সিরিয়াকে আবারও অশান্ত করা—কে এই গোলানি

অনলাইন ডেস্ক    
Thumbnail image
আবু মোহাম্মেদ আল-গোলানি (ডান দিক থেকে দ্বিতীয়)

এক সময় সিরিয়ায় আল-কায়েদা শাখার নেতা ছিলেন আবু মোহাম্মেদ আল-গোলানি। বর্তমানে তিনি দেশটির উগ্রপন্থী সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।

এক প্রতিবেদনে অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) জানিয়েছে, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নিজের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনে মনোযোগ দিয়েছিলেন গোলানি। আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষ এবং সিরিয়ার ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের সমর্থন লাভের প্রচেষ্টা তাঁর কর্মকাণ্ডের একটি উল্লেখযোগ্য দিক।

গত সপ্তাহেই ৪২ বছর বয়সী গোলানি এইচটিএস-এর নেতৃত্ব দিয়ে সিরিয়ার সবচেয়ে বড় শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। আকস্মিক এই ঘটনা দেশটির দীর্ঘ গৃহযুদ্ধকে আবারও উসকে দিয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ক্ষমতা ধরে রাখার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

গোলানির সামরিক সাফল্য তাঁর দীর্ঘদিনের কৌশলী পদক্ষেপের ফল। নিজের ভাবমূর্তি বদলাতেই তিনি আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন। যদিও উগ্রপন্থী এইচটিএস-কে ধীরে ধীরে তিনি একটি শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলেন।

এপি জানিয়েছে, গোলানি সিরিয়ার অধিবাসী হলেও তাঁর উগ্রপন্থার শিকড় ইরাকে। ২০০৩ সালে তিনি ইরাকে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইরত উগ্রপন্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন।

২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় আল-কায়েদার নেতা আবু বকর আল-বাগদাদির নির্দেশে সিরিয়ার নুসরা ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠা করেন গোলানি। যুক্তরাষ্ট্র তখনই এই গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে এবং গোলানির মাথার দাম ১ কোটি ডলার ঘোষণা করে।

২০১৩ সালে বাগদাদির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে নুসরা ফ্রন্টকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অংশ হিসেবে মিশিয়ে দেওয়ার বিরোধিতা করেন গোলানি। ২০১৬ সালে তিনি ঘোষণা দেন, তাঁর দল আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে এবং নাম বদলে ‘জাবহাত ফাতেহ আল-শাম’ হয়েছে। পরে এটি ‘হায়াত তাহরির আল-শাম’ বা এইচটিএস নাম ধারণ করে।

জানা গেছে, ভাবমূর্তি ফেরাতে গোলানি তাঁর সামরিক পোশাক ত্যাগ করেছিলেন এবং স্যুট-টাই পরা শুরু করেছিলেন। শুধু তাই নয়, এই সময়টিতে তিনি ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ডাক দেন এবং বহুত্ববাদেরও আহ্বান জানান। তিনি এইচটিএস-কে একটি আধুনিক সংগঠনে রূপান্তরের চেষ্টা করেন। এমনকি অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি ইদলিবে দ্রুজ সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং তুরস্ক-সমর্থিত মিলিশিয়াদের হাতে নিহত কুর্দিদের পরিবারগুলোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

২০২১ সালে তিনি পিবিএস-এ একজন মার্কিন সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দেন গোলানি। সেখানে তিনি দাবি করেন, তার সংগঠন পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য কোনো হুমকি নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা পশ্চিমা নীতির সমালোচনা করেছি ঠিকই, তবে যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করিনি। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল সিরিয়াকে ইসলামিক আইনের অধীনে পরিচালিত করা।’

এইচটিএস বর্তমানে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ইদলিব প্রদেশে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। সম্প্রতি আলেপ্পো এবং আশপাশের এলাকায় তাদের আক্রমণ সিরিয়ার রাজনৈতিক ভারসাম্যে অস্থিরতা তৈরি করেছে।

গোলানি বর্তমানে তাঁর সংগঠনকে সিরিয়ার বিদ্রোহী শক্তিগুলোর মধ্যে প্রভাবশালী অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। তবে তাঁর অতীত এবং এইচটিএস-এর কার্যকলাপ এখনো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গভীর সন্দেহের কারণ।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, গোলানির নেতৃত্ব এবং এইচটিএস-এর সামরিক তৎপরতা সিরিয়ার ভবিষ্যৎ সংঘাত এবং রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। তবে তাঁর অতীত এবং সংগঠনের কার্যক্রম তাকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত