Ajker Patrika

রয়টার্সের প্রতিবেদন /আশ্রয় শিবির থেকে মিয়ানমারে যুদ্ধে যাচ্ছে অনেক রোহিঙ্গা

বাংলাদেশের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের একাংশ। ছবি: এএফপি
বাংলাদেশের রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের একাংশ। ছবি: এএফপি

গত জুলাই মাসের কোনো একদিন, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির থেকে রফিক গোপনে পালিয়ে ছোট একটি নৌকায় করে মিয়ানমারে প্রবেশ করেন। তাঁর গন্তব্য ছিল গৃহযুদ্ধ বিধ্বস্ত রাখাইন। যেখান থেকে তিনি ২০১৭ সালে পালিয়ে এসেছিলেন।

কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরগুলোতে বসবাসরত ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার মধ্যে রফিকের মতো হাজারো বিদ্রোহী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ বছর সেখানে উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম ও সহিংসতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে বলে—রয়টার্সকে জানিয়েছেন বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত চারটি সূত্র। এ ছাড়া দুটি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে।

রফিক (৩২) রয়টার্সকে বলেন, ‘আমাদের ভূমি ফিরে পেতে, আমাদের লড়াই করতেই হবে।’ রফিক সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় শিবিরে ফিরে এসেছেন। কারণ, সেখানে তিনি যুদ্ধ করার সময় পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে আর কোনো পথ নেই।’

ধর্মীয় বিশ্বাসের দিক থেকে রোহিঙ্গারা মূলত মুসলিম এবং তাঁরা বিশ্বের বৃহত্তম ‘রাষ্ট্রহীন’ জনগোষ্ঠী। ২০১৬ সালে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যা থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে। মিয়ানমারে দীর্ঘদিনের বিদ্রোহ ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর আরও জোরালো হয়েছে। বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান এই জটিল সংঘাতে এখন রোহিঙ্গা যোদ্ধারাও যুক্ত হয়েছে।

অনেক রোহিঙ্গাই তাদের পূর্বতন নির্যাতনকারী জান্তাবাহিনীর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে রাখাইন রাজ্যের বিদ্রোহী আরাকান আর্মির—যারা আবার সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ—বিরুদ্ধে লড়ছে। রাখাইন রাজ্যের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণকারী এই আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে তাদের এই লড়াই নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

রয়টার্স প্রথমবারের মতো, বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরগুলো থেকে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ৩ থেকে ৫ হাজার যোদ্ধা সংগ্রহের ব্যাপকতার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া, আরাকান আর্মির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ব্যর্থ আলোচনা, জান্তার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের অর্থ এবং নাগরিকত্বের প্রস্তাব এবং বিদ্রোহীদের সঙ্গে কিছু বাংলাদেশি কর্মকর্তার সহযোগিতা সম্পর্কেও নতুন তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ সরকার রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে কোনো উত্তর দেয়নি। তবে মিয়ানমারের জান্তা এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা কোনো রোহিঙ্গা মুসলিমকে বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেয়নি। জান্তা বলেছে, ‘মুসলিম বাসিন্দারা সুরক্ষা চেয়েছিলেন। তাই তাদের নিজ নিজ গ্রাম ও অঞ্চল রক্ষার জন্য মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শাহাব এনাম খান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দুটি প্রধান সশস্ত্র গোষ্ঠী—রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)—কক্সবাজারের শিবিরে খুব একটা সমর্থন পায় না।’ তবে এই বিষয়ে একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, আশ্রয় শিবিরে সশস্ত্র রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের উপস্থিতি এবং অস্ত্রের সরবরাহ বাংলাদেশের জন্য বিপদ হিসেবে দেখা দিতে পারে।

আশ্রয় শিবিরগুলোতে প্রতি বছর ৩০ হাজার শিশু জন্মগ্রহণ করছে। দারিদ্র্য ও সহিংসতার কারণে অসন্তুষ্ট শরণার্থীরা সহজেই অরাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা উগ্রপন্থী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়তে পারে এবং অপরাধের জগতে ঠেলে দেওয়া হতে পারে বলে মনে করেন শাহাব এনাম খান। তিনি বলেন, ‘এর প্রভাব আঞ্চলিক দেশগুলোতেও পড়বে।’

রাখাইনে বিগত কয়েক মাস ধরেই যুদ্ধ তীব্র হয়েছে। স্থানীয় একটি গ্রামে অসহায় একটি পরিবার। ছবি: এএফপি
রাখাইনে বিগত কয়েক মাস ধরেই যুদ্ধ তীব্র হয়েছে। স্থানীয় একটি গ্রামে অসহায় একটি পরিবার। ছবি: এএফপি

গত বর্ষায় নৌকায় করে বাংলাদেশ থেকে নৌকায় করে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের শহর মংডুতে যান রোহিঙ্গা বিদ্রোহী আবু আফনা। তিনি রয়টার্সকে জানান, সেখানে পৌঁছার পর জান্তা সেনারা তাঁকে আশ্রয় দেয় ও অস্ত্র সরবরাহ করে। তিনি জানান, মংডুর সৈকতঘেঁষা এলাকায় আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় জান্তাবাহিনী ও রোহিঙ্গা যোদ্ধারা একই সঙ্গে থেকেছেন।

আবু আফনা বলেন, ‘জান্তার সঙ্গে থাকাকালে আমার মনে হতো, আমি তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আছি, যারা আমাদের মা-বোনদের ধর্ষণ ও হত্যা করেছে।’ আবার আরাকান আর্মি মূলত বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন সম্প্রদায়ের সমর্থনপুষ্ট—যাদের কেউ কেউ রোহিঙ্গা নিধনের সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিল।

চলতি বছর রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আরাকান আর্মি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অন্যতম বড় বসতিটি পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন-আরএসও এবং মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ‘যুদ্ধক্ষেত্রে এক ধরনের সমঝোতা’ এবং তারা একসঙ্গে লড়াই করছে। আবু আফনা বলেন, ‘আমাদের প্রধান শত্রু মিয়ানমার সরকার নয়, রাখাইন সম্প্রদায়।’

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরগুলো থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে লড়াইয়ে যোগদানের জন্য নিয়োগ দেওয়া হলেও, তাদের অনেকে অনেক আগে থেকেই তাদের নিপীড়নকারী জান্তাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত গোষ্ঠীর হয়েই লড়ছেন।

আবু আফনার ভাষ্য, সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং অর্থ দেয়। একটি বাংলাদেশি সূত্র এবং জোরপূর্বক জান্তার হয়ে যুদ্ধ করতে যাওয়া আরেক রোহিঙ্গা যুবকও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারা জানিয়েছেন, জান্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্বের একটি নথিপত্র দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে।

অনেক রোহিঙ্গার জন্য এটি একটি শক্তিশালী প্রলোভন। কারণ, কয়েক প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারে বসবাস করলেও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব স্বীকার করেনি দেশটির কর্তৃপক্ষ এবং তারা এখন বাংলাদেশে আশ্রয়শিবিরে বাস করছে। আবু আফনা বলেন, ‘আমরা টাকার জন্য যাইনি। আমরা চাইছিলাম নাগরিকত্বের কার্ড।’

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আশ্রয় কাজ করা একটি সহায়তা সংস্থার জুন মাসের প্রতিবেদন অনুসারে, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত আশ্রয়শিবির থেকে প্রায় ২ হাজার জনকে বিভিন্ন ‘আদর্শিক, জাতীয়তাবাদী এবং আর্থিক প্রলোভন, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, হুমকি এবং জোরপূর্বকভাবে’ জান্তার হয়ে যুদ্ধ করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। দুই রোহিঙ্গা যোদ্ধা ও জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১৩ বছরের কয়েকজন শিশুকেও জোরপূর্বক যুদ্ধে নিয়ে গেছে জান্তাবাহিনী।

নিজেদের গোলন্দাজ ইউনিটের সঙ্গে আরাকান আর্মির সদস্যরা। ছবি: আরাকান আর্মি
নিজেদের গোলন্দাজ ইউনিটের সঙ্গে আরাকান আর্মির সদস্যরা। ছবি: আরাকান আর্মি

অর্থসংকটে থাকা বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে ক্রমেই অনাগ্রহী হয়ে উঠছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, কিছু বাংলাদেশি কর্মকর্তা বিশ্বাস করেন—সশস্ত্র সংগ্রামই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরার একমাত্র উপায়। এ ছাড়া কোনো বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিলে বাংলাদেশ মিয়ানমারের ওপর প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হবে বলেও তাঁরা মনে করেন।

বাংলাদেশের সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মনজুর কাদের রয়টার্সকে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগ্রামে সমর্থন দেওয়ার মাধ্যমে জান্তা এবং আরাকান আর্মিকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করা যাবে, যা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পথ সুগম করবে।’

রাখাইনে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি বেশ ভালোভাবে প্রশিক্ষিত ও ভারী অস্ত্রসজ্জিত। তারপরও তাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। মংডুর দখল নেওয়ার জন্য চলমান যুদ্ধে এরই মধ্যে ছয় মাস কেটে গেছে। রোহিঙ্গা যোদ্ধারা জানিয়েছেন, তাদের অ্যামবুশ কৌশল আরাকান আর্মির অগ্রযাত্রা ধীর করেছে।

এ বিষয়ে অবগত এক বাংলাদেশি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘আরাকান আর্মি ভেবেছিল, তারা খুব দ্রুতই একটি বিশাল জয় পাবে। কিন্তু মংডু প্রমাণ করেছে যে, রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের কারণে তাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।’

চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মির মধ্যে আলোচনা শুরু করার চেষ্টা করেছিল। তবে, ব্রিগেডিয়ার (অব.) মনজুর কাদের ও আরেকটি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, সেই আলোচনা দ্রুতই ভেস্তে যায়। দুটি সূত্র জানিয়েছে, আরাকান আর্মির তরফ থেকে কৌশলে রোহিঙ্গা বসতিগুলোতে হামলার কারণে ঢাকার ক্ষোভ বাড়ছে। এ ধরনের সহিংসতা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রাখাইনে ফেরানোর প্রচেষ্টায় জটিলতা তৈরি করছে।

রাখাইনে আরাকান আর্মি ও জান্তাবাহিনীর লড়াইয়ে বাস্তুচ্যুতদের অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় একটি প্যাগোডায়। ছবি: এএফপি
রাখাইনে আরাকান আর্মি ও জান্তাবাহিনীর লড়াইয়ে বাস্তুচ্যুতদের অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন স্থানীয় একটি প্যাগোডায়। ছবি: এএফপি

আরাকান আর্মি অবশ্য রোহিঙ্গা বসতিগুলোতে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং জানিয়েছে, তারা ধর্মের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য না করে বেসামরিকদের সাহায্য করে। অন্যদিকে, কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে চলছে অস্থিরতা। আরএসও ও আরসা শিবিরের নিয়ন্ত্রণের জন্য লড়াই করছে। গোলাগুলি ও সংঘর্ষ সেখানে নিত্যদিনের ঘটনা, যা শরণার্থীদের আতঙ্কিত করছে এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।

মানবাধিকার সংগঠন ফোর্টিফাই রাইটসের পরিচালক জন কুইনলি বলেছেন, ‘শিবিরগুলোতে সহিংসতার মাত্রা ২০১৭ সালে শিবির স্থাপনের পর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।’ ফোর্টিফাইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছর সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো অন্তত ৬০ জনকে হত্যা করেছে, পাশাপাশি বিরোধীদের অপহরণ ও নির্যাতন এবং সমালোচকদের চুপ করাতে হুমকি ও হয়রানি চালিয়েছে।

বাংলাদেশে নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের পরিচালক ওয়েন্ডি ম্যাককান্স বলেছেন, ‘শিবিরে আন্তর্জাতিক তহবিল ১০ বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।’ তিনি শরণার্থীদের জীবিকা অর্জনের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘তা না হলে মানুষ, বিশেষত তরুণেরা সংগঠিত গোষ্ঠীগুলোতে সম্পৃক্ত হয়ে আয়ের পথ খুঁজবে।’

রয়টার্স থেকে সংক্ষেপিত অনূদিত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফিলিস্তিনপন্থী প্ল্যাকার্ড হাতে এবার লন্ডনে গ্রেপ্তার গ্রেটা থুনবার্গ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লন্ডনে গ্রেপ্তারের মুহূর্তে গ্রেটা থুনবার্গ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
লন্ডনে গ্রেপ্তারের মুহূর্তে গ্রেটা থুনবার্গ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

লন্ডনে ফিলিস্তিনপন্থী এক বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার সময় সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গকে গ্রেপ্তার করেছে ব্রিটিশ পুলিশ। মঙ্গলবার সকালে (২৩ ডিসেম্বর) লন্ডনের ফেনচার্চ স্ট্রিটে একটি বিমা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ের সামনে এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-এর প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শনের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ২২ বছর বয়সী গ্রেটা থুনবার্গ বিক্ষোভ শুরুর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তিনি মাটিতে বসে একটি প্ল্যাকার্ড ধরে ছিলেন। প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল—‘আমি প্যালেস্টাইন অ্যাকশন বন্দীদের সমর্থন করি। আমি গণহত্যার বিরোধিতা করি।’

পুলিশ দাবি করেছে, গ্রেটা থুনবার্গের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডের বার্তাটি সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০০-এর ১৩ ধারায় নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রতি সমর্থন প্রকাশের শামিল।

এর আগে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আরও দুই কর্মীকে ‘অপরাধমূলক ক্ষতিসাধনের’ অভিযোগে আটক করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করে অ্যাসপেন ইন্স্যুরেন্স নামের ওই ভবনের সামনের অংশে লাল রং ছিটিয়ে দেন। পুলিশ জানায়, হাতুড়ি ও লাল রং ব্যবহার করে ভবনটির ক্ষতি করা হয়েছে।

‘প্রিজনার্স ফর প্যালেস্টাইন’ নামের একটি প্রচারগোষ্ঠী জানিয়েছে, অ্যাসপেন ইন্স্যুরেন্সকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, কারণ প্রতিষ্ঠানটি ইসরায়েলি অস্ত্র প্রস্তুতকারক এলবিট সিস্টেমসের যুক্তরাজ্য শাখাকে বিমা সেবা দিচ্ছিল। সংগঠনটি আরও জানায়, প্যালেস্টাইন অ্যাকশন-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বন্দী বর্তমানে অনশন কর্মসূচিতে রয়েছেন। মোট ৮ জন বন্দী অনশন শুরু করেছিলেন। এর মধ্যে দুজন ৫২ তম দিনে পৌঁছেছেন এবং তাঁদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আশঙ্কাজনক। গুরুতর ঝুঁকির কারণে তিনজন অনশন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্রেটা থুনবার্গকে পরে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে এবং তাঁকে আগামী মার্চ মাসে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। তবে অধিকারকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন—গত এক বছরে হাজারো মানুষ ‘আই সাপোর্ট প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করলেও, গ্রেটার ক্ষেত্রেই কেন সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ করা হলো।

এদিকে অনশনরত বন্দীদের পরিবার ও সমর্থকেরা ব্রিটেনের বিচারমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে বৈঠকের দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, অনশন সংকট নিরসনে বৈঠক না করে সরকার নিজস্ব নীতিমালা লঙ্ঘন করছে। গ্রেটা থুনবার্গ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যুক্তিসংগত এই দাবিগুলো মেনে নিলে বন্দীদের মুক্তির পথ তৈরি হবে। গণহত্যা থামাতে যারা নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করছে, রাষ্ট্রের উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো।’

উল্লেখ্য, এর আগে অ্যালিয়াঞ্জ ও অ্যাভিভা নামে দুটি বড় বিমা প্রতিষ্ঠান এলবিট সিস্টেমসের যুক্তরাজ্য শাখার সঙ্গে তাদের বিমা চুক্তি বাতিল করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলি অস্ত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ইউরোপজুড়ে চাপ বাড়ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রেড স্কয়ারে কেন গায়ে আগুন দিলেন রুশ প্রতিরক্ষা কারখানার মালিক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাশিয়ার বিখ্যাত রেড স্কয়ার। ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার বিখ্যাত রেড স্কয়ার। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার ৭৫ বছর বয়সী বিজ্ঞানী ভ্লাদিমির আর্সেনেভ কেন মস্কোর রেড স্কয়ারে নিজের ওপর আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলেন, সেই বিষয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রয়টার্স। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, দেশটির প্রতিরক্ষা খাতের তীব্র চাপেই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন আর্সেনেভ।

আর্সেনেভ মূলত মস্কো-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ভোলনা সেন্ট্রাল সায়েন্টিফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর প্রধান। এই প্রতিষ্ঠানটি এমন সব হেলমেট রেডিও কন্ট্রোল ডিভাইস উপাদান করে, যেগুলো যুদ্ধ ক্ষেত্রে ট্যাংক ক্রুরা ব্যবহার করেন।

২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের সময় আর্সেনেভের কোম্পানিতে একের পর এক প্রতিরক্ষা আদেশ আসতে থাকে। কিন্তু সেই আদেশগুলো তাঁর কাছে বিষের মতো জটিল ও বিপজ্জনক ছিল বলে জানিয়েছেন রয়টার্সকে। তাঁকে উৎপাদন দ্রুত বাড়াতে হয়েছিল এবং আদেশ অনুযায়ী রেডিও ডিভাইস কন্ট্রোলগুলো রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত সময়সীমা এবং মূল্যে ডেলিভারি দিতে হয়েছিল। ব্যর্থতার কোনো সুযোগ ছিল না।

এদিকে ২০২৩ সালের বসন্তে আর্সেনেভের কারখানা উৎপাদনে পিছিয়ে পড়ে এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। সংস্থাটি তখন দেউলিয়া হওয়ার পথে। এ অবস্থায় ২০২৪ সালে ২৬ জুলাই মস্কোর রেড স্কয়ারে যান আর্সেনেভ। ক্রেমলিনের বাইরেই সোভিয়েত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা লেনিনের সমাধির কাছে নিজের শরীরে তিনি আগুন ধরিয়ে দেন। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় পরে তিনি কয়েক সপ্তাহ হাসপাতালে ছিলেন।

আর্সেনেভ বলেন, ‘আমাদের কাজ ঠিকঠাক চলছে, আমরা আদেশ পূরণ করছি, তারপরও কেন আমরা ডুবে যাচ্ছি। সম্ভবত সমস্যা আছে।’ শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর ক্রেমলিন ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আর্সেনেভের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

তবে ওই ঘটনায় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পের চাপ স্পষ্ট হয়েছে বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ায় অন্তত ৩৪ জনকে রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা আদেশে বিঘ্ন ঘটানোর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ১১ জনই কোম্পানির প্রধান।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন—ক্রেমলিনের নীতি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রোস্টেকের মাধ্যমে কঠোর নিয়ন্ত্রণ, উদ্ভাবন ও আধুনিকীকরণের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। রেডিও কন্ট্রোল ডিভাইস উৎপাদনের অতিরিক্ত চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল আর্সেনেভের প্রতিষ্ঠান। উৎপাদন বাড়ানোর প্রচেষ্টা এবং সরকারের সঙ্গে মূল্য নিয়ে দর-কষাকষি কোম্পানিটিকে আর্থিক সংকটে ফেলে। একপর্যায়ে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে অক্ষম এই প্রতিষ্ঠানটি মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়ে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পে চাপের উদাহরণ আরও দেখা যায় দেশটির নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভের বক্তব্যে। ২০২৩ সালের মার্চে শিল্প নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি স্তালিনের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন একটি টেলিগ্রাম পড়ে শোনান, যেখানে সময়মতো অস্ত্র সরবরাহ করতে ব্যর্থ কোম্পানিকে ‘গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে’ বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল।

চিকিৎসার মধ্যে থেকেও আর্সেনেভকে এখনো তাঁর দায়িত্ব পালন করে যেতে হচ্ছে। তবে আদালতের শুনানিতে অংশগ্রহণই এখন তাঁর দিনের প্রধান কাজ। এ ছাড়া রেড স্কয়ারের মতো সংবেদনশীল স্থানে অনুমোদনহীন প্রতিবাদ করার জন্য তাঁকে বিপুল পরিমাণ জরিমানা করা হয়েছে।

এই ঘটনাটি রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পে প্রশাসনিক চাপ, সময়সীমার বাধ্যবাধকতা, আর্থিক অস্থিতিশীলতা ও আমলাতন্ত্রের চরম বাস্তবতা তুলে ধরেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নাগরিকত্বের জন্য বসবাসের শর্ত দ্বিগুণ করল জাপান

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

জাপানে নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশিদের জন্য বসবাসের ন্যূনতম সময় দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছে সরকার। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, জাপানের নাগরিকত্ব পেতে হলে বিদেশিদের দেশটিতে অন্তত ১০ বছর বসবাস করতে হবে। বর্তমানে এই মেয়াদ পাঁচ বছর। একই সঙ্গে নাগরিকত্ব ও স্থায়ী বসবাসের ক্ষেত্রে ভাষা দক্ষতা এবং ভালো আচরণকে বাধ্যতামূলক শর্ত হিসেবে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, আগামী বছরের মধ্যেই জাপানের অভিবাসন নীতির বড় ধরনের সংস্কার কার্যকর হতে পারে। দেশটির ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দল ‘নিপ্পন ইশিন’ বিদ্যমান নাগরিকত্ব নীতিকে ‘অতিরিক্ত শিথিল’ আখ্যা দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি পর্যালোচনার নির্দেশ দেন।

গত ৪ ডিসেম্বর তাকাইচির দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির এক বৈঠকে উত্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে—নাগরিকত্ব অনুমোদন শুধু বসবাসের সময়ের ওপর নির্ভর করবে না; আবেদনকারীর আচরণ, জীবিকা নির্বাহের সক্ষমতা এবং আয়ের স্থায়িত্বও বিবেচনায় নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপক ক্ষমতা থাকবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হাতে।

এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ‘নিপ্পন ইশিন’ দলের পক্ষ থেকে বিচার মন্ত্রণালয়ে বিদ্যমান নীতির তুলনায় আরও কঠোর পদক্ষেপের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এই প্রস্তাবে বিদেশি বাসিন্দার সংখ্যা সীমিত করা এবং কিছু ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের সুযোগ রাখার কথাও বলা হয়। তবে আরও কট্টর অবস্থান নেয় অতি ডানপন্থী সানসেইতো পার্টি। তারা ‘কিকাজিন’ বা নাগরিকত্ব পাওয়া বিদেশিদের নির্বাচনে প্রার্থী হতে না দেওয়ার ঘোষণা দেয়। সে সময় তারা অভিযোগ করে, সরকার জাতিগত জাপানিদের চেয়ে বিদেশিদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

তবে প্রস্তাবিত নিয়মে কিছু ব্যতিক্রম রাখার কথাও বলা হয়েছে। যেমন—জাপানে বহু বছর ধরে খেলাধুলায় প্রতিনিধিত্ব করা ক্রীড়াবিদেরা ১০ বছরের শর্ত পূরণ না করলেও নাগরিকত্ব পেতে পারেন। বিচার মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ১২ হাজার ২৪৮টি নাগরিকত্ব আবেদন জমা পড়ে, যার মধ্যে ৮ হাজার ৮৬৩টি অনুমোদিত হয়।

এ ছাড়া স্থায়ী বসবাসের আবেদনকারীদের জন্য জাপানি ভাষা ও নাগরিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। এই প্রস্তাব ঘিরে দেশটির অনলাইনে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই নীতির সমর্থকদের মতে, দীর্ঘমেয়াদি বাসিন্দাদের জন্য এসব শর্ত যুক্তিসংগত। তবে সমালোচকেরা বলছেন, শ্রম ঘাটতিতে ভোগা জাপানে অভিবাসন নিরুৎসাহিত করতে রক্ষণশীল সরকার নতুন বাধা তৈরি করছে।

আসাহি শিম্বুন জানিয়েছে, প্রস্তাবিত ‘সামাজিক অন্তর্ভুক্তি কর্মসূচির’ লক্ষ্য হলো বিদেশিদের ভাষাজ্ঞান ও মৌলিক সামাজিক ধারণা জোরদার করা, যাতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি কমে এবং বাড়তে থাকা বিদেশি-বিরোধী মনোভাব নিয়ন্ত্রণে আসে। এই উদ্যোগের আওতায় জাপানি ভাষায় দুর্বল শিশুদের স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থাও থাকবে।

২০১৫ সালে জাপানে বিদেশি বাসিন্দার সংখ্যা ছিল প্রায় ২২ লাখ ৩০ হাজার। ২০২৫ সালের জুনে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৯ লাখ ৫০ হাজারে, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় ৯ লাখ ৩০ হাজার বিদেশি স্থায়ী বাসিন্দার মর্যাদা পেয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে আইনি লড়াইয়ে পরাজয়, দুই শিশুকে বিষ খাইয়ে বাবা-দাদির আত্মহত্যা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪৫
দুই শিশুকে নিজের কাছে রাখতে না পারার যন্ত্রণা সইতে পারেননি বাবা ও দাদি। ছবি: সংগৃহীত
দুই শিশুকে নিজের কাছে রাখতে না পারার যন্ত্রণা সইতে পারেননি বাবা ও দাদি। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের কেরালা রাজ্যে সন্তানদের নিজের কাছে রাখা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর আইনি লড়াইয়ের এক মর্মান্তিক পরিণতি ঘটেছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সন্তানদের মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ঠিক কয়েক ঘণ্টা আগে দুই শিশুসন্তানকে বিষ খাইয়ে হত্যা করে নিজেরাও আত্মঘাতী হয়েছেন বাবা ও দাদি। কেরালার কান্নুর জেলার পায়্যানুরের রামান্থালিতে এ ঘটনা ঘটে।

তদন্তকারী কর্মকর্তাদের প্রাথমিক তথ্যের বরাত দিয়ে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত কালাধরন এবং তাঁর মা উষা দুই শিশুকে দুধের সঙ্গে কীটনাশক মিশিয়ে খাইয়েছিলেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি দুধের বোতল এবং কীটনাশকের খালি শিশি উদ্ধার করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, সন্তানদের মৃত্যু নিশ্চিত করার পর কালাধরন ও উষা একই বিষ পান করে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। গতকাল সোমবার সকালে প্রতিবেশীরা দীর্ঘক্ষণ ঘর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পুলিশে খবর দিলে এই আত্মহত্যার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

কালাধরন এবং তাঁর স্ত্রী নয়নতারা দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্য কলহের জেরে আলাদা বসবাস করছিলেন। তাঁদের দুই শিশুসন্তান কালাধরন ও তাঁর মা উষার কাছেই ছিল। সন্তানদের নিজের হেফাজতে পেতে নয়নতারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে আদালত নয়নতারার পক্ষে রায় দেন এবং সোমবারের মধ্যে সন্তানদের তাঁর কাছে হস্তান্তরের সময়সীমা বেঁধে দেন।

পুলিশ জানিয়েছে, গত রোববার রাতেই স্থানীয় থানা থেকে কালাধরনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল যাতে সোমবার সকালে কোনো ঝামেলা ছাড়াই হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়। কিন্তু সন্তানদের মায়ের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি কালাধরন ও তাঁর মা।

ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে। সেখানে সন্তানদের বিচ্ছেদ সহ্য করতে না পারা এবং আদালতের আদেশের প্রতি তাঁদের ক্ষোভ ও মানসিক যন্ত্রণার কথা উল্লেখ রয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশ বর্তমানে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’র মামলা করেছে। কান্নুর জেলার পুলিশ সুপার বলেন, ‘এটি একটি অত্যন্ত পরিকল্পিত এবং আবেগতাড়িত হত্যাকাণ্ড। আইনি নির্দেশ অমান্য করার চরম পথ বেছে নিয়েছেন তাঁরা।’

পায়্যানুর এলাকায় এ ঘটনার পর থেকে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রতিবেশীদের ভাষ্যমতে, কালাধরন সন্তানদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন, কিন্তু সেই ভালোবাসার এমন নৃশংস রূপ কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ ঘটনা নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। অনেকে বলছেন, বড়দের দ্বন্দ্বে এভাবে নিরপরাধ শিশুদের প্রাণ যাওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

পুলিশ শিশুদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে এবং পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১১৯ আসনে প্রার্থী ঘোষণা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের, মনোনয়ন পেলেন যাঁরা

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২-এর বেশি বহাল থাকছে যেসব প্রতিষ্ঠানে

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

জমিয়তে উলামাকে যে ৪টি আসন ছেড়ে দিল বিএনপি

দিল্লির পর কলকাতায় ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত