জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা

আমরা এক ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে বাস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব টের পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতায় সরাসরি ভূমিকা রাখা উন্নত দেশগুলোও। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট কঠিনতর হয়ে উঠছে। সব মিলিয়ে উদ্বেগজনক বৈশ্বিক তাপমাত্রা, দায়িত্বজ্ঞানহীন স্বৈরশাসক, চরমপন্থার উত্থান, অধিকারের নতুন মাত্রা এবং সরকার ও করপোরেটের ধ্বংসাত্মক নীতি ক্রমেই মানবজাতিকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মানুষের মধ্যে ক্রোধ, হতাশা এবং বিদ্রোহের দাবানলে ঘি ঢালছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
এক শতাংশের কম নারীযোদ্ধা
এই বিশৃঙ্খল বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে কিন্তু অনেক দৃঢ়চেতা নারীকে প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে দেখছি। আমাদের সামনে গ্রেটা থুনবার্গ, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের মতো নারীদের উদাহরণ জ্বলজ্বল করছে। তাঁদের সাহসী পদক্ষেপ আমাদের আপ্লুত করছে। কিন্তু একজন নারী যদি আক্ষরিক অর্থেই একটি সশস্ত্র লড়াইয়ে যুক্ত হওয়ার সুযোগ বেছে নেন? নারীর এমন সাহসিকতা কিন্তু পুরুষশাসিত কর্তৃত্ববাদী সমাজ এখনো উদ্যাপন করার উদারতা অর্জন করতে পারেনি।
বিশ শতকের প্রথম দিকে ইউরোপ থেকে বহু তরুণ যুবক প্রোপাগান্ডায় প্রভাবিত হয়ে যুদ্ধে গেছে। তারা কেউ ভুক্তভোগী, কেউ কঠিন পরিস্থিতির নায়ক অথবা অনুপ্রেরণা।
কিন্তু একজন নারী যদি নিজ ইচ্ছায় কোনো সহিংসতার কাছাকাছিও যান, এমনকি হাতে অস্ত্র তুলে না নিলেও এখনো ব্যাপক সামাজিক অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ান। কঠোর সমালোচনা এবং প্রায়ই শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে।
তাহলে নারী ও সহিংসতা, তাঁর সহযোগী ভূমিকা এবং যুদ্ধের মধ্যে অনুমোদিত সীমানা আসলে কী? কখন একজন নারী সজ্ঞানে এবং পরিকল্পিতভাবে এবং পুরুষের মতো সহজাতভাবে নিজের বা তাঁর মূল্যবোধের প্রতিরক্ষায় অস্ত্র তুলে নিতে রাজি হতে পারবেন? নারীরা কি সহজাতভাবে তুলনামূলক বেশি শান্তিপ্রিয়? তারা কি সক্ষম সৈনিক হতে পারে?
যুদ্ধ বা সহিংসতা ও নারী প্রশ্নে এই প্রশ্নগুলো খুবই মোক্ষম।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক জোশুয়া গোল্ডস্টেইন তাঁর ‘ওয়ার অ্যান্ড জেন্ডার’ বইতে যুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণের সঙ্গে আন্তঃসাংস্কৃতিক ঐতিহাসিক প্রমাণগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। তিনি দেখেছেন ‘ইতিহাসের সমস্ত যোদ্ধার ১ শতাংশেরও কম নারী’।
আধুনিক স্থায়ী সেনাবাহিনীতে সৈনিকদের অধিকাংশই পুরুষ। যুদ্ধ একটি সামাজিকভাবে বৈচিত্র্যময় ঘটনা। প্রশ্ন করাই যায়, তাহলে কেন এখানে লিঙ্গ বৈচিত্র্য নেই হয়ে গেল? গোল্ডস্টেইন যুক্তি দিচ্ছেন, ‘যুদ্ধে মানুষ হত্যার ব্যাপারটা লিঙ্গ নির্বিশেষে কোনো স্বাভাবিক প্রবণতা নয়। তবুও যুদ্ধের সম্ভাবনা কিন্তু সর্বজনীন। যুদ্ধের প্রতি সৈন্যদের অনীহার মনোভাব কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্যই বিভিন্ন সংস্কৃতিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লিঙ্গের ভূমিকাকে বড় করে দেখানো হয়। একটি কঠিন পরিস্থিতিতে আরও কঠোরভাবে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোকে “পৌরুষদীপ্ত” কাজ বলা হয়!
আমরা ‘নারী যোদ্ধাকে’ গ্রহণ করতে খুব একটা স্বস্তি বোধ করি না। একটি দেশ এবং তার সামরিক বাহিনীর দায়িত্বে থাকা একজন নারী, বা যুদ্ধরত নারী সেনাপতি, প্রায়ই একটা যৌন অস্বাভাবিকতা হিসেবে দেখা হয়। যেমন ইতিহাসে আমরা অনেক বীরকে দেখি, যুদ্ধক্ষেত্রে নারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবেন না বলে চেচাচ্ছেন! ইতিহাসে হাতে গোনা যে কজন সফল নারী রাষ্ট্রপ্রধান বা যোদ্ধা, সেনাপতির কথা পাওয়া যায় সেগুলোর বর্ণনা এবং পাঠকদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের বাড়াবাড়ি দেখলেই দৃষ্টিভঙ্গির এই অস্বস্তি ও অস্বাভাবিকতা অনুমান করা যায়।
সমাজে বা কর্মক্ষেত্রেও সামনের সারিতে সক্রিয় নারীরা যেন ‘সাপের গলায় ব্যাঙের’ মতো অস্বস্তি তৈরি করে। এই নারীদের সন্তান কত জন তা নিয়ে মিডিয়ার আগ্রহের শেষ নেই, তাঁর মাতৃত্বের বেপরোয়া অভাবকে তিরস্কার করা হয়। আর মৌলবাদের মতো ঘৃণিত মূল্যবোধের সঙ্গে তাঁর সংযোগ থাকলে তো কথাই নেই! ফ্যাসিবাদের সৈনিক হলেও মানা যায়, কিন্তু মৌলবাদী উগ্রপন্থীদের দলে গেলে তো তাকে দেশেই ঢুকতে দেওয়া হবে না!
আজকাল কম্পিউটার গেম, সিনেমা এবং ঢাউস আকৃতির সব বইয়ে ‘নারীশক্তিকে’ খুব মহিমান্বিত করা হয়। কিন্তু সেসব চরিত্রের সঙ্গে বাস্তবতার খুব কমই মিল থাকে।
এই প্রশ্নগুলো শুধু পুরুষত্বের ধারণার সঙ্গেই নয়, নারীবাদের ধারণাগুলোর সঙ্গেও সম্পর্কিত। নারীর যুদ্ধে অংশগ্রহণ কী ‘পুরুষতান্ত্রিক সহিংসতা-বিরোধী’ নারীবাদী নীতিকে ক্ষুণ্ন করে? ইতিহাস বলে, আমেরিকার নারী ভোটাধিকার আন্দোলনের অগ্রভাগের কেউ কেউ কংগ্রেসে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং ট্রাফিক ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটানোর মতো কর্মসূচির পক্ষে ছিলেন। আন্দোলনটি শেষ পর্যন্ত অবশ্য শান্তিপূর্ণই ছিল।
যুদ্ধের সম্ভাব্য সকল ক্ষয়ক্ষতির অংশীদার হয় নারী। এর মধ্যে যুদ্ধের সবচেয়ে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়-পরিকল্পিত হত্যা, সেটিরও প্রথম শিকার হয় নারীরা। নিপীড়ন বা প্রতিশোধ নিতে দুর্বল ও সহজ লক্ষ্য হিসেবে ইতিহাসের বিভিন্ন যুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনা পাওয়া যায়। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় নারী সৈনিক কই?
নারীর কলমে যুদ্ধসাহিত্য প্রায় অনুপস্থিত
একটা যুদ্ধ পুরো সমাজকে গ্রাস করে, লিঙ্গ নির্বিশেষে যুদ্ধের আঁচ লাগে। কিন্তু নারীদের কলমে যুদ্ধের কথাসাহিত্য যেন অস্বাভাবিক ঘটনা। যেন যুদ্ধ নিয়ে কাল্পনিক কথাসাহিত্য তৈরির কল্পনা করার অধিকারটাও তাঁদের নেই!
মার্কিন ইতিহাসবিদ মার্গারেট ম্যাকমিলন বলেন, ‘সেনাবাহিনী এবং প্রতিষ্ঠান থেকে নারীদের বাদ দেওয়া একটা সাধারণ ঘটনা। ঐতিহাসিক নথি এবং শৈল্পিক প্রতিনিধিত্ব থেকেও তাদের বাদ দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ যা ঘটে-নারী যোদ্ধাদের উদাহরণ প্রায়ই অবিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে সন্দেহ জাগতে বাধ্য।’
সম্মুখ সমরে নারী যোদ্ধাদের অংশীদারত্ব বেশ কমই। কিন্তু যুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রবণতা বলছে, বহু নারীই সংঘাতে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। তারা যুদ্ধ, প্রযুক্তি এবং কূটনীতিতে বিভিন্ন পর্যায়ে ভূমিকা রেখেছেন, গোয়েন্দা, যুদ্ধাস্ত্র এবং গুপ্তচরবৃত্তিতে কাজ করেছেন। দগদগে ক্ষত হয়ে থাকা দুটি বিশ্বযুদ্ধ তার প্রমাণ।
দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এক সময় শেষ হয়ে যায়, নারীরা বেঁচে থাকে এবং পরিণতির যন্ত্রণা বয়ে বেড়ায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নারীরা যুদ্ধের নির্লিপ্ত ভুক্তভোগী থাকে না। তারা স্বামী, সন্তান, ভাই হারানোর শোক করে, জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই করে, অনেকে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে বাধ্য হয়, পুরোনো পরিচয় ঝেড়ে ফেলে এবং যুদ্ধ তাদের ভাবনার নতুন আকৃতি দেয়।
এই ব্যাপারগুলো সরাসরি ভুক্তভোগীদের বয়ান থেকে বোঝার জন্য ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক একটি তথ্যচিত্র করেছে। রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি এই কাজটির পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। রেড ক্রস একটি প্রতিবেদনে বলছে, ‘এ ওম্যানস ওয়ার’ নামে তাদের প্রকল্পটি ‘নারী হিসেবে যুদ্ধের শিকার’ এমন গৎবাঁধা (স্টিরিওটাইপ) ধারণা ভেঙে দিয়েছে। নারীদের একাধিক জটিল এবং সংঘাতপূর্ণ ভূমিকা অন্বেষণ করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে নারীরা যোদ্ধা, মানবতাবাদী, মা, কন্যা, শ্রমিক, সম্প্রদায়ের নেতা এবং বেঁচে ফেরা সংগ্রামী সত্তা।
নারী সৈন্যদের কাজগুলোকে কখনোই গুরুত্ব সহকারে নথিবদ্ধ করা হয়নি। এই কারণেই সাহিত্যে নোবেলজয়ী বেলারুশিয়ান সাংবাদিক সোভেৎলানা আলেক্সিভিচের বিবরণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত নারীদের যে ভূমিকা ও অবদান উঠে এসেছে তা সরকারি বয়ানে অনুপস্থিত। এই একটি কারণেই তাঁর ‘দ্য আনওম্যানলি ফেস অব ওয়ার’ বইটিকে অমূল্য সাহিত্যকর্ম বলা যায়।
ইরাক, ফিলিপাইন এবং দক্ষিণ নাইজেরিয়ার সংঘাত কবলিত এলাকার নারীদের অভিজ্ঞতা ও বয়ান রেকর্ড করেছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক। অস্ত্র, গোলাবারুদের গর্জন থেমে গেলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত গোষ্ঠীর আত্মপরিচয় যুদ্ধের মাধ্যমে নতুন রূপ ধারণ করতে থাকে। এ প্রক্রিয়া বহু দিন পর্যন্ত চলে। পেরুতে দেখা গেছে, স্প্যানিশ আগ্রাসনের বহু পুরোনো ক্ষত এখনো নিরাময় হয়নি।
চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কথাই ধরা যাক:
সূত্র: জাতিসংঘ
ওই সময় যুদ্ধে শ্রমিক হিসেবে সারা দেশ থেকে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রায় ১৪ লাখ নারী।
সূত্র: দ্য ওয়ার্ল্ডওয়াল ডটঅর্গ
ইউক্রেন পরিস্থিতি
জাতিসংঘের লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ এবং নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কেয়ারের ‘র্যাপিড জেন্ডার অ্যানালাইসিস ইন ইউক্রেন’ প্রতিবেদন অনুসারে, ইউক্রেনের বাধ্যতামূলক অভিবাসী হওয়া ৯০ শতাংশই নারী ও শিশু। যুদ্ধ যেহেতু চলমান এ সংখ্যা যে ক্রমে বাড়ছে তাতে সন্দেহ নেই।
এখন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট নানামুখী সমস্যা এবং অতিরিক্ত দায় ঘর কন্যার বোঝা টানা ইউক্রেনীয় নারীদের ঘাড়ে চেপেছে। কিন্তু এই ধরনের একটি অস্থির পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্ল্যাটফর্মে নারী কই? পরিস্থিতির উত্তেজনা প্রশমন, সংঘাত নিরসন এবং ইউক্রেন ও এর বাইরের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের বৈশ্বিক প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশ তো সেভাবে দৃশ্যমান নয়। এছাড়া লিঙ্গবৈষম্য ও গৃহনির্যাতনের অপরাধ ইউরোপের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ঘটে ইউক্রেনে। সক্ষম পুরুষেরা যুদ্ধের ময়দানে, একা নারী ভিন দেশে কীভাবে সব সামলাচ্ছেন!
লিঙ্গ ইস্যু নিয়ে কাজ করা এমনিতেই খুব জটিল। কারণ এটি বুঝতে চাইলে ক্ষমতা এবং বিশেষাধিকার, একটি সম্প্রদায়ের আচার এবং প্রত্যাশাকে একত্রে বুঝতে হয়। সংঘাত বিদ্যমান (লিঙ্গ) বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়। যখন পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তি-যিনি সাধারণত হোন একজন পুরুষ-যুদ্ধে যায় বা নিহত হয় তখন কী ঘটে? সামাজিক ভূমিকার পরিবর্তন হয়। পুরুষ প্রধান সমাজে তখন নারীদের জন্য এমন সুযোগ উন্মুক্ত হয় যা আগে কখনো ছিল না।
বলা যেতে পারে, যুদ্ধে নারীদের ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তাদের কাজকে সম্মানিত বা স্মরণ করা হয় না। এমনকি মানবাধিকার উন্নয়নের এই যুগে এসেও আমরা যুদ্ধে নারী ও শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার ঘটনা দেখছি।
যুদ্ধ শেষে নারীদের ঘরে ফেরানো হয়, অধস্তন করে রাখা হয়। ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (এফএলএন) আলজেরীয় নারীদের পুরুষদের সমান বিপজ্জনক ভূমিকায় ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধ ফেরত হিসেবে তার অধিকার এবং পেনশন থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।
নারী সৈন্যরা যুদ্ধ থেকে জীবিত ফিরে এলেও কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকেন। তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে অঙ্গীভূত করা হয় না। শুধু স্মৃতির সমতা নয়, যুদ্ধের একটি সামগ্রিক ‘চেতনা’, রোল মডেল এবং বিকল্প নায়িকা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা এবং মানবীয় অভিজ্ঞতায় নারীর ক্ষমতার আলোকচ্ছটায় উজ্জ্বল হতে পারার একটি দারুণ সুযোগ সমাজ তার গভীরভাবে প্রোথিত সংস্কারের কারণে হাতছাড়া করে।
যুদ্ধ যদি অনিবার্যভাবেই মানবীয় ব্যাপার হয় তাহলে এটি তো নারী ও পুরুষ উভয়ের প্রশ্ন হওয়ার কথা। ভারী অস্ত্র বহনের জন্য পুরুষের কাঁধ বিকশিত হয়েছে, এর সপক্ষে জৈবিক ব্যাখ্যা হাজির করা যেতে পারে কিন্তু হরমোনগত কারণে নারীরা শান্তিপ্রিয় স্নায়ুবিজ্ঞান এই ধারণাকে বাতিল করে দেয়। নারীরা সর্বদা শান্তিপ্রিয় বা শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী, ঘটনার শিকার, পুরুষকে কাপুরুষ বলে তাচ্ছিল্য করা অন্দর বাসিনী বা লাল লিপস্টিকে ঠোঁট রাঙানো মনোবল বৃদ্ধিকারীনি নয়। সহিংসতা দিয়ে সহিংসতার সমাধান হয়তো কখনো হয়। কিন্তু লিঙ্গবৈষম্যের ধারণা কখনো জ্ঞান ও শান্তি বয়ে আনে না।
অবশ্য নানা যুদ্ধে স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত নারীরা হলেন স্বাভাবিকতায় ফেরার নির্ভরযোগ্য নেতৃত্ব। তাঁদের কোমল হাত, দুর্বল কাঁধ যুদ্ধের ক্ষত সারিয়ে তুলতে সক্ষম।
তথ্যসূত্র: ইউএন উইমেন, দ্য গার্ডিয়ান, আইসিআরসি, ইউএনএফপিএ, এনপিআর

আমরা এক ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে বাস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব টের পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতায় সরাসরি ভূমিকা রাখা উন্নত দেশগুলোও। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট কঠিনতর হয়ে উঠছে। সব মিলিয়ে উদ্বেগজনক বৈশ্বিক তাপমাত্রা, দায়িত্বজ্ঞানহীন স্বৈরশাসক, চরমপন্থার উত্থান, অধিকারের নতুন মাত্রা এবং সরকার ও করপোরেটের ধ্বংসাত্মক নীতি ক্রমেই মানবজাতিকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মানুষের মধ্যে ক্রোধ, হতাশা এবং বিদ্রোহের দাবানলে ঘি ঢালছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
এক শতাংশের কম নারীযোদ্ধা
এই বিশৃঙ্খল বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে কিন্তু অনেক দৃঢ়চেতা নারীকে প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে দেখছি। আমাদের সামনে গ্রেটা থুনবার্গ, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের মতো নারীদের উদাহরণ জ্বলজ্বল করছে। তাঁদের সাহসী পদক্ষেপ আমাদের আপ্লুত করছে। কিন্তু একজন নারী যদি আক্ষরিক অর্থেই একটি সশস্ত্র লড়াইয়ে যুক্ত হওয়ার সুযোগ বেছে নেন? নারীর এমন সাহসিকতা কিন্তু পুরুষশাসিত কর্তৃত্ববাদী সমাজ এখনো উদ্যাপন করার উদারতা অর্জন করতে পারেনি।
বিশ শতকের প্রথম দিকে ইউরোপ থেকে বহু তরুণ যুবক প্রোপাগান্ডায় প্রভাবিত হয়ে যুদ্ধে গেছে। তারা কেউ ভুক্তভোগী, কেউ কঠিন পরিস্থিতির নায়ক অথবা অনুপ্রেরণা।
কিন্তু একজন নারী যদি নিজ ইচ্ছায় কোনো সহিংসতার কাছাকাছিও যান, এমনকি হাতে অস্ত্র তুলে না নিলেও এখনো ব্যাপক সামাজিক অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ান। কঠোর সমালোচনা এবং প্রায়ই শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে।
তাহলে নারী ও সহিংসতা, তাঁর সহযোগী ভূমিকা এবং যুদ্ধের মধ্যে অনুমোদিত সীমানা আসলে কী? কখন একজন নারী সজ্ঞানে এবং পরিকল্পিতভাবে এবং পুরুষের মতো সহজাতভাবে নিজের বা তাঁর মূল্যবোধের প্রতিরক্ষায় অস্ত্র তুলে নিতে রাজি হতে পারবেন? নারীরা কি সহজাতভাবে তুলনামূলক বেশি শান্তিপ্রিয়? তারা কি সক্ষম সৈনিক হতে পারে?
যুদ্ধ বা সহিংসতা ও নারী প্রশ্নে এই প্রশ্নগুলো খুবই মোক্ষম।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক জোশুয়া গোল্ডস্টেইন তাঁর ‘ওয়ার অ্যান্ড জেন্ডার’ বইতে যুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণের সঙ্গে আন্তঃসাংস্কৃতিক ঐতিহাসিক প্রমাণগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। তিনি দেখেছেন ‘ইতিহাসের সমস্ত যোদ্ধার ১ শতাংশেরও কম নারী’।
আধুনিক স্থায়ী সেনাবাহিনীতে সৈনিকদের অধিকাংশই পুরুষ। যুদ্ধ একটি সামাজিকভাবে বৈচিত্র্যময় ঘটনা। প্রশ্ন করাই যায়, তাহলে কেন এখানে লিঙ্গ বৈচিত্র্য নেই হয়ে গেল? গোল্ডস্টেইন যুক্তি দিচ্ছেন, ‘যুদ্ধে মানুষ হত্যার ব্যাপারটা লিঙ্গ নির্বিশেষে কোনো স্বাভাবিক প্রবণতা নয়। তবুও যুদ্ধের সম্ভাবনা কিন্তু সর্বজনীন। যুদ্ধের প্রতি সৈন্যদের অনীহার মনোভাব কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্যই বিভিন্ন সংস্কৃতিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লিঙ্গের ভূমিকাকে বড় করে দেখানো হয়। একটি কঠিন পরিস্থিতিতে আরও কঠোরভাবে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোকে “পৌরুষদীপ্ত” কাজ বলা হয়!
আমরা ‘নারী যোদ্ধাকে’ গ্রহণ করতে খুব একটা স্বস্তি বোধ করি না। একটি দেশ এবং তার সামরিক বাহিনীর দায়িত্বে থাকা একজন নারী, বা যুদ্ধরত নারী সেনাপতি, প্রায়ই একটা যৌন অস্বাভাবিকতা হিসেবে দেখা হয়। যেমন ইতিহাসে আমরা অনেক বীরকে দেখি, যুদ্ধক্ষেত্রে নারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবেন না বলে চেচাচ্ছেন! ইতিহাসে হাতে গোনা যে কজন সফল নারী রাষ্ট্রপ্রধান বা যোদ্ধা, সেনাপতির কথা পাওয়া যায় সেগুলোর বর্ণনা এবং পাঠকদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের বাড়াবাড়ি দেখলেই দৃষ্টিভঙ্গির এই অস্বস্তি ও অস্বাভাবিকতা অনুমান করা যায়।
সমাজে বা কর্মক্ষেত্রেও সামনের সারিতে সক্রিয় নারীরা যেন ‘সাপের গলায় ব্যাঙের’ মতো অস্বস্তি তৈরি করে। এই নারীদের সন্তান কত জন তা নিয়ে মিডিয়ার আগ্রহের শেষ নেই, তাঁর মাতৃত্বের বেপরোয়া অভাবকে তিরস্কার করা হয়। আর মৌলবাদের মতো ঘৃণিত মূল্যবোধের সঙ্গে তাঁর সংযোগ থাকলে তো কথাই নেই! ফ্যাসিবাদের সৈনিক হলেও মানা যায়, কিন্তু মৌলবাদী উগ্রপন্থীদের দলে গেলে তো তাকে দেশেই ঢুকতে দেওয়া হবে না!
আজকাল কম্পিউটার গেম, সিনেমা এবং ঢাউস আকৃতির সব বইয়ে ‘নারীশক্তিকে’ খুব মহিমান্বিত করা হয়। কিন্তু সেসব চরিত্রের সঙ্গে বাস্তবতার খুব কমই মিল থাকে।
এই প্রশ্নগুলো শুধু পুরুষত্বের ধারণার সঙ্গেই নয়, নারীবাদের ধারণাগুলোর সঙ্গেও সম্পর্কিত। নারীর যুদ্ধে অংশগ্রহণ কী ‘পুরুষতান্ত্রিক সহিংসতা-বিরোধী’ নারীবাদী নীতিকে ক্ষুণ্ন করে? ইতিহাস বলে, আমেরিকার নারী ভোটাধিকার আন্দোলনের অগ্রভাগের কেউ কেউ কংগ্রেসে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং ট্রাফিক ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটানোর মতো কর্মসূচির পক্ষে ছিলেন। আন্দোলনটি শেষ পর্যন্ত অবশ্য শান্তিপূর্ণই ছিল।
যুদ্ধের সম্ভাব্য সকল ক্ষয়ক্ষতির অংশীদার হয় নারী। এর মধ্যে যুদ্ধের সবচেয়ে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়-পরিকল্পিত হত্যা, সেটিরও প্রথম শিকার হয় নারীরা। নিপীড়ন বা প্রতিশোধ নিতে দুর্বল ও সহজ লক্ষ্য হিসেবে ইতিহাসের বিভিন্ন যুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনা পাওয়া যায়। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় নারী সৈনিক কই?
নারীর কলমে যুদ্ধসাহিত্য প্রায় অনুপস্থিত
একটা যুদ্ধ পুরো সমাজকে গ্রাস করে, লিঙ্গ নির্বিশেষে যুদ্ধের আঁচ লাগে। কিন্তু নারীদের কলমে যুদ্ধের কথাসাহিত্য যেন অস্বাভাবিক ঘটনা। যেন যুদ্ধ নিয়ে কাল্পনিক কথাসাহিত্য তৈরির কল্পনা করার অধিকারটাও তাঁদের নেই!
মার্কিন ইতিহাসবিদ মার্গারেট ম্যাকমিলন বলেন, ‘সেনাবাহিনী এবং প্রতিষ্ঠান থেকে নারীদের বাদ দেওয়া একটা সাধারণ ঘটনা। ঐতিহাসিক নথি এবং শৈল্পিক প্রতিনিধিত্ব থেকেও তাদের বাদ দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ যা ঘটে-নারী যোদ্ধাদের উদাহরণ প্রায়ই অবিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে সন্দেহ জাগতে বাধ্য।’
সম্মুখ সমরে নারী যোদ্ধাদের অংশীদারত্ব বেশ কমই। কিন্তু যুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রবণতা বলছে, বহু নারীই সংঘাতে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। তারা যুদ্ধ, প্রযুক্তি এবং কূটনীতিতে বিভিন্ন পর্যায়ে ভূমিকা রেখেছেন, গোয়েন্দা, যুদ্ধাস্ত্র এবং গুপ্তচরবৃত্তিতে কাজ করেছেন। দগদগে ক্ষত হয়ে থাকা দুটি বিশ্বযুদ্ধ তার প্রমাণ।
দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এক সময় শেষ হয়ে যায়, নারীরা বেঁচে থাকে এবং পরিণতির যন্ত্রণা বয়ে বেড়ায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নারীরা যুদ্ধের নির্লিপ্ত ভুক্তভোগী থাকে না। তারা স্বামী, সন্তান, ভাই হারানোর শোক করে, জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই করে, অনেকে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে বাধ্য হয়, পুরোনো পরিচয় ঝেড়ে ফেলে এবং যুদ্ধ তাদের ভাবনার নতুন আকৃতি দেয়।
এই ব্যাপারগুলো সরাসরি ভুক্তভোগীদের বয়ান থেকে বোঝার জন্য ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক একটি তথ্যচিত্র করেছে। রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি এই কাজটির পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। রেড ক্রস একটি প্রতিবেদনে বলছে, ‘এ ওম্যানস ওয়ার’ নামে তাদের প্রকল্পটি ‘নারী হিসেবে যুদ্ধের শিকার’ এমন গৎবাঁধা (স্টিরিওটাইপ) ধারণা ভেঙে দিয়েছে। নারীদের একাধিক জটিল এবং সংঘাতপূর্ণ ভূমিকা অন্বেষণ করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে নারীরা যোদ্ধা, মানবতাবাদী, মা, কন্যা, শ্রমিক, সম্প্রদায়ের নেতা এবং বেঁচে ফেরা সংগ্রামী সত্তা।
নারী সৈন্যদের কাজগুলোকে কখনোই গুরুত্ব সহকারে নথিবদ্ধ করা হয়নি। এই কারণেই সাহিত্যে নোবেলজয়ী বেলারুশিয়ান সাংবাদিক সোভেৎলানা আলেক্সিভিচের বিবরণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত নারীদের যে ভূমিকা ও অবদান উঠে এসেছে তা সরকারি বয়ানে অনুপস্থিত। এই একটি কারণেই তাঁর ‘দ্য আনওম্যানলি ফেস অব ওয়ার’ বইটিকে অমূল্য সাহিত্যকর্ম বলা যায়।
ইরাক, ফিলিপাইন এবং দক্ষিণ নাইজেরিয়ার সংঘাত কবলিত এলাকার নারীদের অভিজ্ঞতা ও বয়ান রেকর্ড করেছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক। অস্ত্র, গোলাবারুদের গর্জন থেমে গেলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত গোষ্ঠীর আত্মপরিচয় যুদ্ধের মাধ্যমে নতুন রূপ ধারণ করতে থাকে। এ প্রক্রিয়া বহু দিন পর্যন্ত চলে। পেরুতে দেখা গেছে, স্প্যানিশ আগ্রাসনের বহু পুরোনো ক্ষত এখনো নিরাময় হয়নি।
চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কথাই ধরা যাক:
সূত্র: জাতিসংঘ
ওই সময় যুদ্ধে শ্রমিক হিসেবে সারা দেশ থেকে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রায় ১৪ লাখ নারী।
সূত্র: দ্য ওয়ার্ল্ডওয়াল ডটঅর্গ
ইউক্রেন পরিস্থিতি
জাতিসংঘের লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ এবং নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কেয়ারের ‘র্যাপিড জেন্ডার অ্যানালাইসিস ইন ইউক্রেন’ প্রতিবেদন অনুসারে, ইউক্রেনের বাধ্যতামূলক অভিবাসী হওয়া ৯০ শতাংশই নারী ও শিশু। যুদ্ধ যেহেতু চলমান এ সংখ্যা যে ক্রমে বাড়ছে তাতে সন্দেহ নেই।
এখন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট নানামুখী সমস্যা এবং অতিরিক্ত দায় ঘর কন্যার বোঝা টানা ইউক্রেনীয় নারীদের ঘাড়ে চেপেছে। কিন্তু এই ধরনের একটি অস্থির পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্ল্যাটফর্মে নারী কই? পরিস্থিতির উত্তেজনা প্রশমন, সংঘাত নিরসন এবং ইউক্রেন ও এর বাইরের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের বৈশ্বিক প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশ তো সেভাবে দৃশ্যমান নয়। এছাড়া লিঙ্গবৈষম্য ও গৃহনির্যাতনের অপরাধ ইউরোপের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ঘটে ইউক্রেনে। সক্ষম পুরুষেরা যুদ্ধের ময়দানে, একা নারী ভিন দেশে কীভাবে সব সামলাচ্ছেন!
লিঙ্গ ইস্যু নিয়ে কাজ করা এমনিতেই খুব জটিল। কারণ এটি বুঝতে চাইলে ক্ষমতা এবং বিশেষাধিকার, একটি সম্প্রদায়ের আচার এবং প্রত্যাশাকে একত্রে বুঝতে হয়। সংঘাত বিদ্যমান (লিঙ্গ) বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়। যখন পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তি-যিনি সাধারণত হোন একজন পুরুষ-যুদ্ধে যায় বা নিহত হয় তখন কী ঘটে? সামাজিক ভূমিকার পরিবর্তন হয়। পুরুষ প্রধান সমাজে তখন নারীদের জন্য এমন সুযোগ উন্মুক্ত হয় যা আগে কখনো ছিল না।
বলা যেতে পারে, যুদ্ধে নারীদের ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তাদের কাজকে সম্মানিত বা স্মরণ করা হয় না। এমনকি মানবাধিকার উন্নয়নের এই যুগে এসেও আমরা যুদ্ধে নারী ও শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার ঘটনা দেখছি।
যুদ্ধ শেষে নারীদের ঘরে ফেরানো হয়, অধস্তন করে রাখা হয়। ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (এফএলএন) আলজেরীয় নারীদের পুরুষদের সমান বিপজ্জনক ভূমিকায় ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধ ফেরত হিসেবে তার অধিকার এবং পেনশন থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।
নারী সৈন্যরা যুদ্ধ থেকে জীবিত ফিরে এলেও কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকেন। তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে অঙ্গীভূত করা হয় না। শুধু স্মৃতির সমতা নয়, যুদ্ধের একটি সামগ্রিক ‘চেতনা’, রোল মডেল এবং বিকল্প নায়িকা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা এবং মানবীয় অভিজ্ঞতায় নারীর ক্ষমতার আলোকচ্ছটায় উজ্জ্বল হতে পারার একটি দারুণ সুযোগ সমাজ তার গভীরভাবে প্রোথিত সংস্কারের কারণে হাতছাড়া করে।
যুদ্ধ যদি অনিবার্যভাবেই মানবীয় ব্যাপার হয় তাহলে এটি তো নারী ও পুরুষ উভয়ের প্রশ্ন হওয়ার কথা। ভারী অস্ত্র বহনের জন্য পুরুষের কাঁধ বিকশিত হয়েছে, এর সপক্ষে জৈবিক ব্যাখ্যা হাজির করা যেতে পারে কিন্তু হরমোনগত কারণে নারীরা শান্তিপ্রিয় স্নায়ুবিজ্ঞান এই ধারণাকে বাতিল করে দেয়। নারীরা সর্বদা শান্তিপ্রিয় বা শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী, ঘটনার শিকার, পুরুষকে কাপুরুষ বলে তাচ্ছিল্য করা অন্দর বাসিনী বা লাল লিপস্টিকে ঠোঁট রাঙানো মনোবল বৃদ্ধিকারীনি নয়। সহিংসতা দিয়ে সহিংসতার সমাধান হয়তো কখনো হয়। কিন্তু লিঙ্গবৈষম্যের ধারণা কখনো জ্ঞান ও শান্তি বয়ে আনে না।
অবশ্য নানা যুদ্ধে স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত নারীরা হলেন স্বাভাবিকতায় ফেরার নির্ভরযোগ্য নেতৃত্ব। তাঁদের কোমল হাত, দুর্বল কাঁধ যুদ্ধের ক্ষত সারিয়ে তুলতে সক্ষম।
তথ্যসূত্র: ইউএন উইমেন, দ্য গার্ডিয়ান, আইসিআরসি, ইউএনএফপিএ, এনপিআর
জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা

আমরা এক ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে বাস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব টের পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতায় সরাসরি ভূমিকা রাখা উন্নত দেশগুলোও। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট কঠিনতর হয়ে উঠছে। সব মিলিয়ে উদ্বেগজনক বৈশ্বিক তাপমাত্রা, দায়িত্বজ্ঞানহীন স্বৈরশাসক, চরমপন্থার উত্থান, অধিকারের নতুন মাত্রা এবং সরকার ও করপোরেটের ধ্বংসাত্মক নীতি ক্রমেই মানবজাতিকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মানুষের মধ্যে ক্রোধ, হতাশা এবং বিদ্রোহের দাবানলে ঘি ঢালছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
এক শতাংশের কম নারীযোদ্ধা
এই বিশৃঙ্খল বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে কিন্তু অনেক দৃঢ়চেতা নারীকে প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে দেখছি। আমাদের সামনে গ্রেটা থুনবার্গ, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের মতো নারীদের উদাহরণ জ্বলজ্বল করছে। তাঁদের সাহসী পদক্ষেপ আমাদের আপ্লুত করছে। কিন্তু একজন নারী যদি আক্ষরিক অর্থেই একটি সশস্ত্র লড়াইয়ে যুক্ত হওয়ার সুযোগ বেছে নেন? নারীর এমন সাহসিকতা কিন্তু পুরুষশাসিত কর্তৃত্ববাদী সমাজ এখনো উদ্যাপন করার উদারতা অর্জন করতে পারেনি।
বিশ শতকের প্রথম দিকে ইউরোপ থেকে বহু তরুণ যুবক প্রোপাগান্ডায় প্রভাবিত হয়ে যুদ্ধে গেছে। তারা কেউ ভুক্তভোগী, কেউ কঠিন পরিস্থিতির নায়ক অথবা অনুপ্রেরণা।
কিন্তু একজন নারী যদি নিজ ইচ্ছায় কোনো সহিংসতার কাছাকাছিও যান, এমনকি হাতে অস্ত্র তুলে না নিলেও এখনো ব্যাপক সামাজিক অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ান। কঠোর সমালোচনা এবং প্রায়ই শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে।
তাহলে নারী ও সহিংসতা, তাঁর সহযোগী ভূমিকা এবং যুদ্ধের মধ্যে অনুমোদিত সীমানা আসলে কী? কখন একজন নারী সজ্ঞানে এবং পরিকল্পিতভাবে এবং পুরুষের মতো সহজাতভাবে নিজের বা তাঁর মূল্যবোধের প্রতিরক্ষায় অস্ত্র তুলে নিতে রাজি হতে পারবেন? নারীরা কি সহজাতভাবে তুলনামূলক বেশি শান্তিপ্রিয়? তারা কি সক্ষম সৈনিক হতে পারে?
যুদ্ধ বা সহিংসতা ও নারী প্রশ্নে এই প্রশ্নগুলো খুবই মোক্ষম।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক জোশুয়া গোল্ডস্টেইন তাঁর ‘ওয়ার অ্যান্ড জেন্ডার’ বইতে যুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণের সঙ্গে আন্তঃসাংস্কৃতিক ঐতিহাসিক প্রমাণগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। তিনি দেখেছেন ‘ইতিহাসের সমস্ত যোদ্ধার ১ শতাংশেরও কম নারী’।
আধুনিক স্থায়ী সেনাবাহিনীতে সৈনিকদের অধিকাংশই পুরুষ। যুদ্ধ একটি সামাজিকভাবে বৈচিত্র্যময় ঘটনা। প্রশ্ন করাই যায়, তাহলে কেন এখানে লিঙ্গ বৈচিত্র্য নেই হয়ে গেল? গোল্ডস্টেইন যুক্তি দিচ্ছেন, ‘যুদ্ধে মানুষ হত্যার ব্যাপারটা লিঙ্গ নির্বিশেষে কোনো স্বাভাবিক প্রবণতা নয়। তবুও যুদ্ধের সম্ভাবনা কিন্তু সর্বজনীন। যুদ্ধের প্রতি সৈন্যদের অনীহার মনোভাব কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্যই বিভিন্ন সংস্কৃতিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লিঙ্গের ভূমিকাকে বড় করে দেখানো হয়। একটি কঠিন পরিস্থিতিতে আরও কঠোরভাবে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোকে “পৌরুষদীপ্ত” কাজ বলা হয়!
আমরা ‘নারী যোদ্ধাকে’ গ্রহণ করতে খুব একটা স্বস্তি বোধ করি না। একটি দেশ এবং তার সামরিক বাহিনীর দায়িত্বে থাকা একজন নারী, বা যুদ্ধরত নারী সেনাপতি, প্রায়ই একটা যৌন অস্বাভাবিকতা হিসেবে দেখা হয়। যেমন ইতিহাসে আমরা অনেক বীরকে দেখি, যুদ্ধক্ষেত্রে নারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবেন না বলে চেচাচ্ছেন! ইতিহাসে হাতে গোনা যে কজন সফল নারী রাষ্ট্রপ্রধান বা যোদ্ধা, সেনাপতির কথা পাওয়া যায় সেগুলোর বর্ণনা এবং পাঠকদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের বাড়াবাড়ি দেখলেই দৃষ্টিভঙ্গির এই অস্বস্তি ও অস্বাভাবিকতা অনুমান করা যায়।
সমাজে বা কর্মক্ষেত্রেও সামনের সারিতে সক্রিয় নারীরা যেন ‘সাপের গলায় ব্যাঙের’ মতো অস্বস্তি তৈরি করে। এই নারীদের সন্তান কত জন তা নিয়ে মিডিয়ার আগ্রহের শেষ নেই, তাঁর মাতৃত্বের বেপরোয়া অভাবকে তিরস্কার করা হয়। আর মৌলবাদের মতো ঘৃণিত মূল্যবোধের সঙ্গে তাঁর সংযোগ থাকলে তো কথাই নেই! ফ্যাসিবাদের সৈনিক হলেও মানা যায়, কিন্তু মৌলবাদী উগ্রপন্থীদের দলে গেলে তো তাকে দেশেই ঢুকতে দেওয়া হবে না!
আজকাল কম্পিউটার গেম, সিনেমা এবং ঢাউস আকৃতির সব বইয়ে ‘নারীশক্তিকে’ খুব মহিমান্বিত করা হয়। কিন্তু সেসব চরিত্রের সঙ্গে বাস্তবতার খুব কমই মিল থাকে।
এই প্রশ্নগুলো শুধু পুরুষত্বের ধারণার সঙ্গেই নয়, নারীবাদের ধারণাগুলোর সঙ্গেও সম্পর্কিত। নারীর যুদ্ধে অংশগ্রহণ কী ‘পুরুষতান্ত্রিক সহিংসতা-বিরোধী’ নারীবাদী নীতিকে ক্ষুণ্ন করে? ইতিহাস বলে, আমেরিকার নারী ভোটাধিকার আন্দোলনের অগ্রভাগের কেউ কেউ কংগ্রেসে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং ট্রাফিক ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটানোর মতো কর্মসূচির পক্ষে ছিলেন। আন্দোলনটি শেষ পর্যন্ত অবশ্য শান্তিপূর্ণই ছিল।
যুদ্ধের সম্ভাব্য সকল ক্ষয়ক্ষতির অংশীদার হয় নারী। এর মধ্যে যুদ্ধের সবচেয়ে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়-পরিকল্পিত হত্যা, সেটিরও প্রথম শিকার হয় নারীরা। নিপীড়ন বা প্রতিশোধ নিতে দুর্বল ও সহজ লক্ষ্য হিসেবে ইতিহাসের বিভিন্ন যুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনা পাওয়া যায়। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় নারী সৈনিক কই?
নারীর কলমে যুদ্ধসাহিত্য প্রায় অনুপস্থিত
একটা যুদ্ধ পুরো সমাজকে গ্রাস করে, লিঙ্গ নির্বিশেষে যুদ্ধের আঁচ লাগে। কিন্তু নারীদের কলমে যুদ্ধের কথাসাহিত্য যেন অস্বাভাবিক ঘটনা। যেন যুদ্ধ নিয়ে কাল্পনিক কথাসাহিত্য তৈরির কল্পনা করার অধিকারটাও তাঁদের নেই!
মার্কিন ইতিহাসবিদ মার্গারেট ম্যাকমিলন বলেন, ‘সেনাবাহিনী এবং প্রতিষ্ঠান থেকে নারীদের বাদ দেওয়া একটা সাধারণ ঘটনা। ঐতিহাসিক নথি এবং শৈল্পিক প্রতিনিধিত্ব থেকেও তাদের বাদ দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ যা ঘটে-নারী যোদ্ধাদের উদাহরণ প্রায়ই অবিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে সন্দেহ জাগতে বাধ্য।’
সম্মুখ সমরে নারী যোদ্ধাদের অংশীদারত্ব বেশ কমই। কিন্তু যুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রবণতা বলছে, বহু নারীই সংঘাতে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। তারা যুদ্ধ, প্রযুক্তি এবং কূটনীতিতে বিভিন্ন পর্যায়ে ভূমিকা রেখেছেন, গোয়েন্দা, যুদ্ধাস্ত্র এবং গুপ্তচরবৃত্তিতে কাজ করেছেন। দগদগে ক্ষত হয়ে থাকা দুটি বিশ্বযুদ্ধ তার প্রমাণ।
দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এক সময় শেষ হয়ে যায়, নারীরা বেঁচে থাকে এবং পরিণতির যন্ত্রণা বয়ে বেড়ায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নারীরা যুদ্ধের নির্লিপ্ত ভুক্তভোগী থাকে না। তারা স্বামী, সন্তান, ভাই হারানোর শোক করে, জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই করে, অনেকে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে বাধ্য হয়, পুরোনো পরিচয় ঝেড়ে ফেলে এবং যুদ্ধ তাদের ভাবনার নতুন আকৃতি দেয়।
এই ব্যাপারগুলো সরাসরি ভুক্তভোগীদের বয়ান থেকে বোঝার জন্য ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক একটি তথ্যচিত্র করেছে। রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি এই কাজটির পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। রেড ক্রস একটি প্রতিবেদনে বলছে, ‘এ ওম্যানস ওয়ার’ নামে তাদের প্রকল্পটি ‘নারী হিসেবে যুদ্ধের শিকার’ এমন গৎবাঁধা (স্টিরিওটাইপ) ধারণা ভেঙে দিয়েছে। নারীদের একাধিক জটিল এবং সংঘাতপূর্ণ ভূমিকা অন্বেষণ করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে নারীরা যোদ্ধা, মানবতাবাদী, মা, কন্যা, শ্রমিক, সম্প্রদায়ের নেতা এবং বেঁচে ফেরা সংগ্রামী সত্তা।
নারী সৈন্যদের কাজগুলোকে কখনোই গুরুত্ব সহকারে নথিবদ্ধ করা হয়নি। এই কারণেই সাহিত্যে নোবেলজয়ী বেলারুশিয়ান সাংবাদিক সোভেৎলানা আলেক্সিভিচের বিবরণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত নারীদের যে ভূমিকা ও অবদান উঠে এসেছে তা সরকারি বয়ানে অনুপস্থিত। এই একটি কারণেই তাঁর ‘দ্য আনওম্যানলি ফেস অব ওয়ার’ বইটিকে অমূল্য সাহিত্যকর্ম বলা যায়।
ইরাক, ফিলিপাইন এবং দক্ষিণ নাইজেরিয়ার সংঘাত কবলিত এলাকার নারীদের অভিজ্ঞতা ও বয়ান রেকর্ড করেছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক। অস্ত্র, গোলাবারুদের গর্জন থেমে গেলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত গোষ্ঠীর আত্মপরিচয় যুদ্ধের মাধ্যমে নতুন রূপ ধারণ করতে থাকে। এ প্রক্রিয়া বহু দিন পর্যন্ত চলে। পেরুতে দেখা গেছে, স্প্যানিশ আগ্রাসনের বহু পুরোনো ক্ষত এখনো নিরাময় হয়নি।
চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কথাই ধরা যাক:
সূত্র: জাতিসংঘ
ওই সময় যুদ্ধে শ্রমিক হিসেবে সারা দেশ থেকে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রায় ১৪ লাখ নারী।
সূত্র: দ্য ওয়ার্ল্ডওয়াল ডটঅর্গ
ইউক্রেন পরিস্থিতি
জাতিসংঘের লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ এবং নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কেয়ারের ‘র্যাপিড জেন্ডার অ্যানালাইসিস ইন ইউক্রেন’ প্রতিবেদন অনুসারে, ইউক্রেনের বাধ্যতামূলক অভিবাসী হওয়া ৯০ শতাংশই নারী ও শিশু। যুদ্ধ যেহেতু চলমান এ সংখ্যা যে ক্রমে বাড়ছে তাতে সন্দেহ নেই।
এখন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট নানামুখী সমস্যা এবং অতিরিক্ত দায় ঘর কন্যার বোঝা টানা ইউক্রেনীয় নারীদের ঘাড়ে চেপেছে। কিন্তু এই ধরনের একটি অস্থির পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্ল্যাটফর্মে নারী কই? পরিস্থিতির উত্তেজনা প্রশমন, সংঘাত নিরসন এবং ইউক্রেন ও এর বাইরের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের বৈশ্বিক প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশ তো সেভাবে দৃশ্যমান নয়। এছাড়া লিঙ্গবৈষম্য ও গৃহনির্যাতনের অপরাধ ইউরোপের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ঘটে ইউক্রেনে। সক্ষম পুরুষেরা যুদ্ধের ময়দানে, একা নারী ভিন দেশে কীভাবে সব সামলাচ্ছেন!
লিঙ্গ ইস্যু নিয়ে কাজ করা এমনিতেই খুব জটিল। কারণ এটি বুঝতে চাইলে ক্ষমতা এবং বিশেষাধিকার, একটি সম্প্রদায়ের আচার এবং প্রত্যাশাকে একত্রে বুঝতে হয়। সংঘাত বিদ্যমান (লিঙ্গ) বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়। যখন পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তি-যিনি সাধারণত হোন একজন পুরুষ-যুদ্ধে যায় বা নিহত হয় তখন কী ঘটে? সামাজিক ভূমিকার পরিবর্তন হয়। পুরুষ প্রধান সমাজে তখন নারীদের জন্য এমন সুযোগ উন্মুক্ত হয় যা আগে কখনো ছিল না।
বলা যেতে পারে, যুদ্ধে নারীদের ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তাদের কাজকে সম্মানিত বা স্মরণ করা হয় না। এমনকি মানবাধিকার উন্নয়নের এই যুগে এসেও আমরা যুদ্ধে নারী ও শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার ঘটনা দেখছি।
যুদ্ধ শেষে নারীদের ঘরে ফেরানো হয়, অধস্তন করে রাখা হয়। ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (এফএলএন) আলজেরীয় নারীদের পুরুষদের সমান বিপজ্জনক ভূমিকায় ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধ ফেরত হিসেবে তার অধিকার এবং পেনশন থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।
নারী সৈন্যরা যুদ্ধ থেকে জীবিত ফিরে এলেও কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকেন। তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে অঙ্গীভূত করা হয় না। শুধু স্মৃতির সমতা নয়, যুদ্ধের একটি সামগ্রিক ‘চেতনা’, রোল মডেল এবং বিকল্প নায়িকা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা এবং মানবীয় অভিজ্ঞতায় নারীর ক্ষমতার আলোকচ্ছটায় উজ্জ্বল হতে পারার একটি দারুণ সুযোগ সমাজ তার গভীরভাবে প্রোথিত সংস্কারের কারণে হাতছাড়া করে।
যুদ্ধ যদি অনিবার্যভাবেই মানবীয় ব্যাপার হয় তাহলে এটি তো নারী ও পুরুষ উভয়ের প্রশ্ন হওয়ার কথা। ভারী অস্ত্র বহনের জন্য পুরুষের কাঁধ বিকশিত হয়েছে, এর সপক্ষে জৈবিক ব্যাখ্যা হাজির করা যেতে পারে কিন্তু হরমোনগত কারণে নারীরা শান্তিপ্রিয় স্নায়ুবিজ্ঞান এই ধারণাকে বাতিল করে দেয়। নারীরা সর্বদা শান্তিপ্রিয় বা শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী, ঘটনার শিকার, পুরুষকে কাপুরুষ বলে তাচ্ছিল্য করা অন্দর বাসিনী বা লাল লিপস্টিকে ঠোঁট রাঙানো মনোবল বৃদ্ধিকারীনি নয়। সহিংসতা দিয়ে সহিংসতার সমাধান হয়তো কখনো হয়। কিন্তু লিঙ্গবৈষম্যের ধারণা কখনো জ্ঞান ও শান্তি বয়ে আনে না।
অবশ্য নানা যুদ্ধে স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত নারীরা হলেন স্বাভাবিকতায় ফেরার নির্ভরযোগ্য নেতৃত্ব। তাঁদের কোমল হাত, দুর্বল কাঁধ যুদ্ধের ক্ষত সারিয়ে তুলতে সক্ষম।
তথ্যসূত্র: ইউএন উইমেন, দ্য গার্ডিয়ান, আইসিআরসি, ইউএনএফপিএ, এনপিআর

আমরা এক ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে বাস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব টের পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতায় সরাসরি ভূমিকা রাখা উন্নত দেশগুলোও। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট কঠিনতর হয়ে উঠছে। সব মিলিয়ে উদ্বেগজনক বৈশ্বিক তাপমাত্রা, দায়িত্বজ্ঞানহীন স্বৈরশাসক, চরমপন্থার উত্থান, অধিকারের নতুন মাত্রা এবং সরকার ও করপোরেটের ধ্বংসাত্মক নীতি ক্রমেই মানবজাতিকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। মানুষের মধ্যে ক্রোধ, হতাশা এবং বিদ্রোহের দাবানলে ঘি ঢালছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
এক শতাংশের কম নারীযোদ্ধা
এই বিশৃঙ্খল বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে কিন্তু অনেক দৃঢ়চেতা নারীকে প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে দেখছি। আমাদের সামনে গ্রেটা থুনবার্গ, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের মতো নারীদের উদাহরণ জ্বলজ্বল করছে। তাঁদের সাহসী পদক্ষেপ আমাদের আপ্লুত করছে। কিন্তু একজন নারী যদি আক্ষরিক অর্থেই একটি সশস্ত্র লড়াইয়ে যুক্ত হওয়ার সুযোগ বেছে নেন? নারীর এমন সাহসিকতা কিন্তু পুরুষশাসিত কর্তৃত্ববাদী সমাজ এখনো উদ্যাপন করার উদারতা অর্জন করতে পারেনি।
বিশ শতকের প্রথম দিকে ইউরোপ থেকে বহু তরুণ যুবক প্রোপাগান্ডায় প্রভাবিত হয়ে যুদ্ধে গেছে। তারা কেউ ভুক্তভোগী, কেউ কঠিন পরিস্থিতির নায়ক অথবা অনুপ্রেরণা।
কিন্তু একজন নারী যদি নিজ ইচ্ছায় কোনো সহিংসতার কাছাকাছিও যান, এমনকি হাতে অস্ত্র তুলে না নিলেও এখনো ব্যাপক সামাজিক অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ান। কঠোর সমালোচনা এবং প্রায়ই শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে।
তাহলে নারী ও সহিংসতা, তাঁর সহযোগী ভূমিকা এবং যুদ্ধের মধ্যে অনুমোদিত সীমানা আসলে কী? কখন একজন নারী সজ্ঞানে এবং পরিকল্পিতভাবে এবং পুরুষের মতো সহজাতভাবে নিজের বা তাঁর মূল্যবোধের প্রতিরক্ষায় অস্ত্র তুলে নিতে রাজি হতে পারবেন? নারীরা কি সহজাতভাবে তুলনামূলক বেশি শান্তিপ্রিয়? তারা কি সক্ষম সৈনিক হতে পারে?
যুদ্ধ বা সহিংসতা ও নারী প্রশ্নে এই প্রশ্নগুলো খুবই মোক্ষম।
আমেরিকান ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক জোশুয়া গোল্ডস্টেইন তাঁর ‘ওয়ার অ্যান্ড জেন্ডার’ বইতে যুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণের সঙ্গে আন্তঃসাংস্কৃতিক ঐতিহাসিক প্রমাণগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। তিনি দেখেছেন ‘ইতিহাসের সমস্ত যোদ্ধার ১ শতাংশেরও কম নারী’।
আধুনিক স্থায়ী সেনাবাহিনীতে সৈনিকদের অধিকাংশই পুরুষ। যুদ্ধ একটি সামাজিকভাবে বৈচিত্র্যময় ঘটনা। প্রশ্ন করাই যায়, তাহলে কেন এখানে লিঙ্গ বৈচিত্র্য নেই হয়ে গেল? গোল্ডস্টেইন যুক্তি দিচ্ছেন, ‘যুদ্ধে মানুষ হত্যার ব্যাপারটা লিঙ্গ নির্বিশেষে কোনো স্বাভাবিক প্রবণতা নয়। তবুও যুদ্ধের সম্ভাবনা কিন্তু সর্বজনীন। যুদ্ধের প্রতি সৈন্যদের অনীহার মনোভাব কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্যই বিভিন্ন সংস্কৃতিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লিঙ্গের ভূমিকাকে বড় করে দেখানো হয়। একটি কঠিন পরিস্থিতিতে আরও কঠোরভাবে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোকে “পৌরুষদীপ্ত” কাজ বলা হয়!
আমরা ‘নারী যোদ্ধাকে’ গ্রহণ করতে খুব একটা স্বস্তি বোধ করি না। একটি দেশ এবং তার সামরিক বাহিনীর দায়িত্বে থাকা একজন নারী, বা যুদ্ধরত নারী সেনাপতি, প্রায়ই একটা যৌন অস্বাভাবিকতা হিসেবে দেখা হয়। যেমন ইতিহাসে আমরা অনেক বীরকে দেখি, যুদ্ধক্ষেত্রে নারীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবেন না বলে চেচাচ্ছেন! ইতিহাসে হাতে গোনা যে কজন সফল নারী রাষ্ট্রপ্রধান বা যোদ্ধা, সেনাপতির কথা পাওয়া যায় সেগুলোর বর্ণনা এবং পাঠকদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের বাড়াবাড়ি দেখলেই দৃষ্টিভঙ্গির এই অস্বস্তি ও অস্বাভাবিকতা অনুমান করা যায়।
সমাজে বা কর্মক্ষেত্রেও সামনের সারিতে সক্রিয় নারীরা যেন ‘সাপের গলায় ব্যাঙের’ মতো অস্বস্তি তৈরি করে। এই নারীদের সন্তান কত জন তা নিয়ে মিডিয়ার আগ্রহের শেষ নেই, তাঁর মাতৃত্বের বেপরোয়া অভাবকে তিরস্কার করা হয়। আর মৌলবাদের মতো ঘৃণিত মূল্যবোধের সঙ্গে তাঁর সংযোগ থাকলে তো কথাই নেই! ফ্যাসিবাদের সৈনিক হলেও মানা যায়, কিন্তু মৌলবাদী উগ্রপন্থীদের দলে গেলে তো তাকে দেশেই ঢুকতে দেওয়া হবে না!
আজকাল কম্পিউটার গেম, সিনেমা এবং ঢাউস আকৃতির সব বইয়ে ‘নারীশক্তিকে’ খুব মহিমান্বিত করা হয়। কিন্তু সেসব চরিত্রের সঙ্গে বাস্তবতার খুব কমই মিল থাকে।
এই প্রশ্নগুলো শুধু পুরুষত্বের ধারণার সঙ্গেই নয়, নারীবাদের ধারণাগুলোর সঙ্গেও সম্পর্কিত। নারীর যুদ্ধে অংশগ্রহণ কী ‘পুরুষতান্ত্রিক সহিংসতা-বিরোধী’ নারীবাদী নীতিকে ক্ষুণ্ন করে? ইতিহাস বলে, আমেরিকার নারী ভোটাধিকার আন্দোলনের অগ্রভাগের কেউ কেউ কংগ্রেসে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এবং ট্রাফিক ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটানোর মতো কর্মসূচির পক্ষে ছিলেন। আন্দোলনটি শেষ পর্যন্ত অবশ্য শান্তিপূর্ণই ছিল।
যুদ্ধের সম্ভাব্য সকল ক্ষয়ক্ষতির অংশীদার হয় নারী। এর মধ্যে যুদ্ধের সবচেয়ে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়-পরিকল্পিত হত্যা, সেটিরও প্রথম শিকার হয় নারীরা। নিপীড়ন বা প্রতিশোধ নিতে দুর্বল ও সহজ লক্ষ্য হিসেবে ইতিহাসের বিভিন্ন যুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনা পাওয়া যায়। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় নারী সৈনিক কই?
নারীর কলমে যুদ্ধসাহিত্য প্রায় অনুপস্থিত
একটা যুদ্ধ পুরো সমাজকে গ্রাস করে, লিঙ্গ নির্বিশেষে যুদ্ধের আঁচ লাগে। কিন্তু নারীদের কলমে যুদ্ধের কথাসাহিত্য যেন অস্বাভাবিক ঘটনা। যেন যুদ্ধ নিয়ে কাল্পনিক কথাসাহিত্য তৈরির কল্পনা করার অধিকারটাও তাঁদের নেই!
মার্কিন ইতিহাসবিদ মার্গারেট ম্যাকমিলন বলেন, ‘সেনাবাহিনী এবং প্রতিষ্ঠান থেকে নারীদের বাদ দেওয়া একটা সাধারণ ঘটনা। ঐতিহাসিক নথি এবং শৈল্পিক প্রতিনিধিত্ব থেকেও তাদের বাদ দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ যা ঘটে-নারী যোদ্ধাদের উদাহরণ প্রায়ই অবিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে সন্দেহ জাগতে বাধ্য।’
সম্মুখ সমরে নারী যোদ্ধাদের অংশীদারত্ব বেশ কমই। কিন্তু যুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রবণতা বলছে, বহু নারীই সংঘাতে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। তারা যুদ্ধ, প্রযুক্তি এবং কূটনীতিতে বিভিন্ন পর্যায়ে ভূমিকা রেখেছেন, গোয়েন্দা, যুদ্ধাস্ত্র এবং গুপ্তচরবৃত্তিতে কাজ করেছেন। দগদগে ক্ষত হয়ে থাকা দুটি বিশ্বযুদ্ধ তার প্রমাণ।
দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এক সময় শেষ হয়ে যায়, নারীরা বেঁচে থাকে এবং পরিণতির যন্ত্রণা বয়ে বেড়ায়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নারীরা যুদ্ধের নির্লিপ্ত ভুক্তভোগী থাকে না। তারা স্বামী, সন্তান, ভাই হারানোর শোক করে, জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই করে, অনেকে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে বাধ্য হয়, পুরোনো পরিচয় ঝেড়ে ফেলে এবং যুদ্ধ তাদের ভাবনার নতুন আকৃতি দেয়।
এই ব্যাপারগুলো সরাসরি ভুক্তভোগীদের বয়ান থেকে বোঝার জন্য ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক একটি তথ্যচিত্র করেছে। রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি এই কাজটির পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। রেড ক্রস একটি প্রতিবেদনে বলছে, ‘এ ওম্যানস ওয়ার’ নামে তাদের প্রকল্পটি ‘নারী হিসেবে যুদ্ধের শিকার’ এমন গৎবাঁধা (স্টিরিওটাইপ) ধারণা ভেঙে দিয়েছে। নারীদের একাধিক জটিল এবং সংঘাতপূর্ণ ভূমিকা অন্বেষণ করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে নারীরা যোদ্ধা, মানবতাবাদী, মা, কন্যা, শ্রমিক, সম্প্রদায়ের নেতা এবং বেঁচে ফেরা সংগ্রামী সত্তা।
নারী সৈন্যদের কাজগুলোকে কখনোই গুরুত্ব সহকারে নথিবদ্ধ করা হয়নি। এই কারণেই সাহিত্যে নোবেলজয়ী বেলারুশিয়ান সাংবাদিক সোভেৎলানা আলেক্সিভিচের বিবরণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত নারীদের যে ভূমিকা ও অবদান উঠে এসেছে তা সরকারি বয়ানে অনুপস্থিত। এই একটি কারণেই তাঁর ‘দ্য আনওম্যানলি ফেস অব ওয়ার’ বইটিকে অমূল্য সাহিত্যকর্ম বলা যায়।
ইরাক, ফিলিপাইন এবং দক্ষিণ নাইজেরিয়ার সংঘাত কবলিত এলাকার নারীদের অভিজ্ঞতা ও বয়ান রেকর্ড করেছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক। অস্ত্র, গোলাবারুদের গর্জন থেমে গেলেও যুদ্ধবিধ্বস্ত গোষ্ঠীর আত্মপরিচয় যুদ্ধের মাধ্যমে নতুন রূপ ধারণ করতে থাকে। এ প্রক্রিয়া বহু দিন পর্যন্ত চলে। পেরুতে দেখা গেছে, স্প্যানিশ আগ্রাসনের বহু পুরোনো ক্ষত এখনো নিরাময় হয়নি।
চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের কথাই ধরা যাক:
সূত্র: জাতিসংঘ
ওই সময় যুদ্ধে শ্রমিক হিসেবে সারা দেশ থেকে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রায় ১৪ লাখ নারী।
সূত্র: দ্য ওয়ার্ল্ডওয়াল ডটঅর্গ
ইউক্রেন পরিস্থিতি
জাতিসংঘের লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ এবং নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএন উইমেন এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কেয়ারের ‘র্যাপিড জেন্ডার অ্যানালাইসিস ইন ইউক্রেন’ প্রতিবেদন অনুসারে, ইউক্রেনের বাধ্যতামূলক অভিবাসী হওয়া ৯০ শতাংশই নারী ও শিশু। যুদ্ধ যেহেতু চলমান এ সংখ্যা যে ক্রমে বাড়ছে তাতে সন্দেহ নেই।
এখন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট নানামুখী সমস্যা এবং অতিরিক্ত দায় ঘর কন্যার বোঝা টানা ইউক্রেনীয় নারীদের ঘাড়ে চেপেছে। কিন্তু এই ধরনের একটি অস্থির পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্ল্যাটফর্মে নারী কই? পরিস্থিতির উত্তেজনা প্রশমন, সংঘাত নিরসন এবং ইউক্রেন ও এর বাইরের মানুষের শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের বৈশ্বিক প্রক্রিয়ায় নারীদের অংশ তো সেভাবে দৃশ্যমান নয়। এছাড়া লিঙ্গবৈষম্য ও গৃহনির্যাতনের অপরাধ ইউরোপের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ঘটে ইউক্রেনে। সক্ষম পুরুষেরা যুদ্ধের ময়দানে, একা নারী ভিন দেশে কীভাবে সব সামলাচ্ছেন!
লিঙ্গ ইস্যু নিয়ে কাজ করা এমনিতেই খুব জটিল। কারণ এটি বুঝতে চাইলে ক্ষমতা এবং বিশেষাধিকার, একটি সম্প্রদায়ের আচার এবং প্রত্যাশাকে একত্রে বুঝতে হয়। সংঘাত বিদ্যমান (লিঙ্গ) বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দেয়। যখন পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তি-যিনি সাধারণত হোন একজন পুরুষ-যুদ্ধে যায় বা নিহত হয় তখন কী ঘটে? সামাজিক ভূমিকার পরিবর্তন হয়। পুরুষ প্রধান সমাজে তখন নারীদের জন্য এমন সুযোগ উন্মুক্ত হয় যা আগে কখনো ছিল না।
বলা যেতে পারে, যুদ্ধে নারীদের ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তাদের কাজকে সম্মানিত বা স্মরণ করা হয় না। এমনকি মানবাধিকার উন্নয়নের এই যুগে এসেও আমরা যুদ্ধে নারী ও শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার ঘটনা দেখছি।
যুদ্ধ শেষে নারীদের ঘরে ফেরানো হয়, অধস্তন করে রাখা হয়। ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (এফএলএন) আলজেরীয় নারীদের পুরুষদের সমান বিপজ্জনক ভূমিকায় ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধ ফেরত হিসেবে তার অধিকার এবং পেনশন থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।
নারী সৈন্যরা যুদ্ধ থেকে জীবিত ফিরে এলেও কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকেন। তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মধ্যে অঙ্গীভূত করা হয় না। শুধু স্মৃতির সমতা নয়, যুদ্ধের একটি সামগ্রিক ‘চেতনা’, রোল মডেল এবং বিকল্প নায়িকা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা এবং মানবীয় অভিজ্ঞতায় নারীর ক্ষমতার আলোকচ্ছটায় উজ্জ্বল হতে পারার একটি দারুণ সুযোগ সমাজ তার গভীরভাবে প্রোথিত সংস্কারের কারণে হাতছাড়া করে।
যুদ্ধ যদি অনিবার্যভাবেই মানবীয় ব্যাপার হয় তাহলে এটি তো নারী ও পুরুষ উভয়ের প্রশ্ন হওয়ার কথা। ভারী অস্ত্র বহনের জন্য পুরুষের কাঁধ বিকশিত হয়েছে, এর সপক্ষে জৈবিক ব্যাখ্যা হাজির করা যেতে পারে কিন্তু হরমোনগত কারণে নারীরা শান্তিপ্রিয় স্নায়ুবিজ্ঞান এই ধারণাকে বাতিল করে দেয়। নারীরা সর্বদা শান্তিপ্রিয় বা শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী, ঘটনার শিকার, পুরুষকে কাপুরুষ বলে তাচ্ছিল্য করা অন্দর বাসিনী বা লাল লিপস্টিকে ঠোঁট রাঙানো মনোবল বৃদ্ধিকারীনি নয়। সহিংসতা দিয়ে সহিংসতার সমাধান হয়তো কখনো হয়। কিন্তু লিঙ্গবৈষম্যের ধারণা কখনো জ্ঞান ও শান্তি বয়ে আনে না।
অবশ্য নানা যুদ্ধে স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত নারীরা হলেন স্বাভাবিকতায় ফেরার নির্ভরযোগ্য নেতৃত্ব। তাঁদের কোমল হাত, দুর্বল কাঁধ যুদ্ধের ক্ষত সারিয়ে তুলতে সক্ষম।
তথ্যসূত্র: ইউএন উইমেন, দ্য গার্ডিয়ান, আইসিআরসি, ইউএনএফপিএ, এনপিআর

গরুর মাংস তো নানাভাবে খেয়েছেন। বাঁধাকপির এই মৌসুমে সেটি দিয়েই রেঁধে দেখুন। স্বাদ তো বদলাবেই, একটু অন্য রকম খাবারও খাওয়া হবে। আপনাদের জন্য বাঁধাকপি দিয়ে গরুর মাংসের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।...
১ ঘণ্টা আগে
সম্প্রতি একটি ঘটনা মোটামুটি সবাইকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। গত সোমবার সকালে মোহাম্মদপুরে একটি বাড়িতে মা-মেয়ে খুন হন গৃহকর্মীর হাতে। শুধু এমন ঘটনা নয়, গৃহকর্মী খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে পালানোর ঘটনাও প্রায়ই শোনা যায়।
২১ ঘণ্টা আগে
শুষ্ক শীতের বাতাস শরীর থেকে পানি আরও বেশি বের করে নেয়। ফলে ত্বক শুষ্ক হয়, শক্তি কমে যায় এবং হজমেও সমস্যা দেখা দেয়। পর্যাপ্ত পানি পান শীতে বিপাকক্রিয়া ঠিক রাখে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীর সুস্থ রাখে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, শীতেও সহজ কিছু অভ্যাসে শরীরে পানির ভারসাম্য রাখা সম্ভব।...
১ দিন আগে
কখনো ভেবে দেখেছেন, আপনার প্রতিদিন খাওয়া এই খাবারগুলো বৈশ্বিক মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে? টেস্ট অ্যাটলাসের ‘বিশ্বের সেরা ১০০ রন্ধনশৈলী ২০২৫-২০২৬’ এর র্যাঙ্কিং সেই প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বজুড়ে খাদ্যরসিকদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রন্ধনশৈলী।...
১ দিন আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

গরুর মাংস তো নানাভাবে খেয়েছেন। বাঁধাকপির এই মৌসুমে সেটি দিয়েই রেঁধে দেখুন। স্বাদ তো বদলাবেই, একটু অন্য রকম খাবারও খাওয়া হবে। আপনাদের জন্য বাঁধাকপি দিয়ে গরুর মাংসের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
উপকরণ
হাড়সহ গরুর মাংস এক কেজি, বাঁধাকপি একটা, এলাচি, দারুচিনি, তেজপাতা ২ থেকে ৩ পিস করে, আদা ও রসুনবাটা এক টেবিল চামচ করে, হলুদ, মরিচ ও ধনেগুঁড়া এক টেবিল চামচ করে, জিরাগুঁড়া এক চা-চামচ, গরমমসলার গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, চিনি আধা চা-চামচ, সয়াবিন তেল আধা কাপ, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ এবং ৫ থেকে ৬টা কাঁচা মরিচ ফালি।
প্রণালি
গরুর মাংস ধুয়ে রাখুন। বাঁধাকপি চিকন করে ভাজির মতো কেটে ধুয়ে নিন। কড়াইতে সয়াবিন তেল দিয়ে গরম করুন। তেল গরম হলে তাতে পেঁয়াজকুচি দিয়ে লালচে করে ভেজে তাতে এলাচি, দারুচিনি ও তেজপাতা দিন। এবার আদা ও রসুনবাটা দিয়ে সামান্য নেড়ে নিন। অল্প পানি দিয়ে হলুদ, মরিচ, ধনেগুঁড়া ও লবণ দিয়ে কষিয়ে নিন। পরে মাংস দিয়ে ঢেকে রান্না করুন কম আঁচে। সেদ্ধ হলে বাঁধাকপি দিয়ে আবারও ঢেকে রান্না করুন। এবার হয়ে এলে জিরা ও গরমমসলার গুঁড়া এবং কাঁচা মরিচের ফালি দিয়ে নেড়েচেড়ে রান্না করুন। তারপর লবণ দেখে নামিয়ে নিন। রেডি হয়ে গেল বাঁধাকপি দিয়ে গরুর মাংস।

গরুর মাংস তো নানাভাবে খেয়েছেন। বাঁধাকপির এই মৌসুমে সেটি দিয়েই রেঁধে দেখুন। স্বাদ তো বদলাবেই, একটু অন্য রকম খাবারও খাওয়া হবে। আপনাদের জন্য বাঁধাকপি দিয়ে গরুর মাংসের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।
উপকরণ
হাড়সহ গরুর মাংস এক কেজি, বাঁধাকপি একটা, এলাচি, দারুচিনি, তেজপাতা ২ থেকে ৩ পিস করে, আদা ও রসুনবাটা এক টেবিল চামচ করে, হলুদ, মরিচ ও ধনেগুঁড়া এক টেবিল চামচ করে, জিরাগুঁড়া এক চা-চামচ, গরমমসলার গুঁড়া ১ চা-চামচ, লবণ স্বাদমতো, চিনি আধা চা-চামচ, সয়াবিন তেল আধা কাপ, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ এবং ৫ থেকে ৬টা কাঁচা মরিচ ফালি।
প্রণালি
গরুর মাংস ধুয়ে রাখুন। বাঁধাকপি চিকন করে ভাজির মতো কেটে ধুয়ে নিন। কড়াইতে সয়াবিন তেল দিয়ে গরম করুন। তেল গরম হলে তাতে পেঁয়াজকুচি দিয়ে লালচে করে ভেজে তাতে এলাচি, দারুচিনি ও তেজপাতা দিন। এবার আদা ও রসুনবাটা দিয়ে সামান্য নেড়ে নিন। অল্প পানি দিয়ে হলুদ, মরিচ, ধনেগুঁড়া ও লবণ দিয়ে কষিয়ে নিন। পরে মাংস দিয়ে ঢেকে রান্না করুন কম আঁচে। সেদ্ধ হলে বাঁধাকপি দিয়ে আবারও ঢেকে রান্না করুন। এবার হয়ে এলে জিরা ও গরমমসলার গুঁড়া এবং কাঁচা মরিচের ফালি দিয়ে নেড়েচেড়ে রান্না করুন। তারপর লবণ দেখে নামিয়ে নিন। রেডি হয়ে গেল বাঁধাকপি দিয়ে গরুর মাংস।

আমরা এক ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে বাস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব টের পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতায় সরাসরি ভূমিকা রাখা উন্নত দেশগুলোও। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট কঠিনতর হয়ে উঠছে।
১৭ আগস্ট ২০২২
সম্প্রতি একটি ঘটনা মোটামুটি সবাইকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। গত সোমবার সকালে মোহাম্মদপুরে একটি বাড়িতে মা-মেয়ে খুন হন গৃহকর্মীর হাতে। শুধু এমন ঘটনা নয়, গৃহকর্মী খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে পালানোর ঘটনাও প্রায়ই শোনা যায়।
২১ ঘণ্টা আগে
শুষ্ক শীতের বাতাস শরীর থেকে পানি আরও বেশি বের করে নেয়। ফলে ত্বক শুষ্ক হয়, শক্তি কমে যায় এবং হজমেও সমস্যা দেখা দেয়। পর্যাপ্ত পানি পান শীতে বিপাকক্রিয়া ঠিক রাখে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীর সুস্থ রাখে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, শীতেও সহজ কিছু অভ্যাসে শরীরে পানির ভারসাম্য রাখা সম্ভব।...
১ দিন আগে
কখনো ভেবে দেখেছেন, আপনার প্রতিদিন খাওয়া এই খাবারগুলো বৈশ্বিক মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে? টেস্ট অ্যাটলাসের ‘বিশ্বের সেরা ১০০ রন্ধনশৈলী ২০২৫-২০২৬’ এর র্যাঙ্কিং সেই প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বজুড়ে খাদ্যরসিকদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রন্ধনশৈলী।...
১ দিন আগেফিচার ডেস্ক

সম্প্রতি একটি ঘটনা মোটামুটি সবাইকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। গত সোমবার সকালে মোহাম্মদপুরে একটি বাড়িতে মা-মেয়ে খুন হন গৃহকর্মীর হাতে। শুধু এমন ঘটনা নয়, গৃহকর্মী খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে পালানোর ঘটনাও প্রায়ই শোনা যায়।
শহরের ব্যস্ত জীবনে দৈনন্দিন কাজের সাহায্যের জন্য অনেকে গৃহকর্মীর ওপর নির্ভরশীল। ফলে পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে বাড়ির জিনিসপত্রের নিরাপত্তা অনেকটা নির্ভর করে কেমন গৃহকর্মী আপনি নিয়োগ দিয়েছেন, তার ওপর। গৃহকর্মী নিয়োগের আগে তার সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ করেছেন কিনা, সেটার ওপরও আপনার নিরাপত্তা অনেকটাই নির্ভর করে। কারণ, তাদের নিয়োগে সামান্য অসতর্কতাও বড় বিপদের কারণ হতে পারে।
গৃহকর্মী নিয়োগের আগে যেমন কাজ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে নেওয়া হয়, তেমনি তাদের ছোটখাটো একটা ইন্টারভিউ নেওয়া থেকে শুরু করে জরুরি কিছু কাগজপত্রও সংগ্রহ করা উচিত।
নিরাপত্তার স্বার্থে গৃহকর্মী নিয়োগের আগে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে পারেন—
জরুরি নথি সংগ্রহে রাখুন
কোনো চাকরিতে নিয়োগের আগে অফিসে যেমন সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বেশ কিছু কাগজপত্র জমা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে, তেমনি গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও এমন কিছু কাগজ তাদের কাছ থেকে চেয়ে নিন।
গৃহকর্মী নিয়োগের আগে অন্তত দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি রাখুন। অবশ্যই চেহারার সঙ্গে ছবি মিলিয়ে নেবেন। স্থায়ী গৃহকর্মী রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই সাম্প্রতিককালে তোলা ছবি চেয়ে নেবেন বা তুলে নেবেন।
জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করুন। জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে থাকলে প্রয়োজনে আইনগতভাবে ব্যক্তিকে শনাক্ত করা সহজ হয়। এটি দিতে না চাইলে সেই গৃহকর্মীকে নিয়োগ না দেওয়াই নিরাপদ।
বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা যাচাই করে নিন
গৃহকর্মীর বর্তমান ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বর নিন। সঙ্গে পরিবারের আরও দু-একজনের নম্বর রাখতে পারলে ভালো হয়। স্থায়ী গৃহকর্মী রাখার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় নিজের গ্রামের বাড়ি থেকে খোঁজ করে নিয়োগ দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নিজে বা পরিচিত কাউকে তার বাড়িতে পাঠিয়ে ঠিকানা যাচাই করে নিন। এ ছাড়া বর্তমানে তিনি যেখানে থাকেন, সেখানকার আশপাশ সম্পর্কেও খোঁজ নিতে পারেন।
কীভাবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, সেটা বুঝে নিন
সাধারণত শহরের বাড়িগুলোয় দেখা যায়, একজন গৃহকর্মী একই ভবনের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে কাজ করে, আশপাশের বিভিন্ন ভবনেও কাজ করে এরা। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ তাদের বাসা সাধারণত পাশাপাশি এলাকাতেই হয়। অর্থাৎ নির্দিষ্ট এলাকার মধ্য়ে তারা কাজ নেয়। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি কম।
কিন্তু নির্দিষ্ট কারও মাধ্যমে এমন কোনো গৃহকর্মী যদি নিয়োগ দেন, যিনি এলাকার নন, সে ক্ষেত্রে যার মাধ্যমে নিয়োগ দিচ্ছেন তার নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বরও সংগ্রহে রাখুন। গৃহকর্মী আগে কোথায় কাজ করেছে, কত দিন করেছে, সে সম্পর্কেও তথ্য নিন।
নতুন এলাকায় বসবাসের ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালা, কেয়ারটেকার বা পরিচিত প্রতিবেশীর সুপারিশে গৃহকর্মী নেওয়া যেতে পারে। তবে সেখানেও ছবি, পরিচয়পত্র ও শনাক্তকারী ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ জরুরি।
কাজের ধরন, সময় ও বেতন স্পষ্টভাবে ঠিক করুন
কী কাজ করবেন, কত সময় কাজ করবেন, এ বিষয়গুলো শুরুতেই পরিষ্কার না করলে পরে ভুল-বোঝাবুঝি তৈরি হয়। অতিরিক্ত কাজ চাপানোর প্রবণতা দ্বন্দ্ব বাড়ায়। মাসিক বেতন, বেতন দেওয়ার তারিখ ও ছুটির বিষয়টি আগেই ঠিক করে নেওয়া জরুরি। অস্পষ্টতা থাকলে কর্মী ও নিয়োগকর্তা—উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ব্যক্তিগত আলমারি নিজেই পরিষ্কার করুন
গৃহকর্মী নিয়োগের সময় স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে বলুন কোন কোন জিনিস আপনি নিজেই রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। এতে একটা স্বাস্থ্যকর সীমারেখা বজায় থাকবে। ব্যক্তিগত ও দামি জিনিসপত্র রয়েছে এমন ড্রয়ার বা আলমারি নিজ হাতে গোছান ও পরিষ্কার করুন। এতে অনেকটাই চিন্তামুক্ত থাকা যাবে।
সূত্র: বুমার্স ও অন্যান্য

সম্প্রতি একটি ঘটনা মোটামুটি সবাইকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। গত সোমবার সকালে মোহাম্মদপুরে একটি বাড়িতে মা-মেয়ে খুন হন গৃহকর্মীর হাতে। শুধু এমন ঘটনা নয়, গৃহকর্মী খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে পালানোর ঘটনাও প্রায়ই শোনা যায়।
শহরের ব্যস্ত জীবনে দৈনন্দিন কাজের সাহায্যের জন্য অনেকে গৃহকর্মীর ওপর নির্ভরশীল। ফলে পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা থেকে শুরু করে বাড়ির জিনিসপত্রের নিরাপত্তা অনেকটা নির্ভর করে কেমন গৃহকর্মী আপনি নিয়োগ দিয়েছেন, তার ওপর। গৃহকর্মী নিয়োগের আগে তার সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ করেছেন কিনা, সেটার ওপরও আপনার নিরাপত্তা অনেকটাই নির্ভর করে। কারণ, তাদের নিয়োগে সামান্য অসতর্কতাও বড় বিপদের কারণ হতে পারে।
গৃহকর্মী নিয়োগের আগে যেমন কাজ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে নেওয়া হয়, তেমনি তাদের ছোটখাটো একটা ইন্টারভিউ নেওয়া থেকে শুরু করে জরুরি কিছু কাগজপত্রও সংগ্রহ করা উচিত।
নিরাপত্তার স্বার্থে গৃহকর্মী নিয়োগের আগে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে পারেন—
জরুরি নথি সংগ্রহে রাখুন
কোনো চাকরিতে নিয়োগের আগে অফিসে যেমন সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বেশ কিছু কাগজপত্র জমা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে, তেমনি গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও এমন কিছু কাগজ তাদের কাছ থেকে চেয়ে নিন।
গৃহকর্মী নিয়োগের আগে অন্তত দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি রাখুন। অবশ্যই চেহারার সঙ্গে ছবি মিলিয়ে নেবেন। স্থায়ী গৃহকর্মী রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই সাম্প্রতিককালে তোলা ছবি চেয়ে নেবেন বা তুলে নেবেন।
জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করুন। জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে থাকলে প্রয়োজনে আইনগতভাবে ব্যক্তিকে শনাক্ত করা সহজ হয়। এটি দিতে না চাইলে সেই গৃহকর্মীকে নিয়োগ না দেওয়াই নিরাপদ।
বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা যাচাই করে নিন
গৃহকর্মীর বর্তমান ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বর নিন। সঙ্গে পরিবারের আরও দু-একজনের নম্বর রাখতে পারলে ভালো হয়। স্থায়ী গৃহকর্মী রাখার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময় নিজের গ্রামের বাড়ি থেকে খোঁজ করে নিয়োগ দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে নিজে বা পরিচিত কাউকে তার বাড়িতে পাঠিয়ে ঠিকানা যাচাই করে নিন। এ ছাড়া বর্তমানে তিনি যেখানে থাকেন, সেখানকার আশপাশ সম্পর্কেও খোঁজ নিতে পারেন।
কীভাবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, সেটা বুঝে নিন
সাধারণত শহরের বাড়িগুলোয় দেখা যায়, একজন গৃহকর্মী একই ভবনের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে কাজ করে, আশপাশের বিভিন্ন ভবনেও কাজ করে এরা। এ ক্ষেত্রে বেশির ভাগ তাদের বাসা সাধারণত পাশাপাশি এলাকাতেই হয়। অর্থাৎ নির্দিষ্ট এলাকার মধ্য়ে তারা কাজ নেয়। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি কম।
কিন্তু নির্দিষ্ট কারও মাধ্যমে এমন কোনো গৃহকর্মী যদি নিয়োগ দেন, যিনি এলাকার নন, সে ক্ষেত্রে যার মাধ্যমে নিয়োগ দিচ্ছেন তার নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বরও সংগ্রহে রাখুন। গৃহকর্মী আগে কোথায় কাজ করেছে, কত দিন করেছে, সে সম্পর্কেও তথ্য নিন।
নতুন এলাকায় বসবাসের ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালা, কেয়ারটেকার বা পরিচিত প্রতিবেশীর সুপারিশে গৃহকর্মী নেওয়া যেতে পারে। তবে সেখানেও ছবি, পরিচয়পত্র ও শনাক্তকারী ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ জরুরি।
কাজের ধরন, সময় ও বেতন স্পষ্টভাবে ঠিক করুন
কী কাজ করবেন, কত সময় কাজ করবেন, এ বিষয়গুলো শুরুতেই পরিষ্কার না করলে পরে ভুল-বোঝাবুঝি তৈরি হয়। অতিরিক্ত কাজ চাপানোর প্রবণতা দ্বন্দ্ব বাড়ায়। মাসিক বেতন, বেতন দেওয়ার তারিখ ও ছুটির বিষয়টি আগেই ঠিক করে নেওয়া জরুরি। অস্পষ্টতা থাকলে কর্মী ও নিয়োগকর্তা—উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ব্যক্তিগত আলমারি নিজেই পরিষ্কার করুন
গৃহকর্মী নিয়োগের সময় স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে বলুন কোন কোন জিনিস আপনি নিজেই রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। এতে একটা স্বাস্থ্যকর সীমারেখা বজায় থাকবে। ব্যক্তিগত ও দামি জিনিসপত্র রয়েছে এমন ড্রয়ার বা আলমারি নিজ হাতে গোছান ও পরিষ্কার করুন। এতে অনেকটাই চিন্তামুক্ত থাকা যাবে।
সূত্র: বুমার্স ও অন্যান্য

আমরা এক ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে বাস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব টের পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতায় সরাসরি ভূমিকা রাখা উন্নত দেশগুলোও। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট কঠিনতর হয়ে উঠছে।
১৭ আগস্ট ২০২২
গরুর মাংস তো নানাভাবে খেয়েছেন। বাঁধাকপির এই মৌসুমে সেটি দিয়েই রেঁধে দেখুন। স্বাদ তো বদলাবেই, একটু অন্য রকম খাবারও খাওয়া হবে। আপনাদের জন্য বাঁধাকপি দিয়ে গরুর মাংসের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।...
১ ঘণ্টা আগে
শুষ্ক শীতের বাতাস শরীর থেকে পানি আরও বেশি বের করে নেয়। ফলে ত্বক শুষ্ক হয়, শক্তি কমে যায় এবং হজমেও সমস্যা দেখা দেয়। পর্যাপ্ত পানি পান শীতে বিপাকক্রিয়া ঠিক রাখে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীর সুস্থ রাখে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, শীতেও সহজ কিছু অভ্যাসে শরীরে পানির ভারসাম্য রাখা সম্ভব।...
১ দিন আগে
কখনো ভেবে দেখেছেন, আপনার প্রতিদিন খাওয়া এই খাবারগুলো বৈশ্বিক মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে? টেস্ট অ্যাটলাসের ‘বিশ্বের সেরা ১০০ রন্ধনশৈলী ২০২৫-২০২৬’ এর র্যাঙ্কিং সেই প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বজুড়ে খাদ্যরসিকদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রন্ধনশৈলী।...
১ দিন আগেফিচার ডেস্ক, ঢাকা

শীত এলে অনেকের পানি পানের পরিমাণ কমে যায়। ঠান্ডা আবহাওয়ায় তৃষ্ণা কম অনুভূত হওয়ায় আমরা বুঝতেই পারি না, শরীর ধীরে ধীরে পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। অথচ শুষ্ক শীতের বাতাস শরীর থেকে পানি আরও বেশি বের করে নেয়। ফলে ত্বক শুষ্ক হয়, শক্তি কমে যায় এবং হজমেও সমস্যা দেখা দেয়। পর্যাপ্ত পানি পান শীতে বিপাকক্রিয়া ঠিক রাখে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীর সুস্থ রাখে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, শীতেও সহজ কিছু অভ্যাসে শরীরে পানির ভারসাম্য রাখা সম্ভব।
গরম লেবুপানি দিয়ে দিন শুরু
শীতের সকালে ঠান্ডা পানি পান অনেকের কাছে অস্বস্তিকর। এর বদলে দিন শুরু করুন এক কাপ গরম লেবুপানি দিয়ে। পুষ্টিবিদ পূজা কেডিয়ার মতে, এতে শরীর ধীরে সতেজ হয়ে ওঠে এবং দিনের শুরুতে পানি পানের অভ্যাস তৈরি হয়। লেবুপানি হজমে সহায়তা করে, শরীরে ভিটামিন সি জোগায় এবং মনও ভালো রাখে। গরম পানি গলাও আরাম দেয়।
এর সহজ রেসিপি হলো, পানি ফুটিয়ে অর্ধেক লেবুর রস মেশান, চাইলে সামান্য মধু যোগ করতে পারেন। এতে সকালেই প্রায় আধা লিটার পানি শরীরে যায়।
চায়ের কাপেও থাকুক হাইড্রেশন

শীতে চা শুধু তৃষ্ণা মেটানোর পানীয় নয়, অনেকের কাছে এটি আনন্দের সঙ্গী। তবে এই সময়ে অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত চা বারবার পান করলে শরীরে পানির ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তাই সাধারণ দুধ-চা বা মসলা চায়ের বদলে হারবাল চা বেছে নেওয়া বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। পুদিনা, ক্যামোমাইল কিংবা তুলসী অথবা আদা চা শরীরে পানির ভারসাম্য রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় উষ্ণতাও দেয়। প্রতিটি কাপ হারবাল চা থেকে শরীর পায় বাড়তি তরল, যা শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় বিশেষভাবে উপকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যামোমাইল চা মানসিক প্রশান্তি আনে এবং ভালো ঘুমে সহায়তা করে, যা শীতকালে অনেকের অনিদ্রা কমাতে সহায়ক। অন্যদিকে আদা ও তুলসী শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর, বিশেষ করে ঠান্ডা ও ফ্লুর মৌসুমে।
স্যুপ ও মৌসুমি ফল খান
শীতকাল স্যুপ খাওয়ার সেরা সময়। টমেটো স্যুপ, সবজি বা চিকেন স্যুপ শরীর উষ্ণ রাখার পাশাপাশি পানির ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতের খাবারের সঙ্গে হালকা স্যুপ যোগ করলে আলাদা করে বেশি পানি পান করতে হয় না। এতে হজমেও সুবিধা হয় এবং শীতের সময় ভারী খাবার খাওয়ার ফলে যে অস্বস্তি তৈরি হয়, তা কমে।

পানিশূন্যতা এড়াতে শীতকালে মৌসুমি ফল খাওয়ার দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। কমলা, মৌসুমি লেবু ও লাল গাজরের মতো রসাল ফল স্বাভাবিকভাবে শরীরে পানি জোগায় এবং একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ সরবরাহ করে। এসব ফল খেলে একদিকে যেমন শরীরে পানির ভারসাম্য থাকে, অন্যদিকে তেমনই অপ্রয়োজনীয় ক্ষুধা কমে এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস গড়ে ওঠে।
ইলেকট্রোলাইটের দিকেও নজর দিন
শুধু পানি পান করাই যথেষ্ট নয়, শরীরে তরলের ভারসাম্য ঠিক রাখতে দরকার সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো ইলেকট্রোলাইট। শীতে আমরা অনেক সময় বিষয়টি ভুলে যাই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রয়োজনে ইলেকট্রোলাইট পাউডার বা ট্যাবলেট পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে ক্লান্তি কমে এবং কর্মক্ষমতা বাড়ে।
পানির জন্য রিমাইন্ডার সেট করুন
কাজের চাপ, ছুটির ব্যস্ততা বা সপ্তাহের অলস ছুটির দিন পানি পান ভুলে যাওয়া খুব স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনে রিমাইন্ডার বা অ্যালার্ম সেট করা বেশ কাজে দেয়। পুষ্টিবিদ পূজা কেডিয়া বলেন, মজার নাম দিয়ে অ্যালার্ম সেট করলে সেটি মনে করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মনও ভালো করে। দিনে নির্দিষ্ট সময়ে অ্যালার্ম দিলে অজান্তেই পানি পানের লক্ষ্য পূরণ হয়ে যায়।
শীতের ঠান্ডায় তৃষ্ণা কম লাগলেও শরীরের পানির প্রয়োজন কমে না। গরম পানীয়, স্যুপ, ফল আর সামান্য সচেতনতার মাধ্যমেই শীতজুড়ে সুস্থ ও সতেজ থাকা সম্ভব।
সূত্র: হেলথশট

শীত এলে অনেকের পানি পানের পরিমাণ কমে যায়। ঠান্ডা আবহাওয়ায় তৃষ্ণা কম অনুভূত হওয়ায় আমরা বুঝতেই পারি না, শরীর ধীরে ধীরে পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। অথচ শুষ্ক শীতের বাতাস শরীর থেকে পানি আরও বেশি বের করে নেয়। ফলে ত্বক শুষ্ক হয়, শক্তি কমে যায় এবং হজমেও সমস্যা দেখা দেয়। পর্যাপ্ত পানি পান শীতে বিপাকক্রিয়া ঠিক রাখে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীর সুস্থ রাখে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, শীতেও সহজ কিছু অভ্যাসে শরীরে পানির ভারসাম্য রাখা সম্ভব।
গরম লেবুপানি দিয়ে দিন শুরু
শীতের সকালে ঠান্ডা পানি পান অনেকের কাছে অস্বস্তিকর। এর বদলে দিন শুরু করুন এক কাপ গরম লেবুপানি দিয়ে। পুষ্টিবিদ পূজা কেডিয়ার মতে, এতে শরীর ধীরে সতেজ হয়ে ওঠে এবং দিনের শুরুতে পানি পানের অভ্যাস তৈরি হয়। লেবুপানি হজমে সহায়তা করে, শরীরে ভিটামিন সি জোগায় এবং মনও ভালো রাখে। গরম পানি গলাও আরাম দেয়।
এর সহজ রেসিপি হলো, পানি ফুটিয়ে অর্ধেক লেবুর রস মেশান, চাইলে সামান্য মধু যোগ করতে পারেন। এতে সকালেই প্রায় আধা লিটার পানি শরীরে যায়।
চায়ের কাপেও থাকুক হাইড্রেশন

শীতে চা শুধু তৃষ্ণা মেটানোর পানীয় নয়, অনেকের কাছে এটি আনন্দের সঙ্গী। তবে এই সময়ে অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত চা বারবার পান করলে শরীরে পানির ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তাই সাধারণ দুধ-চা বা মসলা চায়ের বদলে হারবাল চা বেছে নেওয়া বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। পুদিনা, ক্যামোমাইল কিংবা তুলসী অথবা আদা চা শরীরে পানির ভারসাম্য রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় উষ্ণতাও দেয়। প্রতিটি কাপ হারবাল চা থেকে শরীর পায় বাড়তি তরল, যা শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় বিশেষভাবে উপকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যামোমাইল চা মানসিক প্রশান্তি আনে এবং ভালো ঘুমে সহায়তা করে, যা শীতকালে অনেকের অনিদ্রা কমাতে সহায়ক। অন্যদিকে আদা ও তুলসী শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর, বিশেষ করে ঠান্ডা ও ফ্লুর মৌসুমে।
স্যুপ ও মৌসুমি ফল খান
শীতকাল স্যুপ খাওয়ার সেরা সময়। টমেটো স্যুপ, সবজি বা চিকেন স্যুপ শরীর উষ্ণ রাখার পাশাপাশি পানির ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাতের খাবারের সঙ্গে হালকা স্যুপ যোগ করলে আলাদা করে বেশি পানি পান করতে হয় না। এতে হজমেও সুবিধা হয় এবং শীতের সময় ভারী খাবার খাওয়ার ফলে যে অস্বস্তি তৈরি হয়, তা কমে।

পানিশূন্যতা এড়াতে শীতকালে মৌসুমি ফল খাওয়ার দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। কমলা, মৌসুমি লেবু ও লাল গাজরের মতো রসাল ফল স্বাভাবিকভাবে শরীরে পানি জোগায় এবং একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ সরবরাহ করে। এসব ফল খেলে একদিকে যেমন শরীরে পানির ভারসাম্য থাকে, অন্যদিকে তেমনই অপ্রয়োজনীয় ক্ষুধা কমে এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস গড়ে ওঠে।
ইলেকট্রোলাইটের দিকেও নজর দিন
শুধু পানি পান করাই যথেষ্ট নয়, শরীরে তরলের ভারসাম্য ঠিক রাখতে দরকার সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামের মতো ইলেকট্রোলাইট। শীতে আমরা অনেক সময় বিষয়টি ভুলে যাই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রয়োজনে ইলেকট্রোলাইট পাউডার বা ট্যাবলেট পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে ক্লান্তি কমে এবং কর্মক্ষমতা বাড়ে।
পানির জন্য রিমাইন্ডার সেট করুন
কাজের চাপ, ছুটির ব্যস্ততা বা সপ্তাহের অলস ছুটির দিন পানি পান ভুলে যাওয়া খুব স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনে রিমাইন্ডার বা অ্যালার্ম সেট করা বেশ কাজে দেয়। পুষ্টিবিদ পূজা কেডিয়া বলেন, মজার নাম দিয়ে অ্যালার্ম সেট করলে সেটি মনে করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মনও ভালো করে। দিনে নির্দিষ্ট সময়ে অ্যালার্ম দিলে অজান্তেই পানি পানের লক্ষ্য পূরণ হয়ে যায়।
শীতের ঠান্ডায় তৃষ্ণা কম লাগলেও শরীরের পানির প্রয়োজন কমে না। গরম পানীয়, স্যুপ, ফল আর সামান্য সচেতনতার মাধ্যমেই শীতজুড়ে সুস্থ ও সতেজ থাকা সম্ভব।
সূত্র: হেলথশট

আমরা এক ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে বাস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব টের পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতায় সরাসরি ভূমিকা রাখা উন্নত দেশগুলোও। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট কঠিনতর হয়ে উঠছে।
১৭ আগস্ট ২০২২
গরুর মাংস তো নানাভাবে খেয়েছেন। বাঁধাকপির এই মৌসুমে সেটি দিয়েই রেঁধে দেখুন। স্বাদ তো বদলাবেই, একটু অন্য রকম খাবারও খাওয়া হবে। আপনাদের জন্য বাঁধাকপি দিয়ে গরুর মাংসের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।...
১ ঘণ্টা আগে
সম্প্রতি একটি ঘটনা মোটামুটি সবাইকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। গত সোমবার সকালে মোহাম্মদপুরে একটি বাড়িতে মা-মেয়ে খুন হন গৃহকর্মীর হাতে। শুধু এমন ঘটনা নয়, গৃহকর্মী খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে পালানোর ঘটনাও প্রায়ই শোনা যায়।
২১ ঘণ্টা আগে
কখনো ভেবে দেখেছেন, আপনার প্রতিদিন খাওয়া এই খাবারগুলো বৈশ্বিক মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে? টেস্ট অ্যাটলাসের ‘বিশ্বের সেরা ১০০ রন্ধনশৈলী ২০২৫-২০২৬’ এর র্যাঙ্কিং সেই প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বজুড়ে খাদ্যরসিকদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রন্ধনশৈলী।...
১ দিন আগেকাশফিয়া আলম ঝিলিক, ঢাকা

পরোটা-কিমা কিংবা সন্ধ্যাবেলার চায়ের সঙ্গী গরম-গরম বাকরখানি। কখনো ভেবে দেখেছেন, আপনার প্রতিদিন খাওয়া এই খাবারগুলো বৈশ্বিক মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে? টেস্ট অ্যাটলাসের ‘বিশ্বের সেরা ১০০ রন্ধনশৈলী ২০২৫-২০২৬’ এর র্যাঙ্কিং সেই প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বজুড়ে খাদ্যরসিকদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রন্ধনশৈলী।
টেস্ট অ্যাটলাসের সেরা ১০০ রন্ধনশৈলীর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষাটতম। এই তালিকা শুধু একটি র্যাঙ্কিং নয়, এটি একটি দেশের প্রাচীন, মসলাদার এবং আবেগঘন খাবারের গল্প। যে গল্পগুলো এশিয়া মহাদেশের ভারত থেকে জাপান হয়ে ভিয়েতনাম পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে এই গল্পের একটি বিশেষ অংশজুড়ে আছে আমাদের নিজস্ব খাদ্যসংস্কৃতি, যা বহুকালের ইতিহাস ও বৈচিত্র্য বহন করে। আন্তর্জাতিক সমালোচকদের চোখে কেমন ছিল আমাদের এই স্বাদের যাত্রা এবং কোন কোন খাবার পেল ‘মাস্ট ট্রাই’ তকমা? চারটি খাবারকে মাস্ট ট্রাই তকমা দেওয়া হয়েছে। তালিকার প্রথমে আছে চমচম, এরপর কিমা, তারপর টিক্কা, আরও আছে পরোটা এবং শেষে বাকরখানি।

তালিকায় পুরো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খাবারের নাম ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ্য করা হয়েছে। সেখানে স্থান পেয়েছে এশিয়া মহাদেশের ২১টি দেশের খাবার। বাংলাদেশসহ তালিকায় স্থান পাওয়া দেশগুলো হলো জাপান, ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, লেবানন, ফিলিপাইন, ইরাক, ফিলিস্তিন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, আফগানিস্তান, মালয়েশিয়া, সিরিয়া, জর্জিয়া, কাতার, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান।
পূর্ব এশীয়র জাদু

এই অঞ্চলে সুস্বাদু ‘উমামি’ ফ্লেভার এবং ভাত-নুডলসের ব্যবহার প্রধান। জাপান ও চীনের রন্ধনশৈলী বিশ্বজুড়ে খাদ্যপ্রেমীদের কাছে অত্যন্ত সমাদৃত। তালিকায় প্রথম এশীয় দেশ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে জাপানিজ রন্ধনশৈলী। তালিকায় তাদের অবস্থান ষষ্ঠ। স্বাদের সূক্ষ্মতা এবং উপকরণের বিশুদ্ধতা জাপানি খাবারের মূল আকর্ষণ। দেশটির ‘মাস্ট ট্রাই’ খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে ওয়াগিউ, আকামি টুনা, হামামাৎসু গিয়োজা, নেগিতোরোডন ও ওতোরো নিগিরি সুশি। বিস্তৃত বৈচিত্র্য এবং আঞ্চলিক বিশেষত্বের জন্য পরিচিত চীনা রন্ধনশৈলীর স্থান অষ্টম। তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো হলো ঝেংজিয়াও, লানঝো লামিয়ান, শেং চৌ, ইয়ুশিয়ং ও সিউ মেই। গাঁজানো বা ফার্মেন্টেড খাবার, মসলাদার সস এবং গ্রিলড মাংসের জন্য কোরিয়ান খাবার পরিচিত। উনিশতম অবস্থানে থাকা এই দেশের রন্ধনশৈলীতে বিখ্যাত পদগুলো হলো গেজাং, চিকেন, বানচান, গালবি ও ইয়ুকহো।
কারি, ডাল এবং রুটিনির্ভর দক্ষিণ এশীয়
এই অঞ্চলের খাবারগুলো মসলার জটিল মিশ্রণ ও গভীর স্বাদের জন্য বিখ্যাত। তালিকায় ১৩তম অবস্থানে থাকা ভারতীয় রন্ধনশৈলীর অঞ্চলভেদে বৈচিত্র্য থাকলেও তাদের মূল বৈশিষ্ট্য হলো সুগন্ধি মসলার ব্যবহার। দেশটির মাস্ট ট্রাই খাবারের তালিকায় রয়েছে বাটার গার্লিক নান, অমৃতসরি কুলচা, গরমমসলা, পরোটা ও মুথিয়া। ৬২তম স্থানে থাকা শ্রীলঙ্কার রন্ধনশৈলী নারকেল দুধ, সামুদ্রিক খাবার এবং শ্রীলঙ্কার নিজস্ব মসলার জন্য জনপ্রিয়। তাদের সেরা পদগুলোর মধ্যে রয়েছে সিলন সিনামন, বাত কুলু বাধো, কার্ড অ্যান্ড ট্রেকেল, কারি লিভস (বা কারি পাতা) ও কুকুল মাস কারি। ৭৩তম স্থানে থাকা পাকিস্তানি রন্ধনশৈলী ভারী গ্রিলড মাংস, রুটি এবং সুগন্ধি বিরিয়ানির জন্য পরিচিত। মাস্ট ট্রাই খাবার হলো কিমা, মুরগ কারাহি, বাসমতী, পরোটা ও চাপলি কাবাব।
দক্ষিণ-পূর্ব এশীয়
এই অঞ্চলের রন্ধনশৈলীতে তাজা গুল্ম, লেমন গ্রাস এবং টক-মিষ্টি-ঝাল স্বাদের একটি নিখুঁত ভারসাম্য দেখা যায়। তালিকায় দশম স্থানে আছে ইন্দোনেশিয়ান রন্ধনশৈলী। দেশটির বিভিন্ন দ্বীপের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম নাসি পাডাং, বাওয়াং গোরেং, সাতে কাম্বিং, সিওমাই ও সতো বেতাউই। এদিকে টাটকা উপকরণ এবং হালকা স্বাদের জন্য ভিয়েতনামের খাবার জনপ্রিয়। ১৬তম স্থানে থাকা এই দেশের সেরা পদগুলো হলো বো নুং জ্যাম, বান মি, চা কা লা ভং, মি কোয়াং ও থিত খো টাউ।

তালিকার ২৪তম স্থানে আছে থাই রন্ধনশৈলী। এর পরেই আছে ফিলিপাইন। এরপর ২৯তম স্থানে আছে মালয়েশিয়া, ৯০তম স্থানে সিঙ্গাপুর ও ৯৬তম স্থানে আছে লাওসের খাবার। থাই খাবারের মূল আকর্ষণ হলো এর সুষম স্বাদের মিশ্রণ। টক ও নোনতা স্বাদের প্রাধান্য দেখা যায় ফিলিপাইনের খাবারে। মালয়, চীনা ও ভারতীয় স্বাদের মিশ্রণ পাওয়া যায় মালয়েশিয়ান রন্ধনশৈলীতে। সিঙ্গাপুরের রন্ধনশৈলীতে বহুজাতিক প্রভাব স্পষ্ট। লাওসের খাবার প্রধানত স্টিকি রাইস, তাজা ভেষজ এবং লাব নামক মাংসের সালাদের জন্য পরিচিত।
মধ্যপ্রাচ্য ও লেভান্টাইন
কাবাব, রুটি, দই এবং বিশেষ মসলার মিশ্রণের জন্য এই অঞ্চলের খাবার বিখ্যাত। তালিকায় ৩৭তম স্থানে আছে ফিলিস্তিন রন্ধনশৈলী। যেখানে প্রায়শই দানাশস্য, জলপাই তেল এবং স্থানীয় মসলার ব্যবহার দেখা যায়। তালিকায় ৪২তম স্থানে থাকা ইরানি রন্ধনশৈলীর মূল বৈশিষ্ট্য ভাত—বিশেষত জাফরান দেওয়া চেলো, মাংসের স্টু এবং শুকনো ফলের ব্যবহার। লেভান্টাইন স্বাদের এক চমৎকার উদাহরণ সিরিয়ান খাবার। তালিকায় তাদের স্থান ৪৫তম। ৭১তম স্থানে থাকা ইরাকি রন্ধনশৈলী প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতার উত্তরাধিকার বহনকারী ভারী ও পুষ্টিকর খাবার। মধ্য এশীয় এবং ভারতীয় প্রভাবের মিশ্রণ আছে আফগান রন্ধনশৈলীতে। তালিকায় তাদের স্থান ৭৪তম। তালিকার ৯৯তম দেশটির নাম কাতার।
মধ্য এশিয়া ও ককেশাস
ঐতিহ্যবাহী গ্রিলড খাবার, ডাম্পলিং এবং দুধ দিয়ে তৈরি খাবারের ব্যবহার এই অঞ্চলের রন্ধনশৈলীতে গুরুত্বপূর্ণ। তালিকায় ৮৭তম স্থানে আছে আর্মেনিয়ান রন্ধনশৈলী। ককেশাস অঞ্চলের প্রাচীন এই রন্ধনশৈলীতে রুটি, কাবাব এবং ডাম্পলিং উল্লেখযোগ্য। ৯৮তম স্থানে আছে কাজাখস্তানি রন্ধনশৈলী। মধ্য এশীয় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার মাংস, দুধ দিয়ে তৈরি খাবার এবং মাংসের পদ দেশটির প্রধান আকর্ষণ। তাদের সেরা পদগুলোর মধ্যে রয়েছে সামসা, শুজিক, লাগমান, কেসপে ও বাউরসাক।
সূত্র: টেস্ট অ্যাটলাস

পরোটা-কিমা কিংবা সন্ধ্যাবেলার চায়ের সঙ্গী গরম-গরম বাকরখানি। কখনো ভেবে দেখেছেন, আপনার প্রতিদিন খাওয়া এই খাবারগুলো বৈশ্বিক মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে? টেস্ট অ্যাটলাসের ‘বিশ্বের সেরা ১০০ রন্ধনশৈলী ২০২৫-২০২৬’ এর র্যাঙ্কিং সেই প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। র্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বজুড়ে খাদ্যরসিকদের পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রন্ধনশৈলী।
টেস্ট অ্যাটলাসের সেরা ১০০ রন্ধনশৈলীর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষাটতম। এই তালিকা শুধু একটি র্যাঙ্কিং নয়, এটি একটি দেশের প্রাচীন, মসলাদার এবং আবেগঘন খাবারের গল্প। যে গল্পগুলো এশিয়া মহাদেশের ভারত থেকে জাপান হয়ে ভিয়েতনাম পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে এই গল্পের একটি বিশেষ অংশজুড়ে আছে আমাদের নিজস্ব খাদ্যসংস্কৃতি, যা বহুকালের ইতিহাস ও বৈচিত্র্য বহন করে। আন্তর্জাতিক সমালোচকদের চোখে কেমন ছিল আমাদের এই স্বাদের যাত্রা এবং কোন কোন খাবার পেল ‘মাস্ট ট্রাই’ তকমা? চারটি খাবারকে মাস্ট ট্রাই তকমা দেওয়া হয়েছে। তালিকার প্রথমে আছে চমচম, এরপর কিমা, তারপর টিক্কা, আরও আছে পরোটা এবং শেষে বাকরখানি।

তালিকায় পুরো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খাবারের নাম ও বৈশিষ্ট্য উল্লেখ্য করা হয়েছে। সেখানে স্থান পেয়েছে এশিয়া মহাদেশের ২১টি দেশের খাবার। বাংলাদেশসহ তালিকায় স্থান পাওয়া দেশগুলো হলো জাপান, ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, লেবানন, ফিলিপাইন, ইরাক, ফিলিস্তিন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, আফগানিস্তান, মালয়েশিয়া, সিরিয়া, জর্জিয়া, কাতার, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান।
পূর্ব এশীয়র জাদু

এই অঞ্চলে সুস্বাদু ‘উমামি’ ফ্লেভার এবং ভাত-নুডলসের ব্যবহার প্রধান। জাপান ও চীনের রন্ধনশৈলী বিশ্বজুড়ে খাদ্যপ্রেমীদের কাছে অত্যন্ত সমাদৃত। তালিকায় প্রথম এশীয় দেশ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে জাপানিজ রন্ধনশৈলী। তালিকায় তাদের অবস্থান ষষ্ঠ। স্বাদের সূক্ষ্মতা এবং উপকরণের বিশুদ্ধতা জাপানি খাবারের মূল আকর্ষণ। দেশটির ‘মাস্ট ট্রাই’ খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে ওয়াগিউ, আকামি টুনা, হামামাৎসু গিয়োজা, নেগিতোরোডন ও ওতোরো নিগিরি সুশি। বিস্তৃত বৈচিত্র্য এবং আঞ্চলিক বিশেষত্বের জন্য পরিচিত চীনা রন্ধনশৈলীর স্থান অষ্টম। তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো হলো ঝেংজিয়াও, লানঝো লামিয়ান, শেং চৌ, ইয়ুশিয়ং ও সিউ মেই। গাঁজানো বা ফার্মেন্টেড খাবার, মসলাদার সস এবং গ্রিলড মাংসের জন্য কোরিয়ান খাবার পরিচিত। উনিশতম অবস্থানে থাকা এই দেশের রন্ধনশৈলীতে বিখ্যাত পদগুলো হলো গেজাং, চিকেন, বানচান, গালবি ও ইয়ুকহো।
কারি, ডাল এবং রুটিনির্ভর দক্ষিণ এশীয়
এই অঞ্চলের খাবারগুলো মসলার জটিল মিশ্রণ ও গভীর স্বাদের জন্য বিখ্যাত। তালিকায় ১৩তম অবস্থানে থাকা ভারতীয় রন্ধনশৈলীর অঞ্চলভেদে বৈচিত্র্য থাকলেও তাদের মূল বৈশিষ্ট্য হলো সুগন্ধি মসলার ব্যবহার। দেশটির মাস্ট ট্রাই খাবারের তালিকায় রয়েছে বাটার গার্লিক নান, অমৃতসরি কুলচা, গরমমসলা, পরোটা ও মুথিয়া। ৬২তম স্থানে থাকা শ্রীলঙ্কার রন্ধনশৈলী নারকেল দুধ, সামুদ্রিক খাবার এবং শ্রীলঙ্কার নিজস্ব মসলার জন্য জনপ্রিয়। তাদের সেরা পদগুলোর মধ্যে রয়েছে সিলন সিনামন, বাত কুলু বাধো, কার্ড অ্যান্ড ট্রেকেল, কারি লিভস (বা কারি পাতা) ও কুকুল মাস কারি। ৭৩তম স্থানে থাকা পাকিস্তানি রন্ধনশৈলী ভারী গ্রিলড মাংস, রুটি এবং সুগন্ধি বিরিয়ানির জন্য পরিচিত। মাস্ট ট্রাই খাবার হলো কিমা, মুরগ কারাহি, বাসমতী, পরোটা ও চাপলি কাবাব।
দক্ষিণ-পূর্ব এশীয়
এই অঞ্চলের রন্ধনশৈলীতে তাজা গুল্ম, লেমন গ্রাস এবং টক-মিষ্টি-ঝাল স্বাদের একটি নিখুঁত ভারসাম্য দেখা যায়। তালিকায় দশম স্থানে আছে ইন্দোনেশিয়ান রন্ধনশৈলী। দেশটির বিভিন্ন দ্বীপের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলোর মধ্যে অন্যতম নাসি পাডাং, বাওয়াং গোরেং, সাতে কাম্বিং, সিওমাই ও সতো বেতাউই। এদিকে টাটকা উপকরণ এবং হালকা স্বাদের জন্য ভিয়েতনামের খাবার জনপ্রিয়। ১৬তম স্থানে থাকা এই দেশের সেরা পদগুলো হলো বো নুং জ্যাম, বান মি, চা কা লা ভং, মি কোয়াং ও থিত খো টাউ।

তালিকার ২৪তম স্থানে আছে থাই রন্ধনশৈলী। এর পরেই আছে ফিলিপাইন। এরপর ২৯তম স্থানে আছে মালয়েশিয়া, ৯০তম স্থানে সিঙ্গাপুর ও ৯৬তম স্থানে আছে লাওসের খাবার। থাই খাবারের মূল আকর্ষণ হলো এর সুষম স্বাদের মিশ্রণ। টক ও নোনতা স্বাদের প্রাধান্য দেখা যায় ফিলিপাইনের খাবারে। মালয়, চীনা ও ভারতীয় স্বাদের মিশ্রণ পাওয়া যায় মালয়েশিয়ান রন্ধনশৈলীতে। সিঙ্গাপুরের রন্ধনশৈলীতে বহুজাতিক প্রভাব স্পষ্ট। লাওসের খাবার প্রধানত স্টিকি রাইস, তাজা ভেষজ এবং লাব নামক মাংসের সালাদের জন্য পরিচিত।
মধ্যপ্রাচ্য ও লেভান্টাইন
কাবাব, রুটি, দই এবং বিশেষ মসলার মিশ্রণের জন্য এই অঞ্চলের খাবার বিখ্যাত। তালিকায় ৩৭তম স্থানে আছে ফিলিস্তিন রন্ধনশৈলী। যেখানে প্রায়শই দানাশস্য, জলপাই তেল এবং স্থানীয় মসলার ব্যবহার দেখা যায়। তালিকায় ৪২তম স্থানে থাকা ইরানি রন্ধনশৈলীর মূল বৈশিষ্ট্য ভাত—বিশেষত জাফরান দেওয়া চেলো, মাংসের স্টু এবং শুকনো ফলের ব্যবহার। লেভান্টাইন স্বাদের এক চমৎকার উদাহরণ সিরিয়ান খাবার। তালিকায় তাদের স্থান ৪৫তম। ৭১তম স্থানে থাকা ইরাকি রন্ধনশৈলী প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতার উত্তরাধিকার বহনকারী ভারী ও পুষ্টিকর খাবার। মধ্য এশীয় এবং ভারতীয় প্রভাবের মিশ্রণ আছে আফগান রন্ধনশৈলীতে। তালিকায় তাদের স্থান ৭৪তম। তালিকার ৯৯তম দেশটির নাম কাতার।
মধ্য এশিয়া ও ককেশাস
ঐতিহ্যবাহী গ্রিলড খাবার, ডাম্পলিং এবং দুধ দিয়ে তৈরি খাবারের ব্যবহার এই অঞ্চলের রন্ধনশৈলীতে গুরুত্বপূর্ণ। তালিকায় ৮৭তম স্থানে আছে আর্মেনিয়ান রন্ধনশৈলী। ককেশাস অঞ্চলের প্রাচীন এই রন্ধনশৈলীতে রুটি, কাবাব এবং ডাম্পলিং উল্লেখযোগ্য। ৯৮তম স্থানে আছে কাজাখস্তানি রন্ধনশৈলী। মধ্য এশীয় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার মাংস, দুধ দিয়ে তৈরি খাবার এবং মাংসের পদ দেশটির প্রধান আকর্ষণ। তাদের সেরা পদগুলোর মধ্যে রয়েছে সামসা, শুজিক, লাগমান, কেসপে ও বাউরসাক।
সূত্র: টেস্ট অ্যাটলাস

আমরা এক ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ পৃথিবীতে বাস করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব টের পাচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতায় সরাসরি ভূমিকা রাখা উন্নত দেশগুলোও। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট কঠিনতর হয়ে উঠছে।
১৭ আগস্ট ২০২২
গরুর মাংস তো নানাভাবে খেয়েছেন। বাঁধাকপির এই মৌসুমে সেটি দিয়েই রেঁধে দেখুন। স্বাদ তো বদলাবেই, একটু অন্য রকম খাবারও খাওয়া হবে। আপনাদের জন্য বাঁধাকপি দিয়ে গরুর মাংসের রেসিপি ও ছবি পাঠিয়েছেন রন্ধনশিল্পী আফরোজা খানম মুক্তা।...
১ ঘণ্টা আগে
সম্প্রতি একটি ঘটনা মোটামুটি সবাইকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। গত সোমবার সকালে মোহাম্মদপুরে একটি বাড়িতে মা-মেয়ে খুন হন গৃহকর্মীর হাতে। শুধু এমন ঘটনা নয়, গৃহকর্মী খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে পালানোর ঘটনাও প্রায়ই শোনা যায়।
২১ ঘণ্টা আগে
শুষ্ক শীতের বাতাস শরীর থেকে পানি আরও বেশি বের করে নেয়। ফলে ত্বক শুষ্ক হয়, শক্তি কমে যায় এবং হজমেও সমস্যা দেখা দেয়। পর্যাপ্ত পানি পান শীতে বিপাকক্রিয়া ঠিক রাখে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীর সুস্থ রাখে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, শীতেও সহজ কিছু অভ্যাসে শরীরে পানির ভারসাম্য রাখা সম্ভব।...
১ দিন আগে