Ajker Patrika

প্রথম বিজেএসেই সহকারী জজ অর্ণ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী শান্ত দেব রায় অর্ণ। যিনি ১৭তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। প্রথম বিজেএসেই সফল অর্ণের স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়ার। কিন্তু তাঁর পরিবারের ইচ্ছা ছিল ছেলে বড় হয়ে বিচারক হবেন। তাঁর নিরবচ্ছিন্ন অধ্যয়ন, পরিকল্পিত প্রস্তুতি এবং আত্মবিশ্বাস তাঁকে এনে দেয় কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। বিজেএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছেন তিনি। কীভাবে তিনি পরিকল্পনা সাজিয়েছেন, কীভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন, নতুনদের জন্য কী পরামর্শ রাখছেন—তা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন শাহ বিলিয়া জুলফিকার

শাহ বিলিয়া জুলফিকার
শান্ত দেব রায় অর্ণ
শান্ত দেব রায় অর্ণ

বিচারক হওয়ার যাত্রা শুরু যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার সময় শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর। সে কারণে একাডেমিক রেজাল্ট ভালো রাখার চেষ্টা করতেন, পাশাপাশি যুক্ত ছিলেন নানা সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে। তবে তাঁর মা-বাবার ইচ্ছা ছিল, এক দিন তাঁদের ছেলে ম্যাজিস্ট্রেট হবে। মা-বাবার কষ্ট, সংগ্রামের গল্প শুনতে শুনতে শান্তর ভেতরেও একটা ইচ্ছা জন্ম নেয়—তিনিও এক দিন জজ হবেন। এরপর শুরু হয় প্রস্তুতির কঠিন সময়। পরিকল্পিত প্রস্তুতিতে তিনি সফলতাও পেয়েছেন।

প্রিলি, রিটেন ও ভাইভা প্রস্তুতি যেমন ছিল

তিন বন্ধুর গাইডলাইনে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে শান্ত শুরু করেছিলেন জুডিশিয়ারি প্রস্তুতি। শুরুতে তিনি একটি সুনির্দিষ্ট কৌশল তৈরি করেছিলেন। বিজেএসসির সিলেবাস সব সময় চোখের সামনে রেখেছেন এবং পরিকল্পিতভাবে পড়াশোনা করেছেন।

প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি

প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ১০০ নম্বর থাকে। এর মধ্যে ৬০ নম্বর আইন থেকে এবং ৪০ নম্বর জেনারেল পার্ট থেকে আসে। শান্তর প্রথম লক্ষ্য ছিল যেভাবেই হোক পাস নম্বর ৫০ নিশ্চিত করা। সে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছিল সংবিধান, পারিবারিক আইন এবং অপশনাল আইনগুলোতে। যেখান থেকে ৩০ নম্বর আসে। তাঁর লক্ষ্য ছিল এখান থেকে অন্তত ২৭-২৮ নম্বর তোলার। এরপর সিভিল, ক্রিমিনাল এবং সম্পত্তি আইনের অংশ থেকে ২০ নম্বর পাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি। আর জেনারেল অংশ থেকে ১৫-২০ নম্বরের লক্ষ্য ছিল তাঁর।

লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি

লিখিত পরীক্ষার জন্য শান্ত আলাদা কৌশল নিয়েছিলেন। যেহেতু পরীক্ষা টানা কয়েক দিন ধরে চলে, বই থেকে পড়ার সময় সীমিত থাকে। তাই তিনি ছোট ছোট করে নোট করে নিয়েছিলেন, যাতে দ্রুত পড়া সম্ভব হয়। বিশেষ করে তিনি বেয়ার অ্যাক্ট বেশি পড়েছিলেন, যাতে কোনো আইনের ধারা ভুল না হয়।

ভাইভা প্রস্তুতি

ভাইভার জন্য শান্ত পেয়েছিলেন মাত্র এক মাস। এই সময়ের মধ্যে প্রথম ১৫ দিনে সব আইন ভালোভাবে ঝালাই করে নিয়েছিলেন। পাশাপাশি, ভাইভা- ভীতি কাটানোর জন্য নিয়মিত মক ভাইভা দিতেন। রুমমেটরা তাঁর ভাইভা নিতেন, এমনকি বন্ধুদেরও ডেকে আনতেন তাঁকে প্রশ্ন করার জন্য। এই অভিজ্ঞতাগুলো তাঁকে ভাইভা বোর্ডে আত্মবিশ্বাসী হতে অনেক সাহায্য করেছিল।

নতুনদের জন্য শান্তর পরামর্শ

শান্ত বলেন, আইনের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁদের বিচারক হওয়ার স্বপ্ন, তাঁদের উচিত জুডিশিয়ারি-সংক্রান্ত কোর্সগুলো গভীরভাবে পড়া। পারলে নোট করে রাখা উচিত, যা ভবিষ্যতে কাজে আসবে। পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি, গণিতের মতো সাধারণ বিষয়গুলো নিয়মিত চর্চা রাখতে হবে। এগুলো প্রিলিমিনারি ও রিটেন পরীক্ষায় বড় ভূমিকা রাখবে। যাঁরা ভার্সিটির পড়াশোনা শেষ করেছেন, তাঁদের উদ্দেশে শান্ত বলেন, রুটিনমাফিক পড়াশোনায় মনোযোগ দিন। এক মাসের জন্য নির্দিষ্ট কিছু আইন পড়ার পরিকল্পনা করুন। তারপর সেই পরিকল্পনাকে ১০ দিনে ভাগ করুন।। প্রতিদিনের জন্য আলাদা রুটিন বানান, যাতে নির্দিষ্ট বিষয়গুলো শেষ হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত