Ajker Patrika

ইসরায়েলকে চমকে দিয়ে ইরানি ড্রোনের আঘাত

আপডেট : ২১ জুন ২০২৫, ২৩: ০০
ইরানের ড্রোন হামলার পর আক্রান্ত এলাকার ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করতে ঘটনাস্থলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সদস্য ও জরুরি সেবার কর্মীরা। গতকাল বেইত শেইন শহরে। ছবি: এএফপি
ইরানের ড্রোন হামলার পর আক্রান্ত এলাকার ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা করতে ঘটনাস্থলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সদস্য ও জরুরি সেবার কর্মীরা। গতকাল বেইত শেইন শহরে। ছবি: এএফপি

সামরিক শক্তিতে বরাবরই নিজেকে অপরাজেয় হিসেবে জাহির করা ইসরায়েলকে সত্যিই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে ইরান। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলকে ইতিমধ্যেই ব্যতিব্যস্ত করার পর গতকাল শনিবার দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করে সফল ড্রোন হামলা চালায় ইরান। ইরানের দুটি ড্রোন ইসরায়েলের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে সফলভাবে আঘাত হানে। বিষয়টি স্বীকার করে ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, তাদের সুরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করে এমন একমুখী হামলা একটি ‘বিরল ঘটনা’।

ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সম্পৃক্ততা নিয়ে আবারও হুঁশিয়ারি দিয়ে ইরান বলেছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে যুক্তরাষ্ট্রের যোগ দেওয়া হবে ‘অত্যন্ত ভয়ংকর’। এদিকে ইসরায়েলি হামলায় আরেক পরমাণুবিজ্ঞানী নিহতের কথা স্বীকার করেছে ইরান। ইসরায়েল গতকাল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায়ও হামলা চালিয়েছে।

মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে জর্ডান সীমান্তসংলগ্ন বেইত শেইন শহরে একটি ইরানি ড্রোন সফলভাবে আঘাত হানে। এতে একটি দোতলা বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণে ভবনটির দরজা-জানালা উড়ে গেছে ও এক পাশে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দ্বিতীয় ড্রোনটি দক্ষিণাঞ্চলের একটি খোলা জায়গায় আঘাত হানে।

দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে ১২ জুন রাতের অন্ধকারে অতর্কিতে ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তবে হামলার পাল্টা জবাব দিতে সময় নেয়নি তেহরান।

১৩ জুন ইসরায়েলে প্রায় ১৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে তারা। এর পর থেকে প্রতিদিনই প্রায় ১০০ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হচ্ছে।

ইসরায়েল দাবি করেছে, সংঘাত শুরুর পর ইরান থেকে ছোড়া বেশির ভাগ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছানোর আগেই তারা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে। আইডিএফ জানিয়েছে, গতকাল ইসরায়েলে হামলার উদ্দেশ্যে অন্তত ছয়টি ড্রোন পাঠায় ইরান। এর মধ্যে দুটি ছাড়া অন্যগুলো আরাভা মরুভূমি, গোলান মালভূমিসহ অন্যান্য অঞ্চলে পৌঁছানোর আগেই ঠেকিয়ে দেওয়া হয়।

পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা

ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। গতকাল ভোরে তৃতীয় বৃহত্তম শহর ইস্পাহানে একটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। তবে এতে সেখান থেকে কোনো ক্ষতিকর পদার্থ ছড়ানোর খবর তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। জাতিসংঘের পরমাণুবিষয়ক সংস্থা আইএইএর পক্ষ থেকে স্থাপনাটি সম্পর্কে কোনো হালনাগাদ তথ্য দেওয়া হয়নি।

আইডিএফ জানিয়েছে, গত শুক্রবার রাতভর তারা ইরানের মধ্যাঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্রের গুদাম ও বিভিন্ন অবকাঠামোয় হামলা চালিয়েছে। একই সঙ্গে ইরান থেকে ছোড়া একাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়েছে।

মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যে আস্থা নেই ট্রাম্পের

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যের বিষয়ে নিজের অনাস্থার কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই অনাস্থার কথা জানান তিনি। ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে, এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য তাঁর কাছে আছে কি না। কেননা সম্প্রতি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা বলেছে, তাদের কাছে এমন কোনো প্রমাণ নেই। উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘তাহলে আমার গোয়েন্দা সংস্থা ভুল বলেছে।’

ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের পর আগের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছেন গোয়েন্দাপ্রধান তুলসি গ্যাবার্ড। জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক গ্যাবার্ড এখন বলছেন, তাঁর ধারণা, ‘কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই’ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম ইরান। তিনি আগে বলেছিলেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা আছে বলে মার্কিন গোয়েন্দারা মনে করেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হুঁশিয়ারি ইরানের

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে গতকাল ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের জরুরি সম্মেলনে যোগ দেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে‍ তিনি বলেন, ইসরায়েলি আগ্রাসনে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা হবে ‘অত্যন্ত ভয়ংকর’।

ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের সমালোচনা করে আরাঘচি বলেন, ‘পারমাণবিক কর্মসূচির জন্য আলোচনার মাধ্যমে একটি সমাধানের পথ খুঁজতে আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত। তবে আমাদের জনগণের ওপর যখন বোমা হামলা চালানো হচ্ছে, তখন আমরা আলোচনায় যেতে পারি না।’

দশম পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত

ইসরায়েলি হামলায় আরেক পরমাণুবিজ্ঞানী নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে ইরান। এ নিয়ে চলতি সংঘাতে ১০ পরমাণুবিজ্ঞানীকে হারালো দেশটি। ড. ইসার তাবাতাবেই গোমশেহ নামের ওই বিজ্ঞানীকে গত সপ্তাহের শেষ দিকে তাঁর বাড়িতে হত্যা করা হয়। হামলায় তাঁর স্ত্রী মানসুরেহ হাজিসালেমও নিহত হন।

খামেনির উত্তরসূরি নির্ধারণের গুঞ্জন

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে তিন ধর্মীয় নেতাকে নির্বাচন করে রেখেছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। ইরানি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হত্যাচেষ্টার প্রেক্ষাপটে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কর্মকর্তারা বলছেন, সর্বোচ্চ নেতা তিনটি নাম প্রস্তাব করেছেন। সংশ্লিষ্টদের দ্রুত ওই তিনজনের মধ্য থেকে তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচনের দায়িত্ব দেওয়া হবে। এ তালিকায় খামেনির ছেলে মোজতাবার নাম নেই বলে জানা গেছে।

নিরাপত্তা পরিষদে উত্তপ্ত বাদানুবাদ

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের শুক্রবারের বৈঠকে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে উত্তপ্ত বাদানুবাদ হয়। উভয় পক্ষই নিজের মিত্রদের নিয়ে চলমান সংঘাতের জন্য পরস্পরের বিরুদ্ধে দায় চাপাতে থাকে। শেষ পর্যন্ত বৈঠক থেকে যুদ্ধ থামানো ও কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানানো হয়। তবে এর প্রক্রিয়া কী হবে, সে বিষয়ে কোনো ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি বলেন, ইসরায়েল এমন একটি পক্ষ, যারা শিশুসহ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে এবং অন্য দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন করে। জবাবে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেন, ইরান ‘ভুক্তভোগী সেজে নাটক করছে।’

এদিকে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের শুক্রবারের আলোচনা কোনো অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ইসরায়েলি হামলা বন্ধ না হলে গঠনমূলক আলোচনা সম্ভব নয়।

হতাহতের সংখ্যা

ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে নিজেদের পক্ষে গতকাল পর্যন্ত অন্তত ৪৩০ জন নিহত এবং ৩ হাজার ৫০০ জন আহতের কথা জানিয়েছে তেহরান। অন্যদিকে ইরানের হামলায় তাদের অন্তত ২৫ জন নিহত এবং ২ হাজার ৫১৭ জন আহতের কথা স্বীকার করেছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর পক্ষে স্বতন্ত্রভাবে কোনো সংখ্যা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

১৭ বছরের সাজার রায় চ্যালেঞ্জ করে ইমরান খান ও বুশরা বিবির আপিল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি বর্তমানে কারাগারে। তোশাখানা দুর্নীতির মামলায় তাঁরা দুজনই সাজা খাটছেন। এর মধ্যে ২০ ডিসেম্বর তোশাখানা দুর্নীতির নতুন মামলায় তাঁদের আরও ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দেন দেশটির একটি বিশেষ আদালত। এই রায় চ্যালেঞ্জ করে আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদ হাইকোর্টে (আইএইচসি) পৃথক দুটি আপিল করেছেন ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি।

আপিল আবেদনে ইমরান খান ও বুশরা বিবির আইনজীবীরা দাবি করেছেন, এই সাজা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ইমরান খানকে জাতীয় রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই এ ‘পরিকল্পিত’ রায় দেওয়া হয়েছে। আইনজীবীরা ইমরান খান ও বুশরা বিবির পক্ষে কিছু যুক্তি উত্থাপন করেছেন।

আইনজীবীদের দাবি, ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ) কোনো এফআইআর ছাড়াই ইমরান খান ও বুশরা বিবির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। এর মাত্র দুই দিনের মাথায় তড়িঘড়ি করে চালানো তদন্তের ভিত্তিতে এই মামলা হয়, যা স্বচ্ছ বিচারের পরিপন্থী।

আপিল আবেদনে বলা হয়েছে, তোশাখানাসংক্রান্ত এটি চতুর্থ মামলা। একই বিষয়ে বারবার মামলা করা আইনের লঙ্ঘন এবং এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে, যাতে ইমরান খানকে দীর্ঘদিন কারাগারে আটকে রাখা যায়।

আইনজীবীদের দাবি, ২০১৮ সালের তোশাখানা নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত মূল্যের ৫০ শতাংশ পরিশোধ করেই উপহারগুলো রাখা হয়েছিল। এখানে কোনো ধরনের বিশ্বাসভঙ্গ বা ‘ক্রিমিনাল ব্রিচ অব ট্রাস্ট’ ঘটেনি।

আপিলে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, পাকিস্তান পেনাল কোড অনুযায়ী ইমরান খান ও বুশরা বিবি এই উপহার নেওয়ার সময় প্রচলিত সংজ্ঞায় ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ ছিলেন না। বিশেষ করে, বুশরা বিবি একজন গৃহিণী হিসেবে কোনো সরকারি পদের দায়িত্বে ছিলেন না।

প্রসঙ্গত, তোশাখানা মামলাটি মূলত ২০২১ সালের মে মাসে সৌদি আরব সফরকালে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দেওয়া একটি দামি বুলগারি জুয়েলারি সেট নিয়ে। প্রায় ৮ কোটি রুপি মূল্যের এই নেকলেস, ব্রেসলেট, আংটি ও কানের দুলের সেটটি ইমরান দম্পতি মাত্র ২৯ লাখ রুপি পরিশোধ করে নিজের কাছে রেখেছিলেন।

এই মামলায় পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এআইএ) বিশেষ আদালতের বিচারক শাহরুখ আরজুমান্দ তাঁদের প্রত্যেককে প্রথমে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, এরপর দুর্নীতিবিরোধী আইনের আওতায় সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ১ কোটি ৬৪ লাখ রুপি জরিমানা করেছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে সংসদীয় অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন ইমরান খান। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা করা হয়। তিনি ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী আছেন। বর্তমানে ইমরান খান ১৯ কোটি পাউন্ডের দুর্নীতির মামলায় ১৪ বছরের সাজা খাটছেন। বুশরা বিবিও একই মামলায় সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত।

ইমরানের দল পিটিআইয়ের দাবি, তোশাখানা মামলার বিচারপ্রক্রিয়া ‘ক্যাঙারু কোর্টে’র মতো রুদ্ধদ্বার কক্ষে সম্পন্ন হয়েছে। এটি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক যুদ্ধবন্দীকে হত্যার অভিযোগ ইউক্রেনীয় কমান্ডারের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের ২২৫ তম পৃথক অ্যাসল্ট ব্যাটালিয়নের সঙ্গে কমান্ডার ওলেহ শিরিয়াইভ (মাঝে)। ছবি: দ্য টাইমস
ইউক্রেনের ২২৫ তম পৃথক অ্যাসল্ট ব্যাটালিয়নের সঙ্গে কমান্ডার ওলেহ শিরিয়াইভ (মাঝে)। ছবি: দ্য টাইমস

ইউক্রেনের অন্যতম সর্বোচ্চ সামরিক সম্মানপ্রাপ্ত এক কমান্ডার অভিযোগ করেছেন, শান্তি আলোচনার মধ্যেই রুশ বাহিনী পরিকল্পিতভাবে ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দীদের হত্যা করছে। ‘হিরো অব ইউক্রেন’ খেতাবে ভূষিত মেজর ওলেহ শিরিয়াইভ বলেছেন, রুশ সেনারা নিয়মিত আত্মসমর্পণ করা ইউক্রেনীয় সৈন্যদের গুলি করে হত্যা করছে এবং এটি এখন একটি পদ্ধতিগত নীতিতে পরিণত হয়েছে।

সম্মুখ সমরের অজ্ঞাত একটি অবস্থান থেকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শিরিয়াইভ জানান, তারা নিয়মিত এমন রেডিও ও যোগাযোগ বার্তা ধরতে পারছেন, যেখানে রুশ সামরিক নেতৃত্ব সরাসরি আত্মসমর্পণকারী সেনাদের হত্যা করার নির্দেশ দিচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, এই প্রথা গত দেড় বছরে একটি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ ভয়াবহভাবে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সামরিক পর্যবেক্ষকরাও। রুশ সেনা বা ইউক্রেনীয় ড্রোনে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা গেছে, আত্মসমর্পণের পর নিরস্ত্র সৈন্যদের সারিবদ্ধ করে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। ১৯ নভেম্বর পোকারোভস্কের কাছে ধারণ করা একটি ড্রোন ভিডিওতে দেখা যায়, এক রুশ সৈন্য মাটিতে উপুড় হয়ে থাকা চারজন নিরস্ত্র ইউক্রেনীয়কে গুলি করে হত্যা করে এবং পালানোর চেষ্টা করা আরেকজনের দিকেও অস্ত্র তাক করে।

ইউক্রেনের প্রসিকিউশন সার্ভিস জানিয়েছে, ২০২২ সালে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অন্তত ১৪৭ জন ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দীকে হত্যা করা হয়েছে, যার মধ্যে চলতি বছরেই ১২৭ জন। ইউক্রেনের প্রসিকিউটর জেনারেলের দপ্তরের যুদ্ধাপরাধ বিভাগের প্রধান ইউরি বেলাউসভ বলেন, ‘এই সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি নীতির স্পষ্ট লক্ষণ।’

জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্যবেক্ষকেরাও মধ্য নভেম্বরের পর থেকে রুশ বাহিনীর যুদ্ধাপরাধ বৃদ্ধির তথ্য নথিভুক্ত করেছে। আন্তর্জাতিক মানবিক আইন, বিশেষ করে তৃতীয় জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, যুদ্ধবন্দীদের হত্যা স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ।

এদিকে, যুদ্ধে সম্মুখ সমরে রুশ বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি ইউক্রেনের তুলনায় অনেক বেশি হচ্ছে বলে দাবি করেছেন শিরিয়াইভ। ইউক্রেনের ২২৫ তম পৃথক অ্যাসল্ট ব্যাটালিয়নের এই কমান্ডার বলেন—শান্তি আলোচনা চললেও রাশিয়া কৌশলগত সুবিধা দেখাতে তাদের হাজার হাজার সৈন্যকে সামান্য ভূমি দখলের জন্য মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। শিরিয়াইভের দাবি, যুদ্ধে ইউক্রেনের ১টি সেনার বিপরীতে রুশ বাহিনী অন্তত ১০টি সেনা হারাচ্ছে।

অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বরাবরই দাবি করে আসছেন, রুশ বাহিনী আন্তর্জাতিক আইন মেনেই যুদ্ধবন্দীদের সঙ্গে আচরণ করে। অন্যদিকে ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধেও রুশ বন্দী হত্যার অভিযোগ উঠেছে। তবে সেই সংখ্যাটি তুলনামূলকভাবে অনেক কম।

শান্তি আলোচনার অগ্রগতির কথা বললেও শিরিয়াইভ সতর্ক করে বলেন, ইউক্রেন যদি অবস্থান ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়, তাহলে রুশ আগ্রাসন ইউরোপের অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জেলেনস্কি চাইলেন ৫০, যুক্তরাষ্ট্র দিতে চায় ১৫ বছরের নিরাপত্তা গ্যারান্টি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪৭
রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলেনস্কি। ছবি: এএফপি
রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলেনস্কি। ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ১৫ বছরের জন্য ‘শক্তিশালী’ নিরাপত্তা গ্যারান্টি দিতে সম্মত হয়েছে। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ২ ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে ইউরোপে ফেরার পথে তিনি এ তথ্য জানান।

তবে এই গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির মধ্যেও পূর্ব ইউক্রেনের বিতর্কিত দনবাস অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি দুই নেতা। ক্রেমলিন সাফ জানিয়ে দিয়েছে, দোনেৎস্ক অঞ্চলের ‘ফোর্ট্রেস বেল্ট’ বা দুর্গ শহরগুলো থেকে ইউক্রেনীয় সেো সরিয়ে না নিলে তারা কোনো চুক্তিতে আসবে না।

জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যার অন্যতম মূল অংশ হলো মার্কিন নিরাপত্তা গ্যারান্টি। ইউক্রেনীয় পার্লামেন্ট এবং মার্কিন কংগ্রেস যৌথভাবে এ প্রতিশ্রুতির পক্ষে ভোট দেবে। যুক্তরাষ্ট্র ১৫ বছরের গ্যারান্টি দিলেও জেলেনস্কি ট্রাম্পকে অনুরোধ করেছেন এই মেয়াদ ৩০, ৪০ বা ৫০ বছর করার জন্য। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।

জেলেনস্কি মনে করেন, কোনো শান্তিচুক্তি হলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি হবে নিরাপত্তার সেরা রূপ। তবে ট্রাম্প সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, মার্কিন কোনো শান্তিবাহিনী সেখানে মোতায়েন করা হবে না।

বৈঠকের পর ট্রাম্প দাবি করেছেন, শান্তিচুক্তির ক্ষেত্রে তাঁরা প্রায় ৯৫ শতাংশ সফল। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সোমবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কিয়েভ দ্রুত চুক্তিতে না এলে আরও ভূখণ্ড হারাবে। রাশিয়া অধিকৃত জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়ার বিষয়েও কোনো মন্তব্য করেনি তারা।

এদিকে, জেলেনস্কি স্পষ্টভাবে ভূমি ছাড়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন, বর্তমান ফ্রন্টলাইন বরাবর একটি ‘অসামরিক ও মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল’ গড়ে তোলার, যেখান থেকে উভয় পক্ষ তাদের সেনা সরিয়ে নেবে। জেলেনস্কির প্রস্তাবে আরও আছে, চূড়ান্ত শান্তি পরিকল্পনাটি ইউক্রেনের জনগণের সম্মতির জন্য একটি গণভোটে পেশ করা হবে। এই গণভোট আয়োজনের জন্য অন্তত ৬০ দিনের একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন।

কিন্তু রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা কোনো অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি নয়। ট্রাম্পও ইঙ্গিত দিয়েছেন, পুতিন এই ৬০ দিনের বিরতির প্রস্তাব মেনে নিতে আগ্রহী নন।

এদিকে, জানুয়ারি মাসে ওয়াশিংটনে ইউরোপীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির পরবর্তী বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, চুক্তির ৯৫ শতাংশ সম্পন্ন হলেও বাকি ৫ শতাংশ ‘জটিল ইস্যু’ (দনবাস ও ভূখণ্ড) সমাধান করাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েলের সঙ্গে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে প্রতিরক্ষা জোট শক্তিশালী করছে গ্রিস ও সাইপ্রাস

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২২ ডিসেম্বর জেরুজালেমে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, গ্রিক প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোটাকিস ও সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্টোডোলিডেসের শীর্ষ বৈঠকে এই জোটের ভিত্তি স্থাপিত হয়। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
২২ ডিসেম্বর জেরুজালেমে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, গ্রিক প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোটাকিস ও সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্টোডোলিডেসের শীর্ষ বৈঠকে এই জোটের ভিত্তি স্থাপিত হয়। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

পূর্ব ভূমধ্যসাগরে নিজেদের সামরিক ও কৌশলগত অবস্থান আরও সুসংহত করতে ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথ বিমান ও নৌ মহড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে গ্রিস ও সাইপ্রাস। আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) গ্রিসের সামরিক কর্মকর্তা ও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৬ সাল থেকে এই তিন দেশ আরও নিবিড় প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় লিপ্ত হবে। এ বিষয়টিকে লোহিতসাগর ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরে তুরস্কের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক বলয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এর আগে গত সপ্তাহে সাইপ্রাসে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তিন দেশের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা ২০২৬ সালের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ সামরিক সহযোগিতা কর্মসূচি স্বাক্ষর করেন। এরপর জেরুজালেমে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, গ্রিক প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোটাকিস এবং সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্টোডোলিডেসের শীর্ষ বৈঠকে এই জোটের ভিত্তি স্থাপিত হয়।

জোটে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী দিনে ইসরায়েল পরিচালিত ‘নোবেল দিনা’ (Noble Dina) নামক নৌ মহড়ায় বড় আকারে যোগ দেবে গ্রিস ও সাইপ্রাস। এসব মহড়ায় ইসরায়েল তাদের আধুনিক সামরিক প্রযুক্তি ও যুদ্ধকৌশল গ্রিস ও সাইপ্রাসের কাছে তুলে ধরবে। বিশেষ করে সাইবার নিরাপত্তা ও ড্রোন মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য বিনিময় করা হবে।

এমনও গুঞ্জন রয়েছে, এই তিন দেশ মিলে প্রায় ২ হাজার ৫০০ সদস্যের একটি যৌথ ‘র‍্যাপিড রেসপন্স ফোর্স’ গঠনের পরিকল্পনা করছে, যা ভূমধ্যসাগরের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ও অবকাঠামো রক্ষা করবে।

এদিকে গ্রিস তুরস্কের সঙ্গে আকাশপথ ও সমুদ্রসীমা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধের প্রেক্ষাপটে বিশাল এক প্রতিরক্ষা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’-এর আদলে গ্রিস ৩.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি বহুমুখী আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলছে। এর মাধ্যমে ড্রোন ও ব্যালিস্টিক মিসাইল ঠেকানো সম্ভব হবে।

চলতি মাসেই গ্রিসের পার্লামেন্ট ইসরায়েলের এলবিট সিস্টেমস থেকে ৩৬টি ‘পালস’ রকেট আর্টিলারি সিস্টেম কেনার অনুমোদন দিয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৭৫০ মিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া গ্রিস তাদের পুরোনো রুশ নির্মিত এস-৩০০ ও টর-এম১ মিসাইল সিস্টেম বদলে ইসরায়েলি প্রযুক্তিতে সজ্জিত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

তবে ইসরায়েলের সঙ্গে এই গভীর সামরিক সখ্যতা নিয়ে সাইপ্রাসের প্রধান বিরোধী দল (কমিউনিস্ট একেইএল) উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, ফিলিস্তিন ইস্যু ও আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া সাইপ্রাসের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে।

অনেকেই মনে করছেন, এই জোট শুধু সামরিক নয়, বরং ভূমধ্যসাগরের বিশাল গ্যাসক্ষেত্রগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখার এক ভূরাজনৈতিক কৌশল। তুরস্ক এই জোটকে তাদের স্বার্থের পরিপন্থী হিসেবে সতর্ক করেছে, যার ফলে ভবিষ্যতের দিনগুলোতে এই অঞ্চলে সামরিক উত্তেজনা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত