Ajker Patrika

ভাগাভাগির নির্বাচন কেমন হবে

এ কে এম শামসুদ্দিন
ভাগাভাগির নির্বাচন কেমন হবে

দেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে আলাপকালে আমার এক বন্ধু বলছিলেন, ‘রাজনীতি এখন একজনকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে, জনগণকে ঘিরে নয়। তিনি যেভাবে চান, বাংলাদেশের রাজনীতি সেভাবেই চলে। রাজনীতিতে তাঁর কথাই শেষ কথা। অতএব আমাদের দেশে রাজার নীতিই রাজনীতি।’

এই নির্বাচনে সংসদের বিরোধী দল ও শরিক দলের নেতা-নেত্রীরা আসন ভাগাভাগির জন্য যেভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কৃপা পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছেন, তা দেখে মনে হয়েছে, নির্বাচনে জনগণের যে একটা বিশেষ ভূমিকা থাকে, তা সচেতনভাবেই অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। এই দৌড়ঝাঁপ না করে এসব দলের কোনো উপায়ও নেই। ক্ষমতার লোভ এমনই জিনিস, এর স্বাদ একবার পেলে তা সামলানো ভীষণ কঠিন হয়ে পড়ে। তাতে যদি নিজের মানসম্মানও বিসর্জন দিতে হয়, তাতেও আপত্তি নেই। দলের আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে বিলীন হয়ে যেতে এসব কক্ষচ্যুত রাজনীতিবিদের বিবেকে একবিন্দুও বাধে না। সারা জীবন বাম রাজনীতি করে রাশেদ খান মেনন যখন বলেন, ‘নৌকা তো জোটের প্রতীক হয়ে উঠেছে’, তখন বাকি সবকিছুর অর্থ বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না।

এবারের নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও বিপাকে পড়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন সামাল দিতে যে ঝামেলা মোকাবিলা করতে হয়েছে, এবার যেন আরও বাড়তি কিছু চাপ তাদের সহ্য করতে হচ্ছে। বিগত নির্বাচনে পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে তেমন কোনো চাপ ছিল না। যতটুকুই যা ছিল তা ভারতই সামাল দিয়েছে। এবার যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা যেভাবে ঘাড়ের ওপর নিশ্বাস ফেলছে, তাতে সরকারকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলেছে বৈকি। তবে এবার যে অভিনব কায়দায় নির্বাচনের আয়োজন করা হচ্ছে, তা গণতন্ত্রের ইতিহাসে রেকর্ড হয়ে থাকবে। বৃহৎ বিরোধী দলকে বাইরে রেখে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার জন্য যে কৌশল নেওয়া হচ্ছে, তা গণতন্ত্রের কোন ভাষায় সংজ্ঞায়িত করা যায়, তা ভাবনার বিষয়। নির্বাচন ঘিরে ক্ষমতাসীন দল ও তাদের মনোনীত স্বতন্ত্র প্রার্থী, শরিক দল, সরকারনির্ধারিত বিরোধী দল মিলেমিশে যে নির্বাচন করতে যাচ্ছে, তাকে রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা ছাড়া আর কী বলা যায়।

শরিক দলগুলো আগের মতো এবারও আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করে নির্বাচনের বৈতরণি পার হওয়ার চেষ্টা করছে। ১৪ দলের জোট হলেও, শরিকদের ছয়টি আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই ছয়টি আসন আবার মাত্র তিনটি দলের মধ্যে ভাগাভাগি করা হয়েছে।

রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি দুটি, হাসানুল হক ইনুর জাসদ তিনটি এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জেপিকে একটি। শরিক দলের কেউ কেউ মেনে নিলেও অনেকেই আওয়ামী লীগের এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। মেনে না নিলে কী হবে? এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করার সাহসও তো তাঁদের নেই। কাজেই যা পেয়েছেন, তাই নিয়েই তাঁদের সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কারণ তাঁরা জানেন, এ নিয়ে শোরগোল করেও কোনো লাভ নেই। আওয়ামী লীগের প্রধান যা বলবেন, তাই-ই হবে। তবে দুঃখ হয় জোটের অন্য শরিকদের জন্য। তাদের ভাগ্যের শিকেয় একটি আসনও জোটেনি। সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া তো বলেই ফেললেন, ‘জোটের তো আমরা কোনো ফ্যাক্টরই না। ফ্যাক্টর তো ওয়ার্কার্স পার্টি আর জাসদ। এদের সঙ্গে আলোচনা করলেই সব হয়ে যায়। তাঁরা তো আমাদের কথা চিন্তা করেন না।’ দিলীপ বড়ুয়ার দুঃখ আমরা বুঝি। মন্ত্রিত্বের ক্ষমতাভোগী যে কেউ এমন প্রক্রিয়া দেখাতেই পারেন। এমপি হওয়ার সাধ কার না জাগে। এতে দোষের কিছু নেই। এবার আওয়ামী লীগের দেওয়া ২৬টি আসন নিয়েই জাতীয় পার্টিকে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। এর চেয়ে কম আসন পেলেও এই দলটি যে নির্বাচনে যেত, তা বোঝাই যাচ্ছিল। এ ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর ছিল না। আসন বাড়ানো নিয়ে যা হয়েছে, তা ছিল তাদের বাড়তি কিছু আদায় করার চেষ্টা মাত্র। জাতীয় পার্টি কখনো আওয়ামী লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে না। দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের দিল্লি সফরেই এ বিষয়ে ফয়সালা হয়ে গিয়েছিল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন। তাঁদের ধারণা, এ জন্যই এবার জাতীয় পার্টিকে রাজি করানোর জন্য ভারতের কোনো কর্মকর্তার বাংলাদেশ সফরের প্রয়োজন হয়নি।

এবার ‘গ্যারান্টি ক্লোজ’ ছাড়াই আসন ভাগাভাগির সমঝোতা হয়েছে; অর্থাৎ গত দুবারের নির্বাচনের মতো শরিক দলের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার দায়িত্ব আওয়ামী লীগ নেয়নি। তবে শরিক দলের নেতাদের এবারও পাস করিয়ে আনার আবদার আছে। হাসানুল হক ইনুর কথায় অন্তত তা-ই বোঝা যায়। তিনি অনুরোধ করে বলেছেন, যেসব আসনে নির্বাচনের জন্য তাঁরা দাঁড়াবেন, সেই সব আসন থেকে যেন আওয়ামী লীগ মনোনীত স্বতন্ত্র প্রার্থীকে তুলে নেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ তার এই আবদারে কর্ণপাত করেনি। তবে বিশ্লেষকদের অনুমান, রাজনৈতিক প্রয়োজনেই শরিক দলের হেভিওয়েট নেতাদের যে করেই হোক পাস করিয়ে আনা হবে। বাজারে এমন কথাও চালু আছে, কোন কোন প্রার্থীকে পাস করিয়ে আনতে হবে, তার একটি তালিকা ইতিমধ্যেই বিশেষ সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কৌশল বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, একতরফা এই নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী আওয়ামী লীগের, স্বতন্ত্র প্রার্থীও আওয়ামী লীগের। জোট এবং অনুগত বিরোধী দল তো আছেই। অতএব কারও পরাজিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। যে কেউ জিতলেই নিজেদের জেতা হয়ে যাবে। তবে এই অদ্ভুত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোট কিংবা ভোটার টানাটানি, মারামারি-হানাহানি কিংবা খুনোখুনি যা-ই হোক না কেন, তা নিজেদের মধ্যেই হবে। এর আলামত ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। অর্থবল কিংবা পেশিবল সব দিক দিয়েই আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পাল্লাই ভারী। কাজেই শরিকদের জন্য ছেড়ে দেওয়া আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী না থাকলেও, ভোটের ময়দানে স্বতন্ত্র প্রার্থী থেকে যাওয়ায়, নির্বাচনে যে শোরগোল হবে তা বলাই বাহুল্য। যে আসনে নিজ দলের প্রার্থী নেই, সেই আসনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামবেন—এটাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বক্তব্যও স্পষ্ট, ‘ছেড়ে দেওয়া আসনে যিনিই শরিক দলের প্রার্থী হোন না কেন, তিনি তো আওয়ামী লীগের লোক নন। যেহেতু দলের নেত্রী বলেছেন, দলীয় লোক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন। কাজেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে দলীয় নেতা-কর্মীদের কাজ করতে আর বাধা থাকল না। তাহলে কেন আমরা অন্য দলের প্রার্থীর সঙ্গে কাজ করব?’ শুধু স্বতন্ত্র প্রার্থীই নন, নৌকার প্রার্থীরাও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে ভোটে হেরে যাওয়ার ভয়ে আছেন। কারণ এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে অর্ধশতাধিক বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা রয়েছেন।

এই লেখা যখন লিখছি, তখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের একজনের মৃত্যু এবং বেশ কয়েকজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এটা তো মাত্র শুরু। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসবে, প্রায় প্রতিদিনই আমরা এমন সহিংসতার খবর পেতে থাকব। মজার বিষয় হলো, এত দিন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের নানাবিধ দুর্নীতির কথা বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে আমরা জেনেছি। নির্বাচন উপলক্ষে এখন খোদ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মুখেই একে অপরের দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের খবর জানতে পারছি। ‘হাটে হাঁড়ি ভাঙা’র মতো এসব ঘটনার কথা আমরা ভবিষ্যতেও জানতে পারব। তাতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা কতটুকু লজ্জা পাবেন জানি না। তবে তাঁদের এই কাদা-ছোড়াছুড়ি দেখে সাধারণ মানুষের ভেতর বিশেষ প্রতিক্রিয়া হবে সন্দেহ নেই।

প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন দেখাতে এবং অধিকসংখ্যক ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটে দাঁড়া করানোর এই কৌশল নির্বাচনের মাঠকে গরম করে তুলেছে সন্দেহ নেই। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ভোটে না এলেও বিরোধী জোটের আরও অনেক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করেছিল ক্ষমতাসীন দল। এ ছাড়া বিএনপির অনেক নেতাকেই দল থেকে ভাগিয়ে ভোটে অংশগ্রহণ করানোর চেষ্টাও ফলপ্রসূ হয়নি। যে কারণে এবারের নির্বাচন অনেকটাই আকর্ষণ হারিয়েছে। সরকারের চেষ্টা থাকবে নির্বাচনে অন্তত ৫০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি দেখানো, যাতে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে বলা যায়। তবে যে কৌশলই নেওয়া হোক না কেন, প্রধান বিরোধী দল ছাড়া আসন্ন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে, বলা যাবে না। এ কথা সবারই জানা, জাতীয় নির্বাচনে দেশের প্রধান দুই দল—আওয়ামী লীগ ও বিএনপির যেকোনো একটি দলের অবর্তমানে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। অতএব ২০২৪ সালের বিএনপিবিহীন নির্বাচন, দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলে কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তা এখন থেকেই অনুমান করা যায়।

এ কে এম শামসুদ্দিন, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, কলাম লেখক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত