Ajker Patrika

নিঃসঙ্গতা দূর করতে দক্ষিণ কোরিয়ায় রামেনের রেস্তোরাঁ খুলেছে সরকার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
নিঃসঙ্গ মানুষেরা একসঙ্গে রামেন খান, সিনেমা দেখেন এই রেস্তোরাঁয়। ছবি: বিবিসি
নিঃসঙ্গ মানুষেরা একসঙ্গে রামেন খান, সিনেমা দেখেন এই রেস্তোরাঁয়। ছবি: বিবিসি

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী ব্যস্ত সিউল শহরের একটি দোকান ‘ওয়ার্ম-হার্টেড কনভেনিয়েন্স স্টোর’। শুনতে আর দশটা মুদি দোকানের মতো মনে হলেও এই দোকানের পণ্য এক ভিন্ন জিনিস। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য হলেও এই দোকানের পণ্য সব দোকানে মেলে না। স্নেহ, ভালোবাসা, সঙ্গ, সহানুভূতির মতো বিষয়গুলো পেতে এই ‘স্টোর’-এ আসে মানুষ।

২৯ বছর বয়সী হি-কিয়ং। হাসিমুখে এসে দোকানটিতে ঢুকলেন এই তরুণী। প্রতিদিন ‘উষ্ণ হৃদয়ের খোঁজ’-এ এই দোকানে আসেন তিনি। এই দোকানে মেলে বিনা মূল্যের ইনস্ট্যান্ট রামেন নুডলস। সেগুলো খান আর অন্যান্য দর্শনার্থী ও সমাজকর্মীদের সঙ্গে গল্প করতে করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেন।

এই বয়সে অধিকাংশ মানুষকেই ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা যায়। কিন্তু হি-কিয়ংয়ের জীবনের গল্প ভিন্ন।

কৈশোরে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন হি-কিয়ং। এখন আর পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই। যেসব বন্ধু আছে, তাদের সঙ্গে পরিচয় অনলাইনে। কে-পপ ব্যান্ড সুপার জুনিয়রকে ঘিরে গড়ে উঠেছে এই বন্ধুত্ব। তবে বন্ধুরা সবাই থাকেন দূরে। বর্তমানে বেকার হি কিয়ং। তাই কর্মস্থলের সহকর্মীও নেই যাদের সঙ্গে গল্প করা যায়। তাঁর সময় কাটে মেঝেতে শুয়ে ফোনে আদুরে প্রাণীর ভিডিও দেখে। কিন্তু এ কাজ আর কতক্ষণ করা যায়!

নিঃসঙ্গতা কাটাতে এখন এই ‘স্টোর’-ই হি-কিয়ংয়ের ভরসা। হি-কিয়ং বলেন, ‘আমি নিজেকে বলি, আরেকটা দিন, আরেকটু নিঃসঙ্গতা থেকে মুক্তি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই দোকানটা না থাকলে আমার আর যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই।’

দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের উদ্যোগে গত মার্চে চালু হওয়ার পর থেকে এ ধরনের চারটি দোকানে ২০ হাজার মানুষ এসেছেন। অথচ প্রথম বছরে মাত্র ৫ হাজার দর্শনার্থী আসবে বলেই ধারণা ছিল।

সিউল শহরের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ডংদেমুন জেলায় অবস্থিত এই শাখায় প্রতিদিন গড়ে ৭০ থেকে ৮০ জন আসেন। যাদের বেশির ভাগই চল্লিশোর্ধ্ব বা পঞ্চাশোর্ধ্ব, তবে হি-কিয়ংয়ের মতো অনেক তরুণ-তরুণীও দোকানের সেবা নিচ্ছেন।

২০২২ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, সিউলের ১৯ থেকে ৩৯ বছর বয়সী প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার তরুণ হয় সামাজিকভাবে একাকী, নয়তো স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী হয়ে আছেন। ওই গবেষণায় আরও জানা যায়, রাজধানীতে একক সদস্যের পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় বিয়ে ও জন্মহার কমে যাওয়া ঠেকাতে মরিয়া সরকারকে আরও চিন্তায় পড়ে গেছে।

উষ্ণ হৃদয়ের খোঁজে যাত্রা করা এই দোকানে বিবিসির প্রতিবেদক সরেজমিনে দেখেন, প্রায় ১২ থেকে ১৫ জন নারী-পুরুষ, তরুণ-প্রবীণ দর্শনার্থী বেঞ্চে বসে কেউ কেউ বিনব্যাগে হেলান দিয়ে একসঙ্গে সিনেমা দেখছিলেন।

শহরের ‘নিঃসঙ্গতা প্রতিরোধ বিভাগ’-এর ম্যানেজার কিম সে-হন বলেন, ‘আমরা সিনেমা ডে আয়োজন করি, যাতে স্বাভাবিকভাবে একধরনের বন্ধন তৈরি হয়।’

তিনি বলতে থাকেন, দোকানগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে সেখানে সম্পর্কের উষ্ণতা অনুভূত হয়। যেখানে একটি ক্যাফের মতো একটি পরিবেশ পাওয়া যায়।

স্টোরটির এক কোণে এক প্রবীণ নারীকে স্বয়ংক্রিয় ম্যাসাজ চেয়ারে চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে দেখা যায়। আরেক কোণে স্তূপ করে রাখা নুডলস দেখা যায়।

ম্যানেজার কিম বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ায় রামেন (নুডলস) হলো ‘স্বস্তি আর উষ্ণতার’ প্রতীক।

নুডলস সেদ্ধ হওয়ার অপেক্ষায় থাকাকালে দর্শনার্থীদের কাছে তাদের মনের অবস্থা ও জীবনযাপনের শর্ত নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত জরিপ ফরম পূরণ করতে বলা হয়।

এই দোকানগুলোতে আসেন নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করা মানুষগুলো। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও তাদের কোনো কিছুতে সম্পৃক্ত রাখার চেষ্টায় এ উদ্যোগ নিয়েছে শহর কর্তৃপক্ষ।

দক্ষিণ কোরিয়ায় সামাজিক-অর্থনৈতিক পরিবর্তন এসেছে বেশ দ্রুতগতিতে। এক প্রজন্মের মধ্যেই যুদ্ধবিধ্বস্ত কৃষিভিত্তিক সমাজ থেকে এটি রূপ নিয়েছে উন্নত অর্থনীতিতে।

কয়েক দশক আগেও দেশটিতে একই ছাদের নিচে ছয়-আট সন্তানের বড় পরিবার ছিল স্বাভাবিক চিত্র। কিন্তু শহরমুখী অভিবাসনের ধারাবাহিকতায় পরিবার ছোট হয়ে গেছে, আর সিউলের মতো শহর পরিণত হয়েছে বিস্তৃত মহানগরে।

এছাড়াও অসহনীয় বাড়িভাড়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বমূল্য এবং ক্লান্তিকর কর্মঘণ্টা ক্রমশ আরও বেশি তরুণকে বিয়ে বা সন্তান ধারণ অথবা এই দুটোই এড়িয়ে চলার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অন্যদিকে আছে একটি অবহেলিত বৃদ্ধ প্রজন্মও রয়ে গেছে যাদের সন্তানরা জীবনজীবিকার দৌড়ে এতটাই ব্যস্ত যে তাদের জন্য সময় নেই।

দোকানের কাউন্সেলর লি ইন-সুক বলেন, ‘একা খাবার খাওয়ার অনুভূতি জীবনের সবচেয়ে নীরস খাবার খাওয়ার মতো। আমি দোকানে আসা প্রবীণদের জিজ্ঞেস করি, তারা ঠিকমতো খাচ্ছেন কি না। শুধু এই প্রশ্ন করলেই তাদের চোখ ভিজে ওঠে।’

ইন-সুক জানান, বিচ্ছেদের পর এবং যখন প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানেরা আলাদা হয়ে গেল, তখন তিনি বুঝতে পেরেছেন নিঃসঙ্গতা কেমন লাগে।

প্রথমবার যখন হি-কিয়ং ওই দোকানে আসেন তখন থেকে ইন-সুকের নজর কাড়েন। হি-কিয়ংয়ের বয়স ইন-সুকের মেয়ের সমান। অনেক দর্শনার্থীর মতো প্রথম দিন হি-কিয়ংও ছিলেন নীরব, প্রায় কারও সঙ্গে কথা বলেননি। কিন্তু দ্বিতীয়বার আসার পর তিনি ইন-সুকের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন।

বাড়তে থাকা ‘নিঃসঙ্গ মৃত্যু’ সিউল কর্তৃপক্ষকে এতটাই উদ্বিগ্ন করেছিল যে তারা এই সামাজিক যোগাযোগ বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। অনেক প্রবীণ মানুষ বাড়িতে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যাচ্ছিলেন। দিনের পর দিন তাদের মরদেহ ঘরে পড়ে থাকছিল।

শুরুতে এই উদ্যোগের লক্ষ্য ছিল শুধু ওই সমস্যার সমাধান, কিন্তু পরে তা প্রসারিত হয়ে নিঃসঙ্গতা মোকাবিলার বৃহত্তর অভিযানে রূপ নেয়। তবে সিউল এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম নয়।

২০১৮ সালে যুক্তরাজ্য নিঃসঙ্গতা বিষয়ক মন্ত্রী নিয়োগ দেয়। জাপানও একই পথে হেঁটে একটি সংস্থা গড়ে তোলে, যা কোভিড-১৯ মহামারির সময় সমস্যাটিকে আরও তীব্র বলে চিহ্নিত করে।

অন্যদিকে সমাজ থেকে পুরোপুরি সরে যাওয়ার এই প্রবণতা জাপানে এতটাই সাধারণ যে এর জন্য আলাদা একটি নাম আছে, ‘হিকিকোমোরি’। দক্ষিণ কোরিয়াতেও ক্রমেই তরুণেরা স্বেচ্ছায় নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলছেন অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক ও কঠোর সামাজিক বাস্তবতা থেকে।

সিউলের এক ‘নিঃসঙ্গতা প্রতিরোধ কর্মসূচি’র ব্যবস্থাপক লি ইউ-জিয়ং চিন্তিত স্বরে বলেন, ‘হয়তো এর পেছনে মহামারিই দায়ী।’

তিনি বলতে থাকেন, ‘আমার সন্তানেরাও স্মার্টফোনে মুখ গুঁজে থাকে, এমনকি বন্ধুরা বাড়িতে এলেও।’

লি ইউ-জিয়ং আরও বলেন, ‘আজকের দিনে মানুষ বন্ধুত্বের নেটওয়ার্ক তৈরি করাকে কঠিন বলে মনে করে। নিঃসঙ্গতা এখন এমন এক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা সমাজ হিসেবে মোকাবিলা করা দরকার।’

দক্ষিণ কোরিয়া প্রথমে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে একটি হটলাইন চালু করার পদক্ষেপ নেয়, যেখানে মানুষ প্রয়োজনে কারও সঙ্গে কথা বলতে পারে। ২০২৩ সালের এক জাতীয় জরিপে দেখা গেছে, দেশটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ প্রাপ্তবয়স্কের এমন কেউ নেই, যাকে গৃহস্থালির কাজে সাহায্যের জন্য বলা যায় কিংবা মন খারাপের সময় কথা বলা যায়।

এখানে কাউন্সেলররা যে কারও সঙ্গে যেকোনো বিষয়ে প্রায় ৪০ মিনিট কথা বলার সুযোগ দেন। পার্ক সিউং-আ তার ছোট্ট কিউবিকল থেকে দিনে তিনটি করে কল করেন।

পার্ক আরও বলেন, ‘এত তরুণ-তরুণীরা এই সেশনে অংশ নেয় যে দেখে অবাক হই। তাঁরা নিজেদের কথার ভার ভাগ করে নিতে চায়। বুকে বোঝা হয়ে জমে থাকা কষ্ট ভাগ করে নিতে চায়। বাবা-মা বা বন্ধুদের সঙ্গে প্রায়ই একধরনের দূরত্ব থাকে। তাই তারা আমাদের কাছে আসে।’

এর পর চালু হয় ‘ওয়ার্ম-হার্টেড কনভেনিয়েন্স স্টোর’, যেখানে নিঃসঙ্গরা এসে নিজেদের মনের কথা প্রকাশ করতে পারে।

ডংদেমুন শাখাটি এমন একটি এলাকায় যেখানে নিম্ন-আয়ের মানুষ বেশি থাকে। এসব অ্যাপার্টমেন্টের বেশির ভাগ মানুষই একা বসবাস করে।

৬৮ বছর বয়সী সন সপ্তাহে একবার এই দোকানে আসেন সিনেমা। নিজের ছোট্ট সংকীর্ণ বাসা থেকে কিছুটা সময়ের জন্য মুক্তি পেতে।

তিনি বলেন, ‘এই দোকানগুলো আমার জন্মের আগেই খোলা উচিত ছিল। মাত্র দুই-তিন ঘণ্টা হলেও এখানে সময় কাটানো ভালো লাগে।’

বিয়ে করেননি সন। মায়ের সঙ্গে থাকতেন। মা মারা যাওয়ার পর একা হয়ে পড়েন তিনি। কয়েক বছর আগে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় তাঁর। এর পর থেকে লাঠি ভর দিয়ে হাঁটেন সন। তিনি বলেন, আমার মতো মানুষের জন্য জায়গা খুব বেশি নেই। যেখানেই যাই, টাকা লাগে। সিনেমা দেখতে গেলেও টাকা লাগে।’

দোকান ব্যবস্থাপক লি বো-হিউন বলেন, এই দোকানগুলো মূলত এমন মানুষের জন্যই তৈরি, যারা অন্য জায়গায় চাইলেই যেতে পারেন না। এগুলো কেবল একটা আড্ডা দেওয়া বা একটি সিনেমা উপভোগ করার জায়গা নয় বরং এর চেয়েও বেশি কিছু। তীব্র গরমের দিনে নিম্ন-আয়ের মানুষদের জন্য বিনা মূল্যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশও থাকে, যা তারা নিজেদের ঘরে বহন করতে পারেন না।

এই দোকানগুলোর নাম ‘কনভেনিয়েন্স স্টোর’ দেওয়া হয়েছে যাতে কেউ এখান থেকে সাহায্য চাইতে না ভাবে, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলতে না লজ্জা পায়। এখনো দক্ষিণ কোরিয়ায় মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সাহায্য চাইতে এখনো অনেকে লজ্জা পান, বিশেষ করে প্রবীণেরা।

দোকানের ম্যানেজার লি জানান, শুরুতে দর্শনার্থীরা প্রায়ই কারও সঙ্গে কথা বলতে বা একসঙ্গে খেতে অস্বস্তি বোধ করেন।

হি-কিয়ংয়ের সেই নতুন আগন্তুক হিসেবে নীরব থাকার দিনগুলোর পর থেকে পেরিয়ে গেছে কয়েক মাস। এখন কেমন সময় কাটছে তাঁর?

এ সময় ইন-সুক বলেন, একদিন স্থানীয় এক পত্রিকার সঙ্গে কথা বলছিলাম। সে সময় নিজের মেয়ের কথা উঠে আসে। হঠাৎ বুকের ভেতর টান অনুভব করেন, গলা কেঁপে ওঠে।’

এ সময় হঠাৎ হি-কিয়ং বলে ওঠে, ‘আমি আপনাকে জড়িয়ে ধরতে চাই।’

ঘরের অন্য প্রান্ত থেকে হেঁটে এসে সে আলতো করে জড়িয়ে ধরেছিল ইন-সুককে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিন বাহিনীর প্রধান হয়েই পাকিস্তানকে ‘অনন্য উচ্চতায়’ পৌঁছানোর ঘোষণা আসিম মুনিরের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ৪৬
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের তিন বাহিনীর প্রথম প্রধান বা চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনির নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পর বলেছেন, পাকিস্তান এখন অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় আওয়াইন-ই-সদরে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক ঘরোয়া আলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

আসিম মুনির বলেন, ‘সবই তো ঠিক আছে, আপনাদের চোখের সামনেই তো সব। অবস্থার উন্নতি হচ্ছে, আর এখন থেকে পাকিস্তান আরও অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে।’ তাঁর এই মন্তব্য এল ঠিক এমন এক সময়ে, যখন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ একটি নোট প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির কাছে পাঠিয়েছিলেন। তাতে সেনাপ্রধান মুনিরকে পাকিস্তানের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) হিসেবে নিয়োগ করার সুপারিশ করা হয়। এরপরই প্রেসিডেন্ট এই অনুমোদন দেন।

সত্তরের দশকের পর দেশটির সামরিক কমান্ডে এটি হলো সবচেয়ে বড় ও ব্যাপক পরিবর্তন। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি এই নিয়োগে অনুমোদন দেন। খবর দ্য ডনের

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ‘প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে পাঁচ বছরের জন্য সেনাপ্রধানের (সিওএএস) সঙ্গে সমান্তরালভাবে সিডিএফ হিসেবেও নিয়োগে অনুমোদন দিয়েছেন।’ এই বিবৃতি বহুদিনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটাল। এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শাহবাজই প্রেসিডেন্টকে এই নতুন দ্বৈত দায়িত্বপ্রাপ্ত পদে ফিল্ড মার্শাল মুনিরকে নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী ফিল্ড মার্শাল সৈয়দ আসিম মুনিরকে সেনাবাহিনীর প্রধান এবং চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হিসেবে নিয়োগের সারসংক্ষেপ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন।’

এই নতুন ব্যবস্থা পাকিস্তানের সংবিধানের ২৭তম সংশোধনীতে ২৪৩ অনুচ্ছেদের পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে একটি অফিসের অধীনে সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনাল, প্রশাসনিক ও কৌশলগত ক্ষমতাকে একত্র করা হয়েছে। সংশোধিত ২৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট সেনাপ্রধানকে নিয়োগ করবেন, যিনি একই সঙ্গে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হিসেবেও কাজ করবেন।

এই সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৬ সাল থেকে চালু থাকা তিন বাহিনীর সমন্বয় ব্যবস্থা—চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির (সিজেসিএসসি) অফিস বিলুপ্ত করা হয়। এর ফলে যৌথ কমান্ডের ইন্টিগ্রেশন সিডিএফের হাতে চলে এল।

সাংবিধানিক এই আমূল পরিবর্তনকে সামরিক বাহিনীর আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার জন্য সরকার ২৭তম সংশোধনীর পরপরই ১৯৫২ সালের পাকিস্তান আর্মি অ্যাক্টেও (পিএএ) সংশোধন আনে। পিএএর ৮এ অনুচ্ছেদের উপধারা (১) এখন জানাচ্ছে, ‘প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনীর প্রধান যিনি একই সঙ্গে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস হবেন [...], তাঁর মেয়াদ এই ধারার অধীনে ওই পদের বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে শুরু হবে।’

আরও বলা হয়েছে, এই প্রথম সিওএএসসহ-সিডিএফের বিজ্ঞপ্তি জারি হলে ‘বর্তমান সেনাপ্রধানের বিদ্যমান মেয়াদ ওই বিজ্ঞপ্তির তারিখ থেকে পুনরায় শুরু হয়েছে বলে গণ্য হবে।’ ৮এ অনুচ্ছেদের উপধারা (৩) অনুযায়ী, সিওএএস যিনি একই সঙ্গে সিডিএফেরও দায়িত্বে থাকবেন, তাঁর ‘শর্তাবলি ও নিয়ম’ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রেসিডেন্ট স্থির করবেন।

ফিল্ড মার্শাল মুনির ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর ১৭তম সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের নভেম্বরে সরকার পিএএ-তে পরিবর্তন আনে, যেখানে সিজেসিএসসির মেয়াদ তিন বছর অপরিবর্তিত রেখে বাকি তিন বাহিনীর প্রধানদের মেয়াদ তিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়। একই সংশোধনীতে সার্ভিস চিফদের পুনর্নিয়োগ বা তাঁদের মেয়াদ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়, যা আগে সর্বোচ্চ তিন বছর ছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েলকে অংশগ্রহণ করতে দেওয়ায় ইউরোভিশন বয়কট ৪ দেশের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউরোভিশনে অংশ নেওয়া ইসরায়েলি গায়িকা ইউভাল রাফায়েল। ছবি: এএফপি
ইউরোভিশনে অংশ নেওয়া ইসরায়েলি গায়িকা ইউভাল রাফায়েল। ছবি: এএফপি

আগামী বছরের অর্থাৎ, ২০২৬ সালের ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতা বয়কট করবে আয়ারল্যান্ড, স্পেন, নেদারল্যান্ডস ও স্লোভেনিয়া। কারণ আয়োজকেরা ইসরায়েলকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দিয়েছে। দেশগুলোর অভিযোগ, গাজায় গণহত্যা চালানো ইসরায়েলকে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেওয়া ঠিক হয়নি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধ এবং নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে এসব দেশ ইসরায়েলকে বাদ দেওয়ার দাবি করেছিল। জেনেভায় এক বৈঠকে গোপন ভোটের দাবি তোলে স্পেনের সম্প্রচার সংস্থা আরটিভিই। তারা জানায়, আয়োজনকারীরা সেই দাবি মানেনি। এতে উৎসবের প্রতি তাদের অবিশ্বাস আরও বেড়েছে।

আয়ারল্যান্ডের সংবাদমাধ্যম আরটিই জানায়, গাজার ভয়াবহ প্রাণহানি এবং চলমান মানবিক সংকটের সময়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া তাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। স্পেন ইউরোভিশনের ‘বিগ ফাইভ’ দেশের একটি। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে স্পেনের শিল্পীরা সরাসরি ফাইনালে ওঠে। কারণ এসব দেশের সম্প্রচার সংস্থা ইবিইউকে সবচেয়ে বেশি অর্থ দেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রায় ৫০টি সম্প্রচার সংস্থা—যার মধ্যে বিবিসিও আছে—ইউরোপিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিয়নের (ইবিইউ) বৈঠকে যোগ দেয়। প্রতিবছর ১৫ কোটির বেশি দর্শক এই প্রতিযোগিতা দেখে, তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা হয়। ইসরায়েল তাদের অংশগ্রহণকারী ইউভাল রাফায়েলের পক্ষে ভোট বাড়াতে অন্যদের সাহায্য নিয়েছে, এমন অভিযোগের পর সরকার ও তৃতীয় পক্ষের প্রভাব ঠেকাতে নতুন নিয়মে সম্মতি চাইছিল ইবিইউ।

বিবিসি জানায়, এই নিয়ম মানার ভোটের সঙ্গে একটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। সদস্যরা রাজি হলে ইসরায়েলকে নিয়ে আর কোনো ভোট হবে না। ইবিইউ জানায়, যারা নতুন নিয়ম মানতে সম্মত, তারা ইউরোভিশন ২০২৬-এ অংশ নিতে পারবে। ইউরোভিশন পরিচালক মার্টিন গ্রিন বলেন, সদস্যরা ইসরায়েলের অংশগ্রহণ নিয়ে খোলামেলা বিতর্কের সুযোগ পেয়েছে। ভোটে দেখা গেছে, অধিকাংশই চায় এই প্রতিযোগিতা রাজনৈতিক মঞ্চ না হোক, নিরপেক্ষতা বজায় থাকুক।

ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, এটি সংহতি, বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার প্রতীক। ইসরায়েল বিশ্বমঞ্চে প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার যোগ্য। ইসরায়েলের সম্প্রচার সংস্থা কান–এর প্রধান গলান ইয়োখপাজ বলেন, ইসরায়েলকে সরাতে চাওয়া সংস্কৃতিগত বয়কট ছাড়া কিছু নয়। আজ বয়কট শুরু হলে কাল অন্যদেরও ক্ষতি হতে পারে। ইউরোভিশনের ৭০ তম বছরে কি এমন স্মৃতি আমরা চাই?

যুক্তরাজ্যে ইউরোভিশন দেখায় বিবিসি। তারা জানায়, ইবিইউর নিয়ম কার্যকরে তারা সম্মিলিত সিদ্ধান্তকে সমর্থন করে। তবে এই সিদ্ধান্ত ইউরোভিশন সম্প্রদায়ের ভেতর বড় বিভাজন তৈরি করেছে। ডাচ সম্প্রচার সংস্থা অ্যাভরোট্রস জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণ তাদের মূল মূল্যবোধের সঙ্গে যায় না।

স্পেনের আরটিভিই জানায়, গত সেপ্টেম্বরেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল—ইসরায়েল থাকলে স্পেন ইউরোভিশন থেকে সরে দাঁড়াবে। এই কারণে ২০২৬ সালের ফাইনাল ও সেমিফাইনাল তারা সম্প্রচারও করবে না। স্লোভেনিয়ার আরটিভিও জানায়, তাদের অবস্থান অপরিবর্তিত। নিয়ম বদলালেও মত বদলায়নি। ন্যায়নীতি রক্ষা করা তাদের দায়িত্ব। বেলজিয়ামের সম্প্রচার সংস্থা বলেছে, তারা কয়েক দিনের মধ্যে অবস্থান জানাবে।

অন্যদিকে নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক ও আইসল্যান্ডসহ নর্ডিক দেশগুলো নিয়ম সংশোধনকে সমর্থন করেছে। তবে আইসল্যান্ড এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। জার্মানি, যারা আগে বলেছিল ইসরায়েল বাদ গেলে তারাও সরে দাঁড়াবে, সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের সংস্থা এআরডি জানায়, তারা পরের বছর অংশ নিতে আগ্রহী এবং বৈচিত্র্য ও সংহতির উৎসব হিসেবে এটিকে দেখে। তবে যারা সরে দাঁড়িয়েছে, তাদের সিদ্ধান্তকে তারা সম্মান করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

খুবই সাধারণ খাবার খান পুতিন, দেশে-বিদেশে খাদ্যতালিকায় যা থাকে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জীবনযাপনে কঠোর শৃঙ্খলা মেনে চলা পুতিনের খাদ্যতালিকা অত্যন্ত সাদামাটা। ছবি: তাস
জীবনযাপনে কঠোর শৃঙ্খলা মেনে চলা পুতিনের খাদ্যতালিকা অত্যন্ত সাদামাটা। ছবি: তাস

ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক আরও মজবুত করার লক্ষ্যে যখন ভ্লাদিমির পুতিনের ৪-৫ ডিসেম্বরের রাষ্ট্রীয় সফর ও ২৩ তম বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তখন কূটনৈতিক আলোচনার বাইরেও একটি বিষয় নজর কেড়েছে—রুশ প্রেসিডেন্টের খাবার সংক্রান্ত অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অন্য বিশ্বনেতাদের মতো তিনিও আনুষ্ঠানিক ভোজসভায় অংশ নেন, তবে তাঁর খাবার সবচেয়ে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।

পুতিন হোটেল বা আয়োজক দেশের কর্মীদের তৈরি খাবার গ্রহণ করেন না। তাঁর খাবারের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা প্রোটোকল অনুসরণ করা হয়।

বিদেশ সফরে পুতিনের খাদ্য ব্যবস্থাপনা প্রায় সামরিক নির্ভুলতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রিত হয়। এই কঠোরতার মূল কারণ হলো নিরাপত্তা—বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্ভাব্য বিষক্রিয়া বা গুপ্তহত্যার চেষ্টা এড়াতে এই ব্যবস্থা অপরিহার্য। পুতিনের জন্য খাবার পরিবেশনের আগে যেসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়:

বিশেষ শেফ ও লজিস্টিকস: প্রশিক্ষিত রুশ শেফ, পুষ্টিবিদ এবং সহযোগী কর্মীরা তাঁর সঙ্গে ফ্লাইটে আসেন। তাঁরাই বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত রান্নাঘরে পুতিনের খাবার তৈরি করেন।

মোবাইল পরীক্ষাগার: তিনি ভ্রমণের সময় একটি অত্যাধুনিক মোবাইল খাদ্য পরীক্ষাগারও সঙ্গে রাখেন। এই ল্যাব পরিবেশনের আগে প্রতিটি খাদ্য এবং পানীয়ের উপাদান দ্রুত পরীক্ষা করে সম্ভাব্য বিষ বা ক্ষতিকারক বস্তুর উপস্থিতি যাচাই করে।

নিয়ন্ত্রিত উপাদান: খাবারের উপাদান হয় সরাসরি রাশিয়া থেকে আনা হয়, নতুবা আয়োজক দেশে দীর্ঘ পরীক্ষার মাধ্যমে এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। শুধু অনুমোদিত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা উপাদানই তাঁর রান্নাঘরে প্রবেশাধিকার পায়।

বিশেষ পরিবেশন: আনুষ্ঠানিক ভোজসভার ক্ষেত্রেও এই সতর্কতা বজায় থাকে। যদিও তিনি উপস্থিত থাকেন, কিন্তু সাধারণত তাঁর প্লেটে পরিবেশিত খাবারটি নিজস্ব শেফদের দ্বারা পৃথকভাবে প্রস্তুতকৃত হয়। খাদ্য পরিবেশনের আগে প্রশিক্ষিত পরীক্ষকদের দ্বারা চূড়ান্ত যাচাই করা হয়। এই প্রক্রিয়া মস্কো এবং বিদেশে উভয় ক্ষেত্রেই অনুসরণ করা হয়।

পুতিনের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস

খাবারের ব্যবস্থা নিয়ে এত কড়াকড়ি থাকলেও, পুতিনের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকা কিন্তু বেশ সাধারণ। তাঁর জীবনযাপনও সুশৃঙ্খল। তিনি জমকালো ভোজের পরিবর্তে পুষ্টিকর ও সহজলভ্য খাবার পছন্দ করেন।

সকালের নাশতা: তাঁর সকাল শুরু হয় উচ্চ-প্রোটিন এবং কম-চিনিযুক্ত খাবার দিয়ে। সাধারণত মধুসহ ভরোগ (Tvorog, রুশ কটেজ চিজ) অথবা পরিজ (স্টার্চ ও পানি বা দুধ সহযোগে তৈরি) প্রধান খাদ্য। এ ছাড়া তিনি তাজা ফলের রস এবং মাঝে মাঝে কাঁচা কোয়েলের ডিম বা অমলেট গ্রহণ করেন। তাঁর খাদ্যাভ্যাসে অতিরিক্ত মিষ্টি বা চর্বিযুক্ত খাবারের স্থান নেই।

দুপুরের ও রাতের খাবার: পুতিন লাল মাংসের চেয়ে মাছ বেশি পছন্দ করেন, বিশেষত গ্রিলড বা স্মোকড মাছের পদ। ভেড়ার মাংসও তাঁর প্রিয়। তবে অতিরিক্ত মসলাযুক্ত রান্না তিনি এড়িয়ে চলেন। তাঁর বেশির ভাগ খাবারেই টমেটো, শসা এবং অন্যান্য সাধারণ সবজির সালাদ বাধ্যতামূলক। এই সবজিগুলো ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের জোগান দেয়।

পানীয় ও ডেজার্ট: পুতিন মিষ্টি বেক করা সামগ্রী, কেক বা বাটারি পেস্ট্রি একদম পছন্দ করেন না। পানীয়ের ক্ষেত্রে তাজা জুস, সাধারণ ভেষজ পানীয় এবং কেফির (এক প্রকার ফার্মেন্টেড দুগ্ধজাত পানীয়) পান করেন। তবে তাঁর সুশৃঙ্খল রুটিনের মাঝেও একটি ছোট দুর্বলতা রয়েছে—তা হলো পেস্তা আইসক্রিম!

বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুতিনের এই খাদ্যাভ্যাস তাঁর রাজনৈতিক ভাবমূর্তির সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ: সংযত, শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং ঐতিহ্যমুখী। পুষ্টি, প্রোটিন এবং সহজলভ্যতা ওপর তাঁর এই জোর, তাঁর দীর্ঘ ও অনিয়মিত কর্মঘণ্টার জন্য প্রয়োজনীয় স্থিতিশীল ক্যালরির জোগান নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মার্কিন নাগরিকদের অবিলম্বে ভেনেজুয়েলা ছাড়তে বলল স্টেট ডিপার্টমেন্ট

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ০৯
মার্কিন নাগরিকদের অবিলম্বে ভেনেজুয়েলা ছাড়তে বলল স্টেট ডিপার্টমেন্ট

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বা স্টেট ডিপার্টমেন্ট ভেনেজুয়েলায় ভ্রমণ নিয়ে নতুন করে কঠোর সতর্কতা জারি করেছে। দেশটিতে থাকা সব মার্কিন নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দাদের অবিলম্বে দেশটি ছেড়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা। নিরাপত্তা হুমকি দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এই নির্দেশনা দিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ভেনেজুয়েলায় ভুলভাবে আটক হওয়া, আটক অবস্থায় নির্যাতন, সন্ত্রাসবাদ, অপহরণ, স্থানীয় আইনের স্বেচ্ছাচারী প্রয়োগ, অপরাধ, নাগরিক অস্থিরতা এবং দুর্বল স্বাস্থ্যসেবার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। তাই দেশটিতে ভ্রমণ এবং সেখানে অবস্থান না করতে মার্কিন নাগরিকদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।

ঘোষণায় আরও বলা হয়, ভেনেজুয়েলায় থাকা সব মার্কিন নাগরিক ও আইনগত স্থায়ী বাসিন্দাদের অবিলম্বে দেশ ছাড়তে জোরালো পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এই সতর্কবার্তা এল এমন এক সময়, যার কয়েক ঘণ্টা আগেই যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রাণঘাতী হামলায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে একটি নৌকা লক্ষ্য করে মার্কিন বাহিনী হামলা চালায়। এতে চারজন নিহত হয়েছে বলে ইউএস সাউদার্ন কমান্ড এক বিবৃতিতে জানায়।

সামরিক কর্মকর্তাদের দাবি, আন্তর্জাতিক জলসীমায় চলাচলকারী এই নৌযানটি একটি ‘সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত সংগঠনের’ সঙ্গে যুক্ত। গোয়েন্দা তথ্যে জানা যায়, নৌকাটি পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরপথে অবৈধ মাদক পরিবহন করছিল। এক্সে দেওয়া পোস্টে সাউদার্ন কমান্ড জানায়, নৌকায় থাকা চার পুরুষ ‘মাদকসন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে। প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, বহু ইঞ্জিনবিশিষ্ট দ্রুতগতির নৌকাটি আচমকা একটি প্রবল বিস্ফোরণে আঘাত পেয়ে আগুনে ঘিরে যায়।

ঘটনাটি এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বিস্তৃত মাদকবিরোধী সামরিক অভিযানের অংশ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই অভিযান নিয়ে সমালোচনা বেড়েছে। কারণ, এতে নিহতের সংখ্যা এখন ৮৫-এর বেশি ছাড়িয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাড়তে থাকা সামরিক উত্তেজনার জেরে একযোগে ছয়টি বড় আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনের অবতরণ ও উড্ডয়নের অনুমতি বাতিল করেছে ভেনেজুয়েলা। এর আগে মার্কিন সতর্কবার্তার পরিপ্রেক্ষিতে ভেনেজুয়েলার কারাকাসগামী ফ্লাইটগুলো স্থগিত করেছিল এই এয়ারলাইনগুলো। পরে ভেনেজুয়েলা তাদের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়। সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় ২৭ নভেম্বর থেকে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছে।

নিষিদ্ধ হওয়া এয়ারলাইনগুলো হলো—আইবেরিয়া, টিএপি পর্তুগাল, গোল, লাতাম, অ্যাভিয়াঙ্কা এবং টার্কিশ এয়ারলাইনস। ভেনেজুয়েলার এই সিদ্ধান্তে হাজারো যাত্রী বিপাকে পড়েছেন। তবে কিছু ছোট ছোট এয়ারলাইন এখনো দেশটিতে যাতায়াত করছে।

সম্প্রতি ক্যারিবিয়ান সাগরে ভেনেজুয়েলার উপকূলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি ঘিরে এই উত্তেজনার সূত্রপাত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার উপকূলীয় এলাকায় ১৫ হাজার সেনা এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানবাহী জাহাজ ইউএসএস জেরাল্ড ফোর্ড মোতায়েন করেছে। ওয়াশিংটন বলছে, এই অভিযান মাদকবিরোধী তৎপরতার অংশ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদকবিরোধী অভিযানে এত বড় সামরিক উপস্থিতি সাধারণত দেখা যায় না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত