Ajker Patrika

ব্যাংকে ডলারের হাহাকার

ফারুক মেহেদী ও জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২২, ১০: ৪০
ব্যাংকে ডলারের হাহাকার

ডলারের সেই সুদিন নেই। রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি। রেমিট্যান্সেও মন্দাভাব। বিদেশি ঋণের মাধ্যমে যে ডলার আসত, কমেছে তা-ও। মজুতে টান পড়েছে বেশ আগেই। এখন রীতিমতো সংকট। কয়েক মাস আগেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মজুত থেকে কিছু কিছু করে ডলার ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হতো। রিজার্ভ কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে আসায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকও সে পথ বন্ধ করে ঘোষণা দিয়ে ডলার বিক্রি স্থগিত করেছে। ফলে ব্যাংকগুলোর সহজে ডলার পাওয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে।

বলা হয়েছে, যত দামেই হোক, ব্যাংকগুলোকেই নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে ডলার সংগ্রহ করতে হবে। এতে পেরে উঠছে না অনেক ব্যাংক। দিন যত যাচ্ছে ব্যাংকে ডলারের জন্য হাহাকার বাড়ছে। 

ব্যবসায়ীদের পক্ষে আমদানির ঋণপত্র খুলতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো। এতে পোশাক, চামড়াসহ বিভিন্ন রপ্তানিমুখী পণ্যের কাঁচামাল, চাল, চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্সের মাধ্যমে ডলারের প্রবাহ বাড়াতে আজ সোমবার থেকে কোনো মাশুল ছাড়াই রেমিট্যান্স পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)। গতকাল রোববার সংগঠনের জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি ছুটির দিনেও বিদেশে এক্সচেঞ্জ হাউস খোলা রাখা, ১০৭ টাকায় রেমিট্যান্স এবং ১০০ টাকায় রপ্তানি আয় সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্যাংক, ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আইএমএফের পরামর্শ মেনে নিট হিসাবে গণনা করলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের ঘরে। ডলারে ভর করে ১৩ মাস আগেও যে রিজার্ভের রমরমা অবস্থা ছিল, সেখানে এখন খরা চলছে। চাইলেও বাংলাদেশ ব্যাংক হাত খুলে ডলার খরচ করতে পারছে না।

বরং অতিমাত্রায় সতর্ক হয়ে আইএমএফের সব শর্তে হ্যাঁ বলে সাড়ে চার বিলিয়ন বা সাড়ে চার শ কোটি ডলার ঋণ নিয়ে ডলারের মজুত বাড়াতে মরিয়া। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় কম পণ্য আমদানি করে বেশি বিল শোধ করার চাপ, বিদেশি ঋণের কিস্তি শোধ, অত্যাবশ্যকীয় জ্বালানি তেল আমদানির দায় মেটানোসহ নানান কারণেই সামনে কী হয়, না হয়—এই আতঙ্ক খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।

এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর ডলার সংগ্রহের প্রধান উৎস প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। বিভিন্ন ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ডলারপ্রতি ১০৭ টাকা দরে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। তারা বাধ্য হয়ে কখনো কখনো ১১১-১১২ টাকায়ও ডলার কিনছে। কিন্তু হুন্ডি চক্র, প্রবাসীদের কাছ থেকে তার চেয়েও বেশি দাম দিয়ে ডলার কিনছে। এতে ব্যাংকের মাধ্যমে ডলারের প্রবাহ কমে গেছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর মাসে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৫২ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের অক্টোবরের তুলনায় তা ৭ দশমিক ৪ শতাংশ কম।

এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডলার-সংকটে আমাদের এলসি খোলা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে না চাইলে সামনের দিনগুলোতে উৎপাদন কমে যাবে। এতে রপ্তানি কমে একপর্যায়ে রপ্তানি আয়ও কমে যাবে। যার প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রায় চাপ বাড়বে।’

ডলার বাঁচাতে কড়াকড়ির ফলে ঋণপত্র খোলার হার প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বৈশ্বিক সংকটের প্রভাবে ডলারের বাজারে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। আর ডলারের সংকট উত্তরণে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যবেক্ষণ করছে।’ 

এদিকে, আমদানিকারকেরা শতভাগ মার্জিন রেখেও ব্যাংকে এলসি খুলতে পারছেন না। ব্যাংকে ঋণপত্র খুলতে গেলে, ব্যাংক ডলার সংকটের কথা জানিয়ে ঋণপত্র খোলায় নিরুৎসাহিত করছে। এতে আমদানি কমে যাচ্ছে। সরকার বিলাসী পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করলেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানিতে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ৬৬ শতাংশ মূলধনী যন্ত্রপাতি, ১৪ শতাংশ শিল্পের কাঁচামাল ও ১৪ শতাংশ মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছে। ডলার দিন দিন দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়ায় ঋণপত্র খোলা কমেছে। সূত্র আরও জানায়, সব ব্যাংকই কমবেশি ডলার-সংকট মোকাবিলা করছে। এর মধ্যে অন্তত ২০টি ব্যাংকে ডলারের সংকট তীব্র হয়েছে। এরা তাদের গ্রাহক, বিশেষ করে বিভিন্ন খাতের আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তার চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছে না। কারণ, তাদের হাতে পর্যাপ্ত ডলার নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, গত ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংকে ডলারের ঘাটতি ছিল ২৫ কোটির বেশি। একই অবস্থা আরও অনেক ব্যাংকের। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক রেমিট্যান্স আনার দিক থেকে সবার চেয়ে এগিয়ে। এ ব্যাংকটি ঘাটতিতে না থাকলেও তাদের মজুতও কমছে বলে জানা যায়।

ডলার-সংকটের বিষয়ে ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী বলেন, বর্তমানে অধিকাংশ ব্যাংক ডলারের অভাবে সময়মতো আমদানি বিল পরিশোধ করতে পারছে না। এখন উচিত হবে ডলারের মজুত নিশ্চিত করে নতুন এলসি খোলা। কারণ, এলসির বিল পরিশোধ না করতে পারলে বিদেশি ব্যাংক ও করেসপন্ডিং প্রতিষ্ঠান আস্থা হারাতে পারে।

আমদানিকারকেরা জানান, ডলারের সংকটে অত্যাবশ্যকীয় চাল আমদানিতেও ঋণপত্র খুলতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। বেসরকারি চাল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নিউ মুক্তা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী দীন মোহাম্মদ স্বপন বলেন, ‘আমরা গত কিছুদিন ধরে ব্যাংকে ব্যাংকে ধরনা দিয়েও এলসি খুলতে পারছি না। ব্যাংকে গেলেই তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ি ও ডলার-সংকটের কথা বলে ঋণপত্র খুলছে না। আরও কিছুদিন অপেক্ষা করার পরামর্শ দেয়। শতভাগ মার্জিন রেখেও কাজ হচ্ছে না।’

শতভাগ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জিহান ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাদা আহমেদ রনি বলেন, ‘আমাদের ডলার দিয়েই আমরা কাঁচামাল আমদানির দায় শোধ করি। তবে, এখন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো রপ্তানির বিল ঠিকমতো পরিশোধ করছে না। অনেকে তাদের দেশে পণ্য বিক্রি কমে গেছে বলে শিপমেন্ট পিছিয়ে দিচ্ছে। এতে ডলারের প্রবাহ কমছে। সামনে এ ধারা চলতে থাকলে, আমাদের জমা ডলারের পরিমাণ কমে গেলে কাঁচামাল আমদানিতে সমস্যা হতে পারে।’

আমদানি ব্যাহত হওয়ায় অন্যান্য পণ্যের মতো গত দেড় মাসে চিকিৎসা সরঞ্জামের দামও বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। সার্জিক্যাল পণ্য আমদানিকারক মেসার্স হেলথওয়ের স্বত্বাধিকারী নূর হোসেন বলেন, ডলার-সংকটের কারণে ব্যাংক ঋণপত্র খুলছে না। মেডিকেল পণ্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংকের দোহাই দিয়ে অন্যান্য ব্যাংক এলসি খুলছে না। বাংলাদেশ মেডিকেল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যান্ড হসপিটাল ইনস্ট্রুমেন্ট ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, ডলারের দাম বেশি হওয়ায় আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে। যার প্রভাব পণ্যের ওপর পড়েছে।

মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব সেখ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ডলারের সংকটে আমদানি কমেছে। কিন্তু ডলারের সংকট দূর হচ্ছে না। আবার রেমিট্যান্স কমেছে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের কাছ থেকে আমরাও খোলা বাজারে তেমন একটা ডলার পাচ্ছি না। কারণ রেট কম।’

এদিকে, ডলার-সংকটের বিষয়ে বাফেদা চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম বলেন, ‘দেশে ডলারের ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু আমাদের কোনো নিত্যপণ্যের আমদানি বিল পরিশোধে বিলম্ব হচ্ছে না। কোনো ব্যাংকের ক্ষেত্রে এসব পণ্যে সাত দিনের বেশি বিলম্বের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যদি ব্যবসায়ীরা বিলম্বের দাবির পক্ষে উপযুক্ত প্রমাণ দিতে পারেন, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত