Ajker Patrika

দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন কূটনীতির খেলোয়াড় ডোনাল্ড লুর চুপিসারে বিদায়

আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২: ৩৭
ডোনাল্ড লু। ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড লু। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্যতম আলোচিত মুখ ছিলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তিনি দক্ষিণ এশিয়া বিশেষ করে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচিত ছিলেন ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে চলে গেছেন এই কূটনীতিক।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে, ডোনাল্ড লুর মেয়াদ ২০২৫ সালের ১৭ জানুয়ারি শেষ হয়েছে এবং তিনি পদত্যাগ করেছেন। ডোনাল্ড লু যেন অনেকটা নীরবে-নিভৃতে তাঁর মেয়াদ শেষে দায়িত্ব পালন করে চলে গেছেন। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, লু তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ায় পদত্যাগ করেছেন এবং তাঁকে সরানো হয়নি।

ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহুল পরিচিত মুখ। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের আগে ও পরে ডোনাল্ড লু দুই দফায় বাংলাদেশ সফর করেন। পাকিস্তানের রাজনীতিতে ‘সরকার পতনের কারিগর’ হিসেবে পরিচিত এই মার্কিন কূটনীতিকের বাংলাদেশ সফরের পরপরই শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়।

গত বছরের মে মাসে বাংলাদেশ সফরে আসেন ডোনাল্ড লু। সে সময় লুর বাংলাদেশ সফর নিয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস বিবৃতিতে বলেছিল, ‘সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের আলোচনা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গড়ে তোলা, কর্মশক্তি বৃদ্ধি, নিরাপত্তা সহযোগিতার উন্নতি, জলবায়ু সংকট মোকাবিলা এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আমাদের মূল্যবোধকে শক্তিশালী করার জন্য আমাদের যৌথ অঙ্গীকারকে পুনর্ব্যক্ত করেছে।’

ডোনাল্ড লুর সেই সফরের আগে, জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখে বাংলাদেশে জাতীয় অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ২০২৩ সালে ২২ সেপ্টেম্বর। ওই নিষেধাজ্ঞা ছিল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে যারা বাধা হবেন, তাদের জন্য। এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍্যাব-পুলিশের ১০ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালে জানুয়ারিতে ডোনাল্ড লু ঢাকা সফর করেছিলেন। তখন তাঁর সফরের মূল প্রতিপাদ্যই ছিল বাংলাদেশের নির্বাচন। পরে তিনি শর্তহীন সংলাপের জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে চিঠি দেন। নির্বচনের পরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না’ বলে প্রতিক্রিয়া জানায়। এরপর থেকে বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা করলেও সেটা আর খুব একটা ভালো হয়নি। একপর্যায়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে হাসিনার সরকারের পতন ঘটে।

সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ডোনাল্ড লু আবারও বাংলাদেশ সফরে আসেন। তাঁর সেই সফরের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছিলেন, ডোনাল্ড লু ঢাকায় মার্কিন সহায়তাকারী প্রতিনিধি হিসেবে গেছেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা, সুশাসন এবং উন্নয়নের প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে তাদের সহযোগিতা করতে পারে, তা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন তিনি। হাসিনা সরকারের পতনের পর আলোচনা ছিল যে, মার্কিন প্রভাবের কারণেই এমনটা হয়েছে। কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সরাসরি এ ধরনের অবস্থানকে অস্বীকার করেছে।

কেবল বাংলাদেশ নয়, ডোনাল্ড লু পাকিস্তানেও আলোচিত নাম। তাঁর মেয়াদপূর্তি ও পদত্যাগ পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও তাঁর দল পিটিআইয়ের কাছে বিজয় হিসেবে গৃহীত হতে পারে, আর সরকার এটিকে একটি রুটিন পরিবর্তন হিসেবে অভিহিত করতে পারে।

লুর সময়কালে পাকিস্তানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল বিশৃঙ্খল ছিল। পাকিস্তানের এস্টাবলিশমেন্ট ও রাজনৈতিক দলগুলোর আঁতাতে ইমরান খানের সরকারের পতনের পর থেকেই ডোনাল্ড লু দেশটির রাজনৈতিক আলোচনার বড় একটি অংশ দখল করে রেখেছিলেন।

ডোনাল্ড লু ২০২১ সালে ১৫ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক তত্ত্বাবধান ছিলেন। এর আগে, তিনি ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কিরগিজ প্রজাতন্ত্রে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আলবেনিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মার্চ ২০২২ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যুক্তরাষ্ট্র তাঁর সরকার উৎখাতে ‘ষড়যন্ত্র’ প্রণয়ন করেছে অভিযোগ করেন। তিনি বিশেষভাবে লুর দিকে আঙুল তুলে বলেন, লু তাঁর সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছিলেন এবং লু ও যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের তখনকার রাষ্ট্রদূত আসাদ মজীদ খানের মধ্যে এক আলোচনাকে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

এই আলোচনা ‘সাইফার’ কথোপকথন নামে পরিচিত। এটি ছিল একটি কূটনৈতিক তারবার্তা। এটি পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগে খানের বৃহত্তর বক্তব্যের কেন্দ্রীয় অংশ হয়ে ওঠে। খানের অভিযোগের পর, পিটিআই সমর্থকেরা যুক্তরাষ্ট্রে লুর পদত্যাগের দাবি জানাতে শুরু করেন এবং তাঁকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণের ষড়যন্ত্রের জন্য অভিযুক্ত করে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে পিটিআইর সমাবেশগুলোতে এই দাবি জোরালো হয়। এই বিষয়টি মার্কিন সরকারের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়িয়ে তোলে।

যদিও যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই অভিযোগগুলো দৃঢ়ভাবে নাকচ করেছে এবং সেগুলোকে ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছে, তবে কিছু মার্কিন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, নতুন ট্রাম্প প্রশাসন সমস্ত ঊর্ধ্বতন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের পদত্যাগের অনুরোধ করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহরে বোমা ফেলল থাইল্যান্ড

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেত। ছবি: বিবিসি
কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেত। ছবি: বিবিসি

কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী শহর পোইপেতের কাছে একটি রসদ কেন্দ্র লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালিয়েছে থাইল্যান্ড। পোইপেত শহরটি থাই-কম্বোডিয়া সীমান্তের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর এবং ক্যাসিনোর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষ থামার কোনো লক্ষণ না দেখানোর মধ্যেই এই হামলার ঘটনা ঘটল।

কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ১১টার দিকে পোইপেত পৌর এলাকায় থাই বাহিনী দুটি বোমা ফেলেছে। অন্যদিকে থাইল্যান্ডের বিমানবাহিনীর মুখপাত্র এয়ার মার্শাল জ্যাকক্রিট থাম্মাভিচাই জানিয়েছেন, পোইপেতের বাইরে অবস্থিত একটি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে বিএম-২১ রকেট মজুত করা হচ্ছিল। তাঁর দাবি, এই অভিযানে কোনো বেসামরিক নাগরিক ক্ষতিগ্রস্ত হননি।

বিবিসি জানিয়েছে, বিএম-২১ রকেট সাধারণত সাঁজোয়া যান থেকে একযোগে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে ব্যবহৃত হয়। পোইপেত শহরে এই ধরনের হামলার ঘটনা চলমান সংঘাতে প্রথম বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই শহরটি থাই জুয়াড়িদের কাছে জনপ্রিয় ক্যাসিনো কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত।

চলতি মাসে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘর্ষে থাইল্যান্ডে অন্তত ২১ জন এবং কম্বোডিয়ায় ১৭ জন নিহত হয়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পাশাপাশি প্রায় ৮ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার থাইল্যান্ড জানিয়েছিল, কম্বোডিয়া সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার থাই নাগরিক পোইপেতে আটকা পড়েছেন। কম্বোডিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সীমান্ত বন্ধকে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য ‘প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেছে এবং জানিয়েছে, দেশ ছাড়ার জন্য আকাশপথ খোলা রয়েছে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার শত বছরের পুরোনো সীমান্ত বিরোধ গত ২৪ জুলাই ভয়াবহ আকার ধারণ করে, যখন কম্বোডিয়া থাইল্যান্ডে রকেট হামলা চালায় এবং পাল্টা জবাবে থাইল্যান্ড বিমান হামলা শুরু করে। পাঁচ দিনব্যাপী তীব্র লড়াইয়ের পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হলেও সেটি গত সপ্তাহে আবার ভেস্তে যায়। সর্বশেষ দফায় উভয় পক্ষই একে অপরকে সংঘর্ষ পুনরায় শুরুর জন্য দায়ী করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বর্তমান বাংলাদেশ একাত্তরের পর সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ: ভারতের সংসদীয় কমিটি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বর্তমান বাংলাদেশ একাত্তরের পর সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ: ভারতের সংসদীয় কমিটি

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর ভারতের জন্য ‘সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের নেতৃত্বে ভারতের একটি সংসদীয় কমিটি আজ বৃহস্পতিবার সরকারকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এই সতর্কবার্তা দিয়েছে। কমিটি জানিয়েছে, বাংলাদেশে পরিস্থিতি হয়তো ‘বিশৃঙ্খলা বা অরাজকতায় পর্যবসিত হবে না’, তবে ভারতকে এটি মোকাবিলায় অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে।

সংসদীয় কমিটি তাদের প্রতিবেদনে ১৯৭১ সালের সংকটের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করে বলেছে, ১৯৭১ সালে চ্যালেঞ্জ ছিল অস্তিত্ব রক্ষা, মানবিক সংকট ও একটি নতুন জাতির জন্ম নিয়ে। তবে বর্তমান চ্যালেঞ্জটি আরও গুরুতর এবং এটি একটি ‘প্রজন্মগত বিচ্ছিন্নতা’। রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এবং ভারতের দিক থেকে সরে যাওয়ার সম্ভাব্য কৌশলগত পুনর্বিন্যাস।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতার পেছনে কয়েকটি কারণ একসঙ্গে কাজ করছে—ইসলামপন্থী চরমপন্থার উত্থান, চীন ও পাকিস্তানের প্রভাব বৃদ্ধি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আধিপত্যের পতন।

কমিটি সরকারের কাছে একাধিক সুপারিশ জমা দিয়েছে এবং স্পষ্টভাবে বলেছে, ভারত যদি এই মুহূর্তে নিজেকে নতুন করে মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়, তবে যুদ্ধের কারণে নয়, বরং ‘অপ্রাসঙ্গিক’ হয়ে পড়ার কারণে ঢাকা থেকে কৌশলগত নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে।

কমিটি বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক পুনর্গঠন ও চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে, অবকাঠামো উন্নয়ন, বন্দর সম্প্রসারণ ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় চীনের সক্রিয়তার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মোংলা বন্দরের সম্প্রসারণ, লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি ও পেকুয়ায় সাবমেরিন ঘাঁটির উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পেকুয়ার ওই ঘাঁটিতে আটটি সাবমেরিন রাখার সক্ষমতা রয়েছে, যদিও বাংলাদেশের কাছে বর্তমানে মাত্র দুটি সাবমেরিন আছে।

কমিটির মতে, চীন বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গেই যোগাযোগ বাড়াচ্ছে, যার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীও রয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই ইসলামপন্থী দলটির প্রতিনিধিরা সম্প্রতি চীন সফরও করেছেন।

এই প্রেক্ষাপটে কমিটি সুপারিশ করেছে, বাংলাদেশে কোনো বিদেশি শক্তি যাতে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। পাশাপাশি উন্নয়ন, যোগাযোগব্যবস্থা ও বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঢাকাকে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে, যা অন্য কোনো দেশ (যেমন চীন) দিতে পারবে না।

বাংলাদেশে ইসলামপন্থী দলগুলোর প্রভাব বাড়ার বিষয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে কমিটি। আগে নিষিদ্ধ থাকা জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরে পাওয়া এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়াকে কমিটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।

অন্যদিকে, ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার ফলে দলটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। কমিটি মনে করে, আওয়ামী লীগকে বাইরে রেখে নির্বাচন হলে এর ‘গ্রহণযোগ্যতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ক্রিপটো চুরি করে এই বছর উত্তর কোরিয়ার আয় ২.২ বিলিয়ন ডলার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

২০২৫ সালে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা রেকর্ড পরিমাণ ক্রিপ্টোকারেন্সি চুরি করেছে। ব্লকচেইন তথ্য বিশ্লেষণ প্ল্যাটফর্ম ‘চেইনঅ্যানালিসিস’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—চলতি বছরে দেশটি অন্তত ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ডিজিটাল সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫১ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে বৈশ্বিক পর্যায়ে সংঘটিত সব ধরনের ক্রিপটো সেবা-সংক্রান্ত হ্যাকিং ঘটনার ৭৬ শতাংশের জন্য উত্তর কোরিয়া দায়ী—ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী—বিভিন্ন ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ, কাস্টডিয়ান এবং ওয়েব ৩ প্রতিষ্ঠানে অনুপ্রবেশ এই রেকর্ড চুরির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে উত্তর কোরিয়ার আইটি কর্মীরা। এসব কর্মী প্রাথমিকভাবে ভেতরে প্রবেশাধিকার তৈরি করে এবং পরে বড় পরিসরের চুরির পথ সুগম করে তোলে। চেইনঅ্যানালিসিস বলছে, এই কৌশল হ্যাকারদের দ্রুত ও কার্যকরভাবে বড় অঙ্কের সম্পদ হাতাতে সহায়তা করছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে ক্রিপটো চুরির মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩.৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে বিখ্যাত ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ বাইবিটে সংঘটিত এক হামলাতেই ১.৫ বিলিয়ন ডলার চুরি হয়ে যায়। বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলার পেছনে ছিল উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া হ্যাকার গ্রুপ ‘লাজারাস’।

চুরি করা অর্থ পাচারের জন্য উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা প্রায়ই চীনের কিছু সেবার ওপর নির্ভর করে। চেইনঅ্যানালিসিস-এর জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান অ্যান্ড্রু ফিয়ারম্যান জানান, এসব চীনা মানি লন্ডারিং নেটওয়ার্ক ইচ্ছাকৃতভাবে অবৈধ অর্থ সাদা করতে সহায়তা করে।

আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে উত্তর কোরিয়া বৈদেশিক আর্থিক ব্যবস্থায় সহজে লেনদেন করতে পারে না। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার আরোপিত নিষেধাজ্ঞা দেশটিকে সামরিক ও অস্ত্র কর্মসূচির অর্থ জোগাড়ে অবৈধ পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছে। গবেষকদের মতে, একসময় আদর্শগত উদ্দেশ্যে সাইবার হামলা চালালেও এখন উত্তর কোরিয়ার হ্যাকিং কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আর্থিক লাভ নিশ্চিত করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও ধর্মীয় বক্তাদের দমনে কঠোর হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। ছবি: বিবিসি
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। ছবি: বিবিসি

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে ইহুদি উৎসবকে লক্ষ্য করে ভয়াবহ বন্দুক হামলার পর দেশটিতে ঘৃণামূলক বক্তব্য ও উগ্রবাদ দমনে কঠোর আইন প্রণয়নের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ। গত ১৪ ডিসেম্বর ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের হানুক্কাহ উৎসবের প্রথম দিন উপলক্ষে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে দুই বন্দুকধারীর গুলিতে অন্তত ১৫ জন নিহত হন। এই হামলাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে উদ্বেগ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

ক্যানবেরায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী অ্যালবানিজ বলেন, নতুন আইন মূলত যারা ঘৃণা, বিভাজন ও উগ্রবাদ ছড়ায়—তাদের লক্ষ্য করেই আনা হবে। তিনি জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে এমন ব্যক্তিদের ভিসা বাতিল বা প্রত্যাখ্যানের ক্ষমতা দেওয়া হবে, যারা ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রচার করে। পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থায় ইহুদিবিদ্বেষ প্রতিরোধ, মোকাবিলা ও যথাযথ প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হবে।

প্রস্তাবিত আইনের আওতায় সহিংসতা উসকে দেওয়া ধর্মীয় বক্তা ও নেতাদের জন্য শাস্তির বিধান ছাড়াও ‘অ্যাগ্রাভেটেড হেট স্পিচ’ নামে অপরাধের একটি নতুন সংজ্ঞা সংযোজন করা হবে। অনলাইনে হুমকি ও হয়রানির ক্ষেত্রে শাস্তি নির্ধারণে বিদ্বেষ ছড়ানোনে গুরুতর উপাদান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অ্যালবানিজ বলেন, ‘প্রত্যেক ইহুদি অস্ট্রেলিয়ানের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানিত বোধ করার অধিকার রয়েছে।’

এই হামলার পর দেশটিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিউ সাউথ ওয়েলস পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দক্ষিণ-পশ্চিম সিডনিতে সাতজনকে আটক করা হয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সহিংস কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনার তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। তবে পুলিশ বলছে, বন্ডাই হামলার সঙ্গে এই ঘটনার সরাসরি কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায়নি।

এদিকে সরকারের ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও কিছু সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইহুদি কাউন্সিল অব অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, বন্দুক নিয়ন্ত্রণ ও অনলাইনে বিদ্বেষ ছড়ানোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ প্রশংসনীয় হলেও, কিছু প্রস্তাব ইসরায়েলপন্থী লবির পুরোনো দাবির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা সহিংস উগ্রবাদ দমনের চেয়ে মতপ্রকাশ সীমিত করতে পারে। সংগঠনটির নির্বাহী কর্মকর্তা ড. ম্যাক্স কাইজার সতর্ক করে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে মতাদর্শিক নজরদারি চালানো হলে তা ইহুদিদের নিরাপত্তা বাড়ানোর বদলে আরও ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।’

এদিকে প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, গত ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ইহুদিবিদ্বেষ রোধে সরকার আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত। তিনি বলেন, ‘আমার দায়িত্ব শুধু ভুল স্বীকার করা নয়, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করাও।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত