Ajker Patrika

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া পুরোনো বিরোধ নতুন সংঘাতে রূপ নিল কেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কম্বোডিয়ার সৈন্যরা। ছবি: এএফপি
যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কম্বোডিয়ার সৈন্যরা। ছবি: এএফপি

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার শতবর্ষ পুরোনো সীমান্ত বিরোধ আবারও সহিংস রূপ নিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে রকেট ও কামান হামলার অভিযোগ করেছে থাইল্যান্ড। এরপর কম্বোডিয়ার সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় থাইল্যান্ড।

থাইল্যান্ডের সামরিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উভয় দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে থাইল্যান্ডের ১১ জন বেসামরিক নাগরিক, যাদের মধ্যে আট বছর বয়সী এক শিশু ও ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরও রয়েছে। এ ছাড়া একজন থাই সেনাও নিহত হয়েছেন। কম্বোডিয়ার হতাহতের সংখ্যা এখনো নিশ্চিত নয়। উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ শুরু করার অভিযোগ করেছে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার এই সীমান্ত বিরোধের সূচনা হয় উনবিংশ শতাব্দীতে, যখন ফ্রান্স উপনিবেশ হিসেবে কম্বোডিয়া শাসন করছিল। ঔপনিবেশিক মানচিত্র নিয়ে তৈরি হওয়া বিরোধিতার কারণে ৮১৭ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে বারবার উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিরোধ তীব্র হয় ২০০৮ সালে। কম্বোডিয়া বিতর্কিত এলাকার ১১ শতকের একটি মন্দিরকে ইউনেসকো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে নিবন্ধন করার চেষ্টা করলে থাইল্যান্ডের তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়ে। এর পর থেকে দুই দেশের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে অনেকবার সংঘর্ষ হয়েছে, যেখানে উভয় পক্ষের সৈনিক ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।

সর্বশেষ সংঘর্ষের সূচনা হয় ২০২৪ সালের মে মাসে। সীমান্তের কাছাকাছি একটি বিতর্কিত অঞ্চলে সেনাদের মধ্যে গোলাগুলি হলে একজন কম্বোডিয়ার সৈনিক নিহত হন। এরপর শুরু হয় পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা—থাইল্যান্ড সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করে, আর কম্বোডিয়া থাই চলচ্চিত্র, ফলমূল আমদানি নিষিদ্ধ করে এবং থাইল্যান্ড থেকে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেয়।

গতকাল বুধবার সীমান্তে টহল চলাকালে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে পাঁচজন থাই সেনা আহত হন। থাই সরকারের দাবি, এগুলো সাম্প্রতিক সময়ে পুঁতে রাখা হয়েছিল। এর পরপরই থাইল্যান্ড উত্তর-পূর্ব সীমান্ত বন্ধ করে দেয় এবং কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে। কম্বোডিয়া এর প্রতিবাদে কূটনৈতিক সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনে ও ব্যাংকক থেকে নিজ দেশের সব কর্মকর্তা ফিরিয়ে নেয়।

দুই দেশেই রয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা

প্রায় চার দশক ধরে কম্বোডিয়া শাসনকারী স্বৈরশাসক হুন সেন ২০২৩ সালে ক্ষমতা ছেড়ে দেন তাঁর ছেলে হুন মানেতের কাছে। তবে হুন সেন এখনো সিনেটের সভাপতি এবং দেশের রাজনীতিতে যথেষ্ট প্রভাবশালী। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, পিতার ছায়া থেকে বের হতে হুন মানেত জাতীয়তাবাদী আবেগ উসকে দিচ্ছেন।

এদিকে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা সাময়িকভাবে দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত। তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে সীমান্ত সংকটে সমাধানে ধীর প্রতিক্রিয়ার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ফাঁস হওয়া একটি ফোনালাপে তাঁকে কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা হুন সেনকে ‘আংকেল’ বলে সম্বোধন করতে শোনা যায় এবং তিনি বলেন, ‘আপনার যা দরকার, আমি দেখে নেব।’

পেতংতার্ন এই ফোনালাপে কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের সঙ্গে সীমান্ত সংকট মোকাবিলায় আপসমূলক প্রতিশ্রুতি দেন, যা তাঁর পদে থাকার উপযুক্ততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এ ঘটনার পর দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং তাঁর বরখাস্তের দাবি ওঠে। এই মন্তব্য থাই সেনাবাহিনীর কাছেও অসম্মানজনক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

সমাধানের সম্ভাবনা কোথায়?

কম্বোডিয়া ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজি) দ্বারস্থ হয়েছে, তবে থাইল্যান্ড সেই আদালতের এখতিয়ার মানে না। তাই এটি কার্যকর সমাধান হবে না বলেই আশঙ্কা।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম দুই দেশকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে আসিয়ান সাধারণত অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না।

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই দুই দেশের সংঘাতে চীন একমাত্র মধ্যস্থতাকারী দেশ হতে পারে। কারণ, উভয় দেশের ওপরই চীনের প্রভাব রয়েছে। তবে চীন সাধারণত কম্বোডিয়ার প্রতি বেশি অনুকূল, যা থাইল্যান্ডসহ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করতে পারে।

থাইল্যান্ডের অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাই আজ বলেছেন, যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়নি, সংঘর্ষ এখনো বিস্তৃত নয়। আগে লড়াই বন্ধ হোক, তারপর সংলাপ হতে পারে।

এদিকে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে জরুরি বৈঠক ডাকতে অনুরোধ করেছেন এবং থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ‘অযৌক্তিক সামরিক আগ্রাসন’ চালানোর অভিযোগ তুলেছেন।

তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনএসআইয়ের ১৩ কর্মকর্তার দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে হুমকি, বিবৃতিতে যা বলল ভারত

বিএনপির সময় গণমাধ্যম তুলনামূলক বেশি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল: প্রথম আলো সম্পাদক

‘আমি ওর সঙ্গে এক মিনিট কথা বলতে চাই, শুধু এক মিনিট’

পপুলার ফার্মায় এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ