Ajker Patrika

ট্রাম্প-জেলেনস্কির তপ্ত বাগ্‌বিতণ্ডার সূত্রপাত যেভাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ মার্চ ২০২৫, ১৫: ৪৬
ইউক্রেনের কাছে ৫০০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের বিরল খনিজ চেয়েছিলেন ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের কাছে ৫০০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের বিরল খনিজ চেয়েছিলেন ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গতকাল শুক্রবার হোয়াইট হাউসে বৈঠকে বসেন। বৈঠকটি সৌজন্যমূলক কথাবার্তার মাধ্যমে শুরু হলেও কয়েক মিনিটের মধ্যেই উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে রূপ নেয়। হোয়াইট হাউসে উপস্থিত বৈশ্বিক গণমাধ্যমের সামনেই এই আলাপ প্রকাশ্য বিবাদে পরিণত হয়। পরে ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলকে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করতে বলা হয় এবং প্রেসিডেন্টের জন্য নির্ধারিত আনুষ্ঠানিক মধ্যাহ্নভোজ অব্যবহৃত অবস্থায় থেকে যায়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও এএফপিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈঠকটি হ্যান্ডশেক এবং হাসির মাধ্যমে শুরু হলেও দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধানে কূটনীতির প্রয়োজনীয়তার কথা জোর দিয়ে বলার পর।

ভ্যান্স বলেন, ‘চার বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, যিনি সংবাদ সম্মেলনে দাঁড়িয়ে (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট) ভ্লাদিমির পুতিন সম্পর্কে কঠোর ভাষায় কথা বলতেন। তারপর পুতিন ইউক্রেনে হামলা চালিয়ে দেশের একটি বিশাল অংশ ধ্বংস করে দেন। শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ হলো কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জো বাইডেনের পথ অনুসরণ করেছিলাম, নিজেদের শক্তি দেখিয়ে মনে করেছিলাম, মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথার চেয়ে তাঁর কর্মই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমেরিকাকে মহৎ করে তোলে কূটনীতির প্রতি তাঁর মনোযোগ। সেটাই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করছেন।’

এ সময় জেলেনস্কি জানতে চান, তিনি কি ভ্যান্সকে একটি প্রশ্ন করতে পারেন? ভ্যান্স সম্মতি জানালে জেলেনস্কি বলেন, ‘পুতিন পূর্ব ইউক্রেনের বড় অংশ এবং ক্রিমিয়াসহ আমাদের ভূমি দখল করেছেন। ২০১৪ সালে তিনি এটি দখল করেন। বছরের পর বছর ধরে তিনি (পুতিন) এটি করেছেন।’

জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘আমি শুধু বাইডেনের কথা বলছি না, সেই সময় প্রেসিডেন্ট ছিলেন (বারাক) ওবামা, তারপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, তারপর প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং এখন আবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ঈশ্বরের দয়ায় এবার তিনি (পুতিনকে) থামাবেন। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে কেউ তাঁকে থামাতে পারেনি। তিনি দখল করেছেন, হত্যা করেছেন।’

জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘২০১৪ থেকে ২০২২ পর্যন্ত পরিস্থিতি একই ছিল। মানুষ মারা যাচ্ছিল, কিন্তু কেউ তাঁকে (পুতিনকে) থামাননি। আমাদের অনেকবার তাঁর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে...আমরা একটি চুক্তিতে পৌঁছেছিলাম। (ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল) মাখোঁ এবং (সাবেক জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা) মের্কেল যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সবাই আমাকে বলেছিল যে, তিনি (পুতিন) কখনো সীমা লঙ্ঘন করবেন না...কিন্তু পরে তিনি চুক্তি ভেঙে আমাদের মানুষ হত্যা করেন, বন্দীদের বিনিময় করেননি। আমরা বন্দিবিনিময়ের চুক্তি করেছিলাম, কিন্তু তিনি তা করেননি। আপনি কোন ধরনের কূটনীতির কথা বলছেন, জেডি? আপনি কী বোঝাতে চাইছেন?’

উত্তরে ভ্যান্স বলেন, ‘আমি এমন কূটনীতির কথা বলছি, যা আপনার দেশ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।’ জেলেনস্কি তখন বলতে যান, ‘হ্যাঁ, কিন্তু যদি আপনি...।’ কিন্তু ভ্যান্স তাঁকে থামিয়ে দেন।

ভ্যান্স বলেন, ‘জনাব প্রেসিডেন্ট (জেলেনস্কি), সম্মানের সঙ্গে বলছি, এটি অসম্মানজনক যে আপনি ওভাল অফিসে এসে এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়ার সামনে বিতর্ক করছেন। বর্তমানে, আপনারা ফ্রন্টলাইনে লড়াইয়ের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে সৈন্য পাঠাচ্ছেন, কারণ আপনাদের জনবলের সংকট চলছে। আপনার উচিত আমাদের প্রেসিডেন্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।’

উত্তপ্ত বিতর্কের মধ্যে জেলেনস্কি জানতে চান, ভ্যান্স কখনো ইউক্রেনে গিয়েছেন কি না, বাস্তব পরিস্থিতি দেখার জন্য। ভ্যান্স বলেন, ‘আমি খবর দেখেছি এবং জানি যে কী হচ্ছে। আপনি মানুষকে শুধু প্রচারণামূলক ভ্রমণে নিয়ে যান।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনার সেনাবাহিনীতে লোক নিয়োগের সমস্যার কথা কি আপনি অস্বীকার করছেন? এবং আপনি কি মনে করেন এটি যথাযথ যে, আপনি যুক্তরাষ্ট্রের ওভাল অফিসে এসে সেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, যারা আপনার দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে?’

এতে জেলেনস্কি বলেন, ‘যুদ্ধের সময় সবাই সমস্যায় থাকে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা এখন সমাধানের কথা ভাবছেন না, তবে ভবিষ্যতে এটি অনুভব করবেন।’

এ বক্তব্য ট্রাম্পকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। ট্রাম্প বলেন, ‘আপনি জানেন না। আমাদের বলে দিতে আসবেন না, আমরা কী অনুভব করব। আমরা সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করছি। আমাদের শেখানোর চেষ্টা করবেন না, আমরা কী অনুভব করব।’

জেলেনস্কি জবাবে বলেন, ‘আমি আপনাদের কিছু শেখাচ্ছি না, স্রেফ কথার জবাব দিচ্ছি...।’ ট্রাম্প তখন উচ্চ স্বরে বলেন, ‘আমরা কী অনুভব করব, তা আপনার শিখিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। আমরা দৃঢ় এবং শক্তিশালী অনুভব করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনার দেশের অবস্থা ভালো নয়। আপনি নিজেকে একটি ভয়াবহ অবস্থায় ফেলেছেন।’

জেলেনস্কি কিছু বলার চেষ্টা করলে ট্রাম্প তাকে থামিয়ে বলেন, ‘আপনি লাখ লাখ মানুষের জীবন নিয়ে জুয়া খেলছেন, বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি নিচ্ছেন এবং আপনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অসম্মান দেখাচ্ছেন।’

ভ্যান্স তখন জেলেনস্কিকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কি একবারও ধন্যবাদ দিয়েছেন?’ জেলেনস্কি বলেন, ‘অনেকবার।’ ভ্যান্স পাল্টা বলেন, ‘না, এই বৈঠকে? এই পুরো বৈঠকে একবারও? যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রেসিডেন্টের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন, যিনি আপনার দেশকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।’

জেলেনস্কি বলতে শুরু করেন, ‘হ্যাঁ, আপনি মনে করেন যে যদি আপনি উচ্চ স্বরে যুদ্ধের কথা বলেন...!’ কিন্তু ট্রাম্প তাঁকে থামিয়ে দেন। ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি উচ্চ স্বরে কিছু বলছেন না। আপনার দেশ গভীর সংকটে রয়েছে। আপনি এই যুদ্ধে জিতছেন না। আমাদের সহায়তা ছাড়া, দুই সপ্তাহেই সব শেষ হয়ে যেত।’

জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি পুতিনের কাছ থেকে শুনেছি, তিন দিনে শেষ হয়ে যাবে।’ ট্রাম্প বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে ব্যবসা চালানো কঠিন হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা বিপর্যস্ত অবস্থায় আছেন, আপনার মানুষ মরছে, সৈন্যসংখ্যা কমছে। এবং এরপর আপনি আমাদের বলছেন, “আমি যুদ্ধবিরতি চাই না, আমি লড়াই চালিয়ে যেতে চাই’’।’

ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা কৃতজ্ঞতার অনুভূতি দেখাচ্ছেন না এবং এটি মোটেও ভালো বিষয় নয়।’ পরিশেষে ট্রাম্প বলেন, ‘ঠিক আছে, আমরা যথেষ্ট দেখেছি। আপনি কী মনে করেন? এটি দুর্দান্ত টেলিভিশন শো হবে এবং আমি তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালায় কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালায় কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে

ভারতে বড়দিন উদ্‌যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালায় কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতেও বড়দিনকেন্দ্রিক নানা বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে।

নলবাড়ির সিনিয়র পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ দাস ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, পানিগাঁওয়ের সেন্ট মেরিস ইংলিশ স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় অভিযোগ করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা স্কুলের বড়দিনের সাজসজ্জা নষ্ট করার পাশাপাশি শহরের একটি দোকানে বিক্রি হওয়া ক্রিসমাস অর্নামেন্টও ভাঙচুর করে।

তবে বড়দিন উদ্‌যাপনের সময় সবচেয়ে বেশি উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে বিজেপি শাসিত রাজ্য ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে। ছত্তিশগড়ে রাজধানী রায়পুরের ম্যাগনেটো মলে লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক অতর্কিতে হামলা চালায় এবং বড়দিনের সব সাজসজ্জা গুঁড়িয়ে দেয়। কথিত ধর্মান্তরের প্রতিবাদে ‘সর্ব হিন্দু সমাজ’-এর ডাকা ধর্মঘট চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এফআইআর করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এদিকে বিজেপি শাসিত আরেক রাজ্য মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলায় একটি গির্জায় প্রার্থনা চলাকালে কট্টরপন্থী বজরং দলের কর্মীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ ছাড়া কাটঙ্গা এলাকায় এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা বিজেপি নেত্রী অঞ্জু ভার্গবের বিরুদ্ধে। ওই নারীর অপরাধ ছিল, তিনি বড়দিন উদ্‌যাপনে গির্জায় গিয়েছিলেন। যদিও ওই নারী স্পষ্ট করেছেন, বড়দিন পালন করা মানেই ধর্ম পরিবর্তন করা নয়।

রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর জেলায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এক বিতর্কিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো স্কুল শিশুদের ‘সান্তা ক্লজ’ সাজতে বাধ্য করতে পারবে না। স্থানীয় এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়, যেখানে দাবি করা হয়েছে—সনাতন ধর্মাবলম্বী-অধ্যুষিত এই এলাকায় শিশুদের ওপর খ্রিষ্টীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

রাজধানী দিল্লির লাজপতনগর এলাকায় বড়দিনের টুপি পরা একদল নারীকে হেনস্তা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বজরং দলের সদস্যরা ওই নারীদের ধর্মান্তর চেষ্টার অভিযোগে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করে। তবে দিল্লি পুলিশ বিষয়টিকে ‘তুচ্ছ ব্যক্তিগত বিতর্ক’ হিসেবে অভিহিত করে কোনো মামলা নেয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রিসমাসের প্রার্থনায় পুতিনের মৃত্যু চাইলেন জেলেনস্কি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক বিশ্বাস ও ঐক্য দখল করতে পারবে না।

পুতিনের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ আমরা সবাই একটি স্বপ্ন ভাগ করে নিচ্ছি। আর আমাদের সবার একটিই কামনা—সে ধ্বংস হোক; যেমনটা সবাই মনে মনে বলে।’ এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

জেলেনস্কির এই ভাষণ এমন এক সময়ে এল, যখন বড়দিনের আগের দিনই রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন এবং বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

জেলেনস্কি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘ক্রিসমাসের প্রাক্কালে রুশরা আবারও দেখিয়েছে তারা আসলে কারা। ব্যাপক গোলাবর্ষণ, শত শত শাহেদ ড্রোন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, কিনঝাল হামলা—সবকিছুই ব্যবহার করা হয়েছে। এটাই ঈশ্বরহীন আঘাত।’

তবে যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও শান্তির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তখন অবশ্যই আরও বড় কিছুর জন্য চাই। আমরা ইউক্রেনের জন্য শান্তি চাই। আমরা এর জন্য লড়ছি, প্রার্থনা করছি এবং আমরা এটি পাওয়ার যোগ্য।’

একই সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে একটি ২০ দফা পরিকল্পনার কথাও জানান। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি বলেন—শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইউক্রেন দেশের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্পাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে পারে, তবে শর্ত হলো রাশিয়াকেও একইভাবে সেনা সরাতে হবে এবং ওই অঞ্চল আন্তর্জাতিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিরস্ত্রীকৃত এলাকায় পরিণত করতে হবে।

দনবাস অঞ্চল নিয়ে এটিই এখন পর্যন্ত জেলেনস্কির সবচেয়ে স্পষ্ট সমঝোতার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। একই ধরনের ব্যবস্থা রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের এলাকাতেও প্রযোজ্য হতে পারে বলে জানান তিনি। তবে যে কোনো শান্তি পরিকল্পনাই গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে বলে জোর দেন জেলেনস্কি।

এদিকে রাশিয়া এখনো দখলকৃত অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়নি। বর্তমানে লুহানস্কের অধিকাংশ ও দোনেৎস্কের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’খ্যাত গণেশ উইকে এনকাউন্টারে নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৫৭
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত

ওডিশার কান্ধামাল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা গণেশ উইকে (৬৯) নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে এই অভিযানে গণেশসহ চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ওডিশা পুলিশ। নিহত গণেশ উইকে মাওবাদীদের ‘সেন্ট্রাল কমিটি’র (সিসি) সদস্য এবং ওডিশার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ওডিশায় মাওবাদীবিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এএনও) সঞ্জীব পান্ডা জানান, কান্ধামাল জেলার চাকাপাদা থানা এলাকায় রাম্ভা বন রেঞ্জের কাছে এই এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত দুই দিনে কান্ধামাল জেলায় মোট ছয়জন মাওবাদী নিহত হলেন।

গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। গণেশ উইকে ‘রূপা’, ‘রাজেশ তিওয়ারি’, ‘পাক্কা হনুমন্তু’সহ একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। গণেশ উইকেকে ধরতে তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ রুপি।

তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ের কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে বেলঘর থানা এলাকার গুম্মা জঙ্গলে প্রথম সংঘর্ষে দুজন মাওবাদী নিহত হন। এরপর আজ সকালে চাকাপাদা এলাকায় দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় ওডিশা পুলিশের এসওজি, সিআরপিএফ এবং বিএসএফের যৌথ বাহিনী। আজকের অভিযানে দুই নারী, দুই পুরুষসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরনে ইউনিফর্ম ছিল।

এনকাউন্টারস্থল থেকে দুটি ইনসাস রাইফেল ও একটি পয়েন্ট থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সফলতাকে ‘নকশালমুক্ত ভারত’ গড়ার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূল করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গণেশ উইকের নিধন ওডিশাকে মাওবাদীমুক্ত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, এই অভিযানের ঠিক দুই দিন আগে মালকানগিরি জেলায় ২২ জন মাওবাদী ওডিশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শীর্ষ নেতৃত্বের এ পতন এই অঞ্চলে মাওবাদী সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে ৩৫০০ কিমি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা ভারতের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নিজেদের পারমাণবিক সক্ষমতার প্রদর্শন হিসেবে পারমাণবিক সাবমেরিন থেকে একটি মধ্যপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে ভারত। কে-৪ ক্ষেপণাস্ত্রটি গত মঙ্গলবার বঙ্গোপসাগরে ভারতের পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন আইএনএস আরিঘাত থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। বিশাখাপত্তনম উপকূলের কাছে এই পরীক্ষা চালানো হয়।

এনডিটিভি জানিয়েছে, সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের নৌভিত্তিক পারমাণবিক সক্ষমতাকে বেশ শক্তিশালী করেছে।

কে-৪ সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপযোগ্য ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ২০২৪ সালের ২৯ আগস্ট ভারতীয় নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এর মাধ্যমে স্থল, আকাশ ও সমুদ্র—এই তিন মাধ্যম থেকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম দেশগুলোর তালিকায় জায়গা করে নেয় ভারত।

অগ্নি-৩ স্থলভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি কে-৪ বর্তমানে ভারতের সর্বাধিক পাল্লার সমুদ্রভিত্তিক কৌশলগত অস্ত্র। স্থল সংস্করণটিকে সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণের উপযোগী করে পরিবর্তন করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে সাবমেরিনের উৎক্ষেপণ সাইলো থেকে বেরিয়ে পানির ভেতর ভেসে উঠে সমুদ্রপৃষ্ঠে পৌঁছানোর পর রকেট ইঞ্জিন চালু করে আকাশে ছুটে যাওয়ার সক্ষমতা।

এই ক্ষেপণাস্ত্র ২ দশমিক ৫ টন ওজনের পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম এবং ভারতের অরিহন্ত শ্রেণির সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা যায়।

কে-৪ হলো ভারতের পারমাণবিক ত্রিমাত্রিক প্রতিরোধব্যবস্থার সবচেয়ে নীরব অংশ। কারণ, অরিহন্ত শ্রেণির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিনগুলো দীর্ঘ সময় ধরে অচেনা সমুদ্রাঞ্চলে সম্পূর্ণ নীরবে প্রতিরোধ টহল পরিচালনার জন্য তৈরি।

কে-সিরিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর নামের ‘কে’ অক্ষরটি ভারতের সাবেক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির রূপকার এ পি জে আবদুল কালামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাখা হয়। ভারতের সমন্বিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত