Ajker Patrika

ইউক্রেন যুদ্ধ: মার্কিন শান্তি প্রস্তাব সংশোধন কিয়েভের, অবশেষে অগ্রগতির আশা ইউরোপীয়দের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ১৪
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত ‘শান্তি পরিকল্পনায়’ বড় ধরনের সংশোধনী এনেছে। আলোচনায় জড়িত ব্যক্তিদের মতে, রাশিয়ার মূল দাবিগুলো থেকে বেশ কিছু অংশ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ইউরোপীয় নেতারা সোমবার জানিয়েছেন, দ্রুত কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো এখনো সম্ভব নয়। তবে তাঁরা এই সংশোধিত প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই সপ্তাহের শেষ দিকে হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটন ও কিয়েভের মধ্যে ঘন ঘন ফোনালাপ হয়েছে। ইউক্রেন চাইছে, আলোচনায় ইউরোপও যুক্ত হোক।

গত মাসে রাশিয়ার বিশেষ দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ এবং ট্রাম্পের প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ মিলিতভাবে যে ২৮ দফা খসড়া প্রস্তুত করেছিলেন, সেটাই ছিল মূল পরিকল্পনার ভিত্তি। এতে ছিল দনবাসের পূর্বাঞ্চলে ইউক্রেন যে শহরগুলো নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, সেখান থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়া, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর আকার সীমিত করা এবং ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার মতো শর্ত।

তবে রোববার সুইজারল্যান্ডে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও জেলেনস্কির প্রধান সহযোগী আন্দ্রে ইয়ারমাকের নেতৃত্বে যে বৈঠক হয়, সেখানে পরিকল্পনাটি বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। ২৮ দফা কমে এখন ১৯ দফায় নেমেছে। কিয়েভ ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা বলছে, আলোচনায় আঞ্চলিক প্রশ্নের ভিত্তি হওয়া উচিত বর্তমান যুদ্ধ রেখা।

সোমবার জেলেনস্কি বলেন, ‘জেনেভার পর দফাগুলো এখন কমেছে, আর যথেষ্ট সঠিক উপাদান যুক্ত হয়েছে। সংবেদনশীল বিষয়গুলো ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’ ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতারা বলছেন, রাশিয়া সামরিকভাবে যে ভূমি দখল করেছে তা কোনোভাবেই স্বীকৃত হতে পারে না। ইউক্রেন ইইউ ও ন্যাটোতে যোগ দেবে কি না, সে সিদ্ধান্ত কিয়েভের নিজেরই হওয়া উচিত।

ইউক্রেনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্হি কিসলিৎসা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, তবে ক্রেমলিন এসব বাতিল করতে বা এসবের সঙ্গে শর্ত জুড়ে দিতে চাইছে। এসব প্রশ্ন ‘ব্র্যাকেটে রাখা হয়েছে।’ ট্রাম্প ও জেলেনস্কি পরে এস বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি প্রস্তাবটি প্রথমে রাশিয়ার পক্ষে ঝুঁকে ছিল বলে সমালোচিত হয়েছিল। ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা এবার সংশোধিত কাঠামোকে সতর্ক স্বাগত জানিয়েছে। জার্মানি, ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের নেতারা সোমবার বলেন, জেনেভার রোববারের আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন যে ‘সংশোধিত শান্তি কাঠামো’ তৈরি করেছে, তাতে অগ্রগতি হয়েছে। তবে তারা জোর দিয়ে বলেন, এখনো অনেক কাজ বাকি।

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ ম্যার্ৎজ বলেন, ‘কিছু প্রশ্ন পরিষ্কার করা গেছে। কিন্তু আমরা জানি যে, রাতারাতি শান্তি আসবে না।’ তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম খসড়া পরিকল্পনাটির ‘বড় অংশ সংশোধন’ করা হয়েছে। তিনি এটিকে ‘অন্তর্বর্তী সাফল্য’ বলে অভিহিত করেন। তিনি আরও বলেন, ‘পরবর্তী ধাপ হলো রাশিয়ার আলোচনার টেবিলে আসা। প্রক্রিয়াটি শ্রমসাধ্য। এই সপ্তাহে ছোট ছোট ধাপেই অগ্রগতি হবে। বড় কোনো অগ্রগতি আমি আশা করছি না।’

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ২৮ দফার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সেটি ইউক্রেন ও ইউরোপকে বিস্মিত করেছিল। এতে ইউক্রেনকে আরও ভূখণ্ড ছাড়তে, সেনাশক্তি কমাতে এবং ন্যাটোতে যোগদানের ইচ্ছা ত্যাগ করতে বলা হয়েছিল। সমালোচকেরা একে ‘রাশিয়ার ইচ্ছাপূরণের তালিকা’ বলেছিলেন।

বিপরীতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি পাল্টা একটি প্রস্তাব তৈরি করে। সেখানে বলা হয়, যুদ্ধ থামবে বর্তমান ফ্রন্টলাইনে। ভূমি নিয়ে আলোচনা পরে হবে। ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো-ধাঁচের নিরাপত্তা নিশ্চয়তাও দেবে। সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, এখন পরিকল্পনায় ২৮ দফার কম বিষয় আছে এবং ‘সঠিক উপাদান’ রাখা হয়েছে। তিনি জানান, ‘সংবেদনশীল ও অত্যন্ত সূক্ষ্ম’ বিষয়গুলো তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ইউক্রেনের মিত্রদের ‘আগ্রহীদের জোট’ অর্থাৎ প্রায় ৩০টি দেশের সমন্বয়ে গঠিত জোট মঙ্গলবার ভিডিওর মাধ্যমে আলোচনায় বসবে। জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সোমবার জার্মানি, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ইতালি ও পোল্যান্ডের শীর্ষ কূটনীতিকেরা ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে সিবিহার সঙ্গে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে বৈঠক করেছেন।

অ্যাঙ্গোলায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আফ্রিকার শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়া ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা বলেন, আলোচনায় ‘নতুন গতি’ এসেছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লায়েন বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘আগ্রহীদের জোটের’ অংশীদারদের সঙ্গে মঙ্গলবার আবার আলোচনায় বসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা—জনসংখ্যার তীব্র সংকটে ইউক্রেন

বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়

ভোটের মাঠে: টাঙ্গাইলে নির্বাচনী উত্তাপ

গোপালগঞ্জে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা

খালেদা জিয়াকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স রওনা হবে শুক্রবার দুপুরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ