Ajker Patrika

সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের হাতকে শক্তিশালী করলেন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১০ মে ২০২৫, ১২: ৫০
ছবি: এআই দিয়ে তৈরি।
ছবি: এআই দিয়ে তৈরি।

ভারতের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে নিজের তৈরি করা সংকটে হোঁচট খাচ্ছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। তবে এই সংকটের মধ্যেই দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এক ঐতিহাসিক রায় তাঁকে এনে দিয়েছে আরও বেশি কর্তৃত্ব। গত বুধবার (৭ মে) সামরিক আদালতে সাধারণ নাগরিকদের বিচার বৈধ ঘোষণা করে একটি রায় দেয় দেশটির সুপ্রিম কোর্ট, যা কার্যত সামরিক প্রতিষ্ঠানের হাতকে আরও শক্ত করেছে।

২০২৩ সালের অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সামরিক আদালতে বেসামরিক নাগরিকদের বিচার ‘অসাংবিধানিক’ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। এবার সাত সদস্যের একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ ৫-২ ভোটে সেই রায় বাতিল করেছেন। এর ফলে ২০২৩ সালের ৯ মে ইমরান খানের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে সেনা স্থাপনায় হামলায় জড়িত বেসামরিক ব্যক্তিদের সামরিক আদালতে বিচার করার পথ খুলে গেল।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দা ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই রায়ের মাধ্যমে পাকিস্তান আর্মি অ্যাক্টের যে তিনটি ধারা আগে বাতিল হয়েছিল, সেগুলো আবারও কার্যকর করা হয়েছে। পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দাবি করেছে, ৯ মের ঘটনার পর দলটির প্রায় এক হাজার কর্মী-সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়। বহুজনকে কোনো প্রমাণ ছাড়াই তুলে নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছে দলটি।

অনেকে মনে করছেন, এই রায়ের ফলে সেনাবাহিনীর হাতে বিরোধী কণ্ঠ দমন করার আরও একটি আইনি হাতিয়ার তুলে দেওয়া হলো।

পিটিআই এই রায়কে ‘অস্ত্রায়িত রায়’ বলে উল্লেখ করেছে। দলটির এমপি ওমর আইয়ুব খান বলেন, ‘এই রায় এমন এক দিনে এসেছে, যখন তথাকথিত সরকার ও সামরিক প্রতিষ্ঠান ‘‘জাতীয় সংহতি’’ গড়ার কথা বলছে।’ তিনি ভারতীয় বাহিনীর সাম্প্রতিক ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর কথাও উল্লেখ করেন।

সিন্ধু প্রদেশে পিটিআইয়ের প্রধান হালিম আদিল শেখ বলেন, ‘যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে এই রায় প্রকাশ শুধু অন্যায় ঢাকার কৌশল।’

আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস-এর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক আইনি পরামর্শদাতা রীনা ওমর রায়টিকে ‘ভয়াবহ, তবে অনুমেয়’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি এক্সে লিখেছেন, ‘দেশের সর্বোচ্চ আদালত যেভাবে বিচারব্যবস্থার সামরিকীকরণে সায় দিচ্ছে, এটা দুর্ভাগ্যজনক।’

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার মধ্যে এই রায় এসেছে। গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, হিন্দু ও ভারতের বিরুদ্ধে আসিম মুনিরের উসকানিমূলক বক্তব্য দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়িয়েছে। তিনি আবারও ‘দ্বিবার্ষিক জাতিতত্ত্ব’-র কথা টেনে এনে কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জগুলার ভেইন’ বা ‘জীবনরেখা’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

তারপর ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যেকোনো ভারতীয় সামরিক অভিযানকে কঠোর হস্তে প্রতিহত করা হবে।’ এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা আরও বেড়েছে।

একই সময়ে বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখাওয়ায় সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের রায় সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে অভ্যন্তরীণ বিরোধ দমন করতে একটি নতুন ‘আইনি ঢাল’ দিয়ে দিল।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত