Ajker Patrika

কর্তৃত্ববাদ: সরকারে কিংবা দলে

আজাদুর রহমান চন্দন
কর্তৃত্ববাদ: সরকারে কিংবা দলে

ডান-বামনির্বিশেষে বিভিন্ন দলের নেতারা বেশ কয়েক বছর ধরেই শেখ হাসিনার সরকারকে কর্তৃত্ববাদী সরকার আখ্যা দিয়ে যাচ্ছেন। এত বেশিসংখ্যক বার এটি উচ্চারিত হয়েছে যে কে কবে প্রথম এটি বলেছিলেন, সেটি আপাতত মনে পড়ছে না। তবে শুরু থেকেই দু-একজন বামপন্থী রাজনীতিক ছাড়া অন্য নেতারা যখন সরকারকে এ গালিটি দেন, তখন আমার হাসি পায়। এর কারণ একটাই, ওই নেতারা যে দলের প্রতিনিধিত্ব করেন, তার কোনোটাই গণতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হয় না।

সবচেয়ে বড় কথা, সরকারবিরোধী সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি দীর্ঘদিন রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালেও জনগণের সামনে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি চর্চার এমন কোনো নজির রাখেনি, যাতে করে তারা অন্যকে কর্তৃত্ববাদী বলে সমালোচনা করার নৈতিক অধিকার রাখে। যদিও এর অজুহাতে অন্য পক্ষের অগণতান্ত্রিক আচরণ ন্যায্যতা পায় না।

আভিধানিকভাবে ‘অথরিটারিয়ানিজম’ বা কর্তৃত্ববাদ হলো এমন একধরনের রাজনৈতিক ও সরকারব্যবস্থা, যেখানে কর্তৃপক্ষের প্রতি অন্ধ আনুগত্য থাকে এবং ব্যক্তির চিন্তা ও কাজের স্বাধীনতাকে দমিয়ে রাখা হয়। কর্তৃত্ববাদী শাসন বলতে এমন সরকারব্যবস্থাকে বোঝায়, যেখানে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো মেকানিজম থাকে না এবং নাগরিক বা রাজনৈতিক অধিকার বলতেও কিছু নেই। সব ক্ষমতাই থাকে এক ব্যক্তি বা ক্ষুদ্র একটি এলিট গোষ্ঠীর হাতে কুক্ষিগত। এ ক্ষেত্রে সবার আগে সামরিক সরকারের কথাই মাথায় আসে।

তবে নির্বাচিত সরকারের গায়েও অনেক সময় এ তকমাটি লাগতে দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনকালটিকেও অনেকে কর্তৃত্ববাদী শাসন বলতে ছাড়েননি। ট্রাম্প যখন ক্ষমতায় আসেন, সে সময় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্টেফান ওয়াল্ট কর্তৃত্ববাদের ১০টি লক্ষণের কথা বলেছিলেন। লক্ষণগুলো মোটামুটি এ রকম—ভীতি অথবা উৎকোচের মাধ্যমে তথ্যব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ; একটি তাঁবেদার তথ্যব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা; প্রশাসন ও নিরাপত্তাব্যবস্থার দলীয়করণ; বিরোধী রাজনীতিকদের ওপর নজরদারির জন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগানো; অনুগত ব্যবসায়ীদের পুরস্কার, অবাধ্য ব্যবসায়ীদের শাস্তি দান; বিচারব্যবস্থা নিজ মুঠোয় নিয়ে আসা; শুধু এক পক্ষের ওপর আইনের প্রয়োগ; নিজ স্বার্থে ভোটব্যবস্থায় অনিয়ম; ভীতি ছড়ানো এবং বিরোধী রাজনীতিকদের ব্যাপারে অপপ্রচার। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পাশ্চাত্যে ওয়াল্টের এই ‘চেকলিস্ট’ ব্যবহার করে কোন দেশ কতটা কর্তৃত্ববাদী, তা মেপে দেখার একটি প্রবণতা লক্ষণীয়।

কাজেই বর্তমান সরকারকে কর্তৃত্ববাদী বলা হলেও খুব একটা অতিরঞ্জন হয় না। তবে এ দেশের বড় দলগুলো তো বটেই, বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলই যেখানে একক নেতৃত্বে ও কর্তৃত্বে পরিচালিত, তাতে তারা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় গেলেও তাদের কাছ থেকে গণতান্ত্রিক আচরণ আশা করাটা বাতুলতা মাত্র। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. রওনক জাহান ২০১৫ সালে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর একটি অভিসন্দর্ভ প্রকাশ করেন। এতে প্রধান দুটি দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রচর্চার প্রকট অভাব থাকার কথা তুলে ধরা হয়।

দেশে গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কারের বিষয়েও তিনি বেশ কিছু সুপারিশ করেন। গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের মধ্যে আছে—রাজনৈতিক দলগুলোর অগণতান্ত্রিক রীতিনীতি বর্জন করতে হবে; দলগুলোকে গঠনতন্ত্র ও নিবন্ধনের আইনগত শর্ত অবশ্যই প্রতিপালন করতে হবে ইত্যাদি। এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দলগুলোকে গঠনতন্ত্র মেনে চলার পরামর্শ দিলেও বাস্তবে গঠনতন্ত্রেই গলদ রয়ে গেছে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ‘দ্য স্টেট অব গভর্ন্যান্স বাংলাদেশ ২০১৩: ডেমোক্রেসি, পার্টি, পলিটিকস’ শীর্ষক এক গবেষণাপত্রে বলা হয়, দেশের বড় দুটি দলে গণতন্ত্রচর্চার ‘একান্ত অভাব’। আওয়ামী লীগে গঠনতন্ত্র রক্ষার জন্য সামান্য আলোচনা হলেও বিএনপির গঠনতন্ত্রেই এসব বিষয় তেমন সুবিন্যস্ত নয়।

অন্যান্য দল নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। তবে বাস্তবে দু-একটি ছোট দলে কিছুটা গণতান্ত্রিক মনোভাব ও চর্চা থাকলেও তা এখনো জনমনে রেখাপাত করার মতো অবস্থায় নেই। দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিশেষ দিক হলো, ৪০ বছর ধরে বড় দুই দলের প্রধান একই ব্যক্তি। সব দলেই উত্তরাধিকারের নেতৃত্ব প্রাধান্য পাচ্ছে। তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত একই অবস্থা। রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক দলের উপযোগী সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারেনি।

দেশে রাজনৈতিক দলে কর্তৃত্ববাদের বড় নজির দেখা গেল অতিসম্প্রতি। গত মাসেই বিএনপির ঢাকাসহ চারটি মহানগর কমিটি ভেঙে দেওয়ার পরপর দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে বড় রদবদল আনা হয়েছে দলের কোনো পর্যায়ে কোনো আলোচনা ছাড়াই। দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ যদিও অনেক আগেই শেষ হয়েছে। কিন্তু কাউন্সিল করার কোনো উদ্যোগ তো নেই-ই, এই কমিটির ৩৯টি পদে রদবদলের কথা জানানো হয়েছে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে।

দলের নেতা-কর্মীরা যখন ঈদুল আজহা উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে ৩৯ পদে কাউকে কাউকে নতুন যুক্ত করা হয়েছে, আবার কারও কারও পদ পরিবর্তন করা হয়েছে।

এই রদবদলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলে ১০ জনকে যুক্ত করা হয়েছে। তাঁরা এত দিন এ কমিটিতেই বিভিন্ন পদে ছিলেন। তিনজনকে যুগ্ম মহাসচিব করা হয়েছে। তাঁরা সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। একজন সম্পাদককে করা হয়েছে ভাইস চেয়ারম্যান। এ ছাড়া কয়েকজনের দায়িত্ব কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিএনপিসহ দলের যুব ও ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল এবং যুবদলেও রদবদল করা হয়। সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একক ক্ষমতাবলে এই রদবদল করেন। মধ্যরাতের এই রদবদলে দলের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা নিজেদের অসন্তোষ গোপনও রাখেননি। যদিও তাঁদের চাওয়াটাও মূলত আগে থেকে একটু অবহিত হওয়ার চেয়ে বেশি কিছু নয়।

আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রে সভাপতি বা চেয়ারপারসন বা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের বিধান আছে। কিন্তু বাস্তবে বংশানুক্রমিকভাবে মনোনীত নেতারাই দলগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যান্য পদেও নির্বাচন হয় না।

শীর্ষ নেতারাই তাঁদের ইচ্ছামতো এসব পদে মনোনয়ন দিয়ে থাকেন। সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রে চেয়ারম্যানের ক্ষমতা অবারিত। চেয়ারম্যান যে কাউকে পদ দেওয়া, বহিষ্কার এমনকি নিজের পদও আরেকজনকে দিতে পারেন। মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি চেয়ারপারসনের ক্ষমতাও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অনেকটাই একচ্ছত্র।

দলের কমিটিতে যেকোনো পরিবর্তন আনার ক্ষমতা দেওয়া আছে তাঁকে। চেয়ারপারসন চাইলেই যে কাউকে যেকোনো সময় দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দিতে পারেন কিংবা কাউকে যুক্তও করতে পারেন। চেয়ারপারসন সেই ক্ষমতা লিখিতভাবে দিয়েছেন নিজের ছেলেকে, যার প্রয়োগ করা হয়েছে সম্প্রতি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে বলা আছে, ‘সভাপতি, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যবৃন্দ, সাধারণ সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও কোষাধ্যক্ষ নিজ নিজ পদে ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল কর্তৃক কাউন্সিলরদের মধ্য হইতে নির্বাচিত হইবেন।’ কিন্তু বাস্তবে কাউন্সিলে হাত তুলে সভাপতি নির্বাচন করা ছাড়া আর কোনো পদে নির্বাচনেরই নজির নেই। কাউন্সিলররা হাত তুলেই সভাপতির ওপর সর্বময় ক্ষমতা অর্পণ করে আসছেন। সেই ক্ষমতাবলে সভাপতিই দলের অন্যান্য পদে মনোনয়ন দিয়ে থাকেন।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে নেতৃত্ব নির্বাচনের যে পদ্ধতির উল্লেখ আছে, সেটিও দেশের শাসন পদ্ধতির সঙ্গে মানানসই নয়। সংবিধান অনুযায়ী দেশে সরকার গঠিত ও পরিচালিত হয় সংসদীয় পদ্ধতিতে। কিন্তু আওয়ামী লীগ চলে অনেকটা প্রেসিডেনশিয়াল সিস্টেমে।

দেশে গণতন্ত্রের যে-সংকট চলছে, তার প্রধান কারণই হলো কোনো রাজনৈতিক দলে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রচর্চা না থাকা। দলগুলোর তৃণমূল পর্যায়েও একক ব্যক্তি বা একক পরিবারের হাতে সব ক্ষমতা কুক্ষিগত থাকে। ফলে কোনো পর্যায়েই গণতন্ত্রচর্চা হয় না। রাজনৈতিক দলের ভেতরে গণতন্ত্রের অন্যতম একটি উপাদান হলো জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের পদ্ধতি। প্রায় সব গণতান্ত্রিক দেশেই প্রাথমিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করা হয়। বাংলাদেশে এ ব্যবস্থাটিও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি।

লেখক: সাংবাদিক ও গবেষক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত