Ajker Patrika

ইসরায়েলি আগ্রাসনে দীর্ঘমেয়াদি জিনগত ক্ষতির মুখে গাজার শিশুরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ১২
গাজার দেইর এল বালাহে ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত এক আবাসিক এলাকায় কতিপয় বিষণ্ন শিশু। ছবি: এএফপি
গাজার দেইর এল বালাহে ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত এক আবাসিক এলাকায় কতিপয় বিষণ্ন শিশু। ছবি: এএফপি

ভাতই একমাত্র ন্যূনতম পুষ্টিকর খাবার, যা দিয়ে মেয়ে রোয়ানকে বাঁচিয়ে রাখছেন মোহাম্মদ আলদ্রেইনি। ২২ মাস বয়সী ফিলিস্তিনি শিশুটি জন্মের পর থেকে কখনো মায়ের দুধের স্বাদ পায়নি। তার জন্ম ২০২৩ সালের নভেম্বরে—গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা শুরু হওয়ার এক মাস পর।

রোয়ানের মা চার সন্তানের দেখাশোনা করছেন। বিষণ্নতায় ভুগছেন তিনি। অবরোধ আর লাগাতার বোমাবর্ষণের মানসিক আঘাতে তাঁর বুকে দুধ বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবারটি প্রথমে উত্তর গাজার বাইত লাহিয়া থেকে পালিয়ে যায় গাজা সিটিতে। পরে আশ্রয় নেয় খান ইউনিসে।

আলদ্রেইনি বলেন, ‘এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আমার স্ত্রীর পিটিএসডি ধরা পড়েছে।’ বিষণ্ন গলায় তিনি যখন এসব বলছিলেন, তখন তাঁর স্ত্রী একটি ছোট হাঁড়িতে চাল সিদ্ধ করে মেয়ের জন্য দুধ ছাড়া পায়েস রান্না করছিলেন।

রোয়ান উত্তরাধিকার সূত্রে মায়ের দুর্বলতা পেয়েছে। সে হাঁটতে পারে না, কথা বলতে পারে খুব সামান্য। দুর্বল রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, হৃদ্‌রোগ আর মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে। ওজন ক্রমেই কমছে। এখন ওজন মাত্র ৭ কেজি। তার বাবার ভাষায়, ইসরায়েলের চাপানো ‘পরিকল্পিত দুর্ভিক্ষে’ তার শরীর ভেঙে পড়ছে। আলদ্রেইনির বিশ্বাস, যথেষ্ট খাবার পেলে আর যুদ্ধ থামলে রোয়ান বাঁচতে পারে।

তবে জিন গবেষকেরা সতর্ক করেছেন, বেঁচে গেলেও রোয়ানের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যঝুঁকি গুরুতর। এমনকি এই প্রভাব তার ভবিষ্যৎ সন্তানদের ওপরও পড়তে পারে। গত দুই দশকের নানা গবেষণা বলছে—ক্ষুধা, যুদ্ধ আর গণহত্যার মতো ঘটনার প্রভাব মানুষের জিনে দীর্ঘস্থায়ী দাগ ফেলে। ক্ষুধা বা মানসিক আঘাতে ডিএনএ বদলায় না। তবে এতে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে, যা জিনের প্রকাশে প্রভাব ফেলে। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় এপিজেনেটিকস। এর মাধ্যমে যুদ্ধের প্রভাব প্রজন্মের পর প্রজন্মে পৌঁছে যায়।

নাৎসি দখলদারিত্বের সময় ১৯৪৪-৪৫ সালে নেদারল্যান্ডসের পশ্চিমাঞ্চলে খাবার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। বহু বছর পর গবেষকেরা দেখেন, সেই সময় গর্ভবতী মায়েদের সন্তানদের মধ্যে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী অধ্যাপক টেসা রোজবুম বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, মায়ের দেহের স্ট্রেস হরমোন সন্তানের শরীর ও মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনিরাপদ, চাপপূর্ণ ও অপুষ্টির পরিবেশে থাকা বাবাদেরও প্রভাবও সন্তানের ওপর পড়ে।’

২০১৫ সালে গবেষক র‍্যাচেল ইয়েহুদা ৩২ জন হলোকাস্ট থেকে বেঁচে ফেরা ব্যক্তি ও তাঁদের সন্তানদের নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন। সেখানে স্পষ্ট প্রমাণ মেলে যে, বাবা-মায়ের অভিজ্ঞতাই সন্তানের জিনে চাপ ফেলেছে।

গাজায় এখনো এপিজেনেটিক পরিবর্তন নিয়ে সরাসরি গবেষণা হয়নি। তবে নেদারল্যান্ডস, চীন আর হলোকাস্টের অভিজ্ঞতা থেকে বিজ্ঞানীরা তুলনা করছেন। রোজবুম বলেন, ‘গাজার শিশুদের ওপর বর্তমান পরিস্থিতির প্রভাব এত ভয়াবহ যে, তা তাদের জীবনভর ক্ষতি করবে—এমনকি যুদ্ধ শেষ হলেও।’

রুয়ান্ডা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. লিয়ন মুটেসা বলেন, গাজায় আমরা ইতিমধ্যে কিছু উপসর্গ দেখতে পাচ্ছি—ভয়, মানসিক চাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল। এগুলো এপিজেনেটিক পরিবর্তনের প্রাথমিক ইঙ্গিত, যেটা আমরা রুয়ান্ডায়ও দেখেছিলাম। তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘রুয়ান্ডায় দেখা গেছে—গণহত্যার সময় জন্ম নেওয়া শিশুদের ওপর মায়েদের ট্রমা গভীর প্রভাব ফেলে। মানসিক ব্যাধি, বিষণ্নতা, বাইপোলার, হ্যালুসিনেশনসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। তাঁর মতে, যুদ্ধক্ষেত্রের প্রভাব আরও ভয়ংকর। অনাহার, বাস্তুচ্যুতি, সহিংসতা—সব মিলিয়ে গাজায় দ্বিগুণ নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের হিসাব অনুযায়ী, গত দুই বছরে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২০ হাজার শিশু নিহত হয়েছে। ইউনিসেফ বলছে, নিহত বা আহত শিশুর সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি। শুধু আগস্ট মাসেই ১২ হাজার ৮০০ শিশুকে মারাত্মক অপুষ্টিতে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করেছে জাতিসংঘ। তারা বলছে, গাজায় দুর্ভিক্ষ ‘অস্বীকার করার উপায় নেই’।

উইসকনসিন–ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিজেনেটিকস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হাসান খাতিব সতর্ক করে বলেন, ‘গাজায় ভয়াবহ জেনেটিক বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।’ তাঁর ভাষায়, গর্ভবতী নারী ও কিশোরদের জন্য বিশেষ ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তিনি সাম্প্রতিক একটি গবেষণার উদাহরণ টেনে বলেন, বাবার খাদ্যাভ্যাস ভেড়ার পরবর্তী দুই প্রজন্মের স্বাস্থ্য ও রোগ প্রবণতা প্রভাবিত করেছে। তাঁর মতে, গাজায় জটিল সব পরিস্থিতি মানুষের ওপর নেতিবাচক চাপ ফেলছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আরও ভয়াবহ বিপর্যয় বয়ে আনবে।

রোয়ানের শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তাঁর গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়েছে, যা অতীত গবেষণার ফলের সঙ্গে মিলে যায়। রোজবুম বলেন, শিশুটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছে না। এতে তার বিপাকক্রিয়া স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস বা হৃদ্‌রোগ হতে পারে। মুটেসার মতে, যুদ্ধ আর অনাহার রোয়ানের জিনকে বদলে দিচ্ছে। এর প্রভাব পড়বে তার পরবর্তী প্রজন্মেও।

গবেষকেরা একটি স্পষ্ট সমাধানের কথাই বলছেন—যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। মুটেসা বলেন, রুয়ান্ডায় দেখেছি, সহিংসতা শেষ হওয়ার পর যখন সহায়তা দেওয়া হয়েছিল, তখন কিছু মানুষের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, জীবনধারা এবং পরিবেশও জিনের প্রকাশে প্রভাব ফেলে। নিরাপদ পরিবেশ, খাবার, চিকিৎসা আর সামাজিক স্থিতিশীলতা ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে।

রোজবুম বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। গাজায় শিশুদের কষ্ট শুধু আজকের জন্য নয়, প্রজন্মের পর প্রজন্ম বহন করবে এর বোঝা। যদিও ইতিমধ্যে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সঠিক সহায়তা পেলে আরও বড় বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব।

আলদ্রেইনি বলেন, ‘আমি দেখি আমার সন্তানেরা দিনে দিনে দুর্বল হচ্ছে। আমি আর আমার স্ত্রী ডায়াবেটিস আর উচ্চ রক্তচাপে ভুগছি। তবু আমি স্বপ্ন দেখি—একদিন এই গণহত্যা শেষ হবে। আমরা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরব—আর সব মানুষের মতো।’

তথ্যসূত্র: মিডল ইস্ট আই

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচে হামলাকারীর অস্ত্র কেড়ে নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন পথচারী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সশস্ত্র হামলাকারীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁকে নিরস্ত্র করেছেন এক পথচারী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সেই পথচারী হাজারো মানুষের প্রশংসায় ভাসছেন।

ভাইরাল ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, সাদা শার্ট পরা ওই পথচারী পার্কিং লট থেকে দৌড়ে গিয়ে রাইফেল হাতে থাকা হামলাকারীকে পেছন থেকে জাপটে ধরেন। এরপর তিনি হামলাকারীর কাছ থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নেন এবং সেটি হামলাকারীর দিকেই তাক করেন।

অকস্মাৎ পেছন থেকে জাপটে ধরায় হামলাকারী ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন এবং পিছু হটেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই পথচারীর এমন সাহসী পদক্ষেপে বহু মানুষের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে।

যদিও ওই পথচারীর পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি, তবে তাঁর এই অবিশ্বাস্য সাহসিকতার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক ব্যক্তি ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার হিরো (একজন সাধারণ বেসামরিক) হামলাকারীর কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে নিরস্ত্র করেছেন। কেউ কেউ সাহসী আর কেউ কেউ...এই ধরনের।’ অন্য একজন বলেছেন, ‘এই অস্ট্রেলিয়ান বন্ডাই বিচে সন্ত্রাসীদের একজনকে নিরস্ত্র করে অসংখ্য জীবন বাঁচিয়েছেন। হিরো।’

নিউ সাউথ ওয়েলসের প্রিমিয়ার ক্রিস মিন্স এটিকে তাঁর দেখা ‘সবচেয়ে অবিশ্বাস্য দৃশ্য’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ওই লোকটি একজন প্রকৃত হিরো। তিনি নির্ভয়ে হামলাকারীর দিকে এগিয়ে গিয়ে তাঁকে নিরস্ত্র করলেন এবং অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বিপন্ন করলেন। আমি নিশ্চিত যে, ওই ব্যক্তির সাহসিকতার জন্যই অনেক মানুষ বেঁচে আছেন।’

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজও হামলার সময় অন্যদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসা নাগরিকদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই অস্ট্রেলীয়রা বিপদেও ছুটে গেছেন অন্যদের রক্ষা করতে। তাঁদের সাহসিকতাই অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে।

উল্লেখ্য, গুলির ঘটনায় এখন পর্যন্ত হামলাকারীসহ ১২ জন নিহত বলে জানা গেছে। দুই হামলাকারীর মধ্যে একজন গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশের হেফাজতে আছেন। এ ঘটনায় তৃতীয় কোনো বন্দুকধারী জড়িত ছিলেন কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শান্তির জন্য ন্যাটোর আশা ছাড়ার ইঙ্গিত দিল ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধের অবসানে শান্তি আলোচনার পথ সুগম করতে গিয়ে ন্যাটো জোটে যোগদানের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে জার্মানির বার্লিনে বৈঠকের প্রাক্কালে তিনি জানান—ন্যাটো সদস্যপদের বদলে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে শক্তিশালী ও আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেলে সেটিকে একটি সমঝোতা হিসেবে বিবেচনা করতে প্রস্তুত কিয়েভ।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে জেলেনস্কি বলেন, শুরু থেকেই ইউক্রেনের প্রকৃত লক্ষ্য ছিল ন্যাটো সদস্যপদ, যা দেশটির নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে কার্যকর গ্যারান্টি। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এই পথে সমর্থন না দেওয়ায় বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হচ্ছে। তাঁর ভাষায়—যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ‘আর্টিকেল ফাইভ’-এর মতো প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি এবং ইউরোপ, কানাডা ও জাপানের কাছ থেকে নিরাপত্তা গ্যারান্টি ভবিষ্যতে রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে পারে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এসব নিশ্চয়তা অবশ্যই আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হতে হবে।

এই অবস্থান ইউক্রেনের জন্য একটি বড় নীতিগত পরিবর্তন। কারণ দেশটির সংবিধানেই ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একই সঙ্গে এটি রাশিয়ার যুদ্ধলক্ষ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। ন্যাটোতে যোগদানের বিরোধিতা করেই ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করেছিল রুশ বাহিনী। তবে বর্তমানে তারা ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের দখলও নিতে চাইছে। তবে মস্কোর কাছে ভূখণ্ড ছাড় না দিতে এখনো অনড় রয়েছে ইউক্রেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার দাবি করে আসছেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে এবং দনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, ইউক্রেনকে একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হতে হবে এবং সেখানে ন্যাটো সেনা মোতায়েন করা যাবে না।

রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের চাপের মুখে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের আলোচনা এগোচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার বার্লিনে আলোচনায় অংশ নিতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি প্রায় চার বছর আগে শুরু হওয়া এই যুদ্ধের অবসানে অগ্রগতির সম্ভাবনার ইঙ্গিত।

জেলেনস্কি জানিয়েছেন—ইউক্রেন, ইউরোপীয় দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্র মিলিয়ে একটি ২০ দফা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে, যার শেষ ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে। তবে তিনি স্পষ্ট করেন, ইউক্রেন সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে কোনো আলোচনা করছে না।

ইউরোপীয় মিত্ররা এই সময়টিকে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য একটি ‘সংকটজনক মুহূর্ত’ হিসেবে দেখছে। একই সঙ্গে রুশ হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ, তাপ ও পানিসেবা অবকাঠামো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মানবিক সংকটও গভীর হচ্ছে। জেলেনস্কির অভিযোগ, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে ইউক্রেনের জনগণের ওপর সর্বোচ্চ ক্ষতি চাপিয়ে দিতে চাইছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে বেঁচে ফেরা ২ শিক্ষার্থী বেঁচেছিলেন স্কুল জীবনেও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মিয়া ট্রেটা ও জোয়ে ওয়েইসম্যান। ছবি: সংগৃহীত
মিয়া ট্রেটা ও জোয়ে ওয়েইসম্যান। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) ভয়াবহ বন্দুক হামলার ঘটনায় দুজন নিহত এবং অন্তত ৯ জন আহত হয়েছেন। ফাইনাল পরীক্ষার সময় সংঘটিত এই হামলায় পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আত্মরক্ষার জন্য অনেক শিক্ষার্থী ডেস্কের নিচে লুকিয়ে পড়েছিলেন। তবে ভয়াবহ এই অভিজ্ঞতা অন্তত দুই শিক্ষার্থীর কাছে নতুন কিছু ছিল না। এর আগেও তাঁরা স্কুল জীবনে এই ধরনের গোলাগুলির মুখে পড়ে প্রাণে বেঁচেছিলেন।

রোববার (১৪ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২১ বছর বয়সী মিয়া ট্রেটা এবং ২০ বছর বয়সী জোয়ে ওয়েইসম্যান—দুজনেই অতীতে ভিন্ন ভিন্ন স্কুলে বন্দুক হামলার শিকার হয়েছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওয়েইসম্যান বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বেশি যে অনুভূতিটা হচ্ছে তা হলো—এই দেশ কীভাবে আমাকে দ্বিতীয়বারের মতো এমন কিছুর মুখোমুখি হতে দিল?’

শনিবার কালো পোশাক পরা এক বন্দুকধারী ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনে গুলি চালানো শুরু করলে ক্যাম্পাসে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সন্দেহভাজন হামলাকারী দীর্ঘ সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় শত শত পুলিশ রাতভর ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় তল্লাশি চালায়।

ওয়েইসম্যান তখন নিজের ডরমিটরিতেই ছিলেন। এক বন্ধুর ফোন পেয়ে তিনি জানতে পারেন ক্যাম্পাসে গুলিবর্ষণ চলছে। প্রথমে ভয় পেলেও সেই আতঙ্ক দ্রুত ক্ষোভে রূপ নেয়। এনবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, জীবনে আর কখনো এমন কিছুর মুখোমুখি হতে হবে না। আট বছর পর আবারও সেই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি।’

২০১৮ সালে ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডে নিজের মিডল স্কুলের পাশের একটি হাইস্কুলে ভয়াবহ শুটিং প্রত্যক্ষ করেছিলেন ওয়েইসম্যান। ওই ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছিল।

অন্যদিকে, মিয়া ট্রেটা ২০১৯ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসের কাছে সগাস হাইস্কুলে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তখন ১৬ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী হামলা চালিয়ে দুজনকে হত্যা করে, যাদের একজন ছিলেন ট্রেটার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। গুলিতে ট্রেটার পেট গুরুতরভাবে জখম হয়েছিল।

শনিবারের ঘটনার সময় নিজের ডরমিটরিতে পড়াশোনা করছিলেন ট্রেটা। তিনি মূলত যে ভবনে হামলাটি ঘটে সেখানে পড়তে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ক্লান্ত বোধ করায় শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলান—যা কার্যত তার প্রাণ বাঁচায়।

এই হামলা যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দীর্ঘদিনের দাবিকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। গান ভায়োলেন্স আর্কাইভের তথ্যমতে, চলতি বছরেই যুক্তরাষ্ট্রে ৩৮৯টি গণ গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৫০০-এর বেশি।

ট্রেটা ও ওয়েইসম্যান দুজনই বলছেন, তাঁরা কখনো ভাবেননি দ্বিতীয়বার এমন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ওয়েইসম্যান বলেন, ‘আমি নিজেকে বোঝাতাম—পরিসংখ্যান অনুযায়ী এটা আর কখনো ঘটবে না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আর কেউই এমন নিশ্চয়তা দিতে পারে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচে গুলির শব্দকে শুরুতে আতশবাজি ভেবেছিলেন অনেকে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০: ৪৪
হামলার সময় বন্ডি সৈকত আতঙ্কিত মানুষদের ছোটাছুটি। ছবি: সংগৃহীত
হামলার সময় বন্ডি সৈকত আতঙ্কিত মানুষদের ছোটাছুটি। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির জনপ্রিয় সমুদ্রসৈকত বন্ডাই বিচে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে হামলার সময়টিতে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তাঁরা বলছেন, শুরুতে অনেকেই বুঝতেই পারেননি কী ঘটছে। অনেকেই ভেবেছিলেন আতশবাজি ফাটছে। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই পরিস্থিতি বদলে যায়, আর মানুষ প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াতে শুরু করে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে হামলার মুহূর্তটির বর্ণনা দিয়েছেন মার্কোস কারভালহো নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী। গুলির শব্দকে আতশবাজি ভেবেছিলেন তিনিও। কারভালহো জানান, সারা দিন সমুদ্রসৈকতে থাকার পর তিনি নিজের জিনিসপত্র গোছাচ্ছিলেন। এমন সময়ই গুলির শব্দ ভেসে আসে।

তিনি বলেন, ‘এক মিলিয়ন বছরেও ভাবিনি, বন্ডির মতো জায়গায় এমন গুলিবর্ষণ হতে পারে।’ তিনি জানান, মানুষ যখন বুঝতে শুরু করে কী হচ্ছে, তখনই সবাই দিগ্‌বিদিক ছুটে পালাতে থাকে। প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াতে শুরু করেন তিনি নিজেও।

কারভালহো বলেন, ‘আমি প্রাণ বাঁচাতে নর্থ বন্ডি গ্রাসি নলের দিকে দৌড়াই। পরে আরও কয়েকজন সহ আমরা একটি একটি আইসক্রিম ভ্যানের পেছনে লুকাই।’

জরুরি সেবা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পরই গুলির শব্দ থামে। এরপর হামলার জায়গাটির পাশ দিয়েই বাড়ি ফেরেন কারভালহো। এ সময় তিনি মাটিতে বেশ কয়েকটি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে, বন্ডাই বিচে উপস্থিত ছিলেন হাইম লেভি। তিনি ইসরায়েলের চ্যানেল ১২-কে জানান, হানুকা উৎসবের সময় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি সৈকতে বসেছিলেন। তখনই হামলা শুরু হয়। লেভি বলেন, ‘হঠাৎ ধোঁয়া দেখলাম, আর গুলির শব্দ শুনলাম। প্রথমে বুঝতে পারিনি গুলি আকাশে ছোড়া হচ্ছে নাকি ভিড়ের দিকে। তবে তাৎক্ষণিকভাবেই বোঝা গেল ভয়াবহ কিছু ঘটছে।’

লেভি জানান, তিনি স্ত্রীকে দৌড়াতে বলেন। পরে মেয়েকে নিয়ে ছুটতে শুরু করেন স্ত্রী, আর ছেলেকে নিয়ে একটি গাড়ির পেছনে লুকিয়ে পড়েন তিনি। প্রায় ২০ মিনিট ধরে তাঁদের মাথার ওপর দিয়ে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। পরে একটি বেড়া টপকে ছেলেকে নিয়ে গাড়ির কাছে পৌঁছান। খুঁজে পান স্ত্রীকেও। তাঁরা দ্রুত সেখান থেকে কেটে পড়েন।

লেভি আরও জানান, হামলার মুহূর্তটিকে তাঁর দুই বছর বয়সী ছেলে কান্না করছিল। গুলিবর্ষণকারীরা শুনে ফেললে মেরে ফেলতে পারে—এমন ভয়ে তিনি ছেলের মুখ চেপে ধরেন।

অস্ট্রেলিয়ায় ক্রমবর্ধমান ইহুদিবিদ্বেষের সমালোচনা করে লেভি বলেন, ‘এমন কিছু যে ঘটবে, তা স্পষ্ট ছিল। কিন্তু কখনো ভাবিনি আমি নিজে পরিবার নিয়ে এর মাঝখানে পড়ব।’ গুলিবর্ষণের মধ্যে দিয়ে বেঁচে ফেরাকে তিনি ‘অলৌকিক’ বলেই মনে করছেন লেভি।

অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ জানিয়েছে, বন্ডাই বিচে বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া দুজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৪ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যেই দুজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বন্ডি বিচ ও এর সংলগ্ন এলাকায় বড় আকারের অপারেশন শুরু করেছে।

নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ ‘এক্স’ হ্যান্ডলে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, পুলিশি অভিযান এখনো চলছে এবং জনসাধারণকে ওই এলাকা এড়িয়ে চলার অনুরোধ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত