আসআদ শাহীন

লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার জ্ঞানের বাতিঘর। ইসলামের সোনালি যুগে মুসলমানরা কোরআন-হাদিস, ভাষা ও অন্যান্য জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে নিজেদের জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করেন। এরপর গ্রিক, সংস্কৃত ও ফারসি জ্ঞানভান্ডার আরবিতে রূপান্তর করে বিশ্বজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হন। সুতরাং জ্ঞানচর্চার প্রয়োজনে স্বাভাবিকভাবেই অসংখ্য সমৃদ্ধ লাইব্রেরি গড়ে ওঠে মুসলিম বিশ্বে। এখানে অতীতের বিখ্যাত কয়েকটি লাইব্রেরির কথা তুলে ধরা হলো—
বায়তুল হিকমাহ
বায়তুল হিকমাহ আনুমানিক ৭৮০-এর দশকে আব্বাসীয় খলিফা হারুন আল-রশিদ ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। খলিফা হারুন আল-রশিদের পর তাঁর পুত্র খলিফা মামুন আল-রশিদ বায়তুল হিকমাহকে সমৃদ্ধির নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেন এবং বিশ্বের বৃহত্তম গ্রন্থাগারে পরিণত করেন। এতে পর্যবেক্ষণাগার, বিজ্ঞান গবেষণাগার, অনুবাদ কেন্দ্র, মাদ্রাসা ও বড় হলরুম ছিল। খলিফা মামুন আল-রশিদ ভারত, মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আরব, উত্তর আফ্রিকা এবং ইউরোপের খ্রিষ্টান, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদি পণ্ডিত ও চিন্তাবিদদের বাগদাদে আসার এবং বায়তুল হিকমাহ থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বায়তুল হিকমাহ ৪৫০ বছর ধরে বিশ্বের বৃহত্তম গ্রন্থাগারের গৌরব অর্জন করেছিল এবং বর্তমান ব্রিটিশ লাইব্রেরির চেয়েও বড় ছিল।
শাহি লাইব্রেরি কর্ডোবা
কর্ডোবার শাহি লাইব্রেরি ছিল সেই সময়ের অন্যতম বড় লাইব্রেরি। এখানে ৪৪টি ক্যাটালগে বিভক্ত ৪ লাখ বই ছিল। লুবনা নামক একজন মুসলিম নারী এই লাইব্রেরির দায়িত্বে ছিলেন এবং তিনি বিশ্বের প্রথম মহিলা গ্রন্থাগারিক হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ১৮ শতকের খ্রিষ্টান বুদ্ধিজীবী রেইনহার্ট ডজি লিখেছেন, মুসলিম আন্দালুসিয়ায় প্রত্যেক নাগরিক পড়তে ও লিখতে পারত। এটি সেই সময় ছিল, যখন ইউরোপের বাকি অংশে পুরোহিত ছাড়া কেউ পড়তে ও লিখতে পারত না। এখানেই ইবনে রুশদের মতো প্রতিভাধর দার্শনিকের জ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়েছে। তিনি গ্রিক দার্শনিকদের ল্যাটিন পাণ্ডুলিপিগুলো আরবিতে অনুবাদ করেন।
আল-কারাউইয়ান লাইব্রেরি
বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার গৌরব অর্জন করেন ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ আল-ফিহরিয়া। তিনি কুরাইশ বংশোদ্ভূত ছিলেন; তবে তাঁর জন্ম তিউনিসিয়ায়। তিনি একজন ধনী বাবার মেয়ে ছিলেন। তিনি মরক্কো ভ্রমণে এসে এখানে বসবাস শুরু করেন। তাঁর বাবা ও স্বামী দুজনেই ইন্তেকাল করেন। ফাতিমা এবং তাঁর বোন মরিয়ম বাবার উত্তরাধিকার থেকে প্রাপ্ত সম্পদ শিক্ষা ও দাতব্য কাজে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেন। মরিয়ম শহরে একটি বিশাল মসজিদ তৈরি করেন এবং ফাতিমা একটি বড় মাদ্রাসা এবং মাদ্রাসা সংযুক্ত লাইব্রেরি নির্মাণ শুরু করেন, যা ১৮ বছরে সম্পন্ন হয়।
কায়রো লাইব্রেরি
ফাতেমীয় খলিফা আবু মনসুর ১ হাজার খ্রিষ্টাব্দে কায়রোতে একটি বিশাল গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। লাইব্রেরিতে ৪০টি কক্ষ ছিল এবং ২ লাখ পাণ্ডুলিপি ও দুর্লভ নথিপত্র রাখা হয়েছিল। এই লাইব্রেরিতে গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যাবিষয়ক ৬ হাজার বই ছিল। তারিখে তাবারির ১ হাজার ২০০ কপি এবং পবিত্র কোরআনের ২ হাজার ৪০০ কপি এখানে মজুত ছিল। গ্রিক দার্শনিক টলেমি পৃথিবীর একটি গ্লোব তৈরি করেছিলেন, যা এই লাইব্রেরির বাইরে স্থাপন করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, গ্লোবটি এই লাইব্রেরির ১ হাজার ৪০০ বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল।
সিরাজি লাইব্রেরি
পান্নাহ খসরু (ওয়াদুদ আল-দৌলা) ছিলেন বুইদ রাজবংশের আমির (৯৩৪-১০৬২ খ্রিষ্টাব্দ)। তিনি দশম শতাব্দীতে পারস্যের একজন শাসক ছিলেন। যিনি বাগদাদের আব্বাসীয় খিলাফতের অধীন হলেও স্বাধীনভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। তিনি ইস্পাহানে একটি হাসপাতাল এবং সিরাজে ইসলামের শুরু থেকে তাঁর সময় পর্যন্ত লেখা বইসহ একটি বিশাল গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে, এই গ্রন্থাগারের কেবিনেটগুলো সোনার কারুকাজ দিয়ে সজ্জিত ছিল এবং শুধু নির্দিষ্ট কিছু স্কলারকে এখানে অধ্যয়নের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
সমরকন্দ ও বুখারার লাইব্রেরি
৭৫১ খ্রিষ্টাব্দে মধ্য এশিয়ায় প্রথম কাগজকল প্রতিষ্ঠিত হয়। বুখারা ও সমরকান্দেও মধ্যযুগে হাজার হাজার মাদ্রাসা ছিল এবং প্রতিটি মাদ্রাসায় একটি লাইব্রেরি সংযুক্ত ছিল। সামানির মুসলিম শাসক বুখারার সুলতান আমির নুহ ইবনে মনসুর (৯৭৬-৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দ) বুখারা, সমরকন্দ ও মাওয়ারাউন নাহারে (উজবেকিস্তান) ৪০০টির বেশি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি সেই যুগ ছিল, যখন বই হাতে লেখা, কাগজ ও কালি ছিল দুর্লভ এবং ব্যয়বহুল। বিখ্যাত আলকেমিস্ট, চিকিৎসক ইবনে সিনা, সহি বুখারির রচয়িতা ইমাম বুখারি, আল-বিরুনিসহ হাজার হাজার আলেম ও বিজ্ঞানী এই গ্রন্থাগার দ্বারা ধন্য হয়েছেন। চেঙ্গিস খান এবং মঙ্গোলরা এই লাইব্রেরি ধ্বংস করেছিল।
লাইব্রেরি অব গজনি
সুলতান মাহমুদ গজনভী (৯৯৮-১০৩০ খ্রিষ্টাব্দ), যিনি ভারতে ১৭ বার আক্রমণ করেছিলেন। তিনি জ্ঞান ও সাহিত্যের একজন মহান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি নিজ হাতে শাহি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন, যা বিশ্বের অন্যতম সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। এই শাহি গ্রন্থাগারে লক্ষাধিক বই ছিল। বিখ্যাত কাব্যসংকলন ‘শাহনামা-ই ফিরদৌসী’ তাঁরই আদেশে কবি ফিরদৌসী (১০২০ খ্রিষ্টাব্দ) লিখেছিলেন। যদিও ফিরদৌসী আর্থিক কারণে রাগান্বিত হয়ে তাঁকে ব্যঙ্গও করেন। আল-বিরুনি এবং আল-ফারাবির মতো পণ্ডিতেরাও তাঁর দরবারে আসা-যাওয়া করতেন।
মুঘল রাজবংশের গ্রন্থাগার
ভারতে প্রথম মুঘল গ্রন্থাগারটি সম্রাট বাবর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। যখন তিনি লুধি সাম্রাজ্যের লাহোর প্রদেশের গভর্নর গাজী খানকে পরাজিত করেন, তখন তাঁর গ্রন্থাগারটি দখল করেন। হুমায়ুনও তাঁর ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ‘শেরমন্ডল’ স্থাপন করেছিলেন, যেখান থেকে তিনি হোঁচট খেয়ে নিচে পড়ে মারা যান। বাদশা জালালুদ্দিন আকবর (১৫৪৩-১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দ) নিজে নিরক্ষর ছিলেন, কিন্তু তিনি ৬৪ লাখ টাকা খরচ করে ফতেপুর সিক্রিতে একটি শাহি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। লাইব্রেরিটি আগ্রা দুর্গের বড় হলঘরে অবস্থিত ছিল। একইভাবে সম্রাট জাহাঙ্গীর ও আওরঙ্গজেব আলমগীরের গ্রন্থাগারগুলো ছিল দুর্লভ সংগ্রহে ঠাসা।
অটোমান গ্রেট লাইব্রেরি
ওসমানী আমলে একটি শিক্ষা বিভাগ ছিল, যা গ্রন্থাগারগুলোর বিষয়াবলি পর্যবেক্ষণ করত। বাগদাদ, দামেস্ক, ইস্তাম্বুল, কায়রো, মক্কা, জেরুজালেমসহ প্রতিটি শহরে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার বিদ্যমান ছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তোপকাপি লাইব্রেরি, যাতে ১৪ হাজার অত্যন্ত দুর্লভ পাণ্ডুলিপি ছিল, যার মধ্যে পবিত্র কোরআনের কপি ছিল, যা হজরত উসমান (রা.)-এর শাসনামলে লেখা হয়েছিল। কনস্টান্টিনোপলের রাজপ্রাসাদের লাইব্রেরিতে লক্ষাধিক বই সংরক্ষিত ছিল।
লেখক: শিক্ষার্থী, উচ্চতর ইসলামি আইন গবেষণা বিভাগ, আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম।

লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার জ্ঞানের বাতিঘর। ইসলামের সোনালি যুগে মুসলমানরা কোরআন-হাদিস, ভাষা ও অন্যান্য জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে নিজেদের জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করেন। এরপর গ্রিক, সংস্কৃত ও ফারসি জ্ঞানভান্ডার আরবিতে রূপান্তর করে বিশ্বজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হন। সুতরাং জ্ঞানচর্চার প্রয়োজনে স্বাভাবিকভাবেই অসংখ্য সমৃদ্ধ লাইব্রেরি গড়ে ওঠে মুসলিম বিশ্বে। এখানে অতীতের বিখ্যাত কয়েকটি লাইব্রেরির কথা তুলে ধরা হলো—
বায়তুল হিকমাহ
বায়তুল হিকমাহ আনুমানিক ৭৮০-এর দশকে আব্বাসীয় খলিফা হারুন আল-রশিদ ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। খলিফা হারুন আল-রশিদের পর তাঁর পুত্র খলিফা মামুন আল-রশিদ বায়তুল হিকমাহকে সমৃদ্ধির নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেন এবং বিশ্বের বৃহত্তম গ্রন্থাগারে পরিণত করেন। এতে পর্যবেক্ষণাগার, বিজ্ঞান গবেষণাগার, অনুবাদ কেন্দ্র, মাদ্রাসা ও বড় হলরুম ছিল। খলিফা মামুন আল-রশিদ ভারত, মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আরব, উত্তর আফ্রিকা এবং ইউরোপের খ্রিষ্টান, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদি পণ্ডিত ও চিন্তাবিদদের বাগদাদে আসার এবং বায়তুল হিকমাহ থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বায়তুল হিকমাহ ৪৫০ বছর ধরে বিশ্বের বৃহত্তম গ্রন্থাগারের গৌরব অর্জন করেছিল এবং বর্তমান ব্রিটিশ লাইব্রেরির চেয়েও বড় ছিল।
শাহি লাইব্রেরি কর্ডোবা
কর্ডোবার শাহি লাইব্রেরি ছিল সেই সময়ের অন্যতম বড় লাইব্রেরি। এখানে ৪৪টি ক্যাটালগে বিভক্ত ৪ লাখ বই ছিল। লুবনা নামক একজন মুসলিম নারী এই লাইব্রেরির দায়িত্বে ছিলেন এবং তিনি বিশ্বের প্রথম মহিলা গ্রন্থাগারিক হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ১৮ শতকের খ্রিষ্টান বুদ্ধিজীবী রেইনহার্ট ডজি লিখেছেন, মুসলিম আন্দালুসিয়ায় প্রত্যেক নাগরিক পড়তে ও লিখতে পারত। এটি সেই সময় ছিল, যখন ইউরোপের বাকি অংশে পুরোহিত ছাড়া কেউ পড়তে ও লিখতে পারত না। এখানেই ইবনে রুশদের মতো প্রতিভাধর দার্শনিকের জ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়েছে। তিনি গ্রিক দার্শনিকদের ল্যাটিন পাণ্ডুলিপিগুলো আরবিতে অনুবাদ করেন।
আল-কারাউইয়ান লাইব্রেরি
বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার গৌরব অর্জন করেন ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ আল-ফিহরিয়া। তিনি কুরাইশ বংশোদ্ভূত ছিলেন; তবে তাঁর জন্ম তিউনিসিয়ায়। তিনি একজন ধনী বাবার মেয়ে ছিলেন। তিনি মরক্কো ভ্রমণে এসে এখানে বসবাস শুরু করেন। তাঁর বাবা ও স্বামী দুজনেই ইন্তেকাল করেন। ফাতিমা এবং তাঁর বোন মরিয়ম বাবার উত্তরাধিকার থেকে প্রাপ্ত সম্পদ শিক্ষা ও দাতব্য কাজে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেন। মরিয়ম শহরে একটি বিশাল মসজিদ তৈরি করেন এবং ফাতিমা একটি বড় মাদ্রাসা এবং মাদ্রাসা সংযুক্ত লাইব্রেরি নির্মাণ শুরু করেন, যা ১৮ বছরে সম্পন্ন হয়।
কায়রো লাইব্রেরি
ফাতেমীয় খলিফা আবু মনসুর ১ হাজার খ্রিষ্টাব্দে কায়রোতে একটি বিশাল গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। লাইব্রেরিতে ৪০টি কক্ষ ছিল এবং ২ লাখ পাণ্ডুলিপি ও দুর্লভ নথিপত্র রাখা হয়েছিল। এই লাইব্রেরিতে গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যাবিষয়ক ৬ হাজার বই ছিল। তারিখে তাবারির ১ হাজার ২০০ কপি এবং পবিত্র কোরআনের ২ হাজার ৪০০ কপি এখানে মজুত ছিল। গ্রিক দার্শনিক টলেমি পৃথিবীর একটি গ্লোব তৈরি করেছিলেন, যা এই লাইব্রেরির বাইরে স্থাপন করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, গ্লোবটি এই লাইব্রেরির ১ হাজার ৪০০ বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল।
সিরাজি লাইব্রেরি
পান্নাহ খসরু (ওয়াদুদ আল-দৌলা) ছিলেন বুইদ রাজবংশের আমির (৯৩৪-১০৬২ খ্রিষ্টাব্দ)। তিনি দশম শতাব্দীতে পারস্যের একজন শাসক ছিলেন। যিনি বাগদাদের আব্বাসীয় খিলাফতের অধীন হলেও স্বাধীনভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। তিনি ইস্পাহানে একটি হাসপাতাল এবং সিরাজে ইসলামের শুরু থেকে তাঁর সময় পর্যন্ত লেখা বইসহ একটি বিশাল গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে, এই গ্রন্থাগারের কেবিনেটগুলো সোনার কারুকাজ দিয়ে সজ্জিত ছিল এবং শুধু নির্দিষ্ট কিছু স্কলারকে এখানে অধ্যয়নের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
সমরকন্দ ও বুখারার লাইব্রেরি
৭৫১ খ্রিষ্টাব্দে মধ্য এশিয়ায় প্রথম কাগজকল প্রতিষ্ঠিত হয়। বুখারা ও সমরকান্দেও মধ্যযুগে হাজার হাজার মাদ্রাসা ছিল এবং প্রতিটি মাদ্রাসায় একটি লাইব্রেরি সংযুক্ত ছিল। সামানির মুসলিম শাসক বুখারার সুলতান আমির নুহ ইবনে মনসুর (৯৭৬-৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দ) বুখারা, সমরকন্দ ও মাওয়ারাউন নাহারে (উজবেকিস্তান) ৪০০টির বেশি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি সেই যুগ ছিল, যখন বই হাতে লেখা, কাগজ ও কালি ছিল দুর্লভ এবং ব্যয়বহুল। বিখ্যাত আলকেমিস্ট, চিকিৎসক ইবনে সিনা, সহি বুখারির রচয়িতা ইমাম বুখারি, আল-বিরুনিসহ হাজার হাজার আলেম ও বিজ্ঞানী এই গ্রন্থাগার দ্বারা ধন্য হয়েছেন। চেঙ্গিস খান এবং মঙ্গোলরা এই লাইব্রেরি ধ্বংস করেছিল।
লাইব্রেরি অব গজনি
সুলতান মাহমুদ গজনভী (৯৯৮-১০৩০ খ্রিষ্টাব্দ), যিনি ভারতে ১৭ বার আক্রমণ করেছিলেন। তিনি জ্ঞান ও সাহিত্যের একজন মহান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি নিজ হাতে শাহি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন, যা বিশ্বের অন্যতম সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। এই শাহি গ্রন্থাগারে লক্ষাধিক বই ছিল। বিখ্যাত কাব্যসংকলন ‘শাহনামা-ই ফিরদৌসী’ তাঁরই আদেশে কবি ফিরদৌসী (১০২০ খ্রিষ্টাব্দ) লিখেছিলেন। যদিও ফিরদৌসী আর্থিক কারণে রাগান্বিত হয়ে তাঁকে ব্যঙ্গও করেন। আল-বিরুনি এবং আল-ফারাবির মতো পণ্ডিতেরাও তাঁর দরবারে আসা-যাওয়া করতেন।
মুঘল রাজবংশের গ্রন্থাগার
ভারতে প্রথম মুঘল গ্রন্থাগারটি সম্রাট বাবর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। যখন তিনি লুধি সাম্রাজ্যের লাহোর প্রদেশের গভর্নর গাজী খানকে পরাজিত করেন, তখন তাঁর গ্রন্থাগারটি দখল করেন। হুমায়ুনও তাঁর ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ‘শেরমন্ডল’ স্থাপন করেছিলেন, যেখান থেকে তিনি হোঁচট খেয়ে নিচে পড়ে মারা যান। বাদশা জালালুদ্দিন আকবর (১৫৪৩-১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দ) নিজে নিরক্ষর ছিলেন, কিন্তু তিনি ৬৪ লাখ টাকা খরচ করে ফতেপুর সিক্রিতে একটি শাহি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। লাইব্রেরিটি আগ্রা দুর্গের বড় হলঘরে অবস্থিত ছিল। একইভাবে সম্রাট জাহাঙ্গীর ও আওরঙ্গজেব আলমগীরের গ্রন্থাগারগুলো ছিল দুর্লভ সংগ্রহে ঠাসা।
অটোমান গ্রেট লাইব্রেরি
ওসমানী আমলে একটি শিক্ষা বিভাগ ছিল, যা গ্রন্থাগারগুলোর বিষয়াবলি পর্যবেক্ষণ করত। বাগদাদ, দামেস্ক, ইস্তাম্বুল, কায়রো, মক্কা, জেরুজালেমসহ প্রতিটি শহরে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার বিদ্যমান ছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তোপকাপি লাইব্রেরি, যাতে ১৪ হাজার অত্যন্ত দুর্লভ পাণ্ডুলিপি ছিল, যার মধ্যে পবিত্র কোরআনের কপি ছিল, যা হজরত উসমান (রা.)-এর শাসনামলে লেখা হয়েছিল। কনস্টান্টিনোপলের রাজপ্রাসাদের লাইব্রেরিতে লক্ষাধিক বই সংরক্ষিত ছিল।
লেখক: শিক্ষার্থী, উচ্চতর ইসলামি আইন গবেষণা বিভাগ, আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম।

জুমাবার ইসলামে একটি অত্যন্ত বরকতময় দিন। এটি সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবেও গণ্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে জুমার দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন—‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনের আজান দেওয়া হয়, তখন ব্যবসা থামিয়ে জুমার নামাজের জন্য হাজির হও এবং আল্লাহকে স্মরণ করো, যাতে তোমরা কল্যাণ লাভ করো।
৪ ঘণ্টা আগে
মসজিদ আল্লাহর ঘর—ইসলামি শিক্ষা, সভ্যতা ও রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাণকেন্দ্রও। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম মসজিদের মিম্বর থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। মিম্বরে বসেই যুদ্ধের পরিকল্পনা সাজানো হতো, বিচারিক কার্যক্রমও পরিচালিত হতো এখান থেকে। সে যুগে নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবাই নির্ভয়ে মসজিদে আসতেন।
৮ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশ, যা ভারত ও মিয়ানমার দ্বারা বেষ্টিত। এই দেশে পাহাড়-পর্বত ও ঘন জঙ্গল সীমিত, মরুভূমিহীন ভূখণ্ডে বিরাজ করে ষড়্ঋতুর মনোমুগ্ধকর আনাগোনা। ঋতুর এই পরিবর্তন প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আবেগ-অনুভূতি ও সভ্যতাকে নতুন রঙে রাঙিয়ে তোলে।
৮ ঘণ্টা আগেগোসল ফরজ হওয়ার পর পুরো শরীর পানি দিয়ে ধৌত করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘যদি তোমরা অপবিত্র হও, তাহলে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করো।’ (সুরা মায়েদা: ৬)। ফরজ গোসলের তিনটি ফরজের মধ্যে অন্যতম হলো: শরীরের প্রতিটি বাহ্যিক অংশে পানি পৌঁছানো।
৮ ঘণ্টা আগেডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

জুমাবার ইসলামে একটি অত্যন্ত বরকতময় দিন। এটি সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবেও গণ্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে জুমার দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন—‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনের আজান দেওয়া হয়, তখন ব্যবসা থামিয়ে জুমার নামাজের জন্য হাজির হও এবং আল্লাহকে স্মরণ করো, যাতে তোমরা কল্যাণ লাভ করো।’ (সুরা জুমা: ৯)
এই আয়াতটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে জুমা শুধু ফরজ নামাজের জন্য নয়, বরং আত্মপর্যালোচনা এবং নেক আমল বৃদ্ধির এক মহান সময়। বিশেষ করে জমাদিউস সানি মাসের এই দ্বিতীয় জুমা মাসের মাঝামাঝি সময়ে মুসলিমদের জন্য আত্মশুদ্ধি ও ইবাদতের সুযোগ এনে দেয়।
অতএব, মাসের এই বরকতময় জুমাবারে নামাজ, দোয়া, কোরআন তিলাওয়াত ও সদকা আল্লাহর নৈকট্য লাভের বিশেষ সুযোগ তৈরি করে দেয়।
জুমার দিনে করণীয় আমলসমূহ
জুমার দিনটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মূল্যবান। এই দিনে বিশেষভাবে কিছু আমল করা উচিত। যেমন—
জমাদিউস সানির দ্বিতীয় জুমা আল্লাহর নৈকট্য লাভ, আত্মশুদ্ধি, নেক আমল বৃদ্ধি এবং সমাজে সদকা ও দান করার এক অনন্য সুযোগ। আল্লাহ আমাদের সকলের নেক আমল গ্রহণ করুন এবং জীবনকে শান্তিতে ভরিয়ে দিন।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

জুমাবার ইসলামে একটি অত্যন্ত বরকতময় দিন। এটি সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবেও গণ্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে জুমার দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন—‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনের আজান দেওয়া হয়, তখন ব্যবসা থামিয়ে জুমার নামাজের জন্য হাজির হও এবং আল্লাহকে স্মরণ করো, যাতে তোমরা কল্যাণ লাভ করো।’ (সুরা জুমা: ৯)
এই আয়াতটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে জুমা শুধু ফরজ নামাজের জন্য নয়, বরং আত্মপর্যালোচনা এবং নেক আমল বৃদ্ধির এক মহান সময়। বিশেষ করে জমাদিউস সানি মাসের এই দ্বিতীয় জুমা মাসের মাঝামাঝি সময়ে মুসলিমদের জন্য আত্মশুদ্ধি ও ইবাদতের সুযোগ এনে দেয়।
অতএব, মাসের এই বরকতময় জুমাবারে নামাজ, দোয়া, কোরআন তিলাওয়াত ও সদকা আল্লাহর নৈকট্য লাভের বিশেষ সুযোগ তৈরি করে দেয়।
জুমার দিনে করণীয় আমলসমূহ
জুমার দিনটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মূল্যবান। এই দিনে বিশেষভাবে কিছু আমল করা উচিত। যেমন—
জমাদিউস সানির দ্বিতীয় জুমা আল্লাহর নৈকট্য লাভ, আত্মশুদ্ধি, নেক আমল বৃদ্ধি এবং সমাজে সদকা ও দান করার এক অনন্য সুযোগ। আল্লাহ আমাদের সকলের নেক আমল গ্রহণ করুন এবং জীবনকে শান্তিতে ভরিয়ে দিন।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি।

লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার জ্ঞানের বাতিঘর। ইসলামের সোনালি যুগে মুসলমানরা কোরআন-হাদিস, ভাষা ও অন্যান্য জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে নিজেদের জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করেন। এরপর গ্রিক, সংস্কৃত ও ফারসি জ্ঞানভান্ডার আরবিতে রূপান্তর করে বিশ্বজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হন। সুতরাং জ্ঞানচর্চার প্রয়োজনে স্বাভাবিকভাবেই অসংখ্য সমৃদ
০৪ অক্টোবর ২০২৪
মসজিদ আল্লাহর ঘর—ইসলামি শিক্ষা, সভ্যতা ও রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাণকেন্দ্রও। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম মসজিদের মিম্বর থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। মিম্বরে বসেই যুদ্ধের পরিকল্পনা সাজানো হতো, বিচারিক কার্যক্রমও পরিচালিত হতো এখান থেকে। সে যুগে নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবাই নির্ভয়ে মসজিদে আসতেন।
৮ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশ, যা ভারত ও মিয়ানমার দ্বারা বেষ্টিত। এই দেশে পাহাড়-পর্বত ও ঘন জঙ্গল সীমিত, মরুভূমিহীন ভূখণ্ডে বিরাজ করে ষড়্ঋতুর মনোমুগ্ধকর আনাগোনা। ঋতুর এই পরিবর্তন প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আবেগ-অনুভূতি ও সভ্যতাকে নতুন রঙে রাঙিয়ে তোলে।
৮ ঘণ্টা আগেগোসল ফরজ হওয়ার পর পুরো শরীর পানি দিয়ে ধৌত করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘যদি তোমরা অপবিত্র হও, তাহলে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করো।’ (সুরা মায়েদা: ৬)। ফরজ গোসলের তিনটি ফরজের মধ্যে অন্যতম হলো: শরীরের প্রতিটি বাহ্যিক অংশে পানি পৌঁছানো।
৮ ঘণ্টা আগেফয়জুল্লাহ রিয়াদ

মসজিদ আল্লাহর ঘর—ইসলামি শিক্ষা, সভ্যতা ও রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাণকেন্দ্রও। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম মসজিদের মিম্বর থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। মিম্বরে বসেই যুদ্ধের পরিকল্পনা সাজানো হতো, বিচারিক কার্যক্রমও পরিচালিত হতো এখান থেকে। সে যুগে নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবাই নির্ভয়ে মসজিদে আসতেন। নবীজির মুখনিঃসৃত মূল্যবান নসিহত থেকে নিজেদের জীবনের পাথেয় সংগ্রহ করতেন।
ইবাদত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি মসজিদ ছিল আলোকিত প্রজন্ম গঠনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণস্থল। নবী করিম (সা.)-এর যুগে শিশুরা মসজিদে আসত, ঘুরে বেড়াত, ইবাদত শিখত এবং সাহাবিদের পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করত। মসজিদ ছিল কচিকাঁচাদের ভালোবাসার জায়গা। কোনো ভয় বা নিষেধাজ্ঞার প্রতিবন্ধকতা ছিল না তাদের।
কিন্তু আজকের বাস্তবতা অনেক ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন। শিশুরা মসজিদে এলে অনেকেই তাদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেন, সামান্য দুষ্টুমিতেই ধমক দেন, এমনকি কখনো তাড়িয়েও দেন। এতে করে অনেক অভিভাবকই নিজের সন্তানদের সহজে মসজিদে আনতে চান না। ফলে ধীরে ধীরে মসজিদের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের দূরত্ব তৈরি হয়। অথচ ভবিষ্যতে এই প্রজন্মই উম্মতের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। তাই তাদের মসজিদমুখী করা এখন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি।
নবীজির যুগে শিশুদের মসজিদে গমন
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে মসজিদে শিশুদের স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল। নবীজি (সা.)-এর চারপাশে সাহাবিদের সঙ্গে ছোট বাচ্চাদেরও দেখা যেত। নবীজি (সা.) কখনো তাদের ধমক দিতেন না, তাড়িয়ে দিতেন না। তিনি শিশুদের উপস্থিতিকে স্বাগত জানাতেন। তাদের প্রতি অসীম মমতা দেখাতেন। নামাজ চলাকালেও নবীজি (সা.) শিশুদের প্রতি বিশেষ কোমলতা প্রদর্শন করতেন। তাঁর নাতি হাসান বা হুসাইন (রা.) কখনো তাঁর পিঠে চড়ে বসত। তিনি তাড়াহুড়ো না করে বরং তাদের ভালোবাসার খাতিরে সিজদা দীর্ঘ করতেন।
একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের সিজদায় গেলে হজরত হাসান কিংবা হোসাইন (রা.) তাঁর পিঠে চড়ে বসে। এ কারণে নবীজি (সা.) খুব দীর্ঘ সময় সিজদায় থাকেন। নামাজ শেষে সাহাবিরা এর কারণ জানতে চাইলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘আমার এই নাতি আমাকে বাহন বানিয়ে নিয়েছিল, তাই তাকে নামিয়ে দিতে আমি তাড়াহুড়ো করতে চাইনি, যতক্ষণ না সে স্বাভাবিকভাবে নেমে আসে।’ (সুনানে নাসায়ি: ১১৪১)। মেয়েশিশুরাও নবীজির স্নেহ থেকে বঞ্চিত হতো না। তারাও মসজিদে আসত। হজরত কাতাদা (রা.) বলেন, ‘নবীজি (সা.) তাঁর কন্যা জাইনাবের মেয়ে উমামাকে কাঁধে নিয়ে নামাজ পড়তেন। সিজদায় গেলে তাকে নামিয়ে দিতেন এবং দাঁড়ালে আবার কাঁধে তুলে নিতেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৯১৭)
আমাদের দেশের বেদনাদায়ক বাস্তবতা
দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজে ‘নামাজের প্রতি শ্রদ্ধা’ দেখানোর লেভেল লাগিয়ে অনেকেই শিশুদের প্রতি রূঢ় আচরণকে বৈধ মনে করেন। তাদের ধমক দিয়ে মসজিদ থেকে বের করে দেন। কোনো কোনো মসজিদ কমিটি ‘বাচ্চাদের মসজিদে আনা নিষিদ্ধ’ লেখা সাইনবোর্ডও টাঙিয়ে রাখেন মসজিদের সামনে। এসব আচরণ শিশুদের কোমল হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলে। পরিণতিতে সে মসজিদকে ভয় পেতে শুরু করে। যে রাসুল (সা.) শিশুদের মাথায় মমতার পরশ বুলিয়ে দিতেন, তাঁর উম্মতের কেউ কেউ আজ শিশুদের বকাঝকা করে মসজিদ থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে, এটা বড় লজ্জার বিষয়।
শিশুদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি হোক নম্রতা
শিশুরা দেহ-মন উভয় দিক থেকে কোমল। তারা কঠোরতা সহ্য করতে পারে না। নবীজি (সা.) বাচ্চাদের প্রতি খুবই কোমল ছিলেন। আল্লাহ তাআলাও কোমলতা পছন্দ করেন। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা কোমল আচরণকারী, তিনি সর্বক্ষেত্রে কোমলতা ভালোবাসেন।’ (সহিহ বুখারি: ৬০২৪)। অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নম্রতা থেকে বঞ্চিত, সে প্রকৃত কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৯০)। আমাদেরও উচিত বাচ্চাদের প্রতি কোমলতা প্রদর্শন করা। তাদের কিছু শেখাতে হলেও আদুরে গলায় শিশুসুলভ ভঙ্গিতে শেখানো। বাচ্চাদের জন্য এটি কঠোরতা থেকেও বেশি ফলপ্রসূ।
শিশুরা হোক মসজিদমুখী
শিশুদের মসজিদমুখী করতে হলে নম্রতা, কোমলতা ও ভালোবাসা দিয়ে কাছে টানতে হবে। তাদের জন্য শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। মসজিদের আঙিনায় শিশুদের জন্য আলাদা কর্নার হতে পারে। সেখানে তাদের উপযোগী রঙিন বই, কোরআন শেখার বিভিন্ন মজাদার উপকরণ থাকতে পারে। এতে তারা ধীরে ধীরে মসজিদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। পাশাপাশি মসজিদ কমিটি ও ইমাম সাহেবগণ নানা ধরনের উৎসাহমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারেন। হতে পারে শিশুদের জন্য সাপ্তাহিক বিশেষ ক্লাস। যেখানে শিশুসুলভ ভঙ্গিতে তাদের ইসলামের মৌলিক জ্ঞান শেখানো হবে। যারা এতে নিয়মিত উপস্থিত হবে, তাদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ কার্যক্রমও থাকতে পারে।
মসজিদে আসার পর শিশুদের একটু শব্দে কেউ যদি রেগে যায়, বিনয়ের সঙ্গে তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন ‘নবীজির মসজিদেও তো শিশুদের বিচরণ ছিল। আমরা তাদের প্রতি কোমল হই। কঠোর আচরণ পরিত্যাগ করি।’ এভাবে ধীরে ধীরে সমাজের পরিবেশ বদলে যাবে।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আমরা যদি চাই, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভালো, সচ্চরিত্রবান, নামাজি ও ইসলামি মূল্যবোধসম্পন্ন হোক—তাহলে তাদের জন্য মসজিদ উন্মুক্ত করে দিতে হবে। উৎসাহ, অভয়, ভালোবাসা দিয়ে ও নানা পরিকল্পনা করে তাদের মসজিদমুখী করতে হবে। তাহলেই গড়ে উঠবে আলোকিত প্রজন্ম।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

মসজিদ আল্লাহর ঘর—ইসলামি শিক্ষা, সভ্যতা ও রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাণকেন্দ্রও। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম মসজিদের মিম্বর থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। মিম্বরে বসেই যুদ্ধের পরিকল্পনা সাজানো হতো, বিচারিক কার্যক্রমও পরিচালিত হতো এখান থেকে। সে যুগে নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবাই নির্ভয়ে মসজিদে আসতেন। নবীজির মুখনিঃসৃত মূল্যবান নসিহত থেকে নিজেদের জীবনের পাথেয় সংগ্রহ করতেন।
ইবাদত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের পাশাপাশি মসজিদ ছিল আলোকিত প্রজন্ম গঠনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণস্থল। নবী করিম (সা.)-এর যুগে শিশুরা মসজিদে আসত, ঘুরে বেড়াত, ইবাদত শিখত এবং সাহাবিদের পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করত। মসজিদ ছিল কচিকাঁচাদের ভালোবাসার জায়গা। কোনো ভয় বা নিষেধাজ্ঞার প্রতিবন্ধকতা ছিল না তাদের।
কিন্তু আজকের বাস্তবতা অনেক ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন। শিশুরা মসজিদে এলে অনেকেই তাদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেন, সামান্য দুষ্টুমিতেই ধমক দেন, এমনকি কখনো তাড়িয়েও দেন। এতে করে অনেক অভিভাবকই নিজের সন্তানদের সহজে মসজিদে আনতে চান না। ফলে ধীরে ধীরে মসজিদের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের দূরত্ব তৈরি হয়। অথচ ভবিষ্যতে এই প্রজন্মই উম্মতের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। তাই তাদের মসজিদমুখী করা এখন সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি।
নবীজির যুগে শিশুদের মসজিদে গমন
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে মসজিদে শিশুদের স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল। নবীজি (সা.)-এর চারপাশে সাহাবিদের সঙ্গে ছোট বাচ্চাদেরও দেখা যেত। নবীজি (সা.) কখনো তাদের ধমক দিতেন না, তাড়িয়ে দিতেন না। তিনি শিশুদের উপস্থিতিকে স্বাগত জানাতেন। তাদের প্রতি অসীম মমতা দেখাতেন। নামাজ চলাকালেও নবীজি (সা.) শিশুদের প্রতি বিশেষ কোমলতা প্রদর্শন করতেন। তাঁর নাতি হাসান বা হুসাইন (রা.) কখনো তাঁর পিঠে চড়ে বসত। তিনি তাড়াহুড়ো না করে বরং তাদের ভালোবাসার খাতিরে সিজদা দীর্ঘ করতেন।
একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজের সিজদায় গেলে হজরত হাসান কিংবা হোসাইন (রা.) তাঁর পিঠে চড়ে বসে। এ কারণে নবীজি (সা.) খুব দীর্ঘ সময় সিজদায় থাকেন। নামাজ শেষে সাহাবিরা এর কারণ জানতে চাইলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘আমার এই নাতি আমাকে বাহন বানিয়ে নিয়েছিল, তাই তাকে নামিয়ে দিতে আমি তাড়াহুড়ো করতে চাইনি, যতক্ষণ না সে স্বাভাবিকভাবে নেমে আসে।’ (সুনানে নাসায়ি: ১১৪১)। মেয়েশিশুরাও নবীজির স্নেহ থেকে বঞ্চিত হতো না। তারাও মসজিদে আসত। হজরত কাতাদা (রা.) বলেন, ‘নবীজি (সা.) তাঁর কন্যা জাইনাবের মেয়ে উমামাকে কাঁধে নিয়ে নামাজ পড়তেন। সিজদায় গেলে তাকে নামিয়ে দিতেন এবং দাঁড়ালে আবার কাঁধে তুলে নিতেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৯১৭)
আমাদের দেশের বেদনাদায়ক বাস্তবতা
দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজে ‘নামাজের প্রতি শ্রদ্ধা’ দেখানোর লেভেল লাগিয়ে অনেকেই শিশুদের প্রতি রূঢ় আচরণকে বৈধ মনে করেন। তাদের ধমক দিয়ে মসজিদ থেকে বের করে দেন। কোনো কোনো মসজিদ কমিটি ‘বাচ্চাদের মসজিদে আনা নিষিদ্ধ’ লেখা সাইনবোর্ডও টাঙিয়ে রাখেন মসজিদের সামনে। এসব আচরণ শিশুদের কোমল হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলে। পরিণতিতে সে মসজিদকে ভয় পেতে শুরু করে। যে রাসুল (সা.) শিশুদের মাথায় মমতার পরশ বুলিয়ে দিতেন, তাঁর উম্মতের কেউ কেউ আজ শিশুদের বকাঝকা করে মসজিদ থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে, এটা বড় লজ্জার বিষয়।
শিশুদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি হোক নম্রতা
শিশুরা দেহ-মন উভয় দিক থেকে কোমল। তারা কঠোরতা সহ্য করতে পারে না। নবীজি (সা.) বাচ্চাদের প্রতি খুবই কোমল ছিলেন। আল্লাহ তাআলাও কোমলতা পছন্দ করেন। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা কোমল আচরণকারী, তিনি সর্বক্ষেত্রে কোমলতা ভালোবাসেন।’ (সহিহ বুখারি: ৬০২৪)। অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নম্রতা থেকে বঞ্চিত, সে প্রকৃত কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৯০)। আমাদেরও উচিত বাচ্চাদের প্রতি কোমলতা প্রদর্শন করা। তাদের কিছু শেখাতে হলেও আদুরে গলায় শিশুসুলভ ভঙ্গিতে শেখানো। বাচ্চাদের জন্য এটি কঠোরতা থেকেও বেশি ফলপ্রসূ।
শিশুরা হোক মসজিদমুখী
শিশুদের মসজিদমুখী করতে হলে নম্রতা, কোমলতা ও ভালোবাসা দিয়ে কাছে টানতে হবে। তাদের জন্য শিশুবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। মসজিদের আঙিনায় শিশুদের জন্য আলাদা কর্নার হতে পারে। সেখানে তাদের উপযোগী রঙিন বই, কোরআন শেখার বিভিন্ন মজাদার উপকরণ থাকতে পারে। এতে তারা ধীরে ধীরে মসজিদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। পাশাপাশি মসজিদ কমিটি ও ইমাম সাহেবগণ নানা ধরনের উৎসাহমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারেন। হতে পারে শিশুদের জন্য সাপ্তাহিক বিশেষ ক্লাস। যেখানে শিশুসুলভ ভঙ্গিতে তাদের ইসলামের মৌলিক জ্ঞান শেখানো হবে। যারা এতে নিয়মিত উপস্থিত হবে, তাদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ কার্যক্রমও থাকতে পারে।
মসজিদে আসার পর শিশুদের একটু শব্দে কেউ যদি রেগে যায়, বিনয়ের সঙ্গে তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন ‘নবীজির মসজিদেও তো শিশুদের বিচরণ ছিল। আমরা তাদের প্রতি কোমল হই। কঠোর আচরণ পরিত্যাগ করি।’ এভাবে ধীরে ধীরে সমাজের পরিবেশ বদলে যাবে।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আমরা যদি চাই, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ভালো, সচ্চরিত্রবান, নামাজি ও ইসলামি মূল্যবোধসম্পন্ন হোক—তাহলে তাদের জন্য মসজিদ উন্মুক্ত করে দিতে হবে। উৎসাহ, অভয়, ভালোবাসা দিয়ে ও নানা পরিকল্পনা করে তাদের মসজিদমুখী করতে হবে। তাহলেই গড়ে উঠবে আলোকিত প্রজন্ম।
লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুস সুন্নাহ রাজাবাড়ী, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার জ্ঞানের বাতিঘর। ইসলামের সোনালি যুগে মুসলমানরা কোরআন-হাদিস, ভাষা ও অন্যান্য জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে নিজেদের জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করেন। এরপর গ্রিক, সংস্কৃত ও ফারসি জ্ঞানভান্ডার আরবিতে রূপান্তর করে বিশ্বজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হন। সুতরাং জ্ঞানচর্চার প্রয়োজনে স্বাভাবিকভাবেই অসংখ্য সমৃদ
০৪ অক্টোবর ২০২৪
জুমাবার ইসলামে একটি অত্যন্ত বরকতময় দিন। এটি সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবেও গণ্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে জুমার দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন—‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনের আজান দেওয়া হয়, তখন ব্যবসা থামিয়ে জুমার নামাজের জন্য হাজির হও এবং আল্লাহকে স্মরণ করো, যাতে তোমরা কল্যাণ লাভ করো।
৪ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশ, যা ভারত ও মিয়ানমার দ্বারা বেষ্টিত। এই দেশে পাহাড়-পর্বত ও ঘন জঙ্গল সীমিত, মরুভূমিহীন ভূখণ্ডে বিরাজ করে ষড়্ঋতুর মনোমুগ্ধকর আনাগোনা। ঋতুর এই পরিবর্তন প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আবেগ-অনুভূতি ও সভ্যতাকে নতুন রঙে রাঙিয়ে তোলে।
৮ ঘণ্টা আগেগোসল ফরজ হওয়ার পর পুরো শরীর পানি দিয়ে ধৌত করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘যদি তোমরা অপবিত্র হও, তাহলে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করো।’ (সুরা মায়েদা: ৬)। ফরজ গোসলের তিনটি ফরজের মধ্যে অন্যতম হলো: শরীরের প্রতিটি বাহ্যিক অংশে পানি পৌঁছানো।
৮ ঘণ্টা আগেহাবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশ, যা ভারত ও মিয়ানমার দ্বারা বেষ্টিত। এই দেশে পাহাড়-পর্বত ও ঘন জঙ্গল সীমিত, মরুভূমিহীন ভূখণ্ডে বিরাজ করে ষড়্ঋতুর মনোমুগ্ধকর আনাগোনা। ঋতুর এই পরিবর্তন প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আবেগ-অনুভূতি ও সভ্যতাকে নতুন রঙে রাঙিয়ে তোলে। ছয় ঋতুর মধ্যে অন্যতম হলো শীতকাল, যা বছরে একবার হিমশীতল পরশ নিয়ে আসে। আমরা সর্বদা এর আগমনের অপেক্ষায় থাকি। ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে শীতের তীব্রতা কম হলেও উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে নেমে আসে অপ্রত্যাশিত শৈত্যপ্রবাহ।
১৮ কোটি মানুষের এই দেশে শীতকালকে ঘিরে জমে ওঠে নানা আয়োজন, প্রয়োজন ও আমোদ-প্রমোদ। প্রভাতে গ্রামের ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েসের বিচিত্র স্বাদে ভরে ওঠে সবার মন। শীতকে কেন্দ্র করে শহরেও চলে নানা আয়োজন। আবার লেপ-কম্বল, সোয়েটার, শাল, মাফলারসহ বিভিন্ন শীতবস্ত্রের দোকানে লেগে থাকে প্রচণ্ড ভিড়। এগুলোর চাহিদাও ব্যাপক, কারণ তীব্র শীতে উষ্ণতার প্রয়োজন সবার।
এই শীতের আমেজে যখন সাধারণ মানুষ লেপের নিচে সোয়েটার জড়িয়ে উষ্ণতা খোঁজে, ঠিক তখনই একদল মানুষ শুয়ে থাকে রাস্তার ধারে—ফুটপাতে। অনেকে বিভিন্ন অলিগলিতে জায়গা খোঁজে, আবার পাথর হৃদয়ের মানুষের তাড়নায় তাদের জায়গা হয় না সেখানেও। তারা আশ্রয় নেয় ডাস্টবিনের পাশে—দুর্গন্ধময় স্থানে। এদের জন্য শীতকাল যেন অভিশাপের এক ঋতু। গৃহহীন ও ভবঘুরেদের কাছে এই সময়টা অগ্নিকুণ্ডের চেয়ে ভয়ংকর। ছেঁড়া পাটি বা বস্তাই তাদের কোমল বিছানা! পাতলা গেঞ্জিই হয় তাদের সোয়েটার। ভাপা পিঠা বা খেজুরের রসের কথা তারা তো ভাবতেও পারে না। এভাবেই মানবেতর জীবন যাপন করে এই বঞ্চিত মানুষেরা।
দেশে পথমানবের সংখ্যা কয়েক লাখ। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। অর্থনৈতিক দুর্বলতা ও বেকারত্বের জাঁতাকলে পড়ে তারা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়। শহরে দালানকোঠায় বড় হয়ে ওঠা আমরা কি কখনো এদের কথা ভেবেছি? অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানহীন এই শিশুরা কি আমাদের ভবিষ্যৎ নয়? আধুনিকতার এই যুগেও যদি তারা বৈষম্যের শিকার হয়, তবে তাদের বেঁচে থাকার সার্থকতা কোথায়?
এই যাযাবর শিশু-কিশোররা তীব্র শীতের মাঝে বস্ত্রহীন অবস্থায় ঘুরে বেড়ায়, কুড়ানো পলিথিন বিছিয়ে বালিশ ছাড়া ঘুমায়। এই পথশিশুরাও তো চায় সবার মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে। শীতের দিনে একটু উষ্ণতা তো তাদেরও প্রাপ্য। তাই প্রতিটি সচেতন নাগরিকের উচিত তাদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানো এবং বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ানো। এটি কেবল মানবিক দায়িত্বই নয়, সামাজিক ও নৈতিক কর্তব্যও বটে। এ ক্ষেত্রে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে:
আর এই বঞ্চিতদের জন্য এসবের পাশাপাশি যদি শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়, তবে একদিন এই সমাজেও ফিরে আসবে পূর্ণ মানবতা। পথশিশুদের আহ্লাদে আলোকিত হয়ে উঠবে এই দেশ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি এক নতুন ইতিহাস হয়ে থাকবে।

বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশ, যা ভারত ও মিয়ানমার দ্বারা বেষ্টিত। এই দেশে পাহাড়-পর্বত ও ঘন জঙ্গল সীমিত, মরুভূমিহীন ভূখণ্ডে বিরাজ করে ষড়্ঋতুর মনোমুগ্ধকর আনাগোনা। ঋতুর এই পরিবর্তন প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আবেগ-অনুভূতি ও সভ্যতাকে নতুন রঙে রাঙিয়ে তোলে। ছয় ঋতুর মধ্যে অন্যতম হলো শীতকাল, যা বছরে একবার হিমশীতল পরশ নিয়ে আসে। আমরা সর্বদা এর আগমনের অপেক্ষায় থাকি। ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে শীতের তীব্রতা কম হলেও উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে নেমে আসে অপ্রত্যাশিত শৈত্যপ্রবাহ।
১৮ কোটি মানুষের এই দেশে শীতকালকে ঘিরে জমে ওঠে নানা আয়োজন, প্রয়োজন ও আমোদ-প্রমোদ। প্রভাতে গ্রামের ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েসের বিচিত্র স্বাদে ভরে ওঠে সবার মন। শীতকে কেন্দ্র করে শহরেও চলে নানা আয়োজন। আবার লেপ-কম্বল, সোয়েটার, শাল, মাফলারসহ বিভিন্ন শীতবস্ত্রের দোকানে লেগে থাকে প্রচণ্ড ভিড়। এগুলোর চাহিদাও ব্যাপক, কারণ তীব্র শীতে উষ্ণতার প্রয়োজন সবার।
এই শীতের আমেজে যখন সাধারণ মানুষ লেপের নিচে সোয়েটার জড়িয়ে উষ্ণতা খোঁজে, ঠিক তখনই একদল মানুষ শুয়ে থাকে রাস্তার ধারে—ফুটপাতে। অনেকে বিভিন্ন অলিগলিতে জায়গা খোঁজে, আবার পাথর হৃদয়ের মানুষের তাড়নায় তাদের জায়গা হয় না সেখানেও। তারা আশ্রয় নেয় ডাস্টবিনের পাশে—দুর্গন্ধময় স্থানে। এদের জন্য শীতকাল যেন অভিশাপের এক ঋতু। গৃহহীন ও ভবঘুরেদের কাছে এই সময়টা অগ্নিকুণ্ডের চেয়ে ভয়ংকর। ছেঁড়া পাটি বা বস্তাই তাদের কোমল বিছানা! পাতলা গেঞ্জিই হয় তাদের সোয়েটার। ভাপা পিঠা বা খেজুরের রসের কথা তারা তো ভাবতেও পারে না। এভাবেই মানবেতর জীবন যাপন করে এই বঞ্চিত মানুষেরা।
দেশে পথমানবের সংখ্যা কয়েক লাখ। এদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। অর্থনৈতিক দুর্বলতা ও বেকারত্বের জাঁতাকলে পড়ে তারা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়। শহরে দালানকোঠায় বড় হয়ে ওঠা আমরা কি কখনো এদের কথা ভেবেছি? অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানহীন এই শিশুরা কি আমাদের ভবিষ্যৎ নয়? আধুনিকতার এই যুগেও যদি তারা বৈষম্যের শিকার হয়, তবে তাদের বেঁচে থাকার সার্থকতা কোথায়?
এই যাযাবর শিশু-কিশোররা তীব্র শীতের মাঝে বস্ত্রহীন অবস্থায় ঘুরে বেড়ায়, কুড়ানো পলিথিন বিছিয়ে বালিশ ছাড়া ঘুমায়। এই পথশিশুরাও তো চায় সবার মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে। শীতের দিনে একটু উষ্ণতা তো তাদেরও প্রাপ্য। তাই প্রতিটি সচেতন নাগরিকের উচিত তাদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়ানো এবং বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়ানো। এটি কেবল মানবিক দায়িত্বই নয়, সামাজিক ও নৈতিক কর্তব্যও বটে। এ ক্ষেত্রে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে:
আর এই বঞ্চিতদের জন্য এসবের পাশাপাশি যদি শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়, তবে একদিন এই সমাজেও ফিরে আসবে পূর্ণ মানবতা। পথশিশুদের আহ্লাদে আলোকিত হয়ে উঠবে এই দেশ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি এক নতুন ইতিহাস হয়ে থাকবে।

লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার জ্ঞানের বাতিঘর। ইসলামের সোনালি যুগে মুসলমানরা কোরআন-হাদিস, ভাষা ও অন্যান্য জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে নিজেদের জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করেন। এরপর গ্রিক, সংস্কৃত ও ফারসি জ্ঞানভান্ডার আরবিতে রূপান্তর করে বিশ্বজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হন। সুতরাং জ্ঞানচর্চার প্রয়োজনে স্বাভাবিকভাবেই অসংখ্য সমৃদ
০৪ অক্টোবর ২০২৪
জুমাবার ইসলামে একটি অত্যন্ত বরকতময় দিন। এটি সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবেও গণ্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে জুমার দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন—‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনের আজান দেওয়া হয়, তখন ব্যবসা থামিয়ে জুমার নামাজের জন্য হাজির হও এবং আল্লাহকে স্মরণ করো, যাতে তোমরা কল্যাণ লাভ করো।
৪ ঘণ্টা আগে
মসজিদ আল্লাহর ঘর—ইসলামি শিক্ষা, সভ্যতা ও রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাণকেন্দ্রও। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম মসজিদের মিম্বর থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। মিম্বরে বসেই যুদ্ধের পরিকল্পনা সাজানো হতো, বিচারিক কার্যক্রমও পরিচালিত হতো এখান থেকে। সে যুগে নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবাই নির্ভয়ে মসজিদে আসতেন।
৮ ঘণ্টা আগেগোসল ফরজ হওয়ার পর পুরো শরীর পানি দিয়ে ধৌত করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘যদি তোমরা অপবিত্র হও, তাহলে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করো।’ (সুরা মায়েদা: ৬)। ফরজ গোসলের তিনটি ফরজের মধ্যে অন্যতম হলো: শরীরের প্রতিটি বাহ্যিক অংশে পানি পৌঁছানো।
৮ ঘণ্টা আগেআপনার জিজ্ঞাসা
মুফতি শাব্বির আহমদ
প্রশ্ন: ফরজ গোসলের সময় নারীদের খোঁপা খুলে সম্পূর্ণ চুল ধৌত করতে হবে নাকি খোঁপার ওপরে পানি ঢেলে দিলেই হবে? এ বিষয়ে ইসলামের বিধান জানালে উপকৃত হব।
সাদিয়া মৌ, উত্তরা, ঢাকা।
উত্তর: আপনার প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা অনেক নারীরই মনে আসে। পবিত্রতা অর্জনের জন্য ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম জানা একান্ত জরুরি।
ফরজ গোসলের মৌলিক বিধান
গোসল ফরজ হওয়ার পর পুরো শরীর পানি দিয়ে ধৌত করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘যদি তোমরা অপবিত্র হও, তাহলে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করো।’ (সুরা মায়েদা: ৬)। ফরজ গোসলের তিনটি ফরজের মধ্যে অন্যতম হলো: শরীরের প্রতিটি বাহ্যিক অংশে পানি পৌঁছানো। চুল, পশমের নিচে সামান্য যে অংশটুকু ঢাকা থাকে, তাতেও পানি পৌঁছানো জরুরি।
নারীদের চুল ধোয়ার ক্ষেত্রে মূল নির্দেশনা
নারীদের চুলের ক্ষেত্রে বিধানটি নির্ভর করে চুল খোলা আছে নাকি শক্ত বেণি বা খোঁপা বাঁধা আছে তার ওপর। যদি চুল খোলা থাকে বা এমনভাবে সামান্য খোঁপা করা থাকে, যা খুলতে কোনো কষ্ট হয় না, তাহলে চুলের গোড়াসহ সম্পূর্ণ চুল ধৌত করা ফরজ। চুলের কোনো অংশ শুকনো থেকে গেলে গোসল শুদ্ধ হবে না।
তবে যদি চুলে শক্ত বেণি বা খোঁপা বাঁধা থাকে এবং তা খুলে গোসল করা কষ্টসাধ্য বা সময়ের ব্যাপার হয় (যেমন, ঘন, লম্বা চুল), তাহলে খোঁপা বা বেণি খুলে সব চুল ধৌত করা জরুরি নয়। এ ক্ষেত্রে শুধু চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট হবে।
এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা এসেছে সাহাবিয়া হজরত উম্মে সালামা (রা.)-এর একটি বর্ণনা থেকে। তিনি বলেন, ‘একদিন আমি আল্লাহর রাসুলকে (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি খুব শক্তভাবে আমার চুলে বেণি বাঁধি। ফরজ গোসলের সময় কি বেণি খুলতে হবে?’ আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, ‘না। তোমার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট—মাথায় তিন আজলা পানি ঢেলে দেবে এবং পুরো শরীরে পানি প্রবাহিত করবে। তাহলেই তুমি পবিত্র হয়ে যাবে।’ (সহিহ মুসলিম: ২৩০)
এই হাদিস প্রমাণ করে যে কষ্ট লাঘবের জন্য নারীদের ক্ষেত্রে বেণি বা খোঁপা না খুলে শুধু চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট।
হানাফি ফিকহের সুপ্রসিদ্ধ ফতোয়াগ্রন্থ ‘আল-বাহরুর রায়িক’-এ এই বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে—‘নারীদের খোঁপা বা বেণি খুলে চুল ভেজানো কষ্টকর হলে খোঁপা থাকা অবস্থায় চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট। তবে চুলে খোঁপা না থাকলে পুরো চুল ধোয়া সর্বসম্মতিক্রমে ফরজ।’ (আল-বাহরুর রায়িক: ১ / ৫৪)
সারসংক্ষেপ হলো, যদি খোঁপা বা বেণি খোলা কষ্টকর হয়, তবে শুধু চুলের গোড়ায় ভালোভাবে পানি পৌঁছানো ফরজ। যদি খোঁপা বা বেণি খুলতে খুব বেশি সমস্যা না হয় বা তা সামান্য আলগা করে বাঁধা থাকে, তবে চুল খুলে পুরো চুল ভিজিয়ে ভালোভাবে গোসল করাই উত্তম ও মুস্তাহাব। এতে পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকে না এবং ইসলামের পরিচ্ছন্নতার নির্দেশনার পূর্ণ অনুসরণ হয়। আর চুল যদি খোলা থাকে, তাহলে সম্পূর্ণ চুল ধোয়া আবশ্যক।
উত্তর দিয়েছেন: মুফতি শাব্বির আহমদ, ইসলামবিষয়ক গবেষক
প্রশ্ন: ফরজ গোসলের সময় নারীদের খোঁপা খুলে সম্পূর্ণ চুল ধৌত করতে হবে নাকি খোঁপার ওপরে পানি ঢেলে দিলেই হবে? এ বিষয়ে ইসলামের বিধান জানালে উপকৃত হব।
সাদিয়া মৌ, উত্তরা, ঢাকা।
উত্তর: আপনার প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা অনেক নারীরই মনে আসে। পবিত্রতা অর্জনের জন্য ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম জানা একান্ত জরুরি।
ফরজ গোসলের মৌলিক বিধান
গোসল ফরজ হওয়ার পর পুরো শরীর পানি দিয়ে ধৌত করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দিয়েছেন, ‘যদি তোমরা অপবিত্র হও, তাহলে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করো।’ (সুরা মায়েদা: ৬)। ফরজ গোসলের তিনটি ফরজের মধ্যে অন্যতম হলো: শরীরের প্রতিটি বাহ্যিক অংশে পানি পৌঁছানো। চুল, পশমের নিচে সামান্য যে অংশটুকু ঢাকা থাকে, তাতেও পানি পৌঁছানো জরুরি।
নারীদের চুল ধোয়ার ক্ষেত্রে মূল নির্দেশনা
নারীদের চুলের ক্ষেত্রে বিধানটি নির্ভর করে চুল খোলা আছে নাকি শক্ত বেণি বা খোঁপা বাঁধা আছে তার ওপর। যদি চুল খোলা থাকে বা এমনভাবে সামান্য খোঁপা করা থাকে, যা খুলতে কোনো কষ্ট হয় না, তাহলে চুলের গোড়াসহ সম্পূর্ণ চুল ধৌত করা ফরজ। চুলের কোনো অংশ শুকনো থেকে গেলে গোসল শুদ্ধ হবে না।
তবে যদি চুলে শক্ত বেণি বা খোঁপা বাঁধা থাকে এবং তা খুলে গোসল করা কষ্টসাধ্য বা সময়ের ব্যাপার হয় (যেমন, ঘন, লম্বা চুল), তাহলে খোঁপা বা বেণি খুলে সব চুল ধৌত করা জরুরি নয়। এ ক্ষেত্রে শুধু চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট হবে।
এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা এসেছে সাহাবিয়া হজরত উম্মে সালামা (রা.)-এর একটি বর্ণনা থেকে। তিনি বলেন, ‘একদিন আমি আল্লাহর রাসুলকে (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি খুব শক্তভাবে আমার চুলে বেণি বাঁধি। ফরজ গোসলের সময় কি বেণি খুলতে হবে?’ আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, ‘না। তোমার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট—মাথায় তিন আজলা পানি ঢেলে দেবে এবং পুরো শরীরে পানি প্রবাহিত করবে। তাহলেই তুমি পবিত্র হয়ে যাবে।’ (সহিহ মুসলিম: ২৩০)
এই হাদিস প্রমাণ করে যে কষ্ট লাঘবের জন্য নারীদের ক্ষেত্রে বেণি বা খোঁপা না খুলে শুধু চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট।
হানাফি ফিকহের সুপ্রসিদ্ধ ফতোয়াগ্রন্থ ‘আল-বাহরুর রায়িক’-এ এই বিষয়ে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে—‘নারীদের খোঁপা বা বেণি খুলে চুল ভেজানো কষ্টকর হলে খোঁপা থাকা অবস্থায় চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট। তবে চুলে খোঁপা না থাকলে পুরো চুল ধোয়া সর্বসম্মতিক্রমে ফরজ।’ (আল-বাহরুর রায়িক: ১ / ৫৪)
সারসংক্ষেপ হলো, যদি খোঁপা বা বেণি খোলা কষ্টকর হয়, তবে শুধু চুলের গোড়ায় ভালোভাবে পানি পৌঁছানো ফরজ। যদি খোঁপা বা বেণি খুলতে খুব বেশি সমস্যা না হয় বা তা সামান্য আলগা করে বাঁধা থাকে, তবে চুল খুলে পুরো চুল ভিজিয়ে ভালোভাবে গোসল করাই উত্তম ও মুস্তাহাব। এতে পবিত্রতা অর্জনের ক্ষেত্রে কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকে না এবং ইসলামের পরিচ্ছন্নতার নির্দেশনার পূর্ণ অনুসরণ হয়। আর চুল যদি খোলা থাকে, তাহলে সম্পূর্ণ চুল ধোয়া আবশ্যক।
উত্তর দিয়েছেন: মুফতি শাব্বির আহমদ, ইসলামবিষয়ক গবেষক

লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার জ্ঞানের বাতিঘর। ইসলামের সোনালি যুগে মুসলমানরা কোরআন-হাদিস, ভাষা ও অন্যান্য জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে নিজেদের জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করেন। এরপর গ্রিক, সংস্কৃত ও ফারসি জ্ঞানভান্ডার আরবিতে রূপান্তর করে বিশ্বজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হন। সুতরাং জ্ঞানচর্চার প্রয়োজনে স্বাভাবিকভাবেই অসংখ্য সমৃদ
০৪ অক্টোবর ২০২৪
জুমাবার ইসলামে একটি অত্যন্ত বরকতময় দিন। এটি সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবেও গণ্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে জুমার দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন—‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনের আজান দেওয়া হয়, তখন ব্যবসা থামিয়ে জুমার নামাজের জন্য হাজির হও এবং আল্লাহকে স্মরণ করো, যাতে তোমরা কল্যাণ লাভ করো।
৪ ঘণ্টা আগে
মসজিদ আল্লাহর ঘর—ইসলামি শিক্ষা, সভ্যতা ও রাষ্ট্র পরিচালনার প্রাণকেন্দ্রও। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম মসজিদের মিম্বর থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। মিম্বরে বসেই যুদ্ধের পরিকল্পনা সাজানো হতো, বিচারিক কার্যক্রমও পরিচালিত হতো এখান থেকে। সে যুগে নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবাই নির্ভয়ে মসজিদে আসতেন।
৮ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশ, যা ভারত ও মিয়ানমার দ্বারা বেষ্টিত। এই দেশে পাহাড়-পর্বত ও ঘন জঙ্গল সীমিত, মরুভূমিহীন ভূখণ্ডে বিরাজ করে ষড়্ঋতুর মনোমুগ্ধকর আনাগোনা। ঋতুর এই পরিবর্তন প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আবেগ-অনুভূতি ও সভ্যতাকে নতুন রঙে রাঙিয়ে তোলে।
৮ ঘণ্টা আগে