Ajker Patrika

ভেনেজুয়েলায় ‘অনন্ত যুদ্ধ শুরুর কৃত্রিম পরিস্থিতি’ তৈরি করছে যুক্তরাষ্ট্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ৪৭
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার ভেনেজুয়েলায় স্থল অভিযানের ইঙ্গিত দিয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার ভেনেজুয়েলায় স্থল অভিযানের ইঙ্গিত দিয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাঁর এবং তাঁর দেশের বিরুদ্ধে এক ‘যুদ্ধ শুরুর কৃত্রিম পরিস্থিতি’ সাজাচ্ছে। তিনি এমন এক সময়ে এই কথা বললেন, যার আগে ওয়াশিংটন বিশ্বের সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজটি পাঠিয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশের দিকে। একই সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভেনেজুয়েলায় ‘স্থল অভিযানের’ ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, এই যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর বিষয়টি লাতিন আমেরিকা অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর মাধ্যমে বড় ধরনের উত্তেজনা উসকে দেওয়ার পরিস্থিতি নির্দেশ করছে। জল্পনা চলছে, ওয়াশিংটন হয়তো ভেনেজুয়েলার সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করছে।

স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে জাতীয় টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে মাদুরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ‘এক নতুন চিরস্থায়ী যুদ্ধ তৈরি করছে’। আর ঠিক তার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরি ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এই রণতরি একসঙ্গে ৯০টি বিমান ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার বহন করতে পারে।

ট্রাম্প কোনো প্রমাণ না দিয়েই মাদুরোকে ভেনেজুয়েলাভিত্তিক অপরাধী চক্র ত্রেন দে আরাগুয়ার নেতা হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন। জবাবে মাদুরো বলেন, ‘তারা এক বিকৃত জাল গল্প বানাচ্ছে—একটি অশালীন, অপরাধপ্রবণ ও সম্পূর্ণ ভুয়া বর্ণনার গল্প। ভেনেজুয়েলা এমন একটি দেশ, যেখানে কোকা পাতা উৎপন্নই হয় না।’

ত্রেন দে আরাগুয়া মূলত ভেনেজুয়েলার একটি কারাগার থেকে গড়ে ওঠা অপরাধী চক্র। বৈশ্বিক মাদক পাচারে এই গ্যাংয়ের কোনো ভূমিকা নেই; বরং এটি খুন, চাঁদাবাজি ও মানব পাচারের মতো অপরাধে জড়িত।

গত বছর ভেনেজুয়েলায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে মাদুরোকে ব্যাপকভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশ তার পদত্যাগের দাবি তুলেছে। এদিকে অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনা বাড়ছে। ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তিনি ভেনেজুয়েলায় সিআইএর অভিযান অনুমোদন করেছেন এবং দেশটিতে অবস্থিত কথিত মাদক চক্রের বিরুদ্ধে স্থল অভিযান বিবেচনা করছেন।

গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী ১০টি নৌকায় বোমা হামলা চালিয়ে ধ্বংস করেছে। এর মধ্যে আটটি হামলা হয়েছে ক্যারিবীয় সাগরে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এসব নৌকা দেশে মাদক পাচারে জড়িত ছিল। এসব হামলায় অন্তত ৪৩ জন নিহত হয়েছে।

ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদরিনো লোপেজ শনিবার জানান, দেশটি উপকূল রক্ষার জন্য সামরিক মহড়া পরিচালনা করছে, যাতে কোনো ‘গোপন অভিযান’ প্রতিহত করা যায়। তিনি বলেন, ‘আমরা ৭২ ঘণ্টা আগে শুরু করা উপকূল প্রতিরক্ষা মহড়া চালাচ্ছি, যাতে আমরা শুধু বড় সামরিক হুমকি নয়, মাদক পাচার, সন্ত্রাসবাদ ও অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা তৈরির গোপন অভিযান থেকেও নিজেদের রক্ষা করতে পারি।’

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, ভেনেজুয়েলার সৈন্যরা ৯টি উপকূলীয় রাজ্যে মোতায়েন রয়েছে এবং মাদুরোর বেসামরিক মিলিশিয়ার এক সদস্যের হাতে রুশ তৈরি ইগলা-এস কাঁধে বহনযোগ্য বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। পাদরিনো বলেন, ‘সিআইএ শুধু ভেনেজুয়েলায় নয়, সারা বিশ্বেই সক্রিয়। তারা যেকোনো অঞ্চল থেকে অসংখ্য সিআইএ-সম্পৃক্ত ইউনিট পাঠাতে পারে, কিন্তু তাদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।’

গত আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র ৮টি নৌযান, ১০টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন মোতায়েন করেছে কথিত মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে। তবে কারাকাসের দাবি, এই কর্মকাণ্ড আসলে সরকার উৎখাতের ছদ্মবেশী পরিকল্পনা।

শনিবার মাদুরো জানান, তিনি বিরোধী রাজনীতিক লিওপোলদো লোপেজের নাগরিকত্ব বাতিল ও পাসপোর্ট জব্দের জন্য আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। তাঁর অভিযোগ, লোপেজ দেশটিতে বিদেশি আগ্রাসনকে উৎসাহিত করছেন। ২০২০ সাল থেকে স্পেনে নির্বাসিত লোপেজ প্রকাশ্যে ক্যারিবীয় সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ পাঠানো এবং মাদকবাহী জাহাজে হামলার সমর্থন করেছেন।

২০১৪ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ার পর লোপেজ তিন বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। পরে তাঁকে ১৩ বছরের বেশি কারাদণ্ড দেওয়া হয় ‘ষড়যন্ত্র ও সহিংসতা উসকে দেওয়ার’ অভিযোগে। পরে তাঁকে গৃহবন্দী করা হয়, এবং ২০২০ সালে সামরিক সহায়তায় মুক্তি পেয়ে দেশত্যাগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...