Ajker Patrika

এআই ব্যবহার করে চিকিৎসায় বিপ্লব ঘটাচ্ছে ভারত

আপডেট : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮: ২০
অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে মূল্যবান টুল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এআই। ছবি: মাইন্ড ইনভেনটরি
অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে মূল্যবান টুল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এআই। ছবি: মাইন্ড ইনভেনটরি

ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করে নিজেদের রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করেন অনেকেই। এই ধরনের সাইবারকন্ড্রিয়াক ব্যক্তিরা তাঁদের শারীরিক বা মানসিক অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোনো উপসর্গ বা অসুস্থতার তথ্য জানার জন্য ইন্টারনেটে তথ্য খুঁজে থাকেন, যা তাঁদের উদ্বেগ বা অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে তোলে। তবে এখন সাইবারকন্ড্রিয়াক এবং আত্ম-চিকিৎসা (যাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ বা চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করেন) নেওয়া ব্যক্তিদের এই উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রযুক্তি। কারণ, ভারতের বেঙ্গালুরুর একটি শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই চ্যাটবট চালু করতে যাচ্ছে, যা ব্যক্তিগত যত্নের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হবে।

ভারতের শীর্ষস্থানীয় হাসপাতাল চেইন গ্রুপ বলেছে, রোগীর চিকিৎসা-সংক্রান্ত তথ্যের জন্য ইন্টারনেট অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা দূর করবে ইন্টারঅ্যাকটিভ চ্যাটবটটি। নির্দিষ্ট রোগীর তথ্যের সঙ্গে কাজ করতে, দ্রুত রোগ নির্ণয়ে করতে, সঠিক উপসর্গ চিহ্নিত করতে এবং স্বাস্থ্যসেবা সংস্থার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করার জন্য চ্যাটবটটি ডিজাইন করা হয়েছে।

গ্রুপটি আরও বলছে, ‘এটি অনলাইনে তথ্য খোঁজা এবং আত্ম-চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা বাদ দিয়ে দ্রুত চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান করবে এবং সময়মতো পরামর্শের মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করবে।’

অপর দিকে আরেকটি হাসপাতাল চেইন এমন একটি অ্যাপ চালু করার পরিকল্পনা করছে, যা এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে জীবনধারা সম্পর্কিত রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করবে। যেমন—ডায়াবেটিস, স্থূলতা, শারীরিক অকার্যকারিতা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি। রোগীদের স্বাস্থ্য ট্র্যাক করতে আইওটি (ইন্টারনেট অব থিংক) ডিভাইস ব্যবহার করা হবে। যেমন—স্মার্টওয়াচ বা রক্তে শর্করা পর্যবেক্ষণমূলক ডিভাইস।

হাসপাতাল চেইনটি বলেছে, ‘অ্যাপটি নিয়মিতভাবে রোগীর খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, পানি এবং ওষুধ সেবনের মতো স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত ডেটা আপডেট করবে। এআইয়ের সাহায্যে এই ডেটাগুলো পর্যবেক্ষণ করা হবে, যাতে রোগী তার স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত তথ্য আরও ভালোভাবে আরও জানতে পারে। আর রোগীদের নির্ধারিত দৈনিক রুটিন তারা অনুসরণ করছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করবেন চিকিৎসকেরা।

‘যদিও আইওটি সক্ষম স্বাস্থ্যসেবা ডিভাইসগুলো কিছুদিন ধরেই রয়েছে, তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির উত্থান হাসপাতালগুলোকে এই প্রযুক্তির ব্যাপকভাবে গ্রহণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তবে, সেন্ট জনস ন্যাশনাল একাডেমি অব হেলথ সায়েন্সেসের ফ্যামিলি মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক ডা. জন বলেন, রোগীদের মধ্যে এআইভিত্তিক চিকিৎসার ধারণা ব্যক্তিগত অনুভূতির ওপর নির্ভরশীল। অনেক রোগী বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম এবং প্রযুক্তি-পছন্দকারীরা এআইয়ের সুবিধাগুলো সাদরে গ্রহণ করবেন। তবে, চিকিৎসায় এআইয়ের অন্তর্ভুক্তিকে সন্দেহের দৃষ্টি দেখবেন কিছু রোগী এবং তারা প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি পছন্দ করবেন। প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ততার অভাবে কিছু মানুষ এআইয়ের ওপর নির্ভর করতে পারবে না।

অপেক্ষার সময় কমানো

বড় হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা বেশি হলে, বহির্বিভাগে বা হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেতে বা ওষুধের দোকানের কাউন্টারে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের মাধ্যমে প্রক্রিয়াগুলো অনেক সহজ এবং দ্রুত করা সম্ভব। এই লক্ষ্যেই কাজ করছে ভারতের সেন্ট জনস হাসপাতাল, যেখানে তারা হাসপাতালের রোগীর ডেটা সংগ্রহ, বিলিং, কাজের ধারা এবং এমনকি নিয়োগ ব্যবস্থাও এআই মাধ্যমে পরিচালনা করছে।

বর্তমানে মানুষ এমন এক সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, যেখানে তারা প্রায় সবকিছুই হাতের কাছে পেয়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের নয়ডায় একটি ১০ মিনিটে অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু হয়েছে। ভবিষ্যতে, যাদের জরুরি চিকিৎসাসেবার প্রয়োজন নেই, তাদের সরাসরি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে সময় নষ্ট করতে হবে না, বরং সহজ পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিতে পারবেন।

কাবেরী গ্রুপ অব হসপিটালসের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী চেয়ারম্যান ডা. এস চন্দ্রকুমার, এমডি বলেন, ‘আমরা এমন রোগীদের জন্য প্রস্তুত হতে চাই। আমরা এআই ব্যবহার করে রোগ নির্ণয় করতে চাই। রোগী ডেটার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় এআই প্রযুক্তি তৈরি করতে চাই।’ উল্লেখ্য, ভারতের প্রথম এআই-চালিত লাইফস্টাইল বা জীবনধারা সম্পর্কিত রোগ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছে হাসপাতালটি।

অস্ত্রোপচারে এআই

অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে মূল্যবান টুল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এআই। বর্তমানের বিশ্ব রোবোটিক সার্জারির পর্যায়ে পৌঁছেছে। সার্জিকাল প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন বিষয় অত্যন্ত সঠিকভাবে পরিমাপ করতে সাহায্য করে এআই। উদাহরণস্বরূপ, জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্টের আগে, এআইয়ের ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তি চিকিৎসকদের সঠিকভাবে কৃত্রিম অঙ্গের আকার এবং তার অবস্থান নির্ধারণে সাহায্য করে। এমনকি কতটুকু হাড় কাটা হবে তা সঠিকভাবে পরিমাপ করে এই প্রযুক্তি, যাতে জয়েন্টগুলোর ভারসাম্য থাকে। প্রচলিত রিপ্লেসমেন্ট সার্জারিতে এই পরিমাপগুলো সাধারণত নির্দিষ্ট থাকে। ডিজিটাল প্রতিকৃতি ও সার্জারির পরিস্থিতির ভার্চুয়াল মডেল তৈরি অস্ত্রোপচারের পূর্বপ্রস্তুতিতে সাহায্য করতে পারে এআই।

এ ছাড়া ইমপ্লান্ট নির্বাচন, অস্ত্রোপচার ফলাফল পূর্বানুমান এবং অস্ত্রোপচারের পর রোগীর সুস্থতার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতেও এআই সাহায্য করে। মনিপাল হাসপাতাল এআই ব্যবহার করে রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে। আর কাওয়েরি হাসপাতাল ‘দ্য ভিঞ্চি’ এবং ‘মাকো ২.০’ এআই মডেল ব্যবহার করে অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে রোবোটিক সিস্টেমের সঠিকতা বাড়াচ্ছে। সেন্ট জনস হাসপাতালেও এআই দিয়ে পরিচালিত রোবোটিক অস্ত্রোপচার করছে।

এআই ডায়াগনোসিস

মানুষের চোখে না দেখা সূক্ষ্ম অসংগতিগুলো চিহ্নিত করতে সক্ষম এআই অ্যালগরিদমগুলো, যা ডায়াগনোসিসে অত্যন্ত কার্যকরী প্রমাণিত হচ্ছে। কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো সিটি স্ক্যান, এমআরআই ইত্যাদি রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষার সঠিক ব্যাখ্যা এবং ডায়াগনোসিস দিতে এআই ব্যবহার শুরু করেছে।

ডা. জন বলেন, ‘গত তিন বছরে বেঙ্গালুরুর অনেক হাসপাতাল এআইয়ের সাহায্যে রোগীর সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা চালু করেছে, যেখানে রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য, উপসর্গ, রোগের ইতিহাস এআই-চ্যাটবটের মাধ্যমে নেওয়া হয়। এ ছাড়া বেশ কিছু স্টার্টআপ এআই-ভিত্তিক সেবা প্রদান করছে, যেমন—প্রাথমিক অবস্থায় রোগ শনাক্তকরণ, রক্তের ছবি বিশ্লেষণ, ক্যানসার স্ক্রিনিং, জেনেটিক স্ক্রিনিং, টেলিরেডিওলজি এবং রোগীদের জন্য ব্যক্তিগতকৃত স্বাস্থ্যসেবা।

মনিপাল হাসপাতালের ডা. দীপক দুবে বলেন, ‘কিছু স্টার্টআপ এআই-ইন্টিগ্রেটেড সফটওয়্যার তৈরি করেছে যা কার্ডিওলজিস্টদের এবং চিকিৎসকদের ইসিজি ট্রেসিং আরও সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে।

প্রয়োজনীয় ডেটার অভাব

সঠিক রোগ নির্ণয় এবং জরুরি সতর্কতার জন্য বড় পরিমাণ ডেটার প্রয়োজন এআই সিস্টেমগুলোর। এ বিষয়ে ডা. সুনীল বলেন, ‘বর্তমানে, স্বাস্থ্য রেকর্ডের জন্য কোনো কেন্দ্রীভূত ডেটাবেইস নেই। ভারতে স্বাস্থ্য তথ্য খণ্ডিত, ছড়ানো ও প্রায়ই অসম্পূর্ণ এবং স্বাস্থ্যসেবা ক্ষেত্রে একটি কার্যকরী এআই সিস্টেম তৈরি করতে দীর্ঘমেয়াদি ডেটা প্রয়োজন। এ সমস্যাগুলো তৈরি হয় কারণ অনেক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী অনুমোদিত নয় বা তারা অ-প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসক।

ডা. চন্দ্রকুমার বলেন, এই ক্ষেত্রে আরেকটি বড় সমস্যা হল ডিজিটালাইজেশনের অভাব। এখনো অনেক হাসপাতাল এবং চিকিৎসক তাঁদের কাজের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করে না। এর ফলে ডেটার অভাব দেখা যায়, যা এআই অ্যালগরিদমের প্রশিক্ষণে প্রভাব ফেলে। নির্দিষ্ট মান দ্বন্দ্ব মেনে চলার অভাবও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ভারতের স্বাস্থ্য তথ্যকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য তথ্যপ্রযুক্তির মান অনুসরণ করতে হবে। তবে আশার কথা হলো যে আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল হেলথ মিশন এর মাধ্যমে আমরা এই সমস্যাগুলো সমাধানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছি।

উল্লেখ্য, আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল হেলথ মিশন হলো—ভারত সরকারের একটি উদ্যোগ, যা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো—স্বাস্থ্যসেবার পরিষেবাগুলো ডিজিটালভাবে সংযুক্ত করা এবং সব নাগরিকের জন্য সহজ, দ্রুত এবং কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা

চিকিৎসকেরা এখনো গুরুত্বপূর্ণ

ঐতিহ্যগত চিকিৎসা নির্ণয়ের প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেছে এআই। তবে ডা. জন বলেন, ভবিষ্যতে এমন একটি পরিস্থিতি কল্পনা করা কঠিন যেখানে এআই ডাক্তার থেকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। এআইভিত্তিক টুলগুলো ডাক্তারদের জটিল রোগ নির্ণয়, অনুসন্ধান এবং চিকিৎসা পরিকল্পনা করতে সাহায্য করেছে। তবে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার চ্যালেঞ্জ এখনো চিকিৎসকদের ওপর রয়েছে, যেখানে তাকে একাধিক কৌশল সমন্বয় করতে হয়। বিশেষ করে একাধিক রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে।

মনিপাল হাসপাতালের ডা. দীপক বলেন, এআই কখনোই চিকিৎসকদের জায়গা নিতে পারে না, কারণ একজন ডাক্তার সরাসরি রোগীর সঙ্গে কথা বলে তাদের স্বস্তি এবং নিরাপত্তা দেয়। তবে, এআই ডাক্তারদের দ্রুত এবং আরও সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা দিতে সাহায্য করতে পারে।

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রেইনবো ডায়েট কী, সুস্বাস্থ্যের জন্য কেন দরকারি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রঙিন খাবারে সাজানো প্লেট দেখতে আমাদের মন এমনিতেই খাবারের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ছবি: পেক্সেলস
রঙিন খাবারে সাজানো প্লেট দেখতে আমাদের মন এমনিতেই খাবারের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ছবি: পেক্সেলস

জীবনে রঙের অস্তিত্ব না থাকলে কেমন হতো? নির্জীব, একঘেয়ে কেমন যেন নিরানন্দ কিংবা নেই কোনো উৎসাহ-উদ্দীপনা। রঙিন কিছু দেখলেই আমাদের মন যেন উৎফুল্ল হয়ে ওঠে, খাবারের বেলায়ও এটি একই রকম সত্য।

রঙিন খাবারে সাজানো প্লেট দেখতে আমাদের মন এমনিতেই খাবারের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। খাবার দেখার ও ঘ্রাণ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের মস্তিষ্ক হজমের প্রস্তুতির জন্য নানা সংকেত পাঠাতে শুরু করে।

তবে দেখতে সুন্দর তা ই নয়, রঙিন খাবারের প্লেট আসলে পুষ্টির ‘পাওয়ার হাউস’ বা এক শক্তিশালী ভাণ্ডার। ফলমূল ও শাকসবজিতে রঙের অস্তিত্ব জানান দেয় এসবে আছে উদ্ভিজ্জ রঞ্জক বা পিগমেন্ট— যার সংখ্যা ২ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারোটিনয়েড ও অ্যান্থোসায়ানিন। এসব রঞ্জক ‘ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট’ নামে পরিচিত।

আমাদের শরীর নিজে থেকে এসব ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট তৈরি করতে পারে না, অথচ নানা রোগ, প্রদাহ, সংক্রমণ এমনকি কিছু ধরনের ক্যানসার থেকে সুরক্ষা দিতে এগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

খাবারের প্রতিটি রং আমাদের শরীরের জন্য কি কি উপকার নিয়ে আসে চলুন জেনে নেওয়া যাক—

১. লাল রঙের খাবার: লাইকোপিনে ভরপুর

লাল রঙের ফল ও সবজিতে থাকে লাইকোপিন নামের এক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি প্রকৃতিতে পাওয়া সবচেয়ে কার্যকর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলোর একটি।

রঙিন খাবারের প্লেট পুষ্টির ‘পাওয়ার হাউস’ বা এক শক্তিশালী ভাণ্ডার। ছবি: পেক্সেলস
রঙিন খাবারের প্লেট পুষ্টির ‘পাওয়ার হাউস’ বা এক শক্তিশালী ভাণ্ডার। ছবি: পেক্সেলস

যে কারণে লাল রঙের খাবার বেশি খাওয়া উচিত

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সুপারস্টার: শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বা টক্সিন বের করতে সাহায্য করে, সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে।

চোখের সুরক্ষা: এক গবেষণায় দেখা গেছে, লাইকোপিন চোখের ম্যাকুলা অংশের ক্ষয় ধীর করতে সাহায্য করে।

ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক: প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে কাজ করে লাইকোপিন। এছাড়াও স্তন ক্যানসারের অগ্রগতিও ধীর করতে পারে।

মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য: অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে মস্তিষ্কের কোষকে সুরক্ষা দেয়।

হৃদ্স্বাস্থ্য: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং প্রদাহ কমায়, যা হৃদ্রোগের বড় ঝুঁকির কারণ।

লাল রঙের খাবারের সেরা উৎস: টমেটো (রান্না করা বা ব্লেন্ড করা টমেটো সবচেয়ে বেশি কার্যকর), তরমুজ, লাল পেয়ারা, জাম্বুরা এবং লাল গাজর।

লাল রঙের ফল ও সবজিতে থাকে লাইকোপিন নামের এক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ছবি: পেক্সেলস
লাল রঙের ফল ও সবজিতে থাকে লাইকোপিন নামের এক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ছবি: পেক্সেলস

২. কমলা ও হলুদ রঙের খাবার: ত্বক, চোখ ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার বুস্টার

এই উজ্জ্বল রংগুলোর উৎস বিটা-ক্রিপ্টোজ্যানথিন নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ যৌগ, যা কোষের পারস্পরিক যোগাযোগ ও রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সহায়তা করে।

উপকারিতা:

শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: বয়স দ্রুত বাড়ানো, প্রদাহ ও দীর্ঘমেয়াদি রোগের জন্য দায়ী ফ্রি র‍্যাডিক্যালকে নিষ্ক্রিয় করে।

প্রো-ভিটামিন এ: শরীরে সহজে ভিটামিন এ-তে রূপান্তরিত হয়, যা চোখের দৃষ্টি ও সুস্থ ত্বকের জন্য অপরিহার্য।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: ইমিউন কোষের গঠন ও কার্যকারিতা উন্নত করে। বিশেষ করে নিরামিষ খাদ্যাভ্যাসে, যেখানে ভিটামিন এ গ্রহণ তুলনামূলক কম হতে পারে, সেখানে এটি খুবই উপকারী।

সেরা উৎস: আম, পেঁপে, কমলা, কুমড়া, হলুদ ক্যাপসিকাম।

লাল-নীল-সবুজ রঙের পাশাপাশি ফ্যাকাশে বা বাদামি রঙের খাবারও খেতে হবে। ছবি: পেক্সেলস
লাল-নীল-সবুজ রঙের পাশাপাশি ফ্যাকাশে বা বাদামি রঙের খাবারও খেতে হবে। ছবি: পেক্সেলস

৩. সবুজ রঙের খাবার: ক্লোরোফিল ও ডিটক্সের জাদু

সবুজ খাবারের রং আসে ক্লোরোফিল থেকে। প্রকৃতিতে পাওয়া সবচেয়ে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের তালিকায় সবুজ শাকসবজি শীর্ষে।

কেন সবুজ খাবার জরুরি?

বিটা-ক্যারোটিন: ধমনিতে চর্বি জমা (অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস), ক্যানসার, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস ও ডিএনএ ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়ক।

উচ্চ আঁশ (ফাইবার) : অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, ক্ষতিকর এলডিএল কোলেস্টেরল কমায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

ভিটামিন কে ও পটাশিয়াম: রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

সালফোরাফেন ও আইসোথায়োসায়ানেটস: শরীরের ডিটক্স প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে, কোলনের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে।

সেরা উৎস: পালং শাক, ব্রকলি, কেল, সজনে পাতা, মেথি শাক, সবুজ হার্বস, অ্যাসপ্যারাগাস, কিউই, বাঁধাকপি, অঙ্কুরিত বীজ (স্প্রাউটস) ও গ্রিন টি।

৪. নীল ও বেগুনি রঙের খাবার: অ্যান্থোসায়ানিনের শক্তি

অ্যান্থোসায়ানিন আছে এমন খাবারে এই রংগুলো থাকে। যা থেকে বুঝা যায় এ খাবারগুলো শক্তিশালী ফ্ল্যাভোনয়েড এবং প্রদাহনাশক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণে ভরপুর।

উপকারিতা:

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: স্ট্রোক ও কিডনি রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

হৃদ্স্বাস্থ্য: কোলেস্টেরল ও প্রদাহ কমায়, ধমনিতে প্লাক জমা রোধে সহায়ক।

মস্তিষ্কের সুরক্ষা: স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তিক কার্যকারিতা উন্নত করে, ডিএনএ ক্ষতি প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা: ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি ধীর বা বন্ধ করতে সহায়তা করতে পারে।

সেরা উৎস: ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি, বেগুনি বাঁধাকপি, বেগুন, আঙুর, বরই, ডুমুর।

রঙিন ফলমূল ও শাকসবজিতে আছে ২ হাজারেরও বেশি উদ্ভিজ্জ রঞ্জক বা পিগমেন্ট। ছবি: পেক্সেলস
রঙিন ফলমূল ও শাকসবজিতে আছে ২ হাজারেরও বেশি উদ্ভিজ্জ রঞ্জক বা পিগমেন্ট। ছবি: পেক্সেলস

৫. সাদা ও বাদামি খাবার: নীরব চিকিৎসক

লাল-নীল-সবুজ এমন রঙিন খাবারের ভিড়ে কিন্তু ফ্যাকাশে বা বাদামি রঙের খাবারকে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না। কেন না এসব খাবারে রয়েছে অ্যালিসিন, কোয়ারসেটিন, ক্যাম্পফেরল মতো যৌগ। এগুলোর প্রতিটিই স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখে।

উপকারিতা:

অ্যালিসিন: এই উপাদানটি রসুনে থাকে। এটি ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে কার্যকর, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।

কোয়ারসেটিন: শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহনাশক, অ্যালার্জি এবং হৃদ্স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।

ক্যাম্পফেরল: হৃদ্রোগ ও কিছু ধরনের ক্যানসার থেকে সুরক্ষা দেয়।

সেরা উৎস: রসুন, পেঁয়াজ, ফুলকপি, মাশরুম ও মুলা।

আপনার প্রতিদিনের ‘রেইনবো ডায়েট’ সাজাতে পারেন যেভাবে—

১. আপনার প্লেটের অর্ধেক পূর্ণ করুন সবজি দিয়ে।

২. প্রতিদিন দুটি ফল খান।

৩. সর্বোচ্চ তাজা ও পুষ্টির জন্য মৌসুমি এবং স্থানীয় ফল ও সবজি বেছে নিন।

৪. প্রতিদিন একটি নতুন রঙের খাবার যোগ করুন।

৫. খাবার পরিকল্পনার সময় ক্যালরির পরিবর্তে রঙের দিকে মন দিন।

বিজ্ঞান বারবার প্রমাণ করেছে, যখন ফাইটোনিউট্রিয়েন্টের কথা আসে, তখন সাপ্লিমেন্ট বা কৃত্রিম ওষুধের চেয়ে প্রাকৃতিক খাবার অনেক বেশি কার্যকর। প্রাকৃতিক খাবারে বিদ্যমান ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের যে সম্মিলিত শক্তি থাকে, কোনো ওষুধ বা পিল তা দিয়ে পূরণ হয় না। তাই প্রতিদিনের পুষ্টির লক্ষ্য নির্ধারণে রঙকেই বেছে নিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ওজন কমাতে অনুপ্রেরণা ধরে রাখবেন যেভাবে

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ওজন কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া যেমন কঠিন, সেই সিদ্ধান্তে দীর্ঘদিন অটল থাকা অনেকের ক্ষেত্রে আরও কঠিন। সঠিক অনুপ্রেরণা না থাকলে ওজন কমানো শুরু করাই কঠিন হয়ে পড়ে। আর শুরু করলেও মাঝপথে থেমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে কিছু বাস্তবসম্মত কৌশল অনুসরণ করলে ওজন কমানোর লক্ষ্য অর্জন সহজ হতে পারে।

নিজেকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি না ভাঙা

ওজন কমানোর ক্ষেত্রে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া বেশ ভূমিকা রাখতে পারে। কেউ কেউ লিখিত পরিকল্পনা বা অ্যাপের মাধ্যমে প্রতিদিনের লক্ষ্য ঠিক করেন। আবার কেউ জিমের সদস্যপদ বা ব্যায়াম ক্লাসে ভর্তি হয়ে নিজেকে দায়বদ্ধ করে তোলেন। এতে মাঝপথে হাল ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা কমে।

জীবনযাপনের সঙ্গে মানানসই পরিকল্পনা বেছে নেওয়া

যে ডায়েট বা ব্যায়াম পরিকল্পনা দীর্ঘদিন মেনে চলা সম্ভব নয়, তা এড়িয়ে চলা ভালো। অতিরিক্ত কঠোর নিয়ম অথবা সবকিছু একেবারে বাদ দেওয়ার মানসিকতা অনেক সময় উল্টো ফল বয়ে আনে। বরং ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ, খাবারের পরিমাণ কমানো, অতি প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খাওয়া এবং বেশি করে ফল ও সবজি অন্তর্ভুক্ত করার মতো অভ্যাসগুলো দীর্ঘ মেয়াদে উপকারী।

পছন্দের ব্যায়াম খোঁজা

ওজন কমাতে শারীরিক কার্যকলাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে যে ব্যায়াম আপনার ভালো লাগে না, তা বেশি দিন চালিয়ে যাওয়া কঠিন। হাঁটা, সাঁতার, নাচ, সাইক্লিং কিংবা জিম—যে ধরনের ব্যায়াম উপভোগ করেন, সেটিই বেছে নেওয়া ভালো।

যে বিষয়গুলো অনুপ্রেরণা জোগায়

ওজন কমানোর পুরো যাত্রায় শুধু শেষ লক্ষ্যের দিকে তাকিয়ে থাকলে হতাশা আসতে পারে। তাই ছোট ছোট প্রক্রিয়াগত লক্ষ্য ঠিক করা জরুরি। যেমন সপ্তাহে নির্দিষ্ট কয়েক দিন ব্যায়াম করা বা প্রতিটি খাবারে সবজি রাখা। এসব লক্ষ্য পূরণ হলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। নিজের অগ্রগতি লিখে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। খাবার ও দৈনন্দিন অভ্যাসের হিসাব রাখলে কোথায় ভুল হচ্ছে কিংবা কোন অভ্যাস ওজন বাড়াচ্ছে, তা সহজে ধরা পড়ে।

সামাজিক সহায়তা এবং ইতিবাচক মনোভাব

পরিবার ও বন্ধুদের নিজের লক্ষ্য জানালে তারা মানসিক সমর্থন দিতে পারে। কেউ কেউ ওজন কমানোর সঙ্গী পেলে আরও অনুপ্রাণিত বোধ করে। পাশাপাশি নিজের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে কথা বলা এবং পরিবর্তনের প্রতি দৃঢ় মনোভাব রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

বাধা এলে যা করতে হবে

জীবনে নানা ধরনের চাপ এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের কারণে পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য আগেই মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকলে আবার সঠিক পথে ফেরা সহজ হয়। নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা না করে নিজের ভুল মেনে নেওয়া এবং নিজেকে ক্ষমা করাও অনুপ্রেরণা ধরে রাখতে সহায়ক।

ওজন কমানোর ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণাই সবচেয়ে বড় শক্তি। সবার অনুপ্রেরণার উৎস এক নয়। তাই নিজের জন্য কার্যকর পদ্ধতি খুঁজে নেওয়াই হলো মূল চাবিকাঠি।

তবে ধৈর্য ধরুন, ছোট ছোট সাফল্য উদ্‌যাপন করুন

এবং প্রয়োজনে সাহায্য চাইতে সংকোচ করবেন না। সঠিক পরিকল্পনা ও সমর্থন থাকলে ওজন কমানোর লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।

সূত্র: হেলথ লাইন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতে থাইরয়েড রোগীরা যা করবেন

ডা. মো. মাজহারুল হক তানিম 
শীতে থাইরয়েড রোগীরা যা করবেন

থাইরয়েড হরমোন আমাদের গলার সামনে থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত একধরনের হরমোন কিংবা প্রাণরস। এটি গলার সামনে থেকে নিঃসৃত হলেও সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং পুরো শরীরে কাজ করে।

হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণ

  • ওজন বেড়ে যাওয়া
  • ঘুম কম হওয়া
  • শীত শীত ভাব
  • সন্তান ধারণে সমস্যা
  • বিষণ্নতা

শীতকালীন সবজি খাওয়ায় সতর্কতা

কাবেজ জাতীয় সবজি; যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, লেটুসপাতায় থাকে গয়ট্রোজেন নামে একধরনের উপাদান। এটি থাইরয়েড হরমোন তৈরিতে বাধা দিয়ে থাকে। তাই যাঁদের হাইপোথাইরয়েড আছে, তাঁদের এসব সবজি কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যাবে না। কিন্তু রান্না করে অল্প খাওয়া যাবে।

শীতকালে থাইরয়েড রোগীদের হরমোনের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই অতিরিক্ত দুর্বল লাগে, ঠান্ডা ভাব এবং কাজের গতি ধীর হতে পারে।

শীতকালে থাইরয়েড রোগীদের করণীয়

গরম থাকার চেষ্টা করুন: জ্যাকেট কিংবা কম্বল ইত্যাদির মতো গরম কাপড় ব্যবহার করতে হবে। গরম খাবার বেশি খেতে হবে; যেমন স্যুপ কিংবা চা।

ভিটামিন ‘ডি’ বাড়ান: সকাল ৯ থেকে ১০টার দিকে রোদে থাকার চেষ্টা করুন। ভিটামিন ‘ডি’ লেভেল বেশি কম থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন ‘ডি’ সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন।

খাদ্যাভ্যাস: পর্যাপ্ত পানি পান করুন। ভিটামিন ‘সি ও বি’ সমৃদ্ধ এবং প্রোটিনযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খান।

মন নিয়ন্ত্রণ করুন: মুড সুইং খুবই সাধারণ বিষয় থাইরয়েড রোগীদের জন্য। তাই নিজের মন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ ছাড়া প্রফুল্ল থাকার চেষ্টা করুন, কর্মঠ থাকুন, দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন। প্রয়োজনে লাইট থেরাপি নিতে পারেন।

শীতে থাইরয়েড রোগীদের ত্বকের যত্ন

থাইরয়েড রোগীদের ত্বক স্বভাবতই শুষ্ক থাকে। শীতকালে তা আরও শুষ্ক হয়ে ওঠে। তাই শীতকালে গোসলের পর ময়শ্চারাইজার, লোশন কিংবা ক্রিম নিয়মিত ব্যবহার করুন। ত্বকে চুলকানি অথবা র‍্যাশ থাকলে চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন।

নিয়মিত ফলোআপ

৩ থেকে ৬ মাস পরপর আপনার হরমোন ও থাইরয়েড, বিশেষত এন্ডোক্রাইনোলজিস্টের পরামর্শ নিন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধের মাত্রা কম কিংবা বেশি করা যাবে না।

এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতাল, কাকরাইল, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সবজির পুষ্টিগুণ পাওয়ার সঠিক উপায়

মো. ইকবাল হোসেন
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ১৩
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সুষম খাবারের ৬টি উপাদানের অন্যতম ভিটামিন ও খনিজ লবণ। এগুলো আমাদের শরীরের চালিকাশক্তির অন্যতম উপাদান হিসেবে বিবেচিত। শরীরের একেকটি অঙ্গের সুরক্ষায় একেক ধরনের ভিটামিন প্রয়োজন হয়। যেমন চুল ও চোখের সুরক্ষায় ভিটামিন ‘এ’, ত্বকের সুরক্ষায় ভিটামিন ‘বি’ ও ‘সি’, হাড় ও দাঁতের সুরক্ষায় ভিটামিন ‘ডি’ প্রয়োজন হয়। আবার ত্বক, চুল ও প্রজননতন্ত্রের সুরক্ষায় ভিটামিন ‘ই’-এর ভূমিকা অনেক বেশি। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন রকমের পেশি এবং স্নায়ুতন্ত্রের সুরক্ষায় খনিজ লবণের ভূমিকা অনেক বেশি।

এই ভিটামিন ও খনিজ লবণগুলো আমরা প্রধানত শাকসবজি ও ফলমূল থেকে পেয়ে থাকি। কিন্তু কিছু অসাবধানতার ফলে শাকসবজি ও ফলমূলের পুষ্টির একটা বড় অংশ হারিয়ে যায়।

শাকসবজি কাটার পরে ধোয়া

আমরা ঐতিহ্যগতভাবে শাকসবজি কাটার পর পানি দিয়ে কয়েকবার ধুয়ে থাকি। এতে পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন ‘বি ও সি’ পানির সঙ্গে মিশে শাকসবজির বাইরে চলে যায়। ফলে আমরা ওই শাকসবজি থেকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ লবণ পাই না। তাই সেগুলো কাটা বা খোসা ছাড়ানোর আগে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এতে ময়লা পরিষ্কারের পাশাপাশি সব পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন থাকবে। শাকসবজি কাটার আগে বঁটি, ছুরি বা গ্রেটারও খুব ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।

অনেক সময় ধরে রান্না করা

শাকসবজি রান্নার নামে দীর্ঘ সময় আগুনের তাপে রাখা যাবে না। অল্প তাপেই শাকসবজিতে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু মারা যায়। এগুলো যত কম সময় সেদ্ধ করা হবে, তত বেশি পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ থাকবে। যেমন দীর্ঘ সময় ধরে রান্না করলে শাকসবজির প্রায় ৫০ শতাংশ পটাশিয়াম নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এটি শরীরের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় খনিজ। ফলে অল্প আঁচে ভাপানো শাকসবজি খাওয়া ভালো।

শাকসবজির রং বজায় রাখুন

প্রতিটি শাকসবজির নিজস্ব রং বজায় রেখে রান্না করলে তার পুষ্টিগুণ বেশি বজায় থাকবে। যেমন গাজর রান্নার পর লাল রং, শিম রান্নার পর সবুজ রং কিংবা ফুলকপির সাদা রং বজায় থাকতে হবে। রান্না করতে গিয়ে শাকসবজির রং যত নষ্ট হবে, তার পুষ্টিগুণ তত বেশি নষ্ট হবে।

কাটার পর দ্রুত রান্না করুন

অনেক সময় রাতে শাকসবজি কেটে রেখে দেওয়া হয় সকালে রান্না করার জন্য। অথবা সকালে কেটে রাখি দুপুরে রান্না করার জন্য। এভাবে দীর্ঘ সময় কেটে রেখে দিলে শাকসবজির কাটা অংশ বাতাসের সংস্পর্শে এসে জারণ-বিজারণ বিক্রিয়ার মাধ্যমে পুষ্টিগুণ নষ্ট করে। এভাবে কেটে রাখা শাকসবজিতে বিষক্রিয়াও হতে পারে। তাই এর সঠিক পুষ্টিগুণ বজায় রাখতে রাতে কেটে না রেখে রান্নার আগে কেটে দ্রুত রান্না করুন।

ধারালো বঁটি বা ছুরি ব্যবহার করুন

শাকসবজি কাটার কাজে ধারালো বঁটি অথবা ছুরি ব্যবহার করতে হবে। ভোঁতা বঁটি বা ছুরি দিয়ে এগুলো কাটার পর অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান নষ্ট হতে পারে। এ ছাড়া ভোঁতা বঁটি বা ছুরি দিয়ে কেটে রাখা শাকসবজিতে দ্রুত ব্যাকটেরিয়া কিংবা ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে।

বড় টুকরা করে কাটুন

সবজি ছোট টুকরা করে না কেটে যথাসম্ভব বড় টুকরা করে কাটবেন। ছোট টুকরা করে কাটলে তাপে বেশি পরিমাণে পুষ্টিগুণ নষ্ট হতে পারে। কিন্তু টুকরা বড় রাখলে বেশি তাপে রান্নায়ও ভেতরের পুষ্টিগুণ সহজে নষ্ট হয় না।

খোসাসহ রান্না করতে হবে

গাজর, পটোল, লাউ, শসা, মিষ্টিকুমড়ার মতো সবজিগুলো খোসাসহ রান্না করতে হবে। এসব সবজির খোসায়ও অনেক ভিটামিন ও মিনারেল থাকে।

ভাজা ভাজা করবেন না

শাকসবজি ভাজা ভাজা না করে রান্না করে খেলে বেশি পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। প্রথমত ভাজা করতে হলে খুব ছোট টুকরা করে কাটতে হয়। দ্বিতীয়ত ভাজি করতে হলে দীর্ঘ সময় তাপে রাখতে হয়। এই দুটি বিষয় শাকসবজির পুষ্টিগুণ অনেক কমিয়ে দেয়। তাই এগুলো ঝোল করে রান্না করে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এনসিপি-জামায়াত জোটে যুক্ত হচ্ছে আরেকটি দল, আসন বণ্টন ঘোষণা রাতেই

৮ মিনিট দেরি, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে অঝোরে কাঁদলেন এবি পার্টির প্রার্থী প্রত্যাশী

নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেন আনোয়ার হোসেন মঞ্জু

কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীদের লাঠিমিছিল, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া

৪৭ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিল এনসিপি

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত