Ajker Patrika

ব্যবসায় ফেসবুক গ্রুপের গুরুত্ব, খুলবেন কীভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রথমে স্মার্টফোন থেকে ফেসবুকে প্রবেশ করুন। ছবি: এক্সপোজার ডট কম
প্রথমে স্মার্টফোন থেকে ফেসবুকে প্রবেশ করুন। ছবি: এক্সপোজার ডট কম

ডিজিটাল যুগে মানুষদের একত্রিত করার জন্য শক্তিশালী মাধ্যমে হয়ে উঠেছে ফেসবুক। তবে যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চান বা একটি কমিউনিটি তৈরি করতে চান, তবে ফেসবুক গ্রুপ একটি অত্যন্ত কার্যকরী টুল। এ ছাড়া ফেসবুক গ্রুপ ব্যবসার জন্যও শক্তিশালী টুল হিসেবে কাজ করতে পারে।

ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে যেকোনো সদস্য নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন, আলোচনা করতে পারেন ও একে অপরের সাহায্য নিতে পারেন। এটি একটি নিরাপদ ও বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করে, যা গ্রুপ সদস্যদের মধ্যে আরও সহযোগিতা ও পারস্পরিক সহমর্মিতা তৈরি করে।

ফেসবুক গ্রুপ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যবসা ও সংগঠনগুলো তাদের গ্রাহক ও সম্ভাব্য গ্রাহকদের বিভিন্ন পণ্য ও ইভেন্ট বা আপডেট সম্পর্কে জানাতে ফেসবুক গ্রুপ ব্যবহার করে।

ব্যবসায় ফেসবুক গ্রুপের গুরুত্ব

কমিউনিটি গঠন: আপনি যদি কোনো পছন্দের ফলোয়ার নিয়ে একটি কমিউনিটি তৈরি করতে চান, ফেসবুক গ্রুপ আপনার জন্য আদর্শ। এখানে সদস্যরা নিজেদের মতামত শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরকে সাহায্য করতে পারেন।

ব্যবসা বা ব্র্যান্ড প্রচারণা: আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের জন্য ফেসবুক গ্রুপ একটি শক্তিশালী টুল হতে পারে। পণ্য ও সেবা সম্পর্কে আলোচনা ও পণ্যের আপডেট সম্পর্কে শেয়ার করার কাজ গ্রুপের মাধ্যমে সহজ হয়ে ওঠে।

গ্রাহক সম্পর্ক উন্নয়ন: ফেসবুক গ্রুপ গ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের একটি চমৎকার মাধ্যম। গ্রাহকেরা সহজে প্রশ্ন করতে পারেন, সমাধান পেতে পারেন এবং আপনার পণ্য বা সেবার বিষয়ে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। এটি আপনার ব্যবসার প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্য তৈরি করতে সহায়তা করে।

ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর তৈরি: গ্রুপের সদস্যরা যদি আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি আস্থা অনুভব করেন, তাহলে তাঁরা স্বেচ্ছায় আপনার পণ্য বা সেবা প্রচারে সহায়তা করতে পারেন। তাঁরা আপনার ব্র্যান্ডের অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করবেন এবং আপনার ব্যবসা আরও বিস্তৃত হতে সহায়তা করবেন।

পণ্য বা সেবার জন্য ফিডব্যাক নেওয়া: গ্রুপের সদস্যরা সরাসরি তাঁদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারবেন, যা থেকে আপনি আপনার পণ্য বা সেবা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ফিডব্যাক পেতে পারেন।

প্রচার ও মার্কেটিং: গ্রুপে আপনি নতুন পণ্য বা সেবার খবর, ডিসকাউন্ট, বিশেষ অফার ইত্যাদি শেয়ার করতে পারেন। এতে আপনার গ্রাহকেরা দ্রুত সেই তথ্য পেয়ে যাবেন এবং আপনি তাঁদের কাছ থেকে ভালো প্রতিক্রিয়া পেতে পারেন।

নেটওয়ার্কিং: পেশাগত জীবনে যাঁদের সঙ্গে সংযোগ গড়তে চান, তাঁদের জন্য ফেসবুক গ্রুপ একটি কার্যকরী উপায় হতে পারে। এখানে আপনি একই পেশার মানুষের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন, অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন ও নতুন সুযোগ খুঁজে পেতে পারেন।

ফেসবুক গ্রুপ খুলবেন যেভাবে

১. প্রথমে স্মার্টফোন থেকে ফেসবুকে প্রবেশ করুন।

২. এবার ডান পাশের ওপরের দিকে থাকা প্রোফাইল ছবির ওপর ট্যাপ করুন।

৩. এখন ‘গ্রুপস’ অপশনটি খুঁজে বের করুন ও এতে ট্যাপ করুন।

৪. এবার ‘ক্রিয়েট আ গ্রুপ’ অপশনে ট্যাপ করুন।

৫. গ্রুপের নাম লেখার টেক্সট বক্সে গ্রুপের নাম টাইপ করুন।

৬. এখন ‘চুজ প্রাইভেসি’ লেখার পাশে নিম্নমুখী তীরে ট্যাপ করুন।

গ্রুপের প্রাইভেসি নির্বাচনের জন্য পাবলিক বা প্রাইভেট অপশনে ট্যাপ করুন। এবার ‘ডান’ অপশনে ট্যাপ করুন।

৭. নাম ও প্রাইভেসি সেট করার পর নিচের দিকে থাকা ‘ক্রিয়েট বাটনে’ ট্যাপ করুন।

গ্রুপটি এখন ‘শেয়ার গ্রুপ’ অপশনের মাধ্যমে অন্য গ্রুপের সঙ্গে শেয়ার করতে পারবেন। এ ছাড়া ই–মেইলের মাধ্যমে গ্রুপে যুক্ত হওয়ার জন্য আহ্বান জানাতে পারবেন। সেই সঙ্গে নিচের দিকে স্ক্রল করে ফেসবুক বন্ধুতালিকা থেকে বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানাতে পারবেন।

৮. আমন্ত্রণ জানানো শেষ হলে ওপরের ডান দিকে থাকা ‘নেক্সট’ বাটনে ট্যাপ করুন।

৯. পরের পেজে গ্রুপের একটি কভার ছবি যুক্ত করতে পারবেন। এ জন্য ‘এডিট’ বাটনে ট্যাপ করুন।

১০. এখন ‘আপলোড ফটো’ অপশনে ট্যাপ করুন। এবার ফোনের গ্যালারি থেকে যেকোনো ছবির নির্বাচন করুন।

১১. ওপরের ডান পাশে থাকা ‘সেভ’ বাটনে ট্যাপ করুন।

১২. এখন ‘নেক্সট’ বাটনে ট্যাপ করুন।

১৩. পরের পেজে গ্রুপটি সম্পর্কে কিছু লিখুন।

১৪. এবার নতুন গ্রুপের জন্য কোনো পোস্ট তৈরি করতে পারেন। পোস্ট তৈরি না করতে চাইলে এখন ডান বাটনে ট্যাপ করুন।

এভাবে নতুন একটি গ্রুপ তৈরি হয়ে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কেনাকাটার আসক্তি দূর করবেন যেভাবে

ফিচার ডেস্ক
ছবি: ফ্রিপিক
ছবি: ফ্রিপিক

কেনাকাটা করতে সবাই ভালোবাসে। নতুন জামা, দরকারি জিনিস বা পছন্দের কিছু কিনলে মন ভালো হয়, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু যখন কেউ প্রয়োজন না থাকলেও বা টাকা নেই জেনেও বারবার কেনাকাটা করতে থাকে, তখন সেটি আর শখ থাকে না। তখন সেটি কেনাকাটার আসক্তিতে পরিণত হয়।

এই সমস্যা মানুষ বুঝতে পারে। কেনাকাটা করা ঠিক হচ্ছে না জেনেও নিজেকে থামাতে পারে না। ধীরে ধীরে এতে আর্থিক চাপ, ঋণ আর মানসিক অশান্তি বাড়তে থাকে।

কেনাকাটার আসক্তি আসলে কী?

কিছু কিনলে হঠাৎ আনন্দ অনুভব করেন অনেকে। সেই আনন্দ আবার পেতে বারবার কেনাকাটা করা একসময় অভ্যাসে পরিণত হয়। কেউ নির্দিষ্ট জিনিসে আসক্ত হয় যেমন জামাকাপড়, গয়না, মোবাইল বা প্রসাধনী। আবার কেউ যা চোখে পড়ে তাই কিনে ফেলে। যেমন খাবার, অপ্রয়োজনীয় জিনিস, এমনকি জমি বা শেয়ারও।

অনেক সময় মানসিক চাপ, দুঃখ, একাকিত্ব বা রাগ থেকে মুক্তি পেতেই মানুষ কেনাকাটার দিকে ঝোঁকে। কিন্তু কেনাকাটার আনন্দটা খুব অল্প সময়ের হয়। পরে আফসোস হয় এবং ঋণের বোঝা বাড়ে।

ছবি: ফ্রিপিক
ছবি: ফ্রিপিক

কী কী লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন?

  • কেনাকাটার আসক্তি অনেক সময় গোপন থাকে। বাইরে থেকে বোঝা নাও যেতে পারে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ আছে—
  • প্রায়ই কেনাকাটার চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকে
  • মন খারাপ বা চাপের সময় বাজারে ঢুকে পড়া
  • প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও জিনিস কেনা
  • কেনা জিনিস ব্যবহার না করেই পড়ে থাকা
  • ক্রেডিট কার্ডের সীমা বারবার শেষ হয়ে যাওয়া
  • পুরোনো ঋণ শোধ না করেই নতুন কার্ড নেওয়া
  • কেনাকাটার পর অল্প সময় খুব আনন্দ পাওয়া
  • পরে অনুশোচনা হওয়া, কিন্তু আবার একই কাজ করা
  • টাকা বা কেনাকাটার কথা লুকানো, মিথ্যা বলা
  • বারবার চেষ্টা করেও কেনাকাটা কমাতে না পারা

এই লক্ষণগুলো দীর্ঘদিন চললে সেটি গুরুতর সমস্যায় রূপ নিতে পারে।

ছবি: ফ্রিপিক
ছবি: ফ্রিপিক

এর সমাধান কী?

কেনাকাটা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। কারণ, জীবনের জন্য কেনাকাটা দরকার। তাই সমাধান হলো নিয়ন্ত্রণ শেখা।

  • অনেক ক্ষেত্রে শুরুতে—
  • কার্ড বা নগদ টাকার ব্যবহার সীমিত করা
  • পরিবারের কাউকে সাময়িকভাবে টাকা দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া

খুব কাজে আসে কাউন্সেলিং বা আচরণগত থেরাপি।

থেরাপির মাধ্যমে মানুষ শেখে—

  • হঠাৎ কেনাকাটার ইচ্ছা কীভাবে থামাতে হয়
  • কোন পরিস্থিতিতে কেনাকাটা করতে মন চায় তা চিনতে
  • কেনাকাটার বদলে চাপ সামলানোর নতুন উপায়
  • সমস্যার পেছনে লুকানো মানসিক কষ্ট বুঝতে

সহায়তা কোথায় পাওয়া যায়?

অনেক দেশে এবং অনলাইনে কেনাকাটার নেশা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বিভিন্ন ধরনের সহায়তা ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে অর্থ ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ কর্মসূচি মানুষকে আয়-ব্যয়ের হিসাব করা, বাজেট তৈরি করা এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখায়। পাশাপাশি পুনরুদ্ধার প্রোগ্রাম রয়েছে, যেখানে একই সমস্যায় ভোগা মানুষ একে অপরের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। এতে একাকিত্ব কমে এবং মানসিক সাহস পাওয়া যায়। আর যদি ঋণের পরিমাণ খুব বেশি হয়ে যায়, তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে ঋণ পরামর্শক সংস্থা বা অভিজ্ঞ আর্থিক পরামর্শকের সহায়তা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে ওঠে।

ভবিষ্যৎ কী?

যদি সময়মতো সাহায্য নেওয়া যায়, তাহলে এই সমস্যা থেকে বের হওয়া সম্ভব। মাঝেমধ্যে আবার পুরোনো অভ্যাস ফিরে আসতে পারে, এটা স্বাভাবিক। তবে সঠিক সহায়তা থাকলে আবার নিয়ন্ত্রণে ফেরা যায়।

কেনাকাটার আসক্তি ধীরে ধীরে মানুষকে ঋণ, দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের দিকে নিয়ে যায়। শুরুতে বিষয়টি তেমন গুরুতর মনে না হলেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি জীবনের ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে। তবে সচেতনতা, পরিবার ও বন্ধুদের সহায়তা এবং প্রয়োজনে পেশাদার সাহায্য নিলে এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে এসে আবার সুস্থ, নিয়ন্ত্রিত ও শান্ত জীবনে ফিরে আসা সম্ভব।

সূত্র: হেলথলাইন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বর্ষবরণে যেসব শুভ রঙে নিজেকে সাজাতে পারেন

ফারিয়া রহমান খান 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ১৭
২০২৬ সালে নিজের ব্যক্তিত্বকে দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করতে বেগুনি রঙের পোশাক হতে পারে এক অনবদ্য পছন্দ। ছবি সৌজন্য: ওয়্যারহাউজ
২০২৬ সালে নিজের ব্যক্তিত্বকে দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করতে বেগুনি রঙের পোশাক হতে পারে এক অনবদ্য পছন্দ। ছবি সৌজন্য: ওয়্যারহাউজ

পুরোনোকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে বরণ করে নেওয়ার ব্যাপারটি সত্যিই বিশেষ। একটি বছর ঘুরে যখন নতুন বছর আসে, তখন আমাদের মনে জাগে একরাশ প্রত্যাশা। এই নতুন সময়ে আমরা বেশ কিছু ছোট ছোট কাজ করে নিজের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করি। বছরের প্রথম দিন প্রতিটি কাজই আমরা এমনভাবে করার চেষ্টা করি যাতে পুরো বছরে তার একটা রেশ থাকে। পোশাকের রং নির্বাচনের বেলায়ও কিন্তু এ কথাটা খাটে। জ্যোতিষশাস্ত্র মতে, আসছে বছর অর্থাৎ ২০২৬ সালে পৃথিবীর ওপর সূর্যের প্রভাব থাকবে। ফলে কয়েকটি শুভ রঙের পোশাক আলমারিতে রাখলে পুরো বছরটাই চনমনে কাটবে বলে আশা করা হচ্ছে। কয়েকটি বিশেষ রংকে শক্তি, সুরক্ষা ও সমৃদ্ধির প্রতীক বলে মনে করা হয়। তবে পোশাকের রং নির্বাচনের মাধ্যমেই যে আপনি সফল হয়ে যাবেন, বিষয়টা এমন নয়। বরং, এই প্রতীকী ভঙ্গিটি আপনার মানসিক সংকল্পকে দৃঢ় করবে। ২০২৬ সালকে বরণ করতে যে ৭টি রং আপনার জীবনে শুভ বার্তা নিয়ে আসতে পারে, তা নিয়েই আজকের এই ফিচার।

নতুন বছরে লাল রঙের পোশাক আপনার মধ্যে সাহস ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনবে। ছবি সৌজন্য: ওয়্যারহাউজ
নতুন বছরে লাল রঙের পোশাক আপনার মধ্যে সাহস ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনবে। ছবি সৌজন্য: ওয়্যারহাউজ

যেসব রঙের পোশাক আলমারিতে রাখতে পারেন

লাল

জীবনীশক্তি ও সুরক্ষার প্রতীক লাল রংকে এশিয়ান সংস্কৃতিতে বিশেষ করে চীনে সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে মনে করা হয়। বিয়ে থেকে শুরু করে নববর্ষ—সব শুভ উপলক্ষেই লাল রং প্রাধান্য পায়। এটি নেতিবাচকতা ও অশুভ শক্তিকে দূরে রাখার শক্তিশালী ঢাল হিসেবেও কাজ করে। এই নতুন বছরে লাল রঙের পোশাক আপনার মধ্যে সাহস ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনবে।

সোনালি

প্রাচুর্য ও ধারাবাহিক সাফল্যের প্রতীক এই রং যুগ যুগ ধরে স্বর্ণ বা মূল্যবান ধাতুর সমার্থক, যা সরাসরি সম্পদ ও ক্ষমতার জানান দেয়। নতুন বছরে যারা ক্যারিয়ার বা ব্যবসায় বিশেষ উন্নতি ও সমৃদ্ধি খুঁজছেন, তাঁদের জন্য সোনালি রঙের পোশাক হবে আত্মবিশ্বাসের এক চমৎকার উৎস।

রুপালি

মানসিক স্বচ্ছতা এবং অন্তর্দৃষ্টির প্রতীক রুপালি রঙের সঙ্গে চাঁদের স্নিগ্ধ আভার সম্পর্ক রয়েছে। অন্ধকারে যেমন চাঁদের আলো পথ দেখায়, তেমনই রুপালি রং প্রতিকূলতার মধ্যেও সঠিক পথ দেখায় বলে মনে করা হয়। ভারসাম্যপূর্ণ ও শান্ত নতুন বছরের জন্য রুপালি রঙের পোশাক বেছে নেওয়া হতে পারে বুদ্ধিমানের কাজ।

প্রকৃতির মতোই সবুজ রং নবজীবন, বিকাশ ও সুস্থতার প্রতীক। ছবি সৌজন্য: ওয়্যারহাউজ
প্রকৃতির মতোই সবুজ রং নবজীবন, বিকাশ ও সুস্থতার প্রতীক। ছবি সৌজন্য: ওয়্যারহাউজ

সবুজ

প্রকৃতির মতোই সবুজ রং নবজীবন, বিকাশ ও সুস্থতার প্রতীক। এটি হঠাৎ আসা কোনো সৌভাগ্য নয়, বরং ধারাবাহিক পরিশ্রমের মাধ্যমে পাওয়া টেকসই সাফল্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। যাঁরা নতুন বছরে নিজের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার ওপর জোর দিতে চান এবং জীবনে স্থিতিশীল সমৃদ্ধি আনতে চান, তাঁদের পোশাকে সবুজের ছোঁয়া থাকা জরুরি।

নীল

মধ্যপ্রাচ্য ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে হাজার বছর ধরে নীল রংকে অশুভ দৃষ্টি ও ঈর্ষা থেকে বাঁচার এক শক্তিশালী কবচ হিসেবে দেখা হয়। এ ছাড়া নীল রঙের মাহাত্ম্য মানসিক প্রশান্তি, ভারসাম্য ও স্থিরতার ধারক হিসেবেও রয়েছে। আধুনিক জীবনের চরম অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তা কাটিয়ে যাঁরা নতুন বছরে স্থিতিশীল থাকতে চান, নীল রঙের পোশাক হবে তাঁদের জন্য এক ধরনের আশ্রয়ের মতো, যা আপনাকে সুরক্ষার অনুভূতি দিয়ে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।

সাদা

সাদা রঙের দুটি বিশেষ দিক রয়েছে। এটি যেমন বিদায়কে সম্মান জানায়, তেমনই নতুনের পবিত্রতাকেও তুলে ধরে। পুরোনো বছরের সব ক্লান্তি মুছে ফেলে যারা একেবারে নতুন করে জীবন শুরু করতে চান, সাদা রং তাদের জন্য সেরা। এটি যেন জীবনের এক ‘ব্ল্যাঙ্ক পেজ’ বা সাদা পাতার মতো, যেখানে আপনি নিজের মতো করে নিজের জীবনের গল্প লিখতে পারবেন।

বেগুনি

ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, বেগুনি রং একসময় সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। এটি শুধু রাজপরিবার, সম্রাট এবং উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের পোশাকের জন্যই বরাদ্দ থাকত। এর মূল কারণ ছিল এই রঙের দুষ্প্রাপ্যতা এবং উচ্চমূল্য। এখনো এই রংকে ক্ষমতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর ব্যক্তিগত আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবেই দেখা হয়। ২০২৬ সালে নিজের ব্যক্তিত্বকে দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করতে এই রং হতে পারে এক অনবদ্য পছন্দ।

সূত্র: গ্ল্যামার ও অন্যান্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কফি দিয়ে তৈরি ডেজার্ট দিয়ে শুরু হোক নতুন বছর

ফিচার ডেস্ক
‘কেটো তিরামিসু মুস’ হতে পারে বিকেলের নাশতা বা ডিনারের পর এক দুর্দান্ত ডেজার্ট। ছবি: পেক্সেলস
‘কেটো তিরামিসু মুস’ হতে পারে বিকেলের নাশতা বা ডিনারের পর এক দুর্দান্ত ডেজার্ট। ছবি: পেক্সেলস

আর মাত্র এক দিন পর আসছে নতুন বছর। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে আমরা কতই না আয়োজন করে থাকি। এর একটি অংশের আয়োজন হয় রান্নাঘরে। অনেক কিছু না হোক, ব্যস্ত জীবন থেকে একটু সময় বের করে প্রিয়জনের সঙ্গে প্রিয় খাবার খেয়ে হলেও আমরা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ভালোবাসি। কোনো কিছুর শুরু ভালো দিয়ে করতে চাইলে মিষ্টি খাওয়া ভালো। অনেকে এই ধারণায় এখনো বিশ্বাসী। কফি ও মিষ্টি খাবার খেতে যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য থাকছে কফি দিয়ে তৈরি কিছু ডেজার্টের রেসিপি।

কফি মাফিন কেক

স্বাস্থ্যকর এবং দারুণ স্বাদের কফি মাফিন হতে পারে আপনার উদ্‌যাপনের সঙ্গী। এর জন্য দরকার—

১ কাপ সাধারণ ময়দা

আধা চা চামচ বেকিং সোডা

এক চিমটি লবণ

স্বাদ বাড়াতে সামান্য দারুচিনি গুঁড়া

১ টেবিল চামচ এসপ্রেসো বা কফি পাউডার

কোয়ার্টার কাপ টক দই

মিষ্টি প্রয়োজনমতো।

কোয়ার্টার কাপ কড়া লিকারের কফি

কোয়ার্টার কাপ সোডা ওয়াটার বা স্পার্কলিং ওয়াটার

মাখন গলিয়ে তাতে কফি বিন ভিজিয়ে রেখে কফি বাটার (ঐচ্ছিক) তৈরি করে নিন।

কফি দিয়ে তৈরি চটজলদি ডেজার্ট দিয়ে স্বাগত জানাতে পারেন নতুন বছরকে। ছবি: পেক্সেলস
কফি দিয়ে তৈরি চটজলদি ডেজার্ট দিয়ে স্বাগত জানাতে পারেন নতুন বছরকে। ছবি: পেক্সেলস

প্রস্তুত প্রণালি

ওভেন ২২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (৪২৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় প্রি-হিট করতে দিন। মাফিন টিনে সামান্য তেল বা মাখন ব্রাশ করে নিন। একটি বড় পাত্রে আটা, বেকিং সোডা, লবণ, দারুচিনি গুঁড়া এবং কফি পাউডার একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে নিন। আলাদা একটি পাত্রে টক দই, মধু এবং তৈরি করা কড়া লিকারের কফি মিশিয়ে নিন। শুকনো উপকরণের মিশ্রণে দই ও কফির মিশ্রণটি ঢালুন। এরপর এতে সোডা ওয়াটার যোগ করুন। খুব দ্রুত হালকা হাতে মেশান (বেশি ঘুঁটবেন না)। দেরি না করে দ্রুত ব্যাটারটি মাফিন টিনে ঢালুন। প্রথমে ২২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ৫ মিনিট বেক করুন। এরপর তাপমাত্রা কমিয়ে ১৯০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (৩৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) করে আরও ৮-১০ মিনিট বেক করুন। একটি কাঠি মাফিনের ভেতর ঢুকিয়ে দেখুন, কাঠি পরিষ্কার বের হয়ে এলে বুঝবেন, মাফিন তৈরি। মাফিনগুলো ঠান্ডা হলে ওপরে কফি-মাখন বা ক্রিম চিজ লাগিয়ে সকালের নাশতায় উপভোগ করুন।

স্বাস্থ্যকর এবং দারুণ স্বাদের কফি মাফিন হতে পারে আপনার উদ্‌যাপনের সঙ্গী। ছবি: পেক্সেলস
স্বাস্থ্যকর এবং দারুণ স্বাদের কফি মাফিন হতে পারে আপনার উদ্‌যাপনের সঙ্গী। ছবি: পেক্সেলস

চকলেট কফি মউজ

মাত্র ৫টি উপকরণ দিয়ে কোনো জেলাটিন বা হেভি ক্রিম ছাড়াই শুধু ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করে তৈরি করতে পারেন কফি মউজ। উপকরণসমূহ—

১. ডার্ক চকলেট (৭০-৮০% কোকো হলে ভালো)।

২. ঘরোয়া তাপমাত্রায় থাকা ডিমের সাদা অংশ (ফ্রিজ থেকে ৩০ মিনিট আগে বের করে রাখা)।

৩. ১ টেবিল চামচ ম্যাপেল সিরাপ (মিষ্টি ও ক্যারামেল ফ্লেভারের জন্য)।

৪. আধা কাপ কড়া লিকারের কফি

৫. সাজানোর জন্য টাটকা বা ফ্রোজেন বেরি বা স্ট্রবেরি

প্রস্তুত প্রণালি (মাত্র ১০ মিনিটে)

একটি সস প্যানে অল্প আঁচে চকলেট গলিয়ে নিন। এতে ম্যাপেল সিরাপ ও কফি দিয়ে নাড়ুন। মসৃণ হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে রাখুন। একটি পরিষ্কার কাচ বা মেটালের পাত্রে ডিমের সাদা অংশগুলো ইলেকট্রিক হুইস্ক দিয়ে বিট করুন, যতক্ষণ না এটি ঘন সাদা ফেনার মতো হয়। এবার গলানো চকলেটের মিশ্রণটি অল্প অল্প করে ডিমের সাদা অংশে যোগ করুন। একটি স্প্যাচুলা দিয়ে আলতো হাতে চকলেট এবং ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে নিন। খুব জোরে নাড়বেন না, তাহলে ফুরফুরে ভাব নষ্ট হয়ে যাবে। মিশ্রণটি ছোট ছোট গ্লাস বা কাপে ভাগ করে ঢালুন। ফ্রিজে অন্তত ৩০ মিনিট রাখুন। পুরো রাত রাখলে আরও ভালো টেক্সচার আসবে।

মাত্র ৫টি উপকরণ দিয়ে কোনো জেলাটিন বা হেভি ক্রিম ছাড়াই শুধু ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করে তৈরি করতে পারেন কফি মউজ। ছবি: দ্য বিগ ম্যান্স ওয়ার্ল্ড
মাত্র ৫টি উপকরণ দিয়ে কোনো জেলাটিন বা হেভি ক্রিম ছাড়াই শুধু ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করে তৈরি করতে পারেন কফি মউজ। ছবি: দ্য বিগ ম্যান্স ওয়ার্ল্ড

কেটো তিরামিসু মুস

তিরামিসু নিয়ে কিছু বিতর্ক আছে। তার মধ্যে একটি হলো তিরামিসু কি আসলে কেক? এর সহজ উত্তর হলো, সঠিক প্রণালিতে তিরামিসু তৈরি করে খেয়ে বোঝা। কেটো ডায়েট যাঁরা অনুসরণ করছেন, তাঁদের জন্য ‘কেটো তিরামিসু মুস’ হতে পারে বিকেলের নাশতা বা ডিনারের পর এক দুর্দান্ত ডেজার্ট। এটি যেমন দেখতে অভিজাত, খেতেও তেমনি ক্রিমি এবং রিচ। এসপ্রেসো কফি, মাস্কারপোন চিজ এবং কোকো পাউডারের স্তরে সাজানো এই মুসটি লো-কার্ব বা কম শর্করাযুক্ত ঘরানার।

প্রস্তুত প্রণালি

একটি বড় পাত্রে চিজ, হেভি হুইপিং ক্রিম, চিনির পরিবর্তে এরিথ্রিটল, এক চিমটি লবণ এবং এসপ্রেসো কফি একসঙ্গে নিন। একটি ইলেকট্রিক বিটার বা হ্যান্ড হুইস্ক দিয়ে মিশ্রণটিকে ততক্ষণ পর্যন্ত বিট করুন, যতক্ষণ না এটি ঘন এবং ফুরফুরে হয়ে ওঠে। এবার পরিবেশনের গ্লাস নিন। প্রথমে কিছুটা মাস্কারপোন মিশ্রণ দিন, তার ওপর সামান্য কোকো পাউডার ছিটিয়ে দিন। এভাবে কয়েকবার স্তর তৈরি করুন। সবশেষে ওপরে সামান্য এসপ্রেসো পাউডার ছিটিয়ে দিন এবং সুন্দর দেখানোর জন্য কয়েকটি কফি বিন বসিয়ে দিন। বানিয়েই পরিবেশন করতে পারেন অথবা ফ্রিজে রেখে কিছুটা ঠান্ডা করে উপভোগ করুন। যাঁরা খুব দ্রুত কিন্তু স্পেশাল কিছু তৈরি করতে চান, তাঁদের জন্য এটি পারফেক্ট। সব উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে পরিবেশনের গ্লাসে সাজিয়ে নিন এবং ওপরে কিছুটা এসপ্রেসো পাউডার ছিটিয়ে দিন। ব্যস, তৈরি হয়ে গেল চমৎকার স্বাদের এই মিষ্টি পদ। মিষ্টি, ক্রিমি এবং কফির ফ্লেভারের এই মেলবন্ধন এড়িয়ে যাওয়া সত্যিই অসম্ভব।

সূত্র: মাই শেফস এপ্রোন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেন আলফা বদলে দিচ্ছে আগামীর খাদ্যাভ্যাস

ফিচার ডেস্ক
জেন আলফা আমাদের শেখাচ্ছে খাবার পরিবারকে কাছে আনার একটি মাধ্যম, পরিবেশকে রক্ষার হাতিয়ার এবং নিজের পরিচয়ের বহিঃপ্রকাশ। ছবি: পেক্সেলস
জেন আলফা আমাদের শেখাচ্ছে খাবার পরিবারকে কাছে আনার একটি মাধ্যম, পরিবেশকে রক্ষার হাতিয়ার এবং নিজের পরিচয়ের বহিঃপ্রকাশ। ছবি: পেক্সেলস

গেল বছর থেকে জেন-জিরা গোটা বিশ্বে ব্যাপক আলোচনায়। তাদের ফ্যাশন, স্টাইল, খাবার, চলাফেরা, কথা বলা, চিন্তা, ভ্রমণ নিয়ে হয়েছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। তুলনা করতে গিয়ে কথা এসেছে অন্যান্য প্রজন্মের। এবার সেই জেন-জিদের পরের প্রজন্মের আলোচনায় আসা যাক। কারণ, ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া এই নতুন প্রজন্ম আমাদের চারপাশে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে। যাদের আমরা বলছি ‘জেন আলফা’। বয়সে ছোট হলেও এখনই তারা আমাদের কেনাকাটা, খাদ্যাভ্যাস এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে এক বিশাল পরিবর্তনের ঢেউ নিয়ে এসেছে। ২০২৯ সালের মধ্যে যখন এই প্রজন্মের একটি বড় অংশ প্রাপ্তবয়স্ক হবে, তখন বিশ্ববাজারে তাদের খরচ করার ক্ষমতা ৫.৫ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রযুক্তির সঙ্গে বেড়ে ওঠা এই প্রজন্ম কেবল মাউস বা স্ক্রিনেই দক্ষ নয়, তাদের খাবারের থালায় কী থাকবে, সেটিও তারা এখন থেকেই নিয়ন্ত্রণ করছে।

জেন আলফা আমাদের শেখাচ্ছে যে খাবার কেবল বেঁচে থাকার রসদ নয়। এটি পরিবারকে কাছে আনার একটি মাধ্যম, পরিবেশকে রক্ষার হাতিয়ার এবং নিজের পরিচয়ের বহিঃপ্রকাশ। ফার্ম থেকে টেবিল পর্যন্ত খাবারের প্রতিটি ধাপে এই সচেতন প্রজন্ম যে পরিবর্তন আনছে, তা আমাদের সবার জন্যই এক স্বাস্থ্যকর ও টেকসই ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তারা স্রেফ সস্তা বিজ্ঞাপন দেখে নয়, বরং নিজের ভালো লাগা এবং নৈতিক অবস্থান থেকেই ঠিক করছে তারা কী খাবে।

এই প্রজন্ম কেবল মাউস বা স্ক্রিনেই নয়, তাদের খাবারের থালায় কী থাকবে, সেটিও নিয়ন্ত্রণ করছে এখন থেকেই। ছবি: পেক্সেলস
এই প্রজন্ম কেবল মাউস বা স্ক্রিনেই নয়, তাদের খাবারের থালায় কী থাকবে, সেটিও নিয়ন্ত্রণ করছে এখন থেকেই। ছবি: পেক্সেলস

ছোট্ট কণ্ঠের বড় প্রভাব

আগেকার দিনে শিশুরা সাধারণত মা-বাবা যা পাতে দিতেন তাই খেত। হাতে গোনা কয়েকজন এমন হতো যারা, ‘আমি চাই’ বলার সাহস করত। তবে নিমিষেই তাদের ইচ্ছাকে দাবিয়ে দিতেন অভিভাবকেরা। জেন আলফার ক্ষেত্রে এই চিত্রটা ভিন্ন। বর্তমানে অভিভাবকেরা তাদের প্রতি অনেক বেশি নমনীয় এবং তারা সন্তানদের মতামতকে গুরুত্ব দেন। যুক্তরাজ্যের এক গবেষণা বলছে, ৬৩ শতাংশ মা-বাবা সন্তানদের পছন্দের ওপর ভিত্তি করে পরিবারের খাবারের তালিকা ঠিক করেন। ভারতেও প্রায় অর্ধেক মা-বাবা বিশ্বাস করেন যে তাঁদের সন্তানদের সিদ্ধান্তগুলো ভবিষ্যতে বড় পরিবর্তন আনবে। এটি কেবল একগুঁয়েমি নয়, নিজের ভালো-মন্দ বোঝার এক নতুন সচেতনতা। আধুনিক প্যারেন্টিং স্টাইল বা মা-বাবার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের কারণে জেন আলফা এখন অনেক বেশি স্বাধীন।

শৈশব থেকেই সুস্বাস্থ্য ও পুষ্টির পাঠ

জেন আলফা প্রজন্মের কাছে ‘গাট হেলথ’ বা পেটের সুস্থতা একটি অত্যন্ত পরিচিত বিষয়। তারা প্রিবায়োটিক পানীয় এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ স্ন্যাকসের কথা জেনেই বড় হচ্ছে। ফিটনেস ট্রেন্ডের কারণে হাই-প্রোটিন খাবারের চাহিদা বেড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় গত এক দশকে প্রোটিন নিয়ে আলোচনার হার প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। এমনকি যুক্তরাজ্যের ‘বেলি বাগস’-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলো অন্ত্রের অণুজীব বা মাইক্রোবায়োমকে ‘পোষা প্রাণীর’ মতো যত্ন নেওয়ার বিষয়টিকে গেমে রূপান্তর করেছে। ফলে ছোটবেলা থেকেই তারা বোঝে যে কোন খাবার শরীর ও মনের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। করোনা মহামারির পর থেকে পরিবারের এই স্বাস্থ্য সচেতনতা আরও বেড়েছে। ২০২৪ সালের তথ্য মতে, শিশুদের জন্য বাজারে আসা প্রতি তিনটি নতুন খাবারের একটিতে বাড়তি পুষ্টি বা নিউট্রিয়েন্টস যোগ করা হয়েছে। চীন ও যুক্তরাজ্যের অভিভাবকেরা ভিটামিন ও মিনারেল সাপ্লিমেন্টের দিকে ঝুঁকছেন, আর এই চাহিদা মেটাতে ব্র্যান্ডগুলো সাপ্লিমেন্টকে এখন ক্যান্ডি বা মুখরোচক স্ন্যাকসের মতো করে তৈরি করছে।

যুক্তরাজ্যে প্রায় অর্ধেক অভিভাবক বলছেন যে তাঁদের সন্তানেরা পরিবেশের কথা ভেবে প্রাণিজ খাবার কমিয়ে উদ্ভিজ্জ বা প্ল্যান্ট-বেজড খাবার খেতে উৎসাহিত হচ্ছে। ছবি: পেক্সেলস
যুক্তরাজ্যে প্রায় অর্ধেক অভিভাবক বলছেন যে তাঁদের সন্তানেরা পরিবেশের কথা ভেবে প্রাণিজ খাবার কমিয়ে উদ্ভিজ্জ বা প্ল্যান্ট-বেজড খাবার খেতে উৎসাহিত হচ্ছে। ছবি: পেক্সেলস

জলবায়ু সচেতনতা ও খাবারের নৈতিকতা

এই প্রজন্ম একটি জলবায়ু সংকটের মধ্যে জন্ম নিয়েছে। তাই পরিবেশের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা অনেক বেশি। তারা কেবল খাবারের স্বাদ দেখে না, তারা সেই ব্র্যান্ডের নৈতিকতা ও স্বচ্ছতাও বিচার করে। যুক্তরাজ্যে প্রায় অর্ধেক অভিভাবক বলছেন যে তাঁদের সন্তানেরা পরিবেশের কথা ভেবে প্রাণিজ খাবার কমিয়ে উদ্ভিজ্জ বা প্ল্যান্ট-বেজড খাবার খেতে উৎসাহিত হচ্ছে। ২০৫০ সাল নাগাদ যখন খাদ্যের চাহিদা ৫০ শতাংশ বাড়বে। তখন এই জেন আলফাই হয়তো ল্যাব-গ্রোন মিট (ল্যাবে তৈরি মাংস) বা জিনগতভাবে পরিবর্তিত শস্যকে স্বাভাবিক সমাধান হিসেবে গ্রহণ করবে। ইতিমধ্যে জার্মানির অর্ধেক অভিভাবক কৃত্রিমভাবে তৈরি টেকসই খাবার গ্রহণে আগ্রহী।

বৈচিত্র্যময় স্বাদ ও অভিজ্ঞতার খোঁজে

সোশ্যাল মিডিয়া এবং ফুড ডেলিভারি অ্যাপের কারণে জেন আলফার স্বাদ এখন বিশ্বজনীন। বাড়ির বাইরে না গিয়েই তারা বিশ্বের নানা প্রান্তের খাবারের স্বাদ নিচ্ছে। তাদের কাছে খাবার কেবল পেট ভরানোর মাধ্যম নয়, বরং একটি অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে চীন ও জাপানে ‘ইমারসিভ ডাইনিং’ বা গল্পের মাধ্যমে খাবার পরিবেশনের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ডিজিটাল যুগে বড় হলেও তারা বাস্তব জীবনের ছোঁয়া পেতে চায়, আর খাবার তাদের সেই সংযোগের সুযোগ করে দেয়।

বিদ্রোহী কিন্তু সচেতন

জেন আলফা পূর্ববর্তী জেন জি প্রজন্মের চেয়েও অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং স্বতন্ত্র। তারা কেবল ট্রেন্ড অনুসরণ করে না, বরং তারা নিজেদের মূল্যবোধের সঙ্গে মিলে এমন ব্র্যান্ডই পছন্দ করে। যদিও অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং শৈশবকালীন স্থূলতার মতো চ্যালেঞ্জগুলো এখনো রয়ে গেছে, তবুও আশার কথা হলো ব্র্যান্ডগুলো এখন ‘নো অ্যাডেড সুগার’ বা চিনিহীন খাবারের দিকে ঝুঁকছে। ২০২৪ সালে এ ধরনের পণ্যের হার ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

সূত্র: শোবিজ ডেইলি, ফুড নেভিগেটর

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত