Ajker Patrika

অভিনব কৌশলে রাশিয়ায় ইউক্রেনের ড্রোন হামলা, যুদ্ধবিমানের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত পশ্চিমারাও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ জুন ২০২৫, ১১: ১৯
রাশিয়ার চারটি বিমানঘাঁটিতে হামলা করেছে ইউক্রেন। ছবি: স্ক্রিনশট
রাশিয়ার চারটি বিমানঘাঁটিতে হামলা করেছে ইউক্রেন। ছবি: স্ক্রিনশট

গতকাল ১ জুন দুপুরের পরপরই রাশিয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এক অভূতপূর্ব চাঞ্চল্য দেখা যায়। ইউক্রেন রাশিয়ার ভূখণ্ডে এ যাবৎকালের সবচেয়ে দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করেছে। যেই ঘটনাকে বিশ্বকে হতবাক করে দিয়েছে। পূর্ব সাইবেরিয়ার ইরকুৎস্ক প্রদেশ থেকে রাশিয়ার সুদূর উত্তরে মুর্মাস্ক পর্যন্ত, ৪ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে এই আক্রমণে লক্ষ্যবস্তু ছিল রাশিয়ার চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিমান ঘাঁটি।

ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা দাবি করছে, এই হামলায় রাশিয়ার যে পরিমাণ যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে তাতে ক্ষতি প্রায় ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার।

স্থানীয়দের পোস্ট করা ফুটেজে দেখা যায়, ছোট কোয়াডকপ্টার ড্রোনগুলো একটি লরি থেকে বেরিয়ে নিকটবর্তী বিমানঘাঁটির দিকে উড়ে যাচ্ছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী লিখেছেন, ‘আমি একটি টায়ারের দোকানে কাজ করি। একটি ট্রাক এসে থামল, আর তার ভেতর থেকে ড্রোন উড়ে গেল!’

ইউক্রেনের প্রধান নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ এই অভিযানের দায় স্বীকার করেছে এবং এর কোড নাম দিয়েছে ‘স্পাইডার ওয়েব’। তারা জানিয়েছে, এই আক্রমণে ৪১টি রুশ বিমান ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে বিরল এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল এ-৫০ আর্লি-ওয়ার্নিং প্লেন (রাশিয়ার এওয়াকস সমতুল্য) এবং টু-২২ এম ৩ ও টু-৯৫ কৌশলগত বোমারু বিমানও রয়েছে। এসবিইউ-এর প্রধান ভাসিলি মাল্যুকের একটি ভিডিও ফুটেজও প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘রাশিয়ার কৌশলগত বোমারু বিমানগুলো, সবই মনোরমভাবে পুড়ছে।’

চার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান এই যুদ্ধে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এটি রাশিয়ার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় আঘাতগুলোর মধ্যে অন্যতম। রাশিয়ার কৌশলগত বোমারু বিমানের সংখ্যা তুলনামূলক কম–সম্ভবত ৯০ টিরও কম টু-২২, টু-৯৫ এবং নতুন টু-১৬০ বর্তমানে অপারেশনাল রয়েছে। এই বিমানগুলো পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে সক্ষম হলেও, সম্প্রতি ইউক্রেনের লক্ষ্যবস্তুতে প্রচলিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের জন্য এগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই এগুলো ইউক্রেনীয় সামরিক পরিকল্পনাকারীদের জন্য উচ্চ অগ্রাধিকারের লক্ষ্যবস্তু ছিল। বেশির ভাগ বিমানই পুরোনো এবং এখন আর উৎপাদ করা হয় না। শেষ টু-২২ এম ৩ এবং টু-৯৫ প্রায় ৩০ বছরেরও বেশি আগে তৈরি, আর সেগুলোর প্রতিস্থাপন, টু-১৬০-এর উৎপাদনও অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছে।

রাশিয়ার এত বিপুলসংখ্যক অত্যাধুনিক বিমান দেশের এতটা গভীরে ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস করার সক্ষমতা ইউক্রেনের আক্রমণ কৌশলের উন্নয়ন এবং রাশিয়ার ভেতরে ইউক্রেনের গোপন এজেন্টদের অসাধারণ দক্ষতার প্রমাণ।

ক্রেমলিনের সর্বাত্মক সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে ইউক্রেনের অভিযানগুলোর পরিসর ও নির্ভুলতা ধীরে ধীরে বেড়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনের রাশিয়ার গভীরে ঢুকে আক্রমণে কিছু সহায়তা দিয়েছে। গত ২৮ মে জার্মানি ইউক্রেনীয় দূরপাল্লার ড্রোনে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে বেশির ভাগ প্রযুক্তি এবং মিশন পরিকল্পনা ইউক্রেনের নিজস্ব।

গত ১ জুনের এই অপারেশনকে আধুনিক যুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হামলা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। সূত্র অনুযায়ী, এই মিশনের পরিকল্পনা করতে ১৮ মাস সময় লেগেছে। রাশিয়া সীমান্তের কাছাকাছি থেকে এবং রাতের বেলা বড় আকারের ফিক্সড-উইং ড্রোনের আক্রমণের আশঙ্কা করছিল। ইউক্রেন রাশিয়ার ধারণা উল্টে দিয়েছে। তারা দিনের বেলায় ছোট ড্রোন উৎক্ষেপণ করেছে এবং তা করেছে সম্মুখভাগ থেকে অনেক দূরে। ইউক্রেন এর আগেও রাশিয়ার ভেতরে ঢুকে ড্রোন উৎক্ষেপণ করেছে; কিন্তু এবারের পার্থক্য ছিল অভিযানের মাত্রা এবং সমন্বিত প্রকৃতিতে।

ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা সংস্থার ঘনিষ্ঠ ভাষ্যকাররা মনে করেন, এই অভিযানের জন্য রাশিয়ার অভ্যন্তরে ১৫০টি ড্রোন এবং ৩০০টি বোমা সীমান্ত দিয়ে পাচার করা হয়েছিল। কোয়াডকপ্টারগুলো সম্ভবত কাঠের কেবিনে ঢুকিয়ে লরিতে লোড করা হয়েছিল। এরপর কেবিনের ঢাকনা দূরনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে খুলে ফেলার পর ড্রোনগুলো উড়ানো হয়েছিল। ড্রোনগুলো রাশিয়ারই মোবাইল-টেলিফোন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইউক্রেনে ফুটেজ পাঠিয়েছে। বহু ইউক্রেনীয় সেই ফুটেজ শেয়ার করেছে। দাবি করা হচ্ছে, এই অপারেশনে স্বয়ংক্রিয় লক্ষ্য নির্ধারণের প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হয়েছে।

একজন ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, ট্রাকের চালকেরা সম্ভবত জানতেন না যে তাঁরা কী বহন করছেন। তিনি এই অপারেশনের এই দিকটিকে ২০২২ সালের কের্চ সেতু আক্রমণের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যেখানে একটি লরিতে লুকানো বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। বিস্ফোরণে ক্রিমিয়াকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্তকারী সেতুর একটি অংশ ধ্বংস হয়। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের অপারেশন খুব জটিল, যেখানে মূল খেলোয়াড়দের অন্ধকারে রাখা জরুরি।’

সূত্রটি এই অপারেশনকে একটি বহু-পর্যায়ের দাবার চাল হিসেবে বর্ণনা করেছে, যেখানে ইউক্রেনের অন্যান্য ঘাঁটিতে হামলা সুযোগ দিয়ে রুশদের প্রথমে আরও বেশি বিমান নির্দিষ্ট ঘাঁটিতে সরিয়ে নিতে উৎসাহিত করা হয়েছিল। আক্রমণের তিন দিন আগে, প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডজন ডজন বিমান মুর্মাস্ক প্রদেশের ওলেনিয়া বিমানঘাঁটিতে স্থানান্তরিত হয়েছিল। গত ১ জুন ঠিক সেখানেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।

এদিকে আজ সোমবার ইস্তাম্বুলে শুরু হতে যাওয়া নতুন শান্তি আলোচনার ওপর এই অভিযানের একটি ছায়া নিশ্চয় থাকবে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়া ব্যাপক হামলা চালিয়েছে, কখনো কখনো শত শত ড্রোন ব্যবহার করে ইউক্রেনকে সন্ত্রস্ত করেছে। গত ৩১ মে রাতে শুরু হওয়া একটি হামলায় রেকর্ড ৪৭২টি ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল বলে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে কিয়েভ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দেখাতে চাচ্ছিল যে, যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চাইলে মূল্য দিতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই অভিযান কি পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে, নাকি কেবল ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে তুলেছে?

রাশিয়ার দেশপ্রেমিক সামাজিক-গণমাধ্যম নেটওয়ার্কগুলোতে এরই মধ্যে এই হামলার জবাবে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখানোর আহ্বান জানানো হচ্ছে। অনেকে এই মুহূর্তটিকে ১৯৪১ সালে জাপানের পার্ল হারবারে আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের ওপর আক্রমণের সঙ্গে তুলনা করছেন। একজন জ্যেষ্ঠ ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, এই অভিযানের কারণে পশ্চিমা অংশীদাররা ইউক্রেন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তিনি বলেন, ‘চিন্তা হচ্ছে যে এটি সিনোপের মতো হয়ে যায় কিনা।’ ১৮৫৩ সালে একটি অটোমান বন্দরে রাশিয়ার হামলার কথা উল্লেখ করেন তিনি। এটি শেষ পর্যন্ত আক্রমণকারীকে বিশ্ব মঞ্চে একা করে দিয়েছিল।

এদিকে গত ১ জুনের এই অভূতপূর্ব ঘটনা পশ্চিমা সশস্ত্র বাহিনীগুলোও ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। পশ্চিমা দেশগুলো অর্থ সাশ্রয়ের জন্য বহু বছর ধরে যুদ্ধবিমানগুলো ক্রমশ অল্পসংখ্যক বিমানঘাঁটিতে কেন্দ্রীভূত করছে। তারা বিমানগুলোকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রক্ষা করার জন্য কোনো পোতাশ্রয় নির্মাণে বিনিয়োগ করেনি। আমেরিকার নিজস্ব কৌশলগত বোমারু বিমানগুলো স্যাটেলাইট ছবিতে খোলা জায়গায় দৃশ্যমান। ওয়াশিংটনের থিংক-ট্যাংক সিএনএএস-এর টম শুগার্ট লিখেছেন, ‘কল্পনা করুন, খেলার দিনে, রেলইয়ার্ডে, বন্দরে বা উপকূলের চীনা মালিকানাধীন কন্টেইনার জাহাজে, এলোমেলো অবকাঠামোতে পার্ক করা ট্রাকে থাকা কন্টেইনারগুলো... থেকে হাজার হাজার ড্রোন উড়ে আসছে, যা মার্কিন বিমানবাহিনীকে নাস্তানাবুদ করতে পারে।’ তিনি সতর্ক করে দেন যে, এটা শুধু কল্পনা নয়, বাস্তবে ঘটতে পারাটা খুবই সম্ভব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টাকে প্রতিহতের ঘোষণা উত্তর কোরিয়ার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি
উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। ছবি: এএফপি

জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের যে কোনো প্রচেষ্টা কঠোরভাবে প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ রোববার (২১ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জাপানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা যে কোনো মূল্যে রোধ করা উচিত, কারণ এটি মানবজাতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘ইনস্টিটিউট ফর জাপান স্টাডিজ’-এর পরিচালক এক বিবৃতিতে বলেন, জাপানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা শুধু এশিয়া নয়, পুরো বিশ্বের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করবে। তাঁর ভাষায়, ‘জাপানের পারমাণবিক হওয়ার প্রচেষ্টা মানবজাতির জন্য এক মহাবিপর্যয় বয়ে আনবে।’

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার এই প্রতিক্রিয়ার পেছনে রয়েছে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার সাম্প্রতিক মন্তব্য। জাপানের বার্তা সংস্থা কিয়োদো নিউজের খবরে বলা হয়, ওই কর্মকর্তা প্রকাশ্যে বলেছেন, টোকিওর পারমাণবিক অস্ত্র রাখা উচিত।

এই প্রেক্ষাপটে উত্তর কোরিয়া দাবি করেছে, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন বা বেপরোয়া মন্তব্য নয়; বরং জাপানের বহুদিনের পারমাণবিক অস্ত্রায়নের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন।

উত্তর কোরিয়ার মতে, জাপান তাদের তথাকথিত ‘অ-পারমাণবিক নীতি’ পুনর্বিবেচনার কথা বলে কার্যত একটি ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, জাপানের কর্মকর্তাদের মন্তব্যগুলোই বলে দিচ্ছে, টোকিও এখন প্রকাশ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের বাসনা জানাচ্ছে।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরও দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্র যখন গত অক্টোবরে দক্ষিণ কোরিয়াকে একটি পারমাণবিক সাবমেরিন নির্মাণের অনুমোদন দেয়, তার পরপরই জাপানে এই ধরনের বক্তব্য জোরালো হতে শুরু করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা ইস্যুতে শীর্ষ বৈঠকের পর ওই অনুমোদন দিয়েছিলেন।

উত্তর কোরিয়ার ওই কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেন—জাপান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তবে এশিয়া ভয়াবহ পারমাণবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। তবে তিনি পিয়ংইয়ংয়ের নিজস্ব পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

ধারণা করা হয়, উত্তর কোরিয়া নিজেই একটি ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের অধিকারী। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান থাকার পরও দেশটি তার পারমাণবিক সক্ষমতা বজায় রাখা ও সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়ে আসছে। গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে উত্তর কোরিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম সন গিয়ং বলেন—পারমাণবিক অস্ত্র তাদের রাষ্ট্রীয় আইন, জাতীয় নীতি এবং সার্বভৌম অধিকারের অংশ, যা তারা কোনো পরিস্থিতিতেই ত্যাগ করবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার আরও একটি তেলের ট্যাংকার ধাওয়া করছে মার্কিন বাহিনী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৪
ক্যারিবিয়ান সাগরে পানামা পতাকাবাহী সেঞ্চুরি নামের একটি তেলবাহী জাহাজের ওপর মার্কিন সামরিক বাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
ক্যারিবিয়ান সাগরে পানামা পতাকাবাহী সেঞ্চুরি নামের একটি তেলবাহী জাহাজের ওপর মার্কিন সামরিক বাহিনীর টহল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

ভেনেজুয়েলা উপকূলে আন্তর্জাতিক জলসীমায় আরও একটি তেলের ট্যাংকার ধাওয়া করছে মার্কিন কোস্ট গার্ড। আজ রোববার (২১ ডিসেম্বর) তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এটি সফল হলে এক সপ্তাহের মধ্যে ভেনেজুয়েলাসংশ্লিষ্ট তিনটি তেলবাহী জাহাজ জব্দ করার ঘটনা ঘটবে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার ওপর ‘সর্বাত্মক নৌ অবরোধ’ ঘোষণার পর থেকে এই চিরুনি অভিযান শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন কোস্ট গার্ড বর্তমানে একটি তেল ট্যাংকারকে ধাওয়া করছে। তবে অভিযানের সুনির্দিষ্ট অবস্থান বা জাহাজটির পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

এই অভিযান নিয়ে হোয়াইট হাউস বা পেন্টাগন থেকে তাৎক্ষণিক কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের ডিরেক্টর কেভিন হ্যাসেট আজ জানিয়েছেন, এর আগে জব্দ করা দুটি ট্যাংকার ‘ব্ল্যাক মার্কেট’ বা কালোবাজারের মাধ্যমে বিভিন্ন নিষিদ্ধ দেশে তেল সরবরাহ করছিল।

কেভিন হ্যাসেট দাবি করেছেন, এই আটকের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে তেলের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। তাঁর মতে, এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা এবং কেবল কালোবাজারি জাহাজগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।

তবে বাজার বিশ্লেষক ও তেল ব্যবসায়ীরা ভিন্নমত পোষণ করছেন। একজন তেল ব্যবসায়ী রয়টার্সকে বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আগামীকাল সোমবার এশিয়ার বাজারে তেলের দাম বাড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা তেলের দামের এই ঊর্ধ্বগতিকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।

গত সেপ্টেম্বর থেকে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ওপর চাপ বাড়াতে ট্রাম্প প্রশাসন এই অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গত কয়েক মাসে প্রশান্ত মহাসাগর ও ক্যারিবিয়ান সাগরে ভেনেজুয়েলাসংশ্লিষ্ট ভেসেলগুলোর ওপর অন্তত দুই ডজন সামরিক হামলা চালানো হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, এসব সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলায় মার্কিন হস্তক্ষেপ নিয়ে সতর্ক করলেন লুলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপ ও সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপ ‘ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়’ ডেকে আনবে বলে সতর্ক করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা। তিনি মত দিয়েছেন, ভেনেজুয়েলায় কোনো ধরনের সশস্ত্র হস্তক্ষেপ শুধু ওই দেশের জন্য নয়, বরং পুরো পৃথিবীর জন্যই এক বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ফোজ দো ইগুয়াসুতে দক্ষিণ আমেরিকার আঞ্চলিক জোট ‘মারকোসুর’-এর শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে লুলা এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ভেনেজুয়েলায় সশস্ত্র হস্তক্ষেপ একটি মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নেবে। এটি এমন একটি নজির সৃষ্টি করবে, যা বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি।’

এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে রোববার (২১ ডিসেম্বর) রয়টার্স জানিয়েছে, ভেনেজুয়েলা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা সম্প্রতি আরও বেড়েছে। গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলায় যাতায়াতকারী সব নিষেধাজ্ঞাভুক্ত তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘অবরোধ’ আরোপের নির্দেশ দেন। ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপকে নিকোলাস মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ানোর নতুন কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। ভেনেজুয়েলার অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি তেল খাতকে লক্ষ্য করেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লুলা স্মরণ করিয়ে দেন, ফকল্যান্ডস যুদ্ধের চার দশকেরও বেশি সময় পর দক্ষিণ আমেরিকা আবারও অন্য মহাদেশীয় কোনো শক্তির সামরিক উপস্থিতির আশঙ্কায় ভুগছে। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আমেরিকা আবার এমন এক ভূতের ছায়ায় পড়ছে, যেখানে এই অঞ্চলের বাইরে থেকে আসা সামরিক শক্তি আমাদের শান্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।’

চলতি সপ্তাহের শুরুতেই লাতিন আমেরিকার দুই বৃহত্তম অর্থনীতির শীর্ষ নেতা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা এবং মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম ভেনেজুয়েলা পরিস্থিতিতে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে গত শনিবারের বক্তব্যে লুলা আরও কঠোর দেখিয়েছেন।

‘মারকোসুর’ সম্মেলন শেষে দেওয়া এক যৌথ ঘোষণায় লাতিন আমেরিকার নেতারা ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক নীতি ও মানবাধিকার রক্ষায় শান্তিপূর্ণ পথেই অগ্রসর হওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এই ঘোষণায় আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও পানামার প্রেসিডেন্টদের পাশাপাশি বলিভিয়া, ইকুয়েডর ও পেরুর শীর্ষ কর্মকর্তারাও সমর্থন জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে ভারতেও

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত
২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ছবি: সংগৃহীত

ভারতেও ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে। পকেটে টান পড়তে যাচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। ২৬ ডিসেম্বর থেকে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে স্বস্তির খবর হলো, লোকাল ট্রেনের ভাড়া অপরিবর্তিত থাকছে। মূলত দূরপাল্লার যাত্রীদের জন্যই এই বাড়তি ভাড়া কার্যকর হবে।

ভারতের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী, ভ্রমণের দূরত্ব ও কোচের ধরনভেদে নতুন ভাড়ার হার নির্ধারিত হবে। ২১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত সাধারণ শ্রেণিতে ভাড়ায় কোনো পরিবর্তন নেই। তবে ২১৫ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে এক পয়সা করে ভাড়া বাড়বে।

মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেনের (নন-এসি) যাত্রীদের জন্য প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়বে দুই পয়সা। এসি কোচ বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোচের ক্ষেত্রেও কিলোমিটার প্রতি দুই পয়সা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

তবে যদি কোনো যাত্রী নন-এসি কোচে ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন, নতুন নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে আগের চেয়ে ১০ রুপি বেশি ভাড়া দিতে হবে।

কেন এই ভাড়া বৃদ্ধি

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত এক দশকে রেলপথ সম্প্রসারণের ফলে জনবল এবং অন্যান্য ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে। রেলওয়ের বর্তমান জনবল ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি রুপিতে এবং পেনশনের পেছনে খরচ হচ্ছে ৬০ হাজার কোটি রুপি। সব মিলিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট পরিচালনা ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি রুপি।

যাত্রীদের ভাড়া ও পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে খরচ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে রেলওয়ে। এর আগে গত জুলাই মাসেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল (নন-এসিতে এক পয়সা ও এসিতে দুই পয়সা)। তারও আগে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি বড় ধরনের ভাড়া বৃদ্ধি কার্যকর করা হয়েছিল, যেখানে এসি কোচে ভাড়া বেড়েছিল কিলোমিটার প্রতি চার পয়সা পর্যন্ত।

রেলওয়ে কর্মকর্তাদের মতে, উন্নত সেবা এবং ক্রমবর্ধমান ব্যয় মেটাতে এই সামান্য ভাড়া বৃদ্ধি অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এই ভাড়া বৃদ্ধির ফলে রেলওয়ের বার্ষিক আয় প্রায় ৬০০ কোটি রুপি বাড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত