Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্রের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো ভেড়ার চারণভূমি, উল্টো টাকা পাচ্ছেন কৃষকেরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রে সোলার প্যানেলে ভেড়া চরিয়ে অর্থ আয়ের বিকল্প উৎস তৈরি করেছেন কৃষকেরা। ছবি: এএফপি
যুক্তরাষ্ট্রে সোলার প্যানেলে ভেড়া চরিয়ে অর্থ আয়ের বিকল্প উৎস তৈরি করেছেন কৃষকেরা। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের কৃষক চ্যাড রেইনস এবং তাঁর পরিবার ৪ প্রজন্ম ধরে তুলা চাষ করে আসছিলেন। কিন্তু গত বছর তারা প্রথমবারের মতো তুলা চাষ করেননি। রেইনস তাঁর ট্রাক্টর বন্ধ রেখে বেশির ভাগ কৃষিজমি এক প্রতিবেশীকে লিজ দেন। তিনি বছরটি কাটান ভেড়ার পাল চরিয়ে। তিনি ভেড়াগুলোকে একটি সোলার প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে এমন একটি এলাকায় নিয়ে যান। যেখানে ভেড়াগুলো সোলার প্যানেলের চারপাশে গজিয়ে ওঠা ঘাস খেয়ে ফেলে। চ্যাড রেইনস পাঁচটি সোলার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন, তাদের খামারে গজিয়ে ওঠা ঘাস পরিষ্কারের জন্য। এই চুক্তিগুলো চ্যাডের কাছে তুলা চাষের চেয়ে বেশি লাভজনক বলে প্রমাণিত হয়।

৫২ বছর বয়সী চাষি চ্যাড রেইনস বলেন, ‘তুলার দাম অনেক দিন ধরেই খুব খারাপ, তাই আমাকে ভিন্ন কিছু করতেই হতো।’

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকেরা ক্রমবর্ধমান ঋণ ও আয় সংকটের মুখে পড়ায় বিকল্প আয়ের পথ খুঁজছেন। এসব পথের মধ্যে একটি হলো সোলার গ্রেজিং অর্থাৎ সোলার প্যানেল স্থাপন করা কৃষি জমিতে গবাদিপশু চরিয়ে ঘাস শেষ করা। কৃষি অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি মন্দার কারণে, চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং এই পরিস্থিতিতে আয়ের উৎস বৈচিত্র্যময় করার প্রবণতা বাড়ছে।

রেইনস গত বছর তুলা চাষ করলে, তাঁর আনুমানিক ২ লাখ ডলার ক্ষতি হতো। শুধু ভেড়ার মাংস বিক্রি করেও পর্যাপ্ত লাভ করা কঠিন হতো। কিন্তু সোলার গ্রেজিং থেকে আয় এবং রেস্তোরাঁ সরবরাহকারীদের কাছে ভেড়ার মাংস বিক্রির মাধ্যমে তিনি ৩ লাখ ডলার লাভ করেছেন।

রেইনস বলেন, ‘আমার সব খরচ, শ্রমিকদের বেতন থেকে শুরু করে রক্ষী কুকুরগুলোর জন্য মাসে ২ হাজার ডলার খরচ—সব সৌর প্রকল্প থেকেই আসে।’ তিনি জানান, তাঁর ছেলেও নতুন এই উদ্যোগে সাহায্য করছেন।

তবে মার্কিন সরকারি নীতিতে পরিবর্তনের কারণে এমন সুযোগ কমে যেতে পারে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি সম্পর্কিত তহবিল বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছেন। এর ফলে, ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্টের অধীনে সবুজ জ্বালানি প্রকল্পের জন্য দেওয়া প্রণোদনা প্রভাবিত হতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসন সরকারি অনুদান ও ঋণের পর্যালোচনার অংশ হিসেবে ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্টের অর্থায়ন স্থগিত করেছে। যদিও আদালতের আদেশের ফলে কিছু তহবিল মুক্ত করা গেছে, কিন্তু অনেক গোষ্ঠীই এই তহবিল পেতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছে।

গত দুই বছরে বিশ্বব্যাপী অতিরিক্ত মজুত এবং কম চাহিদার কারণে মার্কিন তুলার দাম প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে। মার্কিন তুলা রপ্তানিও হ্রাস পেয়েছে, কারণ সস্তা ব্রাজিলের তুলা এবং দুর্বল চীনা চাহিদার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশটির হিস্যা কমে গেছে। তুলার বাজারে মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান ভিএলএম কমোডিটিজের ম্যানেজিং পার্টনার লুই বারবেরা বলেন, ‘গত তিন বছর টেক্সাসের তুলা চাষিদের জন্য ভয়াবহ ছিল।’

কানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটির কৃষি অর্থনীতিবিদ জেনিফার ইফট জানান, যদিও এ বছর সামগ্রিকভাবে মার্কিন কৃষি আয় উন্নতি করবে বলে আশা করা হচ্ছে, তবে এটি মূলত উচ্চ পশুখাদ্য মূল্যের কারণে এবং ২০২৫ সালের আমেরিকান রিলিফ অ্যাক্টের অধীনে প্রত্যাশিত সরকারি সহায়তার ফলে হবে। তবে মুদ্রাস্ফীতির সমন্বয়ে হিসাব করলে, ভুট্টা ও সয়াবিন চাষিদের প্রকৃত আয় ২০১০ সালের পর সর্বনিম্ন থাকবে।

যেসব কৃষক ঋণের ওপর বেশি নির্ভরশীল, তারা ২০২৪ সালে ঋণ পরিশোধে ধীর গতি দেখিয়েছেন এবং অনেকেই টিকে থাকার জন্য সম্পদ বিক্রি করছেন—এমন তথ্য দিয়েছে কানসাস সিটি ও মিনিয়াপোলিসের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক। মিনিয়াপোলিস ফেডারেল রিজার্ভের সিনিয়র পরীক্ষক ও কৃষি ঝুঁকি বিশেষজ্ঞ টেইট বার্গ বলেন, ‘কৃষি মন্দার সময় আয় বৈচিত্র্যময় করার বিষয়টি খামারগুলোকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।’

অনেক কৃষক ব্যয়বহুল বীজ ও যন্ত্রপাতি মেরামতের খরচ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাদের কাছে সোলার গ্রেজিং চুক্তি সহায়ক পথ। এই চুক্তিগুলো তাদের মুনাফার পথ দেখাচ্ছে।

আমেরিকান সোলার গ্রেজিং অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুসারে, গত বছরের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের সৌর খামারগুলোতে ১ লাখ ২৯ হাজার একর জমিতে ভেড়া চরানো হয়েছে। ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ১৫ হাজার একর। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে সোলার গ্রেজিংয়ে ব্যবহৃত ভেড়ার সংখ্যা ৮০ হাজার থেকে বেড়ে ১ লাখ ১৩ হাজারে দাঁড়িয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে সোলার প্যানেলে ভেড়া চরিয়ে অর্থ আয়ের বিকল্প উৎস তৈরি করেছেন কৃষকেরা। ছবি: এএফপি
যুক্তরাষ্ট্রে সোলার প্যানেলে ভেড়া চরিয়ে অর্থ আয়ের বিকল্প উৎস তৈরি করেছেন কৃষকেরা। ছবি: এএফপি

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের সৌর শিল্প বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং ২০২২ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রণীত একটি আইন সবুজ জ্বালানি প্রকল্পগুলোর জন্য ভর্তুকি দেওয়ার ফলে শিল্পটি আরও প্রসার লাভ করে। সৌর শক্তি শিল্পের শীর্ষ সংস্থা সোলার এনার্জি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও সিইও আবিগেল রস হপার জানান, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদেও এই খাতের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকার আশা করা হচ্ছে।

হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আন্না কেলি রয়টার্সকে বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন প্রকল্পগুলো বাদ দেবেন যা আমেরিকান জনগণের স্বার্থে নয় এবং এমন প্রকল্প রেখে দেবেন যা আমেরিকা ফার্স্ট নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

ইন্ডিয়ানা ও ইলিনয় রাজ্যের মতো এলাকায় সৌর শিল্পের প্রসার তরুণ কৃষকদের আকৃষ্ট করেছে। কারণ, তারা বিশাল ঋণের বোঝা না নিয়েই কৃষিতে প্রবেশ করতে চান। ভার্জিনিয়ার মার্কাস ও জেস গ্রে তাদের চাষাবাদের পরিকল্পনা পিছিয়ে দিয়ে ডমিনিয়ন এনার্জি ও আরবান গ্রিডের সঙ্গে লাভজনক চুক্তি করেছেন। বর্তমানে তারা ৪ হাজার একর সৌর খামারে ৯০০টি ভেড়া চরাচ্ছেন।

৩৯ বছর বয়সী জেস গ্রে বলেন, ‘এটি একটি নিশ্চিত আয়ের উৎস, যেখানে আমরা নিজেরাই দরদাম করতে পারি। ফসল ঘরে তোলার পর স্থানীয় বাজারে নিয়ে গিয়ে তাদের নির্ধারিত দামে বিক্রি করার চেয়ে এটি অনেক ভালো।’

সৌর প্রকল্পে ঘাস ব্যবস্থাপনার জন্য ভেড়া ব্যবহার করলে ব্যয় সাশ্রয় হয়। টেনেসিভিত্তিক সৌর কোম্পানি সিলিকন র‍্যাঞ্চের সিইও রেগান ফার জানান, শুরুতে অবকাঠামোগত ব্যয় বেশি হলেও দীর্ঘ মেয়াদে এটি লাভজনক। তিনি বলেন, ‘যদি ভেড়ার পাল স্থানান্তর করতে না হয় বা বাইরে থেকে পানি সরবরাহ করতে না হয়, তাহলে এটি আরও লাভজনক হয়। একজন মালিকে প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা ঘাস কাটানোর জন্য নিয়োগ দেওয়ার চেয়ে মেষপালকদের ন্যায্য মজুরি দেওয়াই আমাদের জন্য সহজ ও কম ব্যয়বহুল।’

সোলার গ্রেজিংয়ের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে সিলিকন র‍্যাঞ্চ জর্জিয়ায় একটি ভেড়া প্রজনন কর্মসূচি চালু করেছে, যা স্থানীয় কৃষকদের সহায়তা করবে।

রেইনস এবং তাঁর পরিবারের জন্য তুলা চাষ ছেড়ে সোলার গ্রেজিংয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি ছিল পুরোপুরি আর্থিক। রেইনস বলেন, ‘যদি আমি ফসল চাষ চালিয়ে যেতাম, তাহলে আমাদের পারিবারিক খামার এখন বন্ধ হয়ে যেত।’

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

৬৯ বছর বয়সী এ নেতার ভাষণের ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিজয়বর্গীয় তাঁর বক্তব্যে দাবি করেন, সম্রাট শাহজাহান একটি মন্দিরকে কবরে রূপান্তরিত করে তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন।

বিজয়বর্গীয় বলেন, মমতাজকে প্রথমে বুরহানপুরে সমাহিত করা হয়েছিল। পরে তাঁর দেহ এমন একটি স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়, যেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছিল। সেই মন্দিরের ওপরই বর্তমান তাজমহল দাঁড়িয়ে রয়েছে।

একই অনুষ্ঠানে বিজেপির জাতীয় কার্যকরী সভাপতি নীতিন নবীনের উদ্দেশে বিজয়বর্গীয় বলেন, বিহারে জন্ম নিলেই যে একজন মানুষকে নম্র হতে হবে, তার কোনো মানে নেই, তবে নীতিন নবীন অত্যন্ত নম্রতার সঙ্গে এগিয়ে গেছেন। তাঁর এই মন্তব্যকে বিহারিদের প্রতি অবমাননাকর হিসেবে দেখছেন অনেকে।

বিজয়বর্গীয়ের এ বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র ভূপেন্দ্র গুপ্ত বলেন, বিজেপি মন্ত্রীরা সব সীমা লঙ্ঘন করছেন এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। ভূপেন্দ্র গুপ্ত বিদ্রূপ করে বলেন, একজন মন্ত্রী বলছেন ভাস্কো দা গামা ভারত আবিষ্কার করেননি, আরেকজন বলছেন তাজমহল আসলে মন্দির। তাঁদের উচিত বিশ্ববাসীর জন্য ইতিহাসের একটি নতুন বই লেখা। তাহলেই বোঝা যাবে, পৃথিবী তাঁদের সম্পর্কে কী ভাবে।

ভূপেন্দ্র প্রশ্ন তোলেন, যদি বিহারিদের সম্পর্কে বিজেপির এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, তবে কেন তারা সেখানে নীতীশ কুমারের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজনীতি করছে?

তবে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের জন্য বিতর্ক নতুন কিছু নয়। এর আগেও তিনি একাধিকবার আপত্তিকর মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন।

সম্প্রতি ইন্দোরে দুই অস্ট্রেলীয় নারী ক্রিকেটার হেনস্তার শিকার হলে তিনি দায়ীদের ধরার বদলে খেলোয়াড়দেরই ‘শিক্ষা নেওয়া’র পরামর্শ দিয়েছিলেন। নারীদের পোশাক নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে তিনি এর আগে বলেছিলেন, ‘অল্প পোশাকে’ মেয়েদের দেখলে তাঁর ভালো লাগে না। এ ছাড়া রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আন্তরিকতাকে ‘বিদেশি মূল্যবোধ’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন তিনি।

অনেকে বলছেন, তাজমহল নিয়ে এমন দাবি উগ্র ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আগে থেকেই ছিল। তবে একজন দায়িত্বশীল কেবিনেট মন্ত্রীর মুখে এমন কথা সামাজিক মেরুকরণকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ভারত, মধ্যপ্রদেশ, তাজমহল, বিতর্ক, মন্তব্য, মন্ত্রী, মন্দির, ইতিহাস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে

ভারতে বড়দিন উদ্‌যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্রিক নানা বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে।

নলবাড়ির সিনিয়র পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ দাস ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, পানিগাঁওয়ের সেন্ট মেরিস ইংলিশ স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় অভিযোগ করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা স্কুলের বড়দিনের সাজসজ্জা নষ্ট করার পাশাপাশি শহরের একটি দোকানে বিক্রি হওয়া ক্রিসমাস অর্নামেন্টও ভাঙচুর করেন।

তবে বড়দিন উদ্‌যাপনের সময় সবচেয়ে বেশি উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে বিজেপিশাসিত রাজ্য ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে। ছত্তিশগড়ে রাজধানী রায়পুরের ম্যাগনেটো মলে লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক অতর্কিতে হামলা চালান এবং বড়দিনের সব সাজসজ্জা গুঁড়িয়ে দেন। কথিত ধর্মান্তরের প্রতিবাদে ‘সর্ব হিন্দু সমাজ’-এর ডাকা ধর্মঘট চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এফআইআর করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এদিকে বিজেপিশাসিত আরেক রাজ্য মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলায় একটি গির্জায় প্রার্থনা চলাকালে কট্টরপন্থী বজরং দলের কর্মীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে ভেতরে ঢুকে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। এ ছাড়া কাটঙ্গা এলাকায় এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা বিজেপি নেত্রী অঞ্জু ভার্গবের বিরুদ্ধে। ওই নারীর অপরাধ ছিল, তিনি বড়দিন উদ্‌যাপনে গির্জায় গিয়েছিলেন। যদিও ওই নারী স্পষ্ট করেছেন, বড়দিন পালন করা মানেই ধর্ম পরিবর্তন করা নয়।

রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর জেলায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এক বিতর্কিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো স্কুল শিশুদের ‘সান্তা ক্লজ’ সাজতে বাধ্য করতে পারবে না। স্থানীয় এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়, যেখানে দাবি করা হয়েছে—সনাতন ধর্মাবলম্বী-অধ্যুষিত এই এলাকায় শিশুদের ওপর খ্রিষ্টীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

রাজধানী দিল্লির লাজপতনগর এলাকায় বড়দিনের টুপি পরা একদল নারীকে হেনস্তা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বজরং দলের সদস্যরা ওই নারীদের ধর্মান্তরচেষ্টার অভিযোগে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেন। তবে দিল্লি পুলিশ বিষয়টিকে ‘তুচ্ছ ব্যক্তিগত বিতর্ক’ হিসেবে অভিহিত করে কোনো মামলা নেয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রিসমাসের প্রার্থনায় পুতিনের মৃত্যু চাইলেন জেলেনস্কি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ক্রিসমাস উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যুর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বড়দিনের আগের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ওই বার্তায় তিনি বলেন—রাশিয়া যত কষ্টই চাপিয়ে দিক না কেন, তারা ইউক্রেনীয়দের হৃদয়, পারস্পরিক বিশ্বাস ও ঐক্য দখল করতে পারবে না।

পুতিনের নাম সরাসরি উল্লেখ না করলেও জেলেনস্কি বলেন, ‘আজ আমরা সবাই একটি স্বপ্ন ভাগ করে নিচ্ছি। আর আমাদের সবার একটিই কামনা—সে ধ্বংস হোক; যেমনটা সবাই মনে মনে বলে।’ এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

জেলেনস্কির এই ভাষণ এমন এক সময়ে এল, যখন বড়দিনের আগের দিনই রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন এবং বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

জেলেনস্কি তাঁর ভাষণে বলেন, ‘ক্রিসমাসের প্রাক্কালে রুশরা আবারও দেখিয়েছে তারা আসলে কারা। ব্যাপক গোলাবর্ষণ, শত শত শাহেদ ড্রোন, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, কিনঝাল হামলা—সবকিছুই ব্যবহার করা হয়েছে। এটাই ঈশ্বরহীন আঘাত।’

তবে যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও শান্তির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তখন অবশ্যই আরও বড় কিছুর জন্য চাই। আমরা ইউক্রেনের জন্য শান্তি চাই। আমরা এর জন্য লড়ছি, প্রার্থনা করছি এবং আমরা এটি পাওয়ার যোগ্য।’

একই সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে একটি ২০ দফা পরিকল্পনার কথাও জানান। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি বলেন—শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ইউক্রেন দেশের পূর্বাঞ্চলীয় শিল্পাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে পারে, তবে শর্ত হলো রাশিয়াকেও একইভাবে সেনা সরাতে হবে এবং ওই অঞ্চল আন্তর্জাতিক বাহিনীর তত্ত্বাবধানে নিরস্ত্রীকৃত এলাকায় পরিণত করতে হবে।

দনবাস অঞ্চল নিয়ে এটিই এখন পর্যন্ত জেলেনস্কির সবচেয়ে স্পষ্ট সমঝোতার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। একই ধরনের ব্যবস্থা রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আশপাশের এলাকাতেও প্রযোজ্য হতে পারে বলে জানান তিনি। তবে যে কোনো শান্তি পরিকল্পনাই গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে বলে জোর দেন জেলেনস্কি।

এদিকে রাশিয়া এখনো দখলকৃত অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয়নি। বর্তমানে লুহানস্কের অধিকাংশ ও দোনেৎস্কের প্রায় ৭০ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’খ্যাত গণেশ উইকে এনকাউন্টারে নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৫৭
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত
গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। ছবি: সংগৃহীত

ওডিশার কান্ধামাল জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা গণেশ উইকে (৬৯) নিহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) ভোরে এই অভিযানে গণেশসহ চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ওডিশা পুলিশ। নিহত গণেশ উইকে মাওবাদীদের ‘সেন্ট্রাল কমিটি’র (সিসি) সদস্য এবং ওডিশার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান ছিলেন।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি ওডিশায় মাওবাদীবিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এএনও) সঞ্জীব পান্ডা জানান, কান্ধামাল জেলার চাকাপাদা থানা এলাকায় রাম্ভা বন রেঞ্জের কাছে এই এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে গত দুই দিনে কান্ধামাল জেলায় মোট ছয়জন মাওবাদী নিহত হলেন।

গণেশ উইকেকে বলা হতো মাওবাদীদের ‘মস্তিষ্ক’। গণেশ উইকে ‘রূপা’, ‘রাজেশ তিওয়ারি’, ‘পাক্কা হনুমন্তু’সহ একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত ছিলেন। গণেশ উইকেকে ধরতে তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখ রুপি।

তেলেঙ্গানার নালগোন্ডা জেলার বাসিন্দা গণেশ চার দশক ধরে মাওবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

২০১৩ সালের ছত্তিশগড়ের কুখ্যাত ‘ঝিরম ঘাঁটি’ গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই গণেশ উইকে। সেখানে শীর্ষ কংগ্রেস নেতাসহ ৩২ জন নিহত হয়েছিলেন।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল বুধবার রাতে বেলঘর থানা এলাকার গুম্মা জঙ্গলে প্রথম সংঘর্ষে দুজন মাওবাদী নিহত হন। এরপর আজ সকালে চাকাপাদা এলাকায় দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালায় ওডিশা পুলিশের এসওজি, সিআরপিএফ এবং বিএসএফের যৌথ বাহিনী। আজকের অভিযানে দুই নারী, দুই পুরুষসহ মোট চারজন মাওবাদী নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের পরনে ইউনিফর্ম ছিল।

এনকাউন্টারস্থল থেকে দুটি ইনসাস রাইফেল ও একটি পয়েন্ট থ্রি জিরো থ্রি রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সফলতাকে ‘নকশালমুক্ত ভারত’ গড়ার পথে একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘২০২৬ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে দেশ থেকে মাওবাদী সন্ত্রাস নির্মূল করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গণেশ উইকের নিধন ওডিশাকে মাওবাদীমুক্ত করার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, এই অভিযানের ঠিক দুই দিন আগে মালকানগিরি জেলায় ২২ জন মাওবাদী ওডিশা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শীর্ষ নেতৃত্বের এ পতন এই অঞ্চলে মাওবাদী সংগঠনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত