Ajker Patrika

এক মায়ের ৪৪ বছরের লড়াই ও দক্ষিণ কোরিয়ার ‘দত্তক বাণিজ্যের’ অন্ধকার অধ্যায়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
৪৪ বছর পর মা-মেয়ের মিলন। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
৪৪ বছর পর মা-মেয়ের মিলন। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

হান তাই-সুন-এর কাছে মেয়ের শৈশবের শেষ স্মৃতিটা ১৯৭৫ সালের মে মাসের। সিউলের বাড়ি থেকে সেদিন বাজারে যাচ্ছিলেন। মেয়ে কিয়ং-হাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তুমি কি আমার সঙ্গে যাবে না?’ কিয়ং-হা উত্তর দিয়েছিল, ‘না, আমি বন্ধুদের সঙ্গে খেলব।’ হান বাজার থেকে ফিরে এসে দেখেন, মেয়ে নেই!

চার দশকেরও বেশি সময় ধরে হান তাই-সুন মেয়ের মুখ দেখেননি। যখন তাঁদের পুনর্মিলন হলো, কিয়ং-হা তখন এক মধ্যবয়সী আমেরিকান নারী, নাম লরি বেন্ডার। প্রায় অচেনা। হান অভিযোগ করেন, কিয়ং-হাকে বাড়ির কাছ থেকেই অপহরণ করা হয়েছিল। এরপর একটি এতিমখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে একটি পরিবারকে দত্তক দেওয়া হয়। মেয়ের এই অবৈধ দত্তক ঠেকাতে হান এখন কোরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার বিতর্কিত ‘বিদেশি দত্তক’ কর্মসূচিতে জালিয়াতি, অবৈধ দত্তক, অপহরণ এবং মানব পাচারের অভিযোগ এনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শত শত মানুষ আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার মতো এত বেশি শিশু, এত দীর্ঘ সময় ধরে অন্য কোনো দেশ বিদেশে দত্তক পাঠায়নি। ১৯৫০-এর দশকে এই কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ২ লাখ শিশু বিদেশে দত্তক দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগই শিশুই গেছে পশ্চিমা দেশগুলোতে।

গত মার্চে, একটি নজিরবিহীন তদন্তে দেখা গেছে, সরকারের তদারকির অভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। সরকারের উদাসীনতা বেসরকারি সংস্থাগুলোকে ‘মুনাফার জন্য’ ব্যাপকভাবে ‘শিশু রপ্তানি’ করার সুযোগ দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অনুসন্ধান সরকারের বিরুদ্ধে আরও মামলার পথ খুলে দিতে পারে। হানের মামলা আগামী মাসে আদালতে গড়াবে।

হানের মামলাটি দুটি যুগান্তকারী মামলার মধ্যে একটি। হান হলেন প্রথম জৈবিক মা যিনি বিদেশি দত্তক-এর ক্ষতিপূরণ চেয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। অন্যদিকে, ২০১৯ সালে কোরীয় শিশু দত্তক নেওয়া এক আমেরিকান প্রথম সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

সরকারের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে খুঁজে না পাওয়া ব্যক্তি ও পরিবারের মানসিক যন্ত্রণার প্রতি গভীরভাবে সহানুভূতিশীল। তিনি আরও যোগ করেন, হানের মামলা ‘গভীর দুঃখের’ সঙ্গে বিবেচনা করছে সরকার। মামলার রায়ের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

৭১ বছর বয়সী হান বিবিসিকে বলেন, তিনি চান সরকার তাঁর দায়িত্ব নিক। হান বলেন, ‘আমি ৪৪ বছর ধরে মেয়েকে খুঁজতে গিয়ে আমার শরীর ও মন ধ্বংস করেছি। কিন্তু এত বছরে কেউ কি আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে? না, একবারও না।’

কয়েক দশক ধরে, হান ও তাঁর স্বামী থানা ও এতিমখানায় ঘুরেছেন, লিফলেট লাগিয়েছেন এবং টেলিভিশনে আবেদন করেছেন। হান বলেন, তিনি মেয়েকে খুঁজতে সারা দিন রাস্তায় হেঁটেছেন।

সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে তিনি বারবার শুধু ভেবেছেন, মেয়েকে পাওয়া কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। ১৯৯০ সালে, টেলিভিশনে আবেদনের পর, হান এক নারী সঙ্গে দেখা করেন। তিনি নারীকেই তাঁর হারিয়ে যাওয়া মেয়ে ভেবেছিলেন। এমনকি ওই নারীকে কিছু সময়ের জন্য বাড়িতে রেখেছিলেন। কিন্তু সেই নারী অবশেষে স্বীকার করেছেন যে তিনি তাঁর মেয়ে নন।

২০১৯ সালে অবশেষে একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে! হান ৩২৫ কামরা-প্ল্যাটফর্মে সাইন-আপ। এই প্ল্যাটফর্মটি ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে বিদেশে দত্তক নেওয়া কোরীয়দের তাঁদের জন্মদাতা পিতামাতার সঙ্গে মিলিয়ে দেয়। তারা দ্রুতই একজনকে খুঁজে পায়। তিনি ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার একজন নার্স—লরি বেন্ডার। বেশ কয়েকটি ফোন কলের পর, লরি বেন্ডার সিউলে আসেন। হানের সঙ্গে দেখা করেন। বিমানবন্দরে তাঁদের অশ্রুসিক্ত পুনর্মিলন হয়।

বিমানের সিটে বেঁধে বহন করা হতো শিশুদের। ছবি: দক্ষিণ কোরিয়ার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের ১৯৮৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন
বিমানের সিটে বেঁধে বহন করা হতো শিশুদের। ছবি: দক্ষিণ কোরিয়ার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের ১৯৮৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন

যখন তাঁরা আলিঙ্গন করেন, হান যেন সেই ছোট্ট কিয়ং-হার চুলে বিলি কাটতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘আমি ৩০ বছর ধরে হেয়ারড্রেসার। আমি ওর চুল ছুঁয়েই বলতে পারি সে আমার মেয়ে কিনা। আমি আগে ভুল করে ভেবেছিলাম, তাকে খুঁজে পেয়েছি, তাই ওর চুল ছুঁয়ে নিশ্চিত হতে হয়েছিল।’

হান তাঁর মেয়েকে প্রথম যে কথাটি বলেছিলেন সেটি হলো, ‘আমি খুবই দুঃখিত।’

হান বলেন, ‘আমার নিজেকে দোষী মনে হয়েছিল। কারণ ওতো ছোটবেলায় বাড়ি খুঁজে পায়নি। আমি বারবার ভাবছিলাম, ও মাকে কতই খুঁজেছে...এত বছর পর ওর সঙ্গে দেখা হওয়ায় আমি বুঝতে পারছিলাম, মাকে কতটা দেখতে চেয়েছিল!’

এই মা-মেয়ে অবশেষে ১৯৭৫ সালের মে মাসের সেই দিনে কী ঘটেছিল তা স্মরণ করেন এবং মিলিয়ে দেখেন।

ছয় বছর বয়সী কিয়ং-হা সেদিন বাড়ির কাছে খেলছিল। হঠাৎ অচেনা এক নারী কাছে এসে বলেন, তার মাকে তিনি চেনেন। কিয়ং-হাকে বলা হয়েছিল যে তার মায়ের আর তাকে ‘প্রয়োজন নেই’। তাকে একটি ট্রেন স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই নারীর সঙ্গে ট্রেন যাত্রার পর, কিয়ং-হাকে শেষ স্টেশনে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর সেই নারী উধাও হয়ে যায়। পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে একটি এতিমখানায় দেয়। কয়েক দিনের মধ্যেই তাকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। ভার্জিনিয়ার এক দম্পতি তাকে দত্তক নেয়।

কয়েক বছর পর ওই দম্পতি পরীক্ষা করে দেখেন, ভুয়া কাগজপত্রসহ মেয়েটিকে পাঠানো হয়েছে। বলা হয়েছিল, শিশুটি পরিত্যক্ত অনাথ। বাবা-মাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিয়ং-হা বলেন, ‘এটা এমন যেন আপনি একটি মিথ্যা জীবনযাপন করছেন এবং আপনার জানা সবকিছুই মিথ্যা।’

কিয়ং-হা-এর এই পরিণতি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা না।

দক্ষিণ কোরিয়ার বিদেশি দত্তক কর্মসূচি ১৯৫০-৫৩ সালের কোরীয় যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে শুরু হয়েছিল। কোরিয়া তখন অত্যন্ত দরিদ্র দেশ। ১ লাখ অনাথ এবং বাস্তুচ্যুত শিশু ছিল তখন। সেই সময়, খুব কম পরিবারই জৈবিক নয় এমন শিশুদের দত্তক নিতে আগ্রহী ছিল। সরকার একটি বিদেশি দত্তক কর্মসূচি শুরু করে। এটি এটি মানবিক প্রচেষ্টা হিসেবেই প্রচার করা হয়।

এই কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে বেসরকারি দত্তক সংস্থাগুলো দ্বারা পরিচালিত হতো। যদিও তারা সরকারের তত্ত্বাবধানে ছিল, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সংস্থাগুলো আইনের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য স্বায়ত্তশাসন লাভ করে। তাদের ক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদেশে পাঠানো শিশুদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ১৯৭০-এর দশকে এই সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পায় এবং ১৯৮০-এর দশকে শীর্ষে পৌঁছায়। ১৯৮৫ সালে, ৮ হাজার ৮০০-এরও বেশি শিশু বিদেশে পাঠানো হয়েছিল।

পশ্চিমে দত্তক শিশুর ব্যাপক চাহিদা ছিল তখন। জন্মহার হ্রাস এবং দেশে দত্তক নেওয়ার মতো শিশুর অভাবের কারণে পরিবারগুলো অন্য দেশে শিশু খুঁজতে শুরু করে। সেই সময়ের ছবিগুলোতে দেখা যায়, পশ্চিমা দেশগুলোতে যাওয়ার বিমানগুলো কোরিয়ান শিশু দিয়ে ভরা! ওই সময় সত্য ও পুনর্মিলন কমিশনের (ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন) তদন্তে এই পরিস্থিতিকে ‘কার্গোর মতো করে শিশুদের ব্যাপক পরিবহন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, এই দীর্ঘ ফ্লাইটগুলোতে শিশুদের প্রতি সামান্যই যত্ন নেওয়া হয়। ১৯৭৪ সালের একটি ঘটনা—একটি ল্যাকটোজ-অসহিষ্ণু শিশুকে ট্রানজিটে দুধ খাওয়ানো হয়েছিল। ডেনমার্কে পৌঁছানোর পরই শিশুটি মারা যায়।

এই কর্মসূচির সমালোচকেরা দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন করে আসছেন, দক্ষিণ কোরিয়া যখন দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করছিল, তখন এত বেশি শিশুকে কেন বিদেশে পাঠাতে হয়েছিল। ১৯৭৬ সালের বিবিসি প্যানোরামা ডকুমেন্টারিতে দক্ষিণ কোরিয়াকে ‘পশ্চিমে শিশুর রপ্তানিতে’ এশিয়ার কয়েকটি দেশের মধ্যে অন্যতম হিসেবে তুলে ধরা হয়।

সত্য ও পুনর্মিলন প্রতিবেদন অনুসারে, বিদেশি দত্তক সংস্থাগুলো শিশুদের জন্য কোটা নির্ধারণ করেছিল। কোরিয়ার সংস্থাগুলো এই কোট সহজেই পূরণ করতে পারত। এটি বেশ লাভজনক ব্যবসা। সরকারি নিয়মনীতি শিথিল হওয়ার কারণে কোরিয়ার সংস্থাগুলো ইচ্ছে মতো ফি নিতে পারত।

এই শিশুদের অনেককে অসৎ উপায়ে বিদেশে দত্তক দেওয়া হয়েছে। হানের মতো বহু বাবা-মা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের সন্তানদের অপহরণ করা হয়েছে। ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে, হাজার হাজার গৃহহীন বা ছিন্নমূল শিশুকে দক্ষিণ কোরিয়ার ‘রাস্তা পরিষ্কার করার’ একটি জাতীয় অভিযানের অংশ হিসেবে একত্রিত করা হয়। তাদের রাখা হয় এতিমখানা বা কল্যাণ কেন্দ্রে।

অনেক বাবা-মাকে বলা হয়েছিল, তাঁদের সন্তান অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। কিন্তু আসলে তারা জীবিত ছিল। এই শিশুদের দত্তক সংস্থায় পাঠানো হয়। সত্য ও পুনর্মিলন প্রতিবেদন অনুসারে, সংস্থাগুলো জন্মদাতা মায়েদের কাছ থেকে সন্তানদের দত্তক দেওয়ার ক্ষেত্রে সম্মতিও নেয়নি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দত্তক সংস্থাগুলো তথ্য জাল করেছিল। পরিচয়পত্রবিহীন হারিয়ে যাওয়া শিশুদের কাগজপত্র এমনভাবে তৈরি করা তো যেন, তারা পরিত্যক্ত। দত্তকের জন্য নির্ধারিত কোনো শিশু মারা গেলে নথিপত্রে তার জন্মদাতা বাবা-মাকে কোনো জীবিত শিশুর বাবা-মা বানানো হতো। এতে সংস্থাগুলো দত্তক ফি ফেরত দেওয়া এড়াতে পারত এবং দত্তক প্রক্রিয়া দ্রুত করতে পারত।

এই ধরনের জাল-জালিয়াতির কারণে অনেকে বাবা-মা দীর্ঘদিন তাদের দত্তক দেওয়া সন্তানকে খুঁজে পাননি। অনেক শিশুই বড় হয়ে আবিষ্কার করেছেন, তাঁদের সম্পূর্ণ মিথ্যা পরিচয় দেওয়া হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দায়িত্ব কেবল বেসরকারি সংস্থাগুলোর ওপরই নয়, রাষ্ট্রের ওপরও বর্তায়। কারণ দত্তক সংস্থাগুলো রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সুযোগ নিয়েছিল। সরকার চোখ বন্ধ করে রেখেছিল। সরকারের নাকের ডগায় এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড চলছিল।

দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার এই কর্মসূচিকে একটি মানবিক প্রচেষ্টা হিসেবে প্রচার করলেও, পর্যবেক্ষকেরা বলেন, এটি পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতেও সহায়তা করেছে। বিবিসি ১৯৮৪ সালের একটি সরকারি নথিতে দেখেছে, দত্তক নীতির সরকারি লক্ষ্যগুলোর মধ্যে কেবল শিশুদের কল্যাণই নয়, ভবিষ্যতের জাতীয় শক্তি এবং জনগণের মধ্যে কূটনীতির প্রচারও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

অবশ্য সম্ভাব্য দত্তক বাবা-মার পরিচয় শনাক্ত প্রক্রিয়া কঠোর করতে এবং জন্মদাতা বাবা-মার ডেটা ও জন্ম তথ্যের আরও ভালোভাবে ট্র্যাকিং করতে সরকার ২০১২ সালে দত্তক আইন সংশোধন করে। এখন বিদেশি দত্তক নিরুৎসাহিত করা হয়। এই পরিবর্তনগুলো আগামী জুলাই মাসে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মার্কিন সরকারি ওয়েবসাইট থেকে ট্রাম্পের ছবিসহ ১৬ এপস্টেইন নথি গায়েব

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন সরকারি ওয়েবসাইট থেকে ট্রাম্পের ছবিসহ ১৬ এপস্টেইন নথি গায়েব

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ওয়েবসাইটে দেশটির পার্লামেন্টের নির্দেশে প্রকাশিত জেফরি এপস্টেইন ফাইল সিরিজের ১৬টি নথি গায়েব হয়ে গেছে। এর মধ্যে কিছু নথিতে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও কিছু ছবি ছিল। নিখোঁজ ফাইলগুলো গত শুক্রবার দেখা গেলেও শনিবার থেকে আর দেখা যাচ্ছে না।

বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে, জেফরি এপস্টেইন সংক্রান্ত নথিপত্রের জন্য মার্কিন বিচার বিভাগের নির্ধারিত পাবলিক ওয়েবপেজ থেকে অন্তত ১৬টি ফাইল গায়েব হয়ে গেছে—যার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ছবিও ছিল।

ফাইলগুলো পোস্ট করার ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে কোনো ব্যাখ্যা বা নোটিশ ছাড়াই সরিয়ে ফেলা হয়।

নিখোঁজ ফাইলগুলোর মধ্যে ছিল নগ্ন নারীদের আঁকা কিছু ছবি এবং একটি ড্রয়ার ও ক্রেডেনজারের ওপর রাখা কিছু ছবির দৃশ্য। সেই ছবির ভেতর একটি ড্রয়ারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি ছবি দেখা যায়, যেখানে তার সাথে ছিলেন জেফরি এপস্টেইন, মেলানিয়া ট্রাম্প এবং এপস্টেইনের দীর্ঘদিনের সহযোগী ঘিসলেইন ম্যাক্সওয়েল।

বিচার বিভাগ ফাইলগুলো সরিয়ে ফেলার কোনো কারণ জানায়নি বা এটি ইচ্ছাকৃত কি না তাও স্পষ্ট করেনি। বিভাগের একজন মুখপাত্রের কাছে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

এই ব্যাখ্যাহীন অন্তর্ধান ফাইলগুলো নিয়ে জল্পনা উসকে দিয়েছে যে, কেন এগুলো সরানো হলো এবং কেন জনগণকে জানানো হয়নি। এটি এপস্টেইন এবং তাঁর চারপাশের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়ে দীর্ঘদিনের রহস্যকে আরও ঘনীভূত করেছে। হাউস ওভারসাইট কমিটির ডেমোক্র্যাটরা এক্সে ট্রাম্পের ছবি থাকা নিখোঁজ ফাইলটির দিকে ইঙ্গিত করে লিখেছেন, ‘আর কী কী গোপন করা হচ্ছে? মার্কিন জনগণের জন্য আমাদের স্বচ্ছতা প্রয়োজন।’

এই ঘটনা বিচার বিভাগের বহুল প্রতীক্ষিত নথি প্রকাশের বিষয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। জনসম্মুখে আনা হাজার হাজার পৃষ্ঠার নথিতে এপস্টেইনের অপরাধ বা তাঁকে বছরের পর বছর গুরুতর ফেডারেল অভিযোগ থেকে বাঁচিয়ে দেওয়ার নেপথ্য সিদ্ধান্তগুলো সম্পর্কে খুব সামান্যই নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদান যেমন—ভুক্তভোগীদের এফবিআই সাক্ষাৎকার এবং বিচার বিভাগের অভ্যন্তরীণ মেমো এতে বাদ দেওয়া হয়েছে।

আশা করা হয়েছিল, এপস্টেইন সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডগুলো পাওয়া যাবে, কিন্তু বিচার বিভাগের প্রাথমিক প্রকাশনায় সেগুলো কোথাও নেই। সেখানে বিশেষ করে ২০০৮ সালে এপস্টাইনকে কীভাবে একটি মামুলি অপরাধ স্বীকার করে পার পাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, তার কোনো সদুত্তর নেই।

এখানেই শেষ নয়। কংগ্রেসের সাম্প্রতিক আইন অনুযায়ী এই রেকর্ডগুলো প্রকাশ করার কথা থাকলেও, এতে এপস্টেইনের সঙ্গে দীর্ঘকাল যুক্ত থাকা ব্রিটেনের সাবেক প্রিন্স অ্যান্ড্রুর মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম খুব কমই এসেছে।

এখন পর্যন্ত যা পাওয়া গেছে তার মধ্যে রয়েছে— ২০০০-এর দশকে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধ করার বিষয়ে বিচার বিভাগের সিদ্ধান্তের কিছু অন্তর্দৃষ্টি এবং ১৯৯৬ সালের একটি অভিযোগ যেখানে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে শিশুদের ছবি চুরির অভিযোগ আনা হয়েছিল।

এ পর্যন্ত প্রকাশিত নথিতে মূলত নিউইয়র্ক এবং ইউএস ভার্জিন আইল্যান্ডে এপস্টেইনের বাড়ির ছবি, এবং কিছু সেলিব্রিটি ও রাজনীতিবিদের ছবি রয়েছে। এর মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের কিছু নতুন ছবি থাকলেও ট্রাম্পের ছবি ছিল খুবই নগণ্য। যদিও ক্লিনটন এবং ট্রাম্প উভয়েই এপস্টেইনের সঙ্গে মেলামেশার কথা অস্বীকার করেছেন এবং কারো বিরুদ্ধেই এপস্টাইন সংক্রান্ত কোনো অপরাধের অভিযোগ নেই।

কংগ্রেসের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পার হলেও বিচার বিভাগ জানিয়েছে যে তারা পর্যায়ক্রমে নথিগুলো প্রকাশ করবে। ভুক্তভোগীদের নাম গোপন করার প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ হওয়ায় এই দেরি হচ্ছে বলে তারা দাবি করেছে।

এই ধীরগতিতে এপস্টেইনের হাতে নির্যাতিত নারী এবং কংগ্রেসের সদস্যরা ক্ষুব্ধ। মারিনা লাসার্ডা, যিনি অভিযোগ করেছেন যে ১৪ বছর বয়সে এপস্টেইন তাকে যৌন নির্যাতন শুরু করেছিলেন, তিনি বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে বিচার ব্যবস্থা আবারও আমাদের ব্যর্থ করছে।’

প্রকাশিত নথিগুলোর একটি বড় অংশই আগে কোনো না কোনোভাবে জনসম্মুখে এসেছিল। তবে এবারই প্রথম এগুলো এক জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে। যদিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল পুরোপুরি কালো কালি দিয়ে ঢেকে (Blacked out) দেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্পের রিপাবলিকান সহযোগীরা ক্লিনটনের ছবির দিকে ইঙ্গিত করেছেন, যেখানে তাঁকে মাইকেল জ্যাকসন এবং ডায়ানা রসের মতো তারকাদের সাথে দেখা গেছে। এছাড়াও অভিনেতা ক্রিস টাকার, কেভিন স্পেসি এবং নিউজকাস্টার ওয়াল্টার ক্রনকাইটের সাথেও এপস্টাইনের ছবি পাওয়া গেছে। তবে এসব ছবির কোনো ক্যাপশন বা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

প্রকাশিত নথির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হলো ২০০৭ সালের একটি ঘটনা, যেখানে দেখা গেছে ফেডারেল প্রসিকিউটরদের হাতে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তারা তখন কোনো চার্জ গঠন করেননি। গ্র্যান্ড জুরির কার্যবিবরণীতে দেখা যায়, ১৪ বছর বয়সী কিশোরীসহ অনেক ভুক্তভোগী এপস্টেইনের যৌন লালসার বর্ণনা দিয়েছিলেন।

সবে শ্রমমন্ত্রী আলেকজান্ডার অ্যাকোস্টা, যিনি সেই সময় মামলার দায়িত্বে ছিলেন, তিনি পরে জানিয়েছিলেন, জুরিরা ভুক্তভোগীদের কথা বিশ্বাস করবেন কি না তা নিয়ে তাঁর সন্দেহ ছিল। তবে বর্তমানে ভুক্তভোগীদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বদলেছে বলে তিনি স্বীকার করেন। এপস্টেইনের নির্যাতনের শিকার মারিয়া ফারমারের আইনজীবী জেনিফার ফ্রিম্যান বলেন, ‘এটি একই সঙ্গে একটি জয় এবং একটি ট্র্যাজেডি। মনে হচ্ছে সরকার কিছুই করেনি। যদি তারা সামান্যতম তদন্তও করত, তবে তাঁকে অনেক আগেই থামানো যেত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজায় নতুন শাসনকাঠানো কার্যকর শিগগির: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, গাজার নতুন শাসন কাঠামো খুব শিগগির কার্যকর হতে যাচ্ছে। একটি আন্তর্জাতিক পরিষদ এবং ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটদের (কৌশলগত বিশেষজ্ঞ) সমন্বয়ে গঠিত হবে এই শাসনকাঠামো। এই শাসনকাঠামো গঠনের পরপরই সেখানে বিদেশি সৈন্য মোতায়েন করা হবে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের চালানো গণহত্যামূলক যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিচ্ছে।

সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের খবরে বলা হয়েছে, বছরের শেষ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রুবিও বলেন, গাজায় বর্তমান অবস্থা বজায় রাখা সম্ভব নয়। গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শান্তি চুক্তি হওয়া সত্ত্বেও সেখানে ইসরায়েল হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা অব্যাহত রেখেছে এবং হামাসও পুনরায় তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।

রুবিও বলেন, ‘এ কারণেই আমরা প্রথম ধাপটি পুরোপুরি সম্পন্ন করার বিষয়ে জরুরি তাগিদ অনুভব করছি। এই ধাপের মধ্যে রয়েছে বোর্ড অব পিস বা শান্তি পরিষদ গঠন এবং সেখানে কাজ করার জন্য ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাট কর্তৃপক্ষ বা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এর পরপরই সেখানে স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হবে।’

রুবিও জানান, টেকনোক্র্যাট গ্রুপে যোগ দেওয়ার জন্য ফিলিস্তিনিদের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে সম্প্রতি অগ্রগতি হয়েছে এবং ওয়াশিংটন কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ না করলেও ‘খুব শিগগিরই’ এই শাসনকাঠামো চালু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

গাজার জন্য ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স বা আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গঠনের পরিকল্পনা করতে চলতি সপ্তাহে দোহায় সহযোগী দেশগুলোর সাথে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড একটি সম্মেলনের আয়োজন করার পর রুবিও এই মন্তব্য করলেন।

গত সপ্তাহে দুই মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, গত নভেম্বরে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এই বাহিনী অনুমোদনের পর আগামী মাসেই আন্তর্জাতিক সৈন্য গাজায় মোতায়েন হতে পারে। তবে হামাসকে কীভাবে নিরস্ত্রীকরণ করা হবে তা এখনও অস্পষ্ট। এছাড়া, আইএসএফ-এ সৈন্য পাঠানোর কথা বিবেচনা করছে এমন দেশগুলো এই ভয়ে আছে যে, হামাস তাদের সৈন্যদের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে।

রুবিও নির্দিষ্ট করে বলেননি যে, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণের দায়িত্ব কার হবে। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, যেসব দেশ সৈন্য দিতে আগ্রহী তারা এই বাহিনীর সুনির্দিষ্ট ম্যান্ডেট এবং অর্থায়ন সম্পর্কে জানতে চায়।

রুবিও বলেন, ‘কাউকে চূড়ান্ত প্রতিশ্রুতি দিতে বলার আগে আমার মনে হয় আমাদের আরও কিছু উত্তর দেওয়া উচিত। তবে আমি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী যে, এমন বেশ কিছু রাষ্ট্র রয়েছে যারা সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং তারা এই স্থিতিশীলতা রক্ষাকারী বাহিনীর অংশ হতে ইচ্ছুক।’ তিনি উল্লেখ করেন যে, পাকিস্তান এই বাহিনীতে আগ্রহ প্রকাশকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।

রুবিও আরও যোগ করেন যে, গাজা পুনর্গঠনের জন্য দাতাদের তহবিল নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা ও শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি। পুনর্গঠন তহবিল সংগ্রহের জন্য একটি দাতা সম্মেলনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনার সময় তিনি বলেন, ‘আবার যুদ্ধ শুরু হয়ে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে জেনে কে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেবে? তারা (দাতারা) জানতে চায় গাজার দায়িত্বে কে আছে এবং তারা সেখানে নিরাপত্তা ও দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা দেখতে চায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভেনেজুয়েলার উপকূলে আবার তেলের ট্যাংকার জব্দ করল যুক্তরাষ্ট্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার উপকূলে একটি বিদেশি তেলের ট্যাংকার জব্দ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত
গত সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার উপকূলে একটি বিদেশি তেলের ট্যাংকার জব্দ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে ঘোষিত ‘সর্বাত্মক অবরোধের’ অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক জলসীমায় আরও একটি তেলের ট্যাংকার জব্দ করেছে মার্কিন কোস্টগার্ড। আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ঘোষণা দেন, ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ এবং সেখান থেকে বের হওয়া সব তেলবাহী জাহাজের ওপর ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক অবরোধ’ আরোপ করা হচ্ছে। তাঁর এমন ঘোষণার মাত্র কয়েক দিনের মাথায় এই অভিযান চালানো হলো।

এর আগে গত সপ্তাহে একটি বিদেশি তেলের ট্যাংকার জব্দের পর এটি দ্বিতীয় ঘটনা। তবে এই ট্যাংকারের নাম বা নির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে পেন্টাগন বা হোয়াইট হাউস এখনো বিস্তারিত প্রকাশ করেনি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মার্কিন কোস্টগার্ড এই অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি পেট্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) তাৎক্ষণিকভাবে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে আগের অভিযানকে ‘আন্তর্জাতিক জলদস্যুতা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল মাদুরো সরকার।

এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবরোধ ঘোষণার পর থেকে ভেনেজুয়েলার তেল রপ্তানিতে ধস নেমেছে। আটকের ভয়ে ভেনেজুয়েলার জলসীমার ভেতরে কয়েক মিলিয়ন ব্যারেল তেল নিয়ে বহু ট্যাংকার নোঙর করে আছে।

গত সপ্তাহের অভিযানের পর থেকে দেশটির অপরিশোধিত তেল রপ্তানি আরও কমেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই অবরোধ দীর্ঘস্থায়ী হলে দৈনিক প্রায় ১০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল সরবরাহ বন্ধ হবে। এর প্রভাবে বিশ্ববাজারে তেলের সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কায় এশীয় ও ইউরোপীয় বাজারে অপরিশোধিত তেলের দামও কিছুটা বেড়েছে।

গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়া উপকূলে ‘মাদকবিরোধী অভিযানের’ নামে যুক্তরাষ্ট্র অন্তত ২৬টি সামরিক হামলা চালিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও গার্ডিয়ানের তথ্যমতে, এসব হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১০০ জন নিহত হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো অভিযোগ করেছেন, এই অবরোধ ও সামরিক তৎপরতা আসলে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে ভেনেজুয়েলার বিশাল তেল সম্পদ দখলে নেওয়ার একটি সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা।

ভেনেজুয়েলার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা চীন। ডিসেম্বরে দেশটি প্রতিদিন গড়ে ৬ লাখ ব্যারেল তেল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল, যা এখন চরম ঝুঁকির মুখে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ডেমোক্র্যাট কিছু কংগ্রেসম্যান ‘যুদ্ধের শামিল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সতর্ক করেছেন, শিগগির ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরে স্থল হামলাও শুরু হতে পারে।

২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার ওপর জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর থেকে দেশটির তেল কিনতে আগ্রহী ব্যবসায়ী ও শোধনাগারগুলো তথাকথিত ‘শ্যাডো ফ্লিট’ ব্যবহার করে আসছে। এসব ট্যাংকার নিজেদের অবস্থান গোপন রাখে এবং অনেক ক্ষেত্রে ইরান বা রাশিয়ার তেল পরিবহনের জন্য নিষেধাজ্ঞাভুক্ত জাহাজ ব্যবহার করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে নিকাব বিতর্ক: কাজে যোগ দেননি সেই নারী চিকিৎসক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

সরকারি অনুষ্ঠানে সার্টিফিকেট নিতে আসা এক মুসলিম নারীর মুখ দেখতে নিকাব টান দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিলেন ভারতের বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। ঘটনাটি নিয়ে ইতিমধ্যে বেশ সমালোচনা হচ্ছে। এর মধ্যে আজ আরেকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। জানা গেছে, নিকাব বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা সেই নারী চিকিৎসক নুসরাত পারভীন নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে যোগ দেননি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তিনি কাজে যোগদান করেননি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাটনার সিভিল সার্জন অবিনাশ কুমার সিং। এমনকি তাঁর বা তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

পাটনার সিভিল সার্জন জানান, নুসরাত পারভীনের কাজে যোগদানের শেষ সময় ২০ ডিসেম্বরের পর আরও বাড়ানো হয়েছে। তবে নতুন সময়সীমা কত দিন, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। সিভিল সার্জন বলেন, ‘তিনি সোমবার যোগ দেন কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।’

নুসরাত পারভীনের পাটনা সদরের সাবলপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। সেখানকার সার্জন বিজয় কুমার জানিয়েছেন, আজ ৫-৬ জন নতুন চিকিৎসক যোগ দিলেও নুসরাতের কোনো খোঁজ নেই। এমনকি সিভিল সার্জন অফিস থেকেও তাঁর নিয়োগপত্র এখনো সেখানে পৌঁছায়নি।

নুসরাত পারভীন পাটনার সরকারি তিব্বি কলেজ ও হাসপাতালের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। কলেজের প্রিন্সিপাল মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, নুসরাত সর্বশেষ ১৭ বা ১৮ ডিসেম্বর কলেজে এসেছিলেন।

নুসরাতের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তাঁরা অতিরিক্ত মিডিয়া কাভারেজ এড়াতে চাইছেন। এই বিতর্কের কারণে নুসরাত আদৌ চাকরিতে যোগ দেবেন কি না, তা নিয়ে নতুন করে ভাবছেন।

এদিকে নুসরাতের পরিবার কলকাতায় চলে গেছে বলে যে গুঞ্জন উঠেছিল, তা নাকচ করে দিয়েছেন তাঁর স্বামী। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা সরকারের ওপর নয়, বরং সংবাদমাধ্যমের সৃষ্টি করা বিতর্কে বিরক্ত।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে পাটনায় আয়ুশ চিকিৎসকদের নিয়োগপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ভিডিওতে দেখা যায়, নুসরাত পারভীন নিয়োগপত্র নিতে মঞ্চে এলে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার তাঁর মুখের নিকাব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং একপর্যায়ে তা টেনে সরিয়ে দেন। এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।

বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন বিহারের রাজ্যপাল আরিফ মোহাম্মদ খান। তবে তিনি এই ঘটনাকে ‘বিতর্ক’ বলতে নারাজ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বাবা ও মেয়ের মধ্যে কি কোনো বিতর্ক হতে পারে? নীতীশ কুমার নারী শিক্ষার্থীদের নিজের মেয়ের মতো মনে করেন। আপনারা বিষয়টিকে কোথায় নিয়ে গেছেন?’

তবে এর আগেও বিতর্কে জড়িয়েছিলেন নীতীশ কুমার। গত নভেম্বরের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে এক জনসভায় এক নারীকে মালা পরানোর ভিডিও ভাইরাল হলে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। সে সময় এক জেডিইউ সংসদ সদস্য থামানোর চেষ্টা করলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ধমক দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত