Ajker Patrika

ইতিকাফের ফজিলত ও বিধান

মুফতি আবু দারদা
ইতিকাফের ফজিলত ও বিধান

আরবি ইতিকাফ শব্দের অর্থ অবস্থান করা। শরিয়তের পরিভাষায়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতসহকারে নিয়মিত আদায় করা হয় এমন মসজিদগুলোয় আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে নিয়তসহ অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে। মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। মহল্লার কয়েকজন আদায় করলে সবার পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে, কিন্তু কেউই আদায় না করলে সবাই গুনাহগার হবে। 

ইতিকাফের ফজিলত 
হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি কদরের রাতের সন্ধানে প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী ১০ দিন। এরপর অহির মাধ্যমে আমাকে জানানো হলো যে তা শেষ ১০ দিনে। সুতরাং তোমাদের যে ইতিকাফ পছন্দ করবে, সে যেন ইতিকাফ করে।’ এরপর মানুষ তাঁর সঙ্গে ইতিকাফে শরিক হয়। (মুসলিম) 
হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘নবী করিম (সা.) আজীবন রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রীরাও ইতিকাফ করতেন।’ (বুখারি) 
ইতিকাফের ফজিলত সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এক দিন ইতিকাফ করবে, আল্লাহ তার এবং জাহান্নামের মধ্যে তিনটি গহ্বর সৃষ্টি করবেন, যার দূরত্ব আসমান-জমিনের দূরত্বের চেয়ে বেশি।’ (তাবরানি) 
আরেক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করবে, তাকে দুটি হজ ও দুটি ওমরাহর সওয়াব দান করা হবে।’ (শুআবুল ইমান) 

ইতিকাফের শর্ত
ইতিকাফ শুদ্ধ হওয়ার শর্ত তিনটি। 
এক.     মসজিদে অবস্থান করা; তবে নারীরা নিজ নিজ বাড়িতে ইতিকাফ করবে। 
দুই.     গোসল ফরজ হলে শরীর পবিত্র করে নেওয়া। 
তিন.     রোজা রাখা; অবশ্য এই বিধান শুধু ওয়াজিব ইতিকাফের জন্য। নফল ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত নয়।

ইতিকাফের গুরুত্বপূর্ণ বিধান
l পুরুষেরা মসজিদে ইতিকাফ করবে। এক মহল্লায় একাধিক মসজিদ থাকলে প্রতিটি মসজিদে ইতিকাফ করা উত্তম। তবে তা জরুরি নয়। বরং যেকোনো মসজিদে ইতিকাফ করলে মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে যথেষ্ট। (রদ্দুল মুহতার: ২/৪৪২, ২/৪৫, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৭/১৬৯) 
l কোনো গ্রামের মসজিদে অন্য গ্রামের লোকের ইতিকাফের মাধ্যমে ওই গ্রামের সবার পক্ষ থেকে ইতিকাফের সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া আদায় হয়ে যাবে। তবে গ্রামবাসীর জন্য উচিত তাদের মধ্য থেকে কেউ ইতিকাফে বসা। (ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৭/১৭১) 
l ইতিকাফ স্বেচ্ছায় পালন করতে হবে। শরিয়তে বিনিময় দিয়ে ভাড়া করে ইবাদত পালন করার সুযোগ নেই। তাই কাউকে টাকার বিনিময়ে ইতিকাফ করা এবং করানো সম্পূর্ণ নাজায়েজ। এভাবে ইতিকাফ করানোর মাধ্যমে মহল্লাবাসী দায়মুক্ত হতে পারবে না। (রদ্দুল মুহতার: ২/৫৯৫, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৭/১৭১) 
l ইতিকাফকারীর জন্য মসজিদের আদবের খেলাপ কোনো কাজ করা বা মুসল্লি ও ফেরেশতাদের কষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করার অনুমতি নেই। তাই নির্ভরযোগ্য বর্ণনা অনুযায়ী ইতিকাফকারী বায়ু নির্গমনের জন্য মসজিদ থেকে বের হয়ে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩৬১, ইমদাদুল ফাতাওয়া: ২/১৫২) 
l ইতিকাফকারী মসজিদের মুয়াজ্জিন হোক বা না হোক, বিদ্যুৎ থাকুক বা না থাকুক—সর্বাবস্থায় মসজিদের বাইরে গিয়ে আজান দিতে পারবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২১২, রদ্দুল মুহতার: ২/৪৪৬) 
l ইতিকাফকারীর জন্য জানাজা বা রোগী দেখার জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েজ নেই। তবে ইস্তেঞ্জা বা কোনো প্রয়োজনে বের হয়ে পথিমধ্যে রোগী দেখা এবং জানাজায় শরিক হওয়া জায়েজ আছে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২১২, মাআরিফুস সুনান: ৫/৫৪০) 
l ২০ রমজান মাগরিবের পর যদি কেউ প্রবেশ করে, তাহলে সুন্নত ইতিকাফ হবে না, তার ইতিকাফ নফল হিসেবে গণ্য হবে। (ইমদাদুল ফাতাওয়া) 
l ইতিকাফের শেষ সময় হলো ঈদের চাঁদ ওঠার দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তাই ২৯ রমজান বা ৩০ রমজান সূর্যাস্তের আগে যদি চাঁদ দেখা যায়, তবু সূর্য ডুবে যাওয়ার আগে মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না। সূর্য ডুবে যাওয়ার পর মসজিদ থেকে বের হতে পারবে। (ফাতাওয়া শামি: ২/১৩৭) 
l ইতিকাফকারীর জন্য প্রাকৃতিক ও শরিয়ত সমর্থিত প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েজ। তাই প্রস্রাব-পায়খানা, ফরজ গোসল, খাবার পৌঁছে দেওয়ার লোক না থাকলে খাবার নিয়ে আসার জন্য, ইতিকাফরত মসজিদে যদি জুমার ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে জুমার নামাজ আদায় করার জন্য অন্য মসজিদে যাওয়া জায়েজ। (ফাতাওয়া শামি: ২/১৩২) 
l প্রাকৃতিক ও শরিয়ত সমর্থিত প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হয়ে যদি প্রয়োজন শেষে দেরি করা হয়, তাহলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। (তাহতাবি: ৫৮৫; হিন্দিয়া: ১/২১২) 
l বাথরুম যদি মসজিদের অনেক দূরে থাকে, তাহলে প্রস্রাব-পায়খানার জন্য সেখানে যাওয়াও বৈধ। (ফাতাওয়া শামি: ২/১৩২) 
l ফরজ গোসল ছাড়া অন্য যেকোনো গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। (ফাতাওয়া শামি: ২/১৩২) 
l নারীরা ঘরে ইতিকাফ করবে। অবশ্য মসজিদে ইতিকাফ করলেও শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে নিজ ঘরে ইতিকাফ করাই উত্তম। এটিই বিশুদ্ধ মত। (উমদাতুল কারি: ১১ / ১৪৮; আল মাবসুত লি-সারাখসি: ৩ / ১১৯) 
l মসজিদে নারীরা ইতিকাফ করতে চাইলে শর্ত হলো, সেখানে সম্পূর্ণ পর্দার ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাদের অজু, গোসল ও বাথরুমের আলাদা ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাদের ইতিকাফের স্থানের অংশটি অবশ্যই পুরুষদের যাতায়াত থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হতে হবে। (ফাতহুল বারি: ৪/৩২৫) 

লেখক: ইসলামবিষয়ক গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খালেদা জিয়ার জানাজা পড়াবেন বায়তুল মোকাররমের খতিব

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বাদ জোহর বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এই জানাজায় ইমামতি করবেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক।

মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

মির্জা ফখরুল জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বুধবার বেলা ২টায় পার্লামেন্ট ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় জানাজা সম্পন্ন হবে। জানাজা শেষে শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোক পালনে ইসলামের নির্দেশনা

ইসলাম ডেস্ক 
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত
ব্লু মসজিদ, ইস্তাম্বুল। ছবি: সংগৃহীত

জীবনে প্রিয়জন হারানো এক অপূরণীয় বেদনা। এই কঠিন মুহূর্তে মানুষ কীভাবে আচরণ করবে, কেমনভাবে শোক প্রকাশ করবে—সেই বিষয়ে ইসলাম দিয়েছে পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি হলো—শোক প্রকাশে ভারসাম্য রাখা, কষ্টকে অস্বীকার না করা, আবার সীমালঙ্ঘনও না করা।

ইসলাম এ বিপদে ধৈর্য ও আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকার শিক্ষা দেয়। তবে কান্না করাকে নিষেধ করেনি, বরং তা স্বাভাবিক ও মানবিক অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত। রাসুলুল্লাহও (সা.) কেঁদেছেন তাঁর সন্তান ইবরাহিম (রা.)-এর মৃত্যুর সময়।

সাহাবি আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) বিস্ময় প্রকাশ করলে নবীজি (সা.) বলেন, ‘এ কান্না স্নেহ-ভালোবাসার প্রকাশ। আমার হৃদয় বেদনাহত, চোখ দুটো সিক্ত, তবে আমি বলছি সেই কথাই, যা আমার রবকে সন্তুষ্ট করে। ইবরাহিম, তোমার বিচ্ছেদে আমরা শোকাহত।’ (সহিহ বুখারি)

ইসলাম কান্নাকে মানবিক বললেও অতিরিক্ত বিলাপ, উচ্চ স্বরে চিৎকার, গায়ে চপেটাঘাত, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলা বা আকুতি-মিনতি করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মৃতের জন্য বিলাপ করা জাহিলি যুগের প্রথা। বিলাপকারী যদি মৃত্যুর আগে তওবা না করে, তবে কিয়ামতের দিন তাকে আগুনের পোশাক ও আলকাতরার চাদর পরানো হবে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ)

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় খালেদা জিয়ার অনন্য কিছু উদ্যোগ

ইসলাম ডেস্ক 
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আজ মঙ্গলবার ভোরে যখন কুয়াশাভেজা প্রকৃতিতে ফজরের আজান ধ্বনিত হচ্ছিল, এর ঠিক কিছু পরেই চিরদিনের জন্য চোখ বুজলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব খালেদা জিয়া। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি শুধু একজন সফল প্রধানমন্ত্রীই ছিলেন না, বরং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থরক্ষা এবং ইসলামি মূল্যবোধকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম এক বাতিঘর ছিলেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কজন রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধর্মীয় চেতনা ও মুসলমানদের অধিকার রক্ষায় আপসহীন ভূমিকা রেখেছেন, খালেদা জিয়ার নাম সেখানে অনেকটা অগ্রভাগেই থাকবে।

খালেদা জিয়া শুধু রাজনীতির ময়দানেই বিচরণ করেননি, তিনি অন্তরে লালন করতেন বাংলাদেশি মুসলিম জাতীয়তাবাদের আদর্শ। গৃহবধূ থেকে দেশের শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে আসার দীর্ঘ লড়াইয়ে তিনি সব সময় আলেমসমাজকে পরম মমতায় কাছে টেনে নিয়েছেন।

সংবিধানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও রাষ্ট্রধর্মের সুরক্ষা

১৯৯১ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর যখন নানামুখী রাজনৈতিক চাপ ছিল, তখন খালেদা জিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ বজায় রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। ২০০৫ সালের সংসদীয় কার্যবিবরণী সাক্ষ্য দেয়, তিনি বারবার সংসদে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন।

কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসার যুগান্তকারী সংস্কার

আলেমসমাজ ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের হৃদয়ে খালেদা জিয়া অমর হয়ে থাকবেন তাঁর শিক্ষা সংস্কারের জন্য।

  • ফাজিল ও কামিলের স্বীকৃতি: ২০০১-০৬ মেয়াদে ফাজিলকে ডিগ্রি এবং কামিলকে মাস্টার্সের সমমান দিয়ে তিনি মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের মূলধারার সঙ্গে প্রতিযোগিতার সুযোগ করে দেন।
  • কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি: ২০০৫ সালে আলেমদের সঙ্গে বৈঠকের পর ২০০৬ সালের ২০ ডিসেম্বর তিনি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়ার ঐতিহাসিক গেজেট প্রকাশ করেন। সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় বাস্তবায়ন অসম্পূর্ণ থাকলেও এটিই ছিল কওমি সনদের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাইলফলক।
  • ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ’ অনুষদসহ নতুন নতুন বিভাগ অনুমোদনের মাধ্যমে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষার প্রসারে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

ধর্মীয় স্থাপনা ও হজ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার

বায়তুল মোকাররম মসজিদের সংস্কার, জাতীয় ঈদগাহের আধুনিকায়ন এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম-মুয়াজ্জিন প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের পরিধি বাড়ানো ছিল তাঁর নিয়মিত কাজের অংশ। আল্লাহর ওলিদের মাজার রক্ষণাবেক্ষণেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত আন্তরিক। পাশাপাশি হজযাত্রীদের যাতায়াত সহজ করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে শক্তিশালী করা এবং সৌদি সরকারের সঙ্গে সফল কূটনীতির মাধ্যমে ভিসা সমস্যার সমাধান করেছিলেন তিনি।

ইসলামি অর্থনীতি ও বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব

খালেদা জিয়ার শাসনামলেই বাংলাদেশে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ও ইসলামি আর্থিক ব্যবস্থা দ্রুত বিস্তৃত হয়। মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে ইসলামি ব্যাংকিংকে আস্থার জায়গায় নিয়ে যেতে তাঁর সরকার নীতিগত সহায়তা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ওআইসিসহ সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাইয়ের মতো মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিল।

২০০৫ সালে ইউরোপে নবীজি (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশিত হলে তাঁর সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর নিন্দা জানিয়েছিল।

আজ ফজরের পর তিনি যখন মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন, তখন পেছনে রেখে গেছেন এমন এক কর্মময় জীবন, যা এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামের মর্যাদা রক্ষা এবং ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার যে বীজ তিনি বপন করেছিলেন, তা আজ এক বিশাল মহিরুহে পরিণত হয়েছে।

আল্লাহ তাঁকে তাঁর সকল নেক আমল কবুল করে এবং ভুলত্রুটি ক্ষমা করে জান্নাতুল ফিরদাউসের উচ্চ মাকাম দান করুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে যে দোয়া পড়বেন

ইসলাম ডেস্ক 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মানুষের জন্ম যেমন অবশ্যম্ভাবী, তেমনি তার মৃত্যুও পৃথিবীর এক অমোঘ সত্য। জীবনে চলার পথে যত সাফল্য, ব্যস্ততা বা আকাঙ্ক্ষা থাকুক; মৃত্যুর মুহূর্তে সবকিছু থেমে যায়। ইসলাম এই বাস্তবতাকে অত্যন্ত গভীরভাবে তুলে ধরেছে এবং আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে প্রতিটি প্রাণী একদিন তার প্রভুর কাছে ফিরে যাবে।

মৃত্যু অবধারিত ‎সত্য। তা থেকে পালানোর কোনো পথ নেই। কোনো বস্তু জীবনের অস্তিত্ব লাভ করলে তার মৃত্যু সুনিশ্চিত। কোরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে।

কেউ যখন মারা যায়, তার মৃত্যুর খবর শুনলে একটি দোয়া পড়তে হয়, দোয়াটি বর্ণিত হয়েছে পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ১৫৬ নম্বর আয়াতে।

দোয়াটি হলো: ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি; ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা।’

দোয়ার অর্থ: ‘আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব। হে আল্লাহ, আমাকে আমার এই বিপদে বিনিময় দান করুন এবং আমার জন্য এর চেয়ে উত্তম ব্যবস্থা করে দিন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়াকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, চুনারুঘাটে ‘চিতল মুখলিছ’কে গণপিটুনি

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কাল সাধারণ ছুটি

খালেদা জিয়ার মৃত্যু: সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির

খালেদা জিয়ার ৩ আসনে এখন কী হবে, জানাল নির্বাচন কমিশন

‘এর মানে, ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ, বিষয়টা আইসিসিতে যাওয়া উচিত’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত