Ajker Patrika

ভারতবর্ষের ইসলামি স্থাপত্য সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য

আসআদ শাহীন 
কুতুব মিনার, ভারত
কুতুব মিনার, ভারত

ভারতবর্ষের সুবিশাল ভূখণ্ডের প্রতিটি কোনায় ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নানা রূপ। হাজার বছরে বিভিন্ন ধর্ম, সম্প্রদায় ও সভ্যতা এই মাটিতে অমর সব কীর্তি রেখে গেছে। এর মধ্যে মুসলিমদের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য; যা শুধু ইতিহাসের পাতায় নয়, ভৌত সৌন্দর্যের মধ্যেও চির অম্লান হয়ে রয়েছে। ভারতবর্ষে ইসলামি স্থাপত্য নৈপুণ্য, সৌন্দর্য ও অনন্য শিল্পবোধের নিদর্শন বহন করে। পারস্য, তুরস্ক, আরব ও মধ্য এশিয়ার স্থাপত্যশৈলীর মেলবন্ধন ভারতীয় ইসলামি স্থাপত্যকে বিশ্বইতিহাসে বিশেষ স্থান করে দিয়েছে।

সূচনাপর্ব

ভারতে ইসলামি স্থাপত্যের সূচনা হয় দিল্লি সালতানাতের হাত ধরে। ১২০৬ সালে কুতুবউদ্দিন আইবেক দিল্লির মসনদে আরোহণ করেন এবং ইসলামি স্থাপত্যের প্রথম চিহ্ন হিসেবে নির্মাণ করেন কুতুব মিনার। লাল বেলে পাথরের কারুকাজ ও সূক্ষ্ম খোদাইয়ের মাধ্যমে এ মিনার ইসলামি স্থাপত্যের নৈপুণ্যের প্রথম উদাহরণ। কুতুব মিনারের পাশাপাশি কুওয়াতুল-ইসলাম মসজিদ এ সময়ের আরেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যকীর্তি, যা কুতুব মিনারের আশপাশের প্রাচীন স্থাপত্য ও ধ্বংসাবশেষ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছে।

কুওয়াতুল ইসলাম মসজিদ নান্দনিক নকশায় নির্মিত একটি আয়তাকার ইসলামি স্থাপনা, যাকে মুসলিম স্থাপত্যশৈলীতে লিয়ন বলা হয়। এর নির্মাণশৈলীতে আরব-তুর্কি ও ভারতীয় রীতির বিস্ময়কর সমন্বয় ঘটেছে। এ সংমিশ্রণ বিজিত ও বিজয়ীর সহাবস্থানের অনন্য দৃষ্টান্ত। মসজিদের উচ্চতা, সৌন্দর্য, বিশালত্ব প্রকাশে ভারতীয় প্রাচীন স্থাপত্যনিদর্শনের ধ্বংসাবশেষ প্রতিস্থাপিত হয়েছে এই ইসলামি ঐতিহ্যে, নান্দনিক মুনশিয়ানায়।

সুলতানি আমলে ইসলামি স্থাপত্য মূলত ধর্মীয় প্রয়োজনে নির্মাণ করা হতো। মসজিদ, মাদ্রাসা, দরগাহ ও দুর্গগুলো সেই সময়ের প্রধান স্থাপত্য নিদর্শন। পারস্য ও আরব স্থাপত্যের প্রভাব এবং স্থানীয় শিল্পের মিশ্রণে ভারতীয় ইসলামি স্থাপত্য এক নতুন রূপ পেয়েছিল।

মোগল আমল

মোগল সাম্রাজ্যের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে ইসলামি স্থাপত্য তার শৈল্পিক উৎকর্ষের শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছায়। এ সময়ের স্থাপনাগুলো কেবল ধর্মীয় গৌরবই নয়, বরং সম্রাটদের ক্ষমতা ও ব্যক্তিগত রুচির প্রতিফলনও। মোগল স্থাপত্যের সূচনা হয়েছিল বাবরের শাসনামলে। তবে আকবর, জাহাঙ্গীর ও শাহজাহানের শাসনামলে এটি পরিপূর্ণতা অর্জন করে। আকবরের আমলে মোগল স্থাপত্যে ভারতীয় ও পারস্যের শিল্পের সমন্বয় লক্ষ করা যায়। তাঁর স্থাপিত ফতেহপুর সিক্রি বা আগ্রার কেল্লা স্থাপত্যশিল্পের অনন্য শক্তিমান নিদর্শন। অন্যদিকে, শাহজাহানের শাসনামলে মোগল স্থাপত্য শিল্প-গৌরবের চূড়ায় পৌঁছায়। তাঁর আমলে নির্মিত তাজমহল, যা সারা বিশ্বে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে পরিচিত, মোগল স্থাপত্যের সবচেয়ে উজ্জ্বল রত্ন। মোগল আমলের কয়েকটি নিদর্শন—

তাজমহল

সম্রাট শাহজাহানের সৃষ্টি তাজমহলকে বলা হয় মোগল স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। সাদা মার্বেলের এ সমাধি শুধু একটি স্থাপত্য নয়, এটি প্রেমের প্রতীকও। যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত এই স্থাপত্যে পারস্য, তুর্কি এবং ভারতীয় শিল্পের নিখুঁত মেলবন্ধন দেখা যায়। তাজমহলের মার্বেল পাথরে খোদাই করা ফুলেল নকশা এবং কোরআনের আয়াতের ক্যালিগ্রাফি এক অপার্থিব অনুভূতির জন্ম দেয়।

লালবাগ কেল্লা, বাংলাদেশ
লালবাগ কেল্লা, বাংলাদেশ

লাল কেল্লা

শাহজাহানের আরেক অনন্য সৃষ্টি দিল্লির লাল কেল্লা। লাল বেলে পাথরের তৈরি এই দুর্গ কেবল শাসনের প্রতীক নয়, বরং স্থাপত্য সৌন্দর্যেরও দারুণ প্রতিফলন। এর প্রাসাদ, মসজিদ ও উদ্যান মোগল স্থাপত্যের অমূল্য ঐশ্বর্য।

ফতেহপুর সিক্রি ও হুমায়ুনের সমাধি

আকবর নির্মিত ফতেহপুর সিক্রি মোগল স্থাপত্যের আরেক উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। বুলন্দ দরজা, জামে মসজিদ এবং পঞ্চমহলের নকশাশৈলী মুগ্ধ করে যে কাউকেই। অন্যদিকে, হুমায়ুনের সমাধিকে গণ্য করা হয় ভারতবর্ষের প্রথম বাগানসমাধি হিসেবে।

দক্ষিণ ভারত

বুলন্দ দরজা, ভারত
বুলন্দ দরজা, ভারত

উত্তর ভারতের পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতেও মুসলিম শাসনের গভীর প্রভাব পড়েছিল। বিজাপুর, গোলকোন্ডা এবং হায়দরাবাদে ইসলামি স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন পাওয়া যায়। বিজাপুরের গোল গম্বুজ, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম গম্বুজ, স্থাপত্যশৈলীর ক্ষেত্রে এক আশ্চর্য সৃষ্টি। গোলকোন্ডা দুর্গ এবং হায়দরাবাদের চার মিনার দক্ষিণ ভারতের ইসলামি স্থাপত্যের অনন্য রত্ন।

ভারতীয় ইসলামি স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য

ভারতীয় ইসলামি স্থাপত্য কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য বিখ্যাত। যেমন—

গম্বুজ ও মিনার

গম্বুজ ইসলামি স্থাপত্যের মূল আকর্ষণ। এটি মহান আল্লাহর বড়ত্বের প্রতীক। ভারতীয় উপমহাদেশও এর ব্যতীক্রম নয়।

জ্যামিতিক নকশা ও ক্যালিগ্রাফি

ইসলামে প্রাণীর চিত্রায়ণ নিষিদ্ধ থাকার কারণে জ্যামিতিক নকশা এবং আরবি ক্যালিগ্রাফি ইসলামি স্থাপত্যে বহুল ব্যবহৃত হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম স্থাপনাগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়।

শাহ রুকন-ই আলমের সমাধি, পাকিস্তান
শাহ রুকন-ই আলমের সমাধি, পাকিস্তান

জলাশয় ও বাগান

মোগল স্থাপত্যে বাগান ও জলাশয়ের গুরুত্ব ছিল। এটি ইসলামের বেহেশতের ধারণা প্রতিফলিত করে।

ভারতীয় ইসলামি স্থাপত্য শুধু ধর্মীয় পরিচিতি নয়; বরং এটি ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতির অঙ্গ। এই স্থাপত্যশৈলী স্থানীয় শিল্প ও প্রযুক্তিকে সমৃদ্ধ করেছে। পারস্যের গম্বুজ, তুর্কি মিনার এবং ভারতীয় খোদাইয়ের সম্মিলন; এই স্থাপত্যকে বৈশ্বিকভাবে অনন্য করে তুলেছে। এ অঞ্চলে ইসলামি স্থাপত্য আমাদের এক অসামান্য ঐতিহ্য উপহার দিয়েছে, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বিস্ময়ের প্রতীক হয়ে থাকবে। এটি ভারতের বহুত্ববাদী সমাজের এক জীবন্ত নিদর্শন, যা অতীতের গৌরব এবং ভবিষ্যতের অনুপ্রেরণার প্রতীক।

লেখক: গবেষক, উচ্চতর ইসলামি আইন গবেষণা বিভাগ, আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম।

তথ্যঋণ

১. হিন্দি ইসলামি ফন্নে তামির/সাহবা ওয়াহিদ।

২. ইসলামি ফন্নে তামির পার এক নজর/ড. গোলাম মঈনুদ্দিন।

৩. বরসগির মে আউওয়ালিন শাহি তামিরাত/মাহবুব উল্লাহ মুজিব।

৪. ইসলামি ফন্নে তামির হিন্দুস্তান মে/সাইয়েদ হাশেম ফরিদাবাদী

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক পালনে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলাম ডেস্ক 
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত

জীবনে প্রিয়জন হারানো এক অপূরণীয় বেদনা। এই কঠিন মুহূর্তে মানুষ কীভাবে আচরণ করবে, কেমনভাবে শোক প্রকাশ করবে—সেই বিষয়ে ইসলাম দিয়েছে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো—শোক প্রকাশে ভারসাম্য রাখা, কষ্টকে অস্বীকার না করা, আবার সীমালঙ্ঘনও না করা।

ইসলাম এ বিপদে ধৈর্য ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষা দেয়। তবে কান্না করাকে নিষেধ করেনি, বরং তা স্বাভাবিক ও মানবিক অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহও (সা.) কেঁদেছেন তাঁর সন্তান ইবরাহিম (রা.)-এর মৃত্যুর সময়।

সাহাবি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বিস্ময় প্রকাশ করলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘এ কান্না স্নেহ-ভালোবাসার প্রকাশ। আমার হৃদয় বেদনাহত, চোখ দুটো সিক্ত, তবে আমি বলছি সেই কথাই, যা আমার রবকে সন্তুষ্ট করে। ইবরাহিম, তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত।’ (সহিহ বুখারি)

ইসলাম কান্নাকে মানবিক বললেও অতিরিক্ত বিলাপ, উচ্চ স্বরে চিৎকার, গায়ে চপেটাঘাত, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা বা আকুতি-মিনতি করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মৃতের জন্য বিলাপ করা জাহিলি যুগের প্রথা। বিলাপকারী যদি মৃত্যুর আগে তওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের পোশাক ও আলকাতরার চাদর পরানো হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় খালেদা জিয়ার অনন্য কিছু উদ্যোগ

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আজ মঙ্গলবার ভোরে যখন কুয়াশাভেজা প্রকৃতিতে ফজরের আজান ধ্বনিত হচ্ছিল, এর ঠিক কিছু পরেই চিরদিনের জন্য চোখ বুজলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খালেদা জিয়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি শুধু একজন সফল প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন না, বরং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থরক্ষা এবং ইসলামি মূল্যবোধকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম এক বাতিঘর ছিলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধর্মীয় চেতনা ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় আপসহীন ভূমিকা রেখেছেন, খালেদা জিয়ার নাম সেখানে অনেকটা অগ্রভাগেই থাকবে।

খালেদা জিয়া শুধু রাজনীতির ময়দানেই বিচরণ করেননি, তিনি অন্তরে লালন করতেন বাংলাদেশি মুসলিম জাতীয়তাবাদের আদর্শ। গৃহবধূ থেকে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসার দীর্ঘ লড়াইয়ে তিনি সব সময় আলেমসমাজকে পরম মমতায় কাছে টেনে নিয়েছেন।

সংবিধানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও রাষ্ট্রধর্মের সুরক্ষা

১৯৯১ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর যখন নানামুখী রাজনৈতিক চাপ ছিল, তখন খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। ২০০৫ সালের সংসদীয় কার্যবিবরণী সাক্ষ্য দেয়, তিনি বারবার সংসদে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন।

কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার যুগান্তকারী সংস্কার

আলেমসমাজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের হৃদয়ে খালেদা জিয়া অমর হয়ে থাকবেন তাঁর শিক্ষা সংস্কারের জন্য।

  • ফাজিল ও কামিলের স্বীকৃতি: ২০০১-০৬ মেয়াদে ফাজিলকে ডিগ্রি এবং কামিলকে মাস্টার্সের সমমান দিয়ে তিনি মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের মূলধারার সঙ্গে প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেন।
  • কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি: ২০০৫ সালে আলেমদের সঙ্গে বৈঠকের পর ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার ঐতিহাসিক গেজেট প্রকাশ করেন। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাস্তবায়ন অসম্পূর্ণ থাকলেও এটিই ছিল কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাইলফলক।
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ’ অনুষদসহ নতুন নতুন বিভাগ অনুমোদনের মাধ্যমে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষার প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

ধর্মীয় স্থাপনা ও হজ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার

বায়তুল মোকাররম মসজিদের সংস্কার, জাতীয় ঈদগাহের আধুনিকায়ন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম-মুয়াজ্জিন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো ছিল তাঁর নিয়মিত কাজের অংশ। আল্লাহর ওলিদের মাজার রক্ষণাবেক্ষণেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। পাশাপাশি হজযাত্রীদের যাতায়াত সহজ করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে শক্তিশালী করা এবং সৌদি সরকারের সঙ্গে সফল কূটনীতির মাধ্যমে ভিসা সমস্যার সমাধান করেছিলেন তিনি।

ইসলামি অর্থনীতি ও বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব

খালেদা জিয়ার শাসনামলেই বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ও ইসলামি আর্থিক ব্যবস্থা দ্রুত বিস্তৃত হয়। মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে ইসলামি ব্যাংকিংকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে তাঁর সরকার নীতিগত সহায়তা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ওআইসিসহ সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

২০০৫ সালে ইউরোপে নবীজি (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশিত হলে তাঁর সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর নিন্দা জানিয়েছিল।

আজ ফজরের পর তিনি যখন মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন, তখন পেছনে রেখে গেছেন এমন এক কর্মময় জীবন, যা এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের মর্যাদা রক্ষা এবং ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার যে বীজ তিনি বপন করেছিলেন, তা আজ এক বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে।

আল্লাহ তাঁকে তাঁর সকল নেক আমল কবুল করে এবং ভুলত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে যে দোয়া পড়বেন

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মানুষের জন্ম যেমন অবশ্যম্ভাবী, তেমনি তার মৃত্যুও পৃথিবীর এক অমোঘ সত্য। জীবনে চলার পথে যত সাফল্য, ব্যস্ততা বা আকাঙ্ক্ষা থাকুক; মৃত্যুর মুহূর্তে সবকিছু থেমে যায়। ইসলাম এই বাস্তবতাকে অত্যন্ত গভীরভাবে তুলে ধরেছে এবং আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে প্রতিটি প্রাণী একদিন তার প্রভুর কাছে ফিরে যাবে।

মৃত্যু অবধারিত ‎সত্য। তা থেকে পালানোর কোনো পথ নেই। কোনো বস্তু জীবনের অস্তিত্ব লাভ করলে তার মৃত্যু সুনিশ্চিত। কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে।

কেউ যখন মারা যায়, তার মৃত্যুর খবর শুনলে একটি দোয়া পড়তে হয়, দোয়াটি বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৫৬ নম্বর আয়াতে।

দোয়াটি হলো: ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি; ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা।’

দোয়ার অর্থ: ‘আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ, আমাকে আমার এই বিপদে বিনিময় দান করুন এবং আমার জন্য এর চেয়ে উত্তম ব্যবস্থা করে দিন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতকালে কখন তায়াম্মুম করা যাবে, কখন যাবে না

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৮
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ইসলামি শরিয়তে পানি না থাকলে অথবা পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে অজু ও গোসলের বিকল্প হিসেবে তায়াম্মুম করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা যদি পীড়িত হও বা সফরে থাকো বা তোমাদের কেউ শৌচালয় থেকে আসে বা তোমরা স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হও এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে; অর্থাৎ তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করবে। আল্লাহ তোমাদের কষ্ট দিতে চান না; তিনি শুধু তোমাদের পবিত্র করতে এবং তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো।’ (সুরা মায়িদা: ৬)

পবিত্র কোরআনের এই আয়াত এবং সংশ্লিষ্ট হাদিসগুলোর আলোকে ফকিহরা শীতকালে তায়াম্মুমের বিধান সম্পর্কে যে সমাধান দিয়েছেন, তার সারমর্ম নিচে তুলে ধরা হলো:

তায়াম্মুম কখন বৈধ?

যদি প্রচণ্ড ঠান্ডায় পানি ব্যবহার করলে মৃত্যুঝুঁকি থাকে অথবা শরীরের কোনো অঙ্গ অকার্যকর হয়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে, তবে তায়াম্মুম করা যাবে। অসুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে পানি ব্যবহারে রোগ বৃদ্ধি পাওয়ার বা সুস্থ হতে দীর্ঘ সময় লাগার অকাট্য প্রমাণ বা প্রবল ধারণা থাকলে তায়াম্মুম বৈধ।

তায়াম্মুম কখন বৈধ নয়?

ক্ষতি হওয়ার নিশ্চিত বা প্রবল আশঙ্কা না থেকে কেবল সাধারণ ঠান্ডার ভয় বা অলসতাবশত তায়াম্মুম করা জায়েজ নয়। (আল বাহরুর রায়েক: ১/১৪৮, ফাতাওয়া কাজিখান: ১/৫৮)

প্রতিকূলতায় অজুর সওয়াব

আমাদের দেশে সাধারণত যে মাত্রার শীত পড়ে, তাতে পানি ব্যবহার করলে মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি খুব একটা থাকে না। সামান্য কষ্ট হলেও তা সহ্য করে অজু করা ইমানি দৃঢ়তার পরিচয়। এই কষ্টের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা দ্বিগুণ সওয়াব দান করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রচণ্ড ঠান্ডার মৌসুমে যে ব্যক্তি পূর্ণরূপে অজু করবে, তাকে দ্বিগুণ সওয়াব দেওয়া হবে।’ (মাজমাউজ জাওয়ায়িদ)

অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিকূল পরিবেশে পূর্ণরূপে অজু করাকে পাপ মোচন এবং মর্যাদা বৃদ্ধির অন্যতম আমল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। (জামে তিরমিজি)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত