Ajker Patrika

যে কারণে ভারত থেকে দেশে ফিরতে হলো ৮০০ পাকিস্তানি হিন্দুকে

কলকাতা প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ মে ২০২২, ১৯: ২৪
যে কারণে ভারত থেকে দেশে ফিরতে হলো ৮০০ পাকিস্তানি হিন্দুকে

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহদের আশ্বাসে বিশ্বাস করে এখন ভয়ানক মূল্য দিতে হচ্ছে পাকিস্তানের ৮০০ শরণার্থীকে। পাকিস্তানের ধর্মীয় সংখ্যালঘু এ শরণার্থীদের প্রায় সবাই হিন্দু, দু-একটি শিখ পরিবারও আছে। শরণার্থী হয়ে আসা এই মানুষেরা ভারতে গিয়ে নাগরিকত্বের সোনার হরিণের দেখা পাননি। ভারতের বেসরকারি সংস্থা সীমান্ত লোক সংগঠন (এসএলএস) এ কথা জানিয়েছে। 

২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) পাস করে ভারত সরকার। বিতর্কিত ওই আইনে বলা হয়, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, পার্সি, খ্রিষ্টান ও জৈন শরণার্থীদের শর্তসাপেক্ষে নাগরিকত্ব দেবে ভারত। ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন চালু হলেও বিধি তৈরি না করায় সেটি কার্যকর হচ্ছে না। বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ইচ্ছাকৃতভাবে আইনটিকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সিএএ কার্যকর করা হবে।

এসএলএস জানিয়েছে, ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে নাগরিকত্ব পেতে প্রায় ৮০০ হিন্দু ভারতে এসেছিলেন। পরে নাগরিকত্ব আবেদনে কোনো অগ্রগতি না দেখে ভারতের রাজস্থান থেকে ২০২১ সালে তাঁরা প্রতিবেশী দেশটিতে ফিরে যান।

অনলাইনে নাগরিকত্ব আবেদনের এ প্রক্রিয়া ২০১৮ সালে শুরু করে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে নিপীড়িত হিন্দু, খ্রিষ্টান, শিখ, পারসি, জৈন ও বৌদ্ধদের করা অনলাইন নাগরিকত্ব আবেদন গ্রহণ করতে সাতটি রাজ্যে ১৬ ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পর ২০২১ সালের মে মাসে গুজরাট, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, হরিয়ানা ও পাঞ্জাবে আরও ১৩ ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টরকে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৫ ও ৬ নম্বর ধারার অধীন এই ছয় সম্প্রদায়ের সদস্যদের আবেদনে নাগরিকত্ব সনদ দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট অনলাইনে গ্রহণ করা হচ্ছে না। এতে বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে পাসপোর্ট নবায়ন করতে দিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনে ছুটতে বাধ্য হন শরণার্থীরা। 

এসএলএসের তরফ থেকে ৮০০ ধর্মীয় সংখ্যালঘু শরণার্থীর পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার খবর প্রকাশের পর অবশ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়াটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে হয়েছে। 

কিন্তু এতে ফিরে যাওয়া সেই শরণার্থীদের ভোগান্তি লাঘব হচ্ছে না। এসএলএস জানিয়েছে, যে শরণার্থীরা বিভিন্ন ধরনের ভিসা করিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন, তাঁদের সবাই দরিদ্র। শেষ সম্বলটুকু নিয়েই তাঁরা ভারতে গিয়েছিলেন। তার পর ভারতীয় প্রশাসনের বিভিন্ন দরজায় তাঁরা কড়া নেড়েছেন। অপেক্ষা করেছেন। কিন্তু কোনো পথ খুঁজে পাননি। শুধু একটাই আশ্বাস পেয়েছেন—প্রতিবেশী দেশে নির্যাতিত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়ে বিজেপি সরকার খুবই আন্তরিক। 

সিএএ কার্যকর করা নিয়ে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত ঢিলেমির অভিযোগ নতুন নয়। অভিযোগের প্রেক্ষাপটটি বুঝতে হলে একটু পেছনে যেতে হবে। ২০১৫ সালে ভারত সরকার যে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে, সেখানে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের আগে প্রতিবেশী দেশ (পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ) থেকে ভারতে প্রবেশ করা ছয়টি সম্প্রদায়ের লোকদের ভারতে অবস্থান করাকে আইনসিদ্ধ করা হয়। বলা হয়, এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের পাসপোর্ট সম্পর্কিত আইন থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, ধর্মীয় সংখ্যালঘু হওয়ায় নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া এই লোকেদের অধিকাংশেরই পাসপোর্টের মেয়াদ থাকার কথা নয়। কিন্তু বাস্তবে শুধু মেয়াদ না থাকার কারণেই পাকিস্তানে ফির যেতে হয় ৮০০ জনকে। 

আসামের ‘আমরা বাঙালি’ দলের নেতা সাধন পুরকায়স্থের অভিযোগ, হিন্দু বাঙালিদের ভাঁওতা দিচ্ছে বিজেপি। মুখে সিএএর কথা বললেও ভারতীয় হিন্দু বাঙালিদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ তোলেন তিনি। 

আর পাঞ্জাবে সীমান্ত লোক সংগঠনের সভাপতি হিন্দু সিং সোডার অভিযোগ, সিএএর ভরসায় বহু মানুষ পাকিস্তান থেকে ভারতে গেলেও এখন তাঁরা পাকিস্তানেই ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। 

মুখে যে কথাই বলা হোক না কেন, বিজেপি সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনেকটা কাগজ-কলমেই থেকে গেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট গ্রহণ করা হয়নি। অথচ সিএএ-তে বলা হয়েছিল, পাসপোর্টের মেয়াদ নাগরিকত্ব আবেদনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। যদিও বাস্তবে শুধু আবেদন করার জন্যই শরণার্থীদের ছুটতে হয়েছে দিল্লিতে পাকিস্তান হাইকমিশনে। সেখানে প্রতিটি পাসপোর্ট নবায়নের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়েছে। 

টাকার অঙ্কটি ঠিক কেমন, সে সম্পর্কে এসএলএসের সভাপতি হিন্দু সিং সোডা বলেন, ‘দশজনের একটি পরিবার হলে, সব সদস্যের পাসপোর্ট নবায়নের জন্য ১ লাখ রুপির বেশি খরচ হয়। অথচ শরণার্থী হিসেবে আসা এই লোকেরা ভীষণ দরিদ্র এবং এভাবে পাসপোর্ট করানোর মতো সংগতি তাঁদের নেই। আর অনলাইনে আবেদন করতে না পারলে তাঁদের নির্ধারিত কালেক্টরদের কাছে সশরীরে গিয়ে আবেদনপত্র জমা দিতে হতো। এ বিষয়টিও সহজ নয়।’ 

অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া নিয়ে ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বর ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজস্থানের রাজ্যসভাকে জানিয়েছিল, ওই বছরের ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের কাছে মোট ১০ হাজার ৬৩৫টি নাগরিকত্বের আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৩০৬টি আবেদনই আসে পাকিস্তান থেকে। 

কিন্তু এসএলএস জানাচ্ছে, শুধু রাজস্থানেই পাকিস্তান থেকে আসা ২৫ হাজারের মতো হিন্দু রয়েছেন। এর একটি বড় অংশই অনলাইনে নয়, সরাসরি নাগরিকত্বের আবেদন করেছেন। অবশ্য কোনো তরফ থেকেই জমা পড়া আবেদনগুলোর মধ্যে কতটি প্রক্রিয়াধীন আছে, বা এগুলোর অগ্রগতি কী, সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। এখন বলা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট বিধি তৈরিতে আরও সময় লাগার কথা।

যদিও প্রক্রিয়াটি বেশ আগে শুরু হয়েছিল। দ্য হিন্দু জানায়, ভারতে শরণার্থী হয়ে আসা মানুষদের অধিকাংশই হয় দীর্ঘমেয়াদি ভিসা (এলটিভি), অথবা তীর্থযাত্রীদের জন্য নির্ধারিত ভিসা নিয়ে আসেন। এলটিভি দেওয়া হয় পাঁচ বছরের জন্য। ২০১১ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার পাকিস্তানে ধর্মীয় কারণে নির্যাতনের শিকার কয়েক শ হিন্দু ও শিখকে এলটিভি দিয়েছিল। সে সময় অনেকেই তীর্থযাত্রী হিসেবে ভারতে গিয়েছিলেন। পাসপোর্টের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরও তাঁরা ভারতে অবস্থান করছিলেন। ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ১৪ হাজার ৭২৬ জন পাকিস্তানি হিন্দুকে এলটিভি দেওয়া হয়েছিল। আর ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ৬০০ জনকে এলটিভি দেওয়া হয়। সর্বশেষ মেয়াদকে বিবেচনায় না নিলে আগে দেওয়া এলটিভির সবগুলোরই মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার কথা। এখন এই মেয়াদ না থাকাই নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারা-না পারার মূল মানদণ্ড হয়ে উঠেছে।

বিজেপি সরকার বরাবরই প্রতিবেশী দেশে থাকা অমুসলিম ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিয়ে রাজনীতি করে আসছে। দেশের ভেতরে রাজনৈতিক সুবিধা পেতে তারা হিন্দু কার্ডটি বিভিন্ন সময় খেলেছে। সিএএ পাস করাটাও ছিল এরই ধারাবাহিকতা। ২০১৯ সালে অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দিতে নতুন এ আইন পাসের পর গোটা ভারতে সিএএবিরোধী আন্দোলন তীব্র আকার নেয়। আসামে পরিস্থিতি বাজে আকার ধারণ করে। সে সময় সুপ্রিম কোর্টেও এর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়। কিন্তু এত সব ডিঙিয়ে করা সিএএ আইন পাসের ছয় মাসের মধ্যে এ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় বিধি তৈরির কথা থাকলেও আজও তা হয়নি। আড়াই বছর পেরিয়ে গেছে। কিছুদিন আগে সরকার পক্ষ থেকে এ জন্য আরও সময় চাওয়ায় সমালোচনা তীব্র হচ্ছে। সমালোচকেরা বলছেন, বিজেপি বিষয়টি জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাশিয়াকে পশ্চিম সম্মান করলে আর যুদ্ধ হবে না: পুতিন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের পর আর কোনো যুদ্ধ হবে না—যদি পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকে সম্মান করে এবং দেশটির নিরাপত্তাগত স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠান ‘ডিরেক্ট লাইন’-এ তিনি এই মন্তব্য করেন।

বিবিসির সাংবাদিক স্টিভ রোজেনবার্গের প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোকে আক্রমণ করার যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ ‘অর্থহীন’।

পুতিন দাবি করেন, রাশিয়ার প্রতি সম্মান দেখানো হলে এবং পূর্বদিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ‘প্রতারণা’ বন্ধ করলে নতুন কোনো বিশেষ সামরিক অভিযান হবে না। তিনি তাঁর পুরোনো অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ১৯৯০ সালে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভকে ন্যাটো সম্প্রসারণ না করার যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পশ্চিম তা মানেনি।

মস্কোর একটি হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে পুতিনের পেছনে রাশিয়ার বিশাল মানচিত্র ঝুলছিল। এই মানচিত্রে ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চল, এমনকি ক্রিমিয়াও অন্তর্ভুক্ত ছিল। রুশ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দাবি, ওই অনুষ্ঠানটিতে পুতিনকে উদ্দেশ্য করে ৩০ লাখের বেশি প্রশ্ন জমা পড়েছিল।

ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে পুতিন বলেন, তিনি ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত। তবে কোনো ধরনের আপসের ইঙ্গিত দেননি। তিনি আবারও দাবি করেন, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা বাদ দিতে হবে এবং রাশিয়ার দখল করা চারটি অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় সেনা সরিয়ে নিতে হবে। আংশিকভাবে দখল করে নেওয়া ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চায় রাশিয়া।

দেশের অর্থনীতির প্রশ্নে মূল্যস্ফীতি, প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এবং ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয় স্বীকার করেন পুতিন। অনুষ্ঠানের মধ্যেই রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কমিয়ে ১৬ শতাংশে নামানোর ঘোষণা দেয়। বিদেশনীতি, অর্থনীতি ও যুদ্ধের পাশাপাশি অনুষ্ঠানজুড়ে উঠে আসে মাতৃভূমি, প্রবীণ সেনাদের সম্মান এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা।

পুতিন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, তারা ইউক্রেনের মাধ্যমে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের সঙ্গে ‘সমান মর্যাদা ও পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে’ কাজ করতে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন। রাশিয়া ভবিষ্যতে ন্যাটোর ওপর হামলা চালাতে পারে—পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন আশঙ্কার কথা আবারও তা নাকচ করে দেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার শুনানি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ০৬
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে
২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ছবি: এপির সৌজন্যে

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে করা মামলার মূল শুনানি আগামী জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচারিক সংস্থা আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) জানিয়েছে, এ মামলার শুনানি চলবে আগামী ১২ থেকে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত।

এই শুনানি আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, এক দশকের বেশি সময় পর এটি হবে আইসিজেতে কোনো গণহত্যা মামলার মূল বিষয়ের ওপর শুনানি। একই সঙ্গে গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলাতেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুনানির প্রথম সপ্তাহে (১২ থেকে ১৫ জানুয়ারি) মামলার বাদী দেশ গাম্বিয়া আদালতে তাদের অভিযোগ উপস্থাপন করবে। পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়া ২০১৯ সালে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে এ মামলা দায়ের করে। মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ আনা হয়।

এরপর ১৬ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমার তাদের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ পাবে। মিয়ানমার সরকার বরাবরই গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

আইসিজে জানিয়েছে, এ মামলায় তিন দিন সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে এসব শুনানি জনসাধারণ ও গণমাধ্যমের জন্য বন্ধ থাকবে।

জাতিসংঘের একটি তদন্ত মিশন ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অভিযানে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ সংঘটিত হয়েছিল বলে প্রতিবেদন দেয়। ওই অভিযানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

মিয়ানমার অবশ্য জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও ত্রুটিপূর্ণ’ বলে দাবি করেছে। দেশটির বক্তব্য, সে সময়কার অভিযান ছিল রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে, যারা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছিল।

মামলাটি ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘের গণহত্যা সনদ অনুযায়ী দায়ের করা হয়েছে। নাৎসি জার্মানির হাতে ইহুদিদের গণহত্যার পর এ সনদ প্রণয়ন করা হয়। এতে গণহত্যা বলতে কোনো জাতিগত, ধর্মীয় বা নৃগোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি, কিংবা পুরোপুরি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে সৃষ্ট পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়েছে।

গাম্বিয়া ও মিয়ানমার—দুই দেশই এ সনদের স্বাক্ষরকারী হওয়ায় আইসিজের এ মামলার বিচারিক এখতিয়ার রয়েছে।

১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদের পর আইসিজে এখন পর্যন্ত মাত্র একবার গণহত্যার ঘটনা নিশ্চিত করেছে। এটি ছিল ১৯৯৫ সালে বসনিয়ার স্রেব্রেনিৎসায় প্রায় ৮ হাজার মুসলিম পুরুষ ও কিশোর হত্যাকাণ্ড।

গাম্বিয়া ও মামলায় হস্তক্ষেপকারী অন্য দেশগুলো হলো কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। এই পাঁচ দেশ আদালতে যুক্তি দিয়েছে, গণহত্যা শুধু ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তাদের মতে, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি, শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাও গণহত্যার উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বাজপেয়ির ‘সেই বক্তব্য’ সামনে আনলেন শশী থারুর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই
কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর। ছবি: পিটিআই

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। গতকাল বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সংবাদমাধ্যমের ভবনে অগ্নিসংযোগ এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সাংসদ ও ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির (পররাষ্ট্রবিষয়ক) প্রধান শশী থারুর।

শশী থারুর সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশে চলমান এই সহিংসতা সাধারণ বাংলাদেশিদের সহায়তা করার ক্ষেত্রে ভারতের সক্ষমতাকে সংকুচিত করে দিচ্ছে। তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির সেই বিখ্যাত উক্তি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভূগোল পরিবর্তন করা যায় না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলা এবং ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে থারুর বলেছেন, ‘সহিংসতার কারণে আমাদের দুটি ভিসা সেন্টার বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। কারণ, যেসব বাংলাদেশি ভারতে আসতে চান, তাঁরাই এখন অভিযোগ করছেন যে আগে যেভাবে সহজে ভিসা পাওয়া যেত, এখন তা পাওয়া যাচ্ছে না।’

থারুর উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিস্থিতি ভারত সরকারের পক্ষে সাধারণ বাংলাদেশিদের সাহায্য করা কঠিন করে তুলছে।

বাংলাদেশ সরকারকে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে থারুর বলেন, ‘আমি আশা করি পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে। আমি বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে বলব যেন তারা প্রতিবেশীর সঙ্গে এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝে। বাজপেয়ি সাহেব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে যেমনটি বলেছিলেন—আমরা আমাদের ভূগোল পরিবর্তন করতে পারি না। আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকব, তারাও সেখানেই থাকবে। তাদের উচিত আমাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শেখা।’

শশী থারুর জানান, নয়াদিল্লি পুরো পরিস্থিতি খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় কর্মকর্তারা সরাসরি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করতে অনুরোধ জানাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে তেল দিয়ে ফেরার পথে বিধ্বস্ত রুশ জাহাজ—প্রতিশোধের হুমকি পুতিনের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৫৩
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

ভূমধ্যসাগরের নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় একটি রুশ তেলবাহী ট্যাংকার ধ্বংসের ঘটনায় উত্তেজনা আরও বেড়েছে। হামলার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ইউক্রেন একে ‘অভূতপূর্ব বিশেষ অভিযান’ হিসেবে দাবি করলেও, রাশিয়া এটিকে আন্তর্জাতিক নৌ নিরাপত্তার জন্য নতুন হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছে।

শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে—ইউক্রেনীয় ড্রোনের আঘাতে রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা গোপন নৌবহরের অন্তর্ভুক্ত তেলবাহী ট্যাংকার ‘কেনডিল’-এ ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটেছে।

ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থা এসবিইউ জানিয়েছে, হামলাটি ইউক্রেন থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে সংঘটিত হয়। কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি প্রথমবারের মতো কৃষ্ণসাগরের বাইরে এবং নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের কোনো ড্রোন হামলা।

ইউক্রেন দাবি করেছে, হামলার সময় ট্যাংকারটি খালি ছিল এবং এতে কোনো তেল বা জ্বালানি বহন করা হচ্ছিল না। ফলে পরিবেশগত কোনো ঝুঁকি তৈরি হয়নি। তবে বিস্ফোরণে জাহাজটি ‘গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, ট্যাংকারটি চলতি মাসের শুরুর দিকে ভারতের গুজরাট রাজ্যের সিক্কা বন্দরে তেল খালাস করে ফিরে যাচ্ছিল।

এই ঘটনার পর মস্কো কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বছরের শেষ প্রান্তিকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ভূমধ্যসাগরে রুশ ট্যাংকারে হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের হামলা কিছু বাস্তব লক্ষ্যকে সামনে রেখে করা হয়—যেমন বিমা প্রিমিয়াম বাড়ানো। কিন্তু এতে সরবরাহ ব্যাহত হবে না এবং প্রত্যাশিত ফলও পাওয়া যাবে না। বরং এটি অতিরিক্ত হুমকি তৈরি করবে। আমাদের দেশ এর জবাব দেবে।’

পুতিন আরও বলেন—বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর আঘাতের বিষয়েও রাশিয়া চুপ করে থাকবে না। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের পক্ষ থেকে সব সময়ই একটি পাল্টা আঘাত ঘটবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, নিরপেক্ষ জলসীমায় ইউক্রেনের এই হামলা যুদ্ধের পরিধিকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে পুতিনের পাল্টা জবাবের ঘোষণা ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতকে আরও বিস্তৃত ও অনিশ্চিত করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত