Ajker Patrika

আগামীর কৃষিতে চ্যালেঞ্জ

শাইখ সিরাজ
আগামীর কৃষিতে চ্যালেঞ্জ

অনেক প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা ও ঝুঁকির পরেও আমাদের দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনের গতি বেশ ভালো। কৃষক শত সংকটের মধ্যেও একভাবে উতরে যাচ্ছেন, ফসলের ফলন ভালো হচ্ছে। দু-তিন বছরে ধানের সব কটি মৌসুমেই ভালো ফলন পেয়েছেন কৃষক। অন্যান্য ফল-ফসলের ফলনের হারও খারাপ নয়।

এ কথা সত্যি, পাঁচ-ছয় বছর ধরে শুধু কৃষি নয়, সব ক্ষেত্রেই জলবায়ু সম্পর্কে আমাদের টনক নড়েছে। সারা বিশ্বেই জলবায়ু বিষয়টি এখন সবচেয়ে আলোচিত এবং এক নম্বর ইস্যু হিসেবে গণ্য। আর এই ইস্যুতে আমরা আছি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায়। বিপর্যয় সহনশীলতার প্রশ্নে আমাদের কৃতিত্ব দৃষ্টান্তমূলক। তবে দিনের পর দিন আমাদের ঝুঁকি বাড়ছে।

উদ্বেগ বাড়ছে। বন্যা, লবণাক্ততা, খরা, ভূমিকম্পের ঝুঁকি সারাক্ষণই তাড়া করে ফিরছে। বেশি উদ্বেগের কারণ হলো, এসব বড় বিপর্যয় মোকাবিলা করার মতো শক্তি-সামর্থ্য বা প্রস্তুতি কোনো কিছুই আমাদের নেই। বড় চিন্তা জনসংখ্যা ও তাদের মুখের খাবার নিয়ে। এই ছোট্ট দেশের বিপুল জনগণ এখনো খাচ্ছে-দাচ্ছে, ঠিকমতো টিকে আছে। দুশ্চিন্তা-হতাশা আছে। এরপরও একেবারে করুণ কোনো দশায় পড়তে হচ্ছে না। কিন্তু সারা পৃথিবীই যেখানে জলবায়ুঝুঁকিতে সংকটাপন্ন, সেখানে আমাদের অবস্থানটি একটু বেশিই দুশ্চিন্তায় ফেলার মতো।

আমরা ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে এবং ওপরে—দুদিকেই বিপদের দিকে ধাবিত হচ্ছি। আন্তর্জাতিক সমীক্ষার তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান হচ্ছে বন্যার ঝুঁকিতে প্রথম, সুনামিতে তৃতীয় এবং ঘূর্ণিঝড়ে ষষ্ঠ; যা বাংলাদেশের মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা আবাদি জমি নষ্ট করছে এবং বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।

বাংলাদেশে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি মৎস্য ও মৎস্যজীবীদের জীবনযাত্রাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নদীভাঙন ও লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে। তারা শহরে পাড়ি জমাচ্ছে এবং সামাজিক ভারসাম্য নষ্ট করছে।

যে আশঙ্কার কথা বারবার উচ্চারিত হয় তা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের ১৮ শতাংশ ভূমি পানির নিচে তলিয়ে যাবে। ২ কোটি মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে এবং ৪ কোটির বেশি মানুষ তাদের জীবনযাত্রা হারিয়ে ফেলবে। বিজ্ঞানীদের মতে, ২০৫০ সাল নাগাদ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বে ১০০ কোটি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়বে। এসব চ্যালেঞ্জ এবং আশঙ্কার ভেতর আমরা আছি সবচেয়ে ভীতিকর একটি জায়গায়।

দেশের নদ-নদীগুলো এখন নাব্য হারিয়ে ফেলেছে। কৃষিকাজে অনুকূল সেচসুবিধা আজ নেই। একসময় শুধু বোরো মৌসুম সেচনির্ভর হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবেই এখন আমনসহ সব মৌসুমেই কৃত্রিম সেচ দিয়ে মেটাতে হচ্ছে ফসলের পানির চাহিদা। অথচ নদীর নাব্য না থাকার কারণে, নদ-নদীবেষ্টিত এলাকাগুলোতেও কৃষির আবাদ এখন আর অনুকূলে নেই। ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে নদী ও খাল খনন করে সেচের ব্যবস্থা জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সেচের প্রশ্নে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ নই। সেচ নিয়ে প্রতিবছরই শুষ্ক মৌসুমে দেশের বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের হাহাকার চোখে পড়ে। দিনে দিনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও পানির স্তর এত বেশি নিচে নেমে গেছে যে এখন আর সেচপাম্প মাটির ওপরে স্থাপন করে পানি ওঠানো সম্ভব হচ্ছে না। কমপক্ষে ২০-৩০ ফুট গর্ত করে গভীরে স্থাপন করতে হচ্ছে পাম্প। আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি কোথায় যাবে—এমন প্রশ্ন আর উদ্বেগ এখন সবখানে।

ফসলের ফলন বৃদ্ধির জন্য সর্বোচ্চ গবেষণার সাফল্যেরও একটি শেষ বলে কথা আছে; অর্থাৎ আমি বলতে চাইছি, প্রধান খাদ্যশস্যগুলোর উৎপাদনের হার উন্নত গবেষণার আলোকে আর কত দিন বাড়ানো সম্ভব হবে? স্থানীয় জাত থেকে উচ্চফলনশীল, উচ্চফলনশীল থেকে হাইব্রিড, হাইব্রিড থেকে সুপার হাইব্রিড। তারপরে কী?

মনে রাখা প্রয়োজন, ফলন বৃদ্ধির প্রয়াসের প্রায় চূড়ান্ত সীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে বিশ্ব। যদিও আমরা অনেকটাই পিছিয়ে আছি। মাটির জৈবশক্তিরও সাধ্যসীমা আছে। একইভাবে আছে ফসলের ফলনেরও চূড়ান্ত সীমা। প্রযুক্তি ও জ্ঞানের উৎকর্ষে বিজ্ঞানীরা যেখানে পৌঁছেছেন, তাতে বড়জোর ১০-২০ বছর ফসলের বেশি ফলনের দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হবে। তারপর ফসলের ফলনের হার একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় এসে পৌঁছাবে। সেখান থেকে ফলন শুধু কমবেই, বাড়বে না।

কিন্তু জনসংখ্যা তো বাড়তেই থাকবে, কমতে থাকবে আবাদি জমি। মোটা দাগে যে কথা বলা হয়, বছরে ১ শতাংশ হারে জমি কমছে। ১০০ বছরের মাথায় এসে আবাদি জমি শূন্যে পৌঁছাবে। আর ধানের উৎপাদন আমরা হেক্টরপ্রতি ৩-৪ টন থেকে বাড়িয়ে হাইব্রিডে গিয়ে হয়তো চূড়ান্তভাবে ৭-৮ টনে করতে পারব। তাতেও সন্দেহ রয়েছে। কারণ আমাদের মাটির জৈব উপাদান কমতে কমতে এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে তা চরমভাবে হ্রাস পেয়েছে।

এতে ওই সব অঞ্চলে ফসল উৎপাদনই অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এর ওপরে বিভিন্নমুখী দূষণের কারণে মাটি ও পানিতে ‘হেভি মেটাল’ এবং ক্ষতিকর রাসায়নিকের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে; যা শুধু ফসল উৎপাদনকেই বন্ধ্যত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে না, ফসলের সঙ্গে মিশে মানবদেহের জন্যও মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনছে। সব মিলিয়ে আগামী দিনে ফসলের উৎপাদন যেসব প্রক্রিয়ায় ব্যাহত হবে, সেই একই প্রক্রিয়া মানুষের স্বাভাবিক জীবনচক্রে ফেলবে এক কঠিন ও নেতিবাচক প্রভাব।

বস্তুত এগুলোই কৃষি এবং খাদ্য উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ। যে কারণে শুরুতে যে কথা বলেছি, কয়েক বছর আমাদের ফসল উৎপাদনের হার আশাব্যঞ্জক হলেও এই সাফল্য বর্তমানের এবং একে আগামীর নিরিখে বিবেচনা করা যাবে না। আর আগামীর খাদ্য উৎপাদনের প্রস্তুতি যদি এখনই না নেওয়া হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই এক কঠিন অবস্থায় পড়তে হবে আমাদের।

বলা বাহুল্য, আয়তনে ছোট, সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ কৃষিপ্রধান এ দেশটির জন্য ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনই উদ্বিগ্ন সারা বিশ্বের পরিবেশবিজ্ঞানী ও খাদ্যনিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বর্তমান সময় পর্যন্ত আমাদের টিকে থাকার যোগ্যতা ও পারদর্শিতায় প্রশংসা করলেও আগামীর প্রস্তুতির প্রশ্নে আমরা যে খুব ভালো জায়গায় নেই, তা এখনই স্পষ্ট।

দুর্যোগে সহনশীলতা অর্জনের জন্য দেশের গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলো নানামুখী কাজ করে চলেছে। ইতিমধ্যে বন্যা, খরা ও লবণসহিষ্ণু ধানের জাত কৃষক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সেগুলো কৃষককে খুব বেশি সন্তুষ্ট করতে পারেনি বা পারছে না। ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট লবণসহিষ্ণু যে জাতগুলোর কথা বলছে, সেগুলো হচ্ছে খুলনা, বরিশাল, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণাঞ্চলে আবাদের জন্য ব্রি-ধান-৫৩ ও ব্রি-ধান-৫৪, স্বল্পমেয়াদি ব্রি-ধান-৫৫ ও ব্রি-ধান-৫৬। ব্রি-ধান-৫৩ ও ৫৪ দুটি ডিএস-৮ মাত্রার লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। এর আগে আমন ধানের দুটি জাত ব্রি-ধান-৪১, ৪২ এবং বোরো জাতের ব্রি-ধান-৪৭ সর্বোচ্চ ডিএস-৬ মাত্রার লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। সত্যিকার অর্থে, লবণসহিষ্ণু এতগুলো জাতের কোনোটিই কৃষকের কাছে গিয়ে সন্তোষজনক ফলাফল দিতে পারেনি।

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের আইলাকবলিত এলাকায় যেখানে লবণাক্ততার হার অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত লবণসহিষ্ণু জাতগুলো আবাদ করতে পারছেন না কৃষক। এর বদলে তাঁরা নিজেদের সংগৃহীত বহু পুরোনো স্থানীয় জাত আবাদ করে তুলনামূলক ভালো ফলন পাচ্ছেন।

বিজ্ঞানীরা নতুন উদ্ভাবিত জাতগুলো সম্পর্কে ল্যাবরেটরি ও গবেষণা মাঠের তথ্যের আলোকে ফলনের যে হিসাব দেন, কৃষকের মাঠে গিয়ে এর ব্যাপক হেরফের হয়। খোদ কৃষিমন্ত্রীও বিজ্ঞানীদের গবেষণা ও কৃষকের মাঠপর্যায়ের ফলন পার্থক্য নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এই দূরত্ব দূর করার জন্য বিজ্ঞানীদের আরও নিবিড়ভাবে কাজ করার পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু বাস্তব অর্থে এ ক্ষেত্রে খুব বেশি সাফল্য যে আসবে, এমন কথা বলা যাবে না।

বিভিন্ন ফসলের জলবায়ু সহনশীল জাত থেকে শুরু করে কৃষির বিভিন্নমুখী গবেষণা আরও জোরদার করা প্রয়োজন। দুর্যোগ যেকোনো সময়ই গ্রাস করতে পারে, তার জন্য একদিকে যেমন প্রয়োজন খাদ্যের মজুত রাখা, অন্যদিকে নতুনভাবে উঠে দাঁড়ানোর কৌশল নির্ধারণ। খাদ্য মজুত রাখার প্রশ্নেও আমাদের সীমাবদ্ধতা দূর করা দরকার।

বর্তমান সময় পর্যন্ত ১৫ লাখ টনের ঊর্ধ্বে মজুত বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এই মজুতে আমরা অনেক সময় সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও এটি সন্তুষ্টির কোনো কারণ হতে পারে না। খাদ্যশস্যের মজুত আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই চিন্তা করা উচিত আমরা অনেক আলোচনা করে, আয়োজন করে ‘সার্ক ফুড ব্যাংক’ করছি, কিন্তু নিজেদের দেশের মধ্যেই একটি ‘ফুড ব্যাংক’-এর কথা ভাবছি না। আমি মনে করি, অবশ্যই দেশে একটি ‘ফুড ব্যাংক’ স্থাপনের প্রয়োজন রয়েছে।

কৃষক ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছেন ফসল উৎপাদনের উপকরণের উচ্চমূল্যে, আর উৎপাদিত পণ্যের নিম্নমূল্যের কারণে। একটি কথা মনে রাখা দরকার, আজকের দিনে জীবনযাপন যেখানে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং, সেখানে কৃষক যদি বাণিজ্যিক কৃষিতে গিয়ে কোনোভাবে লাভবান না হতে পারেন, তাহলে তিনি কৃষি পেশা ছেড়ে অন্য পেশার দিকে ধাবিত হবেন। বিষয়টি বর্তমান সময়ে সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখা প্রয়োজন। যেকোনো ফল-ফসলের মৌসুমের শুরুতেই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা লোকসানের শিকার হচ্ছেন।

এটি গোটা কৃষির জন্য একটি নেতিবাচক চিত্র। আগামীর সব ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা থেকে বাঁচানোর জন্য যে কৃষকের সম্মিলিত শক্তি সবচেয়ে আগে প্রয়োজন, তাঁদের বারবার হতাশ করে কোনো লক্ষ্যেই পৌঁছানো সম্ভব নয়। এ জন্য আগামীর খাদ্যনিরাপত্তার সব পরিকল্পনা নিতে হবে কৃষককে সঙ্গে নিয়ে, কৃষি উপকরণ আনতে হবে কৃষকের ক্রয়সীমার মধ্যে, আর নিশ্চিত করতে হবে পণ্যের সঠিক মূল্য। তাহলেই যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সার্বিক শক্তি নিয়ে প্রস্তুত হতে পারবেন কৃষক।

লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

আমরা চুপ থাকব না, উচিত শিক্ষা দেব—সেভেন সিস্টার্স নিয়ে হাসনাতের হুমকির জবাবে হিমন্ত

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র: এবার গুলশান থানার মামলায় গ্রেপ্তার মেজর সাদিকের স্ত্রী সুমাইয়া

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত