Ajker Patrika

ক্যাপটাগন: যে মাদকে টিকে ছিলেন বাশার আল-আসাদ

২০২১ সালে জেদ্দা ইসলামিক বন্দরে সৌদি কাস্টমস কর্মকর্তারা ডালিমের চালান থেকে পাঁচ মিলিয়নেরও বেশি ক্যাপটাগন ট্যাবলেট জব্দ করেন। ছবি: সংগৃহীত
২০২১ সালে জেদ্দা ইসলামিক বন্দরে সৌদি কাস্টমস কর্মকর্তারা ডালিমের চালান থেকে পাঁচ মিলিয়নেরও বেশি ক্যাপটাগন ট্যাবলেট জব্দ করেন। ছবি: সংগৃহীত

বাশার আল-আসাদের পতনের চার দিন পর দামেস্কের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া বিদ্রোহী যোদ্ধারা বিপুল পরিমাণ ক্যাপটাগন উদ্ধার করেছেন। এই মাদকদ্রব্য দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ায় ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হয়ে আসছিল। বাশার আল-আসাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার সঙ্গে এই মাদকের গভীর সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিদ্রোহীদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) শীর্ষ কমান্ডার আহমেদ আল-শারা (যিনি আল-জুলানি নামেও পরিচিত) অভিযোগ করেছেন, বাশারের সময় সিরিয়া বিশ্বে ক্যাপটাগনের ‘বৃহত্তম উৎস’ ছিল। তিনি ক্যাপটাগনের উৎপাদন ও বাণিজ্য দমন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

কিন্তু কী এই ক্যাপটাগন এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি কীভাবে সিরিয়ার প্রতিবেশীদের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল?

ক্যাপটাগন কী ও কোথায় এটি উদ্ভাবিত হয়েছিল?

ক্যাপটাগন হলো আসক্তিকর এক ধরনের অ্যামফেটামিন জাতীয় উত্তেজক। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি প্রধানত সিরিয়ায় উৎপাদিত এবং উপসাগরীয় দেশগুলোতে চোরাচালান হয়েছে। এর মাধ্যমে আসাদ শাসন এই মাদককে আলোচনার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে আরব লীগের সদস্যপদ পুনঃস্থাপন করে, যখন বিভিন্ন দেশ অবৈধ মাদক বাণিজ্য রোধের চেষ্টা চালায়।

২০২৩ সালের ১ মে আম্মানে অনুষ্ঠিত আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে দামেস্ক জর্ডান ও ইরাকের সঙ্গে মাদক উৎপাদন ও চোরাচালানের উৎস শনাক্ত করতে একমত হয়, জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। এর এক সপ্তাহ পর, দক্ষিণ সিরিয়ায় এক বিমান হামলায় এক শীর্ষস্থানীয় সিরীয় মাদক চোরাকারবারি ও তার পরিবার নিহত হয়, যা জর্ডানের প্রতি ইঙ্গিত করে।

ক্যাপটাগন প্রথমে ১৯৬০-এর দশকে জার্মানির ডেগুসা ফার্মা গ্রুপে উদ্ভাবিত একটি মানসিক ওষুধের ব্র্যান্ড নাম ছিল। এটি মূলত অমনোযোগী, নারকোলেপসি এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উত্তেজক হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

ক্যাপটাগন ট্যাবলেটে ফেনাইটাইলিন নামক একটি সিনথেটিক মাদক থাকত, যা ফেনেথাইলামিন পরিবারের একটি যৌগ। অ্যামফেটামিনও এই পরিবারে অন্তর্ভুক্ত।

১৯৮৬ সালে ফেনাইটাইলিনকে জাতিসংঘের মনোস্নায়ুতন্ত্র সংক্রান্ত মাদকদ্রব্য কনভেনশন ১৯৭১-এর তালিকা-২ তে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং অধিকাংশ দেশ ক্যাপটাগনের ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক মাদক নিয়ন্ত্রণ বোর্ড জানায়, ২০০৯ সালের পর থেকে কোনো দেশ ফেনাইটাইলিন উৎপাদন করেনি।

তাহলে উৎপাদন কি একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল?

সরকারি উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলেও পূর্ব ইউরোপ, বিশেষ করে বুলগেরিয়ায় থাকা স্টকগুলো মধ্যপ্রাচ্যে চোরাচালান করা হয়।

পরবর্তী সময়ে ১৯৯০-এর দশক থেকে ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে বুলগেরিয়ায় নতুন জাল ক্যাপটাগন ট্যাবলেট তৈরি হয়। ইউরোপীয় মাদক ও মাদকাসক্তি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এসব মাদক বালকান ও তুর্কি অপরাধ চক্রের মাধ্যমে আরব উপদ্বীপে চোরাচালান করা হতো।

তুরস্ক ও বুলগেরিয়া কর্তৃপক্ষের কঠোর অভিযান, যার মধ্যে অ্যামফেটামিন সংশ্লেষণের সঙ্গে জড়িত ১৮টি বড় ল্যাবরেটরি বন্ধ করে দেওয়া অন্তর্ভুক্ত, বালকান থেকে মাদক বাণিজ্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়।

কেন সিরিয়ায় এত ক্যাপটাগন তৈরি হচ্ছিল?

২০১১ সালে বাশার আল-আসাদবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর সরকারের কঠোর দমন-পীড়নের পর সিরিয়া গৃহযুদ্ধের অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে যাওয়া এবং যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যে দেশটি অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে।

দামেস্ক মাদক বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করলেও বিশ্লেষকেরা বলছেন, অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার জন্য ক্যাপটাগনের উৎপাদন ও চোরাচালানের মাধ্যমে আসাদ ও তাঁর মিত্ররা বিলিয়ন ডলার আয় করেছে।

নিউ লাইনস ইনস্টিটিউটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত সিরীয় সরকার হিজবুল্লাহর মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে স্থানীয় জোট গড়ে ক্যাপটাগনের উৎপাদন ও চোরাচালানে কারিগরি ও লজিস্টিক সহায়তা নিয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বর্তমানে বিশ্বে যত ক্যাপটাগন উৎপাদন হয়, তার বেশির ভাগই সিরিয়ায় তৈরি হয়। এসব মাদকের মূল গন্তব্য ধনী উপসাগরীয় দেশগুলো।

pentagon

জর্ডান ও উপসাগরীয় দেশগুলো কী পদক্ষেপ নিয়েছে?

২০২২ সাল থেকে যেসব দেশের সীমান্ত দিয়ে প্রচুর ক্যাপটাগন পাচার হতো, সেসব দেশ সিরিয়া থেকে আসা এই মাদকের চোরাচালান বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে জর্ডানের সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, বছরের শুরু থেকে তাঁরা ৩০ জন চোরাচালানকারীকে হত্যা করেছে এবং পাচারের চেষ্টাকালে ১ কোটি ৬০ লাখ ক্যাপটাগন ট্যাবলেট আটকে দিয়েছে—যা পুরো ২০২১ সালে জব্দ করা পরিমাণের চেয়েও বেশি।

২০২২ সালের আগস্টের শেষ দিকে সৌদি কর্তৃপক্ষ ইতিহাসে ক্যাপটাগনের সবচেয়ে বড় চালান জব্দ করে। এতে ৪ কোটি ৬০ লাখ অ্যামফেটামিন ট্যাবলেট একটি ময়দার চালানের মধ্যে পাওয়া যায়।

সৌদি জেনারেল ডিরেক্টরেট অব নারকোটিক্স কন্ট্রোলের একজন মুখপাত্র একে দেশটিতে একক মাদকবিরোধী অভিযানের সবচেয়ে বড় অপারেশন বলে উল্লেখ করেন।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি বিমানবন্দরে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি সবুজ মটরশুঁটির ক্যানের ভেতর ৪৫ লাখ ক্যাপটাগন ট্যাবলেট পাচারের চেষ্টা করছিলেন।

২০০৭ সালে বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়ায় জব্দ হওয়া ৭৮৯ কেজি ক্যাপটাগন ধ্বংস করার আগে এক কাস্টমস কর্মকর্তা প্রদর্শন করেন।
২০০৭ সালে বুলগেরিয়ার রাজধানী সোফিয়ায় জব্দ হওয়া ৭৮৯ কেজি ক্যাপটাগন ধ্বংস করার আগে এক কাস্টমস কর্মকর্তা প্রদর্শন করেন।

বিশ্বের অন্য দেশগুলো কী করছে?

মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে ক্যাপটাগন তুলনামূলকভাবে কম পরিচিত হলেও যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় এর উৎপাদন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

২০২৩ সালে উভয় দেশ ক্যাপটাগন বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত সিরীয়দের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যুক্তরাজ্যের সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বের ৮০ শতাংশ ক্যাপটাগন সিরিয়ায় উৎপাদিত হয়, যা আসাদ সরকারকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করে। এর মূল্য মেক্সিকোর মোট কার্টেল বাণিজ্যের তিনগুণ।

বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, হিজবুল্লাহ ও অন্যান্য ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী এই মাদক উৎপাদন ও চোরাচালানে সহায়তা করছে, যা আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা ও আসক্তি বাড়াচ্ছে।

২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্র ‘ক্যাপটাগন অ্যাক্ট’ চালু করে। এর মাধ্যমে অবৈধ এই মাদক বাণিজ্য বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থাকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। কারণ আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই মাদক যুক্তরাষ্ট্রেও পৌঁছাতে পারে।

আরব লীগে সিরিয়ার প্রত্যাবর্তন ও ক্যাপটাগন

সিরিয়া থেকে ক্যাপটাগনের উৎপাদন ও বাণিজ্য বন্ধে আরব লীগের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর আগ্রহ দামেস্কের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হয়ে ওঠে।

২০২৩ সালের ১ মে জর্ডানের রাজধানী আম্মানে অনুষ্ঠিত আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এক জর্ডানীয় কর্মকর্তা বলেন, সিরিয়াকে অবশ্যই রাজনৈতিক সমাধানের বিষয়ে আন্তরিকতা দেখাতে হবে। কারণ, এটি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে লবিংয়ের পূর্বশর্ত। এটি সিরিয়ার পুনর্গঠনের জন্য তহবিল সংগ্রহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২০২৩ সাল পর্যন্ত ক্যাপটাগনের সবচেয়ে বড় বাজার ছিল সৌদি আরব। দেশটি দামেস্কের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আলোচনায়ও গ্যারান্টি চায়।

যুদ্ধের প্রথম দিকের বছরগুলোতে সৌদি আরব সরকারবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আঞ্চলিক কূটনীতির পরিবর্তনের অংশ হিসেবে সিরিয়া বিষয়ে অবস্থানও বদলায়। ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার ফলেই দামেস্কের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করে রিয়াদ।

আম্মানে বৈঠকের পর মিসর, ইরাক, জর্ডান, সৌদি আরব এবং সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা জানান, সিরিয়া জর্ডান ও ইরাকের সীমান্তে চোরাচালান বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সম্মত হয়েছে।

২০২৩ সালে সিরিয়ায় নিহত মাদক সম্রাট কে ছিলেন?

২০২৩ সালের মে মাসে কায়রোতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আরব লীগের ২২টি সদস্য রাষ্ট্র সিরিয়ার সদস্যপদ ফিরিয়ে আনতে ভোট দেয়। এর পরদিনই সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে এক বিমান হামলায় সন্দেহভাজন মাদক পাচারকারী মারাই আল-রামথান এবং তাঁর পরিবার নিহত হন।

যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা জানিয়েছে, এই হামলা জর্ডান চালিয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) বলেছে, আল-রামথানকে সবচেয়ে প্রভাবশালী মাদক পাচারকারী এবং জর্ডানে ক্যাপটাগনসহ অন্যান্য মাদক পাচারের প্রধান ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আসিফের ফেসবুক পেজ রিমুভ করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ রিপোর্টের অভিযোগ

আজকের রাশিফল: মানিব্যাগের দশা মরুভূমি, প্রেমের দুনিয়ায়ও দুর্ভিক্ষ

ছয় মাসের পরিচয়ে বিবাহিতাকে বিয়ের প্রস্তাব, প্রত্যাখ্যান করায় গুলি

অরুণাচলকে চীনের ‘মূল স্বার্থ’ বলছে পেন্টাগন, ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান বেইজিংয়ের

ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর হামলা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক বছরে ইউক্রেনের ৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা দখলের দাবি রাশিয়ার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া দাবি করেছে, তারা চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালে ইউক্রেনের কাছ থেকে আরও প্রায় ৫ হাজার বর্গকিলোমিটার অঞ্চল দখল করেছে। তবে এই দাবির পক্ষে তারা বিস্তারিত কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে স্বদেশের মাটিতে সামরিক সাফল্য প্রচার এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্য নিয়ে ইউক্রেন ভূখণ্ডের ওপর নিজেদের দাবির বিষয়ে অনড় অবস্থান নিয়েছে রাশিয়া। গত শুক্রবার বছরের শেষ সংবাদ সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাঁর বাহিনী পূর্ব দোনেৎস্কের সিভারস্ক এবং উত্তরের খারকিভ অঞ্চলের ভভচানস্ক দখল করে নিয়েছে।

এ ছাড়া পুতিনের দাবি—রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এখন দোনেৎস্কের লিমান ও কস্ত্যন্তিনিভকা এবং দক্ষিণের জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের হুলিয়াইপোল শহরের অন্তত অর্ধেক এলাকা। উল্লেখ্য, এই শহরগুলো যুদ্ধের সম্মুখভাগ হিসেবে পরিচিত। তবে ইউক্রেন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারীরা পুতিনের এই দাবির সঙ্গে একমত হতে পারছেন না। ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) জানিয়েছে, স্যাটেলাইট চিত্র ও উন্মুক্ত উৎসের ভিজ্যুয়াল তথ্য-প্রমাণ পুতিনের দাবির উল্টো কথা বলছে।

আইএসডব্লিউ এক প্রতিবেদনে লিখেছে, ‘পুতিন যেসব এলাকা দখল বা ব্যাপক অগ্রগতির দাবি করেছেন, তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, হুলিয়াপোলের মাত্র ৭ দশমিক ৩ শতাংশ এবং লিমানে ২ দশমিক ৯ শতাংশ এলাকায় রুশ বাহিনীর উপস্থিতি (অনুপ্রবেশ বা হামলার মাধ্যমে) রয়েছে।’ সংস্থাটির হিসাবমতে, কস্ত্যন্তিনিভকা শহরে রুশ অগ্রগতির পরিমাণ ৫ শতাংশের বেশি নয়।

এমনকি রাশিয়ার যুদ্ধবিষয়ক কনটেন্ট ক্রিয়েটর বা মিলব্লগারদের দাবিও পুতিনের বক্তব্যের সঙ্গে মিলছে না। আইএসডব্লিউ বলছে, ওই মিলব্লগারদের মতে—রুশ বাহিনী বড়জোর লিমানে ৭ শতাংশ এবং কস্ত্যন্তিনিভকায় ১১ শতাংশ এলাকা কবজায় নিতে পেরেছে।

ক্রেমলিন আরও দাবি করেছে, তারা খারকিভের কুপিয়ানস্ক এবং দোনেৎস্কের পোকরোভস্ক শহর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তবে আইএসডব্লিউ-এর অনুমান, খারকিভের মাত্র ৭ দশমিক ২ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার হাতে রয়েছে। অন্যদিকে ইউক্রেনের সেনাপ্রধান জানিয়েছেন, পোকরোভস্কের ১৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা থেকে রুশ বাহিনীকে হটিয়ে দিয়েছে ইউক্রেনীয় সেনারা।

গত ১৮ ডিসেম্বর বিদেশি সামরিক কর্মকর্তাদের কাছে বছরের শেষ প্রতিবেদনে রুশ সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভ দাবি করেন, এ বছর রাশিয়া ইউক্রেনের ৬ হাজার ৩০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা দখল করেছে। এর এক সপ্তাহ আগে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোসভ এই পরিমাণ ৬ হাজার বর্গকিলোমিটার বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু আইএসডব্লিউ-এর হিসাবে এই দখলিকৃত ভূমির পরিমাণ ৪ হাজার ৯৮৪ বর্গকিলোমিটারের বেশি নয় এবং রুশ কর্মকর্তাদের দাবি করা ৩০০টি জনপদের বদলে সেখানে জনপদ রয়েছে মাত্র ১৯৬ টি।

রাশিয়ার এই দাবিগুলো এমন এক সময়ে এল, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের আলোচকেরা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে নিবিড় আলোচনা চালাচ্ছেন। ফ্লোরিডায় তিন দিনের আলোচনার পর গত সোমবার এই প্রক্রিয়ার ইতি ঘটে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা অনুভব করছি, আমেরিকা একটি চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছাতে চায় এবং আমাদের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা রয়েছে।’ তবে বুধবার সকালে তাঁর প্রকাশ করা ২০ দফার পরিকল্পনায় দেখা গেছে, ভূখণ্ডের মালিকানার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে কোনো ঐকমত্য হয়নি।

রাশিয়া দাবি করছে, দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন অঞ্চল এবং ক্রিমিয়া তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দিতে হবে। ইউক্রেন এতে সরাসরি অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে ইউরোপীয় দেশগুলো প্রস্তাব দিয়েছে, ভূখণ্ড নিয়ে আলোচনা পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির পর শুরু করা যেতে পারে। জেলেনস্কি ভূখণ্ডগত সমন্বয় নিয়ে একটি যৌথ অবস্থানে পৌঁছাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন।

উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ন্যাটোর সমপর্যায়ের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে সম্মত হয়েছে। এই পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির ফলে রাশিয়া যদি আবারও আক্রমণ চালায়, তবে ন্যাটো সরাসরি ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধে নামতে পারবে। আলাদাভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নও জানিয়েছে যে তারা অদূর ভবিষ্যতে ইউক্রেনকে পূর্ণ সদস্যপদ দেবে, যা তাদের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে প্রতিরক্ষা সুবিধা পাওয়ার অধিকার দেবে।

সমান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই পরিকল্পনায় ইউক্রেন তাদের সেনাবাহিনীকে পূর্ণ শক্তি বজায় রাখার সুযোগ পাবে। এ ছাড়া সাবেক দখলকৃত অঞ্চলগুলোকে রাশিয়ার বলে স্বীকৃতি দিতেও তাদের বাধ্য করা হয়নি। অথচ মস্কো এসব বিষয়ে জোর দিয়েছিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের মূল প্রস্তাবেও এগুলো ছিল। ওয়াশিংটন ও কিয়েভের মধ্যে চূড়ান্ত হওয়া এই ২০ দফার পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত থাকার কথা জানিয়েছে ক্রেমলিন। মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়া তাদের অবস্থান ‘তৈরি’ করবে এবং বিদ্যমান চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে খুব দ্রুতই যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আসিফের ফেসবুক পেজ রিমুভ করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ রিপোর্টের অভিযোগ

আজকের রাশিফল: মানিব্যাগের দশা মরুভূমি, প্রেমের দুনিয়ায়ও দুর্ভিক্ষ

ছয় মাসের পরিচয়ে বিবাহিতাকে বিয়ের প্রস্তাব, প্রত্যাখ্যান করায় গুলি

অরুণাচলকে চীনের ‘মূল স্বার্থ’ বলছে পেন্টাগন, ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান বেইজিংয়ের

ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর হামলা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চীনের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যেই রেকর্ড প্রতিরক্ষা বাজেট অনুমোদন করল জাপান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই জাপানের মন্ত্রিসভা ইতিহাসে সর্বোচ্চ অঙ্কের প্রতিরক্ষা বাজেট অনুমোদন করেছে। চলতি সপ্তাহে বেইজিং টোকিওর বিরুদ্ধে ‘মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা উসকে দেওয়ার’ অভিযোগ আনার প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত এল।

আগামী অর্থবছরের জন্য আজ শুক্রবার অনুমোদন পাওয়া প্রস্তাবিত এই প্রতিরক্ষা বাজেটের পরিমাণ ৫৮ বিলিয়ন ডলার। এটি বর্তমান বাজেটের চেয়ে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। জাপানের বার্ষিক প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ২ শতাংশে উন্নীত করার জন্য যে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে, এটি তার চতুর্থ বছরের বরাদ্দ।

বাজেট পরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে পাল্টা আঘাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং উপকূলীয় প্রতিরক্ষা জোরদার করার ওপর। এ জন্য ভূমি থেকে সমুদ্রে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এবং চালকহীন সমরাস্ত্র ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, ২০২৮ সালের মার্চের মধ্যে শিল্ড নামের একটি প্রকল্পের আওতায় সমুদ্র উপকূল রক্ষায় নজরদারি ও প্রতিরক্ষার জন্য বড় আকারের চালকহীন আকাশযান, জাহাজ এবং পানির নিচে ড্রোন মোতায়েন করতে ১০০ বিলিয়ন ইয়েন ব্যয় করবে জাপান।

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, চীন ও জাপান সরকারের মধ্যে বাড়তে থাকা বৈরিতার মধ্যেই এই বাজেট বৃদ্ধির ঘোষণা এল। জাপান নিজেদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী করার যেকোনো উদ্যোগ নিলেই বেইজিং তার বিরোধিতা করে আসছে।

গত নভেম্বরে এই সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়, যখন জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি মন্তব্য করেন, চীন যদি তাইওয়ান দখল করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ চালায়, তাহলে জাপান সম্ভবত সামরিকভাবে তাতে জড়িয়ে পড়বে।

তাকাইচির এই বক্তব্যে বেইজিং তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে শুরু করে।

চীনা কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে টোকিওর সমালোচনা করে আসছেন এবং জাপানের যেকোনো সামরিক ঘোষণা পেলে তার বিরোধিতা করছেন।

গত বৃহস্পতিবার চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, জাপানের সাম্প্রতিক মহাকাশ প্রযুক্তি উন্নয়ন, যার কিছু অংশ যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় হচ্ছে, মহাকাশকে ‘অস্ত্রসজ্জিত ও সামরিকীকরণ করছে এবং সেখানে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় ইন্ধন দিচ্ছে।’

জাপানি সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে টোকিও বেশ কয়েকটি রকেট উৎক্ষেপণ করেছে, যেগুলোর মাধ্যমে মহাকাশে পণ্যবাহী যান, জিপিএস সিস্টেম এবং গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য স্যাটেলাইট পাঠানো হয়েছে।

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাং শিয়াওগাং গত রোববার বলেন, অতীতে জাপানি সমরবিদেরা যেভাবে অতর্কিত হামলা চালিয়েছিল এবং দেশটি বর্তমানে যেভাবে আক্রমণাত্মক মহাকাশ নীতি গ্রহণ করছে, তাতে আরও একটি পার্ল হারবার পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হওয়াটা অবাক করার মতো কিছু নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আসিফের ফেসবুক পেজ রিমুভ করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ রিপোর্টের অভিযোগ

আজকের রাশিফল: মানিব্যাগের দশা মরুভূমি, প্রেমের দুনিয়ায়ও দুর্ভিক্ষ

ছয় মাসের পরিচয়ে বিবাহিতাকে বিয়ের প্রস্তাব, প্রত্যাখ্যান করায় গুলি

অরুণাচলকে চীনের ‘মূল স্বার্থ’ বলছে পেন্টাগন, ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান বেইজিংয়ের

ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর হামলা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আট ঘণ্টায়ও মেলেনি চিকিৎসা, কানাডার হাসপাতালে ভারতীয়র মৃত্যু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

কানাডার এডমন্টনের গ্রে নুনস কমিউনিটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ ৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর প্রশান্ত শ্রীকুমার নামে ৪৪ বছর বয়সী এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর স্ত্রীর একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে তিনি সেই বিভীষিকাময় পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন। ভিডিওতে নীহারিকা শ্রীকুমারকে তাঁর স্বামীর মরদেহের সামনে দাঁড়িয়ে হাসপাতালের প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনাকে এই মৃত্যুর জন্য দায়ী করতে দেখা যায়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, নীহারিকা জানান—গত ২২ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে প্রশান্ত তীব্র বুকব্যথা অনুভব করেন এবং ১২টা ২০ মিনিটের মধ্যে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘দুপুর ১২টা ২০ থেকে রাত ৮টা ৫০ পর্যন্ত সে ট্রায়াজ রুমে বসে ছিল। ক্রমাগত বুকব্যথার কথা বললেও তাকে সেখানেই বসিয়ে রাখা হয়। তার রক্তচাপ ক্রমেই বাড়ছিল, শেষবার যখন মাপা হয় তখন রক্তচাপ ছিল ২১০।’ উল্লেখ্য, একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারির নিচে থাকা উচিত।

নীহারিকার অভিযোগ, দীর্ঘ অপেক্ষার সময়ে প্রশান্তকে কেবল টাইলিনল দেওয়া হয়েছিল, কোনো জরুরি চিকিৎসা তিনি পাননি। শোকাতুর স্ত্রী আরও দাবি করেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছিল যে বুকব্যথা কোনো তীব্র সমস্যা নয় এবং তাদের ধারণা ছিল না যে এটি হৃদরোগ হতে পারে।’

আট ঘণ্টারও বেশি সময় অপেক্ষার পর প্রশান্তকে চিকিৎসার জন্য অবশেষে জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। নীহারিকা বলেন, ‘তাঁকে বসতে বলা হয়েছিল। এক মুহূর্তের জন্য সে উঠে দাঁড়ায় এবং তখনই ঢলে পড়ে। সে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে একজন নার্স বলেন যে তিনি কোনো নাড়ি বা পালস পাচ্ছেন না।’

নার্সরা তৎক্ষণাৎ সাহায্যের জন্য অন্যদের ডাকেন এবং তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গেছে। প্রশান্ত শ্রীকুমারের মৃত্যুতে তাঁর স্ত্রী ও ৩ সন্তান (বয়স ৩, ১০ এবং ১৪ বছর) এখন দিশেহারা। ক্ষোভ প্রকাশ করে নীহারিকা বলেন, ‘মূলত হাসপাতালের প্রশাসন এবং কর্মীদের অবহেলায় আমার স্বামী মারা গেছেন। তারা সময়মতো চিকিৎসা দেয়নি। উল্টো নিরাপত্তাকর্মীরা এতটাই রূঢ় ছিল যে পরিস্থিতির গুরুত্ব না বুঝে তারা আমাকে বলছিল—ম্যাম, আপনি খুব রূঢ় আচরণ করছেন।’

এর আগে প্রশান্তের বাবা কুমার শ্রীকুমার গ্লোবাল নিউজকে জানান, তাঁর ছেলে হাসপাতালের কর্মীদের বলেছিল তাঁর ব্যথার মাত্রা ১০-এর মধ্যে ১৫। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য একটি ইসিজি করলেও পরে জানায় যে সেখানে উদ্বেগের কিছু নেই এবং তাদের অপেক্ষা করতে বলা হয়। আবেগপ্রবণ হয়ে বাবা বলেন, ‘সে আমাকে বলেছিল—পাপা, আমি আর এই ব্যথা সহ্য করতে পারছি না।’

গ্রে নুনস হাসপাতালটি কভনেন্ট হেলথ নেটওয়ার্ক পরিচালিত। গ্লোবাল নিউজকে দেওয়া এক বিবৃতিতে সংস্থাটি নির্দিষ্ট কোনো রোগীর বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি, তবে তারা নিশ্চিত করেছে যে ঘটনাটি বর্তমানে অফিস অব দ্য চিফ মেডিকেল এক্সামিনারের অধীনে তদন্তাধীন।

বিবৃতিতে তারা জানায়, ‘আমরা নিহতের পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আমাদের রোগী এবং কর্মীদের নিরাপত্তা ও সেবার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আসিফের ফেসবুক পেজ রিমুভ করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ রিপোর্টের অভিযোগ

আজকের রাশিফল: মানিব্যাগের দশা মরুভূমি, প্রেমের দুনিয়ায়ও দুর্ভিক্ষ

ছয় মাসের পরিচয়ে বিবাহিতাকে বিয়ের প্রস্তাব, প্রত্যাখ্যান করায় গুলি

অরুণাচলকে চীনের ‘মূল স্বার্থ’ বলছে পেন্টাগন, ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান বেইজিংয়ের

ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর হামলা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথমবারের মতো বিচ্ছিন্ন কান পায়ে প্রতিস্থাপন, ফের যথাস্থানে স্থাপন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চীনা শল্যচিকিৎসকেরা এক অভাবনীয় কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। এক নারীর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া কান প্রথমে তাঁর পায়ে প্রতিস্থাপন করে, পরবর্তীকালে তা পুনরায় যথাস্থানে ফিরিয়ে এনেছেন। তাঁরা বিশ্বের প্রথম এই ধরনের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেছেন। হংকং থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

মেডিকেল নিউজ প্ল্যাটফর্ম মেড-জে সোমবার জানিয়েছে, গত এপ্রিলে কর্মক্ষেত্রে এক দুর্ঘটনায় ওই নারীর কান শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় তাঁর মাথার খুলির চামড়ার বড় একটি অংশও উপড়ে গিয়েছিল। জিনানের শানদং প্রাদেশিক হাসপাতালের মাইক্রোসার্জারি ইউনিটের উপপরিচালক কিউ শেনকিয়াং জানান, ভারী যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ওই নারী আঘাত পেয়েছিলেন, যা ছিল প্রাণঘাতী। তাঁর মাথার চামড়া, ঘাড় এবং মুখের ত্বক ছিঁড়ে একাধিক খণ্ডে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল এবং কানটি মাথার চামড়াসহ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।

হাসপাতালে পৌঁছানোর পর মাইক্রোসার্জারিতে বিশেষজ্ঞ একদল চিকিৎসক তাৎক্ষণিকভাবে প্রচলিত পদ্ধতিতে মাথার চামড়া মেরামতের চেষ্টা করেন। কিন্তু দুর্ঘটনার ফলে মাথার টিস্যু এবং রক্তনালির জালিকা এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

এর ফলে মাথার টিস্যু সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত কানটি পুনরায় স্থাপন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় কানটিকে বাঁচিয়ে রাখার বিকল্প পথ খুঁজতে বাধ্য হন চিকিৎসকেরা। অবশেষে কিউয়ে দল সিদ্ধান্ত নেয়, কানটিকে ওই নারীর পায়ের উপরিভাগে প্রতিস্থাপন করার। এরপর শুরু হয় মাসব্যাপী পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া।

চিকিৎসকদের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ—পায়ের ধমনি ও শিরাগুলোর গঠন কান প্রতিস্থাপনের জন্য উপযুক্ত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ ছাড়া পায়ের ত্বক ও নরম টিস্যু মাথার ত্বকের মতোই পাতলা, যা স্থানান্তরের পর সামান্য কাটাছেঁড়াতেই মানিয়ে যায়।

অত্যন্ত জটিল এই প্রক্রিয়ার কোনো পূর্ববর্তী নজির বা নথিবদ্ধ সফল ঘটনা ছিল না। প্রতিবেদন অনুযায়ী, কানটি পায়ে প্রতিস্থাপনের প্রাথমিক ধাপটি সম্পন্ন করতে সময় লেগেছিল দশ ঘণ্টা। কিউ জানান, কানের রক্তনালীগুলো অত্যন্ত সূক্ষ্ম—ব্যাস মাত্র ০.২ থেকে ০.৩ মিলিমিটার। এগুলোকে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত করা ছিল এক বিশাল চ্যালেঞ্জ, যার জন্য প্রয়োজন ছিল উচ্চতর দক্ষতা ও মাইক্রোসার্জারির দীর্ঘ অভিজ্ঞতা।

অস্ত্রোপচারের পাঁচ দিন পর দলটি আরও একটি সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। শিরার রক্ত সঞ্চালনে সমস্যার কারণে কানের রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং কানটি কালচে-বেগুনি রং ধারণ করে। কানটিকে বাঁচাতে চিকিৎসকেরা রক্তক্ষরণ করানোর এক শ্রমসাধ্য কৌশল অবলম্বন করেন, যা পাঁচ দিনে প্রায় ৫০০ বার প্রয়োগ করতে হয়েছিল।

এরই মধ্যে চিকিৎসকেরা রোগীর পেট থেকে চামড়া নিয়ে মাথায় প্রতিস্থাপন করে মাথার খুলির ক্ষত সারিয়ে তোলেন। পাঁচ মাসেরও বেশি সময় পর যখন প্রতিস্থাপিত মাথার চামড়া ও ঘাড়ের ত্বক সুস্থ হয়ে ওঠে, ফোলা কমে যায় এবং পা ও কানের ক্ষত সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায়, তখন চিকিৎসকেরা কানটিকে পুনরায় যথাস্থানে স্থাপনের উদ্যোগ নেন। গত অক্টোবরে কিউয়ে নেতৃত্বে সফলভাবে ৬ ঘণ্টার এই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়, যা বিশ্বজুড়ে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সান ছদ্মনামের ওই রোগী এখন হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। তাঁর মুখমণ্ডল ও টিস্যুর কার্যক্ষমতা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে তাঁর এখনো কিছু ছোটখাটো অস্ত্রোপচার বাকি রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ভ্রু পুনর্গঠন এবং পায়ের ক্ষতচিহ্ন কমানো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আসিফের ফেসবুক পেজ রিমুভ করা হয়েছে, সংঘবদ্ধ রিপোর্টের অভিযোগ

আজকের রাশিফল: মানিব্যাগের দশা মরুভূমি, প্রেমের দুনিয়ায়ও দুর্ভিক্ষ

ছয় মাসের পরিচয়ে বিবাহিতাকে বিয়ের প্রস্তাব, প্রত্যাখ্যান করায় গুলি

অরুণাচলকে চীনের ‘মূল স্বার্থ’ বলছে পেন্টাগন, ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান বেইজিংয়ের

ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর হামলা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত