Ajker Patrika

কৃত্রিম রক্ত উৎপাদনের কতটা কাছে বিজ্ঞানীরা

অনলাইন ডেস্ক
ছবি: আল-জাজিরা
ছবি: আল-জাজিরা

বিশ্বজুড়ে রক্তের ঘাটতি এবং নিরাপদ রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজনীয়তার কারণে বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম রক্ত উৎপাদনের পথে এগিয়ে চলেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ পর্যাপ্ত রক্তের অভাবে মারা যান। রক্ত শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং বর্জ্য অপসারণসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।

রোববার আল-জাজিরার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃত্রিম রক্ত দুই ধরনের হতে পারে—ল্যাবে উৎপাদিত রক্ত এবং সিনথেটিক রক্ত। সিনথেটিক রক্ত সম্পূর্ণরূপে কৃত্রিমভাবে তৈরি হয় এবং এতে কোনো মানব কোষ থাকে না। রোগীর শরীরে দ্রুত অক্সিজেন সরবরাহের জন্য এটি মূলত জরুরি চিকিৎসা বা সামরিক চিকিৎসার জন্য তৈরি করা হচ্ছে। মার্কিন সামরিক বাহিনী ‘এরিথ্রোমার’ নামে একটি সিনথেটিক রক্তের বিকাশে ৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছে। এই রক্ত সর্বজনীনভাবে ব্যবহার উপযোগী এবং ফ্রিজ ছাড়াই সংরক্ষণ করা যাবে।

অন্যদিকে, ল্যাব-উৎপাদিত রক্ত মানব লোহিত রক্তকণিকা থেকে তৈরি হয়। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেডরিক ঘেভার্টের মতে, এই প্রযুক্তি বিরল রক্তের গ্রুপের রোগীদের জন্য কার্যকর হতে পারে।

ল্যাবে রক্ত উৎপাদনের ক্ষেত্রে হেমাটোপোয়েটিক স্টেম সেল ব্যবহার করা হয়, যা হাড়ের মজ্জা ও রক্তে পাওয়া যায়। ল্যাবের মধ্যে এসব স্টেম সেলে বিশেষ বৃদ্ধিকারী উপাদান ব্যবহার করে লোহিত রক্তকণিকায় রূপান্তরিত করা হয়। গবেষকেরা এ ক্ষেত্রে জিন এডিটিংয়ের মাধ্যমে গ্রুপ-নির্দেশক সরিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য সর্বজনীনভাবে ব্যবহার উপযোগী একটি নির্দিষ্ট রক্ত তৈরি করতে কাজ করছেন।

২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে ল্যাবে উৎপাদিত রক্ত মানবদেহে সঞ্চালন করা হয়েছিল। এই রক্ত বর্তমানে কার্যকারিতার মূল্যায়নের পর্যায়ে থাকলেও রয়েছে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।

কৃত্রিম রক্ত উৎপাদনে ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো উৎপাদন খরচ। ২০১৩ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থা এক ইউনিট ল্যাব-উৎপাদিত রক্ত তৈরির জন্য ৯০ হাজার ডলার খরচ করেছিল। তবে এই খরচ কমে বর্তমানে ৫ হাজার ডলারে নেমে এসেছে। সেই তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোতে প্রতি ইউনিট দান করা রক্তের জন্য গড়ে মাত্র ২১৫ ডলার খরচ করা হয়।

এদিকে ২০২২ সালে জাপানে একটি গবেষণায় হিমোগ্লোবিন ভেসিকল নামক কৃত্রিম রক্ত উপাদান করে পরীক্ষামূলকভাবে ১২ জন সুস্থ স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে প্রবাহিত করা হয়েছিল। কিছু ক্ষেত্রে মৃদু জ্বর ও ফুসকুড়ি দেখা গেলেও তাঁদের শরীরে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

কৃত্রিম রক্ত বিরল রক্তের গ্রুপের রক্তের জন্য আশার আলো হতে পারে। যেমন, ভারতের ‘বম্বে ব্লাড গ্রুপ’ অত্যন্ত বিরল, যা বিশ্বে প্রতি ১০ হাজার জনের মধ্যে মাত্র একজনের মধ্যে পাওয়া যায়। সিনথেটিক রক্ত যেহেতু রক্ত গ্রুপ মার্কার মুক্ত, এটি সর্বজনীনভাবে ব্যবহারযোগ্য হতে পারে।

গবেষকেরা মনে করেন, বিশ্বব্যাপী রক্তের ঘাটতির সমস্যা সমাধানে কৃত্রিম রক্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে বিশ্বে প্রতি বছর গড়ে ১১ কোটি ৮৫ লাখ ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করা হলেও, এগুলোর অধিকাংশই উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে সীমাবদ্ধ।

ভবিষ্যতে মহামারি, যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো সংকটকালে ল্যাব-উৎপাদিত রক্ত মানুষের জীবন বাঁচাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত