Ajker Patrika

ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদন

চীনের সীমান্তঘেঁষা লাদাখের বিক্ষোভেও জেন-জিরা, ভারত কি উদ্বিগ্ন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২: ০৯
লাদাখের লেহ শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত
লাদাখের লেহ শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত

রাজ্যের মর্যাদা ও চাকরিতে স্থানীয়দের কোটার দাবিতে চীনের সীমান্তঘেঁষা লাদাখের লেহ শহরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত ও ৭০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা বিজেপির কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। যদিও সপ্তাহ ধরে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ চলছিল, কিন্তু আজ তা সহিংসতায় রূপ নেয়। এরপরই শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

জলবায়ু ও অধিকার কর্মী সোনম ওয়াংচুক শান্তিপূর্ণভাবে এই প্রতিবাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তিনি আজকের ঘটনাকে ‘তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ’ বলে অভিহিত করেছেন এবং এটিকে ‘জেন-জি বিপ্লব’ বলে উল্লেখ করেছেন। তবে আজকের সহিংসতার ঘটনায় তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এদিকে, বিজেপি এই সহিংসতার জন্য কংগ্রেসকে দায়ী করেছে।

এই বিক্ষোভ ও সহিংসতা কেন হলো এবং এর পেছনে কারা রয়েছে তা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো—

কেন হচ্ছে এই বিক্ষোভ?

জলবায়ু ও অধিকার কর্মী সোনম ওয়াংচুকের নেতৃত্বে একটি দল ১০ সেপ্টেম্বর থেকে অনশন করছিল। তাদের মূল দাবি হলো, লাদাখকে পৃথক রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া এবং সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের অধীনে অন্তর্ভুক্ত করা।

সোনম ওয়াংচুক আজ বুধবার তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে একটি ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘এই তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশই তাদের রাস্তায় নামিয়ে এনেছে। গত পাঁচ বছর ধরে তারা বেকারত্বের শিকার, নানা অজুহাতে বারবার তাদের চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে এবং লাদাখের দাবিগুলো পূরণ করা হয়নি। আমি বলব, এটি সামাজিক অস্থিরতার একটি ক্ষেত্র। অনেকে মনে করেন, এরা শুধু আমাদের সমর্থক, কিন্তু বাস্তবে পুরো লাদাখ আমাদের এবং এই দাবির সঙ্গে আছে। এটি ছিল একটি জেন-জি বিপ্লব।’

তিনি তরুণদের সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘সহিংসতা আমাদের পাঁচ বছরের প্রচেষ্টাকে নষ্ট করে দেবে। এটা আমাদের পথ নয়। আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সরকারের কাছে আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরতে চাই।’

কেন্দ্র সরকার ও লাদাখের প্রতিনিধি দলের মধ্যে রয়েছে লেহ অ্যাপেক্স বডি (এলএবি) এবং কার্গিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (কেডিএ) সদস্যরা। তাদের পরবর্তী বৈঠক ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

ভারতের সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিল আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরামের উপজাতি এলাকার প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করে। এই বিশেষ বিধানটি স্বায়ত্তশাসিত জেলা কাউন্সিলের মাধ্যমে এই অঞ্চলগুলোকে আইন প্রণয়ন, জমি ও বন ব্যবস্থাপনা এবং স্থানীয় শাসনব্যবস্থার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে। এর উদ্দেশ্য হলো উপজাতিদের অধিকার, ঐতিহ্য ও স্বশাসনকে রক্ষা করা। উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, লাদাখের জনসংখ্যার প্রায় ৯৭ শতাংশই তফসিলি উপজাতি ভুক্ত।

কারা এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছে?

রাজ্যের মর্যাদা ও ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে লাদাখের লেহতে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছে লেহ অ্যাপেক্স বডি (এলএবি)। এটি বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক এবং রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত একটি জোট।

দা হিন্দুর গত ১০ সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোনম ওয়াংচুক দীর্ঘদিন ধরে লাদাখের অধিকার ও উন্নয়নের পক্ষে কাজ করছেন। তিনি এই জোটের একজন সদস্য। ওয়াংচুক অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে মিলে একটি অনশনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, যাতে কেন্দ্রের সঙ্গে ‘ফলপ্রসূ’ আলোচনার মাধ্যমে লাদাখের দীর্ঘদিনের দাবিগুলো পূরণ করা যায়।

দা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মঙ্গলবার অনশন চলাকালীন একজন বয়স্ক নারী ও একজন পুরুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে এলএবি’র যুব শাখা বুধবার লেহতে বনধের (হরতাল) ডাক দেয়। এরপরই এলএবি-এর তত্ত্বাবধানে বিজেপির কার্যালয়ের সামনে বিশাল জনসমাগম হয়। এরপরই সেখানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

আন্দোলনে কার্গিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সও (কেডিএ) অংশ নিয়েছে, যারা এলএবি-এর দাবিগুলোকে সমর্থন করে। কেডিএ আগামীকাল ২৫ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলজুড়ে সংহতি কার্যক্রম ও বনধের ডাক দিয়েছে। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, এই দুটি সংগঠন গত চার বছর ধরে একসঙ্গে আন্দোলন করছে এবং সরকারের সঙ্গে বেশ কয়েকবার আলোচনাতেও বসেছে। কিন্তু এরপরও কোনো সমাধান আসেনি।

কেন বিজেপি এই সহিংসতার জন্য কংগ্রেসকে দোষারোপ করছে?

বিজেপি নেতা অমিত মালব্য লেহর সহিংসতার ছবি ও ভিডিও শেয়ার করে কংগ্রেসকে দায়ী করেছেন। তিনি এক্সে একটি ছবি শেয়ার করে লেখেন, ‘লাদাখে দাঙ্গা সৃষ্টিকারী এই ব্যক্তি হলেন লেহ ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর। সে জনতাকে উসকে দিয়ে বিজেপির কার্যালয় ও হিল কাউন্সিলে হামলা চালিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘রাহুল গান্ধী কি এই ধরনের অস্থিতিশীলতার কথাই কল্পনা করেছিলেন?’

অন্যদিকে, কংগ্রেসের এক সমর্থক লিখেছেন, ‘সোনম ওয়াংচুকের অনশনের কয়েক দিন পর আজ জেন-জি যুবকেরা পূর্ণ শক্তিতে রাস্তায় নেমেছে এবং বিজেপিকে বাস্তব পরিস্থিতি দেখিয়ে দিয়েছে।’

এর আগে কংগ্রেস সাংসদ ও লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ভারতের তরুণ এবং জেন-জিদের প্রতি গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষার আহ্বান জানিয়েছিলেন। নেপালে জেন-জিদের সহিংস বিক্ষোভের কারণে সরকারের পতনের পরেই এই মন্তব্য করেন রাহুল। বিজেপি নেতারা রাহুল গান্ধীর এই মন্তব্যের সমালোচনা করে অভিযোগ করেছেন, তিনি দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।

জেন-জিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ

অনেকেই লাদাখের এই বিক্ষোভকে জেন-জিদের আন্দোলন বলে দাবি করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক ব্যক্তি লেহের একটি ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন, ‘জেন-জিরা লাদাখের রাস্তায় নেমেছে।’ স্থানীয় আরেকজন উদ্যোক্তা অভিযোগ করেছেন, ‘লাদাখের জেন-জি বিক্ষোভকারীরা বিজেপির কার্যালয়ে আগুন দিয়ে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছে।’

কিছু ব্যক্তি নেপালের সাম্প্রতিক উত্থানের সঙ্গেও লাদাখের এই বিক্ষোভের তুলনা করেছেন, যেখানে জেন-জিরা অলি সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছিল। দা প্রোটাগনিস্ট নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে লিখেছে, ‘এটা নেপাল নয়। এটা লাদাখ।’

এদিকে, সোনম ওয়াংচুক আজকের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘লেহতে খুবই দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের বার্তা আজ ব্যর্থ হলো। আমি তরুণদের এই নির্বোধ কাজ বন্ধ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। এটি কেবল আমাদের উদ্দেশ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’

আজ লাদাখে কী ঘটেছিল?

লেহতে আজ বুধবার পৃথক রাজ্যের মর্যাদা ও ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্তির দাবিতে আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়। ১৫ দিনের অনশন শেষ করে ওয়াংচুক মঙ্গলবার তাঁর সমর্থকদের সহিংসতা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। যদিও কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠকের জন্য ৬ অক্টোবর দিন ধার্য ছিল, কিন্তু বিক্ষোভকারীরা অনশনকারীদের স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে আলোচনার তারিখ এগিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছিলেন।

সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, বুধবার এনডিএস মেমোরিয়াল গ্রাউন্ডে বিশাল জনসমাগম হয়। সেখান থেকে শত শত বিক্ষোভকারী শহরজুড়ে মিছিল করে। তারা লাদাখকে পৃথক রাজ্যের মর্যাদা ও ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্তির সমর্থনে স্লোগান দেয়।

বিক্ষোভকারীরা যখন বিজেপির কার্যালয় ও হিল কাউন্সিলে পাথর নিক্ষেপ করা শুরু করে, তখন উত্তেজনা বেড়ে যায়। পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। বিজেপির কার্যালয় ছাড়াও বেশ কয়েকটি গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীরা কার্যালয়ের আসবাবপত্র ও কাগজপত্র পুড়িয়ে দেয়।

পরে অতিরিক্ত বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং কয়েক ঘণ্টার সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়, তবে শহরে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সহিংসতার পর কর্তৃপক্ষ ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার (বিএনএসএস) ১৬৩ ধারা অনুযায়ী পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির সমাবেশ নিষিদ্ধ করে কারফিউ জারি করেছে।

এই সহিংসতার কারণে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক লাদাখ উৎসবও মাঝপথে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন। কর্মকর্তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘অনিবার্য কারণে’ উৎসব বাতিল করা হয়েছে। তারা স্থানীয় শিল্পী, সাংস্কৃতিক দল ও পর্যটকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।

হঠাৎ করে ফুঁসে ওঠা এই সহিংস বিক্ষোভে ভারত কতটা উদ্বিগ্ন?

কৌশলগতভাবে লাদাখ ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চীন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে এর আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে, যা এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাফার জোন এবং প্রতিরক্ষার জন্য একটি সংবেদনশীল এলাকা হিসেবে গড়ে তুলেছে। তাই দিল্লির জন্য লাদাখের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগের।

কার্গিল যুদ্ধের মতো সামরিক সংঘাত, জাতীয় নিরাপত্তা এবং সীমান্ত ব্যবস্থাপনার জন্য এই অঞ্চলের তাৎপর্য অনেক। কৌশলগত দিক থেকে চীন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এই অঞ্চলটিকে সব সময় ভারতের নজরে রাখতে হয়।

চীনের সঙ্গে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর লাদাখের অবস্থান। এটি একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এলাকা। এখানে অসংখ্যবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, যেমন গালওয়ান উপত্যকায়।

লাদাখের দুর্গম ভূখণ্ড এবং উঁচু স্থান ভারতের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের মতো সামরিক সংঘাত এই অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছিল। সর্বোপরি, সীমান্তবর্তী অঞ্চল হিসেবে আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের জন্য লাদাখের নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ধর্ষণের শিকার নারীকে বিজেপি নেত্রীর স্বামী বললেন, ‘আমার কিছুই হবে না’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম অশোক সিং। ছবি: এনডিটিভি
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম অশোক সিং। ছবি: এনডিটিভি

এক নারীকে ছুরির মুখে ধর্ষণ, সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে পরে বারবার যৌন সম্পর্কে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে ভারতের মধ্যপ্রদেশের সাতনা জেলার এক বিজেপি কাউন্সিলরের স্বামীর বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী ওই নারী যখন ক্যামেরার সামনে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন এবং তাঁদের কথোপকথনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের কথা বলেন তখন ওই ব্যক্তি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমার কিছুই হবে না।’

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম অশোক সিং। তিনি রামপুর বাঘেলান নগর পরিষদের এক বিজেপি কাউন্সিলরের স্বামী। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে অশোক সিংকে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে গালিগালাজ করতে এবং ভুক্তভোগী নারীকে হুমকি দিতে দেখা যায়। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া ওই ক্লিপটিতে অভিযুক্তকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার কী হবে? কিছুই হবে না। যেখানে খুশি অভিযোগ করো, আমার কিছুই হবে না।’ ভিডিওর নেপথ্যে ভুক্তভোগী নারীকে কাঁদতে কাঁদতে অভিযোগ দায়েরের কথা বলতে শোনা যায়।

গত সোমবার সাতনার পুলিশ সুপার (এসপি) হংসরাজ সিংয়ের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই নারী। অভিযোগে তিনি বলেন, প্রায় ছয় মাস আগে ওই ঘটনা ঘটেছে। নিজের ও পরিবারের প্রাণনাশের হুমকির কারণে এতদিন তিনি মুখ খোলেননি। অভিযোগ পাওয়ার পরপরই এসপি তদন্তের দায়িত্ব ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ (ডিএসপি) মনোজ ত্রিবেদীর কাছে হস্তান্তর করেন।

ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ অনুযায়ী, কারহি এলাকার বাসিন্দা অশোক সিং তাঁর বাড়িতে ঢুকে ছুরির মুখে তাঁকে ধর্ষণ করে। মোবাইল ফোনে সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে এবং এই বিষয়ে মুখ খুললে নারী ও তাঁর পরিবারকে মেরে ফেলার হুমকি দেন।

ওই নারী অভিযোগে আরও বলেন, গত ২০ ডিসেম্বর অশোক সিং আবার তাঁর কাছে আসেন, তাঁর শ্লীলতাহানি করেন এবং আবারও ভিডিওটি প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দেন। বলেন, তাঁর কথামতো না চললে ওই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

ভুক্তভোগীর দাবি, অশোক সিংয়ের বিরুদ্ধে আগেও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ছিল এবং একসময় তাঁকে জেলা থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। এই কারণেই সে নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে মনে করে প্রকাশ্যে তাঁকে হুমকি দিতে সাহস পেয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

ভুক্তভোগী নারী জানান, অশোক সিং নিয়মিত তাঁর দোকানে এসে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বারবার হুমকি দেন। এতে তিনি ও তাঁর পরিবার ভীতি ও হয়রানির মধ্যে রয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।

ওই নারী আরও অভিযোগ করেছেন, পাঁচ দিন আগে পুলিশের কাছে যাওয়ার পরও এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি। তিনি বলেন, তাঁর বা তাঁর পরিবারের কোনো ক্ষতি হলে এর জন্য পুলিশই দায়ী থাকবে।

এদিকে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করা হচ্ছে এবং সব প্রমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এখনো পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাপানে তুষারপাতে পিচ্ছিল রাস্তায় ৫০টি গাড়ির সংঘর্ষ, নিহত ২

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৫১
পরপর অনেকগুলো গাড়ির সংঘর্ষের অন্তত ১০টি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ছবি: সংগৃহীত
পরপর অনেকগুলো গাড়ির সংঘর্ষের অন্তত ১০টি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ছবি: সংগৃহীত

তীব্র তুষারপাত ও পিচ্ছিল রাস্তার কারণে জাপানের মধ্যাঞ্চলে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২ জন নিহত এবং ২৬ জন আহত হয়েছেন। দেশটির কান-এৎসু এক্সপ্রেসওয়েতে অন্তত ৫০টি গাড়ির স্তূপ তৈরি হয়েছে। সংঘর্ষের ফলে বেশ কয়েকটি যানবাহনে আগুন ধরে যায়।

স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, ২৬ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে টোকিও থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গুনমা প্রিফেকচারের মিনাকামিতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে দুটি ট্রাকের মধ্যে সংঘর্ষ হলে পেছনে থাকা গাড়িগুলো একের পর এক ধাক্কা খেতে থাকে। এই চেইন রিঅ্যাকশনের ফলে অন্তত ১০টি গাড়িতে দাউ দাউ করে আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সাড়ে সাত ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে টোকিওর একজন ৭৭ বছর বয়সী নারী রয়েছেন। এ ছাড়া একটি পুড়ে যাওয়া ট্রাকের চালকের আসন থেকে আরও একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত ২৬ জনের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকি ২১ জন সামান্য আঘাত পেয়েছেন।

দুর্ঘটনার সময় ওই এলাকায় ভারী তুষারপাতের সতর্কতা জারি ছিল। পুলিশের ধারণা, রাস্তার ওপর বরফ জমে পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকগুলো পিছলে যায়। যার ফলে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

ষাটোর্ধ্ব এক প্রত্যক্ষদর্শী জাপানি সংবাদমাধ্যম এনএইচকে-কে জানান, সংঘর্ষের সময় তিনি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনেন এবং দেখেন সামনের গাড়িগুলোতে আগুন ধরে গেছে। দ্রুত সেই আগুন অন্যান্য গাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আরও জানান, তাঁকেসহ প্রায় ৫০ জনকে নিকটবর্তী একটি টোল প্লাজায় সরিয়ে নেওয়া হয় এবং সেখানে তাঁরা সারা রাত অবস্থান করেন।

দুর্ঘটনার পর এক্সপ্রেসওয়ের একটি অংশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুড়ে যাওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। রাস্তা পরিচালনাকারী সংস্থা নেক্সকো জানিয়েছে, আগুনের তাপে রাস্তার কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সংস্থাটি আপাতত ওই রুট ব্যবহার না করার জন্য ভ্রমণকারীদের সতর্ক করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজা স্থিতিশীলতা বাহিনীতে যোগ দিতে প্রস্তুত পাকিস্তান, তবে আপত্তি হামাসকে নিরস্ত্র করার শর্তে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার। ছবি: সংগৃহীত

গাজায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক বাহিনীতে যোগ দিতে নীতিগতভাবে সম্মতি জানিয়েছে পাকিস্তান। তবে এই বাহিনীর ম্যান্ডেটে যদি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে নিরস্ত্র করার শর্ত থাকে, তবে পাকিস্তান তাতে অংশ নেবে না। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার এ কথা বলেছেন।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেসের ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সাফল্য পর্যালোচনা করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়াজন করা হয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে ইশাক দার বলেন, গাজা শান্তি চুক্তির আওতায় ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স’ (আইএসএফ) গঠন একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। পাকিস্তান যেকোনো আন্তর্জাতিক ফোরামে ‘পিস এনফোর্সমেন্ট’ (শান্তি বলবৎকরণ) নয়, বরং ‘পিসকিপিং’ (শান্তি রক্ষা) শব্দ ব্যবহারের ওপর জোর দিচ্ছে।

হামাসকে নিরস্ত্র করা প্রসঙ্গে ইশাক দার স্পষ্ট করে বলেন, ‘যদি এই বাহিনীর ম্যান্ডেটে হামাসকে নিরস্ত্র করার কোনো ভূমিকা থাকে, তবে আমরা তাতে অংশ নেব না। এটি আমাদের কাজ নয়। হামাসকে নিরস্ত্র করার দায়িত্ব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বা সেখানকার স্থানীয় সরকারের।’

ইশাক দার আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের ভূমিকা শুধু শান্তি বজায় রাখায় সহায়তা করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কাউকে নিরস্ত্র করার কোনো অভিযানে পাকিস্তান তার সৈন্যদের জড়াতে চায় না।’

ইশাক দার জানান, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নীতিগতভাবে সৈন্য পাঠানোর বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি দিলেও, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পাকিস্তান এই বাহিনীর ‘টার্মস অব রেফারেন্স’ (টিওআর) এবং ম্যান্ডেট পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করবে।

প্রসঙ্গত, গত নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনাকে সমর্থন করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি রেজল্যুশন পাস হয়। পাকিস্তানসহ ১৩টি দেশ এর পক্ষে ভোট দিলেও রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত ছিল। ওই পরিকল্পনারই একটি অন্যতম অংশ হলো এই ‘আইএসএফ’ গঠন। এখানে মূলত মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর সৈন্যদের প্রাধান্য থাকবে।

ইশাক দার জানান, ইন্দোনেশিয়া এই বাহিনীতে ২০ হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব দিলেও তারাও হামাসকে নিরস্ত্র করার বিষয়ে পাকিস্তানের মতোই আপত্তি ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

পারমাণবিক শক্তিধর দেশ এবং অভিজ্ঞ সামরিক বাহিনীর অধিকারী হওয়ায় গাজা শান্তি মিশনে পাকিস্তানের অংশগ্রহণ ওয়াশিংটনের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে দেশের অভ্যন্তরে ধর্মীয় দলগুলোর প্রতিবাদ এবং হামাসের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি এড়াতে পাকিস্তান অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এই পথে এগোচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে ইশাক দার দাবি করেন, একসময় পাকিস্তান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন’ বলে বিবেচিত হলেও বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় দেশটি পুনরায় বিশ্বমঞ্চে শক্তিশালী অবস্থানে ফিরে এসেছে। তিনি জানান, প্রধান বৈশ্বিক ইস্যুগুলোতে পাকিস্তানের নীতিগত ও দৃঢ় অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক মহলে ইসলামাবাদের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকের আগে ইউক্রেনে রাশিয়ার ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রুশ হামলায় রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
রুশ হামলায় রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের ঠিক আগে রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ভাষ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রাতভর চালানো এই হামলায় প্রায় ৫০০ ড্রোন ও ৪০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এতে কিয়েভের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

জেলেনস্কি এই হামলাকে ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় চলমান শান্তি প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে রাশিয়ার ‘সরাসরি জবাব’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর এটিই তাদের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নজিরবিহীন।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শনিবার স্থানীয় সময় সকাল পর্যন্ত হামলা অব্যাহত ছিল। রাজধানী কিয়েভে প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে চলা বিমান হামলার সতর্কতা স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ২০ মিনিটে প্রত্যাহার করা হয়। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, কিয়েভ ও আশপাশের এলাকায় অন্তত দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৪৬ জন, যাদের মধ্যে দুটি শিশু রয়েছে।

তবে এ বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা ইউক্রেনারগো জানায়, দেশজুড়ে জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে। ফলে রাজধানী কিয়েভে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়েছে।

এই হামলার প্রভাব ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ডেও পড়েছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে দক্ষিণ-পূর্ব পোল্যান্ডের রেশজো ও লুবলিন বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে বিমানবন্দর দুটি আবার চালু করা হয়।

ট্রাম্প-জেলেনস্কি আলোচনার টেবিলে কী আছে

জেলেনস্কি বর্তমানে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো রিসোর্টের উদ্দেশে বিমানে রয়েছেন। এক অডিও বার্তায় তিনি জানান, পথে কানাডায় থামবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপ করবেন।

এর আগে শুক্রবার কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের যৌথ প্রচেষ্টায় তৈরি হওয়া ২০ দফার শান্তি পরিকল্পনার ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে যুদ্ধ শেষে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা হবে।’

জেলেনস্কির মতে, যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে, সেটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটা নির্ভর করবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কী দিতে প্রস্তুত, কখন দিতে প্রস্তুত এবং কত দিনের জন্য।’

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও বলেছেন, এই শান্তি প্রক্রিয়ায় মূল চালিকাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রই। পলিটিকোকে তিনি বলেন, ‘আমার অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত তাঁর (জেলেনস্কির) কিছুই চূড়ান্ত নয়। দেখা যাক, সে কী নিয়ে আসে।’ তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, রোববারের বৈঠক ভালো হবে। তিনি আরও জানান, খুব শিগগির তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও কথা বলতে চান।

দোনেৎস্কের ভবিষ্যৎই এখন মূল প্রশ্ন

মস্কো দাবি করছে, ইউক্রেনকে দোনেৎস্কের একটি বড় ও ঘনবসতিপূর্ণ অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। এই অঞ্চল রুশ বাহিনী প্রায় চার বছরের যুদ্ধেও পুরোপুরি দখল করতে পারেনি। অন্যদিকে কিয়েভ চায়, বর্তমান ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ থামানো হোক।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত এক সমঝোতার আওতায়, ইউক্রেনীয় বাহিনী দোনেৎস্কের কিছু এলাকা থেকে সরে গেলে সেখানে একটি মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের কথা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো বিস্তারিত ঠিক হয়নি।

জেলেনস্কি ইঙ্গিত দিয়েছেন, যদি চুক্তিতে বড় ধরনের আঞ্চলিক ছাড় দেওয়ার প্রশ্ন আসে, তবে তিনি তা গণভোটের মাধ্যমে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে পারেন। তবে যুদ্ধের এমন পরিস্থিতিতে গণভোট আয়োজন অসম্ভব বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ জানিয়েছেন, কিয়েভের ২০ দফা পরিকল্পনা রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার চেয়ে কিছুটা ভিন্ন, তবে শান্তি প্রক্রিয়ায় একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বা মোড় আসার বিষয়ে তিনি আশাবাদী। এখন সবার নজর রোববার ফ্লোরিডায় হতে যাওয়া ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকের দিকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত