ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
প্রতিবছরের মতো এবারও বছরের শুরুতেই পহেলা জানুয়ারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, সারা দেশে মোট ৪ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার ৩৮১ জন শিক্ষার্থীর হাতে মোট ৩৩ কোটি ৪৮ লাখ ৭৮ হাজার ৮৩৩টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। ওইদিন বিকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বইয়ের পৃষ্ঠার ছবি দিয়ে সেটি নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমের বলে দাবি করা হচ্ছে। কোনো কোনো পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, পৃষ্ঠাটি ৩য় শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা বইয়ের। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটিতে পৃষ্ঠা নম্বর উল্লেখ রয়েছে ১২। এতে লেখা রয়েছে, ‘পাঠ-৫ মানুষের পাপে পতন। আদম হাওয়া পাপ করল।’ পৃষ্ঠাটিতে উল্লিখিত পাঠের বিবরণ দেখে বোঝা যাচ্ছে, এখানে বর্ণমালা ও আ-কারের ব্যবহার শেখানো হচ্ছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটি নতুন শিক্ষাক্রমের কি না তা যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। পৃষ্ঠাটিতে উল্লিখিত পাঠের বিবরণের সূত্রে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইট থেকে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রাক প্রাথমিক পর্যায় ও প্রাথমিক স্তরের বইগুলো খুঁজে দেখা হয়।
প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের বইয়ে এমন পাঠ নেই
২০২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রাক প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক যাচাই করে দেখা যায়, এই শ্রেণিতে এসো লিখতে শিখি, ব্যঞ্জণ ও স্বরবর্ণের চার্টসহ মোট ছয়টি পাঠ্যপুস্তক আছে। এর মধ্যে ব্যঞ্জণ ও স্বরবর্ণের চার্ট দুটি এক পৃষ্ঠার। তবে এই চার্টগুলোর সঙ্গে ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া অন্য পাঠ্যপুস্তকগুলোতেও এমন কোনো পাঠ বা পৃষ্ঠা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বইগুলোতেও এমন পাঠ ও পৃষ্ঠা নেই
প্রাক প্রাথমিকের বই ছাড়াও ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বইগুলো যাচাই করে দেখা হয়। পৃষ্ঠাটিতে উল্লিখিত পাঠের বিবরণ অনুযায়ী, প্রথমেই এই শ্রেণিগুলোর বইগুলোর মধ্যে বাংলা বইগুলো খুঁজে দেখা হয়। প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ১২ নম্বর পৃষ্ঠার পাঠ হলো ‘বাঘ ও রাখালের গল্প’। বর্ণ শিক্ষা বিষয়ক পাঠ রয়েছে ১৫ থেকে ৫৬ নম্বর পৃষ্ঠা পর্যন্ত। তবে এই পাঠগুলোতে ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রথম শ্রেণির বাকি দুইটি বই হচ্ছে ইংলিশ ফর টুডে ও প্রাথমিক গণিত।
দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে বাংলা বইয়ের ১২ নম্বর পৃষ্ঠায় আলোচিত পাঠটির ন্যায় কোনো পাঠ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১৩ থেকে ১৫ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘আবার পড়ি বর্ণমালা’ একটি পাঠ খুঁজে পাওয়া যায়। ১৭ থেকে ১৮ নম্বর পৃষ্ঠাতে ‘কার চিহ্ন দিয়ে শব্দ বানাই’ একটি পাঠ খুঁজে পাওয়া যায়। তবে এসব পাঠসহ বইটির অন্যান্য পাঠে ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় শ্রেণির বাকি দুটি বই হচ্ছে ইংলিশ ফর টুডে ও প্রাথমিক গণিত।
তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে বাংলা বইয়ের ১২ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘আবার পড়ি ফলাচিহ্ন’ একটি পাঠ খুঁজে পাওয়া যায়। এতে ভাইরাল পৃষ্ঠাটির মতো কোনো পাঠের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া পুরো বইটির অন্য পাঠগুলো খুঁজেও দাবিটির পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
যেহেতু স্যোশাল মিডিয়ার কোনো কোনো পোস্টে দাবি করা হয় যে, ভাইরাল পৃষ্ঠাটি তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ে আছে কি না তা খুঁজে দেখা হয়। বইটির ১২ নম্বর পৃষ্ঠায় এমন কোনো পাঠের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বরং দেখা যায়, পৃষ্ঠাটি ওজু ও গোসলের পাঠের অনুশীলনের।
অধিকতর নিশ্চয়তার লক্ষ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বইসহ বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ইবতেদায়ী বা প্রাথমিকের বইগুলো যাচাই করেও ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটির ন্যায় অনুরূপ কোনো পাঠ খুঁজে পাওয়া যায়নি। যেহেতু পৃষ্ঠাটিতে উল্লিখিত পাঠের বিবরণ অনুযায়ী, এটি বর্ণমালা ও আ-কারের ব্যবহার সংক্রান্ত পাঠ। তাই স্বাভাবিকভাবেই মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রমে এমন কোনো পাঠ থাকার সম্ভাবনা নেই।
ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটির উৎসের খোঁজে
ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটির প্রকৃত উৎসের খুঁজে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধানে ফেসবুকে গত পহেলা জানুয়ারি মুহাম্মদ কামরুজ্জামান রানা নামের এক ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটি যাচাইয়ে প্রতীয়মান হয়, ভাইরাল এই পৃষ্ঠাটি সম্পর্কিত এটিই সম্ভাব্য প্রথম পোস্ট। ওইদিন দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে দেওয়া পোস্টটিতে ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটিসহ আরেকটি পৃষ্ঠা খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটি ১ হাজার ২০০ বার শেয়ার করা হয়েছে।
এতে লেখা রয়েছে, ‘আলোর দিশারি শিক্ষার্থীদের অনুশীলন বই-১, ব্যবহারিক সাক্ষরতা প্রথম পর্যায়’। বইটির প্রথম প্রকাশকাল উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর এবং অষ্টম বা সবশেষ প্রকাশকাল ২০২১ সালের নভেম্বর। বইটি প্রকাশনায় ছিল লাইট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তবে বিস্তারিত অনুসন্ধানে লাইট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া গেলেও ওইসব প্রতিষ্ঠানের লোগোর সঙ্গে আলোচিত প্রতিষ্ঠানের লোগোর মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে পেশাজীবীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম লিংকডইনে লাইট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীর প্রোফাইল খুঁজে পাওয়া যায়। প্রোফাইলটিতে লাইট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশকে নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক আইএনজিওয়ের সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মুহাম্মদ কামরুজ্জামান রানার পোস্টটিতে বেশ কয়েকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী এটি কোন শ্রেণির বই তা জানতে চেয়ে মন্তব্য করেন। তবে তিনি অন্য একটি মন্তব্যের উত্তর দিলেও এসব মন্তব্যের কোনো উত্তর দেননি। ফেসবুকে ভাইরাল অন্য পোস্টগুলোর মন্তব্য যাচাই করেও দেখা যায়, অনেক নেটিজেন বইটি সম্পর্কে জানতে চাইলেও পোস্টকারীরা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এনসিটিবির ওয়েবসাইটে পুরানো শিক্ষাক্রমের বইগুলো খুঁজেও এমন কোনো বইয়ের নাম পাওয়া যায়নি।
বইটি সম্পর্কে জানতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। তিনি বলেন, আলোর দিশারি শিক্ষার্থীদের অনুশীলন বই-১ নামে এনসিটিবির কোনো বই নেই। এনসিটিবির বইয়ের তালিকা ওয়েবসাইটেই দেওয়া আছে। লাইট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সঙ্গেও এনসিটিবির কোনো সম্পর্ক নেই।
প্রসঙ্গত, গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায় তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার কিছু বইয়ের মলাটের উল্টো পাশে হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ের ইংরেজি সংস্করণের মলাট দেখা যায়। পরে বইগুলো তুলে নেওয়ার নির্দেশনা দেয় এনসিটিবি। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার বিস্তারিত জানা নেই। এটি দেখে মূলত আমাদের প্রিন্টিং বিভাগ। তবে যতটুকু জেনেছি, এটি ছাপাখানার ভুল ছিল।’
সিদ্ধান্ত
লাইট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামে একটি প্রতিষ্ঠান আলোর দিশারি শিক্ষার্থীদের অনুশীলন বই-১, ব্যবহারিক সাক্ষরতা প্রথম পর্যায় নামের একটি বই প্রকাশ করে ২০১৪ সালে। ২০২১ সালে বইটির সবশেষ সংস্করণ বের করা হয়। এই নামে এনসিটিবির কোনো বই না থাকলেও এটিকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রণীত নতুন শিক্ষাক্রমের বই হিসেবে দাবি করা হচ্ছে।
প্রতিবছরের মতো এবারও বছরের শুরুতেই পহেলা জানুয়ারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, সারা দেশে মোট ৪ কোটি ৯ লাখ ১৫ হাজার ৩৮১ জন শিক্ষার্থীর হাতে মোট ৩৩ কোটি ৪৮ লাখ ৭৮ হাজার ৮৩৩টি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। ওইদিন বিকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বইয়ের পৃষ্ঠার ছবি দিয়ে সেটি নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমের বলে দাবি করা হচ্ছে। কোনো কোনো পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, পৃষ্ঠাটি ৩য় শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা বইয়ের। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটিতে পৃষ্ঠা নম্বর উল্লেখ রয়েছে ১২। এতে লেখা রয়েছে, ‘পাঠ-৫ মানুষের পাপে পতন। আদম হাওয়া পাপ করল।’ পৃষ্ঠাটিতে উল্লিখিত পাঠের বিবরণ দেখে বোঝা যাচ্ছে, এখানে বর্ণমালা ও আ-কারের ব্যবহার শেখানো হচ্ছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটি নতুন শিক্ষাক্রমের কি না তা যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। পৃষ্ঠাটিতে উল্লিখিত পাঠের বিবরণের সূত্রে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ওয়েবসাইট থেকে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রাক প্রাথমিক পর্যায় ও প্রাথমিক স্তরের বইগুলো খুঁজে দেখা হয়।
প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের বইয়ে এমন পাঠ নেই
২০২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রাক প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক যাচাই করে দেখা যায়, এই শ্রেণিতে এসো লিখতে শিখি, ব্যঞ্জণ ও স্বরবর্ণের চার্টসহ মোট ছয়টি পাঠ্যপুস্তক আছে। এর মধ্যে ব্যঞ্জণ ও স্বরবর্ণের চার্ট দুটি এক পৃষ্ঠার। তবে এই চার্টগুলোর সঙ্গে ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া অন্য পাঠ্যপুস্তকগুলোতেও এমন কোনো পাঠ বা পৃষ্ঠা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বইগুলোতেও এমন পাঠ ও পৃষ্ঠা নেই
প্রাক প্রাথমিকের বই ছাড়াও ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বইগুলো যাচাই করে দেখা হয়। পৃষ্ঠাটিতে উল্লিখিত পাঠের বিবরণ অনুযায়ী, প্রথমেই এই শ্রেণিগুলোর বইগুলোর মধ্যে বাংলা বইগুলো খুঁজে দেখা হয়। প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ১২ নম্বর পৃষ্ঠার পাঠ হলো ‘বাঘ ও রাখালের গল্প’। বর্ণ শিক্ষা বিষয়ক পাঠ রয়েছে ১৫ থেকে ৫৬ নম্বর পৃষ্ঠা পর্যন্ত। তবে এই পাঠগুলোতে ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রথম শ্রেণির বাকি দুইটি বই হচ্ছে ইংলিশ ফর টুডে ও প্রাথমিক গণিত।
দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে বাংলা বইয়ের ১২ নম্বর পৃষ্ঠায় আলোচিত পাঠটির ন্যায় কোনো পাঠ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ১৩ থেকে ১৫ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘আবার পড়ি বর্ণমালা’ একটি পাঠ খুঁজে পাওয়া যায়। ১৭ থেকে ১৮ নম্বর পৃষ্ঠাতে ‘কার চিহ্ন দিয়ে শব্দ বানাই’ একটি পাঠ খুঁজে পাওয়া যায়। তবে এসব পাঠসহ বইটির অন্যান্য পাঠে ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটি খুঁজে পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় শ্রেণির বাকি দুটি বই হচ্ছে ইংলিশ ফর টুডে ও প্রাথমিক গণিত।
তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে বাংলা বইয়ের ১২ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘আবার পড়ি ফলাচিহ্ন’ একটি পাঠ খুঁজে পাওয়া যায়। এতে ভাইরাল পৃষ্ঠাটির মতো কোনো পাঠের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া পুরো বইটির অন্য পাঠগুলো খুঁজেও দাবিটির পক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
যেহেতু স্যোশাল মিডিয়ার কোনো কোনো পোস্টে দাবি করা হয় যে, ভাইরাল পৃষ্ঠাটি তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ে আছে কি না তা খুঁজে দেখা হয়। বইটির ১২ নম্বর পৃষ্ঠায় এমন কোনো পাঠের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি বরং দেখা যায়, পৃষ্ঠাটি ওজু ও গোসলের পাঠের অনুশীলনের।
অধিকতর নিশ্চয়তার লক্ষ্যে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বইসহ বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ইবতেদায়ী বা প্রাথমিকের বইগুলো যাচাই করেও ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটির ন্যায় অনুরূপ কোনো পাঠ খুঁজে পাওয়া যায়নি। যেহেতু পৃষ্ঠাটিতে উল্লিখিত পাঠের বিবরণ অনুযায়ী, এটি বর্ণমালা ও আ-কারের ব্যবহার সংক্রান্ত পাঠ। তাই স্বাভাবিকভাবেই মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রমে এমন কোনো পাঠ থাকার সম্ভাবনা নেই।
ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটির উৎসের খোঁজে
ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটির প্রকৃত উৎসের খুঁজে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধানে ফেসবুকে গত পহেলা জানুয়ারি মুহাম্মদ কামরুজ্জামান রানা নামের এক ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটি যাচাইয়ে প্রতীয়মান হয়, ভাইরাল এই পৃষ্ঠাটি সম্পর্কিত এটিই সম্ভাব্য প্রথম পোস্ট। ওইদিন দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে দেওয়া পোস্টটিতে ভাইরাল বইয়ের পৃষ্ঠাটিসহ আরেকটি পৃষ্ঠা খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টটি ১ হাজার ২০০ বার শেয়ার করা হয়েছে।
এতে লেখা রয়েছে, ‘আলোর দিশারি শিক্ষার্থীদের অনুশীলন বই-১, ব্যবহারিক সাক্ষরতা প্রথম পর্যায়’। বইটির প্রথম প্রকাশকাল উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর এবং অষ্টম বা সবশেষ প্রকাশকাল ২০২১ সালের নভেম্বর। বইটি প্রকাশনায় ছিল লাইট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তবে বিস্তারিত অনুসন্ধানে লাইট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাওয়া গেলেও ওইসব প্রতিষ্ঠানের লোগোর সঙ্গে আলোচিত প্রতিষ্ঠানের লোগোর মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে পেশাজীবীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম লিংকডইনে লাইট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীর প্রোফাইল খুঁজে পাওয়া যায়। প্রোফাইলটিতে লাইট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশকে নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক আইএনজিওয়ের সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মুহাম্মদ কামরুজ্জামান রানার পোস্টটিতে বেশ কয়েকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী এটি কোন শ্রেণির বই তা জানতে চেয়ে মন্তব্য করেন। তবে তিনি অন্য একটি মন্তব্যের উত্তর দিলেও এসব মন্তব্যের কোনো উত্তর দেননি। ফেসবুকে ভাইরাল অন্য পোস্টগুলোর মন্তব্য যাচাই করেও দেখা যায়, অনেক নেটিজেন বইটি সম্পর্কে জানতে চাইলেও পোস্টকারীরা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। এনসিটিবির ওয়েবসাইটে পুরানো শিক্ষাক্রমের বইগুলো খুঁজেও এমন কোনো বইয়ের নাম পাওয়া যায়নি।
বইটি সম্পর্কে জানতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। তিনি বলেন, আলোর দিশারি শিক্ষার্থীদের অনুশীলন বই-১ নামে এনসিটিবির কোনো বই নেই। এনসিটিবির বইয়ের তালিকা ওয়েবসাইটেই দেওয়া আছে। লাইট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সঙ্গেও এনসিটিবির কোনো সম্পর্ক নেই।
প্রসঙ্গত, গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায় তৃতীয় শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষার কিছু বইয়ের মলাটের উল্টো পাশে হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ের ইংরেজি সংস্করণের মলাট দেখা যায়। পরে বইগুলো তুলে নেওয়ার নির্দেশনা দেয় এনসিটিবি। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার বিস্তারিত জানা নেই। এটি দেখে মূলত আমাদের প্রিন্টিং বিভাগ। তবে যতটুকু জেনেছি, এটি ছাপাখানার ভুল ছিল।’
সিদ্ধান্ত
লাইট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামে একটি প্রতিষ্ঠান আলোর দিশারি শিক্ষার্থীদের অনুশীলন বই-১, ব্যবহারিক সাক্ষরতা প্রথম পর্যায় নামের একটি বই প্রকাশ করে ২০১৪ সালে। ২০২১ সালে বইটির সবশেষ সংস্করণ বের করা হয়। এই নামে এনসিটিবির কোনো বই না থাকলেও এটিকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রণীত নতুন শিক্ষাক্রমের বই হিসেবে দাবি করা হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) ঢাকার আর্মি স্টেডিয়ামে ‘ম্যাজিক্যাল নাইট ২.০’ নামের একটি কনসার্টে অংশ নেন আতিফ। এই কনসার্টে আতিফ আসলামের সঙ্গে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানকে দেখা গেছে দাবিতে একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
২ দিন আগে‘তাপসী তাবাসসুম উর্মি (Tapashee Tabassum Urmi)’ নামের ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভিডিওটি পোস্ট করে দাবি করা হয়, এটি আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজিত কনসার্টে আসা দর্শকদের মারামারির ভিডিও। এটি আজ শনিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৮ লাখ ২০ হাজারের বেশি দেখা হয়েছে, শেয়ার হয়েছে...
২ দিন আগেগতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামে ফেসবুক পেজে এক ভিডিও পোস্টে দাবি করা হয়, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘ইউনূস হটাও আন্দোলনে উত্তাল চট্টগ্রাম’। আজ শুক্রবার রাত ৯টা পর্যন্ত ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ৭৮ হাজার বার...
৩ দিন আগেচিন্ময় দাসের আটক পরবর্তী সময়ে গত বুধবার (২৭ নভেম্বর) শুভেন্দু অধিকারী নিজের ভেরিফায়েড এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে সোয়া তিন মিনিটের একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করেন, এটি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা।
৩ দিন আগে