Ajker Patrika

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন

খামেনি কোথায়, কেমন আছেন—উৎকণ্ঠিত ইরানিদের প্রশ্নের বন্যা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ জুন ২০২৫, ১৬: ৫৯
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ছবি: খামেনির কার্যালয়
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ছবি: খামেনির কার্যালয়

ইরানজুড়ে গুঞ্জন। দেশটির রাজধানী তেহরানের ক্যাফে থেকে শুরু করে পার্লামেন্ট ভবনের করিডর—সর্বত্র সবার মুখে একটাই প্রশ্ন—সর্বোচ্চ নেতা কোথায়? গত এক সপ্তাহে দেশজুড়ে যুদ্ধ, হামলা, প্রতিশোধ, যুদ্ধবিরতি—সবই ঘটেছে। অথচ আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির দেখা নেই। নেই কোনো বার্তা। নেই কোনো ছবি।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সরাসরি সম্প্রচারে উপস্থাপক মুখোমুখি হয়েছিলেন খামেনির দপ্তরের কর্মকর্তা মেহদি ফাজায়েলির। তাঁর কাছে উপস্থাপক সোজা প্রশ্ন করলেন, ‘মানুষ খুব উদ্বিগ্ন। সর্বোচ্চ নেতার অবস্থা কী?’ ফাজায়েলির উত্তর রহস্যে মোড়া, ‘আমার কাছেও অনেক প্রশ্ন এসেছে। আমাদের সবার দোয়া করা উচিত। যাঁরা তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন, তাঁরা ঠিকঠাক কাজ করছেন। ইনশা আল্লাহ, আমাদের মানুষ বিজয় উদ্‌যাপন করবে তাদের নেতার পাশে দাঁড়িয়ে।’

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে খামেনিই দেশের সব বড় সিদ্ধান্তের শেষ কথা বলেন। অথচ গত এক সপ্তাহে দেশের বড় বড় সংকটের মধ্যেও তিনি প্রকাশ্যে দেখা দেননি বা কোনো বক্তব্য দেননি। কয়েক দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়। এর জবাবে ইরান কাতারে অবস্থিত একটি মার্কিন ঘাঁটিতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এরপর ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়, যা গত মঙ্গলবার সকালের দিকে কার্যকর হয়েছে।

এসব ঘটনার মধ্যেও খামেনি নিখোঁজ। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, নিরাপত্তার কারণে তিনি বাংকারে অবস্থান করছেন এবং ইলেকট্রনিক যোগাযোগ এড়িয়ে চলছেন, যাতে তাঁকে টার্গেট করে হত্যা করা না যায়। কিন্তু তাঁর এই অনুপস্থিতি সবাইকে বিস্মিত ও আতঙ্কিত করে তুলেছে।

রাজনীতি ও সামরিক অঙ্গনে চাপা গুঞ্জন—তিনি কি বেঁচে আছেন? আহত? নাকি...! ইরানের ‘খানেমান’ নামে একটি রিয়েল এস্টেটভিত্তিক দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক মোহসেন খালিফে বলেন, ‘তাঁর কয়েক দিনের অনুপস্থিতি আমাদের মতো যারা তাঁকে ভালোবাসি, তাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।’ তিনি বলেন, ‘যদি খামেনি মারা যান—যা দুই সপ্তাহ আগেও অকল্পনীয় ছিল—তবে তাঁর জানাজা হবে সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ ও ঐতিহাসিক।’

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে খামেনির অনুমতি ছাড়া দেশ এমন বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে হামলা বা ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির মতো সিদ্ধান্তের পেছনে তাঁর মতামত ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ, সেনা কর্মকর্তারা ও সরকারের উচ্চপর্যায়ের অনেকে নিশ্চিতভাবে বলতে পারছেন না, তাঁরা সাম্প্রতিক সময়ে খামেনির সঙ্গে সরাসরি দেখা করেছেন কি না বা কথা বলেছেন কি না।

ইরানের প্রভাবশালী সামরিক উপদেষ্টা জেনারেল ইয়াহিয়া সাফাভির ছেলে ও সামরিক বিশ্লেষক হামজা সাফাভি বলছেন, ইসরায়েলের হাত থেকে বাঁচতে খামেনি বাংকারে। বাইরে যোগাযোগ সীমিত। কিন্তু কেউ নিশ্চিত নয়—তিনি আদৌ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন কি না।

সাফাভি আরও বলেন, দেশের সংকট মোকাবিলায় এখন ‘বাস্তববাদী’ চিন্তাভাবনা গুরুত্ব পাচ্ছে। যার অর্থ, প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানসহ অন্য নেতাদের ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তারপরও অনেক খামেনি সমর্থক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিচ্ছেন, একে-অপরকে বার্তা পাঠাচ্ছেন। বলছেন, খামেনিকে না দেখে বা না শুনে তাঁরা মনে করতে পারছেন না যে, ইরান ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জয় লাভ করেছে।

সরকারের অভ্যন্তরীণ নীতিনির্ধারণী আলোচনায় যুক্ত চার শীর্ষ ইরানি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খামেনির অনুপস্থিতিতে রাজনীতিবিদ ও সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই শুরু হয়েছে। বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে—কেউ কেউ পারমাণবিক কর্মসূচি আরও এগিয়ে নিতে চায়, কেউ আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসার পক্ষপাতী।

এই মুহূর্তে যে পক্ষ কিছুটা এগিয়ে আছে, তারা কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার ও মধ্যপন্থার পক্ষে। এর নেতৃত্বে আছেন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান, যিনি স্পষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আবার আলোচনায় ফিরতে রাজি হয়েছেন, এমনকি ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালানোর পরও। এই শিবিরে আছেন বিচার বিভাগের প্রধান গোলাম-হোসেইন মোহসেনি-ইজেই এবং সশস্ত্র বাহিনীর নতুন প্রধান মেজর জেনারেল আবদোররহিম মুসাভি।

গতকাল বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান বলেন, যুদ্ধ ও জনগণের ঐক্য ইরানের জন্য ‘শাসনব্যবস্থা ও কর্মকর্তাদের আচরণে’ পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি করেছে। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য শাসনব্যবস্থার দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর সোনালি সুযোগ।’

এদিকে ইসরায়েলের ভয়াবহ বিমান হামলার পর দেশজুড়ে যে জাতীয়তাবাদী আবেগ তৈরি হয়েছে, সেটাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে সরকার। গত মঙ্গলবার তেহরানের ‘আজাদি স্কয়ারে’ (স্বাধীনতা স্কয়ার) জাতীয় সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা খোলা জায়গায় সংগীত পরিবেশন করে। এরপর স্কয়ারের মাঝখানের স্মৃতিস্তম্ভে আলোক প্রক্ষেপণের মাধ্যমে জরুরি উদ্ধারকর্মীদের ছবি দেখানো হয়।

তবে ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতায় অন্য গোষ্ঠীগুলোও রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কট্টরপন্থী নেতা সাঈদ জলিলির নেতৃত্বাধীন একটি শক্তিশালী রক্ষণশীল গোষ্ঠী। তারা প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সমালোচনা করছে। তারা যুদ্ধবিরতিকে ‘হঠাৎ সিদ্ধান্ত’ বলে আখ্যা দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন করে কোনো পারমাণবিক আলোচনা শুরু করার কড়া বিরোধিতা করেছে।

এই গোষ্ঠীতে রয়েছেন পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ রক্ষণশীলরা এবং ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) কিছু জ্যেষ্ঠ কমান্ডারও। সাঈদ জলিলির ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফোয়াদ ইজাদি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘এই সময় আলোচনার কথা বললে মনে হয়, ইরানের প্রেসিডেন্টের দেশ পরিচালনার যোগ্যতা নেই।’

এ বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র আলি আহমাদনিয়া। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘১২ দিন ধরে আমরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়েছি। এখন যদি আপনাদের মতো লোকদের বিরুদ্ধেও লড়তে হয়, তাহলে সেটাও এক যুদ্ধ। আপনারা নিজেদের কলম দিয়ে শত্রুর কাজ সহজ করে দিচ্ছেন।’

ইরানের ক্ষতিগ্রস্ত পারমাণবিক স্থাপনাগুলো নিয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ও ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামি স্থানীয় গণমাধ্যমে বলেছেন, ইরান দ্রুত পারমাণবিক স্থাপনা পুনর্গঠন করবে এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।

ব্রিটিশ থিংকট্যাংক চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিভাগের পরিচালক সানাম ভাকিল বলেন, খামেনির অনুপস্থিতি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং এটা বোঝায় যে, ইরানের নেতারা এখন খুবই সতর্ক অবস্থানে আছেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি আশুরার আগে খামেনিকে দেখতে বা শুনতে না পাই, তাহলে সেটা খুব খারাপ সংকেত হবে। তাঁকে অবশ্যই জনসমক্ষে আসতে হবে।’

আর তাই সবার নজর এখন আশুরার দিকে। সময় যত গড়াচ্ছে, রহস্য ততই ঘনীভূত হচ্ছে। খামেনি আশুরার আগেই সামনে আসবেন নাকি ইরানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শুরু হবে এক নতুন অধ্যায়?

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ছয় মাসের পরিচয়ে বিবাহিতাকে বিয়ের প্রস্তাব, প্রত্যাখ্যান করায় গুলি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গ্রেপ্তার তুষার ও শুভম। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তার তুষার ও শুভম। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের গুরগাঁওয়ে এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। মাত্র ৬ মাসের পরিচয়ের ভিত্তিতে এক যুবক বিয়ের প্রস্তাব দেয় এক বিবাহিতা তরুণীকে। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তাঁকে গুলি করে সেই যুবক। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, গুরুগাঁওয়ের একটি ক্লাবের ভেতরে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ২৫ বছর বয়সী এক নারীকে গুলি করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ২০ ডিসেম্বর ভোরের দিকে এমজি রোডে।

পুলিশ জানিয়েছে, গুলিবর্ষণের ঘটনায় এক নারী আহত হওয়ার খবর পেয়ে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় পায়। গুরুতর আহত হওয়ায় শুরুতে তিনি জবানবন্দি দেওয়ার মতো অবস্থায় ছিলেন না।

দিল্লির নাজাফগড়ের বাসিন্দা ওই নারীর স্বামী অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে যে, তাঁর স্ত্রী কল্পনা (২৫) গুরুগ্রামের একটি ক্লাবে কাজ করতেন এবং তাকে দিল্লির সঙ্গম বিহারের বাসিন্দা তুষার গুলি করেছে।

অভিযোগে ওই স্বামী জানান, তাঁর স্ত্রী ১৯ ডিসেম্বর কাজে গিয়েছিলেন এবং রাত ১টার দিকে তাঁকে ফোন করে জানান, তাঁকে গুলি করা হয়েছে। অভিযোগকারী আরও যোগ করেন, ‘প্রায় এক মাস আগে তুষার আমাদের বাড়িতে এসেছিল, আমাদের সাথে ঝগড়া করেছিল এবং চলে গিয়েছিল।’

এই অভিযোগের ভিত্তিতে সেক্টর ২৯ থানায় একটি এফআইআর (FIR) দায়ের করা হয়। তদন্ত চলাকালীন, ক্রাইম ইউনিটের একটি দল উত্তরপ্রদেশের বারাউত থেকে দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলো তুষার ওরফে জন্টি (২৫) এবং তার বন্ধু শুভম ওরফে জনি (২৪)। দুজনেই দিল্লির সঙ্গম বিহারের বাসিন্দা।

জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, তুষার স্বীকার করেছে যে—প্রায় ছয় মাস আগে ওই নারীর সাথে তাঁর বন্ধুত্ব হয় এবং সে তাঁকে বিয়ে করতে চেয়েছিল, কিন্তু ওই নারী বারবার তা প্রত্যাখ্যান করেন।

পুলিশের অভিযোগ অনুযায়ী, ১৯ ডিসেম্বর রাতে তুষার তাঁর বন্ধু শুভমকে নিয়ে ওই ক্লাবে যায় এবং আবারও বিয়ের প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় সে ওই নারীকে গুলি করে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার আরও তদন্ত চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ট্রাম্পের নির্দেশে নাইজেরিয়ায় মার্কিন বাহিনীর হামলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ২২
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, মার্কিন বাহিনী উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ায় সন্ত্রাসী সংগঠন আইএসআইএল (আইএসআইএস) যোদ্ধাদের ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘আজ রাতে কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে আমার নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্র উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়ায় আইএসআইএস সন্ত্রাসী আবর্জনার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী এবং প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে।’

ট্রাম্প বলেন, আইএসআইএল যোদ্ধারা ‘প্রাথমিকভাবে নির্দোষ খ্রিষ্টানদের লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, যা বহু বছর এমনকি শতাব্দীর মধ্যেও দেখা যায়নি!’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি এর আগে এই সন্ত্রাসীদের সতর্ক করেছিলাম যে তারা যদি খ্রিষ্টানদের হত্যা বন্ধ না করে; তবে তাদের চরম মূল্য দিতে হবে এবং আজ রাতে সেটাই হয়েছে।’

আফ্রিকায় মার্কিন সামরিক কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা আফ্রিকা কমান্ড (AFRICOM) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে জানিয়েছে, এই বিমান হামলাটি ‘নাইজেরীয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে’ চালানো হয়েছে এবং এতে ‘একাধিক আইএসআইএস সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বিস্তারিত কোনো তথ্য না দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘নাইজেরীয় সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞ। সামনে আরও আসবে।

এক বিবৃতিতে আফ্রিকম জানিয়েছে, এই হামলাটি নাইজেরিয়ার সবতো রাজ্যে সংঘটিত হয়েছে, যা মূলত নাইজেরিয়ার সোকোতো রাজ্যকে নির্দেশ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, নাইজেরিয়ার সবতো নামে কোনো রাজ্য নেই।

নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টান নির্যাতনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প পেন্টাগনকে সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা শুরু করার নির্দেশ দেওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর এই মার্কিন সামরিক পদক্ষেপটি এল।

নাইজেরিয়া সরকার এর আগে ট্রাম্পের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিল। তারা বলেছিল, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো দেশের মুসলিম এবং খ্রিষ্টান উভয় সম্প্রদায়কেই লক্ষ্যবস্তু করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবি একটি জটিল নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করে না এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষায় নাইজেরীয় কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টাকে উপেক্ষা করে।

নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ শুক্রবার সকালে এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে, নাইজেরীয় কর্তৃপক্ষ ‘সন্ত্রাসবাদ এবং সহিংস চরমপন্থার মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাঠামোগত নিরাপত্তা সহযোগিতায় নিয়োজিত রয়েছে।’ মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ‘এর ফলে উত্তর-পশ্চিমে বিমান হামলার মাধ্যমে সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুগুলোতে নিখুঁতভাবে আঘাত করা সম্ভব হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাজমহল একসময় মন্দির ছিল—মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রীর মন্তব্যে নতুন বিতর্ক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মুঘল স্থাপত্যের বিস্ময় তাজমহল আসলে একসময় মন্দির ছিল—এমন দাবি করে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নগর প্রশাসনমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সাগর জেলার বিনা শহরে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

৬৯ বছর বয়সী এ নেতার ভাষণের ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিজয়বর্গীয় তাঁর বক্তব্যে দাবি করেন, সম্রাট শাহজাহান একটি মন্দিরকে কবরে রূপান্তরিত করে তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন।

বিজয়বর্গীয় বলেন, মমতাজকে প্রথমে বুরহানপুরে সমাহিত করা হয়েছিল। পরে তাঁর দেহ এমন একটি স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়, যেখানে একটি মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছিল। সেই মন্দিরের ওপরই বর্তমান তাজমহল দাঁড়িয়ে রয়েছে।

একই অনুষ্ঠানে বিজেপির জাতীয় কার্যকরী সভাপতি নীতিন নবীনের উদ্দেশে বিজয়বর্গীয় বলেন, বিহারে জন্ম নিলেই যে একজন মানুষকে নম্র হতে হবে, তার কোনো মানে নেই, তবে নীতিন নবীন অত্যন্ত নম্রতার সঙ্গে এগিয়ে গেছেন। তাঁর এই মন্তব্যকে বিহারিদের প্রতি অবমাননাকর হিসেবে দেখছেন অনেকে।

বিজয়বর্গীয়ের এ বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছে কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র ভূপেন্দ্র গুপ্ত বলেন, বিজেপি মন্ত্রীরা সব সীমা লঙ্ঘন করছেন এবং জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। ভূপেন্দ্র গুপ্ত বিদ্রূপ করে বলেন, একজন মন্ত্রী বলছেন ভাস্কো দা গামা ভারত আবিষ্কার করেননি, আরেকজন বলছেন তাজমহল আসলে মন্দির। তাঁদের উচিত বিশ্ববাসীর জন্য ইতিহাসের একটি নতুন বই লেখা। তাহলেই বোঝা যাবে, পৃথিবী তাঁদের সম্পর্কে কী ভাবে।

ভূপেন্দ্র প্রশ্ন তোলেন, যদি বিহারিদের সম্পর্কে বিজেপির এমন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে, তবে কেন তারা সেখানে নীতীশ কুমারের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজনীতি করছে?

তবে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের জন্য বিতর্ক নতুন কিছু নয়। এর আগেও তিনি একাধিকবার আপত্তিকর মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন।

সম্প্রতি ইন্দোরে দুই অস্ট্রেলীয় নারী ক্রিকেটার হেনস্তার শিকার হলে তিনি দায়ীদের ধরার বদলে খেলোয়াড়দেরই ‘শিক্ষা নেওয়া’র পরামর্শ দিয়েছিলেন। নারীদের পোশাক নিয়ে অশালীন মন্তব্য করে তিনি এর আগে বলেছিলেন, ‘অল্প পোশাকে’ মেয়েদের দেখলে তাঁর ভালো লাগে না। এ ছাড়া রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আন্তরিকতাকে ‘বিদেশি মূল্যবোধ’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন তিনি।

অনেকে বলছেন, তাজমহল নিয়ে এমন দাবি উগ্র ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আগে থেকেই ছিল। তবে একজন দায়িত্বশীল কেবিনেট মন্ত্রীর মুখে এমন কথা সামাজিক মেরুকরণকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ভারত, মধ্যপ্রদেশ, তাজমহল, বিতর্ক, মন্তব্য, মন্ত্রী, মন্দির, ইতিহাস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বড়দিন ঘিরে খ্রিষ্টানদের ওপর চড়াও ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা, উত্তেজনা তুঙ্গে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে
আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। ছবি: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সৌজন্যে

ভারতে বড়দিন উদ্‌যাপনের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা ও হামলার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আসামের নলবাড়ি শহরে একটি মিশনারি স্কুলে ভাঙচুর চালান কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের একদল কর্মী। এক সপ্তাহ ধরে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও দিল্লিতে বড়দিনকেন্দ্রিক নানা বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেছে।

নলবাড়ির সিনিয়র পুলিশ সুপার বিবেকানন্দ দাস ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, পানিগাঁওয়ের সেন্ট মেরিস ইংলিশ স্কুল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় অভিযোগ করেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা স্কুলের বড়দিনের সাজসজ্জা নষ্ট করার পাশাপাশি শহরের একটি দোকানে বিক্রি হওয়া ক্রিসমাস অর্নামেন্টও ভাঙচুর করেন।

তবে বড়দিন উদ্‌যাপনের সময় সবচেয়ে বেশি উত্তেজনার খবর পাওয়া গেছে বিজেপিশাসিত রাজ্য ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে। ছত্তিশগড়ে রাজধানী রায়পুরের ম্যাগনেটো মলে লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক অতর্কিতে হামলা চালান এবং বড়দিনের সব সাজসজ্জা গুঁড়িয়ে দেন। কথিত ধর্মান্তরের প্রতিবাদে ‘সর্ব হিন্দু সমাজ’-এর ডাকা ধর্মঘট চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ এফআইআর করলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এদিকে বিজেপিশাসিত আরেক রাজ্য মধ্যপ্রদেশের জবলপুর জেলায় একটি গির্জায় প্রার্থনা চলাকালে কট্টরপন্থী বজরং দলের কর্মীরা ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিয়ে ভেতরে ঢুকে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। এ ছাড়া কাটঙ্গা এলাকায় এক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নারীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে জেলা বিজেপি নেত্রী অঞ্জু ভার্গবের বিরুদ্ধে। ওই নারীর অপরাধ ছিল, তিনি বড়দিন উদ্‌যাপনে গির্জায় গিয়েছিলেন। যদিও ওই নারী স্পষ্ট করেছেন, বড়দিন পালন করা মানেই ধর্ম পরিবর্তন করা নয়।

রাজস্থানের শ্রী গঙ্গানগর জেলায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এক বিতর্কিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো স্কুল শিশুদের ‘সান্তা ক্লজ’ সাজতে বাধ্য করতে পারবে না। স্থানীয় এক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়, যেখানে দাবি করা হয়েছে—সনাতন ধর্মাবলম্বী-অধ্যুষিত এই এলাকায় শিশুদের ওপর খ্রিষ্টীয় সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

রাজধানী দিল্লির লাজপতনগর এলাকায় বড়দিনের টুপি পরা একদল নারীকে হেনস্তা করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বজরং দলের সদস্যরা ওই নারীদের ধর্মান্তরচেষ্টার অভিযোগে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করেন। তবে দিল্লি পুলিশ বিষয়টিকে ‘তুচ্ছ ব্যক্তিগত বিতর্ক’ হিসেবে অভিহিত করে কোনো মামলা নেয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত