Ajker Patrika

রোগীর প্রতি অবহেলার দুই–তৃতীয়াংশ অভিযোগই ঠিক

মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯: ০৬
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে চিকিৎসাসেবার পরিধি এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়েই যেন বাড়ছে চিকিৎসকদের পেশাগত নৈতিকতার বিষয়ে রোগীর অসন্তুষ্টি। এ বিষয়ে নজরদারি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) গত এক দশকে নিষ্পত্তি করা অভিযোগের দুই-তৃতীয়াংশই সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। চিকিৎসাসেবার বিষয়ে সরকারের যথাযথ তদারকি এবং বিএমডিসির কর্তৃত্ব ও সক্ষমতা বাড়ানো গেলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য পেশাজীবীরা।

বিএমডিসির তথ্য অনুযায়ী ২০১৪ সালের ২ এপ্রিল থেকে এ বছরের ১ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ১৪৭ জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে বাদীর পক্ষ থেকে প্রত্যাহার করাসহ ৭১টি অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়েছে। প্রত্যাহার করা ২০টি বাদ দিলে এক দশকে নিষ্পত্তি হওয়া অভিযোগের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫১টি। এগুলোর মধ্যে ৩১টি ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হয়। শতকরা হিসাবে তা ৬১ শতাংশ। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া ১৬ জন চিকিৎসকের নিবন্ধন বিভিন্ন মেয়াদে স্থগিত এবং একজনের ক্ষেত্রে স্থায়ীভাবে বাতিল করা হয়েছে। নথিভুক্ত অভিযোগের ক্ষেত্রে এ ধরনের কড়া শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হার ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সতর্কতার নোটিশ পেয়েছেন ১৮ শতাংশ চিকিৎসক এবং ১০ শতাংশকে ভর্ৎসনা করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ৩৯ শতাংশ চিকিৎসককে দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

পেশাগত নিবন্ধন, শিক্ষাক্রম প্রণয়ন, জার্নাল অনুমোদন ও উচ্চতর ডিগ্রির স্বীকৃতির পাশাপাশি চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ওঠা পেশাগত অনৈতিকতার অভিযোগ নিষ্পত্তি করে বিএমডিসি। কোনো চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ পেলে বিএমডিসি প্রথমে তা লিখিতভাবে অভিযুক্ত চিকিৎসককে পাঠায়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের লিখিত জবাব অভিযোগকারীকে জানানো হয়। এরপর বিএমডিসি চিকিৎসাসংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাই এবং সরেজমিন পরিদর্শন করে। নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত ও অভিযোগের শুনানি হয়।

দেশের জ্যেষ্ঠ স্বাস্থ্য পেশাজীবীরা বলছেন, শুধু চিকিৎসকেরাই নৈতিকতা রক্ষার বিশেষ শপথ নিয়ে তাঁদের পেশায় আসেন। কিন্তু বাণিজ্যিক মনোভাব ও রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার মতো বিভিন্ন কারণে অনেক চিকিৎসকের পেশাগত নৈতিকতা প্রশ্নের মুখে। বিএমডিসিতে যাওয়া গত কয়েক বছরের অভিযোগগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এর কারণ অদক্ষতা বা অজ্ঞতা নয়; বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা দায়িত্বের প্রতি শতভাগ আন্তরিক ছিলেন না। ছিল সতর্কতার অভাব ও তাড়াহুড়া করার প্রবণতা।

বিএমডিসির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. লিয়াকত হোসেন তাঁদের কাছে অভিযোগ করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোনো ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর তা নথিভুক্ত করতে কয়েক দিন সময় লাগে। কেননা এতে অনেক কিছু লিখতে হয়। এরপর কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদন নিয়ে শৃঙ্খলা কমিটিতে পাঠানো হয়।’

রেজিস্ট্রার জানান, বর্তমানে ২৭টি অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য তদন্ত কার্যক্রম চলছে এবং ৪৯টি অভিযোগ শৃঙ্খলা কমিটিতে পাঠানোর অপেক্ষায় রয়েছে।

গণমাধ্যমের খবর এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অবহেলাসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রায়ই দেখা যায়। দেশি-বিদেশি একাধিক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে চিকিৎসায় অবহেলা বাড়ছে। এতে গত কয়েক দশকে রোগী ও চিকিৎসকের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। ২০২১ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থা উইলির জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে চিকিৎসকের সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন অর্ধেকের বেশি রোগী। ‘ডক্টর-পেশেন্ট রিলেশনশিপ: এভিডেন্স ফ্রম বাংলাদেশ’ শিরোনামের ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, চিকিৎসকের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ৮৫ শতাংশই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখিয়েছে। আর রোগীদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব ৬৭ শতাংশের। চিকিৎসকের আন্তরিকতা, পর্যাপ্ত সময় দেওয়া, রোগীর নিজের মতো ও তার কথা বিস্তারিত শোনা, ভালোভাবে ব্যবস্থাপত্র বুঝিয়ে দেওয়া, চিকিৎসকের ওপর আস্থার বিষয়গুলোতে নজর দেওয়া হয় ওই গবেষণায়। এতে জনসাধারণ, রোগী ও চিকিৎসক—সবারই দৃষ্টিভঙ্গি তুলে আনা হয়েছে। স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের মধ্যে চিকিৎসা নৈতিকতার চর্চা সন্তোষজনক নয় বলে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) এক গবেষণায়ও উঠে এসেছে।

প্রতিকারের একটি নমুনা

শাস্তি দেওয়ার পর একই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আবার দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ পেয়েছে বিএমডিসি। অধ্যাপক ডা. জাহীর আল আমিন ২০২২ সাল পর্যন্ত রাজধানীর ইমপালস হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ এই শল্যচিকিৎসক ২০২০ সালে এক রোগীর বাঁ কানের পরিবর্তে ডান কানে অস্ত্রোপচার করেন। এতে রোগীর শারীরিক-মানসিক ও আর্থিক ক্ষতি হয়। অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে বিএমডিসি ডা. জাহীরের নিবন্ধন ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর থেকে এক বছরের জন্য স্থগিত করে। তাঁর বিরুদ্ধে চলতি বছরের আগস্টে আবার ‘ভুল অস্ত্রোপচারে’ রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ এসেছে। অস্ত্রোপচারটি হয়েছে রাজধানীর কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও নার্সিং হোমে। জাহীর আল আমিনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তদন্তের অপেক্ষায় রয়েছে বলে আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার লিয়াকত হোসেন। তিনি বলেন, ‘একাধিকবার কারও বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তি ঘোষণা করে বিএমডিসি। তাঁর নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিত করা হয়। তবে এর বাইরে বিএমডিসির আর কিছু করার এখতিয়ার নেই।’

১০ বছরে যত অভিযোগ

ক্ষতিপূরণ পেতে হলে আদালত

স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন-সম্পর্কিত জাতীয় কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহবুব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিচার বলতে বিএমডিসির এখতিয়ার হচ্ছে চিকিৎসকের পেশাগত নৈতিকতা দেখা। চিকিৎসার ক্ষেত্রে যা যা করণীয়, সেগুলো নিয়মমাফিক করা হয়েছে কি না, তা অনুসন্ধান করা। চিকিৎসায় অবহেলা মানেই অনৈতিকতা। একজন রোগী চিকিৎসকের কাছে তাঁর জীবনের সুরক্ষার জন্য আসেন। তবে ভুক্তভোগী ক্ষতিপূরণ দাবি করলে তাঁকে দেওয়ানি আদালতে যেতে হবে। কেননা বিএমডিসির দায়িত্ব-কর্তব্য শুধু পেশাগত নৈতিকতার বিচার করা।’

ডা. রশিদ ই মাহবুব বলেন, প্রচলিত ধারণা ও বাস্তবতার তুলনায় গত এক দশকে বিএমডিসিতে যেসব অভিযোগ এসেছে, সেগুলোর সংখ্যা খুবই কম। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘বাইরে কোনো সমঝোতা না হয়ে যদি বিএমডিসিতেই আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ নিষ্পত্তি বেশি হতো, তাহলে চিকিৎসার মানও বাড়ত। চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে সরকারের তদারকির অভাব রয়েছে।’

সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে নানা সময় চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে পেশাগত অবহেলার অনেক অভিযোগ পাওয়া যায়। সে তুলনায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ এত কম হওয়ার বিষয়ে বিএমডিসির সভাপতি অধ্যাপক ডা. সাইফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কেউ অভিযোগ দিতে চাইলে তাঁকে ঢাকায় আসতে হয়। আর প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র ও প্রমাণ অনেকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেন না। ফলে অভিযোগের সংখ্যা কম। আবার অনলাইনে অভিযোগের সুযোগ দেওয়া হলে এত অভিযোগ আসবে যে তার সুরাহা বিএমডিসি করে উঠতে পারবে না।’

বিএমডিসির সভাপতি বলেন, ‘সংখ্যায় কম হলেও যে অভিযোগগুলো পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো সুনির্দিষ্ট। অভিযোগ প্রমাণিত হলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বিচার হয় বস্তুনিষ্ঠ। উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার হার দুই-তৃতীয়াংশ হওয়া মানেই এটা নয় যে সার্বিকভাবে চিকিৎসকের বড় একটি অংশ দায়িত্ব পালনে উদাসীন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শীতে খিচুড়ি কেন খাবেন

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ১৮
শীতে খিচুড়ি কেন খাবেন

শীতের সকাল কিংবা সন্ধ্যায় ধোঁয়া ওঠা এক বাটি খিচুড়ির চেয়ে আরামদায়ক আর কী হতে পারে। খিচুড়ি শুধু একটি খাবার নয়। শীতকাল মানে আরাম করে হরেক রকমের সবজি দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি খাওয়া। এতে যেমন মন ভরে, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর এ খাবার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। এ ছাড়া এটি শরীরে বিভিন্ন উপাদানের ভারসাম্য বজায় রাখতেও সহায়ক। শীতকালীন ক্লান্তি দূর করতে এবং ঋতু পরিবর্তনের অসুস্থতা থেকে বাঁচতে খিচুড়ি একটি আদর্শ খাবার। এটি সহজে হজম হয়।

কেন খাবেন খিচুড়ি

পুষ্টিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী, খিচুড়ির প্রতিটি উপাদান আমাদের শরীরের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এতে থাকা চাল থেকে পাওয়া যায় পর্যাপ্ত শর্করা ও শক্তি। ডাল জোগায় প্রোটিন ও আঁশ, যা হজমে বিশেষভাবে সাহায্য করে। ঘি শরীরের তাপমাত্রা ধরে রাখতে এবং পুষ্টি শোষণে সহায়ক। হলুদে থাকা কারকিউমিন ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে এবং আদা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীর উষ্ণ রাখে। খিচুড়িতে সবজি যোগ করলে আঁশের মাত্রা বাড়ে। গোলমরিচ ও জিরার মতো মসলা বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করে। এ ছাড়া সাবুদানার খিচুড়ি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এ ছাড়া এটি তাৎক্ষণিক শক্তি জোগাতে কার্যকর।

mog-dal

মুগ ডালের খিচুড়ি

চাল ও মুগ ডালের মিশেলে তৈরি এই খিচুড়ি যেমন সহজপাচ্য, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। এর বিশেষত্বের চাবিকাঠি লুকিয়ে রয়েছে মসলায়। একেবারে হলুদ, লবণ, জিরা অথবা ধনেগুঁড়ার মতো সাধারণ কিছু মসলা দিয়ে এটি রান্না করা হয়। এটা রান্নার সময় মুগ ডালের সঙ্গে চালও ভেজে নিতে পারেন। এতে মুগ ডালের একটা ভিন্ন গন্ধ পাওয়া যাবে। হলুদের পরিবর্তে এতে ব্যবহার করতে পারেন সবুজ মুগডাল।

উপকারিতা: শরীর উষ্ণ রাখে এবং দীর্ঘক্ষণ শক্তি জোগায়।

khichuri

সবজি খিচুড়ি

গাজর, মটরশুঁটি, ফুলকপি, আলু, টমেটো ইত্যাদি শীতের সবজি দিয়ে তৈরি রান্না করা সবজি খিচুড়ি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। এর সঙ্গে শীতে পাওয়া যায় এমন প্রায় সব শাক ও সবজি যোগ করতে হবে। সবজিগুলো ছোট টুকরা করে কেটে নিতে হবে।

যে সবজিগুলো সেদ্ধ হতে বেশি সময় নেয়, সেগুলো আগে ভেজে নিন অথবা প্রেশার কুকারে দিন। এরপর তেল বা ঘিতে জিরা, তেজপাতা ও অন্যান্য মসলা দিয়ে পেঁয়াজ, আদা, রসুন ভাজার পর সবজিগুলো হালকা ভেজে নিন। ভেজে রাখা সবজি, চাল, ডাল ও পানি দিয়ে প্রেশার কুকারে বা হাঁড়িতে রান্না করুন। নরম খিচুড়ি চাইলে পানি বেশি দিতে পারেন। শেষ মুহূর্তে পালংসহ অন্য নরম শাক এতে যোগ করতে পারেন।

উপকারিতা: এটি অন্যান্য উপকারের সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধার করে।

তিল-খিচুড়ি

তিল খিচুড়ি

ঠান্ডা পাহাড়ি অঞ্চলে শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে এই খিচুড়ি অত্যন্ত জনপ্রিয়। চাল, মাষকলাইয়ের ডাল এবং তিল এর প্রধান উপকরণ। রান্নার আগে চাল ও ডাল ভিজিয়ে রাখা হয়। তিল হালকা ভেজে গুঁড়া করে নেওয়া হয়। তিল থেকে পাওয়া স্বাস্থ্যকর চর্বি ও খনিজ উপাদান শীতের দিনে শরীরের জন্য খুবই উপকারী। জিরা, হিং, হলুদ এবং লাল মরিচ গুঁড়ার সুগন্ধি মিশ্রণ এতে অনন্য স্বাদ যোগ করে। খাঁটি ঘি অথবা তেল-মসলার ফোড়ন দিয়ে এটি রান্না করা হয়। প্রোটিন, চর্বি এবং মিনারেলসমৃদ্ধ এই খাবার শীত জয়ের এক অমোঘ হাতিয়ার হতে পারে।

উপকারিতা: এটি শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি জোগানোর পাশাপাশি দীর্ঘক্ষণ শরীর গরম রাখতে সাহায্য করে।

আমলকীর-খিচুড়ি

আমলকী খিচুড়ি

সচরাচর খাওয়া হয় এমন কোনো খিচুড়ি খেতে না চাইলে রান্না করতে পারেন আমলকী খিচুড়ি। এটি কোনো সাধারণ খাবার নয়। এ খিচুড়ি রান্না করা হয় চাল, খোসা ছাড়ানো কালো মাষকলাইয়ের ডাল এবং তাজা আমলকী দিয়ে। নরম ধরনের এ খিচুড়ির স্বাদ ও সুগন্ধ বাড়াতে রান্নায় জিরা, হিং, হলুদ ও লাল মরিচের গুঁড়া ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো এতে রাজকীয় স্বাদ যোগ করবে। সবশেষে ঘি বা তেলের সুগন্ধি ফোড়ন এই খিচুড়িকে করে তোলে আরও সুস্বাদু। কেউ চাইলে এই খিচুড়ির পুষ্টিমান আরও বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের ঋতুভিত্তিক সবজি যোগ করতে পারেন। শীতের এই উৎসবের দিনগুলোতে শরীর সতেজ রাখতে এবং রসনা তৃপ্তিতে আমলকী খিচুড়ি হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ।

উপকারিতা: এটি শরীরে শক্তি জোগানোর পাশাপাশি হজমশক্তি এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। এ ছাড়া শরীর ডিটক্সে সহায়তা করে, হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়, গ্যাস্ট্রিক কমায়, কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় এবং ওজন কমাতে সহায়ক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এই শীতে কেন খাবেন তেজপাতা ও লবঙ্গ চা

আলমগীর আলম
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০৪
এই শীতে কেন খাবেন তেজপাতা ও লবঙ্গ চা

তেজপাতা ও লবঙ্গ—উভয়ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এতে রয়েছে শক্তিশালী প্রদাহবিরোধী ও ব্যাকটেরিয়ারোধী গুণাবলি, যা শরীরের ভেতরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। তবে এই চা সাধারণত সবার জন্য নিরাপদ হলেও গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের এটি পান করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

১. হজমশক্তি বৃদ্ধিতে: বদহজমের সমস্যায় ভুগলে তেজপাতা দারুণ মুক্তি দিতে পারে। অন্যদিকে, লবঙ্গ এনজাইম নিঃসরণ বাড়িয়ে হজমপ্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত এবং পেটের অস্বস্তি দূর করে।

২. ব্যথা ও প্রদাহ উপশমে: আর্থ্রাইটিসের মতো রোগে যাঁরা ভোগেন, তাঁদের জন্য এই চা অত্যন্ত উপকারী। ইউরিক অ্যাসিডের ব্যথা কমাতে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের প্রদাহ বা ফোলা ভাব রোধে তেজপাতা ও লবঙ্গ লড়তে সাহায্য করে।

৩. রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে: লবঙ্গে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া

ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে। এর সঙ্গে তেজপাতা যুক্ত হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যায়, যা বিশেষ করে ঠান্ডা ও ফ্লু মৌসুমে সুরক্ষা দেয়।

৪. দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে: এই চা শরীরে ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। ফলে হৃদ্‌রোগ এবং নির্দিষ্ট কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমে পায়।

৫. দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষায়: লবঙ্গ তেল দাঁতের জন্য উপকারী হিসেবে স্বীকৃত। নিয়মিত লবঙ্গ চা পান করলে মাড়ি ও দাঁত সুস্থ রাখা সম্ভব।

তেজপাতা ও লবঙ্গ চা তৈরি করবেন যেভাবে

উপকরণ সংগ্রহ করা এবং এই চা তৈরি করার প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ—

উপকরণ: ৩-৪টি শুকনো তেজপাতা, ৫-৬টি আস্ত লবঙ্গ এবং ৪ কাপ পানি। স্বাদ বাড়াতে মধু বা লেবু ব্যবহার করতে পারেন।

প্রণালি: প্রথমে একটি পাত্রে পানি ফুটিয়ে নিতে হবে। তাতে তেজপাতা ও লবঙ্গ দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে দিন। ১৫ মিনিট মিশ্রণটি সেদ্ধ করার পর চুলা নিভিয়ে আরও ৫ মিনিট পাত্রটি ঢেকে রেখে দিন। এরপর ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে তেজপাতা ও লবঙ্গ ফেলে দিয়ে পানি আলাদা করে নিন। স্বাদ অনুযায়ী মধু কিংবা লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।

সেবনবিধি ও সতর্কতা

ভালো ফল পেতে প্রতিদিন এক কাপ এই চা-পান করা ভালো; বিশেষ করে খাবারের পর এটি পান করলে হজমশক্তি বাড়াতে সবচেয়ে ভালো কাজ করে।

লেখক: খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘুমের ঘোরে খাওয়া রহস্যময় ও জটিল এক স্বাস্থ্য সমস্যা

ফিচার ডেস্ক
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৩
ঘুমের ঘোরে খাওয়া রহস্যময় ও জটিল এক স্বাস্থ্য সমস্যা

ঘুমের ঘোরে হাঁটার কথা আমরা অনেকে শুনেছি। কিন্তু ঘুমের ঘোরে খাওয়ার কথা কি শুনেছেন? চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় স্লিপ-রিলেটেড ইটিং ডিসঅর্ডার। এই উড়িয়ে দেওয়ার মতো ছোট ঘটনা একটি জটিল স্বাস্থ্যগত সমস্যা। এটি আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তার পরিবারের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

স্লিপ-রিলেটেড ইটিং ডিসঅর্ডার এমন এক সমস্যা, যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তি ঘুমের মধ্যে অবচেতন অবস্থায় রান্নাঘরে চলে যায় এবং খাবার খেতে শুরু করে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, পরদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর তার এই ঘটনা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র স্মৃতি থাকে না। সাধারণত এই সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায় প্রতি রাতেই এমনটা করে। এক রাতে একাধিকবারও ঘুমের ঘোরে খাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে।

খাদ্যাভ্যাসের বিচিত্র রূপ

এই অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তির খাওয়ার ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণত ঘুমের ঘোরে খাওয়ার সময় তিন ধরনের ঘটনা ঘটে।

উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া: আক্রান্ত হওয়া মানুষ সাধারণত ক্যান্ডি, চিপস অথবা কেকের মতো প্রক্রিয়াজাত খাবারের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ে।

অস্বাভাবিক সংমিশ্রণের খাবার খাওয়া: অনেক সময় তারা অত্যন্ত অদ্ভুত ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের সংমিশ্রণ তৈরি করে। যেমন সিগারেটে মাখন মাখিয়ে খাওয়া কিংবা অন্য কোনো অখাদ্য বস্তু খাওয়া।

দ্রুততম সময়ে খাবার খাওয়া: বিছানা থেকে রান্নাঘর হয়ে পুনরায় বিছানায় ফিরে আসার পুরো প্রক্রিয়াটি মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে শেষ হতে পারে। ফলে তারা খুব দ্রুত খাবার খেয়ে ফেলে।

ঝুঁকি ও স্বাস্থ্যগত প্রভাব

এসআরইডির প্রভাব কেবল ঘুমের ব্যাঘাতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি দীর্ঘ মেয়াদে শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এসব প্রভাবের মধ্যে আছে—

  • অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার ফলে স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে।
  • না জেনে অ্যালার্জিযুক্ত খাবার খেয়ে ফেলায় মারাত্মক শারীরিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
  • অবচেতন অবস্থায় গরম খাবার নাড়াচাড়া করা বা ধারালো ছুরি ব্যবহারের সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
  • অন্ধকারে চলাফেরা করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
  • নিয়মিত এমন ঘটনায় ব্যক্তি লজ্জিত এবং বিষণ্ন বোধ করতে পারে।
  • শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ায় আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং দুশ্চিন্তা দেখা দিতে পারে।

কেন এমন হয়

এসআরইডির নির্দিষ্ট কোনো একক কারণ না থাকলেও বেশ কিছু বিষয় লক্ষণীয়। যেমন—

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: বিষণ্নতা বা ঘুমের সমস্যার জন্য ব্যবহৃত কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের প্রভাবে এটি হতে পারে।

অন্যান্য রোগ: রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম বা অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার মতো সমস্যা এর পেছনে থাকতে পারে।

জীবনযাত্রা: অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অনিয়মিত ঘুম এবং অ্যালকোহল অথবা মাদক ত্যাগের পরবর্তী সময়ে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

প্রতিকার ও ব্যবস্থাপনা

এই রহস্যময় সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সচেতনতা এবং সঠিক চিকিৎসা জরুরি। এর প্রতিকারে যা করা যেতে পারে—

  • যদি পরিবারে কেউ এই সমস্যায় আক্রান্ত থাকে, তবে রাতে রান্নাঘর তালাবদ্ধ রাখা, ধারালো সরঞ্জাম লুকিয়ে রাখা এবং বিপজ্জনক বস্তু সরিয়ে ফেলা জরুরি।
  • অন্তত দুই সপ্তাহ আক্রান্ত ব্যক্তির ঘুমের ধরন, মানসিক অবস্থা এবং পরবর্তী দিনের শক্তি বা ক্লান্তি নিয়ে একটি ডায়েরি লিখতে বলুন। এটি চিকিৎসকের রোগনির্ণয়ে সহায়তা করবে।
  • দিনের বেলা খাবার গ্রহণে অতিরিক্ত কড়াকড়ি বা ক্যালরি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবেন না। কারণ, এটি মাঝরাতে খাবারের তীব্র আকাঙ্ক্ষা তৈরি করতে পারে।
  • পরিস্থিতি জটিল হলে চিকিৎসকের পরামর্শে পলিসমনোগ্রাফি বা স্লিপ স্টাডি করা যেতে পারে।

সূত্র: সিএনএন হেলথ, এএসএসএম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যে ছয় কারণে দীর্ঘস্থায়ী শুকনো কাশি হয়

ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘদিনের শুকনো কাশি একটি বিরক্তিকর সমস্যা। অনেক সময় সাধারণ সর্দি-জ্বরের পরেও সপ্তাহের পর সপ্তাহ কিংবা কখনো মাসের পর মাস স্থায়ী হতে পারে এ ধরনের কাশি। ফলে দৈনন্দিন কাজে অস্বস্তি, ঘুমের ব্যাঘাত, মানসিক চাপ ও কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দেয়। কাশি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার পেছনে নির্দিষ্ট এবং চিকিৎসাযোগ্য ছয়টি কারণ থাকে।

কফ ভ্যারিয়েন্ট অ্যাজমা

অ্যাজমার একটি বিশেষ ধরন এটি। এতে সাধারণ অ্যাজমার মতো শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ বা সাঁ সাঁ শব্দ না-ও থাকতে পারে; বরং অবিরাম শুকনো কাশিই এর প্রধান এবং অন্যতম উপসর্গ হয়ে দেখা দেয়। এই ধরনের কাশি সাধারণত রাতে বেশি হয় এবং ধুলাবালি, ঠান্ডা বাতাস, ঘরবাড়ির অ্যালার্জেন, এমনকি ঋতু পরিবর্তনের সময় শীতের শুরুতেও উপসর্গ তীব্র হয়ে উঠতে পারে।

উপসর্গ বারবার দেখা দিলে চিকিৎসক শ্বাসক্রিয়া পরীক্ষার মাধ্যমে কারণ নির্ণয় করতে পারেন। স্পাইরোমেট্রি ফুসফুসের ক্ষমতা এবং বায়ুপ্রবাহ পরিমাপ করে, যা হাঁপানি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজের (সিওপিডি) মতো অবস্থা নির্ণয় করতে সাহায্য করতে পারে। প্রয়োজন হলে রোগ নিয়ন্ত্রণে উপযোগী ইনহেলার সাময়িক ব্যবহারের পরামর্শও দেওয়া হয়। সঠিক সময়ে এ রোগ শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ করা গেলে দীর্ঘ মেয়াদে জটিলতার ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।

পোস্টন্যাসাল ড্রিপ

নাক কিংবা সাইনাসে অতিরিক্ত মিউকাস তৈরি হলে তা ধীরে ধীরে গলার পেছন দিকে গড়িয়ে যায়। এই মিউকাস গলার সংবেদনশীল নার্ভগুলো উত্তেজিত করে। ফলে শুকনো ও বিরক্তিকর কাশি হয়। শোয়ার সময় মিউকাস গলায় জমে বলে এটি রাত ও ভোরে বেশি হয়। তবে ঘুম থেকে ওঠার পরও কাশি দেখা যায়। অ্যালার্জিজনিত হাঁচি-সর্দি, সাইনোসাইটিস, নাকের হাড় বাঁকা হওয়ার সমস্যা, নাক বন্ধ বা ধুলাবালিতে সংবেদনশীলতা যাঁদের আছে, তাঁদের এই সমস্যা বেশি হয়। দীর্ঘস্থায়ী শুকনো কাশির অন্যতম প্রচলিত উৎস এই পোস্টন্যাসাল ড্রিপ।

জিইআরডি

পাকস্থলীর অ্যাসিড ওপরের দিকে উঠে এলে টক ঢেকুর, বুকজ্বালা, গলায় জ্বালাপোড়া এবং সঙ্গে ধারাবাহিক কাশি দেখা দিতে পারে। মসলাদার খাবার, ভাজাপোড়া, চকলেট, কফি, টক খাবার—এসব জিইআরডি বাড়িয়ে তোলে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান বা অতিরিক্ত খাবার খাওয়াও ঝুঁকির মাত্রা বাড়ায়। জিইআরডি নিয়ন্ত্রণে আনলে অনেক ক্ষেত্রে কাশি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।

ভাইরাল সংক্রমণের পর দীর্ঘস্থায়ী কাশি

অনেক সময় সর্দি-জ্বরের উপসর্গ সেরে গেলেও শ্বাসনালি কিছুদিন অতি সংবেদনশীল থাকে। এর ফলে কাশি স্থায়ী হতে পারে। ঋতু পরিবর্তনের সময় এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। সাধারণত বিশেষ চিকিৎসা ছাড়াই ধীরে ধীরে এর উপসর্গ কমে আসে। হালকা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা এবং আদা, লেবু, মধু, লবঙ্গ বা দারুচিনিযুক্ত গরম চা উপসর্গ কমাতে সহায়তা করে।

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত এসিই ইনহিবিটর শ্রেণির ওষুধ অনেক রোগীর ক্ষেত্রে শুকনো কাশির কারণ হতে পারে। নিয়মিত কাশির কারণ খুঁজেনা পেলে ওষুধের ইতিহাস পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনে চিকিৎসক বিকল্প ওষুধ বেছে নেন।

ধূমপান

দীর্ঘদিন ধূমপান, বিশেষত প্রতিদিন ২০টি সিগারেট বা ২০ বছর অথবা তার বেশি সময় ধরে ধূমপান ক্রনিক ব্রংকাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এতে বছরের বিভিন্ন সময়ে ক্রনিক কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে এটি গুরুতর অবস্থায় রূপ নিতে পারে। ধূমপান সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণের মূল উপায়।

দীর্ঘস্থায়ী বা অবিরাম কাশি সব সময় গুরুতর রোগের লক্ষণ না হলেও উপেক্ষা করা উচিত নয়। উপসর্গ যদি কয়েক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে কারণ নির্ণয় করার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

সহকারী অধ্যাপক (ইএনটি), সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত