Ajker Patrika

গাজায় মানবিক বিপর্যয়, ব্লিঙ্কেন ইসরায়েলে 

গাজায় মানবিক বিপর্যয়, ব্লিঙ্কেন ইসরায়েলে 

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাত গতকাল বৃহস্পতিবার ছয় দিনে গড়িয়েছে। খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎহীন অবরুদ্ধ গাজা প্রতি মুহূর্তে কেঁপে উঠছে ইসরায়েলি বিমান হামলায়। যদিও হামাসের দিক থেকে ইসরায়েলের হামলা অনেকটাই স্তিমিত হয়ে এসেছে। লেবাননের দিক থেকে হিজবুল্লার আক্রমণও বন্ধ রয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা শুরু থেকেই ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ইসরায়েল সফরে গেছেন। ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিষয়টি মাথায় রেখে সৌদি আরব অনেকটাই নীরব। তবে ইরান, সিরিয়া ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলছে। অবশ্য ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান গত বুধবার এই সংকট নিয়ে টেলিফোনে কথা বলেছেন। এদিকে লেবাননের হিজবুল্লাহ এরই মধ্যে হামাসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।

ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরাও ইসরায়েলকে হুমকি দিয়ে রেখেছে। মিসর গাজাবাসীর জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছে। জর্ডান, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা গাজায় সহায়তা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে। এদিকে বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনের পক্ষে মিছিল হয়েছে।

গাজায় মানবিক বিপর্যয় ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে গত শনিবার ভোরে আকস্মিক হামলা চালান হামাস সদস্যরা। তারপর দুই দিন ইসরায়েলের ভেতরে তুমুল লড়াই হয়। পাশাপাশি গাজা উপত্যকায় টানা বোমাবর্ষণ করে চলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেই বোমা থেকে রেহাই পাচ্ছে না আশ্রয়কেন্দ্র, হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্সও। গাজার শিফা হাসপাতালের প্যারামেডিক তালাল তাহা আল জাজিরাকে বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী হাসপাতালেও হামলা চালাচ্ছে। তিনি ও তাঁর তিন সহকর্মীও আক্রান্ত হয়েছেন। আহত ফিলিস্তিনিদের সেবা দেওয়ারও সুযোগ রাখছে না ইসরায়েল।

গাজা উপত্যকায় ১৩টি হাসপাতাল রয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতিতে এসব হাসপাতাল পুরোদমে চলতে পারছে না। খাদ্য, পানি ও বিদ্যুৎহীন অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, আর কোনো নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র খালি নেই। প্রতি মুহূর্তে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালের করিডরেও গুরুতর আহত অনেককে সেবা দিতে হচ্ছে।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানি বেড়ে ১ হাজার ৩৫৪ জন হয়েছে। আহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ৬ হাজার ৪৯ জন হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় তাদের ১২ জন কর্মী নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা বলেছে, গাজা উপত্যকায় গত ছয় দিনে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। প্রায় ২ লাখ ১৮ হাজার ৬০০ মানুষ উপত্যকায় ইউএনআরডব্লিউএর ৯২টি বিদ্যালয়ে আশ্রিত হয়েছে।

জাতিসংঘ আরও জানিয়েছে, গত শনিবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকায় অন্তত ১ হাজার বাড়ি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এ ছাড়া ৫৬০টির বেশি বাড়ি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ১৩ হাজার বাড়িঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই উপত্যকার মানুষ এখন পানি, জ্বালানি আর চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যাপক ঘাটতিতে রয়েছে। বিশেষ করে সাড়ে ৬ লাখ মানুষ ব্যাপক পানির সংকটে রয়েছে।পাশাপাশি গাজার পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। রাস্তাঘাটে বর্জ্য, দুর্গন্ধযুক্ত পানি ছড়িয়ে পড়ছে।

এদিকে সুইজারল্যান্ডের জেনেভাভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের কৌশলগত পরিচালক মাহা হুসাইনি বলেছেন, ইসরায়েল গাজায় হামলার ক্ষেত্রে ফসফরাস ব্যবহার করছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ। এসব বোমায় থাকা ফসফরাস অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসতেই জ্বলে ওঠে এবং বিষাক্ত গ্যাস তৈরি করে, যা শ্বাসতন্ত্রকে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

এদিকে শুধু গাজায় নয়, ইসরায়েল পশ্চিম তীর ও মিসরের সঙ্গে সীমান্তবর্তী রাফাহ ক্রসিংয়েও হামলা চালাচ্ছে। মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, রাফাহ ক্রসিংয়ের ফিলিস্তিন প্রান্ত ইসরায়েলি হামলায় একেবারে অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

হামাসের হামলাও থেমে নেই। ইসরায়েলের এসদেরত এলাকায় রকেট হামলায় গতকাল অন্তত পাঁচজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। হামাসের সশস্ত্র শাখা বলেছে, তারা গত বুধবার দিবাগত রাতে ইসরায়েলে রকেট হামলা চালিয়েছে। পশ্চিম তীরের জেনিন ও কালকিলিয়ায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। ইসরায়েল জার্মানির কাছে অস্ত্র চেয়েছে বলে জানিয়েছেন জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস।

এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা এ পর্যন্ত হামাসের হাতে অপহৃত ৯৭ জনের তথ্য পেয়েছে। দেশটির সম্প্রচারমাধ্যম জানিয়েছে, হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৩০০ ছাড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ৩০০। পরিস্থিতি জটিল হওয়ার শঙ্কায় ইসরায়েলে ব্রিটিশ দূতাবাসের কর্মীদের পরিবারগুলোকে সরিয়ে নিচ্ছে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, হামাসের হামলায় তাদের ২৫ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন বলেছেন, তাঁদের ২১ জন নাগরিক নিহত হয়েছেন।

শুরু হয়েছে আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক তৎপরতা
ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে হামাসের সংঘাতের মধ্যেই ইসরায়েল সফরে গেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। সেখানে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্লিঙ্কেন ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র ইসরায়েলের পাশে সব সময় থাকবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান গত বুধবার রাতে টেলিফোনে কথা বলেছেন। চীনের মধ্যস্থতায় তেহরান ও রিয়াদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আবার জোড়া লাগার পর এই প্রথম দুজন কথা বললেন। দুই নেতা ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলা বন্ধের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেন বলে ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে।সৌদি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম এসপিএ জানিয়েছে, সৌদি যুবরাজ বলেছেন, চলমান সংঘাত বন্ধে রিয়াদ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গেও টেলিফোনে কথা বলেছেন। তাঁরা ইসলামিক রাষ্ট্রগুলোকে ফিলিস্তিনের সমর্থনে এক জোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে মিসর বলেছে, তারা গাজাবাসীর জন্য সহায়তা নিয়ে আসা উড়োজাহাজগুলোর জন্য সিনাই এলাকার একটি বিমানবন্দর প্রস্তুত করেছে। সিনাইয়ের আল-আরিশ বিমানবন্দরটি গাজা সীমান্ত থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে। মিসর যখন ঘোষণাটি দিয়েছে, ঠিক সেই মুহূর্তে বিমানবন্দরটি কাতার ও জর্ডানের পক্ষ থেকে গাজার জন্য মানবিক সহায়তা নিয়ে আসা তিনটি উড়োজাহাজ অবতরণ করানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল বলে মিসরীয় দুটি নিরাপত্তা সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও মালয়েশিয়াও গাজার জন্য সহায়তা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।

এদিকে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে চিলি, আয়ারল্যান্ড, ফিলিপাইন, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশে মিছিল হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে উত্তেজনা: শিখ ও হিন্দু বিক্ষোভকারীদের মধ্যে হাতাহাতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বিক্ষোভকারী শিখদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে ওসমান হাদির ছবিও দেখা যায়। ছবি: এক্স
বিক্ষোভকারী শিখদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে ওসমান হাদির ছবিও দেখা যায়। ছবি: এক্স

লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে গত শনিবার একটি বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বেশ উত্তেজনা তৈরি হয়। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর কথিত নির্যাতনের প্রতিবাদে আয়োজিত এই সমাবেশে স্বাধীন খালিস্তানপন্থী শিখ অধিকার কর্মী এবং একদল হিন্দু বিক্ষোভকারী মুখোমুখি হলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্রিটিশ পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আয়োজকদের বরাত দিয়ে পাকিস্তানি দৈনিক ডন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আয়োজিত সমাবেশে খালিস্তান রেফারেন্ডাম অভিযানের সমন্বয়ক পরমজিৎ সিং পাম্মা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে হরদীপ সিং নিজ্জার এবং শরিফ ওসমান বিন হাদির ছবি দেখা গেছে। সমাবেশের একপর্যায়ে ভারতীয় এক হিন্দু বিক্ষোভকারীর সঙ্গে পাম্মার কথা-কাটাকাটি এবং পরে হাতাহাতি শুরু হয়। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে সেখানে দায়িত্বরত মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তারা দ্রুত পদক্ষেপ নেন এবং দুই পক্ষকে আলাদা করে দেন।

বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রবেশপথের কাছে একটি কর্ডন তৈরি করে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যান। এ সময় তাঁরা ভারত সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক স্লোগান দেন। বিশেষ করে হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যা এবং অন্যান্য শিখ নেতাদের খুনের পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাত রয়েছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।

উল্লেখ্য, ভারত সরকার পরমজিৎ সিং পাম্মাকে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড টেররিস্ট’ বা অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করলেও পাম্মা ও তাঁর সমর্থকেরা এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।

গত বছরের জুনে কানাডার ভ্যাঙ্কুভারে শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার খুন হওয়ার পর থেকে ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন চরম আকার ধারণ করেছে। একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্রে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গেও ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছে মার্কিন বিচার বিভাগ।

লন্ডনের এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সেই বৈশ্বিক উত্তেজনার ছায়া দেখা গেছে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, কোনো বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি এবং পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি।

খালিস্তান আন্দোলনের শিকড় ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগ এবং পাঞ্জাব বিভাজনের সময় পর্যন্ত বিস্তৃত। স্বাধীন শিখ রাষ্ট্রের দাবিতে এই আন্দোলন দশকের পর দশক ধরে চলে আসছে। এই আন্দোলন বর্তমানে বৈশ্বিক রাজনীতিতে ভারত-কানাডা এবং ভারত-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি সংবেদনশীল ইস্যু হিসেবে দাঁড়িয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইসরায়েল কেন প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসরায়েলের স্বীকৃতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে সোমালিল্যান্ড। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলের স্বীকৃতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে সোমালিল্যান্ড। ছবি: এএফপি

ইসরায়েল কেন সোমালিয়া থেকে স্বাধীন হতে চাওয়া সোমালিল্যান্ডকে প্রথম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিল—এই প্রশ্ন ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। আফ্রিকার হর্ন অঞ্চলের স্বঘোষিত স্বাধীন রাষ্ট্র সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েল শুধু একটি কূটনৈতিক সিদ্ধান্তই নেয়নি, বরং মধ্যপ্রাচ্য ও লোহিত সাগর ঘিরে চলমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই স্বীকৃতির পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক—এই তিনটি প্রধান কারণ। সোমালিল্যান্ডের অবস্থান অত্যন্ত কৌশলগত। এটি এডেন উপসাগরের তীরে অবস্থিত এবং ইয়েমেনের খুব কাছেই, যেখানে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা সক্রিয়। চলতি বছরে হুতি ও ইসরায়েলের মধ্যে একাধিকবার হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের প্রতিবাদে হুতিরা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালায়। জবাবে ইয়েমেনের সানা ও হোদেইদায় হুতি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় হামলা চালায় ইসরায়েল।

এই প্রেক্ষাপটে ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের গবেষক ডেভিড মাকোভস্কি প্রশ্ন তুলেছেন—সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে কি ইসরায়েল সেখানে সামরিক সুবিধা বা গোয়েন্দা উপস্থিতির পথ খুলেছে? বিশেষ করে হুতি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় এটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

ইসরায়েলের গণমাধ্যম ‘চ্যানেল ১২’ জানিয়েছে, সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আব্দিরাহমান মোহাম্মদ আবদুল্লাহি গোপনে একাধিকবার ইসরায়েল সফর করেছেন। গত অক্টোবরে তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ও মোসাদের প্রধান ডেভিড বারনিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে নেতানিয়াহু এই স্বীকৃতির ক্ষেত্রে মোসাদের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।

তবে এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে সোমালিয়া ও আফ্রিকান ইউনিয়ন। মিসর ও ফিলিস্তিনসহ কয়েকটি আরব দেশও এর সমালোচনা করেছে। অতীতে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোর করে সোমালিল্যান্ডে স্থানান্তরের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, যদিও সোমালিল্যান্ডের কর্মকর্তারা এই ধরনের কোনো যোগাযোগের কথা অস্বীকার করেছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি ইসরায়েলের জন্য অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। সোমালিল্যান্ডের বন্দরনগরী বেরবেরা ইসরায়েলকে লোহিত সাগরে প্রবেশের সুযোগ দিতে পারে। এমন হলে বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাব আল-মানদেব প্রণালির ওপর নজরদারি চালাতে পারবে ইসরায়েল। তবে সব মিলিয়ে, সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিয়ে ইসরায়েল ইতিহাস তৈরি করলেও এর পূর্ণ প্রভাব ও ফলাফল এখনো স্পষ্ট নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২০২৫ সালের সেরা সিইও কে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: দ্য ইকোনমিস্ট
ছবি: দ্য ইকোনমিস্ট

২০২৫ সাল ছিল বিশ্ব করপোরেট নেতৃত্বের জন্য এক কঠিন পরীক্ষার বছর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার ফলে শুরু হয় নতুন বাণিজ্যযুদ্ধ ও অনিশ্চিত নীতিনির্ধারণ। একই সঙ্গে চীন ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে প্রযুক্তিগত আধিপত্যের লড়াই আরও তীব্র হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে বিপুল প্রত্যাশা থাকলেও, সেটিকে লাভজনক ব্যবসায় রূপ দেওয়ার কাজ অনেক সিইওর জন্য হতাশাজনকই থেকে যায়।

তবে এই অস্থিরতার মধ্যেও কিছু প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ব্যতিক্রমী সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। টানা তৃতীয়বারের মতো ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ এবারও (২০২৫ সাল) সেরা সিইও নির্বাচন করেছে। এ ক্ষেত্রে এসঅ্যান্ডপি ১২০০ সূচকের অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোকে তাদের খাতভিত্তিক গড়ের তুলনায় অতিরিক্ত শেয়ারহোল্ডার রিটার্নের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর তিন বছরের কম সময় দায়িত্বে থাকা সিইওদের বাদ দিয়ে শীর্ষ ১০ জনকে প্রাথমিক তালিকায় রাখা হয়।

এই তালিকায় ছিলেন—জার্মান অস্ত্র নির্মাতা রাইনমেটালের আরমিন পাপারগার, স্বর্ণখনি জায়ান্ট নিউমন্টের টম পামার, ফুজিকুরার ওকাদা নাওকি, ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির ডেভিড জাসলাভ, হানহা অ্যারোস্পেসের সন জে-ইল, মাইক্রনের সঞ্জয় মেহরোত্রা, কিনরস গোল্ডের জে পল রোলিনসন, রবিনহুডের ভ্লাদিমির টেনেভ, এসকে হাইনিক্সের কাক নো-জং এবং সিগেট টেকনোলজির ডেভ মসলে।

তবে অতীতের দুর্বল পারফরম্যান্স, করপোরেট গভর্ন্যান্স সমস্যা কিংবা নিছক সৌভাগ্যের কারণে অনেকেই চূড়ান্ত বিবেচনা থেকে বাদ পড়েছেন। স্বর্ণের দাম প্রায় ৬৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় খনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বাড়লেও, সেটিকে সিইওদের কৃতিত্ব হিসেবে ধরা হয়নি। মেমোরি চিপ খাতে এআই বুমের সুফল পেলেও, সেখানে এসকে হাইনিক্সের গবেষণা ও উন্নয়নে ধারাবাহিক বিনিয়োগ আলাদা করে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

সবশেষে ২০২৫ সালের সেরা সিইও হিসেবে রাইনমেটালের আরমিন পাপারগারকেই বেছে নিয়েছে ‘দ্য ইকোনমিস্ট’। তাঁর নেতৃত্বে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশসহ ১৫৮ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে। ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাইনমেটাল বড় বড় চুক্তি জয় করেছে এবং নৌযান নির্মাণ খাতেও সম্প্রসারণে নেমেছে। ২০১৩ সাল থেকে দায়িত্বে থাকা পাপারগার ইউক্রেন যুদ্ধের আগেই ইউরোপের প্রতিরক্ষা শিল্পের সম্ভাবনা অনুধাবন করেছিলেন। দূরদর্শিতা, সাহস ও দৃঢ় নেতৃত্বের ফলেই ২০২৫ সালের সেরা সিইওর স্বীকৃতি তাঁর হাতেই উঠেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এবার ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বৈঠক—কী আছে সর্বশেষ ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএনএন
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএনএন

ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে একটি ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবকে সামনে রেখে রোববার (২৮ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। জেলেনস্কির কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এই খসড়া প্রস্তাবকে তিনি ভবিষ্যতে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করার একটি সম্ভাব্য ভিত্তি হিসেবে দেখছেন।

এর আগে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২৮ দফার একটি খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চললেও সেটিকে রাশিয়ার দাবির প্রতি অতিরিক্ত সহানুভূতিশীল মনে করা হয়েছিল। কয়েক সপ্তাহের আলোচনার পর প্রস্তাবটি সংশোধন করে ২০ দফায় নামিয়ে আনা হয়। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, অধিকাংশ বিষয়ে পক্ষগুলোর অবস্থান অনেকটাই কাছাকাছি এসেছে। তবে এখনো দুটি ইস্যুতে ঐকমত্য হয়নি—ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ এবং জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা ও পরিচালনা।

প্রস্তাবনার শুরুতেই ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব পুনর্ব্যক্ত করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিঃশর্ত আগ্রাসনবিরোধী চুক্তির প্রস্তাব রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি শান্তি বজায় রাখতে সীমান্তবর্তী সংঘর্ষরেখা নজরদারির জন্য মহাকাশভিত্তিক মানববিহীন প্রযুক্তি ব্যবহারের কথাও এতে অন্তর্ভুক্ত আছে।

এই কাঠামো অনুযায়ী, ইউক্রেন তার সশস্ত্র বাহিনীর বর্তমান শক্তি—প্রায় ৮ লাখ সেনা—অক্ষুণ্ন রাখবে। যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো ও ইউরোপীয় দেশগুলো ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫-এর আদলে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে। অপরদিকে ইউক্রেন ও ইউরোপের বিরুদ্ধে আগ্রাসন না করার নীতি নিজ দেশের আইনে এবং পার্লামেন্টের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিতে হবে রাশিয়াকে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে ইউক্রেনের জন্য রয়েছে বড় পরিসরের পুনর্গঠন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল পুনর্গঠন, মানবিক সহায়তা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য একাধিক তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার লক্ষ্য প্রায় ৮০০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ। ইউক্রেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পাবে এবং অস্থায়ীভাবে ইউরোপীয় বাজারে বিশেষ সুবিধা ভোগ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার কথাও বলা হয়েছে।

সবচেয়ে জটিল ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ভূখণ্ড প্রশ্ন। রাশিয়া দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহার চায়, অন্যদিকে ইউক্রেন বর্তমান যুদ্ধরেখায় সংঘর্ষ বন্ধের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র এখানে একটি নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চল ও মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব দিয়েছে।

যুদ্ধবন্দীর মতো মানবিক বিষয়ে ‘সবার বিনিময়ে সবার মুক্তি’, আটক বেসামরিক নাগরিক ও শিশুদের ফেরত এবং যুদ্ধাহতদের সহায়তার কথা রয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করবে ইউক্রেন।

এই শান্তিচুক্তি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হবে এবং এর বাস্তবায়ন তদারক করবে একটি ‘পিস কাউন্সিল’, যার সভাপতিত্ব করবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সব পক্ষ একমত হলে সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে—এমনটাই বলা হয়েছে এই ২০ দফা প্রস্তাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত