ইশতিয়াক হাসান

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নিয়েছি। আজ কাজীদার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর সঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা, সেই সঙ্গে কাজী আনোয়ার হোসেন থেকে জানা তাঁর কিছু বিষয় ভাগাভাগি করছি পাঠকদের সঙ্গে।
বইয়ের জগতে প্রবেশ তাঁর কারণে
ক্লাস ফোরে-ফাইভে পড়ি। আব্বুর স্টিলের আলমারির নিচে গাদাগাদি করে রাখা ছিল অনেক বই। সেবা প্রকাশনী, ভারতীয় নানা লেখকের উপন্যাস আরও কত কী! আব্বুকে বললে চাবি দিয়ে খুলে দিতেন। তারপর নাওয়া-খাওয়া ভুলে হামলে পড়তাম বই নিয়ে। তবে আমাকে টানত সেবা প্রকাশনীর বইগুলোই। মাসুদ রানার বই থাকলেও তখন ওগুলো পড়া বারণ ছিল। তাতে কী! আরও কত্ত বই। ছয় রোমাঞ্চ, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল, কুয়াশা সিরিজের বই, জঙ্গল, শিকার-১, শিকার-২, শিকার-৩, রুদ্র প্রয়াগের চিতা, জুলভার্নের নাইজারের বাঁকে, মরু শহর—এমনই সব বই বলা চলে নতুন এক পৃথিবীর সন্ধান দিয়ে দিল আমাকে। আজ এই আধবুড়ো বয়সেও বইয়ের প্রতি আগ্রহ কমেনি একটুও। আর বইয়ের প্রতি আমার এই ভালোবাসার জন্ম, বই পড়ে পাহাড়-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর আগ্রহ সৃষ্টি—এই সবকিছু কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্যই। তিনি না থাকলে যে সেবা প্রকাশনী হতো না। আমারও বই পড়ে অন্য এক জগতে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ মিলত না।
রহস্যমানব
স্কুলে পড়ার সময় সেবার বই পড়ুয়া অনেক বন্ধুবান্ধবও জুটে যায়। আমাদের কাছে সেবার বিভিন্ন বইয়ের চরিত্রগুলোর মতো কাজী আনোয়ার হোসেনও তখন রহস্যঘেরা এক চরিত্র। আমাদের বই পড়ুয়াদের দলে এক বড় ভাই ছিলেন, নোমান ভাই। তিনি মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলতেন, আমরা পুরোপুরি বিশ্বাসও করতে পারতাম না, আবার অবিশ্বাস করতে পারতাম না। একবার যেমন বললেন, মাসুদ রানা সিরিজের বিসিআই (বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স) ঢাকায় সত্যি আছে। আর কাজী আনোয়ার হোসেন বড় একটা পদে আছেন। তবে এটা একেবারেই গোপনীয়! তাই কেউ জানে না। কাজী আনোয়ার হোসেন আমাদের কাছে এমনই এক রহস্যঘেরা মানুষ ছিলেন, আমরা তাঁর এ কথা বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম। তখন একবারও মনে হয়নি, এত গোপনীয় বিষয়টি আমাদের চেয়ে কয়েক বছরের বড় নোমান ভাই জানলেন কীভাবে?
দুরু দুরু বুকে
২০০৫-০৬ সালের ঘটনা। রহস্য পত্রিকায় লিখছি নিয়মিত। তবে তখন পর্যন্ত কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে দেখা হয়নি। রহস্য পত্রিকার অফিস ২৪/৪ সেগুনবাগিচার দোতলায়। কাজী আনোয়ার হোসেন বসেন তৃতীয় তলায়। আমার দৌড় তখন পর্যন্ত ওই দোতলা পর্যন্ত। সেখানে গিয়ে লেখা জমা দিই। আর হাকিম আংকেল (শেখ আবদুল হাকিম) ও শাহনূর ভাইয়ের (কাজী শাহনূর হোসেন) সঙ্গে গল্প করি, নতুন নতুন লেখার পরিকল্পনা করি। একদিন শাহনূর ভাইকে সাহস করে বললাম, কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে চাই। পরদিন সকালেই ডাক পড়ল। আমার মনে হলো বিসিআই চিফ রাহাত খানের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।
দোতলা থেকে তৃতীয় তলা ওঠার পথে একটি তালা মারা দরজা। দালানের এই পাশ দিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায় যেতে হলে ওই দরজা খুলেই যেতে হয়। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে শেষ পর্যন্ত দুরু দুরু বুকে ঢুকলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায়। আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। বসতে বললেন। শুরুতে কেমন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না কাজী আনোয়ার হোসেনের সামনে বসে আছি।
তারপর অনেকবারই গিয়েছি কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে। বেশির ভাগ সময় কোনো না কোনো কাজে। বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারও নিয়েছি তাঁর। তবে ওই প্রথম দিনের অনুভূতি আজও অটুট আমার মনে। এখনো মনে পড়লে কেমন ভয়-রোমাঞ্চের একটি শিহরণ খেলে যায় শরীরে।
সেই ক্যামেরা
পরের বছরের ঘটনা। তখন বনে, পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর নেশা প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে আমার ওপর। সেই সঙ্গে ছবি তোলার আগ্রহ পেয়ে বসেছে। সমস্যা হলো, ভালো ক্যামেরা নেই। একদিন কথায় কথায় শাহনূর ভাইকে বললাম, ক্যামেরা না থাকায় ভালো ছবি তুলতে পারছি না। একটা ক্যামেরা কিনতে হবে।
কয়েক দিন পরের কথা। সেবা প্রকাশনীতে গেলাম আবার। কোনো একটা লেখা নিয়ে কিংবা নিছক আড্ডা দিতে। কতক্ষণ গল্প করার পর চলে আসতে যাব, এমন সময় শাহনূর ভাই বললেন, ‘একটু দাঁড়াও।’ একটু পর ফিরে এলেন। হাতে একটা ব্যাগ। আমাকে চমকে দিয়ে ভেতর থেকে বের করলেন একটি নাইকন ক্যামেরা। বললেন, ‘আব্বাকে বলেছিলাম তোমার ছবি তোলার আগ্রহের কথা। তখন বললেন তাঁর এই ক্যামেরাটা পড়ে আছে। কী অবস্থা এটার জানেন না। চাইলে তুমি এটা নিতে পারো, যদি কোনো কাজে লাগে।’
আমার তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না, কাজীদা আমাকে তাঁর ব্যবহার করা ক্যামেরা দিয়েছেন! তাঁর মনে আমার জন্য আলাদা একটি জায়গা আছে ভেবে খুব ভালো লাগছিল।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই ক্যামেরাটা দিয়ে পরে আর ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। অনেক দিন পড়ে থেকে এটার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সযতনে ক্যামেরাটা নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। এখন আমার কাছে একটি মোটামুটি ভালো একটা ডিএসএলআর ক্যামেরা আছে, বাড়তি লেন্সসহ আমেরিকা থেকে আনিয়েছি আমার বোনকে দিয়ে। কিন্তু আমার কাছে ওই ক্যামেরার থেকেও বেশি প্রিয় কাজীদার দেওয়া সেই পুরোনো ক্যামেরাটি।
পরে ক্যামেরা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে কাজীদার সঙ্গে। এক সাক্ষাৎকারে যেমন আমাকে বলেছিলেন, ‘বহু বছর ধরে ক্যামেরা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, যদিও শিল্প সৃষ্টির তাগিদে নয়। আমি মুহূর্তকে ধরতে চেয়েছি। যেই শাটারে চাপ দিলাম, থমকে দাঁড়িয়ে গেল একটা মুহূর্ত। স্থির হয়ে গেল একটা নাটকের ছোট্ট এক অংশ। যখন খুশি, যতবার খুশি দেখব আমি ওটা। স্মৃতি মলিন হয়ে যায়, কিন্তু ছবি বহু বছর পর্যন্ত জলজ্যান্ত থাকে। ফটোগ্রাফির এই গুণটাই আমাকে আকর্ষণ করেছিল সবচেয়ে বেশি। মাঝে মাঝে এক-আধটা ফটোগ্রাফ দারুণ হয়ে যায়। তখন খুব ভালো লাগে, নিজেকে বিরাট শিল্পী মনে হয়। ছবি তোলার মোটামুটি নিয়মগুলো শেখা থাকলে, দূরত্ব আর আলোছায়ার হিসাব ঠিক থাকলে, সেই সঙ্গে কম্পোজিশন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকলে মাঝারি মানের একটা ছবি নিশ্চিতভাবেই আশা করা যায়। তাই ফটোগ্রাফিকে আমি একান্ত বিশ্বস্ত ডায়েরি হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম।
...কত্তো কষ্ট করেছি ফটোগ্রাফির জন্য! অথচ এখন? একদম সোজা। মোবাইল ফোনের কল্যাণে এখন টিপ দিলেই ছবি। অহরহ ইনস্ট্যান্ট ছবি তুলে নিজে দেখা যাচ্ছে, মানুষকে দেখানো যাচ্ছে, ফেসবুকে পোস্ট করা যাচ্ছে। এটা যে কত বিরাট অগ্রগতি, ভাবলে বিশ্বাস হতে চায় না। মনে হয় জাদুমন্ত্র! কোথা থেকে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় চলে এসেছে আজ মানুষ!’
রানা গিয়েছে কত দেশে...কাজীদা?
কাজী আনোয়ার হোসেন তাঁর সৃষ্টি চরিত্রগুলোকে পৃথিবীর অনেক দেশ, দুর্গম সব জায়গায় ঘুরিয়ে এনেছেন। কিন্তু নিজে কি খুব বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন? জানতে চেয়েছিলাম এক সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়। কাজী আনোয়ার হোসেনের উত্তর, ‘না, ভাই। কোথাও না। আমি আর্মচেয়ার ট্রাভেলার। চৌদ্দ-পনেরো বছর বয়সে একবার শুধু বিহারের কয়লা শহর গিরিডিতে গিয়েছিলাম আমার আব্বুর সঙ্গে। স্মৃতি নেই কোনো। শুধু মনে আছে রাতে ঘুমোতে দেওয়া হয়েছিল দোতলার খোলা বারান্দায়; অসংখ্য উজ্জ্বল তারা ছিল আকাশে, আর বেশ দূরের শহর থেকে ভেসে আসছিল মোহাম্মাদ রফির গাওয়া সিনেমার গান: দিল্মে ছুপাকে পেয়ার কা তুফান লে চ্যলে/ হ্যম আজ আপনি মওতকা সামান লে চ্যলে...’
মাছ শিকারে কাজীদার গুরু জিম করবেট
কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কিংবা সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে অনেক মজার সব ঘটনাও জানতে পারতাম। কাজী আনোয়ার হোসেনের মাছ শিকারের বাতিক ছিল। একবার মাছ শিকারের একটা সাক্ষাৎকার নিই। সেখানে কাজীদা বলেন, মাছ ধরায় তাঁর গুরু বিখ্যাত শিকারি ও পরে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদ জিম করবেট।
‘১৯৭৭ কি ’৭৮ সাল। মশারির নিচে বন্দী হয়েছিলাম তিন সপ্তাহের জন্য। চিকেন পক্স। আমার প্রথম পুত্র স্কুল থেকে বয়ে এনে উপহার দিয়েছিল ওটা আমাকে। আমার সঙ্গেই ঘুমাত ও, নিজে দু-চারটে গোটার ওপর দিয়ে পার পেয়ে গেল, কিন্তু আমার শরীর ছেয়ে গেল পানিভরা ফোসকায়, আধ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা থাকল না কোথাও। লোকজন ভয়ে কাছে আসে না...অবশ্য, আমিই বারণ করেছি। শুয়ে শুয়ে একের পর এক বই ঘাঁটতে ঘাঁটতে পেয়ে গেলাম জিম করবেটের লেখা সেই বইটা। নাম আজ আর মনে নেই। বাঘ শিকার করতে করতে একবার উত্তর ভারতের চমৎকার এক পাহাড়ি জলাশয় দেখে ছিপ-বড়শি নিয়ে বসে গিয়েছিলেন তিনি মাছ ধরতে। কী অপূর্ব বর্ণনা! কীভাবে ঠোকর দিল মাছ, তিনিও ছিপে মারলেন টান। কেমনভাবে বড়শিতে গাঁথল মাছ, ছুট দিলেন তিরবেগে, পাথরে বাঁধিয়ে সুতো ছেঁড়ার চেষ্টা করল, তিনিই বা কী কায়দায় তাকে মতলব হাসিল করতে না দিয়ে আস্তে আস্তে খেলিয়ে তীরে নিয়ে এসে নেট করলেন। এসবের জলজ্যান্ত, পুঙ্খানুপুঙ্খ, লোভনীয় বর্ণনা পড়ে আমার তো পাগল হবার দশা। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে তাঁকে ১০-১২ কেজি ওজনের কয়েকটা ‘মহাশের’ মাছ মারতে দেখে আমি মশারির নিচে শুয়ে ছটফট করতে থাকলাম...কবে সেরে উঠব!’
ওই সময় কিছু পুকুর বা দিঘিতে মাঝে মাঝে মাছ ধরার টিকিট দেওয়া হতো, কিন্তু ওসব জায়গায় সচরাচর তেমন সুবিধে হতো না। কাজীদার পছন্দ ছিল ধানমন্ডি লেক।
তাঁর মাছ শিকারের বন্ধুদের নিয়ে বলেছিলেন, ‘সে সময় ধানমন্ডি লেকে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, ছেলে-বুড়ো, ব্যবসায়ী-চাকরিজীবী-পেশাজীবী সব মিলিয়ে আমরা মৎস্যশিকারি ছিলাম তিন শর ওপরে। স্বাভাবিক নিয়মেই আমরা যে-যার মনপছন্দের মানুষ খুঁজে নিয়ে ছোট ছোট দল গড়ে এক-একটা এলাকা দখল করতাম। আমি গিয়ে জুটেছিলাম স্বর্ণহ্নদয় দুই শিকারি কালা ভাই (গোলাম রশিদ কালা, আচার প্রস্তুতকারক) ও রব ভাই (আবদুর রব, রঙের কনট্রাক্টর)—এঁদের গ্রুপে। এই গ্রুপে একে একে এসে জুটেছিলেন শামসু ভাই (জনকণ্ঠ পত্রিকার সিনিয়র সহকারী সম্পাদক এ টি এম শামসুদ্দীন), সোশোলজিতে মাস্টার্স লুডু খান (গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক), ইসহাক ভাই (মোজাইকের ঠিকাদার), মোসলেম ভাই (পিঁপড়ার ডিম ও মাছের চার বিক্রেতা), শফি সাহেব (ঠিকাদার), মোবারক ভাই (বাচ্চাদের রাবারের বল তৈরি করে পাইকারি বেচতেন চকবাজারে) ...এরকম আরও বেশ কয়েকজন। মাছ ধরার পাশাপাশি লেকের ধারে বসে চা-নাশতার ফাঁকে হাসি-তামাশা-গল্প চলত আমাদের হাজারো বিষয়ে। গল্পের টানে পুব পাড় থেকে প্রায়ই আমাদের পশ্চিমে চলে আসতেন একজন কোটিপতি মৎস্যশিকারি, তোপখানা রোডের ক্রিসেন্ট কোম্পানির মালিক খলিলুর রহমান। আমি নানাভাই বলতাম, তিনিও আমাকে তা-ই ডাকতেন; আমেরিকা থেকে আমার জন্য একটা মাল্টিপ্লাইং হুইল আর রিডিং ল্যাম্প এনে উপহার দিয়েছিলেন। আর আসতেন নিতাইদা, ঢাকা বেতারের ক্ল্যাসিক্যাল কণ্ঠশিল্পী নিতাই রায়, বড় সজ্জন ছিলেন ভদ্রলোক। রোজ এসে হাজির হতেন শিকারি নন এমন অনেকেও। তাঁদেরই একজন ছিলেন ঢাকা রাইফেল ক্লাবের এয়ার পিস্তল শুটার শারফুদ্দীন টিপু।’
‘আমাদের ছোট্ট গ্রুপের বাইরেও আরও কয়েকজনের কথা না বললেই নয়। তাদের একজন হচ্ছে শাহনেওয়াজ ভুঁইয়া দি গ্রেট, এত বড় মৎস্যশিকারি আমি আর দেখিনি। ওর মতো বড় মাপের শিকারি যেকোনো দেশেই দুর্লভ...নিত্যনতুন টেকনিক তার, সেই সঙ্গে ইমপ্রোভাইজেশন। কোথাও শিকারে গিয়ে কেউ যদি একটা মাছও না পায়, দেখা যাবে ও ধরে বসে আছে বড়সড় পাঁচ-ছয়টা রুই-কাতলা।
আমার হাতে বিদঘুটে আকৃতির স্পিনিং রিল দেখে যে সময় সবাই হাসাহাসি করত, ডিম বিক্রেতা আবদুল মিঞা বলত: ওই ইচার (চিংড়ি মাছের) ঠ্যাংডা হালান দি, আনুয়ার সাপ, বালা হুইল লন। সবাই যখন ছ্যা-ছ্যা করছে, তখন একদিন শাহনেওয়াজ এসে বলল: আনোয়ার ভাই, আপনার এই স্পিনিং হুইল দিয়ে কী করে বেইট থ্রো করতে হয় একটু দেখিয়ে দেবেন? আমি খুশি মনে শিখিয়ে দিলাম। বার কয়েক থ্রো করেই আয়ত্ত করে ফেলল ও কায়দাটা। আর ওরই হাত ধরে গোটা বাংলাদেশে আজ স্পিনিং হুইলের ছড়াছড়ি...মানুষ প্রায় ভুলেই গেছে সেদিনের সেই সিঙ্গেল অ্যাকশন হুইলের কথা...আর একজনের কথা বলব: মোস্তফা সাহেব। প্রথম দিন লেকে গিয়ে তাঁকেই ওস্তাদ ধরেছিলাম। তিনিই কিনিয়ে দিয়েছিলেন ছিপ, বড়শি, কয়েক শ গজ চৌদ্দ পাউন্ডের ভালো জাতের সুতো, আর আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কলকাতার উমাচরণ কর্মকারের তৈরি আদ্যিকালের একটা চার ইঞ্চি বেয়ারিং হুইল।’
কাজীদা বলেছিলেন, নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় মাছটিও শিকার করেছিলেন ধানমন্ডি লেকে। আধা মণের এক-আধ সের বেশি বা কম ছিল ওটা।
শিকারে যেতেন...
বন্যপ্রাণীর প্রতি আমার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। পুরোনো দিনের জঙ্গল আর বন্যপ্রাণীর অবস্থা জানতে শিকারের বই বড় ভরসা। তাই ছোটবেলা থেকেই জিম করবেট, কেনেথ এন্ডারসন কিংবা জন হান্টারের বইয়ের বড় পোকা আমি। তাই যখন শুনলাম মাছ ধরার পাশাপাশি কাজী আনোয়ার হোসেনের শিকারের নেশাও ছিল, তখন এক সাক্ষাৎকারে চেপে ধরলাম।
তখন বলেন, ‘শিকারের নেশা বলতে যা বোঝায়, তা কিন্তু কোনো দিনই পুরোপুরি ছিল না আমার। বাঘটাঘ টানেনি আমাকে। এমনকি রাজহাঁস বা চখা শিকারেও গিয়েছি মাত্র অল্প কয়েকবার। আমার মূল আকর্ষণ ছিল আউটিং। কয়েকজন বন্ধু মিলে শুক্রবারগুলোতে গাড়ি নিয়ে চলে যেতাম যেদিকে খুশি, একেকদিন একেক রাস্তায়। দলের বেশির ভাগই ছিলাম আমরা ধানমন্ডি লেকের মৎস্যশিকারি। আমাদের মধ্যে পাখি শিকারের পাগল ছিল আসলে লুডু খান। আমি ষাটের দশকেই পাখির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। আশির দশকে রব ভাই, কালা ভাই আর আমি ছিলাম জেনুইন মৎস্যশিকারি।...লুডু ভাইয়ের এক নিপাট ভদ্রলোক বন্ধু শারফুদ্দীন টিপুও জুটে গিয়েছিলেন আমাদের সঙ্গে। রব ভাই তো উৎসাহের আতিশয্যে বন্দুক-রাইফেল-পিস্তল কিনে রীতিমতো বন্দুকবাজই বনে গিয়েছিলেন। তবে, প্রতিটা ট্রিপে আমাদের সঙ্গে থাকলেও জীবনে একটি গুলিও ছোড়েননি আমাদের সবার প্রিয় গোলাম রসুল কালা ভাই। টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার নিয়ে যাওয়ার এবং শিকার শেষে সবার মধ্যে পাখি ভাগ করে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর।’
কাজীদা বলেন, ‘চলতে চলতেই থেমে রাস্তার দুপাশের ডালে বসা ঘুঘু, হরিয়াল, কবুতর বা বক মারতাম আমরা পয়েন্ট টুটু রাইফেল দিয়ে। তার আগে অবশ্য থাকত একটা প্রস্তুতিপর্ব: ছুটির আগের দিন রাইফেল নিয়ে গুলশানের শুটিং রেঞ্জে গিয়ে নিখুঁতভাবে রাইফেলগুলো জিরো করে রাখা একটা বড় কাজ ছিল। একমাত্র তাহলেই নিশ্চিত হওয়া যেত যেদিকে তাক করেছি, গুলিটা সেই জায়গায় গিয়ে লাগবে। সবাই আমরা সিঙ্গাপুর থেকে দামি টেলিস্কোপ আনিয়ে ফিট করে নিয়েছিলাম যার যার পয়েন্ট টুটু রাইফেলে। সারাটা দিন রোদে রোদে টোটো করে ঘুরে, ত্রিশ থেকে পঞ্চাশটা পাখি মারতাম আমরা। দুপুরের খাওয়াটা কোনো গাছের নিচে সেরে নিয়ে ঘণ্টাখানেক চলত গল্পগুজব, বিশ্রাম। তারপর আরও কিছুক্ষণ পাখির পেছনে ঘুরে রাস্তার ধারের কোনো দোকানে বসে চা-নাশতা খেয়ে সন্ধের পর ফিরে আসতাম পাখি নিয়ে। এই ছিল আমাদের শিকার বা আউটিং।’
শেষ দেখা
আমার খুব আফসোস ছিল একটি বিষয়ে। টুকটাক কয়েকটা বই রূপান্তর করা হলেও কাজীদাকে কোনো বই উৎসর্গ করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাঁকে একটি বই উৎসর্গ করতে পারি। সেবা প্রকাশনী থেকেই শাহনূর ভাই জেমস হিলটনের ‘লস্ট হরাইজন’ বইটি রূপান্তর করেছিলেন। একটু সংক্ষিপ্তভাবে রূপান্তর করা তিব্বতের পটভূমিতে লেখা বইটি খুব টেনেছিল তখন। চার-পাঁচবার পড়া হয়ে গিয়েছিল। পরে ঐতিহ্য থেকে ২০২০ সালে পূর্ণাঙ্গ রূপান্তর করি বইটি। এটি উৎসর্গ (অনুবাদকের উৎসর্গ) করি কাজী আনোয়ার হোসেনকে। বইটি কাজীদাকে দিতে স্ত্রী-মেয়েসহ দেখা করেছিলাম তাঁর সঙ্গে। অনেক গল্পই হয়েছিল তখন। মেয়ে ওয়াফিকাকে কোলে নিয়ে বইটার একটু অংশ পড়েছিলেনও কাজীদা। তখন অবশ্য কল্পনাও করতে পারিনি তাঁর সঙ্গে এই আমার শেষ দেখা। আফসোস হয়... যদি সেদিন কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে আরেকটু সময় কাটাতে পারতাম।
সিভিতে নাম...
আমার সিভিতে রেফারেন্স হিসেবে দিতে চাইলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। বললেন, কোনো সমস্যা নেই। আমার সিভিতে তারপর অনেকগুলো দিন রেফারেন্সের জায়গায় এক নম্বরে ছিল কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। তারপর ২০২২-এর ১৯ জানুয়ারি আমাদের সবাইকে ছেড়ে চিরতরে চলে গেলেন কাজীদা। তাঁর নামটা বাদ দিয়ে সিভিটা ঠিক করার সময় মনটা অনেক কেঁদেছিল। এখনো লেখাটা লিখতে গিয়ে বারবার মনে পড়ছে তাঁর কথা... কাজী আনোয়ার হোসেন আপনি বেঁচে থাকবেন আমাদের মতো পাঠকদের মনে।

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নিয়েছি। আজ কাজীদার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর সঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা, সেই সঙ্গে কাজী আনোয়ার হোসেন থেকে জানা তাঁর কিছু বিষয় ভাগাভাগি করছি পাঠকদের সঙ্গে।
বইয়ের জগতে প্রবেশ তাঁর কারণে
ক্লাস ফোরে-ফাইভে পড়ি। আব্বুর স্টিলের আলমারির নিচে গাদাগাদি করে রাখা ছিল অনেক বই। সেবা প্রকাশনী, ভারতীয় নানা লেখকের উপন্যাস আরও কত কী! আব্বুকে বললে চাবি দিয়ে খুলে দিতেন। তারপর নাওয়া-খাওয়া ভুলে হামলে পড়তাম বই নিয়ে। তবে আমাকে টানত সেবা প্রকাশনীর বইগুলোই। মাসুদ রানার বই থাকলেও তখন ওগুলো পড়া বারণ ছিল। তাতে কী! আরও কত্ত বই। ছয় রোমাঞ্চ, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল, কুয়াশা সিরিজের বই, জঙ্গল, শিকার-১, শিকার-২, শিকার-৩, রুদ্র প্রয়াগের চিতা, জুলভার্নের নাইজারের বাঁকে, মরু শহর—এমনই সব বই বলা চলে নতুন এক পৃথিবীর সন্ধান দিয়ে দিল আমাকে। আজ এই আধবুড়ো বয়সেও বইয়ের প্রতি আগ্রহ কমেনি একটুও। আর বইয়ের প্রতি আমার এই ভালোবাসার জন্ম, বই পড়ে পাহাড়-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর আগ্রহ সৃষ্টি—এই সবকিছু কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্যই। তিনি না থাকলে যে সেবা প্রকাশনী হতো না। আমারও বই পড়ে অন্য এক জগতে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ মিলত না।
রহস্যমানব
স্কুলে পড়ার সময় সেবার বই পড়ুয়া অনেক বন্ধুবান্ধবও জুটে যায়। আমাদের কাছে সেবার বিভিন্ন বইয়ের চরিত্রগুলোর মতো কাজী আনোয়ার হোসেনও তখন রহস্যঘেরা এক চরিত্র। আমাদের বই পড়ুয়াদের দলে এক বড় ভাই ছিলেন, নোমান ভাই। তিনি মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলতেন, আমরা পুরোপুরি বিশ্বাসও করতে পারতাম না, আবার অবিশ্বাস করতে পারতাম না। একবার যেমন বললেন, মাসুদ রানা সিরিজের বিসিআই (বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স) ঢাকায় সত্যি আছে। আর কাজী আনোয়ার হোসেন বড় একটা পদে আছেন। তবে এটা একেবারেই গোপনীয়! তাই কেউ জানে না। কাজী আনোয়ার হোসেন আমাদের কাছে এমনই এক রহস্যঘেরা মানুষ ছিলেন, আমরা তাঁর এ কথা বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম। তখন একবারও মনে হয়নি, এত গোপনীয় বিষয়টি আমাদের চেয়ে কয়েক বছরের বড় নোমান ভাই জানলেন কীভাবে?
দুরু দুরু বুকে
২০০৫-০৬ সালের ঘটনা। রহস্য পত্রিকায় লিখছি নিয়মিত। তবে তখন পর্যন্ত কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে দেখা হয়নি। রহস্য পত্রিকার অফিস ২৪/৪ সেগুনবাগিচার দোতলায়। কাজী আনোয়ার হোসেন বসেন তৃতীয় তলায়। আমার দৌড় তখন পর্যন্ত ওই দোতলা পর্যন্ত। সেখানে গিয়ে লেখা জমা দিই। আর হাকিম আংকেল (শেখ আবদুল হাকিম) ও শাহনূর ভাইয়ের (কাজী শাহনূর হোসেন) সঙ্গে গল্প করি, নতুন নতুন লেখার পরিকল্পনা করি। একদিন শাহনূর ভাইকে সাহস করে বললাম, কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে চাই। পরদিন সকালেই ডাক পড়ল। আমার মনে হলো বিসিআই চিফ রাহাত খানের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।
দোতলা থেকে তৃতীয় তলা ওঠার পথে একটি তালা মারা দরজা। দালানের এই পাশ দিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায় যেতে হলে ওই দরজা খুলেই যেতে হয়। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে শেষ পর্যন্ত দুরু দুরু বুকে ঢুকলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায়। আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। বসতে বললেন। শুরুতে কেমন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না কাজী আনোয়ার হোসেনের সামনে বসে আছি।
তারপর অনেকবারই গিয়েছি কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে। বেশির ভাগ সময় কোনো না কোনো কাজে। বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারও নিয়েছি তাঁর। তবে ওই প্রথম দিনের অনুভূতি আজও অটুট আমার মনে। এখনো মনে পড়লে কেমন ভয়-রোমাঞ্চের একটি শিহরণ খেলে যায় শরীরে।
সেই ক্যামেরা
পরের বছরের ঘটনা। তখন বনে, পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর নেশা প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে আমার ওপর। সেই সঙ্গে ছবি তোলার আগ্রহ পেয়ে বসেছে। সমস্যা হলো, ভালো ক্যামেরা নেই। একদিন কথায় কথায় শাহনূর ভাইকে বললাম, ক্যামেরা না থাকায় ভালো ছবি তুলতে পারছি না। একটা ক্যামেরা কিনতে হবে।
কয়েক দিন পরের কথা। সেবা প্রকাশনীতে গেলাম আবার। কোনো একটা লেখা নিয়ে কিংবা নিছক আড্ডা দিতে। কতক্ষণ গল্প করার পর চলে আসতে যাব, এমন সময় শাহনূর ভাই বললেন, ‘একটু দাঁড়াও।’ একটু পর ফিরে এলেন। হাতে একটা ব্যাগ। আমাকে চমকে দিয়ে ভেতর থেকে বের করলেন একটি নাইকন ক্যামেরা। বললেন, ‘আব্বাকে বলেছিলাম তোমার ছবি তোলার আগ্রহের কথা। তখন বললেন তাঁর এই ক্যামেরাটা পড়ে আছে। কী অবস্থা এটার জানেন না। চাইলে তুমি এটা নিতে পারো, যদি কোনো কাজে লাগে।’
আমার তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না, কাজীদা আমাকে তাঁর ব্যবহার করা ক্যামেরা দিয়েছেন! তাঁর মনে আমার জন্য আলাদা একটি জায়গা আছে ভেবে খুব ভালো লাগছিল।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই ক্যামেরাটা দিয়ে পরে আর ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। অনেক দিন পড়ে থেকে এটার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সযতনে ক্যামেরাটা নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। এখন আমার কাছে একটি মোটামুটি ভালো একটা ডিএসএলআর ক্যামেরা আছে, বাড়তি লেন্সসহ আমেরিকা থেকে আনিয়েছি আমার বোনকে দিয়ে। কিন্তু আমার কাছে ওই ক্যামেরার থেকেও বেশি প্রিয় কাজীদার দেওয়া সেই পুরোনো ক্যামেরাটি।
পরে ক্যামেরা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে কাজীদার সঙ্গে। এক সাক্ষাৎকারে যেমন আমাকে বলেছিলেন, ‘বহু বছর ধরে ক্যামেরা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, যদিও শিল্প সৃষ্টির তাগিদে নয়। আমি মুহূর্তকে ধরতে চেয়েছি। যেই শাটারে চাপ দিলাম, থমকে দাঁড়িয়ে গেল একটা মুহূর্ত। স্থির হয়ে গেল একটা নাটকের ছোট্ট এক অংশ। যখন খুশি, যতবার খুশি দেখব আমি ওটা। স্মৃতি মলিন হয়ে যায়, কিন্তু ছবি বহু বছর পর্যন্ত জলজ্যান্ত থাকে। ফটোগ্রাফির এই গুণটাই আমাকে আকর্ষণ করেছিল সবচেয়ে বেশি। মাঝে মাঝে এক-আধটা ফটোগ্রাফ দারুণ হয়ে যায়। তখন খুব ভালো লাগে, নিজেকে বিরাট শিল্পী মনে হয়। ছবি তোলার মোটামুটি নিয়মগুলো শেখা থাকলে, দূরত্ব আর আলোছায়ার হিসাব ঠিক থাকলে, সেই সঙ্গে কম্পোজিশন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকলে মাঝারি মানের একটা ছবি নিশ্চিতভাবেই আশা করা যায়। তাই ফটোগ্রাফিকে আমি একান্ত বিশ্বস্ত ডায়েরি হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম।
...কত্তো কষ্ট করেছি ফটোগ্রাফির জন্য! অথচ এখন? একদম সোজা। মোবাইল ফোনের কল্যাণে এখন টিপ দিলেই ছবি। অহরহ ইনস্ট্যান্ট ছবি তুলে নিজে দেখা যাচ্ছে, মানুষকে দেখানো যাচ্ছে, ফেসবুকে পোস্ট করা যাচ্ছে। এটা যে কত বিরাট অগ্রগতি, ভাবলে বিশ্বাস হতে চায় না। মনে হয় জাদুমন্ত্র! কোথা থেকে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় চলে এসেছে আজ মানুষ!’
রানা গিয়েছে কত দেশে...কাজীদা?
কাজী আনোয়ার হোসেন তাঁর সৃষ্টি চরিত্রগুলোকে পৃথিবীর অনেক দেশ, দুর্গম সব জায়গায় ঘুরিয়ে এনেছেন। কিন্তু নিজে কি খুব বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন? জানতে চেয়েছিলাম এক সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়। কাজী আনোয়ার হোসেনের উত্তর, ‘না, ভাই। কোথাও না। আমি আর্মচেয়ার ট্রাভেলার। চৌদ্দ-পনেরো বছর বয়সে একবার শুধু বিহারের কয়লা শহর গিরিডিতে গিয়েছিলাম আমার আব্বুর সঙ্গে। স্মৃতি নেই কোনো। শুধু মনে আছে রাতে ঘুমোতে দেওয়া হয়েছিল দোতলার খোলা বারান্দায়; অসংখ্য উজ্জ্বল তারা ছিল আকাশে, আর বেশ দূরের শহর থেকে ভেসে আসছিল মোহাম্মাদ রফির গাওয়া সিনেমার গান: দিল্মে ছুপাকে পেয়ার কা তুফান লে চ্যলে/ হ্যম আজ আপনি মওতকা সামান লে চ্যলে...’
মাছ শিকারে কাজীদার গুরু জিম করবেট
কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কিংবা সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে অনেক মজার সব ঘটনাও জানতে পারতাম। কাজী আনোয়ার হোসেনের মাছ শিকারের বাতিক ছিল। একবার মাছ শিকারের একটা সাক্ষাৎকার নিই। সেখানে কাজীদা বলেন, মাছ ধরায় তাঁর গুরু বিখ্যাত শিকারি ও পরে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদ জিম করবেট।
‘১৯৭৭ কি ’৭৮ সাল। মশারির নিচে বন্দী হয়েছিলাম তিন সপ্তাহের জন্য। চিকেন পক্স। আমার প্রথম পুত্র স্কুল থেকে বয়ে এনে উপহার দিয়েছিল ওটা আমাকে। আমার সঙ্গেই ঘুমাত ও, নিজে দু-চারটে গোটার ওপর দিয়ে পার পেয়ে গেল, কিন্তু আমার শরীর ছেয়ে গেল পানিভরা ফোসকায়, আধ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা থাকল না কোথাও। লোকজন ভয়ে কাছে আসে না...অবশ্য, আমিই বারণ করেছি। শুয়ে শুয়ে একের পর এক বই ঘাঁটতে ঘাঁটতে পেয়ে গেলাম জিম করবেটের লেখা সেই বইটা। নাম আজ আর মনে নেই। বাঘ শিকার করতে করতে একবার উত্তর ভারতের চমৎকার এক পাহাড়ি জলাশয় দেখে ছিপ-বড়শি নিয়ে বসে গিয়েছিলেন তিনি মাছ ধরতে। কী অপূর্ব বর্ণনা! কীভাবে ঠোকর দিল মাছ, তিনিও ছিপে মারলেন টান। কেমনভাবে বড়শিতে গাঁথল মাছ, ছুট দিলেন তিরবেগে, পাথরে বাঁধিয়ে সুতো ছেঁড়ার চেষ্টা করল, তিনিই বা কী কায়দায় তাকে মতলব হাসিল করতে না দিয়ে আস্তে আস্তে খেলিয়ে তীরে নিয়ে এসে নেট করলেন। এসবের জলজ্যান্ত, পুঙ্খানুপুঙ্খ, লোভনীয় বর্ণনা পড়ে আমার তো পাগল হবার দশা। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে তাঁকে ১০-১২ কেজি ওজনের কয়েকটা ‘মহাশের’ মাছ মারতে দেখে আমি মশারির নিচে শুয়ে ছটফট করতে থাকলাম...কবে সেরে উঠব!’
ওই সময় কিছু পুকুর বা দিঘিতে মাঝে মাঝে মাছ ধরার টিকিট দেওয়া হতো, কিন্তু ওসব জায়গায় সচরাচর তেমন সুবিধে হতো না। কাজীদার পছন্দ ছিল ধানমন্ডি লেক।
তাঁর মাছ শিকারের বন্ধুদের নিয়ে বলেছিলেন, ‘সে সময় ধানমন্ডি লেকে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, ছেলে-বুড়ো, ব্যবসায়ী-চাকরিজীবী-পেশাজীবী সব মিলিয়ে আমরা মৎস্যশিকারি ছিলাম তিন শর ওপরে। স্বাভাবিক নিয়মেই আমরা যে-যার মনপছন্দের মানুষ খুঁজে নিয়ে ছোট ছোট দল গড়ে এক-একটা এলাকা দখল করতাম। আমি গিয়ে জুটেছিলাম স্বর্ণহ্নদয় দুই শিকারি কালা ভাই (গোলাম রশিদ কালা, আচার প্রস্তুতকারক) ও রব ভাই (আবদুর রব, রঙের কনট্রাক্টর)—এঁদের গ্রুপে। এই গ্রুপে একে একে এসে জুটেছিলেন শামসু ভাই (জনকণ্ঠ পত্রিকার সিনিয়র সহকারী সম্পাদক এ টি এম শামসুদ্দীন), সোশোলজিতে মাস্টার্স লুডু খান (গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক), ইসহাক ভাই (মোজাইকের ঠিকাদার), মোসলেম ভাই (পিঁপড়ার ডিম ও মাছের চার বিক্রেতা), শফি সাহেব (ঠিকাদার), মোবারক ভাই (বাচ্চাদের রাবারের বল তৈরি করে পাইকারি বেচতেন চকবাজারে) ...এরকম আরও বেশ কয়েকজন। মাছ ধরার পাশাপাশি লেকের ধারে বসে চা-নাশতার ফাঁকে হাসি-তামাশা-গল্প চলত আমাদের হাজারো বিষয়ে। গল্পের টানে পুব পাড় থেকে প্রায়ই আমাদের পশ্চিমে চলে আসতেন একজন কোটিপতি মৎস্যশিকারি, তোপখানা রোডের ক্রিসেন্ট কোম্পানির মালিক খলিলুর রহমান। আমি নানাভাই বলতাম, তিনিও আমাকে তা-ই ডাকতেন; আমেরিকা থেকে আমার জন্য একটা মাল্টিপ্লাইং হুইল আর রিডিং ল্যাম্প এনে উপহার দিয়েছিলেন। আর আসতেন নিতাইদা, ঢাকা বেতারের ক্ল্যাসিক্যাল কণ্ঠশিল্পী নিতাই রায়, বড় সজ্জন ছিলেন ভদ্রলোক। রোজ এসে হাজির হতেন শিকারি নন এমন অনেকেও। তাঁদেরই একজন ছিলেন ঢাকা রাইফেল ক্লাবের এয়ার পিস্তল শুটার শারফুদ্দীন টিপু।’
‘আমাদের ছোট্ট গ্রুপের বাইরেও আরও কয়েকজনের কথা না বললেই নয়। তাদের একজন হচ্ছে শাহনেওয়াজ ভুঁইয়া দি গ্রেট, এত বড় মৎস্যশিকারি আমি আর দেখিনি। ওর মতো বড় মাপের শিকারি যেকোনো দেশেই দুর্লভ...নিত্যনতুন টেকনিক তার, সেই সঙ্গে ইমপ্রোভাইজেশন। কোথাও শিকারে গিয়ে কেউ যদি একটা মাছও না পায়, দেখা যাবে ও ধরে বসে আছে বড়সড় পাঁচ-ছয়টা রুই-কাতলা।
আমার হাতে বিদঘুটে আকৃতির স্পিনিং রিল দেখে যে সময় সবাই হাসাহাসি করত, ডিম বিক্রেতা আবদুল মিঞা বলত: ওই ইচার (চিংড়ি মাছের) ঠ্যাংডা হালান দি, আনুয়ার সাপ, বালা হুইল লন। সবাই যখন ছ্যা-ছ্যা করছে, তখন একদিন শাহনেওয়াজ এসে বলল: আনোয়ার ভাই, আপনার এই স্পিনিং হুইল দিয়ে কী করে বেইট থ্রো করতে হয় একটু দেখিয়ে দেবেন? আমি খুশি মনে শিখিয়ে দিলাম। বার কয়েক থ্রো করেই আয়ত্ত করে ফেলল ও কায়দাটা। আর ওরই হাত ধরে গোটা বাংলাদেশে আজ স্পিনিং হুইলের ছড়াছড়ি...মানুষ প্রায় ভুলেই গেছে সেদিনের সেই সিঙ্গেল অ্যাকশন হুইলের কথা...আর একজনের কথা বলব: মোস্তফা সাহেব। প্রথম দিন লেকে গিয়ে তাঁকেই ওস্তাদ ধরেছিলাম। তিনিই কিনিয়ে দিয়েছিলেন ছিপ, বড়শি, কয়েক শ গজ চৌদ্দ পাউন্ডের ভালো জাতের সুতো, আর আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কলকাতার উমাচরণ কর্মকারের তৈরি আদ্যিকালের একটা চার ইঞ্চি বেয়ারিং হুইল।’
কাজীদা বলেছিলেন, নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় মাছটিও শিকার করেছিলেন ধানমন্ডি লেকে। আধা মণের এক-আধ সের বেশি বা কম ছিল ওটা।
শিকারে যেতেন...
বন্যপ্রাণীর প্রতি আমার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। পুরোনো দিনের জঙ্গল আর বন্যপ্রাণীর অবস্থা জানতে শিকারের বই বড় ভরসা। তাই ছোটবেলা থেকেই জিম করবেট, কেনেথ এন্ডারসন কিংবা জন হান্টারের বইয়ের বড় পোকা আমি। তাই যখন শুনলাম মাছ ধরার পাশাপাশি কাজী আনোয়ার হোসেনের শিকারের নেশাও ছিল, তখন এক সাক্ষাৎকারে চেপে ধরলাম।
তখন বলেন, ‘শিকারের নেশা বলতে যা বোঝায়, তা কিন্তু কোনো দিনই পুরোপুরি ছিল না আমার। বাঘটাঘ টানেনি আমাকে। এমনকি রাজহাঁস বা চখা শিকারেও গিয়েছি মাত্র অল্প কয়েকবার। আমার মূল আকর্ষণ ছিল আউটিং। কয়েকজন বন্ধু মিলে শুক্রবারগুলোতে গাড়ি নিয়ে চলে যেতাম যেদিকে খুশি, একেকদিন একেক রাস্তায়। দলের বেশির ভাগই ছিলাম আমরা ধানমন্ডি লেকের মৎস্যশিকারি। আমাদের মধ্যে পাখি শিকারের পাগল ছিল আসলে লুডু খান। আমি ষাটের দশকেই পাখির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। আশির দশকে রব ভাই, কালা ভাই আর আমি ছিলাম জেনুইন মৎস্যশিকারি।...লুডু ভাইয়ের এক নিপাট ভদ্রলোক বন্ধু শারফুদ্দীন টিপুও জুটে গিয়েছিলেন আমাদের সঙ্গে। রব ভাই তো উৎসাহের আতিশয্যে বন্দুক-রাইফেল-পিস্তল কিনে রীতিমতো বন্দুকবাজই বনে গিয়েছিলেন। তবে, প্রতিটা ট্রিপে আমাদের সঙ্গে থাকলেও জীবনে একটি গুলিও ছোড়েননি আমাদের সবার প্রিয় গোলাম রসুল কালা ভাই। টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার নিয়ে যাওয়ার এবং শিকার শেষে সবার মধ্যে পাখি ভাগ করে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর।’
কাজীদা বলেন, ‘চলতে চলতেই থেমে রাস্তার দুপাশের ডালে বসা ঘুঘু, হরিয়াল, কবুতর বা বক মারতাম আমরা পয়েন্ট টুটু রাইফেল দিয়ে। তার আগে অবশ্য থাকত একটা প্রস্তুতিপর্ব: ছুটির আগের দিন রাইফেল নিয়ে গুলশানের শুটিং রেঞ্জে গিয়ে নিখুঁতভাবে রাইফেলগুলো জিরো করে রাখা একটা বড় কাজ ছিল। একমাত্র তাহলেই নিশ্চিত হওয়া যেত যেদিকে তাক করেছি, গুলিটা সেই জায়গায় গিয়ে লাগবে। সবাই আমরা সিঙ্গাপুর থেকে দামি টেলিস্কোপ আনিয়ে ফিট করে নিয়েছিলাম যার যার পয়েন্ট টুটু রাইফেলে। সারাটা দিন রোদে রোদে টোটো করে ঘুরে, ত্রিশ থেকে পঞ্চাশটা পাখি মারতাম আমরা। দুপুরের খাওয়াটা কোনো গাছের নিচে সেরে নিয়ে ঘণ্টাখানেক চলত গল্পগুজব, বিশ্রাম। তারপর আরও কিছুক্ষণ পাখির পেছনে ঘুরে রাস্তার ধারের কোনো দোকানে বসে চা-নাশতা খেয়ে সন্ধের পর ফিরে আসতাম পাখি নিয়ে। এই ছিল আমাদের শিকার বা আউটিং।’
শেষ দেখা
আমার খুব আফসোস ছিল একটি বিষয়ে। টুকটাক কয়েকটা বই রূপান্তর করা হলেও কাজীদাকে কোনো বই উৎসর্গ করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাঁকে একটি বই উৎসর্গ করতে পারি। সেবা প্রকাশনী থেকেই শাহনূর ভাই জেমস হিলটনের ‘লস্ট হরাইজন’ বইটি রূপান্তর করেছিলেন। একটু সংক্ষিপ্তভাবে রূপান্তর করা তিব্বতের পটভূমিতে লেখা বইটি খুব টেনেছিল তখন। চার-পাঁচবার পড়া হয়ে গিয়েছিল। পরে ঐতিহ্য থেকে ২০২০ সালে পূর্ণাঙ্গ রূপান্তর করি বইটি। এটি উৎসর্গ (অনুবাদকের উৎসর্গ) করি কাজী আনোয়ার হোসেনকে। বইটি কাজীদাকে দিতে স্ত্রী-মেয়েসহ দেখা করেছিলাম তাঁর সঙ্গে। অনেক গল্পই হয়েছিল তখন। মেয়ে ওয়াফিকাকে কোলে নিয়ে বইটার একটু অংশ পড়েছিলেনও কাজীদা। তখন অবশ্য কল্পনাও করতে পারিনি তাঁর সঙ্গে এই আমার শেষ দেখা। আফসোস হয়... যদি সেদিন কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে আরেকটু সময় কাটাতে পারতাম।
সিভিতে নাম...
আমার সিভিতে রেফারেন্স হিসেবে দিতে চাইলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। বললেন, কোনো সমস্যা নেই। আমার সিভিতে তারপর অনেকগুলো দিন রেফারেন্সের জায়গায় এক নম্বরে ছিল কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। তারপর ২০২২-এর ১৯ জানুয়ারি আমাদের সবাইকে ছেড়ে চিরতরে চলে গেলেন কাজীদা। তাঁর নামটা বাদ দিয়ে সিভিটা ঠিক করার সময় মনটা অনেক কেঁদেছিল। এখনো লেখাটা লিখতে গিয়ে বারবার মনে পড়ছে তাঁর কথা... কাজী আনোয়ার হোসেন আপনি বেঁচে থাকবেন আমাদের মতো পাঠকদের মনে।
ইশতিয়াক হাসান

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নিয়েছি। আজ কাজীদার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর সঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা, সেই সঙ্গে কাজী আনোয়ার হোসেন থেকে জানা তাঁর কিছু বিষয় ভাগাভাগি করছি পাঠকদের সঙ্গে।
বইয়ের জগতে প্রবেশ তাঁর কারণে
ক্লাস ফোরে-ফাইভে পড়ি। আব্বুর স্টিলের আলমারির নিচে গাদাগাদি করে রাখা ছিল অনেক বই। সেবা প্রকাশনী, ভারতীয় নানা লেখকের উপন্যাস আরও কত কী! আব্বুকে বললে চাবি দিয়ে খুলে দিতেন। তারপর নাওয়া-খাওয়া ভুলে হামলে পড়তাম বই নিয়ে। তবে আমাকে টানত সেবা প্রকাশনীর বইগুলোই। মাসুদ রানার বই থাকলেও তখন ওগুলো পড়া বারণ ছিল। তাতে কী! আরও কত্ত বই। ছয় রোমাঞ্চ, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল, কুয়াশা সিরিজের বই, জঙ্গল, শিকার-১, শিকার-২, শিকার-৩, রুদ্র প্রয়াগের চিতা, জুলভার্নের নাইজারের বাঁকে, মরু শহর—এমনই সব বই বলা চলে নতুন এক পৃথিবীর সন্ধান দিয়ে দিল আমাকে। আজ এই আধবুড়ো বয়সেও বইয়ের প্রতি আগ্রহ কমেনি একটুও। আর বইয়ের প্রতি আমার এই ভালোবাসার জন্ম, বই পড়ে পাহাড়-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর আগ্রহ সৃষ্টি—এই সবকিছু কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্যই। তিনি না থাকলে যে সেবা প্রকাশনী হতো না। আমারও বই পড়ে অন্য এক জগতে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ মিলত না।
রহস্যমানব
স্কুলে পড়ার সময় সেবার বই পড়ুয়া অনেক বন্ধুবান্ধবও জুটে যায়। আমাদের কাছে সেবার বিভিন্ন বইয়ের চরিত্রগুলোর মতো কাজী আনোয়ার হোসেনও তখন রহস্যঘেরা এক চরিত্র। আমাদের বই পড়ুয়াদের দলে এক বড় ভাই ছিলেন, নোমান ভাই। তিনি মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলতেন, আমরা পুরোপুরি বিশ্বাসও করতে পারতাম না, আবার অবিশ্বাস করতে পারতাম না। একবার যেমন বললেন, মাসুদ রানা সিরিজের বিসিআই (বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স) ঢাকায় সত্যি আছে। আর কাজী আনোয়ার হোসেন বড় একটা পদে আছেন। তবে এটা একেবারেই গোপনীয়! তাই কেউ জানে না। কাজী আনোয়ার হোসেন আমাদের কাছে এমনই এক রহস্যঘেরা মানুষ ছিলেন, আমরা তাঁর এ কথা বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম। তখন একবারও মনে হয়নি, এত গোপনীয় বিষয়টি আমাদের চেয়ে কয়েক বছরের বড় নোমান ভাই জানলেন কীভাবে?
দুরু দুরু বুকে
২০০৫-০৬ সালের ঘটনা। রহস্য পত্রিকায় লিখছি নিয়মিত। তবে তখন পর্যন্ত কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে দেখা হয়নি। রহস্য পত্রিকার অফিস ২৪/৪ সেগুনবাগিচার দোতলায়। কাজী আনোয়ার হোসেন বসেন তৃতীয় তলায়। আমার দৌড় তখন পর্যন্ত ওই দোতলা পর্যন্ত। সেখানে গিয়ে লেখা জমা দিই। আর হাকিম আংকেল (শেখ আবদুল হাকিম) ও শাহনূর ভাইয়ের (কাজী শাহনূর হোসেন) সঙ্গে গল্প করি, নতুন নতুন লেখার পরিকল্পনা করি। একদিন শাহনূর ভাইকে সাহস করে বললাম, কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে চাই। পরদিন সকালেই ডাক পড়ল। আমার মনে হলো বিসিআই চিফ রাহাত খানের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।
দোতলা থেকে তৃতীয় তলা ওঠার পথে একটি তালা মারা দরজা। দালানের এই পাশ দিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায় যেতে হলে ওই দরজা খুলেই যেতে হয়। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে শেষ পর্যন্ত দুরু দুরু বুকে ঢুকলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায়। আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। বসতে বললেন। শুরুতে কেমন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না কাজী আনোয়ার হোসেনের সামনে বসে আছি।
তারপর অনেকবারই গিয়েছি কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে। বেশির ভাগ সময় কোনো না কোনো কাজে। বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারও নিয়েছি তাঁর। তবে ওই প্রথম দিনের অনুভূতি আজও অটুট আমার মনে। এখনো মনে পড়লে কেমন ভয়-রোমাঞ্চের একটি শিহরণ খেলে যায় শরীরে।
সেই ক্যামেরা
পরের বছরের ঘটনা। তখন বনে, পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর নেশা প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে আমার ওপর। সেই সঙ্গে ছবি তোলার আগ্রহ পেয়ে বসেছে। সমস্যা হলো, ভালো ক্যামেরা নেই। একদিন কথায় কথায় শাহনূর ভাইকে বললাম, ক্যামেরা না থাকায় ভালো ছবি তুলতে পারছি না। একটা ক্যামেরা কিনতে হবে।
কয়েক দিন পরের কথা। সেবা প্রকাশনীতে গেলাম আবার। কোনো একটা লেখা নিয়ে কিংবা নিছক আড্ডা দিতে। কতক্ষণ গল্প করার পর চলে আসতে যাব, এমন সময় শাহনূর ভাই বললেন, ‘একটু দাঁড়াও।’ একটু পর ফিরে এলেন। হাতে একটা ব্যাগ। আমাকে চমকে দিয়ে ভেতর থেকে বের করলেন একটি নাইকন ক্যামেরা। বললেন, ‘আব্বাকে বলেছিলাম তোমার ছবি তোলার আগ্রহের কথা। তখন বললেন তাঁর এই ক্যামেরাটা পড়ে আছে। কী অবস্থা এটার জানেন না। চাইলে তুমি এটা নিতে পারো, যদি কোনো কাজে লাগে।’
আমার তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না, কাজীদা আমাকে তাঁর ব্যবহার করা ক্যামেরা দিয়েছেন! তাঁর মনে আমার জন্য আলাদা একটি জায়গা আছে ভেবে খুব ভালো লাগছিল।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই ক্যামেরাটা দিয়ে পরে আর ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। অনেক দিন পড়ে থেকে এটার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সযতনে ক্যামেরাটা নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। এখন আমার কাছে একটি মোটামুটি ভালো একটা ডিএসএলআর ক্যামেরা আছে, বাড়তি লেন্সসহ আমেরিকা থেকে আনিয়েছি আমার বোনকে দিয়ে। কিন্তু আমার কাছে ওই ক্যামেরার থেকেও বেশি প্রিয় কাজীদার দেওয়া সেই পুরোনো ক্যামেরাটি।
পরে ক্যামেরা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে কাজীদার সঙ্গে। এক সাক্ষাৎকারে যেমন আমাকে বলেছিলেন, ‘বহু বছর ধরে ক্যামেরা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, যদিও শিল্প সৃষ্টির তাগিদে নয়। আমি মুহূর্তকে ধরতে চেয়েছি। যেই শাটারে চাপ দিলাম, থমকে দাঁড়িয়ে গেল একটা মুহূর্ত। স্থির হয়ে গেল একটা নাটকের ছোট্ট এক অংশ। যখন খুশি, যতবার খুশি দেখব আমি ওটা। স্মৃতি মলিন হয়ে যায়, কিন্তু ছবি বহু বছর পর্যন্ত জলজ্যান্ত থাকে। ফটোগ্রাফির এই গুণটাই আমাকে আকর্ষণ করেছিল সবচেয়ে বেশি। মাঝে মাঝে এক-আধটা ফটোগ্রাফ দারুণ হয়ে যায়। তখন খুব ভালো লাগে, নিজেকে বিরাট শিল্পী মনে হয়। ছবি তোলার মোটামুটি নিয়মগুলো শেখা থাকলে, দূরত্ব আর আলোছায়ার হিসাব ঠিক থাকলে, সেই সঙ্গে কম্পোজিশন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকলে মাঝারি মানের একটা ছবি নিশ্চিতভাবেই আশা করা যায়। তাই ফটোগ্রাফিকে আমি একান্ত বিশ্বস্ত ডায়েরি হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম।
...কত্তো কষ্ট করেছি ফটোগ্রাফির জন্য! অথচ এখন? একদম সোজা। মোবাইল ফোনের কল্যাণে এখন টিপ দিলেই ছবি। অহরহ ইনস্ট্যান্ট ছবি তুলে নিজে দেখা যাচ্ছে, মানুষকে দেখানো যাচ্ছে, ফেসবুকে পোস্ট করা যাচ্ছে। এটা যে কত বিরাট অগ্রগতি, ভাবলে বিশ্বাস হতে চায় না। মনে হয় জাদুমন্ত্র! কোথা থেকে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় চলে এসেছে আজ মানুষ!’
রানা গিয়েছে কত দেশে...কাজীদা?
কাজী আনোয়ার হোসেন তাঁর সৃষ্টি চরিত্রগুলোকে পৃথিবীর অনেক দেশ, দুর্গম সব জায়গায় ঘুরিয়ে এনেছেন। কিন্তু নিজে কি খুব বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন? জানতে চেয়েছিলাম এক সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়। কাজী আনোয়ার হোসেনের উত্তর, ‘না, ভাই। কোথাও না। আমি আর্মচেয়ার ট্রাভেলার। চৌদ্দ-পনেরো বছর বয়সে একবার শুধু বিহারের কয়লা শহর গিরিডিতে গিয়েছিলাম আমার আব্বুর সঙ্গে। স্মৃতি নেই কোনো। শুধু মনে আছে রাতে ঘুমোতে দেওয়া হয়েছিল দোতলার খোলা বারান্দায়; অসংখ্য উজ্জ্বল তারা ছিল আকাশে, আর বেশ দূরের শহর থেকে ভেসে আসছিল মোহাম্মাদ রফির গাওয়া সিনেমার গান: দিল্মে ছুপাকে পেয়ার কা তুফান লে চ্যলে/ হ্যম আজ আপনি মওতকা সামান লে চ্যলে...’
মাছ শিকারে কাজীদার গুরু জিম করবেট
কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কিংবা সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে অনেক মজার সব ঘটনাও জানতে পারতাম। কাজী আনোয়ার হোসেনের মাছ শিকারের বাতিক ছিল। একবার মাছ শিকারের একটা সাক্ষাৎকার নিই। সেখানে কাজীদা বলেন, মাছ ধরায় তাঁর গুরু বিখ্যাত শিকারি ও পরে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদ জিম করবেট।
‘১৯৭৭ কি ’৭৮ সাল। মশারির নিচে বন্দী হয়েছিলাম তিন সপ্তাহের জন্য। চিকেন পক্স। আমার প্রথম পুত্র স্কুল থেকে বয়ে এনে উপহার দিয়েছিল ওটা আমাকে। আমার সঙ্গেই ঘুমাত ও, নিজে দু-চারটে গোটার ওপর দিয়ে পার পেয়ে গেল, কিন্তু আমার শরীর ছেয়ে গেল পানিভরা ফোসকায়, আধ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা থাকল না কোথাও। লোকজন ভয়ে কাছে আসে না...অবশ্য, আমিই বারণ করেছি। শুয়ে শুয়ে একের পর এক বই ঘাঁটতে ঘাঁটতে পেয়ে গেলাম জিম করবেটের লেখা সেই বইটা। নাম আজ আর মনে নেই। বাঘ শিকার করতে করতে একবার উত্তর ভারতের চমৎকার এক পাহাড়ি জলাশয় দেখে ছিপ-বড়শি নিয়ে বসে গিয়েছিলেন তিনি মাছ ধরতে। কী অপূর্ব বর্ণনা! কীভাবে ঠোকর দিল মাছ, তিনিও ছিপে মারলেন টান। কেমনভাবে বড়শিতে গাঁথল মাছ, ছুট দিলেন তিরবেগে, পাথরে বাঁধিয়ে সুতো ছেঁড়ার চেষ্টা করল, তিনিই বা কী কায়দায় তাকে মতলব হাসিল করতে না দিয়ে আস্তে আস্তে খেলিয়ে তীরে নিয়ে এসে নেট করলেন। এসবের জলজ্যান্ত, পুঙ্খানুপুঙ্খ, লোভনীয় বর্ণনা পড়ে আমার তো পাগল হবার দশা। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে তাঁকে ১০-১২ কেজি ওজনের কয়েকটা ‘মহাশের’ মাছ মারতে দেখে আমি মশারির নিচে শুয়ে ছটফট করতে থাকলাম...কবে সেরে উঠব!’
ওই সময় কিছু পুকুর বা দিঘিতে মাঝে মাঝে মাছ ধরার টিকিট দেওয়া হতো, কিন্তু ওসব জায়গায় সচরাচর তেমন সুবিধে হতো না। কাজীদার পছন্দ ছিল ধানমন্ডি লেক।
তাঁর মাছ শিকারের বন্ধুদের নিয়ে বলেছিলেন, ‘সে সময় ধানমন্ডি লেকে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, ছেলে-বুড়ো, ব্যবসায়ী-চাকরিজীবী-পেশাজীবী সব মিলিয়ে আমরা মৎস্যশিকারি ছিলাম তিন শর ওপরে। স্বাভাবিক নিয়মেই আমরা যে-যার মনপছন্দের মানুষ খুঁজে নিয়ে ছোট ছোট দল গড়ে এক-একটা এলাকা দখল করতাম। আমি গিয়ে জুটেছিলাম স্বর্ণহ্নদয় দুই শিকারি কালা ভাই (গোলাম রশিদ কালা, আচার প্রস্তুতকারক) ও রব ভাই (আবদুর রব, রঙের কনট্রাক্টর)—এঁদের গ্রুপে। এই গ্রুপে একে একে এসে জুটেছিলেন শামসু ভাই (জনকণ্ঠ পত্রিকার সিনিয়র সহকারী সম্পাদক এ টি এম শামসুদ্দীন), সোশোলজিতে মাস্টার্স লুডু খান (গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক), ইসহাক ভাই (মোজাইকের ঠিকাদার), মোসলেম ভাই (পিঁপড়ার ডিম ও মাছের চার বিক্রেতা), শফি সাহেব (ঠিকাদার), মোবারক ভাই (বাচ্চাদের রাবারের বল তৈরি করে পাইকারি বেচতেন চকবাজারে) ...এরকম আরও বেশ কয়েকজন। মাছ ধরার পাশাপাশি লেকের ধারে বসে চা-নাশতার ফাঁকে হাসি-তামাশা-গল্প চলত আমাদের হাজারো বিষয়ে। গল্পের টানে পুব পাড় থেকে প্রায়ই আমাদের পশ্চিমে চলে আসতেন একজন কোটিপতি মৎস্যশিকারি, তোপখানা রোডের ক্রিসেন্ট কোম্পানির মালিক খলিলুর রহমান। আমি নানাভাই বলতাম, তিনিও আমাকে তা-ই ডাকতেন; আমেরিকা থেকে আমার জন্য একটা মাল্টিপ্লাইং হুইল আর রিডিং ল্যাম্প এনে উপহার দিয়েছিলেন। আর আসতেন নিতাইদা, ঢাকা বেতারের ক্ল্যাসিক্যাল কণ্ঠশিল্পী নিতাই রায়, বড় সজ্জন ছিলেন ভদ্রলোক। রোজ এসে হাজির হতেন শিকারি নন এমন অনেকেও। তাঁদেরই একজন ছিলেন ঢাকা রাইফেল ক্লাবের এয়ার পিস্তল শুটার শারফুদ্দীন টিপু।’
‘আমাদের ছোট্ট গ্রুপের বাইরেও আরও কয়েকজনের কথা না বললেই নয়। তাদের একজন হচ্ছে শাহনেওয়াজ ভুঁইয়া দি গ্রেট, এত বড় মৎস্যশিকারি আমি আর দেখিনি। ওর মতো বড় মাপের শিকারি যেকোনো দেশেই দুর্লভ...নিত্যনতুন টেকনিক তার, সেই সঙ্গে ইমপ্রোভাইজেশন। কোথাও শিকারে গিয়ে কেউ যদি একটা মাছও না পায়, দেখা যাবে ও ধরে বসে আছে বড়সড় পাঁচ-ছয়টা রুই-কাতলা।
আমার হাতে বিদঘুটে আকৃতির স্পিনিং রিল দেখে যে সময় সবাই হাসাহাসি করত, ডিম বিক্রেতা আবদুল মিঞা বলত: ওই ইচার (চিংড়ি মাছের) ঠ্যাংডা হালান দি, আনুয়ার সাপ, বালা হুইল লন। সবাই যখন ছ্যা-ছ্যা করছে, তখন একদিন শাহনেওয়াজ এসে বলল: আনোয়ার ভাই, আপনার এই স্পিনিং হুইল দিয়ে কী করে বেইট থ্রো করতে হয় একটু দেখিয়ে দেবেন? আমি খুশি মনে শিখিয়ে দিলাম। বার কয়েক থ্রো করেই আয়ত্ত করে ফেলল ও কায়দাটা। আর ওরই হাত ধরে গোটা বাংলাদেশে আজ স্পিনিং হুইলের ছড়াছড়ি...মানুষ প্রায় ভুলেই গেছে সেদিনের সেই সিঙ্গেল অ্যাকশন হুইলের কথা...আর একজনের কথা বলব: মোস্তফা সাহেব। প্রথম দিন লেকে গিয়ে তাঁকেই ওস্তাদ ধরেছিলাম। তিনিই কিনিয়ে দিয়েছিলেন ছিপ, বড়শি, কয়েক শ গজ চৌদ্দ পাউন্ডের ভালো জাতের সুতো, আর আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কলকাতার উমাচরণ কর্মকারের তৈরি আদ্যিকালের একটা চার ইঞ্চি বেয়ারিং হুইল।’
কাজীদা বলেছিলেন, নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় মাছটিও শিকার করেছিলেন ধানমন্ডি লেকে। আধা মণের এক-আধ সের বেশি বা কম ছিল ওটা।
শিকারে যেতেন...
বন্যপ্রাণীর প্রতি আমার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। পুরোনো দিনের জঙ্গল আর বন্যপ্রাণীর অবস্থা জানতে শিকারের বই বড় ভরসা। তাই ছোটবেলা থেকেই জিম করবেট, কেনেথ এন্ডারসন কিংবা জন হান্টারের বইয়ের বড় পোকা আমি। তাই যখন শুনলাম মাছ ধরার পাশাপাশি কাজী আনোয়ার হোসেনের শিকারের নেশাও ছিল, তখন এক সাক্ষাৎকারে চেপে ধরলাম।
তখন বলেন, ‘শিকারের নেশা বলতে যা বোঝায়, তা কিন্তু কোনো দিনই পুরোপুরি ছিল না আমার। বাঘটাঘ টানেনি আমাকে। এমনকি রাজহাঁস বা চখা শিকারেও গিয়েছি মাত্র অল্প কয়েকবার। আমার মূল আকর্ষণ ছিল আউটিং। কয়েকজন বন্ধু মিলে শুক্রবারগুলোতে গাড়ি নিয়ে চলে যেতাম যেদিকে খুশি, একেকদিন একেক রাস্তায়। দলের বেশির ভাগই ছিলাম আমরা ধানমন্ডি লেকের মৎস্যশিকারি। আমাদের মধ্যে পাখি শিকারের পাগল ছিল আসলে লুডু খান। আমি ষাটের দশকেই পাখির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। আশির দশকে রব ভাই, কালা ভাই আর আমি ছিলাম জেনুইন মৎস্যশিকারি।...লুডু ভাইয়ের এক নিপাট ভদ্রলোক বন্ধু শারফুদ্দীন টিপুও জুটে গিয়েছিলেন আমাদের সঙ্গে। রব ভাই তো উৎসাহের আতিশয্যে বন্দুক-রাইফেল-পিস্তল কিনে রীতিমতো বন্দুকবাজই বনে গিয়েছিলেন। তবে, প্রতিটা ট্রিপে আমাদের সঙ্গে থাকলেও জীবনে একটি গুলিও ছোড়েননি আমাদের সবার প্রিয় গোলাম রসুল কালা ভাই। টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার নিয়ে যাওয়ার এবং শিকার শেষে সবার মধ্যে পাখি ভাগ করে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর।’
কাজীদা বলেন, ‘চলতে চলতেই থেমে রাস্তার দুপাশের ডালে বসা ঘুঘু, হরিয়াল, কবুতর বা বক মারতাম আমরা পয়েন্ট টুটু রাইফেল দিয়ে। তার আগে অবশ্য থাকত একটা প্রস্তুতিপর্ব: ছুটির আগের দিন রাইফেল নিয়ে গুলশানের শুটিং রেঞ্জে গিয়ে নিখুঁতভাবে রাইফেলগুলো জিরো করে রাখা একটা বড় কাজ ছিল। একমাত্র তাহলেই নিশ্চিত হওয়া যেত যেদিকে তাক করেছি, গুলিটা সেই জায়গায় গিয়ে লাগবে। সবাই আমরা সিঙ্গাপুর থেকে দামি টেলিস্কোপ আনিয়ে ফিট করে নিয়েছিলাম যার যার পয়েন্ট টুটু রাইফেলে। সারাটা দিন রোদে রোদে টোটো করে ঘুরে, ত্রিশ থেকে পঞ্চাশটা পাখি মারতাম আমরা। দুপুরের খাওয়াটা কোনো গাছের নিচে সেরে নিয়ে ঘণ্টাখানেক চলত গল্পগুজব, বিশ্রাম। তারপর আরও কিছুক্ষণ পাখির পেছনে ঘুরে রাস্তার ধারের কোনো দোকানে বসে চা-নাশতা খেয়ে সন্ধের পর ফিরে আসতাম পাখি নিয়ে। এই ছিল আমাদের শিকার বা আউটিং।’
শেষ দেখা
আমার খুব আফসোস ছিল একটি বিষয়ে। টুকটাক কয়েকটা বই রূপান্তর করা হলেও কাজীদাকে কোনো বই উৎসর্গ করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাঁকে একটি বই উৎসর্গ করতে পারি। সেবা প্রকাশনী থেকেই শাহনূর ভাই জেমস হিলটনের ‘লস্ট হরাইজন’ বইটি রূপান্তর করেছিলেন। একটু সংক্ষিপ্তভাবে রূপান্তর করা তিব্বতের পটভূমিতে লেখা বইটি খুব টেনেছিল তখন। চার-পাঁচবার পড়া হয়ে গিয়েছিল। পরে ঐতিহ্য থেকে ২০২০ সালে পূর্ণাঙ্গ রূপান্তর করি বইটি। এটি উৎসর্গ (অনুবাদকের উৎসর্গ) করি কাজী আনোয়ার হোসেনকে। বইটি কাজীদাকে দিতে স্ত্রী-মেয়েসহ দেখা করেছিলাম তাঁর সঙ্গে। অনেক গল্পই হয়েছিল তখন। মেয়ে ওয়াফিকাকে কোলে নিয়ে বইটার একটু অংশ পড়েছিলেনও কাজীদা। তখন অবশ্য কল্পনাও করতে পারিনি তাঁর সঙ্গে এই আমার শেষ দেখা। আফসোস হয়... যদি সেদিন কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে আরেকটু সময় কাটাতে পারতাম।
সিভিতে নাম...
আমার সিভিতে রেফারেন্স হিসেবে দিতে চাইলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। বললেন, কোনো সমস্যা নেই। আমার সিভিতে তারপর অনেকগুলো দিন রেফারেন্সের জায়গায় এক নম্বরে ছিল কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। তারপর ২০২২-এর ১৯ জানুয়ারি আমাদের সবাইকে ছেড়ে চিরতরে চলে গেলেন কাজীদা। তাঁর নামটা বাদ দিয়ে সিভিটা ঠিক করার সময় মনটা অনেক কেঁদেছিল। এখনো লেখাটা লিখতে গিয়ে বারবার মনে পড়ছে তাঁর কথা... কাজী আনোয়ার হোসেন আপনি বেঁচে থাকবেন আমাদের মতো পাঠকদের মনে।

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নিয়েছি। আজ কাজীদার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর সঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা, সেই সঙ্গে কাজী আনোয়ার হোসেন থেকে জানা তাঁর কিছু বিষয় ভাগাভাগি করছি পাঠকদের সঙ্গে।
বইয়ের জগতে প্রবেশ তাঁর কারণে
ক্লাস ফোরে-ফাইভে পড়ি। আব্বুর স্টিলের আলমারির নিচে গাদাগাদি করে রাখা ছিল অনেক বই। সেবা প্রকাশনী, ভারতীয় নানা লেখকের উপন্যাস আরও কত কী! আব্বুকে বললে চাবি দিয়ে খুলে দিতেন। তারপর নাওয়া-খাওয়া ভুলে হামলে পড়তাম বই নিয়ে। তবে আমাকে টানত সেবা প্রকাশনীর বইগুলোই। মাসুদ রানার বই থাকলেও তখন ওগুলো পড়া বারণ ছিল। তাতে কী! আরও কত্ত বই। ছয় রোমাঞ্চ, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল, কুয়াশা সিরিজের বই, জঙ্গল, শিকার-১, শিকার-২, শিকার-৩, রুদ্র প্রয়াগের চিতা, জুলভার্নের নাইজারের বাঁকে, মরু শহর—এমনই সব বই বলা চলে নতুন এক পৃথিবীর সন্ধান দিয়ে দিল আমাকে। আজ এই আধবুড়ো বয়সেও বইয়ের প্রতি আগ্রহ কমেনি একটুও। আর বইয়ের প্রতি আমার এই ভালোবাসার জন্ম, বই পড়ে পাহাড়-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর আগ্রহ সৃষ্টি—এই সবকিছু কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্যই। তিনি না থাকলে যে সেবা প্রকাশনী হতো না। আমারও বই পড়ে অন্য এক জগতে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ মিলত না।
রহস্যমানব
স্কুলে পড়ার সময় সেবার বই পড়ুয়া অনেক বন্ধুবান্ধবও জুটে যায়। আমাদের কাছে সেবার বিভিন্ন বইয়ের চরিত্রগুলোর মতো কাজী আনোয়ার হোসেনও তখন রহস্যঘেরা এক চরিত্র। আমাদের বই পড়ুয়াদের দলে এক বড় ভাই ছিলেন, নোমান ভাই। তিনি মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলতেন, আমরা পুরোপুরি বিশ্বাসও করতে পারতাম না, আবার অবিশ্বাস করতে পারতাম না। একবার যেমন বললেন, মাসুদ রানা সিরিজের বিসিআই (বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স) ঢাকায় সত্যি আছে। আর কাজী আনোয়ার হোসেন বড় একটা পদে আছেন। তবে এটা একেবারেই গোপনীয়! তাই কেউ জানে না। কাজী আনোয়ার হোসেন আমাদের কাছে এমনই এক রহস্যঘেরা মানুষ ছিলেন, আমরা তাঁর এ কথা বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম। তখন একবারও মনে হয়নি, এত গোপনীয় বিষয়টি আমাদের চেয়ে কয়েক বছরের বড় নোমান ভাই জানলেন কীভাবে?
দুরু দুরু বুকে
২০০৫-০৬ সালের ঘটনা। রহস্য পত্রিকায় লিখছি নিয়মিত। তবে তখন পর্যন্ত কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে দেখা হয়নি। রহস্য পত্রিকার অফিস ২৪/৪ সেগুনবাগিচার দোতলায়। কাজী আনোয়ার হোসেন বসেন তৃতীয় তলায়। আমার দৌড় তখন পর্যন্ত ওই দোতলা পর্যন্ত। সেখানে গিয়ে লেখা জমা দিই। আর হাকিম আংকেল (শেখ আবদুল হাকিম) ও শাহনূর ভাইয়ের (কাজী শাহনূর হোসেন) সঙ্গে গল্প করি, নতুন নতুন লেখার পরিকল্পনা করি। একদিন শাহনূর ভাইকে সাহস করে বললাম, কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে চাই। পরদিন সকালেই ডাক পড়ল। আমার মনে হলো বিসিআই চিফ রাহাত খানের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।
দোতলা থেকে তৃতীয় তলা ওঠার পথে একটি তালা মারা দরজা। দালানের এই পাশ দিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায় যেতে হলে ওই দরজা খুলেই যেতে হয়। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে শেষ পর্যন্ত দুরু দুরু বুকে ঢুকলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায়। আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। বসতে বললেন। শুরুতে কেমন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না কাজী আনোয়ার হোসেনের সামনে বসে আছি।
তারপর অনেকবারই গিয়েছি কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে। বেশির ভাগ সময় কোনো না কোনো কাজে। বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারও নিয়েছি তাঁর। তবে ওই প্রথম দিনের অনুভূতি আজও অটুট আমার মনে। এখনো মনে পড়লে কেমন ভয়-রোমাঞ্চের একটি শিহরণ খেলে যায় শরীরে।
সেই ক্যামেরা
পরের বছরের ঘটনা। তখন বনে, পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর নেশা প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে আমার ওপর। সেই সঙ্গে ছবি তোলার আগ্রহ পেয়ে বসেছে। সমস্যা হলো, ভালো ক্যামেরা নেই। একদিন কথায় কথায় শাহনূর ভাইকে বললাম, ক্যামেরা না থাকায় ভালো ছবি তুলতে পারছি না। একটা ক্যামেরা কিনতে হবে।
কয়েক দিন পরের কথা। সেবা প্রকাশনীতে গেলাম আবার। কোনো একটা লেখা নিয়ে কিংবা নিছক আড্ডা দিতে। কতক্ষণ গল্প করার পর চলে আসতে যাব, এমন সময় শাহনূর ভাই বললেন, ‘একটু দাঁড়াও।’ একটু পর ফিরে এলেন। হাতে একটা ব্যাগ। আমাকে চমকে দিয়ে ভেতর থেকে বের করলেন একটি নাইকন ক্যামেরা। বললেন, ‘আব্বাকে বলেছিলাম তোমার ছবি তোলার আগ্রহের কথা। তখন বললেন তাঁর এই ক্যামেরাটা পড়ে আছে। কী অবস্থা এটার জানেন না। চাইলে তুমি এটা নিতে পারো, যদি কোনো কাজে লাগে।’
আমার তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না, কাজীদা আমাকে তাঁর ব্যবহার করা ক্যামেরা দিয়েছেন! তাঁর মনে আমার জন্য আলাদা একটি জায়গা আছে ভেবে খুব ভালো লাগছিল।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই ক্যামেরাটা দিয়ে পরে আর ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। অনেক দিন পড়ে থেকে এটার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সযতনে ক্যামেরাটা নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। এখন আমার কাছে একটি মোটামুটি ভালো একটা ডিএসএলআর ক্যামেরা আছে, বাড়তি লেন্সসহ আমেরিকা থেকে আনিয়েছি আমার বোনকে দিয়ে। কিন্তু আমার কাছে ওই ক্যামেরার থেকেও বেশি প্রিয় কাজীদার দেওয়া সেই পুরোনো ক্যামেরাটি।
পরে ক্যামেরা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে কাজীদার সঙ্গে। এক সাক্ষাৎকারে যেমন আমাকে বলেছিলেন, ‘বহু বছর ধরে ক্যামেরা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, যদিও শিল্প সৃষ্টির তাগিদে নয়। আমি মুহূর্তকে ধরতে চেয়েছি। যেই শাটারে চাপ দিলাম, থমকে দাঁড়িয়ে গেল একটা মুহূর্ত। স্থির হয়ে গেল একটা নাটকের ছোট্ট এক অংশ। যখন খুশি, যতবার খুশি দেখব আমি ওটা। স্মৃতি মলিন হয়ে যায়, কিন্তু ছবি বহু বছর পর্যন্ত জলজ্যান্ত থাকে। ফটোগ্রাফির এই গুণটাই আমাকে আকর্ষণ করেছিল সবচেয়ে বেশি। মাঝে মাঝে এক-আধটা ফটোগ্রাফ দারুণ হয়ে যায়। তখন খুব ভালো লাগে, নিজেকে বিরাট শিল্পী মনে হয়। ছবি তোলার মোটামুটি নিয়মগুলো শেখা থাকলে, দূরত্ব আর আলোছায়ার হিসাব ঠিক থাকলে, সেই সঙ্গে কম্পোজিশন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকলে মাঝারি মানের একটা ছবি নিশ্চিতভাবেই আশা করা যায়। তাই ফটোগ্রাফিকে আমি একান্ত বিশ্বস্ত ডায়েরি হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম।
...কত্তো কষ্ট করেছি ফটোগ্রাফির জন্য! অথচ এখন? একদম সোজা। মোবাইল ফোনের কল্যাণে এখন টিপ দিলেই ছবি। অহরহ ইনস্ট্যান্ট ছবি তুলে নিজে দেখা যাচ্ছে, মানুষকে দেখানো যাচ্ছে, ফেসবুকে পোস্ট করা যাচ্ছে। এটা যে কত বিরাট অগ্রগতি, ভাবলে বিশ্বাস হতে চায় না। মনে হয় জাদুমন্ত্র! কোথা থেকে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় চলে এসেছে আজ মানুষ!’
রানা গিয়েছে কত দেশে...কাজীদা?
কাজী আনোয়ার হোসেন তাঁর সৃষ্টি চরিত্রগুলোকে পৃথিবীর অনেক দেশ, দুর্গম সব জায়গায় ঘুরিয়ে এনেছেন। কিন্তু নিজে কি খুব বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন? জানতে চেয়েছিলাম এক সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়। কাজী আনোয়ার হোসেনের উত্তর, ‘না, ভাই। কোথাও না। আমি আর্মচেয়ার ট্রাভেলার। চৌদ্দ-পনেরো বছর বয়সে একবার শুধু বিহারের কয়লা শহর গিরিডিতে গিয়েছিলাম আমার আব্বুর সঙ্গে। স্মৃতি নেই কোনো। শুধু মনে আছে রাতে ঘুমোতে দেওয়া হয়েছিল দোতলার খোলা বারান্দায়; অসংখ্য উজ্জ্বল তারা ছিল আকাশে, আর বেশ দূরের শহর থেকে ভেসে আসছিল মোহাম্মাদ রফির গাওয়া সিনেমার গান: দিল্মে ছুপাকে পেয়ার কা তুফান লে চ্যলে/ হ্যম আজ আপনি মওতকা সামান লে চ্যলে...’
মাছ শিকারে কাজীদার গুরু জিম করবেট
কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কিংবা সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে অনেক মজার সব ঘটনাও জানতে পারতাম। কাজী আনোয়ার হোসেনের মাছ শিকারের বাতিক ছিল। একবার মাছ শিকারের একটা সাক্ষাৎকার নিই। সেখানে কাজীদা বলেন, মাছ ধরায় তাঁর গুরু বিখ্যাত শিকারি ও পরে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদ জিম করবেট।
‘১৯৭৭ কি ’৭৮ সাল। মশারির নিচে বন্দী হয়েছিলাম তিন সপ্তাহের জন্য। চিকেন পক্স। আমার প্রথম পুত্র স্কুল থেকে বয়ে এনে উপহার দিয়েছিল ওটা আমাকে। আমার সঙ্গেই ঘুমাত ও, নিজে দু-চারটে গোটার ওপর দিয়ে পার পেয়ে গেল, কিন্তু আমার শরীর ছেয়ে গেল পানিভরা ফোসকায়, আধ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা থাকল না কোথাও। লোকজন ভয়ে কাছে আসে না...অবশ্য, আমিই বারণ করেছি। শুয়ে শুয়ে একের পর এক বই ঘাঁটতে ঘাঁটতে পেয়ে গেলাম জিম করবেটের লেখা সেই বইটা। নাম আজ আর মনে নেই। বাঘ শিকার করতে করতে একবার উত্তর ভারতের চমৎকার এক পাহাড়ি জলাশয় দেখে ছিপ-বড়শি নিয়ে বসে গিয়েছিলেন তিনি মাছ ধরতে। কী অপূর্ব বর্ণনা! কীভাবে ঠোকর দিল মাছ, তিনিও ছিপে মারলেন টান। কেমনভাবে বড়শিতে গাঁথল মাছ, ছুট দিলেন তিরবেগে, পাথরে বাঁধিয়ে সুতো ছেঁড়ার চেষ্টা করল, তিনিই বা কী কায়দায় তাকে মতলব হাসিল করতে না দিয়ে আস্তে আস্তে খেলিয়ে তীরে নিয়ে এসে নেট করলেন। এসবের জলজ্যান্ত, পুঙ্খানুপুঙ্খ, লোভনীয় বর্ণনা পড়ে আমার তো পাগল হবার দশা। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে তাঁকে ১০-১২ কেজি ওজনের কয়েকটা ‘মহাশের’ মাছ মারতে দেখে আমি মশারির নিচে শুয়ে ছটফট করতে থাকলাম...কবে সেরে উঠব!’
ওই সময় কিছু পুকুর বা দিঘিতে মাঝে মাঝে মাছ ধরার টিকিট দেওয়া হতো, কিন্তু ওসব জায়গায় সচরাচর তেমন সুবিধে হতো না। কাজীদার পছন্দ ছিল ধানমন্ডি লেক।
তাঁর মাছ শিকারের বন্ধুদের নিয়ে বলেছিলেন, ‘সে সময় ধানমন্ডি লেকে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, ছেলে-বুড়ো, ব্যবসায়ী-চাকরিজীবী-পেশাজীবী সব মিলিয়ে আমরা মৎস্যশিকারি ছিলাম তিন শর ওপরে। স্বাভাবিক নিয়মেই আমরা যে-যার মনপছন্দের মানুষ খুঁজে নিয়ে ছোট ছোট দল গড়ে এক-একটা এলাকা দখল করতাম। আমি গিয়ে জুটেছিলাম স্বর্ণহ্নদয় দুই শিকারি কালা ভাই (গোলাম রশিদ কালা, আচার প্রস্তুতকারক) ও রব ভাই (আবদুর রব, রঙের কনট্রাক্টর)—এঁদের গ্রুপে। এই গ্রুপে একে একে এসে জুটেছিলেন শামসু ভাই (জনকণ্ঠ পত্রিকার সিনিয়র সহকারী সম্পাদক এ টি এম শামসুদ্দীন), সোশোলজিতে মাস্টার্স লুডু খান (গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক), ইসহাক ভাই (মোজাইকের ঠিকাদার), মোসলেম ভাই (পিঁপড়ার ডিম ও মাছের চার বিক্রেতা), শফি সাহেব (ঠিকাদার), মোবারক ভাই (বাচ্চাদের রাবারের বল তৈরি করে পাইকারি বেচতেন চকবাজারে) ...এরকম আরও বেশ কয়েকজন। মাছ ধরার পাশাপাশি লেকের ধারে বসে চা-নাশতার ফাঁকে হাসি-তামাশা-গল্প চলত আমাদের হাজারো বিষয়ে। গল্পের টানে পুব পাড় থেকে প্রায়ই আমাদের পশ্চিমে চলে আসতেন একজন কোটিপতি মৎস্যশিকারি, তোপখানা রোডের ক্রিসেন্ট কোম্পানির মালিক খলিলুর রহমান। আমি নানাভাই বলতাম, তিনিও আমাকে তা-ই ডাকতেন; আমেরিকা থেকে আমার জন্য একটা মাল্টিপ্লাইং হুইল আর রিডিং ল্যাম্প এনে উপহার দিয়েছিলেন। আর আসতেন নিতাইদা, ঢাকা বেতারের ক্ল্যাসিক্যাল কণ্ঠশিল্পী নিতাই রায়, বড় সজ্জন ছিলেন ভদ্রলোক। রোজ এসে হাজির হতেন শিকারি নন এমন অনেকেও। তাঁদেরই একজন ছিলেন ঢাকা রাইফেল ক্লাবের এয়ার পিস্তল শুটার শারফুদ্দীন টিপু।’
‘আমাদের ছোট্ট গ্রুপের বাইরেও আরও কয়েকজনের কথা না বললেই নয়। তাদের একজন হচ্ছে শাহনেওয়াজ ভুঁইয়া দি গ্রেট, এত বড় মৎস্যশিকারি আমি আর দেখিনি। ওর মতো বড় মাপের শিকারি যেকোনো দেশেই দুর্লভ...নিত্যনতুন টেকনিক তার, সেই সঙ্গে ইমপ্রোভাইজেশন। কোথাও শিকারে গিয়ে কেউ যদি একটা মাছও না পায়, দেখা যাবে ও ধরে বসে আছে বড়সড় পাঁচ-ছয়টা রুই-কাতলা।
আমার হাতে বিদঘুটে আকৃতির স্পিনিং রিল দেখে যে সময় সবাই হাসাহাসি করত, ডিম বিক্রেতা আবদুল মিঞা বলত: ওই ইচার (চিংড়ি মাছের) ঠ্যাংডা হালান দি, আনুয়ার সাপ, বালা হুইল লন। সবাই যখন ছ্যা-ছ্যা করছে, তখন একদিন শাহনেওয়াজ এসে বলল: আনোয়ার ভাই, আপনার এই স্পিনিং হুইল দিয়ে কী করে বেইট থ্রো করতে হয় একটু দেখিয়ে দেবেন? আমি খুশি মনে শিখিয়ে দিলাম। বার কয়েক থ্রো করেই আয়ত্ত করে ফেলল ও কায়দাটা। আর ওরই হাত ধরে গোটা বাংলাদেশে আজ স্পিনিং হুইলের ছড়াছড়ি...মানুষ প্রায় ভুলেই গেছে সেদিনের সেই সিঙ্গেল অ্যাকশন হুইলের কথা...আর একজনের কথা বলব: মোস্তফা সাহেব। প্রথম দিন লেকে গিয়ে তাঁকেই ওস্তাদ ধরেছিলাম। তিনিই কিনিয়ে দিয়েছিলেন ছিপ, বড়শি, কয়েক শ গজ চৌদ্দ পাউন্ডের ভালো জাতের সুতো, আর আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কলকাতার উমাচরণ কর্মকারের তৈরি আদ্যিকালের একটা চার ইঞ্চি বেয়ারিং হুইল।’
কাজীদা বলেছিলেন, নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় মাছটিও শিকার করেছিলেন ধানমন্ডি লেকে। আধা মণের এক-আধ সের বেশি বা কম ছিল ওটা।
শিকারে যেতেন...
বন্যপ্রাণীর প্রতি আমার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। পুরোনো দিনের জঙ্গল আর বন্যপ্রাণীর অবস্থা জানতে শিকারের বই বড় ভরসা। তাই ছোটবেলা থেকেই জিম করবেট, কেনেথ এন্ডারসন কিংবা জন হান্টারের বইয়ের বড় পোকা আমি। তাই যখন শুনলাম মাছ ধরার পাশাপাশি কাজী আনোয়ার হোসেনের শিকারের নেশাও ছিল, তখন এক সাক্ষাৎকারে চেপে ধরলাম।
তখন বলেন, ‘শিকারের নেশা বলতে যা বোঝায়, তা কিন্তু কোনো দিনই পুরোপুরি ছিল না আমার। বাঘটাঘ টানেনি আমাকে। এমনকি রাজহাঁস বা চখা শিকারেও গিয়েছি মাত্র অল্প কয়েকবার। আমার মূল আকর্ষণ ছিল আউটিং। কয়েকজন বন্ধু মিলে শুক্রবারগুলোতে গাড়ি নিয়ে চলে যেতাম যেদিকে খুশি, একেকদিন একেক রাস্তায়। দলের বেশির ভাগই ছিলাম আমরা ধানমন্ডি লেকের মৎস্যশিকারি। আমাদের মধ্যে পাখি শিকারের পাগল ছিল আসলে লুডু খান। আমি ষাটের দশকেই পাখির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। আশির দশকে রব ভাই, কালা ভাই আর আমি ছিলাম জেনুইন মৎস্যশিকারি।...লুডু ভাইয়ের এক নিপাট ভদ্রলোক বন্ধু শারফুদ্দীন টিপুও জুটে গিয়েছিলেন আমাদের সঙ্গে। রব ভাই তো উৎসাহের আতিশয্যে বন্দুক-রাইফেল-পিস্তল কিনে রীতিমতো বন্দুকবাজই বনে গিয়েছিলেন। তবে, প্রতিটা ট্রিপে আমাদের সঙ্গে থাকলেও জীবনে একটি গুলিও ছোড়েননি আমাদের সবার প্রিয় গোলাম রসুল কালা ভাই। টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার নিয়ে যাওয়ার এবং শিকার শেষে সবার মধ্যে পাখি ভাগ করে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর।’
কাজীদা বলেন, ‘চলতে চলতেই থেমে রাস্তার দুপাশের ডালে বসা ঘুঘু, হরিয়াল, কবুতর বা বক মারতাম আমরা পয়েন্ট টুটু রাইফেল দিয়ে। তার আগে অবশ্য থাকত একটা প্রস্তুতিপর্ব: ছুটির আগের দিন রাইফেল নিয়ে গুলশানের শুটিং রেঞ্জে গিয়ে নিখুঁতভাবে রাইফেলগুলো জিরো করে রাখা একটা বড় কাজ ছিল। একমাত্র তাহলেই নিশ্চিত হওয়া যেত যেদিকে তাক করেছি, গুলিটা সেই জায়গায় গিয়ে লাগবে। সবাই আমরা সিঙ্গাপুর থেকে দামি টেলিস্কোপ আনিয়ে ফিট করে নিয়েছিলাম যার যার পয়েন্ট টুটু রাইফেলে। সারাটা দিন রোদে রোদে টোটো করে ঘুরে, ত্রিশ থেকে পঞ্চাশটা পাখি মারতাম আমরা। দুপুরের খাওয়াটা কোনো গাছের নিচে সেরে নিয়ে ঘণ্টাখানেক চলত গল্পগুজব, বিশ্রাম। তারপর আরও কিছুক্ষণ পাখির পেছনে ঘুরে রাস্তার ধারের কোনো দোকানে বসে চা-নাশতা খেয়ে সন্ধের পর ফিরে আসতাম পাখি নিয়ে। এই ছিল আমাদের শিকার বা আউটিং।’
শেষ দেখা
আমার খুব আফসোস ছিল একটি বিষয়ে। টুকটাক কয়েকটা বই রূপান্তর করা হলেও কাজীদাকে কোনো বই উৎসর্গ করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাঁকে একটি বই উৎসর্গ করতে পারি। সেবা প্রকাশনী থেকেই শাহনূর ভাই জেমস হিলটনের ‘লস্ট হরাইজন’ বইটি রূপান্তর করেছিলেন। একটু সংক্ষিপ্তভাবে রূপান্তর করা তিব্বতের পটভূমিতে লেখা বইটি খুব টেনেছিল তখন। চার-পাঁচবার পড়া হয়ে গিয়েছিল। পরে ঐতিহ্য থেকে ২০২০ সালে পূর্ণাঙ্গ রূপান্তর করি বইটি। এটি উৎসর্গ (অনুবাদকের উৎসর্গ) করি কাজী আনোয়ার হোসেনকে। বইটি কাজীদাকে দিতে স্ত্রী-মেয়েসহ দেখা করেছিলাম তাঁর সঙ্গে। অনেক গল্পই হয়েছিল তখন। মেয়ে ওয়াফিকাকে কোলে নিয়ে বইটার একটু অংশ পড়েছিলেনও কাজীদা। তখন অবশ্য কল্পনাও করতে পারিনি তাঁর সঙ্গে এই আমার শেষ দেখা। আফসোস হয়... যদি সেদিন কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে আরেকটু সময় কাটাতে পারতাম।
সিভিতে নাম...
আমার সিভিতে রেফারেন্স হিসেবে দিতে চাইলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। বললেন, কোনো সমস্যা নেই। আমার সিভিতে তারপর অনেকগুলো দিন রেফারেন্সের জায়গায় এক নম্বরে ছিল কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। তারপর ২০২২-এর ১৯ জানুয়ারি আমাদের সবাইকে ছেড়ে চিরতরে চলে গেলেন কাজীদা। তাঁর নামটা বাদ দিয়ে সিভিটা ঠিক করার সময় মনটা অনেক কেঁদেছিল। এখনো লেখাটা লিখতে গিয়ে বারবার মনে পড়ছে তাঁর কথা... কাজী আনোয়ার হোসেন আপনি বেঁচে থাকবেন আমাদের মতো পাঠকদের মনে।

নীরবতা পালন, সময়ের আগে পৌঁছানো এবং নিজের আবর্জনা নিজে বহন করা—এগুলো জাপানের এমন কিছু সামাজিক শিষ্টাচার, যা অনেক বিদেশি পর্যটক অজান্তেই ভঙ্গ করে বসেন।
৭ ঘণ্টা আগে
২০২৬ সালের ফ্যাশন ট্রেন্ড কী হতে চলেছে, তা নিয়ে শুরু হয়ে গেছে নানা জল্পনাকল্পনা; বিশেষ করে চুলের জন্য কী হতে চলেছে ট্রেন্ডি, তা নিয়ে ফ্যাশন-সচেতনদের আগ্রহের যেন শেষ নেই। কানাঘুষা চলছে, চুলের ক্ষেত্রে ২০২৬ সাল হয়তো হবে ‘এফোর্টলেস
৭ ঘণ্টা আগে
আজ আপনার আত্মবিশ্বাস বুর্জ খলিফার সমান উঁচুতে থাকবে। অফিসে বসের সামনে এমন ভাব করবেন যেন পুরো কোম্পানি আপনার বুদ্ধিতেই চলছে, অথচ আপনি হয়তো ই-মেইল পাসওয়ার্ডটাই মনে করতে পারছেন না।
১১ ঘণ্টা আগে
ডিসেম্বর মানেই বিয়ের মৌসুম। আর বিয়ে মানেই সাজগোজ। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করার এই মুহূর্ত স্মরণীয় করে রাখতে বর-কনে বিয়ের সাজ নিয়ে কতই-না পরিকল্পনা করেন! বিয়ের সাজের সবকিছু অর্থাৎ কনের লেহেঙ্গা কিংবা শাড়ি বা বরের শেরওয়ানি—সবকিছুই হতে হবে নিখুঁত।
১২ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

নীরবতা পালন, সময়ের আগে পৌঁছানো এবং নিজের আবর্জনা নিজে বহন করা—এগুলো জাপানের এমন কিছু সামাজিক শিষ্টাচার, যা অনেক বিদেশি পর্যটক অজান্তেই ভঙ্গ করে বসেন।
জাপানি সমাজে ‘হারিয়ো’ নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা রয়েছে। এই সংস্কৃতিতে মানুষ সব সময় আশপাশের পরিবেশ ও অন্যের অনুভূতির প্রতি সচেতন; যাতে সামাজিক সৌহার্দ্য বজায় থাকে। তবে এই অলিখিত নিয়মগুলো বিদেশিদের জন্য অনেক সময় বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে।
২০২৫ সালে মার্কিন ভ্রমণবিষয়ক ম্যাগাজিন কঁদে নাস্ত ট্রাভেলারের পাঠক জরিপে জাপান ‘বিশ্বের সেরা দেশ’ নির্বাচিত হওয়ার পর টোকিওতে বসবাসরত খাদ্য ও ভ্রমণ বিশেষজ্ঞ টোকিও হালফি পর্যটকদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ আচরণগত পরামর্শ তুলে ধরেন।
নির্ধারিত সময়ের আগে পৌঁছানো
জাপানে সময়নিষ্ঠা শুধু ভদ্রতা নয়, এটি দায়িত্ববোধ। এখানে ‘ঠিক সময়ে পৌঁছানো’ বলতে বোঝায় ৫-১০ মিনিট আগে উপস্থিত হওয়া; বিশেষ করে রেস্তোরাঁয় বুকিং থাকলে। দেরি করাকে এখানে খুবই অসম্মানজনক হিসেবে দেখা হয়। তাই যাতায়াতের সময় সব ধরনের বিলম্বের কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা করা জরুরি।
নীরব থাকা শিষ্টাচার
জাপানিরা শান্ত পরিবেশকে খুব গুরুত্ব দেন। ট্রেন, বাস, রেস্তোরাঁ বা যেকোনো পাবলিক স্থানে উচ্চ স্বরে কথা বলা উচিত নয়। ধীর ও শান্ত কণ্ঠে কথা বলাকে অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবে ধরা হয়।
‘মোত্তাইনাই’ সংস্কৃতি বুঝুন
‘মোত্তাইনাই’ মানে অপচয় না করা। খাবার, সময় বা পরিশ্রম—কোনো কিছুই যেন নষ্ট না হয়। সেটাই এই দর্শনের মূল কথা। খাবারের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্ডার না করা, প্রতিটি খাবারের পেছনের শ্রম ও উপাদানের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা। এসবই এই সংস্কৃতির অংশ।
খাবারের টেবিলে শালীনতা
জাপানে খাওয়া শুধু দৈনন্দিন কাজ নয়, এটি সাংস্কৃতিক আচারের অংশ। তাই কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি—
গণপরিবহনে শিষ্টাচার
জাপানের গণপরিবহনে চলাচল করার সময় নীরবতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ফোন সাইলেন্ট রাখতে হয়, উচ্চ স্বরে কথা বলা অনুচিত। সাধারণ ট্রেন বা বাসে খাবার খাওয়া নিষেধ। লাইনে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে জাপানিরা খুব শৃঙ্খলাবদ্ধ। আগে নামা যাত্রীদের নামতে দেওয়া হয়। এসকেলেটরেও নিয়ম আছে, টোকিওতে বাঁ পাশে দাঁড়ানো হয়, ওসাকায় ডান পাশে। স্থানীয়দের দেখে অনুসরণ করাই সবচেয়ে ভালো।
আবর্জনা নিজের দায়িত্ব
জাপানের রাস্তাঘাট পরিষ্কার হলেও সেখানে ডাস্টবিন খুব কম দেখা যায়। মানুষ সাধারণত নিজের আবর্জনা ব্যাগে রেখে দেয় এবং নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে আলাদা ভাগে (প্লাস্টিক, কাগজ, ধাতু ইত্যাদি) ফেলে।
ব্যক্তিগত পরিসরের প্রতি সম্মান
জাপানিরা ব্যক্তিগত পরিসরকে খুব গুরুত্ব দেন। অপরিচিত কাউকে জড়িয়ে ধরা বা স্পর্শ করা অস্বস্তিকর হতে পারে। করমর্দনের বদলে হালকা নত হয়ে অভিবাদন জানানোই প্রচলিত। প্রকাশ্যে ঘনিষ্ঠ আচরণও সাধারণত গ্রহণযোগ্য নয়।
ট্রাফিক আইন মানা
খালি রাস্তা হলেও জাপানিরা সবুজসংকেত না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। নিয়ম মেনে চলাই এখানে সামাজিক দায়িত্বের অংশ। পর্যটকদেরও সেটি অনুসরণ করা উচিত।
কথার আড়ালের অর্থ বোঝা জরুরি
জাপানিরা সাধারণত সরাসরি ‘না’ বলেন না। ‘কঠিন হবে’ বা ‘পরে দেখা যাবে’—এ ধরনের কথার আড়ালে ভদ্রভাবে প্রত্যাখ্যান লুকিয়ে থাকতে পারে। এখানে ‘হোননে’ (মনের কথা) ও ‘তাতেমায়ে’ (সামাজিক মুখোশ) এই দুই ধারণা খুব গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে সংঘাত এড়িয়ে সামাজিক সামঞ্জস্য বজায় রাখাই মুখ্য।
সূত্র: সিএন ট্রাভেলার

নীরবতা পালন, সময়ের আগে পৌঁছানো এবং নিজের আবর্জনা নিজে বহন করা—এগুলো জাপানের এমন কিছু সামাজিক শিষ্টাচার, যা অনেক বিদেশি পর্যটক অজান্তেই ভঙ্গ করে বসেন।
জাপানি সমাজে ‘হারিয়ো’ নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা রয়েছে। এই সংস্কৃতিতে মানুষ সব সময় আশপাশের পরিবেশ ও অন্যের অনুভূতির প্রতি সচেতন; যাতে সামাজিক সৌহার্দ্য বজায় থাকে। তবে এই অলিখিত নিয়মগুলো বিদেশিদের জন্য অনেক সময় বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে।
২০২৫ সালে মার্কিন ভ্রমণবিষয়ক ম্যাগাজিন কঁদে নাস্ত ট্রাভেলারের পাঠক জরিপে জাপান ‘বিশ্বের সেরা দেশ’ নির্বাচিত হওয়ার পর টোকিওতে বসবাসরত খাদ্য ও ভ্রমণ বিশেষজ্ঞ টোকিও হালফি পর্যটকদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ আচরণগত পরামর্শ তুলে ধরেন।
নির্ধারিত সময়ের আগে পৌঁছানো
জাপানে সময়নিষ্ঠা শুধু ভদ্রতা নয়, এটি দায়িত্ববোধ। এখানে ‘ঠিক সময়ে পৌঁছানো’ বলতে বোঝায় ৫-১০ মিনিট আগে উপস্থিত হওয়া; বিশেষ করে রেস্তোরাঁয় বুকিং থাকলে। দেরি করাকে এখানে খুবই অসম্মানজনক হিসেবে দেখা হয়। তাই যাতায়াতের সময় সব ধরনের বিলম্বের কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা করা জরুরি।
নীরব থাকা শিষ্টাচার
জাপানিরা শান্ত পরিবেশকে খুব গুরুত্ব দেন। ট্রেন, বাস, রেস্তোরাঁ বা যেকোনো পাবলিক স্থানে উচ্চ স্বরে কথা বলা উচিত নয়। ধীর ও শান্ত কণ্ঠে কথা বলাকে অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবে ধরা হয়।
‘মোত্তাইনাই’ সংস্কৃতি বুঝুন
‘মোত্তাইনাই’ মানে অপচয় না করা। খাবার, সময় বা পরিশ্রম—কোনো কিছুই যেন নষ্ট না হয়। সেটাই এই দর্শনের মূল কথা। খাবারের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্ডার না করা, প্রতিটি খাবারের পেছনের শ্রম ও উপাদানের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা। এসবই এই সংস্কৃতির অংশ।
খাবারের টেবিলে শালীনতা
জাপানে খাওয়া শুধু দৈনন্দিন কাজ নয়, এটি সাংস্কৃতিক আচারের অংশ। তাই কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি—
গণপরিবহনে শিষ্টাচার
জাপানের গণপরিবহনে চলাচল করার সময় নীরবতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ফোন সাইলেন্ট রাখতে হয়, উচ্চ স্বরে কথা বলা অনুচিত। সাধারণ ট্রেন বা বাসে খাবার খাওয়া নিষেধ। লাইনে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে জাপানিরা খুব শৃঙ্খলাবদ্ধ। আগে নামা যাত্রীদের নামতে দেওয়া হয়। এসকেলেটরেও নিয়ম আছে, টোকিওতে বাঁ পাশে দাঁড়ানো হয়, ওসাকায় ডান পাশে। স্থানীয়দের দেখে অনুসরণ করাই সবচেয়ে ভালো।
আবর্জনা নিজের দায়িত্ব
জাপানের রাস্তাঘাট পরিষ্কার হলেও সেখানে ডাস্টবিন খুব কম দেখা যায়। মানুষ সাধারণত নিজের আবর্জনা ব্যাগে রেখে দেয় এবং নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে আলাদা ভাগে (প্লাস্টিক, কাগজ, ধাতু ইত্যাদি) ফেলে।
ব্যক্তিগত পরিসরের প্রতি সম্মান
জাপানিরা ব্যক্তিগত পরিসরকে খুব গুরুত্ব দেন। অপরিচিত কাউকে জড়িয়ে ধরা বা স্পর্শ করা অস্বস্তিকর হতে পারে। করমর্দনের বদলে হালকা নত হয়ে অভিবাদন জানানোই প্রচলিত। প্রকাশ্যে ঘনিষ্ঠ আচরণও সাধারণত গ্রহণযোগ্য নয়।
ট্রাফিক আইন মানা
খালি রাস্তা হলেও জাপানিরা সবুজসংকেত না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। নিয়ম মেনে চলাই এখানে সামাজিক দায়িত্বের অংশ। পর্যটকদেরও সেটি অনুসরণ করা উচিত।
কথার আড়ালের অর্থ বোঝা জরুরি
জাপানিরা সাধারণত সরাসরি ‘না’ বলেন না। ‘কঠিন হবে’ বা ‘পরে দেখা যাবে’—এ ধরনের কথার আড়ালে ভদ্রভাবে প্রত্যাখ্যান লুকিয়ে থাকতে পারে। এখানে ‘হোননে’ (মনের কথা) ও ‘তাতেমায়ে’ (সামাজিক মুখোশ) এই দুই ধারণা খুব গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে সংঘাত এড়িয়ে সামাজিক সামঞ্জস্য বজায় রাখাই মুখ্য।
সূত্র: সিএন ট্রাভেলার

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নি
১৯ জানুয়ারি ২০২৩
২০২৬ সালের ফ্যাশন ট্রেন্ড কী হতে চলেছে, তা নিয়ে শুরু হয়ে গেছে নানা জল্পনাকল্পনা; বিশেষ করে চুলের জন্য কী হতে চলেছে ট্রেন্ডি, তা নিয়ে ফ্যাশন-সচেতনদের আগ্রহের যেন শেষ নেই। কানাঘুষা চলছে, চুলের ক্ষেত্রে ২০২৬ সাল হয়তো হবে ‘এফোর্টলেস
৭ ঘণ্টা আগে
আজ আপনার আত্মবিশ্বাস বুর্জ খলিফার সমান উঁচুতে থাকবে। অফিসে বসের সামনে এমন ভাব করবেন যেন পুরো কোম্পানি আপনার বুদ্ধিতেই চলছে, অথচ আপনি হয়তো ই-মেইল পাসওয়ার্ডটাই মনে করতে পারছেন না।
১১ ঘণ্টা আগে
ডিসেম্বর মানেই বিয়ের মৌসুম। আর বিয়ে মানেই সাজগোজ। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করার এই মুহূর্ত স্মরণীয় করে রাখতে বর-কনে বিয়ের সাজ নিয়ে কতই-না পরিকল্পনা করেন! বিয়ের সাজের সবকিছু অর্থাৎ কনের লেহেঙ্গা কিংবা শাড়ি বা বরের শেরওয়ানি—সবকিছুই হতে হবে নিখুঁত।
১২ ঘণ্টা আগেফারিয়া রহমান খান

২০২৬ সালের ফ্যাশন ট্রেন্ড কী হতে চলেছে, তা নিয়ে শুরু হয়ে গেছে নানা জল্পনাকল্পনা; বিশেষ করে চুলের জন্য কী হতে চলেছে ট্রেন্ডি, তা নিয়ে ফ্যাশন-সচেতনদের আগ্রহের যেন শেষ নেই। কানাঘুষা চলছে, চুলের ক্ষেত্রে ২০২৬ সাল হয়তো হবে ‘এফোর্টলেস পলিশ ইয়ার’; যেখানে কৃত্রিমতার চেয়ে চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য এবং ব্যক্তিগত রুচি বেশি প্রাধান্য পাবে। তবে বছরের শুরুতে যাঁরা নতুন হেয়ারকাট নিয়ে সবার সামনে হাজির হতে চাইছেন, তাঁরা অপেক্ষা না করে এই হেয়ারকাটগুলোর যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন।
গ্র্যাজুয়েট বব
গতানুগতিক বব কাটের চিরচেনা রূপ ছাপিয়ে ২০২৬ সালে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকতে পারে ‘গ্র্যাজুয়েট বব’। এতে পেছনের দিকের চুলগুলো কিছুটা ছোট ও সূক্ষ্ম টেক্সচারযুক্ত থাকে এবং সামনের দিকের চুলগুলো ক্রমান্বয়ে কিছুটা লম্বা হয়ে আসে। মানে, দুই কানের পাশের চুলগুলো মাথার পেছনের অংশের চুলের তুলনায় পয়েন্ট আকারে লম্বা হয়ে নামে। এই কাট চুলে চমৎকার ভলিউম যোগ করে। যাঁরা ঘরে কিংবা কর্মক্ষেত্রে—উভয় ক্ষেত্রে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী, স্মার্ট এবং একই সঙ্গে বেশ পরিপাটি হিসেবে উপস্থাপন করতে চান, তাঁদের জন্য এই কাট হবে সেরা পছন্দ।
ডিসকানেক্টেড ফ্রিঞ্জ
যাঁরা একটু বোল্ড ও ব্যতিক্রম লুকে নিজেকে দেখতে চান, তাঁদের জন্য এই ডিসকানেক্টেড ফ্রিঞ্জ লুক। এই হেয়ারস্টাইলের মূল বিশেষত্ব হলো কপালের সামনের ছোট করে ছাঁটা চুলগুলো; যা বাকি চুলের সঙ্গে মিশে না গিয়ে কিছুটা আলাদা বা ‘ডিসকানেক্টেড’ অবস্থায় থাকে। এটি আপনার চেহারায় একটি আত্মবিশ্বাসী ও বোল্ড লুক নিয়ে আসবে।
সাইড ফ্রিঞ্জ
কোমল আর মায়াবী একটি লুকের জন্য সাইড ফ্রিঞ্জের আবেদন চিরন্তন। চুলের দৈর্ঘ্য যেমনই হোক, এক পাশে আলতো করে ঝুলে থাকা এই চুলগুলো চেহারায় একটি চমৎকার ‘ফেস-ফ্রেমিং’ ইফেক্ট তৈরি করে, যা মুখের গড়নকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। যাঁরা চুলে খুব বেশি কাটছাঁট না করে পরিবর্তন আনতে চান, এই স্টাইল তাঁদের জন্য।
প্রতিবছর বিভিন্ন হেয়ারকাট ট্রেন্ডে আসে। তবে ট্রেন্ডে থাকলে কিংবা ভালো লাগলেই যেকোনো হেয়ারকাট দেওয়াটা উচিত নয়। মুখের গড়ন ও চুলের ধরন বুঝে হেয়ারকাট বেছে নিতে হবে। না হলে পুরো লুকটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।–শোভন সাহা, কসমেটোলজিস্ট ও শোভন মেকওভারের স্বত্বাধিকারী
স্ক্যাল্পটেড কার্লস
যাঁদের চুল প্রাকৃতিকভাবেই কোঁকড়া, তাঁদের জন্য সুসংবাদ। আগামী বছরের ফ্যাশনে কৃত্রিমভাবে চুল সোজা করার চেয়ে চুলের স্বাভাবিক টেক্সচার বা গঠনই বেশি গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট শেপ বা আকৃতিতে সাজানো এই ‘স্ক্যাল্পচারাল কার্লস’ আপনার পুরো লুকে যোগ করবে অনন্য এক মাত্রা। এটি চুলের স্বাভাবিক ভলিউম বজায় রেখে চুলে আনে প্রাণবন্ত ভাব। যাঁরা নিজের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে একটু ভালোভাবে তুলে ধরতে চান, তাঁদের জন্য এই স্টাইল হবে আগামী বছরের সেরা পছন্দ।

সফট কার্ভ বব
হলিউডের পুরোনো সিনেমা দেখতে যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁরা বেছে নিতে পারেন এই হেয়ারকাট। ঘাড় পর্যন্ত কাটা চুলের আগার অংশ সামান্য কার্ভ করা থাকে এই হেয়ারস্টাইলে। শুধু এক পাশে সিঁথি কেটে পরিপাটি করে আঁচড়ে নিলেই চুল নিয়ে আর কোনো ভাবনা নেই।

চুলে প্রাধান্য পাবে চকচকে রঙ
চুলের রঙের ক্ষেত্রে আগামী বছর রাজত্ব করতে চলেছে গাঢ় বাদামি বা ল্যাভিস ব্রুনেট শেডের নানা বৈচিত্র্য। ধারণা করা হচ্ছে, বিশেষ করে কফি মোকা বা এসপ্রেসোর মতো উজ্জ্বল ও চকচকে রংগুলো ফ্যাশন-সচেতনদের পছন্দের শীর্ষে থাকবে। এই শেডগুলোর বিশেষত্ব হলো এদের অসাধারণ উজ্জ্বলতা ও গ্লসি ফিনিশ, যা চুলে একটি প্রাকৃতিক কিন্তু অত্যন্ত ‘লাক্সারিয়াস’ বা বিলাসবহুল ভাব ফুটিয়ে তোলে। সেই সঙ্গে এই রংগুলো বাংলাদেশি স্কিন টোনগুলোর সঙ্গে খুব ভালো মানায় এবং চুলে একটা স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ভাব আনে।

২০২৬ সালের ফ্যাশন ট্রেন্ড কী হতে চলেছে, তা নিয়ে শুরু হয়ে গেছে নানা জল্পনাকল্পনা; বিশেষ করে চুলের জন্য কী হতে চলেছে ট্রেন্ডি, তা নিয়ে ফ্যাশন-সচেতনদের আগ্রহের যেন শেষ নেই। কানাঘুষা চলছে, চুলের ক্ষেত্রে ২০২৬ সাল হয়তো হবে ‘এফোর্টলেস পলিশ ইয়ার’; যেখানে কৃত্রিমতার চেয়ে চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য এবং ব্যক্তিগত রুচি বেশি প্রাধান্য পাবে। তবে বছরের শুরুতে যাঁরা নতুন হেয়ারকাট নিয়ে সবার সামনে হাজির হতে চাইছেন, তাঁরা অপেক্ষা না করে এই হেয়ারকাটগুলোর যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন।
গ্র্যাজুয়েট বব
গতানুগতিক বব কাটের চিরচেনা রূপ ছাপিয়ে ২০২৬ সালে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকতে পারে ‘গ্র্যাজুয়েট বব’। এতে পেছনের দিকের চুলগুলো কিছুটা ছোট ও সূক্ষ্ম টেক্সচারযুক্ত থাকে এবং সামনের দিকের চুলগুলো ক্রমান্বয়ে কিছুটা লম্বা হয়ে আসে। মানে, দুই কানের পাশের চুলগুলো মাথার পেছনের অংশের চুলের তুলনায় পয়েন্ট আকারে লম্বা হয়ে নামে। এই কাট চুলে চমৎকার ভলিউম যোগ করে। যাঁরা ঘরে কিংবা কর্মক্ষেত্রে—উভয় ক্ষেত্রে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী, স্মার্ট এবং একই সঙ্গে বেশ পরিপাটি হিসেবে উপস্থাপন করতে চান, তাঁদের জন্য এই কাট হবে সেরা পছন্দ।
ডিসকানেক্টেড ফ্রিঞ্জ
যাঁরা একটু বোল্ড ও ব্যতিক্রম লুকে নিজেকে দেখতে চান, তাঁদের জন্য এই ডিসকানেক্টেড ফ্রিঞ্জ লুক। এই হেয়ারস্টাইলের মূল বিশেষত্ব হলো কপালের সামনের ছোট করে ছাঁটা চুলগুলো; যা বাকি চুলের সঙ্গে মিশে না গিয়ে কিছুটা আলাদা বা ‘ডিসকানেক্টেড’ অবস্থায় থাকে। এটি আপনার চেহারায় একটি আত্মবিশ্বাসী ও বোল্ড লুক নিয়ে আসবে।
সাইড ফ্রিঞ্জ
কোমল আর মায়াবী একটি লুকের জন্য সাইড ফ্রিঞ্জের আবেদন চিরন্তন। চুলের দৈর্ঘ্য যেমনই হোক, এক পাশে আলতো করে ঝুলে থাকা এই চুলগুলো চেহারায় একটি চমৎকার ‘ফেস-ফ্রেমিং’ ইফেক্ট তৈরি করে, যা মুখের গড়নকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। যাঁরা চুলে খুব বেশি কাটছাঁট না করে পরিবর্তন আনতে চান, এই স্টাইল তাঁদের জন্য।
প্রতিবছর বিভিন্ন হেয়ারকাট ট্রেন্ডে আসে। তবে ট্রেন্ডে থাকলে কিংবা ভালো লাগলেই যেকোনো হেয়ারকাট দেওয়াটা উচিত নয়। মুখের গড়ন ও চুলের ধরন বুঝে হেয়ারকাট বেছে নিতে হবে। না হলে পুরো লুকটাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।–শোভন সাহা, কসমেটোলজিস্ট ও শোভন মেকওভারের স্বত্বাধিকারী
স্ক্যাল্পটেড কার্লস
যাঁদের চুল প্রাকৃতিকভাবেই কোঁকড়া, তাঁদের জন্য সুসংবাদ। আগামী বছরের ফ্যাশনে কৃত্রিমভাবে চুল সোজা করার চেয়ে চুলের স্বাভাবিক টেক্সচার বা গঠনই বেশি গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট শেপ বা আকৃতিতে সাজানো এই ‘স্ক্যাল্পচারাল কার্লস’ আপনার পুরো লুকে যোগ করবে অনন্য এক মাত্রা। এটি চুলের স্বাভাবিক ভলিউম বজায় রেখে চুলে আনে প্রাণবন্ত ভাব। যাঁরা নিজের স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে একটু ভালোভাবে তুলে ধরতে চান, তাঁদের জন্য এই স্টাইল হবে আগামী বছরের সেরা পছন্দ।

সফট কার্ভ বব
হলিউডের পুরোনো সিনেমা দেখতে যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁরা বেছে নিতে পারেন এই হেয়ারকাট। ঘাড় পর্যন্ত কাটা চুলের আগার অংশ সামান্য কার্ভ করা থাকে এই হেয়ারস্টাইলে। শুধু এক পাশে সিঁথি কেটে পরিপাটি করে আঁচড়ে নিলেই চুল নিয়ে আর কোনো ভাবনা নেই।

চুলে প্রাধান্য পাবে চকচকে রঙ
চুলের রঙের ক্ষেত্রে আগামী বছর রাজত্ব করতে চলেছে গাঢ় বাদামি বা ল্যাভিস ব্রুনেট শেডের নানা বৈচিত্র্য। ধারণা করা হচ্ছে, বিশেষ করে কফি মোকা বা এসপ্রেসোর মতো উজ্জ্বল ও চকচকে রংগুলো ফ্যাশন-সচেতনদের পছন্দের শীর্ষে থাকবে। এই শেডগুলোর বিশেষত্ব হলো এদের অসাধারণ উজ্জ্বলতা ও গ্লসি ফিনিশ, যা চুলে একটি প্রাকৃতিক কিন্তু অত্যন্ত ‘লাক্সারিয়াস’ বা বিলাসবহুল ভাব ফুটিয়ে তোলে। সেই সঙ্গে এই রংগুলো বাংলাদেশি স্কিন টোনগুলোর সঙ্গে খুব ভালো মানায় এবং চুলে একটা স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ভাব আনে।

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নি
১৯ জানুয়ারি ২০২৩
নীরবতা পালন, সময়ের আগে পৌঁছানো এবং নিজের আবর্জনা নিজে বহন করা—এগুলো জাপানের এমন কিছু সামাজিক শিষ্টাচার, যা অনেক বিদেশি পর্যটক অজান্তেই ভঙ্গ করে বসেন।
৭ ঘণ্টা আগে
আজ আপনার আত্মবিশ্বাস বুর্জ খলিফার সমান উঁচুতে থাকবে। অফিসে বসের সামনে এমন ভাব করবেন যেন পুরো কোম্পানি আপনার বুদ্ধিতেই চলছে, অথচ আপনি হয়তো ই-মেইল পাসওয়ার্ডটাই মনে করতে পারছেন না।
১১ ঘণ্টা আগে
ডিসেম্বর মানেই বিয়ের মৌসুম। আর বিয়ে মানেই সাজগোজ। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করার এই মুহূর্ত স্মরণীয় করে রাখতে বর-কনে বিয়ের সাজ নিয়ে কতই-না পরিকল্পনা করেন! বিয়ের সাজের সবকিছু অর্থাৎ কনের লেহেঙ্গা কিংবা শাড়ি বা বরের শেরওয়ানি—সবকিছুই হতে হবে নিখুঁত।
১২ ঘণ্টা আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

মেষ
আজ আপনার আত্মবিশ্বাস বুর্জ খলিফার সমান উঁচুতে থাকবে। অফিসে বসের সামনে এমন ভাব করবেন যেন পুরো কোম্পানি আপনার বুদ্ধিতেই চলছে, অথচ আপনি হয়তো ই-মেইল পাসওয়ার্ডটাই মনে করতে পারছেন না। বসের মুড আজ খিটখিটে হতে পারে, তাই অতিরিক্ত ক্রেডিট নিতে গিয়ে আবার অতিরিক্ত কাজ ঘাড়ে চাপিয়ে নেবেন না। কাজের ভান করাটাও একটা শিল্প, আজ সেটা রপ্ত করুন। রাস্তায় হাঁটার সময় ফোনের দিকে নয়, রাস্তার গর্তের দিকে তাকান।
বৃষ
আজ আপনার ‘রাজযোগ’ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা, তবে শর্ত হলো—বিছানা ছাড়তে হবে। আলস্য আজ আপনার প্রধান শত্রু। পুরোনো কোনো বন্ধুর হঠাৎ উদয় হতে পারে এবং ৯৯ পারসেন্ট সম্ভাবনা সে আপনার কাছে টাকা ধার চাইবে। টাকা দেওয়ার আগে আয়না দেখে ‘না’ বলার প্র্যাকটিস করে নিন। খাবার দেখে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে মনে রাখবেন পকেট আপনারই। কাচ্চি বিরিয়ানির বদলে মৌসুমি সবজি খেয়ে পেটকে একটু শান্তি দিন।
মিথুন
আজ আপনার মুখে খই ফুটবে। যুক্তি দিয়ে বাড়ির লোকেদের এমনকি দেয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডারকেও হার মানিয়ে দেবেন। কর্মক্ষেত্রে আপনার কথা শোনার চেয়ে সবাই আপনার টাইপিং মিসটেক ধরায় বেশি উৎসাহ দেখাবে। প্রেমজীবনে সামান্য ঝগড়ার যোগ আছে। কারণ, আপনি হয়তো সঙ্গীর নাম ভুল করে অন্য কারোর নামে ডেকে ফেলতে পারেন! কথা কম বলে কান খোলা রাখুন। ফোনের রিচার্জ শেষ হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় সব ঝগড়া মিটিয়ে নিন।
কর্কট
হঠাৎ অর্থপ্রাপ্তির যোগ আছে—হতে পারে আলমারির পুরোনো কোটের পকেটে বা ধোয়া প্যান্টের ভেতর থেকে একটা কড়কড়ে নোট পেয়ে যাবেন! ব্যবসায়ীদের জন্য দিনটি ভালো, তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মাথা খাটান, মন নয়। বাড়িতে হুটহাট অতিথির আগমনে পকেটে টান পড়তে পারে এবং প্রিয় খাবারটি তাদের পাতে চলে যেতে পারে। হাসিমুখে অতিথি বিদায় করাটাই আজকের প্রধান কাজ। মিষ্টি খাওয়ার আগে আপনার সুগার এবং প্যান্টের কোমরের মাপের কথা ভাবুন।
সিংহ
আজ নিজেকে বনের রাজা ভাবলেও বাড়িতে এসে দেখবেন আপনি বড়জোর ‘বিড়াল’। বাড়ির লোকের কাছে অকারণ ঝাড়ি খাওয়ার যোগ আছে। কর্মক্ষেত্রে গাধার মতো পরিশ্রম করলেও ক্রেডিট নেওয়ার সময় দেখবেন অন্য কেউ ফিতা কাটছে। তবে বিকেলের দিকে প্রেমের ক্ষেত্রে কোনো চমক অপেক্ষা করছে—হয়তো কোনো ব্লক হওয়া আইডি থেকে আনব্লক হতে পারেন! গর্জন না করে বিড়ালের মতো মিউ মিউ করলে আজ শান্তি পাবেন। আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে বেশিক্ষণ হাসবেন না, লোকে পাগল ভাবতে পারে।
কন্যা
আজ আপনার সবকিছুতেই ‘পারফেকশন’ চাই। চায়ের কাপে এক ফোঁটা দাগ বা কার্পেটের এক কোণে সামান্য ধুলা দেখলে আপনার বিপি বেড়ে যেতে পারে। ভবিষ্যতের চিন্তায় মগ্ন থেকে ডাল পুড়িয়ে ফেলার রেকর্ড আজ আপনি গড়তে পারেন। সমালোচনা করার স্বভাবটা আজ একটু কমানোর চেষ্টা করুন। ভুল ধরা বন্ধ করে নিজের ভুলগুলো একবার গুনুন। লজিক দিয়ে কথা বলুন, ম্যাজিক বা অতিপ্রাকৃত কিছু আশা করবেন না।
তুলা
আজ আপনার ভেতরকার ‘শপার’ বা ক্রেতা সত্তাটি জেগে উঠবে। পকেটে টাকা থাকুক বা না থাকুক, অনলাইন শপিং অ্যাপে উইশলিস্ট ভরিয়ে দেবেন। দামি জিনিস কিনতে গিয়ে সস্তা নকল জিনিস কিনে ঠকার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ। স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে মান-অভিমান চললে আজ একটা ডার্ক চকলেট দিয়েই সব মিটিয়ে নিতে পারেন। পকেটের ওজন বুঝেই পা ফেলুন, ক্রেডিট কার্ড আজ আপনার শত্রু। শপিং মলে ঢোকার আগে ফোনটা সাইলেন্ট করে দিন।
বৃশ্চিক
আজ আপনার মধ্যে ফেলুদা বা শার্লক হোমস জেগে উঠবে। কে কার সঙ্গে চ্যাট করছে আর কার স্ট্যাটাস হাইড করা—সব খবর আজ রাখতে চাইবেন। গোপন শত্রুরা পেছনে কাঠি করার চেষ্টা করবে, কিন্তু আপনিও তো কম যান না! আজ পাল্টা হুল ফোটানোর জন্য আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত। গোয়েন্দাগিরি ব্যক্তিগত জীবনে না করে কাজে লাগান। অন্যের ফোনে উঁকি মারা স্বাস্থ্যের জন্য (বিশেষ করে ঘাড়ের জন্য) ক্ষতিকর।
ধনু
বাবার সঙ্গে দীর্ঘদিনের আর্থিক বা সম্পত্তি-সংক্রান্ত ঝামেলা আজ এক কাপ চায়ের আড্ডায় মিটে যেতে পারে। বিকেলের দিকে আকাশকুসুম কল্পনা করবেন—গাড়ি কেনা বা বিদেশে সেটল হওয়া নিয়ে (ব্যাংকে ৫০০ টাকা ব্যালেন্স থাকলেও)। তবে জীবনসঙ্গীর আবদার মেটাতে গিয়ে আজ হাঁসফাঁস অবস্থা হতে পারে। স্বপ্ন দেখুন, কিন্তু বাস্তবের মাটিটা শক্ত করে ধরুন। বন্ধুদের পার্টি দেওয়ার চক্করে মাসের বাজেট শেষ করবেন না।
মকর
অফিসে কাজের চাপে আজ আপনার অবস্থা হতে পারে ‘ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন’ দেখার মতো। বসের ই-মেইল দেখলে মনে হতে পারে হিমালয়ে চলে যাই, কিন্তু পরক্ষণেই স্যালারির মেসেজটার কথা ভেবে কাজে মন দেবেন। আজ সহকর্মীদের সঙ্গে রাজনীতির বদলে কাজের আলোচনা করাই শ্রেয়। ধৈর্যই আজ আপনার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। অফিসের ফ্রি চা-কফি বেশি খাবেন না, অ্যাসিডিটি হতে পারে।
কুম্ভ
আজ ভীষণ সমাজসেবী ও দায়িত্বশীল হয়ে উঠবেন। বাড়ির ঝুল ঝাড়া থেকে শুরু করে পাড়ার মোড়ে আড্ডা দেওয়া—সবতেই আপনার সক্রিয় উপস্থিতি। পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে নস্টালজিয়ায় ভুগবেন। শেয়ার বাজারে টাকা থাকলে আজ একটু নজর রাখুন, গ্রাফ আপনার দিকে ঘুরতেও পারে। দায়িত্ব পালন করুন কিন্তু সেটা যেন লোকদেখানো না হয়। আলস্য ত্যাগ করুন, তবে কাজ করতে গিয়ে হাঁপিয়ে যাবেন না।
মীন
যাঁরা সিঙ্গেল আছেন, আজ তাঁদের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসার শুভ যোগ আছে। আর যাঁরা বিবাহিত, তাঁরা সঙ্গীর সঙ্গে কোনো পুরোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে ঝগড়া মিটিয়ে নিন। ব্যবসায় অংশীদারের সঙ্গে আজ সামান্য কারণে কথা-কাটাকাটি হতে পারে, তাই মুখে কুলুপ আঁটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কল্পনা আর বাস্তবের মাঝে একটা সীমারেখা টানুন। মাছের মতো শুধু পানি না খেয়ে মাঝে মাঝে লেবু-জলও খান।

মেষ
আজ আপনার আত্মবিশ্বাস বুর্জ খলিফার সমান উঁচুতে থাকবে। অফিসে বসের সামনে এমন ভাব করবেন যেন পুরো কোম্পানি আপনার বুদ্ধিতেই চলছে, অথচ আপনি হয়তো ই-মেইল পাসওয়ার্ডটাই মনে করতে পারছেন না। বসের মুড আজ খিটখিটে হতে পারে, তাই অতিরিক্ত ক্রেডিট নিতে গিয়ে আবার অতিরিক্ত কাজ ঘাড়ে চাপিয়ে নেবেন না। কাজের ভান করাটাও একটা শিল্প, আজ সেটা রপ্ত করুন। রাস্তায় হাঁটার সময় ফোনের দিকে নয়, রাস্তার গর্তের দিকে তাকান।
বৃষ
আজ আপনার ‘রাজযোগ’ হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা, তবে শর্ত হলো—বিছানা ছাড়তে হবে। আলস্য আজ আপনার প্রধান শত্রু। পুরোনো কোনো বন্ধুর হঠাৎ উদয় হতে পারে এবং ৯৯ পারসেন্ট সম্ভাবনা সে আপনার কাছে টাকা ধার চাইবে। টাকা দেওয়ার আগে আয়না দেখে ‘না’ বলার প্র্যাকটিস করে নিন। খাবার দেখে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে মনে রাখবেন পকেট আপনারই। কাচ্চি বিরিয়ানির বদলে মৌসুমি সবজি খেয়ে পেটকে একটু শান্তি দিন।
মিথুন
আজ আপনার মুখে খই ফুটবে। যুক্তি দিয়ে বাড়ির লোকেদের এমনকি দেয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডারকেও হার মানিয়ে দেবেন। কর্মক্ষেত্রে আপনার কথা শোনার চেয়ে সবাই আপনার টাইপিং মিসটেক ধরায় বেশি উৎসাহ দেখাবে। প্রেমজীবনে সামান্য ঝগড়ার যোগ আছে। কারণ, আপনি হয়তো সঙ্গীর নাম ভুল করে অন্য কারোর নামে ডেকে ফেলতে পারেন! কথা কম বলে কান খোলা রাখুন। ফোনের রিচার্জ শেষ হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় সব ঝগড়া মিটিয়ে নিন।
কর্কট
হঠাৎ অর্থপ্রাপ্তির যোগ আছে—হতে পারে আলমারির পুরোনো কোটের পকেটে বা ধোয়া প্যান্টের ভেতর থেকে একটা কড়কড়ে নোট পেয়ে যাবেন! ব্যবসায়ীদের জন্য দিনটি ভালো, তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মাথা খাটান, মন নয়। বাড়িতে হুটহাট অতিথির আগমনে পকেটে টান পড়তে পারে এবং প্রিয় খাবারটি তাদের পাতে চলে যেতে পারে। হাসিমুখে অতিথি বিদায় করাটাই আজকের প্রধান কাজ। মিষ্টি খাওয়ার আগে আপনার সুগার এবং প্যান্টের কোমরের মাপের কথা ভাবুন।
সিংহ
আজ নিজেকে বনের রাজা ভাবলেও বাড়িতে এসে দেখবেন আপনি বড়জোর ‘বিড়াল’। বাড়ির লোকের কাছে অকারণ ঝাড়ি খাওয়ার যোগ আছে। কর্মক্ষেত্রে গাধার মতো পরিশ্রম করলেও ক্রেডিট নেওয়ার সময় দেখবেন অন্য কেউ ফিতা কাটছে। তবে বিকেলের দিকে প্রেমের ক্ষেত্রে কোনো চমক অপেক্ষা করছে—হয়তো কোনো ব্লক হওয়া আইডি থেকে আনব্লক হতে পারেন! গর্জন না করে বিড়ালের মতো মিউ মিউ করলে আজ শান্তি পাবেন। আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে বেশিক্ষণ হাসবেন না, লোকে পাগল ভাবতে পারে।
কন্যা
আজ আপনার সবকিছুতেই ‘পারফেকশন’ চাই। চায়ের কাপে এক ফোঁটা দাগ বা কার্পেটের এক কোণে সামান্য ধুলা দেখলে আপনার বিপি বেড়ে যেতে পারে। ভবিষ্যতের চিন্তায় মগ্ন থেকে ডাল পুড়িয়ে ফেলার রেকর্ড আজ আপনি গড়তে পারেন। সমালোচনা করার স্বভাবটা আজ একটু কমানোর চেষ্টা করুন। ভুল ধরা বন্ধ করে নিজের ভুলগুলো একবার গুনুন। লজিক দিয়ে কথা বলুন, ম্যাজিক বা অতিপ্রাকৃত কিছু আশা করবেন না।
তুলা
আজ আপনার ভেতরকার ‘শপার’ বা ক্রেতা সত্তাটি জেগে উঠবে। পকেটে টাকা থাকুক বা না থাকুক, অনলাইন শপিং অ্যাপে উইশলিস্ট ভরিয়ে দেবেন। দামি জিনিস কিনতে গিয়ে সস্তা নকল জিনিস কিনে ঠকার সম্ভাবনা ১০০ শতাংশ। স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে মান-অভিমান চললে আজ একটা ডার্ক চকলেট দিয়েই সব মিটিয়ে নিতে পারেন। পকেটের ওজন বুঝেই পা ফেলুন, ক্রেডিট কার্ড আজ আপনার শত্রু। শপিং মলে ঢোকার আগে ফোনটা সাইলেন্ট করে দিন।
বৃশ্চিক
আজ আপনার মধ্যে ফেলুদা বা শার্লক হোমস জেগে উঠবে। কে কার সঙ্গে চ্যাট করছে আর কার স্ট্যাটাস হাইড করা—সব খবর আজ রাখতে চাইবেন। গোপন শত্রুরা পেছনে কাঠি করার চেষ্টা করবে, কিন্তু আপনিও তো কম যান না! আজ পাল্টা হুল ফোটানোর জন্য আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত। গোয়েন্দাগিরি ব্যক্তিগত জীবনে না করে কাজে লাগান। অন্যের ফোনে উঁকি মারা স্বাস্থ্যের জন্য (বিশেষ করে ঘাড়ের জন্য) ক্ষতিকর।
ধনু
বাবার সঙ্গে দীর্ঘদিনের আর্থিক বা সম্পত্তি-সংক্রান্ত ঝামেলা আজ এক কাপ চায়ের আড্ডায় মিটে যেতে পারে। বিকেলের দিকে আকাশকুসুম কল্পনা করবেন—গাড়ি কেনা বা বিদেশে সেটল হওয়া নিয়ে (ব্যাংকে ৫০০ টাকা ব্যালেন্স থাকলেও)। তবে জীবনসঙ্গীর আবদার মেটাতে গিয়ে আজ হাঁসফাঁস অবস্থা হতে পারে। স্বপ্ন দেখুন, কিন্তু বাস্তবের মাটিটা শক্ত করে ধরুন। বন্ধুদের পার্টি দেওয়ার চক্করে মাসের বাজেট শেষ করবেন না।
মকর
অফিসে কাজের চাপে আজ আপনার অবস্থা হতে পারে ‘ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন’ দেখার মতো। বসের ই-মেইল দেখলে মনে হতে পারে হিমালয়ে চলে যাই, কিন্তু পরক্ষণেই স্যালারির মেসেজটার কথা ভেবে কাজে মন দেবেন। আজ সহকর্মীদের সঙ্গে রাজনীতির বদলে কাজের আলোচনা করাই শ্রেয়। ধৈর্যই আজ আপনার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। অফিসের ফ্রি চা-কফি বেশি খাবেন না, অ্যাসিডিটি হতে পারে।
কুম্ভ
আজ ভীষণ সমাজসেবী ও দায়িত্বশীল হয়ে উঠবেন। বাড়ির ঝুল ঝাড়া থেকে শুরু করে পাড়ার মোড়ে আড্ডা দেওয়া—সবতেই আপনার সক্রিয় উপস্থিতি। পুরোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে নস্টালজিয়ায় ভুগবেন। শেয়ার বাজারে টাকা থাকলে আজ একটু নজর রাখুন, গ্রাফ আপনার দিকে ঘুরতেও পারে। দায়িত্ব পালন করুন কিন্তু সেটা যেন লোকদেখানো না হয়। আলস্য ত্যাগ করুন, তবে কাজ করতে গিয়ে হাঁপিয়ে যাবেন না।
মীন
যাঁরা সিঙ্গেল আছেন, আজ তাঁদের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসার শুভ যোগ আছে। আর যাঁরা বিবাহিত, তাঁরা সঙ্গীর সঙ্গে কোনো পুরোনো রেস্টুরেন্টে গিয়ে ঝগড়া মিটিয়ে নিন। ব্যবসায় অংশীদারের সঙ্গে আজ সামান্য কারণে কথা-কাটাকাটি হতে পারে, তাই মুখে কুলুপ আঁটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। কল্পনা আর বাস্তবের মাঝে একটা সীমারেখা টানুন। মাছের মতো শুধু পানি না খেয়ে মাঝে মাঝে লেবু-জলও খান।

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নি
১৯ জানুয়ারি ২০২৩
নীরবতা পালন, সময়ের আগে পৌঁছানো এবং নিজের আবর্জনা নিজে বহন করা—এগুলো জাপানের এমন কিছু সামাজিক শিষ্টাচার, যা অনেক বিদেশি পর্যটক অজান্তেই ভঙ্গ করে বসেন।
৭ ঘণ্টা আগে
২০২৬ সালের ফ্যাশন ট্রেন্ড কী হতে চলেছে, তা নিয়ে শুরু হয়ে গেছে নানা জল্পনাকল্পনা; বিশেষ করে চুলের জন্য কী হতে চলেছে ট্রেন্ডি, তা নিয়ে ফ্যাশন-সচেতনদের আগ্রহের যেন শেষ নেই। কানাঘুষা চলছে, চুলের ক্ষেত্রে ২০২৬ সাল হয়তো হবে ‘এফোর্টলেস
৭ ঘণ্টা আগে
ডিসেম্বর মানেই বিয়ের মৌসুম। আর বিয়ে মানেই সাজগোজ। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করার এই মুহূর্ত স্মরণীয় করে রাখতে বর-কনে বিয়ের সাজ নিয়ে কতই-না পরিকল্পনা করেন! বিয়ের সাজের সবকিছু অর্থাৎ কনের লেহেঙ্গা কিংবা শাড়ি বা বরের শেরওয়ানি—সবকিছুই হতে হবে নিখুঁত।
১২ ঘণ্টা আগেফারিয়া রহমান খান

ডিসেম্বর মানেই বিয়ের মৌসুম। আর বিয়ে মানেই সাজগোজ। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করার এই মুহূর্ত স্মরণীয় করে রাখতে বর-কনে বিয়ের সাজ নিয়ে কতই-না পরিকল্পনা করেন! বিয়ের সাজের সবকিছু অর্থাৎ কনের লেহেঙ্গা কিংবা শাড়ি বা বরের শেরওয়ানি—সবকিছুই হতে হবে নিখুঁত। খেয়াল করলে দেখবেন, প্রতিবছর বিয়ের পোশাক ও সাজে নতুন কিছু যোগ হয়েছে, আবার বাদ পড়েছে সাজের কিছু পুরোনো চল। ২০২৫ সালেও বিয়ের ট্রেন্ডে এসেছে বেশ কিছু পরিবর্তন। কসমেটোলজিস্ট ও শোভন মেকওভারের স্বত্বাধিকারী শোভন সাহার সঙ্গে কথা বলে চলতি বছর বিয়ের সাজে কী কী বিষয় যোগ ও বিয়োগ হয়েছে, তা নিয়ে লিখেছেন ফারিয়া রহমান খান।
এবার বিয়ের ট্রেন্ডে যা কিছু যোগ হয়েছে
তাজা ফুলের আভিজাত্য
বিগত কয়েক বছরে চুল সাজাতে এবং হলুদের গয়না হিসেবে নারীরা আর্টিফিশিয়াল ফুল ব্যবহার করেছেন। শাড়ি বা লেহেঙ্গার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে এসব গয়না ব্যবহারে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেছে নারীদের মধ্য়ে। কিন্তু এখন চুল ও গয়নায় তো বটেই, হলুদ বা মেহেদির অনুষ্ঠানে ফ্লোরাল ওড়নায়ও আর্টিফিশিয়াল ফুলের চেয়ে তাজা ফুল ব্যবহারে আগ্রহ দেখা গেছে। শোভন সাহা বলেন, ‘এ বছর বিয়ের ডেকোরেশনেও বড় জায়গা করে নিয়েছে বড় বড় ফুলের ঝাড়বাতি এবং ফুলের পাপড়ি বিছানো হাঁটার পথ সবার নজর কেড়েছে, যা আগামী বছরেও ট্রেন্ডে থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’
আভিজাত্যের ছোঁয়া
বিয়েতে রাজকীয় সাজের প্রতি বাঙালির টান চিরন্তন। ২০২৫ সালের মতো আগামী বছরেও ট্রেন্ডে থাকবে মীনাকারি কাজ, ঐতিহ্যবাহী বেনারসি, জামদানি, কাঞ্জিভরম ও মসলিন শাড়ি। সেই সঙ্গে বরের সাজে রাজকীয় ভাব আনতে ভারী কাজের শেরওয়ানি বা জারদৌসি কাজের পাঞ্জাবি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
পরিবেশবান্ধব বিয়ে
বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা প্রবলভাবে দেখা যাচ্ছে। ফলে প্লাস্টিকমুক্ত সাজসজ্জা, স্থানীয় খাবারের মেনু এবং মাটিতে রোপণ করা এমন ‘প্লান্টেবল’ নিমন্ত্রণপত্র এখন ট্রেন্ডে ইন হয়েছে। বরের জন্য সুতির পাঞ্জাবি-পায়জামা ও কনের জন্য পরিবেশবান্ধব কাপড়ে তৈরি পোশাক, যা অন্যান্য সময়েও পরার উপযোগী—এমন সাজপোশাকেও আগ্রহ বাড়ছে বর্তমান সময়ের তরুণদের।
কাস্টমাইজেশন ইজ বেস্ট
একঘেয়ে গতানুগতিক বিয়ের বদলে এখন মানুষ নিজের পছন্দ ও আরামকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। বিয়েতে নিজস্ব ‘হ্যাশট্যাগ’ এবং নিজেদের পরিচয় কিংবা ভালোবাসার গল্প দিয়ে বানানো ছোট ভিডিও বা স্লাইড শো এখন বিয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। অনেকে বিয়ের সময়টাকে ছোট করায় আগ্রহী। ঘরোয়া চায়ের আড্ডাতেই সেরে নিচ্ছেন বিয়ের অনুষ্ঠান। এরপর বর-কনে মিলে বিকেলে বেরিয়ে পড়ছেন হানিমুন ট্রিপে। এতে খরচও কমছে, আনন্দও বাড়ছে।
রং ও উজ্জ্বলতা
এক রঙের পোশাকের দিন এখন শেষ। এবার বিয়েতে রঙের বৈচিত্র্য থাকবে তুঙ্গে। ফুশিয়া পিঙ্কের সঙ্গে পান্না সবুজ কিংবা হলুদ ও রাজকীয় বেগুনির সংমিশ্রণ পোশাকে যোগ করবে নতুন মাত্রা। এ ছাড়া কনের লেহেঙ্গা বা শাড়িতে সোনালি, রুপালি কিংবা ব্রোঞ্জ রঙের মেটালিক ছোঁয়া বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। তা ছাড়া বার্বি পিঙ্ক বা গোলাপি রঙের বিভিন্ন শেড এখন আবার ট্রেন্ড হিসেবে ফিরে আসছে।

সাজে মিলমিশ
বিয়ের সাজে এখন বিভিন্ন স্থানের সাজের মিলমিশ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যেমন কনে হয়তো সাদা গাউন পরছেন, সঙ্গে হাতে পরছেন টকটকে লাল কাচের চুড়ি। আবার বাঙালি সাজের সঙ্গে মারাঠি সাজ ব্লেন্ড করেও বিয়ের পিঁড়িতে বসতে দ্বিধা করছেন না কনেরা। এমনটাই জানান শোভন সাহা।
বাদ পড়েছে যেগুলো
অতিরিক্ত কারুকাজ ও ঝলকানি
একসময় বিয়েতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পাথরের কিংবা চুমকি-পুঁতির ভারী কাজের পোশাকের চল ছিল। কিন্তু বর্তমানে এসব ‘ওভার দ্য টপ’ সাজ একদমই ‘আউট’। তবে এখন সূক্ষ্ম সুতার কাজ অথবা মেশিন এমব্রয়ডারির চাহিদা অনেক বেশি। ডেকোরেশনের ক্ষেত্রেও সবকিছু একই রঙে করার দিন শেষ। ভিন্ন ভিন্ন রং ও টেক্সচারের ব্যবহারই এখন আধুনিকতা।
কনের ভারী ওড়না
২০২৫ বলছে, ভারী বিয়ের ওড়না এখন বাতিলের খাতায়। এর বদলে নেট, অরগাঞ্জা কিংবা হালকা লেসের কাজ করা লম্বা ওড়না একটা এলিগ্যান্ট লুক এনে দেয়।
বরের গতানুগতিক সাজ
বরের সেই ক্রিম রঙের শেরওয়ানি এখন একেবারেই সেকেলে। এখন বরদের পোশাকে গাঢ় রং ও প্রিন্টের কাপড় বেশি জনপ্রিয়। পাঞ্জাবির ওপর রঙিন বা ফ্লোরাল প্রিন্টের কটি বরের সাজে আভিজাত্য ও আধুনিকতা নিয়ে আসে।
ভারী গয়না
শোভন সাহা জানান, সেকেলে ভারী গয়নার বদলে এখন চিকন বা লেয়ারিং করা গয়নার ট্রেন্ড চলছে। কানে হালকা দুল, গলায় পাতলা হারের কয়েকটা লেয়ার আপনার সাজকে অনেক বেশি মার্জিত ও ফ্যাশনেবল করতে পারে। গয়নার ক্ষেত্রে এখন মূল ট্রেন্ডই হলো ‘লেস ইজ মোর।’
পরিশেষে বলা যায়, বিয়ে মানে শুধুই অন্যের চোখে সেরা হওয়া নয়, বরং নিজের ব্যক্তিত্ব ও রুচির প্রকাশ ঘটানো। ট্রেন্ড যা-ই হোক না কেন, স্বকীয়তা সব সময় বজায় রাখা দরকার। বিয়ে যেহেতু ‘ওয়ানস ইন আ লাইফটাইম’ একটা বিষয়, সেহেতু আনন্দ ও স্টাইলটাও হওয়া চাই একেবারেই অনন্য। তাই এই নতুন ধারাগুলো মাথায় রেখে আজই শুরু করে দিতে পারেন বিয়ের পরিকল্পনা।

ডিসেম্বর মানেই বিয়ের মৌসুম। আর বিয়ে মানেই সাজগোজ। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করার এই মুহূর্ত স্মরণীয় করে রাখতে বর-কনে বিয়ের সাজ নিয়ে কতই-না পরিকল্পনা করেন! বিয়ের সাজের সবকিছু অর্থাৎ কনের লেহেঙ্গা কিংবা শাড়ি বা বরের শেরওয়ানি—সবকিছুই হতে হবে নিখুঁত। খেয়াল করলে দেখবেন, প্রতিবছর বিয়ের পোশাক ও সাজে নতুন কিছু যোগ হয়েছে, আবার বাদ পড়েছে সাজের কিছু পুরোনো চল। ২০২৫ সালেও বিয়ের ট্রেন্ডে এসেছে বেশ কিছু পরিবর্তন। কসমেটোলজিস্ট ও শোভন মেকওভারের স্বত্বাধিকারী শোভন সাহার সঙ্গে কথা বলে চলতি বছর বিয়ের সাজে কী কী বিষয় যোগ ও বিয়োগ হয়েছে, তা নিয়ে লিখেছেন ফারিয়া রহমান খান।
এবার বিয়ের ট্রেন্ডে যা কিছু যোগ হয়েছে
তাজা ফুলের আভিজাত্য
বিগত কয়েক বছরে চুল সাজাতে এবং হলুদের গয়না হিসেবে নারীরা আর্টিফিশিয়াল ফুল ব্যবহার করেছেন। শাড়ি বা লেহেঙ্গার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে এসব গয়না ব্যবহারে ব্যাপক উৎসাহ দেখা গেছে নারীদের মধ্য়ে। কিন্তু এখন চুল ও গয়নায় তো বটেই, হলুদ বা মেহেদির অনুষ্ঠানে ফ্লোরাল ওড়নায়ও আর্টিফিশিয়াল ফুলের চেয়ে তাজা ফুল ব্যবহারে আগ্রহ দেখা গেছে। শোভন সাহা বলেন, ‘এ বছর বিয়ের ডেকোরেশনেও বড় জায়গা করে নিয়েছে বড় বড় ফুলের ঝাড়বাতি এবং ফুলের পাপড়ি বিছানো হাঁটার পথ সবার নজর কেড়েছে, যা আগামী বছরেও ট্রেন্ডে থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’
আভিজাত্যের ছোঁয়া
বিয়েতে রাজকীয় সাজের প্রতি বাঙালির টান চিরন্তন। ২০২৫ সালের মতো আগামী বছরেও ট্রেন্ডে থাকবে মীনাকারি কাজ, ঐতিহ্যবাহী বেনারসি, জামদানি, কাঞ্জিভরম ও মসলিন শাড়ি। সেই সঙ্গে বরের সাজে রাজকীয় ভাব আনতে ভারী কাজের শেরওয়ানি বা জারদৌসি কাজের পাঞ্জাবি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
পরিবেশবান্ধব বিয়ে
বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা প্রবলভাবে দেখা যাচ্ছে। ফলে প্লাস্টিকমুক্ত সাজসজ্জা, স্থানীয় খাবারের মেনু এবং মাটিতে রোপণ করা এমন ‘প্লান্টেবল’ নিমন্ত্রণপত্র এখন ট্রেন্ডে ইন হয়েছে। বরের জন্য সুতির পাঞ্জাবি-পায়জামা ও কনের জন্য পরিবেশবান্ধব কাপড়ে তৈরি পোশাক, যা অন্যান্য সময়েও পরার উপযোগী—এমন সাজপোশাকেও আগ্রহ বাড়ছে বর্তমান সময়ের তরুণদের।
কাস্টমাইজেশন ইজ বেস্ট
একঘেয়ে গতানুগতিক বিয়ের বদলে এখন মানুষ নিজের পছন্দ ও আরামকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। বিয়েতে নিজস্ব ‘হ্যাশট্যাগ’ এবং নিজেদের পরিচয় কিংবা ভালোবাসার গল্প দিয়ে বানানো ছোট ভিডিও বা স্লাইড শো এখন বিয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। অনেকে বিয়ের সময়টাকে ছোট করায় আগ্রহী। ঘরোয়া চায়ের আড্ডাতেই সেরে নিচ্ছেন বিয়ের অনুষ্ঠান। এরপর বর-কনে মিলে বিকেলে বেরিয়ে পড়ছেন হানিমুন ট্রিপে। এতে খরচও কমছে, আনন্দও বাড়ছে।
রং ও উজ্জ্বলতা
এক রঙের পোশাকের দিন এখন শেষ। এবার বিয়েতে রঙের বৈচিত্র্য থাকবে তুঙ্গে। ফুশিয়া পিঙ্কের সঙ্গে পান্না সবুজ কিংবা হলুদ ও রাজকীয় বেগুনির সংমিশ্রণ পোশাকে যোগ করবে নতুন মাত্রা। এ ছাড়া কনের লেহেঙ্গা বা শাড়িতে সোনালি, রুপালি কিংবা ব্রোঞ্জ রঙের মেটালিক ছোঁয়া বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। তা ছাড়া বার্বি পিঙ্ক বা গোলাপি রঙের বিভিন্ন শেড এখন আবার ট্রেন্ড হিসেবে ফিরে আসছে।

সাজে মিলমিশ
বিয়ের সাজে এখন বিভিন্ন স্থানের সাজের মিলমিশ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যেমন কনে হয়তো সাদা গাউন পরছেন, সঙ্গে হাতে পরছেন টকটকে লাল কাচের চুড়ি। আবার বাঙালি সাজের সঙ্গে মারাঠি সাজ ব্লেন্ড করেও বিয়ের পিঁড়িতে বসতে দ্বিধা করছেন না কনেরা। এমনটাই জানান শোভন সাহা।
বাদ পড়েছে যেগুলো
অতিরিক্ত কারুকাজ ও ঝলকানি
একসময় বিয়েতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পাথরের কিংবা চুমকি-পুঁতির ভারী কাজের পোশাকের চল ছিল। কিন্তু বর্তমানে এসব ‘ওভার দ্য টপ’ সাজ একদমই ‘আউট’। তবে এখন সূক্ষ্ম সুতার কাজ অথবা মেশিন এমব্রয়ডারির চাহিদা অনেক বেশি। ডেকোরেশনের ক্ষেত্রেও সবকিছু একই রঙে করার দিন শেষ। ভিন্ন ভিন্ন রং ও টেক্সচারের ব্যবহারই এখন আধুনিকতা।
কনের ভারী ওড়না
২০২৫ বলছে, ভারী বিয়ের ওড়না এখন বাতিলের খাতায়। এর বদলে নেট, অরগাঞ্জা কিংবা হালকা লেসের কাজ করা লম্বা ওড়না একটা এলিগ্যান্ট লুক এনে দেয়।
বরের গতানুগতিক সাজ
বরের সেই ক্রিম রঙের শেরওয়ানি এখন একেবারেই সেকেলে। এখন বরদের পোশাকে গাঢ় রং ও প্রিন্টের কাপড় বেশি জনপ্রিয়। পাঞ্জাবির ওপর রঙিন বা ফ্লোরাল প্রিন্টের কটি বরের সাজে আভিজাত্য ও আধুনিকতা নিয়ে আসে।
ভারী গয়না
শোভন সাহা জানান, সেকেলে ভারী গয়নার বদলে এখন চিকন বা লেয়ারিং করা গয়নার ট্রেন্ড চলছে। কানে হালকা দুল, গলায় পাতলা হারের কয়েকটা লেয়ার আপনার সাজকে অনেক বেশি মার্জিত ও ফ্যাশনেবল করতে পারে। গয়নার ক্ষেত্রে এখন মূল ট্রেন্ডই হলো ‘লেস ইজ মোর।’
পরিশেষে বলা যায়, বিয়ে মানে শুধুই অন্যের চোখে সেরা হওয়া নয়, বরং নিজের ব্যক্তিত্ব ও রুচির প্রকাশ ঘটানো। ট্রেন্ড যা-ই হোক না কেন, স্বকীয়তা সব সময় বজায় রাখা দরকার। বিয়ে যেহেতু ‘ওয়ানস ইন আ লাইফটাইম’ একটা বিষয়, সেহেতু আনন্দ ও স্টাইলটাও হওয়া চাই একেবারেই অনন্য। তাই এই নতুন ধারাগুলো মাথায় রেখে আজই শুরু করে দিতে পারেন বিয়ের পরিকল্পনা।

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নি
১৯ জানুয়ারি ২০২৩
নীরবতা পালন, সময়ের আগে পৌঁছানো এবং নিজের আবর্জনা নিজে বহন করা—এগুলো জাপানের এমন কিছু সামাজিক শিষ্টাচার, যা অনেক বিদেশি পর্যটক অজান্তেই ভঙ্গ করে বসেন।
৭ ঘণ্টা আগে
২০২৬ সালের ফ্যাশন ট্রেন্ড কী হতে চলেছে, তা নিয়ে শুরু হয়ে গেছে নানা জল্পনাকল্পনা; বিশেষ করে চুলের জন্য কী হতে চলেছে ট্রেন্ডি, তা নিয়ে ফ্যাশন-সচেতনদের আগ্রহের যেন শেষ নেই। কানাঘুষা চলছে, চুলের ক্ষেত্রে ২০২৬ সাল হয়তো হবে ‘এফোর্টলেস
৭ ঘণ্টা আগে
আজ আপনার আত্মবিশ্বাস বুর্জ খলিফার সমান উঁচুতে থাকবে। অফিসে বসের সামনে এমন ভাব করবেন যেন পুরো কোম্পানি আপনার বুদ্ধিতেই চলছে, অথচ আপনি হয়তো ই-মেইল পাসওয়ার্ডটাই মনে করতে পারছেন না।
১১ ঘণ্টা আগে