Ajker Patrika

আন্তর্জাতিক আইন ভেঙে ফিলিস্তিনে অবৈধ বসতির বিজ্ঞাপন প্রচার করছে ফেসবুক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১৫: ৫৯
পশ্চিম তীরে রামাল্লার কাছে তারমাস আয়া গ্রামে ইসরায়েলি দখলদারদের অবৈধ বসতি। ছবি: এএফপি
পশ্চিম তীরে রামাল্লার কাছে তারমাস আয়া গ্রামে ইসরায়েলি দখলদারদের অবৈধ বসতি। ছবি: এএফপি

মেটার মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতির বিজ্ঞাপন প্রচারিত হচ্ছে! শুধু তা–ই নয়, গাজায় মোতায়েন করা ইসরায়েলি সেনাদের জন্য অর্থ সহায়তা সংগ্রহের বিজ্ঞাপনও প্রচার করছে মেটা। কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আল–জাজিরার অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

আল–জাজিরার বলছে, ফেসবুকে উগ্র জায়নবাদী শতাধিক বিজ্ঞাপন দেখেছে তারা। যেগুলোর মধ্যে ইসরায়েলি প্রশাসনের প্রতি ফিলিস্তিনিদের অবকাঠামো ভেঙে ফেলারও আহ্বান ছিল। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসব বিজ্ঞাপনের প্রচার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল।

বিষয়টি সামনে আসার পর সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টদের ব্যবসায়িক স্বার্থ আন্তর্জাতিক আইনের ঊর্ধ্বে উঠছে কিনা, তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

আল–জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, এসব বিজ্ঞাপনের মধ্যে অর্ধশতই ছিল ইসরায়েলি বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানির দেওয়া। এরা মূলত পশ্চিম তীরে দখলকৃত ইসরায়েলি আবাসন বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছে। গত বছরের মার্চে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞাপনগুলো প্রচার শুরু করে ফেসবুক, অথচ সে সময় গাজায় পুরোদমে তাণ্ডব চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।

বিজ্ঞাপনগুলোর টার্গেট অডিয়েন্স ছিল ইসরায়েলিরাই। ইসরায়েলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কিছু ব্যবহারকারীর কাছেও পৌঁছেছে বিজ্ঞাপন। বিজ্ঞাপনদাতাদের মধ্যে রয়েছে রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান—‘রামাত আদেরেত’, যার বর্তমান বাজারমূল্য ৩০০ মিলিয়ন ডলার। প্রতিষ্ঠানটিকে অর্থায়ন করে ফার্স্ট ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক নামের ইসরায়েলি একটি ব্যাংক। পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতির অর্থায়ন করার অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরে বিডিএস—বয়কট, ডাইভেস্টমেন্ট ও স্যাংকশন আন্দোলনের লক্ষ্যবস্তু হয়ে আসছে ফার্স্ট ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক।

রামাত আদেরেতের প্রকল্পটি ফিলিস্তিন–ইসরায়েল সীমানা নির্ধারণকারী গ্রিন লাইনের ২০ কিলোমিটার পূর্বে দখলকৃত পশ্চিম তীরে অবস্থিত। এদের পৃথক দুটি প্রকল্পের আওতায় সেখানে রয়েছে প্রায় ২৭টি বিলাসবহুল ভবন।

ফেসবুকে এদের প্রকল্পের বিজ্ঞাপন ইস্যুতে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে আল–জাজিরা। তবে তারা সাড়া দেয়নি।

গাবাই রিয়েল এস্টেট নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান অবশ্য কথা বলেছে আল–জাজিরার সাংবাদিকদের সঙ্গে। বাজেট স্বল্পতায় বেশি বিজ্ঞাপন দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে দুঃখ প্রকাশ করেছে তারা! প্রতিষ্ঠানটির মালিকদের একজন ইয়ানিভ গাবাই বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে আমরা কেবল ৪৮টি বিজ্ঞাপন দিতে পেরেছি কারণ আমাদের বাজেট সীমিত। তবে যত বেশি ইহুদি পশ্চিম তীরে ফিরবে, আমাদের বাজেট তত বাড়বে এবং আমরা আরও বিজ্ঞাপন দিতে পারব।’

আল–জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব বিজ্ঞাপনের অন্তত ৫০টিই কট্টর ডানপন্থী রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান রেগাভিমের দেওয়া। ২০০৬ সালে কট্টর ডানপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ২০২৩ সালে ঘোষণা দিয়েছিলেন—পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণের কোনো রাজনৈতিক বা সামরিক অনুমোদনের আর প্রয়োজন নেই।

এই সংস্থার বেশির ভাগ বিজ্ঞাপনই ফিলিস্তিনি অবকাঠামো ধ্বংসে প্রশাসন ও দখলদারদের উৎসাহিত করে। একটি বিজ্ঞাপন আল–জাজিরার চোখে পড়ে, যেটিতে একটি ফিলিস্তিনি স্কুল ভেঙে ফেলায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি। আরেকটি বিজ্ঞাপন দেখা যায়, পশ্চিম তীরে অবস্থিত একটি ওয়াটার পার্ক ভেঙে ফেলার দাবি জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিজ্ঞাপনটিতে লেখা ছিল—‘আমাদের টাকায় ফুর্তি করছে ফিলিস্তিনিরা।’

স্কুল ধ্বংসের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই ধ্বংসযজ্ঞকে বৈষম্যমূলক ও শিশুদের শিক্ষার অধিকারের লঙ্ঘন বলে বর্ণনা করেছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবরে, প্রায় ৯০ জন মার্কিন আইনপ্রণেতা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে রেগাভিমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান। তবে রেগাভিম নিজেদের কট্টর ডানপন্থী বা বসতি স্থাপনকারী গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকার করে না। তারা নিজেদের ‘মূলধারার পেশাদার জনমত জরিপকারী এবং জাতীয় নীতি নির্ধারণ ও বিতর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার’ হিসেবে দাবি করে।

সামাজিক মাধ্যমে এ ধরনের বিজ্ঞাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও। ব্রিটিশ সংসদ সদস্য ব্রায়ান লেইশম্যান বলেছেন, ‘ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলো এবং ব্যবসায়িক সংস্থাগুলো এবং এমনকি সক্রিয় ইসরায়েলি সেনারা—আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ হতে পারে এমন বিষয় প্রচার করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কী ধরনের বিষয়বস্তু প্ল্যাটফর্মে প্রচার করতে দিচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টদের এ ব্যাপারে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। কেবল লাভের জন্য বিপজ্জনক ও বিভেদমূলক এজেন্ডা প্রচার করা উচিত নয়।’

বিজ্ঞাপন ইস্যুতে মেটার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এটিকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির একটি ‘ত্রুটি’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। আল–জাজিরাকে প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘বিজ্ঞাপন পর্যালোচনার জন্য আমাদের একটি শক্তিশালী প্রক্রিয়া ও টিম রয়েছে। আমাদের পর্যালোচনা ব্যবস্থা বিজ্ঞাপনগুলো লাইভ হওয়ার আগে পরীক্ষা করে। তবে, এটি মূলত স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে। যে কারণে সবকিছু ম্যানুয়ালি পর্যালোচনা করা হয় না। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ম্যানুয়াল পর্যালোচনাও করা হয়।’

তবে যুক্তরাজ্যের নর্থামব্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ডিজিটাল সিটিজেন–এর প্ল্যাটফর্ম গভর্ন্যান্স গবেষক ক্যারোলিনা আরে আল–জাজিরাকে বলেন, ‘এই বিজ্ঞাপনগুলো সাধারণ রিয়েল এস্টেট বিজ্ঞাপনের মতো উপস্থাপন করা হয়েছে, যে কারণে এটি স্বয়ংক্রিয় পর্যালোচনা ব্যবস্থাকে এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে মডারেটররা আন্তর্জাতিক আইনের সূক্ষ্ম দিকগুলো সম্পর্কে অবগত নাও থাকতে পারেন।’

আল–জাজিরা জানিয়েছে, বিজ্ঞাপনগুলোর মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র মডিফিকেশনের উপকরণের বিজ্ঞাপনও রয়েছে। মেটার বিজ্ঞাপন নীতিমালা অনুযায়ী, ‘বিজ্ঞাপনে অস্ত্র, গোলাবারুদ বা বিস্ফোরকের বিক্রয় বা ব্যবহার প্রচার করা যাবে না। কিন্তু ইসরায়েলি বিজ্ঞাপনগুলোতে সরাসরি সামরিক সরঞ্জামের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে, যা স্পষ্টতই এই নীতিমালার পরিপন্থী বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

যুক্তরাজ্যের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক নেভ গর্ডন বলেন, ‘ফেসবুক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে মুনাফা করছে। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করার ফলে ফেসবুক এই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অংশ হয়ে যাচ্ছে। কারণ এই বিজ্ঞাপনগুলো যুদ্ধাপরাধকে স্বাভাবিক, বৈধ এবং গ্রহণযোগ্য করে তুলতে ভূমিকা রাখে।’

আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, পশ্চিম তীরের সব ইসরায়েলি বসতি অবৈধ। দখলদার শক্তির নিজ দেশের নাগরিকদের দখলকৃত অঞ্চলে স্থানান্তরিত করা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম সংবিধির অধীনে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত। কুইন্স ইউনিভার্সিটি বেলফাস্ট–এর আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইফ ও’ডোনোহু বলেন, ‘পশ্চিম তীরে ব্যক্তিগতভাবে জমি কেনাবেচা করা সম্ভব। তবে বিক্রেতাদের কাছে সেই জমির বৈধ মালিকানা আদৌ আছে কিনা তা একটি বড় প্রশ্ন। ইসরায়েল সরকারের দায়িত্ব, অবৈধ বসতি নির্মাণ প্রতিরোধ করা। কিন্তু তা না করে তারা যদি ইসরায়েল সরকার এতে সহায়তা করে, তাহলে তা তৃতীয় জেনেভা কনভেনশন লঙ্ঘনের শামিল। আর এ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন প্রচার করায় মেটাও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচের ঘটনায় বদলে যেতে পারে অস্ট্রেলিয়ার অস্ত্র-আইন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নিহতদের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: রয়টার্স
নিহতদের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: রয়টার্স

দেশের সবচেয়ে বড় বন্দুক হামলার একদিন পর সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) কড়া বন্দুক আইন প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। শনিবার সিডনির বিখ্যাত বন্ডাই বিচে ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের একটি হানুক্কাহ অনুষ্ঠানে দুই বন্দুকধারীর হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন।

পুলিশ অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ না করলেও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, তাঁদের একজনের নাম সাজিদ আকরাম এবং অন্যজন নাভিদ আকরাম। সম্পর্কে তাঁরা পিতা-পুত্র।

বন্দুকধারীদের গাড়িতে জঙ্গি সংস্থা আইএস-এর দুটি পতাকা পাওয়া গেছে। ২৪ বছর বয়সী অভিযুক্ত নাভিদের বাবা সাজিদ তথা অপর অভিযুক্তের কাছে ২০১৫ সাল থেকে অস্ত্রের লাইসেন্স ছিল এবং তাঁর কাছে ছয়টি নিবন্ধিত অস্ত্র ছিল। এসব অস্ত্র দিয়েই হামলাকারীরা প্রায় ১০–২০ মিনিট ধরে উৎসবে উপস্থিত মানুষদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে নিহত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশুও রয়েছে এবং নিহতদের বয়স ১০ থেকে ৮৭ বছর পর্যন্ত।

রয়টার্স জানিয়েছে, হামলার পর হাসপাতালে নেওয়া ৪০ জনের মধ্যে দুজন পুলিশও ছিলেন। এ ছাড়া ঘটনার সময় হামলাকারী নাভিদ গুরুতর আহত হলেও তাঁর বাবা সাজিদ পুলিশের পাল্টা গুলিতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন।

সোমবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিজ বলেছেন, ‘গতকাল আমরা যা দেখেছি, তা ছিল ধর্মবিরোধী খাঁটি শয়তানদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।’ তিনি ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে বলেন, অস্ট্রেলিয়ার সরকার বন্দুক নিয়ম কঠোর করবে এবং জাতীয় অস্ত্র নিবন্ধন চালু করবে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বন্ডাই বিচে প্রায় ১ হাজার মানুষ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হতভম্ব হয়ে দিগ্‌বিদিক পালিয়ে যান। তবে আহমেদ আল-আহমেদ নামে এক বীর নাগরিক খালি হাতে এক হামলাকারীর কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে বহু মানুষের জীবন বাঁচান। এ সময় আল-আহমেদ নিজেও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

বিশ্ব নেতারা এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এটি অস্ট্রেলিয়ায় এখন পর্যন্ত হওয়া সবচেয়ে গুরুতর বন্দুক হামলার ঘটনা।

উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় দেড় লাখ ইহুদি বসবাস করেন। তাঁদের এক-তৃতীয়াংশই বাস করেন সিডনির পূর্বাঞ্চলে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মুখে ধনকুবের থেকে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের মুখ জিমি লাই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০১৯ সালে হংকংয়ের রাজপথে সংঘটিত গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে ধনকুবের জিমি লাই। ছবি: বিবিসি
২০১৯ সালে হংকংয়ের রাজপথে সংঘটিত গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে ধনকুবের জিমি লাই। ছবি: বিবিসি

হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের শীর্ষ মুখ ও প্রভাবশালী মিডিয়া উদ্যোক্তা জিমি লাইকে বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনের (এনএসএল) আওতায় বিদেশি শক্তির সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছেন দেশটির আদালত। ৭৮ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ নাগরিক ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে কারাবন্দী রয়েছেন। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করলেও আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, তিনি হংকং ও চীনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে বিদেশি সরকারগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছিলেন। দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আশঙ্কা রয়েছে। আগামী বছরের শুরুতে তাঁর সাজা ঘোষণা হতে পারে।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রায় ঘোষণার সময় বিচারক অ্যাস্থার তোহ বলেন, চীনের পিপলস রিপাবলিকের প্রতি জিমি লাইয়ের ঘৃণা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, লাই যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে হংকংয়ের অজুহাতে চীনের সরকার উৎখাতে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

আদালত আরও রায় দেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া দৈনিক ‘অ্যাপল ডেইলি’ পত্রিকার মাধ্যমে লাই রাষ্ট্রদ্রোহমূলক লেখা প্রকাশ করেছিলেন, যা ঔপনিবেশিক আমলের একটি আইনের লঙ্ঘন।

বেইজিং শাসিত হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী জন লি এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন—লাইয়ের কর্মকাণ্ড দেশ ও হংকংবাসীর স্বার্থ ক্ষুণ্ন করেছে। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই রায়কে ‘নিষ্ঠুর বিচারিক প্রহসন’ আখ্যা দিয়ে বলছে, বিতর্কিত জাতীয় নিরাপত্তা আইনটি কার্যত ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১৯ সালে হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভের পর বেইজিং কোনো আইনসভা পরামর্শ ছাড়াই এই আইন প্রণয়ন করেছিল, যা কর্তৃপক্ষকে ব্যাপক ক্ষমতা দিয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, রায়ের সময় জিমি লাই শান্ত ছিলেন এবং আদালত ছাড়ার সময় পরিবারকে বিদায় জানান। তাঁর স্ত্রী টেরেসা, এক ছেলে ও ক্যাথলিক কার্ডিনাল জোসেফ জেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। লাইয়ের আইনজীবী জানান, দীর্ঘ রায় পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আপিল করা হবে কি না, তা তিনি স্পষ্ট করেননি।

এদিকে লাইয়ের ছেলে সেবাস্তিয়ান লাই যুক্তরাজ্য সরকারকে তাঁর বাবার মুক্তির জন্য আরও সক্রিয় হতে আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্য এই মামলাকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নিপীড়ন’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে লাইয়ের মুক্তি দাবি করে এলেও চীন ও হংকং সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে।

এক সময়ের সফল ব্যবসায়ী জিমি লাই ১৯৮৯ সালের চীনের তিয়েনআনমেন গণহত্যার পর গণতন্ত্র আন্দোলনে সক্রিয় হন। অনেক হংকংবাসীর চোখে তিনি এখনো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের প্রতীক। তবে এই রায় হংকংয়ের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পেহেলগাম হামলায় এনআইএর চার্জশিট, ৫ ব্যক্তির সঙ্গে এলটিই-টিআরএফও অভিযুক্ত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত ২২ এপ্রিল পেহেলগাম হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগ ছিলেন পর্যটক। ছবি: পিটিআই
গত ২২ এপ্রিল পেহেলগাম হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগ ছিলেন পর্যটক। ছবি: পিটিআই

জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার প্রায় আট মাস পর চার্জশিট দিয়েছে ভারতের ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। চার্জশিটে পাঁচ সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবাসহ (এলইটি) দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের দুই সশস্ত্র সংগঠনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

গত ২২ এপ্রিল পেহেলগাম হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগ ছিলেন পর্যটক।

এনআইএর ১ হাজার ৫৯৭ পৃষ্ঠার চার্জশিটে হামলার পেছনে পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র, অভিযুক্তদের ভূমিকা এবং মামলার পক্ষে থাকা প্রমাণের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পেহেলগাম হামলার পরিকল্পনা, সহায়তা ও বাস্তবায়নে এলইটি-টিআরএফ সরাসরি জড়িত ছিল। হামলার মূল হ্যান্ডলার হিসেবে এলইটির শীর্ষ কমান্ডার সাজিদ জাটের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

চার্জশিটে তিনজনের নাম রয়েছে, যাঁদের পাকিস্তানের সন্ত্রাসী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সুলেমান শাহ, হাবিব তাহির ওরফে জিবরান ও হামজা আফগানির। চলতি বছরের জুলাইয়ে শ্রীনগরের কাছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তাঁরা নিহত হন।

এলইটি ও টিআরএফের পাশাপাশি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা ২০২৩-এর (বিএনএস) অস্ত্র আইন (১৯৫৯) ও বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের (১৯৬৭) বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এনআইএ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার’ ধারাও যুক্ত করেছে।

এ ছাড়া আরও দুজন এই মামলায় চার্জশিটভুক্ত হয়েছেন। পারভেজ আহমদ ও বশির আহমদকে গত ২২ জুন এনআইএ গ্রেপ্তার করেছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা তিন সন্ত্রাসীকে আশ্রয় দিয়েছিলেন।

পারভেজ আহমদ ও বশির আহমদ জিজ্ঞাসাবাদে পেহেলগাম হামলায় জড়িত তিন সন্ত্রাসীর পরিচয় প্রকাশ করেন এবং নিশ্চিত করেন যে, তাঁরা পাকিস্তানের নাগরিক এবং লস্কর-ই-তাইয়েবার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

কে এই সাজিদ জাট

সাজিদ জাট একাধিক ছদ্মনামে পরিচিত। তাঁর পরিচিত নামগুলোর মধ্যে রয়েছে সাইফুল্লাহ, নুমি, নুমান, ল্যাংড়া, আলি সাজিদ, উসমান হাবিব ও শানি। ২০২২ সালের অক্টোবরে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনের (ইউএপিএ) আওতায় তাঁকে ‘ব্যক্তিগত সন্ত্রাসী’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

প্রসঙ্গত, ইন্ডিভিজুয়াল টেররিস্ট (Individual Terrorist) বলতে এমন একজন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যিনি কোনো বড় সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থেকেও একা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা ও পরিচালনা করেন। তাঁরা লোন উলফ নামেও পরিচিত। কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত না থাকায় সহজে তাঁদের খুঁজে পাওয়া যায় না।

ভারতীয় তদন্ত সংস্থাগুলোর ধারণা, সাজিদ জাট পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অবস্থিত লস্করের সদর দপ্তর থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তিনি শুধু টিআরএফের অপারেশনাল প্রধানই নয়, কাশ্মীর উপত্যকায় সন্ত্রাসী নিয়োগ, অর্থায়ন ও অনুপ্রবেশের দায়িত্বেও রয়েছেন।

সাজিদ জাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে—২০২৩ সালের ধাংরি গণহত্যা (যেখানে তিনি ছিলেন মূল ষড়যন্ত্রকারী), ২০২৪ সালের মে মাসে পুঞ্চে বিমানবাহিনীর কনভয়ে হামলা এবং ২০২৪ সালের জুনে রিয়াসি বাস হামলা।

এ ছাড়া হাইব্রিড সন্ত্রাসীদের লজিস্টিক ও অপারেশনাল সহায়তা দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ভারতীয় তদন্ত সংস্থাগুলোর মতে, কাশ্মীরে সক্রিয় সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সবচেয়ে ভয়ংকর মুখ হলেন এই সাজিদ জাট।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হিমালয়ে হারিয়ে যাওয়া পারমাণবিক যন্ত্র ৬০ বছর পরও গঙ্গার জন্য ঝুঁকি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত নন্দা দেবীর চূড়ায় পারমাণবিক শক্তিচালিত নজরদারিযন্ত্রটি বসানো হয়েছিল। ছবি: এএনআই
ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত নন্দা দেবীর চূড়ায় পারমাণবিক শক্তিচালিত নজরদারিযন্ত্রটি বসানো হয়েছিল। ছবি: এএনআই

প্রায় ৬০ বছর আগের ঘটনা, তখন স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। চীনকে টেক্কা দিতে উঠেপড়ে লেগেছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা মিলে নামে এক গোপন অভিযানে। কিন্তু অভিযানে নেমে বৈরী আবহাওয়ার কারণে হারিয়ে যায় নজরদারির কাজে ব্যবহৃত পারমাণবিক শক্তিচালিত একটি যন্ত্র, যেটি আজও হিমালয় পর্বতের বরফের নিচে চাপা পড়ে আছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতের নন্দা দেবী পর্বতের কাছে হারিয়ে যাওয়া ওই পারমাণবিক শক্তিচালিত যন্ত্রটি গঙ্গা নদীর জন্য নানান ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

ঘটনার সূত্রপাত ১৯৬৫ সালে, চীনের সদ্য গড়ে ওঠা পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ও ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) যৌথভাবে এক গোপন অভিযানে নামে। লক্ষ্য ছিল—ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত নন্দা দেবীর চূড়ায় একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত নজরদারিযন্ত্র বসানো।

ওই যন্ত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল একটি রেডিওআইসোটোপ থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটর (আরটিজি)। এটি কয়েক কেজি প্লুটোনিয়াম দিয়ে চালিত হতো। এর মাধ্যমে স্থাপিত সেন্সরগুলো দিয়ে সীমান্তের ওপারে চীনের ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক পরীক্ষার তথ্য সংগ্রহ করার কথা ছিল। কিন্তু ভয়াবহ তুষারঝড়ের কবলে পড়ে অভিযানে অংশ নেওয়া দল যন্ত্রটি পাহাড়ে রেখে পিছু হটতে বাধ্য হয়। পরের মৌসুমে ফিরে গেলে দেখা যায়—আরটিজি ও এর প্লুটোনিয়াম-কোর আর সেখানে নেই। ধারণা করা হয়, তুষারধসের কারণে সেটি ভেসে গেছে অথবা গভীর হিমবাহের নিচে চাপা পড়েছে।

আরটিজি কী

আরটিজি বা রেডিওআইসোটোপ থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটর হলো এমন একটি যন্ত্র, যা তেজস্ক্রিয় পদার্থের তাপ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। ওই পদার্থ ধীরে ধীরে ক্ষয় হওয়ার সময় তাপ তৈরি হয় আর সেই তাপ বিদ্যুতে রূপান্তরিত হয়।

এই প্রক্রিয়ায় কোনো চলমান যন্ত্রাংশ থাকে না। তাই আরটিজি দীর্ঘদিন কাজ করতে পারে। সাধারণত মহাকাশ অভিযান বা এমন দুর্গম এলাকায় এগুলো ব্যবহার করা হয়।

আরটিজি কোনো পারমাণবিক বোমা নয় এবং এটি বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে না। তবে যন্ত্রটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিকিরণজনিত ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

হারানো যন্ত্রটি এখন কোথায়

পরবর্তী কয়েক দশকে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একাধিকবার ওই যন্ত্রের সন্ধানে অভিযান চালালেও সফল হয়নি। দুই দেশের কেউই নিশ্চিত করে বলেনি, যন্ত্রটির পরিণতি কী হয়েছে।

কিছু কর্মকর্তা ও লেখকের মতে, ভারতীয় কোনো দল নীরবে যন্ত্রটি উদ্ধার করে থাকতে পারে। আবার অনেকের ধারণা, এটি এখনো নন্দা দেবী এলাকার অস্থির বরফ ও পাথরের স্তরের নিচে আটকে আছে।

১৯৭৮ সালে ভারতের পরমাণু শক্তি কমিশনের এক জরিপে স্থানীয় নদীগুলোতে কোনো প্লুটোনিয়াম দূষণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে জরিপটি যন্ত্রটির অবস্থানও নির্দিষ্ট করতে পারেনি। ফলে বিষয়টি আজও অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

গঙ্গায় তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ঝুঁকি

নন্দা দেবীর হিমবাহ থেকে উৎপন্ন রিষিগঙ্গা ও ধৌলিগঙ্গা নদী মিলিত হয়ে অলকানন্দায় প্রবাহিত হয়। পরে অলকানন্দা ও ভাগীরথী একত্রে গঙ্গা নদীর জন্ম দেয়। এই নদীই নিচের দিকে কয়েক শ কোটি মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি রেডিওআইসোটোপ থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটরটি অক্ষত অবস্থায় বরফের গভীরে চাপা পড়ে থাকে, তাহলে তাৎক্ষণিক ঝুঁকি তুলনামূলক কম। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এর আবরণ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তেজস্ক্রিয় পদার্থ গলে বরফের পানির সঙ্গে মিশে নদীতে প্রবেশ করতে পারে।

এই সম্ভাবনাকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন—সম্ভাবনা কম, কিন্তু প্রভাব ভয়াবহ। উত্তরাখন্ডে প্রতিবছর বন্যা, তুষারধসের ঘটনা ঘটলে এই আশঙ্কা নতুন করে সামনে আসে।

নতুন করে উদ্বেগ কেন

হিমালয়ে হিমবাহ গলার গতি বেড়ে যাওয়া, ২০২১ সালের চামোলি বন্যার মতো দুর্যোগের পুনরাবৃত্তি এবং পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল এলাকায় পুরোনো সামরিক ও পারমাণবিক কর্মকাণ্ড নিয়ে বাড়তি নজরদারির প্রেক্ষাপটে নন্দা দেবীর এই হারানো যন্ত্রটি আবার আলোচনায় এসেছে।

এখন পর্যন্ত কোনো তেজস্ক্রিয় বিকিরণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা—তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও হিমবাহ সরে যাওয়ার ফলে ভবিষ্যতে আরটিজির অবশিষ্টাংশ উন্মুক্ত বা নড়াচড়া করতে পারে।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়া টুডে ও নিউইয়র্ক টাইমস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত