Ajker Patrika

এক মায়ের ৪৪ বছরের লড়াই ও দক্ষিণ কোরিয়ার ‘দত্তক বাণিজ্যের’ অন্ধকার অধ্যায়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
৪৪ বছর পর মা-মেয়ের মিলন। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
৪৪ বছর পর মা-মেয়ের মিলন। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

হান তাই-সুন-এর কাছে মেয়ের শৈশবের শেষ স্মৃতিটা ১৯৭৫ সালের মে মাসের। সিউলের বাড়ি থেকে সেদিন বাজারে যাচ্ছিলেন। মেয়ে কিয়ং-হাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তুমি কি আমার সঙ্গে যাবে না?’ কিয়ং-হা উত্তর দিয়েছিল, ‘না, আমি বন্ধুদের সঙ্গে খেলব।’ হান বাজার থেকে ফিরে এসে দেখেন, মেয়ে নেই!

চার দশকেরও বেশি সময় ধরে হান তাই-সুন মেয়ের মুখ দেখেননি। যখন তাঁদের পুনর্মিলন হলো, কিয়ং-হা তখন এক মধ্যবয়সী আমেরিকান নারী, নাম লরি বেন্ডার। প্রায় অচেনা। হান অভিযোগ করেন, কিয়ং-হাকে বাড়ির কাছ থেকেই অপহরণ করা হয়েছিল। এরপর একটি এতিমখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে একটি পরিবারকে দত্তক দেওয়া হয়। মেয়ের এই অবৈধ দত্তক ঠেকাতে হান এখন কোরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার বিতর্কিত ‘বিদেশি দত্তক’ কর্মসূচিতে জালিয়াতি, অবৈধ দত্তক, অপহরণ এবং মানব পাচারের অভিযোগ এনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শত শত মানুষ আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার মতো এত বেশি শিশু, এত দীর্ঘ সময় ধরে অন্য কোনো দেশ বিদেশে দত্তক পাঠায়নি। ১৯৫০-এর দশকে এই কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার থেকে ২ লাখ শিশু বিদেশে দত্তক দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগই শিশুই গেছে পশ্চিমা দেশগুলোতে।

গত মার্চে, একটি নজিরবিহীন তদন্তে দেখা গেছে, সরকারের তদারকির অভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। সরকারের উদাসীনতা বেসরকারি সংস্থাগুলোকে ‘মুনাফার জন্য’ ব্যাপকভাবে ‘শিশু রপ্তানি’ করার সুযোগ দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অনুসন্ধান সরকারের বিরুদ্ধে আরও মামলার পথ খুলে দিতে পারে। হানের মামলা আগামী মাসে আদালতে গড়াবে।

হানের মামলাটি দুটি যুগান্তকারী মামলার মধ্যে একটি। হান হলেন প্রথম জৈবিক মা যিনি বিদেশি দত্তক-এর ক্ষতিপূরণ চেয়ে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। অন্যদিকে, ২০১৯ সালে কোরীয় শিশু দত্তক নেওয়া এক আমেরিকান প্রথম সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

সরকারের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে খুঁজে না পাওয়া ব্যক্তি ও পরিবারের মানসিক যন্ত্রণার প্রতি গভীরভাবে সহানুভূতিশীল। তিনি আরও যোগ করেন, হানের মামলা ‘গভীর দুঃখের’ সঙ্গে বিবেচনা করছে সরকার। মামলার রায়ের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

৭১ বছর বয়সী হান বিবিসিকে বলেন, তিনি চান সরকার তাঁর দায়িত্ব নিক। হান বলেন, ‘আমি ৪৪ বছর ধরে মেয়েকে খুঁজতে গিয়ে আমার শরীর ও মন ধ্বংস করেছি। কিন্তু এত বছরে কেউ কি আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে? না, একবারও না।’

কয়েক দশক ধরে, হান ও তাঁর স্বামী থানা ও এতিমখানায় ঘুরেছেন, লিফলেট লাগিয়েছেন এবং টেলিভিশনে আবেদন করেছেন। হান বলেন, তিনি মেয়েকে খুঁজতে সারা দিন রাস্তায় হেঁটেছেন।

সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে তিনি বারবার শুধু ভেবেছেন, মেয়েকে পাওয়া কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। ১৯৯০ সালে, টেলিভিশনে আবেদনের পর, হান এক নারী সঙ্গে দেখা করেন। তিনি নারীকেই তাঁর হারিয়ে যাওয়া মেয়ে ভেবেছিলেন। এমনকি ওই নারীকে কিছু সময়ের জন্য বাড়িতে রেখেছিলেন। কিন্তু সেই নারী অবশেষে স্বীকার করেছেন যে তিনি তাঁর মেয়ে নন।

২০১৯ সালে অবশেষে একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটে! হান ৩২৫ কামরা-প্ল্যাটফর্মে সাইন-আপ। এই প্ল্যাটফর্মটি ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে বিদেশে দত্তক নেওয়া কোরীয়দের তাঁদের জন্মদাতা পিতামাতার সঙ্গে মিলিয়ে দেয়। তারা দ্রুতই একজনকে খুঁজে পায়। তিনি ছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার একজন নার্স—লরি বেন্ডার। বেশ কয়েকটি ফোন কলের পর, লরি বেন্ডার সিউলে আসেন। হানের সঙ্গে দেখা করেন। বিমানবন্দরে তাঁদের অশ্রুসিক্ত পুনর্মিলন হয়।

বিমানের সিটে বেঁধে বহন করা হতো শিশুদের। ছবি: দক্ষিণ কোরিয়ার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের ১৯৮৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন
বিমানের সিটে বেঁধে বহন করা হতো শিশুদের। ছবি: দক্ষিণ কোরিয়ার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের ১৯৮৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন

যখন তাঁরা আলিঙ্গন করেন, হান যেন সেই ছোট্ট কিয়ং-হার চুলে বিলি কাটতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘আমি ৩০ বছর ধরে হেয়ারড্রেসার। আমি ওর চুল ছুঁয়েই বলতে পারি সে আমার মেয়ে কিনা। আমি আগে ভুল করে ভেবেছিলাম, তাকে খুঁজে পেয়েছি, তাই ওর চুল ছুঁয়ে নিশ্চিত হতে হয়েছিল।’

হান তাঁর মেয়েকে প্রথম যে কথাটি বলেছিলেন সেটি হলো, ‘আমি খুবই দুঃখিত।’

হান বলেন, ‘আমার নিজেকে দোষী মনে হয়েছিল। কারণ ওতো ছোটবেলায় বাড়ি খুঁজে পায়নি। আমি বারবার ভাবছিলাম, ও মাকে কতই খুঁজেছে...এত বছর পর ওর সঙ্গে দেখা হওয়ায় আমি বুঝতে পারছিলাম, মাকে কতটা দেখতে চেয়েছিল!’

এই মা-মেয়ে অবশেষে ১৯৭৫ সালের মে মাসের সেই দিনে কী ঘটেছিল তা স্মরণ করেন এবং মিলিয়ে দেখেন।

ছয় বছর বয়সী কিয়ং-হা সেদিন বাড়ির কাছে খেলছিল। হঠাৎ অচেনা এক নারী কাছে এসে বলেন, তার মাকে তিনি চেনেন। কিয়ং-হাকে বলা হয়েছিল যে তার মায়ের আর তাকে ‘প্রয়োজন নেই’। তাকে একটি ট্রেন স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই নারীর সঙ্গে ট্রেন যাত্রার পর, কিয়ং-হাকে শেষ স্টেশনে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর সেই নারী উধাও হয়ে যায়। পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে একটি এতিমখানায় দেয়। কয়েক দিনের মধ্যেই তাকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। ভার্জিনিয়ার এক দম্পতি তাকে দত্তক নেয়।

কয়েক বছর পর ওই দম্পতি পরীক্ষা করে দেখেন, ভুয়া কাগজপত্রসহ মেয়েটিকে পাঠানো হয়েছে। বলা হয়েছিল, শিশুটি পরিত্যক্ত অনাথ। বাবা-মাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিয়ং-হা বলেন, ‘এটা এমন যেন আপনি একটি মিথ্যা জীবনযাপন করছেন এবং আপনার জানা সবকিছুই মিথ্যা।’

কিয়ং-হা-এর এই পরিণতি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা না।

দক্ষিণ কোরিয়ার বিদেশি দত্তক কর্মসূচি ১৯৫০-৫৩ সালের কোরীয় যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে শুরু হয়েছিল। কোরিয়া তখন অত্যন্ত দরিদ্র দেশ। ১ লাখ অনাথ এবং বাস্তুচ্যুত শিশু ছিল তখন। সেই সময়, খুব কম পরিবারই জৈবিক নয় এমন শিশুদের দত্তক নিতে আগ্রহী ছিল। সরকার একটি বিদেশি দত্তক কর্মসূচি শুরু করে। এটি এটি মানবিক প্রচেষ্টা হিসেবেই প্রচার করা হয়।

এই কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে বেসরকারি দত্তক সংস্থাগুলো দ্বারা পরিচালিত হতো। যদিও তারা সরকারের তত্ত্বাবধানে ছিল, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সংস্থাগুলো আইনের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য স্বায়ত্তশাসন লাভ করে। তাদের ক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদেশে পাঠানো শিশুদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ১৯৭০-এর দশকে এই সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পায় এবং ১৯৮০-এর দশকে শীর্ষে পৌঁছায়। ১৯৮৫ সালে, ৮ হাজার ৮০০-এরও বেশি শিশু বিদেশে পাঠানো হয়েছিল।

পশ্চিমে দত্তক শিশুর ব্যাপক চাহিদা ছিল তখন। জন্মহার হ্রাস এবং দেশে দত্তক নেওয়ার মতো শিশুর অভাবের কারণে পরিবারগুলো অন্য দেশে শিশু খুঁজতে শুরু করে। সেই সময়ের ছবিগুলোতে দেখা যায়, পশ্চিমা দেশগুলোতে যাওয়ার বিমানগুলো কোরিয়ান শিশু দিয়ে ভরা! ওই সময় সত্য ও পুনর্মিলন কমিশনের (ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন) তদন্তে এই পরিস্থিতিকে ‘কার্গোর মতো করে শিশুদের ব্যাপক পরিবহন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, এই দীর্ঘ ফ্লাইটগুলোতে শিশুদের প্রতি সামান্যই যত্ন নেওয়া হয়। ১৯৭৪ সালের একটি ঘটনা—একটি ল্যাকটোজ-অসহিষ্ণু শিশুকে ট্রানজিটে দুধ খাওয়ানো হয়েছিল। ডেনমার্কে পৌঁছানোর পরই শিশুটি মারা যায়।

এই কর্মসূচির সমালোচকেরা দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন করে আসছেন, দক্ষিণ কোরিয়া যখন দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করছিল, তখন এত বেশি শিশুকে কেন বিদেশে পাঠাতে হয়েছিল। ১৯৭৬ সালের বিবিসি প্যানোরামা ডকুমেন্টারিতে দক্ষিণ কোরিয়াকে ‘পশ্চিমে শিশুর রপ্তানিতে’ এশিয়ার কয়েকটি দেশের মধ্যে অন্যতম হিসেবে তুলে ধরা হয়।

সত্য ও পুনর্মিলন প্রতিবেদন অনুসারে, বিদেশি দত্তক সংস্থাগুলো শিশুদের জন্য কোটা নির্ধারণ করেছিল। কোরিয়ার সংস্থাগুলো এই কোট সহজেই পূরণ করতে পারত। এটি বেশ লাভজনক ব্যবসা। সরকারি নিয়মনীতি শিথিল হওয়ার কারণে কোরিয়ার সংস্থাগুলো ইচ্ছে মতো ফি নিতে পারত।

এই শিশুদের অনেককে অসৎ উপায়ে বিদেশে দত্তক দেওয়া হয়েছে। হানের মতো বহু বাবা-মা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের সন্তানদের অপহরণ করা হয়েছে। ১৯৭০ এবং ১৯৮০-এর দশকে, হাজার হাজার গৃহহীন বা ছিন্নমূল শিশুকে দক্ষিণ কোরিয়ার ‘রাস্তা পরিষ্কার করার’ একটি জাতীয় অভিযানের অংশ হিসেবে একত্রিত করা হয়। তাদের রাখা হয় এতিমখানা বা কল্যাণ কেন্দ্রে।

অনেক বাবা-মাকে বলা হয়েছিল, তাঁদের সন্তান অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। কিন্তু আসলে তারা জীবিত ছিল। এই শিশুদের দত্তক সংস্থায় পাঠানো হয়। সত্য ও পুনর্মিলন প্রতিবেদন অনুসারে, সংস্থাগুলো জন্মদাতা মায়েদের কাছ থেকে সন্তানদের দত্তক দেওয়ার ক্ষেত্রে সম্মতিও নেয়নি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দত্তক সংস্থাগুলো তথ্য জাল করেছিল। পরিচয়পত্রবিহীন হারিয়ে যাওয়া শিশুদের কাগজপত্র এমনভাবে তৈরি করা তো যেন, তারা পরিত্যক্ত। দত্তকের জন্য নির্ধারিত কোনো শিশু মারা গেলে নথিপত্রে তার জন্মদাতা বাবা-মাকে কোনো জীবিত শিশুর বাবা-মা বানানো হতো। এতে সংস্থাগুলো দত্তক ফি ফেরত দেওয়া এড়াতে পারত এবং দত্তক প্রক্রিয়া দ্রুত করতে পারত।

এই ধরনের জাল-জালিয়াতির কারণে অনেকে বাবা-মা দীর্ঘদিন তাদের দত্তক দেওয়া সন্তানকে খুঁজে পাননি। অনেক শিশুই বড় হয়ে আবিষ্কার করেছেন, তাঁদের সম্পূর্ণ মিথ্যা পরিচয় দেওয়া হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দায়িত্ব কেবল বেসরকারি সংস্থাগুলোর ওপরই নয়, রাষ্ট্রের ওপরও বর্তায়। কারণ দত্তক সংস্থাগুলো রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সুযোগ নিয়েছিল। সরকার চোখ বন্ধ করে রেখেছিল। সরকারের নাকের ডগায় এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড চলছিল।

দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার এই কর্মসূচিকে একটি মানবিক প্রচেষ্টা হিসেবে প্রচার করলেও, পর্যবেক্ষকেরা বলেন, এটি পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতেও সহায়তা করেছে। বিবিসি ১৯৮৪ সালের একটি সরকারি নথিতে দেখেছে, দত্তক নীতির সরকারি লক্ষ্যগুলোর মধ্যে কেবল শিশুদের কল্যাণই নয়, ভবিষ্যতের জাতীয় শক্তি এবং জনগণের মধ্যে কূটনীতির প্রচারও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

অবশ্য সম্ভাব্য দত্তক বাবা-মার পরিচয় শনাক্ত প্রক্রিয়া কঠোর করতে এবং জন্মদাতা বাবা-মার ডেটা ও জন্ম তথ্যের আরও ভালোভাবে ট্র্যাকিং করতে সরকার ২০১২ সালে দত্তক আইন সংশোধন করে। এখন বিদেশি দত্তক নিরুৎসাহিত করা হয়। এই পরিবর্তনগুলো আগামী জুলাই মাসে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘২০২৫’ নিয়ে ১৯৯৮ সালে করা আমেরিকানদের ভবিষ্যদ্বাণী কতটুকু মিলেছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০: ৫৭
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সমাজ বাস্তবতা ছিল একেবারেই ভিন্ন। সেই বছর প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন অভিশংসন প্রক্রিয়ার মুখে পড়েছিলেন, অস্কারে রাজত্ব করেছিল টাইটানিক, আর অধিকাংশ আমেরিকানের ঘরে ছিল ল্যান্ডলাইন ফোন। ঠিক সেই সময়েই গ্যালাপ ও ইউএসএ টুডে এক ব্যতিক্রমী জরিপ চালায়। ল্যান্ডলাইন ফোনে ১ হাজার ৫৫ জন আমেরিকানের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাওয়া হয়—দূর ভবিষ্যৎ ‘২০২৫ সাল’ কেমন হবে বলে তাঁরা মনে করেন।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সিএনএন জানিয়েছে, ২০২৫ সাল নিয়ে সে সময় মার্কিনরা যে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো করেছিল, সেগুলো সংরক্ষিত আছে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোপার সেন্টারের জরিপ আর্কাইভে। ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তে এসে এখন দেখা যাচ্ছে—সেই সব অনুমানের কোনোটা মিলেছে, আর কোনোটা মেলেনি।

এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেই সময়ের অনেক পূর্বাভাসই ছিল বিস্ময়করভাবে সঠিক। অধিকাংশ আমেরিকান তখনই ধারণা করেছিলেন, আগামী ২৭ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে একজন কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, সমকামী বিবাহ বৈধ ও স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এবং একটি ‘মারাত্মক নতুন রোগ’ বিশ্বকে নাড়িয়ে দেবে। বাস্তবে বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট হওয়া, সমকামী বিবাহের আইনি স্বীকৃতি এবং করোনা মহামারি সেই অনুমানগুলোকে সত্য প্রমাণ করেছে।

একইভাবে অনেকেই সেই সময় সঠিকভাবে ধারণা করেছিলেন, সাধারণ মানুষের জন্য মহাকাশ ভ্রমণ খুব সাধারণ বিষয় হয়ে উঠবে না এবং ভিনগ্রহের প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সরাসরি যোগাযোগ ঘটবে না।

তবে কিছু ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনি। জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করেছিলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে—যা এখনো ঘটেনি। অর্ধেকের বেশি মানুষ আশা করেছিলেন ক্যানসারের নিরাময় আবিষ্কৃত হবে এবং ৬১ শতাংশ মনে করেছিলেন মানুষ নিয়মিতভাবে ১০০ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচবে। বাস্তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অগ্রগতি হলেও এসব প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি।

জরিপে দেশের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। সেখানে ফুটে উঠেছিল প্রবল হতাশা। ৭০ শতাংশ মনে করেছিলেন ধনীদের জীবনমান উন্নত হবে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভক্ত মতামত ছিল। দরিদ্রদের জীবন আরও কঠিন হবে—এমনটাই ভাবতেন বেশির ভাগ। প্রায় ৮০ শতাংশ ধারণা করেছিলেন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কমবে, আর ৫৭ শতাংশ মনে করেছিলেন ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও হ্রাস পাবে। অপরাধ বৃদ্ধি, পরিবেশের অবনতি এবং নৈতিক মূল্যবোধের পতনের আশঙ্কাও ছিল প্রবল। ৭১ শতাংশ মত দিয়েছিলেন, সন্তানকে ভালো মানুষ হিসেবে বড় করা আরও কঠিন হবে।

তবে কিছু আশাবাদী দিকও ছিল। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করতেন, জাতিগত সম্পর্কের উন্নতি হবে এবং চিকিৎসাসেবা আরও সহজলভ্য হবে—যদিও তা হবে ব্যয়বহুল।

গ্যালাপ আজও জরিপ চালিয়ে যাচ্ছে, যদিও এখন ল্যান্ডলাইনের ওপর নির্ভরতা কম। এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে জনমতও নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। ১৯৯৮ সালে যেখানে প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান দেশের গতিপথ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন, বর্তমানে সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ২৪ শতাংশে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পুতিনের বাসভবনে ড্রোন হামলার অভিযোগ—‘মিথ্যা’ বলছে ইউক্রেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ইউক্রেনের ভলোদিমির জেলেনস্কি ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন—এমন অভিযোগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে পুরোপুরি ‘মিথ্যা ও সাজানো’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই হামলার কারণে চলমান শান্তি আলোচনায় রাশিয়ার অবস্থানের ‘পরিবর্তন বা পুনর্বিবেচনা’ করা হতে পারে। তবে মস্কো এখনই আলোচনা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে না।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন সের্গেই লাভরভের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, গতকাল রোববার রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত পুতিনের বাসভবন লক্ষ্য করে ৯১টি দূরপাল্লার ড্রোন হামলা চালায় ইউক্রেন। রুশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সবকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।

লাভরভ হুমকি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের এমন হঠকারী কর্মকাণ্ডের জবাব দেওয়া হবে। রুশ সামরিক বাহিনী ইতিমধ্যে পাল্টা হামলার জন্য লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে ফেলেছে। তবে হামলার সময় প্রেসিডেন্ট পুতিন নোভগোরোদের ওই বাসভবনে ছিলেন কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি।

ফ্লোরিডায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক শেষ করে ইউরোপে ফেরার পথে জেলেনস্কি রাশিয়ার এই দাবিকে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আবারও ভয়ংকর সব মিথ্যা বিবৃতি দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক অগ্রগতির সাফল্য নষ্ট করতেই এমন নাটক সাজানো হচ্ছে। তারা মূলত কিয়েভের সরকারি ভবনগুলোতে বড় ধরনের হামলার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য এই অজুহাত দিচ্ছে।’

জেলেনস্কি জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা রাশিয়াকে বিচলিত করে তুলেছে।

এদিকে ক্রেমলিন বলছে, আজ প্রেসিডেন্ট পুতিন টেলিফোনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এই ড্রোন হামলার বিষয়টি জানিয়েছেন। পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন, এই হামলার পর রাশিয়া তাদের শান্তি আলোচনার শর্তগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখবে।

রুশ গণমাধ্যমগুলো ক্রেমলিনের সহকারী ইউরি উশাকভের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই খবর শুনে ট্রাম্প ‘বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ’ হয়েছেন। তবে হোয়াইট হাউস থেকে এই ফোনালাপকে কেবল ‘ইতিবাচক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে, বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তাইওয়ানকে ঘিরে ধরেছে চীনের যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান ও ড্রোন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড
মহড়ায় সরাসরি গুলির অনুশীলনও করা হচ্ছে। ছবি: চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড

তাইওয়ানকে ঘিরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া শুরু করেছে চীন। সোমবার শুরু হওয়া এই মহড়ায় যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, ড্রোন ও সরাসরি গোলাবর্ষণও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ‘জাস্টিস মিশন ২০২৫’ নামের এই অভিযানে তাইওয়ানকে চারদিক থেকে ঘিরে সাতটি সামুদ্রিক অঞ্চলে সমন্বিত স্থল, নৌ ও আকাশ মহড়া চালানো হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি এখন পর্যন্ত তাইওয়ানকে লক্ষ্য করে চীনের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে আক্রমণাত্মক সামরিক প্রদর্শন।

চীনের পূর্বাঞ্চলীয় থিয়েটার কমান্ড জানিয়েছে—মহড়ায় স্থল ও সমুদ্রের লক্ষ্যবস্তুর ওপর সিমুলেটেড হামলা, পাশাপাশি তাইওয়ানের প্রধান বন্দরগুলো অবরোধ করার অনুশীলন করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে তাইওয়ানকে বিচ্ছিন্ন করতে বা চাপের মুখে ফেলতে এই ধরনের অবরোধ ব্যবহৃত হতে পারে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকেরা। সরাসরি গোলাবর্ষণের মহড়া মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত চলবে এবং আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার তাইওয়ানের আরও কাছাকাছি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।

এই মহড়ার ফলে বেসামরিক বিমান ও নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন তাদের ফ্লাইটের রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে এবং তাইওয়ানের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বিকল্প আকাশপথ ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছে। চীনা সামরিক কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই মহড়া ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতাপন্থী শক্তি’ ও ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের’ বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি তাইওয়ানের কাছে ১১.১ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্যাকেজ। এতে রয়েছে ৮২টি হিমার্স রকেট লঞ্চার, ৪২০টি দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র, স্বচালিত হাউইটজার, উন্নত ড্রোন ব্যবস্থা ও অ্যান্টি-আর্মার অস্ত্র। বেইজিং এই অস্ত্রচুক্তিকে তীব্রভাবে নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এতে তাইওয়ান একটি ‘বারুদের স্তূপে’ পরিণত হচ্ছে।

তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহড়া চলাকালে তাদের দ্বীপভূমির চারপাশে ৮৯টি চীনা সামরিক বিমান, ১৪টি নৌজাহাজ ও ১৪টি কোস্ট গার্ড জাহাজ শনাক্ত করা হয়েছে। কিছু চীনা জাহাজ তাইওয়ানের উপকূলের খুব কাছাকাছি অবস্থানে এসে চোখ রাঙাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে তাইওয়ান।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, মহড়ার মূল লক্ষ্য তাইওয়ানের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর—উত্তরের কিলুং ও দক্ষিণের কাওশিয়ুং বন্ধ করে দেওয়ার সক্ষমতা পরীক্ষা। চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড দাবি করলেও তাইওয়ান বলছে, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার শুধু সেখানকার জনগণেরই আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

১৭ বছরের সাজার রায় চ্যালেঞ্জ করে ইমরান খান ও বুশরা বিবির আপিল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি
ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি। ছবি: এএফপি

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি বর্তমানে কারাগারে। তোশাখানা দুর্নীতির মামলায় তাঁরা দুজনই সাজা খাটছেন। এর মধ্যে ২০ ডিসেম্বর তোশাখানা দুর্নীতির নতুন মামলায় তাঁদের আরও ১৭ বছর করে কারাদণ্ড দেন দেশটির একটি বিশেষ আদালত। এই রায় চ্যালেঞ্জ করে আজ সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদ হাইকোর্টে (আইএইচসি) পৃথক দুটি আপিল করেছেন ইমরান খান ও তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবি।

আপিল আবেদনে ইমরান খান ও বুশরা বিবির আইনজীবীরা দাবি করেছেন, এই সাজা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ইমরান খানকে জাতীয় রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই এ ‘পরিকল্পিত’ রায় দেওয়া হয়েছে। আইনজীবীরা ইমরান খান ও বুশরা বিবির পক্ষে কিছু যুক্তি উত্থাপন করেছেন।

আইনজীবীদের দাবি, ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এফআইএ) কোনো এফআইআর ছাড়াই ইমরান খান ও বুশরা বিবির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। এর মাত্র দুই দিনের মাথায় তড়িঘড়ি করে চালানো তদন্তের ভিত্তিতে এই মামলা হয়, যা স্বচ্ছ বিচারের পরিপন্থী।

আপিল আবেদনে বলা হয়েছে, তোশাখানাসংক্রান্ত এটি চতুর্থ মামলা। একই বিষয়ে বারবার মামলা করা আইনের লঙ্ঘন এবং এটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে, যাতে ইমরান খানকে দীর্ঘদিন কারাগারে আটকে রাখা যায়।

আইনজীবীদের দাবি, ২০১৮ সালের তোশাখানা নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত মূল্যের ৫০ শতাংশ পরিশোধ করেই উপহারগুলো রাখা হয়েছিল। এখানে কোনো ধরনের বিশ্বাসভঙ্গ বা ‘ক্রিমিনাল ব্রিচ অব ট্রাস্ট’ ঘটেনি।

আপিলে যুক্তি দেওয়া হয়েছে, পাকিস্তান পেনাল কোড অনুযায়ী ইমরান খান ও বুশরা বিবি এই উপহার নেওয়ার সময় প্রচলিত সংজ্ঞায় ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ ছিলেন না। বিশেষ করে, বুশরা বিবি একজন গৃহিণী হিসেবে কোনো সরকারি পদের দায়িত্বে ছিলেন না।

প্রসঙ্গত, তোশাখানা মামলাটি মূলত ২০২১ সালের মে মাসে সৌদি আরব সফরকালে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দেওয়া একটি দামি বুলগারি জুয়েলারি সেট নিয়ে। প্রায় ৮ কোটি রুপি মূল্যের এই নেকলেস, ব্রেসলেট, আংটি ও কানের দুলের সেটটি ইমরান দম্পতি মাত্র ২৯ লাখ রুপি পরিশোধ করে নিজের কাছে রেখেছিলেন।

এই মামলায় পাকিস্তানের ফেডারেল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এআইএ) বিশেষ আদালতের বিচারক শাহরুখ আরজুমান্দ তাঁদের প্রত্যেককে প্রথমে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড, এরপর দুর্নীতিবিরোধী আইনের আওতায় সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ১ কোটি ৬৪ লাখ রুপি জরিমানা করেছিলেন।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে সংসদীয় অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন ইমরান খান। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা করা হয়। তিনি ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী আছেন। বর্তমানে ইমরান খান ১৯ কোটি পাউন্ডের দুর্নীতির মামলায় ১৪ বছরের সাজা খাটছেন। বুশরা বিবিও একই মামলায় সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত।

ইমরানের দল পিটিআইয়ের দাবি, তোশাখানা মামলার বিচারপ্রক্রিয়া ‘ক্যাঙারু কোর্টে’র মতো রুদ্ধদ্বার কক্ষে সম্পন্ন হয়েছে। এটি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত