Ajker Patrika

ভারত-পাকিস্তানে নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে ডিপফেক ব্যবহারের জোয়ার

আপডেট : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ২২: ৪৭
ভারত-পাকিস্তানে নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে ডিপফেক ব্যবহারের জোয়ার

দক্ষিণ এশিয়ার জনবহুল দেশ ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। চলতি বছরের প্রথমার্ধেই দেশগুলোতে জাতীয় নির্বাচন হবে। তিনটি দেশই ভূরাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কারণে ঐতিহাসিকভাবে সংযুক্ত। এই সংযুক্তিতে নতুন আরেকটি দিক যুক্ত হয়েছে, যেটি সব দেশকেই ভাবিয়ে তুলেছে। সেটি হলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নেতিবাচক ব্যবহার। আরও স্পষ্ট করে বললে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ডিপফেক প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। 

ভারতীয় প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ দিব্যেন্দ্র সিং জাদন চলচ্চিত্র জগতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট তৈরির কাজ করেন। কিছুদিন আগে তিনি ভারতীয় রাজনীতিবিদদের হয়ে কাজ করার ডাক পান। তাঁকে যে ধরনের কাজ করতে বলা হয়েছিল, তার মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে এআই ভিডিও ও ডিপফেক অডিও-ভিডিও তৈরি উল্লেখযোগ্য। 

গত নভেম্বরে নিজ রাজ্য রাজস্থানের বিধানসভা নির্বাচন ছিল। সেখানে তাঁর কাজ করার ব্যাপক সুযোগ থাকার পরও তিনি প্রস্তাবটি ফিরিয়ে দেন। জাদুন পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনকে বলেন, ‘ডিপফেক তৈরির প্রযুক্তি এখন খুবই দুর্দান্ত। এটি খুব সহজেই ও খুব দ্রুত করা যায়। সাধারণ লোকজন ধরতেও পারে না বিষয়টি আসল নাকি নকল।’ 

জাদুন বলেন, ডিপফেক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে কোনো আইনি নির্দেশনা নেই। এ কারণে বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। ডিপফেক এমন প্রযুক্তি এবং এটিকে এমনভাবে ম্যানিপুলেট করা যায়, যার মাধ্যমে ব্যক্তির ভোট দেওয়া প্রভাবিত করা যাবে।

ডিপফেকের সাম্প্রতিক অনেকগুলো উদাহরণ আছে। যেমন—ইনস্টাগ্রামে ভাইরাল হওয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আঞ্চলিক ভাষার গান, টিকটকে ভাইরাল হওয়া ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী প্রোবো সুবিয়ান্তো ও আনিস বাসবেদানের সাবলীল আরবি কথোপকথন ইত্যাদি। এসব ভিডিওর সবই এআই ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে এবং কোনো ধরনের শনাক্তকরণ চিহ্ন ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা হয়েছে। 

ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ায় নির্বাচন সামনে রেখে ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুজব, ভুয়া তথ্য ছড়ানোর বিষয়টি ব্যাপক হারে বাড়ার আশঙ্কা করছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। এই দেশগুলো ব্যাপক জনবহুল হওয়ায় ডিপফেক প্রযুক্তি জনমত নির্ধারণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে। এরই মধ্যে দেশগুলোর কর্তৃপক্ষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে সতর্ক করেছে যে, তারা যদি তাদের প্ল্যাটফর্মে তৃতীয় পক্ষের ভুয়া কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সাধারণ জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাতে পারে। 

পাকিস্তানের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল রাইটস ফাউন্ডেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা নিঘাত দাদ বলেন, ‘ভুয়া তথ্য পাকিস্তানের নির্বাচন ও সমগ্র গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য যে হুমকি সৃষ্টি করেছে, তা সহজে বলে শেষ করা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘অতীতেও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ভুল তথ্য ভোটারের আচরণ, দলীয় সমর্থন এমনকি আইন পরিবর্তনকে প্রভাবিত করেছে। সিনথেটিক মিডিয়া এটিকে আরও সহজ করে তুলবে।’ 

কেবল পাকিস্তানেই নয়, ইন্দোনেশিয়ার নির্বাচনকে প্রভাবিত করতেও ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গুজব নিয়ে গবেষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক নুরিয়ান্তি জল্লি। তিনি বলেন, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীকারী তিনজনেরই ডিপফেক কনটেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। 

নুরিয়ান্তি জল্লি বলেন, ‘ভোটারদের ব্যক্তি পর্যায়ে ভুল তথ্য থেকে শুরু করে মিথ্যা আখ্যান দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়ার মতো এআইয়ের সক্ষমতা রয়েছে, যা মানুষের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এই টুলগুলো ভোটারদের ধারণা ও আচরণকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে।’ 
 
কেবল ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা ইন্দোনেশিয়ায় নয়; গত বছরে অনুষ্ঠিত তুরস্ক, নিউজিল্যান্ড এবং আর্জেন্টিনার নির্বাচনেও এআই-কেন্দ্রিক ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। চলতি বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও এই প্রযুক্তি প্রভাব বিস্তার করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকেরা। 

মার্কিন থিংকট্যাংক ফ্রিডম হাউসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এআই ভুয়া তথ্য তৈরি, ছড়িয়ে দেওয়াকে আগের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুততর, সস্তা ও আরও বেশি কার্যকর করে তুলেছে। বাংলাদেশেও ডিপফেক প্রযুক্তির অপব্যবহারের বিষয়টি বেশ বেড়েছে। সম্প্রতি বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানাকে বিকিনি পরিহিতা ও দলটির আরেক নেত্রীয় নিপুণ রায় চৌধুরীকে সুইমিং পুলে দেখানো হয়, যা আসলে ডিপফেক প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি। 
 
বাংলাদেশে ডিপফেক প্রযুক্তির বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক সাঈদ আল-জামান দ্য ডনকে বলেন, এ বিষয়গুলো খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং এখনো ছড়াচ্ছে। তাঁর মতে, নিম্নমানের ডিপফেকও মানুষের চিন্তাকে ভুল পথে প্রবাহিত করতে পারে। 
 
সিনথেটিক মিডিয়া শনাক্তকারী টুল নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ডিপমিডিয়া জানাচ্ছে, ২০২৩ বিশ্বজুড়ে অন্তত ৫ লাখ ডিপফেক ভিডিও ও অডিও শেয়ার হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্ল্যাটফর্মগুলো এ ধরনের কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপের মালিক প্রতিষ্ঠান মেটা জানিয়েছে, তারা তাদের প্ল্যাটফর্মগুলোতে ছড়িয়ে পড়া সিনথেটিক মিডিয়াগুলো অপসারণে বদ্ধপরিকর। বিশেষ করে ফেক ভিডিওগুলোর ক্ষেত্রে। 

টেক জায়ান্ট ওই ইউটিউবের মাতৃপ্রতিষ্ঠান গুগল গত নভেম্বরে বলেছে, ‘যদি কোনো ভিডিও নির্মাতা সিনথেটিক ভিডিও প্রকাশ করতে চান, তাহলে আমাদের আগে অবহিত করতে হবে। আমরা দর্শকদের আগে থেকেই সে বিষয়ে অবগত করব।’

অ্যাডভোকেসি গোষ্ঠী অ্যাকসেস নাউয়ের এশিয়া চ্যাপ্টারের পলিসি ডিরেক্টর রমণ জিৎ সিং চিমা বলেন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশের মতো দেশগুলো সম্প্রতি অনলাইন কনটেন্টকে আরও নিবিড়ভাবে নজরদারিতে রাখার জন্য আইন পাস করেছে। দেশগুলো ভুল তথ্য হিসেবে বিবেচিত—এমন বিষয়বস্তু প্রচারের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে দায়ী করার প্রয়াস পেয়েছে, তাই প্ল্যাটফর্মগুলোও এখন তুলনামূলক শিথিল আচরণ করেছে।’

এসব দেশে এ ধরনের সমস্যা দেখভাল করার জন্য সামাজিক মাধ্যমগুলো খুব একটা সক্রিয় নয়। চিমার মতে, এটি খুবই বিপজ্জনক লক্ষণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইসরায়েল কেন প্রথম দেশ হিসেবে সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইসরায়েলের স্বীকৃতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে সোমালিল্যান্ড। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলের স্বীকৃতির ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে সোমালিল্যান্ড। ছবি: এএফপি

ইসরায়েল কেন সোমালিয়া থেকে স্বাধীন হতে চাওয়া সোমালিল্যান্ডকে প্রথম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিল—এই প্রশ্ন ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। আফ্রিকার হর্ন অঞ্চলের স্বঘোষিত স্বাধীন রাষ্ট্র সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েল শুধু একটি কূটনৈতিক সিদ্ধান্তই নেয়নি, বরং মধ্যপ্রাচ্য ও লোহিত সাগর ঘিরে চলমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই স্বীকৃতির পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক—এই তিনটি প্রধান কারণ। সোমালিল্যান্ডের অবস্থান অত্যন্ত কৌশলগত। এটি এডেন উপসাগরের তীরে অবস্থিত এবং ইয়েমেনের খুব কাছেই, যেখানে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা সক্রিয়। চলতি বছরে হুতি ও ইসরায়েলের মধ্যে একাধিকবার হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের প্রতিবাদে হুতিরা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালায়। জবাবে ইয়েমেনের সানা ও হোদেইদায় হুতি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় হামলা চালায় ইসরায়েল।

এই প্রেক্ষাপটে ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের গবেষক ডেভিড মাকোভস্কি প্রশ্ন তুলেছেন—সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে কি ইসরায়েল সেখানে সামরিক সুবিধা বা গোয়েন্দা উপস্থিতির পথ খুলেছে? বিশেষ করে হুতি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় এটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

ইসরায়েলের গণমাধ্যম ‘চ্যানেল ১২’ জানিয়েছে, সোমালিল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আব্দিরাহমান মোহাম্মদ আবদুল্লাহি গোপনে একাধিকবার ইসরায়েল সফর করেছেন। গত অক্টোবরে তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ও মোসাদের প্রধান ডেভিড বারনিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে নেতানিয়াহু এই স্বীকৃতির ক্ষেত্রে মোসাদের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।

তবে এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে সোমালিয়া ও আফ্রিকান ইউনিয়ন। মিসর ও ফিলিস্তিনসহ কয়েকটি আরব দেশও এর সমালোচনা করেছে। অতীতে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোর করে সোমালিল্যান্ডে স্থানান্তরের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, যদিও সোমালিল্যান্ডের কর্মকর্তারা এই ধরনের কোনো যোগাযোগের কথা অস্বীকার করেছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি ইসরায়েলের জন্য অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। সোমালিল্যান্ডের বন্দরনগরী বেরবেরা ইসরায়েলকে লোহিত সাগরে প্রবেশের সুযোগ দিতে পারে। এমন হলে বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাব আল-মানদেব প্রণালির ওপর নজরদারি চালাতে পারবে ইসরায়েল। তবে সব মিলিয়ে, সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিয়ে ইসরায়েল ইতিহাস তৈরি করলেও এর পূর্ণ প্রভাব ও ফলাফল এখনো স্পষ্ট নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

২০২৫ সালের সেরা সিইও কে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: দ্য ইকোনমিস্ট
ছবি: দ্য ইকোনমিস্ট

২০২৫ সাল ছিল বিশ্ব করপোরেট নেতৃত্বের জন্য এক কঠিন পরীক্ষার বছর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার ফলে শুরু হয় নতুন বাণিজ্যযুদ্ধ ও অনিশ্চিত নীতিনির্ধারণ। একই সঙ্গে চীন ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে প্রযুক্তিগত আধিপত্যের লড়াই আরও তীব্র হয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে বিপুল প্রত্যাশা থাকলেও, সেটিকে লাভজনক ব্যবসায় রূপ দেওয়ার কাজ অনেক সিইওর জন্য হতাশাজনকই থেকে যায়।

তবে এই অস্থিরতার মধ্যেও কিছু প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ব্যতিক্রমী সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। টানা তৃতীয়বারের মতো ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ এবারও (২০২৫ সাল) সেরা সিইও নির্বাচন করেছে। এ ক্ষেত্রে এসঅ্যান্ডপি ১২০০ সূচকের অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোকে তাদের খাতভিত্তিক গড়ের তুলনায় অতিরিক্ত শেয়ারহোল্ডার রিটার্নের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর তিন বছরের কম সময় দায়িত্বে থাকা সিইওদের বাদ দিয়ে শীর্ষ ১০ জনকে প্রাথমিক তালিকায় রাখা হয়।

এই তালিকায় ছিলেন—জার্মান অস্ত্র নির্মাতা রাইনমেটালের আরমিন পাপারগার, স্বর্ণখনি জায়ান্ট নিউমন্টের টম পামার, ফুজিকুরার ওকাদা নাওকি, ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির ডেভিড জাসলাভ, হানহা অ্যারোস্পেসের সন জে-ইল, মাইক্রনের সঞ্জয় মেহরোত্রা, কিনরস গোল্ডের জে পল রোলিনসন, রবিনহুডের ভ্লাদিমির টেনেভ, এসকে হাইনিক্সের কাক নো-জং এবং সিগেট টেকনোলজির ডেভ মসলে।

তবে অতীতের দুর্বল পারফরম্যান্স, করপোরেট গভর্ন্যান্স সমস্যা কিংবা নিছক সৌভাগ্যের কারণে অনেকেই চূড়ান্ত বিবেচনা থেকে বাদ পড়েছেন। স্বর্ণের দাম প্রায় ৬৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় খনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বাড়লেও, সেটিকে সিইওদের কৃতিত্ব হিসেবে ধরা হয়নি। মেমোরি চিপ খাতে এআই বুমের সুফল পেলেও, সেখানে এসকে হাইনিক্সের গবেষণা ও উন্নয়নে ধারাবাহিক বিনিয়োগ আলাদা করে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

সবশেষে ২০২৫ সালের সেরা সিইও হিসেবে রাইনমেটালের আরমিন পাপারগারকেই বেছে নিয়েছে ‘দ্য ইকোনমিস্ট’। তাঁর নেতৃত্বে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশসহ ১৫৮ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে। ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাইনমেটাল বড় বড় চুক্তি জয় করেছে এবং নৌযান নির্মাণ খাতেও সম্প্রসারণে নেমেছে। ২০১৩ সাল থেকে দায়িত্বে থাকা পাপারগার ইউক্রেন যুদ্ধের আগেই ইউরোপের প্রতিরক্ষা শিল্পের সম্ভাবনা অনুধাবন করেছিলেন। দূরদর্শিতা, সাহস ও দৃঢ় নেতৃত্বের ফলেই ২০২৫ সালের সেরা সিইওর স্বীকৃতি তাঁর হাতেই উঠেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এবার ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বৈঠক—কী আছে সর্বশেষ ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএনএন
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সিএনএন

ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে একটি ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবকে সামনে রেখে রোববার (২৮ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। জেলেনস্কির কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এই খসড়া প্রস্তাবকে তিনি ভবিষ্যতে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করার একটি সম্ভাব্য ভিত্তি হিসেবে দেখছেন।

এর আগে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২৮ দফার একটি খসড়া প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চললেও সেটিকে রাশিয়ার দাবির প্রতি অতিরিক্ত সহানুভূতিশীল মনে করা হয়েছিল। কয়েক সপ্তাহের আলোচনার পর প্রস্তাবটি সংশোধন করে ২০ দফায় নামিয়ে আনা হয়। জেলেনস্কি জানিয়েছেন, অধিকাংশ বিষয়ে পক্ষগুলোর অবস্থান অনেকটাই কাছাকাছি এসেছে। তবে এখনো দুটি ইস্যুতে ঐকমত্য হয়নি—ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ এবং জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানা ও পরিচালনা।

প্রস্তাবনার শুরুতেই ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব পুনর্ব্যক্ত করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিঃশর্ত আগ্রাসনবিরোধী চুক্তির প্রস্তাব রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি শান্তি বজায় রাখতে সীমান্তবর্তী সংঘর্ষরেখা নজরদারির জন্য মহাকাশভিত্তিক মানববিহীন প্রযুক্তি ব্যবহারের কথাও এতে অন্তর্ভুক্ত আছে।

এই কাঠামো অনুযায়ী, ইউক্রেন তার সশস্ত্র বাহিনীর বর্তমান শক্তি—প্রায় ৮ লাখ সেনা—অক্ষুণ্ন রাখবে। যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো ও ইউরোপীয় দেশগুলো ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫-এর আদলে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে। অপরদিকে ইউক্রেন ও ইউরোপের বিরুদ্ধে আগ্রাসন না করার নীতি নিজ দেশের আইনে এবং পার্লামেন্টের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিতে হবে রাশিয়াকে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে ইউক্রেনের জন্য রয়েছে বড় পরিসরের পুনর্গঠন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল পুনর্গঠন, মানবিক সহায়তা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য একাধিক তহবিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যার লক্ষ্য প্রায় ৮০০ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ। ইউক্রেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পাবে এবং অস্থায়ীভাবে ইউরোপীয় বাজারে বিশেষ সুবিধা ভোগ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন করার কথাও বলা হয়েছে।

সবচেয়ে জটিল ইস্যু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ভূখণ্ড প্রশ্ন। রাশিয়া দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা প্রত্যাহার চায়, অন্যদিকে ইউক্রেন বর্তমান যুদ্ধরেখায় সংঘর্ষ বন্ধের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র এখানে একটি নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চল ও মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব দিয়েছে।

যুদ্ধবন্দীর মতো মানবিক বিষয়ে ‘সবার বিনিময়ে সবার মুক্তি’, আটক বেসামরিক নাগরিক ও শিশুদের ফেরত এবং যুদ্ধাহতদের সহায়তার কথা রয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করবে ইউক্রেন।

এই শান্তিচুক্তি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক হবে এবং এর বাস্তবায়ন তদারক করবে একটি ‘পিস কাউন্সিল’, যার সভাপতিত্ব করবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সব পক্ষ একমত হলে সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে—এমনটাই বলা হয়েছে এই ২০ দফা প্রস্তাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৪০ শতাংশ জার্মান মনে করেন মার্জের সরকার টিকবে না

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ। ছবি: এএফপি
জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ। ছবি: এএফপি

জার্মানির বর্তমান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ২০২৯ সাল পর্যন্ত তাদের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে দেশটির নাগরিকদের একটি বড় অংশের মধ্যে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছে। গতকাল শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) প্রকাশিত একটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৪০ শতাংশ জার্মান নাগরিক মনে করেন, এই সরকার নির্ধারিত সময়ের আগেই ভেঙে যেতে পারে।

২০২৫ সালের মে মাসে জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন ফ্রিডরিখ মার্জ। তবে বছর শেষ হতে না হতেই তাঁর সরকারের জনপ্রিয়তা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছে জনপ্রিয় জার্মান সংবাদমাধ্যম ওয়েল্ট অ্যাম সোনটাগ (Welt am Sonntag)।

জনমত জরিপ পরিচালনাকারী সংস্থা ‘ইউগভ’ জার্মান সরকারকে নিয়ে জরিপটি করে। ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে ১ হাজার ১০ জন অংশগ্রহণকারীর ওপর এই জরিপ চালানো হয়।

ইউগভের তথ্যমতে, ৩৭ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন—রক্ষণশীল খ্রিষ্টান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিএসইউ) ও তার সহযোগী দল খ্রিষ্টান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) এবং মধ্য-বাম সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এসডিপি) সমন্বয়ে গঠিত এই জোট সরকারের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন (২০২৯) পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকার সম্ভাবনা ‘খুবই কম’।

অন্য দিকে ৫৩ শতাংশ নাগরিক বিশ্বাস করেন, মার্জ সরকার তাদের পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারবে। অন্য ৯ শতাংশ কোনো নিশ্চিত মতামত দেয়নি।

জরিপে আরও দেখা গেছে, সাবেক পূর্ব জার্মানির রাজ্যগুলোতে সরকারের প্রতি অনাস্থা সবচেয়ে বেশি (৪২ শতাংশ), যেখানে পশ্চিম জার্মানিতে এই হার ৩৬ শতাংশ।

জরিপ সংস্থা ‘ইনসা’র অন্য একটি জরিপে দেখা গেছে, চ্যান্সেলর হিসেবে ফ্রিডরিখ মার্জের কাজে সন্তুষ্ট মাত্র ২২ শতাংশ জার্মান। এই ফলাফল মূলত জোটের স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপের মুখে নেতৃত্বের অভাব নিয়ে জনগণের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগেরই প্রতিফলন।

উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জার্মানিতে আগাম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ফ্রিডরিখ মার্জের সিডিইউ/সিএসইউ জোট ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়। অন্য দিকে উগ্র ডানপন্থী দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) রেকর্ড ২০ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে আসে। আর ওলাফ শোলৎজের দল এসডিপি মাত্র ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পায়, যা তাদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।

তবে এসপিডি বড় ধরনের হারের মুখ দেখলেও সিডিইউ/সিএসইউ জোটের সঙ্গে মিলে সরকার গঠন করে, যার ফলে সাবেক চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎজের দল পুনরায় মন্ত্রিসভায় ফেরার সুযোগ পায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপিসহ ১০ দলের জোট ঘোষণা করলেন জামায়াতের আমির

দিনাজপুরে খালেদা জিয়ার আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন বিএনপির আরেক নেতা

সমঝোতায় পৌঁছেছি, আমরা জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেব: নাহিদ ইসলাম

চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ধানের শীষ পেলেন বেনজীরের ব্যবসায়িক সহযোগী জসিম

‘তোর পুরস্কার গুলিতে মৃত্যু, দাফন-কাফনের জন্য তৈরি হ’

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত