অরুণ কর্মকার

দেশে চলমান জ্বালানি-সংকট এবং এর অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে সৃষ্ট বিদ্যুৎ ঘাটতিজনিত সারা দেশে ভয়াবহ লোডশেডিং পরিস্থিতি সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, একটি সাময়িক সমস্যা। সমস্যাটি নিঃসন্দেহে সাময়িক। কারণ, এই সমস্যা দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকবে না। প্রকৃতির বদান্যতায় ইতিমধ্যে সমস্যার তীব্রতা কমতেও শুরু করেছে। শিগগির আরও কমবে। কিন্তু বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার মৌসুমে, প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে এই লোডশেডিং জনজীবনে যে বিপর্যস্ত অবস্থার সৃষ্টি করেছে, তাতে সরকারের শাসনব্যবস্থার দক্ষতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের যৌক্তিকতা এবং ভাবমূর্তিতে এক গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। এই ক্ষত যে দীর্ঘস্থায়ী হবে, বহু বছর ধরে যে এই কঠিন পরিস্থিতির কথা উদাহরণ হিসেবে বলাবলি হবে, সে কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়। শুধু তা-ই নয়, আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি-সংকটের মধ্যেও পড়ে গেছি।
আমাদের দেশে সরকারের যেকোনো সাফল্য, এমনকি বিদ্যুৎ খাতের মতো দৃশ্যমান ও সুদূরপ্রসারী সাফল্যও আস্থায় না নেওয়া বা বিশ্বাস না করা লোকের সংখ্যা অগণিত। বিদ্যুৎ খাতে সরকারের অভূতপূর্ব সাফল্যকেও তাঁরা সর্বদা বাঁকা চোখেই দেখে এসেছেন। এই শ্রেণির লোকের কথা বাদ দিলেও এখন এমন লোক দেশে খুব কম পাওয়া যাবে যাঁরা সরকারের ওই সাফল্যকে টেকসই বলে মনে করেন। বর্তমান জ্বালানি-সংকট এবং সেই কারণে সৃষ্ট বিপর্যয়কর বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সরকারের সাফল্যে অবিশ্বাসীদের সঙ্গে বিশ্বাসীদেরও প্রায় একই কাতারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সরকারের জন্য ক্ষতটা এখানেই। এই ক্ষত সরকারের সব কাজের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে রাখবে। এই ক্ষত সারিয়ে তোলা সরকারের জন্য খুব সহজ কাজ হবে না।
আরেকটি বিষয় হলো, সরকার যে সমস্যাটিকে সাময়িক বলছে, সেটি হচ্ছে লোডশেডিং। হ্যাঁ, লোডশেডিং একটি সাময়িক সমস্যাই বটে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে পায়রা কেন্দ্রের জন্য কয়লা চলে আসবে। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপের কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রটি থেকেও এই মাসের শেষ নাগাদ বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। একই সময়ে ভারতের আদানি গ্রুপের ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিটটি চালু হলে সেখান থেকেও বিদ্যুৎ আমদানি বাড়বে। সর্বোপরি শুরু হয়ে যাবে বর্ষা মৌসুম। বৃষ্টি নামবে প্রকৃতির করুণাধারা হয়ে। ফলে বিদ্যুতের চাহিদাও কমবে। সুতরাং লোডশেডিং সাময়িকই বটে।
কিন্তু এ কথা সবারই মনে রাখা উচিত যে পায়রা, বাঁশখালী, রামপাল তথা দেশের অভ্যন্তরের যেকোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বারবার কয়লা এবং অন্যান্য জ্বালানি আনতে হবে। আনতে হলে বৈদেশিক মুদ্রা (ডলার) লাগবে। এবার যেমন ডলারের অভাবে সময়মতো কয়লা আনতে না পারায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হলো, তেমনি ভবিষ্যতেও ডলার-সংকট হলে একই ঘটনা ঘটবে। আর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার যে শিগগির খুব সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে, তেমন সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। অতএব লোডশেডিংয়ের সাময়িক সমস্যাটি বারবার ফিরে আসার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রতিটি জ্বালানিই আমরা এখন আমদানি করছি। যেমন কয়লা, ফার্নেস তেল, ডিজেল, প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) প্রভৃতি। এরপর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানি করতে হবে ইউরেনিয়াম। এর যে কোনোটি আমদানির জন্যই ডলার অপরিহার্য। কাজেই বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার সমৃদ্ধ করা আমাদের জন্য অতীব জরুরি। এর মধ্যে আরেকটি বিষয় হলো, এলএনজি আমদানি। প্রথমত, এলএনজি আমদানির জন্য অবকাঠামোগত সক্ষমতা আমাদের সীমিত। দৈনিক সর্বোচ্চ ১ হাজার মিলিয়ন বা ১০০ কোটি ঘনফুট। আর দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতাও সীমিত এবং ক্রমহ্রাসমান। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য কয়লা ও জ্বালানি তেল আমদানির ওপর চাপ অপেক্ষাকৃত বেশি।
এখন প্রশ্ন হলো, এ ধরনের জ্বালানি-সংকট কি আমাদের জন্য অবধারিত কিংবা অনিবার্য ছিল? এর কারণই-বা কী? সরকার বলছে, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কথা—মানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এই যুদ্ধ শুরুতে বিশ্ববাজারে সব ধরনের জ্বালানির দাম অস্বাভাবিক রকম বাড়িয়ে দেয়। ডলারের দামও আকাশচুম্বী হয়ে পড়ে। এখন জ্বালানির দাম কমলেও ডলার-সংকটের কারণে তা প্রয়োজন অনুযায়ী আনা যাচ্ছে না। সরকারের এই বক্তব্যে মনে হতে পারে যে এই সংকট অনিবার্য ছিল। সরকারের তেমন কিছুই করার ছিল না, কিংবা বলা যায়, পরিস্থিতির ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
কিন্তু এই সংকটময় পরিস্থিতির একটি দেশীয় প্রেক্ষাপটও আছে। সেই প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে সংকটের ভিন্ন একটি কারণ আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই—সেটি হলো, দেশের জ্বালানি সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের অনীহা। এই অনীহা এমন পর্যায়ের, যাকে উপেক্ষা করাও বলা যায়। অথচ বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকার যেমন স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে ধারাবাহিকভাবে তা বাস্তবায়ন করেছে, তেমনি দেশের জ্বালানি সম্পদ উন্নয়নের কাজটিও করা হলে পৃথিবীতে যুদ্ধবিগ্রহ যত যা কিছুই হোক না কেন, আমাদের জ্বালানি-সংকট বর্তমান পর্যায়ে কখনোই পৌঁছাত না। নিজেদের জ্বালানি সম্পদ দিয়েই আমাদের চাহিদার শতভাগ বিদ্যুৎ ও শিল্প উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব হতো।
আমরা স্মরণ করতে পারি যে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন দেশের নিজস্ব ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। নতুন সরকারের উদ্যোগে যখন দ্রুত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তৃত হতে লাগল, তখন গ্যাসের চাহিদাও দ্রুত বাড়তে লাগল। সেই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকার দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বাড়তি গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়। তখন মূলত বিবিয়ানা ক্ষেত্র থেকে শেভরন সিংহভাগ উত্তোলন বাড়ায়। ফলে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা দৈনিক ২ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়। তারপর উত্তরোত্তর আরও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানো কিংবা নতুন অনুসন্ধানের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে দেশের ক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন এখন ২ হাজার ১০০ মিলিয়নে নেমে এসেছে। অন্যদিকে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে এলএনজি আমদানির। ডলার-সংকটে সেই আমদানিই এখন সরকার এবং জনগণের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে।
ইতিমধ্যে জ্বালানি-সংকট তীব্রতর হয়ে উঠলে গত বছর সরকার তিন বছর মেয়াদি একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়। সেই অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৪টি কূপ (অনুসন্ধান, উত্তোলন এবং সংস্কারসহ) খননের মাধ্যমে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে মোট ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর কাজ চলমান। অবশ্য এ কাজ ২০২৪ সালের মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে যেতে পারে বলে পেট্রোবাংলার সূত্রে জানা গেছে। এই পদক্ষেপের ফল হিসেবে ইতিমধ্যে কয়েকটি কূপে কিছু গ্যাস পাওয়াও গেছে। এর মধ্যে ভোলায় পাওয়া গেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্যাস। কিন্তু সেই গ্যাস মূল ভূখণ্ডে আনার অবকাঠামো না থাকায় চলমান সংকট নিরসনে এর কোনো ভূমিকা থাকবে না।
তবে সরকার প্রচারের জন্য হোক কিংবা কাজ দেখানোর জন্য হোক, ভোলা থেকে কিছু গ্যাস সিএনজিতে রূপান্তর করে ঢাকায় আনার জন্য একটি বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু এই চুক্তির অধীনে যে পরিমাণ গ্যাস আনা সম্ভব হবে, তা ঘাটতি পূরণের সামান্যতম কাজেও আসবে না। যেখানে তিতাসের বিতরণ এলাকায় দৈনিক গ্যাসের ঘাটতি ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট, সেখানে আগামী সেপ্টেম্বরে সিএনজি আকারে আসবে পাঁচ মিলিয়ন ঘনফুট। এরপর আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি নাগাদ আসবে আরও ২০ মিলিয়ন ঘনফুট। মোট ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট ভোলা থেকে সিএনজি আকারে আনা সম্ভব হবে।
সরকার যদি ২০১৮ সাল থেকেও দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিত এবং আজ যদি আমাদের হাতে আর এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বাড়তি গ্যাস থাকত, তাহলে আমরা কোনো জ্বালানি-সংকটেই পড়তাম না। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য, বর্তমানে দেশে গ্যাসের সর্বোচ্চ চাহিদা দৈনিক চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এখন সরবরাহ করা হচ্ছে তিন হাজার মিলিয়ন। এর মধ্যে দেশের ক্ষেত্রগুলোর গ্যাস ২ হাজার ১০০ মিলিয়ন এবং আমদানি করা এলএনজি ৯০০ মিলিয়ন। দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে এখন যদি তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুটও উত্তোলন করা যেত, তাহলে গ্যাস দিয়েই আমরা ১২-১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারতাম।
দেশের কয়লা উত্তোলনের কথা বাদ দিলেও আমদানি করা কয়লা এবং জ্বালানি তেল স্বল্প পরিমাণে ব্যবহার করে খুব সহজেই আরও তিন-চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেত। সে জন্য ডলার-সংকট কোনো সমস্যাই সৃষ্টি করতে পারত না। এ ছাড়া সরকার কম দামে রাশিয়ার তেল কেনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি কূটনৈতিক সমঝোতায় উপনীত হতে পারত বলেও অনেকের বিশ্বাস। এসব পদক্ষেপের পরিবর্তে সরকার যে শুধু জ্বালানি আমদানির দিকেই ঝুঁকে থাকল, তার ফলই হলো বর্তমান সংকট। সেই সংকট সরকারের জন্য এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কতটা গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে, তা অদূর ভবিষ্যতেই দেখা যাবে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

দেশে চলমান জ্বালানি-সংকট এবং এর অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে সৃষ্ট বিদ্যুৎ ঘাটতিজনিত সারা দেশে ভয়াবহ লোডশেডিং পরিস্থিতি সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, একটি সাময়িক সমস্যা। সমস্যাটি নিঃসন্দেহে সাময়িক। কারণ, এই সমস্যা দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকবে না। প্রকৃতির বদান্যতায় ইতিমধ্যে সমস্যার তীব্রতা কমতেও শুরু করেছে। শিগগির আরও কমবে। কিন্তু বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার মৌসুমে, প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে এই লোডশেডিং জনজীবনে যে বিপর্যস্ত অবস্থার সৃষ্টি করেছে, তাতে সরকারের শাসনব্যবস্থার দক্ষতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের যৌক্তিকতা এবং ভাবমূর্তিতে এক গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। এই ক্ষত যে দীর্ঘস্থায়ী হবে, বহু বছর ধরে যে এই কঠিন পরিস্থিতির কথা উদাহরণ হিসেবে বলাবলি হবে, সে কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়। শুধু তা-ই নয়, আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি-সংকটের মধ্যেও পড়ে গেছি।
আমাদের দেশে সরকারের যেকোনো সাফল্য, এমনকি বিদ্যুৎ খাতের মতো দৃশ্যমান ও সুদূরপ্রসারী সাফল্যও আস্থায় না নেওয়া বা বিশ্বাস না করা লোকের সংখ্যা অগণিত। বিদ্যুৎ খাতে সরকারের অভূতপূর্ব সাফল্যকেও তাঁরা সর্বদা বাঁকা চোখেই দেখে এসেছেন। এই শ্রেণির লোকের কথা বাদ দিলেও এখন এমন লোক দেশে খুব কম পাওয়া যাবে যাঁরা সরকারের ওই সাফল্যকে টেকসই বলে মনে করেন। বর্তমান জ্বালানি-সংকট এবং সেই কারণে সৃষ্ট বিপর্যয়কর বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সরকারের সাফল্যে অবিশ্বাসীদের সঙ্গে বিশ্বাসীদেরও প্রায় একই কাতারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সরকারের জন্য ক্ষতটা এখানেই। এই ক্ষত সরকারের সব কাজের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে রাখবে। এই ক্ষত সারিয়ে তোলা সরকারের জন্য খুব সহজ কাজ হবে না।
আরেকটি বিষয় হলো, সরকার যে সমস্যাটিকে সাময়িক বলছে, সেটি হচ্ছে লোডশেডিং। হ্যাঁ, লোডশেডিং একটি সাময়িক সমস্যাই বটে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে পায়রা কেন্দ্রের জন্য কয়লা চলে আসবে। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপের কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রটি থেকেও এই মাসের শেষ নাগাদ বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। একই সময়ে ভারতের আদানি গ্রুপের ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিটটি চালু হলে সেখান থেকেও বিদ্যুৎ আমদানি বাড়বে। সর্বোপরি শুরু হয়ে যাবে বর্ষা মৌসুম। বৃষ্টি নামবে প্রকৃতির করুণাধারা হয়ে। ফলে বিদ্যুতের চাহিদাও কমবে। সুতরাং লোডশেডিং সাময়িকই বটে।
কিন্তু এ কথা সবারই মনে রাখা উচিত যে পায়রা, বাঁশখালী, রামপাল তথা দেশের অভ্যন্তরের যেকোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বারবার কয়লা এবং অন্যান্য জ্বালানি আনতে হবে। আনতে হলে বৈদেশিক মুদ্রা (ডলার) লাগবে। এবার যেমন ডলারের অভাবে সময়মতো কয়লা আনতে না পারায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হলো, তেমনি ভবিষ্যতেও ডলার-সংকট হলে একই ঘটনা ঘটবে। আর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার যে শিগগির খুব সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে, তেমন সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। অতএব লোডশেডিংয়ের সাময়িক সমস্যাটি বারবার ফিরে আসার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রতিটি জ্বালানিই আমরা এখন আমদানি করছি। যেমন কয়লা, ফার্নেস তেল, ডিজেল, প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) প্রভৃতি। এরপর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানি করতে হবে ইউরেনিয়াম। এর যে কোনোটি আমদানির জন্যই ডলার অপরিহার্য। কাজেই বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার সমৃদ্ধ করা আমাদের জন্য অতীব জরুরি। এর মধ্যে আরেকটি বিষয় হলো, এলএনজি আমদানি। প্রথমত, এলএনজি আমদানির জন্য অবকাঠামোগত সক্ষমতা আমাদের সীমিত। দৈনিক সর্বোচ্চ ১ হাজার মিলিয়ন বা ১০০ কোটি ঘনফুট। আর দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতাও সীমিত এবং ক্রমহ্রাসমান। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য কয়লা ও জ্বালানি তেল আমদানির ওপর চাপ অপেক্ষাকৃত বেশি।
এখন প্রশ্ন হলো, এ ধরনের জ্বালানি-সংকট কি আমাদের জন্য অবধারিত কিংবা অনিবার্য ছিল? এর কারণই-বা কী? সরকার বলছে, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কথা—মানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এই যুদ্ধ শুরুতে বিশ্ববাজারে সব ধরনের জ্বালানির দাম অস্বাভাবিক রকম বাড়িয়ে দেয়। ডলারের দামও আকাশচুম্বী হয়ে পড়ে। এখন জ্বালানির দাম কমলেও ডলার-সংকটের কারণে তা প্রয়োজন অনুযায়ী আনা যাচ্ছে না। সরকারের এই বক্তব্যে মনে হতে পারে যে এই সংকট অনিবার্য ছিল। সরকারের তেমন কিছুই করার ছিল না, কিংবা বলা যায়, পরিস্থিতির ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
কিন্তু এই সংকটময় পরিস্থিতির একটি দেশীয় প্রেক্ষাপটও আছে। সেই প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে সংকটের ভিন্ন একটি কারণ আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই—সেটি হলো, দেশের জ্বালানি সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের অনীহা। এই অনীহা এমন পর্যায়ের, যাকে উপেক্ষা করাও বলা যায়। অথচ বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকার যেমন স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে ধারাবাহিকভাবে তা বাস্তবায়ন করেছে, তেমনি দেশের জ্বালানি সম্পদ উন্নয়নের কাজটিও করা হলে পৃথিবীতে যুদ্ধবিগ্রহ যত যা কিছুই হোক না কেন, আমাদের জ্বালানি-সংকট বর্তমান পর্যায়ে কখনোই পৌঁছাত না। নিজেদের জ্বালানি সম্পদ দিয়েই আমাদের চাহিদার শতভাগ বিদ্যুৎ ও শিল্প উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব হতো।
আমরা স্মরণ করতে পারি যে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন দেশের নিজস্ব ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। নতুন সরকারের উদ্যোগে যখন দ্রুত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তৃত হতে লাগল, তখন গ্যাসের চাহিদাও দ্রুত বাড়তে লাগল। সেই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকার দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বাড়তি গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়। তখন মূলত বিবিয়ানা ক্ষেত্র থেকে শেভরন সিংহভাগ উত্তোলন বাড়ায়। ফলে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা দৈনিক ২ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়। তারপর উত্তরোত্তর আরও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানো কিংবা নতুন অনুসন্ধানের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে দেশের ক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন এখন ২ হাজার ১০০ মিলিয়নে নেমে এসেছে। অন্যদিকে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে এলএনজি আমদানির। ডলার-সংকটে সেই আমদানিই এখন সরকার এবং জনগণের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে।
ইতিমধ্যে জ্বালানি-সংকট তীব্রতর হয়ে উঠলে গত বছর সরকার তিন বছর মেয়াদি একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়। সেই অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৪টি কূপ (অনুসন্ধান, উত্তোলন এবং সংস্কারসহ) খননের মাধ্যমে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে মোট ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর কাজ চলমান। অবশ্য এ কাজ ২০২৪ সালের মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে যেতে পারে বলে পেট্রোবাংলার সূত্রে জানা গেছে। এই পদক্ষেপের ফল হিসেবে ইতিমধ্যে কয়েকটি কূপে কিছু গ্যাস পাওয়াও গেছে। এর মধ্যে ভোলায় পাওয়া গেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্যাস। কিন্তু সেই গ্যাস মূল ভূখণ্ডে আনার অবকাঠামো না থাকায় চলমান সংকট নিরসনে এর কোনো ভূমিকা থাকবে না।
তবে সরকার প্রচারের জন্য হোক কিংবা কাজ দেখানোর জন্য হোক, ভোলা থেকে কিছু গ্যাস সিএনজিতে রূপান্তর করে ঢাকায় আনার জন্য একটি বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু এই চুক্তির অধীনে যে পরিমাণ গ্যাস আনা সম্ভব হবে, তা ঘাটতি পূরণের সামান্যতম কাজেও আসবে না। যেখানে তিতাসের বিতরণ এলাকায় দৈনিক গ্যাসের ঘাটতি ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট, সেখানে আগামী সেপ্টেম্বরে সিএনজি আকারে আসবে পাঁচ মিলিয়ন ঘনফুট। এরপর আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি নাগাদ আসবে আরও ২০ মিলিয়ন ঘনফুট। মোট ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট ভোলা থেকে সিএনজি আকারে আনা সম্ভব হবে।
সরকার যদি ২০১৮ সাল থেকেও দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিত এবং আজ যদি আমাদের হাতে আর এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বাড়তি গ্যাস থাকত, তাহলে আমরা কোনো জ্বালানি-সংকটেই পড়তাম না। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য, বর্তমানে দেশে গ্যাসের সর্বোচ্চ চাহিদা দৈনিক চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এখন সরবরাহ করা হচ্ছে তিন হাজার মিলিয়ন। এর মধ্যে দেশের ক্ষেত্রগুলোর গ্যাস ২ হাজার ১০০ মিলিয়ন এবং আমদানি করা এলএনজি ৯০০ মিলিয়ন। দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে এখন যদি তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুটও উত্তোলন করা যেত, তাহলে গ্যাস দিয়েই আমরা ১২-১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারতাম।
দেশের কয়লা উত্তোলনের কথা বাদ দিলেও আমদানি করা কয়লা এবং জ্বালানি তেল স্বল্প পরিমাণে ব্যবহার করে খুব সহজেই আরও তিন-চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেত। সে জন্য ডলার-সংকট কোনো সমস্যাই সৃষ্টি করতে পারত না। এ ছাড়া সরকার কম দামে রাশিয়ার তেল কেনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি কূটনৈতিক সমঝোতায় উপনীত হতে পারত বলেও অনেকের বিশ্বাস। এসব পদক্ষেপের পরিবর্তে সরকার যে শুধু জ্বালানি আমদানির দিকেই ঝুঁকে থাকল, তার ফলই হলো বর্তমান সংকট। সেই সংকট সরকারের জন্য এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কতটা গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে, তা অদূর ভবিষ্যতেই দেখা যাবে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
অরুণ কর্মকার

দেশে চলমান জ্বালানি-সংকট এবং এর অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে সৃষ্ট বিদ্যুৎ ঘাটতিজনিত সারা দেশে ভয়াবহ লোডশেডিং পরিস্থিতি সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, একটি সাময়িক সমস্যা। সমস্যাটি নিঃসন্দেহে সাময়িক। কারণ, এই সমস্যা দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকবে না। প্রকৃতির বদান্যতায় ইতিমধ্যে সমস্যার তীব্রতা কমতেও শুরু করেছে। শিগগির আরও কমবে। কিন্তু বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার মৌসুমে, প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে এই লোডশেডিং জনজীবনে যে বিপর্যস্ত অবস্থার সৃষ্টি করেছে, তাতে সরকারের শাসনব্যবস্থার দক্ষতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের যৌক্তিকতা এবং ভাবমূর্তিতে এক গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। এই ক্ষত যে দীর্ঘস্থায়ী হবে, বহু বছর ধরে যে এই কঠিন পরিস্থিতির কথা উদাহরণ হিসেবে বলাবলি হবে, সে কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়। শুধু তা-ই নয়, আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি-সংকটের মধ্যেও পড়ে গেছি।
আমাদের দেশে সরকারের যেকোনো সাফল্য, এমনকি বিদ্যুৎ খাতের মতো দৃশ্যমান ও সুদূরপ্রসারী সাফল্যও আস্থায় না নেওয়া বা বিশ্বাস না করা লোকের সংখ্যা অগণিত। বিদ্যুৎ খাতে সরকারের অভূতপূর্ব সাফল্যকেও তাঁরা সর্বদা বাঁকা চোখেই দেখে এসেছেন। এই শ্রেণির লোকের কথা বাদ দিলেও এখন এমন লোক দেশে খুব কম পাওয়া যাবে যাঁরা সরকারের ওই সাফল্যকে টেকসই বলে মনে করেন। বর্তমান জ্বালানি-সংকট এবং সেই কারণে সৃষ্ট বিপর্যয়কর বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সরকারের সাফল্যে অবিশ্বাসীদের সঙ্গে বিশ্বাসীদেরও প্রায় একই কাতারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সরকারের জন্য ক্ষতটা এখানেই। এই ক্ষত সরকারের সব কাজের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে রাখবে। এই ক্ষত সারিয়ে তোলা সরকারের জন্য খুব সহজ কাজ হবে না।
আরেকটি বিষয় হলো, সরকার যে সমস্যাটিকে সাময়িক বলছে, সেটি হচ্ছে লোডশেডিং। হ্যাঁ, লোডশেডিং একটি সাময়িক সমস্যাই বটে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে পায়রা কেন্দ্রের জন্য কয়লা চলে আসবে। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপের কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রটি থেকেও এই মাসের শেষ নাগাদ বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। একই সময়ে ভারতের আদানি গ্রুপের ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিটটি চালু হলে সেখান থেকেও বিদ্যুৎ আমদানি বাড়বে। সর্বোপরি শুরু হয়ে যাবে বর্ষা মৌসুম। বৃষ্টি নামবে প্রকৃতির করুণাধারা হয়ে। ফলে বিদ্যুতের চাহিদাও কমবে। সুতরাং লোডশেডিং সাময়িকই বটে।
কিন্তু এ কথা সবারই মনে রাখা উচিত যে পায়রা, বাঁশখালী, রামপাল তথা দেশের অভ্যন্তরের যেকোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বারবার কয়লা এবং অন্যান্য জ্বালানি আনতে হবে। আনতে হলে বৈদেশিক মুদ্রা (ডলার) লাগবে। এবার যেমন ডলারের অভাবে সময়মতো কয়লা আনতে না পারায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হলো, তেমনি ভবিষ্যতেও ডলার-সংকট হলে একই ঘটনা ঘটবে। আর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার যে শিগগির খুব সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে, তেমন সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। অতএব লোডশেডিংয়ের সাময়িক সমস্যাটি বারবার ফিরে আসার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রতিটি জ্বালানিই আমরা এখন আমদানি করছি। যেমন কয়লা, ফার্নেস তেল, ডিজেল, প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) প্রভৃতি। এরপর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানি করতে হবে ইউরেনিয়াম। এর যে কোনোটি আমদানির জন্যই ডলার অপরিহার্য। কাজেই বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার সমৃদ্ধ করা আমাদের জন্য অতীব জরুরি। এর মধ্যে আরেকটি বিষয় হলো, এলএনজি আমদানি। প্রথমত, এলএনজি আমদানির জন্য অবকাঠামোগত সক্ষমতা আমাদের সীমিত। দৈনিক সর্বোচ্চ ১ হাজার মিলিয়ন বা ১০০ কোটি ঘনফুট। আর দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতাও সীমিত এবং ক্রমহ্রাসমান। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য কয়লা ও জ্বালানি তেল আমদানির ওপর চাপ অপেক্ষাকৃত বেশি।
এখন প্রশ্ন হলো, এ ধরনের জ্বালানি-সংকট কি আমাদের জন্য অবধারিত কিংবা অনিবার্য ছিল? এর কারণই-বা কী? সরকার বলছে, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কথা—মানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এই যুদ্ধ শুরুতে বিশ্ববাজারে সব ধরনের জ্বালানির দাম অস্বাভাবিক রকম বাড়িয়ে দেয়। ডলারের দামও আকাশচুম্বী হয়ে পড়ে। এখন জ্বালানির দাম কমলেও ডলার-সংকটের কারণে তা প্রয়োজন অনুযায়ী আনা যাচ্ছে না। সরকারের এই বক্তব্যে মনে হতে পারে যে এই সংকট অনিবার্য ছিল। সরকারের তেমন কিছুই করার ছিল না, কিংবা বলা যায়, পরিস্থিতির ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
কিন্তু এই সংকটময় পরিস্থিতির একটি দেশীয় প্রেক্ষাপটও আছে। সেই প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে সংকটের ভিন্ন একটি কারণ আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই—সেটি হলো, দেশের জ্বালানি সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের অনীহা। এই অনীহা এমন পর্যায়ের, যাকে উপেক্ষা করাও বলা যায়। অথচ বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকার যেমন স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে ধারাবাহিকভাবে তা বাস্তবায়ন করেছে, তেমনি দেশের জ্বালানি সম্পদ উন্নয়নের কাজটিও করা হলে পৃথিবীতে যুদ্ধবিগ্রহ যত যা কিছুই হোক না কেন, আমাদের জ্বালানি-সংকট বর্তমান পর্যায়ে কখনোই পৌঁছাত না। নিজেদের জ্বালানি সম্পদ দিয়েই আমাদের চাহিদার শতভাগ বিদ্যুৎ ও শিল্প উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব হতো।
আমরা স্মরণ করতে পারি যে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন দেশের নিজস্ব ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। নতুন সরকারের উদ্যোগে যখন দ্রুত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তৃত হতে লাগল, তখন গ্যাসের চাহিদাও দ্রুত বাড়তে লাগল। সেই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকার দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বাড়তি গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়। তখন মূলত বিবিয়ানা ক্ষেত্র থেকে শেভরন সিংহভাগ উত্তোলন বাড়ায়। ফলে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা দৈনিক ২ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়। তারপর উত্তরোত্তর আরও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানো কিংবা নতুন অনুসন্ধানের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে দেশের ক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন এখন ২ হাজার ১০০ মিলিয়নে নেমে এসেছে। অন্যদিকে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে এলএনজি আমদানির। ডলার-সংকটে সেই আমদানিই এখন সরকার এবং জনগণের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে।
ইতিমধ্যে জ্বালানি-সংকট তীব্রতর হয়ে উঠলে গত বছর সরকার তিন বছর মেয়াদি একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়। সেই অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৪টি কূপ (অনুসন্ধান, উত্তোলন এবং সংস্কারসহ) খননের মাধ্যমে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে মোট ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর কাজ চলমান। অবশ্য এ কাজ ২০২৪ সালের মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে যেতে পারে বলে পেট্রোবাংলার সূত্রে জানা গেছে। এই পদক্ষেপের ফল হিসেবে ইতিমধ্যে কয়েকটি কূপে কিছু গ্যাস পাওয়াও গেছে। এর মধ্যে ভোলায় পাওয়া গেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্যাস। কিন্তু সেই গ্যাস মূল ভূখণ্ডে আনার অবকাঠামো না থাকায় চলমান সংকট নিরসনে এর কোনো ভূমিকা থাকবে না।
তবে সরকার প্রচারের জন্য হোক কিংবা কাজ দেখানোর জন্য হোক, ভোলা থেকে কিছু গ্যাস সিএনজিতে রূপান্তর করে ঢাকায় আনার জন্য একটি বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু এই চুক্তির অধীনে যে পরিমাণ গ্যাস আনা সম্ভব হবে, তা ঘাটতি পূরণের সামান্যতম কাজেও আসবে না। যেখানে তিতাসের বিতরণ এলাকায় দৈনিক গ্যাসের ঘাটতি ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট, সেখানে আগামী সেপ্টেম্বরে সিএনজি আকারে আসবে পাঁচ মিলিয়ন ঘনফুট। এরপর আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি নাগাদ আসবে আরও ২০ মিলিয়ন ঘনফুট। মোট ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট ভোলা থেকে সিএনজি আকারে আনা সম্ভব হবে।
সরকার যদি ২০১৮ সাল থেকেও দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিত এবং আজ যদি আমাদের হাতে আর এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বাড়তি গ্যাস থাকত, তাহলে আমরা কোনো জ্বালানি-সংকটেই পড়তাম না। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য, বর্তমানে দেশে গ্যাসের সর্বোচ্চ চাহিদা দৈনিক চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এখন সরবরাহ করা হচ্ছে তিন হাজার মিলিয়ন। এর মধ্যে দেশের ক্ষেত্রগুলোর গ্যাস ২ হাজার ১০০ মিলিয়ন এবং আমদানি করা এলএনজি ৯০০ মিলিয়ন। দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে এখন যদি তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুটও উত্তোলন করা যেত, তাহলে গ্যাস দিয়েই আমরা ১২-১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারতাম।
দেশের কয়লা উত্তোলনের কথা বাদ দিলেও আমদানি করা কয়লা এবং জ্বালানি তেল স্বল্প পরিমাণে ব্যবহার করে খুব সহজেই আরও তিন-চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেত। সে জন্য ডলার-সংকট কোনো সমস্যাই সৃষ্টি করতে পারত না। এ ছাড়া সরকার কম দামে রাশিয়ার তেল কেনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি কূটনৈতিক সমঝোতায় উপনীত হতে পারত বলেও অনেকের বিশ্বাস। এসব পদক্ষেপের পরিবর্তে সরকার যে শুধু জ্বালানি আমদানির দিকেই ঝুঁকে থাকল, তার ফলই হলো বর্তমান সংকট। সেই সংকট সরকারের জন্য এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কতটা গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে, তা অদূর ভবিষ্যতেই দেখা যাবে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

দেশে চলমান জ্বালানি-সংকট এবং এর অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে সৃষ্ট বিদ্যুৎ ঘাটতিজনিত সারা দেশে ভয়াবহ লোডশেডিং পরিস্থিতি সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, একটি সাময়িক সমস্যা। সমস্যাটি নিঃসন্দেহে সাময়িক। কারণ, এই সমস্যা দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকবে না। প্রকৃতির বদান্যতায় ইতিমধ্যে সমস্যার তীব্রতা কমতেও শুরু করেছে। শিগগির আরও কমবে। কিন্তু বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার মৌসুমে, প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে এই লোডশেডিং জনজীবনে যে বিপর্যস্ত অবস্থার সৃষ্টি করেছে, তাতে সরকারের শাসনব্যবস্থার দক্ষতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের যৌক্তিকতা এবং ভাবমূর্তিতে এক গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। এই ক্ষত যে দীর্ঘস্থায়ী হবে, বহু বছর ধরে যে এই কঠিন পরিস্থিতির কথা উদাহরণ হিসেবে বলাবলি হবে, সে কথা নিশ্চিত করেই বলা যায়। শুধু তা-ই নয়, আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি-সংকটের মধ্যেও পড়ে গেছি।
আমাদের দেশে সরকারের যেকোনো সাফল্য, এমনকি বিদ্যুৎ খাতের মতো দৃশ্যমান ও সুদূরপ্রসারী সাফল্যও আস্থায় না নেওয়া বা বিশ্বাস না করা লোকের সংখ্যা অগণিত। বিদ্যুৎ খাতে সরকারের অভূতপূর্ব সাফল্যকেও তাঁরা সর্বদা বাঁকা চোখেই দেখে এসেছেন। এই শ্রেণির লোকের কথা বাদ দিলেও এখন এমন লোক দেশে খুব কম পাওয়া যাবে যাঁরা সরকারের ওই সাফল্যকে টেকসই বলে মনে করেন। বর্তমান জ্বালানি-সংকট এবং সেই কারণে সৃষ্ট বিপর্যয়কর বিদ্যুৎ পরিস্থিতি সরকারের সাফল্যে অবিশ্বাসীদের সঙ্গে বিশ্বাসীদেরও প্রায় একই কাতারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সরকারের জন্য ক্ষতটা এখানেই। এই ক্ষত সরকারের সব কাজের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে রাখবে। এই ক্ষত সারিয়ে তোলা সরকারের জন্য খুব সহজ কাজ হবে না।
আরেকটি বিষয় হলো, সরকার যে সমস্যাটিকে সাময়িক বলছে, সেটি হচ্ছে লোডশেডিং। হ্যাঁ, লোডশেডিং একটি সাময়িক সমস্যাই বটে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে পায়রা কেন্দ্রের জন্য কয়লা চলে আসবে। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপের কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রটি থেকেও এই মাসের শেষ নাগাদ বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। একই সময়ে ভারতের আদানি গ্রুপের ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিটটি চালু হলে সেখান থেকেও বিদ্যুৎ আমদানি বাড়বে। সর্বোপরি শুরু হয়ে যাবে বর্ষা মৌসুম। বৃষ্টি নামবে প্রকৃতির করুণাধারা হয়ে। ফলে বিদ্যুতের চাহিদাও কমবে। সুতরাং লোডশেডিং সাময়িকই বটে।
কিন্তু এ কথা সবারই মনে রাখা উচিত যে পায়রা, বাঁশখালী, রামপাল তথা দেশের অভ্যন্তরের যেকোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বারবার কয়লা এবং অন্যান্য জ্বালানি আনতে হবে। আনতে হলে বৈদেশিক মুদ্রা (ডলার) লাগবে। এবার যেমন ডলারের অভাবে সময়মতো কয়লা আনতে না পারায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হলো, তেমনি ভবিষ্যতেও ডলার-সংকট হলে একই ঘটনা ঘটবে। আর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার যে শিগগির খুব সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে, তেমন সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। অতএব লোডশেডিংয়ের সাময়িক সমস্যাটি বারবার ফিরে আসার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রতিটি জ্বালানিই আমরা এখন আমদানি করছি। যেমন কয়লা, ফার্নেস তেল, ডিজেল, প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) প্রভৃতি। এরপর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানি করতে হবে ইউরেনিয়াম। এর যে কোনোটি আমদানির জন্যই ডলার অপরিহার্য। কাজেই বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার সমৃদ্ধ করা আমাদের জন্য অতীব জরুরি। এর মধ্যে আরেকটি বিষয় হলো, এলএনজি আমদানি। প্রথমত, এলএনজি আমদানির জন্য অবকাঠামোগত সক্ষমতা আমাদের সীমিত। দৈনিক সর্বোচ্চ ১ হাজার মিলিয়ন বা ১০০ কোটি ঘনফুট। আর দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতাও সীমিত এবং ক্রমহ্রাসমান। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য কয়লা ও জ্বালানি তেল আমদানির ওপর চাপ অপেক্ষাকৃত বেশি।
এখন প্রশ্ন হলো, এ ধরনের জ্বালানি-সংকট কি আমাদের জন্য অবধারিত কিংবা অনিবার্য ছিল? এর কারণই-বা কী? সরকার বলছে, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কথা—মানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এই যুদ্ধ শুরুতে বিশ্ববাজারে সব ধরনের জ্বালানির দাম অস্বাভাবিক রকম বাড়িয়ে দেয়। ডলারের দামও আকাশচুম্বী হয়ে পড়ে। এখন জ্বালানির দাম কমলেও ডলার-সংকটের কারণে তা প্রয়োজন অনুযায়ী আনা যাচ্ছে না। সরকারের এই বক্তব্যে মনে হতে পারে যে এই সংকট অনিবার্য ছিল। সরকারের তেমন কিছুই করার ছিল না, কিংবা বলা যায়, পরিস্থিতির ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
কিন্তু এই সংকটময় পরিস্থিতির একটি দেশীয় প্রেক্ষাপটও আছে। সেই প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে সংকটের ভিন্ন একটি কারণ আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই—সেটি হলো, দেশের জ্বালানি সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের অনীহা। এই অনীহা এমন পর্যায়ের, যাকে উপেক্ষা করাও বলা যায়। অথচ বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সরকার যেমন স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে ধারাবাহিকভাবে তা বাস্তবায়ন করেছে, তেমনি দেশের জ্বালানি সম্পদ উন্নয়নের কাজটিও করা হলে পৃথিবীতে যুদ্ধবিগ্রহ যত যা কিছুই হোক না কেন, আমাদের জ্বালানি-সংকট বর্তমান পর্যায়ে কখনোই পৌঁছাত না। নিজেদের জ্বালানি সম্পদ দিয়েই আমাদের চাহিদার শতভাগ বিদ্যুৎ ও শিল্প উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব হতো।
আমরা স্মরণ করতে পারি যে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, তখন দেশের নিজস্ব ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। নতুন সরকারের উদ্যোগে যখন দ্রুত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিস্তৃত হতে লাগল, তখন গ্যাসের চাহিদাও দ্রুত বাড়তে লাগল। সেই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সরকার দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বাড়তি গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়। তখন মূলত বিবিয়ানা ক্ষেত্র থেকে শেভরন সিংহভাগ উত্তোলন বাড়ায়। ফলে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতা দৈনিক ২ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়। তারপর উত্তরোত্তর আরও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানো কিংবা নতুন অনুসন্ধানের কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে দেশের ক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন এখন ২ হাজার ১০০ মিলিয়নে নেমে এসেছে। অন্যদিকে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে এলএনজি আমদানির। ডলার-সংকটে সেই আমদানিই এখন সরকার এবং জনগণের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে।
ইতিমধ্যে জ্বালানি-সংকট তীব্রতর হয়ে উঠলে গত বছর সরকার তিন বছর মেয়াদি একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়। সেই অনুযায়ী ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৪টি কূপ (অনুসন্ধান, উত্তোলন এবং সংস্কারসহ) খননের মাধ্যমে দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে মোট ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর কাজ চলমান। অবশ্য এ কাজ ২০২৪ সালের মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে যেতে পারে বলে পেট্রোবাংলার সূত্রে জানা গেছে। এই পদক্ষেপের ফল হিসেবে ইতিমধ্যে কয়েকটি কূপে কিছু গ্যাস পাওয়াও গেছে। এর মধ্যে ভোলায় পাওয়া গেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্যাস। কিন্তু সেই গ্যাস মূল ভূখণ্ডে আনার অবকাঠামো না থাকায় চলমান সংকট নিরসনে এর কোনো ভূমিকা থাকবে না।
তবে সরকার প্রচারের জন্য হোক কিংবা কাজ দেখানোর জন্য হোক, ভোলা থেকে কিছু গ্যাস সিএনজিতে রূপান্তর করে ঢাকায় আনার জন্য একটি বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু এই চুক্তির অধীনে যে পরিমাণ গ্যাস আনা সম্ভব হবে, তা ঘাটতি পূরণের সামান্যতম কাজেও আসবে না। যেখানে তিতাসের বিতরণ এলাকায় দৈনিক গ্যাসের ঘাটতি ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট, সেখানে আগামী সেপ্টেম্বরে সিএনজি আকারে আসবে পাঁচ মিলিয়ন ঘনফুট। এরপর আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি নাগাদ আসবে আরও ২০ মিলিয়ন ঘনফুট। মোট ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট ভোলা থেকে সিএনজি আকারে আনা সম্ভব হবে।
সরকার যদি ২০১৮ সাল থেকেও দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিত এবং আজ যদি আমাদের হাতে আর এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বাড়তি গ্যাস থাকত, তাহলে আমরা কোনো জ্বালানি-সংকটেই পড়তাম না। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখযোগ্য, বর্তমানে দেশে গ্যাসের সর্বোচ্চ চাহিদা দৈনিক চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এখন সরবরাহ করা হচ্ছে তিন হাজার মিলিয়ন। এর মধ্যে দেশের ক্ষেত্রগুলোর গ্যাস ২ হাজার ১০০ মিলিয়ন এবং আমদানি করা এলএনজি ৯০০ মিলিয়ন। দেশের ক্ষেত্রগুলো থেকে এখন যদি তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুটও উত্তোলন করা যেত, তাহলে গ্যাস দিয়েই আমরা ১২-১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারতাম।
দেশের কয়লা উত্তোলনের কথা বাদ দিলেও আমদানি করা কয়লা এবং জ্বালানি তেল স্বল্প পরিমাণে ব্যবহার করে খুব সহজেই আরও তিন-চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেত। সে জন্য ডলার-সংকট কোনো সমস্যাই সৃষ্টি করতে পারত না। এ ছাড়া সরকার কম দামে রাশিয়ার তেল কেনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি কূটনৈতিক সমঝোতায় উপনীত হতে পারত বলেও অনেকের বিশ্বাস। এসব পদক্ষেপের পরিবর্তে সরকার যে শুধু জ্বালানি আমদানির দিকেই ঝুঁকে থাকল, তার ফলই হলো বর্তমান সংকট। সেই সংকট সরকারের জন্য এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কতটা গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে, তা অদূর ভবিষ্যতেই দেখা যাবে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

দেশে চলমান জ্বালানি-সংকট এবং এর অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে সৃষ্ট বিদ্যুৎ ঘাটতিজনিত সারা দেশে ভয়াবহ লোডশেডিং পরিস্থিতি সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, একটি সাময়িক সমস্যা। সমস্যাটি নিঃসন্দেহে সাময়িক। কারণ, এই সমস্যা দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকবে না। প্রকৃতির বদান্যতায় ইতিমধ্যে সমস্যার তীব্রতা কমতেও শুরু করেছে। শিগগির আর
১০ জুন ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

দেশে চলমান জ্বালানি-সংকট এবং এর অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে সৃষ্ট বিদ্যুৎ ঘাটতিজনিত সারা দেশে ভয়াবহ লোডশেডিং পরিস্থিতি সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, একটি সাময়িক সমস্যা। সমস্যাটি নিঃসন্দেহে সাময়িক। কারণ, এই সমস্যা দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকবে না। প্রকৃতির বদান্যতায় ইতিমধ্যে সমস্যার তীব্রতা কমতেও শুরু করেছে। শিগগির আর
১০ জুন ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

দেশে চলমান জ্বালানি-সংকট এবং এর অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে সৃষ্ট বিদ্যুৎ ঘাটতিজনিত সারা দেশে ভয়াবহ লোডশেডিং পরিস্থিতি সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, একটি সাময়িক সমস্যা। সমস্যাটি নিঃসন্দেহে সাময়িক। কারণ, এই সমস্যা দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকবে না। প্রকৃতির বদান্যতায় ইতিমধ্যে সমস্যার তীব্রতা কমতেও শুরু করেছে। শিগগির আর
১০ জুন ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

দেশে চলমান জ্বালানি-সংকট এবং এর অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে সৃষ্ট বিদ্যুৎ ঘাটতিজনিত সারা দেশে ভয়াবহ লোডশেডিং পরিস্থিতি সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, একটি সাময়িক সমস্যা। সমস্যাটি নিঃসন্দেহে সাময়িক। কারণ, এই সমস্যা দীর্ঘদিন অব্যাহত থাকবে না। প্রকৃতির বদান্যতায় ইতিমধ্যে সমস্যার তীব্রতা কমতেও শুরু করেছে। শিগগির আর
১০ জুন ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫