Ajker Patrika

পারভেজ মোশাররফ: সেনাশাসক থেকে বিস্মৃত এক রাজনীতিক

মারুফ ইসলাম
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩: ৫১
পারভেজ মোশাররফ: সেনাশাসক থেকে বিস্মৃত এক রাজনীতিক

বিরল রোগ অ্যামাইলয়েডোসিসে দীর্ঘদিন যুদ্ধ করার পর অবশেষে পৃথিবীর মায়া ছাড়লেন পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সেনাশাসক জেনারেল পারভেজ মোশাররফ। ৭৯ বছর বয়সে থামল তাঁর জীবনযাত্রা। আজ রোববার দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে মারা গেছেন তিনি।

দীর্ঘ ৯ বছর পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন জেনারেল পারভেজ মোশাররফ। ২০০১ সালে তিনি দেশটির দশম প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন এবং ২০০৮ সালের শুরু পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

মোশাররফের জন্ম অবিভক্ত ভারতের দিল্লিতে, ১৯৪৩ সালের ১১ আগস্ট। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তাঁর পরিবার পাকিস্তানের করাচিতে পাড়ি জমিয়েছিল। সেখানে সেন্ট প্যাট্রিক স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল তাঁর। পরে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি কাকুলে যোগ দেন এবং ১৯৬৪ সালে সেখান থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন পারভেজ মোশাররফ।

পারভেজ মোশাররফের প্রথম যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা হয় ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়। তিনি ১৯৬৬ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত এলিট স্পেশাল সার্ভিসেস গ্রুপের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের যুদ্ধের সময় তিনি একটি এসএসজি কমান্ডো ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার ছিলেন। পরে তিনি ক্রমশ সামরিক কাজে দক্ষতা অর্জন করতে থাকেন এবং সেনাবাহিনীতে দ্রুত পদোন্নতি লাভ করেন।

১৯৯৮ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ তাঁকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন। এর পরের বছরই তিনি একটি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শরিফ সরকারকে উৎখাত করে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন।

১৯৯৯ সালের রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান
১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর পাকিস্তানের কতিপয় সেনাসদস্য প্রধানমন্ত্রীর হাউস দখল করে নেন। প্রেসিডেন্ট নওয়াজ শরিফ তখন শ্রীলঙ্কা সফরে ছিলেন। সেখান থেকে দেশে ফেরার পথে পাকিস্তানের বিমানবন্দরে তাঁকে নামতে বাধা দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে পারভেজ মোশাররফ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন, সংবিধান স্থগিত করেন এবং প্রধান নির্বাহীর ভূমিকা গ্রহণ করেন। এরপর ২০০১ সালে মোশাররফ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হন। 

সেনাশাসক থেকে রাজনীতিতে এলেও ক্রমশ বিস্মৃত হয়েছেন পারভেজ মোশাররফপ্রেসিডেন্ট হিসেবে মোশাররফের চ্যালেঞ্জ
মোশাররফ প্রেসিডেন্ট হওয়ার মাত্র কয়েক মাস পরেই যুক্তরাষ্ট্রে ভয়ংকর ৯/১১ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপন করেন পারভেজ মোশাররফ। পরবর্তী সময়েও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই সম্পর্ক ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। 

২০০২ সালে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে সময়ে তিনি পাকিস্তান মুসলিম লীগ-কায়েদ (পিএমএল-কিউ), মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট, মুত্তাহিদা মজলিশ-ই-আমলসহ ছয়টি ধর্মীয় দলের জোটের সঙ্গে জোটবদ্ধ হন। ওই নির্বাচনে তিনি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন এবং পরে ১৭তম সংশোধনী পাস করে ১৯৯৯ সালের অভ্যুত্থান ও তাঁর নেওয়া অন্যান্য পদক্ষেপকে বৈধতা দেন। 

২০০৪ সালের জানুয়ারিতে মোশাররফ পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ এবং চারটি প্রাদেশিক পরিষদে ৫৬ শতাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় একটি আস্থা ভোটে উতরে যান। ২০০৬ সালে মোশাররফ ‘ইন দ্য লাইন অব ফায়ার’ নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। 

গত বছরের জুনে পারভেজ মোশাররফ গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।২০০৭ সালের মার্চে এই সেনাশাসক তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ইফতিখার মুহাম্মদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ‘পদের অপব্যবহারের’ অভিযোগ তুলে তাঁকে বরখাস্ত করেন। ঘটনাটি আইনজীবী ও নাগরিক সমাজের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। দেশজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়। মোশাররফের চেয়ার নড়বড়ে হয়ে ওঠে। ওই বছরের ২০ জুন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি ইফতিখার মুহাম্মদ চৌধুরীকে তাঁর পদে পুনর্বহাল করেন এবং মোশাররফের বরখাস্তের আদেশ বাতিল করেন।

২০০৭ সালের ৩ নভেম্বর পারভেজ মোশাররফ আবার দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন এবং বিচারপতিকে পদচ্যুত করেন। জরুরি অবস্থা জারির ২৫ দিনের মাথায় তিনি জেনারেল আশফাক পারভেজ কায়ানিকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব দেন। পরে ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর তিনি জরুরি অবস্থা তুলে নেন। 

অভিশংসনের আগেই পদত্যাগ
২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতৃত্বাধীন জোট সরকার গঠন করে এবং মোশাররফের বিরুদ্ধে অভিশংসনের সংসদীয় প্রক্রিয়া শুরু করে। মোশাররফ প্রথমে পদত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে অভিশংসন চূড়ান্ত হওয়ার আগেই তিনি প্রেসিডেন্টের পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন।

এরপর মোশাররফের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা হয়। বেনজির ভুট্টো হত্যা, নবাব আকবর বাগতির হত্যাকাণ্ড এবং ২০০৭ সালের নভেম্বরে জরুরি অবস্থা জারির পর ৬২ জন বিচারকের ‘অবৈধ বন্দী’ সংক্রান্ত মামলায়ও তাঁর নাম ছিল। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ২০১০ সালে তিনি পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এপিএমএল) নামে রাজনৈতিক দল খোলেন।

দীর্ঘ ৯ বছর পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন জেনারেল পারভেজ মোশাররফস্বেচ্ছা নির্বাসন ও অসুস্থতা
২০১৩ সালের ৫ এপ্রিল মোশাররফের বিরুদ্ধে বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের বহির্গমন নিয়ন্ত্রণ তালিকা (ইসিএল) থেকে মোশাররফের নাম বাদ দেয়। এরপর মোশাররফ চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালের ১৭ মার্চে দুবাই যান। দুবাইয়ে তিনি স্বেচ্ছা নির্বাসন নেন এবং আর কখনোই পাকিস্তানে ফিরে আসেননি।

পিএমএল-এন সরকার ২০০৭ সালের ৩ নভেম্বর দেশে জরুরি অবস্থা জারির সময় সংবিধান স্থগিত করার জন্য মোশাররফের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। সেই মামলায় ২০১৯ সালে পাকিস্তানের একটি বিশেষ আদালত মোশাররফকে মৃত্যুদণ্ড দেন। মৃত্যুদণ্ডাদেশের এক মাস পরে লাহোর হাইকোর্ট মোশাররফের বিরুদ্ধে পূর্ববর্তী সরকারের গৃহীত সমস্ত পদক্ষেপকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন। ফলে তাঁর মৃত্যুদণ্ড বাতিল হয়ে যায়। তার পরও তিনি দেশে ফেরেননি। 

২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো পারভেজ মোশাররফের অসুস্থতার কথা জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়। তখন তাঁর রাজনৈতিক দল জানিয়েছিল, তিনি বিরল রোগ অ্যামাইলয়েডোসিসে ভুগছেন।

গত বছরের জুনে পারভেজ মোশাররফ গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সে সময় তিনি ভেন্টিলেটরে ছিলেন বলেও গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। এমনকি তাঁর মৃত্যুর গুজবও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে তা নাকচ করা হয়। 

মোশাররফের অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তাঁর পরিবার তখন একটি বিবৃতি দিয়েছিল। বিবৃতিতে বলা হয়, তিনি ভেন্টিলেটরে নেই। অসুস্থতাজনিত (অ্যামাইলয়েডোসিস) জটিলতার কারণে তিনি তিন সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন। শারীরিক অবস্থা ক্রমশ জটিলতর হচ্ছে এবং বিভিন্ন অঙ্গ অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। সেই সব অঙ্গ আর কার্যকর করে তোলা সম্ভব নয়। আপনারা সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন। 

মানবশরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও টিস্যুতে অ্যামাইলয়েড নামক একটি অস্বাভাবিক প্রোটিন তৈরির কারণে অ্যামাইলয়েডোসিস রোগ হয়। এই রোগ হলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও টিস্যুগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।

অবশেষে সেই রোগের কাছেই তিনি পরাস্ত হলেন। জীবনাবসান হলো সেনাশাসক থেকে রাজনীতিতে আসা এক নেতার। যদিও পরবর্তী সময়ে তাঁর নাম রাজনীতি থেকে ক্রমশ বিস্মৃতই হয়েছে।

সূত্র: ডন, জিও নিউজ, বিবিসি ও রয়টার্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে উত্তেজনা: শিখ ও হিন্দু বিক্ষোভকারীদের মধ্যে হাতাহাতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিক্ষোভকারী শিখদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে ওসমান হাদির ছবিও দেখা যায়। ছবি: এক্স
বিক্ষোভকারী শিখদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে ওসমান হাদির ছবিও দেখা যায়। ছবি: এক্স

লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে গত শনিবার একটি বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বেশ উত্তেজনা তৈরি হয়। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর কথিত নির্যাতনের প্রতিবাদে আয়োজিত এই সমাবেশে স্বাধীন খালিস্তানপন্থী শিখ অধিকার কর্মী এবং একদল হিন্দু বিক্ষোভকারী মুখোমুখি হলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্রিটিশ পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আয়োজকদের বরাত দিয়ে পাকিস্তানি দৈনিক ডন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আয়োজিত সমাবেশে খালিস্তান রেফারেন্ডাম অভিযানের সমন্বয়ক পরমজিৎ সিং পাম্মা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে হরদীপ সিং নিজ্জার এবং শরিফ ওসমান বিন হাদির ছবি দেখা গেছে। সমাবেশের একপর্যায়ে ভারতীয় এক হিন্দু বিক্ষোভকারীর সঙ্গে পাম্মার কথা-কাটাকাটি এবং পরে হাতাহাতি শুরু হয়। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে সেখানে দায়িত্বরত মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেন এবং দুই পক্ষকে আলাদা করে দেন।

বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রবেশপথের কাছে একটি কর্ডন তৈরি করে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যান। এ সময় তাঁরা ভারত সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক স্লোগান দেন। বিশেষ করে হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যা এবং অন্যান্য শিখ নেতাদের খুনের পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাত রয়েছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।

উল্লেখ্য, ভারত সরকার পরমজিৎ সিং পাম্মাকে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড টেররিস্ট’ বা অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করলেও পাম্মা ও তাঁর সমর্থকেরা এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।

গত বছরের জুনে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার খুন হওয়ার পর থেকে ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন চরম আকার ধারণ করেছে। একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্রে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গেও ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছে মার্কিন বিচার বিভাগ।

লন্ডনের এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সেই বৈশ্বিক উত্তেজনার ছায়া দেখা গেছে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, কোনো বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি এবং পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি।

খালিস্তান আন্দোলনের শিকড় ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগ এবং পাঞ্জাব বিভাজনের সময় পর্যন্ত বিস্তৃত। স্বাধীন শিখ রাষ্ট্রের দাবিতে এই আন্দোলন দশকের পর দশক ধরে চলে আসছে। এই আন্দোলন বর্তমানে বৈশ্বিক রাজনীতিতে ভারত-কানাডা এবং ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি সংবেদনশীল ইস্যু হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েল কেন প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসরায়েলের স্বীকৃতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে সোমালিল্যান্ড। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলের স্বীকৃতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে সোমালিল্যান্ড। ছবি: এএফপি

ইসরায়েল কেন সোমালিয়া থেকে স্বাধীন হতে চাওয়া সোমালিল্যান্ডকে প্রথম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিল—এই প্রশ্ন ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। আফ্রিকার হর্ন অঞ্চলের স্বঘোষিত স্বাধীন রাষ্ট্র সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েল শুধু একটি কূটনৈতিক সিদ্ধান্তই নেয়নি, বরং মধ্যপ্রাচ্য ও লোহিত সাগর ঘিরে চলমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই স্বীকৃতির পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক—এই তিনটি প্রধান কারণ। সোমালিল্যান্ডের অবস্থান অত্যন্ত কৌশলগত। এটি এডেন উপসাগরের তীরে অবস্থিত এবং ইয়েমেনের খুব কাছেই, যেখানে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা সক্রিয়। চলতি বছরে হুতি ও ইসরায়েলের মধ্যে একাধিকবার হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের প্রতিবাদে হুতিরা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালায়। জবাবে ইয়েমেনের সানা ও হোদেইদায় হুতি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় হামলা চালায় ইসরায়েল।

এই প্রেক্ষাপটে ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের গবেষক ডেভিড মাকোভস্কি প্রশ্ন তুলেছেন—সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে কি ইসরায়েল সেখানে সামরিক সুবিধা বা গোয়েন্দা উপস্থিতির পথ খুলেছে? বিশেষ করে হুতি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় এটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

ইসরায়েলের গণমাধ্যম ‘চ্যানেল ১২’ জানিয়েছে, সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আব্দিরাহমান মোহাম্মদ আবদুল্লাহি গোপনে একাধিকবার ইসরায়েল সফর করেছেন। গত অক্টোবরে তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ও মোসাদের প্রধান ডেভিড বারনিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে নেতানিয়াহু এই স্বীকৃতির ক্ষেত্রে মোসাদের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।

তবে এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে সোমালিয়া ও আফ্রিকান ইউনিয়ন। মিসর ও ফিলিস্তিনসহ কয়েকটি আরব দেশও এর সমালোচনা করেছে। অতীতে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোর করে সোমালিল্যান্ডে স্থানান্তরের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, যদিও সোমালিল্যান্ডের কর্মকর্তারা এই ধরনের কোনো যোগাযোগের কথা অস্বীকার করেছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি ইসরায়েলের জন্য অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। সোমালিল্যান্ডের বন্দরনগরী বেরবেরা ইসরায়েলকে লোহিত সাগরে প্রবেশের সুযোগ দিতে পারে। এমন হলে বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাব আল-মানদেব প্রণালির ওপর নজরদারি চালাতে পারবে ইসরায়েল। তবে সব মিলিয়ে, সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিয়ে ইসরায়েল ইতিহাস তৈরি করলেও এর পূর্ণ প্রভাব ও ফলাফল এখনো স্পষ্ট নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২০২৫ সালের সেরা সিইও কে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: দ্য ইকোনমিস্ট
ছবি: দ্য ইকোনমিস্ট

২০২৫ সাল ছিল বিশ্ব করপোরেট নেতৃত্বের জন্য এক কঠিন পরীক্ষার বছর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার ফলে শুরু হয় নতুন বাণিজ্যযুদ্ধ ও অনিশ্চিত নীতিনির্ধারণ। একই সঙ্গে চীন ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে প্রযুক্তিগত আধিপত্যের লড়াই আরও তীব্র হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে বিপুল প্রত্যাশা থাকলেও, সেটিকে লাভজনক ব্যবসায় রূপ দেওয়ার কাজ অনেক সিইওর জন্য হতাশাজনকই থেকে যায়।

তবে এই অস্থিরতার মধ্যেও কিছু প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ব্যতিক্রমী সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। টানা তৃতীয়বারের মতো ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ এবারও (২০২৫ সাল) সেরা সিইও নির্বাচন করেছে। এ ক্ষেত্রে এসঅ্যান্ডপি ১২০০ সূচকের অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোকে তাদের খাতভিত্তিক গড়ের তুলনায় অতিরিক্ত শেয়ারহোল্ডার রিটার্নের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর তিন বছরের কম সময় দায়িত্বে থাকা সিইওদের বাদ দিয়ে শীর্ষ ১০ জনকে প্রাথমিক তালিকায় রাখা হয়।

এই তালিকায় ছিলেন—জার্মান অস্ত্র নির্মাতা রাইনমেটালের আরমিন পাপারগার, স্বর্ণখনি জায়ান্ট নিউমন্টের টম পামার, ফুজিকুরার ওকাদা নাওকি, ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির ডেভিড জাসলাভ, হানহা অ্যারোস্পেসের সন জে-ইল, মাইক্রনের সঞ্জয় মেহরোত্রা, কিনরস গোল্ডের জে পল রোলিনসন, রবিনহুডের ভ্লাদিমির টেনেভ, এসকে হাইনিক্সের কাক নো-জং এবং সিগেট টেকনোলজির ডেভ মসলে।

তবে অতীতের দুর্বল পারফরম্যান্স, করপোরেট গভর্ন্যান্স সমস্যা কিংবা নিছক সৌভাগ্যের কারণে অনেকেই চূড়ান্ত বিবেচনা থেকে বাদ পড়েছেন। স্বর্ণের দাম প্রায় ৬৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় খনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বাড়লেও, সেটিকে সিইওদের কৃতিত্ব হিসেবে ধরা হয়নি। মেমোরি চিপ খাতে এআই বুমের সুফল পেলেও, সেখানে এসকে হাইনিক্সের গবেষণা ও উন্নয়নে ধারাবাহিক বিনিয়োগ আলাদা করে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

সবশেষে ২০২৫ সালের সেরা সিইও হিসেবে রাইনমেটালের আরমিন পাপারগারকেই বেছে নিয়েছে ‘দ্য ইকোনমিস্ট’। তাঁর নেতৃত্বে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশসহ ১৫৮ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে। ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাইনমেটাল বড় বড় চুক্তি জয় করেছে এবং নৌযান নির্মাণ খাতেও সম্প্রসারণে নেমেছে। ২০১৩ সাল থেকে দায়িত্বে থাকা পাপারগার ইউক্রেন যুদ্ধের আগেই ইউরোপের প্রতিরক্ষা শিল্পের সম্ভাবনা অনুধাবন করেছিলেন। দূরদর্শিতা, সাহস ও দৃঢ় নেতৃত্বের ফলেই ২০২৫ সালের সেরা সিইওর স্বীকৃতি তাঁর হাতেই উঠেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এবার ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বৈঠক—কী আছে সর্বশেষ ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএনএন
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএনএন

ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে একটি ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবকে সামনে রেখে রোববার (২৮ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। জেলেনস্কির কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এই খসড়া প্রস্তাবকে তিনি ভবিষ্যতে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করার একটি সম্ভাব্য ভিত্তি হিসেবে দেখছেন।

এর আগে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২৮ দফার একটি খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চললেও সেটিকে রাশিয়ার দাবির প্রতি অতিরিক্ত সহানুভূতিশীল মনে করা হয়েছিল। কয়েক সপ্তাহের আলোচনার পর প্রস্তাবটি সংশোধন করে ২০ দফায় নামিয়ে আনা হয়। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, অধিকাংশ বিষয়ে পক্ষগুলোর অবস্থান অনেকটাই কাছাকাছি এসেছে। তবে এখনো দুটি ইস্যুতে ঐকমত্য হয়নি—ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ এবং জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা ও পরিচালনা।

প্রস্তাবনার শুরুতেই ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব পুনর্ব্যক্ত করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিঃশর্ত আগ্রাসনবিরোধী চুক্তির প্রস্তাব রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি শান্তি বজায় রাখতে সীমান্তবর্তী সংঘর্ষরেখা নজরদারির জন্য মহাকাশভিত্তিক মানববিহীন প্রযুক্তি ব্যবহারের কথাও এতে অন্তর্ভুক্ত আছে।

এই কাঠামো অনুযায়ী, ইউক্রেন তার সশস্ত্র বাহিনীর বর্তমান শক্তি—প্রায় ৮ লাখ সেনা—অক্ষুণ্ন রাখবে। যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো ও ইউরোপীয় দেশগুলো ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫-এর আদলে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে। অপরদিকে ইউক্রেন ও ইউরোপের বিরুদ্ধে আগ্রাসন না করার নীতি নিজ দেশের আইনে এবং পার্লামেন্টের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিতে হবে রাশিয়াকে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে ইউক্রেনের জন্য রয়েছে বড় পরিসরের পুনর্গঠন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল পুনর্গঠন, মানবিক সহায়তা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য একাধিক তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার লক্ষ্য প্রায় ৮০০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ। ইউক্রেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পাবে এবং অস্থায়ীভাবে ইউরোপীয় বাজারে বিশেষ সুবিধা ভোগ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার কথাও বলা হয়েছে।

সবচেয়ে জটিল ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ভূখণ্ড প্রশ্ন। রাশিয়া দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহার চায়, অন্যদিকে ইউক্রেন বর্তমান যুদ্ধরেখায় সংঘর্ষ বন্ধের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র এখানে একটি নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চল ও মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব দিয়েছে।

যুদ্ধবন্দীর মতো মানবিক বিষয়ে ‘সবার বিনিময়ে সবার মুক্তি’, আটক বেসামরিক নাগরিক ও শিশুদের ফেরত এবং যুদ্ধাহতদের সহায়তার কথা রয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করবে ইউক্রেন।

এই শান্তিচুক্তি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হবে এবং এর বাস্তবায়ন তদারক করবে একটি ‘পিস কাউন্সিল’, যার সভাপতিত্ব করবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সব পক্ষ একমত হলে সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে—এমনটাই বলা হয়েছে এই ২০ দফা প্রস্তাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত