Ajker Patrika

রয়টার্সের প্রতিবেদন /গণহত্যার আলামত ঢাকতে গোপনে গণকবর স্থানান্তর করেছিল আসাদ সরকার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
দামেস্কের উত্তরাঞ্চলীয় কুতাইফা এলাকার গণকবর থেকে মরদেহগুলো দুমাইরয়ের এই মরুভূমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
দামেস্কের উত্তরাঞ্চলীয় কুতাইফা এলাকার গণকবর থেকে মরদেহগুলো দুমাইরয়ের এই মরুভূমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকার দুই বছর ধরে গোপনে একটি বিশাল গণকবর থেকে হাজার হাজার মরদেহ তুলে মরুভূমির আরেকটি গোপন স্থানে সরিয়ে নিয়েছিল বলে জানা গেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে।

রয়টার্সের অনুসন্ধানে জানা গেছে, দামেস্কের উত্তরাঞ্চলীয় কুতাইফা এলাকার গণকবর থেকে মরদেহগুলো ট্রাকে করে প্রায় এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত দুমাইরয়ের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এই পুরো অভিযানের নাম ছিল ‘অপারেশন মুভ আর্থ’, যা চলে ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত।

রয়টার্সের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসাদ সরকারের নির্দেশে দেশটির সেনাবাহিনী এই অভিযান পরিচালনা করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ মুছে ফেলা এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আসাদের ভাবমূর্তির পুনর্গঠন করা।

এই বিশাল কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত জানতে রয়টার্স ১৩ জন প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তাঁরা সবাই অভিযানের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া রয়টার্স সরকারি নথি পর্যালোচনা করেছে এবং কয়েক বছরের শত শত স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, প্রতি সপ্তাহে চার রাত ধরে ছয় থেকে আটটি ট্রাক মরদেহ ও মাটি মিশ্রিত অবশিষ্টাংশ নিয়ে কুতাইফা থেকে দুমাইর মরুভূমির দিকে যেত। আসাদের রিপাবলিকান গার্ডে কর্মরত একজন কর্মকর্তা বলেন, কেউই আদেশ অমান্য করার সাহস করতেন না। যাঁরা কিছু বলতেন, তাঁরাও সেই গর্তের ভেতর শেষ হতো।

রয়টার্স জানিয়েছে, দুমাইর মরুভূমির এই নতুন গণকবরে অন্তত ৩৪টি বিশাল খাত বা ট্রেঞ্চ রয়েছে, যেগুলোর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় দুই কিলোমিটার। প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা, এখানে ১০ হাজারের বেশি মানুষ কবর দেওয়া হয়েছে।

আসাদের সরকার ২০১২ সালের দিকে কুতাইফা এলাকায় মরদেহ দাফন শুরু করে। সেখানে সেনা, বন্দী ও কারাগারে নিহত ব্যক্তিদের লাশ ফেলা হতো। ২০১৪ সালে এক মানবাধিকারকর্মী স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে ছবি প্রকাশের মাধ্যমে ওই গণকবরের অস্তিত্ব প্রকাশ করেন। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরে ওই স্থান পুরোপুরি খালি করা হয়। ১৬টি ট্রেঞ্চের কোনোটিতেই এখন আর কোনো মরদেহ অবশিষ্ট নেই।

অভিযানে যুক্ত দুজন ট্রাকচালক ও সাবেক অফিসার জানান, ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা তাঁদের বলেছিলেন, কুতাইফার গণকবর পরিষ্কার করে ফেলাই মূল লক্ষ্য, যাতে যুদ্ধাপরাধের কোনো প্রমাণ অবশিষ্ট না থাকে।

তাঁরা জানান, ২০১৮ সালের শেষ দিকে যখন আসাদ গৃহযুদ্ধে বিজয়ের কাছাকাছি ছিলেন, তখনই গণকবর সরানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও নৃশংসতার অভিযোগে কোণঠাসা আসাদ বিশ্বে নিজের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের চেষ্টা করেছিলেন।

আসাদ সরকারের পতনের পর এখনো সিরিয়ার নতুন সরকার এ গণকবরগুলোর কোনো আনুষ্ঠানিক নথি প্রকাশ করেনি। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, আসাদের শাসনামলে ১ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ নিখোঁজ হন, যাঁদের অনেকে বিভিন্ন গণকবরে শায়িত বলে ধারণা করা হয়।

সিরিয়ার জরুরি ব্যবস্থাপনামন্ত্রী রায়েদ আল-সালেহ বলেন, প্রত্যেক মায়ের হৃদয়ে ততক্ষণ রক্তক্ষরণ চলবে, যতক্ষণ না তিনি তাঁর ছেলের কবর খুঁজে পান; প্রত্যেক স্ত্রী তাঁর স্বামীর কবর এবং প্রত্যেক শিশু তাঁর পিতার কবর খুঁজে পেতে চায়। তিনি জানান, সরকার একটি ডিএনএ ব্যাংক ও ডিজিটাল তথ্যভান্ডার তৈরির পরিকল্পনা করছে, যাতে পরিবারগুলো নিখোঁজ স্বজনদের শনাক্ত করতে পারে।

সিরিয়া জাস্টিস অ্যান্ড অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি সেন্টারের প্রধান মোহাম্মদ আল-আবদাল্লাহ বলেন, এভাবে মরদেহ স্থানান্তর করার ফলে মৃত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে। পরিবারের কাছে সম্পূর্ণ দেহাবশেষ ফিরিয়ে দেওয়া অত্যন্ত জটিল হবে। তিনি নতুন সরকারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও বলেন, রাজনৈতিক ইচ্ছা আছে, কিন্তু পর্যাপ্ত সম্পদ ও বিশেষজ্ঞের অভাব এখনো রয়ে গেছে।’

রয়টার্স জানিয়েছে, এই অনুসন্ধান এখনো চলমান এবং শিগগির তাদের বিশেষ প্রতিবেদনের পরবর্তী পর্ব প্রকাশ করা হবে। এখানে জানানো হবে, কীভাবে এই গোপন অভিযান পরিচালিত হয়েছিল এবং সাংবাদিকেরা কীভাবে এর খোঁজ পান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মধ্যপ্রাচ্যে ঈদুল ফিতরের সম্ভাব্য তারিখ জানালেন জ্যোতির্বিদরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ঈদের নামাজ শেষে আলিঙ্গন করছে দুই শিশু। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঈদের নামাজ শেষে আলিঙ্গন করছে দুই শিশু। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুসলমান পবিত্র মাস রমজান শুরু হতে পারে আগামী বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি। আর এবার রমজান মাস ত্রিশ দিন পূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সে হিসাবে মুসলমানের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হবে ২০ মার্চ। এমিরেটস অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির বরাত দিয়ে এমনটিই জানিয়েছে গালফ নিউজ।

জ্যোতির্বিদদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্যে ২০২৬ সালের ঈদুল ফিতর আগামী ২০ মার্চ, শুক্রবার অনুষ্ঠিত হতে পারে। আমিরাত জ্যোতির্বিদ্যা সমিতির (এমিরেটস অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি) চেয়ারম্যান ইব্রাহিম আল জারওয়ান এই পূর্বাভাস দিয়েছেন।

আল জারওয়ান জানিয়েছেন, ১৪৪৭ হিজরি সালের রমজান মাস শুরু হওয়ার চাঁদ ২০২৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার দেখা যেতে পারে। তবে ওই সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার পরিস্থিতি কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এই হিসাব অনুযায়ী, রমজান মাস সম্ভবত ১৯ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে এবং ত্রিশ দিন স্থায়ী হতে পারে।

যদি জ্যোতির্বিজ্ঞানের গণনা অনুযায়ী রমজান মাস পূর্ণ ৩০ দিন স্থায়ী হয়, তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অনুমোদিত ছুটির ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সেখানকার বাসিন্দারা একটি দীর্ঘ ছুটি পেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ১৯ মার্চ বৃহস্পতিবার থেকে ২২ মার্চ রোববার পর্যন্ত মোট চার দিনের সাপ্তাহিক ছুটি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং কর্মস্থল শুরু হবে পরের সোমবার।

যদিও জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাব ওপরে উল্লেখিত তারিখ নির্দেশ করছে, তবে ইসলামি ক্যালেন্ডারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই উৎসবের চূড়ান্ত নিশ্চিতকরণ সংশ্লিষ্ট দেশের চাঁদ দেখা কমিটি নিকটবর্তী সময়ে পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে নির্ধারণ করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মেক্সিকোতে জেন-জি বিক্ষোভ, পুলিশের বলপ্রয়োগ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ২১
মেক্সিকো সিটিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় আন্দোলনকারীদের। ছবি: এএফপি
মেক্সিকো সিটিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় আন্দোলনকারীদের। ছবি: এএফপি

মেক্সিকোজুড়ে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। দেশটিতে ক্রমবর্ধমান অপরাধ, দুর্নীতি আর আইনের শাসনের অভাবের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভের আয়োজন করেন জেনারেশন জেডের তরুণেরা। এই বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে বল প্রয়োগ করেছে পুলিশ। খবর আল জাজিরার

স্থানীয় সময় গতকাল শনিবারের মিছিলে বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশ নেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রবীণ কর্মী ছাড়াও অংশ নেন মিচোয়াকান রাজ্যের নিহত মেয়র কার্লোস মানসোর সমর্থকেরা। চলতি মাসের শুরুর দিকে ডে অব দ্য ডেড উৎসবের এক জনসমাগমে তাঁকে গুলিতে হত্যা করা হয়।

মেক্সিকো সিটিতে মুখোশধারী কয়েকজন বিক্ষোভকারী জাতীয় প্রাসাদের চারপাশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেললে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম ওই প্রাসাদেই থাকেন। স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দিকে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে।

মেক্সিকো সিটির জননিরাপত্তা সচিব পাবলো ভাসকেস সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঘটনাটিতে ১০০ পুলিশ আহত হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ জনকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। আরও ২০ জন সাধারণ মানুষও আহত হয়েছে বলে ভাসকেস স্থানীয় গণমাধ্যম মিলেনিওকে জানান। তিনি বলেন, ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আরও ২০ জনকে প্রশাসনিক অপরাধের কারণে আটক দেখানো হয়েছে।

মেক্সিকোর দৈনিক এল ইউনিভার্সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিক্ষোভকারীরা জাতীয় প্রাসাদের সীমানায় ঢুকে পড়লে নিরাপত্তা বাহিনী টিয়ার গ্যাস ছোড়ে এবং পাথর নিক্ষেপ করে। পত্রিকাটি আরও জানিয়েছে, পুলিশ কয়েক মিনিট ধরে জোকালো প্রাঙ্গণে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর এলাকা খালি করে দেয় এবং শেষ দলটিকেও ছত্রভঙ্গ করে।

বিক্ষোভের আয়োজন করে ‘জেনারেশন জেড মেক্সিকো’ নামে একটি গোষ্ঠী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো তাদের ‘ঘোষণাপত্রে’ বলা হয়, তারা দলনিরপেক্ষ এবং সহিংসতা, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে অতিষ্ঠ মেক্সিকোর তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিসেন্তে ফক্স এবং ধনকুবের রিকার্দো সালিনাস প্লিয়েগো বিক্ষোভের পক্ষে প্রকাশ্যে বার্তা দেন।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট শেইনবাউমের অভিযোগ, ডানপন্থী দলগুলো জেন-জি আন্দোলনে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বট ব্যবহার করে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়িয়ে দেখাচ্ছে।

এই বছর এশিয়া ও আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশেও জেন জেড প্রজন্ম বৈষম্য, গণতান্ত্রিক পশ্চাৎপসারণ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বড় আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। সেপ্টেম্বরে নেপালে জেন-জি আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন। মাদাগাস্কারেও একই মাসে বড় বিক্ষোভ হয়। পানির সংকট ও বিদ্যুতের স্থায়ী ঘাটতিতে ক্ষোভ থেকে শুরু হওয়া ওই আন্দোলন সরকারের বৃহত্তর ব্যর্থতা ও দুর্নীতি উন্মোচন করে দেয়। সপ্তাহজুড়ে অস্থিরতার পর সরকার ভেঙে যায়, প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা দেশ ছেড়ে পালান এবং নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানে আতশবাজির কারখানায় বিস্ফোরণ, নিহত অন্তত ৭

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পাকিস্তানের হায়দরাবাদ এলাকায় একটি আতশবাজির কারখানায় বিস্ফোরণে অন্তত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের হায়দরাবাদ এলাকায় একটি আতশবাজির কারখানায় বিস্ফোরণে অন্তত ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের হায়দরাবাদের লতিফাবাদ এলাকার এক আতশবাজির কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছে। এই দুর্ঘটনায় আহত ছয়জন এখনো চিকিৎসাধীন। গতকাল শনিবার গভীর রাতে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। খবর পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের।

বিস্ফোরণের পরপরই লতিফাবাদ সহকারী কমিশনার সাউদ লুন্দ গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘এখন পর্যন্ত দুজন মারা গেছেন। চার-পাঁচ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’ পরে উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আরও চারটি মরদেহ বের করেন। এতে মৃতের সংখ্যা প্রথমে ছয়ে পৌঁছায়। সর্বশেষ আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করায় তা বেড়ে সাত হয়েছে।

হায়দরাবাদের মেয়র কাশিফ আলী শোরো ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘অবৈধ কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে।’

এর আগে সাউদ লুন্দ জানান, ওই বাড়িতে লাইসেন্স ছাড়া অবৈধভাবে আতশবাজি তৈরি করা হচ্ছিল। তিনি বলেন, ‘যে কক্ষে আতশবাজি বানানো হচ্ছিল, বিস্ফোরণে সেই ঘরটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। পুরো ঘরটি এবং সীমানা প্রাচীর ধসে পড়েছে। আমাদের কাছে খবর আছে, কয়েকজন শিশুসহ বেশ কয়েকজন ভেতরে কাজ করছিল। আমাদের দল তাদের উদ্ধার করার চেষ্টা করছে।’

বিস্ফোরণের পরই আগুন ধরে যায় এবং ভবনের একটি অংশ ভেঙে পড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণের পরপরই সেই ঘরসহ পাশের অন্যান্য অংশেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। ফায়ার সার্ভিসের দল এখনো আগুন নেভানোর কাজ করছে।

এদিকে, সিন্ধুর মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ আলী শাহ কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর মুখপাত্র। মুখ্যমন্ত্রী কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কেও অডিট করার নির্দেশ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মুরাদ বলেছেন, বিস্ফোরণের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবহেলা বরদাশত করা হবে না।

এ ধরনের আরেকটি বিস্ফোরণ এর আগে চলতি বছরের আগস্টে করাচির সাদ্দারে একটি আতশবাজির গুদামে হয়েছিল। ওই ঘটনায় ছয়জন নিহত হন, আরও কয়েকজন আহত হন। দোতলা ভবনটিতে আতশবাজির গুদামের পাশাপাশি চিকিৎসাসামগ্রীর দোকানও ছিল।

এফআইআরে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা বিপুল পরিমাণ আতশবাজি এলোমেলোভাবে ও কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থা ছাড়াই মজুত করেছিলেন। তাদের অবহেলা ও বেপরোয়া আচরণের কারণেই মূল্যবান জীবনহানি, আহত হওয়ার ঘটনা এবং বড় ধরনের সম্পদহানি ঘটে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, অভিযুক্তদের একজন বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন। আরেকজন, যিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, বিস্ফোরণের পর গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিহার ভোটে বিশ্বব্যাংকের ঋণসহ ৪০ হাজার কোটি রুপি ছড়িয়েছে বিজেপি, অভিযোগ পিকের দলের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পিকের (পেছনে) দল জন সুরাজ পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি উদয় সিংহ (মাঝে) বিজেপি জোটের বিরুদ্ধে বিহারে নির্বাচনের আগে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢালার অভিযোগ তুলেছেন। ছবি: সংগৃহীত
পিকের (পেছনে) দল জন সুরাজ পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি উদয় সিংহ (মাঝে) বিজেপি জোটের বিরুদ্ধে বিহারে নির্বাচনের আগে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢালার অভিযোগ তুলেছেন। ছবি: সংগৃহীত

ভারতে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ার খ্যাত প্রশান্ত কিশোরের দল জন সুরাজ পার্টি অভিযোগ করেছে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমার সরকারের আমলে বিশ্বব্যাংকের ১৪ হাজার কোটি রুপির ঋণ ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচন ‘ভিন্ন খাতে ঘুরিয়ে দেওয়ার’ জন্য ব্যবহার করেছে। কেবল তাই নয়, নির্বাচনের দিন ঘোষণার আগ পর্যন্ত বিজেপি ও নিতীশ কুমারের জোট জনগণের ভোট কিনতে ৪০ হাজার কোটি রুপি ব্যয় করেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, দলের প্রথম নির্বাচনে একটিও আসন না পেয়ে পরদিন গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন জন সুরাজ পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি উদয় সিং। তিনি দাবি করেন, ওই অর্থ ‘ভোট কেনার উদ্দেশ্যে নানা অনুদান ও মুফতে ঢেলে দেওয়া হয়েছে।’

উদয় সিং বলেন, ‘জুন থেকে নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার আগ পর্যন্ত ৪০ হাজার কোটি রুপি উড়িয়ে দিয়েছে নিতীশ সরকার। টাকার জোরে জনগণের ভোট কেনার এই খরচ ছিল নজিরহীন।’ তাঁর অভিযোগ, ‘বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নেওয়া ১৪ হাজার কোটি রুপি পর্যন্ত ভোট কেনার খাতে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

তিনি ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা রোজগার যোজনা’র উদাহরণ তুলে ধরেন, যার আওতায় দুই ধাপের ভোট শুরুর আগে প্রতিটি নারীর ব্যাংক হিসাবে ১০ হাজার রুপি করে পাঠানো হয়। উদয় সিং-এর ভাষায়,

‘জীবনে এই প্রথম দেখলাম ভোটের এক দিন আগ পর্যন্ত টাকা ঢুকেছে, অথচ তখন আদর্শ আচরণবিধি চলছিল। দিন এনে দিন খাওয়া অসংখ্য নারীর ওপর এর প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক।’

তাঁর দাবি, জনসাধারণের টাকা এমনভাবে না উড়ালে বিজেপি–নেতৃত্বাধীন এনডিএ এবার বিহারে টিকতেই পারত না। উদয় সিং আরও বলেন, ‘জন সুরাজ পার্টি দুই হাজার রুপি বার্ধক্য ভাতা ঘোষণা করার পরই সরকার তার ভাতাটা ৭০০ থেকে বাড়িয়ে ১১০০ করল। এর আগেও তো করেনি।’

তাঁর বক্তব্য, দলের অনেক সম্ভাব্য সমর্থক শেষ পর্যন্ত এনডিএকে ভোট দিয়েছেন আরজেডি ক্ষমতায় এলে ‘জঙ্গলরাজ’ ফিরে আসতে পারে—এই ভয়ে। তিনি বলেন,‘আমি বলছি না যে জঙ্গলরাজ ছিল। কিন্তু ভয়টা ছিল। অনেকেই আমাদের সুযোগ দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভয়ের কারণেই এনডিএকে ভোট দিলেন।’

দলের আরেক নেতা পবন ভার্মাও একই অভিযোগ তোলেন। তাঁর দাবি, টাকা এসেছে বিশ্বব্যাংকের ২১ হাজার কোটি রুপির একটি প্রকল্প থেকে। ভার্মা সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘বিহারের সরকারি এখন ৪ লাখ ৬ হাজার কোটি রুপি। দৈনিক সুদের পরিমাণ ৬৩ কোটি। কোষাগার খালি। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, ভুলও হতে পারে, নারীদের যে ১০ হাজার রুপি দেওয়া হয়েছে, তা ওই ২১ হাজার কোটি থেকে এসেছে, যা অন্য প্রকল্পের জন্য দেওয়া হয়েছিল। নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি জারি হওয়ার এক ঘণ্টা আগে ১৪ হাজার কোটি রুপি তুলে ১ কোটি ২৫ লাখ নারীর মধ্যে বিলিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন,‘তথ্য ভুল হলে আমি ক্ষমা চাই। কিন্তু যদি সত্যি হয়, প্রশ্ন দাঁড়ায়—এটা কতটা নৈতিক? আইনের দিক দিয়ে হয়তো কিছু করা যাবে না। সরকার চাইলে টাকা ঘুরিয়ে নিয়ে পরে ব্যাখ্যা দিতে পারে। ব্যাখ্যা আসবেই, তবে সেটা নির্বাচনের পরে।’

এনডিএ কিংবা বিহার সরকার এখনো এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত