Ajker Patrika

সাংগঠনিক সভা, সভাপতির নির্দেশনা ও মাঠের চিত্র

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২২, ১০: ৪০
সাংগঠনিক সভা, সভাপতির নির্দেশনা ও মাঠের চিত্র

১৪ আগস্ট আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের একটি বৈঠক দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যা সম্পর্কে শেখ হাসিনা উপস্থিত সাংগঠনিক সম্পাদকদের অবহিত করেন। বিশ্ব পরিস্থিতি যথেষ্ট প্রতিকূলে থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা যথাসময়ে তেলের দাম কমিয়ে সহনশীল অবস্থায় নিয়ে আসার কথা তাঁদের জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বিরোধী দলের আন্দোলনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য সম্পর্কেও তাঁর অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন, বিরোধী দলের আন্দোলনে তিনি কিংবা সরকার ভীত নয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অবস্থানেও তিনি নেই—এ কথাও জানিয়ে দেন। তিনি দৃঢ়ভাবে আশা করেন যে আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ দেশে বিদ্যুৎ সমস্যার অনেকটাই সমাধান দেখা যাবে। বিশেষজ্ঞদেরও ধারণা, বৈশ্বিক জ্বালানি-সংকট সমাধানে শেখ হাসিনার সরকার যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে, তার ফলে অক্টোবরের দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে। সেটি হলে দেশের অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি পাবে। জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হলে পরিবহন, শিল্প-কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচও কমে আসবে। সাধারণ মানুষের ওপর অর্থনৈতিক চাপ কমবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও পরিকল্পনা সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ ও রাজনীতি সচেতন মহল দীর্ঘদিন থেকে আস্থাশীল—এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গসংগঠনগুলোর তৃণমূল থেকে ওপরের দিকে দলীয় সভাপতির আদেশ, নির্দেশ ও চাওয়া-পাওয়ার যথেষ্ট ব্যত্যয় অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, যা যথেষ্ট হতাশার জন্ম দেয়। বিষয়টি সম্পর্কে শেখ হাসিনাও অবহিত বলেই মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সভায় আসন্ন জাতীয় সম্মেলন ও নির্বাচন উপলক্ষে সাংগঠনিক সম্পাদকদের করণীয় নির্দেশনা দেওয়ার মধ্যে তাঁর সেই আন্তরিকতার স্পষ্ট প্রকাশ পাওয়া যায়।

শোক দিবস পালনের এক দিন আগে সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দলীয় প্রধানের সামনে বিভিন্ন বিভাগের সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। একই সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য শুনে তিনি তাৎক্ষণিক করণীয় সম্পর্কেও নির্দেশনা দেন। তিনি যেসব বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন তা হচ্ছে: ১. আগামী ডিসেম্বরে দলের ২৩তম জাতীয় কাউন্সিলের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠন এবং দুঃসময়ের পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের খুঁজে বের করে দলে ভেড়ানো, ২. দলে গ্রুপিং না করারও কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে, ৩. সংসদ সদস্য ও নেতারা যাতে দলের ভেতরে পৃথক বলয় সৃষ্টি করতে না পারেন, সে জন্য তাঁদের সক্রিয় থাকা, ৪. সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেশবাসীর সামনে বেশি বেশি করে তুলে ধরা।

দলের সাংগঠনিক কমিটি প্রসঙ্গে বৈঠকে দলের ওয়ার্ড পর্যায় থেকে শুরু করে প্রতিটি ইউনিয়ন, থানা, পৌর, উপজেলা, মহানগর ও জেলার কমিটি ঢেলে সাজানোর কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠকে দলীয় সভাপতি যেসব কমিটিতে গ্রুপিং ও দূরত্ব রয়েছে, সেগুলো দ্রুত মিটিয়ে ফেলার নির্দেশও দিয়েছেন। এমনকি নেতা-কর্মীদের সতর্কভাবে কথা বলারও নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নে তাঁর স্বচ্ছ অবস্থান সম্পর্কে তাঁদের অবহিত করে গৃহহীনদের তালিকা প্রস্তুত করতে সহযোগিতা করারও আহ্বান জানান।

বোঝাই যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা দলকে প্রস্তুত করার জন্য সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত এই সভাকে কতখানি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সাধারণত তিনি ছুটির দিনগুলোতে সাংগঠনিক সভা আহ্বান করেন। কিন্তু এ সভাটি তিনি সাপ্তাহিক কর্মদিবসের মধ্যেও সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় বের করে দিয়েছেন, যা দলের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এ কথা স্বীকার করতেই হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা এবং কাজ সাধারণ এবং সচেতন মানুষের আস্থায় কোনো ধরনের দ্বিধা সৃষ্টি করেনি। তবে স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের অনেকেই দলীয় সভাপতির নির্দেশনা সব সময় যথাযথভাবে পালন করছেন না। সে কারণেই বিভিন্ন জায়গায় দল এবং অঙ্গসংগঠনের অভ্যন্তরে গ্রুপিংকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীরা নানা বিরোধে জড়িয়ে পড়েন, যা দলের ভাবমূর্তি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

পনেরোই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। দিবসটি পালনে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকবে, সেটিই প্রত্যাশিত। কিন্তু এমন দিনেও দলীয় সভাপতির চাওয়া-পাওয়াকে মোটেও তোয়াক্কা করা হচ্ছে না, এমন ঘটনা মোটেও বিরল নয়। নেত্রকোনায় জাতীয় শোক দিবসে কাঙালিভোজ আয়োজন নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ১০ জন আহত হয়েছেন। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে শোক দিবসে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ১৫ জন। বরগুনায় ছাত্রলীগের দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে। ছাত্রলীগের এই দুই গ্রুপকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৬ আগস্ট নরসিংদীর আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মারামারি, হাতাহাতি হয়। এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় ঘটছে। দলের তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা নেই বললেই চলে। সর্বত্রই দলে দলীয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে দূরত্ব থাকায় জাতীয় দিবসগুলো মর্যাদাসহ পালনের আয়োজনও অনেক ক্ষেত্রে হয় না। যেসব স্থানে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়, সেগুলোতে মঞ্চে ওঠা, বসা এবং বক্তব্য দেওয়া নিয়ে থাকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। দলীয় উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভাগুলোতে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করার তেমন কোনো আয়োজন থাকে না। থাকে না বক্তাদের আলোচনাতেও তেমন কোনো সারবত্তা। অথচ জাতীয় দিবসগুলোতে স্বনামধন্য আলোচকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে দিবসটির ইতিহাস সম্পর্কে মানুষকে অবহিত ও সচেতন করার কাজটি করা গেলে অন্তত তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা অনেক কিছু জানার সুযোগ পেত। তাতে দল হিসেবে আওয়ামী লীগও মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা লাভে অধিকতর সুযোগ ব্যবহার করতে পারত। কিন্তু সেই দৃষ্টিভঙ্গি দলের তৃণমূল পর্যায়ে খুব একটা দেখা যায় না।

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেসব অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়, সেগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানহীন ও গতানুগতিক হয়। ফলে সেগুলো শিক্ষার্থীদের খুব বেশি আকৃষ্ট করতে পারে না। অনেক সময় আমন্ত্রিত প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও সরকারিভাবে পালিত দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরতে পারেন না। তাঁদের কারও কারও মধ্যে দিবসটি সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব যেমন রয়েছে, আবার অনেকেই জাতির ইতিহাসের এ দিবসটিকে ধারণ করেন না, সেটিও তাঁদের যে শারীরিক ভাষা (বডি ল্যাঙ্গুয়েজ) থেকে বোঝা যায়। প্রায়ই দেখা যায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ কিংবা অঙ্গসংগঠনের নেতাদের কেউ কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়োজিত সভায় উপস্থিত হন, বক্তব্য দেন। কিন্তু বক্তব্যের বিষয়বস্তু সম্পর্কে নিজেরাই খুব বেশি ধারণা রাখেন না—এটি খুবই স্পষ্ট। পনেরোই আগস্ট পালন করতে গিয়ে এবার আমাদের যে দুটো ভাইরাল বক্তব্য দেখতে হয়েছে, তা বোধ হয় আওয়ামী লীগের পদ-পদবিপ্রাপ্ত নেতাদের মান নিয়েও সন্দিহান করে তুলেছে। গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের নাম বোধ হয় দেশের বেশির ভাগ মানুষই জানে না। গণমাধ্যমে তাঁকে কথা বলতেও খুব একটা দেখা যায় না। তিনি কুড়িগ্রামের রাজীবপুরে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত কর্মসূচিতে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা উদ্ধৃত করাও শোভনীয় মনে করি না। যদিও বক্তব্যটিকে তিনি স্লিপ অব টাং বলে সাফাই গেয়েছেন। কিন্তু এমন স্লিপ অব টাং তো একজন প্রতিমন্ত্রী বা এই পর্যায়ের একজন আওয়ামী লীগ নেতার হওয়ার কথা নয়। আওয়ামী লীগের একজন নারীনেত্রীর প্রায় অনুরূপ একটি বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে, যা সচেতন মানুষের মনকে ভীষণভাবে কষ্ট দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। উভয়ের বক্তব্যে খুশি হয়তো হতে পেরেছে পঁচাত্তরের ঘাতকেরা। তবে আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীদের এ ধরনের স্লিপ অব টাং হওয়ার মূলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পড়াশোনা ও চর্চার অভাব। এখন রাজনীতিতে অনেকেই তরতর করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাচ্ছেন। কিন্তু রাজনীতির পাঠটি এতই দুর্বল যে তাঁদের হাতে রাজনীতি পিছলে যাওয়া ছাড়া টিকে থাকার কথা নয়। এটি মনে হয় অনেকটা বিশ্বব্যাপীই ঘটে চলছে। বিশ্বের সঙ্গে নাই-বা তুলনা করলাম। কিন্তু যাঁরা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহযোগী জাতীয় চার নেতার বক্তৃতা, বিবৃতি ও আলোচনার মানকে রপ্ত না করেই কীভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারক-বাহক হবেন বলে দাবি করেন, তাঁরা আসলেই পদে পদে দলকে এভাবে বিতর্কিত করা ছাড়া অন্য কিছু উপহার দিতে পারেন না।

জেলা, উপজেলা পর্যায়ের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডেও একই অবস্থা বিরাজমান। বেশ কিছু স্থানীয় নির্বাচনে দলের মধ্যে মনোনয়ন নিয়ে যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসন হয়নি। আগামী সম্মেলনের আগে তা কতটা হবে, বলা মুশকিল। নির্বাচন খুব বেশি দূরে নয়। সুতরাং সাংগঠনিক সম্পাদকেরা দলীয় সভাপতির যে বার্তা পেয়েছেন, তা বাস্তবায়নে তাঁরা কতটা মাঠ চষে বেড়াবেন, প্রকৃত মেধাবী, যোগ্য, ত্যাগী এবং দলের জন্য প্রয়োজনীয় নেতা-কর্মীদের জড়ো করবেন, দলের সম্পদরূপে কাজে লাগাবেন, সেটি দেখার অপেক্ষায় দলকে থাকতে হবে।

মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে গুলি: সীমান্তে মানুষ পার করা ফিলিপকে খুঁজছে পুলিশ, তাঁর দুই সহযোগী আটক

খালি হাতে বন্দুকধারীকে ঠেকিয়ে নায়ক বনে যাওয়া কে এই আল-আহমেদ

ড. ইউনূস যদি চান, সারা বাংলাদেশকে কারাগার বানাতে পারেন—আদালতে আনিস আলমগীর

একটা লাশ পড়লে আমরাও কিন্তু লাশ নেব, অত সুশীলতা করে লাভ নেই: মাহফুজ আলম

আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার স্বৈরাচারী আমলে সাংবাদিক দমন-পীড়নের পুনরাবৃত্তি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত