Ajker Patrika

সিরিয়ায় রাশিয়ার ঘাঁটি রাখতে যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের তদবির

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ মার্চ ২০২৫, ১৫: ৫৯
সিরিয়ার হামেইমিমে অবস্থিত রুশ বিমান ঘাঁটিতে ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: ক্রেমলিন
সিরিয়ার হামেইমিমে অবস্থিত রুশ বিমান ঘাঁটিতে ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: ক্রেমলিন

সিরিয়াকে দুর্বল ও বিকেন্দ্রীকৃত করে রাখার পক্ষে ইসরায়েল। আর এই বিষয়টি নিয়ে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে তদবিরও করেছে। এরই অংশ হিসেবে দেশটি সিরিয়ায় রাশিয়া সামরিক ঘাঁটি বজায় রাখতে দেওয়ার পক্ষে যুক্তি দিচ্ছে। এর মূল লক্ষ্য সিরিয়ায় তুরস্কের ক্রমবর্ধমান প্রভাব প্রতিহত করা। এই প্রচেষ্টার সঙ্গে সম্পৃক্ত চারটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।

গাজা যুদ্ধের কারণে তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যকার সম্পর্ক আরও অবনতির দিকে গেছে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনকে জানিয়েছেন, আঙ্কারা সমর্থিত সিরিয়ার নতুন ইসলামপন্থী শাসকগোষ্ঠী ইসরায়েলের সীমান্তের জন্য হুমকি স্বরূপ।

এই তদবির ইঙ্গিত দেয় যে, সিরিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকে প্রভাবিত করতে ইসরায়েল একটি সুসংগঠিত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পর ইসলামপন্থীরা দেশটিকে স্থিতিশীল করতে চাইছে এবং ওয়াশিংটনের ওপর থেকে কঠোর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের চেষ্টা করছে।

তিন মার্কিন সূত্র ও আরও এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ইসরায়েল ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের সময় তাদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। পরে ইসরায়েল সফরে আসা মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গেও একই বার্তা দেওয়া হয়।

দুটি সূত্র জানিয়েছে, এই মূল বিষয়গুলো একটি ইসরায়েলি ‘শ্বেতপত্রে’ লিপিবদ্ধ করে কিছু জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। ইসরায়েলের এই উদ্যোগের বিষয়ে মার্কিন থিংক ট্যাংক সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনালের গবেষক অ্যারন লুন্ড বলেছেন, ‘ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো, তুরস্ক সিরিয়ার নতুন ইসলামপন্থী শাসনব্যবস্থাকে রক্ষা করবে এবং এটি হামাস ও অন্যান্য মিলিশিয়াদের জন্য ঘাঁটিতে পরিণত হবে।’

সূত্রগুলো জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ইসরায়েলের প্রস্তাব গ্রহণ করবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। তারা সিরিয়া ইস্যুতে খুব কমই কথা বলেছে, ফলে নিষেধাজ্ঞা ও উত্তর-পূর্ব সিরিয়ায় মোতায়েন মার্কিন সেনাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

লুন্ড বলেন, ইসরায়েলের মার্কিন নীতিকে প্রভাবিত করার ভালো সম্ভাবনা আছে, কারণ নতুন প্রশাসন অত্যন্ত ইসরায়েলপন্থী। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পের এ মুহূর্তে সিরিয়ার প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। এটি তাঁর জন্য সামান্য অগ্রাধিকার, ফলে নীতির ক্ষেত্রে একটি শূন্যতা রয়ে গেছে।’

ইসরায়েল প্রকাশ্যে হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) ওপর আস্থা না রাখার কথা বলেছে। এই গোষ্ঠীই আসাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে নেতৃত্ব দিয়েছে। এই গোষ্ঠী ২০১৬ সালে আল-কায়েদার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করলেও তাদের অতীত সংযোগ ইসরায়েলের সন্দেহের কারণ হয়ে আছে।

গত সপ্তাহের রোববার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে এইচটিএস বা নতুন শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো বাহিনীর উপস্থিতি সহ্য করবে না এবং ওই এলাকা নিরস্ত্রীকরণ করার দাবি জানিয়েছে।

আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর, ইসরায়েল সিরিয়ার সামরিক ঘাঁটিতে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে এবং সিরিয়ার ভেতরে একটি জাতিসংঘ পর্যবেক্ষিত নিরস্ত্রীকরণ অঞ্চলে সেনা মোতায়েন করেছে। এই সপ্তাহের শুরুতে ইসরায়েল দামেস্কের দক্ষিণে সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালায়।

এখন, ইসরায়েল তুরস্কের ভূমিকা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। কারণ, দেশটি সিরিয়ার নতুন শাসকদের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে কাজ করছে। তিনটি মার্কিন সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রকে এই বার্তা দিয়েছেন।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান গত বছর বলেছিলেন, ইসলামিক দেশগুলোকে ইসরায়েলের ‘সম্প্রসারণবাদের ক্রমবর্ধমান হুমকি’ প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ মাসের শুরুর দিকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সা’আর বলেছেন, ইসরায়েল উদ্বিগ্ন যে—তুরস্ক ইরানের সঙ্গে মিলে হিজবুল্লাহ পুনর্গঠনের প্রচেষ্টায় সহায়তা করছে এবং সিরিয়ার ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরেকটি যুদ্ধ ফ্রন্ট তৈরি করছে।

তুরস্ক বলেছে, তারা চায় সিরিয়া স্থিতিশীল হোক এবং কোনো প্রতিবেশীর জন্য হুমকি সৃষ্টি না করুক। দেশটি বারবার বলেছে, সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলের কার্যকলাপ তার সম্প্রসারণবাদী ও আগ্রাসী নীতির অংশ এবং এটি ইসরায়েল যে অঞ্চলে শান্তি চায় না, তার প্রমাণ।

তুরস্ককে প্রতিহত করতে, ইসরায়েলি কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে—রাশিয়ার উচিত সিরিয়ার তারতুস প্রদেশের ভূমধ্যসাগরের নৌঘাঁটি এবং লাতাকিয়া প্রদেশের হামেইমিম বিমানঘাঁটি বজায় রাখা।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে রাশিয়ার উপস্থিতিকে ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরেন, তখন কয়েকজন উপস্থিত ব্যক্তি বিস্ময় প্রকাশ করেন। তাদের মতে, ন্যাটো সদস্য দেশ তুরস্কই বরং ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য ভালো গ্যারান্টর হতে পারে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এটি মানেন না মর্মে ‘অবিচল’।

সিরিয়ার ইসলামপন্থী সরকার পশ্চিমা ও আরব রাষ্ট্রগুলোর উদ্বেগ কমানোর চেষ্টা করছে। তারা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সিরিয়া গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং আসাদের শাসনামলে বিচ্ছিন্ন হওয়া কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে চায়।

সিরিয়ার নেতা আহমদ আল-শারা গত ডিসেম্বর একদল বিদেশি সাংবাদিককে বলেছেন, দামেস্ক কোনো দেশের সঙ্গে সংঘাতে যেতে চায় না। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছেন, নতুন সরকার বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে এবং একদিন সিরিয়ার নতুন সশস্ত্র বাহিনী ইসরায়েলের ওপর হামলা চালাতে পারে।

আসাদ বহু বছর ধরে ইসরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমি ফ্রন্টিয়ার শান্ত রেখেছিলেন, যদিও তিনি ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন। কিন্তু আসাদের পতনের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার ভারসাম্য উল্টে গেছে। দুটি সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মেয়াদের শেষ সপ্তাহগুলোতে তাঁর প্রশাসন সিরিয়ার নতুন নেতৃত্বের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে ভাবছিল, তবে শর্ত ছিল সিরিয়াকে রাশিয়ার দুটি সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করে দিতে হবে।

সূত্রগুলো বলছে, বাইডেন প্রশাসন সে সময় চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়। ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাশিয়ার সিরিয়ায় থাকার বিষয়ে আরও ইতিবাচক মনোভাব নিতে পারেন। কারণ, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখছেন।

ইসরায়েলের সিরিয়াকে দুর্বল রাখার প্রচেষ্টা অন্য মার্কিন মিত্রদের বিপরীত অবস্থান নির্দেশ করে। বিশেষ করে সৌদি আরব গত মাসে বলেছে, তারা ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলসের সঙ্গে আলোচনা করছে যাতে সিরিয়ার ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা যায়।

এরদোয়ানের একে পার্টির একটি সূত্র জানিয়েছে, তুরস্ক এ সপ্তাহে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এই আমন্ত্রণ মূলত যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সিরিয়া নীতির অনিশ্চয়তার বিরুদ্ধে একটি কৌশলগত পদক্ষেপ এবং ইসরায়েলের যেকোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি ভারসাম্য রক্ষার প্রচেষ্টা।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

ফরিদপুরে জেমসের কনসার্ট পণ্ড, কী ঘটেছিল সেখানে

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বেঙ্গালুরুতে ‘বুলডোজার রাজ’: ৪০০ মুসলিম পরিবারকে উচ্ছেদ, তোপের মুখে কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রায় ২০০টি ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়ার ফলে অন্তত ৪০০ মুসলিম পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ছবি: এক্স
প্রায় ২০০টি ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়ার ফলে অন্তত ৪০০ মুসলিম পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ছবি: এক্স

কর্ণাটক সরকারের এক বিশাল উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজনীতিতে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বেঙ্গালুরুতে প্রায় ২০০টি ঘর গুঁড়িয়ে দেওয়ার ফলে অন্তত ৪০০ মুসলিম পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস এবং কেরালার বাম ফ্রন্টের মধ্যে শুরু হয়েছে নজিরবিহীন বাগ্‌যুদ্ধ। বিরোধীদের দাবি, উত্তর ভারতের বিতর্কিত ‘বুলডোজার রাজ’ এখন কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকারও অনুসরণ করছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২২ ডিসেম্বর (সোমবার) ভোর ৪টার সময় বেঙ্গালুরুর কোগিলু গ্রামের ফকির কলোনি ও ওয়াসিম লেআউটে এই অভিযান চালায় বেঙ্গালুরু সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড। ৪টি জেসিবি (এক্সকাভেটর) এবং ১৫০ জনের বেশি পুলিশ সদস্যের উপস্থিতিতে এই উচ্ছেদ চালানো হয়।

বর্তমানে কয়েক শ মানুষ তীব্র শীতের মধ্যে রাস্তার ওপর অস্থায়ী তাঁবু বা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে। ছবি: এক্স
বর্তমানে কয়েক শ মানুষ তীব্র শীতের মধ্যে রাস্তার ওপর অস্থায়ী তাঁবু বা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে। ছবি: এক্স

বেঙ্গালুরুতে যখন বছরের সবচেয়ে বেশি শীত বিরাজ করছে, ঠিক তখনই এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের দাবি, কোনো আগাম নোটিশ ছাড়াই পুলিশ তাদের জোরপূর্বক বের করে দিয়েছে। অনেক পরিবার তাদের প্রয়োজনীয় নথিপত্র এবং আসবাব সরিয়ে নেওয়ারও সময় পায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তারা প্রায় ২৫ বছর ধরে ওই এলাকায় বসবাস করছে। তাদের প্রত্যেকের কাছে বৈধ আধার কার্ড এবং ভোটার আইডি রয়েছে।

উচ্ছেদ হওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশই শ্রমজীবী ও অভিবাসী। বর্তমানে কয়েক শ মানুষ তীব্র শীতের মধ্যে রাস্তার ওপর অস্থায়ী তাঁবু বা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে।

এ ঘটনার প্রতিবাদে সবচেয়ে সোচ্চার হয়েছেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনরাই বিজয়ন। তিনি কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুবিরোধী রাজনীতির অভিযোগ তুলেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘দুঃখজনক, কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকারের অধীনে এখন সংখ্যালঘুবিরোধী রাজনীতি বাস্তবায়িত হচ্ছে। যখন কোনো সরকার ভয় এবং পাশবিক শক্তির মাধ্যমে শাসন করে, তখন সাংবিধানিক মূল্যবোধ ও মানবিক মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়।’

কেরালার আরেক মন্ত্রী ভি শিবনকুট্টি এই ঘটনাকে ১৯৭৫ সালের ‘জরুরি অবস্থা’র ক্রূরতার সঙ্গে তুলনা করেছেন। সিপিআইয়ের (এম) একটি প্রতিনিধিদল উচ্ছেদস্থল পরিদর্শন করেছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় একটি ‘উচ্ছেদবিরোধী কমিটি’ গঠন করা হয়েছে।

সমালোচনার মুখে কর্ণাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার তাঁর সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। তিনি বলেছেন, এলাকাটি মূলত একটি আবর্জনা ফেলার ভাগাড় ছিল এবং ভূমি মাফিয়ারা এটিকে বস্তিতে রূপান্তরের চেষ্টা করছিল।

শিবকুমার দাবি করেন, তাঁরা কাউকে কষ্ট দিতে চান না, বরং সরকারি জমি দখলমুক্ত করতে চান। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বুলডোজার সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করি না। পিনরাই বিজয়নের মতো প্রবীণ নেতাদের মাঠের বাস্তবতা না জেনে মন্তব্য করা উচিত নয়।’

তবে অনেকেই বলছেন, ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ক্ষমতায় আসা কংগ্রেস সরকারের এমন ‘বুলডোজার’ নীতি তাদের ভাবমূর্তিকে সংকটে ফেলতে পারে, বিশেষ করে যখন বন্ধুপ্রতিম দলগুলোই এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

ফরিদপুরে জেমসের কনসার্ট পণ্ড, কী ঘটেছিল সেখানে

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নাইজেরিয়ায় হামলা: ‘বড়দিনের উপহার’ বলে উদ্‌যাপন ট্রাম্প প্রশাসনের, স্থানীয়রা বলছেন—‘কখনো আইএস দেখিনি’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের ছোড়া মিসাইল নাইজেরিয়ার জাবো গ্রামের একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কয়েক মিটার দূরে আছড়ে পড়েছিল। ছবি: এপির সৌজন্যে
যুক্তরাষ্ট্রের ছোড়া মিসাইল নাইজেরিয়ার জাবো গ্রামের একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কয়েক মিটার দূরে আছড়ে পড়েছিল। ছবি: এপির সৌজন্যে

নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সোকোটো রাজ্যের জাবো গ্রামের মানুষের কাছে এবারের বড়দিনের রাতটি ছিল এক বিভীষিকার নাম। যুক্তরাষ্ট্রের ছোড়া একটি মিসাইল গ্রামের একমাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাত্র কয়েক মিটার দূরে আছড়ে পড়ার পর থেকে ওই অঞ্চলের বাসিন্দারা চরম আতঙ্ক ও বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই হামলাকে সন্ত্রাসীদের জন্য ‘বড়দিনের উপহার’ হিসেবে অভিহিত করলেও স্থানীয়রা বলছেন, তাঁর এলাকায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) বা কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর নাম-গন্ধও নেই। তাঁরা কখনো আইএস দেখেননি।

সোকোটো রাজ্যের তাম্বুওয়াল জেলার মুসলিমপ্রধান কৃষিভিত্তিক জনপদ জাবোর বাসিন্দা সুলেমান কাগারা মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে তিনি একটি বিকট শব্দ শোনেন এবং মাথার ওপর দিয়ে আগুনের গোলার মতো কিছু একটা উড়ে যেতে দেখেন। মুহূর্তের মধ্যেই সেটি সশব্দে মাটিতে আছড়ে পড়ে এবং ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। ভয়ে গ্রামবাসীরা দিগ্‌বিদিক জ্ঞান হারিয়ে পালাতে শুরু করেন।

কাগারা বলেন, ‘আমরা কাল সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। আমাদের জীবনে আমরা এমন ভয়াবহ দৃশ্য কখনো দেখিনি।’

এদিকে হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী অভিযান চালিয়েছে। তাঁর অভিযোগ, এই জঙ্গিরা বছরের পর বছর ধরে নিরীহ খ্রিষ্টানদের হত্যা করছে। তবে ট্রাম্পের এই বক্তব্যে জাবোর মানুষ আকাশ থেকে পড়েছে।

সুলেমান কাগারা জানান, জাবো গ্রামে মুসলিমদের পাশাপাশি খ্রিষ্টানরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে। তাদের মধ্যে কোনো ধর্মীয় সংঘাত নেই। সোকোটো রাজ্যের তাম্বুওয়াল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য বাশার ইসাহ জাবো বলেন, ‘এটি একটি শান্ত এলাকা। এখানে আইএস, লাকুরাওয়া বা অন্য কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কার্যক্রমের কোনো ইতিহাস নেই।’

বাশার ইসাহ আরও বলেন, মিসাইলটি গ্রামের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে একটি খোলা মাঠে আঘাত হানে। এতে কেউ হতাহত না হলেও পুরো জনপদে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

নাইজেরিয়ার তথ্য মন্ত্রণালয় পরে এক বিবৃতিতে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও নাইজেরিয়া যৌথভাবে সোকোটোর তানগাজা জেলার জঙ্গলে আইএসের আস্তানা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তবে তারা স্বীকার করেছে, অভিযানের সময় ব্যবহৃত গোলার ধ্বংসাবশেষ বা ‘ডেব্রিস’ জাবো গ্রাম এবং উত্তর-কেন্দ্রীয় কওয়ারা রাজ্যের কিছু এলাকায় গিয়ে পড়েছে। তারা এটাও দাবি করেছে, এতে কোনো বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়নি।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা নামদি ওবাসি মনে করেন, এই বিমান হামলা হয়তো সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে কিছুটা দুর্বল করবে, কিন্তু নাইজেরিয়ার বহুমাত্রিক সহিংসতা শুধু সামরিক শক্তি দিয়ে বন্ধ করা সম্ভব নয়। তাঁর মতে, সুশাসনের অভাব, চারণভূমি ও পানির দখল নিয়ে কৃষক-পশুপালকদের জাতিগত দাঙ্গা এবং গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বই এই অস্থিরতার মূল কারণ।

নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউসুফ তুগার সিএনএনকে জানিয়েছেন, হামলার আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু এই অভিযানের অনুমতি দিয়েছেন। তবে নাইজেরিয়ার সাধারণ মানুষ মনে করছে, সন্ত্রাস দমনের নামে সাধারণ জনপদে এ ধরনের হামলা তাদের জীবনকে আরও অনিরাপদ করে তুলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

ফরিদপুরে জেমসের কনসার্ট পণ্ড, কী ঘটেছিল সেখানে

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর দ্বিতীয়বার যুদ্ধবিরতিতে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নাথফন নার্কফানিট ও কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী চা সেইহা সীমান্তবর্তী একটি চেকপয়েন্টে তিন দিন আলোচনার পর এই চুক্তিতে সই করেন। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নাথফন নার্কফানিট ও কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী চা সেইহা সীমান্তবর্তী একটি চেকপয়েন্টে তিন দিন আলোচনার পর এই চুক্তিতে সই করেন। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার তিন সপ্তাহের ভয়াবহ সীমান্ত সংঘর্ষের পর অবশেষে একটি তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের স্বাক্ষরিত একটি যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী—থাইল্যান্ডের নাথফন নার্কফানিট এবং কম্বোডিয়ার চা সেইহা সীমান্তবর্তী একটি চেকপয়েন্টে তিন দিন আলোচনার পর এই চুক্তিতে সই করেন। চুক্তির উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হলো—উভয় পক্ষ বর্তমানে যে অবস্থানে রয়েছে, সেখানেই অবস্থান করবে। কোনো পক্ষই নতুন করে সেনা মোতায়েন বা অগ্রসর হতে পারবে না। যুদ্ধবিরতি টানা ৭২ ঘণ্টা টিকে থাকলে থাইল্যান্ড তাদের কাছে বন্দী ১৮ জন কম্বোডীয় সেনাকে মুক্তি দেবে।

সীমান্ত এলাকার বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের নিরাপদে নিজ নিজ বাড়িতে ফেরার সুযোগ করে দেওয়া হবে এবং ল্যান্ডমাইন অপসারণে সহযোগিতা করা হবে। পাশাপাশি কোনো পক্ষই সামরিক উদ্দেশে অন্যের আকাশসীমা ব্যবহার বা লঙ্ঘন করতে পারবে না।

গত জুলাই মাসেও প্রতিবেশী দুই দেশের সীমান্তে সংঘাত হয়েছিল। পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় সাময়িকভাবে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ট্রাম্প এই চুক্তির নাম দেন ‘কুয়ালালামপুর শান্তিচুক্তি’। এতে বিতর্কিত এলাকা থেকে ভারী অস্ত্র প্রত্যাহার এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে একটি অন্তর্বর্তী পর্যবেক্ষক দল গঠনের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ডিসেম্বরের শুরুতে সেই যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায় এবং সংঘাত নতুন মাত্রা পায়।

থাই কর্তৃপক্ষের মতে, ৭ ডিসেম্বরের পর থেকে তাদের ২৬ জন সেনা এবং অন্তত ৪৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, কম্বোডিয়া জানিয়েছে তাদের ৩১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে, তবে সামরিক হতাহতের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করেনি। দুই দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

সংঘাত চলাকালে থাইল্যান্ড এফ-১৬ যুদ্ধবিমান থেকে বিমান হামলা এবং ভারী কামানের গোলাবর্ষণ করেছে। পাল্টা জবাবে কম্বোডিয়া বিএম-২১ রকেট লঞ্চার ব্যবহার করে আক্রমণ চালায়।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের একটি পর্যবেক্ষক দল এই শান্তি প্রক্রিয়া তদারকি করবে। থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই যুদ্ধবিরতিকে কম্বোডিয়ার ‘সততার পরীক্ষা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘিত হলে থাইল্যান্ড আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আত্মরক্ষার অধিকার রাখে।

তবে, দীর্ঘ এক শতাব্দী ধরে চলা এই সীমান্ত বিরোধের স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত শান্তি কতটা টেকসই হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বর্তমান এই চুক্তিতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পরোক্ষ কূটনৈতিক সমর্থন ছিল বলে জানা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

ফরিদপুরে জেমসের কনসার্ট পণ্ড, কী ঘটেছিল সেখানে

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চীনা প্রযুক্তির প্রথম যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের ককপিটে প্রথম নারী ক্যাপ্টেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইউ ইউয়ে সি৯১৯ উড়োজাহাজের প্রথম নারী ক্যাপ্টেন। ছবি: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
ইউ ইউয়ে সি৯১৯ উড়োজাহাজের প্রথম নারী ক্যাপ্টেন। ছবি: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি সি৯১৯ জেট পরিচালনায় প্রথমবারের মতো নারী ক্যাপ্টেন নিয়োগ দিয়েছে চীন। বিমান চালনা খাতের সক্ষমতা বাড়াতে বোয়িং ও এয়ারবাস চালানো অভিজ্ঞ পাইলটদের এই উড়োজাহাজ চালনায় নিয়ে আসছে দেশটি। এরই অংশ হিসেবে নিয়োগ পেলেন প্রায় এক দশকের বোয়িং ৭৩৭ চালানোর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ইউ ইউয়ে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউয়ে ২০১৫ সালে গুয়াংজুভিত্তিক চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনসের পাইলট হিসেবে যোগ দেন। এরপর থেকে ‘জিরো এরর’ বা কোনো ভুল ছাড়াই বিমান চালানোর রেকর্ড নিয়ে এক দশকের পথ পাড়ি দিয়েছেন।

এই ন্যারোবডি উড়োজাহাজ প্রকল্প নিয়ে চীন পরিকল্পিতভাবে এগুচ্ছে। আর ইউ ইউয়ের মতো অনেক নারী পাইলট এই জেট চালানোর সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছেন। চীন নিজস্ব উড়োজাহাজ কর্মসূচি সম্প্রসারণের পাশাপাশি ধাপে ধাপে নারী পাইলটদের এগিয়ে আনতে চাইছে।

চলতি বছরের শুরুতে শীর্ষস্থানীয় পাইলটদের বাছাইয়ের সময় নির্বাচিত হন সিভিল এভিয়েশন ফ্লাইট ইউনিভার্সিটি অব চায়না থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইউ ইউয়ে। এরপর বোয়িং ৭৩৭ এবং এয়ারবাস এ৩২০-এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চীনের তৈরি সি৯১৯ উড়োজাহাজ পরিচালনার জন্য তাঁকে নিবিড় প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফট করপোরেশন অব চায়না (কমাক) নির্মিত সি৯১৯ ২০২৩ সালের মে মাসে অভ্যন্তরীণ রুটে বাণিজ্যিকভাবে চলাচল শুরু করে। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে সফলভাবে পরিচালনার পর দেশটির তিন বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান সংস্থা চায়না সাউদার্ন, এয়ার চায়না ও চায়না ইস্টার্ন এই বিমানের ফ্লাইটের সংখ্যা আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আরও বেশি সি৯১৯ বিমান বহরে যুক্ত হওয়ায় চায়না সাউদার্ন তাদের পাইলটদের পুনরায় প্রশিক্ষিত করার পরিকল্পনাও সম্প্রসারণ করছে।

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম চায়না সিভিল অ্যাভিয়েশন নিউজ গত অক্টোবরে জানায়, কমাক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে দেশজুড়ে দক্ষ পাইলটদের সি৯১৯ পরিচালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। চীনের শীর্ষ তিনটি বিমান সংস্থা প্রত্যেকে অন্তত ১০০টি করে সি৯১৯ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা ২০৩০-এর দশক পর্যন্ত সরবরাহ করা হবে।

এই মাসে কমাকের একটি প্রকাশনীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউ ইউয়ে বলেন, ‘যখন আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আমি এই বিমান (সি ৯১৯) চালানো দায়িত্ব নিতে আগ্রহী কি না, আমি এক সেকেন্ডের জন্যও দ্বিধা করিনি।’

সি ৯১৯ উড়োজাহাজ চালানোর লাইসেন্স পেতে সাংহাইয়ে কমাকের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কয়েক মাস ধরে নিবিড় প্রশিক্ষণ নেন ইউ ইউয়ে। শ্রেণীকক্ষের আলোচনার পাশাপাশি ফুল-ফ্লাইট সিমুলেটরের মাধ্যমে ইঞ্জিন বিকল হওয়া বা বৈরী আবহাওয়ার মতো সম্ভাব্য জরুরি পরিস্থিতি প্রস্তুতিও ছিল এই প্রশিক্ষণের অংশ।

সাক্ষাৎকারে ইউ ইউয়ে জানান, চীনের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর গুয়াংজু বাইয়ুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের খুব কাছে তাঁর শৈশব কেটেছে। সে সময়ই পাইলট হওয়ার স্বপ্ন মনে দানা বাঁধে। যদিও পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় নারী ক্যাডেটদের অনেক বেশি বাধা অতিক্রম করতে হয়, তবুও তিনি দমে যাননি।

চীনের সিভিল এভিয়েশন সেক্টরে নারী পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার ও প্রশিক্ষক বাড়তে থাকায় তিনি বেশ খুশি। এই নারী পাইলট বলেন, ‘২০১১ সালে যখন আমি ফ্লাইট কলেজে ভর্তি হই, তখন নারী ক্যাডেট খুব কম ছিল। কিন্তু এরপর আরও অনেক তরুণী এই পুরুষপ্রধান পেশায় যুক্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কেউ কেউ ইতিমধ্যে ক্যাপ্টেনও হয়েছেন। কমাকে আমার প্রশিক্ষকেরাও সবাই নারী ছিলেন।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘নারী পাইলটদের সাধারণত ক্যারিয়ার এবং পরিবার বা সন্তান লালন-পালনের মতো দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যেও যদি কেউ সফল হতে পারেন, তাহলে বলা যায়, তাঁরাই সবচেয়ে দৃঢ়চেতা নারী।’

চীন ১৯৫১ সালে পিপলস লিবারেশন আর্মির জন্য প্রথম ব্যাচে মোট ১৪ জন নারী পাইলটকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। ২০২৪ সালে চীনে বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত উড়োজাহাজে কর্মরত নারী পাইলটের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৪১ জনে। তাঁদের অধিকাংশেরই জন্ম ১৯৮৫ সালের পরে, যা তাঁদের পুরুষ সহকর্মীদের গড় বয়সের তুলনায় অনেক কম।

বর্তমানে বৈধ লাইসেন্সধারী চীনের সবচেয়ে বয়সী নারী বেসামরিক পাইলটের জন্ম ১৯৫৩ সালে, আর সবচেয়ে কম বয়সীদের জন্ম ২০০৫ সালে। তবুও, চীনের সিভিল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই খাতে নারী পাইলটের অনুপাত ২ শতাংশেরও কম।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এর তুলনায় ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সনদপ্রাপ্ত বেসামরিক পাইলটদের মধ্যে নারীর হার ছিল প্রায় ৯ শতাংশ।

তবে চীনের এভিয়েশন খাতের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আরও বেশি নারী নেতৃত্বের ভূমিকায় উঠে আসছেন। কমাকের নির্মাণাধীন ওয়াইডবডি উড়োজাহাজ সি৯২৯, যাকে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছে, এর প্রধান নকশাবিদ একজন নারী। যাঁর নাম ঝাও চুনলিং। তিনি এর আগেও সি৯১৯ উড়োজাহাজের নকশা ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মারা গেছেন ঢাকা ক্যাপিটালসের কোচ, শোকাচ্ছন্ন বিপিএল

কোন স্বার্থে মুসলিমপ্রধান সোমালিল্যান্ডকে সবার আগে স্বীকৃতি দিল ইসরায়েল

তারেক রহমানের পঙ্গু হাসপাতালে যাওয়ার কর্মসূচি বাতিল

ফরিদপুরে জেমসের কনসার্ট পণ্ড, কী ঘটেছিল সেখানে

আজকের রাশিফল: ভুঁড়িটা বাড়ছে—শরীরের দিকে নজর দিন, প্রাক্তনের মেসেজে রিপ্লাই দিলে বিপদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত