ইশতিয়াক হাসান

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নিয়েছি। আজ কাজীদার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর সঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা, সেই সঙ্গে কাজী আনোয়ার হোসেন থেকে জানা তাঁর কিছু বিষয় ভাগাভাগি করছি পাঠকদের সঙ্গে।
বইয়ের জগতে প্রবেশ তাঁর কারণে
ক্লাস ফোরে-ফাইভে পড়ি। আব্বুর স্টিলের আলমারির নিচে গাদাগাদি করে রাখা ছিল অনেক বই। সেবা প্রকাশনী, ভারতীয় নানা লেখকের উপন্যাস আরও কত কী! আব্বুকে বললে চাবি দিয়ে খুলে দিতেন। তারপর নাওয়া-খাওয়া ভুলে হামলে পড়তাম বই নিয়ে। তবে আমাকে টানত সেবা প্রকাশনীর বইগুলোই। মাসুদ রানার বই থাকলেও তখন ওগুলো পড়া বারণ ছিল। তাতে কী! আরও কত্ত বই। ছয় রোমাঞ্চ, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল, কুয়াশা সিরিজের বই, জঙ্গল, শিকার-১, শিকার-২, শিকার-৩, রুদ্র প্রয়াগের চিতা, জুলভার্নের নাইজারের বাঁকে, মরু শহর—এমনই সব বই বলা চলে নতুন এক পৃথিবীর সন্ধান দিয়ে দিল আমাকে। আজ এই আধবুড়ো বয়সেও বইয়ের প্রতি আগ্রহ কমেনি একটুও। আর বইয়ের প্রতি আমার এই ভালোবাসার জন্ম, বই পড়ে পাহাড়-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর আগ্রহ সৃষ্টি—এই সবকিছু কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্যই। তিনি না থাকলে যে সেবা প্রকাশনী হতো না। আমারও বই পড়ে অন্য এক জগতে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ মিলত না।
রহস্যমানব
স্কুলে পড়ার সময় সেবার বই পড়ুয়া অনেক বন্ধুবান্ধবও জুটে যায়। আমাদের কাছে সেবার বিভিন্ন বইয়ের চরিত্রগুলোর মতো কাজী আনোয়ার হোসেনও তখন রহস্যঘেরা এক চরিত্র। আমাদের বই পড়ুয়াদের দলে এক বড় ভাই ছিলেন, নোমান ভাই। তিনি মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলতেন, আমরা পুরোপুরি বিশ্বাসও করতে পারতাম না, আবার অবিশ্বাস করতে পারতাম না। একবার যেমন বললেন, মাসুদ রানা সিরিজের বিসিআই (বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স) ঢাকায় সত্যি আছে। আর কাজী আনোয়ার হোসেন বড় একটা পদে আছেন। তবে এটা একেবারেই গোপনীয়! তাই কেউ জানে না। কাজী আনোয়ার হোসেন আমাদের কাছে এমনই এক রহস্যঘেরা মানুষ ছিলেন, আমরা তাঁর এ কথা বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম। তখন একবারও মনে হয়নি, এত গোপনীয় বিষয়টি আমাদের চেয়ে কয়েক বছরের বড় নোমান ভাই জানলেন কীভাবে?
দুরু দুরু বুকে
২০০৫-০৬ সালের ঘটনা। রহস্য পত্রিকায় লিখছি নিয়মিত। তবে তখন পর্যন্ত কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে দেখা হয়নি। রহস্য পত্রিকার অফিস ২৪/৪ সেগুনবাগিচার দোতলায়। কাজী আনোয়ার হোসেন বসেন তৃতীয় তলায়। আমার দৌড় তখন পর্যন্ত ওই দোতলা পর্যন্ত। সেখানে গিয়ে লেখা জমা দিই। আর হাকিম আংকেল (শেখ আবদুল হাকিম) ও শাহনূর ভাইয়ের (কাজী শাহনূর হোসেন) সঙ্গে গল্প করি, নতুন নতুন লেখার পরিকল্পনা করি। একদিন শাহনূর ভাইকে সাহস করে বললাম, কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে চাই। পরদিন সকালেই ডাক পড়ল। আমার মনে হলো বিসিআই চিফ রাহাত খানের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।
দোতলা থেকে তৃতীয় তলা ওঠার পথে একটি তালা মারা দরজা। দালানের এই পাশ দিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায় যেতে হলে ওই দরজা খুলেই যেতে হয়। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে শেষ পর্যন্ত দুরু দুরু বুকে ঢুকলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায়। আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। বসতে বললেন। শুরুতে কেমন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না কাজী আনোয়ার হোসেনের সামনে বসে আছি।
তারপর অনেকবারই গিয়েছি কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে। বেশির ভাগ সময় কোনো না কোনো কাজে। বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারও নিয়েছি তাঁর। তবে ওই প্রথম দিনের অনুভূতি আজও অটুট আমার মনে। এখনো মনে পড়লে কেমন ভয়-রোমাঞ্চের একটি শিহরণ খেলে যায় শরীরে।
সেই ক্যামেরা
পরের বছরের ঘটনা। তখন বনে, পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর নেশা প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে আমার ওপর। সেই সঙ্গে ছবি তোলার আগ্রহ পেয়ে বসেছে। সমস্যা হলো, ভালো ক্যামেরা নেই। একদিন কথায় কথায় শাহনূর ভাইকে বললাম, ক্যামেরা না থাকায় ভালো ছবি তুলতে পারছি না। একটা ক্যামেরা কিনতে হবে।
কয়েক দিন পরের কথা। সেবা প্রকাশনীতে গেলাম আবার। কোনো একটা লেখা নিয়ে কিংবা নিছক আড্ডা দিতে। কতক্ষণ গল্প করার পর চলে আসতে যাব, এমন সময় শাহনূর ভাই বললেন, ‘একটু দাঁড়াও।’ একটু পর ফিরে এলেন। হাতে একটা ব্যাগ। আমাকে চমকে দিয়ে ভেতর থেকে বের করলেন একটি নাইকন ক্যামেরা। বললেন, ‘আব্বাকে বলেছিলাম তোমার ছবি তোলার আগ্রহের কথা। তখন বললেন তাঁর এই ক্যামেরাটা পড়ে আছে। কী অবস্থা এটার জানেন না। চাইলে তুমি এটা নিতে পারো, যদি কোনো কাজে লাগে।’
আমার তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না, কাজীদা আমাকে তাঁর ব্যবহার করা ক্যামেরা দিয়েছেন! তাঁর মনে আমার জন্য আলাদা একটি জায়গা আছে ভেবে খুব ভালো লাগছিল।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই ক্যামেরাটা দিয়ে পরে আর ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। অনেক দিন পড়ে থেকে এটার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সযতনে ক্যামেরাটা নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। এখন আমার কাছে একটি মোটামুটি ভালো একটা ডিএসএলআর ক্যামেরা আছে, বাড়তি লেন্সসহ আমেরিকা থেকে আনিয়েছি আমার বোনকে দিয়ে। কিন্তু আমার কাছে ওই ক্যামেরার থেকেও বেশি প্রিয় কাজীদার দেওয়া সেই পুরোনো ক্যামেরাটি।
পরে ক্যামেরা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে কাজীদার সঙ্গে। এক সাক্ষাৎকারে যেমন আমাকে বলেছিলেন, ‘বহু বছর ধরে ক্যামেরা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, যদিও শিল্প সৃষ্টির তাগিদে নয়। আমি মুহূর্তকে ধরতে চেয়েছি। যেই শাটারে চাপ দিলাম, থমকে দাঁড়িয়ে গেল একটা মুহূর্ত। স্থির হয়ে গেল একটা নাটকের ছোট্ট এক অংশ। যখন খুশি, যতবার খুশি দেখব আমি ওটা। স্মৃতি মলিন হয়ে যায়, কিন্তু ছবি বহু বছর পর্যন্ত জলজ্যান্ত থাকে। ফটোগ্রাফির এই গুণটাই আমাকে আকর্ষণ করেছিল সবচেয়ে বেশি। মাঝে মাঝে এক-আধটা ফটোগ্রাফ দারুণ হয়ে যায়। তখন খুব ভালো লাগে, নিজেকে বিরাট শিল্পী মনে হয়। ছবি তোলার মোটামুটি নিয়মগুলো শেখা থাকলে, দূরত্ব আর আলোছায়ার হিসাব ঠিক থাকলে, সেই সঙ্গে কম্পোজিশন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকলে মাঝারি মানের একটা ছবি নিশ্চিতভাবেই আশা করা যায়। তাই ফটোগ্রাফিকে আমি একান্ত বিশ্বস্ত ডায়েরি হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম।
...কত্তো কষ্ট করেছি ফটোগ্রাফির জন্য! অথচ এখন? একদম সোজা। মোবাইল ফোনের কল্যাণে এখন টিপ দিলেই ছবি। অহরহ ইনস্ট্যান্ট ছবি তুলে নিজে দেখা যাচ্ছে, মানুষকে দেখানো যাচ্ছে, ফেসবুকে পোস্ট করা যাচ্ছে। এটা যে কত বিরাট অগ্রগতি, ভাবলে বিশ্বাস হতে চায় না। মনে হয় জাদুমন্ত্র! কোথা থেকে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় চলে এসেছে আজ মানুষ!’
রানা গিয়েছে কত দেশে...কাজীদা?
কাজী আনোয়ার হোসেন তাঁর সৃষ্টি চরিত্রগুলোকে পৃথিবীর অনেক দেশ, দুর্গম সব জায়গায় ঘুরিয়ে এনেছেন। কিন্তু নিজে কি খুব বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন? জানতে চেয়েছিলাম এক সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়। কাজী আনোয়ার হোসেনের উত্তর, ‘না, ভাই। কোথাও না। আমি আর্মচেয়ার ট্রাভেলার। চৌদ্দ-পনেরো বছর বয়সে একবার শুধু বিহারের কয়লা শহর গিরিডিতে গিয়েছিলাম আমার আব্বুর সঙ্গে। স্মৃতি নেই কোনো। শুধু মনে আছে রাতে ঘুমোতে দেওয়া হয়েছিল দোতলার খোলা বারান্দায়; অসংখ্য উজ্জ্বল তারা ছিল আকাশে, আর বেশ দূরের শহর থেকে ভেসে আসছিল মোহাম্মাদ রফির গাওয়া সিনেমার গান: দিল্মে ছুপাকে পেয়ার কা তুফান লে চ্যলে/ হ্যম আজ আপনি মওতকা সামান লে চ্যলে...’
মাছ শিকারে কাজীদার গুরু জিম করবেট
কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কিংবা সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে অনেক মজার সব ঘটনাও জানতে পারতাম। কাজী আনোয়ার হোসেনের মাছ শিকারের বাতিক ছিল। একবার মাছ শিকারের একটা সাক্ষাৎকার নিই। সেখানে কাজীদা বলেন, মাছ ধরায় তাঁর গুরু বিখ্যাত শিকারি ও পরে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদ জিম করবেট।
‘১৯৭৭ কি ’৭৮ সাল। মশারির নিচে বন্দী হয়েছিলাম তিন সপ্তাহের জন্য। চিকেন পক্স। আমার প্রথম পুত্র স্কুল থেকে বয়ে এনে উপহার দিয়েছিল ওটা আমাকে। আমার সঙ্গেই ঘুমাত ও, নিজে দু-চারটে গোটার ওপর দিয়ে পার পেয়ে গেল, কিন্তু আমার শরীর ছেয়ে গেল পানিভরা ফোসকায়, আধ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা থাকল না কোথাও। লোকজন ভয়ে কাছে আসে না...অবশ্য, আমিই বারণ করেছি। শুয়ে শুয়ে একের পর এক বই ঘাঁটতে ঘাঁটতে পেয়ে গেলাম জিম করবেটের লেখা সেই বইটা। নাম আজ আর মনে নেই। বাঘ শিকার করতে করতে একবার উত্তর ভারতের চমৎকার এক পাহাড়ি জলাশয় দেখে ছিপ-বড়শি নিয়ে বসে গিয়েছিলেন তিনি মাছ ধরতে। কী অপূর্ব বর্ণনা! কীভাবে ঠোকর দিল মাছ, তিনিও ছিপে মারলেন টান। কেমনভাবে বড়শিতে গাঁথল মাছ, ছুট দিলেন তিরবেগে, পাথরে বাঁধিয়ে সুতো ছেঁড়ার চেষ্টা করল, তিনিই বা কী কায়দায় তাকে মতলব হাসিল করতে না দিয়ে আস্তে আস্তে খেলিয়ে তীরে নিয়ে এসে নেট করলেন। এসবের জলজ্যান্ত, পুঙ্খানুপুঙ্খ, লোভনীয় বর্ণনা পড়ে আমার তো পাগল হবার দশা। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে তাঁকে ১০-১২ কেজি ওজনের কয়েকটা ‘মহাশের’ মাছ মারতে দেখে আমি মশারির নিচে শুয়ে ছটফট করতে থাকলাম...কবে সেরে উঠব!’
ওই সময় কিছু পুকুর বা দিঘিতে মাঝে মাঝে মাছ ধরার টিকিট দেওয়া হতো, কিন্তু ওসব জায়গায় সচরাচর তেমন সুবিধে হতো না। কাজীদার পছন্দ ছিল ধানমন্ডি লেক।
তাঁর মাছ শিকারের বন্ধুদের নিয়ে বলেছিলেন, ‘সে সময় ধানমন্ডি লেকে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, ছেলে-বুড়ো, ব্যবসায়ী-চাকরিজীবী-পেশাজীবী সব মিলিয়ে আমরা মৎস্যশিকারি ছিলাম তিন শর ওপরে। স্বাভাবিক নিয়মেই আমরা যে-যার মনপছন্দের মানুষ খুঁজে নিয়ে ছোট ছোট দল গড়ে এক-একটা এলাকা দখল করতাম। আমি গিয়ে জুটেছিলাম স্বর্ণহ্নদয় দুই শিকারি কালা ভাই (গোলাম রশিদ কালা, আচার প্রস্তুতকারক) ও রব ভাই (আবদুর রব, রঙের কনট্রাক্টর)—এঁদের গ্রুপে। এই গ্রুপে একে একে এসে জুটেছিলেন শামসু ভাই (জনকণ্ঠ পত্রিকার সিনিয়র সহকারী সম্পাদক এ টি এম শামসুদ্দীন), সোশোলজিতে মাস্টার্স লুডু খান (গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক), ইসহাক ভাই (মোজাইকের ঠিকাদার), মোসলেম ভাই (পিঁপড়ার ডিম ও মাছের চার বিক্রেতা), শফি সাহেব (ঠিকাদার), মোবারক ভাই (বাচ্চাদের রাবারের বল তৈরি করে পাইকারি বেচতেন চকবাজারে) ...এরকম আরও বেশ কয়েকজন। মাছ ধরার পাশাপাশি লেকের ধারে বসে চা-নাশতার ফাঁকে হাসি-তামাশা-গল্প চলত আমাদের হাজারো বিষয়ে। গল্পের টানে পুব পাড় থেকে প্রায়ই আমাদের পশ্চিমে চলে আসতেন একজন কোটিপতি মৎস্যশিকারি, তোপখানা রোডের ক্রিসেন্ট কোম্পানির মালিক খলিলুর রহমান। আমি নানাভাই বলতাম, তিনিও আমাকে তা-ই ডাকতেন; আমেরিকা থেকে আমার জন্য একটা মাল্টিপ্লাইং হুইল আর রিডিং ল্যাম্প এনে উপহার দিয়েছিলেন। আর আসতেন নিতাইদা, ঢাকা বেতারের ক্ল্যাসিক্যাল কণ্ঠশিল্পী নিতাই রায়, বড় সজ্জন ছিলেন ভদ্রলোক। রোজ এসে হাজির হতেন শিকারি নন এমন অনেকেও। তাঁদেরই একজন ছিলেন ঢাকা রাইফেল ক্লাবের এয়ার পিস্তল শুটার শারফুদ্দীন টিপু।’
‘আমাদের ছোট্ট গ্রুপের বাইরেও আরও কয়েকজনের কথা না বললেই নয়। তাদের একজন হচ্ছে শাহনেওয়াজ ভুঁইয়া দি গ্রেট, এত বড় মৎস্যশিকারি আমি আর দেখিনি। ওর মতো বড় মাপের শিকারি যেকোনো দেশেই দুর্লভ...নিত্যনতুন টেকনিক তার, সেই সঙ্গে ইমপ্রোভাইজেশন। কোথাও শিকারে গিয়ে কেউ যদি একটা মাছও না পায়, দেখা যাবে ও ধরে বসে আছে বড়সড় পাঁচ-ছয়টা রুই-কাতলা।
আমার হাতে বিদঘুটে আকৃতির স্পিনিং রিল দেখে যে সময় সবাই হাসাহাসি করত, ডিম বিক্রেতা আবদুল মিঞা বলত: ওই ইচার (চিংড়ি মাছের) ঠ্যাংডা হালান দি, আনুয়ার সাপ, বালা হুইল লন। সবাই যখন ছ্যা-ছ্যা করছে, তখন একদিন শাহনেওয়াজ এসে বলল: আনোয়ার ভাই, আপনার এই স্পিনিং হুইল দিয়ে কী করে বেইট থ্রো করতে হয় একটু দেখিয়ে দেবেন? আমি খুশি মনে শিখিয়ে দিলাম। বার কয়েক থ্রো করেই আয়ত্ত করে ফেলল ও কায়দাটা। আর ওরই হাত ধরে গোটা বাংলাদেশে আজ স্পিনিং হুইলের ছড়াছড়ি...মানুষ প্রায় ভুলেই গেছে সেদিনের সেই সিঙ্গেল অ্যাকশন হুইলের কথা...আর একজনের কথা বলব: মোস্তফা সাহেব। প্রথম দিন লেকে গিয়ে তাঁকেই ওস্তাদ ধরেছিলাম। তিনিই কিনিয়ে দিয়েছিলেন ছিপ, বড়শি, কয়েক শ গজ চৌদ্দ পাউন্ডের ভালো জাতের সুতো, আর আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কলকাতার উমাচরণ কর্মকারের তৈরি আদ্যিকালের একটা চার ইঞ্চি বেয়ারিং হুইল।’
কাজীদা বলেছিলেন, নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় মাছটিও শিকার করেছিলেন ধানমন্ডি লেকে। আধা মণের এক-আধ সের বেশি বা কম ছিল ওটা।
শিকারে যেতেন...
বন্যপ্রাণীর প্রতি আমার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। পুরোনো দিনের জঙ্গল আর বন্যপ্রাণীর অবস্থা জানতে শিকারের বই বড় ভরসা। তাই ছোটবেলা থেকেই জিম করবেট, কেনেথ এন্ডারসন কিংবা জন হান্টারের বইয়ের বড় পোকা আমি। তাই যখন শুনলাম মাছ ধরার পাশাপাশি কাজী আনোয়ার হোসেনের শিকারের নেশাও ছিল, তখন এক সাক্ষাৎকারে চেপে ধরলাম।
তখন বলেন, ‘শিকারের নেশা বলতে যা বোঝায়, তা কিন্তু কোনো দিনই পুরোপুরি ছিল না আমার। বাঘটাঘ টানেনি আমাকে। এমনকি রাজহাঁস বা চখা শিকারেও গিয়েছি মাত্র অল্প কয়েকবার। আমার মূল আকর্ষণ ছিল আউটিং। কয়েকজন বন্ধু মিলে শুক্রবারগুলোতে গাড়ি নিয়ে চলে যেতাম যেদিকে খুশি, একেকদিন একেক রাস্তায়। দলের বেশির ভাগই ছিলাম আমরা ধানমন্ডি লেকের মৎস্যশিকারি। আমাদের মধ্যে পাখি শিকারের পাগল ছিল আসলে লুডু খান। আমি ষাটের দশকেই পাখির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। আশির দশকে রব ভাই, কালা ভাই আর আমি ছিলাম জেনুইন মৎস্যশিকারি।...লুডু ভাইয়ের এক নিপাট ভদ্রলোক বন্ধু শারফুদ্দীন টিপুও জুটে গিয়েছিলেন আমাদের সঙ্গে। রব ভাই তো উৎসাহের আতিশয্যে বন্দুক-রাইফেল-পিস্তল কিনে রীতিমতো বন্দুকবাজই বনে গিয়েছিলেন। তবে, প্রতিটা ট্রিপে আমাদের সঙ্গে থাকলেও জীবনে একটি গুলিও ছোড়েননি আমাদের সবার প্রিয় গোলাম রসুল কালা ভাই। টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার নিয়ে যাওয়ার এবং শিকার শেষে সবার মধ্যে পাখি ভাগ করে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর।’
কাজীদা বলেন, ‘চলতে চলতেই থেমে রাস্তার দুপাশের ডালে বসা ঘুঘু, হরিয়াল, কবুতর বা বক মারতাম আমরা পয়েন্ট টুটু রাইফেল দিয়ে। তার আগে অবশ্য থাকত একটা প্রস্তুতিপর্ব: ছুটির আগের দিন রাইফেল নিয়ে গুলশানের শুটিং রেঞ্জে গিয়ে নিখুঁতভাবে রাইফেলগুলো জিরো করে রাখা একটা বড় কাজ ছিল। একমাত্র তাহলেই নিশ্চিত হওয়া যেত যেদিকে তাক করেছি, গুলিটা সেই জায়গায় গিয়ে লাগবে। সবাই আমরা সিঙ্গাপুর থেকে দামি টেলিস্কোপ আনিয়ে ফিট করে নিয়েছিলাম যার যার পয়েন্ট টুটু রাইফেলে। সারাটা দিন রোদে রোদে টোটো করে ঘুরে, ত্রিশ থেকে পঞ্চাশটা পাখি মারতাম আমরা। দুপুরের খাওয়াটা কোনো গাছের নিচে সেরে নিয়ে ঘণ্টাখানেক চলত গল্পগুজব, বিশ্রাম। তারপর আরও কিছুক্ষণ পাখির পেছনে ঘুরে রাস্তার ধারের কোনো দোকানে বসে চা-নাশতা খেয়ে সন্ধের পর ফিরে আসতাম পাখি নিয়ে। এই ছিল আমাদের শিকার বা আউটিং।’
শেষ দেখা
আমার খুব আফসোস ছিল একটি বিষয়ে। টুকটাক কয়েকটা বই রূপান্তর করা হলেও কাজীদাকে কোনো বই উৎসর্গ করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাঁকে একটি বই উৎসর্গ করতে পারি। সেবা প্রকাশনী থেকেই শাহনূর ভাই জেমস হিলটনের ‘লস্ট হরাইজন’ বইটি রূপান্তর করেছিলেন। একটু সংক্ষিপ্তভাবে রূপান্তর করা তিব্বতের পটভূমিতে লেখা বইটি খুব টেনেছিল তখন। চার-পাঁচবার পড়া হয়ে গিয়েছিল। পরে ঐতিহ্য থেকে ২০২০ সালে পূর্ণাঙ্গ রূপান্তর করি বইটি। এটি উৎসর্গ (অনুবাদকের উৎসর্গ) করি কাজী আনোয়ার হোসেনকে। বইটি কাজীদাকে দিতে স্ত্রী-মেয়েসহ দেখা করেছিলাম তাঁর সঙ্গে। অনেক গল্পই হয়েছিল তখন। মেয়ে ওয়াফিকাকে কোলে নিয়ে বইটার একটু অংশ পড়েছিলেনও কাজীদা। তখন অবশ্য কল্পনাও করতে পারিনি তাঁর সঙ্গে এই আমার শেষ দেখা। আফসোস হয়... যদি সেদিন কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে আরেকটু সময় কাটাতে পারতাম।
সিভিতে নাম...
আমার সিভিতে রেফারেন্স হিসেবে দিতে চাইলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। বললেন, কোনো সমস্যা নেই। আমার সিভিতে তারপর অনেকগুলো দিন রেফারেন্সের জায়গায় এক নম্বরে ছিল কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। তারপর ২০২২-এর ১৯ জানুয়ারি আমাদের সবাইকে ছেড়ে চিরতরে চলে গেলেন কাজীদা। তাঁর নামটা বাদ দিয়ে সিভিটা ঠিক করার সময় মনটা অনেক কেঁদেছিল। এখনো লেখাটা লিখতে গিয়ে বারবার মনে পড়ছে তাঁর কথা... কাজী আনোয়ার হোসেন আপনি বেঁচে থাকবেন আমাদের মতো পাঠকদের মনে।

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নিয়েছি। আজ কাজীদার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর সঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা, সেই সঙ্গে কাজী আনোয়ার হোসেন থেকে জানা তাঁর কিছু বিষয় ভাগাভাগি করছি পাঠকদের সঙ্গে।
বইয়ের জগতে প্রবেশ তাঁর কারণে
ক্লাস ফোরে-ফাইভে পড়ি। আব্বুর স্টিলের আলমারির নিচে গাদাগাদি করে রাখা ছিল অনেক বই। সেবা প্রকাশনী, ভারতীয় নানা লেখকের উপন্যাস আরও কত কী! আব্বুকে বললে চাবি দিয়ে খুলে দিতেন। তারপর নাওয়া-খাওয়া ভুলে হামলে পড়তাম বই নিয়ে। তবে আমাকে টানত সেবা প্রকাশনীর বইগুলোই। মাসুদ রানার বই থাকলেও তখন ওগুলো পড়া বারণ ছিল। তাতে কী! আরও কত্ত বই। ছয় রোমাঞ্চ, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল, কুয়াশা সিরিজের বই, জঙ্গল, শিকার-১, শিকার-২, শিকার-৩, রুদ্র প্রয়াগের চিতা, জুলভার্নের নাইজারের বাঁকে, মরু শহর—এমনই সব বই বলা চলে নতুন এক পৃথিবীর সন্ধান দিয়ে দিল আমাকে। আজ এই আধবুড়ো বয়সেও বইয়ের প্রতি আগ্রহ কমেনি একটুও। আর বইয়ের প্রতি আমার এই ভালোবাসার জন্ম, বই পড়ে পাহাড়-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর আগ্রহ সৃষ্টি—এই সবকিছু কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্যই। তিনি না থাকলে যে সেবা প্রকাশনী হতো না। আমারও বই পড়ে অন্য এক জগতে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ মিলত না।
রহস্যমানব
স্কুলে পড়ার সময় সেবার বই পড়ুয়া অনেক বন্ধুবান্ধবও জুটে যায়। আমাদের কাছে সেবার বিভিন্ন বইয়ের চরিত্রগুলোর মতো কাজী আনোয়ার হোসেনও তখন রহস্যঘেরা এক চরিত্র। আমাদের বই পড়ুয়াদের দলে এক বড় ভাই ছিলেন, নোমান ভাই। তিনি মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলতেন, আমরা পুরোপুরি বিশ্বাসও করতে পারতাম না, আবার অবিশ্বাস করতে পারতাম না। একবার যেমন বললেন, মাসুদ রানা সিরিজের বিসিআই (বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স) ঢাকায় সত্যি আছে। আর কাজী আনোয়ার হোসেন বড় একটা পদে আছেন। তবে এটা একেবারেই গোপনীয়! তাই কেউ জানে না। কাজী আনোয়ার হোসেন আমাদের কাছে এমনই এক রহস্যঘেরা মানুষ ছিলেন, আমরা তাঁর এ কথা বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম। তখন একবারও মনে হয়নি, এত গোপনীয় বিষয়টি আমাদের চেয়ে কয়েক বছরের বড় নোমান ভাই জানলেন কীভাবে?
দুরু দুরু বুকে
২০০৫-০৬ সালের ঘটনা। রহস্য পত্রিকায় লিখছি নিয়মিত। তবে তখন পর্যন্ত কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে দেখা হয়নি। রহস্য পত্রিকার অফিস ২৪/৪ সেগুনবাগিচার দোতলায়। কাজী আনোয়ার হোসেন বসেন তৃতীয় তলায়। আমার দৌড় তখন পর্যন্ত ওই দোতলা পর্যন্ত। সেখানে গিয়ে লেখা জমা দিই। আর হাকিম আংকেল (শেখ আবদুল হাকিম) ও শাহনূর ভাইয়ের (কাজী শাহনূর হোসেন) সঙ্গে গল্প করি, নতুন নতুন লেখার পরিকল্পনা করি। একদিন শাহনূর ভাইকে সাহস করে বললাম, কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে চাই। পরদিন সকালেই ডাক পড়ল। আমার মনে হলো বিসিআই চিফ রাহাত খানের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।
দোতলা থেকে তৃতীয় তলা ওঠার পথে একটি তালা মারা দরজা। দালানের এই পাশ দিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায় যেতে হলে ওই দরজা খুলেই যেতে হয়। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে শেষ পর্যন্ত দুরু দুরু বুকে ঢুকলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায়। আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। বসতে বললেন। শুরুতে কেমন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না কাজী আনোয়ার হোসেনের সামনে বসে আছি।
তারপর অনেকবারই গিয়েছি কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে। বেশির ভাগ সময় কোনো না কোনো কাজে। বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারও নিয়েছি তাঁর। তবে ওই প্রথম দিনের অনুভূতি আজও অটুট আমার মনে। এখনো মনে পড়লে কেমন ভয়-রোমাঞ্চের একটি শিহরণ খেলে যায় শরীরে।
সেই ক্যামেরা
পরের বছরের ঘটনা। তখন বনে, পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর নেশা প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে আমার ওপর। সেই সঙ্গে ছবি তোলার আগ্রহ পেয়ে বসেছে। সমস্যা হলো, ভালো ক্যামেরা নেই। একদিন কথায় কথায় শাহনূর ভাইকে বললাম, ক্যামেরা না থাকায় ভালো ছবি তুলতে পারছি না। একটা ক্যামেরা কিনতে হবে।
কয়েক দিন পরের কথা। সেবা প্রকাশনীতে গেলাম আবার। কোনো একটা লেখা নিয়ে কিংবা নিছক আড্ডা দিতে। কতক্ষণ গল্প করার পর চলে আসতে যাব, এমন সময় শাহনূর ভাই বললেন, ‘একটু দাঁড়াও।’ একটু পর ফিরে এলেন। হাতে একটা ব্যাগ। আমাকে চমকে দিয়ে ভেতর থেকে বের করলেন একটি নাইকন ক্যামেরা। বললেন, ‘আব্বাকে বলেছিলাম তোমার ছবি তোলার আগ্রহের কথা। তখন বললেন তাঁর এই ক্যামেরাটা পড়ে আছে। কী অবস্থা এটার জানেন না। চাইলে তুমি এটা নিতে পারো, যদি কোনো কাজে লাগে।’
আমার তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না, কাজীদা আমাকে তাঁর ব্যবহার করা ক্যামেরা দিয়েছেন! তাঁর মনে আমার জন্য আলাদা একটি জায়গা আছে ভেবে খুব ভালো লাগছিল।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই ক্যামেরাটা দিয়ে পরে আর ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। অনেক দিন পড়ে থেকে এটার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সযতনে ক্যামেরাটা নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। এখন আমার কাছে একটি মোটামুটি ভালো একটা ডিএসএলআর ক্যামেরা আছে, বাড়তি লেন্সসহ আমেরিকা থেকে আনিয়েছি আমার বোনকে দিয়ে। কিন্তু আমার কাছে ওই ক্যামেরার থেকেও বেশি প্রিয় কাজীদার দেওয়া সেই পুরোনো ক্যামেরাটি।
পরে ক্যামেরা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে কাজীদার সঙ্গে। এক সাক্ষাৎকারে যেমন আমাকে বলেছিলেন, ‘বহু বছর ধরে ক্যামেরা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, যদিও শিল্প সৃষ্টির তাগিদে নয়। আমি মুহূর্তকে ধরতে চেয়েছি। যেই শাটারে চাপ দিলাম, থমকে দাঁড়িয়ে গেল একটা মুহূর্ত। স্থির হয়ে গেল একটা নাটকের ছোট্ট এক অংশ। যখন খুশি, যতবার খুশি দেখব আমি ওটা। স্মৃতি মলিন হয়ে যায়, কিন্তু ছবি বহু বছর পর্যন্ত জলজ্যান্ত থাকে। ফটোগ্রাফির এই গুণটাই আমাকে আকর্ষণ করেছিল সবচেয়ে বেশি। মাঝে মাঝে এক-আধটা ফটোগ্রাফ দারুণ হয়ে যায়। তখন খুব ভালো লাগে, নিজেকে বিরাট শিল্পী মনে হয়। ছবি তোলার মোটামুটি নিয়মগুলো শেখা থাকলে, দূরত্ব আর আলোছায়ার হিসাব ঠিক থাকলে, সেই সঙ্গে কম্পোজিশন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকলে মাঝারি মানের একটা ছবি নিশ্চিতভাবেই আশা করা যায়। তাই ফটোগ্রাফিকে আমি একান্ত বিশ্বস্ত ডায়েরি হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম।
...কত্তো কষ্ট করেছি ফটোগ্রাফির জন্য! অথচ এখন? একদম সোজা। মোবাইল ফোনের কল্যাণে এখন টিপ দিলেই ছবি। অহরহ ইনস্ট্যান্ট ছবি তুলে নিজে দেখা যাচ্ছে, মানুষকে দেখানো যাচ্ছে, ফেসবুকে পোস্ট করা যাচ্ছে। এটা যে কত বিরাট অগ্রগতি, ভাবলে বিশ্বাস হতে চায় না। মনে হয় জাদুমন্ত্র! কোথা থেকে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় চলে এসেছে আজ মানুষ!’
রানা গিয়েছে কত দেশে...কাজীদা?
কাজী আনোয়ার হোসেন তাঁর সৃষ্টি চরিত্রগুলোকে পৃথিবীর অনেক দেশ, দুর্গম সব জায়গায় ঘুরিয়ে এনেছেন। কিন্তু নিজে কি খুব বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন? জানতে চেয়েছিলাম এক সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়। কাজী আনোয়ার হোসেনের উত্তর, ‘না, ভাই। কোথাও না। আমি আর্মচেয়ার ট্রাভেলার। চৌদ্দ-পনেরো বছর বয়সে একবার শুধু বিহারের কয়লা শহর গিরিডিতে গিয়েছিলাম আমার আব্বুর সঙ্গে। স্মৃতি নেই কোনো। শুধু মনে আছে রাতে ঘুমোতে দেওয়া হয়েছিল দোতলার খোলা বারান্দায়; অসংখ্য উজ্জ্বল তারা ছিল আকাশে, আর বেশ দূরের শহর থেকে ভেসে আসছিল মোহাম্মাদ রফির গাওয়া সিনেমার গান: দিল্মে ছুপাকে পেয়ার কা তুফান লে চ্যলে/ হ্যম আজ আপনি মওতকা সামান লে চ্যলে...’
মাছ শিকারে কাজীদার গুরু জিম করবেট
কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কিংবা সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে অনেক মজার সব ঘটনাও জানতে পারতাম। কাজী আনোয়ার হোসেনের মাছ শিকারের বাতিক ছিল। একবার মাছ শিকারের একটা সাক্ষাৎকার নিই। সেখানে কাজীদা বলেন, মাছ ধরায় তাঁর গুরু বিখ্যাত শিকারি ও পরে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদ জিম করবেট।
‘১৯৭৭ কি ’৭৮ সাল। মশারির নিচে বন্দী হয়েছিলাম তিন সপ্তাহের জন্য। চিকেন পক্স। আমার প্রথম পুত্র স্কুল থেকে বয়ে এনে উপহার দিয়েছিল ওটা আমাকে। আমার সঙ্গেই ঘুমাত ও, নিজে দু-চারটে গোটার ওপর দিয়ে পার পেয়ে গেল, কিন্তু আমার শরীর ছেয়ে গেল পানিভরা ফোসকায়, আধ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা থাকল না কোথাও। লোকজন ভয়ে কাছে আসে না...অবশ্য, আমিই বারণ করেছি। শুয়ে শুয়ে একের পর এক বই ঘাঁটতে ঘাঁটতে পেয়ে গেলাম জিম করবেটের লেখা সেই বইটা। নাম আজ আর মনে নেই। বাঘ শিকার করতে করতে একবার উত্তর ভারতের চমৎকার এক পাহাড়ি জলাশয় দেখে ছিপ-বড়শি নিয়ে বসে গিয়েছিলেন তিনি মাছ ধরতে। কী অপূর্ব বর্ণনা! কীভাবে ঠোকর দিল মাছ, তিনিও ছিপে মারলেন টান। কেমনভাবে বড়শিতে গাঁথল মাছ, ছুট দিলেন তিরবেগে, পাথরে বাঁধিয়ে সুতো ছেঁড়ার চেষ্টা করল, তিনিই বা কী কায়দায় তাকে মতলব হাসিল করতে না দিয়ে আস্তে আস্তে খেলিয়ে তীরে নিয়ে এসে নেট করলেন। এসবের জলজ্যান্ত, পুঙ্খানুপুঙ্খ, লোভনীয় বর্ণনা পড়ে আমার তো পাগল হবার দশা। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে তাঁকে ১০-১২ কেজি ওজনের কয়েকটা ‘মহাশের’ মাছ মারতে দেখে আমি মশারির নিচে শুয়ে ছটফট করতে থাকলাম...কবে সেরে উঠব!’
ওই সময় কিছু পুকুর বা দিঘিতে মাঝে মাঝে মাছ ধরার টিকিট দেওয়া হতো, কিন্তু ওসব জায়গায় সচরাচর তেমন সুবিধে হতো না। কাজীদার পছন্দ ছিল ধানমন্ডি লেক।
তাঁর মাছ শিকারের বন্ধুদের নিয়ে বলেছিলেন, ‘সে সময় ধানমন্ডি লেকে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, ছেলে-বুড়ো, ব্যবসায়ী-চাকরিজীবী-পেশাজীবী সব মিলিয়ে আমরা মৎস্যশিকারি ছিলাম তিন শর ওপরে। স্বাভাবিক নিয়মেই আমরা যে-যার মনপছন্দের মানুষ খুঁজে নিয়ে ছোট ছোট দল গড়ে এক-একটা এলাকা দখল করতাম। আমি গিয়ে জুটেছিলাম স্বর্ণহ্নদয় দুই শিকারি কালা ভাই (গোলাম রশিদ কালা, আচার প্রস্তুতকারক) ও রব ভাই (আবদুর রব, রঙের কনট্রাক্টর)—এঁদের গ্রুপে। এই গ্রুপে একে একে এসে জুটেছিলেন শামসু ভাই (জনকণ্ঠ পত্রিকার সিনিয়র সহকারী সম্পাদক এ টি এম শামসুদ্দীন), সোশোলজিতে মাস্টার্স লুডু খান (গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক), ইসহাক ভাই (মোজাইকের ঠিকাদার), মোসলেম ভাই (পিঁপড়ার ডিম ও মাছের চার বিক্রেতা), শফি সাহেব (ঠিকাদার), মোবারক ভাই (বাচ্চাদের রাবারের বল তৈরি করে পাইকারি বেচতেন চকবাজারে) ...এরকম আরও বেশ কয়েকজন। মাছ ধরার পাশাপাশি লেকের ধারে বসে চা-নাশতার ফাঁকে হাসি-তামাশা-গল্প চলত আমাদের হাজারো বিষয়ে। গল্পের টানে পুব পাড় থেকে প্রায়ই আমাদের পশ্চিমে চলে আসতেন একজন কোটিপতি মৎস্যশিকারি, তোপখানা রোডের ক্রিসেন্ট কোম্পানির মালিক খলিলুর রহমান। আমি নানাভাই বলতাম, তিনিও আমাকে তা-ই ডাকতেন; আমেরিকা থেকে আমার জন্য একটা মাল্টিপ্লাইং হুইল আর রিডিং ল্যাম্প এনে উপহার দিয়েছিলেন। আর আসতেন নিতাইদা, ঢাকা বেতারের ক্ল্যাসিক্যাল কণ্ঠশিল্পী নিতাই রায়, বড় সজ্জন ছিলেন ভদ্রলোক। রোজ এসে হাজির হতেন শিকারি নন এমন অনেকেও। তাঁদেরই একজন ছিলেন ঢাকা রাইফেল ক্লাবের এয়ার পিস্তল শুটার শারফুদ্দীন টিপু।’
‘আমাদের ছোট্ট গ্রুপের বাইরেও আরও কয়েকজনের কথা না বললেই নয়। তাদের একজন হচ্ছে শাহনেওয়াজ ভুঁইয়া দি গ্রেট, এত বড় মৎস্যশিকারি আমি আর দেখিনি। ওর মতো বড় মাপের শিকারি যেকোনো দেশেই দুর্লভ...নিত্যনতুন টেকনিক তার, সেই সঙ্গে ইমপ্রোভাইজেশন। কোথাও শিকারে গিয়ে কেউ যদি একটা মাছও না পায়, দেখা যাবে ও ধরে বসে আছে বড়সড় পাঁচ-ছয়টা রুই-কাতলা।
আমার হাতে বিদঘুটে আকৃতির স্পিনিং রিল দেখে যে সময় সবাই হাসাহাসি করত, ডিম বিক্রেতা আবদুল মিঞা বলত: ওই ইচার (চিংড়ি মাছের) ঠ্যাংডা হালান দি, আনুয়ার সাপ, বালা হুইল লন। সবাই যখন ছ্যা-ছ্যা করছে, তখন একদিন শাহনেওয়াজ এসে বলল: আনোয়ার ভাই, আপনার এই স্পিনিং হুইল দিয়ে কী করে বেইট থ্রো করতে হয় একটু দেখিয়ে দেবেন? আমি খুশি মনে শিখিয়ে দিলাম। বার কয়েক থ্রো করেই আয়ত্ত করে ফেলল ও কায়দাটা। আর ওরই হাত ধরে গোটা বাংলাদেশে আজ স্পিনিং হুইলের ছড়াছড়ি...মানুষ প্রায় ভুলেই গেছে সেদিনের সেই সিঙ্গেল অ্যাকশন হুইলের কথা...আর একজনের কথা বলব: মোস্তফা সাহেব। প্রথম দিন লেকে গিয়ে তাঁকেই ওস্তাদ ধরেছিলাম। তিনিই কিনিয়ে দিয়েছিলেন ছিপ, বড়শি, কয়েক শ গজ চৌদ্দ পাউন্ডের ভালো জাতের সুতো, আর আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কলকাতার উমাচরণ কর্মকারের তৈরি আদ্যিকালের একটা চার ইঞ্চি বেয়ারিং হুইল।’
কাজীদা বলেছিলেন, নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় মাছটিও শিকার করেছিলেন ধানমন্ডি লেকে। আধা মণের এক-আধ সের বেশি বা কম ছিল ওটা।
শিকারে যেতেন...
বন্যপ্রাণীর প্রতি আমার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। পুরোনো দিনের জঙ্গল আর বন্যপ্রাণীর অবস্থা জানতে শিকারের বই বড় ভরসা। তাই ছোটবেলা থেকেই জিম করবেট, কেনেথ এন্ডারসন কিংবা জন হান্টারের বইয়ের বড় পোকা আমি। তাই যখন শুনলাম মাছ ধরার পাশাপাশি কাজী আনোয়ার হোসেনের শিকারের নেশাও ছিল, তখন এক সাক্ষাৎকারে চেপে ধরলাম।
তখন বলেন, ‘শিকারের নেশা বলতে যা বোঝায়, তা কিন্তু কোনো দিনই পুরোপুরি ছিল না আমার। বাঘটাঘ টানেনি আমাকে। এমনকি রাজহাঁস বা চখা শিকারেও গিয়েছি মাত্র অল্প কয়েকবার। আমার মূল আকর্ষণ ছিল আউটিং। কয়েকজন বন্ধু মিলে শুক্রবারগুলোতে গাড়ি নিয়ে চলে যেতাম যেদিকে খুশি, একেকদিন একেক রাস্তায়। দলের বেশির ভাগই ছিলাম আমরা ধানমন্ডি লেকের মৎস্যশিকারি। আমাদের মধ্যে পাখি শিকারের পাগল ছিল আসলে লুডু খান। আমি ষাটের দশকেই পাখির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। আশির দশকে রব ভাই, কালা ভাই আর আমি ছিলাম জেনুইন মৎস্যশিকারি।...লুডু ভাইয়ের এক নিপাট ভদ্রলোক বন্ধু শারফুদ্দীন টিপুও জুটে গিয়েছিলেন আমাদের সঙ্গে। রব ভাই তো উৎসাহের আতিশয্যে বন্দুক-রাইফেল-পিস্তল কিনে রীতিমতো বন্দুকবাজই বনে গিয়েছিলেন। তবে, প্রতিটা ট্রিপে আমাদের সঙ্গে থাকলেও জীবনে একটি গুলিও ছোড়েননি আমাদের সবার প্রিয় গোলাম রসুল কালা ভাই। টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার নিয়ে যাওয়ার এবং শিকার শেষে সবার মধ্যে পাখি ভাগ করে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর।’
কাজীদা বলেন, ‘চলতে চলতেই থেমে রাস্তার দুপাশের ডালে বসা ঘুঘু, হরিয়াল, কবুতর বা বক মারতাম আমরা পয়েন্ট টুটু রাইফেল দিয়ে। তার আগে অবশ্য থাকত একটা প্রস্তুতিপর্ব: ছুটির আগের দিন রাইফেল নিয়ে গুলশানের শুটিং রেঞ্জে গিয়ে নিখুঁতভাবে রাইফেলগুলো জিরো করে রাখা একটা বড় কাজ ছিল। একমাত্র তাহলেই নিশ্চিত হওয়া যেত যেদিকে তাক করেছি, গুলিটা সেই জায়গায় গিয়ে লাগবে। সবাই আমরা সিঙ্গাপুর থেকে দামি টেলিস্কোপ আনিয়ে ফিট করে নিয়েছিলাম যার যার পয়েন্ট টুটু রাইফেলে। সারাটা দিন রোদে রোদে টোটো করে ঘুরে, ত্রিশ থেকে পঞ্চাশটা পাখি মারতাম আমরা। দুপুরের খাওয়াটা কোনো গাছের নিচে সেরে নিয়ে ঘণ্টাখানেক চলত গল্পগুজব, বিশ্রাম। তারপর আরও কিছুক্ষণ পাখির পেছনে ঘুরে রাস্তার ধারের কোনো দোকানে বসে চা-নাশতা খেয়ে সন্ধের পর ফিরে আসতাম পাখি নিয়ে। এই ছিল আমাদের শিকার বা আউটিং।’
শেষ দেখা
আমার খুব আফসোস ছিল একটি বিষয়ে। টুকটাক কয়েকটা বই রূপান্তর করা হলেও কাজীদাকে কোনো বই উৎসর্গ করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাঁকে একটি বই উৎসর্গ করতে পারি। সেবা প্রকাশনী থেকেই শাহনূর ভাই জেমস হিলটনের ‘লস্ট হরাইজন’ বইটি রূপান্তর করেছিলেন। একটু সংক্ষিপ্তভাবে রূপান্তর করা তিব্বতের পটভূমিতে লেখা বইটি খুব টেনেছিল তখন। চার-পাঁচবার পড়া হয়ে গিয়েছিল। পরে ঐতিহ্য থেকে ২০২০ সালে পূর্ণাঙ্গ রূপান্তর করি বইটি। এটি উৎসর্গ (অনুবাদকের উৎসর্গ) করি কাজী আনোয়ার হোসেনকে। বইটি কাজীদাকে দিতে স্ত্রী-মেয়েসহ দেখা করেছিলাম তাঁর সঙ্গে। অনেক গল্পই হয়েছিল তখন। মেয়ে ওয়াফিকাকে কোলে নিয়ে বইটার একটু অংশ পড়েছিলেনও কাজীদা। তখন অবশ্য কল্পনাও করতে পারিনি তাঁর সঙ্গে এই আমার শেষ দেখা। আফসোস হয়... যদি সেদিন কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে আরেকটু সময় কাটাতে পারতাম।
সিভিতে নাম...
আমার সিভিতে রেফারেন্স হিসেবে দিতে চাইলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। বললেন, কোনো সমস্যা নেই। আমার সিভিতে তারপর অনেকগুলো দিন রেফারেন্সের জায়গায় এক নম্বরে ছিল কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। তারপর ২০২২-এর ১৯ জানুয়ারি আমাদের সবাইকে ছেড়ে চিরতরে চলে গেলেন কাজীদা। তাঁর নামটা বাদ দিয়ে সিভিটা ঠিক করার সময় মনটা অনেক কেঁদেছিল। এখনো লেখাটা লিখতে গিয়ে বারবার মনে পড়ছে তাঁর কথা... কাজী আনোয়ার হোসেন আপনি বেঁচে থাকবেন আমাদের মতো পাঠকদের মনে।
ইশতিয়াক হাসান

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নিয়েছি। আজ কাজীদার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর সঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা, সেই সঙ্গে কাজী আনোয়ার হোসেন থেকে জানা তাঁর কিছু বিষয় ভাগাভাগি করছি পাঠকদের সঙ্গে।
বইয়ের জগতে প্রবেশ তাঁর কারণে
ক্লাস ফোরে-ফাইভে পড়ি। আব্বুর স্টিলের আলমারির নিচে গাদাগাদি করে রাখা ছিল অনেক বই। সেবা প্রকাশনী, ভারতীয় নানা লেখকের উপন্যাস আরও কত কী! আব্বুকে বললে চাবি দিয়ে খুলে দিতেন। তারপর নাওয়া-খাওয়া ভুলে হামলে পড়তাম বই নিয়ে। তবে আমাকে টানত সেবা প্রকাশনীর বইগুলোই। মাসুদ রানার বই থাকলেও তখন ওগুলো পড়া বারণ ছিল। তাতে কী! আরও কত্ত বই। ছয় রোমাঞ্চ, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল, কুয়াশা সিরিজের বই, জঙ্গল, শিকার-১, শিকার-২, শিকার-৩, রুদ্র প্রয়াগের চিতা, জুলভার্নের নাইজারের বাঁকে, মরু শহর—এমনই সব বই বলা চলে নতুন এক পৃথিবীর সন্ধান দিয়ে দিল আমাকে। আজ এই আধবুড়ো বয়সেও বইয়ের প্রতি আগ্রহ কমেনি একটুও। আর বইয়ের প্রতি আমার এই ভালোবাসার জন্ম, বই পড়ে পাহাড়-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর আগ্রহ সৃষ্টি—এই সবকিছু কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্যই। তিনি না থাকলে যে সেবা প্রকাশনী হতো না। আমারও বই পড়ে অন্য এক জগতে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ মিলত না।
রহস্যমানব
স্কুলে পড়ার সময় সেবার বই পড়ুয়া অনেক বন্ধুবান্ধবও জুটে যায়। আমাদের কাছে সেবার বিভিন্ন বইয়ের চরিত্রগুলোর মতো কাজী আনোয়ার হোসেনও তখন রহস্যঘেরা এক চরিত্র। আমাদের বই পড়ুয়াদের দলে এক বড় ভাই ছিলেন, নোমান ভাই। তিনি মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলতেন, আমরা পুরোপুরি বিশ্বাসও করতে পারতাম না, আবার অবিশ্বাস করতে পারতাম না। একবার যেমন বললেন, মাসুদ রানা সিরিজের বিসিআই (বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স) ঢাকায় সত্যি আছে। আর কাজী আনোয়ার হোসেন বড় একটা পদে আছেন। তবে এটা একেবারেই গোপনীয়! তাই কেউ জানে না। কাজী আনোয়ার হোসেন আমাদের কাছে এমনই এক রহস্যঘেরা মানুষ ছিলেন, আমরা তাঁর এ কথা বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম। তখন একবারও মনে হয়নি, এত গোপনীয় বিষয়টি আমাদের চেয়ে কয়েক বছরের বড় নোমান ভাই জানলেন কীভাবে?
দুরু দুরু বুকে
২০০৫-০৬ সালের ঘটনা। রহস্য পত্রিকায় লিখছি নিয়মিত। তবে তখন পর্যন্ত কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে দেখা হয়নি। রহস্য পত্রিকার অফিস ২৪/৪ সেগুনবাগিচার দোতলায়। কাজী আনোয়ার হোসেন বসেন তৃতীয় তলায়। আমার দৌড় তখন পর্যন্ত ওই দোতলা পর্যন্ত। সেখানে গিয়ে লেখা জমা দিই। আর হাকিম আংকেল (শেখ আবদুল হাকিম) ও শাহনূর ভাইয়ের (কাজী শাহনূর হোসেন) সঙ্গে গল্প করি, নতুন নতুন লেখার পরিকল্পনা করি। একদিন শাহনূর ভাইকে সাহস করে বললাম, কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে চাই। পরদিন সকালেই ডাক পড়ল। আমার মনে হলো বিসিআই চিফ রাহাত খানের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।
দোতলা থেকে তৃতীয় তলা ওঠার পথে একটি তালা মারা দরজা। দালানের এই পাশ দিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায় যেতে হলে ওই দরজা খুলেই যেতে হয়। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে শেষ পর্যন্ত দুরু দুরু বুকে ঢুকলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায়। আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। বসতে বললেন। শুরুতে কেমন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না কাজী আনোয়ার হোসেনের সামনে বসে আছি।
তারপর অনেকবারই গিয়েছি কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে। বেশির ভাগ সময় কোনো না কোনো কাজে। বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারও নিয়েছি তাঁর। তবে ওই প্রথম দিনের অনুভূতি আজও অটুট আমার মনে। এখনো মনে পড়লে কেমন ভয়-রোমাঞ্চের একটি শিহরণ খেলে যায় শরীরে।
সেই ক্যামেরা
পরের বছরের ঘটনা। তখন বনে, পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর নেশা প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে আমার ওপর। সেই সঙ্গে ছবি তোলার আগ্রহ পেয়ে বসেছে। সমস্যা হলো, ভালো ক্যামেরা নেই। একদিন কথায় কথায় শাহনূর ভাইকে বললাম, ক্যামেরা না থাকায় ভালো ছবি তুলতে পারছি না। একটা ক্যামেরা কিনতে হবে।
কয়েক দিন পরের কথা। সেবা প্রকাশনীতে গেলাম আবার। কোনো একটা লেখা নিয়ে কিংবা নিছক আড্ডা দিতে। কতক্ষণ গল্প করার পর চলে আসতে যাব, এমন সময় শাহনূর ভাই বললেন, ‘একটু দাঁড়াও।’ একটু পর ফিরে এলেন। হাতে একটা ব্যাগ। আমাকে চমকে দিয়ে ভেতর থেকে বের করলেন একটি নাইকন ক্যামেরা। বললেন, ‘আব্বাকে বলেছিলাম তোমার ছবি তোলার আগ্রহের কথা। তখন বললেন তাঁর এই ক্যামেরাটা পড়ে আছে। কী অবস্থা এটার জানেন না। চাইলে তুমি এটা নিতে পারো, যদি কোনো কাজে লাগে।’
আমার তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না, কাজীদা আমাকে তাঁর ব্যবহার করা ক্যামেরা দিয়েছেন! তাঁর মনে আমার জন্য আলাদা একটি জায়গা আছে ভেবে খুব ভালো লাগছিল।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই ক্যামেরাটা দিয়ে পরে আর ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। অনেক দিন পড়ে থেকে এটার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সযতনে ক্যামেরাটা নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। এখন আমার কাছে একটি মোটামুটি ভালো একটা ডিএসএলআর ক্যামেরা আছে, বাড়তি লেন্সসহ আমেরিকা থেকে আনিয়েছি আমার বোনকে দিয়ে। কিন্তু আমার কাছে ওই ক্যামেরার থেকেও বেশি প্রিয় কাজীদার দেওয়া সেই পুরোনো ক্যামেরাটি।
পরে ক্যামেরা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে কাজীদার সঙ্গে। এক সাক্ষাৎকারে যেমন আমাকে বলেছিলেন, ‘বহু বছর ধরে ক্যামেরা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, যদিও শিল্প সৃষ্টির তাগিদে নয়। আমি মুহূর্তকে ধরতে চেয়েছি। যেই শাটারে চাপ দিলাম, থমকে দাঁড়িয়ে গেল একটা মুহূর্ত। স্থির হয়ে গেল একটা নাটকের ছোট্ট এক অংশ। যখন খুশি, যতবার খুশি দেখব আমি ওটা। স্মৃতি মলিন হয়ে যায়, কিন্তু ছবি বহু বছর পর্যন্ত জলজ্যান্ত থাকে। ফটোগ্রাফির এই গুণটাই আমাকে আকর্ষণ করেছিল সবচেয়ে বেশি। মাঝে মাঝে এক-আধটা ফটোগ্রাফ দারুণ হয়ে যায়। তখন খুব ভালো লাগে, নিজেকে বিরাট শিল্পী মনে হয়। ছবি তোলার মোটামুটি নিয়মগুলো শেখা থাকলে, দূরত্ব আর আলোছায়ার হিসাব ঠিক থাকলে, সেই সঙ্গে কম্পোজিশন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকলে মাঝারি মানের একটা ছবি নিশ্চিতভাবেই আশা করা যায়। তাই ফটোগ্রাফিকে আমি একান্ত বিশ্বস্ত ডায়েরি হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম।
...কত্তো কষ্ট করেছি ফটোগ্রাফির জন্য! অথচ এখন? একদম সোজা। মোবাইল ফোনের কল্যাণে এখন টিপ দিলেই ছবি। অহরহ ইনস্ট্যান্ট ছবি তুলে নিজে দেখা যাচ্ছে, মানুষকে দেখানো যাচ্ছে, ফেসবুকে পোস্ট করা যাচ্ছে। এটা যে কত বিরাট অগ্রগতি, ভাবলে বিশ্বাস হতে চায় না। মনে হয় জাদুমন্ত্র! কোথা থেকে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় চলে এসেছে আজ মানুষ!’
রানা গিয়েছে কত দেশে...কাজীদা?
কাজী আনোয়ার হোসেন তাঁর সৃষ্টি চরিত্রগুলোকে পৃথিবীর অনেক দেশ, দুর্গম সব জায়গায় ঘুরিয়ে এনেছেন। কিন্তু নিজে কি খুব বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন? জানতে চেয়েছিলাম এক সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়। কাজী আনোয়ার হোসেনের উত্তর, ‘না, ভাই। কোথাও না। আমি আর্মচেয়ার ট্রাভেলার। চৌদ্দ-পনেরো বছর বয়সে একবার শুধু বিহারের কয়লা শহর গিরিডিতে গিয়েছিলাম আমার আব্বুর সঙ্গে। স্মৃতি নেই কোনো। শুধু মনে আছে রাতে ঘুমোতে দেওয়া হয়েছিল দোতলার খোলা বারান্দায়; অসংখ্য উজ্জ্বল তারা ছিল আকাশে, আর বেশ দূরের শহর থেকে ভেসে আসছিল মোহাম্মাদ রফির গাওয়া সিনেমার গান: দিল্মে ছুপাকে পেয়ার কা তুফান লে চ্যলে/ হ্যম আজ আপনি মওতকা সামান লে চ্যলে...’
মাছ শিকারে কাজীদার গুরু জিম করবেট
কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কিংবা সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে অনেক মজার সব ঘটনাও জানতে পারতাম। কাজী আনোয়ার হোসেনের মাছ শিকারের বাতিক ছিল। একবার মাছ শিকারের একটা সাক্ষাৎকার নিই। সেখানে কাজীদা বলেন, মাছ ধরায় তাঁর গুরু বিখ্যাত শিকারি ও পরে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদ জিম করবেট।
‘১৯৭৭ কি ’৭৮ সাল। মশারির নিচে বন্দী হয়েছিলাম তিন সপ্তাহের জন্য। চিকেন পক্স। আমার প্রথম পুত্র স্কুল থেকে বয়ে এনে উপহার দিয়েছিল ওটা আমাকে। আমার সঙ্গেই ঘুমাত ও, নিজে দু-চারটে গোটার ওপর দিয়ে পার পেয়ে গেল, কিন্তু আমার শরীর ছেয়ে গেল পানিভরা ফোসকায়, আধ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা থাকল না কোথাও। লোকজন ভয়ে কাছে আসে না...অবশ্য, আমিই বারণ করেছি। শুয়ে শুয়ে একের পর এক বই ঘাঁটতে ঘাঁটতে পেয়ে গেলাম জিম করবেটের লেখা সেই বইটা। নাম আজ আর মনে নেই। বাঘ শিকার করতে করতে একবার উত্তর ভারতের চমৎকার এক পাহাড়ি জলাশয় দেখে ছিপ-বড়শি নিয়ে বসে গিয়েছিলেন তিনি মাছ ধরতে। কী অপূর্ব বর্ণনা! কীভাবে ঠোকর দিল মাছ, তিনিও ছিপে মারলেন টান। কেমনভাবে বড়শিতে গাঁথল মাছ, ছুট দিলেন তিরবেগে, পাথরে বাঁধিয়ে সুতো ছেঁড়ার চেষ্টা করল, তিনিই বা কী কায়দায় তাকে মতলব হাসিল করতে না দিয়ে আস্তে আস্তে খেলিয়ে তীরে নিয়ে এসে নেট করলেন। এসবের জলজ্যান্ত, পুঙ্খানুপুঙ্খ, লোভনীয় বর্ণনা পড়ে আমার তো পাগল হবার দশা। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে তাঁকে ১০-১২ কেজি ওজনের কয়েকটা ‘মহাশের’ মাছ মারতে দেখে আমি মশারির নিচে শুয়ে ছটফট করতে থাকলাম...কবে সেরে উঠব!’
ওই সময় কিছু পুকুর বা দিঘিতে মাঝে মাঝে মাছ ধরার টিকিট দেওয়া হতো, কিন্তু ওসব জায়গায় সচরাচর তেমন সুবিধে হতো না। কাজীদার পছন্দ ছিল ধানমন্ডি লেক।
তাঁর মাছ শিকারের বন্ধুদের নিয়ে বলেছিলেন, ‘সে সময় ধানমন্ডি লেকে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, ছেলে-বুড়ো, ব্যবসায়ী-চাকরিজীবী-পেশাজীবী সব মিলিয়ে আমরা মৎস্যশিকারি ছিলাম তিন শর ওপরে। স্বাভাবিক নিয়মেই আমরা যে-যার মনপছন্দের মানুষ খুঁজে নিয়ে ছোট ছোট দল গড়ে এক-একটা এলাকা দখল করতাম। আমি গিয়ে জুটেছিলাম স্বর্ণহ্নদয় দুই শিকারি কালা ভাই (গোলাম রশিদ কালা, আচার প্রস্তুতকারক) ও রব ভাই (আবদুর রব, রঙের কনট্রাক্টর)—এঁদের গ্রুপে। এই গ্রুপে একে একে এসে জুটেছিলেন শামসু ভাই (জনকণ্ঠ পত্রিকার সিনিয়র সহকারী সম্পাদক এ টি এম শামসুদ্দীন), সোশোলজিতে মাস্টার্স লুডু খান (গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক), ইসহাক ভাই (মোজাইকের ঠিকাদার), মোসলেম ভাই (পিঁপড়ার ডিম ও মাছের চার বিক্রেতা), শফি সাহেব (ঠিকাদার), মোবারক ভাই (বাচ্চাদের রাবারের বল তৈরি করে পাইকারি বেচতেন চকবাজারে) ...এরকম আরও বেশ কয়েকজন। মাছ ধরার পাশাপাশি লেকের ধারে বসে চা-নাশতার ফাঁকে হাসি-তামাশা-গল্প চলত আমাদের হাজারো বিষয়ে। গল্পের টানে পুব পাড় থেকে প্রায়ই আমাদের পশ্চিমে চলে আসতেন একজন কোটিপতি মৎস্যশিকারি, তোপখানা রোডের ক্রিসেন্ট কোম্পানির মালিক খলিলুর রহমান। আমি নানাভাই বলতাম, তিনিও আমাকে তা-ই ডাকতেন; আমেরিকা থেকে আমার জন্য একটা মাল্টিপ্লাইং হুইল আর রিডিং ল্যাম্প এনে উপহার দিয়েছিলেন। আর আসতেন নিতাইদা, ঢাকা বেতারের ক্ল্যাসিক্যাল কণ্ঠশিল্পী নিতাই রায়, বড় সজ্জন ছিলেন ভদ্রলোক। রোজ এসে হাজির হতেন শিকারি নন এমন অনেকেও। তাঁদেরই একজন ছিলেন ঢাকা রাইফেল ক্লাবের এয়ার পিস্তল শুটার শারফুদ্দীন টিপু।’
‘আমাদের ছোট্ট গ্রুপের বাইরেও আরও কয়েকজনের কথা না বললেই নয়। তাদের একজন হচ্ছে শাহনেওয়াজ ভুঁইয়া দি গ্রেট, এত বড় মৎস্যশিকারি আমি আর দেখিনি। ওর মতো বড় মাপের শিকারি যেকোনো দেশেই দুর্লভ...নিত্যনতুন টেকনিক তার, সেই সঙ্গে ইমপ্রোভাইজেশন। কোথাও শিকারে গিয়ে কেউ যদি একটা মাছও না পায়, দেখা যাবে ও ধরে বসে আছে বড়সড় পাঁচ-ছয়টা রুই-কাতলা।
আমার হাতে বিদঘুটে আকৃতির স্পিনিং রিল দেখে যে সময় সবাই হাসাহাসি করত, ডিম বিক্রেতা আবদুল মিঞা বলত: ওই ইচার (চিংড়ি মাছের) ঠ্যাংডা হালান দি, আনুয়ার সাপ, বালা হুইল লন। সবাই যখন ছ্যা-ছ্যা করছে, তখন একদিন শাহনেওয়াজ এসে বলল: আনোয়ার ভাই, আপনার এই স্পিনিং হুইল দিয়ে কী করে বেইট থ্রো করতে হয় একটু দেখিয়ে দেবেন? আমি খুশি মনে শিখিয়ে দিলাম। বার কয়েক থ্রো করেই আয়ত্ত করে ফেলল ও কায়দাটা। আর ওরই হাত ধরে গোটা বাংলাদেশে আজ স্পিনিং হুইলের ছড়াছড়ি...মানুষ প্রায় ভুলেই গেছে সেদিনের সেই সিঙ্গেল অ্যাকশন হুইলের কথা...আর একজনের কথা বলব: মোস্তফা সাহেব। প্রথম দিন লেকে গিয়ে তাঁকেই ওস্তাদ ধরেছিলাম। তিনিই কিনিয়ে দিয়েছিলেন ছিপ, বড়শি, কয়েক শ গজ চৌদ্দ পাউন্ডের ভালো জাতের সুতো, আর আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কলকাতার উমাচরণ কর্মকারের তৈরি আদ্যিকালের একটা চার ইঞ্চি বেয়ারিং হুইল।’
কাজীদা বলেছিলেন, নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় মাছটিও শিকার করেছিলেন ধানমন্ডি লেকে। আধা মণের এক-আধ সের বেশি বা কম ছিল ওটা।
শিকারে যেতেন...
বন্যপ্রাণীর প্রতি আমার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। পুরোনো দিনের জঙ্গল আর বন্যপ্রাণীর অবস্থা জানতে শিকারের বই বড় ভরসা। তাই ছোটবেলা থেকেই জিম করবেট, কেনেথ এন্ডারসন কিংবা জন হান্টারের বইয়ের বড় পোকা আমি। তাই যখন শুনলাম মাছ ধরার পাশাপাশি কাজী আনোয়ার হোসেনের শিকারের নেশাও ছিল, তখন এক সাক্ষাৎকারে চেপে ধরলাম।
তখন বলেন, ‘শিকারের নেশা বলতে যা বোঝায়, তা কিন্তু কোনো দিনই পুরোপুরি ছিল না আমার। বাঘটাঘ টানেনি আমাকে। এমনকি রাজহাঁস বা চখা শিকারেও গিয়েছি মাত্র অল্প কয়েকবার। আমার মূল আকর্ষণ ছিল আউটিং। কয়েকজন বন্ধু মিলে শুক্রবারগুলোতে গাড়ি নিয়ে চলে যেতাম যেদিকে খুশি, একেকদিন একেক রাস্তায়। দলের বেশির ভাগই ছিলাম আমরা ধানমন্ডি লেকের মৎস্যশিকারি। আমাদের মধ্যে পাখি শিকারের পাগল ছিল আসলে লুডু খান। আমি ষাটের দশকেই পাখির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। আশির দশকে রব ভাই, কালা ভাই আর আমি ছিলাম জেনুইন মৎস্যশিকারি।...লুডু ভাইয়ের এক নিপাট ভদ্রলোক বন্ধু শারফুদ্দীন টিপুও জুটে গিয়েছিলেন আমাদের সঙ্গে। রব ভাই তো উৎসাহের আতিশয্যে বন্দুক-রাইফেল-পিস্তল কিনে রীতিমতো বন্দুকবাজই বনে গিয়েছিলেন। তবে, প্রতিটা ট্রিপে আমাদের সঙ্গে থাকলেও জীবনে একটি গুলিও ছোড়েননি আমাদের সবার প্রিয় গোলাম রসুল কালা ভাই। টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার নিয়ে যাওয়ার এবং শিকার শেষে সবার মধ্যে পাখি ভাগ করে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর।’
কাজীদা বলেন, ‘চলতে চলতেই থেমে রাস্তার দুপাশের ডালে বসা ঘুঘু, হরিয়াল, কবুতর বা বক মারতাম আমরা পয়েন্ট টুটু রাইফেল দিয়ে। তার আগে অবশ্য থাকত একটা প্রস্তুতিপর্ব: ছুটির আগের দিন রাইফেল নিয়ে গুলশানের শুটিং রেঞ্জে গিয়ে নিখুঁতভাবে রাইফেলগুলো জিরো করে রাখা একটা বড় কাজ ছিল। একমাত্র তাহলেই নিশ্চিত হওয়া যেত যেদিকে তাক করেছি, গুলিটা সেই জায়গায় গিয়ে লাগবে। সবাই আমরা সিঙ্গাপুর থেকে দামি টেলিস্কোপ আনিয়ে ফিট করে নিয়েছিলাম যার যার পয়েন্ট টুটু রাইফেলে। সারাটা দিন রোদে রোদে টোটো করে ঘুরে, ত্রিশ থেকে পঞ্চাশটা পাখি মারতাম আমরা। দুপুরের খাওয়াটা কোনো গাছের নিচে সেরে নিয়ে ঘণ্টাখানেক চলত গল্পগুজব, বিশ্রাম। তারপর আরও কিছুক্ষণ পাখির পেছনে ঘুরে রাস্তার ধারের কোনো দোকানে বসে চা-নাশতা খেয়ে সন্ধের পর ফিরে আসতাম পাখি নিয়ে। এই ছিল আমাদের শিকার বা আউটিং।’
শেষ দেখা
আমার খুব আফসোস ছিল একটি বিষয়ে। টুকটাক কয়েকটা বই রূপান্তর করা হলেও কাজীদাকে কোনো বই উৎসর্গ করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাঁকে একটি বই উৎসর্গ করতে পারি। সেবা প্রকাশনী থেকেই শাহনূর ভাই জেমস হিলটনের ‘লস্ট হরাইজন’ বইটি রূপান্তর করেছিলেন। একটু সংক্ষিপ্তভাবে রূপান্তর করা তিব্বতের পটভূমিতে লেখা বইটি খুব টেনেছিল তখন। চার-পাঁচবার পড়া হয়ে গিয়েছিল। পরে ঐতিহ্য থেকে ২০২০ সালে পূর্ণাঙ্গ রূপান্তর করি বইটি। এটি উৎসর্গ (অনুবাদকের উৎসর্গ) করি কাজী আনোয়ার হোসেনকে। বইটি কাজীদাকে দিতে স্ত্রী-মেয়েসহ দেখা করেছিলাম তাঁর সঙ্গে। অনেক গল্পই হয়েছিল তখন। মেয়ে ওয়াফিকাকে কোলে নিয়ে বইটার একটু অংশ পড়েছিলেনও কাজীদা। তখন অবশ্য কল্পনাও করতে পারিনি তাঁর সঙ্গে এই আমার শেষ দেখা। আফসোস হয়... যদি সেদিন কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে আরেকটু সময় কাটাতে পারতাম।
সিভিতে নাম...
আমার সিভিতে রেফারেন্স হিসেবে দিতে চাইলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। বললেন, কোনো সমস্যা নেই। আমার সিভিতে তারপর অনেকগুলো দিন রেফারেন্সের জায়গায় এক নম্বরে ছিল কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। তারপর ২০২২-এর ১৯ জানুয়ারি আমাদের সবাইকে ছেড়ে চিরতরে চলে গেলেন কাজীদা। তাঁর নামটা বাদ দিয়ে সিভিটা ঠিক করার সময় মনটা অনেক কেঁদেছিল। এখনো লেখাটা লিখতে গিয়ে বারবার মনে পড়ছে তাঁর কথা... কাজী আনোয়ার হোসেন আপনি বেঁচে থাকবেন আমাদের মতো পাঠকদের মনে।

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নিয়েছি। আজ কাজীদার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর সঙ্গে নিজের কিছু অভিজ্ঞতা, সেই সঙ্গে কাজী আনোয়ার হোসেন থেকে জানা তাঁর কিছু বিষয় ভাগাভাগি করছি পাঠকদের সঙ্গে।
বইয়ের জগতে প্রবেশ তাঁর কারণে
ক্লাস ফোরে-ফাইভে পড়ি। আব্বুর স্টিলের আলমারির নিচে গাদাগাদি করে রাখা ছিল অনেক বই। সেবা প্রকাশনী, ভারতীয় নানা লেখকের উপন্যাস আরও কত কী! আব্বুকে বললে চাবি দিয়ে খুলে দিতেন। তারপর নাওয়া-খাওয়া ভুলে হামলে পড়তাম বই নিয়ে। তবে আমাকে টানত সেবা প্রকাশনীর বইগুলোই। মাসুদ রানার বই থাকলেও তখন ওগুলো পড়া বারণ ছিল। তাতে কী! আরও কত্ত বই। ছয় রোমাঞ্চ, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল, কুয়াশা সিরিজের বই, জঙ্গল, শিকার-১, শিকার-২, শিকার-৩, রুদ্র প্রয়াগের চিতা, জুলভার্নের নাইজারের বাঁকে, মরু শহর—এমনই সব বই বলা চলে নতুন এক পৃথিবীর সন্ধান দিয়ে দিল আমাকে। আজ এই আধবুড়ো বয়সেও বইয়ের প্রতি আগ্রহ কমেনি একটুও। আর বইয়ের প্রতি আমার এই ভালোবাসার জন্ম, বই পড়ে পাহাড়-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোর আগ্রহ সৃষ্টি—এই সবকিছু কাজী আনোয়ার হোসেনের জন্যই। তিনি না থাকলে যে সেবা প্রকাশনী হতো না। আমারও বই পড়ে অন্য এক জগতে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ মিলত না।
রহস্যমানব
স্কুলে পড়ার সময় সেবার বই পড়ুয়া অনেক বন্ধুবান্ধবও জুটে যায়। আমাদের কাছে সেবার বিভিন্ন বইয়ের চরিত্রগুলোর মতো কাজী আনোয়ার হোসেনও তখন রহস্যঘেরা এক চরিত্র। আমাদের বই পড়ুয়াদের দলে এক বড় ভাই ছিলেন, নোমান ভাই। তিনি মাঝে মাঝে এমন সব কথা বলতেন, আমরা পুরোপুরি বিশ্বাসও করতে পারতাম না, আবার অবিশ্বাস করতে পারতাম না। একবার যেমন বললেন, মাসুদ রানা সিরিজের বিসিআই (বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স) ঢাকায় সত্যি আছে। আর কাজী আনোয়ার হোসেন বড় একটা পদে আছেন। তবে এটা একেবারেই গোপনীয়! তাই কেউ জানে না। কাজী আনোয়ার হোসেন আমাদের কাছে এমনই এক রহস্যঘেরা মানুষ ছিলেন, আমরা তাঁর এ কথা বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম। তখন একবারও মনে হয়নি, এত গোপনীয় বিষয়টি আমাদের চেয়ে কয়েক বছরের বড় নোমান ভাই জানলেন কীভাবে?
দুরু দুরু বুকে
২০০৫-০৬ সালের ঘটনা। রহস্য পত্রিকায় লিখছি নিয়মিত। তবে তখন পর্যন্ত কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে দেখা হয়নি। রহস্য পত্রিকার অফিস ২৪/৪ সেগুনবাগিচার দোতলায়। কাজী আনোয়ার হোসেন বসেন তৃতীয় তলায়। আমার দৌড় তখন পর্যন্ত ওই দোতলা পর্যন্ত। সেখানে গিয়ে লেখা জমা দিই। আর হাকিম আংকেল (শেখ আবদুল হাকিম) ও শাহনূর ভাইয়ের (কাজী শাহনূর হোসেন) সঙ্গে গল্প করি, নতুন নতুন লেখার পরিকল্পনা করি। একদিন শাহনূর ভাইকে সাহস করে বললাম, কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে চাই। পরদিন সকালেই ডাক পড়ল। আমার মনে হলো বিসিআই চিফ রাহাত খানের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি।
দোতলা থেকে তৃতীয় তলা ওঠার পথে একটি তালা মারা দরজা। দালানের এই পাশ দিয়ে কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায় যেতে হলে ওই দরজা খুলেই যেতে হয়। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে শেষ পর্যন্ত দুরু দুরু বুকে ঢুকলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের কামরায়। আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। বসতে বললেন। শুরুতে কেমন ঘোরের মধ্যে ছিলাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না কাজী আনোয়ার হোসেনের সামনে বসে আছি।
তারপর অনেকবারই গিয়েছি কাজীদার সঙ্গে দেখা করতে। বেশির ভাগ সময় কোনো না কোনো কাজে। বেশ কয়েকটি সাক্ষাৎকারও নিয়েছি তাঁর। তবে ওই প্রথম দিনের অনুভূতি আজও অটুট আমার মনে। এখনো মনে পড়লে কেমন ভয়-রোমাঞ্চের একটি শিহরণ খেলে যায় শরীরে।
সেই ক্যামেরা
পরের বছরের ঘটনা। তখন বনে, পাহাড়ে ঘুরে বেড়ানোর নেশা প্রবলভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে আমার ওপর। সেই সঙ্গে ছবি তোলার আগ্রহ পেয়ে বসেছে। সমস্যা হলো, ভালো ক্যামেরা নেই। একদিন কথায় কথায় শাহনূর ভাইকে বললাম, ক্যামেরা না থাকায় ভালো ছবি তুলতে পারছি না। একটা ক্যামেরা কিনতে হবে।
কয়েক দিন পরের কথা। সেবা প্রকাশনীতে গেলাম আবার। কোনো একটা লেখা নিয়ে কিংবা নিছক আড্ডা দিতে। কতক্ষণ গল্প করার পর চলে আসতে যাব, এমন সময় শাহনূর ভাই বললেন, ‘একটু দাঁড়াও।’ একটু পর ফিরে এলেন। হাতে একটা ব্যাগ। আমাকে চমকে দিয়ে ভেতর থেকে বের করলেন একটি নাইকন ক্যামেরা। বললেন, ‘আব্বাকে বলেছিলাম তোমার ছবি তোলার আগ্রহের কথা। তখন বললেন তাঁর এই ক্যামেরাটা পড়ে আছে। কী অবস্থা এটার জানেন না। চাইলে তুমি এটা নিতে পারো, যদি কোনো কাজে লাগে।’
আমার তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না, কাজীদা আমাকে তাঁর ব্যবহার করা ক্যামেরা দিয়েছেন! তাঁর মনে আমার জন্য আলাদা একটি জায়গা আছে ভেবে খুব ভালো লাগছিল।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই ক্যামেরাটা দিয়ে পরে আর ছবি তোলা সম্ভব হয়নি। অনেক দিন পড়ে থেকে এটার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সযতনে ক্যামেরাটা নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। এখন আমার কাছে একটি মোটামুটি ভালো একটা ডিএসএলআর ক্যামেরা আছে, বাড়তি লেন্সসহ আমেরিকা থেকে আনিয়েছি আমার বোনকে দিয়ে। কিন্তু আমার কাছে ওই ক্যামেরার থেকেও বেশি প্রিয় কাজীদার দেওয়া সেই পুরোনো ক্যামেরাটি।
পরে ক্যামেরা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে কাজীদার সঙ্গে। এক সাক্ষাৎকারে যেমন আমাকে বলেছিলেন, ‘বহু বছর ধরে ক্যামেরা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছি, যদিও শিল্প সৃষ্টির তাগিদে নয়। আমি মুহূর্তকে ধরতে চেয়েছি। যেই শাটারে চাপ দিলাম, থমকে দাঁড়িয়ে গেল একটা মুহূর্ত। স্থির হয়ে গেল একটা নাটকের ছোট্ট এক অংশ। যখন খুশি, যতবার খুশি দেখব আমি ওটা। স্মৃতি মলিন হয়ে যায়, কিন্তু ছবি বহু বছর পর্যন্ত জলজ্যান্ত থাকে। ফটোগ্রাফির এই গুণটাই আমাকে আকর্ষণ করেছিল সবচেয়ে বেশি। মাঝে মাঝে এক-আধটা ফটোগ্রাফ দারুণ হয়ে যায়। তখন খুব ভালো লাগে, নিজেকে বিরাট শিল্পী মনে হয়। ছবি তোলার মোটামুটি নিয়মগুলো শেখা থাকলে, দূরত্ব আর আলোছায়ার হিসাব ঠিক থাকলে, সেই সঙ্গে কম্পোজিশন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকলে মাঝারি মানের একটা ছবি নিশ্চিতভাবেই আশা করা যায়। তাই ফটোগ্রাফিকে আমি একান্ত বিশ্বস্ত ডায়েরি হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম।
...কত্তো কষ্ট করেছি ফটোগ্রাফির জন্য! অথচ এখন? একদম সোজা। মোবাইল ফোনের কল্যাণে এখন টিপ দিলেই ছবি। অহরহ ইনস্ট্যান্ট ছবি তুলে নিজে দেখা যাচ্ছে, মানুষকে দেখানো যাচ্ছে, ফেসবুকে পোস্ট করা যাচ্ছে। এটা যে কত বিরাট অগ্রগতি, ভাবলে বিশ্বাস হতে চায় না। মনে হয় জাদুমন্ত্র! কোথা থেকে হাঁটতে হাঁটতে কোথায় চলে এসেছে আজ মানুষ!’
রানা গিয়েছে কত দেশে...কাজীদা?
কাজী আনোয়ার হোসেন তাঁর সৃষ্টি চরিত্রগুলোকে পৃথিবীর অনেক দেশ, দুর্গম সব জায়গায় ঘুরিয়ে এনেছেন। কিন্তু নিজে কি খুব বেশি দেশ ভ্রমণ করেছেন? জানতে চেয়েছিলাম এক সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময়। কাজী আনোয়ার হোসেনের উত্তর, ‘না, ভাই। কোথাও না। আমি আর্মচেয়ার ট্রাভেলার। চৌদ্দ-পনেরো বছর বয়সে একবার শুধু বিহারের কয়লা শহর গিরিডিতে গিয়েছিলাম আমার আব্বুর সঙ্গে। স্মৃতি নেই কোনো। শুধু মনে আছে রাতে ঘুমোতে দেওয়া হয়েছিল দোতলার খোলা বারান্দায়; অসংখ্য উজ্জ্বল তারা ছিল আকাশে, আর বেশ দূরের শহর থেকে ভেসে আসছিল মোহাম্মাদ রফির গাওয়া সিনেমার গান: দিল্মে ছুপাকে পেয়ার কা তুফান লে চ্যলে/ হ্যম আজ আপনি মওতকা সামান লে চ্যলে...’
মাছ শিকারে কাজীদার গুরু জিম করবেট
কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কিংবা সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে অনেক মজার সব ঘটনাও জানতে পারতাম। কাজী আনোয়ার হোসেনের মাছ শিকারের বাতিক ছিল। একবার মাছ শিকারের একটা সাক্ষাৎকার নিই। সেখানে কাজীদা বলেন, মাছ ধরায় তাঁর গুরু বিখ্যাত শিকারি ও পরে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবিদ জিম করবেট।
‘১৯৭৭ কি ’৭৮ সাল। মশারির নিচে বন্দী হয়েছিলাম তিন সপ্তাহের জন্য। চিকেন পক্স। আমার প্রথম পুত্র স্কুল থেকে বয়ে এনে উপহার দিয়েছিল ওটা আমাকে। আমার সঙ্গেই ঘুমাত ও, নিজে দু-চারটে গোটার ওপর দিয়ে পার পেয়ে গেল, কিন্তু আমার শরীর ছেয়ে গেল পানিভরা ফোসকায়, আধ ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা থাকল না কোথাও। লোকজন ভয়ে কাছে আসে না...অবশ্য, আমিই বারণ করেছি। শুয়ে শুয়ে একের পর এক বই ঘাঁটতে ঘাঁটতে পেয়ে গেলাম জিম করবেটের লেখা সেই বইটা। নাম আজ আর মনে নেই। বাঘ শিকার করতে করতে একবার উত্তর ভারতের চমৎকার এক পাহাড়ি জলাশয় দেখে ছিপ-বড়শি নিয়ে বসে গিয়েছিলেন তিনি মাছ ধরতে। কী অপূর্ব বর্ণনা! কীভাবে ঠোকর দিল মাছ, তিনিও ছিপে মারলেন টান। কেমনভাবে বড়শিতে গাঁথল মাছ, ছুট দিলেন তিরবেগে, পাথরে বাঁধিয়ে সুতো ছেঁড়ার চেষ্টা করল, তিনিই বা কী কায়দায় তাকে মতলব হাসিল করতে না দিয়ে আস্তে আস্তে খেলিয়ে তীরে নিয়ে এসে নেট করলেন। এসবের জলজ্যান্ত, পুঙ্খানুপুঙ্খ, লোভনীয় বর্ণনা পড়ে আমার তো পাগল হবার দশা। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে তাঁকে ১০-১২ কেজি ওজনের কয়েকটা ‘মহাশের’ মাছ মারতে দেখে আমি মশারির নিচে শুয়ে ছটফট করতে থাকলাম...কবে সেরে উঠব!’
ওই সময় কিছু পুকুর বা দিঘিতে মাঝে মাঝে মাছ ধরার টিকিট দেওয়া হতো, কিন্তু ওসব জায়গায় সচরাচর তেমন সুবিধে হতো না। কাজীদার পছন্দ ছিল ধানমন্ডি লেক।
তাঁর মাছ শিকারের বন্ধুদের নিয়ে বলেছিলেন, ‘সে সময় ধানমন্ডি লেকে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, ছেলে-বুড়ো, ব্যবসায়ী-চাকরিজীবী-পেশাজীবী সব মিলিয়ে আমরা মৎস্যশিকারি ছিলাম তিন শর ওপরে। স্বাভাবিক নিয়মেই আমরা যে-যার মনপছন্দের মানুষ খুঁজে নিয়ে ছোট ছোট দল গড়ে এক-একটা এলাকা দখল করতাম। আমি গিয়ে জুটেছিলাম স্বর্ণহ্নদয় দুই শিকারি কালা ভাই (গোলাম রশিদ কালা, আচার প্রস্তুতকারক) ও রব ভাই (আবদুর রব, রঙের কনট্রাক্টর)—এঁদের গ্রুপে। এই গ্রুপে একে একে এসে জুটেছিলেন শামসু ভাই (জনকণ্ঠ পত্রিকার সিনিয়র সহকারী সম্পাদক এ টি এম শামসুদ্দীন), সোশোলজিতে মাস্টার্স লুডু খান (গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক), ইসহাক ভাই (মোজাইকের ঠিকাদার), মোসলেম ভাই (পিঁপড়ার ডিম ও মাছের চার বিক্রেতা), শফি সাহেব (ঠিকাদার), মোবারক ভাই (বাচ্চাদের রাবারের বল তৈরি করে পাইকারি বেচতেন চকবাজারে) ...এরকম আরও বেশ কয়েকজন। মাছ ধরার পাশাপাশি লেকের ধারে বসে চা-নাশতার ফাঁকে হাসি-তামাশা-গল্প চলত আমাদের হাজারো বিষয়ে। গল্পের টানে পুব পাড় থেকে প্রায়ই আমাদের পশ্চিমে চলে আসতেন একজন কোটিপতি মৎস্যশিকারি, তোপখানা রোডের ক্রিসেন্ট কোম্পানির মালিক খলিলুর রহমান। আমি নানাভাই বলতাম, তিনিও আমাকে তা-ই ডাকতেন; আমেরিকা থেকে আমার জন্য একটা মাল্টিপ্লাইং হুইল আর রিডিং ল্যাম্প এনে উপহার দিয়েছিলেন। আর আসতেন নিতাইদা, ঢাকা বেতারের ক্ল্যাসিক্যাল কণ্ঠশিল্পী নিতাই রায়, বড় সজ্জন ছিলেন ভদ্রলোক। রোজ এসে হাজির হতেন শিকারি নন এমন অনেকেও। তাঁদেরই একজন ছিলেন ঢাকা রাইফেল ক্লাবের এয়ার পিস্তল শুটার শারফুদ্দীন টিপু।’
‘আমাদের ছোট্ট গ্রুপের বাইরেও আরও কয়েকজনের কথা না বললেই নয়। তাদের একজন হচ্ছে শাহনেওয়াজ ভুঁইয়া দি গ্রেট, এত বড় মৎস্যশিকারি আমি আর দেখিনি। ওর মতো বড় মাপের শিকারি যেকোনো দেশেই দুর্লভ...নিত্যনতুন টেকনিক তার, সেই সঙ্গে ইমপ্রোভাইজেশন। কোথাও শিকারে গিয়ে কেউ যদি একটা মাছও না পায়, দেখা যাবে ও ধরে বসে আছে বড়সড় পাঁচ-ছয়টা রুই-কাতলা।
আমার হাতে বিদঘুটে আকৃতির স্পিনিং রিল দেখে যে সময় সবাই হাসাহাসি করত, ডিম বিক্রেতা আবদুল মিঞা বলত: ওই ইচার (চিংড়ি মাছের) ঠ্যাংডা হালান দি, আনুয়ার সাপ, বালা হুইল লন। সবাই যখন ছ্যা-ছ্যা করছে, তখন একদিন শাহনেওয়াজ এসে বলল: আনোয়ার ভাই, আপনার এই স্পিনিং হুইল দিয়ে কী করে বেইট থ্রো করতে হয় একটু দেখিয়ে দেবেন? আমি খুশি মনে শিখিয়ে দিলাম। বার কয়েক থ্রো করেই আয়ত্ত করে ফেলল ও কায়দাটা। আর ওরই হাত ধরে গোটা বাংলাদেশে আজ স্পিনিং হুইলের ছড়াছড়ি...মানুষ প্রায় ভুলেই গেছে সেদিনের সেই সিঙ্গেল অ্যাকশন হুইলের কথা...আর একজনের কথা বলব: মোস্তফা সাহেব। প্রথম দিন লেকে গিয়ে তাঁকেই ওস্তাদ ধরেছিলাম। তিনিই কিনিয়ে দিয়েছিলেন ছিপ, বড়শি, কয়েক শ গজ চৌদ্দ পাউন্ডের ভালো জাতের সুতো, আর আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কলকাতার উমাচরণ কর্মকারের তৈরি আদ্যিকালের একটা চার ইঞ্চি বেয়ারিং হুইল।’
কাজীদা বলেছিলেন, নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় মাছটিও শিকার করেছিলেন ধানমন্ডি লেকে। আধা মণের এক-আধ সের বেশি বা কম ছিল ওটা।
শিকারে যেতেন...
বন্যপ্রাণীর প্রতি আমার আগ্রহ ছোটবেলা থেকেই। পুরোনো দিনের জঙ্গল আর বন্যপ্রাণীর অবস্থা জানতে শিকারের বই বড় ভরসা। তাই ছোটবেলা থেকেই জিম করবেট, কেনেথ এন্ডারসন কিংবা জন হান্টারের বইয়ের বড় পোকা আমি। তাই যখন শুনলাম মাছ ধরার পাশাপাশি কাজী আনোয়ার হোসেনের শিকারের নেশাও ছিল, তখন এক সাক্ষাৎকারে চেপে ধরলাম।
তখন বলেন, ‘শিকারের নেশা বলতে যা বোঝায়, তা কিন্তু কোনো দিনই পুরোপুরি ছিল না আমার। বাঘটাঘ টানেনি আমাকে। এমনকি রাজহাঁস বা চখা শিকারেও গিয়েছি মাত্র অল্প কয়েকবার। আমার মূল আকর্ষণ ছিল আউটিং। কয়েকজন বন্ধু মিলে শুক্রবারগুলোতে গাড়ি নিয়ে চলে যেতাম যেদিকে খুশি, একেকদিন একেক রাস্তায়। দলের বেশির ভাগই ছিলাম আমরা ধানমন্ডি লেকের মৎস্যশিকারি। আমাদের মধ্যে পাখি শিকারের পাগল ছিল আসলে লুডু খান। আমি ষাটের দশকেই পাখির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। আশির দশকে রব ভাই, কালা ভাই আর আমি ছিলাম জেনুইন মৎস্যশিকারি।...লুডু ভাইয়ের এক নিপাট ভদ্রলোক বন্ধু শারফুদ্দীন টিপুও জুটে গিয়েছিলেন আমাদের সঙ্গে। রব ভাই তো উৎসাহের আতিশয্যে বন্দুক-রাইফেল-পিস্তল কিনে রীতিমতো বন্দুকবাজই বনে গিয়েছিলেন। তবে, প্রতিটা ট্রিপে আমাদের সঙ্গে থাকলেও জীবনে একটি গুলিও ছোড়েননি আমাদের সবার প্রিয় গোলাম রসুল কালা ভাই। টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার নিয়ে যাওয়ার এবং শিকার শেষে সবার মধ্যে পাখি ভাগ করে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাঁর ওপর।’
কাজীদা বলেন, ‘চলতে চলতেই থেমে রাস্তার দুপাশের ডালে বসা ঘুঘু, হরিয়াল, কবুতর বা বক মারতাম আমরা পয়েন্ট টুটু রাইফেল দিয়ে। তার আগে অবশ্য থাকত একটা প্রস্তুতিপর্ব: ছুটির আগের দিন রাইফেল নিয়ে গুলশানের শুটিং রেঞ্জে গিয়ে নিখুঁতভাবে রাইফেলগুলো জিরো করে রাখা একটা বড় কাজ ছিল। একমাত্র তাহলেই নিশ্চিত হওয়া যেত যেদিকে তাক করেছি, গুলিটা সেই জায়গায় গিয়ে লাগবে। সবাই আমরা সিঙ্গাপুর থেকে দামি টেলিস্কোপ আনিয়ে ফিট করে নিয়েছিলাম যার যার পয়েন্ট টুটু রাইফেলে। সারাটা দিন রোদে রোদে টোটো করে ঘুরে, ত্রিশ থেকে পঞ্চাশটা পাখি মারতাম আমরা। দুপুরের খাওয়াটা কোনো গাছের নিচে সেরে নিয়ে ঘণ্টাখানেক চলত গল্পগুজব, বিশ্রাম। তারপর আরও কিছুক্ষণ পাখির পেছনে ঘুরে রাস্তার ধারের কোনো দোকানে বসে চা-নাশতা খেয়ে সন্ধের পর ফিরে আসতাম পাখি নিয়ে। এই ছিল আমাদের শিকার বা আউটিং।’
শেষ দেখা
আমার খুব আফসোস ছিল একটি বিষয়ে। টুকটাক কয়েকটা বই রূপান্তর করা হলেও কাজীদাকে কোনো বই উৎসর্গ করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাঁকে একটি বই উৎসর্গ করতে পারি। সেবা প্রকাশনী থেকেই শাহনূর ভাই জেমস হিলটনের ‘লস্ট হরাইজন’ বইটি রূপান্তর করেছিলেন। একটু সংক্ষিপ্তভাবে রূপান্তর করা তিব্বতের পটভূমিতে লেখা বইটি খুব টেনেছিল তখন। চার-পাঁচবার পড়া হয়ে গিয়েছিল। পরে ঐতিহ্য থেকে ২০২০ সালে পূর্ণাঙ্গ রূপান্তর করি বইটি। এটি উৎসর্গ (অনুবাদকের উৎসর্গ) করি কাজী আনোয়ার হোসেনকে। বইটি কাজীদাকে দিতে স্ত্রী-মেয়েসহ দেখা করেছিলাম তাঁর সঙ্গে। অনেক গল্পই হয়েছিল তখন। মেয়ে ওয়াফিকাকে কোলে নিয়ে বইটার একটু অংশ পড়েছিলেনও কাজীদা। তখন অবশ্য কল্পনাও করতে পারিনি তাঁর সঙ্গে এই আমার শেষ দেখা। আফসোস হয়... যদি সেদিন কাজী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে আরেকটু সময় কাটাতে পারতাম।
সিভিতে নাম...
আমার সিভিতে রেফারেন্স হিসেবে দিতে চাইলাম কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। বললেন, কোনো সমস্যা নেই। আমার সিভিতে তারপর অনেকগুলো দিন রেফারেন্সের জায়গায় এক নম্বরে ছিল কাজী আনোয়ার হোসেনের নাম। তারপর ২০২২-এর ১৯ জানুয়ারি আমাদের সবাইকে ছেড়ে চিরতরে চলে গেলেন কাজীদা। তাঁর নামটা বাদ দিয়ে সিভিটা ঠিক করার সময় মনটা অনেক কেঁদেছিল। এখনো লেখাটা লিখতে গিয়ে বারবার মনে পড়ছে তাঁর কথা... কাজী আনোয়ার হোসেন আপনি বেঁচে থাকবেন আমাদের মতো পাঠকদের মনে।

আমাদের সমাজে প্রচলিত এমন কিছু অভ্যাস আছে, যা সাধারণত নেতিবাচক চোখে দেখা হয় বা এড়িয়ে চলতে বলা হয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে এই অভ্যাসগুলোর সবই ক্ষতিকর নয়; বরং কিছু অভ্যাস সুস্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি ও সৃজনশীলতার জন্য অপরিহার্য। এবার জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ‘ভুল’ ধারণা এবং
৪৪ মিনিট আগে
বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির
৩ ঘণ্টা আগে
ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
৪ ঘণ্টা আগে
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
৮ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

আমাদের সমাজে প্রচলিত এমন কিছু অভ্যাস আছে, যা সাধারণত নেতিবাচক চোখে দেখা হয় বা এড়িয়ে চলতে বলা হয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে এই অভ্যাসগুলোর সবই ক্ষতিকর নয়; বরং কিছু অভ্যাস সুস্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি ও সৃজনশীলতার জন্য অপরিহার্য। এবার জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ‘ভুল’ ধারণা এবং এর পেছনের উপকারী দিকগুলো।
ভিডিও গেম
ভিডিও গেম খেলাকে আমরা সমাজে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, পরিমিত পরিমাণে ভিডিও গেম খেললে জ্ঞানের ক্ষমতা এবং মনোযোগ উন্নত হতে পারে। এমনকি চিকিৎসা ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার রয়েছে।
কফি পান করা
কফি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস। কফি পানকে অনেকে নেতিবাচক মনে করলেও, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে। এমনকি পার্কিনসন রোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে। ২০১৭ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত একটি পর্যালোচনায় প্রায় ২০০ গবেষণা বিশ্লেষণ করে উপসংহারে পৌঁছানো হয়েছে যে গর্ভাবস্থা ছাড়া স্বাভাবিক মাত্রায় কফি পান নিরাপদ। পরিমাণ হতে হবে প্রতিদিন ৩-৪ কাপ। এমনকি এটি সামগ্রিক মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
অলসতা বা বিরক্তিবোধ
বিরক্তিবোধ করা; যাকে আমরা বোরনেস বলি, একে নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। কিন্তু এটি মস্তিষ্ককে ঘুরে বেড়ানোর এবং বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দেয়। যেখান থেকে মূলত সৃজনশীলতা এবং নতুন ধারণার জন্ম দেয়। মেয়ো ক্লিনিকের মতে, শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের জন্য সামান্য বিরক্তি ভালো হতে পারে। এটি সৃজনশীলতা এবং সমস্যা সমাধানের উদ্দীপনা জোগায়, পাশাপাশি মস্তিষ্ককে রিচার্জের সময় দেয়।

আলু খাওয়া
আলু খাওয়াকে অনেকে খারাপ বলে মনে করেন। অথচ আলু পুষ্টি ও ফাইবারের ভান্ডার। আলু মূলত ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবারে ভরপুর একটি সবজি; বিশেষ করে যখন খোসাসহ খাওয়া হয়। তবে হ্যাঁ, আলুর মূল সমস্যা এর রান্নার পদ্ধতিতে। আলু সাধারণত ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের মতো অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত পদ্ধতিতে রান্নার কারণে অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু সেদ্ধ, সেঁকা বা বাষ্পে তৈরি আলু অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। ইউসি ডেভিস হেলথ আমেরিকানদের বেশি বেশি আলু খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
অস্থির আচরণ
স্কুলজীবনে অস্থির হয়ে নড়াচড়া করার জন্য হয়তো অনেক বকা খেতে হয়েছে। বাড়িতে শিক্ষকেরা কমপ্লেনও করেন, আপনার শিশুটি খুব বেশি চঞ্চল। কিন্তু গবেষণা বলছে এই অভ্যাস শরীরের জন্য ভালো হতে পারে! মেয়ো ক্লিনিকের জেমস লেভিনের গবেষণা অনুসারে, যাঁরা অস্থিরভাবে নড়াচড়া করেন, তাঁরা প্রতিদিন প্রায় ৩৫০ কিলোক্যালোরি পর্যন্ত ক্যালরি বার্ন করতে পারেন। অন্যান্য গবেষণায় দেখা যায়, এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে, মানসিক চাপ কমাতে এবং সম্ভবত দীর্ঘকাল বাঁচতে সাহায্য করতে পারে।

খারাপ মেজাজ ও কান্নাকাটি
সব সময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নেতিবাচক আবেগসহ সব ধরনের অনুভূতিকে স্বীকৃতি দেওয়া ভালো মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নিয়ে যায়। যেমন কান্না পেলে কাঁদুন। কিংবা মেজাজ খারাপ হলে মনের কথা বলে ফেলুন। কান্না শুধু আবেগের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া নয়, এটি স্বাস্থ্যকরও বটে। গবেষণায় দেখা গেছে, কান্নার মাধ্যমে অক্সিটোসিন এবং এন্ডোরফিন নির্গত হয়, যা শারীরিক ও মানসিক উভয় ব্যথা উপশম করতে পারে। তেমনই একাকিত্বকে নেতিবাচকভাবে দেখা হলেও, এটি মনোযোগ বৃদ্ধি করে, সৃজনশীলতা বাড়ায়, আত্ম-প্রতিফলন ঘটায় এবং সামাজিক শক্তিকে রিচার্জ করতে সাহায্য করে।
ফ্রিজে রাখা ফল ও সবজি
অনেকের ধারণা, টাটকা ফল ও সবজির চেয়ে ফ্রোজেন ফল ও সবজি কম পুষ্টিকর। কিন্তু এই ধারণা ভুল। ফল ও সবজিকে সর্বোচ্চ পরিপক্বতার সময়ে ‘ফ্ল্যাশ-ফ্রিজ’ করা হলে সেগুলোর প্রায় সব পুষ্টি উপাদান সংরক্ষিত থাকে। ইউনিভার্সিটি অব চেস্টারের গবেষণায় দেখা গেছে, তিনটির মধ্যে দুটির ক্ষেত্রে ফ্রোজেন উৎপাদনে ফ্রিজে রাখা সমপরিমাণ তাজা পণ্যের চেয়ে বেশি পুষ্টি ছিল।
সূর্যের আলো
অতিরিক্ত সূর্যালোকে থাকা ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ালেও, হাড়ের স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য অপরিহার্য ভিটামিন ডি উৎপাদন করতে নিয়মিত, পরিমিত সূর্যরশ্মি গ্রহণ প্রয়োজন। ওয়েবএমডির মতে, অবস্থানের ওপর নির্ভর করে প্রতিদিন সাধারণত ৫-৩০ মিনিট সূর্যের আলো শরীরে লাগানো উপকারী এবং নিরাপদ।
সূত্র: মেয়ো ক্লিনিক, শো বিজ ডেইলি

আমাদের সমাজে প্রচলিত এমন কিছু অভ্যাস আছে, যা সাধারণত নেতিবাচক চোখে দেখা হয় বা এড়িয়ে চলতে বলা হয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে এই অভ্যাসগুলোর সবই ক্ষতিকর নয়; বরং কিছু অভ্যাস সুস্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি ও সৃজনশীলতার জন্য অপরিহার্য। এবার জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ‘ভুল’ ধারণা এবং এর পেছনের উপকারী দিকগুলো।
ভিডিও গেম
ভিডিও গেম খেলাকে আমরা সমাজে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখি। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, পরিমিত পরিমাণে ভিডিও গেম খেললে জ্ঞানের ক্ষমতা এবং মনোযোগ উন্নত হতে পারে। এমনকি চিকিৎসা ক্ষেত্রেও এর ব্যবহার রয়েছে।
কফি পান করা
কফি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস। কফি পানকে অনেকে নেতিবাচক মনে করলেও, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে। এমনকি পার্কিনসন রোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে। ২০১৭ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত একটি পর্যালোচনায় প্রায় ২০০ গবেষণা বিশ্লেষণ করে উপসংহারে পৌঁছানো হয়েছে যে গর্ভাবস্থা ছাড়া স্বাভাবিক মাত্রায় কফি পান নিরাপদ। পরিমাণ হতে হবে প্রতিদিন ৩-৪ কাপ। এমনকি এটি সামগ্রিক মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
অলসতা বা বিরক্তিবোধ
বিরক্তিবোধ করা; যাকে আমরা বোরনেস বলি, একে নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। কিন্তু এটি মস্তিষ্ককে ঘুরে বেড়ানোর এবং বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দেয়। যেখান থেকে মূলত সৃজনশীলতা এবং নতুন ধারণার জন্ম দেয়। মেয়ো ক্লিনিকের মতে, শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের জন্য সামান্য বিরক্তি ভালো হতে পারে। এটি সৃজনশীলতা এবং সমস্যা সমাধানের উদ্দীপনা জোগায়, পাশাপাশি মস্তিষ্ককে রিচার্জের সময় দেয়।

আলু খাওয়া
আলু খাওয়াকে অনেকে খারাপ বলে মনে করেন। অথচ আলু পুষ্টি ও ফাইবারের ভান্ডার। আলু মূলত ভিটামিন, মিনারেল এবং ফাইবারে ভরপুর একটি সবজি; বিশেষ করে যখন খোসাসহ খাওয়া হয়। তবে হ্যাঁ, আলুর মূল সমস্যা এর রান্নার পদ্ধতিতে। আলু সাধারণত ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের মতো অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত পদ্ধতিতে রান্নার কারণে অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু সেদ্ধ, সেঁকা বা বাষ্পে তৈরি আলু অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। ইউসি ডেভিস হেলথ আমেরিকানদের বেশি বেশি আলু খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
অস্থির আচরণ
স্কুলজীবনে অস্থির হয়ে নড়াচড়া করার জন্য হয়তো অনেক বকা খেতে হয়েছে। বাড়িতে শিক্ষকেরা কমপ্লেনও করেন, আপনার শিশুটি খুব বেশি চঞ্চল। কিন্তু গবেষণা বলছে এই অভ্যাস শরীরের জন্য ভালো হতে পারে! মেয়ো ক্লিনিকের জেমস লেভিনের গবেষণা অনুসারে, যাঁরা অস্থিরভাবে নড়াচড়া করেন, তাঁরা প্রতিদিন প্রায় ৩৫০ কিলোক্যালোরি পর্যন্ত ক্যালরি বার্ন করতে পারেন। অন্যান্য গবেষণায় দেখা যায়, এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে, মানসিক চাপ কমাতে এবং সম্ভবত দীর্ঘকাল বাঁচতে সাহায্য করতে পারে।

খারাপ মেজাজ ও কান্নাকাটি
সব সময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নেতিবাচক আবেগসহ সব ধরনের অনুভূতিকে স্বীকৃতি দেওয়া ভালো মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নিয়ে যায়। যেমন কান্না পেলে কাঁদুন। কিংবা মেজাজ খারাপ হলে মনের কথা বলে ফেলুন। কান্না শুধু আবেগের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া নয়, এটি স্বাস্থ্যকরও বটে। গবেষণায় দেখা গেছে, কান্নার মাধ্যমে অক্সিটোসিন এবং এন্ডোরফিন নির্গত হয়, যা শারীরিক ও মানসিক উভয় ব্যথা উপশম করতে পারে। তেমনই একাকিত্বকে নেতিবাচকভাবে দেখা হলেও, এটি মনোযোগ বৃদ্ধি করে, সৃজনশীলতা বাড়ায়, আত্ম-প্রতিফলন ঘটায় এবং সামাজিক শক্তিকে রিচার্জ করতে সাহায্য করে।
ফ্রিজে রাখা ফল ও সবজি
অনেকের ধারণা, টাটকা ফল ও সবজির চেয়ে ফ্রোজেন ফল ও সবজি কম পুষ্টিকর। কিন্তু এই ধারণা ভুল। ফল ও সবজিকে সর্বোচ্চ পরিপক্বতার সময়ে ‘ফ্ল্যাশ-ফ্রিজ’ করা হলে সেগুলোর প্রায় সব পুষ্টি উপাদান সংরক্ষিত থাকে। ইউনিভার্সিটি অব চেস্টারের গবেষণায় দেখা গেছে, তিনটির মধ্যে দুটির ক্ষেত্রে ফ্রোজেন উৎপাদনে ফ্রিজে রাখা সমপরিমাণ তাজা পণ্যের চেয়ে বেশি পুষ্টি ছিল।
সূর্যের আলো
অতিরিক্ত সূর্যালোকে থাকা ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ালেও, হাড়ের স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য অপরিহার্য ভিটামিন ডি উৎপাদন করতে নিয়মিত, পরিমিত সূর্যরশ্মি গ্রহণ প্রয়োজন। ওয়েবএমডির মতে, অবস্থানের ওপর নির্ভর করে প্রতিদিন সাধারণত ৫-৩০ মিনিট সূর্যের আলো শরীরে লাগানো উপকারী এবং নিরাপদ।
সূত্র: মেয়ো ক্লিনিক, শো বিজ ডেইলি

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নি
১৯ জানুয়ারি ২০২৩
বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির
৩ ঘণ্টা আগে
ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
৪ ঘণ্টা আগে
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
৮ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির সঙ্গে ড্রেনে ফেলেন, সেগুলো সহজে পাইপ বন্ধ করে দিতে পারে আপনার অজান্তে।
বাড়তি রান্নার তেল
বড় ভুল হলো ব্যবহার শেষে গরম অবস্থায় অতিরিক্ত তেল সিংকে ঢেলে দেওয়া। গরম অবস্থায় তরল থাকলেও পাইপের ভেতরে ঠান্ডা পরিবেশে তেল দ্রুত শক্ত হয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে এই স্তর মোটা হয় এবং এর সঙ্গে অন্য খাবারের কণা আটকে পাইপ পুরোপুরি জ্যাম হয়ে যায়। ব্যবহার শেষে তেল একটি বোতলে জমিয়ে রাখতে পারেন। পরবর্তী সময়ে তা বোতলসহ ময়লার ঝুরিতে ফেলে দেওয়া নিরাপদ।
কফির গুঁড়া
অনেকেই ভাবেন কফির গুঁড়া এত সূক্ষ্ম যে সিংকে ফেললে কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু পানি লাগলে এটি দলা পাকিয়ে ঘন পুরু স্তর তৈরি করে, যা পাইপের বাঁক বা জোড়ায় গিয়ে আটকে যায়। ধীরে ধীরে এই স্তর শক্ত হয়ে ব্লক সৃষ্টি করে। কফির গুঁড়া ডাস্টবিনে ফেলাই ভালো অথবা সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
রাসায়নিক ড্রেন ক্লিনার
শোনা যায়, ব্লক খুলতে এগুলো খুব কার্যকর। কিন্তু একই সঙ্গে এগুলো পাইপের শত্রুও বটে। বেশির ভাগ ক্লিনারে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক থাকে, যা ব্লক খুললেও প্লাস্টিক বা ধাতব পাইপের আবরণের ক্ষতি করে। দীর্ঘ মেয়াদে লিক বা পাইপ ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। পরিবেশের জন্যও এগুলো ক্ষতিকর। প্রয়োজন হলে পাইপের ব্লক খুলতে বেকিং সোডা ও ভিনেগারের মতো প্রাকৃতিক মিশ্রণ নিরাপদ।
বিড়ালের লিটার
প্যাকেটে ‘ফ্লাশেবল’ লেখা থাকলেও এগুলো কখনোই টয়লেটে ফেলা উচিত নয়। বিড়ালের লিটার সাধারণত ক্লে, সিলিকা বা জেল জাতীয় উপাদানে তৈরি, যা পানি পেলেই ফুলে ওঠে এবং শক্ত দলা তৈরি করে। পাইপে ঢোকার পর এগুলো দ্রুত ব্লক সৃষ্টি করে। পাশাপাশি এতে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী পানির উৎসও দূষিত করতে পারে।
বাড়তি ওষুধ
পুরোনো বা বাড়তি ওষুধ টয়লেটে ফেললে সেগুলো ব্লক সৃষ্টি করে না বটে; কিন্তু সেটা না করলেও এগুলো পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। পানি শোধনাগারগুলো এ ধরনের রাসায়নিক ফিল্টার করতে পারে না। ফলে ওষুধের উপাদান নদী, হ্রদ এবং ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশে গিয়ে ক্ষতি করে। অপ্রয়োজনীয় ওষুধ নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দেওয়া ভালো।
আঁশযুক্ত খাবার
ভাত, নুডলস, পাস্তা বা পাউরুটির মতো খাবার পানিতে ফুলে আঠালো মণ্ড তৈরি করে এবং পাইপে আটকে যায়। ভুট্টার খোসার মতো আঁশযুক্ত খাবার সহজে পচে না এবং পাইপের বাঁকে জট বেঁধে ব্লক সৃষ্টি করে।
ডিমের খোসা
ডিমের ভাঙা খোসা ভঙ্গুর হলেও পাইপে গিয়ে এগুলো বেশ সমস্যা সৃষ্টি করে। খোসার ভাঙা অংশ অনেকটা বালুর মতো এবং তেল বা খাবারের কণার সঙ্গে মিশে শক্ত সিমেন্টের মতো স্তর তৈরি করে।
রং
বাড়ির রঙে থাকা রাসায়নিক পাইপের ক্ষতি করতে পারে। পাশাপাশি ড্রেনে গেলে এসব রাসায়নিক পানি দূষিত করে। তাই ব্যবহার শেষে রং কখনোই সিংক বা টয়লেটে ঢালবেন না। লেবেলে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সেগুলো ফেলা উচিত।
ফলের স্টিকার
ফলের গায়ে থাকা ছোট স্টিকারগুলো খুব শক্তভাবে লেগে থাকে। ড্রেনে গেলে এগুলো পানি শোধনাগারের ফিল্টারে আটকে থাকে ও পাইপে বাধা তৈরি করে। স্টিকারগুলো আলাদা করে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া নিরাপদ।
ফল বা খাবারের শক্ত বিচি
পাইপ কোনোভাবেই ফলের শক্ত বিচি বা হাড়ের মতো শক্ত জিনিস সামলানোর মতো করে তৈরি নয়। এগুলো গারবেজ ডিস্পোজারকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং পাইপের ভেতর মারাত্মক জ্যাম তৈরি করে।
বাড়ির পাইপলাইন সচল রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার ও সঠিক ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। সামান্য সচেতনতা হাজার টাকার ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পারে।
সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির সঙ্গে ড্রেনে ফেলেন, সেগুলো সহজে পাইপ বন্ধ করে দিতে পারে আপনার অজান্তে।
বাড়তি রান্নার তেল
বড় ভুল হলো ব্যবহার শেষে গরম অবস্থায় অতিরিক্ত তেল সিংকে ঢেলে দেওয়া। গরম অবস্থায় তরল থাকলেও পাইপের ভেতরে ঠান্ডা পরিবেশে তেল দ্রুত শক্ত হয়ে যায়। সময়ের সঙ্গে এই স্তর মোটা হয় এবং এর সঙ্গে অন্য খাবারের কণা আটকে পাইপ পুরোপুরি জ্যাম হয়ে যায়। ব্যবহার শেষে তেল একটি বোতলে জমিয়ে রাখতে পারেন। পরবর্তী সময়ে তা বোতলসহ ময়লার ঝুরিতে ফেলে দেওয়া নিরাপদ।
কফির গুঁড়া
অনেকেই ভাবেন কফির গুঁড়া এত সূক্ষ্ম যে সিংকে ফেললে কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু পানি লাগলে এটি দলা পাকিয়ে ঘন পুরু স্তর তৈরি করে, যা পাইপের বাঁক বা জোড়ায় গিয়ে আটকে যায়। ধীরে ধীরে এই স্তর শক্ত হয়ে ব্লক সৃষ্টি করে। কফির গুঁড়া ডাস্টবিনে ফেলাই ভালো অথবা সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
রাসায়নিক ড্রেন ক্লিনার
শোনা যায়, ব্লক খুলতে এগুলো খুব কার্যকর। কিন্তু একই সঙ্গে এগুলো পাইপের শত্রুও বটে। বেশির ভাগ ক্লিনারে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক থাকে, যা ব্লক খুললেও প্লাস্টিক বা ধাতব পাইপের আবরণের ক্ষতি করে। দীর্ঘ মেয়াদে লিক বা পাইপ ফেটে যাওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। পরিবেশের জন্যও এগুলো ক্ষতিকর। প্রয়োজন হলে পাইপের ব্লক খুলতে বেকিং সোডা ও ভিনেগারের মতো প্রাকৃতিক মিশ্রণ নিরাপদ।
বিড়ালের লিটার
প্যাকেটে ‘ফ্লাশেবল’ লেখা থাকলেও এগুলো কখনোই টয়লেটে ফেলা উচিত নয়। বিড়ালের লিটার সাধারণত ক্লে, সিলিকা বা জেল জাতীয় উপাদানে তৈরি, যা পানি পেলেই ফুলে ওঠে এবং শক্ত দলা তৈরি করে। পাইপে ঢোকার পর এগুলো দ্রুত ব্লক সৃষ্টি করে। পাশাপাশি এতে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী পানির উৎসও দূষিত করতে পারে।
বাড়তি ওষুধ
পুরোনো বা বাড়তি ওষুধ টয়লেটে ফেললে সেগুলো ব্লক সৃষ্টি করে না বটে; কিন্তু সেটা না করলেও এগুলো পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। পানি শোধনাগারগুলো এ ধরনের রাসায়নিক ফিল্টার করতে পারে না। ফলে ওষুধের উপাদান নদী, হ্রদ এবং ভূগর্ভস্থ পানিতে মিশে গিয়ে ক্ষতি করে। অপ্রয়োজনীয় ওষুধ নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দেওয়া ভালো।
আঁশযুক্ত খাবার
ভাত, নুডলস, পাস্তা বা পাউরুটির মতো খাবার পানিতে ফুলে আঠালো মণ্ড তৈরি করে এবং পাইপে আটকে যায়। ভুট্টার খোসার মতো আঁশযুক্ত খাবার সহজে পচে না এবং পাইপের বাঁকে জট বেঁধে ব্লক সৃষ্টি করে।
ডিমের খোসা
ডিমের ভাঙা খোসা ভঙ্গুর হলেও পাইপে গিয়ে এগুলো বেশ সমস্যা সৃষ্টি করে। খোসার ভাঙা অংশ অনেকটা বালুর মতো এবং তেল বা খাবারের কণার সঙ্গে মিশে শক্ত সিমেন্টের মতো স্তর তৈরি করে।
রং
বাড়ির রঙে থাকা রাসায়নিক পাইপের ক্ষতি করতে পারে। পাশাপাশি ড্রেনে গেলে এসব রাসায়নিক পানি দূষিত করে। তাই ব্যবহার শেষে রং কখনোই সিংক বা টয়লেটে ঢালবেন না। লেবেলে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সেগুলো ফেলা উচিত।
ফলের স্টিকার
ফলের গায়ে থাকা ছোট স্টিকারগুলো খুব শক্তভাবে লেগে থাকে। ড্রেনে গেলে এগুলো পানি শোধনাগারের ফিল্টারে আটকে থাকে ও পাইপে বাধা তৈরি করে। স্টিকারগুলো আলাদা করে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া নিরাপদ।
ফল বা খাবারের শক্ত বিচি
পাইপ কোনোভাবেই ফলের শক্ত বিচি বা হাড়ের মতো শক্ত জিনিস সামলানোর মতো করে তৈরি নয়। এগুলো গারবেজ ডিস্পোজারকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং পাইপের ভেতর মারাত্মক জ্যাম তৈরি করে।
বাড়ির পাইপলাইন সচল রাখতে নিয়মিত পরিষ্কার ও সঠিক ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। সামান্য সচেতনতা হাজার টাকার ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পারে।
সূত্র: ভিএন এক্সপ্রেস

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নি
১৯ জানুয়ারি ২০২৩
আমাদের সমাজে প্রচলিত এমন কিছু অভ্যাস আছে, যা সাধারণত নেতিবাচক চোখে দেখা হয় বা এড়িয়ে চলতে বলা হয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে এই অভ্যাসগুলোর সবই ক্ষতিকর নয়; বরং কিছু অভ্যাস সুস্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি ও সৃজনশীলতার জন্য অপরিহার্য। এবার জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ‘ভুল’ ধারণা এবং
৪৪ মিনিট আগে
ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
৪ ঘণ্টা আগে
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
৮ ঘণ্টা আগেফারিয়া রহমান খান

ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন হওয়া জরুরি, যাতে পুরো লুকটা বিগড়ে না যায়।
লাল রঙের পোশাকের সঙ্গে যেভাবে মেকআপ করা যেতে পারে–
লাল পোশাকে ত্বকের খুঁত খুব সহজেই চোখে পড়ে, তাই নিখুঁত বেস তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ত্বকের রং ফরসা হলে ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজারই যথেষ্ট। তা না হলে ভালো ব্র্যান্ডের কালার কারেক্টর ও মানসম্মত ফাউন্ডেশন ব্যবহার করে ত্বকের দাগ ও অন্যান্য খুঁত ঢেকে ফেলুন। শোভন সাহা, কসমেটোলজিস্ট, স্বত্বাধিকারী, শোভন মেকওভার
ন্যুড গ্লো লুক
লাল পোশাক যেহেতু নিজেই উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়, তাই এর সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ লুকের জন্য খুব হালকা মেকআপই ভালো মানায়। ভারী ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বকের সতেজ ও প্রাকৃতিক আভা বজায় থাকে। গালে হালকা ব্রোঞ্জিং পাউডার ও চোখে ন্যাচারাল আইশ্যাডো ও মাসকারা ব্যবহার করুন। লুকটি সম্পূর্ণ করতে ঠোঁটে দিন শিয়ার লিপজেল বা ন্যুড শেডের লিপস্টিক।
ক্ল্যাসিক রেড-অন-রেড
লাল পোশাকের সঙ্গে একই শেডের লাল লিপস্টিক একটি ক্ল্যাসিক কম্বিনেশন। দিনের সাজে হালকা মেকআপ, ব্রাউন পেনসিল লাইনার ও রোজি রেড ব্লাসন ব্যবহার করুন। রাতের সাজে ফাউন্ডেশন বেস, উইংড আইলাইনার ও ফলস ল্যাশ ব্যবহার করে লুকে আনুন আভিজাত্য।
ওল্ড-স্কুল-গ্ল্যামার লুক
এই লুকের জন্য কন্সিলার ও ফাউন্ডেশন দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের মেকআপে ন্যাচারাল টোনের আইশ্যাডো দিন, উইং-টিপড লাইনার তৈরি করে মাসকারা ব্যবহার করুন। ঠোঁটে দিন বোল্ড লাল লিপস্টিক বা শিয়ার রেড লিপ গ্লস।
স্মোকি আই
রাতের মেকআপে চোখকে প্রাধান্য দিতে মুখ ও ঠোঁটের সাজে ব্যবহার করুন ন্যুড শেড। বিবি ক্রিম বা টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের সাজে কন্সিলার, পেনসিল ও জেল লাইনারের পরে পাউডার শ্যাডো দিয়ে মেটালিক-স্মোকি একটা লুক তৈরি করুন।

ফান অ্যান্ড ফ্লার্টি লুক
ক্যাজুয়াল ও ফান লুক পেতে বেস হিসেবে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। চোখে ন্যুড শ্যাডো ও পেনসিল লাইনার দিন। চোখের মেকআপ ন্যূনতম রেখে ভল্যুমিনাস আইল্যাশ ব্যবহার করুন। গালে হালকা ব্লাসন দিন, তবে হাইলাইট করবেন না। ঠোঁটের জন্য টিন্টেড লিপ গ্লস বা শিয়ার পিংক লিপস্টিকই যথেষ্ট।
ঠোঁট ও নখ
খুব গ্ল্যামারাস লুক না চাইলে বা লুকে ভারসাম্য রাখতে ঠোঁটে সব সময় ন্যুড শেডের লিপস্টিক বা টিন্টেড লিপ গ্লস ব্যবহার করাই ভালো। সাজের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে নখের সাজে লাল রঙের নেইল পলিশ এড়িয়ে ন্যুড শেড বা ফ্রেঞ্চ মেনিকিউর বেছে নিতে পারেন, যা একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক দেবে।
চুল
লাল পোশাকের সঙ্গে চুলের সাজ একেবারেই সাধারণ রাখুন। খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ খোঁপা বা টাইট কার্ল না করে হালকা কার্ল করা চুল বা খোলা চুল বেছে নিতে পারেন, যা আপনার মুখকে সুন্দরভাবে ফ্রেম করবে। খেয়াল রাখবেন, চুলের সাজ যেন আপনার সাজের মূল আকর্ষণ না হয় বা আপনার মুখমণ্ডল থেকে মনোযোগ সরিয়ে না দেয়। সাধারণ চুলের স্টাইলই আপনার পুরো সাজকে মার্জিত করে মেকআপকে হাইলাইট করবে।
চোখ বা ঠোঁট; যেকোনো একটিকে ফোকাল পয়েন্টে রাখুন
আকর্ষণীয় দেখাতে খুব ভারী মেকআপ বা গাঢ় রং ব্যবহার করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। সাধারণ নিয়ম হিসেবে মুখের সব ফোকাল পয়েন্ট না বেছে, শুধু একটি অংশ হাইলাইট করার কৌশল বেছে নিন। এই একটি ফোকাল পয়েন্ট হতে পারে আপনার চোখ অথবা ঠোঁট; কিন্তু কখনই দুটি একসঙ্গে নয়। এভাবে মেকআপ করলে সহজেই একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক পাবেন।

ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন হওয়া জরুরি, যাতে পুরো লুকটা বিগড়ে না যায়।
লাল রঙের পোশাকের সঙ্গে যেভাবে মেকআপ করা যেতে পারে–
লাল পোশাকে ত্বকের খুঁত খুব সহজেই চোখে পড়ে, তাই নিখুঁত বেস তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ত্বকের রং ফরসা হলে ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজারই যথেষ্ট। তা না হলে ভালো ব্র্যান্ডের কালার কারেক্টর ও মানসম্মত ফাউন্ডেশন ব্যবহার করে ত্বকের দাগ ও অন্যান্য খুঁত ঢেকে ফেলুন। শোভন সাহা, কসমেটোলজিস্ট, স্বত্বাধিকারী, শোভন মেকওভার
ন্যুড গ্লো লুক
লাল পোশাক যেহেতু নিজেই উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়, তাই এর সঙ্গে একটি ভারসাম্যপূর্ণ লুকের জন্য খুব হালকা মেকআপই ভালো মানায়। ভারী ফাউন্ডেশনের বদলে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বকের সতেজ ও প্রাকৃতিক আভা বজায় থাকে। গালে হালকা ব্রোঞ্জিং পাউডার ও চোখে ন্যাচারাল আইশ্যাডো ও মাসকারা ব্যবহার করুন। লুকটি সম্পূর্ণ করতে ঠোঁটে দিন শিয়ার লিপজেল বা ন্যুড শেডের লিপস্টিক।
ক্ল্যাসিক রেড-অন-রেড
লাল পোশাকের সঙ্গে একই শেডের লাল লিপস্টিক একটি ক্ল্যাসিক কম্বিনেশন। দিনের সাজে হালকা মেকআপ, ব্রাউন পেনসিল লাইনার ও রোজি রেড ব্লাসন ব্যবহার করুন। রাতের সাজে ফাউন্ডেশন বেস, উইংড আইলাইনার ও ফলস ল্যাশ ব্যবহার করে লুকে আনুন আভিজাত্য।
ওল্ড-স্কুল-গ্ল্যামার লুক
এই লুকের জন্য কন্সিলার ও ফাউন্ডেশন দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের মেকআপে ন্যাচারাল টোনের আইশ্যাডো দিন, উইং-টিপড লাইনার তৈরি করে মাসকারা ব্যবহার করুন। ঠোঁটে দিন বোল্ড লাল লিপস্টিক বা শিয়ার রেড লিপ গ্লস।
স্মোকি আই
রাতের মেকআপে চোখকে প্রাধান্য দিতে মুখ ও ঠোঁটের সাজে ব্যবহার করুন ন্যুড শেড। বিবি ক্রিম বা টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার দিয়ে বেস তৈরি করুন। চোখের সাজে কন্সিলার, পেনসিল ও জেল লাইনারের পরে পাউডার শ্যাডো দিয়ে মেটালিক-স্মোকি একটা লুক তৈরি করুন।

ফান অ্যান্ড ফ্লার্টি লুক
ক্যাজুয়াল ও ফান লুক পেতে বেস হিসেবে টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। চোখে ন্যুড শ্যাডো ও পেনসিল লাইনার দিন। চোখের মেকআপ ন্যূনতম রেখে ভল্যুমিনাস আইল্যাশ ব্যবহার করুন। গালে হালকা ব্লাসন দিন, তবে হাইলাইট করবেন না। ঠোঁটের জন্য টিন্টেড লিপ গ্লস বা শিয়ার পিংক লিপস্টিকই যথেষ্ট।
ঠোঁট ও নখ
খুব গ্ল্যামারাস লুক না চাইলে বা লুকে ভারসাম্য রাখতে ঠোঁটে সব সময় ন্যুড শেডের লিপস্টিক বা টিন্টেড লিপ গ্লস ব্যবহার করাই ভালো। সাজের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে নখের সাজে লাল রঙের নেইল পলিশ এড়িয়ে ন্যুড শেড বা ফ্রেঞ্চ মেনিকিউর বেছে নিতে পারেন, যা একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক দেবে।
চুল
লাল পোশাকের সঙ্গে চুলের সাজ একেবারেই সাধারণ রাখুন। খুব বেশি জাঁকজমকপূর্ণ খোঁপা বা টাইট কার্ল না করে হালকা কার্ল করা চুল বা খোলা চুল বেছে নিতে পারেন, যা আপনার মুখকে সুন্দরভাবে ফ্রেম করবে। খেয়াল রাখবেন, চুলের সাজ যেন আপনার সাজের মূল আকর্ষণ না হয় বা আপনার মুখমণ্ডল থেকে মনোযোগ সরিয়ে না দেয়। সাধারণ চুলের স্টাইলই আপনার পুরো সাজকে মার্জিত করে মেকআপকে হাইলাইট করবে।
চোখ বা ঠোঁট; যেকোনো একটিকে ফোকাল পয়েন্টে রাখুন
আকর্ষণীয় দেখাতে খুব ভারী মেকআপ বা গাঢ় রং ব্যবহার করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। সাধারণ নিয়ম হিসেবে মুখের সব ফোকাল পয়েন্ট না বেছে, শুধু একটি অংশ হাইলাইট করার কৌশল বেছে নিন। এই একটি ফোকাল পয়েন্ট হতে পারে আপনার চোখ অথবা ঠোঁট; কিন্তু কখনই দুটি একসঙ্গে নয়। এভাবে মেকআপ করলে সহজেই একটি ক্ল্যাসিক ও মার্জিত লুক পাবেন।

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নি
১৯ জানুয়ারি ২০২৩
আমাদের সমাজে প্রচলিত এমন কিছু অভ্যাস আছে, যা সাধারণত নেতিবাচক চোখে দেখা হয় বা এড়িয়ে চলতে বলা হয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে এই অভ্যাসগুলোর সবই ক্ষতিকর নয়; বরং কিছু অভ্যাস সুস্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি ও সৃজনশীলতার জন্য অপরিহার্য। এবার জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ‘ভুল’ ধারণা এবং
৪৪ মিনিট আগে
বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির
৩ ঘণ্টা আগে
দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক...
৮ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। অথচ চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক চাপ ও অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এ সমস্যার বড় কারণ।
ভারতের ইয়েলো ফার্টিলিটির প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ঈশা নান্দাল জানিয়েছেন, পুরুষের খাবার, ঘুম, কাজের ধরন, শরীরচর্চা ও বিশ্রামের অভ্যাস সরাসরি প্রভাব ফেলে হরমোনের ভারসাম্য ও শুক্রাণু উৎপাদনে। তাঁর মতে, অনেক সময় ছোট ভুলগুলোই শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে দেয়। সুখবর হচ্ছে, এ ভুলগুলোর বেশির ভাগই পরিবর্তনযোগ্য।
প্রজনন বিশেষজ্ঞদের মতে, ৭টি অভ্যাস পুরুষের উর্বরতা কমিয়ে দিতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ
মানসিক চাপ বা স্ট্রেস শরীরে কর্টিসল হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়। এই হরমোনটি টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয় এবং শুক্রাণু উৎপাদন ব্যাহত করে। যেহেতু একটি শুক্রাণু তৈরি হতে ৭০-৯০ দিন সময় লাগে, তাই কয়েক মাসের কাজের চাপ বা মানসিক অস্থিরতাও এটি তৈরির প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ থেকে রক্ষা পেতে বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত ধ্যান, গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং শান্ত পরিবেশে সময় কাটানোর পরামর্শ দেন।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার শরীরের কোষের সুরক্ষা দেয় এবং পুরুষের প্রজননক্ষমতা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে বাদাম, আঙুর, শস্যদানা, সবুজ শাকসবজি, বিভিন্ন ধরনের বীজ ও ফল শুক্রাণুর গুণগত মান, ঘনত্ব ও গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এসব খাবারে থাকা ভিটামিন সি, ই, জিংক, সেলেনিয়াম এবং পলিফেনল শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যাল কমিয়ে শুক্রাণুকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। অন্যদিকে অতিরিক্ত কফি খাওয়া, নিয়মিত জাংকফুড, মিষ্টি নাশতা বা অত্যধিক চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া শরীরে প্রদাহ বাড়ায় এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এসব খাবার শুক্রাণুর গতিশীলতা কমিয়ে দেয়, শক্তি কেড়ে নেয় এবং কখনো কখনো শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে।
অতিরিক্ত তাপ ও অতিরিক্ত ব্যায়াম
শুক্রাণু তাপ সংবেদনশীল। কোলে ল্যাপটপ রাখা, খুব আঁটসাঁট পোশাক, গাড়ির গরম সিট, স্টিম বাথ টেস্টিকলের তাপমাত্রা বাড়িয়ে শুক্রাণু উৎপাদনে বাধা দেয়। আবার হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম উপকারী হলেও অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীরের স্বাভাবিক টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয়, ফলে শুক্রাণু উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ধূমপান, অ্যালকোহল ও নেশাজাতীয় দ্রব্য
ডা. নান্দাল জানান, তামাক, অ্যালকোহল ও মাদকদ্রব্য শুক্রাণুর আকার, সংখ্যা ও গতিশীলতা নষ্ট করে। এমনকি মাঝেমধ্যে ব্যবহারেরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব অভ্যাস কমানো বা সম্পূর্ণ বাদ দিলে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যেই শুক্রাণু তৈরির অবস্থা উন্নত হয়।
স্বাস্থ্য সমস্যা উপেক্ষা করা
ভ্যারিকোসিল, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ ও থাইরয়েড সমস্যা থাকলে অনেক সময় লক্ষণ দেখা দেওয়া ছাড়াই পুরুষের শুক্রাণু কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। অনেক পুরুষ প্রকৃতিগত কারণেই এসব শারীরিক সমস্যাকে ছোট মনে করে বা দেরিতে চিকিৎসা নেয়। কিন্তু এসব সমস্যার শুরুতে পরীক্ষা, দ্রুত নির্ণয় ও চিকিৎসা সন্তান গ্রহণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
পরিবেশগত দূষণ ও রাসায়নিকের প্রভাব
কীটনাশক, ভারী ধাতু, প্লাস্টিকের রাসায়নিক, বায়ুদূষণ ও শিল্পকারখানার রাসায়নিক শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে। যদিও পুরোপুরি এড়ানো যায় না, তবে বিপিএ মুক্ত বোতল, জৈব খাবার বা কম রাসায়নিকযুক্ত বিকল্প ব্যবহার করলে এ ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
আগে থেকেই বীর্য পরীক্ষা না করানো
আগে বীর্য পরীক্ষা সাধারণত শেষ ধাপ হিসেবে ধরা হতো। এখন চিকিৎসকেরা পরিবার গঠনের পরিকল্পনা থাকলে পুরুষদের আগেই পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। সহজ ও ব্যথামুক্ত এই পরীক্ষায় পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় এবং সমস্যা থাকলে দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ কমানো, ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ, পরিবেশগত বিষাক্ততা কমানো এবং সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা এসবই পুরুষদের উর্বরতা ভালো রাখতে বড় ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সন্তান নেওয়ার আগে পুরুষের স্বাস্থ্যকে সমান গুরুত্ব দিলে দীর্ঘমেয়াদি প্রজনন স্বাস্থ্য আরও শক্তিশালী হয়।
সূত্র: হেলথশট

দাম্পত্য জীবনে সন্তানের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হলে বেশির ভাগ সময় নজর যায় নারীর দিকে। অথচ চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা সমান গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনযাপন, দূষণ, মানসিক চাপ ও অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এ সমস্যার বড় কারণ।
ভারতের ইয়েলো ফার্টিলিটির প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ঈশা নান্দাল জানিয়েছেন, পুরুষের খাবার, ঘুম, কাজের ধরন, শরীরচর্চা ও বিশ্রামের অভ্যাস সরাসরি প্রভাব ফেলে হরমোনের ভারসাম্য ও শুক্রাণু উৎপাদনে। তাঁর মতে, অনেক সময় ছোট ভুলগুলোই শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে দেয়। সুখবর হচ্ছে, এ ভুলগুলোর বেশির ভাগই পরিবর্তনযোগ্য।
প্রজনন বিশেষজ্ঞদের মতে, ৭টি অভ্যাস পুরুষের উর্বরতা কমিয়ে দিতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ
মানসিক চাপ বা স্ট্রেস শরীরে কর্টিসল হরমোনের পরিমাণ বাড়ায়। এই হরমোনটি টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয় এবং শুক্রাণু উৎপাদন ব্যাহত করে। যেহেতু একটি শুক্রাণু তৈরি হতে ৭০-৯০ দিন সময় লাগে, তাই কয়েক মাসের কাজের চাপ বা মানসিক অস্থিরতাও এটি তৈরির প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ থেকে রক্ষা পেতে বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত ধ্যান, গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং শান্ত পরিবেশে সময় কাটানোর পরামর্শ দেন।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার শরীরের কোষের সুরক্ষা দেয় এবং পুরুষের প্রজননক্ষমতা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে বাদাম, আঙুর, শস্যদানা, সবুজ শাকসবজি, বিভিন্ন ধরনের বীজ ও ফল শুক্রাণুর গুণগত মান, ঘনত্ব ও গতিশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। এসব খাবারে থাকা ভিটামিন সি, ই, জিংক, সেলেনিয়াম এবং পলিফেনল শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যাল কমিয়ে শুক্রাণুকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। অন্যদিকে অতিরিক্ত কফি খাওয়া, নিয়মিত জাংকফুড, মিষ্টি নাশতা বা অত্যধিক চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া শরীরে প্রদাহ বাড়ায় এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। এসব খাবার শুক্রাণুর গতিশীলতা কমিয়ে দেয়, শক্তি কেড়ে নেয় এবং কখনো কখনো শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে।
অতিরিক্ত তাপ ও অতিরিক্ত ব্যায়াম
শুক্রাণু তাপ সংবেদনশীল। কোলে ল্যাপটপ রাখা, খুব আঁটসাঁট পোশাক, গাড়ির গরম সিট, স্টিম বাথ টেস্টিকলের তাপমাত্রা বাড়িয়ে শুক্রাণু উৎপাদনে বাধা দেয়। আবার হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম উপকারী হলেও অতিরিক্ত ব্যায়াম শরীরের স্বাভাবিক টেস্টোস্টেরন কমিয়ে দেয়, ফলে শুক্রাণু উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ধূমপান, অ্যালকোহল ও নেশাজাতীয় দ্রব্য
ডা. নান্দাল জানান, তামাক, অ্যালকোহল ও মাদকদ্রব্য শুক্রাণুর আকার, সংখ্যা ও গতিশীলতা নষ্ট করে। এমনকি মাঝেমধ্যে ব্যবহারেরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব অভ্যাস কমানো বা সম্পূর্ণ বাদ দিলে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যেই শুক্রাণু তৈরির অবস্থা উন্নত হয়।
স্বাস্থ্য সমস্যা উপেক্ষা করা
ভ্যারিকোসিল, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ ও থাইরয়েড সমস্যা থাকলে অনেক সময় লক্ষণ দেখা দেওয়া ছাড়াই পুরুষের শুক্রাণু কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। অনেক পুরুষ প্রকৃতিগত কারণেই এসব শারীরিক সমস্যাকে ছোট মনে করে বা দেরিতে চিকিৎসা নেয়। কিন্তু এসব সমস্যার শুরুতে পরীক্ষা, দ্রুত নির্ণয় ও চিকিৎসা সন্তান গ্রহণের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
পরিবেশগত দূষণ ও রাসায়নিকের প্রভাব
কীটনাশক, ভারী ধাতু, প্লাস্টিকের রাসায়নিক, বায়ুদূষণ ও শিল্পকারখানার রাসায়নিক শুক্রাণুর গুণগত মান নষ্ট করে। যদিও পুরোপুরি এড়ানো যায় না, তবে বিপিএ মুক্ত বোতল, জৈব খাবার বা কম রাসায়নিকযুক্ত বিকল্প ব্যবহার করলে এ ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
আগে থেকেই বীর্য পরীক্ষা না করানো
আগে বীর্য পরীক্ষা সাধারণত শেষ ধাপ হিসেবে ধরা হতো। এখন চিকিৎসকেরা পরিবার গঠনের পরিকল্পনা থাকলে পুরুষদের আগেই পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। সহজ ও ব্যথামুক্ত এই পরীক্ষায় পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় এবং সমস্যা থাকলে দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ কমানো, ধূমপান ও অ্যালকোহল ত্যাগ, পরিবেশগত বিষাক্ততা কমানো এবং সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা এসবই পুরুষদের উর্বরতা ভালো রাখতে বড় ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সন্তান নেওয়ার আগে পুরুষের স্বাস্থ্যকে সমান গুরুত্ব দিলে দীর্ঘমেয়াদি প্রজনন স্বাস্থ্য আরও শক্তিশালী হয়।
সূত্র: হেলথশট

‘মাসুদ রানা’ ও ‘কুয়াশা’র স্রষ্টা হিসেবে পাঠকদের কাছে পরিচিত কাজী আনোয়ার হোসেন। একই সঙ্গে সেবা প্রকাশনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে পাঠক তৈরিতে বড় ভূমিকা তাঁর। সেবা প্রকাশনীতে যাতায়াতের ফলে কাজীদার সঙ্গে দেখা হয়েছে অনেকবার। মনে জমা হয়েছে স্মৃতিকে নাড়া দেওয়া নানা অভিজ্ঞতা। আবার বিভিন্ন সময়ে তাঁর সাক্ষাৎকারও নি
১৯ জানুয়ারি ২০২৩
আমাদের সমাজে প্রচলিত এমন কিছু অভ্যাস আছে, যা সাধারণত নেতিবাচক চোখে দেখা হয় বা এড়িয়ে চলতে বলা হয়। কিন্তু আধুনিক গবেষণা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে এই অভ্যাসগুলোর সবই ক্ষতিকর নয়; বরং কিছু অভ্যাস সুস্বাস্থ্য, মানসিক শান্তি ও সৃজনশীলতার জন্য অপরিহার্য। এবার জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ‘ভুল’ ধারণা এবং
৪৪ মিনিট আগে
বাড়ির ভেতরের রান্নাঘর, বেসিন বা বাথরুমে পাইপলাইনে আমরা অনেক কিছুই ফেলি। ঝামেলা এড়ানোর জন্য মূলত এ কাজ করা হয়। কিন্তু এই অবহেলা থেকে পাইপ লিক বা ব্লক হলে মেরামতের খরচ যেমন বেশি, তেমনি ঝামেলাও দীর্ঘস্থায়ী। তাই ড্রেন বা সিংক আবর্জনা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। কিছু জিনিস যদি নিয়মিত পানির
৩ ঘণ্টা আগে
ডিসেম্বরের শুরু থেকে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিয়ে, বড়দিন, বছর শেষের আয়োজন, বারবিকিউ পার্টিসহ যেকোনো অনুষ্ঠানে পরে যাওয়ার জন্য লাল রঙের পোশাক অনেকের কাছেই সেরা পছন্দ। লাল রং উৎসব, সাহস ও ভালোবাসার প্রতীক। এই রঙের পোশাক পরলে এমনিতেই উজ্জ্বল দেখায়। তাই এই রঙের পোশাকের সঙ্গে মেকআপ এমন...
৪ ঘণ্টা আগে