Ajker Patrika

রাশিয়ার ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্রের সামনে পাত্তাই পাচ্ছে না ইউক্রেনে মার্কিন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ০৬
রাশিয়ার ইস্কান্দার–এম ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার ইস্কান্দার–এম ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার ইস্কান্দার-এম ক্ষেপণাস্ত্রে নতুন নতুন কৌশল যোগ করা হয়েছে। ফলে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা এখন ভিতুর মতো হার মানছে। এমনকি দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও একে ধরতে পারছে না কার্যকরভাবে। এই ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানোর ক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সাফল্য মাত্র ৬ শতাংশ।

আমেরিকান কনজারভেটিভের সাংবাদিক অ্যান্ড্রু ডে কিয়েভ থেকে ফিরে জানিয়েছেন, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা এতটা অনিশ্চিত যে ‘প্রায় নেই বললে চলে’। তিনি বলেছেন, রাতের আঁধারে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের স্রোত এলে ন্যাটো প্রদত্ত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কখনো চালু হয়, কখনো হয় না। এই পর্যবেক্ষণ সামরিক প্রতিবেদনের সঙ্গে মিলে যায়। সেপ্টেম্বরের পর থেকে ইউক্রেনের পশ্চিমা সরবরাহকৃত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার কার্যকারিতা ৩৪ শতাংশ থেকে নেমেছে প্রায় ৬ শতাংশে কিংবা তারও নিচে।

বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া এমআইএম-১০৪ প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রুশ ৯কে৭২০ ইস্কান্দার-এম এবং এই জাতীয় অন্যান্য ব্যবস্থাকে ঠেকাতে গিয়ে রীতিমতো কাঁপছে। এখানে অনেক কারিগরি ও কৌশলগত কারণ কাজ করছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফ্রন্টলাইন প্রায় এক বছর ধরে স্থবির। কিন্তু দুই পক্ষই দ্রুত কৌশল ও প্রযুক্তি বদলাচ্ছে। দুই পক্ষ একে অন্যের দুর্বলতা খুঁজে বের করে তা কাজে লাগাতে চায়। রাশিয়ার পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখন পর্যন্ত বেশি ফল দেওয়ায় তারা সুবিধা পাচ্ছে বেশি।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্রের ফ্লাইট বা উড্ডয়নরত অবস্থায় এর গতিপথ বদলে দিচ্ছে রাশিয়া। সরল ব্যালিস্টিক ট্রাজেক্টরি না রেখে এখন ‘কোয়াসি-ব্যালিস্টিক’ গতিপথে এগোয় ক্ষেপণাস্ত্রগুলো। মাঝপথে ক্ষেপণাস্ত্রের গতি ধীর হয়ে যেতে পারে, দিক পরিবর্তন করতে পারে, খাড়া তীব্রভাবে নিচে নামতে পারে বা একদম শেষ পর্যায়ে এসে আচমকা ম্যানুভার করে টার্গেটের দিকে যেতে পারে।

প্যাট্রিয়ট সিস্টেম এবং অন্য পশ্চিমা সামরিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মূলত কোনো টার্গেটের সম্ভাব্য ফ্লাইট অনুমান করে সেটি লক করে আক্রমণ ঠেকিয়ে দেয়। কিন্তু কোনো লক্ষ্যবস্তু গতিপথ হঠাৎ পাল্টালে প্রতিরক্ষার সফটওয়্যার ও ইন্টারসেপ্টরগুলোর জন্য তা ধরার সময় এই সিস্টেমের থাকে না। ফলে ইস্কান্দারের মতো হাই-টেক ক্ষেপণাস্ত্র এমন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সফলভাবে লক্ষ্য ভেদ করতে ব্যর্থ হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি ইউনিট। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি ইউনিট। ছবি: সংগৃহীত

কোনো কোনো প্রতিবেদন বলছে, রুশ প্রকৌশলীরা ইস্কান্দার-এম-এ এমন রাডার-ডিকয় ডিভাইস বসিয়েছেন, যা শেষ মুহূর্তে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভুয়া রাডার সিগন্যাল ফেরত দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করে। এতে ভূমিতে থাকা আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার রাডার ও ট্র্যাকিং সফটওয়্যার বিভ্রান্ত হয়। ইন্টারসেপ্টর ভুয়া সংকেতের দিকে রকেট/ক্ষেপণাস্ত্র পাঠালে বিপক্ষের মূল ক্ষেপণাস্ত্র সহজে লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।

আরও এক সমস্যা হলো, ইস্কান্দারের একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে হঠাৎ নিচে দ্রুতগতিতে নামতে থাকার বা ম্যানুভার করার কৌশল। এই আচরণ প্যাট্রিয়ট ব্যাটারির রাডার আর সেন্সরগুলোর ফাঁকফোকরকে কাজে লাগায়। ফলে প্রথমবার শনাক্তকরণের পর থেকে প্রতিক্রিয়া জানানোর সময়; অর্থাৎ টার্গেট ক্ষেপণাস্ত্রের দিকে রকেট পাঠানোর সময় এত কম হয়ে পড়ে যে সফলভাবে আগত ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকানো প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে।

প্রযুক্তিগত বিষয়ের বাইরে রয়েছে পরিমাণগত হিসাব। রাশিয়া ক্রমাগত ইস্কান্দার ও অনুরূপ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে চলেছে। অপর দিকে ইউক্রেন নির্ভরশীল পশ্চিমা, বিশেষত মার্কিন ও ইউরোপের ওপর, যাদের মজুত সীমিত। প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যাটারি ও ইন্টারসেপ্টর সীমিত পরিমাণে দেওয়া হচ্ছে কিয়েভকে।

রাশিয়া এই অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে ইউক্রেনে আক্রমণের কৌশল বুঝে নিয়েছে। তারা একবারে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়লে ইউক্রেনের সীমিত প্রতিরক্ষা বেশির ভাগই আটকাতে পারে না। অতিরিক্ত নতুন কোয়াজি-ব্যালিস্টিক পন্থা ও ডিকয় যোগ হলে সমস্যা আরও বাড়ে। ফলত ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছে।

প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিয়ে তাত্ত্বিকভাবে এখনো কিছু ব্যালিস্টিক লক্ষ্যবস্তু ঠেকানো সম্ভব। কিন্তু রাশিয়ার কৌশল-উন্নয়ন প্রতিরক্ষাব্যবস্থার কার্যকারিতা কমিয়ে দিচ্ছে। ইউক্রেন ও তার মিত্রদের প্রয়োজন আরও ব্যাটারি, আরও ইন্টারসেপ্টর, ভালো রাডার কাভারেজ এবং প্যাট্রিয়ট সিস্টেমের সফটওয়্যার-হার্ডওয়্যার আপগ্রেড।

দুর্ভাগ্যবশত, এসব সহজে মিলছে না। পশ্চিমা প্রতিরক্ষা শিল্পশক্তি এখন এত দুর্বল ও ধীর যে প্রয়োজনীয় সরবরাহ দ্রুত করা যাচ্ছে না। অনেক বিশ্লেষক বলছে—মূল্য, সরবরাহ এবং শিল্পক্ষমতার সীমাবদ্ধতা ইউক্রেনকে কেড়ে নিচ্ছে সময় ও সুযোগ। এই প্রেক্ষাপটে কিয়েভ আমেরিকান টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র চাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের টমাহক পেলে ইউক্রেন দূর থেকে রাশিয়ার ভেতরের টার্গেটে আঘাতের চেষ্টা করবে, যাতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ সম্ভব হয়।

তবে এই কৌশলও সমস্যা পুরোপুরি মিটিয়ে দেবে কি না, সন্দেহ আছে। রাশিয়ার সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রাকৃতিক সুবিধা এবং তাদের সামরিক প্রকৌশল ইউক্রেনের এবং পশ্চিমাদের সীমিত সম্পদকে দ্রুত নির্জীব করে দিচ্ছে। রাশিয়ার এই পরিবর্তনগুলো তুলনামূলক কম ব্যয়বহুল। কিন্তু এগুলো প্রতিহত করতে ইউক্রেনকে বড় বিনিয়োগ, সময় ও সরবরাহ দরকার, যা মিটছে না।

ফলে সামগ্রিক ব্যাখ্যাটি পরিষ্কার—রাশিয়ার ইস্কান্দার-সংক্রান্ত নতুন উদ্ভাবন ও কৌশল ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা কার্যকারিতা তীব্রভাবে কমিয়ে দিচ্ছে। সংখ্যাগত অসাম্য, রাডার বিভ্রান্তি, কোয়াসি-ব্যালিস্টিক ম্যানুভার ও পশ্চিমা অস্ত্রশিল্পের সীমাবদ্ধতা—সব মিলিয়ে প্যাট্রিয়ট সিস্টেম এখন যুদ্ধক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রে নিঃশব্দ দর্শকের মতো।

সূত্র: দ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহরে বোমা ফেলল থাইল্যান্ড

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেত। ছবি: বিবিসি
কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেত। ছবি: বিবিসি

কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেতের কাছে একটি রসদ কেন্দ্র লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালিয়েছে থাইল্যান্ড। পোইপেত শহরটি থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর এবং ক্যাসিনোর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষ থামার কোনো লক্ষণ না দেখানোর মধ্যেই এই হামলার ঘটনা ঘটল।

কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে পোইপেত পৌর এলাকায় থাই বাহিনী দুটি বোমা ফেলেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ডের বিমানবাহিনীর মুখপাত্র এয়ার মার্শাল জ্যাকক্রিট থাম্মাভিচাই জানিয়েছেন, পোইপেতের বাইরে অবস্থিত একটি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে বিএম-২১ রকেট মজুত করা হচ্ছিল। তাঁর দাবি, এই অভিযানে কোনো বেসামরিক নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হননি।

বিবিসি জানিয়েছে, বিএম-২১ রকেট সাধারণত সাঁজোয়া যান থেকে একযোগে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে ব্যবহৃত হয়। পোইপেত শহরে এই ধরনের হামলার ঘটনা চলমান সংঘাতে প্রথম বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই শহরটি থাই জুয়াড়িদের কাছে জনপ্রিয় ক্যাসিনো কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত।

চলতি মাসে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘর্ষে থাইল্যান্ডে অন্তত ২১ জন এবং কম্বোডিয়ায় ১৭ জন নিহত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পাশাপাশি প্রায় ৮ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার থাইল্যান্ড জানিয়েছিল, কম্বোডিয়া সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার থাই নাগরিক পোইপেতে আটকা পড়েছেন। কম্বোডিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সীমান্ত বন্ধকে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেছে এবং জানিয়েছে, দেশ ছাড়ার জন্য আকাশপথ খোলা রয়েছে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার শত বছরের পুরোনো সীমান্ত বিরোধ গত ২৪ জুলাই ভয়াবহ আকার ধারণ করে, যখন কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডে রকেট হামলা চালায় এবং পাল্টা জবাবে থাইল্যান্ড বিমান হামলা শুরু করে। পাঁচ দিনব্যাপী তীব্র লড়াইয়ের পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হলেও সেটি গত সপ্তাহে আবার ভেস্তে যায়। সর্বশেষ দফায় উভয় পক্ষই একে অপরকে সংঘর্ষ পুনরায় শুরুর জন্য দায়ী করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বর্তমান বাংলাদেশ একাত্তরের পর সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ: ভারতের সংসদীয় কমিটি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বর্তমান বাংলাদেশ একাত্তরের পর সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ: ভারতের সংসদীয় কমিটি

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর ভারতের জন্য ‘সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের নেতৃত্বে ভারতের একটি সংসদীয় কমিটি আজ বৃহস্পতিবার সরকারকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এই সতর্কবার্তা দিয়েছে। কমিটি জানিয়েছে, বাংলাদেশে পরিস্থিতি হয়তো ‘বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতায় পর্যবসিত হবে না’, তবে ভারতকে এটি মোকাবিলায় অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে।

সংসদীয় কমিটি তাদের প্রতিবেদনে ১৯৭১ সালের সংকটের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করে বলেছে, ১৯৭১ সালে চ্যালেঞ্জ ছিল অস্তিত্ব রক্ষা, মানবিক সংকট ও একটি নতুন জাতির জন্ম নিয়ে। তবে বর্তমান চ্যালেঞ্জটি আরও গুরুতর এবং এটি একটি ‘প্রজন্মগত বিচ্ছিন্নতা’। রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এবং ভারতের দিক থেকে সরে যাওয়ার সম্ভাব্য কৌশলগত পুনর্বিন্যাস।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতার পেছনে কয়েকটি কারণ একসঙ্গে কাজ করছে—ইসলামপন্থী চরমপন্থার উত্থান, চীন ও পাকিস্তানের প্রভাব বৃদ্ধি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আধিপত্যের পতন।

কমিটি সরকারের কাছে একাধিক সুপারিশ জমা দিয়েছে এবং স্পষ্টভাবে বলেছে, ভারত যদি এই মুহূর্তে নিজেকে নতুন করে মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়, তবে যুদ্ধের কারণে নয়, বরং ‘অপ্রাসঙ্গিক’ হয়ে পড়ার কারণে ঢাকা থেকে কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে।

কমিটি বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক পুনর্গঠন ও চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে, অবকাঠামো উন্নয়ন, বন্দর সম্প্রসারণ ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় চীনের সক্রিয়তার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মোংলা বন্দরের সম্প্রসারণ, লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি ও পেকুয়ায় সাবমেরিন ঘাঁটির উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পেকুয়ার ওই ঘাঁটিতে আটটি সাবমেরিন রাখার সক্ষমতা রয়েছে, যদিও বাংলাদেশের কাছে বর্তমানে মাত্র দুটি সাবমেরিন আছে।

কমিটির মতে, চীন বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গেই যোগাযোগ বাড়াচ্ছে, যার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীও রয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই ইসলামপন্থী দলটির প্রতিনিধিরা সম্প্রতি চীন সফরও করেছেন।

এই প্রেক্ষাপটে কমিটি সুপারিশ করেছে, বাংলাদেশে কোনো বিদেশি শক্তি যাতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। পাশাপাশি উন্নয়ন, যোগাযোগব্যবস্থা ও বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঢাকাকে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে, যা অন্য কোনো দেশ (যেমন চীন) দিতে পারবে না।

বাংলাদেশে ইসলামপন্থী দলগুলোর প্রভাব বাড়ার বিষয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে কমিটি। আগে নিষিদ্ধ থাকা জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরে পাওয়া এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়াকে কমিটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।

অন্যদিকে, ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার ফলে দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। কমিটি মনে করে, আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে নির্বাচন হলে এর ‘গ্রহণযোগ্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্রিপটো চুরি করে এই বছর উত্তর কোরিয়ার আয় ২.২ বিলিয়ন ডলার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

২০২৫ সালে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা রেকর্ড পরিমাণ ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি করেছে। ব্লকচেইন তথ্য বিশ্লেষণ প্ল্যাটফর্ম ‘চেইনঅ্যানালিসিস’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—চলতি বছরে দেশটি অন্তত ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ডিজিটাল সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫১ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে বৈশ্বিক পর্যায়ে সংঘটিত সব ধরনের ক্রিপটো সেবা-সংক্রান্ত হ্যাকিং ঘটনার ৭৬ শতাংশের জন্য উত্তর কোরিয়া দায়ী—ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী—বিভিন্ন ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ, কাস্টডিয়ান এবং ওয়েব ৩ প্রতিষ্ঠানে অনুপ্রবেশ এই রেকর্ড চুরির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে উত্তর কোরিয়ার আইটি কর্মীরা। এসব কর্মী প্রাথমিকভাবে ভেতরে প্রবেশাধিকার তৈরি করে এবং পরে বড় পরিসরের চুরির পথ সুগম করে তোলে। চেইনঅ্যানালিসিস বলছে, এই কৌশল হ্যাকারদের দ্রুত ও কার্যকরভাবে বড় অঙ্কের সম্পদ হাতাতে সহায়তা করছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে ক্রিপটো চুরির মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩.৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে বিখ্যাত ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ বাইবিটে সংঘটিত এক হামলাতেই ১.৫ বিলিয়ন ডলার চুরি হয়ে যায়। বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলার পেছনে ছিল উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া হ্যাকার গ্রুপ ‘লাজারাস’।

চুরি করা অর্থ পাচারের জন্য উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা প্রায়ই চীনের কিছু সেবার ওপর নির্ভর করে। চেইনঅ্যানালিসিস-এর জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান অ্যান্ড্রু ফিয়ারম্যান জানান, এসব চীনা মানি লন্ডারিং নেটওয়ার্ক ইচ্ছাকৃতভাবে অবৈধ অর্থ সাদা করতে সহায়তা করে।

আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে উত্তর কোরিয়া বৈদেশিক আর্থিক ব্যবস্থায় সহজে লেনদেন করতে পারে না। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার আরোপিত নিষেধাজ্ঞা দেশটিকে সামরিক ও অস্ত্র কর্মসূচির অর্থ জোগাড়ে অবৈধ পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে। গবেষকদের মতে, একসময় আদর্শগত উদ্দেশ্যে সাইবার হামলা চালালেও এখন উত্তর কোরিয়ার হ্যাকিং কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আর্থিক লাভ নিশ্চিত করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও ধর্মীয় বক্তাদের দমনে কঠোর হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। ছবি: বিবিসি
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। ছবি: বিবিসি

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদি উৎসবকে লক্ষ্য করে ভয়াবহ বন্দুক হামলার পর দেশটিতে ঘৃণামূলক বক্তব্য ও উগ্রবাদ দমনে কঠোর আইন প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। গত ১৪ ডিসেম্বর ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের হানুক্কাহ উৎসবের প্রথম দিন উপলক্ষে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে দুই বন্দুকধারীর গুলিতে অন্তত ১৫ জন নিহত হন। এই হামলাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে উদ্বেগ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

ক্যানবেরায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী অ্যালবানিজ বলেন, নতুন আইন মূলত যারা ঘৃণা, বিভাজন ও উগ্রবাদ ছড়ায়—তাদের লক্ষ্য করেই আনা হবে। তিনি জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে এমন ব্যক্তিদের ভিসা বাতিল বা প্রত্যাখ্যানের ক্ষমতা দেওয়া হবে, যারা ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রচার করে। পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থায় ইহুদিবিদ্বেষ প্রতিরোধ, মোকাবিলা ও যথাযথ প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।

প্রস্তাবিত আইনের আওতায় সহিংসতা উসকে দেওয়া ধর্মীয় বক্তা ও নেতাদের জন্য শাস্তির বিধান ছাড়াও ‘অ্যাগ্রাভেটেড হেট স্পিচ’ নামে অপরাধের একটি নতুন সংজ্ঞা সংযোজন করা হবে। অনলাইনে হুমকি ও হয়রানির ক্ষেত্রে শাস্তি নির্ধারণে বিদ্বেষ ছড়ানোনে গুরুতর উপাদান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অ্যালবানিজ বলেন, ‘প্রত্যেক ইহুদি অস্ট্রেলিয়ানের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানিত বোধ করার অধিকার রয়েছে।’

এই হামলার পর দেশটিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দক্ষিণ-পশ্চিম সিডনিতে সাতজনকে আটক করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সহিংস কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনার তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। তবে পুলিশ বলছে, বন্ডাই হামলার সঙ্গে এই ঘটনার সরাসরি কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায়নি।

এদিকে সরকারের ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও কিছু সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইহুদি কাউন্সিল অব অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, বন্দুক নিয়ন্ত্রণ ও অনলাইনে বিদ্বেষ ছড়ানোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ প্রশংসনীয় হলেও, কিছু প্রস্তাব ইসরায়েলপন্থী লবির পুরোনো দাবির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা সহিংস উগ্রবাদ দমনের চেয়ে মতপ্রকাশ সীমিত করতে পারে। সংগঠনটির নির্বাহী কর্মকর্তা ড. ম্যাক্স কাইজার সতর্ক করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে মতাদর্শিক নজরদারি চালানো হলে তা ইহুদিদের নিরাপত্তা বাড়ানোর বদলে আরও ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।’

এদিকে প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, গত ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ইহুদিবিদ্বেষ রোধে সরকার আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত। তিনি বলেন, ‘আমার দায়িত্ব শুধু ভুল স্বীকার করা নয়, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করাও।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত