Ajker Patrika

রয়টার্সের প্রতিবেদন /আশ্রয় শিবির থেকে মিয়ানমারে যুদ্ধে যাচ্ছে অনেক রোহিঙ্গা

বাংলাদেশের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের একাংশ। ছবি: এএফপি
বাংলাদেশের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের একাংশ। ছবি: এএফপি

গত জুলাই মাসের কোনো একদিন, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির থেকে রফিক গোপনে পালিয়ে ছোট একটি নৌকায় করে মিয়ানমারে প্রবেশ করেন। তাঁর গন্তব্য ছিল গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত রাখাইন। যেখান থেকে তিনি ২০১৭ সালে পালিয়ে এসেছিলেন।

কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরগুলোতে বসবাসরত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার মধ্যে রফিকের মতো হাজারো বিদ্রোহী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ বছর সেখানে উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম ও সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে বলে—রয়টার্সকে জানিয়েছেন বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত চারটি সূত্র। এ ছাড়া দুটি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে।

রফিক (৩২) রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের ভূমি ফিরে পেতে, আমাদের লড়াই করতেই হবে।’ রফিক সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় শিবিরে ফিরে এসেছেন। কারণ, সেখানে তিনি যুদ্ধ করার সময় পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে আর কোনো পথ নেই।’

ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে রোহিঙ্গারা মূলত মুসলিম এবং তাঁরা বিশ্বের বৃহত্তম ‘রাষ্ট্রহীন’ জনগোষ্ঠী। ২০১৬ সালে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যা থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে। মিয়ানমারে দীর্ঘদিনের বিদ্রোহ ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর আরও জোরালো হয়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান এই জটিল সংঘাতে এখন রোহিঙ্গা যোদ্ধারাও যুক্ত হয়েছে।

অনেক রোহিঙ্গাই তাদের পূর্বতন নির্যাতনকারী জান্তাবাহিনীর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী আরাকান আর্মির—যারা আবার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ—বিরুদ্ধে লড়ছে। রাখাইন রাজ্যের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণকারী এই আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে তাদের এই লড়াই নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

রয়টার্স প্রথমবারের মতো, বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরগুলো থেকে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ৩ থেকে ৫ হাজার যোদ্ধা সংগ্রহের ব্যাপকতার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া, আরাকান আর্মির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ব্যর্থ আলোচনা, জান্তার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের অর্থ এবং নাগরিকত্বের প্রস্তাব এবং বিদ্রোহীদের সঙ্গে কিছু বাংলাদেশি কর্মকর্তার সহযোগিতা সম্পর্কেও নতুন তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ সরকার রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে কোনো উত্তর দেয়নি। তবে মিয়ানমারের জান্তা এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা কোনো রোহিঙ্গা মুসলিমকে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়নি। জান্তা বলেছে, ‘মুসলিম বাসিন্দারা সুরক্ষা চেয়েছিলেন। তাই তাদের নিজ নিজ গ্রাম ও অঞ্চল রক্ষার জন্য মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দুটি প্রধান সশস্ত্র গোষ্ঠী—রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)—কক্সবাজারের শিবিরে খুব একটা সমর্থন পায় না।’ তবে এই বিষয়ে একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, আশ্রয় শিবিরে সশস্ত্র রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের উপস্থিতি এবং অস্ত্রের সরবরাহ বাংলাদেশের জন্য বিপদ হিসেবে দেখা দিতে পারে।

আশ্রয় শিবিরগুলোতে প্রতি বছর ৩০ হাজার শিশু জন্মগ্রহণ করছে। দারিদ্র্য ও সহিংসতার কারণে অসন্তুষ্ট শরণার্থীরা সহজেই অরাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা উগ্রপন্থী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়তে পারে এবং অপরাধের জগতে ঠেলে দেওয়া হতে পারে বলে মনে করেন শাহাব এনাম খান। তিনি বলেন, ‘এর প্রভাব আঞ্চলিক দেশগুলোতেও পড়বে।’

রাখাইনে বিগত কয়েক মাস ধরেই যুদ্ধ তীব্র হয়েছে। স্থানীয় একটি গ্রামে অসহায় একটি পরিবার। ছবি: এএফপি
রাখাইনে বিগত কয়েক মাস ধরেই যুদ্ধ তীব্র হয়েছে। স্থানীয় একটি গ্রামে অসহায় একটি পরিবার। ছবি: এএফপি

গত বর্ষায় নৌকায় করে বাংলাদেশ থেকে নৌকায় করে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের শহর মংডুতে যান রোহিঙ্গা বিদ্রোহী আবু আফনা। তিনি রয়টার্সকে জানান, সেখানে পৌঁছার পর জান্তা সেনারা তাঁকে আশ্রয় দেয় ও অস্ত্র সরবরাহ করে। তিনি জানান, মংডুর সৈকতঘেঁষা এলাকায় আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় জান্তাবাহিনী ও রোহিঙ্গা যোদ্ধারা একই সঙ্গে থেকেছেন।

আবু আফনা বলেন, ‘জান্তার সঙ্গে থাকাকালে আমার মনে হতো, আমি তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, যারা আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ ও হত্যা করেছে।’ আবার আরাকান আর্মি মূলত বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন সম্প্রদায়ের সমর্থনপুষ্ট—যাদের কেউ কেউ রোহিঙ্গা নিধনের সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিল।

চলতি বছর রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আরাকান আর্মি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অন্যতম বড় বসতিটি পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন-আরএসও এবং মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ‘যুদ্ধক্ষেত্রে এক ধরনের সমঝোতা’ এবং তারা একসঙ্গে লড়াই করছে। আবু আফনা বলেন, ‘আমাদের প্রধান শত্রু মিয়ানমার সরকার নয়, রাখাইন সম্প্রদায়।’

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরগুলো থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে লড়াইয়ে যোগদানের জন্য নিয়োগ দেওয়া হলেও, তাদের অনেকে অনেক আগে থেকেই তাদের নিপীড়নকারী জান্তাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত গোষ্ঠীর হয়েই লড়ছেন।

আবু আফনার ভাষ্য, সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং অর্থ দেয়। একটি বাংলাদেশি সূত্র এবং জোরপূর্বক জান্তার হয়ে যুদ্ধ করতে যাওয়া আরেক রোহিঙ্গা যুবকও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, জান্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্বের একটি নথিপত্র দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে।

অনেক রোহিঙ্গার জন্য এটি একটি শক্তিশালী প্রলোভন। কারণ, কয়েক প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারে বসবাস করলেও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব স্বীকার করেনি দেশটির কর্তৃপক্ষ এবং তারা এখন বাংলাদেশে আশ্রয়শিবিরে বাস করছে। আবু আফনা বলেন, ‘আমরা টাকার জন্য যাইনি। আমরা চাইছিলাম নাগরিকত্বের কার্ড।’

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আশ্রয় কাজ করা একটি সহায়তা সংস্থার জুন মাসের প্রতিবেদন অনুসারে, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত আশ্রয়শিবির থেকে প্রায় ২ হাজার জনকে বিভিন্ন ‘আদর্শিক, জাতীয়তাবাদী এবং আর্থিক প্রলোভন, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, হুমকি এবং জোরপূর্বকভাবে’ জান্তার হয়ে যুদ্ধ করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। দুই রোহিঙ্গা যোদ্ধা ও জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১৩ বছরের কয়েকজন শিশুকেও জোরপূর্বক যুদ্ধে নিয়ে গেছে জান্তাবাহিনী।

নিজেদের গোলন্দাজ ইউনিটের সঙ্গে আরাকান আর্মির সদস্যরা। ছবি: আরাকান আর্মি
নিজেদের গোলন্দাজ ইউনিটের সঙ্গে আরাকান আর্মির সদস্যরা। ছবি: আরাকান আর্মি

অর্থসংকটে থাকা বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে ক্রমেই অনাগ্রহী হয়ে উঠছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, কিছু বাংলাদেশি কর্মকর্তা বিশ্বাস করেন—সশস্ত্র সংগ্রামই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার একমাত্র উপায়। এ ছাড়া কোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিলে বাংলাদেশ মিয়ানমারের ওপর প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হবে বলেও তাঁরা মনে করেন।

বাংলাদেশের সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মনজুর কাদের রয়টার্সকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগ্রামে সমর্থন দেওয়ার মাধ্যমে জান্তা এবং আরাকান আর্মিকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করা যাবে, যা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পথ সুগম করবে।’

রাখাইনে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি বেশ ভালোভাবে প্রশিক্ষিত ও ভারী অস্ত্রসজ্জিত। তারপরও তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। মংডুর দখল নেওয়ার জন্য চলমান যুদ্ধে এরই মধ্যে ছয় মাস কেটে গেছে। রোহিঙ্গা যোদ্ধারা জানিয়েছেন, তাদের অ্যামবুশ কৌশল আরাকান আর্মির অগ্রযাত্রা ধীর করেছে।

এ বিষয়ে অবগত এক বাংলাদেশি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘আরাকান আর্মি ভেবেছিল, তারা খুব দ্রুতই একটি বিশাল জয় পাবে। কিন্তু মংডু প্রমাণ করেছে যে, রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের কারণে তাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।’

চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মির মধ্যে আলোচনা শুরু করার চেষ্টা করেছিল। তবে, ব্রিগেডিয়ার (অব.) মনজুর কাদের ও আরেকটি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, সেই আলোচনা দ্রুতই ভেস্তে যায়। দুটি সূত্র জানিয়েছে, আরাকান আর্মির তরফ থেকে কৌশলে রোহিঙ্গা বসতিগুলোতে হামলার কারণে ঢাকার ক্ষোভ বাড়ছে। এ ধরনের সহিংসতা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রাখাইনে ফেরানোর প্রচেষ্টায় জটিলতা তৈরি করছে।

রাখাইনে আরাকান আর্মি ও জান্তাবাহিনীর লড়াইয়ে বাস্তুচ্যুতদের অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় একটি প্যাগোডায়। ছবি: এএফপি
রাখাইনে আরাকান আর্মি ও জান্তাবাহিনীর লড়াইয়ে বাস্তুচ্যুতদের অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় একটি প্যাগোডায়। ছবি: এএফপি

আরাকান আর্মি অবশ্য রোহিঙ্গা বসতিগুলোতে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে, তারা ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য না করে বেসামরিকদের সাহায্য করে। অন্যদিকে, কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে চলছে অস্থিরতা। আরএসও ও আরসা শিবিরের নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করছে। গোলাগুলি ও সংঘর্ষ সেখানে নিত্যদিনের ঘটনা, যা শরণার্থীদের আতঙ্কিত করছে এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।

মানবাধিকার সংগঠন ফোর্টিফাই রাইটসের পরিচালক জন কুইনলি বলেছেন, ‘শিবিরগুলোতে সহিংসতার মাত্রা ২০১৭ সালে শিবির স্থাপনের পর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।’ ফোর্টিফাইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো অন্তত ৬০ জনকে হত্যা করেছে, পাশাপাশি বিরোধীদের অপহরণ ও নির্যাতন এবং সমালোচকদের চুপ করাতে হুমকি ও হয়রানি চালিয়েছে।

বাংলাদেশে নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের পরিচালক ওয়েন্ডি ম্যাককান্স বলেছেন, ‘শিবিরে আন্তর্জাতিক তহবিল ১০ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।’ তিনি শরণার্থীদের জীবিকা অর্জনের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তা না হলে মানুষ, বিশেষত তরুণেরা সংগঠিত গোষ্ঠীগুলোতে সম্পৃক্ত হয়ে আয়ের পথ খুঁজবে।’

রয়টার্স থেকে সংক্ষেপিত অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সামরিক সক্ষমতায় চীনের সঙ্গে পেরে উঠবে না যুক্তরাষ্ট্র: পেন্টাগনের গোপন নথি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ২১
পেন্টাগনের গোপন নথি বলছে, কোনো যুদ্ধ শুরু হলে চীনের সঙ্গে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত
পেন্টাগনের গোপন নথি বলছে, কোনো যুদ্ধ শুরু হলে চীনের সঙ্গে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: সংগৃহীত

তাইওয়ানে কোনো যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করতে গেলে মার্কিন সামরিক বাহিনী চীনের কাছে পরাজিত হতে পারে। এমনটাই ইঙ্গিত মিলল পেন্টাগনের এক অতি গোপনীয় মূল্যায়ন থেকে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এক বিশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।

সম্প্রতি তাইওয়ানে চীনা আগ্রাসন পরিস্থিতি তৈরি করে মহড়া চালায় যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে দেখা গেছে, বেইজিং চাইলে মোতায়েনের আগেই মার্কিন ফাইটার স্কোয়াড্রন, বড় যুদ্ধজাহাজ এবং এমনকি উপগ্রহ নেটওয়ার্কগুলোকেও অচল করে দিতে পারে। অত্যন্ত শ্রেণিবদ্ধ এই নথির নাম হলো ‘ওভারম্যাচ ব্রিফ।’

পেন্টাগনের অফিস অব নেট অ্যাসেসমেন্টের তৈরি করা এই দলিলে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র তার উন্নত এবং মহামূল্যবান অস্ত্রের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হওয়ায় চীনের দ্রুত তৈরি করা কম দামি অস্ত্রের সামনে সে বড়ই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে আছে।

ওই প্রতিবেদনে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, সংঘাত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চীন আমেরিকান সম্পদগুলো অকেজো করে দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে। এর কয়েক দিন আগেই চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাইওয়ান প্রশ্নটি ‘পরম বিচক্ষণতার সঙ্গে সামলাতে’ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

২০২১ সালে যখন বাইডেন প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা এই ‘ওভারম্যাচ ব্রিফ’ রিপোর্টের সারসংক্ষেপ পান, তখন তিনি ‘ফ্যাকাশে’ হয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে উপস্থিত এক মার্কিন কর্মকর্তা নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, সেই কর্মকর্তা বুঝেছিলেন যে, ‘আমাদের তূণে যত কৌশল ছিল, চীনারা তার প্রতিটির জন্য একাধিক বিকল্প তৈরি করে রেখেছে।’

চীন তাইওয়ানকে অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে মনে করে এবং জোর দিয়ে বলে যে,২ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার এই দ্বীপটিকে শেষ পর্যন্ত মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হতেই হবে—প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করেও। অন্যদিকে, তাইওয়ান নিজেদের একটি সার্বভৌম, স্বাধীন দেশ হিসেবে মনে করে। তাদের বক্তব্য, তাইওয়ানের অবস্থার যেকোনো পরিবর্তন গণতান্ত্রিক উপায়ে সেখানকার জনগণের দ্বারাই নির্ধারিত হওয়া চাই, চীনের দ্বারা চাপানো কোনোভাবেই নয়।

যদিও চীন তাইওয়ান আক্রমণ করার কোনো সময়সীমা দেয়নি, তবুও পশ্চিমা শক্তিগুলোর মূল্যায়ন ও গোয়েন্দা তথ্য দাবি করে যে, চীন সম্ভবত ২০২৭ সালের কাছাকাছি সময়ে তাইওয়ান দখলের জন্য প্রচেষ্টা শুরু করতে পারে—যা সি চিন পিংয়ের সামরিক আধুনিকীকরণের লক্ষ্যের সঙ্গে মিলে যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০ বছরে চীন যে বিপুলসংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র মজুত করেছে, তা দিয়ে তারা তাইওয়ানে পৌঁছানোর আগেই আমেরিকার অনেক উন্নত অস্ত্র, যেমন বিমানবাহী রণতরীগুলো ধ্বংস করে দিতে পারে। যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি মহড়াগুলোতে দেখা গেছে, এমনকি মার্কিন নৌবাহিনীর সব থেকে নতুন রণতরীটিও প্রায়শই চীনা আক্রমণ সামলাতে সক্ষম হবে না—এমনটাই জানাচ্ছে সেই মূল্যায়ন।

এতে উদাহরণ হিসেবে আমেরিকার সব থেকে নতুন ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড রণতরীটির উল্লেখ করা হয়েছে, যা তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার এবং যা ২০২২ সালে মোতায়েন করা হয়েছে। নতুন প্রযুক্তি—যার মধ্যে আরও উন্নত পারমাণবিক চুল্লিও রয়েছে—তা থাকা সত্ত্বেও এই রণতরীটি চীনা হামলা থেকে রক্ষা পেতে পারবে না।

প্রতিবেদন অনুসারে, ভেনেজুয়েলার মতো দুর্বল শক্তির বিরুদ্ধে কার্যকরী হলেও ফোর্ড রণতরীটি ‘আক্রমণের নতুন রূপে মারাত্মকভাবে অরক্ষিত।’ এ ছাড়া, এই প্রতিবেদনে বাস্তব-জগতের উদাহরণও টানা হয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধ পশ্চিমা অস্ত্রশস্ত্রের পরীক্ষা নিচ্ছে এবং আমেরিকার প্রতিপক্ষরা তাদের দুর্বলতা ও শক্তি উভয় সম্পর্কেই জানতে পারছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইউক্রেনের যুদ্ধ দেখিয়ে দিয়েছে যে ট্যাংকগুলো কতটা অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।’ এই মূল্যায়নে আরও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, একটি প্রধান শক্তির সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের জন্য প্রয়োজনীয় গতি এবং পরিমাণে অস্ত্র ও গোলাবারুদ তৈরি করার শিল্প ক্ষমতা আমেরিকার আর নেই।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ওয়াশিংটন বেইজিং এবং মস্কোর তুলনায় দ্রুত উন্নত অস্ত্র তৈরিতে পিছিয়ে পড়ছে, কারণ তারা ‘মহামূল্যবান ও অরক্ষিত অস্ত্রের ওপর অতি-নির্ভরশীল।’ এর আগে, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ চীনের বিরুদ্ধে পেন্টাগনের যুদ্ধ মহড়ার প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘আমরা প্রতিবারই হারি’, এবং তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন—চীনের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিমানবাহী রণতরীগুলো সহজেই ধ্বংস করতে পারে।

প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েল ও ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানানোর ফলে ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত ইতিমধ্যেই কমে যাওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঝুঁকিতে আছে। সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান পূর্বে সতর্ক করেছিলেন যে, চীনের সঙ্গে যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ গোলাবারুদের মজুত দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।

পেন্টাগনের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, এখন ক্রুজ এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রায় প্রতিটি বিভাগেই চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে অনেক এগিয়ে, যদিও উভয় দেশেই প্রায় ৪০০টি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।

জুনে ইরানের ১২ দিনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলকে রক্ষা করতে গিয়ে ওয়াশিংটন তার উচ্চ-উচ্চতার ক্ষেপণাস্ত্র ডিটারেন্ট–গুলোর প্রায় এক-চতুর্থাংশ খরচ করে ফেলেছে বলেও খবর আছে। এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট পেন্টাগন এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ পর্যন্ত কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

তথ্যসূত্র: দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আরও ৩০০ কোটি রুপির ইসরায়েলি ‘হেরন মার্ক টু’ ড্রোন কিনছে ভারত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ৩৯
ইসরায়েলের তৈরি হেরন মার্ক টু ড্রোন। ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েলের তৈরি হেরন মার্ক টু ড্রোন। ছবি: সংগৃহীত

আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে ড্রোনই এখন চোখ, কান এবং অনেক ক্ষেত্রে হাতিয়ার। সীমান্ত নজরদারি থেকে শুরু করে নির্ভুল হামলা—সব ক্ষেত্রেই পাইলটবিহীন উড়ুক্কু যানের ভূমিকা ক্রমশ বাড়ছে। সেই বাস্তবতায় জরুরি ক্রয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইসরায়েল থেকে আরও কয়েকটি উন্নত সংস্করণের ‘হেরন মার্ক টু’ ড্রোন কিনছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

ভারতীয় গণমাধমের খবরে বলা হয়েছে, গত ২৩ বছরে অন্তত ১৪ বার দুর্ঘটনার মুখে পড়েছে ইসরায়েলের তৈরি ‘হেরন’ ড্রোন। ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ১২টি ড্রোন হারিয়েছে ভারতীয় সেনারা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানব-ত্রুটি ও ইঞ্জিনের ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়েছে। চলতি বছরের নভেম্বরে রাজস্থানের জয়সলমীরে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে জরুরি অবতরণ করাতে হয় বিমানবাহিনীর একটি ‘হেরন’ ড্রোনকে।

এর আগে, গত এপ্রিলে জম্মুর সাতোয়ারি বিমানঘাঁটির একটি টাওয়ারে ধাক্কা লেগে ধ্বংস হয় সেনাবাহিনীর পরিচালিত আর একটি ‘হেরন’। ওই ঘটনায় গুরুতর আহত হন নায়েক পদমর্যাদার সেনাকর্মী সুরিন্দর পাল। ২০১৭ সালে আবার গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশনের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) পেরিয়ে তিব্বতের দিকে চলে যায় একটি ড্রোন।

তবু সাবেক সেনাকর্তা ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানের আড়ালে চাপা পড়ে যাচ্ছে ‘হেরন’-এর সাফল্যের গল্প। কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানে এই ড্রোনের সাফল্যের হার ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ। অনেক ক্ষেত্রে মার্কিন ‘এমকিউ-৯ রিপার’-এর সমতুল্য পারফরম্যান্স দিলেও, দাম তুলনায় অনেক কম। সে কারণেই স্থল ও বিমানবাহিনী পরে এ বার নৌসেনার বহরেও ‘হেরন’ যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রাণলয়ের সূত্র উল্লেখ করে গণমাধ্যমে জানিয়েছে, প্রায় ৩০০ কোটি রুপির চুক্তির মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে ‘হেরন মার্ক টু’ কেনা হতে পারে। নতুন এই ড্রোন টানা প্রায় ৩০ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম এবং প্রায় ৪৫ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে বিস্তীর্ণ এলাকার স্পষ্ট নজরদারি চালাতে পারে। এতে ট্যাঙ্ক-বিধ্বংসী ‘স্পাইক-এনএলওএস’ ক্ষেপণাস্ত্রসহ উন্নত সেন্সর ও গোয়েন্দা সরঞ্জাম থাকবে। ‘প্রজেক্ট চিতা’ নামের যৌথ উদ্যোগে ভবিষ্যতে ভারত এই ড্রোন তৈরির পরিকল্পনাও করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

অং সান সু চি হয়তো মারা গেছে, আশঙ্কা ছেলের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ২০
সু চির ছেলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তাঁর মা হয়তো এরই মধ্যে মারা গেছেন। ছবি: সংগৃহীত
সু চির ছেলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তাঁর মা হয়তো এরই মধ্যে মারা গেছেন। ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী ও শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চি শরীর ভালো যাচ্ছে না। জান্তা সরকারের কারাগারে আটক এই নেত্রীর কোনো সংবাদই পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় তাঁর ছেলে কিম আরিসের ভয়, তাঁর মা হয়তো মারা গেছেন, কিংবা কোনো এক সময় মারা গেলে সেই খবরটিও তিনি জানতে পারবেন না।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে আরিস বলেছেন, তাঁর ৮০ বছর বয়সী মায়ের সঙ্গে বিগত কয়েক বছর কোনো কথাই হয়নি। ২০২১ সালের সেনা অভ্যুত্থানে সু কির সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তাঁর হৃৎপিণ্ড, অস্থি আর মাড়ির সমস্যা নিয়ে কেবল বিক্ষিপ্ত, পরোক্ষ কিছু তথ্যই তিনি পেয়েছেন।

এ মাসের শেষদিকে মিয়ানমারের জান্তা সরকার যে নির্বাচন আয়োজন করতে চাইছে, বিদেশি সরকারগুলো সেটিকে অবৈধ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। আরিসও এমনটাই মনে করেন। তবে তিনি আরও মনে করেন, এতেই হয়তো তাঁর মায়ের দুর্দশা কিছুটা কমানোর সুযোগ তৈরি হতে পারে।

টোকিওতে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘তাঁর স্বাস্থ্যগত সমস্যা চলছেই। গত দুই বছরে কেউ তাঁকে দেখেনি। তাঁর আইনি দল দূরে থাক, পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। আমার যা মনে হচ্ছে, তিনি হয়তো ইতিমধ্যে মারাও গিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ধারণা, আমার মাকে নিয়ে (মিয়ানমারের জান্তা নেতা) মিন অং হ্লাইংয়ের নিজস্ব উদ্দেশ্য আছে। নির্বাচনের আগে বা পরে সাধারণ মানুষকে শান্ত করতে যদি তিনি আমার মাকে মুক্তি দিতে চান কিংবা গৃহবন্দী করতে চান, তবে অন্তত সেটাই কিছু একটা হবে।’

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চেয়ে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের মুখপাত্রকে ফোন করা হলেও তিনি তাতে সাড়া দেননি। জানা যায়, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বড় দিন কিংবা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা উপলক্ষে বন্দী মুক্তি দেওয়ার পুরোনো অভ্যাস আছে।

২০১০ সালে একটি নির্বাচনের মাত্র কয়েক দিন পরই শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি মুক্তি পেয়েছিলেন। এর আগে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে ইয়াঙ্গুনের ইনায়া হ্রদের তীরে তাঁর ঔপনিবেশিক ধাঁচের পারিবারিক বাড়িতে বন্দী ছিলেন। এরপর ২০১৫ সালের নির্বাচনে তিনি মিয়ানমারের কার্যত নেত্রী হন। সেটি ছিল গত পঁচিশ বছরে প্রথম প্রকাশ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট, যদিও তাঁর দেশের মুসলিম রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে আন্তর্জাতিক মহলে তাঁর ভাবমূর্তি পরবর্তীকালে কালিমালিপ্ত হয়।

এদিকে, ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারজুড়ে চরম অস্থিরতা চলছে। এই অস্থিরতা সশস্ত্র বিদ্রোহের জন্ম দিয়েছে, যার ফলে দেশটির বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখন বিদ্রোহীদের দখলে। সু চি বর্তমানে রাষ্ট্রদ্রোহ, দুর্নীতি আর নির্বাচন জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগে ২৭ বছরের সাজা খাটছেন; তিনি অবশ্য সব অভিযোগই অস্বীকার করে এসেছেন।

আরিস জানিয়েছেন, তাঁর বিশ্বাস সু কি রাজধানী নেপিদোতেই বন্দী। দুই বছর আগে তাঁর মায়ের কাছ থেকে পাওয়া শেষ চিঠিতে গ্রীষ্ম ও শীতে তাঁর কামরা অসহ্য তাপমাত্রার কথা তিনি লিখেছিলেন। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংঘাতের কারণে আরিস শঙ্কিত যে, মানুষ সম্ভবত মিয়ানমারের কথা ভুলে যাচ্ছে।

তিনি আসন্ন নির্বাচনকে কাজে লাগাতে চাইছেন। অভ্যুত্থানের পর এই প্রথম নির্বাচন, যা ২৮ ডিসেম্বর থেকে ধাপে ধাপে শুরু হবে। এই সুযোগে তিনি জাপানসহ বিদেশি সরকারগুলোকে জান্তার ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে এবং তাঁর মায়ের মুক্তির দাবি জানাতে আহ্বান জানাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফলের দোকানদার ও বেকার ছেলে: অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে হামলাকারী সম্পর্কে যা জানা গেল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩৪
বাবা সাজিদ আকরাম ও ছেলে নাভিদ আকরাম। ছবি: সংগৃহীত
বাবা সাজিদ আকরাম ও ছেলে নাভিদ আকরাম। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদিদের হানুক্কা উৎসব চলাকালে প্রাণঘাতী হামলায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় হামলাকারীদের পরিচয় প্রকাশ করেছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, হামলাকারী দুজন সম্পর্কে বাবা ও ছেলে।

পুলিশ জানায়, হামলাকারীরা হলেন ৫০ বছর বয়সী সাজিদ আকরাম ও তাঁর ২৪ বছর বয়সী ছেলে নাভিদ আকরাম। সাজিদ আকরাম পেশায় ফলবিক্রেতা ও নাভিদ পড়া শেষে এখন কিছু করছিলেন না।

সাজিদ ঘটনাস্থলে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। অন্যদিকে নাভিদকে আটক করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি গুরুতর হলেও স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছেন।

পুলিশের এক বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, দুজন হামলাকারী ভিড়ের ওপর দীর্ঘনল বন্দুক ব্যবহার করে গুলি চালান। সাজিদ আকরামের নামে ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্রের বৈধ লাইসেন্স ছিল। হামলায় এসব অস্ত্রই ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ।

দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই দুজন পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছিলেন, তাঁরা দক্ষিণ উপকূলে মাছ ধরতে যাচ্ছেন।

অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্ক জানান, সাজিদ আকরাম ১৯৯৮ সালে শিক্ষার্থী ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় পা রাখেন। ২০০১ সালে সেটি পার্টনার ভিসায় রূপান্তরিত হয়। এরপর থেকে রেসিডেন্ট রিটার্ন ভিসাতে দেশটিতে বসবাস করে আসছিলেন তিনি।

নাভিদের মা ভেরেনা জানান, গুলির ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে রোববার সকালে ছেলে শেষবারের মতো পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তিনি বলেন, ‘ও আমাকে ফোন করে বলেছিল, মা, আমি একটু সাঁতার কেটেছি। স্কুবা ডাইভিং করেছি। আমরা এখন খেতে যাচ্ছি। আজ খুব গরম। বাড়িতেই থাকব।’

ভেরেনা আরও জানান, ছেলে তাঁকে বলেছিল, বাবার সঙ্গে জারভিস বে এলাকায় আছে।

ঘটনাস্থলের ছবিতে ছেলেকে শনাক্ত করতে পারেননি ভেরেনা। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সহিংসতা বা উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ছেলের জড়িত থাকার কথা তিনি বিশ্বাস করেন না।

ভেরেনা বলেন, ‘ওর কাছে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র নেই। ও বাইরে ঘোরাফেরা করে না। বন্ধুদের সঙ্গে মেশে না। মদ্যপান করে না, ধূমপান করে না, খারাপ জায়গায় যায় না। ও শুধু কাজে যায়, বাড়ি ফেরে, শরীরচর্চা করে, এই পর্যন্তই।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে কেউ এমন একজন ছেলেই চাইবে। আমার ছেলে খুব ভালো।’

দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাভিদ আকরাম পেশায় একজন ইটশ্রমিক ছিলেন। তবে প্রায় দুই মাস আগে তাঁর কর্মস্থল দেউলিয়া হয়ে পড়ায় তিনি চাকরি হারান। এরপর থেকে নাভিদ নতুন কাজের খোঁজ করছিলেন বলে জানান তাঁর মা।

ভেরেনা আরও জানান, তাঁর ছেলে ক্যাব্রামাটা হাই স্কুলে পড়াশোনা করেছে। তিনি বলেন, ‘নাভিদ খুব একটা মিশুক ছিল না এবং অনলাইনে বেশি সময় কাটাত বলেও মনে হয়নি। তাঁর শখের মধ্যে ছিল মাছ ধরা, স্কুবা ডাইভিং, সাঁতার কাটা ও শরীরচর্চা।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ২০২২ সালের একটি পোস্টে নাভিদ আকরামকে ট্যাগ করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়, তিনি পশ্চিম সিডনির হেকেনবার্গে অবস্থিত আল-মুরাদ ইনস্টিটিউট থেকে কোরআন শিক্ষা সম্পন্ন করেছেন।

২০০৪ সালে কেনা তিন কক্ষের একটি বাড়িতে বসবাস পরিবারটির। এর আগে ক্যাব্রামাটায় থাকত তারা। ওই বাড়িতে বাবা–মা, ২২ বছর বয়সী এক বোন ও ২০ বছর বয়সী এক ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন নাভিদ। তাঁর মা গৃহিণী।

গত রোববার অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে পরিচিত সার্ফিং সৈকতে এই গুলির ঘটনা ঘটে। দেশটির সমুদ্রপ্রেমের প্রতীক হিসেবে পরিচিত পর্যটনকেন্দ্রটিতে হঠাৎ এই হামলায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী ছিল ১০ বছরের এক কন্যাশিশু। সে একটি শিশু হাসপাতালে মারা যায়। সবচেয়ে বেশি বয়সী নিহত ব্যক্তির বয়স ছিল ৮৭ বছর।

এ ঘটনায় আরও ৪২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আনিস আলমগীর, শাওনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে থানায় অভিযোগ

আজকের রাশিফল: ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঠকানোর চেষ্টা করবে, সঙ্গী ঘরের কাজ করিয়ে নেবে

হাদির জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায়, সিঙ্গাপুরে যাত্রা দুপুরে

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয় মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত