Ajker Patrika

ভারতের বাজেটে বাংলাদেশে সহায়তার জন্য বরাদ্দ ১২০ কোটি রুপি

আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫: ১৯
ভারতের নতুন অর্থবছরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে বাংলাদেশে সহায়তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১২০ কোটি রুপি। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের নতুন অর্থবছরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে বাংলাদেশে সহায়তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১২০ কোটি রুপি। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট থেকে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে সাহায্যের জন্য ৫ হাজার ৪৮৩ কোটি রুপি বরাদ্দ করেছে। এই অর্থ আগের বছরের ৪ হাজার ৮৮৩ কোটি রুপির তুলনায় সামান্য বেশি। এই তহবিল থেকে বাংলাদেশে সহায়তা দেওয়ার জন্য ভারত বরাদ্দ করেছে মাত্র ১২০ কোটি রুপি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

নতুন অর্থবছরের বাজেটে ভারত সরকার দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য মোট ২০ হাজার ৫১৬ কোটি রুপি বরাদ্দ করেছে। এবারের বাজেটে ভারতের ‘প্রতিবেশীই সবার আগে’ নীতির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বৈদেশিক সহায়তার জন্য বরাদ্দ করা মোট তহবিলের ৬৪ শতাংশ, অর্থাৎ ৪ হাজার ৩২০ কোটি রুপি প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এর আওতায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, আবাসন, সড়ক, সেতু এবং সমন্বিত চেকপোস্টের মতো বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।

ভারতের ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ভুটান দিল্লির সর্বোচ্চ বিদেশি সহায়তা পাওয়ার দেশের অবস্থান ধরে রেখেছে। এই বছর ভারত ভুটানকে ২ হাজার ১৫০ কোটি রুপির সহায়তা দেবে বলে নির্ধারণ করেছে। গত বছর দিল্লি ভুটানের জন্য বরাদ্দ করেছিল ২ হাজার ৬৮ কোটি রুপি।

ভারতের আরেক প্রতিবেশী মালদ্বীপের জন্য আগের বছর বরাদ্দ ছিল ৪০০ কোটি রুপি। এবার তা বেড়ে ৬০০ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর চীনপন্থী অবস্থানের কারণে সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হলেও বর্তমানে মালদ্বীপ ভারত-সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে। ২০২৪ সালের শুরুতে ভারত মালদ্বীপ থেকে সামরিক সদস্যদের প্রত্যাহার করে। তবে, চলতি মাসের শুরুতে মালদ্বীপের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঘাসসান মামুনের ভারত সফরের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চলছে।

ভুটান-মালদ্বীপে বাড়লেও আরেক প্রতিবেশী আফগানিস্তানের জন্য সহায়তা গত বছরের ২০০ কোটি রুপি থেকে কমিয়ে চলতি অর্থবছরে ১০০ কোটি রুপি নির্ধারণ করা হয়েছে। টানা দুই বছর ধরে আফগানিস্তানে ভারত সহায়তার জন্য বরাদ্দ কমাচ্ছে। তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিলেও ভারত দেশটিতে মানবিক সহায়তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার আওতায় সীমিত সম্পর্ক বজায় রেখেছে।

চলতি বছরের শুরুর দিকে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি দুবাইয়ে তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসার পর এটি ভারত-আফগানিস্তান সম্পর্কের সর্বোচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ। আলোচনায় বাণিজ্য ও ইরানের চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে পাকিস্তান এড়িয়ে বিকল্প বাণিজ্য পথ গড়ে তোলার বিষয়ে আলোচনা হয়।

মিয়ানমারে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ২৫০ কোটি রুপির অর্থ সহায়তা বরাদ্দ করেছিল ভারত। এবার দেশটির জন্য ৩৫০ কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে। দেশটির অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রেক্ষাপটে এই সহায়তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়া, ভারত সরকার ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে চলাচলের নিয়ম কঠোর করেছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, উভয় দেশের নাগরিকদের জন্য বিনা মূল্যে চলাচলের সীমা ১৬ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে ১০ কিলোমিটার করা হয়েছে।

এ ছাড়া, নেপালের জন্য বরাদ্দ অপরিবর্তিত রেখে ৭০০ কোটি রুপিই রাখা হয়েছে। শ্রীলঙ্কার জন্য সহায়তা ২৪৫ কোটি রুপি থেকে বাড়িয়ে ৩০০ কোটি রুপি নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের জন্য সহায়তা ১২০ কোটি রুপিতে অপরিবর্তিত রয়েছে। ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার সরকার অপসারিত হওয়ার পর থেকে ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। শেখ হাসিনাকে ভারত রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে, আর ঢাকার মুহাম্মদ ইউনূস-নেতৃত্বাধীন সরকার তার প্রত্যাবর্তনের দাবি জানিয়েছে।

আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য বরাদ্দ ২০০ কোটি রুপি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২২৫ কোটি রুপি নির্ধারিত হয়েছে। ২০২৩ সালে ভারত জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করার সময় আফ্রিকান ইউনিয়নকে জি২০-তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। লাতিন আমেরিকার জন্য সহায়তা ৩০ কোটি রুপি থেকে বাড়িয়ে ৬০ কোটি রুপি করা হয়েছে। গত বছর, ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পবিত্র মার্ঘেরিতা মেক্সিকো, গ্রেনাডা, বার্বাডোস এবং অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা সফর করেন, যা ভারত ও লাতিন আমেরিকার সম্পর্ক গভীর করার প্রতিফলন।

সরাসরি অর্থ সহায়তার পাশাপাশি ভারত তার ‘সফট পাওয়ার’ কূটনীতিও বাড়াচ্ছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনসের (আইসিসিআর) জন্য বরাদ্দ ৩৫১ কোটি রুপি করা হয়েছে। গত বছর বরাদ্দ ছিল ৩৩১ কোটি রুপি। এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১ হাজার ২৪৭ কোটি রুপি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এবার জোহানেসবার্গের পানশালায় বন্দুকধারীদের গুলি, নিহত ৯

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ২৯
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের উপকণ্ঠের বেকার্সডাল এলাকায় বন্দুকধারীদের গুলিতে অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছে। ছবি: এএফপি
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের উপকণ্ঠের বেকার্সডাল এলাকায় বন্দুকধারীদের গুলিতে অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছে। ছবি: এএফপি

দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের উপকণ্ঠে একটি এলাকায় বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত এবং ১০ জন আহত হয়েছে। আজ রোববার পুলিশ এই তথ্য জানিয়েছে। চলতি ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকায় এটি দ্বিতীয় বড় ধরনের গোলাগুলির ঘটনা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, পুলিশ প্রথমে ১০ জন নিহতের কথা বললেও পরে সংখ্যাটি সংশোধন করে ৯ জনের কথা জানায়। জোহানেসবার্গ থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বেকার্সডাল এলাকায় এই হামলার উদ্দেশ্য এখনো পরিষ্কার নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা রাস্তায় সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচার গুলি চালিয়েছে।’ বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, হামলাকারীরা দুটি গাড়িতে করে এসে প্রথমে একটি পানশালার ক্রেতাদের ওপর গুলি ছোড়ে এবং পালানোর সময়ও পথে যাকে পেয়েছে, তাকেই লক্ষ্য করে গুলি চালায়।

প্রাদেশিক পুলিশের কমিশনার মেজর জেনারেল ফ্রেড কেকানা জানিয়েছেন, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে অনলাইন গাড়ি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের একজন চালকও রয়েছেন, যিনি ওই সময় পানশালার বাইরে অবস্থান করছিলেন। পুলিশ জানায়, হামলাকারীদের ধরতে চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বড় কয়েকটি সোনার খনির কাছে দরিদ্র এলাকা বেকার্সডালের একটি অনানুষ্ঠানিক পানশালার পাশে এই গুলির ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তিদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

দক্ষিণ আফ্রিকা বর্তমানে সংগঠিত অপরাধী চক্র এবং দুর্নীতির এক ভয়াবহ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে গোলাগুলি এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত গ্যাংস্টারদের সংঘাত এবং অনানুষ্ঠানিক ব্যবসাগুলোর মধ্যকার প্রতিযোগিতার কারণেই এই সহিংসতা বাড়ছে, যা দেশটিকে বিশ্বের সর্বোচ্চ খুনের হারের তালিকায় ঠেলে দিয়েছে।

এর আগে ৬ ডিসেম্বর রাজধানী প্রিটোরিয়ার কাছে একটি হোটেলে বন্দুকধারীরা হামলা চালিয়ে তিন বছরের এক শিশুসহ ১২ জনকে হত্যা করে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই স্থানে অবৈধভাবে মদ বিক্রি করা হতো। সে সময় পুলিশের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার আথলেন্দা ম্যাথে বলেন, ‘ওই হোটেলে একদল লোক মদ্যপান করছিল। হঠাৎ তিনজন অজ্ঞাত বন্দুকধারী সেখানে প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে।’

তিনি নিশ্চিত করেন, ২৫ জনকে গুলি করা হয়েছিল। এর মধ্যে ঘটনাস্থলেই ১০ জন এবং হাসপাতালে আরও একজন মারা যায়। আহত ১৪ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১২ বছর বয়সী একটি ছেলে এবং ১৬ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ২১
ইসরায়েলি কারাগারে দেশটির মন্ত্রী ইতামার বেন–গভিরের উপস্থিতিতে নির্যাতন করা হয় ফিলিস্তিনিদের। ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েলি কারাগারে দেশটির মন্ত্রী ইতামার বেন–গভিরের উপস্থিতিতে নির্যাতন করা হয় ফিলিস্তিনিদের। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের বন্দিশিবিরে ফিলিস্তিনি কয়েদিদের ওপর কেমন অকথ্য নির্যাতন আর যৌন নিগ্রহ চলছে, তার প্রমাণ মিলল দুজনের অভিজ্ঞতায়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁরা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক বিভিন্ন প্রতিবেদনে বন্দী নির্যাতনের যে হাড় হিম করা বিবরণ উঠে এসেছে, তাঁরা নিজেরাই তার শিকার।

গত মাসে জাতিসংঘের কমিটি অ্যাগেইনস্ট টর্চার তাদের গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়েছিল। তাদের মতে, ইসরায়েলি জেলগুলোতে ফিলিস্তিনি বন্দীদের ওপর যে সুপরিকল্পিত এবং ব্যাপক নির্যাতন চলছে, তা এখন কার্যত ‘রাষ্ট্রীয় নীতিতে’ পরিণত হয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েলে হামলার পর থেকে এই পরিস্থিতির ভয়াবহতা বেড়েছে বহুগুণ। ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংগঠনগুলোও একে একটি ‘পদ্ধতিগত’ প্রথা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ইসরায়েল অবশ্য সরকারিভাবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। কিন্তু অধিকারকর্মীদের দাবি, ৭ অক্টোবরের সেই রক্তক্ষয়ী হামলা আর গাজায় আটকে থাকা জিম্মিদের দুরবস্থা নিয়ে ইসরায়েলি নাগরিকদের ভেতর যে তীব্র আক্রোশ জন্মেছে, তার সুযোগ নিচ্ছে ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষ। একধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি সেখানে জেঁকে বসেছে, বিশেষ করে যারা হামাসকে সামান্যতম সমর্থন জুগিয়েছে, তাদের ওপর নেমে আসছে পৈশাচিক নিগ্রহ।

গত বছর একটি সামরিক কারাগারের সিসিটিভি ফুটেজ ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়। সেখানে দেখা যায়, গাজার এক ফিলিস্তিনি ব্যক্তিকে রক্ষীরা যৌন নির্যাতন করছে। সেই ঘটনায় ইসরায়েলি সামরিক ও রাজনৈতিক মহলে ছি ছি রব পড়ে যায়, পদত্যাগ করেন বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা।

৪৬ বছরের সামি আল-সাইয়ি এখন একটি আসবাবপত্রের দোকানে কাজ করেন। কিন্তু একসময় তাঁর পরিচয় ছিল অন্য। অধিকৃত পশ্চিম তীরের তুলকারেম শহরে তিনি সাংবাদিকতা করতেন। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ইসরায়েলি সেনারা তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর অপরাধ? তিনি বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে হামাস বা অন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করে দিতেন।

ইসরায়েলি কারাগারে যৌন নির্যাতনের শিকার সামি আল-সাইয়ি। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
ইসরায়েলি কারাগারে যৌন নির্যাতনের শিকার সামি আল-সাইয়ি। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

কোনো চার্জশিট বা অভিযোগ ছাড়াই সামিকে ১৬ মাস বন্দী করে রাখা হয়। ইসরায়েলের কুখ্যাত ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ডিটেনশন’ বা প্রশাসনিক আটক ব্যবস্থার জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে এ বছরের গ্রীষ্মে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। উত্তর ইসরায়েলের মেগিদ্দো কারাগারে থাকাকালে ২০২৪ সালের ১৩ মার্চ তাঁর ওপর যে অকথ্য নির্যাতন চলে, তার বিবরণ দিতে গিয়ে সামির গলা বন্ধ হয়ে আসে।

সামি জানান, রক্ষীরা তাঁকে বিবস্ত্র করে একটি ব্যাটন বা লাঠি দিয়ে ধর্ষণ করে। রক্ষণশীল ফিলিস্তিনি সমাজে এমন নির্যাতনের কথা স্বীকার করা সামাজিকভাবে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, তা জেনেও তিনি মুখ খুলেছেন। সামি বলেন, ‘সেখানে পাঁচ-ছয়জন রক্ষী ছিল। তারা অট্টহাসি দিচ্ছিল। এক রক্ষী আমাকে টিটকারি দিয়ে জিজ্ঞেস করল—‘কেমন লাগছে? মজা পাচ্ছো তো? দাঁড়াও, তোমার বউ, বোন, মা আর বন্ধুদেরও এখানে নিয়ে আসব, তাদের সঙ্গেও খেলব আমরা।’

যন্ত্রণায় কুঁকড়ে থাকা সামি তখন মনে মনে শুধু মৃত্যু কামনা করছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘আমার কেবলই মনে হচ্ছিল, মরে গেলেই তো সব শেষ হয়ে যায়। সেই ব্যাটন দিয়ে ধর্ষণের শারীরিক যন্ত্রণার চেয়েও মনের ভেতর যে ধিক্কার জন্মাচ্ছিল, তা সহ্য করা কঠিন ছিল। সঙ্গে ছিল জান্তব নির্যাতন।’

প্রায় ২০ মিনিট ধরে চলা সেই নারকীয় উল্লাসের সময় রক্ষীরা তাঁর যৌনাঙ্গেও প্রচণ্ড আঘাত করেছিল। সামি জানান, জেলের ভেতরে মারধর চলত প্রায় প্রতিদিন, তবে যৌন নিগ্রহ করা হয়েছিল ওই একবার। বিবিসি ইসরায়েল প্রিজন সার্ভিসের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে, তারা একটি দায়সারা বিবৃতি পাঠায়। সেখানে বলা হয়, তারা আইন মেনেই বন্দীদের দেখাশোনা করে এবং সামির এসব অভিযোগ সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। এমনকি এই ঘটনার কোনো তদন্ত হয়েছে কি না বা সামির কোনো চিকিৎসা-সংক্রান্ত নথি আছে কি না, সেসব প্রশ্নেও তারা নীরব থেকেছে।

ইসরায়েলি কারারক্ষীরা আহমেদকে চরমভাবে যৌন নিগ্রহ করে। লজ্জায় ও ক্ষোভে আহমেদ তাঁর মুখ প্রকাশ করতে চাননি। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
ইসরায়েলি কারারক্ষীরা আহমেদকে চরমভাবে যৌন নিগ্রহ করে। লজ্জায় ও ক্ষোভে আহমেদ তাঁর মুখ প্রকাশ করতে চাননি। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

বন্দী নির্যাতনের অভিযোগ অবশ্য নতুন কিছু নয়। তবে সম্প্রতি সদে তিমান সামরিক কারাগারের একটি ঘটনা গোটা ইসরায়েলকে বিভক্ত করে দিয়েছে। ২০২৪ সালের আগস্টে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গাজার এক বন্দীকে ধারালো কোনো বস্তু দিয়ে যৌন নির্যাতন করা হচ্ছে। এতে ওই ব্যক্তির মলদ্বার মারাত্মকভাবে জখম হয়।

এই ঘটনায় পাঁচজন ইসরায়েলি রিজার্ভ সেনার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। গত মাসে তারা টেলিভিশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকও করে, যেখানে চারজন সেনা কালো মুখোশ পরে এসেছিল। কেবল একজন তার মুখোশ খুলে বলে, তার কোনো ভয় নেই। তারা সবাই নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করে।

এই ভিডিওটি ফাঁস করেছিলেন খোদ ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ আইনজীবী মেজর জেনারেল ইফাত তোমের-ইয়েরুশালমি। পরে অবশ্য তিনি পদত্যাগ করেন। তিনি বলেছিলেন, বন্দীদের নিয়ে যারা মিথ্যে প্রচারণা চালাচ্ছে, তাদের স্বরূপ উন্মোচনের জন্যই তিনি এটা করেছিলেন।

তবে এই ঘটনা নিয়ে ইসরায়েলি রাজনীতির অন্দরমহলে এখন অন্য হাওয়া বইছে। কট্টর-ডানপন্থীরা ওই অভিযুক্ত পাঁচ সেনার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করছে। এমনকি পার্লামেন্ট বা নেসেটেও এই নিয়ে হয়েছে তুলকালাম। লিকুদ পার্টির নেতা হ্যানোক মিলউইডস্কিকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো, বন্দীকে ধর্ষণ করা কি কোনোভাবেই বৈধ হতে পারে? তিনি তখন চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘চুপ করো! হামাসের ওই খুনিদের (নুখবা) ওপর সবকিছুই বৈধ। সবকিছুই জায়েজ।’

এক জনমত জরিপেও উঠে এসেছে এক ভয়ংকর তথ্য। অধিকাংশ ইসরায়েলি নাগরিক মনে করেন, গাজার বন্দীদের ওপর নির্যাতন চালালেও সৈন্যদের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত করা উচিত নয়।

পশ্চিম তীরের বাসিন্দা আহমেদ (ছদ্মনাম) ১১ সন্তানের বাবা। ৭ অক্টোবরের হামলার সমর্থনে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেওয়ার অপরাধে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিচারে তাঁর এক বছরের জেল আর ৩ হাজার শেকেল জরিমানা হয়। মুক্তির পর তিনি শুনিয়েছেন এক অকল্পনীয় লাঞ্ছনার কথা।

আহমেদ বলেন, ‘তিনজন রক্ষী আমাকে বাথরুমে নিয়ে গেল। পুরো নগ্ন করে আমাকে মেঝেতে শুইয়ে দিল। একজন বিশালদেহী রক্ষী আমার মাথার ওপর দাঁড়িয়ে ছিল, পাছে আমি নড়াচড়া করি। তারপর আমি শুনলাম কেউ একজন একটা কুকুরের সঙ্গে কথা বলছে। কুকুরটার নাম তারা রেখেছিল মেসি।’

আহমেদ এরপর যা বর্ণনা করলেন, তা যেকোনো সভ্য মানুষকে শিউরে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। রক্ষীরা সেই কুকুরটিকে আহমেদের ওপর লেলিয়ে দিয়ে তাঁকে যৌন লাঞ্ছনা ও অপমানিত করে। আহমেদ বলেন, ‘আমি যত চিৎকার করছিলাম, তারা তত বেশি আমাকে মারছিল। আমি প্রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম।’ মুক্তি পাওয়ার ১২ দিন আগে এই ঘটনাটি ঘটেছিল। আহমেদ জানিয়েছেন, তাঁর কাছে কোনো মেডিকেল রিপোর্ট নেই। কারণ, কারাগারের ভেতরে তাদের কোনো চিকিৎসা দেওয়া হতো না।

বর্তমানে ইসরায়েলি কারাগারগুলোতে বন্দী ফিলিস্তিনির সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, যা ৭ অক্টোবরের আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এদের অনেকের বিরুদ্ধেই কোনো আনুষ্ঠানিক চার্জশিট নেই। জাতিসংঘের রিপোর্টে হামাসের হামলার যেমন নিন্দা করা হয়েছে, তেমনি গভীর উদ্বেগ জানানো হয়েছে ইসরায়েলের গাজায় চালানো হত্যাযজ্ঞ ও বন্দী নির্যাতনের বিষয়ে।

অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘ন্যায়বিচারের দুয়ার বন্ধ’, রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিতে বললেন ইমরান খান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৩৩
পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইমরান খান । ছবি: এফপি
পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইমরান খান । ছবি: এফপি

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ও দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ন্যায়বিচার পাওয়ার সব দুয়ারই যখন রুদ্ধ, তখন প্রতিবাদের রাজপথই দলের একমাত্র ভরসা। তাই তিনি কর্মী-সমর্থকদের রাজপথের আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের খবরে বলা হয়েছে, তোশাখানা-২ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবিকে ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়ার পর শনিবার ইসলামাবাদে খাইবার পাখতুনখাওয়া হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে পিটিআই মহাসচিব সালমান আকরাম রাজা এই বার্তা পৌঁছে দেন।

সাংবাদিকদের রাজা জানান, দলের আইনজীবীদের তথ্যমতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, আসন্ন বিচারকাজের জন্য জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে আদালতকক্ষে এমনকি পরিবারের সদস্যদের প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং বিচারকেরা দূর থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে হাজিরা দেবেন।

তিনি বলেন, আদালতের বিদ্যমান আদেশে ইমরান খানের জন্য উন্মুক্ত ও সুষ্ঠু বিচারের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছিল, অথচ মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার তাঁর নির্ধারিত সাক্ষাৎগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পিটিআই প্রতিষ্ঠাতাকে নিয়মিত সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে সরকারের যে দাবি, তাকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন রাজা।

রাজার ভাষ্যমতে, খান বলেছেন তিনি নিজের অবস্থান থেকে ‘একচুলও’ নড়বেন না এবং প্রয়োজনে শাহাদাত বরণ করতে হলেও মানুষের মুক্তির জন্য তিনি প্রস্তুত। খানকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘বিচারের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে, আদালতের শুনানি হচ্ছে না এবং ন্যায়বিচার এখন আর নাগালের মধ্যে নেই; তাই প্রতিবাদই একমাত্র পথ।’

তিনি আরও জানান, পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা সব রাজবন্দী, বিশেষ করে নারীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন এবং জোর দিয়ে বলেছেন—জনগণকে এখন তাদের অধিকার আদায়ে রুখে দাঁড়াতে হবে। এদিন ইমরান খান তাঁর আইনজীবী সালমান সাফদারের সঙ্গে স্বল্প সময়ের জন্য সাক্ষাৎ করেছেন বলেও নিশ্চিত করেন রাজা। তাঁর অভিযোগ, রায় দেওয়া হয়েছে খানের অনুপস্থিতিতে এবং তাঁর আইনজীবী দলের কাউকে উপস্থিত থাকার সুযোগ না দিয়েই।

রাজা বলেন, পিটিআই প্রতিষ্ঠাতা রাজপথের আন্দোলনের প্রস্তুতির ডাক দিয়েছেন। স্ত্রী বুশরা বিবির কারাদণ্ড নিয়ে তিনি ভীষণ ব্যথিত। তাঁর দাবি, কেবল তাঁর স্ত্রী হওয়ার কারণেই বুশরা বিবিকে জেলে ভরা হয়েছে।

এদিকে শুক্রবার তোশাখানা মামলায় দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রীকে দেওয়া সাজার তীব্র সমালোচনা করেছে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এবং বেশ কয়েকজন বিরোধী দলীয় নেতা। এই রায়কে তাঁরা গভীর অবিচারের দৃষ্টান্ত বলে অভিহিত করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে দলটির পক্ষ থেকে এই রায়কে ‘ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। উল্লেখ করা হয়, রায় ঘোষণার সময় ইমরান খান নাকি আদিয়ালা জেলের ভেতরে স্থাপিত আদালতেই উপস্থিত ছিলেন।

পিটিআই জানিয়েছে, ইমরান খানের পরিবারের সদস্যদের আদালতকক্ষে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। এই রুদ্ধদ্বার বিচারপ্রক্রিয়াকে ‘অবাধ বা সুষ্ঠু কোনোটাই নয়’ বলে অভিহিত করে তারা অভিযোগ করে, এটি কার্যত ছিল ‘মিলিটারি ট্রায়াল’ বা সামরিক বিচার।

পিটিআইয়ের জ্যেষ্ঠ নেতা ওমর আইয়ুব এক্সে লিখেছেন, ‘পাকিস্তানে আইনের শাসন বলে কিছুর অস্তিত্ব নেই।’ বেলুচিস্তান ন্যাশনাল পার্টির প্রধান আখতার মঙ্গল প্রশ্ন তুলেছেন, তোশাখানা-সংক্রান্ত বিষয় বা দেশকে বিভক্ত করার মতো কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রীদের কেন একই পরিণতির মুখোমুখি হতে হয়নি। তিনি বলেন, ‘যাঁরা দেশ ও সংবিধান ভেঙেছেন, তাঁদের গার্ড অব অনার দেওয়া হয়েছে।’ তিনি এই পরিস্থিতিকে ‘অবিচারের স্পষ্ট উদাহরণ’ বলে আখ্যা দেন।

তেহরিক তাহাফ্ফুজ আইন-ই-পাকিস্তানের নেতা আল্লামা নাসির আব্বাস বলেছেন, এই রায় জনগণের অধিকার ও সংসদ উভয়কেই খাটো করেছে। তাঁর অভিযোগ, বিরোধীদের মনোবল ভেঙে দিতেই সরকার এমন অপচেষ্টা চালাচ্ছে। একই দলের নেতা মোস্তফা নওয়াজ খোকার যুক্তি দেন, এই নিপীড়ন কেবল রাজনীতিবিদদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। উদাহরণ হিসেবে তিনি ইমান মাজারি, মতিউল্লাহ জান এবং বিচারপতি জাহাঙ্গীরির আইনি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেন।

পিটিআইয়ের ফেরদৌস শামীম নকভি বলেন, এই রায় বিচারব্যবস্থার ত্রুটিগুলোকে উন্মোচিত করে দিয়েছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দল হয়তো আদালত বর্জনের কথা ভাবতে পারে। তাঁর দাবি, কর্মীদের বিরুদ্ধে ৬৫ হাজার মামলা রয়েছে এবং ‘মিথ্যা রায়গুলো বিপজ্জনক ব্যবধান তৈরি করছে’।

অন্যদিকে তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার এই রায়ের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করার আগে আদালত যথেষ্ট প্রমাণ পর্যালোচনা করেছেন। তাঁর দাবি, ওই দম্পতি দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন এবং রায়টি সুষ্ঠু হয়েছে। তিনি আরও যোগ করেন, ১৯০ মিলিয়ন পাউন্ডের দুর্নীতির মামলায় সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই তোশাখানা মামলায় খানের কারাদণ্ড কার্যকর হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আল জাজিরার প্রতিবেদন /ফিলিস্তিনিদের প্রলোভনে ফেলে গাজা খালি করার মিশনে ইসরায়েলঘনিষ্ঠ ভুয়া সংস্থা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৫২
কিছুদিন আগে মিথ্যা আশ্বাস দেখিয়ে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র ছাড়াই একদল ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠায় এক ভুয়া সংস্থা। যার সঙ্গে আবার ইসরায়েলের যোগ আছে। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
কিছুদিন আগে মিথ্যা আশ্বাস দেখিয়ে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র ছাড়াই একদল ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠায় এক ভুয়া সংস্থা। যার সঙ্গে আবার ইসরায়েলের যোগ আছে। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি নামসর্বস্ব বা ‘শেল’ কোম্পানি গাজার নিরুপায় ফিলিস্তিনিদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়ার কাজে সহায়তা করছে। মানবিক সহায়তার নামে বিপুল অর্থের বিনিময়ে দেশত্যাগে প্ররোচিত করার এই প্রক্রিয়াকে ভূখণ্ডটি থেকে পরিকল্পিতভাবে ‘জাতিগত নিধনের’ অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক অনুসন্ধানে গত মাসে গাজা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৫৩ জন যাত্রী নিয়ে যাওয়া রহস্যময় ফ্লাইটের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এতে দেখা যায়, ‘আল-মাজদ ইউরোপ’ নামের একটি অনিবন্ধিত ফ্রন্ট অর্গানাইজেশন এই কাজের নেপথ্যে রয়েছে। যারা ভুয়া মানবিক সহায়তার দাবি করে আসছিল।

গত ১৩ নভেম্বর এই ফিলিস্তিনিরা জোহানেসবার্গ ও প্রিটোরিয়ার ওআর তাম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। তাদের পাসপোর্টে ইসরায়েলের কোনো ডিপারচার বা বহির্গমন সিল না থাকায় দক্ষিণ আফ্রিকার সীমান্ত পুলিশ তাদের প্রবেশাধিকার দিতে অস্বীকার করে। ১২ ঘণ্টা উড়োজাহাজে আটকে থাকার পর অবশেষে তাদের নামার অনুমতি দেওয়া হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা ‘মানবিক কারণে’ তাদের গ্রহণের কথা স্বীকার করলেও জানান, তাঁর সরকার বিষয়টি তদন্ত করবে। দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের সমর্থক হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের সন্দেহ, এই লোকগুলোকে গাজা উপত্যকা থেকে পরিকল্পিতভাবে ‘বের করে দেওয়া’ হয়েছে।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এর আগে প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন, তাঁরা ফিলিস্তিনিদের গাজা ত্যাগের বিষয়টিকে ‘স্বেচ্ছা হিজরত’ হিসেবে সমর্থন করেন। তবে বাস্তবে এটি জোরপূর্বক উচ্ছেদ ছাড়া আর কিছুই নয়। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা ফিলিস্তিনিদের গাজা ত্যাগে উৎসাহিত করতে একটি বিতর্কিত ব্যুরো গঠন করে, যার প্রধান করা হয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপপরিচালক ইয়াকভ ব্লিটস্টাইনকে। সে সময় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ দাবি করেছিলেন, গাজার ৪০ শতাংশ বাসিন্দা ‘দেশত্যাগে আগ্রহী’।

এর ঠিক আগের মাসে আল-মাজদ ইউরোপ তাদের ওয়েবসাইট চালু করে। সেখানে বলা হয়, তারা মুসলিম দেশগুলোতে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে এবং বিশেষ করে ‘গাজাবাসীদের গাজা থেকে বের হতে’ সাহায্য করছে। তারা গাজায় ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্য ক্লিনিক এবং ফিলিস্তিনি চিকিৎসকদের বিদেশ ভ্রমণের ব্যবস্থা করার মিথ্যা দাবিও করে।

দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়া সেই ফ্লাইটের এক যাত্রী নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, অনলাইনে লিংক পেয়ে তিনি এই সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। সংস্থাটি শুধু গাজা থেকে বের হওয়ার পথই নয়, নিরাপত্তা ও চিকিৎসার আশ্বাসও দিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘শুরুতে তারা বলেছিল এটি ফ্রি। এরপর জনপ্রতি ১ হাজার ৪০০ ডলার চাইল। শেষ পর্যন্ত সেই দাম ২ হাজার ৫০০ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল।’

আল জাজিরার সংগ্রহ করা সাক্ষ্য প্রমাণে দেখা গেছে, জনপ্রতি ১ হাজার থেকে ২ হাজার ডলার পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে। যাত্রীদের গোপনীয়তা বজায় রাখার কঠোর শর্ত দেওয়া হয়েছিল এবং ফ্লাইটের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে বিস্তারিত জানানো হতো।

যাত্রীরা জানিয়েছে, তাদের দক্ষিণ গাজার কারেম আবু সালেম (ইসরায়েলে যেটিকে কেরেম শালম বলা হয়) ক্রসিংয়ে যেতে বলা হয়েছিল। সেখানে পৌঁছানোর পর তাদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়া হয় এবং ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বাসে করে ইলাত শহরের কাছে র‍্যামন বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকার সমাজকর্মী নাইজেল ব্রাঙ্কেন আফ্রিকায় ওই যাত্রীদের সহায়তা করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই অভিযানে ইসরায়েলের জড়িত থাকার স্পষ্ট ছাপ রয়েছে...এটি মানুষকে বাস্তুচ্যুত করার একটি প্রক্রিয়া।’ উদ্বাস্তুরা জানায়, ফ্লাইটে ওঠার আগমুহূর্ত পর্যন্ত তারা জানত না তাদের গন্তব্য কোথায়।

ফ্লাইইউ নামক একটি নতুন এয়ারলাইনসের বিমানে তাদের তোলা হয়, যদিও তাদের নথিপত্রে কোনো বহির্গমন সিল ছিল না। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই এয়ারলাইনসটি ইসরায়েলি বিমানবন্দর থেকে রোমানিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও কেনিয়ার মতো দেশগুলোতে এমন আরও অনেক ফ্লাইট পরিচালনা করেছে।

আল-মাজদ ইউরোপ নিজেদের ২০১০ সালে জার্মানিতে প্রতিষ্ঠিত একটি মানবিক ফাউন্ডেশন হিসেবে দাবি করে, যাদের প্রধান কার্যালয় অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জারাহ এলাকায়। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে এটি একটি প্রতারণা। জার্মানি বা ইউরোপের কোনো ডেটাবেসে এই নামে কোনো কোম্পানির অস্তিত্ব নেই। জেরুজালেমের নথিতেও তাদের দেওয়া ঠিকানার কোনো হদিস মেলেনি; গুগল ম্যাপে ওই স্থানে একটি হাসপাতাল ও ক্যাফে দেখা গেছে।

অনুসন্ধানে এই সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই ফিলিস্তিনি মুখ শনাক্ত করা হয়েছে। একজন মুয়াদ হিশাম সাইদাম, যাকে গাজায় সংস্থাটির মানবিক প্রকল্পের ম্যানেজার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। দেখা গেছে, ২০২৪ সালের মে মাসে তাঁর স্ত্রী দেশত্যাগের সাহায্যের জন্য অনলাইনে আবেদন করেছিলেন। এক বছর পর সাইদাম একটি রোমানিয়ান বিমানে ওঠার ছবি পোস্ট করে জানান তিনি গাজা ছাড়ছেন।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তিনি সম্ভবত ২০২৫ সালের ২৭ মে র‍্যামন বিমানবন্দর থেকে বুদাপেস্টের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, তাঁর পরিবার বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ায় আছে, তবে আল-মাজদ ইউরোপের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের বিষয়টি অস্পষ্ট। দ্বিতীয় ব্যক্তির নাম কেবল ‘আদনান’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যার কোনো ডিজিটাল উপস্থিতি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

১৩ নভেম্বর জোহানেসবার্গ ফ্লাইটের দিনই আল-মাজদ তাদের ওয়েবসাইট থেকে অংশীদার কোম্পানিগুলোর একটি তালিকা মুছে ফেলে। আল জাজিরা সেটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। সেখানে রেডক্রসের মতো প্রথিতযশা সংস্থার নাম থাকলেও একটি নাম নজর কাড়ে—‘ট্যালেন্ট গ্লোবাস।’ ২০২৪ সালে এস্তোনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত এই রিক্রুটিং কোম্পানির তহবিলে ছিল মাত্র ৩৫০ ডলার। এর পরিচালক টম লিন্ড একজন ইসরায়েলি ও এস্তোনীয় নাগরিক।

ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজের রিপোর্টেও টম লিন্ডের নাম এসেছে গাজা ত্যাগের ফ্লাইটের সমন্বয়ক হিসেবে। ২০২৫ সালের মে মাসে লিন্ড দাবি করেন, তিনি ‘ফিলিস্তিনিদের মানবিক সহায়তায়’ মনোনিবেশ করেছেন এবং অনেক মানুষকে গাজা থেকে সরাতে সাহায্য করেছেন। তবে তাঁর কোম্পানির অন্য তিন কর্মীর ছবি ইন্টারনেটে পাওয়া ‘স্টক ইমেজ’ বা ভুয়া ছবি হিসেবে শনাক্ত হয়েছে।

আল-মাজদ ইউরোপ আসলে একটি ভুয়া মানবিক সংস্থা। প্রশ্ন উঠেছে, এই আড়ালে তারা আসলে কী লুকাতে চাইছে? প্রকাশ্যে ইসরায়েল ‘স্বেচ্ছা হিজরত’ পরিকল্পনা থেকে পিছু হটার কথা বললেও আল জাজিরার অনুসন্ধান বলছে ভিন্ন কথা। এই গোপন ফ্লাইটগুলো কি গাজাকে জনশূন্য করার কোনো বড় পরিকল্পনারই অংশ?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত