Ajker Patrika

ফিলিস্তিনের মসজিদ-গির্জায়ও পড়ছে ইসরায়েলি বোমা

আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৩, ১১: ১৮
ফিলিস্তিনের মসজিদ-গির্জায়ও পড়ছে ইসরায়েলি বোমা

ইসরায়েলের হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না ফিলিস্তিনের গাজার কোনো এলাকাই। আল আহলি আরব হাসপাতালে গত মঙ্গলবার রাতের ভয়াবহ হামলার পর উপত্যকাটির মসজিদ ও গির্জাও ইসরায়েলের হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে গাজা সিটির যে গির্জা হামলার শিকার হয়, সেখানে ঠাঁই নিয়েছিল বাস্তুচ্যুত হাজারো ফিলিস্তিনি। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত টানা দুই সপ্তাহের হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৪ হাজার ছাড়িয়েছে। এর অর্ধেকই শিশু। তবে ইসরায়েলি নিহত ১ হাজার ৪০০ জনই আছে। 

গাজায় হামলায় ঐতিহাসিক আল-ওমারি মসজিদ ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। গতকাল তুরস্কের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আনাদোলু জানায়, সপ্তম শতাব্দীর মসজিদটি ফিলিস্তিনের তৃতীয় বৃহত্তম মসজিদ ছিল। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কুদস নিউজ নেটওয়ার্ক গতকাল এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্টে মসজিদটির তিনটি ছবি প্রকাশ করেছে। ছবিগুলোয় দেখা যায়, মসজিদটির মূল অংশেই বোমা পড়েছে। তবে মিনার ও গম্বুজ অক্ষত আছে। 

হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বৃহস্পতিবার রাতে গাজা সিটির গ্রিক অর্থোডক্স সেন্ট পরফিরিয়াস গির্জা হামলার শিকার হয়। সেখানে বিপুলসংখ্যক লোক নিহত হয়েছে। পরে গাজার গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, গির্জায় হামলায় ১৮ খ্রিষ্টান-ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তবে হতাহতের বিষয়ে গির্জা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় গভীর নিন্দা জানিয়েছে অর্থোডক্স গির্জা।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানায়, ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ থেকে বাঁচতে অন্তত ৫০০ মুসলিম ও খ্রিষ্টান গির্জাটিতে আশ্রয় নিয়েছিল। এদিকে গাজায় উদ্ভূত মানবিক সংকট নিয়ে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন আল থানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। গাজায় পানি, খাদ্য ও ওষুধের জরুরি প্রয়োজনের বিষয়ে সম্মত হন তাঁরা।

ডাউনিং স্ট্রিটের এক মুখপাত্র বলেন, গাজার যুদ্ধ যাতে গোটা অঞ্চলে ছড়িয়ে না পড়ে, সে বিষয়ে দুই নেতা আলোচনা করেছেন। যুদ্ধের বিস্তৃতি এড়াতে বিশ্ব নেতৃত্বের দায়ভার রয়েছে বলেও একমত হন তাঁরা। সুনাক এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টের পথ অনুসরণ করে ইসরায়েলের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানাতে দেশটিতে সফরে গিয়েছিলেন। কাতার সফর শেষে গতকালই মিসরে যান।

মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে বৈঠকে তিনি যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে কথা বলেছেন। পরে তিনি ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। বিবিসি জানায়, গাজায় আজ শনিবার ত্রাণবাহী প্রথম বহরটি ঢুকতে পারে। ইসরায়েলের তরফ থেকে এই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘও জানিয়েছে, রাফাহ ক্রসিং দিয়ে আজ ত্রাণবাহী বহর ঢুকতে পারে। 

দেশে দেশে বিক্ষোভ
এএফপি, আল জাজিরা, বিবিসিসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানায়, গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। এ সময় ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানানো হয়। মিসর, তুরস্ক, ইরাক, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে এসব বিক্ষোভ হয়। সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয় মিসরের কায়রোর তাহরির স্কয়ারে।  মিসরে বিক্ষোভ নিষিদ্ধ হলেও গত বুধবার দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি দেশটিতে সফররত জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজকে বলেন, গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে মিসরে বিক্ষোভ হবে এবং লাখো মানুষ সড়কে নামবে। এর পরই গতকাল দেশজুড়ে বিক্ষোভ হয়।

 এদিকে ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলীয় তেব্রিল সীমান্ত এলাকায় বিক্ষোভ করেছে হাজারো মানুষ। ইরান সমর্থিত শিয়া রাজনৈতিক সংগঠন কো-অর্ডিনেশন ফ্রেমওয়ার্ক এই বিক্ষোভের আয়োজন করে। এই সংগঠন রাজধানী বাগদাদেও বিক্ষোভের আয়োজন করেছিল। সেখানে মার্কিন দূতাবাসের সামনে ছোট পরিসরে বিক্ষোভটি হয়। এ ছাড়া তুরস্কেও বিক্ষোভ হয়েছে। 

মিসরে শান্তি সম্মেলন আজ
গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং চলমান উত্তেজনা নিরসনের পথ অনুসন্ধানে শান্তি সম্মেলন ডেকেছে মিসর। কায়রোয় আজ এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ, বাহরাইনের বাদশাহ হামাদ বিন ইসা আল খলিফা, কুয়েতের যুবরাজ শেখ মেশাল আল-আহমাদ আল-সাবাহ, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ, গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকস মিৎসোতাকিস, সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিসটোডুলিডস, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসাসহ বেশ কয়েকজন নেতা অংশগ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া জার্মানি, ফ্রান্স, জাপান, যুক্তরাজ্য, নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও এতে অংশ নেবেন। এর বাইরে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লাস মাইকেল, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলও অংশ নেবেন। 

ইরাকে মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলা
ইরাকে মার্কিন বাহিনীর ওপর গত বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিনবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। যদিও এসব হামলায় খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। মার্কিন বাহিনী বলেছে, দু-একজন সেনাসদস্য সামান্য আহত হয়েছেন। এসব হামলার মধ্যে ইরাকের পশ্চিমাঞ্চলীয় আনবার প্রদেশে আইন আল-আসাদ সামরিক ঘাঁটিতে হওয়া দুটি হামলার দায় স্বীকার করেছে ইরান-সমর্থিত একটি গোষ্ঠী।

ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স নামের সংগঠনটি বলেছে, তারা ওই ঘাঁটিতে বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দফায় হামলা চালায়। নিরাপত্তা সূত্র বলেছে, ঘাঁটির ভেতরে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এসব হামলা চালানো হয়েছে। এই ঘাঁটি ছাড়াও ইরাকের উত্তরাঞ্চলে আরেকটি ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে বুধবার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২০২৫ সালের সেরা সিইও কে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: দ্য ইকোনমিস্ট
ছবি: দ্য ইকোনমিস্ট

২০২৫ সাল ছিল বিশ্ব করপোরেট নেতৃত্বের জন্য এক কঠিন পরীক্ষার বছর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার ফলে শুরু হয় নতুন বাণিজ্যযুদ্ধ ও অনিশ্চিত নীতিনির্ধারণ। একই সঙ্গে চীন ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে প্রযুক্তিগত আধিপত্যের লড়াই আরও তীব্র হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে বিপুল প্রত্যাশা থাকলেও, সেটিকে লাভজনক ব্যবসায় রূপ দেওয়ার কাজ অনেক সিইওর জন্য হতাশাজনকই থেকে যায়।

তবে এই অস্থিরতার মধ্যেও কিছু প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ব্যতিক্রমী সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। টানা তৃতীয়বারের মতো ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ এবারও (২০২৫ সাল) সেরা সিইও নির্বাচন করেছে। এ ক্ষেত্রে এসঅ্যান্ডপি ১২০০ সূচকের অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোকে তাদের খাতভিত্তিক গড়ের তুলনায় অতিরিক্ত শেয়ারহোল্ডার রিটার্নের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর তিন বছরের কম সময় দায়িত্বে থাকা সিইওদের বাদ দিয়ে শীর্ষ ১০ জনকে প্রাথমিক তালিকায় রাখা হয়।

এই তালিকায় ছিলেন—জার্মান অস্ত্র নির্মাতা রাইনমেটালের আরমিন পাপারগার, স্বর্ণখনি জায়ান্ট নিউমন্টের টম পামার, ফুজিকুরার ওকাদা নাওকি, ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির ডেভিড জাসলাভ, হানহা অ্যারোস্পেসের সন জে-ইল, মাইক্রনের সঞ্জয় মেহরোত্রা, কিনরস গোল্ডের জে পল রোলিনসন, রবিনহুডের ভ্লাদিমির টেনেভ, এসকে হাইনিক্সের কাক নো-জং এবং সিগেট টেকনোলজির ডেভ মসলে।

তবে অতীতের দুর্বল পারফরম্যান্স, করপোরেট গভর্ন্যান্স সমস্যা কিংবা নিছক সৌভাগ্যের কারণে অনেকেই চূড়ান্ত বিবেচনা থেকে বাদ পড়েছেন। স্বর্ণের দাম প্রায় ৬৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় খনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বাড়লেও, সেটিকে সিইওদের কৃতিত্ব হিসেবে ধরা হয়নি। মেমোরি চিপ খাতে এআই বুমের সুফল পেলেও, সেখানে এসকে হাইনিক্সের গবেষণা ও উন্নয়নে ধারাবাহিক বিনিয়োগ আলাদা করে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

সবশেষে ২০২৫ সালের সেরা সিইও হিসেবে রাইনমেটালের আরমিন পাপারগারকেই বেছে নিয়েছে ‘দ্য ইকোনমিস্ট’। তাঁর নেতৃত্বে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশসহ ১৫৮ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে। ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাইনমেটাল বড় বড় চুক্তি জয় করেছে এবং নৌযান নির্মাণ খাতেও সম্প্রসারণে নেমেছে। ২০১৩ সাল থেকে দায়িত্বে থাকা পাপারগার ইউক্রেন যুদ্ধের আগেই ইউরোপের প্রতিরক্ষা শিল্পের সম্ভাবনা অনুধাবন করেছিলেন। দূরদর্শিতা, সাহস ও দৃঢ় নেতৃত্বের ফলেই ২০২৫ সালের সেরা সিইওর স্বীকৃতি তাঁর হাতেই উঠেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এবার ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বৈঠক—কী আছে সর্বশেষ ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএনএন
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএনএন

ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে একটি ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবকে সামনে রেখে রোববার (২৮ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। জেলেনস্কির কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এই খসড়া প্রস্তাবকে তিনি ভবিষ্যতে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করার একটি সম্ভাব্য ভিত্তি হিসেবে দেখছেন।

এর আগে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২৮ দফার একটি খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চললেও সেটিকে রাশিয়ার দাবির প্রতি অতিরিক্ত সহানুভূতিশীল মনে করা হয়েছিল। কয়েক সপ্তাহের আলোচনার পর প্রস্তাবটি সংশোধন করে ২০ দফায় নামিয়ে আনা হয়। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, অধিকাংশ বিষয়ে পক্ষগুলোর অবস্থান অনেকটাই কাছাকাছি এসেছে। তবে এখনো দুটি ইস্যুতে ঐকমত্য হয়নি—ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ এবং জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা ও পরিচালনা।

প্রস্তাবনার শুরুতেই ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব পুনর্ব্যক্ত করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিঃশর্ত আগ্রাসনবিরোধী চুক্তির প্রস্তাব রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি শান্তি বজায় রাখতে সীমান্তবর্তী সংঘর্ষরেখা নজরদারির জন্য মহাকাশভিত্তিক মানববিহীন প্রযুক্তি ব্যবহারের কথাও এতে অন্তর্ভুক্ত আছে।

এই কাঠামো অনুযায়ী, ইউক্রেন তার সশস্ত্র বাহিনীর বর্তমান শক্তি—প্রায় ৮ লাখ সেনা—অক্ষুণ্ন রাখবে। যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো ও ইউরোপীয় দেশগুলো ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫-এর আদলে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে। অপরদিকে ইউক্রেন ও ইউরোপের বিরুদ্ধে আগ্রাসন না করার নীতি নিজ দেশের আইনে এবং পার্লামেন্টের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিতে হবে রাশিয়াকে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে ইউক্রেনের জন্য রয়েছে বড় পরিসরের পুনর্গঠন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল পুনর্গঠন, মানবিক সহায়তা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য একাধিক তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার লক্ষ্য প্রায় ৮০০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ। ইউক্রেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পাবে এবং অস্থায়ীভাবে ইউরোপীয় বাজারে বিশেষ সুবিধা ভোগ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার কথাও বলা হয়েছে।

সবচেয়ে জটিল ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ভূখণ্ড প্রশ্ন। রাশিয়া দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহার চায়, অন্যদিকে ইউক্রেন বর্তমান যুদ্ধরেখায় সংঘর্ষ বন্ধের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র এখানে একটি নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চল ও মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব দিয়েছে।

যুদ্ধবন্দীর মতো মানবিক বিষয়ে ‘সবার বিনিময়ে সবার মুক্তি’, আটক বেসামরিক নাগরিক ও শিশুদের ফেরত এবং যুদ্ধাহতদের সহায়তার কথা রয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করবে ইউক্রেন।

এই শান্তিচুক্তি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হবে এবং এর বাস্তবায়ন তদারক করবে একটি ‘পিস কাউন্সিল’, যার সভাপতিত্ব করবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সব পক্ষ একমত হলে সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে—এমনটাই বলা হয়েছে এই ২০ দফা প্রস্তাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৪০ শতাংশ জার্মান মনে করেন মার্জের সরকার টিকবে না

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ। ছবি: এএফপি
জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ। ছবি: এএফপি

জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ২০২৯ সাল পর্যন্ত তাদের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে দেশটির নাগরিকদের একটি বড় অংশের মধ্যে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছে। গতকাল শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) প্রকাশিত একটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৪০ শতাংশ জার্মান নাগরিক মনে করেন, এই সরকার নির্ধারিত সময়ের আগেই ভেঙে যেতে পারে।

২০২৫ সালের মে মাসে জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন ফ্রিডরিখ মার্জ। তবে বছর শেষ হতে না হতেই তাঁর সরকারের জনপ্রিয়তা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে জনপ্রিয় জার্মান সংবাদমাধ্যম ওয়েল্ট অ্যাম সোনটাগ (Welt am Sonntag)।

জনমত জরিপ পরিচালনাকারী সংস্থা ‘ইউগভ’ জার্মান সরকারকে নিয়ে জরিপটি করে। ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে ১ হাজার ১০ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর এই জরিপ চালানো হয়।

ইউগভের তথ্যমতে, ৩৭ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন—রক্ষণশীল খ্রিষ্টান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিএসইউ) ও তার সহযোগী দল খ্রিষ্টান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) এবং মধ্য-বাম সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এসডিপি) সমন্বয়ে গঠিত এই জোট সরকারের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন (২০২৯) পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকার সম্ভাবনা ‘খুবই কম’।

অন্য দিকে ৫৩ শতাংশ নাগরিক বিশ্বাস করেন, মার্জ সরকার তাদের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারবে। অন্য ৯ শতাংশ কোনো নিশ্চিত মতামত দেয়নি।

জরিপে আরও দেখা গেছে, সাবেক পূর্ব জার্মানির রাজ্যগুলোতে সরকারের প্রতি অনাস্থা সবচেয়ে বেশি (৪২ শতাংশ), যেখানে পশ্চিম জার্মানিতে এই হার ৩৬ শতাংশ।

জরিপ সংস্থা ‘ইনসা’র অন্য একটি জরিপে দেখা গেছে, চ্যান্সেলর হিসেবে ফ্রিডরিখ মার্জের কাজে সন্তুষ্ট মাত্র ২২ শতাংশ জার্মান। এই ফলাফল মূলত জোটের স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপের মুখে নেতৃত্বের অভাব নিয়ে জনগণের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগেরই প্রতিফলন।

উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জার্মানিতে আগাম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ফ্রিডরিখ মার্জের সিডিইউ/সিএসইউ জোট ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়। অন্য দিকে উগ্র ডানপন্থী দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) রেকর্ড ২০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে আসে। আর ওলাফ শোলৎজের দল এসডিপি মাত্র ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পায়, যা তাদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।

তবে এসপিডি বড় ধরনের হারের মুখ দেখলেও সিডিইউ/সিএসইউ জোটের সঙ্গে মিলে সরকার গঠন করে, যার ফলে সাবেক চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজের দল পুনরায় মন্ত্রিসভায় ফেরার সুযোগ পায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও ইউরোপের সঙ্গে ‘পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে’ আছে ইরান: পেজেশকিয়ান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। ছবি: এপির সৌজন্যে
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। ছবি: এপির সৌজন্যে

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তাঁর দেশ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে একটি ‘পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে’ লিপ্ত রয়েছে। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির দাপ্তরিক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

পেজেশকিয়ান সতর্ক করে বলেন, এই যুদ্ধ আশির দশকের ইরান-ইরাক যুদ্ধের চেয়েও অনেক বেশি জটিল এবং কঠিন। তিনি অভিযোগ করেন, পশ্চিমারা ইরানকে আর্থিকভাবে পঙ্গু করতে এবং অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে বহুমুখী কৌশল অবলম্বন করছে।

ইরানি প্রেসিডেন্ট বর্তমান সংঘাতকে কেবল সামরিক নয়; বরং একটি সর্বাত্মক অবরোধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। পেজেশকিয়ান বলেছেন, ‘ইরাক যুদ্ধের সময় পরিস্থিতি পরিষ্কার ছিল—তারা যদি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ত, আমরাও পাল্টা জবাব দিতাম। কিন্তু বর্তমান যুদ্ধ অনেক বেশি সূক্ষ্ম। তারা আমাদের প্রতিটি দিক থেকে অবরুদ্ধ করে ফেলছে; আমাদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি, রাজনীতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি করছে।’

তিনি জানান, একদিকে ইরানকে বিশ্ববাণিজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চলছে, অন্যদিকে জনগণের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দেশে অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট তাঁর সাক্ষাৎকারে ২০২৫ সালের জুন মাসের ১২ দিনের যুদ্ধের প্রসঙ্গও টানেন।

উল্লেখ্য, গত জুন মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় (ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহান) হামলা চালিয়েছিল। সে সময় ইসরায়েলি হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং বিজ্ঞানীরা নিহত হন।

পেজেশকিয়ান দাবি করেন, জুনের সংঘাতের পর ইরান এখন সামরিক সরঞ্জাম ও জনবল—উভয় দিক থেকেই আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ‘যদি তারা আবার হামলা চালানোর দুঃসাহস দেখায়, তবে এবার জবাব হবে আরও কঠোর।’

পেজেশকিয়ানের এই কড়া বার্তা এমন একসময়ে এল যখন মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনার পারদ চড়ছে। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপের নীতি ফিরিয়ে এনেছেন।

এদিকে, চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন। লেবাননের সংবাদমাধ্যম আল-মায়েদিনের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সেখানে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর আলোচনায় গুরুত্ব পাবে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে পরবর্তী সম্ভাব্য হামলার পরিকল্পনা।

সাক্ষাৎকার শেষে পেজেশকিয়ান দেশের মানুষের প্রতি জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি বিশ্বাস করেন, জনগণের অংশগ্রহণ এবং অভ্যন্তরীণ সংহতি থাকলে বিশ্বের কোনো শক্তিই ইরানকে পরাজিত করতে পারবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত