Ajker Patrika

ইরানের সামরিক নেতৃত্ব শেষ করে দিয়েছে ইসরায়েল, নতুন কারা এলেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ জুন ২০২৫, ১২: ৪২
সশস্ত্র বাহিনীর নতুন চিফ অব স্টাফ আবদুলরহিম মোসাভি ও আইআরজিসির নতুন প্রধান মোহাম্মদ পাকপোর। ছবি: সংগৃহীত
সশস্ত্র বাহিনীর নতুন চিফ অব স্টাফ আবদুলরহিম মোসাভি ও আইআরজিসির নতুন প্রধান মোহাম্মদ পাকপোর। ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের একের পর এক হামলায় শীর্ষ সামরিক নেতাদের মৃত্যুর পর ইরানের সামরিক নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। এমন এক সময়ে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড (আইআরজিসি) এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফের নেতৃত্বে ব্যাপক রদবদল আনতে হয়েছে যখন ইসরায়েলের আক্রমণ ঠেকাতে ইরান প্রতিরোধ গড়ে তুলছে এবং পাল্টা হামলাও চালাচ্ছে।

চলমান এই সংঘাতে কোন কোন কমান্ডার নিহত হয়েছেন, তাঁদের স্থলে কে আসছেন এবং এর ভবিষ্যৎ পরিণতি কী হতে পারে—সেটি তুলে ধরেছে আল-জাজিরা।

নিহত কমান্ডাররা কে কোন দায়িত্বে ছিলেন?

গত শুক্রবার ভোরে শুরু হওয়া ইসরায়েলের একযোগে চালানো হামলায় ইরানের কিছু শীর্ষ সামরিক নেতা নিহত হন।

নিহতদের মধ্যে ছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ পদমর্যাদার সামরিক নেতা জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি। ১৯৮০-এর দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধে অংশ নেওয়া এই অভিজ্ঞ সেনা ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি সরাসরি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির অধীনে কাজ করতেন।

এছাড়াও, জেনারেল স্টাফের আরও কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ছিলেন—অপারেশন ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি মেহদি রাবানি এবং গোয়েন্দা শাখার ডেপুটি গোলামরেজা মেহরাবি।

এই সংঘাতে আইআরজিসিও তাদের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজনকে হারিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলেন বাহিনীর প্রধান হোসেইন সালামি।

আইআরজিসির স্পেশাল এয়ারোস্পেস ডিপার্টমেন্ট, যারা ইরানের ব্যাপক পরিসরের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে, তারা নিশ্চিত করেছে যে তেহরানের একটি ভূগর্ভস্থ বাংকারে বৈঠকের সময় আটজন শীর্ষ কমান্ডার নিহত হয়েছেন।

নিহতদের মধ্যে ছিলেন দীর্ঘদিনের এয়ারোস্পেস চিফ আলি আকবর হাজিজাদে। এ ছাড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ও ড্রোন ইউনিটের নেতৃত্বে থাকা কমান্ডাররাও নিহত হয়েছেন।

নতুন কমান্ডাররা কারা?

সশস্ত্র বাহিনীর নতুন চিফ অব স্টাফ

ইরানের সেনাবাহিনীর প্রধান আবদুলরহিম মোসাভিকে সশস্ত্র বাহিনীর নতুন চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।

৬৫ বছর বয়সী এই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এখন এই পদে নিযুক্ত হওয়া প্রথম সেনাবাহিনী প্রধান। এর আগে যারা এই পদে ছিলেন, তারা সবাই আইআরজিসি থেকে ছিলেন।

মোসাভি একজন যুদ্ধ অভিজ্ঞ সৈনিক। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর তিনি সুপ্রিম ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ ও পড়াশোনা সম্পন্ন করেন।

আইআরজিসির নতুন প্রধান

আইআরজিসির নতুন প্রধান হিসেবে খামেনি নিয়োগ দিয়েছেন মোহাম্মদ পাকপোরকে। এই এলিট বাহিনীতেই নিজের সামরিক ক্যারিয়ার শুরু করে নিজেকে গড়ে তুলেছেন পাকপোর। ১৯৮০-এর দশকের ইরান-ইরাক যুদ্ধে তিনি আইআরজিসির সাঁজোয়া ইউনিটের নেতৃত্ব দেন এবং পরে একটি যুদ্ধ ডিভিশনের কমান্ডার হন।

পাকপোর টানা ১৬ বছর আইআরজিসির স্থল বাহিনীর প্রধান ছিলেন, এরপর তাঁকে বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ পদে উন্নীত করা হয়। তিনি আগে আইআরজিসির অপারেশনস বিভাগের ডেপুটি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বাহিনীর দুটি গুরুত্বপূর্ণ সদর দপ্তরের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

সেনাবাহিনীর নতুন কমান্ডার

আমির হাতামিকে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত করে সেনাবাহিনীর নতুন কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন খামেনি। ৫৯ বছর বয়সী হাতামি ইরাক আক্রমণের সময় সেনাবাহিনীতে উঠে আসেন। বিশেষ করে অপারেশন মেরসাদের পর তাঁর উত্থান ঘটে। ওই সময় মোজাহেদিন-ই-খালক (এমইকে)—যারা একসময় বিপ্লবে অংশ নিয়েছিল কিন্তু পরে শাসক গোষ্ঠীর সঙ্গে বিরোধে জড়ায়—ইরাকের সহযোগিতায় ইরানে স্থল হামলা চালায়, তবে তারা ব্যাপকভাবে পরাজিত হয়।

আইআরজিসির নতুন এয়ারোস্পেস প্রধান

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাজিদ মোসাভি এখন আইআরজিসির নতুন এয়ারোস্পেস প্রধান। তিনি ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন প্রযুক্তি এবং পশ্চিমাদের সমালোচিত মহাকাশ উৎক্ষেপণ কর্মসূচি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

তিনি ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতেন হাসান তেহরানি মোঘাদ্দামের সঙ্গে, যিনি ‘ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির জনক’ হিসেবে পরিচিত। মোঘাদ্দাম ২০১১ সালে একটি ক্ষেপণাস্ত্র গুদামে বিস্ফোরণে নিহত হন। যে বিস্ফোরণকে ইরান সরকার ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবে ঘোষণা দেয়।

নতুন করে দায়িত্ব পাওয়া এই কমান্ডাররা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় টানানো ব্যানারে লেখা রয়েছে: ‘তোমরা যুদ্ধ শুরু করেছ, শেষ করব আমরা।’

সেনাবাহিনীর নতুন প্রধান আমির হাতামি এক বিবৃতিতে বলেছেন, তাঁর নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ‘ভুয়া এবং শিশু হত্যাকারী জায়নবাদী শাসনের (ইসরায়েল) ওপর কঠোর ও কার্যকর আঘাত হানবে।’

নতুন কমান্ডারদের অধীনে গত তিন রাত ধরে ইরান শত শত বিস্ফোরকভর্তি ড্রোন, ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে ছুঁড়েছে। তাঁরা দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতির বার্তাও দিয়েছেন। এইসব হামলায় ইসরায়েলের সেনাঘাঁটি এবং আবাসিক ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে, যাতে অন্তত ১৪ জন নিহত এবং আরও বহু মানুষ আহত হয়েছেন।

গত রোববার রাতের দিকে তেহরান থেকে ইসরায়েলের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা শুরু করে ইরানি কমান্ডাররা। এর আগে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ইরানের তেল ও গ্যাস স্থাপনা, পেট্রোকেমিক্যাল কারখানা, স্টিল ও অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রি এবং বহু আবাসিক এলাকায় বোমাবর্ষণ করেছিল। ইরান সরকার জানিয়েছে, ইসরায়েলের এসব হামলায় দেশজুড়ে ২২০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কমপক্ষে ২৫ জন শিশু রয়েছে।

রোববার সারাদিনজুড়ে তেহরানে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইসরায়েলি বাহিনী রাজধানীর উত্তরের নিয়াভারান, পশ্চিমের সাদাত আবাদ এবং কেন্দ্রীয় ভালিয়াসর ও হাফতে তির এলাকায় বোমাবর্ষণ করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাপানে তুষারপাতে পিচ্ছিল রাস্তায় ৫০টি গাড়ির সংঘর্ষ, নিহত ২

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৫১
পরপর অনেকগুলো গাড়ির সংঘর্ষের অন্তত ১০টি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ছবি: সংগৃহীত
পরপর অনেকগুলো গাড়ির সংঘর্ষের অন্তত ১০টি গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ছবি: সংগৃহীত

তীব্র তুষারপাত ও পিচ্ছিল রাস্তার কারণে জাপানের মধ্যাঞ্চলে এক ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২ জন নিহত এবং ২৬ জন আহত হয়েছেন। দেশটির কান-এৎসু এক্সপ্রেসওয়েতে অন্তত ৫০টি গাড়ির স্তূপ তৈরি হয়েছে। সংঘর্ষের ফলে বেশ কয়েকটি যানবাহনে আগুন ধরে যায়।

স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, ২৬ ডিসেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে টোকিও থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গুনমা প্রিফেকচারের মিনাকামিতে এই দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে দুটি ট্রাকের মধ্যে সংঘর্ষ হলে পেছনে থাকা গাড়িগুলো একের পর এক ধাক্কা খেতে থাকে। এই চেইন রিঅ্যাকশনের ফলে অন্তত ১০টি গাড়িতে দাউ দাউ করে আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সাড়ে সাত ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে টোকিওর একজন ৭৭ বছর বয়সী নারী রয়েছেন। এ ছাড়া একটি পুড়ে যাওয়া ট্রাকের চালকের আসন থেকে আরও একটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত ২৬ জনের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকি ২১ জন সামান্য আঘাত পেয়েছেন।

দুর্ঘটনার সময় ওই এলাকায় ভারী তুষারপাতের সতর্কতা জারি ছিল। পুলিশের ধারণা, রাস্তার ওপর বরফ জমে পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকগুলো পিছলে যায়। যার ফলে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

ষাটোর্ধ্ব এক প্রত্যক্ষদর্শী জাপানি সংবাদমাধ্যম এনএইচকে-কে জানান, সংঘর্ষের সময় তিনি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনেন এবং দেখেন সামনের গাড়িগুলোতে আগুন ধরে গেছে। দ্রুত সেই আগুন অন্যান্য গাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আরও জানান, তাঁকেসহ প্রায় ৫০ জনকে নিকটবর্তী একটি টোল প্লাজায় সরিয়ে নেওয়া হয় এবং সেখানে তাঁরা সারা রাত অবস্থান করেন।

দুর্ঘটনার পর এক্সপ্রেসওয়ের একটি অংশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুড়ে যাওয়া এবং ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলো সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। রাস্তা পরিচালনাকারী সংস্থা নেক্সকো জানিয়েছে, আগুনের তাপে রাস্তার কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সংস্থাটি আপাতত ওই রুট ব্যবহার না করার জন্য ভ্রমণকারীদের সতর্ক করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাজা স্থিতিশীলতা বাহিনীতে যোগ দিতে প্রস্তুত পাকিস্তান, তবে আপত্তি হামাসকে নিরস্ত্র করার শর্তে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার। ছবি: সংগৃহীত

গাজায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত আন্তর্জাতিক বাহিনীতে যোগ দিতে নীতিগতভাবে সম্মতি জানিয়েছে পাকিস্তান। তবে এই বাহিনীর ম্যান্ডেটে যদি ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে নিরস্ত্র করার শর্ত থাকে, তবে পাকিস্তান তাতে অংশ নেবে না। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইশাক দার এ কথা বলেছেন।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেসের ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সাফল্য পর্যালোচনা করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়াজন করা হয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে ইশাক দার বলেন, গাজা শান্তি চুক্তির আওতায় ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স’ (আইএসএফ) গঠন একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। পাকিস্তান যেকোনো আন্তর্জাতিক ফোরামে ‘পিস এনফোর্সমেন্ট’ (শান্তি বলবৎকরণ) নয়, বরং ‘পিসকিপিং’ (শান্তি রক্ষা) শব্দ ব্যবহারের ওপর জোর দিচ্ছে।

হামাসকে নিরস্ত্র করা প্রসঙ্গে ইশাক দার স্পষ্ট করে বলেন, ‘যদি এই বাহিনীর ম্যান্ডেটে হামাসকে নিরস্ত্র করার কোনো ভূমিকা থাকে, তবে আমরা তাতে অংশ নেব না। এটি আমাদের কাজ নয়। হামাসকে নিরস্ত্র করার দায়িত্ব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বা সেখানকার স্থানীয় সরকারের।’

ইশাক দার আরও বলেন, ‘পাকিস্তানের ভূমিকা শুধু শান্তি বজায় রাখায় সহায়তা করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। বলপ্রয়োগের মাধ্যমে কাউকে নিরস্ত্র করার কোনো অভিযানে পাকিস্তান তার সৈন্যদের জড়াতে চায় না।’

ইশাক দার জানান, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নীতিগতভাবে সৈন্য পাঠানোর বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি দিলেও, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পাকিস্তান এই বাহিনীর ‘টার্মস অব রেফারেন্স’ (টিওআর) এবং ম্যান্ডেট পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করবে।

প্রসঙ্গত, গত নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনাকে সমর্থন করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি রেজল্যুশন পাস হয়। পাকিস্তানসহ ১৩টি দেশ এর পক্ষে ভোট দিলেও রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত ছিল। ওই পরিকল্পনারই একটি অন্যতম অংশ হলো এই ‘আইএসএফ’ গঠন। এখানে মূলত মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর সৈন্যদের প্রাধান্য থাকবে।

ইশাক দার জানান, ইন্দোনেশিয়া এই বাহিনীতে ২০ হাজার সৈন্য পাঠানোর প্রস্তাব দিলেও তারাও হামাসকে নিরস্ত্র করার বিষয়ে পাকিস্তানের মতোই আপত্তি ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

পারমাণবিক শক্তিধর দেশ এবং অভিজ্ঞ সামরিক বাহিনীর অধিকারী হওয়ায় গাজা শান্তি মিশনে পাকিস্তানের অংশগ্রহণ ওয়াশিংটনের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে দেশের অভ্যন্তরে ধর্মীয় দলগুলোর প্রতিবাদ এবং হামাসের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি এড়াতে পাকিস্তান অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এই পথে এগোচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে ইশাক দার দাবি করেন, একসময় পাকিস্তান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন’ বলে বিবেচিত হলেও বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় দেশটি পুনরায় বিশ্বমঞ্চে শক্তিশালী অবস্থানে ফিরে এসেছে। তিনি জানান, প্রধান বৈশ্বিক ইস্যুগুলোতে পাকিস্তানের নীতিগত ও দৃঢ় অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক মহলে ইসলামাবাদের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকের আগে ইউক্রেনে রাশিয়ার ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রুশ হামলায় রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
রুশ হামলায় রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের ঠিক আগে রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ভাষ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রাতভর চালানো এই হামলায় প্রায় ৫০০ ড্রোন ও ৪০ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এতে কিয়েভের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।

জেলেনস্কি এই হামলাকে ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় চলমান শান্তি প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে রাশিয়ার ‘সরাসরি জবাব’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরুর পর এটিই তাদের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নজিরবিহীন।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শনিবার স্থানীয় সময় সকাল পর্যন্ত হামলা অব্যাহত ছিল। রাজধানী কিয়েভে প্রায় ১০ ঘণ্টা ধরে চলা বিমান হামলার সতর্কতা স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ২০ মিনিটে প্রত্যাহার করা হয়। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, কিয়েভ ও আশপাশের এলাকায় অন্তত দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৪৬ জন, যাদের মধ্যে দুটি শিশু রয়েছে।

তবে এ বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা ইউক্রেনারগো জানায়, দেশজুড়ে জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে। ফলে রাজধানী কিয়েভে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়েছে।

এই হামলার প্রভাব ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ডেও পড়েছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে দক্ষিণ-পূর্ব পোল্যান্ডের রেশজো ও লুবলিন বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে বিমানবন্দর দুটি আবার চালু করা হয়।

ট্রাম্প-জেলেনস্কি আলোচনার টেবিলে কী আছে

জেলেনস্কি বর্তমানে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো রিসোর্টের উদ্দেশে বিমানে রয়েছেন। এক অডিও বার্তায় তিনি জানান, পথে কানাডায় থামবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপ করবেন।

এর আগে শুক্রবার কিয়েভে এক সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের যৌথ প্রচেষ্টায় তৈরি হওয়া ২০ দফার শান্তি পরিকল্পনার ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে যুদ্ধ শেষে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা হবে।’

জেলেনস্কির মতে, যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে, সেটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটা নির্ভর করবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কী দিতে প্রস্তুত, কখন দিতে প্রস্তুত এবং কত দিনের জন্য।’

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও বলেছেন, এই শান্তি প্রক্রিয়ায় মূল চালিকাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রই। পলিটিকোকে তিনি বলেন, ‘আমার অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত তাঁর (জেলেনস্কির) কিছুই চূড়ান্ত নয়। দেখা যাক, সে কী নিয়ে আসে।’ তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, রোববারের বৈঠক ভালো হবে। তিনি আরও জানান, খুব শিগগির তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গেও কথা বলতে চান।

দোনেৎস্কের ভবিষ্যৎই এখন মূল প্রশ্ন

মস্কো দাবি করছে, ইউক্রেনকে দোনেৎস্কের একটি বড় ও ঘনবসতিপূর্ণ অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। এই অঞ্চল রুশ বাহিনী প্রায় চার বছরের যুদ্ধেও পুরোপুরি দখল করতে পারেনি। অন্যদিকে কিয়েভ চায়, বর্তমান ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ থামানো হোক।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত এক সমঝোতার আওতায়, ইউক্রেনীয় বাহিনী দোনেৎস্কের কিছু এলাকা থেকে সরে গেলে সেখানে একটি মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের কথা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো বিস্তারিত ঠিক হয়নি।

জেলেনস্কি ইঙ্গিত দিয়েছেন, যদি চুক্তিতে বড় ধরনের আঞ্চলিক ছাড় দেওয়ার প্রশ্ন আসে, তবে তিনি তা গণভোটের মাধ্যমে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে পারেন। তবে যুদ্ধের এমন পরিস্থিতিতে গণভোট আয়োজন অসম্ভব বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ জানিয়েছেন, কিয়েভের ২০ দফা পরিকল্পনা রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার চেয়ে কিছুটা ভিন্ন, তবে শান্তি প্রক্রিয়ায় একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ বা মোড় আসার বিষয়ে তিনি আশাবাদী। এখন সবার নজর রোববার ফ্লোরিডায় হতে যাওয়া ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকের দিকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গুয়াতেমালায় বাস খাদে পড়ে নিহত অন্তত ১৫, আহত ১৯

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ধারণা করা হচ্ছে, কুয়াশা বা যান্ত্রিক ত্রুটি এ দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।  ছবি: সংগৃহীত
ধারণা করা হচ্ছে, কুয়াশা বা যান্ত্রিক ত্রুটি এ দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

মধ্য আমেরিকার দেশ গুয়াতেমালায় একটি যাত্রীবাহী বাস গভীর খাদে পড়ে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় ইন্টার-আমেরিকান হাইওয়েতে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে আরও অন্তত ১৯ জন যাত্রী গুরুতর আহত হয়েছেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের মুখপাত্র লিয়ান্দ্রো আমাদোর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১১ জন পুরুষ, ৩ জন নারী এবং ১টি শিশু রয়েছে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাসটি গুয়াতেমালা সিটি থেকে মেক্সিকো সীমান্তবর্তী সান মার্কোস বিভাগের দিকে যাচ্ছিল। পথে টোটোনিকাপান বিভাগের ১৭২ থেকে ১৭৪ কিলোমিটারের মধ্যবর্তী এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় ৭৫ মিটার (২৫০ ফুট) গভীর একটি খাদে পড়ে যায়। দুর্ঘটনাস্থলটি ‘আলাস্কা পিক’ নামে পরিচিত। দুর্গম ভূখণ্ড এবং খাড়া ঢালের কারণে এলাকাটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

ধারণা করা হচ্ছে, কুয়াশা বা যান্ত্রিক ত্রুটি এ দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে, তবে সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।

দেশটির ফায়ার সার্ভিস ডিপার্টমেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্ঘটনার কিছু ছবি শেয়ার করেছে। এতে দেখা যায়, দুমড়েমুচড়ে যাওয়া বাসটি থেকে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করা হচ্ছে।

আহত ১৯ ব্যক্তিকে উদ্ধার করে কাছের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

এদিকে, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে প্রিয়জনদের খোঁজে ঘটনাস্থল ও হাসপাতালগুলোতে ভিড় করছেন স্বজনেরা।

উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের শুরুতেই গুয়াতেমালা সিটির বাইরে একটি বাস খাদে পড়ে ৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। বছরের শেষ দিকে এসে আবারও একই ধরনের বড় দুর্ঘটনায় দেশটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত