্বক ও চুলে ঢেলে দিন। ৫ মিনিট ধরে আপনার মাথার ত্বক ম্যাসাজ করুন। হালকা করে চুল আবার শ্যাম্পু করে এরপর কন্ডিশনার মাখুন। সবশেষে সুন্দর করে চুল ধুয়ে নিন।
সহজ সমাধান নারকেল তেল
আমরা সবাই নারকেল তেলের বিস্ময়কর গুণাবলির কথা শুনে বড় হয়েছি। এই তেল যে চুলের যত্নে জাদুকরি উপাদান—এ কথা একেবারে মিথ্য়া নয়। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে চুল করে তোলে নরম ও মসৃণ। নারকেল তেল দিয়ে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার তৈরি করতে, ১ টেবিল চামচ মধু এবং ১ টেবিল চামচ লেবুর রসের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নারকেল তেল মিশিয়ে নিন। শ্যাম্পু করার সময় এটি লাগান। ২০ মিনিট রেখে দিন এবং তারপর হালকা গরম পানি ও শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

শীতকাল আমাদের জন্য উদ্যাপনের ঋতু হলেও চুলের জন্য আতঙ্কের। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুলে নির্জীব ভাব আসার পাশাপাশি আগা ফাটার সমস্যাও বাড়তে থাকে। তাই এই ঋতুতে চুলের ডিপ কন্ডিশনিং রীতিনীতি মেনে চলা অপরিহার্য। তবে রোজ শ্যাম্পু করার পর বোতলজাত যে কন্ডিশনার আমরা ব্যবহার করি; সেগুলোর ব্যবহার করলেই যে চুল কোমল, সুন্দর ও মসৃণ থাকবে, এ কথা ভাবাটা বোকামি। চুলের সার্বিক সুস্থতার জন্য এই ঋতুতে কিছু ঘরোয়া ডিপ কন্ডিশনিং প্যাক তৈরি করেও চুলে ব্যবহার করতে হবে। এতে পুরো শীতে চুল থাকবে নরম, মসৃণ ও জেল্লাদার। দেখে নিন, কী কী ঘরোয়ার উপকরণ দিয়ে চুলের জন্য ডিপ কন্ডিশনিং প্যাক তৈরি করবেন।
পাকা কলার প্যাক
কলা খুব ভালো ময়শ্চারাইজিং উপাদান। এটি শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যাওয়া চুল নিরাময়ে সহায়ক। কলা ভিটামিন বি৬, পটাশিয়াম, প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টিতে পরিপূর্ণ। ফলে এটি মাথার ত্বক ও চুলে গভীরভাবে পুষ্টি জোগায়। কেবল একটি পাকা কলা বেটে তার সঙ্গে মধু, ডিম ও সামান্য দুধ মিশিয়ে নিন। এরপর এই পেস্ট মাথার ত্বক এবং পুরো চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে ৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। তারপর ভালো কোনো শ্যাম্পু দিয়ে চুল সুন্দর করে ধুয়ে ফেলতে পারেন। এই প্যাক ব্যবহারে চুল খুব দ্রুত ঝলমলে হয়।
দইয়ের জাদুকরি প্যাক

প্রচুর প্রোটিন ও ল্যাকটিক অ্যাসিডে ভরা দই আমাদের চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি মাথার ত্বক পরিষ্কার করে, চুল মসৃণ করে মাথার ত্বকে চুলকানি দূর করতেও সহায়ক। টক দই, কলা, মধু ও জলপাই তেল দিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এই প্যাক মাথার ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। সবশেষে ভালো মানের শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চুলের স্বাস্থ্য ফেরাতে এটিকে বলা যেতে পারে জাদুকরি প্যাক। তবে যাঁদের ঠান্ডা লাগে, তাঁরা ৩০ মিনিটের পরিবর্তে ১০ মিনিট রেখে চুল ধুয়ে নিতে পারেন।
চুলের তরতাজা ভাব ফেরাবে অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা মাথার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য পুনরুদ্ধার এবং চুল বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করে। একটি পাত্রে ৪ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল লেবুর রসের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ আপনার চুলে লাগিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এরপর শ্যাম্পু করে চুলে রেগুলার কন্ডিশনার মাখুন। নিজেই টের পাবেন চুলের তরতাজা ভাব। সপ্তাহে দুবার এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন।

তৈলাক্ত চুলের সেরা কন্ডিশনার আপেল সিডার ভিনেগার
আপেল সিডার ভিনেগার অ্যাসিটিক অ্যাসিডের একটি ভালো উৎস। এটি তৈলাক্ত মাথার ত্বক, খুশকি এবং কুঁকড়ে যাওয়া চুলের জন্য চমৎকার সমাধান। এটি মাথার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য পুনরুদ্ধার এবং ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এর জন্য চুল ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন। এরপর ২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এক মগ পানির সঙ্গে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ মাথার ত্বক ও চুলে ঢেলে দিন। ৫ মিনিট ধরে আপনার মাথার ত্বক ম্যাসাজ করুন। হালকা করে চুল আবার শ্যাম্পু করে এরপর কন্ডিশনার মাখুন। সবশেষে সুন্দর করে চুল ধুয়ে নিন।
সহজ সমাধান নারকেল তেল
আমরা সবাই নারকেল তেলের বিস্ময়কর গুণাবলির কথা শুনে বড় হয়েছি। এই তেল যে চুলের যত্নে জাদুকরি উপাদান—এ কথা একেবারে মিথ্য়া নয়। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে চুল করে তোলে নরম ও মসৃণ। নারকেল তেল দিয়ে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার তৈরি করতে, ১ টেবিল চামচ মধু এবং ১ টেবিল চামচ লেবুর রসের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নারকেল তেল মিশিয়ে নিন। শ্যাম্পু করার সময় এটি লাগান। ২০ মিনিট রেখে দিন এবং তারপর হালকা গরম পানি ও শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম
০২ নভেম্বর ২০২২
শীতের দিনে ত্বকের সাধারণ সমস্যার একটি হলো ফাটা গোড়ালি। সাধারণত যাঁদের বয়স ত্রিশ বা তার বেশি, তাঁরা ত্বকের অতিরিক্ত মরা কোষ ও ফাটা গোড়ালির সমস্যায় বেশি ভোগেন। ফলে দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগেই হয়তো পারলার থেকে পেডিকিউর করে এসেছেন, কিন্তু সপ্তাহ পার হতে না হতেই আবার পায়ের গোড়ালির ত্বক পুরু হয়ে শক্ত হয়ে...
২ ঘণ্টা আগে
সঞ্চয় করার দক্ষতা নিয়ে আজ লোকে আপনার প্রশংসা করবে। তবে সাবধান! কিপটেমি আর সঞ্চয়ের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। বন্ধুদের ট্রিট দেওয়ার সময় হুট করে ‘মানিব্যাগ ভুলে রেখে এসেছি’ বা ‘আমার নেট কাজ করছে না’ বলার পুরোনো কৌশলটি আজ বন্ধুদের কাছে ধরা পড়ে যেতে পারে।
৫ ঘণ্টা আগে
আমাদের দেশে ধীরে ধীরে স্যুপ খাওয়াটা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মূলত চায়নিজ রেস্তোরাঁগুলোর কারণে। সুস্বাদু ও বিচিত্র নুডলস স্যুপ পাওয়া যায় এখন ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের রেস্তোরাঁগুলোতে। ভাবার কোনো কারণ নেই, স্যুপ শুধু রেস্তোরাঁয় গিয়েই খেতে হবে। বাড়িতেও তৈরি করতে পারেন মজাদার বিভিন্ন স্যুপ।
৫ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মেষ
সঞ্চয় করার দক্ষতা নিয়ে আজ লোকে আপনার প্রশংসা করবে। তবে সাবধান! কিপটেমি আর সঞ্চয়ের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। বন্ধুদের ট্রিট দেওয়ার সময় হুট করে ‘মানিব্যাগ ভুলে রেখে এসেছি’ বা ‘আমার নেট কাজ করছে না’ বলার পুরোনো কৌশলটি আজ বন্ধুদের কাছে ধরা পড়ে যেতে পারে। পরিবারে শান্তি বজায় থাকবে, যদি আপনি রিমোটের দখল ছেড়ে দেন। মানিব্যাগে সব সময় কিছু খুচরা টাকা রাখুন, ইজ্জত বাঁচতে পারে।
বৃষ
স্ত্রী বা পরিবারের কারোর মধুর ব্যবহারে আজ আপনি মুগ্ধ হতে পারেন, তবে এর পেছনে কোনো দামি শাড়ি, গয়না বা অনলাইন শপিংয়ের আবদার লুকিয়ে আছে কি না, তা ‘শার্লক হোমস’ স্টাইলে যাচাই করে নিন। সঞ্চয়ের জন্য দিনটি ভালো, কিন্তু লটারি জেতার আশায় অফিসের কলিগের কাছে ধার চাইবেন না। আবেগের চেয়ে আজ পেটভরা খাবারকে বেশি গুরুত্ব দিন। মিষ্টি কথায় ভুলে যাওয়ার আগে ব্যাংকের ব্যালেন্স চেক করুন।
মিথুন
মনের কথা বাড়ির লোককে বলে ফেলার জন্য আজ দারুণ দিন। তবে অফিসের বসের নামে কোনো ‘গোপন ছড়া’ বা ‘নিকনেম’ আবার ভুল করে বাড়ির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠিয়ে দেবেন না! পুরোনো অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে আবেগময় হয়ে পড়তে পারেন, সঙ্গে গামছা বা টিস্যু বক্স রাখুন। মেসেজ পাঠানোর আগে ‘রিসিভার’ কে, তা দুবার চেক করুন।
কর্কট
কারও কাছ থেকে আজ ধার নেবেন না, আর কাউকে দেবেনও না। কারণ, আজ যাকে টাকা দেবেন, তাকে খুঁজে পেতে ভবিষ্যতে আপনাকে ইন্টারপোল নিয়োগ করতে হতে পারে। সন্ধ্যার পর শরীর বেশ সতেজ থাকবে, চাইলে এক কাপ কড়া চা নিয়ে পাড়ার মোড়ে আড্ডা জমাতে পারেন। তবে পলিটিকস নিয়ে জ্ঞান দিতে যাবেন না। টাকা চাইলে ‘মানিব্যাগটা ধুতে দিয়েছি’ বলে এড়িয়ে যান।
সিংহ
বড় কোনো অঙ্কের টাকা হাতে আসার সম্ভাবনা আছে। তবে সেই টাকা হাতে আসার আগেই অনলাইনে আইফোন বা দামি গ্যাজেটের রিভিউ দেখা শুরু করবেন না। অতিরিক্ত রাগ আপনার কর্মক্ষেত্রে ক্ষতি করতে পারে। বসের ঝাড়ি খেয়েও আজ ‘মোনালিসা হাসি’ বজায় রাখার চেষ্টা করুন, এতে বস কনফিউজড হয়ে ঝাড়ি থামিয়ে দেবে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাসার প্র্যাকটিস করুন।
কন্যা
বাড়িতে যদি অবিবাহিত কেউ থাকে, তবে আজ তার বিয়ের আলোচনা তুঙ্গে উঠতে পারে। বিয়ের মেনুতে বিরিয়ানি থাকবে কি না, তা নিয়ে আজ থেকেই তর্ক শুরু হতে পারে। খাওয়ার অভ্যাসে বদল আনুন; রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খাওয়ার আগে বিক্রেতার হাত ধোয়া কি না, তা একটু জুম করে দেখে নিন। প্রবীণদের কথা শুনুন, মাঝেমধ্যে তারা ইন্টারনেটের চেয়েও ভালো সমাধান দেন! ফুচকায় ঝাল কম দিতে বলবেন, পেটের অবস্থা ভালো নয়।
তুলা
হয়তো ভালো মনেই কাউকে উপদেশ দেবেন, কিন্তু লোকে সেটাকে পার্সোনাল অ্যাটাক হিসেবে ধরে নেবে। আজ আপনার মিষ্টি কথা মানুষের কানে ‘নিমপাতার জুস’ মনে হতে পারে। অফিসে আপনার নামে কেউ কানকথা দিতে পারে, কিন্তু উল্টো তাদের মিষ্টি খাইয়ে কনফিউজ করে দিন। চুপ থাকাই আজ আপনার সেরা অস্ত্র।
বৃশ্চিক
পাড়ার দুই খালা বা চাচির ঝগড়ায় বিচার করতে যাবেন না। অন্যের ঝামেলা মেটাতে গিয়ে নিজেই ‘ভিলেন’ হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রল হতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে যুক্তিসংগত কথা বলুন। আজ আপনার কোনো পুরোনো শখ (যেমন গিটার বাজানো বা বাথরুমে গান গাওয়া) আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। অন্যের ব্যাপারে বাঁ হাত ঢোকাবেন না।
ধনু
আজ আপনার মধ্যে আধুনিক চিন্তা কাজ করবে। অফিসের কাজে এআই ব্যবহার করে বসকে চমকে দিতে পারেন; তবে সাবধান, যেন ধরা না পড়েন! সৃজনশীল কাজে সাফল্য আসবে। ভ্রমণে যাওয়ার আগে ব্যাগে ছাতা নিতে ভুলবেন না। কারণ, আবহাওয়া অফিস রোদ বললেও আজ বৃষ্টির সঙ্গে আপনার মোলাকাত হতে পারে। ল্যাপটপ চার্জ দিয়ে রাখুন।
মকর
আপনার পকেটে আজ অদৃশ্য ফুটো হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে শপিং মলে গেলে ক্রেডিট কার্ডটি বাসায় ফেলে যান। বিরোধীরা আজ আপনার ছোট কোনো ব্যাকরণগত ভুলকেও বড় করে দেখাতে পারে। তাই কথা বলার আগে মুখে ‘কাল্পনিক ফিল্টার’ ব্যবহার করুন। ‘সুলভ মূল্যে’ লেখা বোর্ড দেখলে উল্টো দিকে হাঁটুন।
কুম্ভ
দিনটি আপনার জন্য বেশ শুভ। নতুন কারোর সঙ্গে দেখা হতে পারে যে আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে (সেটা বিমা কোম্পানি বা এমএলএম মার্কেটিংয়ের লোকও হতে পারে, সাবধান!)। রাতে ভালো ঘুম হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যদি না মশার দল আপনার কানে গান গাওয়ার কনসার্ট আয়োজন করে। নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের লোকদের থেকে দূরে থাকুন।
মীন
আজ সারা দিন অফিসের বা বাড়ির কাজে এতটাই ব্যস্ত থাকবেন যে নিজের আয়নায় মুখ দেখার সময় পাবেন না। তবে এই ব্যস্ততার শেষে একটা মিষ্টি ক্লান্তি আসবে। সন্তানের বায়না মেটাতে গিয়ে পকেটে টান পড়তে পারে। শরীরের প্রতি যত্ন নিন, লিফট থাকতে সিঁড়ি দিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে যাবেন না। দুপুরের খাবারটা ঠিক সময়ে খেয়ে নিন।

মেষ
সঞ্চয় করার দক্ষতা নিয়ে আজ লোকে আপনার প্রশংসা করবে। তবে সাবধান! কিপটেমি আর সঞ্চয়ের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। বন্ধুদের ট্রিট দেওয়ার সময় হুট করে ‘মানিব্যাগ ভুলে রেখে এসেছি’ বা ‘আমার নেট কাজ করছে না’ বলার পুরোনো কৌশলটি আজ বন্ধুদের কাছে ধরা পড়ে যেতে পারে। পরিবারে শান্তি বজায় থাকবে, যদি আপনি রিমোটের দখল ছেড়ে দেন। মানিব্যাগে সব সময় কিছু খুচরা টাকা রাখুন, ইজ্জত বাঁচতে পারে।
বৃষ
স্ত্রী বা পরিবারের কারোর মধুর ব্যবহারে আজ আপনি মুগ্ধ হতে পারেন, তবে এর পেছনে কোনো দামি শাড়ি, গয়না বা অনলাইন শপিংয়ের আবদার লুকিয়ে আছে কি না, তা ‘শার্লক হোমস’ স্টাইলে যাচাই করে নিন। সঞ্চয়ের জন্য দিনটি ভালো, কিন্তু লটারি জেতার আশায় অফিসের কলিগের কাছে ধার চাইবেন না। আবেগের চেয়ে আজ পেটভরা খাবারকে বেশি গুরুত্ব দিন। মিষ্টি কথায় ভুলে যাওয়ার আগে ব্যাংকের ব্যালেন্স চেক করুন।
মিথুন
মনের কথা বাড়ির লোককে বলে ফেলার জন্য আজ দারুণ দিন। তবে অফিসের বসের নামে কোনো ‘গোপন ছড়া’ বা ‘নিকনেম’ আবার ভুল করে বাড়ির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠিয়ে দেবেন না! পুরোনো অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে আবেগময় হয়ে পড়তে পারেন, সঙ্গে গামছা বা টিস্যু বক্স রাখুন। মেসেজ পাঠানোর আগে ‘রিসিভার’ কে, তা দুবার চেক করুন।
কর্কট
কারও কাছ থেকে আজ ধার নেবেন না, আর কাউকে দেবেনও না। কারণ, আজ যাকে টাকা দেবেন, তাকে খুঁজে পেতে ভবিষ্যতে আপনাকে ইন্টারপোল নিয়োগ করতে হতে পারে। সন্ধ্যার পর শরীর বেশ সতেজ থাকবে, চাইলে এক কাপ কড়া চা নিয়ে পাড়ার মোড়ে আড্ডা জমাতে পারেন। তবে পলিটিকস নিয়ে জ্ঞান দিতে যাবেন না। টাকা চাইলে ‘মানিব্যাগটা ধুতে দিয়েছি’ বলে এড়িয়ে যান।
সিংহ
বড় কোনো অঙ্কের টাকা হাতে আসার সম্ভাবনা আছে। তবে সেই টাকা হাতে আসার আগেই অনলাইনে আইফোন বা দামি গ্যাজেটের রিভিউ দেখা শুরু করবেন না। অতিরিক্ত রাগ আপনার কর্মক্ষেত্রে ক্ষতি করতে পারে। বসের ঝাড়ি খেয়েও আজ ‘মোনালিসা হাসি’ বজায় রাখার চেষ্টা করুন, এতে বস কনফিউজড হয়ে ঝাড়ি থামিয়ে দেবে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাসার প্র্যাকটিস করুন।
কন্যা
বাড়িতে যদি অবিবাহিত কেউ থাকে, তবে আজ তার বিয়ের আলোচনা তুঙ্গে উঠতে পারে। বিয়ের মেনুতে বিরিয়ানি থাকবে কি না, তা নিয়ে আজ থেকেই তর্ক শুরু হতে পারে। খাওয়ার অভ্যাসে বদল আনুন; রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খাওয়ার আগে বিক্রেতার হাত ধোয়া কি না, তা একটু জুম করে দেখে নিন। প্রবীণদের কথা শুনুন, মাঝেমধ্যে তারা ইন্টারনেটের চেয়েও ভালো সমাধান দেন! ফুচকায় ঝাল কম দিতে বলবেন, পেটের অবস্থা ভালো নয়।
তুলা
হয়তো ভালো মনেই কাউকে উপদেশ দেবেন, কিন্তু লোকে সেটাকে পার্সোনাল অ্যাটাক হিসেবে ধরে নেবে। আজ আপনার মিষ্টি কথা মানুষের কানে ‘নিমপাতার জুস’ মনে হতে পারে। অফিসে আপনার নামে কেউ কানকথা দিতে পারে, কিন্তু উল্টো তাদের মিষ্টি খাইয়ে কনফিউজ করে দিন। চুপ থাকাই আজ আপনার সেরা অস্ত্র।
বৃশ্চিক
পাড়ার দুই খালা বা চাচির ঝগড়ায় বিচার করতে যাবেন না। অন্যের ঝামেলা মেটাতে গিয়ে নিজেই ‘ভিলেন’ হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রল হতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে যুক্তিসংগত কথা বলুন। আজ আপনার কোনো পুরোনো শখ (যেমন গিটার বাজানো বা বাথরুমে গান গাওয়া) আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। অন্যের ব্যাপারে বাঁ হাত ঢোকাবেন না।
ধনু
আজ আপনার মধ্যে আধুনিক চিন্তা কাজ করবে। অফিসের কাজে এআই ব্যবহার করে বসকে চমকে দিতে পারেন; তবে সাবধান, যেন ধরা না পড়েন! সৃজনশীল কাজে সাফল্য আসবে। ভ্রমণে যাওয়ার আগে ব্যাগে ছাতা নিতে ভুলবেন না। কারণ, আবহাওয়া অফিস রোদ বললেও আজ বৃষ্টির সঙ্গে আপনার মোলাকাত হতে পারে। ল্যাপটপ চার্জ দিয়ে রাখুন।
মকর
আপনার পকেটে আজ অদৃশ্য ফুটো হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বিশেষ করে শপিং মলে গেলে ক্রেডিট কার্ডটি বাসায় ফেলে যান। বিরোধীরা আজ আপনার ছোট কোনো ব্যাকরণগত ভুলকেও বড় করে দেখাতে পারে। তাই কথা বলার আগে মুখে ‘কাল্পনিক ফিল্টার’ ব্যবহার করুন। ‘সুলভ মূল্যে’ লেখা বোর্ড দেখলে উল্টো দিকে হাঁটুন।
কুম্ভ
দিনটি আপনার জন্য বেশ শুভ। নতুন কারোর সঙ্গে দেখা হতে পারে যে আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে (সেটা বিমা কোম্পানি বা এমএলএম মার্কেটিংয়ের লোকও হতে পারে, সাবধান!)। রাতে ভালো ঘুম হওয়ার সম্ভাবনা আছে, যদি না মশার দল আপনার কানে গান গাওয়ার কনসার্ট আয়োজন করে। নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের লোকদের থেকে দূরে থাকুন।
মীন
আজ সারা দিন অফিসের বা বাড়ির কাজে এতটাই ব্যস্ত থাকবেন যে নিজের আয়নায় মুখ দেখার সময় পাবেন না। তবে এই ব্যস্ততার শেষে একটা মিষ্টি ক্লান্তি আসবে। সন্তানের বায়না মেটাতে গিয়ে পকেটে টান পড়তে পারে। শরীরের প্রতি যত্ন নিন, লিফট থাকতে সিঁড়ি দিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে যাবেন না। দুপুরের খাবারটা ঠিক সময়ে খেয়ে নিন।

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম
০২ নভেম্বর ২০২২
শীতের দিনে ত্বকের সাধারণ সমস্যার একটি হলো ফাটা গোড়ালি। সাধারণত যাঁদের বয়স ত্রিশ বা তার বেশি, তাঁরা ত্বকের অতিরিক্ত মরা কোষ ও ফাটা গোড়ালির সমস্যায় বেশি ভোগেন। ফলে দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগেই হয়তো পারলার থেকে পেডিকিউর করে এসেছেন, কিন্তু সপ্তাহ পার হতে না হতেই আবার পায়ের গোড়ালির ত্বক পুরু হয়ে শক্ত হয়ে...
২ ঘণ্টা আগে
রোজ শ্যাম্পু করার পর বোতলজাত যে কন্ডিশনার আমরা ব্যবহার করি; সেগুলোর ব্যবহার করলেই যে চুল কোমল, সুন্দর ও মসৃণ থাকবে, এ কথা ভাবাটা বোকামি। চুলের সার্বিক সুস্থতার জন্য এই ঋতুতে কিছু ঘরোয়া ডিপ কন্ডিশনিং প্যাক তৈরি করেও চুলে ব্যবহার করতে হবে। এতে পুরো শীতে চুল থাকবে নরম, মসৃণ ও জেল্লাদার। দেখে নিন...
৪ ঘণ্টা আগে
আমাদের দেশে ধীরে ধীরে স্যুপ খাওয়াটা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মূলত চায়নিজ রেস্তোরাঁগুলোর কারণে। সুস্বাদু ও বিচিত্র নুডলস স্যুপ পাওয়া যায় এখন ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের রেস্তোরাঁগুলোতে। ভাবার কোনো কারণ নেই, স্যুপ শুধু রেস্তোরাঁয় গিয়েই খেতে হবে। বাড়িতেও তৈরি করতে পারেন মজাদার বিভিন্ন স্যুপ।
৫ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

আমাদের দেশে ধীরে ধীরে স্যুপ খাওয়াটা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মূলত চায়নিজ রেস্তোরাঁগুলোর কারণে। সুস্বাদু ও বিচিত্র নুডলস স্যুপ পাওয়া যায় এখন ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের রেস্তোরাঁগুলোতে। ভাবার কোনো কারণ নেই, স্যুপ শুধু রেস্তোরাঁয় গিয়েই খেতে হবে। বাড়িতেও তৈরি করতে পারেন মজাদার বিভিন্ন স্যুপ। কিন্তু মনে রাখা চাই, মাংস দিয়ে কিছু স্যুপ রান্না করতে গেলে খানিক সময় লাগবে। তারপরই উপভোগ করা যাবে মজাদার স্যুপ।
আপনাদের জন্য দুটি স্যুপের রেসিপি রইল।
লানঝাউ বিফ নুডলস স্যুপ, চীন
চীনে নুডলস দিয়ে তৈরি খাবার ও চায়নিজ নুডলস স্যুপ রেসিপির কোনো ঘাটতি নেই। বলা হয়, এর বৈচিত্র্য চীনের ভূগোলের মতোই বিশাল এবং প্রতিটি অত্যন্ত সুস্বাদু। কিন্তু অসংখ্য নুডলস ডিশের, বিশেষ করে নুডলস স্যুপের মধ্যে যেটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, তা হলো লানঝাউ বিফ নুডলস স্যুপ।
সুস্বাদু, স্বচ্ছ ঝোল, পাতলা করে কাটা গরুর মাংস, নরম চায়নিজ মুলার ফালি, প্রচুর ধনেপাতা ও পেঁয়াজ কলি, গাঢ় লাল মরিচের তেল এবং হাতে তৈরি নুডলস দিয়ে রান্না করা হয় লানঝাউ বিফ নুডলস স্যুপ।
উপকরণ
৪ পাউন্ড গরুর মাংস, ১ কেজি গরুর হাঁটুর মাংস, অর্ধেক ভাজা মুরগি, ১০ কাপ পানি, ১ লিটার চিকেন স্টক, স্বাদ অনুযায়ী লবণ, ছোট চায়নিজ মুলার অর্ধেক, ১ পাউন্ড তাজা বা শুকনো সাদা নুডলস, গরম মরিচের তেল, পেঁয়াজ কলি, ধনেপাতা।
মসলা মিশ্রণের জন্য
৭টি তারকা মৌরি, ১২টি লবঙ্গ, ১টি দারুচিনি, ৫টি তেজপাতা, ৬টি বড় স্যান্ড জিঞ্জারের টুকরো, দেড় চা-চামচ মৌরি বীজ, ১ চা-চামচ জিরা বীজ, ২ চা-চামচ সিচুয়ান গোলমরিচ, দেড় চা-চামচ সাদা গোলমরিচ, ৫টি লিকোরিস মূলের টুকরো, ৩টি শুকনো কমলার খোসা, ১টি কালো এলাচি।
গরম মরিচের তেলের জন্য
এক কাপের ৪ ভাগের ৩ ভাগ তেল, ২টি তারকা মৌরি, ছোট দারুচিনির অর্ধেক, আধা চা-চামচ সিচুয়ান গোলমরিচ, ৩ টেবিল চামচ লাল মরিচ গুঁড়া, ১ চা-চামচ লবণ, সামান্য চিনি।
প্রস্তুত প্রণালি
মাংসের হাড়গুলো ধুয়ে নিন। ৪০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় বেকিং শিটে ৪৫ মিনিট বেক করে নিন। একটি বড় পাত্রে পানি ফুটিয়ে তাতে গরুর হাঁটুর মাংস এবং মুরগির মাংস যোগ করুন। সবকিছু আবার ফুটতে দিন। একবার ফুটে উঠলে হাঁটুর মাংস এবং মুরগি বের করে নিয়ে পানি ফেলে দিন এবং পাত্রটি পরিষ্কার করে নিন।
এরপর গরুর হাঁটুর মাংস এবং মুরগি আবার পাত্রে দিন। সঙ্গে বেক করে নেওয়া হাড়। এর সঙ্গে আরও ১০ কাপ পানি এবং ৪ কাপ চিকেন স্টক যোগ করুন। মসলার সব উপকরণ একত্র করে একটি পাতলা কাপড়ে পুঁটলি করে শক্তভাবে বেঁধে মসলার মিশ্রণ তৈরি করুন। এটি পাত্রে রেখে দিন। এরপর পাত্রে পরিমাণমতো লবণ দিয়ে সবকিছু ফুটতে দিন।
একবার ফুটে উঠলে আঁচ কমিয়ে দিয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে সেদ্ধ হতে দিন। ২ ঘণ্টা পরে গরুর হাঁটুর মাংস বের করে সরিয়ে রাখুন। বাকি অংশে কাটা মুলা যোগ করে আরও ঘণ্টাখানেক সেদ্ধ হতে দিন। তারপর মসলার ব্যাগ, মুরগির হাড় বের করে ফেলে দিন। ঝোলে লবণের স্বাদ নিন এবং প্রয়োজন হলে মসলা সমন্বয় করুন। এতে স্যুপের বেজ তৈরি হয়ে যাবে।
উপকরণগুলো সেদ্ধ হওয়ার সময় মরিচের তেল তৈরি করে ফেলুন। একটি ছোট পাত্রে তেল, তারকা মৌরি, দারুচিনি এবং সিচুয়ান গোলমরিচ নিন। খুব কম আঁচে সবকিছু ধীরে ধীরে ১৫ মিনিট একসঙ্গে ভুনে নিন। একটি ছাঁকনি চামচ দিয়ে মসলাগুলো তেল থেকে আলাদা করে নিন। এরপর প্রায় ৫ মিনিট তেল ঠান্ডা করে তাতে মরিচগুঁড়া যোগ করে সেই হালকা গরম তেলে ধীরে ধীরে ভুনে নিন; যতক্ষণ না খুব সুগন্ধ ছড়ায়। লাল হয়ে গেলে তাতে লবণ ও চিনি মেশাতে হবে।
একবার ঝোল ও মরিচের তেল তৈরি হয়ে গেলে, আলাদা পাত্রে প্যাকেটের নির্দেশ অনুযায়ী নুডলস রান্না করুন। সেদ্ধ নুডলস ৬টি বাটিতে ভাগ করুন। ঠান্ডা হওয়া গরুর হাঁটুর মাংস পাতলা করে কেটে নুডলসের ওপর সাজান। এরপর তাতে একে একে ঝোল, মুলা, এক চামচ গরম মরিচের তেল এবং এক মুঠো করে কুচি করা পেঁয়াজ কলি এবং ধনেপাতা যোগ করে পরিবেশন করুন।

ইয়াইলা চোর্বাসি, তুরস্ক
তুরস্কের স্যুপের নাম ইয়াইলা চোর্বাসি। এর প্রধান উপকরণ সেদ্ধ চাল বা বার্লি। এর সঙ্গে যোগ করা হয় দই। বিশ্বাস করা হয়, এটি শীতকালে সর্দি প্রতিরোধ করে; কিছু তুর্কি হাসপাতালে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের দই স্যুপ পরিবেশন করা হয়।
শুকনো পুদিনা গুঁড়া দইয়ের হালকা টক স্বাদকে ভারসাম্যপূর্ণ করে তোলে। তাজা পাউরুটির সঙ্গে এটি পরিবেশন করুন।
উপকরণ
বাসমতী বা জেসমিনসহ যেকোনো ধরনের সাদা চাল, গ্রিক দই বা সাধারণ দই, স্যুপ ঘন করতে ডিম ও ময়দার সংমিশ্রণ, শুকনো পুদিনাপাতার গুঁড়া।
প্রস্তুত প্রণালি
যে চাল ব্যবহার করবেন, স্বাভাবিকের চেয়ে তাতে বেশি পানি দিয়ে প্রথমে নরম করে ভাত রান্না করুন। পানি ও ভাত এই স্যুপের ভিত্তি। একটি বাটিতে দই, ডিম, ময়দা ও লবণ ভালো করে মিশিয়ে নিন। পানি কমে গেলে ভাতে আরও পানি যোগ করুন এবং ভালোভাবে নাড়ুন। হয়ে গেলে নামিয়ে নিন। এরপর সুবিধামতো পাত্র নিয়ে ধীরে ধীরে ভাত ও পানি দই ও ডিমের মিশ্রণে যোগ করুন এবং ভালোভাবে নাড়তে থাকুন। এরপর এই পুরো মিশ্রণ আবারও গরম পানিতে দিয়ে মাঝারি আঁচে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে ফুটতে দিন। এ সময়েও মাঝে মাঝে নাড়তে থাকুন। চেখে দেখুন। লাগলে প্রয়োজনে আরও লবণ যোগ করুন।
একটি ছোট প্যানে মাখন গলিয়ে সুগন্ধ বের হওয়া পর্যন্ত শুকনো পুদিনা সেদ্ধ করে নিন। তারপর এটি স্যুপে যোগ করুন এবং ভালোভাবে নাড়ুন। তারপর নামিয়ে পরিবেশন করা যাবে।

আমাদের দেশে ধীরে ধীরে স্যুপ খাওয়াটা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মূলত চায়নিজ রেস্তোরাঁগুলোর কারণে। সুস্বাদু ও বিচিত্র নুডলস স্যুপ পাওয়া যায় এখন ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের রেস্তোরাঁগুলোতে। ভাবার কোনো কারণ নেই, স্যুপ শুধু রেস্তোরাঁয় গিয়েই খেতে হবে। বাড়িতেও তৈরি করতে পারেন মজাদার বিভিন্ন স্যুপ। কিন্তু মনে রাখা চাই, মাংস দিয়ে কিছু স্যুপ রান্না করতে গেলে খানিক সময় লাগবে। তারপরই উপভোগ করা যাবে মজাদার স্যুপ।
আপনাদের জন্য দুটি স্যুপের রেসিপি রইল।
লানঝাউ বিফ নুডলস স্যুপ, চীন
চীনে নুডলস দিয়ে তৈরি খাবার ও চায়নিজ নুডলস স্যুপ রেসিপির কোনো ঘাটতি নেই। বলা হয়, এর বৈচিত্র্য চীনের ভূগোলের মতোই বিশাল এবং প্রতিটি অত্যন্ত সুস্বাদু। কিন্তু অসংখ্য নুডলস ডিশের, বিশেষ করে নুডলস স্যুপের মধ্যে যেটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, তা হলো লানঝাউ বিফ নুডলস স্যুপ।
সুস্বাদু, স্বচ্ছ ঝোল, পাতলা করে কাটা গরুর মাংস, নরম চায়নিজ মুলার ফালি, প্রচুর ধনেপাতা ও পেঁয়াজ কলি, গাঢ় লাল মরিচের তেল এবং হাতে তৈরি নুডলস দিয়ে রান্না করা হয় লানঝাউ বিফ নুডলস স্যুপ।
উপকরণ
৪ পাউন্ড গরুর মাংস, ১ কেজি গরুর হাঁটুর মাংস, অর্ধেক ভাজা মুরগি, ১০ কাপ পানি, ১ লিটার চিকেন স্টক, স্বাদ অনুযায়ী লবণ, ছোট চায়নিজ মুলার অর্ধেক, ১ পাউন্ড তাজা বা শুকনো সাদা নুডলস, গরম মরিচের তেল, পেঁয়াজ কলি, ধনেপাতা।
মসলা মিশ্রণের জন্য
৭টি তারকা মৌরি, ১২টি লবঙ্গ, ১টি দারুচিনি, ৫টি তেজপাতা, ৬টি বড় স্যান্ড জিঞ্জারের টুকরো, দেড় চা-চামচ মৌরি বীজ, ১ চা-চামচ জিরা বীজ, ২ চা-চামচ সিচুয়ান গোলমরিচ, দেড় চা-চামচ সাদা গোলমরিচ, ৫টি লিকোরিস মূলের টুকরো, ৩টি শুকনো কমলার খোসা, ১টি কালো এলাচি।
গরম মরিচের তেলের জন্য
এক কাপের ৪ ভাগের ৩ ভাগ তেল, ২টি তারকা মৌরি, ছোট দারুচিনির অর্ধেক, আধা চা-চামচ সিচুয়ান গোলমরিচ, ৩ টেবিল চামচ লাল মরিচ গুঁড়া, ১ চা-চামচ লবণ, সামান্য চিনি।
প্রস্তুত প্রণালি
মাংসের হাড়গুলো ধুয়ে নিন। ৪০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় বেকিং শিটে ৪৫ মিনিট বেক করে নিন। একটি বড় পাত্রে পানি ফুটিয়ে তাতে গরুর হাঁটুর মাংস এবং মুরগির মাংস যোগ করুন। সবকিছু আবার ফুটতে দিন। একবার ফুটে উঠলে হাঁটুর মাংস এবং মুরগি বের করে নিয়ে পানি ফেলে দিন এবং পাত্রটি পরিষ্কার করে নিন।
এরপর গরুর হাঁটুর মাংস এবং মুরগি আবার পাত্রে দিন। সঙ্গে বেক করে নেওয়া হাড়। এর সঙ্গে আরও ১০ কাপ পানি এবং ৪ কাপ চিকেন স্টক যোগ করুন। মসলার সব উপকরণ একত্র করে একটি পাতলা কাপড়ে পুঁটলি করে শক্তভাবে বেঁধে মসলার মিশ্রণ তৈরি করুন। এটি পাত্রে রেখে দিন। এরপর পাত্রে পরিমাণমতো লবণ দিয়ে সবকিছু ফুটতে দিন।
একবার ফুটে উঠলে আঁচ কমিয়ে দিয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে সেদ্ধ হতে দিন। ২ ঘণ্টা পরে গরুর হাঁটুর মাংস বের করে সরিয়ে রাখুন। বাকি অংশে কাটা মুলা যোগ করে আরও ঘণ্টাখানেক সেদ্ধ হতে দিন। তারপর মসলার ব্যাগ, মুরগির হাড় বের করে ফেলে দিন। ঝোলে লবণের স্বাদ নিন এবং প্রয়োজন হলে মসলা সমন্বয় করুন। এতে স্যুপের বেজ তৈরি হয়ে যাবে।
উপকরণগুলো সেদ্ধ হওয়ার সময় মরিচের তেল তৈরি করে ফেলুন। একটি ছোট পাত্রে তেল, তারকা মৌরি, দারুচিনি এবং সিচুয়ান গোলমরিচ নিন। খুব কম আঁচে সবকিছু ধীরে ধীরে ১৫ মিনিট একসঙ্গে ভুনে নিন। একটি ছাঁকনি চামচ দিয়ে মসলাগুলো তেল থেকে আলাদা করে নিন। এরপর প্রায় ৫ মিনিট তেল ঠান্ডা করে তাতে মরিচগুঁড়া যোগ করে সেই হালকা গরম তেলে ধীরে ধীরে ভুনে নিন; যতক্ষণ না খুব সুগন্ধ ছড়ায়। লাল হয়ে গেলে তাতে লবণ ও চিনি মেশাতে হবে।
একবার ঝোল ও মরিচের তেল তৈরি হয়ে গেলে, আলাদা পাত্রে প্যাকেটের নির্দেশ অনুযায়ী নুডলস রান্না করুন। সেদ্ধ নুডলস ৬টি বাটিতে ভাগ করুন। ঠান্ডা হওয়া গরুর হাঁটুর মাংস পাতলা করে কেটে নুডলসের ওপর সাজান। এরপর তাতে একে একে ঝোল, মুলা, এক চামচ গরম মরিচের তেল এবং এক মুঠো করে কুচি করা পেঁয়াজ কলি এবং ধনেপাতা যোগ করে পরিবেশন করুন।

ইয়াইলা চোর্বাসি, তুরস্ক
তুরস্কের স্যুপের নাম ইয়াইলা চোর্বাসি। এর প্রধান উপকরণ সেদ্ধ চাল বা বার্লি। এর সঙ্গে যোগ করা হয় দই। বিশ্বাস করা হয়, এটি শীতকালে সর্দি প্রতিরোধ করে; কিছু তুর্কি হাসপাতালে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের দই স্যুপ পরিবেশন করা হয়।
শুকনো পুদিনা গুঁড়া দইয়ের হালকা টক স্বাদকে ভারসাম্যপূর্ণ করে তোলে। তাজা পাউরুটির সঙ্গে এটি পরিবেশন করুন।
উপকরণ
বাসমতী বা জেসমিনসহ যেকোনো ধরনের সাদা চাল, গ্রিক দই বা সাধারণ দই, স্যুপ ঘন করতে ডিম ও ময়দার সংমিশ্রণ, শুকনো পুদিনাপাতার গুঁড়া।
প্রস্তুত প্রণালি
যে চাল ব্যবহার করবেন, স্বাভাবিকের চেয়ে তাতে বেশি পানি দিয়ে প্রথমে নরম করে ভাত রান্না করুন। পানি ও ভাত এই স্যুপের ভিত্তি। একটি বাটিতে দই, ডিম, ময়দা ও লবণ ভালো করে মিশিয়ে নিন। পানি কমে গেলে ভাতে আরও পানি যোগ করুন এবং ভালোভাবে নাড়ুন। হয়ে গেলে নামিয়ে নিন। এরপর সুবিধামতো পাত্র নিয়ে ধীরে ধীরে ভাত ও পানি দই ও ডিমের মিশ্রণে যোগ করুন এবং ভালোভাবে নাড়তে থাকুন। এরপর এই পুরো মিশ্রণ আবারও গরম পানিতে দিয়ে মাঝারি আঁচে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে ফুটতে দিন। এ সময়েও মাঝে মাঝে নাড়তে থাকুন। চেখে দেখুন। লাগলে প্রয়োজনে আরও লবণ যোগ করুন।
একটি ছোট প্যানে মাখন গলিয়ে সুগন্ধ বের হওয়া পর্যন্ত শুকনো পুদিনা সেদ্ধ করে নিন। তারপর এটি স্যুপে যোগ করুন এবং ভালোভাবে নাড়ুন। তারপর নামিয়ে পরিবেশন করা যাবে।

ভোরের দিকে ঘরটা এতই গরম হয়ে গিয়েছিল যে গোসল না করার মুড থেকে ধাপ করে গোসল করার মুডে চলে আসলাম। সাড়ে ছয়টার দিকে গরমে ঘুম ভেঙে গেল। দুজনেরই। খুব অস্থির লাগছিল বলে গোসল সেরে নিলাম। অতি অবশ্যই গরম
০২ নভেম্বর ২০২২
শীতের দিনে ত্বকের সাধারণ সমস্যার একটি হলো ফাটা গোড়ালি। সাধারণত যাঁদের বয়স ত্রিশ বা তার বেশি, তাঁরা ত্বকের অতিরিক্ত মরা কোষ ও ফাটা গোড়ালির সমস্যায় বেশি ভোগেন। ফলে দেখা যায়, এক সপ্তাহ আগেই হয়তো পারলার থেকে পেডিকিউর করে এসেছেন, কিন্তু সপ্তাহ পার হতে না হতেই আবার পায়ের গোড়ালির ত্বক পুরু হয়ে শক্ত হয়ে...
২ ঘণ্টা আগে
রোজ শ্যাম্পু করার পর বোতলজাত যে কন্ডিশনার আমরা ব্যবহার করি; সেগুলোর ব্যবহার করলেই যে চুল কোমল, সুন্দর ও মসৃণ থাকবে, এ কথা ভাবাটা বোকামি। চুলের সার্বিক সুস্থতার জন্য এই ঋতুতে কিছু ঘরোয়া ডিপ কন্ডিশনিং প্যাক তৈরি করেও চুলে ব্যবহার করতে হবে। এতে পুরো শীতে চুল থাকবে নরম, মসৃণ ও জেল্লাদার। দেখে নিন...
৪ ঘণ্টা আগে
সঞ্চয় করার দক্ষতা নিয়ে আজ লোকে আপনার প্রশংসা করবে। তবে সাবধান! কিপটেমি আর সঞ্চয়ের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। বন্ধুদের ট্রিট দেওয়ার সময় হুট করে ‘মানিব্যাগ ভুলে রেখে এসেছি’ বা ‘আমার নেট কাজ করছে না’ বলার পুরোনো কৌশলটি আজ বন্ধুদের কাছে ধরা পড়ে যেতে পারে।
৫ ঘণ্টা আগে