আমজাদ ইউনুস
রাসুল (সা.)-এর হাদিসে এমন তিনজন শিশুর কথা উল্লেখ রয়েছে, যারা শৈশবে দোলনায় থাকা অবস্থায় কথা বলেছিল। প্রথমজন আল্লাহর নবী হজরত ইসা (আ.), দ্বিতীয়জন জুরাইজ নামক এক ব্যক্তি, আর তৃতীয়জন ছিল নাম না জানা এক শিশু। সেই শিশুর মুখে বোল ফোটার আগেই মায়ের সঙ্গে তার কথোপকথন হয়েছিল এবং সে তার মায়ের বিরোধিতা করেছিল। রাসুল (সা.) নিজেই বিস্ময়কর এ ঘটনা তাঁর সাহাবিদের শুনিয়েছিলেন। এখানে হাদিসের আলোকে সেই শিশুর গল্প তুলে ধরা হলো—
শিশুটি মায়ের দুধ পান করছিল। এমন সময় একজন ব্যক্তি দ্রুতগামী এক উন্নতমানের পশুর সওয়ারি হয়ে পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর পোশাক-পরিচ্ছদ উন্নত ছিল। শিশুটির মা বললেন, ‘হে আল্লাহ, আমার ছেলেটিকে এই ব্যক্তির মতো যোগ্য বানাও।’ শিশুটি দুধ পান ছেড়ে দিয়ে লোকটির দিকে এগিয়ে এসে তাকাল। এরপর বলল, ‘হে আল্লাহ, আমাকে এই ব্যক্তির মতো বানিয়ো না।’ এরপর ফিরে এসে ফের মায়ের দুধ পান করতে লাগল।
রাসুল (সা.) এই বর্ণনার সময় শিশুটির দুধ পানের চিত্র তুলে ধরেন এবং নিজের তর্জনী মুখে দিয়ে চুষে দেখান।
এরপর কিছু লোক একজন নারীকে মারতে মারতে বাঁ দিকে নিয়ে যাচ্ছিল আর বলছিল—তুমি ব্যভিচার করেছ এবং চুরি করেছ। ওই নারী বলছিল—আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই আমার উত্তম অভিভাবক।
শিশুটির মা এই দৃশ্য দেখে বললেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমার সন্তানকে এই নষ্ট নারীর মতো বানিয়ো না।’ শিশুটি দুধ পান ছেড়ে দিয়ে মেয়েটির দিকে তাকাল এবং বলল, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাকে এই নারীর মতো বানাও।’
এসময় মা ও শিশুর মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে যায়। মা বললেন, ‘হায় দুর্ভাগা, একটি সুন্দর মানুষ চলে যাওয়ার সময় আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ, আমার সন্তানকে এমন যোগ্য করে দাও।’ তুমি প্রত্যুত্তরে বললে, ‘হে আল্লাহ, আমাকে ওই লোকের মতো বানিয়ো না।’ আবার এই ক্রীতদাসীকে লোকেরা মারধর করতে করতে নিয়ে যাচ্ছে এবং বলছে—তুমি ব্যভিচার করেছ এবং চুরি করেছ। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ, আমার সন্তানকে এমন বানিয়ো না।’ আর তুমি বললে, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাকে এমন বানাও।’
শিশুটি এবার জবাব দিল, প্রথম ব্যক্তিটি ছিল স্বৈরাচার ও জালিম। সেজন্যই আমি বলেছি—হে আল্লাহ, আমাকে এই ব্যক্তির মতো বানিয়ো না।’ আর এই নারীকে তারা বলল—তুমি ব্যভিচার করেছ। প্রকৃতপক্ষে সে ব্যভিচার করেনি। তারা বলছিল—তুমি চুরি করেছ। আসলে সে চুরি করেনি। এজন্যই আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ, আমাকে এই নারীর মতো বানাও।’ (বুখারি, হাদিস: ৩৪৩৬; মুসলিম, হাদিস: ২৫৫০)
গল্পের ৩ শিক্ষা
মানুষের চাওয়া ও বাস্তবতা: অনেক সময় মানুষ এমন কিছু কামনা করে, যা প্রকৃতপক্ষে তার জন্য ক্ষতিকর হয়। মানুষ অনুধাবন করতে পারে না, তার আকাঙ্ক্ষিত বস্তুই একদিন তার ধ্বংসের কারণ হতে পারে। যেমন, এ গল্পের মা চরিত্রটি নিজের অজান্তেই তাঁর ছেলের জন্য স্বৈরাচার হওয়ার প্রার্থনা করেছিলেন। তিনি বুঝতে পারেননি, এটি তাঁর সন্তানের জন্য কত বড় ধ্বংসাত্মক হবে। প্রকৃতপক্ষে তিনি তার ছেলের ভালোই চেয়েছেন এবং কল্যাণকামনা করতেন।
ইসলামপ্রচারকের দায়িত্ব: মানুষকে সত্যের দিকে আহ্বান করার জন্য জ্ঞানের উপযুক্ত উপকরণ ও উপায় ব্যবহার করা উচিত। রাসুল (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তিনি সহজ ও চিত্রময় উপস্থাপনার মাধ্যমে জটিল বিষয়গুলো সাহাবিদের বোঝাতেন। যেমনটা এ গল্পে দেখা যায়। অন্য একদিন তিনি মাটিতে রেখাচিত্র এঁকে বলেছিলেন, ‘এটি আল্লাহর সরল পথ।’ এরপর তিনি দুপাশে ছোট ছোট রেখা এঁকে ব্যাখ্যা করলেন, ‘প্রতিটি রেখার সামনে একটি শয়তান দাঁড়িয়ে আছে, যে মানুষকে সেই পথে ডাকছে।’
আল্লাহর নিদর্শন ও সঠিক পথের সন্ধান: প্রত্যেক যুগেই মহান আল্লাহ এমন কিছু নিদর্শন রাখেন, যা মানুষকে তাঁর অস্তিত্বের প্রমাণ দেয়, তাঁকে চিনতে সাহায্য করে এবং সত্য-মিথ্যার মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য নির্ধারণ করে দেয়। পাশাপাশি তিনি এ নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে তাঁর পছন্দ ও অপছন্দের মূল্যবোধগুলো তুলে ধরেন।
রাসুল (সা.)-এর হাদিসে এমন তিনজন শিশুর কথা উল্লেখ রয়েছে, যারা শৈশবে দোলনায় থাকা অবস্থায় কথা বলেছিল। প্রথমজন আল্লাহর নবী হজরত ইসা (আ.), দ্বিতীয়জন জুরাইজ নামক এক ব্যক্তি, আর তৃতীয়জন ছিল নাম না জানা এক শিশু। সেই শিশুর মুখে বোল ফোটার আগেই মায়ের সঙ্গে তার কথোপকথন হয়েছিল এবং সে তার মায়ের বিরোধিতা করেছিল। রাসুল (সা.) নিজেই বিস্ময়কর এ ঘটনা তাঁর সাহাবিদের শুনিয়েছিলেন। এখানে হাদিসের আলোকে সেই শিশুর গল্প তুলে ধরা হলো—
শিশুটি মায়ের দুধ পান করছিল। এমন সময় একজন ব্যক্তি দ্রুতগামী এক উন্নতমানের পশুর সওয়ারি হয়ে পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর পোশাক-পরিচ্ছদ উন্নত ছিল। শিশুটির মা বললেন, ‘হে আল্লাহ, আমার ছেলেটিকে এই ব্যক্তির মতো যোগ্য বানাও।’ শিশুটি দুধ পান ছেড়ে দিয়ে লোকটির দিকে এগিয়ে এসে তাকাল। এরপর বলল, ‘হে আল্লাহ, আমাকে এই ব্যক্তির মতো বানিয়ো না।’ এরপর ফিরে এসে ফের মায়ের দুধ পান করতে লাগল।
রাসুল (সা.) এই বর্ণনার সময় শিশুটির দুধ পানের চিত্র তুলে ধরেন এবং নিজের তর্জনী মুখে দিয়ে চুষে দেখান।
এরপর কিছু লোক একজন নারীকে মারতে মারতে বাঁ দিকে নিয়ে যাচ্ছিল আর বলছিল—তুমি ব্যভিচার করেছ এবং চুরি করেছ। ওই নারী বলছিল—আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই আমার উত্তম অভিভাবক।
শিশুটির মা এই দৃশ্য দেখে বললেন, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমার সন্তানকে এই নষ্ট নারীর মতো বানিয়ো না।’ শিশুটি দুধ পান ছেড়ে দিয়ে মেয়েটির দিকে তাকাল এবং বলল, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাকে এই নারীর মতো বানাও।’
এসময় মা ও শিশুর মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে যায়। মা বললেন, ‘হায় দুর্ভাগা, একটি সুন্দর মানুষ চলে যাওয়ার সময় আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ, আমার সন্তানকে এমন যোগ্য করে দাও।’ তুমি প্রত্যুত্তরে বললে, ‘হে আল্লাহ, আমাকে ওই লোকের মতো বানিয়ো না।’ আবার এই ক্রীতদাসীকে লোকেরা মারধর করতে করতে নিয়ে যাচ্ছে এবং বলছে—তুমি ব্যভিচার করেছ এবং চুরি করেছ। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ, আমার সন্তানকে এমন বানিয়ো না।’ আর তুমি বললে, ‘হে আল্লাহ, তুমি আমাকে এমন বানাও।’
শিশুটি এবার জবাব দিল, প্রথম ব্যক্তিটি ছিল স্বৈরাচার ও জালিম। সেজন্যই আমি বলেছি—হে আল্লাহ, আমাকে এই ব্যক্তির মতো বানিয়ো না।’ আর এই নারীকে তারা বলল—তুমি ব্যভিচার করেছ। প্রকৃতপক্ষে সে ব্যভিচার করেনি। তারা বলছিল—তুমি চুরি করেছ। আসলে সে চুরি করেনি। এজন্যই আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ, আমাকে এই নারীর মতো বানাও।’ (বুখারি, হাদিস: ৩৪৩৬; মুসলিম, হাদিস: ২৫৫০)
গল্পের ৩ শিক্ষা
মানুষের চাওয়া ও বাস্তবতা: অনেক সময় মানুষ এমন কিছু কামনা করে, যা প্রকৃতপক্ষে তার জন্য ক্ষতিকর হয়। মানুষ অনুধাবন করতে পারে না, তার আকাঙ্ক্ষিত বস্তুই একদিন তার ধ্বংসের কারণ হতে পারে। যেমন, এ গল্পের মা চরিত্রটি নিজের অজান্তেই তাঁর ছেলের জন্য স্বৈরাচার হওয়ার প্রার্থনা করেছিলেন। তিনি বুঝতে পারেননি, এটি তাঁর সন্তানের জন্য কত বড় ধ্বংসাত্মক হবে। প্রকৃতপক্ষে তিনি তার ছেলের ভালোই চেয়েছেন এবং কল্যাণকামনা করতেন।
ইসলামপ্রচারকের দায়িত্ব: মানুষকে সত্যের দিকে আহ্বান করার জন্য জ্ঞানের উপযুক্ত উপকরণ ও উপায় ব্যবহার করা উচিত। রাসুল (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তিনি সহজ ও চিত্রময় উপস্থাপনার মাধ্যমে জটিল বিষয়গুলো সাহাবিদের বোঝাতেন। যেমনটা এ গল্পে দেখা যায়। অন্য একদিন তিনি মাটিতে রেখাচিত্র এঁকে বলেছিলেন, ‘এটি আল্লাহর সরল পথ।’ এরপর তিনি দুপাশে ছোট ছোট রেখা এঁকে ব্যাখ্যা করলেন, ‘প্রতিটি রেখার সামনে একটি শয়তান দাঁড়িয়ে আছে, যে মানুষকে সেই পথে ডাকছে।’
আল্লাহর নিদর্শন ও সঠিক পথের সন্ধান: প্রত্যেক যুগেই মহান আল্লাহ এমন কিছু নিদর্শন রাখেন, যা মানুষকে তাঁর অস্তিত্বের প্রমাণ দেয়, তাঁকে চিনতে সাহায্য করে এবং সত্য-মিথ্যার মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য নির্ধারণ করে দেয়। পাশাপাশি তিনি এ নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে তাঁর পছন্দ ও অপছন্দের মূল্যবোধগুলো তুলে ধরেন।
ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধান হজ। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান এবং শারীরিকভাবে সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানদের ওপর হজ ফরজ। ফরজ হজ যথাসম্ভব দ্রুত আদায় করা উচিত।
১১ ঘণ্টা আগেনবী করিম (সা.)-এর ভালোবাসায় প্রকৃত মুমিনের হৃদয় সব সময় সিক্ত থাকে। তাঁকে দেখার বাসনা জাগে মনের গহিনে। তাঁকে কীভাবে দেখব, তিনি তো দুনিয়া থেকে চলে গেছেন দেড় হাজার বছর আগে। কিন্তু কিছু আমলের মাধ্যমে নবীপ্রেমিক পাগলপ্রায় উম্মতের দিলের কামনা অল্প করে হলেও পূরণ হতে পারে। স্বপ্নে দেখা মিলতে পারে প্রিয়...
১ দিন আগেগোটা পৃথিবীটাই এখন হাতের মুঠোয়। হজ ব্যবস্থাপনায়ও প্রযুক্তি আর উদ্ভাবনীর সন্নিবেশ ঘটেছে। হজের নিবন্ধন, তাঁবু বরাদ্দ, হোটেল ভাড়া ও অন্যান্য সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি, ভিসা প্রক্রিয়াকরণ প্রভৃতিই সম্পন্ন হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে।
২ দিন আগেমা—ছোট্ট এ শব্দের মাঝে লুকিয়ে রয়েছে ভালোবাসা, ত্যাগ ও স্নেহের প্রতিচ্ছবি। সন্তানের জন্য মা নিজের আরাম-আয়েশ, ঘুম, এমনকি জীবন পর্যন্ত ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকেন। মা শুধু সন্তান জন্মই দেন না; বরং তার মানসিক, নৈতিক ও আত্মিক গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি সন্তানের প্রথম শিক্ষিকা...
২ দিন আগে