Ajker Patrika

কেনিয়ায় চা-বাগান নিয়ে স্থানীয় ও বিদেশি এস্টেটগুলোর দ্বন্দ্ব, ক্ষতির মুখে শিল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৪: ৪৯
২০২৩ সালে বাগানে ঢুকে চা পাতা তুলে নিয়ে যেতে শুরু করে স্থানীয়রা। ছবি: এনএমজি
২০২৩ সালে বাগানে ঢুকে চা পাতা তুলে নিয়ে যেতে শুরু করে স্থানীয়রা। ছবি: এনএমজি

বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম চা উৎপাদক দেশ কেনিয়া। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের নান্দি কাউন্টির সিতোই এস্টেটের পাহাড়ি এলাকায় রয়েছে চা-শিল্প। ১৯৪৮ সালে এই নান্দিতে জমি অধিগ্রহণ করে চা-বাগান গড়ে তোলে ব্রিটিশ মালিকানাধীন চা উৎপাদনকারী কোম্পানি ইস্টার্ন প্রোডিউস কেনিয়া (ইপিকে)। বহু দশক ধরে নান্দিসহ কেনিয়ার অনেক অঞ্চলে চা-বাগান পরিচালনা করছে তারা।

লন্ডনের ক্যামেলিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের মালিকানাধীন এই কোম্পানির সঙ্গে সম্প্রতি জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে স্থানীয় একটি সম্প্রদায়ের। দ্বন্দ্বের কারণ উপহারের জমি।

১৯৮৬ সালে উপহার হিসেবে ইস্টার্ন প্রোডিউস কেনিয়া (ইপিকে) কিমাসাস সম্প্রদায়কে কিছু জমি উপহার দিয়েছিল। এখন ইপিকে দাবি করছে, তারা ২০২ একর জমি দিয়েছিল। এদিকে কিমাসাস কৃষক সমবায় সমিতির দাবি, তাদের ৫৫০ একর জমি উপহার দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তাদের দখলে আছে ৩৫০ একর।

চা-বাগানের মাঝে এই ৩৫০ একর জমিতে কিমাসাসের শ-খানেক স্থানীয় বাসিন্দার বাস। সেখানে কাদামাটি ও জংধরা টিনের ছাউনির কুটিরে বসবাস তাদের। চা-পাতা তুলে আর গবাদি পশু চরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে তারা।

ইপিকে বলছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে কেনিয়ার আইন মেনে চা-বাগান পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি স্থানীয় সম্প্রদায়ের অসন্তোষ, জমি দখল ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়ছে। তারা এ পরিস্থিতিকে ‘বিপজ্জনক নজির’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে। স্থানীয়দের এ ধরনের কর্মকাণ্ড শিল্প খাতে দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি তৈরি করছে বলে অভিযোগ করে তারা।

ইপিকের এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কিমাসাসের চেয়ারম্যান ড্যানিয়েল বিউয়ট বলেন, ‘১৯০৫ সালের দিকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকেরা এই জায়গা দখলে নেওয়ার আগে তাঁর দাদা এখানে বাস করতেন। বিরোধপূর্ণ ৩৫০ একর জমি ফেরত পাওয়া মানে হবে একটি ঐতিহাসিক অন্যায়কে সংশোধন করা।’

বিওট, তাঁর বাবা ও দাদা—তিন পুরুষই ইপিকের কর্মী ছিলেন। চা-বাগানে দাঁড়িয়ে বিওট বলতে থাকেন, ‘এই এত বছরে কিছুই হয়নি। এখনই সময়, এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।’

এই বিরোধের পেছনে রয়েছে কেনিয়ার বিভিন্ন চা-বাগানে ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটি সহিংস ঘটনা। কেনিয়ার চা উৎপাদকদের সমিতি (কেটিজিএ) এক বিবৃতিতে জানায়, গত জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার মালিকানাধীন ব্রাউন্স প্ল্যান্টেশনের একটি খামারে হামলা চালানো হয় এবং শতাধিক ইউক্যালিপটাস গাছ উপড়ে ফেলা হয়। রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা অপরাধী দলগুলো সিতোইতে এসব জমি দখল আক্রমণের পেছনে রয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এসব অস্থিরতার কারণে প্রতি মাসে ২ লাখ ডলারেরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ইপিকে। কেনিয়ার রপ্তানি আয়ের প্রায় এক-চতুর্থাংশ অংশ জুড়ে থাকা এই চা-শিল্পকে হুমকির মুখে ফেলছে। ৫ মিলিয়ন মানুষের জীবিকা নির্বাহের উৎস বিপদে পড়ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঔপনিবেশিক যুগের জমি দখলের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতার প্রতি একটি বিস্তৃত হতাশার প্রতিফলন এসব হামলা।

আইনজীবী জোয়েল কিমুটাই বোসেক স্থানীয় সম্প্রদায়ের পক্ষে চা কোম্পানি এবং যুক্তরাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তবে মামলায় সফল হননি। তিনি বলেন, ‘আমি আইনি ব্যবস্থায় এগোতে অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু সফল হইনি। আমার মনে হয় নতুন বা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরও আক্রমণাত্মক হবে।’

২০২১ সালের জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, উপনিবেশিক যুগে ১৮৯৫-১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশরা কেনিয়ায় বিশাল পরিমাণ জমি দখল করে, যার বেশির ভাগই চা-বাগানে পরিণত হয়।

এই ঔপনিবেশিক সমস্যার সমাধানে ২০১০ সালের দিকে সচেতন হয়ে ওঠে কেনিয়া। গড়ে তোলা হয় জাতীয় জমি কমিশন। কমিশনের সাবেক প্রধান স্যামুয়েল টোরোরেই বলছিলেন, “কমিশনের সীমিত ক্ষমতার কারণে এর কার্যকারিতা ব্যাহত হয়েছে। আর চা কোম্পানিগুলো এবং রাজনৈতিক অভিজাতদের মধ্যেকার ‘অনৈতিক সম্পর্ক’ তো ছিলই। ”

কেনিয়ার ২০১০ সালের সংবিধান অনুযায়ী, চা কোম্পানিগুলোর পূর্বের ৯৯৯ বছরের জমির ইজারা মেয়াদ কমিয়ে ৯৯ বছরে নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু সরকার জমির মালিকানা ব্যবহার করে স্থানীয় জনগণের জন্য পর্যাপ্ত জমি বা আর্থিক সুবিধা আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অধিকারকর্মীরা অভিযোগ করেন।

২০২৩ সাল পর্যন্ত কেনিয়ায় ব্রিটেনের জেমস ফিনলে কোম্পানির চা-বাগান ছিল। এই কোম্পানিতে ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন গাই চেম্বার্স। তিনি বলেন, ‘এই উত্তেজনার মূল কারণ হলো বড় বড় চা-বাগানের মালিকানা রয়েছে বিদেশিদের হাতে—যেসব জমি একসময় স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়েছিল।’

এই অস্থিরতা প্রসঙ্গে কেনিয়া সরকারের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কোম্পানিগুলো দাবি করছে, তারা কেনিয়ার আইন মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিছু রাজনীতিবিদ এই ঐতিহাসিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে তাদের জমির মালিকানা খর্ব করার চেষ্টা করছে। সেই সঙ্গে নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থও এগিয়ে নিচ্ছে।

তবে এতকিছুর পরও স্থানীয় সম্প্রদায়ের জমি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টাগুলো খুব একটা সফল হয়নি। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, এসব জমির ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন, কারণ এতে সময়সীমা এবং সরকারি রক্ষা প্রথা (ইমিউনিটি) ইত্যাদি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

চেম্বার্স পরিচালিত প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্ম এবং কেরিচো জেলার চা-চাষি সম্প্রদায় গত বছর সিভিসি ক্যাপিটাল-মালিকানাধীন লিপটনের এস্টেটগুলোর জন্য যৌথভাবে দরপত্র দিয়েছিল এমন একটি পরিকল্পনার অধীনে যা আগামী দুই দশকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় সম্প্রদায়ের কাছে হস্তান্তর করত।

শেষ পর্যন্ত লিপটন কোম্পানি তাদের এস্টেট ব্রাউন্স কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়। লিপটনের একজন মুখপাত্র জানান, তারা এমন একজন ক্রেতাকে বেছে নিয়েছে, যিনি এই শিল্পের মানোন্নয়নে সহায়তা করতে পারবেন। তবে ব্রাউন্স কোম্পানি মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

২০১৯ সালের এক প্রতিবেদনে কেনিয়ার জাতীয় ভূমি কমিশন ব্রিটিশ সরকারকে আহ্বান জানিয়েছিল কেরিচো অঞ্চলের সম্প্রদায়গুলোর কাছে ক্ষমা চাওয়ার এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য। তবে ব্রিটিশ সরকার এই আহ্বানের সরাসরি কোনো জবাব দেয়নি।

মন্তব্য চাওয়া হলে ব্রিটেনের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস জানায়, ‘আমরা নান্দি অঞ্চলের চা-খামারগুলোতে হামলায় উদ্বিগ্ন এবং আমরা কেনিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’

তবে ইপিকে দাবি করছে, চলমান বিরোধটি কোনো ঐতিহাসিক জমি-অবিচার নিয়ে নয়, বরং এটি ‘স্বেচ্ছায় দান ও গ্রহণের’ ভিত্তিতে দেওয়া একটি উপহার নিয়ে। কিন্তু ২০১৯ সালে কেনিয়ার জাতীয় ভূমি কমিশন জানায়, কিমাসাস সম্প্রদায় পুরো ৫৫০ একর জমির মালিক। ইপিকে এই দাবিকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করে বলে, কিমাসাস যেসব প্রমাণ দিয়েছে, সেগুলো জাল।

২০২৩ সালের ৩ আগস্ট আদালত মামলার শুনানি চলাকালে প্রায় ২০০ মানুষ ওই বিরোধপূর্ণ জমিতে ঢুকে পড়ে এবং চা-পাতা তুলে নিয়ে যেতে শুরু করে, যাদের মধ্যে একজন সংসদ সদস্যও ছিলেন। পরদিন আদালত একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করে তাদের জমি ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সে সময় অধিকাংশ লোক চলে গেলেও পরে আবার অনেকে ফিরে আসে। এমনকি ইপিকের গাড়ি ও কর্মীদের ওপর হামলা চালায়।

কোম্পানিটি জানায়, পুলিশ ওই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেনি। আর পাবলিক প্রসিকিউটরের অফিস জানিয়েছে, এ ঘটনায় কাউকে অভিযুক্ত করলে তা চলমান দেওয়ানি মামলায় হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

ইপিকের জেনারেল ম্যানেজার পিটার গোইন বলেন, ‘যদি আমরা এ ধরনের পরিস্থিতি মেনে নিই—যেখানে তরুণ প্রজন্ম বলতে শুরু করে যে তাদের যথেষ্ট নেই, তারা আরও চায়—তাহলে এটা একটা বিপজ্জনক নজির হয়ে দাঁড়াবে, যা যেকোনো মূল্যে ঠেকাতে হবে।’

পুলিশ বা প্রসিকিউটরের অফিস মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

অন্যদিকে কিমাসাস সম্প্রদায়ের নেতা বিউয়ট বলেন, তাদের পক্ষ থেকে জমি দখল করা যুক্তিসংগত, কারণ এ বিষয়ে এখনো আদালতের কোনো চূড়ান্ত রায় আসেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ফিলিস্তিনসহ আরও যে ৬ দেশের নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৫৫
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ ও অভিবাসনে নিষিদ্ধ দেশের তালিকা বড় হয়েই চলেছে। গতকাল মঙ্গলবার ফিলিস্তিন ও আরও পাঁচটি দেশের ওপর পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

বার্তা সংস্থা এপির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, নতুন ঘোষণায় আরও পাঁচটি দেশকে যুক্তরাষ্ট্রে পূর্ণ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা নথিতে ভ্রমণকারীদেরও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। পাশাপাশি আরও ১৫টি দেশের ক্ষেত্রে নতুন করে ভ্রমণ সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে।

প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের মানদণ্ড আরও কঠোর করার চলমান উদ্যোগের অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অন্যায্যভাবে বহু দেশের মানুষের ভ্রমণের সুযোগ সীমিত করছে বলে মনে করছেন সমালোচকেরা।

থ্যাংকসগিভিং ছুটির শেষ দিকে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সেনাকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন এক আফগান নাগরিককে গ্রেপ্তারের পর প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা আরও সম্প্রসারণের ইঙ্গিত দিয়েছিল।

ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, যেসব ব্যক্তির আগে থেকেই বৈধ ভিসা আছে, যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ স্থায়ী বাসিন্দা কিংবা যাঁদের ভিসার ধরন কূটনীতিক বা ক্রীড়াবিদদের মতো বিশেষ শ্রেণিভুক্ত, তাঁরা এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবেন। এ ছাড়া যাঁদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ দেশটির স্বার্থে প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হবে, তাঁরাও ছাড় পাবেন। এসব পরিবর্তন আগামী ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

গত জুনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ১২টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হবে। পাশাপাশি আরও সাতটি দেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। এই সিদ্ধান্ত তাঁর প্রথম মেয়াদের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতিকে পুনরুজ্জীবিত করে।

সে সময় নিষেধাজ্ঞা তালিকায় ছিল আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন। একই সঙ্গে বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান ও ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের ওপর বাড়তি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার রিপাবলিকান প্রশাসন জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষিদ্ধ দেশের তালিকা আরও বাড়ানো হচ্ছে। নতুন করে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে বুরকিনা ফাসো, মালি, নাইজার, দক্ষিণ সুদান ও সিরিয়া।

এ ছাড়া ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা ভ্রমণ নথি বহনকারীদের ওপর সম্পূর্ণ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এটি ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ ভ্রমণ সীমাবদ্ধতা। উল্লেখ্য, দক্ষিণ সুদানের নাগরিকেরা আগেই উল্লেখযোগ্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মুখে ছিলেন।

এ ছাড়া আংশিক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আরও ১৫টি দেশ যুক্ত করা হচ্ছে। দেশগুলো হলো অ্যাঙ্গোলা, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, বেনিন, আইভরি কোস্ট, ডোমিনিকা, গ্যাবন, গাম্বিয়া, মালাউই, মৌরিতানিয়া, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, তানজানিয়া, টোঙ্গা, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে।

ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাওয়া দর্শনার্থী ও সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে আগ্রহী, উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।

ঘোষণায় ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, যেসব দেশ থেকে ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে, সেসব দেশে ‘ব্যাপক দুর্নীতি, জাল বা অনির্ভরযোগ্য নাগরিক নথি এবং অপরাধসংক্রান্ত রেকর্ড’ রয়েছে। এসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের জন্য নাগরিকদের যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়ে।

এ ছাড়া কিছু দেশে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থান করার হার বেশি বলে উল্লেখ করা হয়। আবার যুক্তরাষ্ট্র যাদের ফেরত পাঠাতে চায়, তাদের নিজ দেশে নিতে অস্বীকৃতি জানানোর ঘটনাও আছে। কোনো কোনো দেশে সামগ্রিক স্থিতিশীলতা ও সরকারি নিয়ন্ত্রণের ঘাটতিও রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এসব কারণেই যাচাই প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়ে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। পাশাপাশি অভিবাসন আইন প্রয়োগ, পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার উদ্বেগের কথাও এই সিদ্ধান্তের পেছনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে এই ঘোষণার পর আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের দুই দশকব্যাপী যুদ্ধে সহায়তা করা আফগান নাগরিকদের পক্ষে কাজ করা সংগঠনগুলোও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের দাবি, হালনাগাদ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় বিশেষ অভিবাসী ভিসা (এসআইভি) পাওয়ার যোগ্য আফগানদের জন্য থাকা আগের ছাড় আর নেই। এই বিশেষ ভিসা মূলত সেই আফগানদের জন্য, যারা নিজেদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধপ্রচেষ্টায় ঘনিষ্ঠভাবে সহায়তা করেছিলেন।

বিশেষ অভিবাসী ভিসা কর্মসূচির পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা সংস্থা ‘নো ওয়ান লেফট বিহাইন্ড’ এই পরিবর্তন নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে। সংস্থাটি জানায়, তারা জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে প্রেসিডেন্টের অঙ্গীকারকে সম্মান করে। তবে ব্যাপক যাচাই-বাছাইয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করা আফগানদের দেশটিতে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাকেই আরও শক্তিশালী করে।

সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, যাচাই প্রক্রিয়ার অসংগতি পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে এই নীতিগত পরিবর্তন আনা হলেও এর ফলে অনিচ্ছাকৃতভাবে এমন একটি গোষ্ঠী সীমাবদ্ধতার মুখে পড়ছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠোরভাবে যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে। এরা সেই যুদ্ধকালীন মিত্র, যাদেরই লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়—যে হুমকি মোকাবিলার কথা এই ঘোষণায় বলা হয়েছে।

নিষিদ্ধ বা সীমিত ভ্রমণ তালিকায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত হওয়া দেশগুলো মঙ্গলবার গভীর রাতে জানায়, তারা ঘোষণাটি পর্যালোচনা করছে। ক্যারিবীয় সাগরের দ্বীপরাষ্ট্র ডোমিনিকার সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, বিষয়টিকে তারা ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও জরুরি বিবেচনায়’ দেখছে। একই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞার অর্থ কী এবং সম্ভাব্য সমস্যাগুলো কীভাবে সমাধান করা যায়, তা স্পষ্ট করতে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডার রাষ্ট্রদূত রোনাল্ড সন্ডার্স বলেন, বিষয়টি ‘খুবই গুরুতর’। নতুন বিধিনিষেধ নিয়ে আরও তথ্য জানতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান।

এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন আগে আংশিক নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা কিছু দেশের ওপর বিধিনিষেধ আরও কঠোর করেছে। এর মধ্যে রয়েছে লাওস ও সিয়েরা লিওন। তবে এক ক্ষেত্রে তুর্কমেনিস্তানের পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে সেখানকার নাগরিকদের ওপর কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করার কথা জানানো হয়েছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত জুনে ঘোষিত আগের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার অন্যান্য সব বিধান আগের মতোই বহাল থাকবে।

ফিলিস্তিনিদের ওপর নতুন এই নিষেধাজ্ঞা এমন এক সময় এলো, যখন কয়েক মাস আগেই ট্রাম্প প্রশাসন এমন বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল, যার ফলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পাসপোর্টধারীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা, কাজ, বিনোদন বা শিক্ষার উদ্দেশ্যে ভ্রমণের নথি পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। মঙ্গলবারের ঘোষণায় সেই সীমাবদ্ধতা আরও বাড়ানো হলো। এতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পাসপোর্টধারীদের যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে অভিবাসনের পথও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবারের সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে প্রশাসন জানায়, পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় যুক্তরাষ্ট্রের তালিকাভুক্ত কয়েকটি ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম চালায়। এসব গোষ্ঠীর হাতে মার্কিন নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে দাবি করা হয়।

এ ছাড়া ওই সব এলাকায় সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে যাচাই ও স্ক্রিনিং সক্ষমতা ‘ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে’ বলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রাম্পের ১০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ মামলা প্রতিহতের ঘোষণা দিল বিবিসি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: বিবিসি
ছবি: বিবিসি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়ের করা মানহানি ও ক্ষতিপূরণ মামলার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ট্রাম্প বিবিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারিতে সংঘটিত ক্যাপিটল দাঙ্গার আগে দেওয়া তাঁর ভাষণ ‘ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত’ করে প্যানোরামা ডকুমেন্টারিতে সম্প্রচার করা হয়েছে।

ফ্লোরিডার একটি আদালতে দায়ের করা ওই মামলায় ট্রাম্প বিবিসির বিরুদ্ধে মানহানি ও বাণিজ্যিক আচরণবিষয়ক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন। ক্ষতিপূরণ দাবির অঙ্ক নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদনে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই অঙ্ক ৫ বিলিয়ন ডলার বলা হলেও, ট্রাম্পের আইনজীবীদের সাম্প্রতিক নথি ও ব্রিফিং অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের দাবি ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার রাতে (১৬ ডিসেম্বর) বিবিসি জানিয়েছে, কথিত প্যানোরামা ডকুমেন্টারিতে ট্রাম্পের ভাষণের দুটি ভিন্ন অংশ সম্পাদনার মাধ্যমে একত্রে দেখানো হয়। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা ক্যাপিটলের দিকে হাঁটব... এবং আমি তোমাদের সঙ্গে থাকব। আমরা লড়াই করব, দারুণভাবে লড়াই করব।’ তবে বাস্তবে এই দুটি বক্তব্য ভাষণের মধ্যে প্রায় ৫০ মিনিটের ব্যবধানে দেওয়া হয়েছিল।

বিবিসি স্বীকার করেছে, এই সম্পাদনার ফলে ভুল ধারণা তৈরি হতে পারে যে, ট্রাম্প সরাসরি সহিংসতার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এ জন্য তারা গত মাসে দুঃখ প্রকাশ করলেও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি প্রত্যাখ্যান করে জানায়, মানহানির অভিযোগের কোনো আইনি ভিত্তি নেই।

বিবিসির এক মুখপাত্র বলেন, ‘আগেও যেমন বলা হয়েছে, আমরা এই মামলার বিরুদ্ধে আত্মপক্ষ সমর্থন করব।’ চলমান আইনি প্রক্রিয়ার কারণে তারা বিস্তারিত মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

মামলায় আরও দাবি করা হয়েছে, ডকুমেন্টারিটি যুক্তরাজ্যের বাইরে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্প্রচার না হলেও ভিপিএন বা ব্রিটবক্সের মতো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের, বিশেষ করে ফ্লোরিডার দর্শকেরা এটি দেখতে পারেন। বিবিসি এসব অভিযোগের বিষয়ে এখনো নির্দিষ্ট করে প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

এই বিষয়ে ব্রিটিশ সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, এটি বিবিসির নিজস্ব আইনি বিষয়। একই সঙ্গে তারা একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ গণমাধ্যম হিসেবে বিবিসির ভূমিকার ওপর আস্থার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে মানহানির মামলা জেতা কঠিন হলেও এই মামলা বিবিসির সম্পাদকীয় স্বাধীনতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৫৪
টান দিয়ে নারীর মুখের নিকাব সরিয়ে তোপের মুখে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার

সরকারি এক অনুষ্ঠানে সার্টিফিকেট নিতে আসা এক মুসলিম নারীর মুখ দেখতে তাঁর নিকাব টান দিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন ভারতের বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। গতকাল সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) পাটনায় তাঁর এ কাণ্ডে ভারতজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনাটির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, ৭৪ বছর বয়সী জেডিইউর প্রধান নীতীশ কুমার এক সরকারি অনুষ্ঠানে এক আয়ুষ (আয়ুর্বেদ, যোগ ও ন্যাচারোপ্যাথি, ইউনানি, সিদ্ধা ও হোমিওপ্যাথি) চিকিৎসকের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিচ্ছিলেন।

সে সময় তিনি ওই নারী চিকিৎসককে ইশারায় নিকাব সরাতে বলেন। নারী চিকিৎসক নিকাব না সরালে নীতীশ নিজেই হাত বাড়িয়ে তাঁর নিকাব নিচের দিকে নামিয়ে দেন, যাতে তাঁর মুখ ও থুতনি দৃশ্যমান হয়।

ভিডিওতে পেছনে উপস্থিত কয়েকজনকে হাসতে দেখা যায়। একই সঙ্গে বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরীকেও নীতীশকে থামানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়।

সরকারি অনুষ্ঠানে নারী চিকিৎসকের মুখ থেকে নিকাব টেনে খোলার ঘটনায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করছে বিরোধী দলগুলো।

এ ঘটনাকে ‘জঘন্য’ হিসেবে অভিহিত করে কংগ্রেস তাঁর পদত্যাগের দাবি করেছে।

হিন্দুত্ববাদী বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া নীতীশের কড়া সমালোচনা করে বিরোধী দল আরজেডি এক বিবৃতিতে বলেছে, পর্দা করা মুসলিম নারীর নিকাব খুলে ফেলে জেডিও এবং বিজেপি নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে কী রাজনীতি করছে, সেটি প্রকাশ করে দিয়েছে।

আরজেডি তাদের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে হিন্দিতে লিখেছে, ‘নীতীশজির কী হয়েছে? তাঁর মানসিক অবস্থা এখন করুণ পর্যায়ে পৌঁছেছে।’

কংগ্রেসও মুখ্যমন্ত্রীর এই আচরণকে ‘লজ্জাজনক’ ও ‘ঘৃণ্য’ বলে নিন্দা করেছে। দলের এক্স হ্যান্ডেলে লেখা হয়, ‘একজন নারী চিকিৎসক নিয়োগপত্র নিতে এসেছিলেন আর নীতীশ কুমার তাঁর নিকাব টেনে নামালেন। বিহারের সর্বোচ্চ পদে থাকা একজন ব্যক্তি প্রকাশ্যে এমন ঘৃণ্য আচরণ করছেন। ভাবুন তো, রাজ্যে নারীরা কতটা নিরাপদ? এই জঘন্য আচরণের জন্য নীতীশ কুমারের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।’

এর আগেও বিতর্কে জড়িয়েছিলেন নীতীশ কুমার। গত নভেম্বরের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে এক জনসভায় এক নারীকে মালা পরানোর ভিডিও ভাইরাল হলে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। সে সময় এক জেডিইউ সংসদ সদস্য থামানোর চেষ্টা করলে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ধমক দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বন্ডাই বিচে হামলাকারীকে থামাতে গিয়ে প্রাণ হারান এক বৃদ্ধ দম্পতিও!

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হামলাকারীর সঙ্গে বরিস ও সোফিয়ার লড়াইয়ের এই মুহূর্তটি একটি ড্যাশক্যাম ফুটেজ থেকে নেওয়া
হামলাকারীর সঙ্গে বরিস ও সোফিয়ার লড়াইয়ের এই মুহূর্তটি একটি ড্যাশক্যাম ফুটেজ থেকে নেওয়া

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই বিচে সন্ত্রাসী হামলার সময় এক হামলাকারীর কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে ‘নায়ক’ বনে গেছেন ৪৩ বছর বয়সী আহমেদ আল-আহমেদ। এবার জানা গেল, এক বৃদ্ধ দম্পতিও হামলাকারীদের থামাতে এগিয়ে গিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁদের নির্মম পরিণতি বরণ করতে হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, হামলাকারীর সঙ্গে লড়াই করে নিহত হয়েছেন এমন এক দম্পতির পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে। একটি ড্যাশক্যাম ফুটেজে দেখা গেছে, বন্দুকধারীর সঙ্গে সরাসরি লড়াইয়ে জড়িয়েছেন ৬৯ বছরের বরিস গুরম্যান এবং তাঁর স্ত্রী ৬১ বছরের সোফিয়া গুরম্যান। হামলার শুরুর দিকেই তাঁরা সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে গিয়ে প্রাণ হারান।

গত ১৪ ডিসেম্বর বন্ডাই বিচের ওই হামলায় এক হামলাকারী সহ ১৬ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বরিস ও সোফিয়া গুরম্যানও রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে তাঁদের পরিবার। সিডনি মর্নিং হেরাল্ডকে পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের প্রিয় বরিস ও সোফিয়াকে হঠাৎ এবং অর্থহীনভাবে হারিয়ে আমরা গভীর শোকাহত।’

বরিস গুরম্যান ও তাঁর স্ত্রী সোফিয়া গুরম্যান। ছবি: সংগৃহীত
বরিস গুরম্যান ও তাঁর স্ত্রী সোফিয়া গুরম্যান। ছবি: সংগৃহীত

জানা গেছে, বরিস ও সোফিয়া গুরম্যান ৩৪ বছর ধরে দাম্পত্য জীবনে ছিলেন এবং জানুয়ারিতেই তাঁরা ৩৫ তম বিবাহবার্ষিকী উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। একই সঙ্গে চলতি ডিসেম্বরেই সোফিয়ার ৬২ তম জন্মদিন পালনের কথা ছিল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ড্যাশক্যাম ফুটেজে দেখা গেছে, ক্যাম্পবেল প্যারেডে নিজের গাড়ি থেকে নেমে বন্দুকধারী সাজিদ আকরামের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন বরিস। বেগুনি রঙের শার্ট পরা বরিস বন্দুকধারীকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তাঁর সহযোগিতায় ধস্তাধস্তিতে এসে যোগ দেন স্ত্রী সোফিয়াও। ঘটনাটি অনিচ্ছাকৃতভাবে স্থানীয় এক বাসিন্দার গাড়ির ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘সাধারণ মানুষের এমন বীরত্ব কখনো ভুলে যাওয়া উচিত নয়।’

পরবর্তী সময়ে ড্রোনে ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ফুটপাথে পাশাপাশি নিথর হয়ে পড়ে আছেন বরিস ও সোফিয়া। পরিবার জানিয়েছে, বরিস ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত মেকানিক। তিনি উদার, নীরব শক্তির প্রতীক এবং প্রয়োজনে সবার পাশে দাঁড়ানোর মতো মানুষ। সোফিয়া কাজ করতেন অস্ট্রেলিয়া পোস্টে—সহকর্মী ও স্থানীয় কমিউনিটিতে তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রিয়।

পরিবার তাঁদের সাহসিকতার কথাও তুলে ধরে বলেছে, ‘আমরা ফুটেজে দেখেছি, সোফিয়াকে সঙ্গে নিয়ে বরিস অন্যদের রক্ষা করতে হামলাকারীকে নিরস্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। এই আত্মত্যাগই তাঁদের প্রকৃত পরিচয়।’

এদিকে হামলাকারীর কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে ‘নায়ক’ বনে যাওয়া আহমেদ আল-আহমেদের সাহসের প্রশংসা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বর্তমানে আহমেদ গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ঘটনার সময় হামলাকারী সাজিদ আকরামকে শেষ পর্যন্ত গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। অপর হামলাকারী তাঁরই ছেলে নাভিদ আকরাম। গুরুতর আহত অবস্থায় নাভিদ এখন পুলিশ পাহারায় হাসপাতালে রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত